হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৫: গত পর্বে আমরা দেখেছি নীলের সামনে শাড়ি পড়ে এসে দাঁড়ায় প্রিয়ন্তী এবং ফোন করে কথা বলা শুরু করে। তারা কি তাহলে কোন নামহীন সম্পর্কের দিকে এগুচ্ছে? চলুন দেখি কি হয় আজ?
নিহার বিয়ের আয়োজন
সামনের মাসেই নিহা আর তানুর এংগেইজমেন্ট এর ডেট ফিক্সড হয়েছে। প্রিয়ন্তী, রাকা আর অর্নর এ নিয়ে খুশির সীমা নেই! তাদের বেস্টটেস্ট ফ্রেন্ড এর এতদিনের সম্পর্কে ফাইনালি অফিশিয়াল কিছু ঘটতে চলেছে,
অলরেডি তাদের প্ল্যানিং শুরু হয়ে গেছে। কে কি পড়বে, কে কি করবে!
আজ বিকেলেই তারা চারজন শপিং এ যাবে। ওখানে অবশ্য তানুও জয়েন করবে তাদের সাথে। এংগেইজমেন্টের জন্য সব অর্ডার করতে হবে। বেশী দিন সময় নেই।
প্রথমেই নিহার জন্য একটা সিলভার সিল্কের মধ্যে লেহেঙ্গা চুজ করলো সবাই। তার সাথে মিলিয়ে সিলভার একটা পাঞ্জাবীর সেট তানুর জন্য। এরপর জুয়েলারি দেখতে দেখতে বেশ লেট হয়ে গেল।তাই একদিনে সব কেন হলোনা।
পরের শুক্রবার নিহাসহ তিন বান্ধুবী নিজেদের জন্য শপিং করতে গেল। প্রথমেই রাকা একটা ব্ল্যাক এন্ড পিঙ্ক কম্বিনেশনের গাউন চুজ করলো। তাই প্রিয়ন্তী এবং অর্নও সেইম ড্রেসই কিনলো। এর সাথে ম্যাচিং ইয়ার রিং, ব্যাঙ্গেলস থেকে শুরু করে সব প্রসাধনী কিনে ফেলল ওরা। তারপর চার বান্ধুবী মিলে গেল কফি হাউজে। সবাই কফির আড্ডায় নিহার সাথে মজা করছিল। নিহা তাদের ব্যাচেলার গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে যাবে বলে তাকে ক্ষেপাচ্ছিল সবাই।
কাল নিহার এঙ্গেইজমেন্ট! জোড়সোড়ে আয়োজন করা হচ্ছে নিহাদের বাড়ীতে। ইতিমধ্যেই সকল গেস্টরা চলে এসেছে। প্রিয়ন্তী আর রাকা বেশ দায়িত্ব নিয়ে সব কাজে সাহায্য করছে।কখনো রান্না কিংবা পরিবেশনায়, তো কখনো আবার ডেকোরেশনে। আর অর্নর একমাত্র কাজ নিহার সাথে বসে বসে পিক তুলা কিংবা কে কি করছে তা নিয়ে আড্ডা দেয়া।
আয়োজনের প্রায় টুকটাক সেড়ে রাতে সবাই নিহাদের বাসায়ই থেকে গেল।
সবাই ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালের নাস্তা শেষেই নিহা সবাইকে জোড় করে ফেইস প্যাক লাগাতে বলল। প্রিয়ন্তী মজা করে বলল: “তোকে না হয় দেখার মানুষ আছে, সে এসে দেখবে একটুপরে। আমরা কাকে দেখাবো হ্যা? “
নিহা: “কোন লাভ নেই এসব এক্সকিউজ দেখিয়ে। প্রোগ্রামে অনেক সিংগেল ছেলে আসবে তাদের দেখাস। তাও এসব শুনবনা আজ।”
ওদের কথোপকথন এ ঘরে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
নিহার মা আজ খুব খুশি। কারন নিহাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে আজ অনেক আনন্দিত। কি সুন্দর সবার সাথে মজা করছে, হাসি খুশি আছে সে! সবসময় আল্লাহ এমনি রাখুক তার মেয়েকে..
এসব ভাবতে ভাবতেই নিহার আম্মু রান্নাঘরের দিকটায় চলে গেলেন।
একজন মানুষ হিসেবে প্রিয়ন্তী
দুপুরের পর নিহা রা সবাই সাজগোজ শুরু করে। প্রিয়ন্তী সব কাজ দেখে নিজেও রেডী হয়ে নেয়। হঠাৎ নিহার খোপার জন্য দোলনচাপা ফুল আনা হয়নি দেখেই নিহার মন খারাপ হয়ে গেল। তানুর খুব পছন্দ দোলনচাপা। তাই খুব ইচ্ছে ছিল আজ দোলনচাপায় নিজেকে সাজাবে নিহা।
ওর মন খারাপ দেখেই ব্যাপারটা ধরে ফেলল প্রিয়ন্তী। সে বলল: “নিহা আমি একটু আসছি রে। যাব আর আসব। লেট হবেনা আব্বু আম্মুও চলে এসেছে। আমার একটু কাজ আছে আসছি।”
নিহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রিয়ন্তী ছুটে গেল। নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে সোজা শাহবাগে গেল সে। প্রথমেই নিহার জন্য দোলনচাপা নিল, তারপর একটা বিশাল বুকে আর নিজের খোপায় দেয়ার জন্য কিছু চায়না রোজ নিল সে।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। দ্রুত যেতে হবে নইলে প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। তাই হাই স্পিডেই ছুটল প্রিয়ন্তী। হঠাৎ এক জায়গায় এসে গাড়ি থামাতে হলো তাকে। সামনে মানুষের অনেক ভীড়। কি হলো কে জানে! ইশশ এই কাজের সময়েই এমন ঝামেলা হয়!
বাধ্য হয়ে গাড়ী থেকে নেমে ভীড়ের পাশে গেল সে। একজনকে জিজ্ঞেস করতেই জানলো একটা মহিলার এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে একটু আগেই। প্রিয়ন্তী ভীড় ঠেলে সামনে গিয়েই দেখল একটা আপু রাস্তায় পড়ে আছে আর তার কপাল গড়িয়ে রক্ত নদী বয়ে চলছে। কেউই সাথে নেই! আর রাস্তার মানুষগুলোও কেউ তাকে ধরছেনা। এক ঝটকায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর।
একটা মানুষ মরে যাচ্ছে আর এরা কিনা দাড়িয়ে তামাশা দেখছে! একজনকে বলতেই বলে উঠল এটা পুলিশ কেইস আপু, ইনভলব হওয়া ঠিক হবেনা।
প্রিয়ন্তীর আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
সে বলল: ” আপনারা শুধু ওনাকে গাড়ীতে উঠাতে হেল্প করুন। আমিই নিয়ে যাচ্ছি হসপিটালে।”
শেষে সবাই মিলেই মহিলাকে ধরে প্রিয়ন্তীর গাড়ীতে উঠিয়ে দিল।
হাসপাতালে উদ্দেশ্যে প্রিয়ন্তী
প্রিয়ন্তী সোজা তাকে নিয়ে পিজি হসপিটালের দিকে গেল। এত্ত ব্লিডিং হয়েছে ওনার! অবস্থা খুব একটা ভাল না ইশশ!
ইমার্জেন্সি তে ডাক্তার প্রথমে দেখতে রাজী না হলেও প্রিয়ন্তীর বাবার পরিচয় দেয়ায় তারা মহিলাকে ট্রিটমেন্টের জন্য রাজী হয়।
প্রিয়ন্তী ভাবল আপুটার বাসার কাউকে জানানো প্রয়োজন। ওনার ফোনটা ওর কাছেই ছিল। প্রথমেই ডায়ালে দেখল আম্মি দিয়ে একটা নাম্বার! না আর কেউ কি আছে কি না দেখতে হবে! ওনার ভাইবোন কিংবা হাজবেন্ড!
হঠাৎই একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো আর স্ক্রিনে ভেসে উঠল “ছোট” লিখাটা।
তার মানে এটা আপুর ভাইবোন কেউই হবে ভেবে প্রিয়ন্তী ফোনটা পিক করল।
নিজের পরিচয় দিয়েই ঘটে যাওয়া সব বলতেই ওনার ভাই দ্রুত কোন হসপিটালে আছে তা জেনে নিল।
এরই মধ্যে প্রায় অনেক বার মা বাবা আর নিহা কল করেছে। প্রোগ্রাম মেবি স্টার্ট হয়ে গেছে। যাইহোক মা কে ফোন করে বলে দিল প্রিয়ন্তী একটা জরুরী কাজে আটকে। তার ফিরতে দেরী হবে। নিহাকে যেন বুঝিয়ে বলে।
কিছুক্ষনেই আপুটার ভাই এর আবার ফোন আসলো। প্রিয়ন্তী এক্সাক্ট লোকেশনটা বলে দিল। তারপর ওয়াশরুম খুজেঁ নিজের মুখটা ধুয়ে নিল। এত্ত ভারী মেকাপ নিয়ে থাকতে এমনিতেই অসহ্য লাগে তার। এর উপর হসপিটালে এমন ড্রেসাপে আসায় সবাই যেভাবে লুক দিচ্ছে! মুখ ধুয়ে বের হতেই দেখল চেয়ারে একটা ছেলে বসে আছে। (চলবে)