হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৩: বিগত পর্বে আমরা দেখেছি তৃতীয় বারের মত নীলের সাথে প্রিয়ন্তীর দেখা হয়। প্রিয়ন্তী মুগ্ধ নয়নে শুধু তাকিয়ে ছিল, কিছু বলতে পারে নি। দেখা যাক তবে এই না বলা কথা গুলো কবে মুখ ফসকে গড়গড় করিয়ে বের হয়ে আসে। চলেন দেখার চেষ্টা করি।
প্রিয়ন্তির প্রথম ডাক
প্রিয়ন্তী পরদিন দুপুরে ফুপীর জন্য লাঞ্চ নিয়ে হসপিটালে গেল। গেইটে ঢুকতেই দেখল নীল ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে। প্রিয়ন্তী উপরে গিয়ে খাবার দিয়ে ক্যান্টিনের দিকে গেল। আজ যে করেই হোক ছেলেটার সাথে কথা বলবেই সে!
ক্যান্টিনে ঢুকতেই দেখল নীল বেশ মনোযোগ দিয়ে লাঞ্চ করছে। প্রিয়ন্তী কিছু না ভেবেই নীলের সামনের চেয়ারটায় ঠাশ করে বসে পড়ল। অথচ নীলের সেদিকে একদমই ভ্রুক্ষেপ নেই! প্রিয়ন্তী ‘উহু উহু’ বলে কাশি দিল। তাও নীল উপরে তাকালো না।
পরে বাধ্য হয়ে নাইকা নিজেই হ্যাই বলল নায়ককে! নীল এবার তাকালো উপরে আর প্রিয়ন্তী কে দেখেও না দেখার ভান করে আবার খেতে লাগল।
প্রিয়ন্তীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। আজব ছেলেটা তার কথার কোন পাত্তাই দিল না! কি ভাবেটা কি নিজেকে!
নীল নিজের মত খাওয়া শেষ করল। উঠে চলে যাবে সেই মুহুর্তে প্রিয়ন্তী প্রায় চিল্লায়ে বলতে লাগল, “এই যে ডাক্তার সাহেব, হ্যা আপনাকেই বলছি! কথা কি শুনতে পাচ্ছেন না? নাকি ভাব নেয়াই আপনার স্বভাব? শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েই থাকবেন নাকি কিছু বলবেন?”
নীল এবার বসল আর শান্ত দৃষ্টিতে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আপনি কি আমাকে বলছেন?”
প্রিয়ন্তী আরো রেগে গিয়ে বলল, ‘এই টেবিলে আপনি আমি ছাড়া কি কেউ আছে? আগে এইটা বলেন?’
প্রিয়ন্তীর প্রথম অভিমান
নীল আরো আস্তে উত্তর দিল, “না আমি ভেবেছি আপনার বোধ হয় কথা বলতে সমস্যা আছে! সরি টু সে বাট কাল যেভাবে তোতলাচ্ছিলেন!”
প্রিয়ন্তী: ” আপনি আমাকে তোতলা বললেন? আপনার সাহস তো কম না! কি ভাবেনটা কি নিজেকে?সেধে কথা বলছি মানেই ভাব দেখাবেন? এই হলো ছেলেদের এক সমস্যা। মেয়েরা কথা বললেই নিজেকে কিং রবার্ট ব্রুশ ভাবতে শুরু করে।”
নীল হেসে জিজ্ঞেস করল,” আপনার বলা শেষ? আমি কি উঠতে পারি এবার?”
প্রিয়ন্তী রাগ করে নিজেই বসা থেকে উঠে হনহন করে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে গেল। সে আর উপরে না গিয়ে সোজা বাসায় গেল।
বাসায় গিয়েই নিজের রুমের দরজা লক করে রুমের সবকিছু ভাঙচুর শুরু করে। আজ অবধি কোন ছেলে তার সাথে এমন বিহ্যাভ তো দূরের কথা তার দিকে তাকিয়ে নেগেটিভ কিছু বলার সাহস ও পায়নি!
একটা ছেলে কতটা স্টুপিড হলে অযথা এমন বিহ্যাভ করে! কি এমন বলেছিল সে!
এত্তকিছু বলল তাও রিয়্যাক্ট না করে বলল কি যে, ‘বলা কি শেষ?’
সে আর নিতে পারছিল না। যে করেই হোক এই ছেলে কে সে তার পিছনে ঘুরাবেই নইলে তার নাম ও প্রিয়ন্তী নয়!
এমন ছেলে এখনো নেই যে কিনা প্রিয়ন্তীকে ইনসাল্ট করবে!
পরের দিন রাকার বার্থডে তাই রাত বারোটায় তাকে উইশ করেই ঘুমিয়ে পড়ে প্রিয়ন্তী। মন মেজাজ ভাল নেই তাই সকালে বের ও হয়না। রাকা বারবার ফোন দেয়া সত্যেও সে পিক করল না। রাকা খুবই অবাক হলো! তার বেস্ট ফ্রেন্ড আজ অবধি কোন দিন এমন করেনি। কিছুতো হয়েছে প্রিয়ন্তীর। তাই রাকা নিজেই নিহা আর অর্ন কে নিয়ে বিকেলে প্রিয়ন্তীর বাসায় যায়। তারা গিয়ে শুনল সারাদিন প্রিয়ন্তী কোথাও বের হয়নি। রুমে যেতেই দেখল প্রিয়ন্তী একা একা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ! (চলবে)