বেস্ট ফ্রেন্ড যখন অফিসের বস – রোমান্টিক কষ্টের গল্প: পৃথিবী কত বিচিত্র! প্রেম ভালোবাসায় আটকে থাকা মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দিলেও একটা সময় আবার কাছে এনে দেয়। সময় কত অদ্ভুত আর অকল্পনীয় হতে পারে তা এই কষ্টের ভালোবাসার গল্প থেকে বুঝতে পারব। চলুন তবে শুরু করি।
পর্বঃ ০১
কাছে আসবি না আমার। (নীলা)
নীলার কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু আমি ত তোর বর। (আমি)
আমি তোকে বর হিসেবে মানি না যদি তুই আমার কাছে আসিস তাহলে তোকে মেরে আমি নিজেও মরে যাব। (নীলা)
তোর মতো সেলফিস মেয়ে আমি দেখি নি। (আমি)
সেলফিসের কি দেখলি তুই। (নীলা)
তুই আমার লাইফটা হেল করে দিলি নিজের সার্থের জন্য। তুই যেমন এক সময় আমাকে ইউজ করেছিস ফ্রেন্ড শিপের নামে আজ তোর বাবা আমাকে ইউজ করল। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম হয়তো নতুন করে শুরু করবো আজ। কিন্তু তুই সে ধরনের মেয়েই না। (আমি)
আমি আর বাবা তোকে ইউজ করেছি। (নীলা)
হ্যা করেছিস। যদি ইউজ না করে থাকিস তোরা তাহলে তোকে আমার সাথে বিয়ে দিলেন কেন। আর অন্য কাউকে পেলেন না। (আমি)
তাই তুই কি বলতে চাচ্ছিস তুই বিয়ে ভেংগে দিবি। (নীলা)
আমি বিয়ে ভাংতে চাই নি সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চেয়েছি। কিন্তু তুই কি বললি একটু আগে মনে করে দেখ। (আমি)
তোর মতো ছোট লোকের বাচ্চার সাথে আমি নিজেও সংসার করব না। তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল। (নীলা)
কি বলবি বল বাবা মাকে নিয়ে কিছু বলবি না। (আমি)
কি করবি রে তুই কুত্তার বাচ্চা সর সামনে থেকে জানোয়ার কোথাকার। (নীলা)
ঠাসস। ঠাসস। দুইটা বসিয়ে দিলাম।
তুই কতটা নিচ প্রমান করে দিলি। আমি তোর বাবা মাকে নিয়ে কিছু বলেছি। কিন্তু তুই যারা এই দুনিয়ায় নেই তাদের কে খারাপ বলতেছিস। টাকা থাকলেই বড় লোক হওয়া যায় না। (আমি)
নীলার ঠোটের নিচ দিয়ে রক্ত পরছে। মাথা নিচু করে বসে আছে।
থাক তুই তোর বাবা সম্পত্তি নিয়ে। তুই ত এই সম্পর্ক টা রাখতে চাস না। আজ চলে যাচ্ছি ঠিক তিন মাস পর ডিভোর্স পেপার নিয়ে তোর সামনে আসব।
সেদিন নীলাকে কথাগুলো বলে বের হয়ে এসেছিলাম।
হ্যা আমি আমার বাসর রাতের দিনে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। বাসাটা আমার ছিল না নীলার বাবার ছিল।
আপনারা ভাবছেন নীলা কে আর ওর সাথে আমার বিয়ে কেমন করে হলো,
নীলা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবার অনেক টাকা। তাই দেমাগে মাটিতে পা পরতো না। ভাবছেন আমার সাথে গরিবের সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ হলো কেমন করে।
আসলে ভার্সীটীতে ভাল ছাত্র হিসেবে একটা নাম ছিল আমার।
একদিন ক্লাস থেকে বের হওয়ার সময় নীলা সামনে আসে।
তোমার নাম সিয়াম। (নীলা)
হ্যা বলুন। (আমি)
আসলে আমার ফিজিক্স এর নোটস গুল একটু লাগত দিতে পারবেন। (নীলা)
হুম অবশ্যই। (আমি)
তারপর ওকে নোটস গুলো দেই। এভাবেই কথা বলা শুরু ধিরে ধিরে হালকা পাতলা খবর নেওয়া। এভাবেই ফ্রেনশিপ চলছিল৷
ওর ফ্রেন্ডশিপ টা অবশ্য করুনা ছিল৷
কারন আমি অনাথ। দুনিয়াতে কেউ নেই তাই করুনা দেখিয়ে মহত হতে চেয়েছিল। সেট ওর ব্যাবহার এর মাধ্যমেই ও বুঝিয়ে দিত আমাকে।
আমি সব বুঝার মধ্যদিয়ে না বুঝার ভান করে চলতাম৷
কি করব৷আমি ত অনাথ। আমি ত করুনার পাত্র হওয়ার যোগ্যই।
মাঝে মাঝে মনটা খারাপ হতো যদি বাব মা থাকত তাহলে ঈদে কাপড় কিনে দিত। ভার্সীটিতে আসার সময় পকেটে টাকা আছে কি না বলতো।
আছে বল্লেও টাকা বের করে দিত।
রাতে দেরি করে বাসায় ফিরলে বকা ঝকা করত।
রাগ করে না খেয়ে থাকলে বার বার খেতে ডাকত।
আমাদের জীবনে বাব মার ভালোবাস ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠে যেটা অনেকে বুঝে না। সময় হলে সেটাই আর পাবে না আর সেটাই তার কাছে বড় চাহিদা হয়ে দারায়।
অনেকে পিতা মাতাএ ভালোবাসাকে টেলে দেয় আবার অনেকে সেটার জন্য কেদে যায়। যেমনটা আমার ক্ষেত্রে।
ভার্সিটি থেকে থাকা কালীন নীলা প্রায় আমাকে ওদের বাসায় নিয়ে আসত। ভালো মন্দ খাওয়াত।
মাঝে মাঝে টাকার প্রয়োজন হলে দিতে চাইত কিন্তু আমি নিতাম না। কারন যেটা নিব সেটা যদি ফেরত দিতে না পারি তাহলেই নিজেকেই খারাপ লাগত।
তাই ছোট একটা পার্ট টাইম জব করতাম।
নীলাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।
কিন্তু ওর সামনে সেটা প্রকাশ করতাম না। কারন টা খুব সাধারণ কিন্তু অনেক আমি গরিব এটাই একটা ছোট শব্দ কিন্তু এর বোঝাটা অনেক বড়৷
ওর মতো বড়লোকের মেয়ে। আমার মতো অনাথ যে মেচে থাকে সারা বছর দুইটা শার্ট প্যান্ট দিয়ে চালিয়ে দেয় তার সাথে প্রেম করবে এটা ভাবাই অনেক কিছু৷
এভাবেই চলছিল নীলা আমাকে অনেক কেয়ার করত। কিন্তু ওর কিছু কথার মধ্যে আমার জায়গাটা চিনিয়ে দিত।
কোনো। মেয়ের সাথে কথা বললে এসে বলতো তোর মত ছেলেরা শুধু মেয়েদের দিকে কু নজেরেই তাকাতে পারে ছোট লোক কোথাকার।
এছাড়া ওর কথা মতো চলা ফেরা এগুলা ত আছেই। এদিক থেকে ওদিক হলে ছোট লোক কুত্তা জানোয়ার এগুলা কথা ফ্রিতে শুনতে হতো৷
তারপরেও মেনে নিয়ে চলতাম।
কিন্তু যেদিন ওর মুখ থেকে শুনলাম।
পর্ব- ০২
যেদিন জানতে পারলাম ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল।
নীলা ওর বিয়ের কার্ড যখন আমার হাতে দিল তখন কার্ডটা হাতে নিয়ে হাতটা কাপছিল।
চোখ দিয়ে জল পরতে চাইছিল। কিন্তু সেটা আটকে রেখে দিয়েছিলাম।
এমনকি নীলার বিয়ের সব কাজ আমাকে করতে হয়।
ভেবেছিলাম এটা হয়তো আমার ভাগ্য যাকে ভালোবেসেছিলাম। তার বিয়ে দিতেছি।
কিন্তু বিয়ের দিন বর আসে নি।
কারনটা এখনো অজানা।
তারপর নীলার বাবা ওর বিয়ে আমার সাথে দেন।
আমি প্রথমে না করি। কারন ওনাদের সাথে আমার যায় না। কিন্তু তিনি হাত জোর করে বলতে লাগলেন তাই আর না করতে পারি নি।
তারপর বাসর রাতের কথা ত আপনাদের বললাম।
সেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।
আজ ৪মাস হয়ে গেল৷
নীলাকে দেওয়া কথার ১ মাস বেশি।
পুরোনো শহরটা আজ আবার বসে আছি।
আকাশ মেঘলা। কখন যেন অঝোরে নামবে, বৃষ্টি।
পুরোনো কথা গুলো খুব মনে পরর যাচ্ছে।
সেই চিরোচেনা ব্রিজে গেলাম৷ যেখানে আমি আর নীলা প্রায় রাতেই বসে থাকতাম।
ব্রিজের এক কোনে গিয়ে বসলাম।
এক সিগারেট ধরিয়ে পুরোনো গল্প খুনশুটির কথা গুলো ভাবতে লাগলাম।
নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসল।
তখনই হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
বৃষ্টি টা আজ খুব ভালো লাগছে তাই আর উঠলাম। না।
নীলার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ভাবতে লাগলাম।
নীলা আমার বউ কিন্তু বাসর রাতের পর থেকে তাকে আমি দেখি নি হাস্যকর হলেও এটাই বাস্তব।
হয়তো ও এখন কোনো ভালো বড়লোক ছেল পেয়ে গেছে।
কিন্তু ও কি আবার বিয়ে করছে। কথাটা ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে ডিবোর্স পেপার টা বের করলাম।
এই চেনা শহরে ফিরে আসার দুইটা কারন। তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
হটাৎ করে জোরে বৃষ্টি শুরু হলো।
কাগজ টা ব্যাগে ঢুকিয়ে সিগারেট টা ফেলেদিলাম।
তারপর হাটতে লাগলাম।
কোনো কিছু পাচ্ছি না যে উঠে যাব।
ঝুম বৃষ্টিতে একলা রাস্তায় হেটে চলেছি।
হটাৎ করে সামনে দিয়ে একটা টেক্সি আসল।
আমি জোরে ডাক দিলাম।
টেক্সি। (আমি)
আমার ডাক শুনে টেক্সিটা দারিয়ে গেলো।
আমি দোউরে গিয়ে ওর দরজা খুলতেই একটা বড় ধরনের শক খেলাম।
চার মাসে অনেকটা বদলে গেছে।
কিন্তু চিনতে অসুবিধা হলো না।
হ্যা ভেতরে নীলা বসে ছিল।
আমাকে ওকে দেখে যতটা সাভাবিক ও হয়তো নয়। ওর চোখ মুখ দেখলে বুঝতে পারছিলাম।
এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
স্যার যাবেন (ড্রাইভার এর কথা বাস্তবে ফিরলাম।
না যাও। (আমি)
তারপর সেখান থেকে চলে আসলাম।
আগে থেকে একটা বাসা ভাড়া করে রেখেছিলাম।
হাটতে হাটতে বাসায় চলে আসলাম।
আসার সময় নীলার মুখটা শুধু ভেসে আসছিল।
অনেকটা বদলে গেছে ও।
চুল গুলো আগের মতো আর ছোট নেই বেস বড় রেখেছে।
ছেলেদের মতো আর প্যান্ট শার্ট পরে না হয়তো।
কারন ওকে শাড়িতে দেখলাম।
বেস মানিয়েছে ওকে শাড়িটায়। একদন পড়ির মতো লাগছিল।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম।
দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে ভিতরে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম।
একটা সিগারেট ধরলাম।
আর মায়া মাখা বৃষ্টিটা উপভোগ করতে লাগলাম।
এখন আর নীলার জন্য অতটা আবেগ আসে না।
কারন আমার ভূলটা ও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
আগে ওর পিছনে কিভাবে ঘুরতাম। কথাগুলো ভাবলেও হাসি পাচ্ছে।
সারাদিন ওর কথা মতো উঠবস।
সিয়াম এটা কর ওটা কর এটা করবি না ওটা করবি না। দিনগূলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
কিন্তু তার জন্য আর আবেগ প্রকাশ পায় না। আবেগটা আজ সিগারেটের ধোয়ার সাথে হারিয়ে গেছে একাকিত্তের বাতাসে।
সারা রাত ব্যালকোনী তে বসে থাকলাম।
শেষ রাতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরেছি।
সকলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলাম।
হাতে আছে আমার আর নীলার ডিবোর্স পেপার।
আমি নিজের কথাটা আজ রাখতে যাচ্ছি যেটা আমি ওকে বাসর রাতে দিয়েছিলাম।
একটা রিক্সা নিয়ে নীলার বাসার সামনে গেলাম৷
বাসাটা চিরচেনা। কিন্তু মানুষ গুলো হয়তো চিনতে পারি নি।
দরজায় গিয়ে কলিং বেল চাপলাম।
কিছুক্ষন পর একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন।
হয়তো কাজের লোক।
কাকে চাই। (অপরিচিতা)
ম্যাডাম বাসায় আছেন। (আমি)
হুম। (অপরিচিতা)
একটু ডেকে দিবেন। (আমি)
আচ্ছা আপনি বসেন আমি ডাক দিচ্ছি।
বলেই মহিলাটি চলে গেলেন।
আমি দরজায় দারিয়ে রইলাম কারন ভেতরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
আমি পিছনে ঘুরে বাসার বাগানটা দেখতে লাগলাম।
একটু পর কে যেন পিছন থেকে ডাক দিল।
পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলা।
আমাকে দেখে অনেকটা অবাক হলো তা ওর চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
কেমন আছ? (নীলা)
জি ভালো। (আমি)
ভিতরে আস। (নীলা)
না তার দরকার নেই এই নিন। (আমি)
কি এটা? (নীলা)
যেটার জন্য আপনি এতদিন অপেক্ষা করে ছিলেন।
পেপারটা এগিয়ে দিয়ে পরে।
পরে দেখে নিন ঠিক আছে কি না। আর আমার সাইন দেওয়া আছে।
নীলা পেপারটা হাতে নিয়ে পরতে লাগলো।
একটু পর আমার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকালো।
কি ঠিক আছে। আর সরি আপনাকে এক মাস বেশি দেরি করানোর জন্য আসলে পেপারের কাজটা করতে একটু ভেজাল হয়েছিল।
আপনি খুশি ত আজ আপনি মুক্ত। (আমি)
চুপ।
আজ আসি ভালো থাকবেন। (আমি)
বলে চলে আসলাম পিছনে ঘুরে আর ওর দিকে তাকাই নি।
হয়তো ও আজ অনেক খুশি। আমিও খুশি কারন ভালোবাসার মানুষটা খুশি হয়েছে।
ওখান থেকে বাসায় চলে আসলাম।
সারাদিন বাসার টুকিটাকি গুছিয়েছি। বিকেলে বাজার করে এনে রান্না করলাম।
একা থেকে রান্না করা শিক্ষে গিয়েছি কারন বাকিটা জীবন একাই কাটাতে হবে।
রাতে খেয়ে তারাতারি ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে অফিস যেতে হবে।
আমি এক্ষন একটা বড় কোম্পানি তে সিনিয়র ম্যানেজার এর পদে।
প্রমোশন পেয়ে এখানে এসেছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলাম অফিসের উদ্দেশ্য।
অফিসে গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের কেবিনে গিয়ে কাজ করতে লাগলাম৷
একটু পর একজন কর্মকর্তা এসে বল্ল বস এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে চায়৷
আমি বসের রুমে গিয়ে দরজা নক করলাম।
May i come in sir (আমি)
Yes come in (ওপাশ থেকে)
ভিতরে ঢুকতেই মাথায় আকাশ ভেংগে পরলো৷
পর্ব- ০৩
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো।
কারন ভিতরে নীলা বসে ছিল।
আমি ওকে দেখে অনেক অবাক হলাম। কিন্তু ও আমাকে দেখে একটুও অবাক হলো না। হয়তো ও আমাকে আর চিনতেও পারছে না।
আমি ওর দিকে তাকিয়েই রইলাম।
হ্যাল মি সিয়াম। (নীলা)
চুপপ।
এই যে আপনাকে বলছি। (নীলা)
ওর কথায় বাস্তবে ফিরলাম।
হ্যালো ম্যাম। (আমি)
হুম বসুন। (নীলা)
আমি একটা চেয়া টেনে নিয়ে বসলাম।
কি খাবেন? (নীলা)
না ম্যাডাম আমি কিছু খাব না ধন্যবাদ। (আমি)
নীলা আর কিছু বল্ল না শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি ওর তাকিয়ে থাকা দেখে৷ বেশ অসস্তি বোধ করলাম।
ম্যাডাম আমি তাহলে যাই।
হুম আসুন। (নীলা)
আমি সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে চলে আসলাম।
কি যে হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারতিছি না সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷
ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মন দিলাম।
কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসলাম৷
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রান্না করে খেয়ে নিলাম।
রাতে ঘুম আসছিল না। কারন নীলার সেই মায়াবী তাকিয়ে থাকা চেহারাটা চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছিল।
আমি কি নীলাকে এখনো ভালোবাসি নিজের মনকে প্রশ্ন করলাম। না, সেটা কিভাবে হয় আমাদের ত ডিভোর্স হয়ে গেছে আর ওর হয়তো বয় ফ্রেন্ড আছে
মাথায় অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই ছাদে গিয়ে সিগারেট ধরলাম।
পুরো রাত ঘুমাই নি। প্রাই রাত আমার নির্ঘুম যায়।
এখানে এসেও সেই অভ্যাসটা পালটানো গেলো না।
সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম।
তারাহুরোয় নাস্তা করা হয় নি। অফিসে গিয়ে নিজের কাজে মন দিলাম।
একটু পর একজন একটা ফাইল নিয়ে আসল৷
May i come in sir (মেয়েটি)
Yes come in (আমি)
স্যার এই ফাইলটাতে একটু সাইন লাগত। (মেয়েটি)
আমি ফাইলটা চেক করে সাইন করে দিলাম।
আমি মিন্নি। (মেয়েটি)
আমি সিয়াম।
তুই আমার বয়সের তাই তোমাকে স্যার বলতে পারব না (মিন্নি)
ঠিক আছে তুমি করে বলিও। (আমি)
ওকে আসি তাহলে। (মিন্নি)
মিন্নি চলে গেলো। আমি নিজের কাজে মিন দিলাম।
একটু পর একটা ফোন আসল।
হ্যালো। (আমি)
তারাতাড়ি আমার রুমে আস। (নীলা)
নীলার রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি ও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
ম্যাম কিছু বলবেন। (আমি)
হুম। (নীলা)
সিয়াম আমি তোকে ভার্সিটি লাইফ থেকেই ভালোবাসি কিন্তু বলতে পারি নি তোর উপর জোর খাটাতাম কারন আমি চাইতাম না যে তুই অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিস।
অন্য কারো সাথে তোকে কথা বলতে দেখলে আমার খুব রাগ হতো।
আমি জানি আমি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। আর বাসর রাতেরর দিন আমি তোকে ওভাবে বলতে চাইনি। আমার তোর উপর অভিমান হয়েছিল কারন বাবা তোকে বিয়ের কথা বলার পরেও তুই না বলে দিলি সেই কারনে।
আমি ত তোকে ভালোবাসি তাই ত প্লান করে আমার বিয়েটা ভাংলাম যাতে বাবা কোনো উপায় না পেয়ে তোর সাথে বিয়ে দেয়। কিন্তু পরে যখন তুই চলে গেলি। আমি সারা রাত কেদেছি। তুই যদি একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখতি তাহলে বুঝতে পারতি। আমি তোকে এই চার মাস ধরে অনেক খুজেছি প্রতি রাতে তোর জন্য কেদেছি। উপর ওয়ালার কাছে প্রাথনা করেছি যাতে তোকে আমার কাছে ফিরিয়ে৷ দেন। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। তোকে ছাড়া বেচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয় প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
নীলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আর কান্না করতে লাগলো।
আমি ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
এসব কথা বলার সময় অনেক আগেই চলে গিয়েছে। আপনার আর আমার মধ্যে কিছু নেই। আপনার আর আমার একটাই সম্পর্ক বস আর কর্মচারীর এর থেকে বেশি কিছু নয়। কিছু কাজ থাকলে বলেন না হলে আমি আসতিছি৷
নীলা মাথা নিচু করে কেদেই যাচ্ছে। চুল গুলো ওর মুখের সামনে চলে এসেছে বেশ মায়াবী লাগছে। ইচ্ছে করছে ওর চুল গুলো নিজের হাতে সরিয়ে দেই। কিন্তু ওর মায়ায় পরলে হবে না
আমি আসি তাহলে।
কথাটা বলে বেরিয়ে আসতে লাগলাম।
আমি নিজের ভালোবাসাটা আদায় করে নিব। তুই ভাল করেই জানিস আমি কতটা জেদি। আমি তোর অভিমানটাকে সরিয়ে ভালোবাসাটাকে বের করেই আনবো আমি তোকে কথা দিচ্চি(নীলা)
দেখা যাবে। (আমি)
তারপর নিজের কেবিনে আসে কাজ করতে লাগলাম।
অফিস শেষে বাসায় আসলাম।
রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে গেলাম।
একটু পর মিন্নি আসল।
কেমন আছ? (মিন্নি)
ভাল তুমি। (আমি)
ভালো। (মিন্নি)
মিন্নির সাথে কথা বলতে লাগলাম।
মেয়েটা কথা বলতেও পারে শুরু করলে শেষ করতেই চায় না।
এরি মধ্যে নীলা এসে আমাদের দেখে রাগে লাল হয়ে গেলো।
কিছু বল্ল না নিজের কেবিনে চলে গেলো।
একটু পর পিওন কে দিয়ে আমাকে ডাক দিল।
আমি ভিতরে যেতেই যা করল।
পর্ব- ০৪
নীলার রুমে গিয়ে নক দিলাম।
আসব ম্যাম। (আমি)
হুম আসুন। (নীলা)
আমি ভিতরে গেলাম।
বসুন। (নীলা)
না ম্যাম কি কাজ আছে দিন? (আমি)
বসতে বলছি না। (চোখ রাঙিয়ে)
আমি কোনো কথা না বলে বসে পরলাম।
আমি বসতেই নীলা উঠে দারালো৷
উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
কি ব্যাপার দরজা লাগিয়ে দিলেন কেন? (আমি)
আমার আফিস আমি যা ইচ্ছে তাই করব।
আমি ছিটে বসে আছি।
নীলা এসে আমার সামনের ডেক্সটায় ঊঠে বসল।
আপনি এভাবে বসলেন কেন নিজের চেয়ারে গিয়ে বসুন। (আমি)
সেটা পরে দেখা যাবে আগে বল তুই ওই মিন্নির সাথে এত হেসে কথা বলতিছিস কেন? (মাথার কাছে মাথা এনে)
সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার আপনি কে বলার? (আমি)
তোর ব্যাপার মানে আমি তোর বউ। (নীলা)
ছিলেন। (আমি)
নীলার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। কি জেন ভাবতে লাগলো।
আমি তাহলে আসি ম্যাম আমার কাজ আছে।
আমার কথায় নীলার ধ্যান ভাংলো।
না কোথাও যেতে হবে না বসে থাক এখানে। (নীলা)
কিন্তু আজ ত মিটিং আছে। (আমি)
ও তাহলে যাও। বাকি ব্যাবস্থা আমি পরে করছি। (নীলা)
আমি উঠতে যাব তখুনি নীলা আবার ধাক্কা দিয়ে ছীটে বসে দিল।
কোথায় যাচ্ছ? (নীলা)
আপনি ত যেতে বললেন। (আমি)
হুম আগে একটা কিস দেও তারপর যেও। (নীলা)
কি? (আমি)
হুম আগে কিস দেও তারপর যেও। (নীলা)
পারব না পাগল নাকি আপনার বফ এর কাছে যান একটা কেন হাজারটা কিস দিবে। (আমি)
ওতো কথা শুনতে চাই না দিবি কি না বল। (নীলা)
না, দিবনা। (আমি)
তাহলে যা করার আমাকেই করতে হভে। (নীলা)
যা ইচ্ছে করে নিন। (আমি)
তখন নীলা ওর মাথা আমার মাথার কাছে আনল।
ও টেবিলের উপরে বসে থাকায় মাথা উচু করে ওর দিকে তাকাতে হচ্ছে।
আমি ওর দিকে তাকাতে যাব তখুনি ও দুই হাত দিয়ে আমার গাল দুটি ধরলো।
আর কপালের সাথে কপাল ঘষতে লাগল।
কেমন যেন একটা ভালো লাগা নিজের ভেতর কাজ করতে লাগল।
ওর নিশ্যাস নেওয়ার শব্দ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম৷
তারপর ও ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আনতে লাগল।
আমি বাধা দিলাম।
ম্যাম কি করছেন? (আমি)
একজন বউ তার বরের সাথে যা করে। বলেই ও আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে ঠোটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে দিল।
বেশ কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিল।
আমি দুজনে হাপাতে লাগলাম।
কিন্তু নীলা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
আপনি কি করলেন এটা? (আমি)
তুমি ত বল্লা যা করার করে নেও। তাই আমি যা করার করে নিলাম। (নীলা)
আমি কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
তারপর নিজের কেবিনে গিয়ে বসলাম। বসে শুধু নীলার কথা ভাবতিছি।
চওর গোলাপি ঠোঁট দুটো যেন আমায় টানছে। বার বার সেই কিসের কথা মনে পরছে আর ঠোঁটের কোনে৷ হাসি চলে আসছে।
এত হাসি কিসের। কথাটা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি মিন্নি।
একায় একায় হাসছেন পাগল হয়ে গেলেন নাকি। (মিন্নি)’
না পাগল হতে যাব কেন? (আমি)
তাহলে একায় একায় হাসছেন যে। (মিন্নি)
পুরোনো একটা কথা মনে পরে গেল তাই। (আমি)
আমিও শুনি কি কথা। (মিন্নি)
পরে একদিন শোনাবো। হটাৎ এই সময় আসলেন যে কোনো দরকার আছে কি। (আমি)
না সেরকম কিছু না লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে ত তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু গল্প করি। (মিন্নি)
ও আচ্ছা বসুন আমি খাবার অর্ডার করি।
আমি ফোনটা নিয়ে পিওন কে বল্লাম নিচের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসতে।
তারপর দুজনে গল্প করতে লাগলাম। কিন্তু আমার গল্প করার কোনো মুড নেই শুধু নীলার মায়াবী চেহারাটা ফুটে আসছে৷
আর এদিকে মিন্নি বক বক করেই যাচ্ছে৷
একটু পর পিওন খাবার নিয়ে আসল।
দুজনে হাত ধুয়ে খেতে লাগলাম আর হালকা পাতলা হাসি ঠাট্টা করছিলাম।
তখুনি দেখলাম নীলা গ্লাসের বাইরে থেকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলো কিছু না বলে। খাওয়া শেষ করে মিন্নিকে বিদায় দিলাম আর নিজের কাজগুল করতে লাগলাম।
অফিস শেষে আমি বাইরে দারিয়ে আছি কোন রিকশা নেই তাই হাটতে লাগলাম।
হটাৎ সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।
গ্লাস টা নামালো।
ভিতরে নীলা।
গাড়িতে উঠ। (নীলা)
না ম্যাম ঠিক আছে আমি সামনে থেকে রিকশা নিয়ে নিব আপনি চলে যান। (আমি)
ঊঠতে বলছি না। (নীলা)
দেখুন ম্যাম আপনি আমার বস অফিসে তাই এখানে জোর খাটাতে আসবেন না। (আমি)
উঠবি না গাড়ি থেকে নেমে ওইটা করব। এখন সবার সামনে করলে সবাই ফ্রিতে শো দেখবে যদি না চাস সবাই ফ্রিতে শো দেখুক তাহলে উঠে পর। (নীলা)
‘
আমি ভাবলাম ভিতরে ত যাব না আর বাইরে দারিয়ে থাকলে ইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে।
দোউর মেরে পালিয়ে যাই।
যেই এক দুই ধাপ দিলাম।
নীলা পিছন থেকে বল্ল।
পালাচ্ছিস পালা কিন্তু রাত শেষ ওই অফিসেই আসবি আর কাল সবার সামনে কিস করব।
কথাটা শুনেই দারিয়ে গেলাম।
ঠিকি ত কাল আবার অফিসে যেতে হবে।
নীলার যেরকম জেদ কথার খেলাপ করবে না।
তাই গুটিগুটি পায়ে ফিরে এসে গাড়ির দরজাটা খুলে ভিতরে বসলাম।
নীলা ড্রাইভার কে গাড়ি স্ট্রাট দিতে বল্ল।
আমি গুটিশুটি মেরে বসে আছি।
পর্ব- ৫
নীলা আমার কাধে মাথা দিয়ে বসে রইলো।
পরন্ত বিকেলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছিল আর মুহুর্তটা যে কেমন ছিল তা ভাসায় প্রকাশ করার মতো না।
একটু দূর যেতে নীলা গাড়ি থামাতে বল্ল আর আমাকে নামতে বল্ল।
আমি নেমে আসলাম।
নীলা ড্রাইভারকে গাড়ি রেখে চলে যেতে বল্ল।
ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিলেন যে। (আমি)
আমাদের যেতে দেরি হবে তাই পাঠিয়ে দিলাম। (নীলা)
আস আমার সাথে। (নীলা)
না আমায় বাসায় যেতে হবে কাজ আছে। (আমি)
প্লিজ কিচ্ছুক্ষন পর চলে যাব। (নীলা)
ওর দিকে তাকালাম এক মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা চলুন। (আমি)
তারপর দুজনে হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে শেই ব্রিজে গেলাম।
তোমার মনে আছে এই ব্রিজে আমরা কত আড্ডা দিছি। (নীলা)
আমি শুধু মাথা নারিয়ে হ্যা বললাম।
দুজনে ব্রিজের রেলিং ধরে দারিয়ে আছি।
নিচে নদিতে সুর্যের পরন্ত আলো যেন অন্য রকম একটা মুহুর্ত ফুটিয়ে তুলেছিল।
পশ্চিম আকাশে উরে যাওয়া মেঘ গুলো এক অপরুপ সোন্দর্যের সৃষ্টি করছে।
নীলা আমার হাত ধরে কাধে মাথা রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনেকক্ষন আমাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি।
তুমি কি আমাকে সত্যি আর ভালোবাস না। (নীলা)
ওর কথাটা শুনে অবাক হলাম কারন কি বলব আমার জানা নেই৷
কি হলো চুপ করে আছ কেন? (নীলা)
সেটা না হয় না জানাই থাকল। ডিভোর্স ত হয়েই গেছে এখন পুরোন কথা ঘেটে লাভ কি? (আমি)
আমার কথাটা শুনে নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
আর কিছুক্ষন পর যাওয়ার পর আমরা দুজনে চলে আসলাম। আজ দিনটা খুব ভালো ভাবে ঘুমাতে পেরেছি কারন টা আমি নিজেও জানি না।
সকালে ঘুম থেকে ঊঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলাম।
গিয়ে নিজের কেবিনের সামনে আমার নাম লেখার যায়গায় আনোয়ার সাহেবের নাম লেখা। (কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তা)
তাহলে কি নীলা আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিল।
হটাৎ করে পিছন থেকে পিওন এসে বল্ল ম্যাডাম আপনাকে ডাকতিছে।
আমি নীলার রুমে গিয়ে দরজা নক করে ভিতরে ঢুকেই মাথায় ঠাডা পরলো।
পর্ব- ০৬
নীলা দরজা টা লক করে দিয়ে আসল।
এসে আমার কলার ধরে উপরে উঠালো।
আর কোনোদিন যদি ওর সাথে কথা বলতে দেখেছি তাহলে মেরে ফেলব মনে থাকে যেন।
আমি ওর সাথে কি করব তাতে আপনার কি? (আমি)
আমারি সব আমি যেটা বলবো সেটা না শুনলে দেখতে পাবি। (নীলা)
আপনার যা ইচ্ছে করুন আমি ত ওর সাথে কথা বলবো। আর মেয়েটা অনেক কিউট। (আমি)
নীলা কি যেন ভাবলো। তারপর কলার ছেরে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো। মাথায় হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে চোখের কোনে জল।
এটুকুতেই খারাপ লাগছে তোমার আমি যে এই কয়েকটা মাস কেমন করে কাটিয়েছি তা শুধু আমি জানি। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আঘাত পেলে পুরো দুনিয়াটা উলোট পালোট হয়ে যায়। সেটা হয়তো আপনি এখন বুঝতে পারছেন।
আমি নিজের কাজ করতে লাগলাম।
নীলা কান্না করেই যাচ্ছে।
না মনে হয় একটু বেশি করেই ফেলেছি।
ধুর। যা হওয়ার হয়ে গেছে পরে ভালোবাসা দিয়ে পুশিয়ে দিব। নিজের মনে কাজ করতে লাগলাম।
লাঞ্চ টাইম হয়ে গেলো।
নীলা কান্না করতে করতে ওর ডেস্কেই ঘুমিয়ে পরেছে।
আমি বাইরে গেলাম।
দেখি মিন্নি দারিয়ে আছে।
কি ব্যাপার তুমি এখানে দারিয়ে। (আমি)
তোমাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম। (মিন্নি)
কেনো? (আমি)
একটু দরকার আছে। (মিন্নি)
কি দরকার বলো? (আমি)
চলো লাঞ্চ করি আগে। (মিন্নি)
চলো৷ (আমি)
তারপর দুজনে মিলে লাঞ্চ করলাম।
কি যেন বলতে চেয়েছিলা? (আমি)
পরে একদিন বলবো আজ না। (মিন্নি)
আচ্ছা। (আমি)
তারপর আমি অফিসে চলে আসলাম। আসার সময় নীলার জন্য খাবার নিয়ে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে।
এসে দেখি। নীলা চেয়ারে হেলানী দিয়ে আছে।
ম্যাম এই নিন কালকে আপনি আমাকে ট্রীট দিছেন আজ আমি আপনাকে দিয়েছি। (আমি)
কোথায় গিয়েছিলে? (নীলা)
লাঞ্চ করতে। (আমি)
কার সাথে? (নীলা)
আমি আর মিন্নি।
ও ভালো। (নীলা)
নীলা চেয়ারে হেলানী দিয়ে বসেই আছে।
কি হলো খাবেন না। (আমি)
না ইচ্ছে নেই। (নীলা)
নীলাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সকাল থেকে কিছুই মুখে পরেনি।
আমি একটা প্লেটে খাবার নিয়ে ওর সামনে গেলাম৷
নিন খেয়ে নিন। (আমি)
না খাব না যাও এখান থেকে। (নীলা)
হুম চলে যাব কিন্তু খেয়ে নিন। (আমি)
বলছি না খাব না। (নীলা)
নিন হা করুন। (আমি)
চুপপ…..
কি হলো(রাগি লুক নিয়ে)
নীলা কিচ্ছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল তারপর হা করল।
আমি ওকে খাইয়ে দিলাম।
খাওয়া শেষে যখুনি উঠতে যাব। তখুনি নীলা হাত টান দিয়ে আবার বসিয়ে দিল।
আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাস। (নীলা)
হা হাহাহা।
হাসছ কেন? (নীলা)
আপনার কথা শুনে। আমি আপনাকে খাইয়ে দিলাম কারন কাল আপনি আমাকে খাইয়ে দিছেন তাই আজকে সেটা শোধ করে দিলাম।
আমি উঠে গেলাম।
কিছুদিন এভাবেই চলতে লাগলো।
আমি এখন নীলাকে রাগানোর জন্য মিন্নির সাথে আরো বেশি করে কথা বলি।
কিন্তু এমনটা হবে ভাবিনি।
আমি অফিস থেকে বের হয়ে আসছিলাম।
অফিসে কেউ ছিলনা আমি মিন্নি নীলা আর পিওন ছাড়া।
আমি গেটেই বাইরে আসতেই।
মিন্নি ডাক দিল।
হ্যা বলো। (আমি)
তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। (মিন্নি)
হুম বলো। (আমি)
আসলে সিয়াম আমি না তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি I love you siyam more than my life (মিন্নি)
বলেই মিন্নি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওকে ছাড়িয়ে নিলাম।
কিন্তু পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলা দারিয়ে৷
আমাকে দেখেই কান্না করতে করতে চলে গেলো।
যা সব গন্ডগোল পাকিয়ে গেলো।
বাসায় চলে আসলাম৷
মিন্নিকে সব বুঝিয়ে দিয়েছি ও মানতে চাইছিল না কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
পরেরদিন অফিসে গিয়ে দেখি আমার ডেক্স আবার চেঞ্জ এইবার আগের রুমটায় দেওয়া হয়েছে৷
আমি নীলার রুমে গেলাম।
গিয়ে দরজা দিকে উকি মারতেই দেখি ও কান্না করছে।
আসব। (আমি)
কথাটা শুনে ও উপরের দিকে তাকালো৷
তারপর নিজের চোখ মুছে নিল।
আসুন। (নীলা)
আসলে কালকে যেই ব্যাপারটা ঘটেছে।
আমাকে আর বলতে দিল না।
থাক আর বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি আমারি ভূল ছিল তোমাকে আবার ফিরে পেতে চেয়েছিলাম নিজের ভূল গুলোকে ভালোবাসা দিয়ে শোধ করে দিতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু সেটা হয়তো হলো না তুমি মিন্নিকে ভালোবাস ওকে নিয়ে সুখি থেক। এটাই আশা করি। (নীলা)
আমার পুরো কথাটা শুনো আগে আমাকে ভূল বুঝছ তুমি।
এখানে আর বোঝার মতো কিছু নেই। (নীলা)
কিন্তু। (আমি)
আপনি এখন যেতে পারেন আমার অনেক কাজ আছে। (নীলা)
আগে আমার কথাটা ত শুন। (আমি)
আমি আপনাকে যেতে বলেছি। (নীলা)
আমি আর কিছু বললাম না সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
অফিস টাইম শেষে আমি নীলার জন্য বাইরে দারিয়ে আছি।
একটু পর নীলা আসল।
আমি ওর সামযে গিয়ে দারালাম।
নীলা আমার কথাটা ত শুনো। (আমি)
পথ ছাড়ুন আমার আর আমি আপনার বস কথাটা যেন মনে থাকে আপনার। (নীলা)
নীলা যেতে লাগলো তখন আমি ওর হাতটা টেনে ধরলাম।
কিন্তু সেটার ফল এমন হবে বুঝতে পারি নি।
পর্ব- ০৭/অন্তিম পর্ব
আমি নীলার হাত টা টেনে ধরলাম।
ঠাসস……
তখন ও আমাকে একটা থাপ্পড় মেরে দিল।
আমি নীলার এমন
ব্যবহার দেখে বেস অবাক হলাম কিন্তু ঠোঁটের অনেক একটা ছোট্ট হাসি ফুটে উঠলো।
ভালোবাসায় বিশ্বাস এর প্রয়োজন হয় যেটা তোমার মধ্যে নেই। তুমি আমাকে বিশ্বাসই করো না তাহলে ভালোবাসাবে কি করে। যদি ভালোবাসতে তাহলে বিশ্বাস করতে। আর তোমাকে ভালোবাসার কথা বলে লজ্জা দিব না ধন্যবাদ তোমাকে এই ব্যবহারটা উপহার দেওয়ার জন্য। আর এই ভালোবাসার ভনিতাটা না করলেও পারতেন।
কথাগুলো বলে সেখাব থেকে চলে আসলাম।
চলে যাব হয়তো এই চেনা শহর ছেরে এই শহর শুধু আমাকে কষ্টই দিয়েছে ভালোবাসা না। চলে যাব হয়তো এই শহর ছেড়ে আর হয়তো আসা হবে না নীলার কথা অনেক মনে পরবে কিন্তু কিছু করার নেই আমার। ভালোবাসার মর্যাদা সে দিতে পারে না যার কারনে আজ আমাদের ভালোবাসার নৌকা আজ মাঝ নদীতে ডুবে যাচ্ছে।
শুধু এটাই চাইব নীলা যেন ভালো থাকে। আমার থেকে হাজার গুন ভালো ছেলে ও পাবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি পরতে লাগল।
সারা রাত না ঘুমিয়ে নীলার সাথে কয়েকটা দিনের কথা ভাবছিলাম।
ওর পাগলামো। নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া ওর শাসন গুলো খুব মিস করবো।
ও হয়তো এগুলা ভূলে যাবে কিন্তু আমি ভূলতে পারব না মরার আগের মুহুর্ত পর্যন্ত আমি নীলাকে ভালোবেসে যাব আর ওর কথাগুলো সরন করে যাব।
হাজারো কথা মনে বাসা বেধে ছিল। কিন্তু সেগুলো যাকে বলতে চেয়েছিলাম আজ সেই দূরে এইসব কথার আর কোনো মানে হয় না আজ তার আর আমার পথ দুটো দুইটা বাকে এসে থেমেছ আজ থেকে তার আর আমার পথ হয়তো আলাদা হয়ে যাবে চিরতরে।
সারাটা রাত ছাদেই কাটিয়ে দিলাম।
পরের দিব শরীরে হালকা জর আসল।
তাই আর অফিসে গেলাম না।
দুই দিন পর অফিসে গেলাম।
কেবিনে গিয়ে রেজিক নেশন লেটারটা টাইপ করলাম৷
টাইপ করে নীলার রুমে সামনে এসে দারালাম।
তারপর দরজায় নক করলাম।
ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছিল না। তাই দরজা টা খুলে ভিতরে গেলাম।
নীলা আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে।
চেহারা একদম শুকিয়ে গেছে। চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে।
আমি ওকে ডাক দিলাম।
ম্যাম। (আমি)
আমার কথা শুনে ওর ধ্যান ভাংলো।
সাথে সাথে নিজের চোখটা মুছে নিল। কি ব্যাপার আপনি এই সময়ে আর এতদিন পর অফিসে আসছেন সমস্যা টা কি। (নীলা)
আমি কিছু না বলে শুধু লেটার টা ওর হাতে দিলাম।
কি এইটা (নীলা)
আমাএ রেজিগনেশন লেটার।
কথাটা বলার পর নীলা আমার দিকে কাদো কাদো চেহারায় তাকালো। ওর মায়াবী চোখ দুটো কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু ও মুখ ফুটে তা বলছে না।
ম্যাম আমি কিছুদিন পর এই শহর ছেড়ে চলে যাব আর ফিরে আসব না হয়তো। তাই চাকরিটা করা সম্ভব হবে না।
ভালো থাকবেন। (আমি)
বলেই চলে আসলাম।
আজ খুব কষ্ট হচ্ছে। এক সময় ওর কথায় ওর থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। আজ হয়তো আমার ভালোর জন্য যাচ্ছি আর ওর আমার ডিবোর্স হয়ে গেছে তাহলে আমি এত ভাবছি কেন এত কষ্ট পাচ্ছি কেন। সে ত আর আমার নয়।
তাহলে এত কেন ভাবছি তাকে নিয়ে আর ভাববো না কিন্তু এই নিষ্ঠুর মনটা যে কোনো কথা শোনে না বার বার আমার সাথে বেইমানি করে৷
পাচদিন লাগলো সবকিছু গুছিয়ে নিতে। সব কাজ সেরে নিলাম কারন এই শহরে আর কোনোদিন হয়তো আশা হবে না। কিন্তু নীলাকে আমি দূর থেকেই ভালোবেসে যাব।
হয়তো এখানে সে আমার আর হলো না কিন্তু পর পারে হয়তো তুমি আমার হবে।
রাত ১১ টা বাজে বাসা থেকে বের হতে যাব। তখন একটা ফোন আসল।
হ্যালো কে বলছেন? (আমি)
আমি নীলার বাবা বলছি(ওপাশ থেকে)
হ্যা আংকেল বলেন। (আমি)
আমি জানি তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে কিন্তু মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালবাসে। আজ সাত দিন ধরে কিচু খায় না পাচদিন আগে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে হাজার ডাকার পরো দরজা খুলে না।
জানো যখন তুমি ফিরে আস।
সেদিন রাতে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেদেছিল কারন ও তোমাকে ফিরে পেয়েছিল।
প্লিজ সিয়াম আমার মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিও না। ওর থেকে দূরে চলে গেলে ও হয়তো আর বাচবেই না আমার উপর দয়া করো আমার মেয়েটাকে আপন করে নেও।
কথাগুলো বলেই আংকেল কেদে দিলেন।
আমি এখুনি আসছি আপনি টেনশন নিবেন না।
তারাতারি করে নীলাদের বাসায় গেলাম।
আংকেল বসে কাদছেন।
আমাকে দেখে উঠে আসলেন।
আপনি টেনশন নিয়েন না আমি দেখছি।
নীলার রুমের কাছে গিয়ে ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই তাই দরজাটা ভেংগে ফেললাম।
ভিতরে ঢুকে দেখি নীলা ঘরের এক কোনে বসে কাদছে।
আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।
ওর মুখে কোনো কথা নেই শুধু চুপচাপ কেদে যাচ্ছে।
আমি একটা কাশি দিলাম৷
কি হলো কথা বলবে না তাহলে আমি চলে যাই।
বলেই যখন ঊঠতে যাব।
তখুনি হাতটা ধরে টান দিলো।
ঠাসসস, ঠাসস…….
দুইটা থাপ্পড় মেরে দিল।
ভাবলাম একটা কিস পাবো কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাপ্পড় পেলাম কপাল আমার। (আমি)
আর কোনোদিন যদি ছেরে যাওয়ার কথা বলেছিস তাহলে মেরে ফেলবো।
বলেই জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর।
এতদিন ধরে খাওয়া করোনি কেন চল খাবে। (আমি)
না পরে খাব এখন এভাবেই থাকব। (নীলা)
না খেলে ত শরীর আরো খারাপ করবে আর আমি চাইনা আমার বউকে খারাপ দেখাক।
আগে কিস খাব। (নীলা)
কি। (আমি)
তখুনি ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে দিল৷
কিছুক্ষন পর ছেরে দিল৷
দুজনে হাপাতে লাগলাম।
এখন চল খেওয়া করবা। (আমি)
কোলে করে নিয়ে চলো। (নীলা)
এই আটার বস্তা কোলে নিলে ত মরেই যাব। (আমি)
কি বললি? (নীলা)
সরি সরি।
আমী অকে কোলে তুলে নিয়ে নামতে লাগলাম। নামতে নামতে ও তাকিয়ে আছে আর বার বার একটা করে গালে কিস দিচ্ছে।
আমি ওর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম৷
ওকে খাইয়ে দিলাম।
তারপর ওকে কোলে করে নিয়ে ছাদে আসলাম।
দুজনে দোলনায় বসে আছি আমি নীলার কোলে শুয়ে আছি ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে একটা করে পাপ্পি দিচ্ছে।
হটাত করেই ডিবোর্স পেপার টার কিথা মনে পরল৷
আমি উঠে বসলাম।
নীলা আমার কাধে মাথা রাখলো।
ডিবোর্স পেপারটা। (আমি)
পুরিয়ে ফেলেছি। (নীলা)
এরপর দুজনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলাম।
হটাৎ করেই নীলা বল্ল।
আমাকে আর ছেড়ে যেবে না ত।
জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তোমার হাত ধরে পাশে থাকব। (আমি)
আমাকে মাফ করে দেও। (নীলা)
কেন? (আমি)
তোমাকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য। (নীলা)
মাফ চাইতে হবে না ভালোবাসা দিয়ে পুশিয়ে নিব আমি।
জড়িয়ে ধরলাম নীলাকে দুজনে চাদনি রাতটা উপভোগ করতে লাগলাম।
পরিপূর্ণ হলো আমাদের ভালোবাসার গল্পটা।
সমাপ্ত
আরও পড়ুন – বাসর রাত রোমান্টিক গল্প