প্রেমের গল্প ৪

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ৪ | ত্রিভুজ প্রেম

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ৪: মোহনা আপুর পরিস্থিতি এতটাই অসহায় বানিয়েছে যে তার আর কান্না করা ছাড়া কিছু করার নেই। এতটা খারাপ সময় পার করছি আমরা, সামনে যে কি হয় সেটা এখন দেখার পালা।

অসহায়ত্ব এবং নিবেদন

মোহনা আপু কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি হতে চলছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।

তার মানে কি মোহনা আপু আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু সে তো জানে সুমির সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন তারপরও এই কাজটা কিভাবে করতে পারলো? হায় আমি সুমিকে কি জবাব দিবো?

সুমি এমনেতেই আমার উপর রাগ। এখন তো সবটাই গেছে।

মোহনা আপু আমাকে ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আমি তখনো দাঁড়িয়ে আছি। মুগ্ধতার গোড় কাটেনা।
রাকিবের ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।

রাকিবঃ কিরে কি হয়েছে?

আমিঃ কই কিছু নাতো?

রাকিবঃ আমি কিন্তু দূর থেকে সব কিছু দেখেছি?

রাকিবের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।

রাকিবঃ আমাকে একটা কথা বলবি সত্যি করে?

আমিঃ কি কথা?

রাকিবঃ তুই কি সুমিকে ভালোবাসিস না?

আমিঃ তোর হঠাৎ এই প্রশ্ন?

রাকিবঃ না মোহনা আপু তোকে জড়িয়ে ধরলো দেখে বললাম আর কি?

আমিঃ বন্ধু প্লিজ, এই কথা আর কাউকে বলিস না।

রাকিবঃ আচ্ছা।

আমিঃ আর একটা হেল্প করতে পারবি?

রাকিবঃ কি?

আমিঃ না থাক, মাথায় কিছুই কাজ করছে না। মোহনা আপু কিভাবে এমন করতে পারলো কিছুই ভালোলাগে না।

রাকিবঃ কি আর করবি! গান শোন “আমি ফাঁইসা ও আমি ফাঁইসা গেছি মাইনকার চিপায়।

আমিঃ দূর বেটা রাখতো তোর ফাজলামি। এখন বোল খাটাস গুলা কই?

রাকিবঃ বাসায়।

আমিঃ চল

সিনিয়রকে শাসন

সকাল হতে পেটে কিছু জুটে নি। সবাই এক জাগায় বসে আছি। আশিকের মাথা আবার গরম হয়ে গেলো। সে মোহনা আপুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আশিকঃ রাঁন্না করতে পারেন? না কি আমাদের কে রাঁন্না করে খাওয়াতে হবে?

মোহনা আপু আশিকের রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলো। নিচু স্বরে বলতে লাগলো।

মোহনা আপুঃ ডিম ভাজি করতে পারি।

আশিকঃ আর কিছু পারেন না?

মোহনা আপুঃ আলুর ভর্তা বানাতে পাড়ি।

এই কথাটা মোহনা আপু বলতে চায়নি তারপরও মুখ ফসকে বের হয়ে গেলো।

আশিক কথা শুনে সেই একটা ঝাড়ি মারলো। আমরা সবাই চমকে উঠলাম। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি মোহনা আপুর দিকে কারণ তিনি যেই রাগী জানিনা আশিকের আজ কি হয়। কিন্তু তার মুখে কোনো কথা নেই।

আশিক আবার বলতে শুরু করলো,

আশিকঃ সারাদিন শুধু সিরিয়াল নিয়ে পরে থাকেন না, রাঁন্না আর শিখবেন কেমনে?

মোহনা আপুর চোখ দিয়ে আমনে আমনেই পানি পরতে লাগলো।

মোহনা আপুঃ তুই সব সময় আমাকে ইনসার্ট করে কথা বলিস। আমি কি করছি তোকে?

আশিকঃ না আপনার কোনো দোষ নাই, সব দোষ আমার।

আমরা বসে বসে দু জনের অবস্থা দেখছি । এখন অবস্থা বেগতিপূর্ণ। তাই আশিক কে বাইরে নিয়ে গেলাম।

আশিকঃ ওই কি শুরু করলি তুই!

আমিঃ ?

আশিকঃ মেজাজটা গরম হয়ে গেছে। এখন রাঁন্না করবে কে?

আমিঃ কি আর করবি, আমরা সবাই মিলে করতে হবে। দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।

আশিকঃ জানি না কিছু।

প্রেমিকার প্যারা

সবাই মিলে রাঁন্না করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। বেশ ভালোই লাগলো এভাবে রাঁন্না করতে।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সবার ঘরে বিশ্রাম নিতে গেলো। আমিও তার ব্যতিক্রম না। নিজের রুমের দরজায় কে যেনো নক করলো। দরজায় মোহনা আপু।

আমিঃ কি হয়েছে?

তারপর মোহনা আপু যে কথা বললো তা শুনার জন্য মানসিক ভাবে একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না।

মোহনা আপুঃ সুমির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!

আমার পায়ের নিচে মাটি সরে গেলো। যার সাথে তিন বছরের রিলেশন তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

আমিঃ মানি কি, সুমি বাঁধা দিলোনা?

মোহনা আপুঃ না, বরং সে আরো হাসি মুখে বিয়ে করতেছে। আব্বু রাগ করে আমার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।

আমিঃ তোমার মোবাইলটা দাও আমি সুমির সাথে কথা বলে নেই।

সুমির মোবাইলে কল করলাম।

সুমিঃ হে বুবু বোল?

আমিঃ বুবু রাখো, আমি জিসান।

সুমিঃ ওই শয়তান তুই কেন ফোন করেছিস আমাকে হুম? বুবুকে নিয়ে পালিয়ে গেলি এখন বাবা সেই ছেলের সাথেই বিয়ে দিয়ে দিতেছে।

আমিঃ তুমি মানা করনি?

সুমিঃ কেনো মানা করবো, কার জন্য করবো? যে আমার সাথে বেইমানি করছে তার জন্য!

আমিঃ প্লিজ সুমি, আমি কি করবো তোমার বোন আমাকে নিয়ে এসেছে!

সুমিঃ তুই যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতি তাহলে আর এরকম করতি না। আমি তো ছিলাম টাইম পাস। দেড় বছরের রিলেশনে একবারো জড়িয়ে ধরনি কিন্তু বুবুর সাথে এক সপ্তাহ এর রিলেশন তাকে জড়িয়ে ধরেলে।

আমিঃ এই কথা তোমাকে কে বললো?

কে আর রাকিব ভাই বলেছে?

ফোনটা কেঁটে দিলো সুমি, সেও এখন মনে মনে বিরহের আগুনে পুড়ছে। চাইলেই দেড় বছরের রিলেশন ভুলে যাওয়া যায়না। আমি জানি সুমি রাগ করে বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।

মোহনা আপুঃ আমিও সুমিকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। সে তার সিদ্ধান্ত থেকে অনর।

আমি আর কিছু বললাম না। জড়িয়ে ধরার ঘটনার পর আমি আর তার সাথে তেমন কথা বলি না।

আমি চলে গেলাম রাকিবের কাছে ওই সালা প্যাচ লাগাইছে।

রাকিবের রুমে যাওয়ার পথে যা দেখলাম তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।

মোহনা আপুর বাবা তার লোক জন নিয়ে বাসার ভিতরে ডুকছে। চলবে…

পরের পর্ব- প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – শেষ পর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *