প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ৩: জীবন যে সিনেমার চেয়ে অনিশ্চিত তা হয়তো আমাকে দেখে বুঝে গেছেন। এত দিন শুনতাম জি এফ প্যারা দেয় কিন্তু আমার মত বলদরে প্রেমিকার বড় বোনও প্যারা দেয়, তাও আবার যেনতেন না পুরাই অস্থির থ্রিলার টাইপের। আমাকে নিয়ে পালিয়ে এসে আপুর তো কোন লাভ হল না, উল্টো আমারই উপর ঝড় শুরু হবে এখন। দেখি কি হয়?
একটু খানি আশ্রয়
মর্তুজা কে সব বুঝিয়ে বললাম….
মর্তুজাঃ আমার বাবা তার ব্যবসায়ী কাজে এক সপ্তাহের জন্য শহরে গেছে, তোরা চাইলে আমার এখানেই থাকতে পারিস।
মর্তুজাের কথা শুনে রাকিব, রাসেল, সোহাগ আশিক আগেই বাসায় ঢুকে পরলো।
মর্তুজাঃ জিসান, থাকতে বলছি তোকে আর মোহনা আপুকে, তাহলে ওরা বাসায় ঢুকলো কেন?
আমিঃ ভিতরে আয়।
রাকিব, রাসেল, শকিল, আশিক আমার রুমের ভিতর বসে আছে।
মর্তুজাঃ ওই তোদের এখানে কি?
রাসেলঃ এখানে কি মানে,, তুই জানোস না কি হয়েছে?
মর্তুজাঃ না জানিনা, এখানে শুধু জিসান থাকতে পারবে।
রাকিবঃ কেনো জিসান মেয়ে নিয়ে পালিয়ে এসেছে বলে?
মর্তুজাঃ দেখ জিসান এখন বিপদের ভিতর আছে তাই ও এখানে থাক,। আর তোদের তো কোনো বিপদ নাই তোরা এখানে কি করবি?
মর্তুজাের কথা শুনে সবাই এক গাল হেসে নিলো।
মর্তুজাঃ কিরে এমন করে হাসছিস কেনো?
সোহাগঃ জিসানের থেকে বড় বিপদে আছি আমরা। মোহনা আপুর বাবা যে জিসান কে না পেয়ে আমাদের কে খুঁজছে, সে খবর কি আছে তোমার? আর আমরা যদি ধরা খাই তাহলে কেউই বাঁচতে পারবোনা। মোহনা আপুর বাবা সাবেক আর্মি অফিসার, গুলি করতে একটুও দ্বিধা করবে না।
মর্তুজাঃ মর্তুজা থাকনা ওরা কিছুদিন তারপর দেখি কি করা যায়।
মর্তুজাঃ আমি জানিনা, আমার একটা বোন আছে আব্বু যদি জানতে পারে তোদেরকে নিয়ে বাসায় আড্ডা দিচ্ছি তাহলে কি জানি করে।
আশিকঃ ওই চিন্তা করিস না, আমরা জিসানের মত না যে অন্যের বউ নিয়ে পালিয়ে যাবো! আমাদের চরিত্র এত খারাপ না!
আশিকের কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো, তারপরও কিছু বলতে পারলাম না। কারণ ওদের হাতে আমি আটকা।
মাথাটা ঠান্ডা রেখে মোহনা আপুর রুমে গেলাম। সে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে, চোখে পানি, কাঁদারি কথা, তার একটা ভুলের জন্য লাইফটাই শেষ। মা-বাবা থেকেও এখন নাই। কত সুন্দর একটা সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো, কিন্তু সেই সোনালী সংসার ছেড়ে চলে এসেছে কোন এক ফালতু ছেলের সাথে!
কঠিন বাস্তবতা
মোহনা আপু আমার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।
মোহনা আপুঃ জিসান, কিছু বলবি?
আমি বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলাম,
আমিঃ কি বলবো আর আপনাকে, আপনার লাইফটাও ধ্বংস করে এখন আমার লাইফটারও বারাটো বাজালেন। আম্মু কথা বলে না আর আব্বুর ভয়ে আব্বুর নাম্বার ব্লোক লিস্টে রাখছি। মিষ্টি একটা গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো। সেটাও আপনার জন্য চলে গেছে।
কথাগুলো বেশ উচ্চস্বরে বললাম। তাই আমার কথা শুনে সবাই চলে আসলো।
মোহনা আপু মাথা নিচু করে বসে আছে। কঠিন অপরাধী সে। আমাদের সবার জীবন তিনি নষ্ট করেছে ।
রাকিবঃ কোন একটা রিজবি না মিজবি তার সাথে তিন মাস রিলেশন করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন। এখন আমরাও বাড়ি ছাড়া।
রাসেলঃ সত্যিই মেয়েদের বুদ্ধি হাটুর নিচে থাকে, টাউট বাটপার চিনতে পারে না।
মোহনা আপুর চোখ দিয়ে অনায়াসে পানি ঝরতে লাগলো। (মেয়ে মানুষ কেবল পারে কাঁন্না করতে)
মর্তুজাঃ তোরা কি থামবি, বোনটা এমনেই টেনশনের ভিতর আছে আবার তোরা বাজে কথা বলতেছিস?
আশিকঃ ওরে আল্লাহরে, মায়া লাইগা গেছেরে। ওই বেটা আপুর চেয়ে বড় টেনশনে আমরা আছি। বাড়ি ঘর নাই। পেটে ভাত জুটেনা ।
আমি বুঝলাম, ওরা যা শুরু করেছে এতে সিরিয়াস কিছু হয়ে যেতে পারে। আমরা ৫ জন আর মোহনা আপু একলা। সে কথায় যাবে?
সবাইকে রুমের ভাইরে নিয়ে আসলাম।
আমিঃ ওই বেটা তোরা কি শুরু করেছিস। যা ভাইরে থেকে ঘুরে আয়। মাথাটা ঠান্ডা কর?
সোহাগঃ আমরা একা যাবো কেন তোর কি হইছে তুইও চল?
আমিঃ আরে তোরা মোহনা আপুর অবস্থাটা একটু দেখ, যদি কিছু করে ফেলে?
রাকিবঃ কি করবে?
আমিঃ মেয়েরা আবেগ কন্ট্রল করতে পারে না, তাই যে কোনো মুহূর্তে হাত কেঁটে ফেলতে পারে এমনকি আত্মহত্যাও।
সবাই একসাথে বলে উঠল, আমরা জানি না তোর জিনিস তুই সামলা। আমরা এসবের ভিতর নাই।
ওরা বাইরে চলে গেলো। আমি চলে গেলাম মোহনা আপুর রুমে।
ঝগড়াটে অনুভূতি
কেঁদেই চলেছে মেয়েটা। আমি একটু দূরে সরে বসলাম। হিসেবে বড় বোন, কিছু বলতেও পারি না।
মোহনা আপুঃ এখন এসেছিস কেন আমার কাছে, সবাই তো অপমান করলি এতক্ষণ।
আমিঃ sorry, আর হবে না, তুমি সবার মনের অবস্থা একটু বুঝো, সবাই ঘরছাড়া। ভালোভাবে খেতেও পারে না। তাই বাজে কথা বলেছে।
আমার কথা শুনে মোহনা আপু কিছু বললোনা। মাথা নিচু করে বসে রইলো।
কিছুক্ষণ পর উঠে চলে যেতে লাগলো।
আমিঃ কোথায় যান।
মোহনা আপুঃ জাহান্নামের চৌরাস্তায়।
আমি আর কিছু না ভেবে পিছু নিলাম।
মোহনা আপুঃ খবরদার জিসান, খুব খারাপ হবে আমার পিছন পিছন আসলে।
কার কথা কে শুনে, এরপর মোহনা আপু পুকুরের ঘাটলায় গিয়ে বসলো।
আমিঃ এই পুকুরে জাম্প দিয়ে মরতে পারবে না! একতো হলো পানি কম, বড় কথা আপনি সাঁতার জানেন।
মোহনা আপুঃ তোকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো, ওই দাঁড়া।
আপু তাড়া করতে লাগলো আমাকে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, আমার কাছে এসে কানটা মুড়ে ধরলো।
মোহনা আপুঃ বড্ড বেড়ে গেছিস হুম? আজকে দেখ তোর কি অবস্থা করি!
আমিঃ ছাড়ো ব্যথা লাগছে তো।
মোহনা আপুঃ না, ছাড়বো না।
কিছুক্ষণ যা ঘটলো তার জন্য আমি একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না।
মোহনা আপু কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি হতে চলছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
তার মানে কি মোহনা আপু আমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু সে তো জানে সুমির সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন তারপরও এই কাজটা কিভাবে করতে পারলো? হায় আমি সুমিকে কি জবাব দিবো? চলবে…..
পরের পর্ব- প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ৪