প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ১: প্রেম ভালবাসা বড়ই অদ্ভুত! কার উপর কখন কিভাবে পড়বে তা বলা যায় না। অনেক কাছের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় এই প্রেমের কারণে। তবুও মানুষ ভালবাসতে ভুলে না। কেউ অন্যের ভালবাসার মানুষ কেড়ে নেয় আবার কেউ বিসর্জন দেয়। এমনি এক কষ্ট মিষ্টি কিছু মুহুর্ত নিয়ে আমাদের আজকের এই গল্প, লিখেছেন- এস আর জাহিদ। চলুন শুরু করা যাক।
বড় বোনের কাণ্ড
আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র মোহনা আপু। একই এলাকায় আর একই ক্যাম্পাসে অধ্যায়নের জন্য আমাদের মাঝে সম্পর্কটা বেশ ভালোই। তার আজকে গায়ে হলুদ। সন্ধ্যায় মোহনা আপুর হলুদ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম। পথে এমন একটা দৃশ্য দেখে আমার চোখ কোপালে উঠে গেলো। আরে এ তো মোহনা আপু হলুদ শাড়ি পরে এই রাস্তা ধরে বেশ তাড়াতাড়ি করে হাটতেছে।
কিন্তু তার তো হলুদ অনুষ্ঠানে থাকার কথা, এখানে কি করে? তার মানে মোহনা আপু বাসা থেকে পালিয়েছে। নাহ, আমি বেঁচে থাকতে এমন হতে দিবো না। দৌড়ে মোহনা আপুর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে দেখেই মোহনা আপু যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
মোহনা আপুঃ ও জিসান তুই এসে গেছোস? আমাকে একটু হেল্প কর ভাই, প্লিজ।
আমিঃ বাসা থেকে পালিয়ে এসেছো, আর তুমি বলছো আমাকে হেল্প করতে। তা কোনোদিন এই জিসান হতে দিবে না। এখনি চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দিবো।
মোহনা আপু ঠাস করে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
মোহনা আপুঃ বেয়াদব, আমার মুখের উপর কথা বলিস। তোর চামড়া আমি কুত্তারে বিলামু!
আমি কিছু বলতে যাবো, তখনি পিছনে অনেক মানুষের ঢল দেখলাম। তারা মোহনা আপুকে খুঁজতে বের হয়েছে।
মোহনা আপু আমার হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো।
আমিঃ আরে ছাড়ুন, কোথায় নিয়ে যান আমাকে?
মোহনা আপুঃ চুপ চাপ আমার সাথে চল তা না হলে, আমি সবাইকে বলেদিবো তুই আমাকে বাসা থেকে বের করে এনেছিস।
মোহনা আপুর কথা শুনে পুরো শরীর ঘেমে গেলো। কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা।
শেষ পর্যন্ত মোহনা আপুর সাথে চললাম। জানি না কি হবে এর শেষ ফল!
প্রেমিকার বড় বোনকে নিয়ে পালানো
আমিও এমন একটা মুহূর্তের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু সেটা মোহনা আপু নয়, সুমিকে নিয়ে। সুমি মোহনা আপুর ছোটো বোন। সুমির সাথে আমার দেড় বছরের রিলেশন। আমি তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু এখন সব গোলমাল হয়ে গেলো।
আমিঃ আমরা কোথায় যাবো, এখন?
মোহনা আপুঃ জানি না!
আমিঃ মানে কি? তাহলে কোথায় থাকবো সারারাত?
মোহনা আপুঃ আরে দূর, তার জন্যই তো তোকে এনেছি যে থাকার জায়গা ব্যবস্থা করতে!
আমিঃ কি বলেন এইসব! আমি কোথা থেকে মেনেজ করবো। না আপু, আমি বাসায় চলে যাই। আম্মু হয়তোবা টেনশন করতেছে।
মোহনা আপুঃ পায়ের ট্যাংরি ভেঙে ফেলমু বেশি কথা বললে।
এ কোন মছিবতের মধ্যে পরলাম। আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করো।
মোবাইলটা বেজে উঠলো পকেটে।
রাকিব ফোন করেছে। মোহনা আপুর কাছ থেকে একটু দূরে সরে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমিঃ প্লিজ বন্ধু, আমাকে বাঁচা আমি……
মাঝপথে থামিয়ে দিলো রাকিব।
রাকিবঃ তুই আগে বেটা আমাকে বাঁচা, মোহনা আপুকে নিয়ে পালিয়ে গেলি। এখন মোহনা আপুর বাবা তোকে না পেয়ে আমাদেরকে খুঁজতেছে। আমি এখন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেছি।
আমিঃ আরে তোদের কে বলেছে, আমি মোহনা আপুকে নিয়ে পালিয়ে আসেছে?
রাকিবঃ গ্রামের সবার মুখে মুখে একই কথা।
আমিঃ তুই বিশ্বাস কর বন্ধু, তুই তো জানোস আমি সুমিকে পছন্দ করি। তাহলে কেনো মোহনা আপুকে নিয়ে পালাবো?
রাকিবঃ তোর যে চরিত্র, তোর উপরে কোনো বিশ্বাস নেই। রাখলাম পারলে আমার জন্য দোয়া করিস আর ভাবিকে নিয়ে সুখে থাকিস। আমি এখন দৌড়ের উপর আছি।
রাকিব ফোনটা কেটে দিলো। রাকিবের পর রাসেল, সোহাগ, আশিক সবাই ফোন দিলো। আর সবার মুখে একই কথা, সবাই বাসা থেকে পালিয়ে গেছে।
প্রেমিকার রাগ
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। কি থেকে কি হয়ে গেলো? এখন গ্রামে ঢুকবো কিভাবে? হায়রে কপাল।
জানি না, আমার পরান পাখি সুমি কি বলতেছে আমাকে? তাই কিছু না ভেবেই সুমিকে নক করলাম।
সুমিঃ ওই শয়তান, হারামী, শালা বদমাশ, কুত্তা, তুই এতো দিন আমার সাথে রিলেশন করে আজকে আমার বোনরে নিয়ে পালিয়েছিস। তাও আবার বিয়ের আগের রাতে। তোকে একবার সামনে পাই, আমি তোকে বটি দিয়ে আলু কাটার মত কুঁচি কুঁচি করে জবাই করবো।
সুমির কথা শুনে আমি হতবম্ভ হয়ে পরেছি। যে মেয়ে আমাকে “বাবু, জান” কলিজা ছাড়া কথা বলে নি আর সে কিনা আজকে আমাকে গালি দিলো।
আমিঃ বিশ্বাস করো সুমি আমার কোনো দোষ নেই। আমি কিছুই জানি না।
সুমিঃ তোরে একবার বিশ্বাস করে সাত গলের পানি খেয়েছি। এবার বিশ্বাস করে কি নরকের পানি পান করাবি? আজ থেকে তোর আর আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ। যাহ, দূরে গিয়া মর।
সুমি ফোনটা কেটে দিলো। তারপর অনেকবার নক দিয়েছি। বার বার ওয়েটিং বলে। বুঝলাম, আমি সুমির ব্লক লিস্টে পরেছি।
তৎক্ষণাৎ আম্মুর ফোন….
আমিঃ হেল্লোও, আম্মু।
আম্মুঃ খবরদার, ওই মুখে আর আমাকে আর মা ডাকবি না। ছিঃ জিসান কেমনে পারলি এমন কাজটা করতে? মোহনার বাবা এসে আমাকে অপমান করে গেছে। আজ থেকে আমার কোনো ছেলে নেই, যা….!
আম্মুও ফোনটা কেটে দিলো।
নিরুপায় হয়ে মোহনা আপুর কাছে গেলাম, আমার মুখে কোনো কথা নেই। থাকবে কেমনে ঘর-বাড়ি সবই হারালাম এখন কোথায় থাকবো! একবার যদি মোহনা আপুর বাবার সামনে পরি, তাহলে আমাকে সরাসরি গুলি করে দিবে। তিনি সাবেক আর্মি অফিসার।
হৈ হৈ কাণ্ড রটনা
আমাকে চুপ থাকতে দেখে মোহনা আপু বলতে লাগলো,
মোহনা আপুঃ শুধু একটা রাতের জন্য থাকার ব্যবস্থা কর। সকালে আমি চলে যাবো। আমার বয় ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়েছি। সে শহর থেকে আসতেছে। সকালে আমাকে নিয়ে চলে যাবে। শুধু একটা রাত ব্যবস্থা কর!
আমিঃ বুঝলাম, একটা রাতের পর আপনি চলে যাবেন? তারপর আমি কই যামু?
মোহনা আপুঃ কেনো বাসায়?
আমিঃ গ্রামের সবাই বলে আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়েছি, তোমার বাবা আমার আম্মুকে হুমকি দিয়েছে। আম্মু আর আমায় বাসায় জায়গা দিবে না। রাকিব, রাসেল, সোহাগ, আশিক সবাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে!
মোহনা আপুঃ ওরা পালিয়েছে কেনো?
আমিঃ তোমার বাবা আমাদেরকে না পেয়ে ওদের কে খুঁজতেছে।
মোহনা আপুঃ Sorry, রে। একটু কষ্ট কর আমার জন্য। তারপর আমি আব্বুকে ফোন করে জানিয়ে দিবো যে তোর কোনো দোষ নেই। আমি তোকে বাধ্য করে নিয়ে গেছি।
আমিঃ আমি জানিনা কিছু, তোমার বাবা সাবেক আর্মি অফিসার। গ্রামের সবাই তার ভয়ে কাবু হয়ে যায়। আজকে সেই বাঘের মুখে আমি পা ফেলেছি, জানি না শেষ পরিণতি কি হবে?
মোহনা আপুঃ এখন কি এমন রাস্তায় রাস্তায় থাকবো? একটা কিছু কর?
আমিঃ কি করবো? আজকে রাতে এমন করেই থাকেন কালকে তো চলেই যাবেন?
মোহনা আপুঃ একটা থাপ্পর দিমু বেশি কথা বললে।
আমিঃ আমি কি করবো? আমার চেনা জানা কেউ-ই নেই এই গ্রামে। নিজের গ্রাম হলে একটা কথা ছিলো। এখন কি করি?
মোহনা আপুঃ দেখরে, তুই না ভাই আমার….
আমিঃ আমার একটা ফ্রেন্ড আছে। নাম মর্তুজা। একটু দূরেই তাদের বাসা। এক ভাই আর এক বোন, মা নেই। বাবা থাকে তাদের সাথে।
মোহনা আপুঃ তাদের বাবা কিছু বলবে না?
আমিঃ আঙ্কেলের এতো কিছু নিয়ে ভাবার বয়স নেই, আমরা বলবো মর্তুজাের ফ্রেন্ড। এখন চলেন।
মোহনা আপুঃ এই শুন না, বাবা যদি জানতে পারে আমরা সে বাসায় তাহলে আমার কি হবে?
আমিঃ সে কথা পরে ভাবেন, আগে বলেন আমার কি হবে? আপনি তার আদরের মেয়ে আপনাকে বড় জোরে দুইটা থাপ্পার মারবে। আর আমাকে তো সরাসরি ব্রাশ ফায়ার করবে।
মোহনা আপুঃ ভয় লাগছে রে…
আমিঃ তাহলে এখানেই থাকেন।
মোহনা আপুঃ না না, তোর বন্ধুর বাসায়ই চল।
মোহনা আপুকে নিয়ে মর্তুজাদের বাসায় রওয়ানা হলাম।
গার্লফ্রেন্ডের অভিশাপ
পথে দেখি সুমি অনেক বার ফোন করেছে।
সুমি আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি। নিজেই একগাল বলে আবার কেঁটে দিলো।
সুমির কথা গুলো ছিলো এরকমঃ
সুমিঃ “নিমক হারাম, তুই আমাকে ধোকা দিয়েছিস। আমার সাথে অভিনয় করেছিস। আমার সাথে রিলেশন করে আমার বড় বোনকে নিয়ে পালিয়ে গেছিস। তোকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না।”
আমি যে সুমির সাথে রিলেশন করি সেটা কিন্তু মোহনা আপু জানে না।
মোহনা আপুঃ কিরে তোরে এতো ফোন দেয় কে?
আমিঃ আর কে? গার্লফ্রেন্ড জেনে গেছে যে আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়েছি। এখন আর কি, প্যাচাল চলছেই!
মোহনা আপুঃ একটু কষ্ট কর ভাই, সবই ঠিক হয়ে যাবে। আর তুই তো আমাকে নিয়ে পালিয়ে আসিস নি। আমি নিজেই তোকে নিয়ে এসেছি।
আমিঃ সেটা কি জনগণ বুঝবে!
মোহনা আপুঃ আর কত দূর?
আমিঃ এইতো আর একটু,,
মোহনা আপুঃ আর পারছি না হাটতে!
আমিঃ তাহলে পালালেন কিভাবে।
মোহনা আপুঃ জানি না।
মর্তুজাদের বাসায় চলে আসলাম, তখন রাত ১০:১৩।
দরজায় নক করে একটা সংকেত দিলাম।
মর্তুজা এসে দরজা খুললো।
মর্তুজাঃ আরে জিসান তুই, মোহনা আপুও তো সাথে।
আমিঃ একটু বাইরে আয় তোর সাথে একটু কথা আছে।
মর্তুজাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর,
মর্তুজাঃ এ তো সাঙ্ঘাতিক কান্ড ঘটে গেছে।
আমিঃ প্লিজ বন্ধু, আজকে রাতের জন্য থাকার ব্যবস্থা কর। না হলে আমরা শেষ।
মর্তুজাঃ আরে এতো ভয় পাস কেনো, আমি আছি না। দাঁড়া বাবাকে বলে নেই।
আমিঃ তোর বাবা কিছু বলবে নাতো?
মর্তুজাঃ আরে না, তারপরও বলে রাখা ভালো।
আমিঃ ধন্যবাদ বন্ধু।
একটুখানি শান্তি
মোহনা আপুকে মর্তুজাের বোনের রুমে দিয়ে আসলাম।
এখন আমাকে নিয়ে চিন্তায় পরে আছি। কি হবে আমার? গ্রামে যাবো কিভাবে? আম্মু আব্বুকে কি বলবো? এসকল কিছু নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাত ১টা বেজে গেলো। চোখের কোণে ঘুমের দেখা সাক্ষাৎ নেই। অনেক সাধনার পর ঘুম আসলো।
সকাল না হতেই মোহনা আপুর ডাকা ডাকি।
মোহনা আপুঃ জিসান, ওই জিসান। কিরে উঠ, স্টেশন যাবি না? আমাকে এগিয়ে দিতে?
আমি ঘুমের ঘরে ঘড়ির দিকে তাকালাম, ৫টা বাজতে এখনো ১০ মিনিট বাকি।
আমিঃ এতো তাড়াতাড়ি কেনো?
মোহনা আপুঃ আরে কম দূরে না স্টেশন। যদি সকালে কেউ দেখে ফেলে তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাই এখনি যাওয়া লাগবে।
চোখে ঘুম এখনো টলমল করে, তারপরও উঠে স্টেশনের দিকে রওয়ানা হলাম।
পথে যে কত বার উস্টা খেয়ে পরেছি, তার কোনো হিসেব নেই। মোহনা আপু আমার এ অবস্থা দেখে বেশ মজা করে হাসতেছে। চলবে…
পরের পর্ব- প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ২