প্রকৃত ভালোবাসা শেষ পর্ব – রিয়েল লাভ স্টোরি: একটা বড় দায়িত্ব আমার কাধে এসে পড়েছে। ঠিক যেন পাতালপুরীর রাজকন্যাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার মত। জানি না যোগ্য কোন রাজকুমারের মত এই দুঃখী রাজকন্যাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে পারব কিনা।
বিয়ের প্রস্তুতি
হঠাৎ করে ফোনে কল এলো। প্রথম বার রিসিব করলাম না। কিন্ত দ্বিতীয়বার আবার কল দিলো। বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।
আমিঃ হেলো।
ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসচ্ছে কান্নার গুন গুন শব্দ। কান্নার শব্দ শোনে আমি চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালাম।
বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ হ্যালো, কে আপনি?
কিন্ত কেউ কোনো কথা বললো না। আবার কিছু বলতে যাবো তার আগেই কলটা কেটে দিলো।
চিন্তায় পড়ে গেলাম কে এই মেয়েটা, চিনি না জানি না হঠাৎ কল দিয়ে কান্না করার কোনো মানে হয়।
হঠাৎ আবার কল এলো।
এবার কল দিছে ম্যানেজার সাহেব। তাই আবার কল রিসিভ করলাম।
আমিঃ হেলো ম্যানেজার সাহেব, কি খবর বলুন?
মেনেজার স্যার আপনার কথা মতো। হল বুকিং করা হয়ে গেছে। আর আপনার বাড়িতেই ডেকোরেটর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব কাজ আজকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
আমিঃ গুড! আপনি সব দিকে নজর রাখবেন। সব কিছু দায়িত্ব আপনার।
মেনেজারঃ ওকে স্যার, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি খেয়াল রাখবো।
আমিঃ ওকে।
তারপর ফোন কেটে দিলাম। অফিস থেকে বেরিয়ে পরলাম। এখন যাবো, মার্কেটে বিয়ের জন্য সপিং করতে।
গাড়ি চালিয়ে এলাম বসুন্ধরা শপিং মলে। বিয়ের কেনাকাটা সম্পর্কে তেমন কোনো আইডিয়া নেই আমার। তাই বাধ্য হয়ে আমার অফিসের একটা মেয়ে কে কল দিলাম।
মেয়েটা আমার পি এ. নাম নেহা। অনেকক্ষণ পর মেয়েটা এলো। আমাকে শুভেচ্ছা জানালো।
তারপর নেহা আমাকে সাহায্য করলো। সব কিছু কেনা কাটা করতে। শাড়ি, গয়না কেনা হলো। একটা লাল শাড়ি কেনিছি। এটা শুধু বিয়ের দিন পরার জন্য। আর একটা নীল শাড়ি কিনেছি। আর আমার জন্য বরের কাপর চোপর যা যা লাগে আরকি।
তারপর আমি আর নেহা গাড়িতে বসে পরলাম। নেহাকে তার বাড়িতে পৌছে দিলাম। গাড়ি চালাচ্ছি এক মনে আর ভাবছি কাল থেকে মেয়েটার দুঃখের দিন এর পরি সমাপ্তি ঘটবে। আর আমি ও পাবো একটা মনের মতো মানুষ। যাকে আমি এতদিন ধরে খুজে আসচ্ছিলাম। আজ পযন্ত কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়নাই। কেনো তা জানি না।
হয়তো মহান আল্লাহ তায়ালা ওকে আমার জন্য রেখেছিলেন। যার কারণে কাউকে পছন্দ হয়নাই। শুধু ওকে ছাড়া।
মেয়েটার চোখ মুখে একটা মায়া আছে। যা আমাকে ওর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
তাই তো মেয়েটাকে আপন করে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাওয়ার জন্য এই মনটা উতলা হয়ে রয়েছে। নিজের অজান্তেই মুখের কোনে এক সুখের হাসি ফুটে উঠলো।
বউয়ের আগমন
হঠাৎ করে আর একটা ফোন এলো। এই নাম্বারটাও অচেনা।
গাড়িটা একটু সাইট করে থামালাম।
তারপর কলটা রিসিভ করলাম।
আমিঃ হ্যালো।
দালালঃ হেলো ব্রো, তুমি এখন কোথায়?
বুজতে পারলাম ওই দালালটা। যার কাছ থেকে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কিনে নিয়েছি।
তাই আমিও তার সাথে কথা বলায় মন দিলাম।
আমিঃ কেনো?
দালালঃ না মানে তুমি যেই ঠিকানায় আসতে বলেছিলে সেই ঠিকানায় এসে পরছি।
আমিঃ মেয়েটা কোথায়?
দালালঃ আমার পাশেই আছে। কিন্ত এই ঠিকানায় এসে যা বুজলাম। এখানে কারো বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তুমি কি সঠিক ঠিকানাটাই দিয়েছিলে?
আমিঃ হমমম আমি সঠিক ঠিকানাই দিছি। তুমি একটু ওয়েট করো। তোমার কাছে থেকে একটা লোক এসে মেয়েটাকে নিয়ে যাবে। তারপর তুমি চলে যেও কেমন!
দালালঃ ওকে ব্রো।
তারপর আমি ফোনটা কেটে তাড়াতাড়ি ম্যানেজার সাহেব কে কল দিলাম। ফোন রিসিভ করলো।
আমিঃ হেলো ম্যানেজার সাহেব, আপনি এখন কোথায়?
ম্যানেজারঃ স্যার আমি আপনার বাসায়। এখানের কাজটা গুছিয়ে দিচ্ছি।
আমিঃ গুড এখন একটু কষ্ট করে গেটের বাইরে যান। দেখবেন একটা লোক আর একটা মেয়ে দারিয়ে আছে। মেয়েটাকে আমার গেস্ট রুমের রাখার ব্যবস্তা করুন। খেয়াল রাখবেন ওনার যাতে কোনো প্রকার কষ্ট না হয়। । আপায়নে যাতে কোনো প্রকার কমতি না থাকে। আর শুনেন। শুধু মেয়েটাকে সঙ্গে নিবেন। লোকটা কে ভেতরে ডুকতে দিবেন না কথাটা মনে থাকে যেনো।
ম্যানেজারঃ ওকে স্যার আমি এখুন্নি যাচ্ছি, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
আমিঃ ফোন দিয়ে জানাইয়েন।
ম্যানেজারঃ ওকে স্যার।
তারপর ফোনটা কেটে দিলাম।
ভয়ানক সারপ্রাইজ
এবার একটু শান্তির নিশ্বাস ফেললাম। মেয়েটা যখন জানবে কালকে ওর আর আমার বিয়ে। তখন হয়তো খুশির ঠেলায় কাদবে অনেক। আর কিছু না ভেবে গাড়িতে বসে পরলাম। আপন মনে গাড়ি চালিয়ে অফিসে চলে এলাম। অফিস আজকে পুরো খালি। সবাই ব্যস্ত সাজ খোজ করতে। কারণ কালকে আমার বিয়ে। সবার দাওয়াত আছে যে তাই।
কেবিনে গিয়ে একটু গা হেলান দিয়ে বসে পরলাম।
তারপর ম্যানেজার সাহেব কল দিলো। আর বললো মেয়েটাকে আমার কথা মতো গেস্টরুমে রাখা হয়েছে। আর খাবার দাবার ও দেওয়া হয়েছে। কিন্ত ওনি আরো বললেন। মেয়েটাকে নাকি ওনি দেখতে পারেন নাই। কারণ মেয়েটা তখন কালো বোরকা পরেছিলো। আমি ম্যানেজার সাহেব কে বললাম, মেয়েটা পর্দাশিলতো, তাই।
তারপর আরো কিছু কথা হলো। পরে ফোন কেটে দিলাম। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। আমার লাঞ্চটা অফিসেই করলাম। বাইরে থেকে খাবার এনে খেয়ে নিলাম।
সন্ধ্যার পর…..
হঠাৎ আমার বাড়ির ল্যানলাইন থেকে আমার নাম্বারে কল এলো।
আমি বুজতে পারলাম, এটা মেয়েটা ছাড়া আর কেউ নয়।
তাই খুশি মনে কলটা রিসিভ করলাম। আবার সেই একি গলার আওয়াজ, আর কান্নার গুন গুন শব্দ। এখন বুজতে পারলাম। তাহলে সকালে মেয়েটাই ফোন করেছিলো।
এখন যদি সাবধানে কথা না বলি তাহলে মেয়েটা বুঝে যাবে এটা আমার কাজ। আমি ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে রেখেছি। তাহলে তো মজাটাই থাকবে না।
আমি তো ওকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। তাই আমি মেয়েটাকে বললাম,
আমিঃ হেলো কে?
নীলিমাঃ আমি।
আমিঃ আমি কে?
নীলিমাঃ চিনতে পারছেন না। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন। যার সাথে দুটি রাত থাকলেন তাকে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে ভুলে গেলেন?
আমিঃ ও তুমি সরি সরি বুঝতে পারিনি। আসলে একটু কাজে বিজি তো, তাই। আচ্ছা বলো, কিছু বলবে।
নীলিমাঃ হমমম।
আমিঃ বলো, তাহলে কি বলবে?
নীলিমাঃ হয়তো আমাদের আর দেখা হবে না। হয়তো হবে না তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখা। হয়তো তোমাকে ভালোবেসে আর আপন করে পাবোনা।
নিজের অজান্তেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলছি। তোমাকে নিয়ে আমি এই দুই দিনে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্ত এখন আর সেই স্বপ্নটা পূরণ করা সম্ভব না।
কারণ, আজকে আমি চিরতরে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি। জানো, কেনো? সেই, লোকটা আমাকে আজকে একটা অন্য লোকের কাছে বিক্রি করে দিয়ে গেছে। আর আমি আমার সব কিছু শুধু তোমার নামে লিখে দিয়েছিলাম। তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ আমাকে ছুবে। এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। তাই নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমাকে এই পথটা বেছে নিতে হলো। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। জানো, কালকে যখন বৃষ্টির রাত ছিলো সারারাত আমি তোমার বুকে ছিলাম। কারণ তোমার বুকে আমি সব থেকে বেশি নিজেকে নিরাপদ মনে করি।
আমি তো আর থাকবো না আমার একটা উপকার করবে। আমি মারা যাওয়ার পর আমাকে তোমার বুকে একটু জরিয়ে ধরো। তাতে আমি মরেও শান্তি পাবো।
আচ্ছা ভালো থেকো, যাওয়ার আগে শুধু একটাই কথা বলছ্ খুব ভালোবাসি তোমাকে।
টুটুটু…,ফোনটা কেটে গেলো।
রাজকন্যাকে উদ্ধার করার পথে
আমি বাকশক্তি হীন হয়ে পরলাম। মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্তা হয়েছে। এটা আমি কি শুনলাম। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। না না এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
আমি তো ওকে আপন করে পাবার জন্য এই কথাটা লুকালাম। এখন তো দেখছি ও নিজেই ভুল বুজে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওর যদি কিছু হয় তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
আর কিছু ভাবতে পারছি না। সব কিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে আসচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে. রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দ্যেশ যাওয়ার জন্য। গাড়ি চালাচ্ছি, রাস্তা যেনো ফুরাচ্ছে না। মনের ভেতর ভয়টা দিগুন ভাবে বেড়ে গেলো। গাড়ির স্পীট আরো বাড়িয়ে দিলাম।
যথাসময়ের আগে বাড়িতে চলে এলাম।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলাম বাড়ির ভেতর। প্রথমেই গেস্ট রুমের ভেতরে গেলাম। গিয়ে দেখি পাগলিটা ফ্লোরে বসে দুই হাটুর মাজে মুখ লুকিয়ে কাদছে। আমি একটু শান্তি পেলাম। কারণ ওর কোনো ক্ষতি হয় নাই।
ও যদি এখন নিজের কোনোক্ষতি করে ফেলতো তাহলে হয়তো আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারতাম না।
দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি।
মেয়েটা মুখ তুলে তাকালো আমার দিকে। আমাকে দেখেই, দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলো। আমিও মেয়েটাকে পরম যত্ন সহকারে বুকের মধ্যে চেপে ধরলাম।
মেয়েটা ফুপিয়ে কাদছে আর কান্না স্বরে আমাকে বলল…
নীলিমাঃ তুমি এসোছো, প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে।
আমিঃ আরে আরে এভাবেই কেউ বাচ্চাদের মতো কাদে নাকি? কান্না থামাও বলছি, থামাও? (ধমক দিলাম)
নীলিমাঃ ….. (চুপ করে রইলো)
আমিঃ আর কোনো চিন্তা নেই, এখন আর কেউ তোমাকে কিছু করতে পারবে না। আমি এসে পরছিতো।
নীলিমাঃ জানো, আমি খুব ভয় পেয়েছি। যখন ওই দালালটা আমাকে এখানে রেখে চলে গেলো, তখন মনে হয়েছিলো আমি আর কোনদিন তোমার দেখা পাবোনা। এই কথা ভেবে খুব কাদছি।
আমিঃ এখন আর কাদতে হবে না। আমি এসে পরছি আর তোমার চোখে জল আসতে দিবো না।
তারপর ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম। ও আমার গলা জরিয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তারপর আমি ওকে খাটে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলাম।
আর বললাম,
আমিঃ এখন তুমি ঘুমাও, দেখি। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
রূপকথার স্বপ্নের রাজ্যে
মেয়েটি আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরলো যে, আমি ওর পাশে শুয়ে পরতে বাধ্য হলাম। তারপর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। আর ও আমার বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে ঘুম দিলো। আমি ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলাম। দেখতে দেখতে আমি ও ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।
খুব সকালে যখন উঠি তখন দেখি মেয়েটি নামাজ পরতাসে। কিন্ত আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো, তাই আমি আবার শুয়ে পরতেই ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল যখন ১০ বাজে, তখন পাশের টেবিলের উপর রাখা আমার ফোনটার রিংটন স্পস্ট আমার কানে ভেসে আসচ্ছিলো। ঘুম ঘুম চোখে যেই উঠতে যাবো তখনই অনুভব করলাম কোনো ভারি জিনিস আমার বুকের উপরে রয়েছে।
যার কারণে উঠতে পারছিলাম না। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি, মেয়েটা আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। পুরো বাচ্চাদের মতো লাগছিলো তাকে। এক নজরে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। আমি একটু নরতেই। মেয়েটি ও একটু নড়ে আমাকে আরো শক্ত ভাবে জরিয়ে ধরলো। তখন খুব হাসি পাচ্ছিলো ওর এমন একটা বাচ্চা বাচ্চা রূপ দেখে।
আবার ফোনটা বেজে উঠলো।
মেয়েটিকে ডাকিনি, শুয়ে আছে শুয়ে থাক। আমি হাত বাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব কল দিসে।
আমিঃ হেলো।
ম্যানেজারঃ গুড মরনিং স্যার।
আমিঃ মরিং।
ম্যানেজারঃ স্যার আপনার কথা মতো অফিসের কিছু মেয়েদের আপনার বাড়িতে পাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা যেকোনো মুহুতে আপনার বাসায় পৌছতে পারে। আর আপনার সব বন্ধুদের. কেউ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সঠিক সময়ে পৌছে যাবে।
আমিঃ ধন্যবাদ আপনাকে।
তারপর আরো কিছু কথা বলে ফোনটা কেটে দিলাম। আসলে কিছু মেয়েদের আসতে বলেছি এই আমার হবু বউটা কে সাজানোর জন্য।
আমি মেয়েটাকে ডেকে তুললাম।
আমিঃ এইযে মহারানি এখন কি উঠবেন নাকি আরো ঘুমানোর ইচ্ছা আছে।
নীলিমাঃ উমমম উমমমম আপনি কখন উঠলেন?
আমিঃ এই মাত্র। এখন একটু ফ্রেশ হয়ে আসুন আপনার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
স্বামী স্ত্রীর সুন্দর মুহুর্ত
মেয়েটা আমার উপর থেকে উঠে পরলো। ঘুম ঘুম ভাব এখনো আছে।সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি সেটা?আমি বলছি একটু পর দেখতে পাবেন। এখন গিয়ে একটু ফ্রেশ হন। তারপর আমি ও ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এসে দেখি মেয়েটা সোফায় বসে আছে। আমাকে কিছু বলতে যাবে মেয়েটা।
ঠিক তখন ই….
মেন দরজা কলিং বেল বাজানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখলাম, সব মেয়েরা এসে পরছে।
তারা সবাই আমাকে গুড মরনিং বলে ভেতরে ডুকলো। আমি তাদের রুমে নিয়ে গেলাম। তারপর সবাই কে মেয়েটাকে দেখিয়ে বললাম। এই হচ্ছে আমার হবু বউ এনাকে সাজানোর জন্যই আপনাদের ডাকা হয়েছে। এনাকে খুব সুন্দর করে সাজান তো। সবাই মেয়েটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিলো।
আর বলাবলি করছিলো। খুব সুন্দর দেখতে দুজনকেই বেশ ভালো মানিয়েছে।
মাঝখান থেকে মেয়েটা বলে উঠলো।
নীলিমাঃ এসবের মানে কি? আমি তো কিছুই বুজতে পারছি না।
আমিঃ কিছু বুজতে হবে না। শুধু তৈরি হয়ে নাও। আজকে তোমার আর আমার বিয়ে। তাই এরা তোমাকে সাজাতে এসেছে।
মেয়েটি চুপ হলে গেলো।
এর মধ্যে আমার পি এ নেহা বলল,
নেহাঃ স্যার, এবার আপনি এখান থেকে যান। আমরা মেডাম কে সাজাবো, বিয়ের পর অনেক দেখতে পারবেন। এখন আপনি আসুন।
আমি আর কোনো কথা বাড়ালাম না। শুধু ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘর তোকে বের হওয়ার আগে ওর মুখে একটু খুশির ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম।
তারপর আস্তে আস্তে দুপুর হয়ে গেলো। মেয়েটা বিয়ের কনে সেজে বসে আছে আমার পাশে আর আমি বর সেজে। বন্ধুরা সব মেয়ে পটাতে বিজি।
কিন্ত আমি, আমার জীবন সঙ্গী কে আপন করে পেয়ে গেছি। আমার আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। আজ নিজেকে সত্যি ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। সবাই চলে যাওয়ার পর।
আমি আর মেয়েটা এখন এক সাথে ছাদের দোলনায় বসে জোৎছনা বিলাস করছি । আমি মেয়েটার কোলে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে বসে রয়েছি।
মেয়েটা আমার মাথার চুল গুলো সাথে খেলায় করায় ব্যস্ত।
আমি মেয়েটাকে বললাম,
আমিঃ আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি কালকে রাতে মারা যাওয়ার কথাটা বলেছিলে কেনো? তুমি কি জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম।
নীলিমাঃ জানি! কিন্ত তোমাকে বাড়িতে আনার আর কোনো উপায় ছিলো না আমার কাছে।
আমিঃ কি তার মানে তুমি জানতে এটা আমার বাড়ি আর তোমাকেই আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি।
নীলিমাঃ হমমমম, জানতাম। তাই তো ফোন করে ওগুলো বলছি।
আমিঃ কিন্ত কি করে, আমি তো ওই লোকটাকে কিছু বলতে বারণ করেছিলাম। আর ওই লোকটাও জানতো না যে, তোমাকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি। (দালাল এর কথা বললাম)
নীলিমাঃ লোকটা আমাকে কিছু বলেনি। যা বলেছিলো তোমার পাটানো ভদ্র লোকটা সব কিছু বলেছিলো। (ম্যানেজারের কথা বললো)
আমিঃ মানে, কি বলেছিলো শুনি।
নীলিমাঃ আমি যখন বাড়ির ভেতরে প্রথমে পা রাখি। তখন দেওয়ালে টাঙানো তোমার ফ্যামিলি ছবি সহ তোমাকে দেখতে পাই। তখন বুজতে পারি এটা তোমার বাড়ি। কিন্ত বিয়েটা কার হচ্ছে এটা বুজতে পারিনি।
তাই তোমার ওই লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম। এখানে কার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। ওনি বলেছেন ওনার বসের। তারপর ওনার বসের নাম জিজ্ঞেস করাতে তোমার নাম সহ ছবি দেখালো আমাকে। তখন আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। কারণ আমি তোমাকে অনেক আগে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্ত তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে অথচ, তোমার এত কাছে থেকেও তোমাকে কিছু বলতে পারিনি।
যখন বুকে একরাশ কষ্ট নিয়ে ভদ্র লোককে জিজ্ঞেস করলাম,
মেয়েটার নাম কি। তখন ওনি আমার নাম বলেছিলেন।
বিশ্বাস করো তখন আমি খুশিতে আত্নহারা হয়ে পরেছিলাম। যখন লোকটা আমাকে ঘরে রেখে চলে গেলো। তখন তোমার ছবি টাকেই জরিয়ে ধরেছিলাম।
কারণ তখন এই পৃথিবীতে আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ ছিলো। পরক্ষণেই মনে পরলো। তোমার নাম্বার তো আমার কাছে আছেই। তাহলে ছবিটা জরিয়ে ধরে লাভ কি। তার চেয়ে বরং ছবির ভেতর মানুষটাকে জরিয়ে ধরি।
তাই তোমাকে ফোন করি। তারপর মারা যাওয়ার কথা বলতেই তুমি ছুটে চলে এসেছিলে। তাই তো তোমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কারণ কাল রাতে আমি সব থেকে আরামে ঘুমিয়েছিলাম। বিশ্বাস করো তোমার বুকে নিজের সুখ খুজে পেয়েছিলাম।
আর সারাজীবন আমি শুধু তোমার বুকেই থাকতে চাই। এই বুকে যেনো আর কারো জায়গা না হয়। হলে কিন্ত খবর আছে বলে দিলাম।
রোমান্টিক ভালবাসার জীবন
আমি ওর কোল থেকে উঠে বসলাম। অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ও লজ্জায় মাথায় নিচু করে। ওর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে আমি নতুন করে ওর প্রেমে পরে গেলাম।
আমি বললাম,
আমিঃ এইযে, লজ্জাবতি এতটা ভালোবাসো তুমি আমাকে। এখন আমি কি একটু ভালোবাসতে পারি আপনাকে।
নীলিমাঃ হমমমম পারেন।
আমি মেয়েটাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলাম। মেয়েটা আমার গলা জরিয়ে ধরলো। চোখে চোখ পরতেই মেয়েটা লজ্জায় আমার বুকের মধ্যে লুকালো।
আমি তাকে নিয়ে চলে এলাম বাসর ঘরে।
বিছানার উপর বসিয়ে দিলাম। তারপর সে আমাকে বলল,
নীলিমাঃ আচ্ছা, আপনি কি সারাদিন অফিসেই থাকেন।
আমইঃ চুপ এখন আবার আপনি করে বলছো কেনো, তুমি করে বলবে।
নীলিমাঃ ও সরি তা তুমি কি সারাদিন অফিসেই থাকো।
আমিঃ হমমম বেশির ভাগ সময় অফিসেই দিতে হয়। এখন তো বিয়ে হয়েছে। এখন আমাকে একটু সময় দেবার চেষ্টা করো। তুমি তো জানো আমি একা থাকতে ভয় পাই।
আমিঃ আচ্ছা, দিবো।
নীলিমাঃ আর একটা জিনিস চাইবো দিবে।
আমিঃ হমমম বলো।
নীলিমাঃ মানে আসলে তুমি যখন বাসায় থাকবেনা। তখন আমি একা একা কিভাবে, তাই বলছিলাম কি?
আমিঃ কি বলো।
নীলিমাঃ বলছিলাম কি, আমার একটা বাবু চাই।
বলেই আমার বুকের মধ্যেই মুখ লুকিয়ে নিলো।
আমি কথাটা শুনা মাত্রই হেসে দিলাম।
হেসে হেসে বললাম,
আমিঃ এই কি বললে আরেকবার বলো তো দেখি।
মেয়েটি আমার বুকে কিল মেরে বলল,
নীলিমাঃ ওই ঢং করবা না। আমি বলছি আমার বাবু চাই। কারণ তুমি সারাদিন বাসায় না থাকলে, কার সাথে কথা বলবো মজা করবো। আর পরে তোমার আর আমার জগরা হলে আমাকে কে বাচাবে।
আমার বাবু হলে আমি আর বাবু মিলে তোমার সাথে ঝগড়া করবো। তোমাকে জালাবো।
আমিঃ তাই নাকি, তাহলে তো একটা বাবু দিতেই হয়।
নীলিমাঃ এই এই কি করছো ছাড়ো, ছাড়ো বলছি।
আমিঃ উমমমমমমমমা.. চুমু খেলাম।
নীলিমাঃ পাজি ছেলে তোমাকে…
ও আর কিছু বলার আগেই আমি ওকে জরিয়ে ধরে বুকের মধ্যে টেনে ধরলাম।
~সমাপ্ত~
আরও পড়ুন- অবৈধ প্রেম – পর্ব ১