প্রকৃত ভালোবাসা পর্ব ২ – রিয়েল লাভ স্টোরি: জীবনে ফূর্তি করার জন্য এই প্রথম আমি একটু অন্ধকার জগতে পা বাড়ালাম। কিন্তু কিসের কি? উল্টো দয়া মায়ার জালে পড়তে হচ্ছে। ভীষণ ভালো লেগেছে মেয়েটাকে, যে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বে তাকে ভোগ করতে। তবে আমার মানবিকতা আর নীতি বলে কিছু একটা ছিল যা আমাকে শান্ত করেছে। জানি না কি হবে?
ভুল বুঝাবুঝি সম্পর্ক
অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ এরকম করলো কেন? আমি তো ওর সাহায্য করলাম। উল্টো আমাকেই চড় খেতে হলো। মেয়েটা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো। ফর্সা সুন্দর গোলাকার চেহারাটা একটু লাল বর্ন ধারণ করেছে।
আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুটা ভ্রুকুচকে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমিঃ মারলেন কেন? (গালে হাত দিয়ে)
মেয়েটা রাগি স্বরে জোরে চিল্লান দিয়ে বলে,
মেয়েটাঃ তোর সাহস কি করে হলো, আমার অনুমতি ছাড়া আমার গায়ে স্পর্শ করার?
ওর কথা শুনে আমি খানিকটা চমকে উঠে ‘বলে কি মেয়েটা’
আমি কিছুটা অন্যটাইপের ছেলে। কোনো মেয়েদের সাথে তেমন একটা খারাপ ব্যবহার করতে পারিনা। আমার শিক্ষা আমাকে তাই শিখিয়েছিলো। নারীদের সম্মান করো। তাদের জায়গা সবার শীর্ষে।
তাই আমি মেয়েটাকে বললাম,
আমিঃ তুমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে ছিলে। তাই আমি তোমার জ্ঞান ফিরাতে সাহায্য করছি। বিশ্বাস করো, এর বেশি কিছু করি নি বা অন্য কিছু করার মতলব ও ছিলো না।
কারণ আমি কারো উপর জোর খাটাই না। তোমার ইচ্ছাকে আমি সম্মান করি। তাই তোমাকে কিছু করার চিন্তাও আনিনি মাথায়।
মেয়েটা চুপ হয়ে গেলে। মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।
মেয়েটার কান্না দেখে আমার খুব মায়া লাগছে। এত সুন্দর একটা মেয়ে। যে হাসলে মনে হয় মুক্তা ঝরে। আর সে এখন কাদচ্ছে। মনে হচ্ছে, নীল আকাশটা কালো মেঘের ছায়ায় ডাকা পরে গেছে।
অতীত জীবনের গল্প
আমি মেয়েটার একটু কাছে গেলাম। তখনও মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদচ্ছিলো। আমি মেয়েটার হাতে হাত রেখে বললাম। আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।
মেয়েটা একটু কান্না স্বরে আমাকে সরি বলল,
তখন খুব মায়াবি লাগছিলো। চোখের কাজল গুলো নোনাজলের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। মেতে উঠেছে একে অপরকে রাঙানোর জন্য।
খুব কষ্ট হচ্ছিলো তখন মেয়েটার কান্না দেখে। মেয়েটাকে অনেক বার বললাম কান্না থামানোর জন্য। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না।
অবশেষে একটা ধমক দিয়ে কান্না থামাতে বললাম। মেয়েটা ধমক খেয়ে কান্না থামিয়ে দিলো।
এবার আমি তাকে বললাম,
আমিঃ আচ্ছা, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না, তুমি কোনো পতিতা নারী। যদি পতিতা নারি হতা তাহলে নিজেকে এইভাবে রক্ষা করতে চাইতা না।
তোমার ভেতর নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে, কি সেটা বলো, প্লিজ। যার জন্য তুমি এই পাপি এালাকায় পা রেখেছো।
মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে দীর্ঘশ্বাস ছেরে আমাকে বলল,
মেয়েটিঃ জানতে চান আমার রহস্য।
আমিঃ হমমম।
ওকে শুনন তাহলে…
মেয়েটিঃ আমি আমার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে, কক্সবাজার থাকতাম। আমার বাবা একজন জেলে ছিলেন। আর মা অন্যের বাসায় কাজ করতো।
আমি তখন ইন্টারে পরি। বাংলা পড়ার পাশাপাশি, মায়ের কাছে থেকে আরবি শিক্ষাও গ্রহণ করেছি।
একদিন বাড়িতে খবর এলো, বাবাকে নাকি আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেদিন আমি আর মা মিলে বাবা অনেক খুজাখুজি করি কিন্ত পায়নি।
অবশেষে বাধ্য হয়ে থানায় রিপোট করি।
দুই দিন পরে বাবার মৃত দেহ পাওয়া গেলো, সমুদ্রের ধারে।
বাবার লাশ দেখ, মা পুরোপুরি কান্নায় ভেঙে পরে। ধীরে ধীরে মা অসুস্ত হয়ে পড়ে। একদিন রাতে মা বাবার কথা ভেবে কান্না করে।
পরেরদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি মা মাটিতে পরে আছে। মাকে ডাক দিতেই বুজতে পারলাম, মা আর বেচে নেই। পুরো পৃথিবীতে একলা হয়ে পরলাম। মা-বাবার কবরের পাশে বসে রোজ কান্না করতাম।
মা যেই বাসায় কাজ করতো। আমি ও সেই বাসায় কাজ করতাম, পেট চালানোর জন্য। একদিন ঘড় ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। এমন সময় একটা প্রাপ্তবয়স্ক লোক এলো আমার ঘড়ে। আমি তাকে বসতে দেই।
পরে ওনি আমাকে নানান ভাবে আশ্বাস দেয়। এবং ওনার সাথে আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
কিছুদিন ওনার বাড়িতেই আমাকে রাখেন।
বলেছিলো, আমাকে একটা ভালো চাকরির ব্যবস্তা করে দিবে। কিন্ত গত পরশু, ওনি আমাকে এখানে রেখে চলে যান। আপনাকে যেই লোকটা এখানে এনেছেন। ওনি ওই লোকটা অনেক টাকা দিয়েছিলেন।
প্রথমে বুজতে পারিনি, কিন্তু পরে ঠিকই বুজতে পেরেছি ওনি আমাকে এই পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়ে গেছেন। আর আজকে আপনি, প্রথম আমার কাস্টমার হয়ে এলেন।
এর পর মেয়েটা আর কিছু বলল না। চুপ করে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতেচ্ছিল।
মায়া ভরা মন
মেয়েটাকে শান্তনা দেওয়ার মতো, আমি ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। কি বলে ওকে শান্তনা দেওয়া উচিৎ এখন। বিধাতা সত্যি মানুষের জীবনটাকে কতো কঠিন করে দিয়েছেন।
ওনি এত নিষ্টুর কি করে হতে পারলেন।
সব কিছু কেড়ে নিয়ে মেয়েটাকে এতিম বানিয়ে দিলেন। কি বা এমন দোশ করেছিলো মেয়েটা। যার জন্য আজকে মেয়েটার জায়গা এই অপবিত্র স্থানে।
মেয়েটার সব কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগছিলো।
আমি ও এই পুরো দুনিয়ায় এতিম। তাই এতিম হওয়ার কষ্ট আর যন্তনাটা আমার থেকে ভালো কেউ বুজবে না। পার্থক্য শুধু এটাই। আমি ধনীর সন্তান হয়ে জন্মেছি আর ও গরিবের।
হঠাৎ আমার চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল এসে উকি দিলো। বুকের ভেতরটা কেমন ককিয়ে উঠচ্ছে। বুজতে পারছিনা কেনো এমন হচ্ছে। কেনো বা ওর জন্য আমার এতো কষ্ট হচ্ছে।
হাহাকার করে উঠচ্ছে বুকের চারিপাশ। চোখের জল গুলো, নিজের অজান্তেই গরিয়ে পরলো। আমি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলাম।
দীর্ঘশ্বাস টেনে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করলাম।
সে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল তার নাম। নীলিমা তাব্বাছুম।
আমি তার হাতের উপর হাত রেখে বললাম,
আমিঃ আচ্ছা, তাহলে এখন শুয়ে পরো। আমি এখানটাই একপাশে শুয়ে পরছি। (মেজের দিকে ইশারা করে বললাম)
মেয়েটা কোনো কথা বলল না চুপ করে শুয়ে পরলো।
আমি একটা বালিশ নিয়ে মেজেতে শুয়ে পরলাম।
মেয়েটা এখনো কাদচ্ছে ওর কান্নার গুন গুন শব্দ আমার কানে ভেসে আসচ্ছে। আমি শুধু শুয়ে শুয়ে ভাবছি?
এইভাবে একটা মেয়ের জীবন কি শেষ হয়ে যাবে। সে কি এইখানেই এভাবে টুকরে টুকরে মরবে। প্রতিদিনই কি সে কারো না কারো খাদ্যে পরিনিত হবে।
আজ না হয় আমার মায়া লাগচ্ছে। কিন্ত বাকি সবার তো মায়া না ও লাগতে পারে। তারা তো নিজের চাহিদাটাকে বড় করে দেখবে।
পরক্ষনেই আবার একটা চিন্তা মাথায় এলো। আচ্ছা, আমার তো কোনো টাকা পয়সার অভাব নেই। আমি তো চাইলেই মেয়েটাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারি।
কিন্ত, এইসব দালালরা খুবই খারাপ ধরনের হয়। এদের গ্যাং অনেক বড় থাকে। এদের সাথে হয়তো আমি একা পেরে উঠবো না।
আস্তে আস্তে আমার চোখের পাতা গুলো মিলে একাকার হয়ে গেলো। আর কিছুই ভাবতে পারলাম না। খুব সকালে মিষ্টি মধুর কন্ঠে আমার কাচা ঘুমটা ভেঙে গেলো।
প্রথম ভালোবাসার দায়িত্ব
ভোরের আলোও তখন ফুটেনি। চোখে সব কিছু তখন ঝাপসা ঝাপসা দেখছিলাম।
চোখটা ডলে পাশে তাকাই। তাকিয়ে আমি, হতবাক হয়ে যাই।
কালো একটা কাপর পড়া মেয়ে বসে বসে কুরআন তিলায়ত করছে। থ মেরে গেলাম আমি।
আমার আর বুজতে বাকি রইলো না, যে এটাই সেই মেয়েটা। কালো বোরকা পড়াতে, একটু ও চিনতে পারছিলাম না। চোখ গুলো দেখাই যাচ্ছেনা। এমনকি শরীরের একটা অংশ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ করে মেয়েটার মিষ্টি মধুর কন্ঠটা আমার কানে ভেসে আসলো।
নীলিমাঃ আসসালামু আলাইকুম কখন উঠলেন।
ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম। মেয়েটা তার হাত দিয়ে বুকের মধ্যে কুরআন শরীফটা আগলে রেখেছে।
আমি শুধু অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওর সালামের উত্তরে আমি শুধু মাথা নাড়িয়েছিলাম।
পরক্ষনেই আবার ভাবলাম। এমন একটা সৎ চরিত্রের মেয়ে যার জীবনটা এই পতিতালয়ে শেষ হয়ে যাবে এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
হঠাৎ দরজায় টোকা পরলো। আমার ঘোড় কেটে গেলো। আমি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দেখলাম সেই দালালটা দাড়িয়ে হাসছে।
দালালঃ কি ব্রো রাত কেমন কাটলো?
আমিঃ ভালো।
দালালঃ হমমম এখন আপনার যাবার সময় হয়ে গেছে। এখন নিউ কাস্টমার ওয়েট করছে ওর জন্য।
কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। এমন মনে হলো, পায়ের তলার মাটি কেমন থর থর করে কাপতে শুরু করলো। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
এইভাবে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে ।আমার চোখের সামনে তা কিছুতেই হতে পারে না। কি করবো বুজতে পারছিলাম না।
মেয়েটা আমাদের দিকে তাকিয়ে সব কিছু দেখছিলো। ও হয়তো বুজতে পেরেছে দালালটা কি বলছে।
আমি দালাল কে একটু বাইরে নিয়ে গেলাম। দালাল অবাক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো?
দালালঃ কি বেপার কি ব্রো?
আমিঃ বেপার কিছু না শুনো এই মেয়েটাকে আমার ভালো লাগছে। আমি প্রতিদিন এই মেয়ের সাথে রাত কাটাবো। আমি ছারা কেউ যেনো এই মেয়ের সাথে রাত কাটাতে না পারে।
দালালঃ ও মাই গড। এতই ভালো লাগছে তোমার।
আমিঃ হমমম, তুমি তোমার টাকা পেয়ে যাবে। বাট ওর কাছে অন্য কোনো পুরুষ কে আসতে দিবে না।
দালালঃ ওকে ব্রো তাই হবে। কিন্ত এখন কিছু এডবান্স দিলে ভালো হতো।
পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে সাথে সাথে ২০০০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললাম,
আমিঃ চলবে তো।
দালালঃ চলবে না বস, দৌড়াবে।
দালালটা চলে গেলো।
আমি ঘরের ভেতরে ডুকতে যাবো। ঠিক তখন মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়ায়।
কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো।
কিন্ত তারপর…….
চলবে….
পরের পর্ব- প্রকৃত ভালোবাসা পর্ব ৩