না পাওয়া ভালোবাসার গল্প

অপ্রাপ্তি – না পাওয়া ভালোবাসার গল্প

অপ্রাপ্তি – না পাওয়া ভালোবাসার গল্প: কবি বলেছেন, “জীবনে যে কাউকে একবারও ভালোবাসলো না সে যেন একটা অমূল্য অনুভূতি হারালো।” কিন্তু এটা সত্য না যে সব ভালোবাসাই সার্থক হবে। এমনি কিছু চাওয়া পাওয়া আর প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে আজকের এই গল্প।

পর্বঃ ০১

ছাত্রীকে অংক করতে দিয়ে, তার ইংরেজী বইটা হাতে নিতেই বই থেকে একটা ছবি নিচে পড়ে গেল। আমি ছবিটা, হাতে নিতেই দেখতে পারলাম, ছবিটা আমার! ছবির নিচে ছোট্ট করে লেখা ভালবাসি তোমায়! ছবিটা যেখানে ছিল ঠিক সেখানেই রেখে দিলাম। ইসরাত আড় চোখে তাকিয়ে আবারো অংক করায় মন দিল। এসির মাঝেও শরীরটা ঘামছে! ইসরাতর দিকে তাকিয়ে দেখি সে আজ নীল শাড়ি পড়েছে! দিন দিন মেয়েটার পাগলামি কেন জানি বেড়েই চলছে।

_ স্যার এই নেন খাতা, অংক করা শেষ।
_ অংক দেখছি।
_ এমন সময় ইসরাত বলল, স্যার আজ আমাকে কেমন লাগছে?
_ ভালো।

_ শুধু ভালো আর কিছু না? স্যার আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে? সুন্দর না?
_ অংকে দিনদিন খারাপ করছ তুমি। কিন্তু কেন?
_ স্যার আপনাকে অংকের কথা বলিনি। স্যার আমার দিকে তাকান।
_ হুম। কি বলবে বলো।

_ আচ্ছা স্যার, পৃথিবীতে সকল মানুষ সমান তাই না?
_ হুম সমান।

_ স্যার সবাই যদি সমান থাকে, তাহলে ধনী হয়ে গরীবকে কেন ভালবাসা যায় না?
_ ইসরাত, তোমার না টেস্ট পরিক্ষা। তা কত তারিখ থেকে?
_ স্যার আমার প্রশ্নের উওর পায়নি?
_ এমন সময় কাজের মেয়েটা এসে চা আর পাঁচ_ সাতটা বিস্কুট দিয়ে গেল! স্যার খেয়ে নিয়েন।

_ আমি কাজের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুঁচকি একটা হাসি দিয়ে চাতে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে লাগলাম। কারণ প্রতিদিন, কয়েক প্রকারের বিস্কুট থাকলেও, আজ শুধু শক্ত টোস্ট বিস্কুট!
_ ইসরাতর খুব রাগ হচ্ছে আমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি চাতে বিস্কুট ভিজিয়ে খেতে লাগলাম।
_ হঠাৎ ইসরাত আমার সামনে থেকে বিস্কুটের প্লেটটা সরিয়ে নিল।
_ আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে ইসরাতর দিকে তাকালাম।

_ মেয়েটা আজ কাঁজল দিয়েছে। কালো পাড়ের নীল শাড়ি পড়েছে। কিন্তু কাঁজলটুকু তার চোখে ধরে রাখতে পারছে না। স্পর্ষ্ট দেখতে পারছি, কোন এক অজানা ঢেউ তার চোখের কাজলটুকু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
_ আজ আমি উঠি! এই বলে বের হয়ে আসলাম।
_ ইসরাত কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।

_ আমি ফুটপাত দিয়ে হাটছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত আটটা বাজে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। প্রতিদিন রাতে টিউশনীতে কিছু না কিছু খেতে দেয়। আর রাতে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু আজ বড্ড বেশি ক্ষুধা পেয়েছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ১৩০ টাকা আছে ভাবলাম ত্রিশ টাকায় কিছু খেয়ে নিব। এই ভেবে যখনি হোটেলে ঢুকতে যাবো তখনি, পকেটে থাকা ফোনটা বাজতে লাগল। সেই চেনা রিংটোন।

_ ফোনটা বের করতেই দেখি বাবা ফোন দিয়েছে।
_ ফোন রিসিভ করেই বললাম হ্যাঁ বাবা বল।
_ বাজান তুই কিভা আছিস?

_ হ্যাঁ, বাবা ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?
_ হুম ভালাই। তোর মাটার অসুখ বাড়ছে আবার। ওষুধ শেষ তো তাই।
_ আচ্ছা বাবা কাল বা পরশু টাকা পাঠাবো কেমন?
_ আইচ্ছা। বাজান তুই খাইছিস?

_ হ্যাঁ বাবা তোমরা খাইছ?
_ হুমম, বাজান তোর ছুটকি কথা বলবে তোর সাথে।
_ আচ্ছা দাও তো ওকে।
_ এই নে কথা বল।

_ আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া কেমন আছ?
_ হুম ছুটকি ভালো আছি। আমার কুটনি বুড়িটা কেমন আছে?
_ তুমি আমাকে কি বললা ভাইয়া?
_ কিছু বলিনি। আচ্ছা মহারাণী পড়ালেখা কেমন চলছে?

_ ভাইয়া জান আমি ফাস্ট হইছি, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায়। ভাইয়া স্কুলের সবার না নতুন জামা আছে, আমার নেই।
_ আচ্ছা পরশু টাকা পাঠালে ওখান থেকে তোকে জামা কিনে দিবেনি কেমন? এবার মন দিয়ে পড়তে হবে কিন্তু।
_ হুম ভাইয়া। বাবাকে ফোনটা দে।
_ আচ্ছা।

_ বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। হোটেলে ঢুকতে গিয়েও ফিরে আসলাম। কেন জানি হোটেলে খেতে যেতে পারলাম না। রওয়ানা দিলাম মেসের উদ্দেশ্যে।

_ এদিকে ইসরাতর কোন ভাবেই ঘুম আসছে না। কল্পনাকে ফোন দিয়ে অনেক গুলো ঝাড়ি দিল। কারণ কল্পনার বুদ্ধিতেই বইয়ের ভেতর ছবি রেখেছিল। ইসরাত জানে স্যারের রাতের খাওয়ার টাকা থাকে না। থাকলেও খায় না বাড়ির কথা ভেবে। এমনিতেই আজ রহিমাকে, শুধু টোস্ট বিস্কুট দিতে বলেছে। তার উপর খাবার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

_ আচ্ছা স্যার কি বুঝে না তাকে আমি ভালোবাসি। কেন আমাকে বুঝতে চাই না। ইসরাত কিছু ভাবতে পারছে না বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগে। রহিমা এসে ডেকে গেল ডিনার করতে।

_ কিন্তু ইসরাত ভাবছে স্যার তো আজ খায়নি। আমি কিভাবে খাবো?
_ হঠাৎ মনে পড়ে, অরিন্দ ভাইয়ার কথা। অরিন্দ ভাইয়া স্যারের রুমমেট। অরিন্দ ভাইয়াকে ফোন করে সব খুলে বলে।
_ আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না আর তুমি কাঁদছ কেন? রিয়াদের খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মেসে আসলে আমি ওকে খাওয়াবো।
_ ইসরাত ফোন কেটে দিয়ে আবারো চিন্তা করতে লাগল সত্যি তো খাওয়াবে?

_ স্যারকে ফোন দিয়ে দেখি।
_ আমি হেঁটে হেটেঁ প্রায় মেসের সামনে এসে পড়েছি এমন সময় ফোনটা বাজতে লাগল ফোনটা বের করতেই দেখি ইসরাত ফোন দিয়েছে।

_ আমি ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখি। কারণ আমি জানি বাস্তবতা কি। এটাও জানি মেয়েটা আমায় ভালবাসে বড্ড বেশি ভালবাসে। তার এলোকেশে যে কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারে। তার মায়াবি মুখটা দেখে মানুষ হাসতে হাসতে নিজের জীবন দিয়েও দিতে পারে। কিন্তু আমি পারি না। কারণ আমি যে শিক্ষক। আমি যে সবাইকে শিক্ষা দিব কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।

ভালবাসা আমার জন্য নয়। কারণ যার টিউশনির টাকায় পুরো সংসার চলে। চলে নিজের পড়াশোনা। আমি চাই না ইসরাতর জন্য টিউশনিটা চলে যাক। কত কষ্ট করে ঢাকা ভার্সিটি চান্স পেয়েছি। বাবা মার স্বপ্ন শিক্ষক হবো। আর অন্যদিকে ইসরাত ধনীর দুলালি। এইবার এইচএসসি দিবে। সোনার চামচ মুখে দিয়ে যে বড় হয়েছে।

_ এদিকে মেসে আসতেই দেখি, অরিন্দ আমার বিছানায় বসে আছে। টেবিলে দেখলাম বিরিয়ানির প্যাকেট।
_ দোস্ত আসছিস? যা ফ্রেশ হয়ে নে তোর জন্য ট্রিট আছে।
_ হঠাৎ তোর আবার কি হলো? যে একটা চকলেট পর্যন্ত খাওয়াতে চায় না সে আবার আমাকে ট্রিট দিবে ব্যাপার কি?
_ যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আর শুন আজ জুঁইকে প্রপোজ করেছিলাম রাজি হয়েছে। তাই তোকে ট্রিট দিলাম।

_ এদিকে ফ্রেশ হয়ে, অরিন্দের দেওয়া খাবার খেয়ে নিলাম।
_ খাওয়ার শেষ করতে না করতেই দেখলাম অরিন্দ কাকে যেন ফোন করে বলল, রিয়াদ খেয়েছে তুমি চিন্তা করো না।

_ অরিন্দর কথায় কিছুটা আঁচ করতে পারলাম। এ সব ইসরাতরই কাজ। কাল মেয়েটাকে বলতে হবে কিছু। পরের দিন সকালে বন্ধু মুকুল বললাম দোস্ত আমার একটা পার্ট টাইম চাকরির দরকার। টিউশনি দিয়ে চলে না। মুকুল যে কোম্পানীতে চাকরি করে সেখানে একটা আবেদন করতে বলল। বিকেল বেলা একটা আবেদন করে। সন্ধ্যায় পড়াতে গিয়ে দেখি, ইসরাত পড়ার টেবিলে বসে আছে।

_ আমি চেয়ার টেনে বসে বললাম। অংকতে পিছিয়ে পড়েছে। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে হবে। এভাবে রেজাল্ট ভালো হবে না।

_ ইসরাত কিছু বলছে না। বুঝতে পারলাম ইসরাত কাঁদছে এই পর্যন্ত বলেই চুপ করে থাকলাম। চশমাটা খুলে চোখ দুটি মুছে নিলাম। সেই বিশ বছর আগের ঘটনা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। চুলগুলো পাক ধরেছে। আজ যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি সে বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক।

_ সমস্ত ক্লাসে পিনপিনে নীরবতা। সবাই নিশ্চুপ হয়ে শুনছে। এমন সময় হৃদয় নামে একটা ছেলে বলল স্যার তার পর কি হলো? আপনি কি ইসরাত ম্যাডাম কে পেয়েছিলেন? আচ্ছা স্যার আপনিও কি ম্যাডাম কে ভালবাসতেন।

আমি চশমাটা পড়ে আবারো বলতে লাগলাম,

যখন দেখলাম ইসরাত কাঁদছে। তার কান্না গুলো কেন যেন সহ্য করতে পারছিলাম। আবার এটাও পারছিলাম না যে ইসরাতর চোখের পানিটা মুছে দেয়। কারণ শিক্ষকতা যে মহান পেশা।

_ তাই ইসরাতকে বললাম, আজ তাহলে উঠি, কাল আসব।
_ না স্যার যাবেন না।


পর্বঃ ০২

_ স্যার, আপনি তো সব বুঝেন কিন্তু আমি কেন পাগলামী করি সেটা বুঝেন না?
_ জানেন স্যার একটা মেয়ে কখন শাড়ি পড়ে? কার জন্য শাড়ি পড়ে?

_ ইসরাত কি বলছ এসব, শাড়ি তো সখ করে পরে।
_ আপনি আসলেই কিচ্ছু বুঝেন না।
_ হুম ঠিক ধরেছ! আর যে বুঝে না তাকে বুঝাতে চেয়ো না।
_ আজ উঠি কাল আসব।

_ স্যার আপনি কিছু না পড়ালেও আমার সামনে যতটুকু প্রাইভেট পড়ানোর সময় ততটুকু সময় বসে থাকবেন।
_ আমি কিছু না বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে আসলাম। ইসরাতর বিষন্ন মুখটা বারবার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠছে।
_ ইসরাতদের বাসা থেকে বের হতেই, মুকুলের সাথে দেখা!
_ আরে দোস্ত কি অবস্থা? তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন?

_ কিছু না কেমন আছিস?
_ ভালো, আর তোর ইসরাত অফিসে বলেছি।
_ ধন্যবাদ দোস্ত।
_ ওই হারামি ধন্যবাদ কেন দিচ্ছিস।

_ আচ্ছা দোস্ত আজ তাহলে আসি।
_ মেসে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, টিউশনিটা ছেড়ে দিতে হবে। দিনদিন ইসরাতর পাগলামীটা বেড়েই চলেছে।

_ আগে এমন ছিল না মেয়েটা। আমাকে একদম সহ্য করতে পারত না। বিশেষ করে, ওদের বাসায় যে নাস্তা দিত সে নাস্তা খাওয়াটাও কেন জানি সহ্য করতে পারত না। একদিন তো মেয়েটা রাগ করে বলেই ফেলেছিল স্যার রাতে তো আর আপনার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ আপনার মুখে রুচি দিয়েছে বলতে হবে। কেননা টুস্টবিস্কুট যেভাবে খান মনে হয় অমৃত্তি খাচ্ছেন।

_ আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, ইংরেজি প্যারাগ্রাফটা লিখ।
_ হ্যাঁ লিখছি। আর হ্যাঁ প্রতিদিন এক শার্ট পরে পড়াতে আসবেন না। আমার বান্ধবীরা এটা_ সেটা বলে।
_ পরের দিন সকালে ইসরাত যখন কলেজে যায় তখন অরিন্দের বেস্টফ্রেন্ড জুঁই ইসরাতকে বলে সরি রে দোস্ত!
_ কি হয়েছে জুঁই সরি কেন বলছিস?

_ কারণ তোর হোম টিউটর, যে প্রতিদিন তোদের বাসায় একি শার্ট পরে যায়। এটা নিয়ে এবং বাসায় নাস্তা খাওয়া নিয়ে যে তোর সাথে মজা করেছি সেজন্য সরি রে!
_ আরে দুর! বাদ দে তো, আসলেই একটা ক্ষ্যাত। বাবা কি জন্য যে এইরকম একটা টিউটরের কাছে পড়তে দিল?
_ না ক্ষ্যাত না রিয়াদ ভাইয়া সত্যি মহান একটা মানুষ।
_ মানে প্রেমে টেমে পড়লি নাকি?

_ ধ্যাত কি বলিস। জানিস রিয়াদ ভাইয়ার টাকায় তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ছোটবোনের লেখাপড়া এবং পুরোটা পরিবার চলে। রাতে যে তোদের বাসায় নাস্তা করে, এরপর আর ডিনার করে না। দোস্ত না জেনে লোকটাকে নিয়ে কত মজা করেছিরে!
_ আরে তুই কেমনি জানলি?
_ অরিন্দের কাছ থেকে।

_ অরিন্দ কে?
_ বাবার বন্ধুর ছেলে। অরিন্দ আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় হলেও কেমন জানি বন্ধু হয়ে যায়। ওর কাছে সব শুনেছি।
_ ইসরাত কিছু বলল না কলেজ ছুটি হলে, বাসায় এসে, কাজের মেয়েটাকে বলল, ফেলানী স্যারকে আজ নাস্তায় বিয়িরানী দিবি
_ জ্বি আপা।

_ আজ প্রথম ইসরাত কারো জন্য অপেক্ষা করছে। সময় যেন যাচ্ছে না।
_ সন্ধায় যখন ইসরাতদের বাসায় গতকালের শার্টটা পরেই টিউশনিতে আসলাম ইসরাত কেমন জানি মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকাল।
_ চেয়ার টেনে বসেই বললাম ইংরেজী বইটা দাও।

_ ইসরাত বইটা হাতে দিয়েই বলতে লাগল স্যার বলছি না প্রতিদিন এক শার্ট পরে আসবেন না? তার পরও একই শার্ট পরে এসেছেন?
_ মুচকি হেসে বললাম এই শার্টটা আমার পছন্দের তো তাই এটাই প্রায় সবদিনই পরি।
_ ইসরাত কাঁদছে! কিসের জন্য কাঁদছে বুঝতে পারছি না।

_ কি হলো কাঁদছ কেন?
_ স্যার আমাকে ক্ষমা করে দেন। না জেনে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
_ আশ্চর্য তুমি তো কোন অপরাধ করোনি তবে কেন ক্ষমা চাচ্ছো?

_ স্যার আমি আপনাকে না জেনে কত ইসরাতই শুনিয়েছি। নাস্তা নিয়ে বাজে কথা বলেছি। আমাকে ক্ষমা করবেন তো?
_ ওহ্ আচ্ছা! এই বিষয়? ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে।
_ কিসের শর্ত স্যার?

_ প্রতিদিন ঠিকমত পড়া শিখতে হবে।
_ কালো মেঘের আড়ালে যেমন করে সূর্য উঁকি দেয় তেমনি, ইসরাত মুহূর্তে হেসে দিল।
_ তারপর থেকেই ইসরাতর পাগলামী। আর সেই পাগলামীটা ভালবাসার রূপ নিয়েছে। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় খেয়াল নেই। ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙে গেল। বিছানা থেকে উঠে অযু করে মসজিদে চলে গেলাম।

_ দুপুর বেলা মুকুল জানাল, চাকরিটা এক প্রকার কনফার্ম। আট ঘন্টা ডিউটি। তিনদিন পর দেখা করতে বলেছে। এদিকে দুটা টিউশনি শেষ করে সন্ধ্যায় ইসরাতদের বাসায় গেলাম। ইসরাত বসে আছে। আমি গিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম। ইসরাতর খেয়াল নেই।
যখন বই বের করতে বললাম। তখন দেখি ইসরাত কাঁদছে।

_ কি ব্যাপার বাসায় কি বকা দিয়েছে?
_ স্যার আমি বিয়ে করব না।
_ মানে?

_ স্যার বাবার বন্ধুর ছেলে আমেরিকা থাকে। তার সাথে বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে আমেরিকায় পাঠায় দিবে সেখানে নাকি পড়ালেখা করাবে।
_ আলহামদুল্লিলাহ ভালো ইসরাত।
_ কিন্তু স্যার আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচব না। আমি আপনাকে ভালবাসি।

_ আমি স্তব্ধঃ হয়ে গেলাম। কিছু বলতে পারছি না। কি হলো স্যার চলেন না আমরা পালিয়ে যায়। বলেই আমার হাতটা ধরল। আমি ইসরাতর হাতটা ছাড়িয়ে ঠাস করে ইসরাতর গালে চড় বসিয়ে দিলাম। সুন্দর গালটাতে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে পরেছে। এতদিনের টিউশনীতে আজ প্রথম ইসরাতর গায়ে হাত তুললাম। ইসরাতর চোখের কাজলগুলো লেপ্টে গেছে। ইসরাতর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

_ আরো মারেন তবুও আপনাকে ভালবাসি। আপনাকে ছাড়া বাঁচব না। কেন বুঝেন না, কেন এত পাগলামী করি। জানেন আমি শাড়ি পরতে পারি না তার পরও আপনার জন্য শাড়ি পরি। আপনি সেদিন বাসায় নাস্তা করেননি তাই আমিও করিনি। অরিন্দ ভাইয়াকে দিয়ে আপনাকে খাইয়িরে আমি খেয়েছি। আমি সত্যিই আপনাকে ভালবাসি! সত্যিই!
_ ভালবাসা কি বুঝ? আমাকে কয়েকদিনের ভালবাসার জন্য যে বাবা মা ষোল বছর লালন পালন করল তাদের ভুলে যাবে? ভালবাসা কি সেটা যে বাবা মার মুখে চুনকালি মাখা? শোন তোমাকে কস্মিনকালেও ভালবাসা সম্ভব না। তুমি আমার ছাএী। তোমাকে পড়াতে এসেছি, তবে তোমাকেও ভালোওবাসি তবে সেটা ছাএী হিসেবে। তাই বলছি পাগলামী বন্ধ করো।

_ আমি আঙ্কেলকে বলে দিব তোমাকে পড়ানো আমার দ্বারা সম্ভব না। কথাটা বলে বের হয়ে আসলাম।
_ পরের দিন আঙ্কেলের সাথে দেখা করে বললাম ইসরাতকে আর পড়াতে যেতে পারব না! আমার একটা পার্ট টাইম চাকরি হয়েছে।
_ ওহ্ আচ্ছা বাবা। আর সামনে শুক্রবার ইসরাতর এ্যাংগেজমেন্ট! তুমি এসো কেমন?

_ জ্বি আঙ্কেল চেষ্টা করব।
_ পরের দিন মুকুল এসে জানাই তাদের অফিসে চাকরিটা হয়ে গেছে।
_ এদিকে একদিন অফিস থেকে আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজে যায়। মেসে আসার পর থেকেই হাঁচি আসছে। বিছানায় শুয়ে আছি। এমন সময় অরিন্দ এসে বলল ইসরাত এসেছিল।
_ ওহ্ আচ্ছা!

_ রিয়াদ মেয়েটা তোকে বড্ড বেশি ভালবাসে। মেয়েটাকে কষ্ট দিস না প্লিজ।
_ হুম জানি। আর হ্যাঁ কালকে ওর এ্যাংগেজমেন্ট। অরিন্দ কিছু বলতে চেয়েও বলল না।

_ পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে চেয়েই শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারছি না। বুঝতে পারলাম শরীরে জ্বর এসে গেছে। তাই ওভাবে শুয়েই আছি চোখ বন্ধ করে। খুব কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম। চোখ খুলেই চমকে ওঠলাম। মিনমিন করে বললাম ইসরাত তুমি? তোমার না আজ এ্যাংগেজমেন্ট।
_ হুম সেটা আপনার ভাবতে হবে না। কিছু খেয়েছেন? ওমা! আপনার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। এই বলে মাথায় জলপট্টি দিতে লাগল। আমার আর কিছু খেয়াল নেই।

_ চোখ খুলে দেখি আমি হসপিটালে। আমার শিউয়ে ইসরাত বসে আছে। চোখ থেকে মেয়েটার এখনো বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপটপ করে পানি পড়ছে।
_ হঠাৎ আমার মনে পড়ল, আজ তো শুক্রবার। ইসরাতর তো আজ এ্যাংগেজমেন্ট। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিকাল ৩টা। মাথাটা ধরে এল এসব ভাবতে ভাবতে।
_ এই ইসরাত তোমার না এ্যাংগেজমেন্ট আজ? যাও বাসায় যাও। হয়ত তোমাকে আঙ্কেল আন্টি খুঁজছে।

_ আমি তোমায় রেখে কোথাও যাবো না। মরতে হয় তোমাকে নিয়েই মরব বাঁচত হয় তোমাকে নিয়েই বাঁচব। আমি বাসায় যাবো না আর।
_ ইসরাত প্লিজ পাগলামী করো না। তুমি যদি বাসায় না যাও আমার মরা_ মুখ দেখবে।

_ কথাটা বলার আগেই ইসরাত আমার মুখটা ধরে ফেলল। প্লিজ আপনি এমন কসম দিবেন না আমায়। আমি যাচ্ছি । বলে ইসরাত কান্না করতে করতে দৌড়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল। চোখ থেকে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ল।

_ ইসরাত চলে গেলে অরিন্দ এসে বলল দোস্ত কেন শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস? সাথে নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস।
_ দোস্ত, আমি যে শিক্ষক। আমার কাছে যে ইসরাত আমানতস্বরূপ ছিল। কিভাবে তা খেয়ানত করি। ভাল যে সবাইকে বাসা যায় না। কখনো কখনো ভালবাসাকে বুকের মাঝেই দাফন করে দিতে হয়।

_ অন্যদিকে ইসরাত বাসায় যেতেই তার মা ইসরাতকে বলে, তোর না আজ এ্যাংগেজমেন্ট কোথায় গিয়েছিলি।
_ বান্ধবির বাসায়।
_ এতকিছু শুনতে পারব না। যা রেডি হয়ে নে।

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “না পাওয়ার ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

_ এদিকে ইসরাতর এ্যাংগেজমেন্ট হয়ে যায়।
_ আমি অনেকটা সুস্থ। যতদিন হসটপিটালে ছিলাম প্রত্যেক দিনই ইসরাত এসেছিল।

_ হসপিটাল থেকে চারদিন পর মেসে যায়। তারপর আবার অফিসে জয়েন। দিনগুলি ভালোই চলছিল। একদিন অফিস থেকে ফিরে মেসে আসতেই দেখি ইসরাত বসে আছে রুমে।
_ রুমে যেতেই ইসরাত দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। আমি ইসরাতকে ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পারছি না। বুঝতে পারলাম ইসরাত কাঁদছে। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল আমাকে প্লিজ আপনি বিয়ে করেন। পরশু আমার বিয়ে। আমি কাল আপনার কাছে ভোর সকালে আসব। সবকিছু গুছিয়ে। আর হ্যাঁ যদি আপনি আমার সাথে না জান তাহলে, পরের দিন খবরের কাগজে আমার আত্মহত্যার হেডলাইনটা পাবেন। কি বলছ এসব পাগল হয়ে গেলে?

_ ইসরাত কিছু না বলেই চলে গেল। আমি ফ্লরে বসে পড়লাম। জানি না আজকের রাতটা পার হলে কি হবে। ইসরাত যা বলল সত্যি সত্যি ওকে বিয়ে না করলে যদি তাই করে। মাথাটা ধরে আসছে।

_ রাত ৯টা এশার নামায শেষ করে যখন মেসে আসলাম। তখন অরিন্দ আমার হাতে পাঁচশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল, দোস্ত রাতের বাসেই বাড়ি চলে যা! দোস্ত বাড়িতে কি হয়েছে। অরিন্দ কিছু বলছে না। হঠাৎ আমায় জড়িয়ে ধরে বলল দোস্ত আঙ্কেল আর নেই।
_ অরিন্দের কথাটা কলিজার এসে লাগল। কি করব বুঝতে পারছি না। অরিন্দ আমাকে বাসস্টপ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলো।

_ বাসে বসে বসে বাবার ইসরাত ভাবছি আর কাঁদছি।
_ অন্যদিকে ইসরাত তার কাপড় ব্যাগে ভরছে। সকাল হওয়ার আগেই বাসা থেকে পালাবে।
_ এ পর্যন্ত বলেই চোখের পানি মুছতে লাগলাম। সারা ক্লাস জুরে পিনপিনে নীরবতা।

_ হঠাৎ রিত্ত নামের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বলল স্যার তারপর কি হলো?
_ আমি চোখের পানি মুছে আবারো বলতে লাগলাম……


পর্বঃ অন্তিম পর্ব

_ আমি চোখের পানি মুছে আবারো বলতে লাগলাম, আমি বাসে বসে বাবার সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবছি।
_ ছোটবেলা যখন বাবা যখন স্কুলে ভর্তি করে দেয়। তখন এলাকারা মন্ডল কাকা বলে কিরে রাজ্জাক তোর ছেলেকে কি পড়াবি? রিক্সাওয়ালার ছেলে তো রিক্সাওয়ালার হবে। তার চেয়ে বরং কাজে লাগিয়ে দে!

_ বাবা কিছু বলিনি মন্ডল কাকাকে। কাকা চলে গেলে বাবা হাটুগেড়ে বসে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে বাবা তুই পড়বি, তোকে অনেক বড় পাশ দিতে হবে। তুই একদিন অনেক বড় মানুষ হবি। সেদিন থেকে অবুঝ মনে একটা স্বপ্নের বীজ জন্ম নেয়! হঠাৎ গাড়ির হেলপার বলল ভাই শেরপুর এসে পড়েছি।
_ আমি গাড়ি থেকে নেমে রিক্সা নিয়ে বাসায় আসতেই দেখি বাড়ি ভর্তি লোক।

_ আমার পা দুটো আর চলছে না। শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। সমস্ত মানুষের ভীড় ঠেলে, সামনে যেতেই ছোটবোনটা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ভাইয়া, বাজানকে বলো না কথা বলতে। বাজান তোমার কথা শুনবে। মাকে দেখলাম বাবার নিথর দেহটা ধরে কাঁদছে। এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারছি না বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। ছোট বোনকে কি বলে সান্ত্বনা দিব সে ভাষা নেই। বাবার লাশের কাছে গিয়ে বসতেই, বুকের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠল। বাবাকে বুকে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম। এলাকার লোকেরা বারবার বলছে মাটি দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর পাগলামী করিস না। এদিকে বিকেল বেলা বাবার দাফন সম্পূর্ণ হলে। বাবার কবরের পাশে বসে কাঁদতে লাগলাম।

_ অন্যদিকে ইসরাত সকাল বেলা ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে মেসের দরজার এসে নর্ক করে। অরিন্দ দরজা খুলে ইসরাতকে দেখে চমকে ওঠে তুতুমি! তোমার না কাল বিয়ে এ অবস্থায়?
_ ভাইয়া আমি রিয়াদকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। ভাইয়া আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। রিয়াদ কোথায়?
_ অরিন্দ এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। অরিন্দের শরীরটা ঘামছে।

_ কি হলো ভাইয়া বলেন রিয়াদ কোথায়?
ওকে ডেকে নেন। আচ্ছা আপনি সরেন ডাকতে হবে না রিয়াদকে আমিই যাচ্ছি।
_ রিয়াদ নেই!

_ মানে! কি বলছেন? রিয়াদ নেই মানে?
_ রিয়াদ বাড়িতে চলে গেছে।

_ ইসরাতর বুক ফেঁটে কান্না আসছে। কাঁপাকাঁপা বলার বলল ভাইয়া রিয়াদ কিছু বলে যায়নি? রিয়াদ জানে না আমার বিয়ে। আমার এখন সুসাইড করা ছাড়া কোন উপায় নেই!
_ What! এসব কি বলছো? কাল বিকেলে রিয়াদের বাবা মারা গিয়েছে। তাই রাতের বাসেই গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে।
_ অরিন্দের কথা শুনে ইসরাত বিশ্বাস করতে পারছে না। রিয়াদের জন্য বুকের ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে। ভাইয়া আমি গ্রামে যাবো ঠিকানা দেন স্যারের।

হঠাৎ মেসের সামনে একটি গাড়ি এসে থামে। ইসরাত গাড়ি দেখে চমকে যায়! কারণ গাড়িটা যে অন্য কারো নয়। ইসরাতর বাবার। ইসরাতর বাবা ইসরাতকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।
_ ইসরাত বাসায় গিয়ে তার বাবাকে বলে বাবা আমি ও বিয়ে করতে পারব না।
_ কি বলছিস এসব? কেন বিয়ে করবি না?

_ বাবা আমি রিয়াদ স্যারকে ভালবাসি।
_ ইসরাতর বাবা কথাটা শুনার সাথে সাথে ইসরাতর গালে চড় বসিয়ে দেয়।
_ বিয়ে তকে, রিফাতকেই করতে হবে।

_ ইসরাত রুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগে। বই থেকে রিয়াদের ছবিটা বের করে বুকের সাথে জড়িয়ে কাঁদতে লাগে।
ইসরাতর মা ইসরাতকে অনেক বুঝায়। ইসরাত এক উওর বিয়ে করলে রিয়াদ স্যারকেই!

_ পরের দিন ইসরাতর বিয়ে বাড়িটা নীল লাল বাতিতে সজ্জিত! ইসরাতর হাতে মেহেদী পরানো হয়েছে। হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি! লাল শাড়িতে ইসরাতকে আজ অপরূপ লাগছে! মনে হচ্ছে আকাশ থেকে ভুল করে পরী নেমে এসেছে! এদিকে বরযাএী, এসে পড়েছে। ইসরাতকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সামনের স্টেজে, রিফাতকে। রিফাত ক্ষানিক পর পর ইসরাতর দিকে তাকাচ্ছে!

_ এদিকে কাজি এসে যখন ইসরাতকে কবুল বলতে বলে তখনি ইসরাত স্টেজে ঢলে পড়ে। সবাই ধরাধরি করে ইসরাতকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। বিয়ে বাড়িতে মূহূর্তের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

_ ইসরাতর বাবা আফজাল সাহেব, অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে পায়চারি করছে। হঠাৎ অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হতেই ইসরাতর বাবা, ডাক্তারকে বলে স্যার আমার মেয়ের কি অবস্থা?

_ সরি মিঃ আফজাল আমরা সবাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি, বিষ বের করতে পারলেও বড্ড দেরী হয়ে যায়।
_ আফজাল সাহেব মূর্তির মতো হয়ে যায়। একমাএ মেয়েকে এভাবে হারাবে সে বুঝতে পারেনি।
_ সপ্তাহখানেক পর শহরে আসি। মেসে ঢুকতেই দেখি অরিন্দ বিষণ্ন মনে বসে আছে।

_ কিরে অরিন্দ এভাবে বসে আছিস কেন? আর ইসরাতর বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলি?
_ অরিন্দ কিছু না বলেই ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দেয়!
_ আমি অরিন্দের ব্যবহারে অবাক হয়ে যায়।

_ দোস্ত ইসরাত তোকে সত্যি ভালবাসতরে।
_ ………

অরিন্দের কথা শুনে বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে ওঠে! কাঁপা কাঁপা গলায় বলি দোস্ত ইসরাত ঠিক আছে তো?

_ অরিন্দ কিছু না বলে বলল দোস্ত ইসরাতদের বাসায় যা তুই, আঙ্কেল যেতে বলেছে।

_ মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা। ইসরাতর বিয়েটা তো হয়েছে এতেই অনেক। মেয়েটা আমার কাছে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পেত না। এসব ভাবতে ভাবতে একটা রিক্সা করে ইসরাতদের বাসায় গিয়ে, আঙ্কেলকে বলি আঙ্কেল ডেকেছিলেন আমায়? আর সরি আঙ্কেল বাবা মরে যাওয়ার ইসরাতর বিয়েতে আসতে পারিনি। পড়ে সময় পেল ইসরাতর শ্বশুর বাড়ি একদিন যাব। মুখে হাসিরে রেখা ফুটিয়ে তুলে!

_ চল আজকেই যায়। আমার মা টা খুব করে তোমায় দেখতে চেয়েছে। চল আমার কলিজার টুকরার শ্বশুর বাড়ি।
_ আঙ্কেল আমাকে তার গাড়িতে করে, একটা কবরস্তানের নিকট নিয়ে থামালেন। আমি অনেকটা বিস্মিত হয়ে গেলাম। বুকের ভেতরটা কেন জানি চিনচিনে ব্যাথা করছে।

_ বাবা ওই যে দেখ নতুন ঘরটা সেখানে আমার মা ঘুমিয়ে আছে। জানো বাবা আমার মেয়েটা তোমায় অনেক ভালবাসতো। কিন্তু আজ আমায় ভুলে ইসরাত সুসাইড করে!

_ আমি আঙ্কেলকে কিছু না বলে, নতুন কবরটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইসরাতর মায়াভরা মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠছে!

কবরের সামনে যেতেই কে যেন বলল, কি হলো কাঁদছ কেন? একদম কাঁদবে না! চোখের পানি বাধা মানছে না। ইসরাতর স্মৃতিগুলো বারবার হৃদয়ে নাড়া দিচ্ছে। স্যার আপনাকে না নীল শার্টে খুব সুন্দর লাগে!

_ পারছি না আর দাঁড়িয়ে থাকতে, হাঁটুগেড়ে বসে পড়লাম ইসরাতর কবরের সামনে। আমি এতটা হতভাগা, এতটা ভালবাসা পাওয়ার পরও ধরে রাখতে পারলাম না। শেষবারের মতো ইসরাতর মুখটাও যে দেখতে পারলাম না। কবরের পাশে বসে বসে কাঁদছি আর বলছি কেন করলে এমন? এমনটাতো আমি চায়নি, আমি তো তোমার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলাম।

_ হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। চেয়েই দেখি আঙ্কেল।
_ আঙ্কেল আমার হাতে একটা ডাইরি তুলে দিয়ে বলল এটা ইসরাত তোমাকে দিতে বলেছে!

_ রাতে ডাইরিটা সাহস করে খুললাম। ডাইরির প্রথম পাতায় আমার একটা ছবি দেখতে পেলাম। ছবির নিচে ছোট্ট করে লেখা ভালবাসি তোমায়!

_ পরের পাতা উল্টাতেই দেখতে পেলাম নীল কালিতে লেখা, আজ আমাকে পড়াতে নতুন স্যার এসেছে। দেখতে একদম গোমরামুখো হাসে না। কেন জানি স্যারকে সহ্য হয় না। প্রতিদিন এক শার্ট পড়ে আসে। স্যারের জন্য কলেজের ফ্রেন্ডরা আমার সাথে মজা করে। এসব আমার একদম সহ্য হয় না। সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে স্যারের টোস্ট খাওয়ার শব্দ শুনতে! ধ্যাত কিচ্ছু ভালো লাগে না।

_ কয়েক পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল নিজেকে আজ বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে, জুইরের কাছে স্যারের সম্পর্কে জানার পর মন চাচ্ছে মহৎ মানুষটার পা ধরে ক্ষমা চাই।
_ এদিকে স্যার কে যতই দেখতে লাগলাম ততই স্যারের বোকাবোকা চাহনীর মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম।

_ আজ শাড়ি পড়েছি, এই প্রথম শাড়ি পড়লাম। চোখে কাজল দেওয়াটা বড্ড খারাপ লাগে। তবুও আজ দিয়েছি, কাজলে নাকি মেয়েদের সুন্দর লাগে। কিন্তু স্যার আমার দিকে খেয়াল করত না। স্যার বুঝত না আমার পাগলামী গুলো। স্যারকে নিজের অজান্তেই বড্ডবেশি ভালবেসে ফেলি। একদিন স্যারকে সব বলে দেয়। বাট স্যার আমাকে ফিরিয়ে দেয়।

_ কিন্তু আমি স্যারকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছিলাম না। আমার পুরোটা পৃথিবী সে মানুষটাকে নিয়ে সাজিয়ে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম সে মানুষটাকে বিয়ে করব। ছোট্ট একটা সংসার হবে। একটা মেয়ে হবে তার নাম গোমরা মুখোটার নামের সাথে মিলিয়ে রাইসা রাখব। আর একটা ছেলে হবে তার নাম কাব্য। প্রতিদিন অফিসে যাবে আমি গোমরামুখো টাকে যখন মিস করব তখন তার শার্ট গায়ে জড়িয়ে অনুভব করব।

_ স্বপ্নগুলো হয়ত বেশি দেখে ফেলেছিলাম। কাল আমার বিয়ে। কিন্তু আমি যে রিয়াদকে ছাড়া বাঁচব না তাই, হারিয়ে গেলা।

_ ইতি
কারিমাতুল জাহান ইসরাত

_ ইসরাতর ডাইয়িটা পড়তে পড়তে ডাইয়ির পাতা গুলো চোখের পানিতে ভেজে গিয়েছিল।

তারপর বহুবছর পার হয়ে যায়। পারেনি কাউকে ভালবাসতে। পারেনি কাউকে বউ বানাতে। আজ আমার জীবনে সবকিছু আছে কিন্তু একটা অপ্রাপ্তি আমার জীবনের সকল প্রাপ্তিকে তার ছায়ায় ঢেকে ফেলেছে।

_ এখনো ইসরাতর লেখা ডাইয়িটা আমার সাথেই রাখি মনে হয় ইসরাত আমার সাথেই আছে। কথাগুলো বলে শেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে দেখি সবার চোখের কোণে পানি।

সমাপ্ত

অপ্রাপ্তি
লেখাঃ রাইসার আব্বু

আরো পড়ুনঃ অভিমানী প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *