তোমাতে আমি আবদ্ধ – valobasar golpo kotha

তোমাতে আমি আবদ্ধ – valobasar golpo kotha: চোখ খুলে যখন দেখি তখন আমি নিজেকে একটা হাসপাতালে আবিষ্কার করি। আর পাশেই ছিলেন এক বয়স্ক লোক। পরে জানতে পারি তার গাড়ির সাথেই আমি ধাক্কা খাই।


পর্ব ১

রাত ১২ টা বাজে। চারদিক নিস্তব্ধ। এর মধ্যে হাইওয়ে দিয়ে ফুল স্প্রিডে একটি বাইক ছুটে চলেছে। স্প্রীড প্রায় ১২০ এর কাছাকাছি। কিন্তু চেহেরায় কোন ভয় নেই বরং মুখের তার এক ডেভিল হাসি। সে বাইক এমনভাবে চালাচ্ছে এইভাবে যেন ৫ বছরের এক খেলনা বাইক।
প্রায় আরও ২০ মিনিট পর বাইকটি এসে থামে এক গোডাউনে সামনে। বাইক থেকে নেমে আসে একজন। পড়নে তার ব্লু প্যান্ট। ভিতরে ব্ল্যাক টি-শার্ট আর উপরে ব্লু জ্যাকেট। মাথায় হেলমেট পড়া।

সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় গোডাউনের দিকে। গোডাউনের চারদিকে পিন পিন নিস্তব্ধতা। সামনেই কিছু লোক দাড়িয়ে আছে। সামনে থেকে তাকে আসতে দেখে তারা দাড়িয়ে যায়। সেই ব্যক্তিটি তাদের হাতের ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করে। তারা তখন তাকে অন্য দিকে ইশারা করে দেখায়।
সেই ব্যক্তিটি সেই দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলেকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখ কাপড় দিয়ে বাধা। ছেলেটি ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। বার বার নিজের বাধন খুলার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেই ব্যক্তিটি সেই ছেলের সামনে গিয়ে দাড়ায় আর ওর লোকদের ইশারা করে। সাথে সাথে এক লোক এসে সেই ছেলেটির মুখের বাধন খুলে ফেলে। আর সে চিৎকার করে বলে উঠে।
ছেলেটিঃ কে আপনি। কেন এনেছেন আমায় এইখানে। কি চাই আপনার।
ব্যক্তিটিঃ আমার কি চাই তা তোমার না জানলেও চলবে। আর তোমায় কেন এনেছি তা একটু পরই জানবে।
ছেলেটিঃ দেখুন স্যার আমাকে ছেড়ে দিন আমি কিছু করি নি।
ব্যক্তিটিঃ কারেকশন প্লিজ। আমি স্যার না ম্যাম।

এই বলে সেই ব্যক্তিটি তার হেলমেট খুলে ফেলে। হেলমেট খুলার সাথে সাথে তার কালো ঘন চুল গড়িয়ে পরে কোমড় পর্যন্ত। দুধে আলতো গাঁয়ের রঙ। চোখ দুটো হরিণের মত টানা টানা। সাথে বেশ বড়ও আর মায়াবী। দেখতে একটু গোলুমোলু। ঠোঁটে এক বাকানো হাসি। যাতে লুকিয়ে আছে হাজারো রহস্য।
ছেলেটি মেয়েটি দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর বুঝার চেষ্টা করে সে কে। ছেলেটির এমন চাহনি দেখে সেই মেয়েটি বলে।
মেয়েটিঃ কি চিনতে পারছো না তহ। পারবেই বা কিভাবে আগে তহ কখনো দেখ নি। থাক তোমায় আর কষ্ট করতে হবে না। আমিই বলছি আমি কে। আমি সেই ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে তুমি রিসাম গ্রুপের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছো। মানে আমিই হচ্ছি তান্নাজ রহমান উল্ফস TR।

এইটা শুনার পর ছেলেটি বড় সড় এক ঢোক গিলে তারপর আমতা আমতা করে বলে।
ছেলেটিঃ তার মানে আপনিই TR। দ্যা মিস্টেরিওস লেডি মাফিয়া।
তান্নাজঃ ইয়েস মি. হাসান। আমিই সেই। যার বিরুদ্ধে তুই আর রিসাম গ্রুপের লিডার ষড়যন্ত্র করছিস।
হাসানঃ ম্যাম প্লিজ মাফ করে দেন। আর এমন হবে না। ভুল করে ফেলেছি আমি। মাফ করে দেন।
তান্নাজঃ হাহ মাফ। কখনো না। কেন না তান্নাজের লাইফে মাফ। ক্ষমা বলতে কোন শব্দ নেই। তান্নাত রহমান শুধু ভুলের শাস্তি দিতে জানে। আর সেই শাস্তি হলো মৃত্যু। নাহিদ গিভ মি দ্যা গান।
হাসানঃ ম্যাম প্লিজ এমন করবেন না। ম্যাম প্লিজ। আরেকবার সুযোগ দিন। প্লিজ ম্যাম প্লিজ।

তান্নাজ সেই লোকের সব আর্তনাদ উপেক্ষা করে ধাম ধাম করে পর পর ৩ টা গুলি হাসানের বুকের মধ্যে চালিয়ে দেয়। হাসান সেখানেই মৃত্যু বরণ করে। তান্নাজ তার লোকেদের বলে।
তান্নাজঃ নাহিদ ওর লাশকে রিসাম গ্রুপের গোডাউনের সামনে ফেলে আসবা। আর একটা চিঠিতে লিখে দিবা”TR এর বিরুদ্ধে যাওয়ার পরিনাম কি হতে পারে তা নিজের চোখে দেখে নিতে”
নাহিদঃ ওকে ম্যাম।
তান্নাজ নাহিদকে গানটা দিয়ে বাইকের চাবি ঘুড়াতে ঘুড়াতে চলে যায়।
ইন স্কোটল্যান্ড
জমিন থেকে ১৬০০০ ফিট উপরে চলছে এক প্লেন আর সেই প্লেন থেকে লাফ দিল এক ছেলে। হাত পা ছড়িয়ে বাতাসের সাথে খেলা করতে করতে নিচে নেমে আসছে সে। এত উপর থেকে স্কাই ডাইভিং করার মজাই আলাদা। উপর থেকে স্কোটল্যান্ডের এক পাহাড়ি এলাকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখেই চলেছে। সব কিছুই যেন কেমন ধুয়াশা ধুয়াশা মনে হচ্ছে তার কাছে।
তাও সে ফুল স্প্রীডে নেমে আসছে। কিন্তু মুখে নেই তার কোন ভয়। আছে এক তাচ্ছিল্যের হাসি। কিন্তু তাতেও কম কি যায় সেই হাসিতেই হাজারো মেয়ে পাগল হতে প্রস্তুত।

ঠিক ৬০০০ ফিটে এসে তার প্যারাসুটের বাটন টিপ দিল আর সাথে সাথে খুলে গেল তার প্যারাসুট। বাতাসের বেগে সে আবার উপরে উঠে গেল। তারপর আস্তে আস্তে লেন্ড করার প্রস্তুতিই নিতে থাকলো। এক উঁচু পাহাড়ের ঢিলে এসে সে পার্ফেক্টলি ল্যান্ড করে।
ল্যান্ড করার সাথে সাথে সে নিজের বেল্ট খুলে ফেললো। দুই হাত পকেটে গুজে সিস বাজাতে বাজাতে সামনে এগিয়ে আসে।

উজ্জ্বল শেমলা গায়ে রঙ। পড়নে ব্ল্যাক প্যান্ট। ব্ল্যাক টি-শার্ট আর তার উপর ডার্ক ব্রাউন কালার জেকেট। হাতে ব্ল্যাক ব্লেটের ঘড়ি। চুল গুলো সিল্কি হওয়ার কোপালে এসে বারি খাচ্ছে। ঠোঁট দুটো গোলাপি আর তার নিচে এক তিল তারউপর ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি।
সব মিলিয়ে একদম কিলার লুক। যে কোন মেয়েকে ঘায়েল করার জন্য পার্ফেক্ট।
সেই ছেলেকে সামনে আসতে দেখে কিছু কালো পোশাকি লোক তার দিকে ছুটে আসে। দেখে বুঝা যাচ্ছে এরা হচ্ছে সেই ছেলের বডিগার্ড। সেই বডিগার্ড গুলোর মধ্যে একজন সামনে এগিয়ে আসে। এক হাতে ফাইল তহ অন্য হাতে একটি ফোন নিয়ে।
সেই ছেলেটি ফাইলটা হাতে নিয়ে কি জানি চেক করতে থাকে।

তখন তার ফোনটি বেজে উঠে। সে ফোনটি হাতে নিয়ে ফুল এটিটিউডের সাথে বলে।
ছেলেটিঃ Hello
অপর পাশ থেকেঃ Hello। Is it talking Mr. Nishom khan
নিশমঃ Yes.
অপর পাশ থেকেঃ Sir I am David. I have a important information for you..
নিশমঃ Speak up..
(যেহেতু তারা স্কোটল্যান্ড সেহেতু তাদের ভাষা ইংরেজি হওয়ায় কথা। কিন্তু সকলের সুবিধার্থে পরের কনভানশেন বাংলায় লিখছি। কিন্তু আসলে তারা কথা গুলো ইংরেজিতেই বলছে)
ডেভিডঃ স্যার আপনি যাকে এত দিন ধরে খুঁজছেন তার কিছু ইনফরমেশন পাওয়া গিয়েছে।
নিশমঃ সত্যি বলছো তহ।
ডেভিডঃ জ্বী হ্যাঁ স্যার। আমি এইখানে ইতালি এসেছিলাম কিছু কাজে সেখানে এক মিটিং শেষে একজনের মুখে তার নাম শুনি। পরে তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা বাদ করি। আর জানতে পারি তারই এক লোক এইখানে আছে। তারপর থেকে তাকে খুঁজে বের করি আর তাকে ধরেও ফেলি। তার থেকে জানতে পারি যে বাংলাদেশে সেই ব্যক্তির এর বিশ্বস্ত লোক আছে। যে নাকি তার ব্যবসা সেখানে পরিচালনা করছে। তার দ্বারা হয়তো আপনি যাকে খুঁজছেন তাকে পেয়ে যাবেন।
নিশমঃ ইয়েস গোট ইট। থেংক ইউ সো মাচ ডেভিড। তুমি জানো না তুমি আমার কত বড় উপকার করেছ। চিন্তা কর না তুমি এই কষ্টের ফল ঠিকই পেয়ে যাবে। টাকাটা তোমার ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে।

ডেভিডঃ এইটা আমার দ্বায়িত্ব স্যার। বাট এখন এই লোকের কি করবো। সে এখন ইউসল্যাস।
নিশমঃ জাস্ট সুট হিম। যে আমার কোন কাজের না তার জীবনও কোন কাজের না।
ডেভিডঃ ওকে বস।
ফোন রাখার পর নিশম এক বিশ্বজয় হাসি দিয়ে বলে।
নিশমঃ অনেক হয়েছে লুকোচুরি। আর না। এইবার হবে হাড্ডা হাড্ডির লড়াই। নিশমের খানের কাজ থেকে পালিয়ে আর যাবে কই। একদিন না তহ একদিন আমার হাতে ধরা দিতেই হবে। আর যেদিন তোমায় আমার রাজ্ব্যে আনতে পারবো সেইদিনই হবে তোমার জীবনের শেষ দিন।
Because it is the kingdom of died and I am the king of this kingdom..

[ এ হচ্ছে নিশম খান। স্কোটল্যান্ডের একজন নাম করা মাফিয়া সাথে একজন বড় ব্যবসায়ী। সকলেই তাকে এক নামে চিনে। মাফিয়া জগৎতে যেমন তার ভয়ে সকলেই আতংকিত তেমনেই রিয়াল ওয়ার্ডে সকলেই তার নামে পঞ্চমুখ। কেন না নিশমকে মাফিয়া ওয়ার্ল্ডে খুব কম মানুষেই দেখেছে। নিশম আড়ালে থেকেই কাজ করা বেশি পছন্দ করে। তাই বেশির ভাগই তাকে চিনে না। কিন্তু ওর কাজ সম্পর্কে সকলের ধারণা আছে। কোন ভুল হলে সোজা তাকে সুট করে দেয়। আর পরবর্তীতে তাকে ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হয়।
মাফিয়া ওয়ার্ল্ডে সকলে ওকে NK নামে চিনে। ]


পর্ব ২

রাত ২ টা বাজে।
তান্নাজ ধীর পায়ে বাসায় প্রবেশ করলো। চারদিকে অন্ধকার। তান্নাজ অনেক সাবধানে দরজা ভিরিয়ে পা টিপে টিপে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। সেই না সিড়িতে পা রাখতে যাবে তখনই বাসার লাইট জ্বলে উঠে ও একটা কন্ঠ ভেসে আসে। তান্নাজ সাথে সাথে সেখানে ফ্রিসড হয়ে দাড়িয়ে পরে।
রাহুল সাহেবঃ স্টোপ দেয়ার। ট্রান এরাউন্ড।
তান্নাজও সুন্দর বাচ্চার মতন ঘুরে দাড়ালো। একদম বেবি ফেস করে সে দাড়িয়ে রইলো। তা দেখে রাহুল সাহেব কড়া গলায় বললেন।
রাহুল সাহেবঃ আজ এমন বেবি ফেস করে লাভ নেই। আমি আজ গলছি না। তাই এখন চুপচাপ বলো কোথায় ছিলে এতক্ষন। এত রাত হলো যে।
তান্নাজঃ উমমম পপসি। আমি আসলে। ইয়ে মানে।

রাহুল সাহেবঃ আজ আবার কাকে খুন করে ফিরলে।
তান্নাজঃ ইয়ে মানে। তুমি কেমনে জানলে।
রাহুল সাহেবঃ ভুলে যেও না আমি তোমার পপসি। সো তোমার সকল খোঁজ খবরই আমি রাখি। আমার থেকে যে কিছু লুকানো বেকার তা তুমি ভালো করেই জানো।
তান্নাজঃ আই নো পপসি। তোমার থেকে কিছু লুকিয়া রাখা জাস্ট ইম্পসিবল। এখন তুমি এইটা নিশ্চয়ই জানো আমি কাকে খুন করেছি। আমার কি এখন বলা লাগবে।
রাহুল সাহেবঃ হুম জানি। ওই শিহাব আর হাসানকে। কিন্তু আমি শুধু কারণটা জানতে চাচ্ছি।
তান্নাজ পরে সব খুলে বললো। তা শুনে রাহুল সাহেব বললেন।

রাহুল সাহেবঃ সবই ঠিক আছে। কিন্তু খুনটা নিজে না করলেও পারতে। কত বার বলেছি এইসব ছোট খাটো কাজ করে নিজে হাত নোংরা করবে না। তোমার এই হাত খুবই স্পেশিয়াল আর তোমার এই স্পেশিয়াল হাতে যে খুব স্পেশিয়াল একজনের মৃত্যু লিখা আছে। তার জন্যও তহ কিছু বাঁচিয়ে রাখো।
তান্নাজঃ আই নো পপসি। তার মৃত্যু আমার হাতে লিখা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তুমি ভালো করেই জানো যে আমার কাজ আমি ব্যতিত কেউ করুক ওইটা আমার পছন্দ না। আমার কাজ আমি নিজেই করতে ভালবাসি।

রাহুল সাহেবঃ আই নো ডিয়ার। বাট খুব সাবধানে। আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে কেউ যাতে তোমার রিয়েল আইডেন্টিটি না জানতে পারে।
তান্নাজঃ ইউ ডোন্ট ওয়ারি পপসি। তান্নাজের রহস্য ভেদ করা এতটাই সহজ নয়। তান্নাজ আর TR যে এক তা কেউ কোন দিন জানতে পারবে না। কেন না বাইরের দুনিয়ার সকলেই আমায় বেষ্ট ডক্টর হিসাবে চিনে।

যে রাগি হলেও অনেক ভালো। কোন মানুষকে যে সে কষ্ট দিতে পারে তা কেউ বিশ্বাসই করবে না। খুন তহ দূরের কথা।
রাহুল সাহেবঃ জানি। কিন্তু তাও সাবধানতা অবল্পন করা ভালো। কখন কি হয়ে যা তা বলা যায় না।
তান্নাজঃ তুমি যখন বলছো তাহলে আমি পরবর্তীতে আরও কেয়ারফুল হবো।
রাহুল সাহেবঃ That’s like a my girl. যাও এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো সকালে হসপিটালে যেতে হবে তহ।
তান্নাজঃ ইয়াহ। গুড নাইট।
রাহুল সাহেবঃ গুড নাইট।

তান্নাজ উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে। আর রাহুল সাহেবও নিজের রুমে চলে যান। তিনি একটি রকিং চেয়ারে বসে দাবা কোর্টের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।
রাহুল সাহেবঃ সব কিছু এখন রেডি। এখন খুব সাবধানে একেক করে সব চাল চালতে হবে। আর পারিন্দাকে নিজের ফাঁদে ফেলতে হবে। Now it is the right time for starting the game. The game of dead.
অন্যদিকে…
ইন স্কটল্যান্ড

গাড়ি এসে থামলো এক বিরাট পেলেসের সামনে। দরজা খুলার সাথে সাথে গাড়িটি পেলেসের ভিতরে প্রবেশ করলো। মাঝ বরাবর রাস্তা আর চারপাশে ফুলের বাগান। বিভিন্ন ধরনের ফুল রয়েছে সেখানে। এক পাশে ফাউন্টেন ও রয়েছে। বেশ সুন্দর পরিবেশ। গাড়িটি এসে দরজার সামনে থামলো। ভিতর থেকে এক সার্ভেন্ট এসে গাড়ির দরজার খুলে দিল। গাড়ি থেকে তখন বেড়িয়ে আসে নিশম। ব্ল্যাক শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পরে। শার্টটা ইন করা। হাতে একটা ব্ল্যাক চাইনের ওয়াচ। চুল গুলো সামনে এসে পড়ে আছে। দেখতে সেই লাগছে।

নিশম ভিতরে গিয়ে সোফার উপর পায়ের পা তুলে বসলো। তখন এক সার্ভেন্ট এসে নিশমকে অরেঞ্জ জুস দেয়। নিশম তা ডান হাতে নিয়ে একটা গ্লাসে এক চুমুক দেয়। আর অন্য মোবাইল স্ক্রোল করতে থাকে। হঠাৎ নিশম ডেভিডকে ফোন দেয়। আর ৫ মিনিটের মধ্যে তাকে আসতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেভিড হন্তদন্ত হয়ে নিশমের সামনে হাজির হয়। ডেভিড এখনো হাপাচ্ছে। সে হাপাতে হাপাতে বলে।
ডেভিডঃ স্যার ডেকে ছিলেন।
নিশমঃ না ডাকলে কি তুমি এইখানে আসতে। চোখ গরম করে।
ডেভিডঃ না ইয়ে মানে স্যার।
নিশমঃ জাস্ট শাট আপ। এত ইয়ে মানে না করে যা বলছি তা শুনো বাংলাদেশের যাওয়ার জন্য আর্জেন্ট টিকিট বুক করো। যত দ্রুত সম্ভব আমি বাংলাদেশে ব্যাক করতে চাই। গোট ইট। নাও লিভ।
ডেভিডঃ ইয়েস স্যার।

এই বলে ডেভিড বের হয়ে যায়। আর নিশম আবার গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।
নিশমঃ দ্যা গেম ইস অন। অনেক তহ হলো লুকোচুরি। এখন আর না। যেই আপনি আমার শৈশব। আমার জীবন। আমার সব। আমার সব কেড়ে নিয়েছে। যার জন্য আজ আমি এমন হতে বাধ্য হয়েছি। ছাড়বো না আপনাকে। কঠিক থেকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে। মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ আপনার শাস্তি।
এই বলে নিশমের মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে।


পর্ব ৩

সকাল ১০ টা বাজে।
কিছু ক্ষন আগেই শাহাজালাল এয়ারপোর্টে নিশমের ফ্লাইট ল্যান্ড করে। এয়ারপোর্টে সকল কাজ শেষ করে বেরিয়ে আসে নিশম আর ডেভিড। নিশমের পড়নে ডার্ক ব্রাউন কালার এর শার্ট আর সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট। শার্টটা ইন করে পড়া। চুল গুলো সামনে এসে পড়েছে। চোখে ব্ল্যাক কালারের সান গ্লাস। ডান হাতে ব্ল্যাক চেইনের ঘড়ি। একদম কিলার লুক।
এয়ারপোর্টে উপস্থিত সকল মেয়েরা হা করে নিশমের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ চোখ ফিরাতে পারছে না।

বাইরেই এক ব্ল্যাক কালার গাড়ি দাড়িয়ে আছে। তার সামনেই একজন লোক। নিশম তার সামনে যেতেই লোকটি তার দিকে তাকিয়ে বলে।
লোকটিঃ ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ মিস্টার নিশম খান।
নিশমঃ হুম। এটিটিউড নিয়ে।
লোকটিঃ প্লিজ গেট ইনটু দি কার।
নিশমঃ গিভ মি দ্যা কি।
লোকটিঃ সরি।

নিশমঃ গিভ মি দ্যা কি। আই উইল ড্রাইভ।
লোকটিঃ বাট।
নিশমঃ আই সেইড গিভ মি দ্যা কি। ধমক দিয়ে।
লোকটি ভয় পেয়ে গাড়ির চাবিটি নিশমের হাতে দিয়ে দেয়। নিশম কিছুক্ষন চাবিটির দিকে তাকিয়ে থেকে এক মুচকি হাসে। এন্ড হুট করে পিছে চলে যায় আর বলা শুরু করে।
নিশমঃ টিক টিক ওয়ান। টিক টিক টু। টিক টিক থ্রি।
নিশমের থ্রি বলার সাথে সাথেই গাড়িটি ব্লাস্ট হয়ে যায়। এয়ারপোর্টে উপস্থিত সকলেই ভয়ে কানে হাত দিয়ে গুটি মেরে দাড়িয়ে থাকে। সেই লোকটিও ভয়ে সেইখানে বসে পড়ে। তখনই এয়ারপোর্টের অফিসার সামনে আসে। সে নিশমকে দেখেই ওর সামনে চলে যায়। কেন না এইখানে কম বেশি নিশমকে চিনে। সে নিশমকে জিজ্ঞেস করে।
অফিসারঃ হোয়াট হ্যাপেন্ড স্যার। আর ইউ ওকে।

নিশমঃ ইয়াহ আ’ম ফাইন। বাট কেউ আমার আমার গাড়িতে হয়তো বোম লাগিয়ে দিয়েছিল। ভাগ্যিস আমি বসার আগেই ব্লাস্ট হয়ে গিয়েছিল। আদার ওয়াইস মাই বাড লাক। ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে।
অফিসারঃ অহহ গোস!! বাট স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি যত দ্রুত সম্ভব আপনার জন্য নতুন গাড়ির ব্যবস্থা করছি।
নিশমঃ নো নিড। আমি অলরেডি আমার স্টাফকে নতুন গাড়ি আনতে বলে দিয়েছি। হি ইজ অন দ্যা ওয়ে।
অফিসারঃ ওকে।
এই বলে অফিসারটি চলে যায়। আর নিশম তখন ডেভিডকে কি জানি ইশারা করলো। ডেভিড তা বুঝতে পেরে মাথা ঝুলালো। তখনই একটা গাড়ি এসে হাজির হয়। ব্রাউন কালারের মারসিডিস। নিশম ড্রাইভারকে বের করে নিজে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। আর নিজের সিট ব্যাল্ট বেঁধে চলে ফুল স্প্রিডে গাড়ি স্টার্ট করে চলে ফুরফুর করে চলে যায়।
এইদিকে।

তান্নাজও তাড়াহুড়া করে বের হয়ে যায়। কেন না আজ তার উঠতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। সে হসপিটালে যাওয়ার জন্য অলরেডি অনেক লেট হয়ে গিয়েছে।
সে গাড়ি নিয়ে বের করে যায়। তান্নাজের বাসা লকালয় থেকে দূর হওয়ায় তাকে প্রতিনিয়ত হাইওয়ে দিয়ে যেতে হয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সে হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছে এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠে। সে ফোন ধরতে যায় বাট তা নিচে পড়ে যায়। তান্নাজ তা উঠাতে নিচু হয়।
আর ঠিক তখনই উল্টো পাশ দিয়েও একটি গাড়ি আসতে থাকে। গাড়িটা বেশ দূরে হলেও
অনেক স্প্রীডেই আসছে।
তান্নাজ মোবাইল উঠিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ব্রাউন কালারের গাড়ি ফুল স্পীডে আসছে।
তান্নাজঃ ওহহ শিট।

বলে গাড়ি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে শুরু করে আর বাম দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়ে ব্রেক দেয়।
এইদিকেনিশম ফোনে কথা বলতে বলতে হাইওয়ে দিয়ে ড্রাইভ করছিল। কিন্তু কিছু একটার কারনে সে খুব রেগে যায়। জিদে সে মোবাইলটা পাশের সিটে ছুঁড়ে মারে। আর যেই না সামনে তাকায় তখন দেখে একটা গাড়ি ওর একদম সামনে।
নিশম তাই খুব স্প্রীডে ডান দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ব্রেক করে।
তান্নাজ আর নিশমের গাড়ি বরাবর ভাবে ঘুরছে। ওদের গাড়ির টায়ারে রাস্তায় গোল বৃত্ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
নিশম জানালার দিকে তাকাতেই তান্নাজকে দেখতে পায়। আর দেখে থমকে যায়।
তান্নাজ ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে আর চোয়াল শক্ত করে আছে। নরমাল বিহ্যাভ করার ট্রাই করছে। বাতাসে ওর চুল গুলো মুখে ছড়িয়ে আছে।
তান্নাজের প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব হচ্ছে নিশমের। এক ঘোর লাগা কাজ করছে। চেয়েও চোখ সড়াতে পারছে না।

গাড়ি এখনো ঘুরছে। নিশমের আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোন খেয়ালী নেই ওর। ও তহ এখন তান্নাজকে দেখতে ব্যস্ত।
গাড়ি ঘুরছে আর তান্নাজ চোয়াল শক্ত করে বসে আছে। নিজেকে কান্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
আর মনে মনে বলছে।

তান্নাজঃ না আল্লাহ আমি এত তারাতারি মরতে পারি না। এখনো আমার রিভেঞ্জ নেওয়া বাকি আছে। তুমি আমাকে এইভাবে নিয়ে যেতে পারো না। আমার কাজ এখনো বাকি আছে।
নিশম তান্নাজকে দেখে প্রায় অবাকই হচ্ছে। কেন না এমন পরিস্থিতে কোন মেয়ে এমন স্বাভাবিক থাকতে পারে তা নিশমের জানা ছিল না।
একসময় দুইজনের গাড়ি স্টোপ হয়। আর তান্নাজ চোখ মেলে। তখন নিশমেরও ঘোর কাটে।
তান্নাজ পাশে তাকিয়েই দেখে এক ছেলে আরাম ভাবে গাড়ির সিটে বসে আছে। তা দেখে তান্নাজ রেগে যায়। আর দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসে।
এসেই নিশমের গাড়ির সামনে এসে দাড়ায়। আর রাগি একটা ভাব নিয়ে বলে।


পর্ব ৪

একসময় দুইজনের গাড়ি স্টোপ হয়। আর তান্নাজ চোখ মেলে। তখন নিশমেরও ঘোর কাটে।
তান্নাজ পাশে তাকিয়েই দেখে এক ছেলে আরাম ভাবে গাড়ির সিটে বসে আছে। তা দেখে তান্নাজ রেগে যায়। আর দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আসে
তান্নাজঃ এইযে মি. হোয়াট এভার ইউ আর। কাম আউট সাইড।
নিশম একবার তান্নাজের দিকে তাকিয়ে তারপর একটা ভাব নিয়ে মেনে আসে। সে এসে নিজের দুই পকেটে হাত রেখে বলে।
নিশমঃ ইয়েস।

তান্নাজঃ ইয়েস যাই ভার মে। আপনি কি কানা নাকি। এইভাবে হাইওয়ে তে কেউ গাড়ি চালায়। ইউ ইডিয়ট। আজ একটু জন্য আমি বেঁচে গেছি। আদার ওয়াইস যদি গাড়িটা ঠিক সময় ট্রান না করতাম তাহলে কি হতো বুঝতে পারছেন।

নিশম এইবার চমশা খুলে একবার ভালো করে তান্নাজকে স্ক্যান করে নিল। তান্নাজের পড়নে ব্লু কালারের ফুল কোভার নেক টপস। সাথে ব্লু জিন্স। চুল গুলো ছাড়া মুখে কোন মেকাপ নেই। দুধে আলতো গায়ের রঙ। হাতে একটা ব্লু স্টোনের বেসলেট। দেখা শেষে নিশম নিজের চশমা খুলে বলে।
নিশমঃ এত জানের ভয় থাকলে গাড়ি চালাতে আসছো কেন। ঘরে চুড়ি পরে বসে থাকতো পারো না। লাইফে যদি রিস্কই না থাকে তাহলে ওই লাইফের মানে কি।
তান্নাজঃ কে বলেছে আপনাকে আমার জানের ভয় আছে। তান্নাজ কখনো মৃত্যুকে ভয় করে না। উল্টা মৃত্যু তান্নাজকে ভয় পায়। যা আপনার থার্ড ক্লাস ইডিয়ট কানা পারসোন বুঝবে না।
তান্নাজের এমন কথায় নিশম রেগে যায়। আর রাগি চোখে বলে।

নিশমঃ এক্সকিউজ মি। আমাকে কানা আর ইডিয়ট বলার সাহস হয় কিভাবে তোমার। ইউ চিপ গার্ল। নিজে তহ ঠিক মত গাড়ি চালাতে পারো না আবার মুখে বড় বড় কথা।
তান্নাজঃ আমি না হয় গাড়ি চালাতে পারি না। কিন্তু আপনি কানা হয়ে গাড়ি চালান কেন। কানা ওয়ালা উগান্ডা জানি কোথাকার। আগে নিজে চোখ ঠিক করে তারপর গাড়ি চালানো শিখেন পড়ে অন্যকে বইলেন।

নিশমঃ ইউউউউউ। তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো।
তান্নাজঃ হা জানি কানা মার্কা ড্রাইভাররের সাথে। ভেংচি কেটে।
নিশমঃ হোয়াট নোনসেন্স। হাউ ডেয়ার ইউ টু কল দিস কালা মালা হোয়াট এভার ইট ইজ। তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে এইসব বলার। ইউ চিপ গার্ল।
তান্নাজঃ আমার সাহসের দেখসেন কি। মি. কানা। আমি যে কি তা আপনার ভাবনার অতি বাইরে। তাই আমার সাথে লাগতে আসবেন না। আর কি জানি বললেন আমি চিপ তাই না। তহ আপনি কি। আপনি নিজেই তহ চিপের বস্তা। না আছে সভ্যতা না আছে বুদ্ধি।
নিশমঃ হোয়াট ডিড ইউ সে?

তান্নাজঃ যা শুনলেন। হুহ। এখন সরেন আমার দেড়ি হচ্ছে। এমনেও আপনার জন্য অনেক লেট হয়ে গেছি। একটুর জন্য গাড়ি নষ্ট হয় নি। আদার ওয়াইস আরও লেট হতাম।
নিশমঃ হাহ। সাচ আ চিপ ফেলো। এমন খাটারা গাড়িতে নষ্ট হবেই। দেখতেই বুঝা যায় ইট ইজ সো চিপ। লাইক ইউ।
তান্নাজঃ আমার গাড়ি সম্পর্কে কিছু বলবেন না।
নিশমঃ হাহ। কেন বলবো না। যা সত্য তা তহ বলতেই হয়। কেমন খাটারা গাড়ি। মালিক যেমন দেখতে তেমনই গাড়ি। বাই দা ওয়ে ইট সুটস ইউ। এন্ড লুক এট মাই কার। ইট ইজ সো ক্লাসি জাস্ট লাইক মি। এটিটিউড নিয়ে।
তান্নাজঃ তাই না। ওয়েট আ মিনিট।
এই বলে তান্নাজ নিজের গাড়ির সামনে চলে যায়। তারপর পিছনে ডিকি খুলে তার থেকে একটা হকি স্টিক বের করে। ওইটা হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে সামনে তা দেখে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে বলে।
নিশমঃ ডোন্ট সে দ্যাট নাও ইউ উইল বিট মি। এই বলে হু হু করে হাসতে থাকে।
নিশমঃ তোমরা বাঙালি মেয়েরা কিছু পারো আর নাই পারো এইসব থার্ড ক্লাস জিনিস এই করতে পারো। তুমি যদি আমায় মারার কথা ভেবেও থাকো তাহলে তা ভুলে যাও। কেন না আমি বক্সিং চেমপিওন সাথে কেরাটেরও। সো নিজের জন্য শনি নিজে ডেকে এনো না। গো টু হোম।

এই বলে এক মুচকি হেসে পিছে ফিরে যেই না হাটা শুরু করবে তখনই নিশমের কানে এক বিকট শব্দ ভেসে আসে। সে চট জলদি পিছে ঘুরে দেখে তান্নাজ ওর গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙে ফেলেছে। তারপর আরেক বারি দিয়ে হেড লাইট। লাস্ট আরেকটা বারি দিয়ে গাড়ির উপর টেন্ট বসিয়ে দিলো।
সব কিছু এত দ্রুত হলো যে নিশম বুঝার টাইমই পেল না। তান্নাজ তখন সামনে এসে বলে।
তান্নাজঃ তান্নাজের সাথে লাগার ফল দেখলেন তহ কি। সো ফাদার মোর আমার সাথে লাগতে আসবেন না। আন্ডারস্ট্যান্ড
চুটকি বাজিয়ে আঙুল নিশমের দিকে করে।
“ইউ বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড”
এই বলে তান্নাজ হকি স্টিকটা ডিকিতে রেখে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আর ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।
নিশম হা করে তান্নাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তান্নাজের যাওয়ার পর নিশম হুস আসলো। তারপর একবার নিজের গাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে। গাড়ির হাল নাজে হাল।
নিশমঃ লেডি উইথ ফায়ার। ইমপ্রেশিভ। বাট মিস তান্নাজ নিশমের সাথে লেগে তুমি একদম ভালো করেন নি। আমার সাথে লাগার ফল তুমি পাবে। তাও খুব জলদি।

এই বলে এক ডেভিল স্মাইল দিয়ে গাড়ি থেকে ফোন বের করে কাকে যেন ফোন করে। কাকে যেন কি বলে। অতঃপর ১০ মিনিটের মধ্যে ডেভিড নতুন গাড়ি চলে আসে। আর নিশম ওইটাই চড়ে চলে যায়।
রাতে…
এক চেয়ারের সাথে একজনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখে তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। চারদিকে অন্ধকার কিন্তু সেই লোকটির মাথার উপর হলুদ রঙের বাল্ব জ্বলছে। অন্ধকার পেরিয়ে নিশম সামনে আসে। যাকে দেখে লোকটি আরও ভয় পেয়ে যায়। নিশমের সেই লোকটির চুলের মুঠি ধরে বলে।

নিশমঃ কি ভেবেছিলিস তুই আমি বুঝতে পারবো না যে গাড়ির ব্রেক ফেল করা। আমাকে কি তোর এতটাই কাঁচা খেলোয়াড় মনে হয়। আমার অগোচরে কি হয় না হয় সবকিছুর খবর আমি জানি। আর এইটুকু জিনিস আমি জানবো না। আমাকে মারার জন্য তোরা কি সব প্লেন করছিস। কিন্তু তোদের ওয়েলকাম করার স্টাইল আমার একদম ভালো লাগে নি। তাই তহ ইচ্ছাকৃত ভাবে সেই গাড়ির নিচে বোম লাগাই। ইট ইজ মোর ফান ইউ নো। বাট আফসোস এখন তোকে এখন মরতে হবে। কেন না তুই আমার সামনে দাড়ানোর সাহস দেখিয়েছিস। মরতে তহ তোকে হবেই।
হ্যাঁ এইটি সেই লোক যে কিনা সেই গাড়িটি নিয়ে এসেছিল। নিশম আগে থেকেই সব জানতো কিন্তু কোন কিছু বুঝতে দেই নি কাউকে। আর তখন ডেভিডকে বলে ওকে বন্ধী করে ফেলে।
লোকটি ছটফট করেই চলেছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কেন না তার মুখ বাঁধা। সে গোঙিয়ে যাচ্ছে। কন্ঠটা আকুতিতে পূর্ণ। নিশম সে সব তোক্কোয়া না করে নিজের গান সেই লোকটির মাথা উপর রাখে।

নিশমঃ Be ready for dead।

এই বলে সেই লোকটির মাথা বরাবর গুলিটা চালিয়ে দেয় নিশম। এক গুলিতেই লোকটি মৃত্যুবরণ করে। নিশম ডেভিডকে ইশারা করতেই ডেভিড আর কিছু বডিগার্ড মিলে লাশটিকে নিয়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পরেই নিশমের ফোন এক কল আসে। যা দেখে ওর মুখে এক চিল্লিক হাসি ফুটে উঠে।


পর্ব ৫

সকালবেলা

নিশমের গাড়িটা দাড়িয়ে আছে এক বড় বাড়ির সামনে। শহর থেকে বেশ লোকালয়ে বাড়িটি। শহর থেকে এত দূর আশার একমাত্র উদ্দেশ্য একজন স্পেশাল মানুষের সাথে দেখা করা। নিশম যতবারই বাংলাদেশে আসে তত বারি তার সাথে দেখা করে। এইটা নতুন কিছু না। বাট এইবারের বিষয় একটু আলাদা।

নিশম প্রতি বার তার সাথে নিজের অফিস বা তার অফিসে দেখা করে। অথবা একটা সিক্রেট প্লেসে। কিন্তু আজ এই প্রথম নিশম তার বাড়িতে এসে দেখা করছে। কাল রাতে তারই কল এসেছিল। সে আজকে নিশমকে তার বাড়িতে আসতে বলে। নিশমও তাই কোন কথা না বাড়িয়ে এসে পড়ে কেন না ওরও যে সেই লোকটির সাথে কথা বলার অনেক বেশি দরকার।
নিশম গাড়ির হর্ন বাজাতেই দারোয়ান এসে বাড়ির গেটটি খুলে দেয়। নিশম গাড়ি নিয়ে ভিতরে চলে আসে। গাড়িটি সাইডে পার্ক করে নেমে আসে সে।

পড়নে তার হোয়াইট টি শার্ট সাথে ব্ল্যাক কালার জেকেট এন্ড ব্ল্যাক প্যান্ট। চোখে একটা ব্ল্যাক সান গ্লাস। চুল গুলো সামনে এসে পড়েছে।
ডোরবেল বাজাতেই একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়। তারপর নিশমকে দেখে জিজ্ঞেস করে।
সার্ভেন্টঃ জ্বী কাকে চাই।

নিশমঃ মি. রাহুল ইসলাম আছেন।
সার্ভেন্টঃ হ্যাঁ তিনি ভিতরেই আছে। আপনি ভিতরে এসে বসুন আমি তাকে ডেকে দিচ্ছি।
নিশমঃ ইয়াহ সিউর।
নিশম এসে ভিতরে বসে। আর ওয়েট করতে থাকে। তখন উপর থেকে এক আওয়াজ কানে ভেসে আসে।
রাহুল সাহেবঃ ওয়েলকাম মায় বয়। হাউ আর ইউ।
নিশম উপরে তাকিয়ে রাহুল সাহেবকে দেখে এক হাসি দেয়। নিশম তাকে দেখে দাড়িয়ে যায়। রাহুল সাহেব এগিয়ে নিশমকে জরিয়ে ধরে। তারপর তাকে নিজের সামনে বসায়।
রাহুল সাহেবঃ তা কেমন আছো।
নিশমঃ ফাইন আঙ্কেল। আপনি কেমন আছেন আর আপনার শরীর কেমন এখন।
রাহুল সাহেবঃ একদম ফিট। বাট আই এম এংরি ইউথ ইউ।
নিশমঃ কেন। আমি আবার কি করলাম।
রাহুল সাহেবঃ কি করো নি বলো। বাংলাদেশে আসলেই তুমি আমার খোঁজ নাও। এই বাদে না। তাও আবার এইবার তহ আমায় জানাও নি যে তুমি আসছো। বরং আমি যেনে তোমায় ফোন দিলাম।

নিশমঃ সরি আঙ্কেল। এইবার একটু স্পেশাল কাজে এসেছি আমি। তাই সিক্রেট ভাবেই এসেছিলাম। এই জন্য কাউকে তেমন বলি নি।
রাহুল সাহেবঃ ইয়াহ আই আন্ডারস্ট্যান্ড। সে যাই হোক বিজন্যাস কেমন চলছে তোমার।
নিশমঃ ইয়াহ আঙ্কেল গুড।
রাহুল সাহেব আর নিশম এই নিয়ে সেই নিয়ে বেশ কথা বলতে থাকে। প্রায় কিছুক্ষন পড়েই নিশমের কানে এক মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে। সে সেই কন্ঠের সন্ধানে উপরে তাকায়। উপরে তাকিয়েই তার চোখ সেই মেয়েটির দিকে স্থির হয়ে যায়। একটা মেয়ে নিজের হাতে ওয়াচ পড়তে পড়তে নিচে নেমে আসছে। নিশম ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকে দেখেই চলেছে।

পড়নে তার রেড এন্ড ব্ল্যাক কালারের কোম্বেনেশনের একটা কামিজ। সাথে লাল চুরিদার আর ওরনা। চুল গুলো খোলা। মুখে কোন মেকাপ নেই। আছে এক মিষ্টি হাসি। মেয়েটি আর কেউ নয় বরং তান্নাজই। তান্নাজ নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের ওয়াচ ঠিক করতে করতে নামতে থাকে। আর বলতে থাকে।
তান্নাজঃ পপসি। আ’ম গ্রেটিং লেট। আমার নাস্তাটা তারাতারি দিতে বলো।
রাহুল সাহেবঃ আচ্ছা তুমি একটু ওয়েট করো আমি এখনই বলছি।
রাহুল সাহেবের কথায় নিশম ঘোর ভাঙ্গে। সে নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে। অতঃপর কি যেন ভেবে আবার তাকায়। আর তাকিয়ে এক ডেবিল স্মাইল দেয়।
তান্নাজ নিজের ওয়াচ ঠিক করে সামনে তাকাতে থমকে যায়। মুখের সেই হাসিটি নিমেষেই চলে যায়। আর মুখে এক রাগী ভাব চলে আসে।

তান্নাজঃ পপসি এই লোক কে আর আমাদের বাসায় কি করছে। তুমি।
তান্নাজ কিছু বলতে যাবে তখনই রাহুল সাহেব বলে উঠেন।
রাহুল সাহেবঃ ওহহ তুমি নিশমের কথা বলছো। এইটা ওই ছেলে যার কথা আমি তোমায় বলেছিলাম। হি ইজ দ্যা ওয়ান।
তান্নাজঃ ইউ মিন সে হি ইজ দ্যা নিশম খান। দ্যা গ্রেট বিজন্যাস ম্যান এন্ড যে নাকি তোমার জান বাঁচিয়ে ছিল।

[ হ্যাঁ নিশম একবার রাহুল সাহেবের জান বাঁচিয়ে ছিল। রাহুল সাহেব আরও ২ বছর আগে কিছু কাজে স্কটল্যান্ড গিয়েছিল। সেখানে কেউ তারউপর গুলি চালায় যার ফলে সে আহত হয়ে রাস্তার মাঝেই পরে থাকে। তখন নিশমের গাড়ি সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল। রাস্তার মাঝে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি দাড় করায়। আর নেমে এসে রাহুল সাহেবকে আহত অবস্থায় পায়। তাই নিশম দ্রুত তাকে হসপিটালে এডমিট করায়। আর তার চিকিৎসা করায়। রাহুল সাহেব ঠিক হলে নিশম তার সাথে দেখা করে। রাহুল সাহেব ওকে কৃতজ্ঞতা জানায়। আর সেই থেকে তাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক হয়। আর এর সুবাদে তাদের মধ্যে আরেকটি সম্পর্ক হয় যা জলদিই জানতে পারবেন। ]
রাহুল সাহেবঃ ইয়াহ। ওই সে। আর নিশম ও আমার একমাত্র মেয়ে তান্নাজ। সি ইজ আ ডাক্তার।
নিশমঃ হ্যালো মিস তান্নাজ। মুখে এক ইনোসেন্ট হাসি নিয়ে।
তান্নাজঃ আসসালামু আলাইকুম। স্মিত হেসে।
তান্নাজের মুখে সালাম শুনে নিশম কিছু অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে বলে।
নিশমঃ ওয়ালাইকুমাস সালাম।

[ কালকে কেমন পায়ের উপর পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিল। আর আজকে দেখ কি নম্র আর ভদ্র। যেন ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারে না। ]
তান্নাজঃ থ্যাংকিউ সো মাচ ভাইয়া আমার পপসির জান বাঁচানোর জন্য।
[ বইন তোরে কোন দিক দিয়া নিশম ভাই লাগে একটু বলতো। এত হ্যান্ডস্যাম ছেলেরে কেউ ভাই বানাই বাট আমি তহ ভুলে গেসিলাম যে তুই তান্নাজ। তোর দ্বারাই এইসব সম্ভব]
ভাইয়া কথাটা শুনে নিশম শুকনো গলায় বিষম খেল। তা দেখে রাহুল সাহেব তাকে চট জলদি টেবিল থেকে পানি দেয়। নিশম এক ঢোকে পুরো পানি শেষ করলো।
নিশমঃ কালকে ছিলাম কানা। ইডিয়ট। ড্রাইভার। থ্রাড ক্লাস। আর আজ হয়ে গেলাম ভাইয়া। আসলেই বাঙালি মেয়েরা সব পারে। মনে মনে।
রাহুল সাহেবের কথায় নিশনের ধ্যান ভাঙে।
রাহুল সাহেবঃ তুমি ঠিক আছো তহ।
নিশমঃ জ্বী আঙ্কেল।

তান্নাজঃ ভাইয়া আপনাকে মনে হয় কেউ মনে মনে গালি দিচ্ছে। তারই ইফেক্ট এইটা। তা আপনাকে এত গালি কে দিচ্ছে শুনি।
নিশমঃ আমার সামনে থাকা একটা চুরেল মাইয়া। বির বির করে।
তান্নাজঃ কিছু বললেন।
নিশমঃ কই না তহ।
তান্নাজঃ ওও। আচ্ছা পপসি আমি নাস্তা করে নেই। দেরি হচ্ছে আমার। তুমি কি এখন নাস্তা করবে নাকি পরে।

রাহুল সাহেবঃ হ্যাঁ করে নাও। আমিও এখনই করবো। নিশম তুমি কি নাস্তা করে এসেছ নাকি।
নিশমঃ না আঙ্কেল করি নি। পরে করবো।
রাহুল সাহেবঃ একি পরে করবে কেন। আমাদের সাথেই করো। আর ভুলেও না বলবে না।
নিশমঃ ওকে।
এই কথা শুনে তান্নাজ এক বিরক্তিকর ভাব নিয়ে চলে যায় ডাইনিং এ। ওর পিছে পিছে নিশম আর রাহুল সাহেব।
তান্নাজ আর নিশম মুখোমুখি বসে আছে। যে যার মত নাস্তা খাচ্ছে। তখনই রাহুল সাহেব বলে উঠেন।

রাহুল সাহেবঃ নিশম তোমাকে কিন্তু আজ আমি এক বিশেষ কারনে ডেকেছি।
নিশমঃ জ্বী কি কারনে আঙ্কেল।
রাহুল সাহেবঃ এবাউট দ্যাট টপিক।
নিশমঃ আব। আমারও সেই বিষয়ে আপনার সাথে কথা ছিল বাট এইখানে কথা বলাটা আমার কাছে অড লাগছে। কেন না।
তান্নাজের দিকে তাকিয়ে।

তান্নাজ তহ এক মনে খেয়েই চলেছে। ওর এইসব বেপারে কোন মাথা ব্যথা নেই। রাহুল সাহেব বেপারটা বুঝতে পেরে বলে।
রাহুল সাহেবঃ হুম বুঝেছি। আচ্ছা এইখানে না হয় কথা না হলো। তুমি আজ রাত বারোটায় সেই সিক্রেট প্লেসে উপস্থিত থেক। আজ তোমাকে একজন স্পেশাল মানুষের সাথে দেখা করাবো।
নিশমঃ ওকে আঙ্কেল। বাট ওর সামনে কথা বলাটা কি দরকার ছিল। তান্নাজের দিকে তাকিয়ে।
তখনই নিশম নিজের পায়ে ব্যথা অনুভব করে। সামনে তাকিয়ে দেখে তান্নাজ রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তার আর বুঝতে দেরি নেই তান্নাজ ওর পায়ে জোরে পারা দিয়েছে। নিশম এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এখন রাগে ফুসছে।

নিশমঃ হাও ডেয়ার সি। নিশমকে পারা মারার সাহস কিভাবে হয় এই মেয়েটার। এখন আঙ্কেল না থাকলে এর কি যে হাল করতাম আমি। মনে মনে।
রাহুল সাহেবঃ ইউ ডোন্ট ওয়ারি। আমি কার সামনে কি বলেছি তা আমি জানি।
নিশমঃ হুম।
তান্নাজ নাস্তা খেয়ে নিজের কার নিয়ে চলে যায়। এইদিকে রাহুল সাহেব আর নিশম অন্য একটা রুমে গিয়ে কিছু ডিসকাস করতে থাকে। কথার এক পর্যায় নিশম বলে।
নিশমঃ কিন্তু এইটা কিভাবে সম্ভব। মানে সে।
রাহুল সাহেবঃ হ্যাঁ।
নিশম চোখ দুটো একদম লাল হয়ে আসে। যেন এখনই সব শেষ করে দিবে।
নিশমঃ তাকে তহ আমি ছাড়বো না। কোন মতেই না। He have to die।


পর্ব ৬

রাত ১২ টা।
চারদিক নিস্তব্ধ। এর মধ্যে হাইওয়ে দিয়ে ফুল স্প্রিডে একটি বাইক ছুটে চলেছে। স্প্রীড প্রায় ১২০ এর কাছাকাছি। একদম প্রোফেশনাল বাইকারদের মত বাইক চালাচ্ছে।
সে আর কেউ নয় বরং নিশম। এমন নিস্তব্ধতা রাতে খালি হাইওয়েতে বাইক চালানোর মজাই আলাদা। তাই সে সেই মজাটাই উপভোগ করছে।

কিছু দূর যেতেই তার সাথে আরেকটি বাইক যোগ হয়। নিশম পাশে ফিরে দেখে একজন বাইকার। হেলমেট পড়া তাই মুখ বুঝা যাচ্ছে না। পরনে ব্ল্যাক টিশার্ট আর রেড জেকেট এন্ড জিন্স। বাইকারটি নিশমের সাথে কম্পিটেশন করার চেষ্টা করছে।
তা দেখে নিশমের মুখে এক চিল্লিক হাসি ফুটে উঠে। সে তার বাইকের স্প্রীড আরও বাড়িয়ে দেয়। সাথে পাশে থাকা বাইকারটিও। দুইজন বাতাসের বেগে ছুটে চলেছে। কেউ কাউরো থেকে কম নয়। এক পর্যায় পাশে থাকা বাইকটি নিশমকে ক্রস করে ডান দিকে চলে যায়। আর নিশম বাইকটা থামিয়ে বলে।
নিশমঃ হু দ্যা হেল ওয়াজ হি। যে কিনা নিশমকে হারিয়ে গেল। নো নিশম তুই হারতে পারিস না। তুই হারা শিখিস নি। ইউ হ্যাভ টু উইন।
এই বলে নিশম ফুল স্প্রীডে বাইক চালানো স্টার্ট করে। বাট ওই বাইকারকে আর পায় না। নিশম যখন সেই বাইকারকে খুঁজচ্ছে তখন নিশমের ফোনে ফোন আসে। নিশম বাইক থামিয়ে ফোন বের করে দেখে রাহুল সাহেব। নিশম ফোন পিক করে কি যেন বলে এন্ড মোবাইল রেখে আবার বাইক চালু করে।

এক গোডাউনের ভিতরে রাহুল সাহেব আর নিশম দাড়িয়ে আছে। কাউরো ওয়েট করছে তারা। তখনই তাদের কানে একটি বাইকের আওয়াজ কানে আসলো। রাহুল সাহেব আর নিশম পিছে ঘুরে দেখে একজন হেলমেট পড়া লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
নিশম ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলো এইটা সেই ব্যক্তি যে কিনা নিশমকে বাইক রেসে হারিয়েছিল। নিশম তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাহুল সাহেব বলে উঠেন।

রাহুলঃ নিশম এই হচ্ছে সেই স্পেশাল মানুষ যার সাথে আমি তোমার দেখা করাতে চেয়েছিলাম। সে এখন থেকে আমার জায়গায় তোমার সাথে কাজ করবে। আমিও থাকবো বাট শুধু তোমাদের গাইড করবো মেইন কাজ তোমাদের দুইজনকে এক সাথেই মিলেই করতে হবে।
নিশমঃ বাট সে কে। আর এইভাবে আমাদের কাজের সাথে একজন অপরিচিত কাউকে সামিল করা কি ঠিক। আমি এই কাজে বাহির কাউকে সামিল করতে পারবো না। সরি৷
রাহুল সাহেবঃ সে অচেনা নয়। বরং আমাদেরই পরিচিত। আর ও যে কি তা তুমি এখনো জানো তাই এমন বলছ।

নিশমঃ হু দ্যা হেল ইজ হি।
রাহুল সাহেবঃ এইবার তহ নিজের চেহারা প্রদর্শন করো।
নিশম সেই বাইকারের দিকে তাকায়। সেই বাইকারটি নিজের হেলমেট খুলে। হেলমেট খুলার সাথে সাথে তার ঝুটি করা চুলগুলো বেড়িয়ে আসে। আর মুখে এক বাঁকা হাসি। নিশম সামনে থাকা ব্যক্তিটি দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। কেন না সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ না বরং তান্নাজ নিজেই। নিশম তান্নাজকে দেখে রাহুল সাহেবকে বলে।
নিশমঃ এইসব কি আঙ্কেল। ও এইখানে কি করছে। আর ওর মত বাচ্চা মেয়েকেই বা কেন এইখানে আনসেন।
তান্নাজঃ মাইন্ড ইউর ওউন বিজন্যাস। আমি কে আর এইখানে কেন তার কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই। এন্ড পপসি তুমি আমাকে কার সাথে কাজ করতে বলছে। যার নাকি আমার সাথে কোন মিলই নেই। সে কই আর আমি কই।
নিশমঃ ইয়েস ইউ আর রাইট। আমি কই আর তুমি কই। তুমি শুধু নরমাল একজন ডাক্তার আর আমি মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের কিং দ্যা NK। তোমার সাথে আমার কোন ভাবেই যায় না।
তান্নাজঃ ইউউউউউ।

রাহুল সাহেবঃ চুপ। একদম চুপ। কি বাচ্চাদের মত শুরু করেছ। আমি ভালো মতই জানি কে কেমন। আর নিশম তুমি হয়তো জানো না ও কে। সি ইজ TR। দ্যা ইয়াংগেস্ট লেডি মাফিয়া অফ ওয়ার্ল্ড।
নিশমঃ হোয়াট। চিল্লিয়ে। এইটা কিভাবে সম্ভব। TR তহ।
রাহুল সাহেবঃ হ্যাঁ জানি সকলের মতে TR দুবাইতে থাকে। বাট সেটা শুধু লোক জানার জন্য। আর কিছুই না।
নিশমঃ আমি মানি না ও TR। ওর মধ্যে মাফিয়া টাইপ কোন কোলেটিই নেই। কে জানে গানও চালাতে পারে কিনা।
তান্নাজঃ আমার এবেলিটির উপর ডাউট করে একদম ভালো করেন নি মি. খান। নাও জাস্ট সি।
এই বলে তান্নাজ নাহিদকে ফোন করে। একটু পরই নাহিদ এসে হাজির হয়। তান্নাজ নাহিদকে কি যেন বুঝিয়ে দেয়। আর নাহিদ চলে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নাহিদ শুটিং বোর্ড আর দুইটা গান আর একটা কালো ফিতা নিয়ে হাজির হয়।
তান্নাজ কালো ফিতাটা নিয়ে নিজের চোখে বাঁধে আর দুই হাতে দুই গান নেয়। তারপর ধাম ধাম ধাম করে ৬ টা গুলি চালিয়ে দেয়।
নিশম অবাক হতে শুটিং বোর্ডডে তাকিয়ে আছে। কেন না নিশানা একদম পার্ফেক্ট। ৬ টাই গুলি এই একদম ঠিক জায়গায় লেগেছে।
তান্নাজঃ নাহিদ গিভ মি দ্যা নাইফ।

নাহিদ গান গুলো সরিয়ে নিয়ে তান্নাজের হাতে কিছু ধারালো ছুরি দিয়ে যায়। তান্নাজের চোখে এখনো কালো ফিতা বাঁধা। তান্নাজ এইবার পিছে ঘুরে দাড়িয়ে যায়। তারপর উল্টো হয়ে ছুরি চালানো শুরু করেএইবারও নিশানা একদম পার্ফেক্ট
তান্নাজ এইবার নিজের চোখের বাঁধন খুলে নিশমের সামনে গিয়ে বলে।তান্নাজঃ আমি কি কি করতে পারি তা হয়তো নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেসেন। সো নেক্সট টাইম আমাকে ভুলেও আন্ডাররেস্টিমেট করার ট্রাই করবেন না। আন্ডারস্ট্যান্ড।
ছুটকি বাজিয়ে নিশমের দিকে আঙুল তুলে।
“ইউ বেটার আন্ডারস্ট্যান্ড”

নিশম হা হয়ে তান্নাজকে দেখছে।
নিশমঃ তুমি দেখছি গিরগিটির থেকে জলদি রঙ পাল্টাও। ঠিকই শুনেছিলাম TR ইজ আ মিস্টেরি। আজ দেখেও নিলাম। তুমি আসলেই একটা মিস্টেরি।
বাট আই লাইক ইউর এটিটিউড। এই বয়সে এত উন্নতি। এই প্রথম কেউ NK এর সাথে চোখের উপর চোখ রেখে কথা বলেছে। আমাকে চেলেঞ্জ করার সাহস দেখেছিয়ে। ইম্প্রেশিভ। বাট মিস TR ইউ ডোন্ট নো NK কি জিনিস। আমাকে হার মানানো এত সহজ না। বুঝলে।
তান্নাজঃ হোয়াট এভার।
রাহুল সাহেবঃ ভুলে যেও না তোমাদের দুইজনকে এক সাথে কাজ করতে হবে। তাই একে অপরের সাথে কোম্পিটেশন না করে নিজের মধ্যে আন্ডারস্যান্ডিং বাড়াও। এতে আমাদেরই কাজে আসবে। আর আমরা আমাদের লক্ষ্যে আরও তারাতারি যেতে পারবো।
তান্নাজ আর নিশম এক সাথে বলে উঠে।
“ইয়াহ”
[এইবার আসি নিশম আর রাহুল সাহেব করা কিভাবে এইকাজে এক সাথে যুক্ত হলো। নিশম যখন রাহুল সাহেবকে বাঁচায় তখন তাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। একসময় তারা দুইজন নিজের কাজ করতে গিয়ে জানতে পারে যে দুইজনেই মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের সাথে জরিত। আর দুইজনেরই দুশমন একই ব্যক্তি।
সেই থেকে তারা মাফিয়া ওয়ার্ল্ডেও এক সাথে কাজ করা শুরু করে। আর খুব ভালো পার্টনার হয়ে যায়। ]]

রাহুল সাহেব নিজের ব্যাগ থেকে কিছু কাগজ আর কথা কিছু ছবি বের করে বলে।
রাহুল সাহেবঃ এই খানে সেই ব্যক্তিটির সব ইনফরমেশন আছে। সে কোথায় বা এখন কি করে। তার রেঞ্জ কতটুকু আর তার সাথে কে কে সামিল। তার সকল কালো ব্যবসার রিকোর্ড আছে এতে। আর এই হলো তার ছবি।
টেবিলে একটি ছবি রেখে।

ছবিটি দেখার সাথে সাথে তান্নাজ আর নিশমের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। চোখ গুলো একদম টকটকে লাল। মুখে এক হিংস্র ভাব। দুইজন এক সাথেই বলে উঠে।
“হাবিব আলমগীর”
রাহুল সাহেবঃ ইয়াহ। সে এখন ইতালিতে আছে। আর সেখান থেকেই তার সব কিছু সামাল দিচ্ছে। শুনতে পাওয়া গেছে যে সে নাকি বাংলাদেশে অনেক বড় একটা প্রোজেক্ট করতে যাচ্ছে। এই প্রোজেক্টটা নাকি অনেক বড়। এতে নাকি তার কোটি কোটির লাভ হবে। যদি আমরা কোনভাবে এই প্রোজেক্টে বাঁধা দিতে পারি তাহলে হাবিবকে সয়ং নিজেই বাংলাদেশ আসতে হবে। আর সব সামাল দিতে হবে। তা না হলে ওর কোটি কোটির টাকার লস হয়ে যাবে।
তান্নাজঃ বাট প্রোজেক্টটা কি।

রাহুল সাহেবঃ মানুষ পাচার। সে আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৫০০০ হাজার মানুষকে অন্য দেশে গোলাম হিসাবে পাচার করতে চলেছে।
নিশমঃ তাহলে তহ এই কাজ যেকোনো ভাবেই আটকাতে হবে।
রাহুল সাহেবঃ ঠিক তাই। আর কিভাবে কি করতে হবে তাহলে তা শুনো।
বেশ কিছুক্ষণ পর।
তান্নাজঃ হোয়াট আ প্লেন পপসি। ইউ আর জাস্ট ডেম গুড।
নিশমঃ এখন হাবিব আলমগীরকে আমার কাছ থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। He has to die।

তান্নাজঃ ইউ আর রং। তাকে আমাদের হাত কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেন না সে আমারও শিকার।
নিশমঃ ঠিক আছে। নিশম হাত বাড়িয়ে বলে।
“পার্টনার”
তান্নাজও হাত মিলিয়ে বলে।
তান্নাজঃ পার্টনার।


পর্ব ৭

দেখতে দেখতে ১ সপ্তাহ কেটে যাচ্ছে। পশুর মধ্যেই হাবিব আলমগীর লোকেরা ৫০০০ মানুষকে একত্রিত করবে। তাদের ভালো মতো চেক করে গোডাউনে শিফট করা হবে। এর তিনদিন পরই তাদের জাহাজে শিফট করে সমুদ্রের পথ দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। নিশম আর তান্নাজকে যা করার কাল আর পরশুর মধ্যেই করতে হবে।

এক তহ এত গুলো মানুষকে পাচার হতে রক্ষা করতে হবে আর দ্বিতীয়ত্ব হাবিব আলমগীরকে বাংলাদেশে আনতে হলে তার প্রোজেক্টে বাঁধা যে দিতেই হবে। এইটা এক মাত্র সুবর্ণ সুযোগ তাকে হাতে নাগালে ধরার। আর এই সুযোগ নিশম আর তান্নাজ কোন মতেই হাত ছাড়া করতে পারবে না। তাদের নিজের জানের বিনিময়েও হাবিব আলমগীরকে চাই।

সেইদিনের পর থেকে নিশম আর তান্নাজ মধ্যে এক বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। যেহেতু এক সাথে কাজ করতেই হবে তাহলে ঝগড়া করে কেন থাকবে। বন্ধু মত হয়েই থাকুক না। প্রথম দিকে একটু আদটু ঝগড়া হলেও পরবর্তীতে তাদের আচার আচরণ। চয়েস। চাল চলন। সব একে একে মিলে যায়। যার ফলে দুইজনের মধ্যে খুব জলদি বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বেশ ভাব জমে গেছে তাদের মধ্যে।
এখন তারা নিজেদেরকে পুরোপুরি ভাবে প্রিপেয়ার্ড করছে শত্রুদের সাথে লড়াই করার জন্য। রাহুল সাহেবও তাদের সহযোগিতা করছেন। কালকে তারা সেই গোডাউনে এট্যাক করবে এবং সেই সকল মানুষদের বাঁচাবে।
রাতের বেলা।

তান্নাজ ছাদে হাটাহাটি করছে আর কেডবেরি ডেরিমিল্ক সিল্ক খাচ্ছে। তান্নাজের যখন অনেক টেনশন হয় তখন তান্নাজ এইভাবে হাটাহাটি করে চকলেট খায়। তান্নাজ আজ অনেক টেনশন হচ্ছে। সে পারবে তহ সেই মানুষগুলো কে বাঁচাতে। পারবে তহ হাবিব আলমগীরকে শাস্তির দিতে। নিজের প্রতিশোধ পূরণ করতে। তান্নাজ এইসব ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে যায় আর একদম ছাদের কিনারে চলে যায়। ছাদের রেলিং এতটা উঁচু নয়। একটু ঝুঁকে গেলেই পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তান্নাজ অন্যমনস্ক হয়ে হেটেই চলেছে। ছাদের রেলিং একদম কাছে চলে গিয়েছে। যেই পড়ে যেতে নিবে তখন কোথ থেকে নিশম ঝড়ের গতিতে এসে তান্নাজকে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে। এতে তান্নাজ হতভম্ব হয়ে যায়। নিশম জ্বরে জ্বরে শ্বাস নিচ্ছে। মুখ চোখ একদম লাল হয়ে গিয়েছে। চোখে তার কাউকে হারানোর ভয় স্পষ্ট। নিশম জানে না এই ভয়ের কারন কি।

এইদিকে তান্নাজ নিশমের বুকের ধুকধুকানি শুনছে। তান্নাজ এইবার
নিজের কান নিশমের বুকে রেখে নিশমের হার্টবিট গুলো শুনতে থাকে। বেশ ভালোই লাগছে তার। কেন জানি তার এই বুকে নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হচ্ছে। নিজের মধ্যেই এক ভালো লাগা কাজ করছে। কিন্তু তার এই ভালো লাগা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। নিশম তান্নাজকে টেনে সামনে দাড় করিয়ে ওর বাহু দুটো চেপে ধরে বলে।
নিশমঃ ধ্যান কোথায় ছিল তোমার। আরেকটু হলেই তহ ছাদ থেকে পড়ে যেতে। আমি ঠিক টাইমে না আসলে কি হতো বুঝতে পারছো।

তান্নাজঃ সরি আসলে বুঝতে পারি নি। কখন যে ছাদের কিনারে চলে যাই তা বুজতে পারি নি।
নিশমঃ কি এমন করছিলে যে খেয়াল ছিল না যে তুমি কোথায় চলে যাচ্ছো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
তান্নাজঃ না মানে। তেমন কিছু না। তা আপনি এত রাতে এইখানে কিভাবে।
নিশমঃ এক কাজে এসেছিলাম আঙ্কেলের কাছে। কাজ শেষে যেতে নিলে আঙ্কেল যেতে দিল না। যেহেতু কাল আমাদের জন্য অনেক স্পেশাল একটা দিন তাই তিনি চাচ্ছিলেন সকলে এক সাথেই থাকি। আমিও আর মানা করি নি। রয়ে গেলাম। তোমার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারি তুমি নাকি ছাদে। তাই একটু দেখতে এসেছিলাম। আর এসে দেখি এই কান্ড।
তান্নাজঃ ওওও। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
নিশমঃ গো আ হেড।

তান্নাজঃ আপনার সাথে হাবিব আলমগীরের কি সম্পর্ক। কিসের প্রতিশোধ নিতে চান আপনি তার কাছ থেকে। কিসের ক্ষোভ এত আপনার তার প্রতি।
নিশমঃ যদি সেম কুয়েশ্চনটা আমি করি।
তান্নাজঃ যেহেতু আমি আগে প্রশ্নটা করেছি তাই উওরটা আপনিই আগেই দিবেন।
নিশমঃ ঘাড় ত্যাড়ামি আর ছাড়বা না তাই না।
তান্নাজঃ এইখানেই ঘাড় ত্যাড়ামির কি দেখলেন। সোজা কথার সোজা উওর দিয়েছি।
নিশমঃ থাক আর বলতে হবে না। আই নো ইউ ভেরি ওয়েল। তুমি হাল ছাড়ার মানুষ না।
তান্নাজঃ হোয়াট এভার। এখন বলবেন কি।

নিশম এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে।
নিশমঃ হাবিব আলমগীর আমার বাবা।
তান্নাজঃ হোয়াট দ্যা হেল। বাবা মানে। ওয়েট ওয়েট। আপনি কি তাহলে তারই ছেলে।
নিশমঃ যদি বলি আনফোরচুনেটলি ইয়েস। বাইলোজিক্যালি না হলেও সমাজের চোখে সে আমার বাবা।
তান্নাজঃ হোয়াট ডু ইউ মিন বায় দ্যাট।
নিশমঃ মানে খুব সোজা। হি ইজ মাই স্টেপ ফাদার।
তান্নাজঃ ইউ মিন সৎ বাবা।
নিশমঃ হ্যাঁ।

তান্নাজঃ আমায় সব খুলে বলবেন একটু। সব কেমন যেন এক গোলক ধাঁধাঁ লাগছে আমার কাছে।
নিশম এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে বলে।


পর্ব ৮

নিশমঃ আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন আমার বাবা একটা কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমার বাবা ছিলেন তখনকার একজন সেরা অরগিনাইজার। বিভিন্ন শো এন্ড ফাংশন তিনি অরগিনাইজ করতেন। বেশ নাম ডাক ছিল তার। টাকা পয়সার কমতি ছিল না। তাই ছোট থেকে যা চেতাম তাই পেতাম। এক মাত্র ছেলে বলে কথা ছিল। বাবা মা আমাকে অনেক বেশি ভালবাসতেন। সব সময় আমায় আগলিয়ে রাখতেন। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সব কিছু কেমন যেন উলোট পালোট হয়ে গেল। বাবা যাওয়ার পর মা ভেঙে পড়ে। কিন্তু এক সময় আমার জন্য শক্ত হয়ে দাড়ান। বাবার কোম্পানিটি নিজেই নিজেই দেখা শুনা করেন। কিন্তু তাতে তাকে অনেক কটু কথা শুনতে হতে। এক সময় তার পরিবার তাকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। মা প্রথমে মানা করলেও পরবর্তীতে আমার কথা ভেবে রাজী হতে যান আর আমাদের কোম্পানির মেনেজারকে বিয়ে করেন। সে বরং আর কেউ নয় বরং

হাবিব আলমগীর নিজেই। তখন আমার বয়স ৮ এ পরে মাত্র।
বিয়ের ২ মাস ভালোই ছিল সে। কিন্তু এর পরে তার আসল রুপ বেড়িয়ে আসে। সে রাতে নেশা করে এসে মাকে পিটাতো। তখন মাঝ রাতে মায়ের চিৎকার শুনে উঠে যেতাম। আর দরজার ফাক দিতে দেখতাম যে সে আমার মাকে মারছে। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম। ছোট ছিলাম বলে। মাও কিছু বলতেন না। ভাবতেন এক সময় সব ঠিক হয়েই যাবে।
কিন্তু দিন দিন সব আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। একদিন তহ তিনি বাসায় পর নারীকে নিয়ে আসেন। যা মা সহ্য করতে পারে নি। ওই নারীকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়। তাতে হাবিব আলমগীর রেগে যায়। আর মাকে বেল্ট দিয়ে অনেক মারে। আর বলে সে নাকি আমার মাকে শুধু টাকার জন্য বিয়ে করেছে। তার আমাদের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই।

তিনি এই বলে মাকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলে। আমি গিয়ে তখন তার পায়ে পরি আর বলি আমার মাকে ছেঁড়ে দিতে কিন্তু তিনি দেন নি। বরং আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। যার ফলে আমি দেয়ালের সাথে অনেক জ্বরে আঘাত পাই। আমার মাথা দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল। মা আমার নাম ধরে তখন চিৎকার দেয়। আমার কাছে আসতে চায়। কিন্তু দেয় না বরং আরও মারতে থাকে।
আমি আবছা চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখি হাবিব আলমগীর আমার মায়ের পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়। তখন আমি মা বলে এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারাই।

এই বলে নিশম কাদতে থাকে। ওর চোখ দিয়ে অনাবরতো পানি গরিয়েই চলেছে। ছেলেরা নাকি সহজে কাঁদে না। যখন তাদের মধ্যে থাকা কষ্টগুলো মেঘের সমতুল্য হয়ে যায়। কোন বাঁধা মানতে পারে না তখন নাকি তারা তাদের কষ্ট একবারেই বিসর্জন দেওয়া জন্য একবার হলেও মন খুলে কাঁদে। যা আজ নিশমের বেলায় হচ্ছে।
নিশমের চোখে পানি দেখে তান্নাজের চোখেও পানি চলে এসেছে। কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে বলে।
তান্নাজঃ তারপর।

নিশমঃ যখন জ্ঞান ফিরে আমি তখন মা মা করে চিৎকার করে উঠি। আমার পাশেই পাশের বাসার আন্টি ছিল। সে আমায় শান্ত করতে থাকে। কিন্তু আমি তখনো মা মা করেই চলেছিলাম। তা দেখে তিনি আমায় একটা কবরের সামনে নিয়ে যায়। আর বলে এইখানেই নাকি আমার মা শুয়ে আছে। কাল নাকি আমাদের বাসায় ডাকাত পরেছিল। ডাকাতরা সব নিয়ে যেতে নিলে নাকি মা বাঁধা দেয়। আর তারা মাকে মেরে ফেলে। আমাকেও নাকি আঘাত করে। তখন বাবা বাসায় ছিল না। বাবা যখন বাসায় আসে তখন এইসব দেখে নাকি পাড়া প্রতিবেশিদের ডেকে আনে।
আমার যখন জ্ঞান ছিল না তখন নাকি মার জানাযা গিয়ে কাফনের কাজ শেষ করে দেওয়া হয়। হাবিব আলমগীর যে সবাইকে মিথ্যা বলেছে তা আমার বুঝতে দেরি নেই। সে যে খুব স্মার্টলি চাল চেলেছে।

কিন্তু আমার তখন কোন কিছুর হুস ছিল না। আমি তখন মা মা বলেই চিৎকার করছিলাম। তখন কোথা থেকে হাবিব আলমগীর এসে আমায় টেনে হিচড়ে বাসায় নিয়ে আসে। আর রুমে বন্ধি করে দেয়। তখন অনেক মিনতি করে বলেছিলাম আমাকে মার কাছে যেতে দিতে কিন্তু দেয় নি। প্রায় ৩ দিন সেই রুমে বন্ধি ছিলাম। কোন খাওয়া পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি আমায়। প্রায় ৪ দিনের দিন হাবিব আলমগীর রুমে এসে আমায় রুম থেকে বের করে আনেন। আর কোথায় যেন নিয়ে যায়। আমি তখন অনেক দুর্বল ছিলাম। তাই কিছু বলতে পারি নি।

সে আমায় কোন এক বস্তির মত জায়গায় এনে একটা রুমের ভিতর আমায় নিয়ে একজনের কাছে দিয়ে দেন। তখন তিনি আমায় ভালো মত দেখে হাবিব আলমগীরকে মোটা মোটা ৩ টা টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দেন। আর সে সেই টাকা গুলো নিয়ে দাঁত কেলিয়ে চলে যায়। আমি পিছন থেকে ডাকলেও পিছে ফিরে তাকায় নি সে। সেই দিন না বুঝলেও এখন বুঝি তিনি আমায় তাদের কাছে বেঁচে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। সেই লোকগুলো আমায় পরে বিদেশে পাচার করে দেয়। সেখানে আমায় অনেক টর্চার সহ্য করতে হয়। কাজ করতে না পারলে প্রতিদিন মার খেতে হতো। এমনও অনেক দিন গেছে যে আমি না খেয়ে ছিলাম। কিন্তু দেখার মত কেউ ছিল না। এক সময় আমি এইসব সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যাই। কোথায় যাচ্ছিলাম জানি না। কোথায় ছিলাম তাও জানতাম না। শুধু পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম এখন এক গাড়ি এসে আমায় ধাক্কা দেয়। আর আমার এক্সিডেন্ট হয়।

চোখ খুলে যখন দেখি তখন আমি নিজেকে একটা হাসপাতালে আবিষ্কার করি। আর পাশেই ছিলেন এক বয়স্ক লোক। পরে জানতে পারি তার গাড়ির সাথেই আমি ধাক্কা খাই। তিনি আমার নাম আর ঠিকানা জানতে চাইলেন। তখন আমি আমার নাম তহ ঠিকই বলতে পারি কিন্তু ঠিকানা বলতে পারি না। তিনি পরবর্তীতে জানতে চাইলেন যে আমি মাঝ রাস্তায় কি করছিলাম। তখন আমি তাকে শুরু থেকে সব খুলে বলি। তিনি সব শুনে আমাকে তার সাথে নিয়ে নেন। আর আমায় তার সাথে রেখে দেন। তার আপন বলতে কেউ ছিল না। তিনি ছিলেন একজন মাফিয়া। গত বছর তার দুশমনরা নাকি তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারকে মেরে ফেলে। সেই থেকে তিনি একা। তিনি আমায় তার সাথে মাফিয়ার কাজে যুক্ত করে ফেলেন। সেই থেকে আমি এই মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত। আর আজ আমি এই মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের কিং।

জানো যখন কিছুটা বুঝতে শিখি তখন থেকেই আমি হাবিব আলমগীরকে ঘৃণা করা শুরু করি। প্রতিশোধের আগুন দাও দাও করে জ্বলতে থাকে আমার মধ্যে। তাকে মারার জন্য মরিয়া হয়ে পরি আমি। কিন্তু তিনি নাকি এরই মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যান। সে কোথায় কি করে কেউ জানতো না। তাকে এত বছর ধরে খুঁজেই বেড়িয়েছি। আমি তখনই শপথ নেই যদি হাবিব আলমগীরের মৃত্যু কাউরো হাতে লিখা থাকে তাহলে তা শুধু আমার হাতে। আর কাউরো না।
আর আজ গিয়ে তাকে ধরার এত বড় একটা সুযোগ পেয়েছি। তাকে তহ আমি ভয়াবহ থেকে ভয়াবহ মৃত্যু দিব।

তান্নাজ সব শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। মানুষ এতটা খারাপ কি করে হতে পারে। তান্নাজ তহ এতদিন ভেবেছিল তার সাথে যা হয়েছে তার থেকে খারাপ আর কাউরো সাথে হতে পারে না। সে যে কষ্ট ভোগ করেছে তা কেউ করতে পারে না।
কিন্তু না তার থেকেও যে দ্বীগুন কষ্ট এই ব্যক্তিটা পেয়েছে। তান্নাজ বুঝতাসে না সে কি বলবে। কিভাবে শান্তনা দিবে নিশমকে। নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। কিন্তু তাও তান্নাজ নিজেকে শক্ত করে যেই না কিছু বলতে যাবে তখন নিশম বলে উঠে।
নিশমঃ অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। যাও গিয়ে শুয়ে পরো। কালকে কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন আমাদের জন্য। কোন কিছুতেই ভুল করা যাবে না। সে জন্য অনেক এনার্জি লাগবে। তাই যাও এখন ঘুমিয়ে পড়ো যাও।
তান্নাজ বুঝতে পারে নিশম এখন একা থাকতে চাচ্ছে। তাই তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এইসব বলছে। তান্নাজ কিছু না বলে চুপচাপ চলে যায়। আর নিশম সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের কোন বেয়ে তার কয়েক ফোটা নোনা জল গরিয়ে পড়ে।


পর্ব ৯

আজই সেই ৫০০০ মানুষদের একত্রে করা হবে। রাত ৯ টা নাগাত তাদের গোডাউনে আনা হবে। তান্নাজ আর নিশম ফুল প্রেপারেশন নিচ্ছে। নিজেদের গ্রুপ রেডি করে ফেলেছে। এখন শুধু রাত হওয়ার অপেক্ষা।
রাত ৮.৩০ বাজে। নিশম আর তান্নাজ দূরে এক গাড়িতে বসে আছে। চারদিকে তাদের লোক সেট করা। ৫০০০ জনকে এইখানে আনলেই তারা সুযোগ বুঝে কাজ করে তাদের আস্তে আস্তে সরিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রায় বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর বড় বড় ৪ টা ট্রাক গোডাউনে আনা হয়। এতে আপাতত ২৫০০ মানুষ আছে। আগে তাদের চেক করা হবে। তার পর তাদের এইখান থেকে অন্য গোডাউনে শিফট করা হবে। পরবর্তীতে বাকি ২৫০০ কে আনা হবে। নিশম আর তান্নাজের হাতে গান রেডি করে ধীর পায়ে সেইদিকে এগিয়ে যায়। নিজের পজিশনের মত দাড়িয়ে যায়। বাকি সকলকে ইশারা করতেই তারাও পজিশন নিয়ে নেয়। একেক করে মানুষ নামানো হচ্ছে।

এরই মধ্যে নিশম আর তান্নাজের লোক কাজে লেগে গিয়েছে। তারা একেক করে হাবিব আলমগীরের লোকদেরকে সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এর মাঝে হাবিব আলমগীরের লোক গুলো দেখে ফেলে আর ফায়ার শুরু করে দেয়। এইবার নিশম তান্নাজও বেড়িয়ে এসে ফায়ারিং শুরু করে দেয়। নিশম ওর কিছু লোকদের ইশারা করতেই তারা ট্রাক ডাইভারকে টেনে বের করে আনে। এবং ৩ টা ট্রাক নিজের আয়েত্তে নিয়ে গোডাউন থেকে বের হয়ে যায়। লাস্ট যেই ট্রাকটা তারা নিজের দখলে নিতে যাবে তার আগেই সেই ট্রাক ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। যার ফলে তারা এইটাকে ধরতে পারে নি।

এইদিকে নিশম আর তান্নাজ প্রায় সকলকেই মেরে ফেলেছে। নিশম আর তান্নাজের লোক হঠাৎ ফায়ারিং করায় তারা তাদের সাথে পেরে উঠে নি। বাকি যারা ছিল তারা জান বাঁচিয়ে পালিয়েছে।
নিশম আর তান্নাজ প্রায় তাদের প্লেনে সাকসেসফুল হয়েছে। সেই একটা ট্রাকটা ধরতে না পারলেও তারা প্রায় ১৭৫০ জনকে সেফ করতে পেরেছে। তাদেরকে নিশম আর তান্নাজ নিজ দ্বায়িত্বে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

তাদের প্লেন সাকসেস হয়েছে তা জানাতে তান্নাজ রাহুল সাহেবকে ফোন দেয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরলেন না। বেশ কয়েকবার দেওয়ার পরও যখন তিনি ধরলেন তখন তান্নাজের মনে কেন জানি সন্দেহ জাগে। সে নিশমকে নিয়ে দ্রুত বাসায় আসে। এসে যা দেখে তাতে তার মাথার উপর বাজ ভেঙ্গে পড়ে। পুরো বাসা উলোট পালোট। মেঝেতে পরে রয়েছে রাহুল সাহেবের দেহ। পেটের দিক দিয়ে রক্ত বয়েই চলেছে। তান্নাজ দ্রুত তার কাছে যায়। তাকে সোজা করে দেখে পেট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

তান্নাজঃ পপসি। চোখ খুলো। পপসি দেখ আমি এসে গিয়েছি। আমাদের প্লেন সাকসেসফুল হয়েছে পপসি। শুনতে পারছো তুমি। চোখ খুলো পপসি। বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
নিশম দরজার সামনে এসে এমন দৃশ্য দেখে থমকে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে রাহুল সাহেবের কাছে যায়। গিয়ে তার নার্ভস চেক করে। শ্বাস চলছে।
নিশমঃ আঙ্কেলের শ্বাস প্রশ্বাস এখনো চলছে। তাকে আমাদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কুয়িক।

এই বলে নিশম আর দেড়ি না করে দ্রুত তাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। পিছে পিছে তান্নাজও ছুটে আসে। গাড়ি তে তান্নাজ রাহুল সাহেবের মাথা নিজের কোলে নিয়ে কাদতে থাকে। আর এই সেই বলতে থাকে। প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে তারা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। রাহুল সাহেবকে দ্রুত ওটিতে নেওয়া হয়। অপারেশন চালু হতে যায়। তান্নাজ বাইরে অঝড়ে কেদেই চলেছে। নিশম ওকে পাশে বসে শান্তনা দিচ্ছে।
তান্নাজঃ পপসির যদি কিছু হয় তাহলে আমি বাঁচবো না নিশম বাঁচবো না। তার ছাঁড়া যে আমার আপন বলতে কেউ নেই। আমাকে সবসময় নিজের মেয়ের মত আগলে রেখেছে। সব কিছু থেকে আমায় রক্ষা করেছে। আমাকে এত স্ট্রোং বানিয়েছে। আমাকে সব পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে বলেছে। কিন্তু আজ যে আমি পারছি না। পারছি না স্ট্রোং থাকতে। তাকে এই অবস্থায় দেখতে পারছি না।

নিশম কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু তার এক জায়গায় খটকা লাগছে। তান্নাজ এইটা কি বললো।
“নিজের মেয়ের মত আগলে রেখেছে।”
নিশম এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই ওটি থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে আসে। তান্নাজ দৌড়ে তার কাছে যায়।
তান্নাজঃ আমার পপসি ঠিক আছে তহ।
ডাক্তারঃ জ্বী এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তার অতিরিক্ত পরিমানে ব্লিডিং হয়েছে যার ফলে তার শরীরে রক্তের পরিমান অনেক কমে গিয়েছে। আমাদের দ্রুতই ২ ব্যাগ এ পজেটিভ রক্ত লাগবে। আরজেন্ট।

তান্নাজঃ আমি এখনই এরেঞ্জ করছি। এই বলে তান্নাজ যেই যেতে নেয় তখন নিশম বলে উঠে।
নিশমঃ আমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। আপনি আমার থেকে রক্ত নেন।
ডাক্তারঃ তাহলে আমার সাথে আসুন। আপনার কিছু চেস্ট করাতে হবে।
নিশম তান্নাজকে এইখানে থাকতে বলে ডাক্তারের সাথে চলে যায়।
নিশমের হাতে ক্যানাল লাগানো। এক ব্যাগ রক্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আরেক ব্যাগ রক্ত নেওয়া বাকি। নিশমের পাশেই তান্নাজ বসে আছে। নিশম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
তান্নাজঃ থেংক ইউ। আমার পপসিকে রক্ত দেওয়ার জন্য। আজ তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
নিশম এইবার চোখ খুলে তান্নাজের দিকে তাকায়। মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে।
নিশমঃ আঙ্কেল আমাকে অনেক হ্যাল্প করেছে। বিভিন্ন কাজে আমার পাশেই ছিলেন তিনি। সবসময় আমাকে নিজের ছেলের চোখে দেখেছেন। আমাকে সেই স্নেহ আর ভালবাসাটুকুও দিয়েছেন। আমিও তাকে নিজের বাবার জায়গা তাকে দিয়েছি। আর তাই আজ আমি তোমার পপসির না নিজের বাবার জান বাঁচিয়েছি।

তান্নাজঃ তবুও থেংক্স। তুমি জানো না সে আমার জন্য কি। নিজের বাবা মার পর যদি আমি কাউকে এতটা ভালবেসে থাকি তা হলো পপসিকে। সে আমায় সবসময় আমাকে নিজের মেয়ের মতই ভালবেসেছে। সব সময় ছাঁয়া হয়ে আমার পাশে থেকেছে। আমাকে বাবা মা দুইজনের ভালবাসা দিয়েছে। কখনো বুঝতে দেয় নি আমি অনাথ আমার বাবা মা নেই।
নিশম অবাক হয়ে তান্নাজকে শুনছে। কি বলছে এইসব তান্নাজ। অনাথ। বাবা মা নেই। তাহলে রাহুল আঙ্কেলকে ওর।
নিশমঃ ওয়েট আ মিনিট। কি বলছো এইসব। তুমি অনাথ মানে। তুমি যদি অনাথ হও তাহলে রাহুল আঙ্কেল কে তোমার।
তান্নাজ এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।
তান্নাজঃ পপসির ফুল নেম কি।
নিশমঃ রাহুল ইসলাম।
তান্নাজঃ আর আমার।

নিশমঃ তান্নাজ রহ। অহহ শিট। তোমার সারনেম তহ রহমান। আমি কখনো খেয়ালই করি যে তোমাদের সারনেম এক না।
তান্নাজঃ হুম। আমি পপসির আসল মেয়ে নই। আর না তিনি আমার আসল বাবা। সে আমার বাবার বন্ধু।
নিশমঃ মানে কি। কিভাবে। খুলে বলো তহ।
তান্নাজঃ তাহলে শুনো।


পর্ব ১০

নিশম অবাক হয়ে তান্নাজকে শুনছে। কি বলছে এইসব তান্নাজ। অনাথ। বাবা মা নেই। তাহলে রাহুল আঙ্কেলকে ওর।
নিশমঃ ওয়েট আ মিনিট। কি বলছো এইসব। তুমি অনাথ মানে। তুমি যদি অনাথ হও তাহলে রাহুল আঙ্কেল কে তোমার।
তান্নাজ এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে।
তান্নাজঃ পপসির ফুল নেম কি।
নিশমঃ রাহুল ইসলাম।
তান্নাজঃ আর আমার।
নিশমঃ তান্নাজ রহ। অহহ শিট। তোমার সারনেম তহ রহমান। আমি কখনো খেয়ালই করি যে তোমাদের সারনেম এক না।
তান্নাজঃ হুম। আমি পপসির আসল মেয়ে নই। আর না তিনি আমার আসল বাবা। সে আমার বাবার বন্ধু।

নিশমঃ মানে কি। কিভাবে। খুলে বলো তহ।
তান্নাজঃ তাহলে শুনো।
তান্নাজঃ বাবা মার একমাত্র মেয়ে ছিলাম আমি। তাই বাবা মার চোখের মনি ছিলাম। যা চেতাম তাই পেতাম। অনেক ভালবাসতেন দুইজন আমাকে। আমাকে কষ্ট কি তা কোন দিন বুজতেই দেন নি।
আমার বাবা ছিলেন একজন শেয়ার ব্যবসায়ী আর মা ছিল হাউসওয়াইফ। বাবা বিভিন্ন জায়গায় টাকা ইনভেস্ট করতেন। তার সাথে পার্টনার ছিল পপসি মানে রাহুল আঙ্কেল। বাবা আর পপসি দুইজনেই এতিম ছিলেন। তারা দুইজনই একই এতিম খানায় বড় হয়।
সেই সুবাদে তারা ছোট কালের বন্ধু ছিলেন। এক সাথেই বড় হয়ে উঠেছিলেন দুইজন। বড় হওয়ার পরও তাদের বন্ধুত্ব ছিল।

এক সময় পপসি ১ বছরের জন্য কিছু কাজের জন্য দেশের বাইরে চলে যান। তখন বাবার নিউ পার্টনার হয় হাবিব আলমগীর। বাবা আর সে মিলে টাকা ইনভেস্ট করতো। বেশ কিছুদিনের মধ্যেই তাদের অনেক লাভ হয়। যার ফলে তাদের ব্যবসা এক নতুন পর্যায় চলে যায়। বাবা আর তার মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও হয়। বাসায়ও তার আনা গোনা বেশ ভালোই ছিল। আমাদের সাথে অনেক ভালো ভাবে মিশে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানতো তার মনে অন্য কিছু ছিল।
সেইদিন বাবা এয়ারপোর্টে যায় পপসিকে আনতে। পপসি তখন প্রায় ১ বছর পর দেশে ফিরছিল।

যেহেতু বাবা বাদে তার তেমন কেউ ছিল না তাই বাবাই যায় তাকে নিতে। বাবা বেড়িয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিট পর হাবিব আলমগীর বাসায় আসে। তখন মা আমায় পড়াছিল। মা হাবিব আলমগীরকে দেখে বেশ অবাকই হলেন। কিন্তু তাও কিছু না বলে তাকে আপায়ন করলেন। তাকে বসতে বললেন। কিন্তু তিনি না বসে মার দিকে বিশ্রী ভাবে তাকিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। মা কিছু বুঝার আগেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকটি। মা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। আমি তখন রুমে ছিলাম। মার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসি। তখন আমার বয়স ১২ বছর ছিল। ভালো মন্দ বুঝতাম আর এইটা যে খারাপ কিছু হচ্ছিল তাও বুঝতে পারছিলাম। তাই মার কাছ থেকে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি।

তখন হাবিব আলমগীর আমায় দেখে টেনে রুমে ছুঁড়ে মারে। আর দরজা বাইরে দিয়ে বন্ধ করে দেয়। আমি তখন দরজা ধাক্কাতে থাকি। কিন্তু কেউ দরজা খুলার মত ছিল না। আমি দরজার এপার থেকে শুরু মায়ের চিৎকারই শুনতে পারছিলাম। একসময় মার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। নিরব হয়ে যায় চারদিক। আমি তখনও দরজা ধাক্কিয়েই চলেছিলাম। আর চিল্লিয়ে বলছিলাম।
“ছেড়ে দাও আমার মাকে।”

কিন্তু কোন সারাশব্দ পাই নি। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ি। আর কান্না করতে থাকি। বাইরে কি হচ্ছিল তা আমার জানা নেই।

প্রায় ২ ঘন্টার পর বাবা আর পপসি ফিরে আসে। এসে দেখে পুরো ঘর উলোট পালোট। বাবা ঘরে এসে মাকে খুঁজতে থাকে। আর পপসি আমায়। পপসি এসে আমার রুমের দরজা খুলে দেখে আমি নিজে বসে আছি আর কানছি। তখন তিনি আমার কাছে আসতেই আমি কিছু না বলে দৌড়ে বেরিয়ে যাই। আর মার রুমে চলে যাই। গিয়ে দেখি বাবা দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মা খুলছে না। আমার পিছু পিছু পপসিও আসে। বাবাকে এমন দরজা ধাক্কাতে দেখে পপসি সামনে যায়। দুইজন ডাকাডাকির পর যখন মা দরজা খুললেন না তখন তারা দরজা ভেঙে ফেলে। কিন্তু দরজা খুলে যা দেখে তাতে বাবার দুনিয়া থমকে গিয়েছিল। বাবা মূর্তি ন্যায় দাড়িয়ে ছিল। আমি তখন পিছেই ছিলাম। আমি সামনে আগিয়ে দেখি মার লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আমি তখন এমন পরিস্থিতি দেখে মা বলে এক চিৎকার দেই। তখন বাবার হুস হয়। আর দৌড়ে মার কাছে জান। পপসিও যায়। দুইজন মিলে মাকে নামায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। মা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। বাবা তখন মার লাশটা নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে কাদছিল। আমিও মার পাশে গিয়ে তাকে ডাকছিলাম।

মার হাতে ছিল এক চিঠি ছিল যা পপসির নজরে পড়ে। সে চিঠিটা হাতে নিয়ে বাবাকে দেয়। বাবা চিঠিটা নিয়ে পড়তে থাকে। পড়ার পর তার মাথায় আগুন ধরে যায়। সে রাগে কটমট করতে করতে বাইরে চলে যায়। বাইরে যাওয়ার আগে বাবা পপসিকে বলে যায়। আমার খেয়াল রাখতে আর কোন পরিস্থিতিতেই যেন আমায় একা ছেড়ে না যায়। কথা দে। পপসি তখন কথা দেয় বাবাকে।

বাবা বেড়িয়ে যেতেই আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করি।
“প্রিয় তাহিন। (তান্নাজের বাবার নাম)
তুমি যখন এই চিঠিটা পাবে তখন মনে হয় আমি আর তোমার পাশে থাকবো না। তোমায় ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাব। জানি তোমার অনেক কষ্ট হবে আমায় এইভাবে দেখে। কিন্তু আমি যে তোমার সামনে দাড়াতে পারবো না। পারবো তোমার চোখে চোখ রেখে এই কথাটি বলতে। কেন না আজ আমি যে কলঙ্কিত। হ্যাঁ আমি কলঙ্কিত হতে গিয়েছি। ধর্ষিতা হয়ে গিয়েছি সকলের কাছে। আর আমায় এই ধর্ষিতার ট্যাগ আর কেউ নয় তোমার বন্ধু হাবিব লাগিয়েছি।

তুমি যখন আজ বাইরে গিয়েছিলে তখন তোমার বন্ধু হাবিব এসেছিল আমি কিছু বুঝার আগেই ঝাপিয়ে পড়েছিল আমার উপর। শত চেষ্টা করেও নিজেকে বাঁচাতে পারি নি নিজেকে। পারি নি আমি। যার ফলে আমি আজ ধর্ষিতা। আমি পারতাম না এই ট্যাগ নিয়ে বাঁচতে। পারতাম না আমার মেয়ের সামনে দাড়াতে। পারতাম না শুনতে মা তুমি একজন ধর্ষিতা। তাই আত্মহত্যার মত কঠিন পথ বেছে নিলাম।
আমি চাই হাবিবের কঠিন শাস্তি হোক। আর তা যেন কঠোর থেকে কঠোর হোক। আর হ্যাঁ আমাদের মেয়েকে প্লিজ আমার মত অসহায় বানিয়ো না। ওকে আমার মত দুর্বল বানিয়ো না। যে নিজের আত্মরক্ষা নিজে করতে পারলো না। ওকে অনেক শক্ত বানিয়ো। তান্নাজকে এমন বানিয়ো যেন ও একশ জনের উপর ভাড়ি হয়। ও যেন কাউকে না ভয় পায়। পারলে আমার ইচ্ছাটা পূরণ করিয়ো।
যদি পারো ক্ষমা করে দিও। তান্নাজ আর নিজের খেয়াল রেখ।
ইতি।

তোমার অভাগী অর্ধাঙ্গিনী।”
এই বলে তান্নাজ কাদতে থাকে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে আবার বলা স্ট্রাট করে।
তান্নাজঃ চিঠিটা পড়ার পর আমি হাও মাও করে কাদতে থাকি। তখন পপসি আমায় সামলায়। এইদিকে রাত গরিয়ে সকাল হয়ে যায়। কিন্তু বাবা আসে না। সকালবেলা পপসির ফোনে এক ফোন আসে। আর তাকে দ্রুত পুলিশ টেশন আসতে বলে। পপসি কি করবে বুঝতে পারে না। একদিকে আমায় একা রেখে যেতে পারছিল না। অন্যদিকে পুলিশ টেশনের মত জায়গায় নিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু অবশেষে আমায় নিয়েই যায়। গিয়ে জানতে পারে বাবার এক্সিডেন্ট করেছে। খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্টটি হওয়া বাবা নাকি অন দ্যা স্পোট ডেড হয়।
এই শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এক সাথে বাবা মাকে হারিয়ে আমি যেন আমার নিতস্ব হয়ে যাই। মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে থাকি।

পপসি তখন পুলিশের সাথে কথা বলে লাশ নিয়ে বেড়িয়ে আসে। এক সাথে মা আর বাবা দুইজনেরই জানাযা দেওয়া হয়। কবর দেওয়া হয় দুইজনকে পাশাপাশি। আমি তখনও এক ফোটাও কাঁদি নি। শুধু নির্বাকের মত চেয়ে ছিলাম। তখন পপসি আর কাধে হাত রাখতেই আমি কেঁদে দেই। তখন তিনি আমায় শান্ত না দিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। প্রায় ২ দিন নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছিলাম। পরে পপসি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে বাবার এক্সিডেন্ট বরং জেউ নয় হাবিবই করেছিল। পপসি কথাটি পুলিশকে জানালে তারা বলে কেস ক্লোস হয়ে গিয়েছে। হাবিব তখন নাকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত ছিল তাই পুলিশরা তার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস দেখায় নি।

এইটা শুনার পর থেকে প্রতিজ্ঞা করি যে হাবিবকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিব। নিজ হাতে তার খুন করবো। যার জন্য আমি আমার সব হারিয়েছি তাকে শেষ করে দিব। আমি আমার মার কথা অনুযায়ী অনেক স্ট্রোং হবো। আর হাবিবকে কঠোর থেকে কঠোর শাস্তি দিব।
সেই থেকে আমার অভিজান শুরু। পপসি আমায় নিয়ে বিদেশ চলে আসে। আমাকে তিনি ফুললি আমার মায়ের ইচ্ছে মত তৈরি করেন। আমার জন্য তিনি বিয়ে করেন নি। আমাকে নিজের মেয়ের মত আগলে রেখেছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি কারাটে। বক্সিং। শুটিং সব শিখিয়েছেন। হাবিবকে মারার জন্য আমিও মাফিয়া ওয়ার্ল্ডে যুক্ত হয়ে যাই। আর খুব অল্প সময়ে নিজের নাম মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের ইয়োংগেস্ট লেডি মাফিয়া হয়ে যাই।

এইসব শুনে নিশম নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। নিশম কি বলে তান্নাজকে শান্তনা দিবে তা তার জানা নেই।
একটা মানুষ যে কতটা নিচু হতে পারে তা হাবিবকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারতো না।

৩ দিন পর

রাহুল সাহেব এখন বেশ সুস্থ। সেইদিন সঠিক টাইমে রক্ত দেওয়ার ফলে তিনি বেঁচে যান। নিশম আর তান্নাজ তাকে জিজ্ঞেস করলে এইসব কে করেছে তখন সে বলে হাবিবের লোকেরা। হাবিব তাদের কথা জেনে গেছে তাই তাদের নিজের রাস্তার থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য ফাস্টে তার উপর এট্যাক করে। যাতে তোমরা নিজের লক্ষ্য থেকে ডিস্ট্রেক হয়ে যাও।

এই শুনে নিশম আর তান্নাজ যেন রেগে বোম হয়ে যায়। তাদের এখন যেকোনো মূল্যে হোক হাবিবকে চাই। হাবিবকে না মারা আগ পর্যন্ত এখন তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে না।
আজ হাবিব আলমগীর দেশে আসবে। কেন না তান্নাজ আর নিশম সেই ৫০০০ লোক থেকে প্রায় ১৭৫০ জনকে সরিয়ে ফেলেছে। যার ফলে ওর প্রোজেক্ট ইনকমপ্লিট রয়েগেছে। তারউপর ওর বেশিরভাগ লোক মারা গিয়েছে। এখন যা করার ওকেই করতে হবে। তা না হলে কোটি কোটি টাকার লোস হয়ে যাবে। যা হাবিব সহ্য করতে পারবে না।

তান্নাজ আর নিশম তহ এইদিনেরই অধীর আগ্রহে বসে ছিল। যে কবে পারিন্দা নিজে থেকে এসে ধরা দিবে। আর আজ সেইদিন এসে গিয়েছে। দুইজনের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পুরোপুরি ভাবে প্রস্তুত। এদের মধ্যে যেন প্রতিশোধের আগুন ধাওধাও করে জ্বলছে। যা নাকি সব ভসম করতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন শুধু পারিন্দাকে নিজের পিঞ্জারাতে বন্ধী করার দেরি।
পারবে কি তারা পারিন্দাকে আটক করতে নাকি এর আগেই সে ছো মেরে উড়াল দিবে?


পর্ব ১২

হাবিব আলমগীর বাংলাদেশে ল্যান্ড করে একটা হোটেলে উঠে। চারদিকে ফুল সেফটি নিয়ে। হাবিব আলমগীর ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে বসে খাবার অর্ডার দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা ওয়ার্ডবয় এসে খাবার দিয়ে যায়। ওয়ার্ডবয়টি রুমের টেবিলে খাবার সাজাছিল। হাবিব আলমগীর সোফায় বসে ফোনে কথা বলতে থাকে। ওয়ার্ডবয়টি খাবার সাজিয়ে চলে যায়। হাবিব ফোনে কথা বলা শেষে সে খাবারগুলো নিয়ে খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে রেস্ট নিতে থাকে। এমন সময় বাইরে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠে। হাবিব আলমগীর লাফ দিয়ে উঠে দরজার দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে দরজার নিচ দিতে ধুয়া আসছে। সে আর কিছু না ভেবে দরজা খুলে বাইরে চলে যায়। গিয়ে দেখে সকল গার্ডসরা নিচে পড়ে আছে। হাবিব আলমগীরের বুঝতে দেরি নেই যে এইটা একটা ট্রেপ। কেউ হোটেলে ক্লোরোফোম গ্যাস ছড়িয়ে গিয়েছে। যার ফলে সব গার্ডসরা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। হাবিব নিজের নাক ধরে রুমে চলে যেতে নেয়। কিন্তু এর আগেই ওর ঘারে কেউ কিছু পুশ করে। সাথে সাথে হাবিব জ্ঞান হারায়।

এক অন্ধকার রুমে হাবিব আলমগীরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। হাত ও মুখ বাঁধা। সে ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেই চলেছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। চোখে মুখে তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। কি হতে চলেছে ওর সাথে কে জানে।
হঠাৎ চারদিকে লাইট জ্বলে উঠে। চোখে আলো পড়তেই হাবিব চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারদিক পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এমন সময় একটা আওয়াজ ওর কানে ভেসে আসে। সে সেইদিকে তাকিয়ে দেখে নিশম আর তান্নাজ। তাদের দেখে হাবিবের মুখ চুপসে যায়।
নিশমঃ তা কেমন আছেন মি. আলমগীর। নিশ্চয়ই ভালো আছেন।
তান্নাজঃ খারাপ হতে কতক্ষন। একটু পর নিশ্চয়ই তিনি আর ভালো থাকছেন না।
নিশমঃ আহা আগেই ভয় দেখাও কেন। দেখা যাবে ভয়ের জন্য হার্ট অ্যাটাক করে বসলো তখন। আমাদের সব প্ল্যানই বিফলে যাবে।

তান্নাজঃ এহহহ বললেই হলো। এত বছর ওয়েট করেছি শুধু এই দিনের জন্য। আর আজ যখন এই দিনটা পেয়েছি তখন ফুল্লি ইনজয় করতে দাও না।
নিশমঃ তাও ঠিক। তা মি. আলমগীর কেমন লাগছে শুনি। অনেক তহ হলো লুকোচুরি। অনেক দৌড়িয়েছেন আমাদের। ওইবার না হয় শাস্তির জন্য প্রস্তুত হন।
এই বলে নিশম ওর বডিগার্ডদের ইশারা করতেই তারা হাবিবকে আরও উঁচু করে তার নিচে একটা পানির টাংকি রাখে। নিশম ইশারা করতেই তারা ওর পায়ের বাধন আলগা করে। আর নিজের হাতে ধরে রাখে। তারা দড়িটি একটু আল্গা করতেই হাবিব নিচে নেমে যায় আর মুখ বরাবর পানিতে পড়ে। ২ মিনিট পানিতে রেখে নিশম আবার ইশারা করে। তাই তারা হাবিবকে আবার উঁচু করে। হাবিব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। নিশম আবার ইশারা করতেই তারা আবার তাকে পানিতে ফেলে দেয়। এইভাবে চলে থাকে অনেক ক্ষন।

তারপর তাকে একটা টেবিলের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়। নিশম আর তান্নাজ দুইজন দুই হাতে একটা হাতুড়ি নিয়ে ওর সামনে আসে। তারপর সেই হাতুড়ি দিয়ে হাবিবের হাত ও পায়ে ইচ্ছা মত বারি দিতে থাকে। হাবিব চিৎকার দিতে চায় কিন্তু পারে না। কেন না ওর মুখ বান্দা। তান্নাজ আর নিশম এতো জোরেই ওর হাতে ও পায়ে পিটাচ্ছে যে ওর হাড় সব ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়ার অতিক্রম। হাতের বিভিন্ন জায়গা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

নিশম আর তান্নাজ এইবার পিটানো বন্ধ করে করে শুকনো মরিচের গুঁড়ো নিয়ে আসে। আর তা রক্ত পড়া জায়গাতে চেপে ধরে। হাবিব এইবার ছটফট করতে থাকে। একসময় ওর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন নিশম আর তান্নাজ তার উপর কিছু বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দেয়। সাপ গুলো হাবিবের পুরো শরীর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েকটা সাপ ওলরেডি নিজের ছোবল বসিয়ে দিয়েছে। হাবিব কাতরাতে থাকে। আর কাতরাতে কাতরাতে একসময় নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। নিশম আর তান্নাজ তা দেখে এক তৃপ্তির হাসি হাসে।
আজ তারা নিজের প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছে। পেড়েছে তাদের অপরাধীকে কঠোর থেকে কঠোর শাস্তি দিতে। আজ হয়তো অনেকদিন পর তারা শান্তির ঘুম ঘুমাবে।


অন্তিম পর্ব

৩ বছর পর

ক্লিনিক থেকে বাসায় ফিরছে তান্নাজ। চারদিকে তুষার পাত হচ্ছে। এক শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। চারদিক সাদা বরফে ঢাকা। এক অন্যরকম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। খালি রাস্তায় ড্রাইভ করছে তান্নাজ। আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট অপরেশন থাকায় অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে।
প্রায় কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বাসায় এসে পড়ে। বাসায় এসে দেখে পুরো ঘর অন্ধকার। এমন কি দরজার বাইরের লাইটও জ্বালানো হয় নি। তান্নাজ ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে নেয়।
তান্নাজঃ নিশম। এই নিশম। কোথায় তুমি।

কিন্তু কোন সারাশব্দ নেই। তান্নাজ বেশ কয়েকবার নাম নিশমকে ডাক দিল। কিন্তু তা নিশমের কোন হুদিস নাই। যেই না তান্নাজ পিছনে ঘুরে ওর মাথার উপর নিশম গান ধরে দাড়িয়ে থাকে। তা দেখে তান্নাজ অবাকের শেষ পর্যায়। সে অবাক হয়ে বলে।
তান্নাজঃ নিশম কি করছো এইসব।
নিশমঃ দেখতেই তহ পারছো কি করছি তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেনো।
তান্নাজঃ এইসবের মানে কি।
নিশমঃ জাস্ট গিভিং পানিসমেন্ট ইউ জান। তুমি যে ভুল করেছ তার শাস্তি পাবে না তা কিভাবে হয়। ভুলে যেও না নিশমের ডিকশিনারিতে মাফ বা ক্ষমা বলতে কোন শব্দ নেই। নিশম খান শুধু ভুলের শাস্তি দিতে জানে। আর সেই শাস্তি হলো মৃত্যু।

তান্নাজঃ তাই না। আমায় মৃত্যু দিবে তাই তহ। তাহলে দেখি কিভাবে মৃত্যু দাও আমায়।
এই বলে নিশমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে আর নিশম পিছাতে থাকে। তা দেখে নিশম বলে।
নিশমঃ আগে এগুচ্ছো কেন। যেখানে ছিলে সেখানেই দাড়াও। তা না হলে সুট করে দিব।
তান্নাজঃ তা দাও না। মানা কে করেছে শুনি।
এই বলে তান্নাজ আরও এগুতে থাকে আর নিশম এইবার না পিছিয়ে দাড়িয়ে থাকে। তা দেখে তান্নাজ মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে নিশমের হাত ধরে মুচড়ে ধরে যার ফলে গানটা নিচে পড়ে যায়।

তান্নাজঃ ফাইজলামি করার জায়গা পাও না। যখন তখন ফাইজলামি।
এইবার নিশম নিজের হাত ঘুরিয়ে তান্নাজের হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর বলে।
নিশমঃ ফাজলামো করছি না। তুমি ভুল করেছ তাই এমন করেছি। ভুল করেছ যখন একটু শাস্তি পাবে না তা কিভাবে হয়।
তান্নাজঃ কি ভুল করেছি শুনি।

নিশমঃ প্রথম ভুল তুমি আমায় সকালে গুড মর্নিং কিস দাও নাই। দ্বিতীয় ভুল তুমি আজ আমায় নিজের হাতের কফি খাওয়াও নেই। তৃতীয় ভুল আজ তুমি আমায় না বলে চলে গেছ। জানো বউয়ের এইসব ভুলের জন্য আমি কত কষ্ট পেয়েছি আজ।
তান্নাজঃ আহারে কত বড় ভুল করে ফেলেছি না। আমার স্বামী বুঝি এতে অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না।
নিশমঃ হুম অনেক। এখন আমাকে সব পুশিয়ে দাও।
তান্নাজঃ দ্বারাও পুশিয়ে দিচ্ছি।
এই বলে তান্নাজ নিজের পা দিয়ে নিশমের পায়ে জরে এক পাড়া দেয় যার ফলে নিশম তান্নাজকে ছেড়ে পা ধরে লাফাতে শুরু করে।
তান্নাজঃ মাফিয়া গিরি ছেড়ে কি নটাংকি গিরি শুরু করসো।
নিশমঃ হুহ ভুলে যেয়েও না আমি কে। মাফিয়া ওয়ার্ল্ড ছাড়লেও মাফিয়া গিরি ছাড়ি নি কিন্তু।
তান্নাজঃ দেখতেই পাড়ছি।
নিশমঃ তাই না। ওয়েট।

এই বলে তান্নাজের সামনে গিয়ে ওর হাত মুচড়ে বলে।
নিশমঃ মাফিয়া গিরি দেখবা তাই তহ। এখনই দেখাচ্ছি।
এই বলে নিশম তান্নাজকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর ঠোঁট দুটো নিজের আয়েত্তে নিয়ে নেয়। তান্নাজ প্রথমে ছুটাছুটি করলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। আর নিশমকে জরিয়ে ধরে।
কি হচ্ছে এইসব তাই ভাবছেন তহ। তাহলে আমি বলছি কি হয়েছে।
হাবিবকে মারার পর তান্নাজ আর নিশম দুইজনই মাফিয়া ওয়ার্ল্ড ছেড়ে দেয় যে যার পেশাতে ছিল তা নিয়েই এগিয়ে চলতে থাকে। যেহেতু কেউ তাদের চেহারা দেখি নি আর চিনতও না তাই তাদের বেড়িয়ে আসতে সহজ হয়েছে।

কিন্তু এর মধ্যে নিশম আর তান্নাজ আলাদা হয় নি। নিশমের মনে তান্নাজের জন্য এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো। আর তান্নাজের বেলায় ও একই। দুইজন যে কখন দুইজনকে ভালবেসে ফেলেছিল তা বুঝে উঠতে পারে নি। দুইজন যে দুইজনের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিশম অবশেষে সব ভুলে তান্নাজকে প্রাপস করে আর তান্নাজও এক্সেপ্ট করে ফেলে। তারা যে দুইজন দুইজনকে ভালবেসে তা রাহুল সাহেবকে জানালে তিনি এর প্রায় মাস খানেক পর নিশম আর তান্নাজের বিয়ে ঠিক করে। আর বিয়ে হয়েও যায়। দুইজন যে দুইজনকে অসীম ভালবাসে তার কোন সন্দেহ নেই। ভালোই কাটছিল তাদের দিন গুলো। কিন্তু এর মধ্যে রাহুল সাহেব মারা যান তখন তান্নাজ একদম ভেংগে পড়ে। নিশম তখন তান্নাজকে সামলায়। আর তান্নাজকে ওই দেশ থেকে নিয়ে এসে পারি জমায় স্কটল্যান্ডে। আর এইখান থেকে নিজের জীবন নতুন করে শুরু করে।

একটি স্বচ্ছ কাঁচের ঘরে রকিং চেয়ারের উপর বসে আছে তান্নাজ আর নিশম। তান্নাজ নিশমের কোলে বসে ওর গলা জরিয়ে ধরে বসে আছে। নিশম তান্নাজের কোমড় জরিয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুজে রয়েছে। কিন্তু তান্নাজ এক ধ্যানে সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে তুষার পাত দেখছে। তুষার গুলো ফোঁটা ফোঁটা করে কাঁচের গ্লাসে এসে লাগছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। তান্নাজ ভাবশীল হয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তান্নাজের সারা শব্দ না পেয়ে নিশম তান্নাজের দিকে তাকিয়ে বলে।

নিশমঃ এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছে আমার জানপাখিটা। নেশা ভরা কন্ঠে
তান্নাজঃ ভাবছি আমাদের জীবন কত পাল্টিয়ে গেছে। মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের কিং এন্ড কুইন থেকে আজ তুমি আর আমি শুধু একজন ডাক্তার আর বিজন্যাস ম্যান। যেখানে আমাদের জীবনে ভালবাসা বলতে কিছু ছিল না যা ছিল সব ছিল ঘৃণা সেখানে আজ আমাদের মধ্যে ভালবাসা অফুরন্ত। আজ তুমি আর আমি দুইজন দুইজনের মধ্যে আবদ্ধ। সব হারিয়েও আজ আমরা পূর্ন।
নিশম তান্নাজের ঠোঁটে আলতো করে একটা কিস করে বলে।
নিশমঃ ভালবাসা কি তা আমি তোমায় সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে জেনেছি। কখনো ভাবি নি আমি কাউরো প্রেমে পড়বো কাউকে এত ভালবাসবো। কাউরো মধ্যে এমন আবদ্ধ হবো। কিন্তু আজ আমি বলতে পারি যে #তোমাতেআমিআবদ্ধ।। আর সারাজীবন তোমাতেই আবদ্ধ থাকবো।

তান্নাজঃ আমিও যে #তোমাতেই_আবদ্ধ। আর এই আবদ্ধতায় আছে অফুরন্ত ভালবাসা। যেখানে নেই কোন ঘৃণা বা প্রতিশোধ।
নিশম এইবার তান্নাজের ঠোঁটে গভীর চুমু দিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বলে।
নিশমঃ আই লাভ ইউ মাই জান পাখি।
তান্নাজঃ আই লাভ ইউ টু।

নিশম এইবার তান্নাজকে কোলে নিয়ে বেডে দিকে এগিয়ে যায়। দুজনে ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দেয়। দুজন নিজেদের ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে যায়। এক হয়ে যায় জনম জনমের জন্য।
নদী যেমন সমুদ্র পর্যন্ত পৌছানোর জন্য নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে নেয় সত্যিকারের ভালোবাসা ও এমন দেখতে যতই অসম্ভব হোক নিজেই নিজের পূর্নতা পাবার রাস্তা খুঁজে নেয় সময়ও বাঁধা হতে পারে না।

লেখা – আছফিয়া ইসলাম জান্নাত

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমাতে আমি আবদ্ধ – valobasar golpo kotha” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তুমি আমার ভালোবাসা – বাংলা প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *