পাগলীর ভালোবাসা

পাগলীর ভালোবাসা – বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার গল্প

পাগলীর ভালোবাসা – বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার গল্প: অনুরুদ্ধ এখনো উঠিস না যে! সেই কখন থেকে ফোন বাজছে তোর কি সে খেয়াল আছে? এই ছেলেকে নিয়ে আর পারা গেল না। এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়িস অথচ সিরিয়াসনেস এর বালাই পর্যন্ত তোর মাঝে নেই। কয়দিন পর ঘরে বউ আসবে। আমি না হয় সব সহ্য করলাম কিন্তু বউতো ঠিকই শায়েস্তা করে ছাড়বে আরো কত কি!

এই হচ্ছে আমার মায়ের এক প্রব্লেম। কথা নাই বার্তা নাই কোনো কিছু বলা শুরু করলেই শেষ ফিনিশিং দেয় বউ দিয়ে। ছেলে হয়ে জন্মানোটাই যেন আমার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। যাই হোক এতসব কথার মাঝে কি আর ঘুমানো যায়? যেখানে মরা মানুষ জীবিত হবার উপক্রম! মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখলাম সাতটা মিসকল। না না অন্য কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি আবার আর আট দশটা ছেলের মত এতো সৌভাগ্যবান নই যে আমাকে দেখে মেয়েরা পথেঘাটে উষ্ঠা খাবে। তাই বলে আমার কাউকে পছন্দ হয়নি সেটা বললে ভুল হবে। কিন্তু আমার যা নাক উচু স্বভাব! স্বাভাবিক কারণেই মেয়েরা আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলে। আর সময় নষ্ট না করে ফোনটা হাতে নিলাম। সীমান্তকে ফোন দিতে হবে। বেচারা এমনিতেই অনেক খেপে আছে।

  • ওই শালা কই থাকস? ফোন কি বাথরুমে ফেলেই চলে আসিস?
  • আরে দোস্ত আর কইস না একটা উড়াধুরা স্বপ্ন দেখতেসিলাম!
  • স্বপ্নই দেইখা যাবা। বাস্তবে তো মাইয়াগো সামনে পরলেই তোমারে প্রকৃতি ডাক দেয়!
  • হইসে দোস্ত মাফ চাই আর এমন হইবো না। এখন বল কেন ফোন দিসিলি?
  • পরশু এডভিসিং, দূরে গিয়া মর, রাখলাম।

আর কিছু না বলেই ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দিল। আমি আর সীমান্ত একই মেসে থাকি। এই সীমান্তকে শুধু আমার বন্ধু বললে ভুল হবে। ভাইয়ের দাবিটাও সে বেশ ভালোভাবে মেটাচ্ছে । ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। দেখতে দেখতে ৩য় সেমিস্টারে উঠে গেলাম। আজও আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। এ নিয়ে প্রায়ই সীমান্তর কাছে অপদস্ত হতে হয়। সে অনেক কথা। পরশু ঢাকায় চলে আসব শুনেই আম্মার মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। পরদিন সকালে আসার সময়তো কেদেই দিল।

বাসে অনেকক্ষণ বসে আছি। মনটাও খারাপ। আম্মার কথা ভেবে বুকফেটে কান্না আসছে। কিভাবে বাসায় একা একা থাকে! মাঝে মাঝে আল্লার ওপর খুব অভিমান হয়। কেন যে আমাকে কোনো ভাই-বোন দিল না? আমার বাবাও আবার জীবিকার তাগিদে দেশ থেকে হাজার মাইল দুরে।

তবুও সব চাচা চাচীরা পাশাপাশি আছে বলে রক্ষা। দিনের বেলা আম্মার সময়টা কেটে যায়। ভয়তো হয় যখন ভাবি রাতে আম্মার পাশে থাকার মত কেউ নেই। এনিয়ে আমি চেঁচামেচি করলে আমার মা প্রায়ই রসিকতা করে বলে “তুই বিয়ে করে দিয়ে যা তাহলেই তো হয়। “আমি হাসি আর মনে মনে বলি “আমিও তো এটাই চাই।” আমার মা টা আসলেই পাগল। আমাকে প্রেম করার আগাম লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে।

দুনিয়াটাই দেখি বিপরীতমুখী। মানুষ যা চায় তা পায় না। আর যারা পায় তারা ভুল করে পায়! হটাত অনুভব করলাম আমার পিঠে একটা হাত অনবরত ধাক্কা দিচ্ছে। পিছনে তাকাতেই মামা বলে উঠলো “কি ভাইজান নামবাইন না? নাকি আইজ রাইত টাও বাসে কাটানোর ইচ্ছা আছে! “আমিতো থতোমতো খেয়ে গেলাম। এতটা পথ কখন এসে পরলাম কিছুই মিলাতে পারছি না। অবশেষে বাসায় গেলাম।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় না খেয়েই ভার্সিটিতে দৌড় দিলাম। Advising হওয়ার কথা ১০টায় কিন্তু সেই কখন ১০:৩০টা পেরিয়ে গেছে। এখনো স্যার আসার কোনো লক্ষনই দেখা যাচ্ছে না। স্যারেরর নামটাও ছিল আবার ইন্তেসার! একদম নামের সাথে সার্থকতা যাকে বলে। যাই হোক এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর বন্ধুদের সাথে কোনো সাবজেক্টই পেলাম না! মেজাজ খারাপের তাড়নায় স্যারকে এমন এমন কয়টা গালি দিলাম যা শুনলে বেচারা তার মেয়েকে নিয়ে সুদূর চীনদেশে পাড়ি জমাতো।

পরের দুইদিন ভালই কাটে। অবশেষে, প্রথম ক্লাসের দিনটা এসেই গেল। কি আর করা অনেক কষ্টে মনটাকে ঠিক করে ক্লাসে ঢুকলাম। চেনাজানা দুইতিন জনকে পেয়েও গেলাম। এইবার পরিচয় পর্ব। বরাবরের মত একই ফর্মুলায় না গিয়ে স্যার পরিচয় পর্বটার সাথে ভিন্ন মাত্রা যোগ করলেন। আমরা একজন করে এক, দুই, তিন এভাবে দশ পর্যন্ত বলে গেলাম। আমি ছিলাম ছয়। আমি যখন মনে মনে আরেকটা ছয় কে পেয়েছে তাকে খুজছিলাম ঠিক তখনই দেখলাম আমার পাশে একটা মেয়ে এসে দাড়ালো।

বুঝতে পারলাম এই সেই ছয় নাম্বার মেয়ে। জানিনা মেয়েটার চোখেমুখে কি ছিল যার জন্য আমি শত চেষ্ঠা করেও চোখ সরাতে পারছিলাম না। স্যারের পরবর্তী পর্ব হলো আমরা একে অন্যকে আমাদের সম্পর্কে বলব তারপর আমি ওকে আর ও আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবে। সেই সুবাদে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সোনিয়া। হোম টাউন কুষ্টিয়া আর এইচ এস সি করেছে বাংলা কলেজ থেকে। কিভাবে যে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট সময় পার হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি।

পরের ক্লাসে তোমাদের পারমানেন্ট গ্রুপ বানানো হবে এই বলে স্যার বেরিয়ে পড়লেন। তারপরের দুইটা ক্লাসে একদমই মন বসাতে পারছিলাম না। আমার চোখজোড়া কেবল একটি মুখকেই খুজতেছিল। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছিল আমাদের ক্লাস co-ordinator এর উপর। ক্লাস ডিজাইন এমনভাবে করেছে! প্রতি ক্লাসে গিয়েই দেখি নতুন চেহারা। এভাবেই ভালোলাগা আর বিরক্তির দোলাচালে প্রথম দিনটা কেটে গেল।

রাতে সীমান্তকে সোনিয়ার কথা বললাম। সব শুনে হারামিটা বলে “ওকে দোস্ত। তুই কোনো টেনশন নিবি না। আমাকে ফোন নাম্বারটা দিস। আমি সব ম্যানেজ করে দিব।” বুঝলাম ওর কাছ থেকে এই মুহুর্তে প্রত্যাশিত কোনো উত্তর আশা করাটাও বোকামি। মনে মনে চাচ্ছি ও যেন আমার গ্রুপে পরে যায়। হটাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১:৩০ টা! গাধাটা হা করে ঘুমাচ্ছে। ধুর আমি এইসব কি ভাবছি! নিজেই নিজেকে কতক্ষণ উপহাস করলাম।

পরদিন বেশ আগ্রহ নিয়েই ক্লাসে গেলাম। ও তখনও আসে নি। যতই সময় গড়াচ্ছে ওর আসা নিয়ে ততই সন্ধিহান হচ্ছিলাম। সেকশন চেঞ্জ করে ফেলার ভয়টাও মনে কাজ করছিল। অবশেষে আমার সব দুশ্চিন্তা আর ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার ঠিক সাত মিনিট পর উনি এসে হাজির হলেন। আমার পাশে একটা ডেস্ক খালি ছিল আর উনিও আমার দিকেই আসছিলেন। হটাত ডানপাশ থেকে একটা মেয়ে ডাক দিল আর উনিও তৎক্ষনাৎ সেদিকে ঘুরে গেল। মেজাজ টাই বিগড়ে গেল।

স্যার এখন গ্রুপ মেম্বারদের নাম ঘোষণার জন্য প্রস্তুত। অলরেডি বলে দিয়েছেন ৫ টা গ্রুপ হবে আর প্রতি গ্রুপে মেম্বার থাকবে ৫ জন। আমার হার্টবিট এমন পর্যায়ে পৌছেছে মনে হচ্ছে ভিতরে কেউ মনের সুখে ঢোল পেটাচ্ছে! দুইটা গ্রুপ কনফর্ম হয়ে গেল। তিন নাম্বার গ্রুপের প্রথম নামই সোনিয়া ইসলাম হুমাইরা বুশরা! আমার উত্তেজনা তখন চরমে। একে একে আরো দুইটি নাম বলা হয়ে গেল। তখনও মনের কোণে কিঞ্চিত আশা লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তারপরের নামটা শুনে হতাশার পারদ সীমা লঙ্ঘন করেছে।

এখন শুধুই মুড়ি খাওয়ার প্রহর গুনছি। অবাক করে দেয়া কান্ডটা ঘটল তখনি। একদম লাস্ট নামটা শুনতে পেলাম অনুরুদ্ধ কিরণ! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ তো দেখি শেষ বলে ছয় মেরে ম্যাচ জিতলাম! যাক শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেই ঘরে ফিরলাম, যদিও এতে আমার কোনো বীরত্বই ছিল না। সোনিয়ার এক বান্ধবী সীমান্তর বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে ওর সাথেও পরিচয়টা হয়েই গেল।

আমাকে খেপানোর জন্য শালা আমার সামনে প্রায়ই বলে “মামা আমার কিন্তু সোনিয়ার উপর চরম ক্রাশ।” আমি আর কিছু বলি না। আমাদের বি বি এ তে এতো বেশি প্রেজেন্টেশন হার হওয়ায় আমার জন্য বেশ ভালই হলো যদিও এটাকে কদিন আগেও খুব বিরক্ত লাগতো। সেই প্রেজেন্টশন এর কল্যাণেই আমার কাছে গ্রুপের সবার ফোন নাম্বার চলে আসল। পরদিন ক্লাস শেষে ক্যাফেতে বসে আমাদের ১ম গ্রুপ এস্যাইনমেন্ট নিয়ে কথা বলছিলাম। সীমান্ত ও ছিল হটাৎ করেই সোনিয়া বলে উঠলো :

-অনুরুদ্ধ তুমি নাকি অনেক ভালো slide বানাও ?

  • মানে! কে বলেছে ?
  • কেন? সীমান্ত বলেছে। আমাদের সব slide কিন্তু তোমাকেই করে দিতে হবে ।
  • আরে না না। এত ভালো পারি না ।
  • হুম। বুঝেছি আর বলতে হবে না। মানুষ কখনো নিজেকে শো করতে চায় না ।

সীমান্তর দিকে তাকিয়ে দেখি ফাজিলটা হাসছে। ওর উপর প্রথম খুব রাগ হচ্ছিল। পরে ভেবে দেখলাম খুব একটা খারাপ হয়নি। বরং আমার জন্য বেশ ভালই হয়েছে। ফলাফল টাও পেলাম খুব তারাতারি। এভাবেই আমাদের মাঝে অনেক ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। আমার আবার মেয়েদেরকে তুই করে বলতে খুব আনইজি লাগতো। কিন্তু ও যা করলো ! সবার সামনে একদিন সোনিয়া আমাকে বলে “ওই আমি কি তোর গার্লফ্রেন্ড লাগি যে আমাকে তুমি করেই বলতে হবে! এখন থেকে তুই না বললে খুন করব। “কি আর করা শেষ পর্যন্ত বলতেই হলো। তবে আমাদের মাঝে তখনও ফোনে কোনো কথা হয় না।

যা বলার সব মেসেজ আর ভার্সিটিতে। আস্তে আস্তে আমাদের মেসেজিং বাড়তে থাকে। পড়াশুনার গন্ডি পেরিয়ে দুজন এগিয়ে যেতে থাকি অজানা কোনো এক গন্তব্যে। একদিন একটা মেসেজ এর রিপ্লে আসে “দোস্ত একটু কর তো। “আমি ভাবলাম ফোন দিতে বলেছে। কোনো ভাবেই কল দেয়ার সাহস করতে পারছিলাম না। কিন্তু এই সীমান্তর জোরাজোরিতে বাধ্য হলাম। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম ও আমাকে একটু অপেক্ষা করতে বলেছিল। আমি থতোমতো খেয়ে কল কেটে দিলাম। সাথে সাথেই ওর কল “ওই ছাগল তুই কি আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পাস!

নাকি আমাকে তোর আন্টি আন্টি লাগে তাই ভয় পাস?” আমি আর কি বলব ইয়েয়ে মানে ইয়েয়েয়ে। ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম হইছে আর বলতে হবে না। গাধা কোথাকার । “তারপর থেকে তো ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যেত তবু আমাদের কথা বলা থামতো না। আমি যে ক্রমেই ওর প্রতি দুর্বল হচ্ছিলাম তা ওকে কখনই বুঝতে দিতাম না।

প্রেম ভালবাসার বেপারটা বরাবরই আমি এড়িয়ে যেতাম। ভয় হতো পাছে হারিয়ে ফেলি! তবে সোনিয়ার যে কোনো কালেই বয়ফ্রেন্ড ছিল না সেটা আমি বেশ বিশ্বস্ত সূত্রেই জানতাম। একটা একটা দিন কেটে যায় আর আমাদের স্মৃতির খাতা পরিপূর্ণতা পায়। সেমিস্টার ফাইনাল তখন ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। পড়াশুনার চাপ বেশি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই যোগাযোগটা কমে যায়। ক্ষণিকের ব্যাস্ততা সব ভুলিয়ে দিলেও সোনিয়াকে আমার মন থেকে সরাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। পরীক্ষার পর পনের দিন ভার্সিটি বন্ধ শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। শেষ পরীক্ষার দিন সোনিয়ার সাথে দেখা না করেই চলে আসি। ফোনটা হাতে নিয়েই দেখি সোনিয়ার মেসেজ…

“আমাকে এই কষ্টটা না দিলেও পারতি অনুরুদ্ধ …”

ততক্ষণে আমি বাসে। কোনো রিপ্লাই না দিয়েই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। কানে হেডফোন। গান বাজছে-

“কুয়াশার পাখনাতে ভাগ্য শপেছি…

আমি জানি এ ভালবাসার কোনো মানে হয় না…”
সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছিলো তখন। আমার ক্লান্ত চোখদুটি কখন যে ঘুমের সাগরে ডুব দিল টেরই পাই নি। বাস থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়েই দেখি মোবাইলটা নেই! মানুষ যে কতটা অসহায় তা তখনি ফিল করলাম। নিয়তিকে দোষ দিয়ে মিথ্যে শান্তনা খুজার চেষ্ঠা না করেই নিজের নীড়ে ফিরলাম। সোনিয়াকে জানানোর জন্য কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মোবাইল ম্যানেজ হলেও তা তেমন একটা কাজে আসল না কারণ ওর নাম্বারটা আমার মুখস্ত ছিল না।

প্রতিটা মুহূর্ত নিজেকে কোনো এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা মনে হচ্ছিল। এই পনেরোটা দিন আমাকে খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিল যে সোনিয়া আমার মনের কতটা গভীরে জায়গা করে নিয়েছে। সবসময় নিজের দিকে আকর্ষণ করাই মনে হয় ভালবাসার ধর্ম। নিজের বাসায় থাকা সত্বেও এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাকে যেন সে কথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।

অবশেষে পনের দিনের মেন্টাল টর্চার কাটিয়ে ঢাকায় ফিরলাম। ফিরেই সীমান্তর কাছ থেকে জানতে পারলাম সোনিয়া হাসপাতালে! কাধ থেকে ব্যাগটা রেখেই ছুটে গেলাম। ৩০২ নাম্বার কেবিনের সামনে রাখি, মাসুদ, রাব্বি সবাই চোখে মুখে হতাশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি কাউকে কিছু বলার প্রয়োজনবোধ না করেই ভিতরে ঢুকে গেলাম। সোনিয়ার নিথর দেহটা বেডে পরে আছে। মাথায় আর হাতে ব্যান্ডেজ।

আমি দাড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেললাম। আস্তে করে জায়গাতেই বসে পড়লাম। মুহুর্তেই আমার পৃথিবীটা অন্ধকারে ঢেকে গেল। কোনো কথাই বলতে পারছিলাম না। সোনিয়ার হাতটা আমার বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ছেলেদের মতো কাদঁছি। কাদাঁর ঘোরেই মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় আমি তোকে অনেক অনেক ভালবাসি সোনিয়া।
সাথে সাথে ডান গালে সজোরে একটা থাপ্পড় অনুভব করলাম। চোখ তুলে দেখি সোনিয়া দিব্বি আমার সামনে বসে আছে। আমার বুকে এলোপাথারি মেরে যাচ্ছে আর বলছে “গাধা! এই কথাটা শুনার জন্য আমাকে এত কিছু করতে হলো। আগে বলতে পারলি না?” আমি কিছু না বলে পাগলিটাকে বুকে জড়িয়ে দুজনে অঝোর ধারায় কাদছি।

ততক্ষণে পিছনে তাকিয়ে দেখি সবাই হাততালি দিচ্ছে। সীমান্ত কুত্তাটা ছিল সবার সামনে। তারপর জানতে পারলাম সবই ছিল নাকি সীমান্তর প্লান। আমার মোবাইল গায়েব হওয়ার পিছনেও নাকি ওরই হাত ছিল! কোনো ভাবেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না। সীমান্তকে Thanks দিয়ে ছোট করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না তাই বুকে বুক মিলালাম। ফাজিলটা বলতে শুরু করলো “কি হইসে মাম্মা? এমনে কান্নাকাটি করলেই তোরে ছাইরা দিমু ভাবছস?”

নিজেকে সত্যি অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কেনই বা হবেনা? সবার কপালেই কি আমার সোনিয়ার মতো এমন একটা পাগলী আর সীমান্তর মতো এমন একটা বন্ধু জোটে? সোনিয়ার সাথে আজ প্রথম ডেটে বের হলাম। কি যেন একটা জিজ্ঞাস করতে গিয়েই উত্তর পেলাম “ওই গাধা আমি কি তোমার ফ্রেন্ড লাগি যে তুই করে বলবা?

আজ থেকে তুমি না বললে খবর আছে। ” আমি মুচকি হাসি। এইবার অবাক না হয়েই জিজ্ঞাস করলাম…

  • আচ্ছা আমি যদি তোমাকে মিডের আগে প্রপোস করতাম তাহলে?
  • হুম। আমিতো এটাই চাইসিলাম।
  • আর যদি প্রথম দিনই করতাম?
  • তাহলে ছেচরা বলতাম।

এইবার আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। দুইজনই হাসছি। বাকিটা লাইফ এই পাগলীটাকে নিয়ে এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই।

[বি .দ্র :কল্পনাকে আশ্রয় করেই গল্পটি লেখা হয়েছে, একটু খেয়ালি দৃষ্টি নিয়ে খুঁজে দেখুন আমাদের চারপাশেই এমন অনেক মানুষ আছে যাদের লাইফটা এই গল্প থেকেও অনেক সুন্দর। গল্পটা উৎসর্গ করলাম সত্যিকারের ভালবাসার অপেক্ষায় থাকা প্রতিটি তরুন তরুনীকে। যারা স্বপ্ন দেখে এমনি একটি সুন্দর জীবনের]

আরো পড়ুন- সিনেমাটিক প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *