সব গল্পের নাম হয় না – সেরা প্রেমের গল্প: জীবনের শেষ মুহুর্তে এইভাবে যে অয়নন্দিতা চলে যাবে ভাবেনি মাশফিক। অয়নন্দিতা পাষানের মতো চলে গেলো। আর তুতুল সেই থেকেই মাশফিকের জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়। নিজের সব টুকু দিয়ে আগলে রাখে সে অনুষ্প্রিয়াকে।
পর্ব ১
~ এত প্যারা আর নিতে পারছি না আমি।
~ কেন, কি হলো আবার?
~ জীবনটা আমার কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।
~ ভবঘুরের মতো না ঘুরে আংকেলের অফিসে তো বসতেই পারিস।
~ তুইও এই কথা বলিস।
~ তা নয়তো কি, আংকেলের এত বড় ফ্যাক্টরি। অথচ সামলোর কেউ নেই।
~ বাদ দে তো।
~ শুন পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে, এখন তো অফিসে বসতে পারিস। তাই না?
~ আমার এইসব ভালো লাগে না রে।
~ তাহলে কি ভালো লাগে?
~ জানি না, তবে খুজে বেরাচ্ছি।
~ আমি বলি?
~ বল।
~ ওই মেয়েটাকে দেখতেই রোজ ভার্সিটির সামনে আসিস, তাই না?
~ তামাম দুনিয়ার সবার থেকে তুই আমায় এইভাবে বুঝিস।
~ এই জন্যই তো আমি তোর বন্ধু।
~ হ্যাঁ।
~ তো আজ আসে নি এখনও?
~ নাহ রে, অনেক্ষন বসে আছি। কিন্তু দেখলাম না তাকে।
~ আচ্ছা চল রমিজ মামার চায়ের দোকানে গিয়ে বসি।
~ চল।
~ এই দাড়া দাড়া।
~ কি হলো আবার?
~ তোর বাপ যদি জানে তার ছেলে ফুটপাতের দোকানে বসে চা খেয়েছে ভাবতে পারছিস তো কি হবে?
~ আরে ধুর, ভুলে যাস না আমার বাপও আগে পাড়ার মোরের দোকানে বসে বুট পেয়াজু গিলেছে, এখন চল।
~ আচ্ছা চল।
মাশফিক আর পিয়াল মিলে রমিজ চাচার চায়ের দোকানে বসে। মাশফিক বড়লোক বাবার বড় ছেলে। সবে মাত্র পড়াশোনার পার্ট চুকিয়েছে। সে বরাবরই একটু অন্যরকম মানুষ। যার চারপাশের পরিবেশ খুব ভালো লাগলেও কিছু কিছু জিনিস তার একদম অপছন্দ। যেমন, কেউ ভিক্ষা চাইলে, ভিক্ষা না দিয়ে তার সাথে খারাপ আচরণ করা
কোন অনাথ রাস্তার বাচ্চা টাকা চাইলে, কেউ টাকা না দিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া। এইসব মাশফিককে বড় ভাবায়। বলতে গেলে সে অনেকটা মানব দরদি। বাবার বিশাল ব্যবসার প্রতি লোভ নেই তার। গরিব দুঃখির সেবা করতে পারাটাকে সে মহান আদর্শ বলে মনে করে।
~ আংকেল, ও আংকেল।
~ জ্বি বাবা।
~ আমারে ৫ টা টেহা দিবেন, বুক লাগছে।
~ কিছু খাও নি?
~ না আংকেল, কাই রাইত থিকা কিচ্ছু খাই নাই, দিবেন নি আংকেল?
~ আচ্ছা কি খাবে?
~ এট্টু রুডি আর ছা খামু।
~ তাহলে এখানে বসো। রমিজ চাচা ও~কে দুইটা রুটি আর এক কাপ চা দিন তো।
~ আংকেল লগে কলাও খামু
~ আচ্ছা বাবা, রমিজ চাচা কি কলা আছে দোকানে?
~ এইযে এইগুলান আছে।
~ কি কলা এইগুলা চাচা?
~ চাপা কলা।
~ ওহ তাহলে ও~কে দেন চাচা।
~ আইচ্ছা।
পথশিশুদের প্রতি মাশফিকের আগে থেকেই একটা দুর্বলতা কাজ করে। তাই এদের সাহায্য করতে তার একটুও সময় লাগে না।
~ তোমার নাম কি বাবা?
~ বেনু
~ বাহ অনেক সুন্দর নাম তো, কে রেখেছে?
~ মায় রাখছিল।
~ ওহ।
~ তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
~ একটা লেদা বইন আছে। বাপে গেছে গা আমগোরে ছাইড়া। আয় মায়।
~ কি হয়েছে মা’র
~ মইরা গেছে গা।
~ ওহহহহ, কিভাবে?
~ জানি না। একদিন এক সাহেব আইছিলো। মায় আমারে আর লিপিরে এক রুমে থুইয়া সাহেবের লগে হেই রুমে গেলো। পরে সাহেব গেলো গা আর মারে দেখলাম গোসল করছে। তারপর আমারে আর লিপিরে খাবাইয়া ঘুম পাড়াইয়া দিছে। ঘুমের থিকা উইডা দেহি মায় ওই রুমে ফাঁস দিয়া মইরা গেছে।
বেনুর কথাটা মাশফিকের বুকে গিয়ে লাগে। পিয়ালটাও চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
~ খাও তুমি।
~ আইচ্ছা।
~ দেখলি পিয়াল, দুনিয়াটা কত খারাপ।
~ হ্যাঁ রে।
~ কেমন মহিলা বাচ্চা গুলার কথাও ভাবলো না।
~ বাদ দে তো। এইসব নিয়ে আবার মন খারাপ করিস না।
তার পর পরই পিয়ালের ফোনে ফোন আসে। রাহুল ফোন করেছে। রাহুল ওদের আরেক ফ্রেন্ড।
~ হ্যালো রাহুল বল।
~
~ তাই, চলে আসছে। আমরা আসতেছি।
~
~ কিরে কে আসছে?
~ আর কে, তোমার মনের রানী চলে আসছে। রাহুল আড্ডা দিচ্ছিলো ওইখানে আর দেখতে পেয়েছে। চলো যাই।
~ অয়নন্দিতা
পর্ব ২
মাশফিক আর পিয়াল এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
~ কিরে, কই ও?
~ সরি দোস্ত, তুই দেরি করে ফেললি। এই মাত্রই ঢুকে গেছে ভেতরে।
~ ইসসসস।
~ এই মাশফিক, তোর বোনও ছিলো সাথে।
~ কিহহহ, তোকে দেখে নাই তো?
~ নাহ, আমি লুকিয়ে গেছিলাম
~ আল্লাহ বাচিয়েছে।
~ আচ্ছা এখন বল তো কোথায় ছিলিস এতক্ষন?
~ আর কোথায় থাকবে, গেছিলাম রমিজ চাচার চায়ের দোকানে। ওইখানে একটা বাচ্চা ছেলে চলে আসে আর এই জনাব ওর খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
~ তাই নাকি মাশফিক। আবারও সমাজ সেবা।
~ সমাজ সেবা না, মায়া লাগলো আর কি।
~ ভালো। এখন কি করবি? ভেতরে যাবি নাকি বের হয়ে যাবি?
~ ভেতরে গিয়ে কি করবে আর, এই মাশফিক চল চলে যাই।
~ দাড়া না পিয়াল।
~ এই পিয়াল চল আমরা চলে যাই। রাজা তার রানীর জন্য অপেক্ষা করুক।
~ তোরাও না পারিস বটে। শান্তি দিবি না আর। চল, কোথায় যাবি সেখানেই চল।
~ দ্যাটস লাইক আ গুড বয়।
~ ফাইযলামি কম কর। হাটা শুরু কর।
~ তোর গাড়ি কোথায় রে মাশফিক?
~ আজকে আনি নি। একটু দেখতে ইচ্ছে হলো সাধারন মানুষ গুলো কিভাবে রিক্সায় কিংবা বাসে ধাক্কাধাক্কি করে যাতায়াত করে?
~ ওয়েট ওয়েট, তুই কি রখন বাসে উঠবি নাকি?
~ হ্যাঁ, কেন কোন সমস্যা?
~ নাহ। তবে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র উত্তরাধিকারি এখন বাসে উঠবে বড় চৌধুরী জানতে পারলে খবর আছে।
~ আরে ধুর, আমার বাপ তো রিক্সায় চড়ে বেড়াইছে। চল যাই
~ ওর সাথে পারবি না রাহুল। ওর সব উত্তর রেডি করা।
~ হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।
তিন বন্ধু আড্ডা দিতে দিতে চলে যায়। মাশফিক বরাবরই রাস্তার মানুষের কাছে থাকতে চায়। কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের একমাত্র ছেলে হয়েও নিজেকে মধ্যবিত্তদের মতো রাখা তার স্বভাব। আর তার বাপের কাছে এই সব কিছুই বাজে স্বভাব।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে সময় কাটাতে গিয়ে বার বার একটা মুখই ভেসে উঠছে মাশফিকের চোখের সামনে। মুখটা বড়ই আনমনা আর মায়াবী। এক কথায় যেন মায়া রাজ্যের কোন এক মায়াবতী। যার চলন মাশফিককে বার বার বিমোহিত করে। না বলা কথা গুলো অন্তরে বড্ড বেশি করে নাড়া দেয় তার।
~ এই অয়নি, কিরে এইদিকে কি করিস তুই?
~ বসে আছি, তুই কখন এলি এখানে?
~ অনেক্ষন। কি হয়েছ মন খারাপ?
~ নাহ।
~ তাহলে?
~ আচ্ছা মাহি, আমি কেমন?
~ এটা কেমন প্রশ্ন, তুই কেমন? তুই আমার সব থেকে কাছের মানুষ।
~ ওহ
~ আচ্ছা কি হয়েছে বলবি একটু?
~ কিছু না রে।
~ তাহলে?
~ চল, ফুচকা খাবো।
~ এখন?
~ হুম, চল না প্লিজ
~ কিন্তু অয়নি, ভাইয়া দেখলে বকা দিবে রে।
~ তোর ভাইয়ার গুল্লি মারি। চল তো।
~ তাহলে চল।
অয়নন্দিতা। ভালো নাম ফাহমিদা সুলতানা অয়নন্দিতা। বাবা মায়ের ছোট মেয়ে। বড় ভাই আর বাবার আদরের দুলারি সে। তেমনি মায়েরও অনেক আদরের। তার ধারণা গুলো অনেকটা অন্যরকম। জীবনটা উপভোগ করতে চায় নিবিড়ভাবে।
আর তার সব থেকে কাছের মানুষ মাহি। তার একমাত্র বান্ধবী, তার সুখ দুঃখের সাথী সে। জীবন যেখানে থেমে যায়, অয়নন্দিতার ভাবনা সেখানে শুরু হয়।
পর্ব ৩
~ মাশফিক।
~ জ্বি আব্বু বলো।
~ কাল কোথায় ছিলে?
~ ভার্সিটি গিয়েছিলাম।
~ কোন কাজ ছিল কি?
~ নাহ, তেমন কাজ ছিল না, এমনি গিয়েছিলাম।
~ তাহলে অফিসে বসো আজ থেকে।
~ কিন্তু আব্বু,
~ মাশফিক যা বলেছি তাই করবা, ওকে?
~ আচ্ছা।
~ আর মাহি, তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা
~ আলহামদুলিল্লাহ আব্বু।
~ কাল ভার্সিটির পর কোথায় গিয়েছিলে?
~ কই আব্বু, কোথাও যাই নি তো।
~ তোমার কি মনে হয় আমি আশরাফ চৌধুরী এমনি এমনি চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি দাড় করিয়েছি?
~ আসলে আব্বু,
~ কাল দুপুর ২ টায় তুমি ভার্সিটির পাশের গলির মোড়ে দাড়ানো ফুচকাওয়ালার কাছ থেকে প্লেটে করে ফুচকা খেয়েছো। am i right মামুনি?
~ আব্বু, আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছিল তাই আমি আর অয়নি গিয়েছিলাম। সরি আব্বু আর যাবো না।
~ অয়নি?
~ অয়নন্দিতা আব্বু। আমার বান্ধবী ও আব্বু।
~ আচ্ছা
মাহির মুখে অয়নন্দিতা নাম টা শুনে মাশফিক চমকে যায়। মাহির বান্ধবী তাও আবার অয়নন্দিতা। ও তো জানতোই না। অবশ্য কাল একবার রাহুল বলেছিল”তোর বোনও ছিল সাথে”। কিন্তু ততটা পাত্তা দেয় নি মাশফিক।
সে ভেবেছিল সে ভেবেছিল হয়তো গেইটের কাছে এক সাথেই দেখেছে। কিন্তু এখন তো পুরো পরিষ্কার মাহির বান্ধবী অয়নন্দিতা।
মাশফিকের জন্য ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে গেল। এখন বোনক্র দেখার নাম করে ভার্সিটি যেতেও পারবে আবার অয়নন্দিতার সাথেও দেখা করতে পারবে। ব্যাপারটা দারুণ লাগছে মাশফিকের কাছে।
~ মাহি শোন।
~ বলো ভাইয়া।
~ চল তোকে আজকে আমি দিয়ে আসি।
~ কোথায়?
~ ভার্সিটিতে, চল আজকে ভাইয়া তোকে দিয়ে আসবো।
~ আচ্ছা চলো, তবে,
~ কি? তবে আবার কি?
~ আসলে আমি একটু আমার ফ্রেন্ডের বাসায়ও যাবো।
~ আচ্ছা প্রবলেম নাই আমি আগে ওইখানেই তোকে নিয়ে যাবো। তারপর এক সাথে তোদের ভার্সিটিতে দিয়ে আসবো।
~ সত্যি তো?
~ হ্যাঁ রে বাবা সত্যি। চল এখন।
~ কিন্তু আব্বু না তোমাকে অফিসে যেতে বলেছে আজকে।
~ উফফফ বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। তোকে নামিয়ে দিয়ে তারপর আমি অফিসে যাবো। এখন যাবি নাকি আমিই চলে যাবো।
~ আচ্ছা চলো।
মাহিকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ ছিলো অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতাকে দেখতেও পাবে এবং এই সুযোগে পরিচয় পর্বটাও সেড়ে নিবে। যার জন্য আজকে সে মাহিকে নিয়ে যাবে।
মাশফিক গাড়ি তো ড্রাইভ করছে ঠিকই কিন্তু তার মন অয়নন্দিতার কাছে। মাশফিক অয়নন্দিতাকে দেখেছিল ১লা ফাল্গুনে। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরা, হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি, চুলে খোপা করে গাজরা দেয়া। এক কথায় অপ্সরার মতো লেগেছিল সেইদিন অয়নন্দিতাকে। সেইদিনই প্রথমবারের মতো অয়নন্দিতার প্রেমে পড়ে মাশফিক।
অয়নন্দিতার প্রতি ভালোবাসাকে নিজের মাঝে বন্দী করে নেয় মাশফিক। তারপর থেকে আজ প্রায় এক মাস ১০ দিন হবে মোট ৪০ দিন অয়নন্দিতাকে দূর থেকেই দেখে মাশফিক। বার বার চেয়েও সামনে যায়না মাশফিক। আর আজ সে এতদিন পরে জানতে পারে যে সে যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ নয় তার নিজের ছোটো বোনের বান্ধবী সে।
~ আরে আরে, এই ভাইয়া ভাইয়ায়ায়ায়ায়া !
~ হ্যাঁ, হ্যাঁ, বল বল।
~ আরে গাড়ি থামাও।
~ এখানে?
~ নাহহহ, পিছনে। তুমি খানিকটা সামনে এসে গেছো।
~ ওহ আচ্ছা, দাড়া।
~ অন্য মনষ্ক হয়ে গাড়ি চালালে এমনি হবে।
~ কথা কম বলবি।
~ আমি আব্বুর কাছে বলে দিব।
~ চুপ থাক আব্বুর চামচি।
~ আচ্ছা দেখা যাবে।
~ নেহহহ, তোর বান্ধবীর বাসা এসে গেছে।
~ আচ্ছা দাড়া কল দেই।
~ দে
বাসাবো তে অয়নন্দিতার বাসা। আজ মাশফিক অয়নন্দিতার বাসাও চিনে নিয়েছে। যাক ভালোই হলো, মনে মনে দারুণ খুশি হলো মাশফিক।
~ এই ভাইয়া, ওই দেখো অয়নন্দিতা। ও আমার ফ্রেন্ড।
মাহির কথায় সাইডে তাকায় মাশফিক। সাদা সালোয়ার কামিজ পরে চুল গুলোকে সাইডে এনে বিনুনি করে রেখেছে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে আসছে সে। মাশফিক আর মাহি গাড়ি থেকে নামে।
~ সরি রে মাহি, তোকে আবার কষ্ট করে এখানে আসতে হলো।
~ নো প্রবলেম ম্যাডাম। আয় পরিচয় করিয়ে দেই। এটা আমার ভাইয়া।
~ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
এই প্রথম সে অয়নন্দিতার গলার স্বর শুনতে পেয়েছে। ভয়েস শুনে মাশফিক সেইখানেই বেহুশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এত মিষ্টি কন্ঠস্বর কারো হতে পারে?
~ এই ভাইয়া তোমাকে সালাম দিয়েছে তো?
~ হ,হ,হু, ওহ, ওয়ালাইকুম আসসালাম
~ আচ্ছা চল যাওয়া যাক তাহলে। আয় অয়নি চল গাড়িতে ওঠ।
~ হুম।
গাড়িতে উঠে অয়নন্দিতা আর মাহি নিজেদের মাঝে গল্প জুড়ে দেয়। এখন মনে হচ্ছে অয়নন্দিতা আর মাহি মালকিন আর মাশফিক ড্রাইভার। অয়নন্দিতা আর মাহি নিজেদের মাঝে গল্প করছে আর মাশফিক লুকিং গ্লাসে অয়নন্দিতাকে দেখছে। মেয়েটার মাঝে কি যেন আছে যা মাশফিককে টানে।
~ কিরে অয়নি, সে কই?
~ সে ঘুমাচ্ছে।
~ এখনও?
~ হুম এখনও। অবাক হওয়ার কিছু নেই আজকে তার অফডে তাই পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
~ কেউ কিছু বলে না?
~ মায়ের আদরের দুলাল সে।
~ ওহ, জুটি দারুণ মানাবে। কি বলিস?
~ হ্যাঁ একদম, জমে পুরো ক্ষীর।
মাশফিক এক মনে গাড় ড্রাইভ করছে।
~ এই ভাইয়া, ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
~ হ্যাঁ, কি হয়েছে কি? এইভাবে চিৎকার করিস কেন?
~ তুমি ভার্সিটি ফেলে এসেছো। গাড়ি ব্যাক করো।
~ ওহ হো, সরি বাবা। আমি খেয়াল করি নি।
~ হ্যাঁ। এখন তাড়াতাড়ি করো।
অবশেষে গাড়ি ভার্সিটির গেইটের কাছে এসে পৌছায়। অয়নন্দিতা আর মাহি মাশফিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মাশফিক সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি অয়নন্দিতার উপরে। যে তার স্বপ্নের দৃষ্টিবিলাসী।
পর্ব ৪
অফিসের ডেস্কে বসে থাকা মি মাশফিকের চিন্তা চেতনা শুধুই অয়নন্দিতাকে ঘিরে। মেয়েটার মাঝে অদ্ভুত মায়া আছে। কফির পর কফি খাচ্ছে মাশফিক। ল্যাপটপে চোখ আছে কিন্তু মাইন্ডে অয়নন্দিতা। ফাইলে কলম তো চলছে কিন্তু ভাবনায় অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতার ভালোবাসার রঙিন আলোয় মাশফিকের ভূবন যদি রাঙানো যায়, তাহলে ক্ষতির কি আছে।
~ ছোট স্যার আসবো?
পিওনের কথায় হুশ আসে মাশফিকের। কিছুক্ষন তাকিয়ে আছে অফিসের পিওন সাহাদাতের দিকে।
~ এসো সাহাদাত।
~ স্যার আপনার কফি।
~ ধন্যবাদ ভাই।
~ স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?
~ হ্যাঁ করো।
~ আচ্ছা স্যার আপনি কি কোন বিষয়ে খুব চিন্তিত?
~ দেখে কি তাই মনে হচ্ছে?
~ হ্যাঁ। আর এই পর্যন্ত আপনি প্রায় ১৫ কাপ কফি খেলেন। তাই জিজ্ঞাসা করলাম আরকি।
~ ঠিকই ধরেছো তুমি। আমি খুব চিন্তিত আছি।
~ কি হয়েছে স্যার?
~ আচ্ছা সাহাদাত কখনও প্রেম করেছো? কিংবা কারো প্রেমে পড়েছো?
~ জ্বি মানে, মানে।
~ মানে মানে করো না বলো না, কারো প্রেমে পড়েছো কখনও? কিংবা কাউকে ভালোবেসেছো কখনও?
~ কাউকে ভালোবাসার সুযোগটা পাই নাই স্যার। ইন্টার পাশ করার পরে আর পড়া হয় নাই। সেই রকম ভাবে কাউকে মনেও ধরে নাই।
~ তারপর?
~ তারপর আর কি। আপনি তখন ভার্সিটিতে পড়েন। একদিন একটা চোর আপনার আব্বার মানি ব্যাগ নিয়া দৌড় মারলো তারে আমি ধরলাম। তারপর পুরষ্কার হিসেবে আপনার আব্বা আমাকে ৫০০০ টাকা দিতে চায়। পরে বললাম আমার একটা চাকরির প্রয়োজন আছে আর আপনার আব্বা আমাকে এই চাকরি টা দিলে।
~ ওহ, তারপর?
~ আম্মা বরাবরই চাইতো সাথীকে আমি বিয়ে করি। কিন্তু ও কে আমি ওইভাবে দেখিই নাই। ও তো আমার খালাতো বোন লাগে। কিন্তু চাকরির ১ বছরের মাথায় আম্মার এক প্রকার ধরে বেধে সাথীর সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
~ তাই নাকি?
~ জ্বি। তবে বিয়ের পরে আস্তে আস্তে বুঝলাম সাথী ততটা খারাপ না। সব দিকেই তার নজর থাকে। বিয়ের পর সাথীর ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, মাশা~আল্লাহ 481 পায়। জিজ্ঞাসা করি আর পড়তে চায় কিনা?
~ তারপর?
~ মুখ টা মলিন করে চলে যায়। সে হয়তো বুঝতে পারে আমি তার পড়াশোনায় বাধা দিব। পাগলিটার না বলা কথাগুলো আমি বুঝে যাই। পরে ও কে একদিন কম্পিউটারের দোকানে যাই। সেইখান থেকে ফ্রম তুলি। ও তো অবাক হয়ে ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম কি নিয়ে পড়তে চায়? বলে ইংলিশ নিয়ে পড়তে চায়।
তিতুমির কলেজে চাঞ্চ পায় সাথী। এখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
~ সাথী তোমাকে কতটা ভালোবাসে সাহাদাত?
~ কখনও বলে নাই। তবে যেইদিন ওর ফার্স্ট ইয়ারের রেজাল্ট দেয় সেইদিন কলেজে নিয়ে গেছিল। সাথী ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হইছিল।
সবাই জিজ্ঞাসা করছে ওর পড়াশোনার ইন্সপিরেশন কে? ও সবার সামনে আমাকে দেখিয়ে দেয়। আর ওর ডিপার্টমেন্টের হেড যেই স্যার তার কাছে আমাকে নিয়ে গিয়ে বলে,
“স্যার, ইনি আমার হাজবেন্ড। জনাব সাহাদাত হোসেন।”
সেইদিন অবাক হয়েছিলাম অনেক। স্যার আমি আসলেই সাথীর উপযুক্ত না। নিজেকে অনেক ছোট লাগে তার সামনে। কোন শখ আল্লাদ পূরণ করতে পারি না তার। সেও মুখ খুলে কিছুই দাবি করে না আমার কাছে।
~ কিন্তু তুমি কি জানো তুমি তাকে কি দিয়েছো?
~ কি?
~ তুমি তাকে তা দিয়েছো যা আজকালকার দিনে শিক্ষিত মানুষরাও করে না। তুমি খুব লাকি সাথীকে পেয়ে। আর সাথীও খুব লাকি তোমাকে পেয়ে।
~ আপনার তাই মনে হয়?
~ অবশ্যই।
~ আমার তো তা মনে হয় না। বাসা ভাড়া আর খাওয়ার খরচের পরে তেমন কিছুই থাকে না। যা দিয়ে সাথীর শখ আল্লাদ মেটাবো। মেয়েটাও বুঝে যে তার স্বামী তাকে কোন রকম খাওয়া আর কাপড় ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না।
~ সে কেন তোমার কাছে কিছু চায় না জানো?
~ কেন?
~ কারণ তুমি তাকে সেরা জিনিসটাই দিয়েছো। আর তা হচ্ছো তুমি নিজে সাহাদাত।
~ ওহ, তবে সাথীর কোন ডিমান্ড নাই স্যার। সে ওই রকম তিন রুমের একটা ছোট বাসায় অনেক সুন্দর করেই থাকতে পারে। নিজেও এখন টিউশনি করে। আমার মাও বাধা দেয় না। কারণ আমার মায়ের কাছে আমার চেয়ে সাথী অনেক প্রিয়। ~ ~ আচ্ছা একদিন তোমার বাড়ি যাবো দুপুরে খেতে।
~ ইনশাআল্লাহ স্যার। সাথী অনেক খুশি হবে আপনি যদি যান।
~ হুম যাবো।
~ স্যার এইবার কি বলবেন আপনি কেন এত চিন্তিত?
~ বলবো আরেকদিন। তুমি এখন আসো।
~ আচ্ছা স্যার।
সাহাদাত চলে যাওয়ার পরে মাশফিক আরও গভীর ধ্যানে মগ্ন দেয়। তার অফিসের পিওন যার বেতন সামান্য ১৩৫০০ টাকা। এই ছেলেটা তার বউ মাকে নিয়ে ভালোই আছে।
ভালোবাসার বন্ধন গুলো এতটা প্রখর হতে পারে আগে জানা ছিল না মাশফিকের। নিজে ইন্টার পাশ হয়েও বউকে অর্নাস লেভেলে ঠিকই পড়াচ্ছে। যদি এর লক্ষ লক্ষ টাকা থাকতো তাহলে তো নর্থ সাউথ, ইউ ও ডি এ তে পড়াতো তার বউকে। বেতন কম হলে কি হবে ছেলেটাকে দেখে বুঝা যায় যে সে কতটা ভালো আছে।
ভার্সিটিতে ক্লাসের পরে মাহি আর অয়নন্দিতা ক্যান্টিনে বসে আছে। গল্প করছে দুজনে। আর সাথে একজন সম্পর্কে জানার অনেক আগ্রহ।
~ আচ্ছা অয়নন্দিতা, কি মনে হয় তোর?
~ কি মনে হবে? আর কি বিষয়ে?
~ ওইযে ব্যাংকার, তার কথা বলছি।
~ ততটা বড়লোক না হলেও টাকা পয়সা ভালোই। আরামসে চলা যাবে।
~ কিন্তু কাজের চাপ বেশি থাকে ব্যাংকারদের। বউদের সময় দেয়ার বেলায় কাচকলা।
~ আচ্ছা বাদ দে, যখন হবে তখন দেখা যাবে।
~ হ্যাঁ।
কারো ব্যাপারে এত কৌতুহল হলে যা হয় আর কি। সেদিনকার মতো অয়নন্দিতা ভার্সিটি থেকে বিদায় নেয়।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে যায়।
~ কিরে মা, ক্লাস কেমন চলে?
~ ভালো বাবা।
~ ভালো করে পড়াশোনা কর মা।
~ আচ্ছা বাবা
~ হ্যাঁ গো শুনছো,
~ হ্যাঁ বলো।
~ আমার অয়নকে এইবার করাবো আমি।
ভাইয়ের বিয়ের কথা শুনে নাকে মুখে পানি উঠে যায় অয়নন্দিতার।
~ ক,ক,ক,কা,কার বিয়ে?
~ ওমা তুই এত তোতলাস কেন? অয়নের বউ আনবো এইবার আমি। পাশের বাসার সিফাতের মায়ের সিফাত কত ভালো ছেলে। বিয়ে করেছে মায়ের কথায়। বউও মাশা~আল্লাহ কি সুন্দর। সিফাতের মাকে মা মা করে কথা বলে।
~ তুমিও যেমন মা, শ্বাশুড়িকে মা ডাকবে এটা তো স্বাভাবিক তাই না মা?
~ যাই হোক হ্যাঁ গো অয়নের বাবা, এইবার অয়নের বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করো। আর তার পর পরই আমি অয়নির বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।
~ ধুম করে বলে দিলে আর হয়ে গেলো, তাই না?
~ মানে?
~ মানে মানে করো না। ছেলে মাশা~আল্লাহ অনেক বড় হয়েছে আমাদের। আগে তাকে জিজ্ঞাসা করো তার পছন্দ আছে কিনা তারপর সামনে পা বাড়াবা।
~ আরে ওর পছন্দ টছন্দ নাই।
~ তুমি মনে হয় জানো কত?
~ আমি জানি, আর সিফাত তো তার মায়ের কথায় বিয়ে করছে।
~ তোমার ধারণা ভুল মা। পাশের ফ্ল্যাটের সিফাত ভাইয়া তিন বছর প্রেম করছে রিয়া ভাবির সাথে। রিয়া ভাবি আমাদের ভার্সিটিতে পড়তো। আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র, বুঝেছো মা।
~ তা পড়তেই পারে।
~ সিফাত ভাইয়া প্রতিদিনই ভার্সিটির সামনে থাকতেন আর আমাকে দেখলেই বলতো সোনা বোন বলিস না কাউকে। বুঝলে মা?
~ হা হা হা, সাব্বাস এই না হলে আমার মেয়ে।
~ যেমন বাপ তেমন মেয়ে। যা সর, খেয়ে উদ্ধার কর আমায়।
রাহেলা বেগম (অয়নন্দিতার মা) রেগে মেগে চলে গেছে। মজিব সাহেব (অয়নন্দিতার বাবা) হেসেই চলেছেন।
~ আহহহ বাবা তোমাকে না বলেছি এইভাবে মায়ের কথায় হাসবে না।
~ তোর মা আজীবনেরই এমন অয়নি।
~ তাই বলে এইভাবে হাসবা।
~ দেখলি কি গুন গাইছিল সিফাতের। আসলে সিফাত যে কি তা তো আমিও জানি।
~ কি জানো গো বাবা?
~ সিফাতকে আমিও দেখেছিলাম বিয়ের আগে রিয়াকে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতে।
~ হা হা হা, আচ্ছা বাবা ওদের প্রেমকি পুরো বাসাবো জুড়ে আছে নাকি।
~ কে জানে।
~ এক কাজ করো বাবা, মাকে তো রাগিয়ে দিয়েছো। তুমিও মাকে নিয়ে ঘুরে আসো।
~ বাবার পয়সায় এত কুনজর দেস কেন। আমার কি পয়সার গাছ আছে নাকি তোর মাকে নিয়ে গিয়ে টাকা খরচ করবো।
~ ছি বাবা, তুমি কি কিপটা।
~ কিপটা না মা, বলো মিতব্যয়ী।
~ নিকুচি করেছে তোমার মিতব্যয়ীর। খাওয়া হলে উঠো। এইগুলি গুছিয়ে রাখবো।
~ ধুর মেয়েরা কিছুই বুঝে না। আমার অয়নই ভালো।
~ ও তো বড় বদ। ও কে দুনিয়ার কোন মেয়ে বিয়ে করবে না। ও তোমার ডুপলিকেট বুঝলা।
~ হইছে হইছে, খালি দিতে পারলেই ভালো। এইগুলা আমার কষ্টের টাকা। কত কষ্ট করে টাকা জমিয়ে আর অয়নের সাহায্যে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছি। না হলে তো এখনও ভাড়া বাসাতেই থাকতেন।
~ হয়েছে বাবা হয়েছে। মা এইবার সত্যি সত্যি রেগে যাবে।
~ যাক তাতে আমার কি।
~ কিছু হলে খবরদার আমাকে ডাকবা না।
আমি এখন ঘুম দিব।
হাসি কান্না, সুখ দুঃখের মাঝে ভালো কাটে অয়নন্দিতার পরিবারের প্রতিটা দিন। সংসারে ৪ জন মাত্র। রাহেলা বেগম, মজিব সাহেব, অয়নন্দিতা আর অয়ন। প্রায় ৩৫ বছর যাবত একটা প্রাইভেট কোম্পানির সাথে যুক্ত আছেন তিনি। খুব ভালো না থাকলেও খুব খারাপে কখনোই ছিলেন না। সীমিত আয়ে দুই সন্তানকে পড়িয়েছেন।
অয়ন দুই বছর হলো পড়াশোনা শেষ করে একটা জব করে। ভালো টাকা সেলারি পায়। গত দুই বছরে ভালো টাকা সেভিংস করে বাবার হাতে তুলে দেয় অয়ন। বাবা ছেলে মিলে ফ্ল্যাটটা কিনে নেয়। খুনসুঁটির মাধ্যমে সম্পর্ক গুলো এভাবেই ভালো থাকে অয়নন্দিতার পরিবারের।
রুমের বারান্দায় বসে স্মোক করছে মাশফিক। চৈত্রের শেষ কয়েকটা দিন আকাশটা কেমন জানি মেঘলা মেঘলা হয়ে থাকে। কখন জানি বৃষ্টি নেমে যায়। রাত ১০ টা নাগাদ ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন এমন ঠান্ডা বাতাস পায় নি মাশফিক। শীতল বাতাসের আমেজে মনটা আরও বেশি করে অয়নন্দিতাকে চাইছে। অয়নন্দিতার ভাবনায় সে এতটাই মগ্ন যে তার গায়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ভিজে গেছে তার সেইদিকে কোন খেয়াল নেই।
আর অন্যদিকে বারান্দায় অয়নন্দিতা হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ছুয়ে দেখছে। অয়নন্দিতার বৃষ্টি খুব ভালো লাগে। হঠাৎ করেই একটা গান মনে পড়ে যায় অয়নন্দিতার। গুন গুন করে গাইছে সে,
“আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম”
আর এইদিকে মাশফিকের গলা থেকেও গুন গুন শব্দে একটা গান বের হয়ে আসে।
“আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম”
পর্ব ৫
কয়েকদিন পর বৈশাখ। সেই দিনটা মাশফিক অয়নন্দিতার জন্য নিজেকে রেডি রাখতে চায়। তার মনের রানীর জন্য শাড়ি চুড়ি গহনা সব কেনা শেষ। এখন শুধু সেইগুলো ওর কাছে পৌঁছানোর পালা। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সব কিনেছে মাশফিক। মনের মতো করে সাজাতে চায় সে তার মনের রানীকে।
মাহির সাথে কথা বলে পয়লা বৈশাখে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করে ফেলে মাশফিক। প্রায় ১০০ ফকির মিসকিন আর অনাথদের খাওয়ানো হবে সেদিন। বাহিরে সবাই বৈশাখ পালন করবে আর বাড়িতে মাশফিক অসহায় আর দুস্থ মানুষদের নিয়ে বৈশাখের আনন্দে মেতে উঠবে। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের মনের কথাটা বলে দেবে অয়নন্দিতাকে।
বিকেলের দিকে কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে অয়নন্দিতা দরজা খুলে। খুলেই অবাক হয়ে যায়। একটা ছো বাচ্চা ছেলে বয়স ৭/৮ হবে। কিছু প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
~ কে তুমি বাবু?
~ আন্টি তুমি কি অয়নন্দিতা?
~ হ্যাঁ সোনা, কিন্তু তুমি কে?
~ এটা তোমার, ধরো
ধরো বলে এক দৌড়ে পিচ্চিটা চলে যায়। আর অয়নন্দিতা বেকুবের মতো দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে।
~ কিরে কে আসছিলো?
~ একটা পিচ্চি।
~ তা এগুলা কি?
~ জানি না।
~ খুলে দেখ।
~ খুলে দেখবো?
~ হুম, দেখ কি আছে?
~ যদি বোম টোম থাকে?
~ তোর বাপের মাথা থাকে।
~ উফফফফফফ মা।
~ আন্দাযে কথা বলতে একদিন মানা করছিলাম না। খোল দেখি কি আছে?
মায়ের পিড়াপীড়িতে প্যাকেট গুলো খুলে অয়নন্দিতা। একটা প্যাকেটে শাড়ি, অন্য একটায় ৭ ডজন চুড়ি, আরেকটায় গলার চিকন চিক সাথে ছোট একজোড়া দুল।
এইসব দেখে অয়নন্দিতাও অবাক সাথে অয়নন্দিতার মাও অবাক।
~ এত কিছু কে পাঠালো রে?
~ কি জানি মা, বলতে পারলাম না তো?
~ এই তুই কারো সাথে প্রেম ট্রেম করস নাকি?
~ মা তুমি কি পাগল, কি সব বলো?
~ করিস না তো?
~ আরে নাহ, ধুর।
~ এই অয়নি
~ কি
~ নিশ্চয়ই তোকে কেউ পছন্দ করে রে।
~ মা কি সব বলতেছো?
~ ঠিকই তো বললাম।
~ মা যাও তো, যাও রান্না করো।
মাকে একরকম ধমকে পাঠিয়ে দেয় অয়নন্দিতা। এরই মাঝে ফোনটা বেজে ওঠে।
~ হ্যালো, কিরে এখন ফোন দিলি।
~ কি করস।
~ বসে ছিলাম, জানিস কি হইছে?
~ কিরে !
~ কে জানি আমার জন্য শাড়ি, চুড়ি, গহনা পাঠিয়েছে।
~ ওয়াও, তাই নাকি।
~ দেখ মাহি, ফাইযলামি করিস না। খুব চিন্তায় আছি।
~ আচ্ছা বাদ দে, শুন, পরশুদিন তো পহেলা বৈশাখ, ভাইয়া অনেক বড় করে অনুষ্ঠান রাখছে বাসায়। ১০০ অনাথ শিশু আর বৃদ্ধ ফকির মিসকিনদের খাওয়ানো হবে সেদিন। তোকে আসতে হবে কিন্তু।
~ আমি এসে কি করবো।
~ নাচবি, কেমন?
~ ধুর।
~ চলে আসিস, বাই
মাহির ফোন রেখে চিন্তায় ডুব দেয় অয়নন্দিতা। এত জিনিস কে পাঠালো তা নিয়ে ভাবছে এখন অয়নন্দিতা।
অন্যদিকে মাশফিক উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। তার দেয়া শাড়ি পরে অয়নন্দিতাকে কেমন লাগবে? সব দিক দিয়ে অয়নন্দিতা কোন পরীর থেকে কম না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অয়নন্দিতাকে নিজের করে পেতে চায় মাশফিক।
দেখতে দেখতে বৈশাখ ও চলে এলো। এই নিয়ে ১০ বার মাহির ফোন দেয়া হয়ে গেছে। কখন যাবে কখন যাবে এইসব বলে বলে অয়নন্দিতাকে পাগল করে ফেলছে সে। আর এদিকে অয়নন্দিতা কি পরে যাবে সে নিয়ে চিন্তিত। পুরো ড্রয়ার ঘাটছে ভালো কিছুই পাচ্ছে না সে।
প্রায় ২ ঘন্টা পর বেলা ১২ টা ১৩ মিনিটে মাশফিক এর বাসার সামনে থাকা বিড়াট বড় গার্ডেনে অয়নন্দিতাকে দেখতে পাওয়া যায়। অয়নন্দিতা চারপাশটা দেখছে। ১০০~১৫০ মানুষের বসার মতো জায়গা করা হয়েছে প্যান্ডেল করে। এখানে কিছুক্ষণ পর ভোজ হবে। বৈশাখ ভোজ। দুঃস্থ মানুষদের নিয়ে যার ভাবনা চিন্তা এত সুন্দর সে মনের দিক থেকে কতনা জানি সুন্দর। অয়নন্দিতা চারদিকটা দেখছে আর ভাবছে।
দূর থেকে মাহি অয়নন্দিতাকে দেখে দৌড়ে চলে আসে। জড়িয়ে নেয় নিজের বান্ধবীকে। হাসিতে মেতে ওঠে দুজনে।
~ কিরে তোকে তো আজ দারুন লাগছে অয়নি।
~ ধুর।
~ সত্যি,
~ হইছে, তোমাকেও সুন্দরী লাগছে।
~ তার কি খবর?
~ বিন্দাস।
~ ইসসসস আমি যদি দেখতে পারতাম।
~ সন্ধ্যায় আসবে, আমাকে নিতে তখন দেখেও নিস + দেখাও করে নিস।
~ সত্যিইইইইইইইইইই!
~ হুম
কাজের ফাঁকে হঠাৎ নজর জায়গায় গেইটের কাছে। স্টাফ একজনের কাধের সাইড দিয়ে উঁকি দিয়ে তার অপ্সরাকে দেখছে মাশফিক। অপূর্ব লাগছে তাকে। আজ মনে হচ্ছে রূপ যেন চুয়ে চুয়ে পড়ছে তার অপ্সরার।
গ্রামীন চেকের লাল শাড়িটা, সাথে পিঠের সাথে লাগানো খোপা, খোপায় রাউন্ড করা গাজরা, হাত ভর্তি চুড়ি, গলায় এন্টিকের একটা নেকপিচ আর কানে বড় বড় ঝুমকা, এক কথায় অপরুপ লাগছিল তার অপ্সরা কে। অয়নন্দিতা এমনিতেই একটু নাদুসনুদুস। দেখতেও ফর্সা, সেজেওছে অসাধারণ ভাবে। একদম সিম্পলের মাঝে গর্জিয়াস যাকে বলে আর কি।
মাশফিক কাজ করবে কি, সে তো তার অপ্সরাকে দেখতেই ব্যস্ত।
পর্ব ৬
দুপুরের দিকে সব কাজ শেষ করে সবাইকে নিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠে মাশফিক ও তার পরিবার ৷ সবার সাথে অয়নন্দিতাও মজা করছে ৷ কিন্তু মাশফিকের নজর তার অপ্সরার দিকে ৷ অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না সে ৷ অনুভূতি গুলো তাড়া দিচ্ছে ৷ তবে একদিকে সে অনেক খুশি কারন অয়নন্দিতা তার পাঠানো শাড়ি গয়না সব পরেছে ৷ এক সময় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসছে ৷ অয়নন্দিতার যাওয়ার সময় হয়ে এলো ৷
~ মাহি,
~ হ্যাঁ, বল।
~ শোন না, সন্ধ্যা তো হয়ে এলো। আমাকে এখন যেতে হবে রে।
~ চলে যাবি?
~ হ্যাঁ রে, কল দিয়েছি, আসছে আমাকে নিতে।
~ সত্যি আসছে সে।
~ হুম, আসবে।
~ আল্লাহ, আমি অনেক হ্যাপি, আজকে তাকে দেখতে পাবো।
~ ইসসস রে, ঢং।
ওদের কথার কিছু অংশ মাশফিকের কানে যায়। যা হবার তাই হয়ে যায়। সে বুঝে যায় যে তার অপ্সরা আর তার নেই, সে অন্য কারো মনের রানী। মুহূর্তেই আনন্দিত মনটা তার কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়। কি ববার কথা ছিল আর কি হয়ে গেলো। সে বলতে গিয়েও বলে নি তার মনের কথা গুলো। এখন হিসাব করে দেখলো না বলে ভালোই করেছে সে।
সন্ধ্যায় একটা মোটরসাইকেল এসে মাশফিকের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। মাহি আর অয়নন্দিতা গেইটের কাছে চলে যায়। সেখানে একজন ভদ্র টাইপ একজন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নন্দিতা বেশ হেসে হেসে কথা বলছে তার সাথে, আর মাহি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
তারপর এক সময় অয়নন্দিতা মোটরসাইকেলের উপর চড়ে ওই ছেলের সাথে চলে যায়। যার সবটাই মাশফিক দেখে ফেলে ছাদ থেকে। এমন একটা পর্যায়ে তাকে পড়তে হবে সে ভাবে নি ৷
মাহি বাসায় চলে আসে, বড্ড বেশি ক্লান্ত সে আজ, অনেক বেশিই কাজ করতে হয়েছে আজকে তাকে ৷ ভাইয়ের সমাজ সেবার সাথে হাত মেলাতে গিয়ে তার অবস্থা খারাপ ৷ নিজের রুমে এসে বসে পড়ে মাহি ৷ সেও আজ অনেক খুশি ৷ অবশ্য খুশির কারন টাও মজার ৷ এমতাবস্থায় মাশফিক রুমে আসে ৷
~ বিয়ে কবে?
ভাইয়ের এমন প্রশ্ন শুনে শুধু অবাকই হয় নি মাহি রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েছে সে। বলা নেই কওয়া নেই ধুম করেই বিয়ের কথা বলে দিল। কিন্তু তার ভাই কার কথা বলছে সে এটা নিয়ে এখনও কনফিউজড।
~ তুমি কার কথা বলো ভাইয়া?
~ কেন জানিস না?
~ জানলে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন না করে সোজাসাপটা উত্তর দিতাম তাই না ভাইয়া।
~ তোর বান্ধবীর।
~ আমার বান্ধবী কে, যার বিয়ে ঠিক?
~ আরে যে এলো আজ, সে।
~ অয়নি, আল্লাহ গো ভাইয়া কি বলো তুমি এইসব।
~ কেন, কি বললাম?
~ ওর বিয়ে কেন ঠিক হবে?
~ আজ যে এলো, সে কে তাহলে?
~ হা হা হা হা
~ হাসিস কেন?
~ আরে ওটা ওর বড় ভাইয়া। অয়ন ভাইয়া উনি হি হি
~ what
~ yesssssss, অয়ন ভাইয়া উনি, অয়নিকে নিতে এসেছে।
~ ওহ, আচ্ছা, তো ঠিক আছে তুই বিশ্রাম কর।
~ ওকে।
বোনের রুম থেকে বেরিয়ে এসে চাপা স্বরে ইয়েস বলে লাফিয়ে উঠে মাশফিক। একদিকে খুশি হলেও অন্যদিকে তার খুব জেদ উঠছে নিজের ওপর। ভাই আর বোনকে নিয়ে মি সব ভেবেছে সে। এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তার। অবশ্য এতে তার কোন দোষও ছিল না। ওরা এমন ভাবে কথা বলেছিল যে মাশফিক বুঝে নিতে ভুল করেছে।
দুইদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। আর মাশফিক ভেবে যাচ্ছে কিভাবে অয়নন্দিতাকে তার মনের কথা বলবে। বোনের সাহায্য নিতে চেয়েও নেয় নি সে। সে চায় সে নিজে একা কারো সাহায্য ছাড়া অয়নন্দিতাকে প্রস্তাব দিবে। মাশফিকের চোখে একটাই চেহারা ভেসে ওঠে তা শুধু অয়নন্দিতার। মেয়েটাকে সে প্রচন্ড রকম ভালোবাসে। যার জন্য তাকে ভুলে থাকা সম্ভব না।
অন্যদিকে প্রেমের তোড়জোড় চলছে অন্য দুইজনের মাঝে। মাহি বার বার অয়নের সাথে কন্টাক্ট করছে, কারণ মাহি সেই শুরু থেকেই অয়নকে ভালোবাসে। যার একটু একটু অয়ন বুঝলেও পাত্তা দেয় না। অয়নের ধারনা বড়লোক ঘরের মেয়েরা ভালো হয় না। তারা মধ্যবিত্ত পরিবারে মানিয়ে নিতে পারে না। তাই এইসব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চায় অয়ন।
~ এই ভাইয়া।
~ হুম বল,
~ চল না আমার সাথে একটু।
~ কই যাবো?
~ পার্কে নিয়ে চল আমায়।
~ আজকে অফ ডে বাবুইপাখি, আমাকে ঘুমাইতে দে।
~ তুই এমন কেন বল তো, বোনকে নিয়ে বের হবি তাতেও এত এক্সকিউজ দেখাস।
~ দেখ বাবুইপাখি, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল কম কর।
~ বাহহহহ, বোন বললেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল হয়ে যায়।
~ উফফফফফফ, আচ্ছা বল কই যাবি?
~ উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে ঘুরে আসি, চল।
~ ওই, ওইদিকে কি। কিছুই নাই ওইদিকে এখন। লেকে নিয়ে যাই চল
~ ওকে গুড আইডিয়া।
~ যাহহহ, আটা ময়দা মাখ গিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি
~ তোরে একটা লাথি দিব, আমি আটা ময়দা মাখি?
~ আচ্ছা ঠিক আছে, সরি ভুল হইছে, যা রেডি হ।
~ হু
দুই ভাইবোন বেরিয়ে পড়েছে ঘুরার উদ্দেশ্যে। গন্তব্য ধানমন্ডি লেক। দুই ভাইবোন সেখানে পৌঁছে যায়। একটু পরে সেখানে মাহির অবস্থান ঘটে সেখানে। অয়ন মাহিকে দেখে বুঝে যায় এটা তার বোনের কারসাজি।
~ ও এখানে কি করে বাবুইপাখি?
~ আমি কি জানি।
~ তুই জানিস না?
~ উহু
~ থাপ্পড় চিনিস?
~ তুই কামড় চিনিস?
~ এইজন্য তুই আমাকে এইখানে এনেছিস?
~ এমন করিস না ভাইয়া, মাহি অনেক ভালো মেয়ে।
~ চুপ থাকবি তুই।
~ ভাইয়া, প্লিজ।
~ ও যদি ভালো হতো, তাহলে এমন করে ঘুর ঘুর করতো না।
~ ভাইয়া প্লিজ, ওর সামনে কিছু বলিস না।
~ এখানে যাতে কোন রকম সিনক্রিয়েট না হয় বাবুইপাখি।
পর্ব ৭
ভাইবোনের ছোট খাটো মনোমালিন্য সরিয়ে রেখে দুইজন স্বাভাবিক হয়ে বসে থাকে। মাহি দূর থেকেই অয়নের ভাবমূর্তি বুঝে ফেলে। তবুও আজ সে রিস্ক টা নেবে। কারণ সে অয়নকে ভালোবাসে। সো সব আজকেই বলবে সে। যেভাবেই হোক।
~ অয়নি, কখন এলি?
~ মিনিট ১৫ হবে। এতো লেট হলো যে?
~ একটু কাজ ছিল।
~ বাবুইপাখি তোরা কথা বল আমি ওইদিকটায় আছি।
~ ভাইয়া বস না প্লিজ।
~ চুপচাপ থাক, কথা বল তোরা।
অয়নের এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছে না মাহি। ও অনেক আপসেট হয়ে পড়ে।
~ তোর ভাই নিজেকে মনে করে।
~ মাহি বাদ দে না প্লিজ।
~ আমি যে তাকে ভালোবাসি সে কি তা বুঝে না?
~ আরে এমন কিছুই না।
~ তুই আর কথাই বলিস না।
~ আমি কি করছি?
~ নিজের ভাইকে ম্যানেজ করতে পারিস না।
~ আজব তো, আর কি করবো, তোর সাথে যাতে কথা বলতে পারে তাই তো এইখানে নিয়ে এলাম ও কে। ও যেই তোকে এইখানে দেখছে ওমনি ওর মাথা গরম হয়ে গেছে।
~ আমার মাঝে কি এমন কিছুই নাই যে তোর ভাই আমার প্রতি আকৃষ্ট হয় না।
~ ব্যাপারটা আকৃষ্টের নয়, ভালোবাসার।
~ ওহ তার মানে কি বুঝাতে চাস আমার মাঝে ভালোবাসার কোন যোগ্যতাই নাই। কিরে বল নাই কোন যোগ্যতা।
~ আহহহহহহ মাহি, কি শুরু করে দিয়েছিস, কাদছিস কেন? চুপ কর
~ আজ এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। দেখি তোর ভাই কি করে না বলে আমাকে।
~ মাহি এটা পাবলিক প্লেস, এমন করিস না প্লিজ।
~ দেখে নিব এর শেষ কোথায়।
মাহি সোজা হেটে অয়নের দিকে চলে যায়। আর অয়নন্দিতা হাত দিয়ে আরেক হাত চাপছে। কি যেন হয়, কি যেন হয়। দুইটারই মাথা গরম। আল্লাহ জানে কি হয় এখানে।
আর অন্যদিকে মাহি সোজা অয়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অয়ন মোবাইলে কথা বলছিল, আর তখনই মাহি অয়নের বাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে কেটে দেয়। অয়ন তো এমনিতেই উগ্রমেজাজী তার উপরে এমন কান্ড। রাগ কন্ট্রোল করতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে, পাবলিক প্লেস বলে মাহি বেচে গেছে।
~ how dare you !
~
~ তোমার সাহস কিভাবে হয় এই কাজ করার।
~ আপনার সমস্যা কি?
~ কিসের সমস্যা,
~ কোন সমস্যা নাই আপনার?
~ নাহ, আমার কোন সমস্যা নাই, সমস্যা তোমার আছে, ওকে?
~ আমি আপনাকে ভালোবাসি অয়ন।
~ কিহ, কি করো তুমি আমাকে?
~ ভালোবাসি !
~ নিজেকে দেখেছো, একটা পুচকে মেয়ে তার আবার ভালোবাসা। এই মেয়ে আমার বয়স জানো? ৩২, ৩২ আমার বয়স, তোমার কত হবে বড়জোড় ২১ কি ২২। অয়নন্দিতার সাথের তুমি। এই মেয়ে লজ্জা লাগে না বান্ধবীর ভাইকে প্রেমের প্রস্তাব দাও
~ বয়স ফ্যাক্টর না, মন টাই আসল।
~ এক থাপ্পড়ে গালের সব দাত নাড়িয়ে দিব, ইডিয়েট কোথাকার।
~ আপনার আমাকে কেন ভালো লাগে না? কি নেই আমার মাঝে? বলেন, কি নেই, বলেন?
~ বুদ্ধি নাই, এইযে এই ঘট টা আছে না? এই ঘটে বুদ্ধি নাই। ওকে, হয়েছে?
~ এতো অহংকার, এতো অহংকার আপনার। ছি
~ চুপ থাকো চলে যাও তুমি। যাও চলে যাও।
~ যাবো না আমি, কি করবেন। একটা বাজে লোক ঔদ্ধত্য ভালো না
~ এখান থেকে যাবা তুমি।
~ নাহ যাবো না কি করতে পারবেন আমি, করেন
~ অয়নন্দিতাআয়ায়ায়া !
~ ও কে ডাকেন কেন? আমি আছি আমাকেই বলেন।
~ ফর গড সেক, চলে যাও।
~ যাবো না,
~ তুমি আসলেই খারাপ মেয়ে, অনেক খারাপ। কোন ভালো মেয়ে একটা ছেলের পিছনে এইভাবে ঘুরে না। বড়লোক ঘরের দুলারি তো, তাই ভালোবাসাকে হাতের ময়লা মনে করে।
~ আপনি এইসব কি বলেন? ভেবে চিন্তে ঠিকঠাক মতো কথা বলেন, ওকে?
~ আমার মাথা গরম হওয়ার আগে চলে যাও এখান থেকে।
~ এটা আপনার জন্য এনেছি।
~ কি এটা?
~ শার্ট
~ ওরে বাপরে বড়লোকের নবাবজাদি আবার আমার জন্য শার্ট এনেছে।
~ এইভাবে বলেন কেন?
~ এই শার্ট পড়লে আমার গায়ে ফোস্কা পড়বে ম্যাডাম।
~ ইচ্ছে হলে পরবেন না হয় ফেলে দিবেন ওকে?
এই বলে হাতের শপিং ব্যাগটা সাইডে ফেলে দেয় মাহি। আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি অয়ন। হাতটা শেষ পর্যন্ত উঠেই যায় মাহির গালে। ঠাটিয়ে এক চড় দিয়ে বসে মাহির গালে।
~ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া,
একই সময়ে সেখানে অয়নন্দিতার প্রবেশ ঘটে সেখানে। চড়ের দৃশ্য নিজ চোখে দেখে অয়নন্দিতা। প্রিয় বান্ধবীর গালে চড় তাও আবার নিজের ভাইয়ের হাতে। কি বলবে, কিছুই বুঝতে পারছে না অয়নন্দিতা। অয়নও আকস্মিক ভাবে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। এটা কি করলো সে। এইভাবে চড় দিয়ে বসলো সে মাহিকে। কাজ টা আর যাই হোক ঠিক করে নাই সে।
আর মাহি, সে তো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। জীবনে এই প্রথম কেউ তার গায়ে হাত তুললো। তাও আবার বান্ধবীর বড় ভাই। তাও আবার
লেকে। ব্যাপারটা খুবই আপত্তিজনক ছিল ওর কাছে। ছি ছি এইভাবে চড় খেতে হবে সে ভাবেও নি। হাতে তার অয়নের মোবাইলটা ছিল। নিজের জেদ কে আর বাগে আনতে পারেনি সে। এক আছাড় দিয়ে মোবাইলটা ফেলে চলে যায় সে।
~ মাহিইইইই, এইটা কি করলি।
~ তোর ভাইকে তার ক্যাটাগরির মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দিস, আসি রে।
~ মাহি শুন, মাহি, মাহি
~ আরে যাক যাক, বেয়াদব মেয়ে একটা আমার মোবাইলটা ভেঙে ফেলছে।
~ ভাইয়ায়ায়ায়ায়া থামবি তুই।
~ চিৎকার করিস কেন?
~ তুই ওরে থাপ্পড় দিলি কেন? ও কি এমন বলছে যে ওর গায়ে হাত তুললি আর তুই কোন অধিকারে ওর গায়ে হাত তুললি।
~ বেশ করছি, এই মেয়ে চরম বেয়াদব।
~ হ্যাঁ নিজে মনে হয় কত ভালো, তোর জন্য আমার আর ওর সাথে যদি কোন কিছু হয় তো দেখিস তুই
~ তুই ওর সাথে কথা বলবি না, এই মেয়ে নাম্বার ওয়ান বেয়াদব, তুইও ওর সাথে থেকে বেয়াদব হয়ে যাবি। আমার মোবাইল টা ভেঙে দিছে। অসভ্য মেয়ে একটা
অয়ন আর অয়নন্দিতা দুইজনে বাসায় চলে আসে। অয়নন্দিতা মুখ ভার করে আছে। অয়নের তো মেজাজ চটে আছে। অয়নের মেজাজ এমনিতেই অনেক রেগে থাকে আর আজ আরও এইসব হয়ে গেল।
~ কিরে তোরা ভাই বোন আনন্দ করে গেলি আর মুখ ভার করে এলি, কাহিনী কি?
~ কিছুই হয় নাই
~ কি কিছু হয় নাই,
~ হ্যাঁ কিছুই হয় নাই, যাও তো তুমি মা
~ যা ইচ্ছা হয়ে তোদের কর তোরা।
রাত ৯ টা। অয়নন্দিতা অয়নের রুমে আসে।
~ ভাইয়া
~ দেখ বাবুইপাখি, কিছু বলিস না প্লিজ
~ কাজ টা ঠিক করিস নাই
~ যা করছি বেশ করেছি। মেজাজটা খারাপ করে দিছে।
~ তাই বলে চড়, তাও লেকে।
সবাই দেখছিল
~ দেখুক
~ তুই এমন কেন ভাইয়া। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে রে
~ কিসের ভালোবাসা, বড়লোকদের আবার ভালোবাসা
~ মাহি মোটেও এমন না।
~ তুই ওর হয়ে সাফাই গাইতে আসছিস? নিজের ভাইয়ের কাছে।
~ ভাইয়া তা নয়
~ যা তুই এইখান থেকে।
অয়নন্দিতা উঠে চলে যেতে ধরলে ঠিক ওই সময়ে অয়নন্দিতার মোবাইলে কল আসে। এত রাতে কল, কে কল দিয়েছে আবার? মোবাইলের স্ক্রিনে আননোন নাম্বার টা দেখে অয়নন্দিতা অয়নের দিকে তাকায়।
~ এতো রাতে কে কল দিয়েছে?
~ জানি না ভাইয়া
~ রিসিভ করে দেখ
~ হু
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম, কে?
মোবাইল কানে রেখেই অয়নন্দিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অয়ন।
~ কে ফোন করেছে? কি হলো?
~
~ কিরে, কে ফোন করেছে?
~ ম,মা,মা,মাহির ভাই।
~ ওহ হো মহারানী এখন নিজের ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছে। বাহ গুড, তা কি বলেছে তার ভাই, আমাকে মারতে কোথায় আসবে?
~ ভাইয়া, মা,মা,মাহি, মাহি,
~ কি হয়েছে, মরে গেছে নাকি?
~ মা,মা,মাহির এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে ভাইয়া।
~ whattttttttt
~ এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো মাহির ভাইয়া।
পর্ব ৮
মাহির এক্সিডেন্ট এর খবর টা মেনে নিতে পারে নি অয়নন্দিতা সাথে অয়নও। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে অয়নের। খুব বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সে আজকে। প্রথমে তো যা তা বলে অপমান করেছে আর তারপর থাপ্পড় মেরে দিয়েছে। আর একটু আগেও তার মৃত্যুর কথা বললো, ব্যাপার টা বড়ই বেমানান লাগছে তার কাছে। অবশ্য বেমানান না অপরাধবোধ কাজ করছে।
~ আমি এখনই মাহির কাছে যাবো।
~ কিন্তু এত রাতে?
~ সমস্যা নেই তোকে যেতে হবে না, তুই এখানে থেকে ওর মৃত্যু কামনা কর।
~ বাবুইপাখি,
~ চিল্লাস না, একদম চিল্লাস না তুই, মেয়েটা কি এমন করেছিল? শুধু ভালোবেসেছিল। আজকের পর থেকে আমি নিজেই চাইবো না যে তোরা দুজনে এক হতে পারিস।
~ কোথায় যাচ্ছিস তুই।
~ তোকে নিশ্চয়ই বলবো না
~ আমি যাবো সাথে,
~ কোন প্রয়োজন নেই
~ বাবুইপাখি, বেশি করতেছিস কিন্তু, আর এত রাতে বাবা তোকে বেরও হতে দিবে না আর মায়ের খবর তো জানিসই নাকি।
~ ব্ল্যাকমেইল করতেছিস
~ গিয়ে রেডি হ, আমি আসতেছি।
দুইজনে মিলে বেরিয়ে যায়। গন্তব্যস্থল ঢাকা মেডিকেল। অয়নন্দিতা সেখানে পৌঁছে দেখে মাশফিক সেখানে বসে আছে। ছন্নছাড়া অবস্থা। মাহির মাও পাথর হয়ে বসে আছে। বাবা ডক্টরদের কথা বলায় ব্যস্ত। অয়নন্দিতা দৌড়ে গিয়ে মাহির মায়ের কাছে বসে। আর অয়ন চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
~ আন্টি কি করে এইসব হলো?
~ বিকালে কোথায় যেন গেলো দেখলাম যাওয়ার সময় বলে গেল মা দোয়া করো একটা কাজে যাই যাতে সফল হতে পারি যদি সফল হই তাহলে তোমাকে সব বলবো, আর পরে সন্ধ্যায় খবর আসে এক্সিডেন্ট করছে।
এই কথা শুনে অয়নন্দিতা তাকায় অয়নের দিকে আর অয়ন তাকায় অয়নন্দিতার দিকে। আসল ঘটনা তো ওরা ছাড়া কেউ জানে না। অয়নের এইবার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। এতটা খারাপ আচরণ না করলেও পারতো সে। এখন খুব আফসোস হচ্ছে তার। এইদিকে,
অয়নন্দিতার নজর যায় মাশফিকের দিকে। বোনের এমন অবস্থার সময় ভাইয়ের যে কি অবস্থা হয় তা একমাত্র ভাই জানে।
কিন্তু সবার সামনে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছে না সে মাশফিক কে। মাহিকে বেডে দেয়া হয়। কপালে ৪ টা স্টিচ ডান হাতের উপর পিঠে ৩ টা আর পায়ে গোড়ালির সাইডে ২ টা স্টিচ পড়ে। ব্লিডিং হওয়ার কারণে একটু দুর্বল আছে এছাড়া মোটামুটি সুস্থ আছে। সেলাইন দেয়া আছে।
মাশফিক নিজে থাকবে বলে মা বাবাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালে এখন তিন জন মাশফিক, অয়নন্দিতা আর অয়ন আছে। কারোই খাওয়া হয় নি। অয়ন হালকা কিছু নিয়ে এসে মাশফিককে খাওয়ায়। তবে অয়নন্দিতা খায় নি।
অয়নের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সে এক রকম মাটি কামড়ে পড়ে আছে। একবার মাহিকে দেখতে চায় সে। নিজের বোনকে সাইডে নিয়ে যায় সে। যদি বোন কিছু ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু অয়নন্দিতাও নাছোড়বান্দা সেও বলে দিয়েছে সে কোন ব্যবস্থা করতে পারবে না
~ তুই কি এমনি করবি বাবুইপাখি?
~ শুন ভাইয়া, মাহির এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী, বুঝলি?
~ বাবুইপাখি,
~ খবরদার চিৎকার করবি না। মাহির ভাইয়া যদি শুনে না তাহলে তোর খবর আছে তখন আমিও বাচাতে পারবো না তোকে।
~ তুই মাশফিককে নিয়ে সরে যা এখান থেকে, আমি কেবিনে ঢুকবো।
~ কিহহহহহহহহ, তোর সাহস তো কম না যে তুই এই কথা বলিস।
~ তুই যাবি, নাকি আমিই মাশফিককে বলবো।
~ ভাইয়া
~ হ্যাঁ যা বলেছি তাই করবো আমি।
~ আচ্ছা দেখি, কি করা যায়
ভাইয়ের সাথে না পেরে নিজেই মাশফিকের কাছে গিয়ে বসে। কি বলবে কিভাবে বলবে ভাষা পাচ্ছে না।
~ কিছু বলবা?
~ হু
~ বলো,
~ আসুন আমরা ওইদিকটায় যাই।
~ কিন্তু মাহি,
~ ভাইয়া আছে এখানে, ও দেখবে
~ মানে
~ মানে হচ্ছে, কিছু লাগলে ভাইয়া ডেকে দিবে, আসুন।
~ হুম।
অয়নন্দিতা মাশফিককে নিয়ে সাইডে চলে যায়। আর অয়নকে হাতের ইশারায় ভেতরে যেতে বলে দেয় অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতা চলে গেলেই অয়ন কেবিনের মধ্যে ঢুকে যায়।
কেবিনে গিয়ে দেখে মাহি বেডে শুয়ে আছে। হাতে পায়ে মাথায় ব্যান্ডেজ। হাতে সেলাইন দেয়া। চুপচাপ শান্ত মতো শুয়ে আছে মেয়েটা।
অয়ন গুটি গুটি পায়ে মাহির বেডের পাশে গিয়ে বসে। আস্তে করে মাহির হাতে হাত রাখে অয়ন।
~ মাহি, এই মাহি।
পর্ব ৯
~ মাহি, এই মাহি।
~ …..
~ মাহি, চোখ খুলো।
~ …..
অয়ন মাহির চোখ খুলার অধির অপেক্ষায়। আর অন্যদিকে মাশফিক অয়নন্দিতা হাসপাতালের এক পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নন্দিতা কোন জায়গা থেকে কি শুরু করবে আর কোথায় শেষ করবে তার জানা নেই। তবুও কিছু একটা বলতে হবে না হয় তো এখনি মাহির কেবিনে চলে যাবে, সেই ভেবে কিছু করতে হবে অয়নন্দিতা।
~ কিছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।
~ কিভাবে এমন হলো ওর, তাই ভেবে পাচ্ছি না আমি।
~ সবই আল্লাহর ইচ্ছা, টেনশন করবেন না, আল্লাহ আছে।
~ আমার এই একটাই বোন, ওর কিছু হলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যাবো।
~ খুব ভালোবাসেন মাহিকে তাই না?
~ হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি মাহিকে আমি। আমার যখন ৭ বছর তখন আমি মাহিকে প্রথম কোলে নেই। এই টুকু টুকু হাত পা ছিল ওর। আর আজ এইভাবে ও হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।
~ আল্লাহ ভরসা কিছু হবে না, চা খাবেন?
~ তুমি খাবে?
~ মন্দ হয় না।
~ আচ্ছা দাড়াও আমি নিয়ে আসি।
~ হুম
মাশফিক চলে যায়। আরও কিছুক্ষণ এইভাবে মাশফিককে আটকে রাখলে ভালো হবে। ওইদিকে অয়ন মাহির স্পেসও হয়ে যাবে।
~ মাহি, এই মাহি।
~
~ একবার চোখ খুলে দেখো।
~ হু
মাহির মুখ থেকে হু শব্দটা অয়নের জানে পানি এনে দিয়েছে। চোখের পানি গুলো চিক~চিক করছে অয়নের। এতটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতো সে। তার ধারণা তার জন্যই আজ মাহির এই অবস্থা। নিজেকে অনেক কষ্টের সামলে নিয়েছে সে। অপদিকে মাহির চোখের কোণ থেকে পানি বেয়ে পড়ছে হালকা। হয়তো অয়নকে দেখতে পাওয়ার খুশি অশ্রু হয়ে চোখ দিয়ে পড়ছে মাহির।
~ কেমন আছো মাহি?
~ দ,দে,দেখতেই তো পা,পা, পাচ্ছেন?
~ হ্যাঁ দেখতেই তো পাচ্ছি। এমন করলে কিভাবে?
~ জানি না।
~ জানো না?
~ উহু,
~ সত্যিই জানো না?
~ রাস্তা পার হতে নিয়েছিলাম আর পিছ থেকে একটা গাড়ি এসে মেরে দিলো।
~ তুমি কি জানো আমার কি অবস্থা হয়েছে?
~ কেন, আমি মরে গেলে তো ভালোই হবে। তাই না?
~ বেশি বুঝো তুমি। পুচকে মেয়ে একটা।
~ আমি পুচকে না অয়ন সাহেব। আমি শুধু ভালোবেসেছিলাম।
~ আই এম সরি মাহি।
~ মরে গেলে হয়তো ভালো হতো। কাউকে আর জ্বালাতন করতাম না
~ খুব বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি তাই না?
~ মা বাবা কোথায়? ভাইয়া কোথায়? অয়নি এসেছে?
~ সবাই এসেছিল, আন্টি আংকেল কে। মাশফিক বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে, বাবুইপাখি মাশফিকক নিয়ে একটু সাইডে গেছে যাতে আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারি।
~ ওহ। আমার সাথে কিসের কথা। আমি তো ভালো মেয়ে না, খারাপ মেয়ে।
মাহির কথায় অভিমানের ছাপ। বেশ বুঝতে পারছে অয়ন। হয়তো অভিমানটা অয়নের প্রতিই ছিল। অয়ন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। চট করেই মাহির গালে নিজের হাতটা রাখে। অয়নের এমন ব্যবহারে অনেকটাই অবাক হয় মাহি।
চুপ করে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়ন আলতো করে মাহির গালে হাত রেখে উঁচু হয়ে মাহির কপালে চুমো দিয়ে দেয়।
~ মাহিইই,
মাশফিক এমন ডাকে হকচকিয়ে উঠে মাহি অয়ন। সাথে অয়নন্দিতাও চমকে যায়। ঠিক এমন সময়তেই মাশফিক কেবিনে চলে আসে সাথে অয়নন্দিতাও। মাশফিক অয়নন্দিতা উভয়েই অবাক। অয়নন্দিতা অবাক তার ভাইকে এইভাবে দেখে আর মাশফিক অবাক এই কাহিনীর শুরু কবে থেকে এটা ভেবে। আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে অয়নন্দিতার দিকে তাকায় মাশফিক। তার দু’চোখে একটাই প্রশ্ন তাও অয়নন্দিতাকে কেন্দ্র করে।
“এইসবের শুরু কবে থেকে, তাহলে এই জন্যই অয়নন্দিতা তুমি আমায় সাইডে নিয়ে গেছিলে?”
পর্ব ১০
~ এইসবের শুরু কবে থেকে মাহি?
~
~ কি হলো, প্রশ্ন করেছি আমি?
~ আ,আ,আস,আসলে,
~ আপনি চুপ করেন মিস অয়নন্দিতা। এইবার বুঝতে পারলাম, আপনি আমায় কেন সাইডে নিয়ে গিয়েছিলেন।
~ মাশফিক, আমি বলছি,
~ ওয়েট মিষ্টার অয়ন, আপনাকে জিজ্ঞাসা করি নি আমি। জিজ্ঞাসা করেছি আমার বোন কে। আপনি কথা পরে বলবেন।
~ ভাইয়া, শুনো।
~ হ্যাঁ বল, শুনতেই তো চাই।
~ ভা,ভা,ভাইয়া, আমি অয়নকে ভালোবাসি।
~ whattttt,
~ হ্যাঁ ভাইয়া, প্লিজ আমি অয়নকে ভালোবাসি।
মাশফিক খপ করেই অয়নের কলার ধরে বসে।
~ How dare you
~ মাশফিক সাহেব, ছাড়ুন আমার ভাইকে।
~ ভাইয়া ছাড়ো ও কে।
~ ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন আমার ভাইকে।
~ তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার বোনের দিকে হাত বাড়ানোর?
~ For your kind information, আমার ভাই আপনার বোনের দিকে হাত বাড়ায় নাই আপনার বোন আমার ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে।
~ কিহহহহ,
~ আহহহহ বাবুইপাখি, চুপ কর তুই।
~ তুই চুপ কর ভাইয়া। ওনার সাহস হলো কি করে আমার ভাইয়ের কলার ধরার। মিষ্টার মাশফিক সাহেব, আপনার বোন পাগলের মতো ভালোবাসে আমার ভাইকে। আর গতকাল বিকেলে ও আমার আর আমার ভাইয়ের সাথেই দেখা করতে লেকে গিয়েছিল।
সেখানে ওরা দু’জন কথা বলে। মাহির এক কথা সে আমার ভাইকে ভালোবাসে আর আমার ভাইয়ের এক কথা সে এত বড়লোক জায়গায় যেতে চায় না। এ নিয়ে আমি আমার ভাইকে অনেক বুঝিয়েছি যাতে রিলেশন কন্টিনিউ করে কারণ মাহি অত্যন্ত ভালো মেয়ে। কিন্তু এখন এই মুহুর্ত থেকে আমি নিজে ওদের এই রিলেশন মানবো না।
যেই রিলেশনশিপ এর জন্য আমার ভাইয়ের কলারে হাত পড়ে সে রিলেশনশিপ এর কোন প্রয়োজন নেই।
~ অয়নি,
~ বাবুইপাখিইইইই,
~ অবাক হওয়ার কিছুই নাই ভাইয়া, অবাক হওয়ার মতো কিছু বলি নি আমি মাহি। আগে নিজে সুস্থ হয়ে ওঠ। তারপর তোর এই বড়লোক ভাই আর তোর বাবা মাকে রাজি করিয়ে আমাদের বাসায় পাঠাস, তারপর আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমার ভাইয়ের বউ বরণ করবো।
চলে আয় ভাইয়া, আর হ্যাঁ মিষ্টার মাশফিক সাহেব, আমার ভাই আপনার মতো না বাপের টাকায় ফুটানি করে ভার্সিটির সামনে আড্ডা মারে না। রেগুলার অফিস করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ভালোই রোজগার করে আমার ভাই। আপনাদের মতো অঢেল না থাকলেও অভাব নেই কোন কিছুরই। ভালো থাকবেন, ভাইয়া চল।
মাশফিক এর মুখের উপর অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে অয়নন্দিতা চলে যায় সেখান থেকে। আর মাশফিক হা করে তাকিয়ে থাকে অয়নন্দিতার দিকে। মাহি না চাইতেও কাঁদছে।
এক সপ্তাহ পর,
~ বাবুইপাখি, আছিস?
~ হ্যাঁ আয় ভাইয়া।
~ কি করিস?
~ এই তো শুয়ে ছিলাম, কিছু বলবি ভাইয়া?
~ আচ্ছা এক সপ্তাহ হয়ে গেলো, না মাহির কোন খবর আছে না তুই ভার্সিটি যাচ্ছিস। আমার খুব টেনশন হচ্ছে রে
~ টেনশন নিস না, যা হবার হবে। ওই লোকের সাহস হয় কি করে তোর কলার ধরার।
~ কিন্তু আমি তো মাহিকে ভালোবেসে ফেলেছি।
~ বাহ বাহ এতদিন কই ছিল এই ভালোবাসা।
~ আচ্ছা শুন মাহির নাম্বার আছে?
~ নাহ, ডিলিট করে দিয়েছি।
~ কেন?
~ রাগে, আচ্ছা বাদ দে, অফিসে যাবি না?
~ এই তো বের হবো।
~ আচ্ছা যা, আল্লাহ হাফেজ।
~ আল্লাহ হাফেজ।
অয়নন্দিতা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। একদিকে ভাইয়ের ভালোবাসা, অন্যদিকে ভাইয়ের আত্নসম্মান।
ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে ভাইয়ের গায়ে হাত উঠেছে যা তার একদম পছন্দ হয় নি। আর এখন ভাই নিজেই মাহিকে ভালোবেসে ফেলেছে। সব তালগোল পাকিয়ে গেছে অয়নন্দিতার। ভেবেছিল এক রকম হয়ে গেছে এক রকম।
অয়নের কোন কাজে মন নেই। আজকে এক সপ্তাহ ধরে কাজের দিকে কোন খেয়াল নেই। চারদিকে শুধু মাহির চেহারা ভেসে ওঠে অয়নের চোখে। রিক্সায় বসে আছে অয়ন, মন আছে মাহির কাছে৷। কেমন আছে মাহি?
শরীরের কি অবস্থা? ও কে কি সবাই বকা দিয়েছে? ও কি সবাইকে বুঝাতে পেরেছে? এই সব প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে অয়নের। এমন সময় অফিসের ফোন আসে অয়নের মোবাইলে।
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম রাশেদ ভাই।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, অয়ন ভাই কোথায় আছেন?
~ এই তো ভাই রাস্তায়, জ্যামে আটকে গেছি।
~ কতক্ষণ সময় লাগবে আর?
~ এই তো ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো ইনশাআল্লাহ, কেন ভাই?
~ আপনার খোঁজ করতে দুই/তিন জন লোক এসেছে। একজন মেয়ে অন্য বাকি দুইজন পুরুষ, একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
~ আচ্ছা ভাই।
কে আসতে পারে অফিসে? এই ভাবতে ভাবতে অফিসে পৌঁছায় অয়ন।
~ স্যার, আপনার কেবিনে ওনারা আছেন?
~ চা পানি দিয়েছেন শাহাদাৎ ভাই?
~ জ্বি স্যার। আপনি যান
~ ওকে
অয়ন কেবিনে ঢুকতেই ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে যায়।
~ আপনারা?
পর্ব ১১
~ আপনারা?
~ হ্যাঁ, কেমন আছো অয়ন?
~ ভালো তুমি?
~ ভালো।
~ এরা কারা?
~ ইনি আমার বাবা আর ইনি আমার বোনেত হাজবেন্ড।
~ তা আমার অফিসে এইভাবে হঠাৎ?
~ হ্যালো ইয়াংম্যান, আমরা বসে কথা বলি?
~ জ্বি অবশ্যই, বসুন।
~ অয়ন, কিছু ভেবেছো কি?
~ কি ব্যাপারে?
~ কেন তুমি জানো না?
~ নাহ, বলো তো কি ব্যাপারে?
~ দেখো অয়ন, ভনিতা করো না আমি তোমায় ভালোবাসি। আর তা তোমাকে এক হাজার বলেও লাভ হয় নি, তাই বাবা আর ভাইয়া কে নিয়ে এলাম। বাবা এখানেই তোমার সাথে কথা সেড়ে নেবে।
~ ওয়েট ওয়েট, এক মিনিট, সাজি আর ইউ ম্যাড?
~ হোয়াট?
~ হ্যাঁ, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, তুমি ভাবলে কি করে যে আমি এখানে বসে এইসব ম্যাটার ডিসকাস করবো, আর হ্যাঁ আংকেল আপনাকে বলি, আমি কোন এতিম কিংবা অনাথ না, আমার বাবা মা বোন সবাই আছে, এইসব ব্যাপার আমি একা একা হ্যান্ডেল করবো না। সো এটা আমার অফিস, আপনি আসতে পারেন।
সাজি, নাম নূরে সাজি। অয়নের ভার্সিটির দুইবছরের জুনিয়র সে। সে ভার্সিটি লাইফ থেকেই অয়নের পিছনে পড়ে আছে। বড়লোকের আদরের দুলারি মেয়ে। তাই জেদ টাও বেশি। যা চায় তাই পায় এবং তা জোড় করেই হোক না কেন।
~ ইয়াংম্যান, আমার তোমার ভালো লেগেছে। আমার সাজির জন্য তুমিই পারফ্যাক্ট। তাই তোমার কত টাকা চাই বলো আমি তোমায় সব দিব কিন্তু সাজিকে তোমায় বিয়ে করতে হবে।
~ দেখুন আংকেল আপনি বয়সে আমার বেশ বড়। আমার বাবার মতো।
আমি চাইনা আপনার সাথে কোন খারাপ ব্যবহারে যেতে। আর সাজি আপনাকে বলে নি যে, আমি সাজিকে কখনোই ভালোবাসার কথা পর্যন্ত বলি নি ইনফ্যাক্ট আমি তো ওকে ওই নজরে দেখিই নাই কখনো।
~ অয়ন,
~ আস্তে সাজি, দিস ইজ মাই অফিস, ওকে? ভুলে যেও না।
~ তোমার অফিসের জি এম জাফর সাহেব, রাইট?
~ বাহ বেশ ভালো তো আংকেল, জি এম পর্যন্ত চলে গেছেন। কি বলুন তো আংকেল আমি না এত স্বস্তা ভয় পাই না।
আর আপনাদেরকে তো একদমই না। জি এম কে বলে চাকরি নেয়ার হুমকি দিবেন আর আমি চাকরির ভয়ে রাজি হয়ে যাবো তা একদমই ভুল ধারণা। আপনার চিন্তা ধারা সেখানে গিয়ে শেষ হয় যেখান থেকে আমার চিন্তা ধারার উদ্ভব ঘটে। আমি জানতাম, সাজি এমন কিছু একটা করবে। যার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম আমি। আশা করি আমার অবস্থান টা কোথায় আপনারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন, সো নাও দয়া করে আসতে পারেন।
~ এক্সকিউজ মি, মিষ্টার অয়ন, আমি কি দুইটা কথা বলতে পারি?
~ দুলাভাই, রাইট?
~ জ্বি
~ দেখুন ভাইয়া কিছুই বলার নাই আমার। এইসব সাজির পাগলামি মাত্র আর কিছুই না। ও কে নিয়ে যান, প্রয়োজন পড়লে ডক্টর দেখান।
~ হাউ ডেয়ার ইউ অয়ন? তুমি কি বলতে চাও, আমি পাগল?
~ বলতে চাইছি না, তোমার কার্যকলাপে তাই মনে হচ্ছে। শুনো সাজি আমি বার বার এক কথা বলে ক্লান্তু হয়ে গেছি। প্লিজ ফর গড সেইক, এইবার থামো।
~ দেখলে বাবা দেখলে, ও কিভাবে বললো, তুমি দেখলে বাবা। ও আমায় পাগল বললো।
~ আহহহহহহ সাজি স্টপ ইট। এটা অফিস, অয়নের বাসা নয়। এমন করছো কেন?
~ তুমি আবার কি বলো, ভাইয়া। আমি কি করেছি। আমি অয়নকেই বিয়ে করবো মানে অয়নকেই বিয়ে করবো
~ আহহব সাজি, মাই ডিয়ার, কুল ডাউন বাবা। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
~ আংকেল, ভাইয়া, আপনারা এখন আসতে পারেন।
~ বাবা ও ঠিকই বলছে। চলুন আপাতত আমরা এখন উঠি। পরে এ নিয়ে কথা বলবো।
~ পরে না, কোন পরে না ভাইয়া। যা হওয়ার এখনই হবে এই মুহুর্তেই হবে। অয়ন কান খুলে শুনে রাখো বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো
মাইন্ড ইট
~ ভাইয়া একে নিয়ে যান প্লিজ।
~ বাবা আপনি কিছু বলুন।
~ সাজি মা, চলো আমরা আগে বাসায় যাই। কথা বলি, তারপর ডিসিশন নিবো যে কি করা যায়।
~ শুনো অয়ন, বউ হয়ে আমি তোমার ঘরেই যাবো। কথাটা মনে রেখো তুমি।
এই বলে ওরা অয়নের কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। মেয়েটা বদ্ধ উন্মাদ, অয়ন বলতে অজ্ঞান। এর আগে তিনবার সুইসাইড এট্যাম্পড করেছিল। শুধু মাত্র অয়ন অয়ন করে। আর আজ ডিরেক্ট অফিসে চলে আসছে। অয়নের সব জুড়ে এখন মাহির অবস্থান। এমতাবস্থায় এইসব কিছুই বিষের মতো লাগছে অয়নের। মেয়েটাকে ইচ্ছামতো থাপড়াতে পাড়লে অয়নের জ্বালা মিটতো এখন। কিন্তু উপায় নেই। সব ভাবনার জলাঞ্জলি দিয়ে কাজে মন দেয় বেচারা।
অন্যদিকে, অয়নন্দিতা ভাবছে মাহির কথা। ভাবছে মাশফিকের কথা। সেইদিন হাসপাতালে খুব বেশি বলে ফেলেছে কি মাশফিককে সে? নাহ কিচ্ছু বেশি বলে নি সে, যা বলেছে ঠিক বলেছে। ওনার কথাটা শুনা উচিত ছিল। সব কিছু না শিনে এইভাবে ধুমধাম করে অয়নের কলার ধরার দরকার ছিল না। এইসব ভাবছে আর টেনশন করছে অয়নন্দিতা। কিন্তু মাহি, ওর তো কোন দোষ নেই ও কে কেন শাস্তি পেতে হবে। সাথে সাথে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে বসে অয়নন্দিতা।
দুই থেকে তিন বার রিং হওয়ার পরে ফোন টা রিসিভ করা হয়।
~ হ্যালো মাহি।
~ হু,
~ কেমন আছিস?
~ ভালোই,
~ রেগে আছিস?
~ উহু,
~ কি হয়েছে?
~ রাখি, ভালো থাক।
~ শুন, হ্যালো মাহি, হ্যা,
~ টুট
~ লাইন কেটে দিল। কি ব্যাপার, বাসায় কিছু হয়েছে নাকি? মাশফিক সাহেব কি তাহলে ওনার বাবাকে সব বলে দিয়েছে?
টেনশন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে অয়নন্দিতার। অয়নন্দিতা ভেবে চিন্তে ফোন দেয় স্বর্নালিকে। স্বর্নালি তার আরেক ফ্রেন্ড।
~ হ্যালো স্বর্নালি,
~ হ্যাঁ বল, কিরে কেমন আছিস?
~ হ্যাঁ ভালো আছি, শুন না একটা হ্যাল্প করতে পারবি?
~ হ্যাঁ বল না, কি হয়েছে?
~ শুন না, পিয়াল ভাইয়ার নাম্বারটা দিবি একটু?
~ পিয়ালের নাম্বার?
~ হ্যাঁ,
~ আচ্ছা, কিন্ত কি হয়েছে, কোন সমস্যা?
~ পরে বলবো, তুই ভাইয়ার নাম্বার টা ম্যাসেঞ্জারে সেন্ড করে দে, কেমন?
~ আচ্ছা।
পিয়ালের নাম্বার এর অপেক্ষায় আছে অয়নন্দিতা। একবার নাম্বারটা পেলেই কাজ করতে পারবে।
এমন সময় ম্যাসেঞ্জারের টোন টা বেজে ওঠে। অয়নন্দিতা ম্যাসেঞ্জার অন করে দেখে পিয়ালের নাম্বার।
চটজলদি ফোন দিয়ে বসে পিয়ালকে।
প্রায় ৩৫ মিনিট কথা বলে কাজ সেড়ে নেয় অয়নন্দিতা। এখন একটু শান্ত হতে পেরেছে সে।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকে অয়নের মুড অফ। অফিস থেকে এসে নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে সে। ল্যাপটপ সামনে ঠিকই আছে কিন্তু কাজে মন নেই তার।
মাথায় সাজির কার্যক্রম চলছে। কি করেছে মেয়েটা আজ। আরেকটু হলে অফিসে সবার সামনে মান সম্মান যেতে বসেছে। বাবাও যেমন এই মেয়ের। মেয়ে বললো আর ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে এলো। মাথায় কিছুই আসছে না অয়নের।
চারটি মানুষ চারদিকে কষ্ট পাচ্ছে, একদিকে অয়নন্দিতা অন্যদিকে মাশফিক। একদিকে মাহি তো অন্যদিকে অয়ন। অয়নের মাহিকে না পাওয়ার কষ্ট তেমনি সাজির পাগলামির টেনশন। দুইয়ে মিলে অয়নের জীবন বিষের ন্যায়ে হয়ে গেছে।
পর্ব ১২
কয়েকদিন পর,
~ ভাইয়া কাল তো ফ্রী আছিস তাই না?
~ হ্যাঁ কাল অফ ডে, কেন?
~ ভাইয়া, কাল আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবি?
~ কোথায় যাবি।
~ যাবো এক জায়গায়, একা যাবো না। তাই বলছিলাম যদি তুইও সাথে নিতি, ভালো হতো।
~ আচ্ছা একা যাওয়ার দরকার নাই, আমি যাবো। কিন্তু যাবি কোথায়?
~ যেতে যেতে বলবো।
~ আচ্ছা।
ভাইকে রাজি করিয়ে অয়নন্দিতা রুম ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু সেই মুহুর্তেই ভাইয়ের চেহারায় চিন্তার আভাস দেখতে পায় অয়নন্দিতা। এতটা চিন্তিত সে আগে দেখে নাই অয়নকে। ধীর পায়ে ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যায় অয়নন্দিতা।
~ ভাইয়া, এই ভাইয়া।
~ হু,
~ কি হয়েছে রে?
~ কোথায়? কোথায় কি হবে?
~ এত চিন্তিত লাগছে যে তোকে।
~ কই, নাহ আমি ঠিকাছি।
~ মুচকি হাসির নিচে চিন্তাটাকে ধামাচাপা দেয়াটা তোর থেকে ভালো মনে হয় আর কেউ পারে না ভাইয়া।
~ আরে নাহ বাবুইপাখি, আমি ভালো আছি।
~ ওহ, সত্যিটা বলবি না, তাই তো?
~ কি বলবো, কিছুই তো নেই রে।
~ বলবি না তো?
~ সত্যিই কিছুই হয় নাই।
~ যা ভালো বুঝিস তুই।
~ হু, তুই অনেক পেঁকে গেছিস রে।
~ হ্যাঁ, তোর বোন তো তাই।
~ ভাগ এইখান থেকে।
বোনকে আড়াল করে গেছে অয়ন। কিন্তু ওর মনের কথা ওই জানে। সাজির ব্যাপারটা বার বার ভাবাচ্ছে অয়নকে।
যথারীতি পরদিন,
অয়নকে নিয়ে অয়নন্দিতা বেরিয়ে যায়। রিক্সায় দুই ভাই বোনের কিছুক্ষনের খুনসুঁটিও চলে। ভাই বোন হলেও তারা মিশেছে বন্ধুর মতো। দুইজন দুইজনের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়েছে। অয়ন যাচ্ছে তো অয়নন্দিতার সাথে কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা ই অজানা তার কাছে।
~ হ্যাঁ রে বললি না তো,
~ কি বলবো?
~ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
~ যাদুর বাক্স খুলতে যাচ্ছি।
~ কিহহহহহ,
~ হ্যাঁ যাদুর বাক্স খুলতে যাচ্ছি আমি আর তুই।
~ ধুর, মজা করিস না তো, বল না প্লিজ কোথায় যাচ্ছি আমরা।
~ যাচ্ছি এক রেস্টুরেন্টে।
~ কোন রেস্টুরেন্টে?
~ KFD তে,
~ ওহ, তার মানে আজকে সব টাকা শেষ আমার।
~ তুই যে জনম কিপটা, তা আমি জানি।
~ হুর,
~ ওই কিপটা নাম তুই, চলে আসছি।
~ শুন আল্লাহ সইবে না আমাকে কিপটা বলিস, গত মাসে ১ ভরি দিয়ে চেইন দিছি তাও লকেট দিয়ে তারপরও বলস আমি জনম কিপটা। দূরে থাক তুই
~ সর সর, তোর চেইন তোর বউকেই দিয়ে দিব।
~ দেখা যাবে, নাম ফাযিল।
~ আফামনি আর ভাইয়া ভাইবোইনে ঝগড়া পরে কইরেন আগে নামেন আর আমার ভাড়াডা দেন আমি যাইগা।
রিক্সাওয়ালার কথা শুনে ওরা ঝগড়ার দিক থেকে মুখ ঘুরালো। মিটিয়ে অয়ন আর অয়নন্দিতা রেস্টুরেন্টের ভেতরে যায়। সেখানে গিয়ে অয়নের চোখ চড়কগাছ।
সামনের টেবিলে দুজন বসা। যাদের দেখে অয়ন অনেকটাই অবাক হয়ে যায়।
~ মাহি
মুচকি হেসে মাহি দাঁড়িয়ে যায়। আর তার পাশে মাশফিকও হেসে দাঁড়িয়ে যায়। অয়ন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন। অয়নন্দিতাও মুচকি মুচকি হাসছে।
পর্ব ১৩
অবাকের অনেক দূর অবদি পৌঁছে যায় অয়ন। এইভাবে চোখের সামনে মাহি আর তার ভাইকে দেখে অনেকটাই অবাক অয়ন। আবার পাশে নিজের বোনও হাসছে। সব মিলিয়ে অনেকটাই অবাক সে। এমতাবস্থায় বোন হাত ধরে টেনে দিয়ে বলে,
~ কিরে চল।
~
~ ওই ভাইয়া, আরে ভূত দেখলি নাকি। আরে এরা ভূত না, তোর ভালোবাসার মানুষ তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চল চল।
~ বাবুইপাখি, এইসব কখন, কিভাবে করলি, কিছুই বুঝতে পারছি না আপনি।
~ তোকে বুঝতে হবে না। ভালো যখন বাসিস তাহলে আলাদা থাকবি কেন, চল
অয়নন্দিতা অয়নের হাত ধরে টেনে মাহির সামনে নিয়ে গিয়ে দাড় করায়।
~ নেহ তোর ভালোবাসার মানুষকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিলাম।
~ থ্যাংকস অয়নি, তুই না থাকলে এইসব কিছুই সম্ভব হতো না
~ ধুর, তোর ভালোবাসার মানুষ আমায় খুব জ্বালায় একবার আমাদের বাসায় আয় সব সুদে আসলে শোধ তুলবো আমি হ্যাঁ,
ওদের নিছক দুষ্টামিতে অনেকটাই অভিভূত হয়ে আছে মাশফিক। অয়নন্দিতাকে আড়চোখে দেখছে সে। একটা মেয়ে কতটা নিষ্পাপ হতে পারে। গত দুইদিন আগে পিয়ালের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করে অয়নন্দিতা মাশফিকের সাথে।
দুইদিন আগে,
~ আসসালামু আলাইকুম,
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসো।
~ ধন্যবাদ, অনেক্ষন বসে আছেন বুঝি?
~ নাহ ঠিকাছে ব্যাপার না।
~ আসলে বাসা থেকে এইভাবে তো বের হওয়া যায় না তাই প্ল্যানিং করে বের হওয়া লাগে, তাই লেট হলো।
~ তা কি বাহানায় বের হলে?
~ বলেছি লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।
~ ওহ আচ্ছা, তো বলো, কেন ডেকেছিলে এখানে?
~ কিছু বলার জন্য।
~ হুম শুরু করো,
~ আসলে হাসপাতালে যা কিছু হয়েছে তার জন্য আই এম সরি। আপনি যখন আমার ভাইয়ের কলার ধরেছিলেন আমি সহ্য করতে পারি নি তাই উলটাপালটা অনেক কথাই বলে ফেলেছিলাম। যা আমার বলা উচিত হয় নি। দেখুন মাহি আমার ভাইকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো
প্রথম প্রথম আমায় বললে আমি ভাবতাম ও হয়তো মজা করে বলে পরে আস্তে আস্তে বুঝলাম যে ও আসলেই আমার ভাইকে ভালোবাসে। আর মাহির এক্সিডেন্ট এর দিন বিকেলে মাহি আমার আর ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিল। সেখানে তাদের দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয় আর মাহি রেগে চলে যায়। আর তারপরই আমরা মাহির এক্সিডেন্ট এর খবর পাই। হয়তো আমার ভাইয়ের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ভালোবাসাটা তখনই জেগে ওঠে। যেই ভালোবাসা শুধুই মাহির জন্য।
মাশফিক সাহেব আমি আপনাকে কথা দিতে পারি আমার ভাই মাহিকে খারাপ রাখবে না। হয়তো অঢেল টাকার বিছানায় আপনার বোনকে শোয়াতে পারবে না কিন্তু সুখের কমতি থাকবে না আপনার বোনের।
~ আমি কি করে বিশ্বাস করবো অয়ন আমার বোনকে সুখে রাখবে?
~ বিশ্বাস তো আপনাকেও করা যায় না আপনি অন্য কোন মেয়েকে যদি বিয়ে করেন তাহলে কি গ্যারান্টি যে তাকে আপনি সুখে রাখবেন?
~ মানে?
~ মানে এই যে মিষ্টার মাশফিক, সুখ দুঃখ সব হচ্ছে আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম থাকলে সুখ হবে না হলে আপনিও দেখবেন আমিও দেখবো। তবে বিশ্বাস রাখতে পারেন আপনার বোন কষ্টের মধ্যে থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
~ কি করতে চাচ্ছো বলো।
~ কিছুই না, আমি চাইলে তো হবে না আপনারও চাইতে হবে।
~ আচ্ছা বলো, কি করতে হবে বলো।
~
গত দুইদিন আগের কথা গুলো এক মুহুর্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাশফিকের। মাশফিক আর অয়নন্দিতা মিলেই সব ঠিকঠাক করে।
মাশফিক সেইদিনের ব্যবহারের জন্য খুব লজ্জিত হয়ে আছে। অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পর্যন্ত লজ্জা হচ্ছে তার।
~ অয়ন,
~ হ্যাঁ
~ আই এম সরি,
~ কিসের জন্যে?
~ ওইদিনের ব্যবহারটা আসলেই করা উচিত হয় নি আমার।
~ ইটস ওকে, আমার বোন হলেও আমি তাই করতাম হয়তো। সরির প্রয়োজন নেই। বসো
~ হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই বসো আজকে এই জনম কিপটা ট্রীট দিবে, তাই না ভাইয়া?
~ তোর মাথা, ফাযিল
~ তুই ফাযিল।
~ কেমন আছো মাহি?
~ ভালো, আপনি?
~ দেখছোই তো কেমন আছি।
ওরা চারজন বসে গল্প করছে, হঠাৎ অয়নের ফোন বেজে ওঠে।
~ এক্সকিউজ মি, আসতেছি একটু
অয়ন সাইডে এসে মোবাইল দেখে আর তখনই দেখতে পায় ফোন টা আর অন্য কেউ নয় সাজিই করেছে। অসময়ে সাজির ফোনটা একটু বেশিই প্রবলেম করে। তাই লাইন কেটে দিয়ে মোবাইলের ফ্লাইট মুড টা অন করে দিয়েছে।
কোন নতুন খেলায় মত্ত্ব আছে সাজি। তা কারোই জানা ছিল না। বিরাট বড় ঝড় নিয়ে আসতে শুরু করে দিয়েছিল। সাজি নামের ঝড় টা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছিল অয়ন~মাহি, অয়নন্দিতা~মাশফিকের জীবনে।
পর্ব ১৪
সব কিছুই মোটামুটি ঠিকঠাক। কিন্তু কোথাও যেন সব কিছু ঠিক হয়েও ঠিক নেই। অয়ন মাহির জীবনে তো সুখের রঙ লেগেছে কিন্তু মাশফিকের জীবনে সব রঙ ফিকে হয়ে আছে। মনের কথা মনেই রয়ে গেছে তার। এখন অবদি মনের কথা তার মনেই থেকে গেছে মুখে আর আসে নাই।
এইদিকে অয়ন মাহি মেতে উঠেছে তাদের প্রেমে। দিন ভালোই কাটছে তাদের। রাত জেগে মোবাইলে কথা বলা। ছুটির দিন গুলোতে আড্ডা দেয়া সব কিছুই ভালো চলছে।
এরইমাঝে একটা বড় রকমের ঝড় চলে আসে মাহির জীবনে। একদিন হঠাৎ করেই মাহির ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। কয়েকবার ফোন বেজে যাওয়ার পর মাহি ফোন রিসিভ করে,
~ হ্যালো, কে বলছেন?
~ তুমি কি মাহি?
~ হ্যাঁ মাহি বলছি, কে আপনি?
~ আমি কে তা না জানলেও চলবে, আপাতত একটা কথা বলি মন দিয়ে শুনো। অয়নকে ছেড়ে দেও?
~ কিহহহহহহ,
~ চিল্লাও কম, যা বলছি তাই করো, অয়নকে ভুলে যাও।
~ আপনি কোথাকার কে? যার কথায় আমি অয়নকে ছাড়বো।
~ আমি সাজি, এইবার অয়নকে জিজ্ঞেস করে দেখবে কে আমি? ওকে
~ হ্যালো, হ্যালো, হ্যা,
~ টুট,টুট,টুট
মাহির মাথা খারাপ হয়ে যায় এই ভেবে যে সাজি টা কে? আর অয়নের মুখে তো একবারের জন্যেও সাজি নাম টা শুনে নি মাহি। তাহলে এই সাজি কোন সাজি। আর তার নাম্বারই বা পেল কিভাবে?
~ সাজি কে অয়ন?
পার্কে মুখোমুখি বসে মাহি অয়নকে প্রশ্ন করে। আর মাহির মুখে সাজি নামটা শুনে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে চলে যায় অয়ন। কি উত্তর দিবে মাহিকে সে এখন।
~ কি হলো অয়ন? উত্তর দাও, সাজি কে
~ হঠাৎ ওই প্রশ্ন করছো?
~ অয়ন উত্তর চাইছি, প্রশ্নের বদলে পালটা প্রশ্ন শুনতে চাই না।
~ বলো কি জানতে চাও,
~ সাজি কে?
~ সাজির কথা শুনলে কোথা থেকে?
~ আমায় কল করেছিল কাল কে।
~ কিহহহ,
~ হ্যাঁ, কাল কথা হয়েছে। বলা নেই কওয়া নেই, ডিরেক্ট বলে অয়নকে ছেড়ে দেও, অয়নকে ভুলে যাও। মগের মুল্লুক নাই এইসব। এখন বলো কে ইনি?
~ সত্যিটা শুনতে পারবে তো?
~ হ্যাঁ, পারবো না কেন? বলো
~ তাহলে কথা শেষ হওয়া না অবদি একদম অগ্রিম কথা বলবে না। আমি শেষ দিব তারপর তোমক্র যা ইচ্ছা বলবে, ওকে?
~ ওকে।
~ সাজি হচ্ছে সেই মেয়ে যে আমায় পাগলের মতো ভালোবাসে। সেই ভার্সিটি থেকে। ভার্সিটিতে আমার টু ইয়ার জুনিয়র ছিল মেয়েটা। সেখান থেকেই লাইন মারতো ও কে যাস্ট আমার বিরক্ত লাগতো বলে এড়িয়ে চলতাম।
একচুয়ালি আমার কাছে এই মেয়েকে মানসিক রোগী বলে মনে হয় কারণ, এ যে কখন কি করে বুঝা বড় দায়। বহু কোটি টাকার সম্পদের মালিক এর মেয়ে সে তার উপরে ছোট মেয়ে তাই বাপ দুলাভাই ধরে আমার অফিসে চলে আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
~ আমার বাবার থেকেও বড়লোক ওর বাবা?
~ বলেছিনা কথার মাঝে কথ বলতে না, আর তোমার বাপ বড়লোক কিংবা ভিখারী হোক আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার বাপ কে না ওকে?
যাই হোক আই থিংক সে কোন রকম টের পাইছে, যে তুমি আমার লাভার তাই এতো দূর অবদি গেল।
~ এখন কি করবে?
~ কি করবো? ওর চৌদ্দ গুষ্ঠি এক করবো, ও আমার মাহিকে কল দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলছে, ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে সাজির নাম্বারে ডায়াল করে অয়ন। ওপাশ থেকে ফোন বাজার কেউ একজন ফোন রিসিভ করে,
~ হ্যাঁ অয়ন বলো,
~ বাহ হ্যালো না বলতেই নাম চিনে ফেলছো।
~ আমি তোমাকে ভালোবাসি অয়ন।
~ কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না সাজি।
~ বাসো না বাসবে, ব্যাপার না,
~ সাজি জোড় করে কি ভালোবাসা পাওয়া যায়?
~ আমি জোড় করেই আদায় করতে ভালোবাসি।
~ মাহিকে কল দিয়েছো কেন?
~ ও কে সাবধান করে দিয়েছি।
~ তোমার কি মনে হয়, ও তোমার কথা শুনবে?
~ ও কে শুনতেই হবে।
~ ওয়েট সাজি, মাহি এ যুগের মেয়ে, তুমি বললে আর ও আমায় সুর সুর করে ছেড়ে দিবে এটা তুমি ভাবলে কি করে সাজি?
~ মানে কি?
~ মানে মাহি আমায় ছাড়া তো দূরে থাক ওর কল্পনা থেকেও আমায় কেউ সরাতে পারবে না, শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা করো না।
~ অয়ন,
~ আস্তে সাজি আস্তে, তেতো হলেও এটাই সত্যি। ভালো থাকো।
এই বলে অয়ন লাইন কেটে দেয়। মাহি এক নজরে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে। এক নাগারে সাজিকে এত গুলো কথা বলে দিলো।
আসলেই অয়ন তাকে অনেক ভালোবাসে। হয়তো ক্ষনিকের জন্য তার বিশ্বাস টা নড়বড়ে হয়ে গেছিলো, কিন্তু এখন আবার সব ঠিকঠাক। কিন্তু এভাবে সে বসে থাকবে না। সাজি একবার করবে দুইবার করবে তিনবারের সময় ঠিকই ছুড়ি বসাবে তার কারণ মাহি গতকালকেই বুঝে গেছিলো, সাজি কেমন হতে পারে।
অয়নের সামনে নিজেকে স্ট্রং রাখলেও এমনিতে ভেতর থেকে সে অনেকটাই দুর্বল। এই ব্যাপার টা নিয়ে অয়নন্দিতার সাথে কথা বলতে হবে তার। যদি এখন অয়নকে বলে সে অয়নন্দিতার সাথে কথা বলবে, তাহলে অয়ন তাকে মানা করে দিবে তাই এখন চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয়। রাতে অয়নন্দিতাকে কল দিয়ে সব বলবে সেই প্ল্যানিং করে ফেলে মাহি।
কয়েকদিন পর,
অয়নন্দিতা বিরাট বড় একটা বাড়িতে বসে আছে, ডুপ্লেক্স বাড়ি, সুন্দর সাজানো গোছানো। ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করে বার বার ঘড়ি দেখছে অয়নন্দিতা। বিকেল ৫ টা বেজে গেছে। এমন সময়, কেউ একজন উপর থেকে ডেকে বলে,
~ বিল্লাল, এই বিল্লাল, ড্রইং রুমে চা পানি দেও।
অয়নন্দিতা সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। লোকটা ধির পায়ে সিড়ি দিয়ে নামছে। অয়নন্দিতাকে দেখে বলে,
~ দাঁড়িয়ে কেন, বসো।
~ জ্বি ধন্যবাদ।
~ নাম কি?
~ আসসালামু আলাইকুম, আমি অয়নন্দিতা। অয়নের বোন আমি।
~ ওহ আচ্ছা, অয়নের বোন। তা এইখানে, কি মনে করে।
~ আংকেল কিছু কথা বলার জন্য আসছি আমি।
~ হ্যাঁ বলো, কি বলবে?
~ আংকেল সাজি যা করছে তা কি ঠিক?
ভদ্রলোক সেই বড়লোক যে কিনা সাজির বাবা। রমজান সাহেব নিজের মেয়ের নাম অয়নন্দিতার মুখে শুনে কিছুক্ষন অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছেন।
~ দেখুন আংকেল, আপনি সাজির বাবা। তাই কথা গুলো আপনার শুনা টাই শ্রেয়। আংকেল আমার ভাই আপনার মেয়েকে ভালোবাসে না। আর তাছাড়া আমার বাবা মায়েরও বয়স হয়েছে। তারা এইসব ঝামেলায় জড়াক আমি চাই না। এমনকি আমি নিজেও চাচ্ছি না এইসবে আমাত ভাই জড়াক। তাই আমি নিজেই এসেছি আংকেল দুইটা কথা বলতে।
~ কি ব্যাপারে কথা বলতে এসেছো?
~ আংকেল আপনি হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছেন আমি কি বলতে এসেছি। আংকেল সাজিকে মানা করে দিবেন যাতে সে এমন কিছু না করে, যাতে আমাদের অন্য পথ দেখতে হয়।
~ How dare you?
উপর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে ওঠে। অয়নন্দিতা আর রমজান সাহেব উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েকে এইভাবে দেখে রমজান সাহেব অনেকটাই অবাক।
~ সাজি মা,
পর্ব ১৫
~ তোমার সাহস হয় কিভাবে? আমার বাসায় এসে আমার সোফায় বসে আমারই বাবাকে আমারই নামে এই কথা বলার ৷
সাজি প্রচন্ড ক্ষীপ্রতার সাথে উপর থেকে নামছে আর কথাগুলো বলছে। অয়নন্দিতাও দেখছে সাজিকে। মাহি যেমনটা বলেছিল তার থেকেও তাড়ছিড়া লাগছে সাজিকে এই মুহুর্তে। মনে হয় কোন এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সে। তার পিছন পিছন বিষন্ন মুখে তার মাও নামছে।
~ এই তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার বাসায় আসার।
~ যেমন করে তোমার সাহস হয়েছে আমার ভাইয়ের সাথে এমন করার।
~ ওহ তাহলে ভাই পিছনে থেকে বোনকে সামনে এগিয়ে দিয়েছে।
~ আমার ভাই কাপুরুষ না যে এমন করবে, লিসেন সাজি ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট। যেই জায়গায় আছো সেখানেই স্টপ হয়ে থাকো।
~ লিসেন তোমার ভাইয়ের বাবুইপাখি, বেশি উড়ো না। ডানা কেটে ঝেড়ে ফেলে দিতে আমার এক মিনিটও লাগবে না।
মেয়ের এমন পাগলামি তে অতিষ্ঠ হয়ে আছে রমজান সাহেব। কারো সাথে এর কোন বনিবনা হয় না। সবার সাথেই এই মেয়ে খারাপ আচরণ করে।
~ আহহহ, সাজি কি হচ্ছে কি?
~ কি হচ্ছে মানে, যা হচ্ছে বেশ হচ্ছে। এই মেয়ের সাহস হয় কি করে আমাদের বাসায় আসার।
~ দেখো সাজি ও হয়তো আমাদের বাসায় কিছু বলার জন্য এসেছে। আমরা আগে তার কথা শুনি, কেমন মা?
~ আম্মু খবর দার মাখন লাগাবা না। বাবা তোমার বউকে বারণ করো, একদম কাহিনী যাতে না করে আমার সাথে।
~ আহহহহ সাজি স্টপ।
~ বাবা,
~ দেখুন আংকেল আপনাদের পারিবারিক ব্যাপারে আমি থাকতে চাই না। শুধু এটাই বলবো, সাজিকে সামলে রাখবেন। আমার ভাইয়ের আশেপাশে যাতে তাকে না দেখি।
~ তুমি বাসায় যাও মা, আমরা ও কে বুঝাবো।
~ কি বাল বুঝাবা আমাকে তোমরা। আমি এত বুঝতে চাই না। আমার অয়নকেই চাই, চাই চাই চাই
~ সাট আপ সাজি, গালিগালাজ কোথা থেকে শিখেছো তুমি। এক থাপ্পড়ে গালের সব দাত ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে।
~ দেখেন আংকেল নিজের চোখেই দেখেন আর আন্টি আপনিও দেখেন, কি মেয়ে আপনাদের যে কিনা আপনাদের সামনেই গালিগালাজ করে ছি। যাই হোক আংকেল আমি আসছি, আসসালামু আলাইকুম।
~ এসো মা, ভালো থাকো। আর নিশ্চিন্তে থাকো।
এই কথা বলে অয়নন্দিতা পিছন ফিরে দুই কদম ফেলতেই সাজি জোড়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে,
~ অয়নন্দিতা, তোমার জীবন আমি নড়ক করে দিব, জাহান্নামের কষ্ট তুমি এই ইহকালেই পাবা। মনে রেখো, তুমি শেষ।
~ দেখা যাবে সাজি দেখা যাবে। কতটা নড়ক করতে পারো আমার জীবন তুমি। আমার না তোমার বাবা মাকে দেখে অনেক আফসোস হচ্ছে তারা কি আর তুমি কি। সাজি তুমি একটা বদ্ধ উন্মাদ। পাগল হয়ে গেছো তুমি। নিজেকে চিকিৎসা করাও। গুড বাই,
অয়নন্দিতা কথা গুলো বলে নির্বাস নিবাসের চৌকাঠের বাহিরে এক পা দিয়ে দেয়। আর তার ঠিক অপর পাশ দিয়ে অন্য আরেকজন সেই একই চৌকাঠের ভেতরে তার এক পা ফেলে ঘরে প্রবেশ করে। পা ফেলতে ফেলতে সে একবার অয়নন্দিতার দিকে তাকায়।
দিন কাল ভালোই কাটছে সবার। ইতোমধ্যে দুই পরিবার মিলিত হয়ে অয়ন~মাহির বিয়ের ডেট টাও ফিক্সড করে ফেলে। আগামী মাসের ১৮ তারিখ বিয়ে।
প্রথম প্রথম মাহির বাবা আপত্তি করলেও পরে অবশ্য মেয়ের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যান তিনি। সবাই খুব খুশি। বিশেষ করে অয়নন্দিতা। তার সব থেকে কাছের বান্ধবী তার ভাবী হয়ে তারই ঘরে আসছে।
অন্যদিকে মাশফিক নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে ফেলে এইবার মনের কথাটুকু অয়নন্দিতাকে বলবেই। তারপর মাহির বিয়ের পর নিজের বিয়েটাও সেড়ে ফেলবে সে।
আস্তে আস্তে সময় পার হচ্ছে।
দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক টাও আরও মজবুত হচ্ছে। বিয়ের কেনাকাটাও চলছে জোড়ে সোড়ে। একমাত্র ছেলের বিয়েতে কোন কমতি রাখবে না মজিব সাহেব এবং রাহেলা বেগম।
সাধ্যের মধ্যে সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করবে বিয়েটা ভালো করে সম্পন্ন করার। অন্যদিকে আশরাফ চৌধুরীও কমতি রাখতে চান না মেয়ের বিয়েতে।
দুইদিন পর,
ওরা চারজন মিলে শপিং এ যায়। সেখানে অয়ন মাহি এক সাইডে চলে যায় আর অয়নন্দিতা টুকিটাকি কিছু কেনাকাটা করে। এমন সময় মাশফিক পিছন থেকে এসে একটা প্যাকেট সমেত তার হাত টা অয়নন্দিতার দিকে বাড়িয়ে দেয়। অবাক চোখে অয়নন্দিতা মাশফিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তাহলে কি ভালোবাসার শুভ সূচনা হতে চলেছে অয়নন্দিতা মাশফিকের মধ্যে।
পর্ব ১৬
~ কি এটা?
~ বাসায় গিয়ে খুলে দেখো, কেমন?
~ কি আছে এতে?
~ বাসায় গিয়ে দেখো, ওকে।
অয়নন্দিতা মাশফিকের কথার হাব ভাব কিছুই বুঝতে পারে নি। তবুও চুপচাপ শুনে নিল।
শপিং শেষ করে যে যার বাসায় চলে আসে।
রাতে ফ্রেশ হয়ে অয়নন্দিতা মাশফিকের দেয়া প্যাকেট টায় নজর দেয়। কি আছে ওই প্যাকেটে? আর হঠাৎ ওকেই কেন দিল প্যাকেট টা? এইসব ভাবতে ভাবতে সে প্যাকেট টা হাতে নিয়েই নিল। আস্তে আস্তে প্যাকেটের র্যাপিং পেপার টা খুলতে থাকে সে।
প্যাকেট খুলার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে জানতো না যে তার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে আছে। অবশেষে প্যাকেট টা খুলেই ফেলে অয়নন্দিতা।
খুলে বিষ্ময়ের শেষ প্রান্তে চলে যায়। অনেক সুন্দর একটা ড্রেস আছে প্যাকেট টায়। হালকা মেরুন কালারের একটা গাউন, বুকে ব্ল্যাক কালারের ভেলভেট কাপড়ের উপরে হোয়াইট স্টোনের কাজ করা। এক কথায় একটা অসাধারন ড্রেস দিয়েছে সে অয়নন্দিতাকে।
আরেকটা প্যাকেটে হালকা সিম্পল একটা স্টোন নেকপিছ, আর তার সাথে ছোট এক জোড়া দুল দেয়া। তার পাশে রাখা আছে একটা হলুদ চিরকুট। যাতে লিখা আছে,
“”
মন ময়ূরী তোর মায়া টানে
হারিয়ে গেছি আমি বহুদূর
তোর চোখেরই মায়া জালে
আটকা পড়েছি আমি এক সমুদ্দুর
ভালোবাসা কি আর
ভালোলাগাই বা কি
তোর ঠোঁটের ওই হাসিতে
আমার জায়গা হবে কি
তোরই সাথে বেধেছি আমি
অজান্তে আমার এই প্রাণ
ওগো সোনার হরিনী আমার
নিতে দিবে কি আমায় তোমার ঘ্রাণ
ভালো আমি তোকেই বাসি
এটাই চির সত্য
তোকে নিয়েই পাড়ি জমাবো
আমার চেনা গন্তব্য
“”
পড়ে খুব অবাক হচ্ছো তাই না। ভাবছো মাশফিক এইসব কি লিখেছে আবলতাবল। হ্যাঁ অয়নন্দিতা, এই আবলতাবল মাশফিক তোমায় বড্ড বেশিই ভালোবাসে।
এ আর আজকের নতুন কথা নয়। আজ থেকে কয়েক মাসে আগে থেকেই আমার মনের মধ্যে সেরা জায়গায় তোমায় বসিয়ে ফেলেছিলাম আমি।
আমি ভালোবাসি তোমায় যখন তুমি শাড়ি পরে পা রেখেছিলে ভার্সিটির ফার্স্ট ফ্লোরে। আমি ভালোবাসি তোমার হাতের ওই রেশমি চুড়ির ঝুন ঝুন শব্দটাকে।
আমি ভালোবাসি তোমার সেই অবাধ্য চুল গুলোকে যা বাতাসে এলোমেলো করে দিয়ে যায় আমার মনটাকে। আমি ভালোবাসি তোমার সেই বাকা ঠোঁটের হাসিকে যা ঘায়েল করে আমায় প্রতি মুহূর্তে।
আমি ভালোবাসি তোমায়, শুধু ভালোবাসি না তোমায় দেখে আমি শান্ত করি আমার এই অশান্ত মনকে। অয়নন্দিতা, একটাবার সুযোগ দিবে কি আমায়? তোমায় ভালোবাসার।
একটাবার কি সুযোগ দিবে আমায় তোমায় আপন করে নেবার। আমি তোমাতে হারাতে চাই অয়নন্দিতা। ভালোবেসে এই বুকে তোমার আমার সুখের ঘর বাধতে চাই।
উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। কাল মাহির মেহেন্দি আর পরশু মাহি অয়নের হলুদ, কাল তোমার হাতে আমার নাম টা দেখতে চাই আমি অয়নন্দিতা। আর সব শেষে একটা কথা বলতে চাই, ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি, শুধু তোমায় ভালোবাসি।
উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। জানি না তোমার উত্তর টা কি হবে? হয়তো হ্যাঁ হবে, আর নয়তো না, তবে আশা রাখবো হ্যাঁ হবে।
আজ রাত ২ টা ৪৫ মিনিটে কল করবো, রিসিভ করবে। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি,
অয়নন্দিতার মাশফিক
পুরো চিঠি টা পড়ে পুরো থ হয়ে আছে অয়নন্দিতা। এটা কি পড়লো সে। মাশফিক তাকে ভালোবাসে। যার কোন ব্যাখ্যা হয় না।
মাশফিক যে অয়নন্দিতাকে ভালোবাসে তা অয়নন্দিতার অজানা ছিল। কিন্তু আজ সব টা বলেই দিয়েছে মাশফিক। কিন্তু অয়নন্দিতার জানা নেই উত্তর টা কি হবে। আর কি উত্তর দেয়া উচিত সেটা তার মাথায় ঘুরছে।
রাত ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট। হঠাৎ করে অয়নন্দিতার ফোনটা বেজে ওঠে। নাম্বারটা অচেনা তাই রিসিভ করে নাই। কিন্তু ফোনটা বেজেই চলেছে। ৫ বার ফোন বাজার পরে অবশেষে রিসিভ করে সে।
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, ফোন রিসিভ করো নাই যে।
কন্ঠটা শুনে কলিজাটা ছ্যাত করে ওঠে অয়নন্দিতার। মাশফিক এর কন্ঠস্বরকে চিনতে তার এক সেকেন্ডও লাগে নি।
~ কি হলো, চুপ করে আছো যে?
~ হু
~ কি হু, কি করছিলে?
~ কিছুই না।
~ মিথ্যা
~ কোনটা মিথ্যা?
~ এইযে একটু আগে বললা, কিছুই করছিলে না। এটা মিথ্যা ছিল।
~ নাহ সত্যি, কিছুই করতেছিলাম না।
~ আমার কথা ভাবছিলে, এটাই সত্যি।
অয়নন্দিতার মনের খবর সে জানে কিভাবে? হয়তো এটাই আসল ভালোবাসা।
~ কি হলো, কথা বলবে না?
~ হু শুনছি বলেন।
~ ড্রেস টা কেমন লেগেছে?
~ ভালো লেগেছে।
~ অর্নামেন্ট টা ভালো লেগেছে?
~ হু সুন্দর ছিল।
~ শুধু সুন্দর ছিল?
~ ক,কি,কিছু বলবেন?
~ কালকে আসছো তো?
~ হ্যাঁ আসবো।
~ ওকে তাহলে কাল কথা হবে?
~ শ,শু,
~ হ্যাঁ বলো
~ কিছু না।
~ আরে বলো, কিছু বলতে চেয়েছিলে হয়তো?
~ আস,আ,আসলে, আমি আপ,আপনাকে,
~ থাক আস্তে ধীরে বলো, প্রবলেম নেই।
আর যদি না হয় তাহলে প্রবলেম নেই। আমি জোর করে কিছু আদায় করতে চাই না।
~ উত্তর টা কাল দেই?
~ ওকে।
রাত কেটে যায় অয়নন্দিতার নির্ঘুম ভাবে। অন্যদিকে বারান্দার ইজি চেয়ারে বসে একই সাথে আরেকটি নির্ঘুম রাত পার করে মাশফিক।
অপেক্ষা কাল সন্ধ্যার। অয়নন্দিতার উত্তরের জন্য। আদৌ মাশফিকের জানা নেই অয়নন্দিতার উত্তর কি হতে চলেছে। আর অয়নন্দিতা সেও একই ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে।
পরদিন মাহির মেহেন্দির অনুষ্ঠান,
অয়নের বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ জন যাবে তাদের বাড়িতে। দুই বাড়িতেই অনেক হৈচৈ আর আনন্দ চলছে। অয়নন্দিতা আজ মন মতো সেজেছে। নিজের মতো করে।
সবুজ জামদানী শাড়ি, হাত ভর্তি সবুজ চুড়ি, চুলে গাজরা সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর লাগছিলো তাকে। তাকে এই সাজে দেখে মাশফিক কেন যে কেউই পাগল হয়ে যাবে।
অয়নন্দিতা আর তার সাথের কাজিনরা মিলে ৭ টায় রওনা দেয় মাহির বাসার উদ্দেশ্যে।
গাড়ি এসে চৌধুরী নিবাসের সামনে নামে।
সেখানে অতিথি আপ্যায়নে কোন রকম কমতি রাখে নি মাশফিকরা। এপাশ থেকে মিষ্টি, ওপাশ থেকে জুসের গ্লাস সব এক সাথে নিয়ে ঝেকে ধরেছে জামাইয়ের পরিবারকে।
কিন্তু অয়নন্দিতার নজর চারদিকে কি যেন খুজছে। আগ্রহ নিয়ে কোন কিছু প্রকাশের আশায় তার দুটো চোখ অস্থির হয়ে খুজছে অন্য একজনকে।
অবশেষে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। ছেলে নেই বললেই চলে। মাশফিক আর তার বন্ধুদের জন্য আরেক জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর মাহির বাবা, চাচা মামাদের জন্য বাসার মধ্যেই। যেহেতু অনুষ্ঠান গুলো একদম সিম্পল তাই মেহেন্দি আর হলুদটা বাসায় রেখেছেন আশরাফ চৌধুরী। আর বিয়ের অনুষ্ঠান সেন্টারে রাখা হয়েছে।
সবাই মেহেন্দি পরতে ব্যস্ত আর অয়নন্দিতার চোখ মাশফিককে খুজতে ব্যস্ত। সবাই অনেক জোর করছে অয়নন্দিতাকে মেহেদী পরার জন্য, কিন্তু সে পরতে চাইছে না।
~ কিরে আমার জন্যেও পরবি না তুই?
~ আসলে ভালো লাগছে না রে।
~ আজকে একটু পর না প্লিজ।
~ আমি পরলে তুই খুশি হবি?
~ হ্যাঁ অবশ্যই হবো, শুধু খুশি না, অনেক অনেক খুশি হবো।
~ তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে রে মাহি
~ তোকে আমার থেকেও।
~ আমার ভাবী জিইইইইইই
~ আমার ননদিনীইইই
~ আচ্ছা শুন না মাহি, মাশফিক ভাই কই, দেখছি না যে?
~ আসলে ভাইয়ার সব ফ্রেন্ড রা আসছে তো, তাই ভাইয়া ওদের সময় দিচ্ছে।
~ ওহ
~ আচ্ছা আয় আয় বস এখানে, মেহেদী দে
~ যথা আজ্ঞা, ভাবী জিইইইইইই
~ হি হি।
অনুষ্ঠান প্রায় শেষ পর্যায় এসে গেছে। এখনও অয়নন্দিতার নজর মাশফিককে খুজছে। কিন্তু তার দেখা পাওয়া যায় নি পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে।
হঠাৎ করেই মোবাইলের ম্যাসেজ রিং টোন বেজে ওঠে। অয়নন্দিতা মোবাইলের ম্যাসেজ বক্স ওপেন করে দেখে সেখানে লিখা আছে,
” I’m waiting for you on the roof, please come mashfik “
মুহুর্তের মধ্যেই অয়নন্দিতার হার্টবিট অত্যন্ত দ্রুত বেগে চলাচল শুরু করে দেয়। এদিক ওদিক চেয়ে, একটু তাড়াতাড়িই হেটে ছাদের দিকে চলে যায় অয়নন্দিতা।
অন্ধকারে সিড়িতে এলোপাথাড়ি পা ফেলে এক নিঃশ্বাসে দৌড়ে উপরে উঠে যায় সে।
ছাদের উপরে গিয়ে নিজেকে শান্ত করে ফেলে। অথচ পুরো ছাদ জুড়েই বিষন্নতা বিরাজ করছে। ছাদে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না সে। হঠাৎ করেই কেউ একজন পেছন থেকে ডেকে ওঠে।
~ অয়নন্দিতা,
~ কেহহহহহ
আচমকা ডাকাতে ভয় পেয়ে যায় অয়নন্দিতা। ততক্ষনাৎ পেছন ফেরে তাকায় সে। মাশফিক দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সিড়ি দিয়ে দ্রুত বেয়ে উঠার কারণে নিঃশ্বাস এখনও
উপর নিচ হচ্ছে তার। এর উপরে মাশফিক সামনে দাঁড়ানো আছে। সব মিলিয়ে নিজেকে লজ্জার চাদরে আবৃত করতে চেয়েও পারে নি সে। মাথা টা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।
~ পুরো অনুষ্ঠানে শুধু আমায় খুজে গেছো?
~ কই না তো,
~ আবার মিথ্যা।
~ আমি খুজি নি তো,
~ তাই, প্রমাণ দেখবে?
~ দেখান দেখি,
~ তাহলে এই যে দেখো,
মাশফিক তার মোবাইলের লক টা খুলে কিছু ছবি অয়নন্দিতার সামনে ধরে। যেই ছবিতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে অয়নন্দিতা কাউকে খুজছে।
তার মানে মাশফিক এই অনুষ্ঠানেই ছিল হয়তো সবার আড়ালে। লুকিয়ে লুকিয়ে তার মনময়ূরীর ছবি তুলেছে সে। এইসব দেখে লজ্জায় মাশফিকের দিকে তাকাতে পারে নি অয়নন্দিতা।
~ কি হলো, এখন কি বলবে?
~ লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলেছেন কেন?
~ তাহলে কি সামনা সামনি তুললে বেশি খুশি হতে?
~ তা বলি নি,
~ তাহলে,
~ অনুষ্ঠানে যান নি কেন?
~ মেয়েদের অনুষ্ঠানে আমার কি কাজ, তাই তো লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখছিলাম।
~ আচ্ছা আসি।
~ দাড়াও অয়নন্দিতা,
~ হু
~ শুধু কি দেখা করতেই এসেছিলে নাকি কিছু বলতেও এসেছিলে।
~ নাহ এমনি এসেছিলাম।
~ সত্যি তো?
~ আসি।
~ অয়নন্দিতা, দাড়াও, বলে যাও?
~ কি?
~ উত্তর টা বলে যাও।
মাশফিকের এমন কথায় অয়নন্দিতা নিজের হাত দুটো মাশফিকের সামনে তুলে ধরে। সুন্দর আলপনার মাঝে সুন্দর ভাবে দুই হাতের মাঝে ” M ” লিখা আছে। তার মানে মাশফিক তার উত্তর পেয়ে যায়।
~ অয়নন্দিতা,
~ জানি না কি ঠিক কি ভুল, তবে জানি ভালোবাসি আপনাকে। শুধু আজ না, ভালোলাগাটা কাজ করেছে আরও আগে থেকে।
একটা সম্মান ছিল, আর তারপর থেকে ভালোবাসার জানান দেয় এই হৃদয়। হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি আপনাকে। যা বলে বুঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।
~ অয়নন্দিতা, তার মানে তুমি আমায়,
~ হ্যাঁ, বাসি অনেক ভালোবাসি। এইবার আসি।
~ দাঁড়াও,
এই বলে অয়নন্দিতার হাতটা ধরে ফেলে মাশফিক। নিজের হাতে মাশফিকের স্পর্শ পেয়ে পুরো শরীর ফ্রিজড হয়ে যায় অয়নন্দিতার। মাশফিক অয়নন্দিতার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
~ একদম পরী লাগছে তোমায়, আমার পরী।
এই বলে অয়নন্দিতার কানের নিচে আলতো করে একটা চুমো দিয়ে দেয়। মাশফিকের ঠোঁটের ছোয়া পেয়ে অয়নন্দিতা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। কি করবে ভেবে পায় না সে।
পেছন দিক থেকে অয়নন্দিতাকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে মাশফিক। মুহুর্তের মধ্যে এতো কিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারে নি অয়নন্দিতা। পুতুলের মতো চোখ বন্ধ করে চুপ করে মাশফিকের বুকে মাথা দিয়ে রাখে সে।
এমতাবস্থায় অয়নন্দিতার মোবাইলে ফোন চলে আসে। মোবাইলের আওয়াজে দুজনের ধ্যান ভাঙে। মাশফিকের বুক থেকে মাথা তুলে মোবাইলের দিকে চোখ দেয় অয়নন্দিতা।
~ কাজিন ফোন দিয়েছে, আসছি।
অয়নন্দিতা মাশফিককে কিছু না বলতে দিয়ে চলে যেতে নেয় আর মাশফিকও হাত টা খপ করে ধরে নেয় তার। তারপর কাছে টেনে নিয়ে দুই গালে হাত দিয়ে অয়নন্দিতার কপালে আলতো করে আরেকটা চুমো দিয়ে দেয় মাশফিক।
~ ভালোবাসার পরশ দিয়ে আপন করে নিলাম, এভাবেই আমার জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে আমার সাথে থেকো।
~ মরণ এর আগ পর্যন্ত থাকবো, আসি?
~ এসো
~ আল্লাহ হাফেজ,
~ আল্লাহ হাফেজ।
পর্ব ১৭
আজ অয়ন~মাহির হলুদ এর অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় চৌধুরী ম্যানসন এর গার্ডেন এরিয়াতে প্রায় ১০০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রথমে অয়নের বাবা রাজি ছিলেন না পরে আশরাফ সাহেবের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়, ভদ্রলোক তার একমাত্র মেয়ে আর জামাইয়ের হলুদ অনুষ্ঠান এক সাথেই করতে চান।
তাই অয়নের বাবাও আর আপত্তি করেন নাই। পুরো চৌধুরী ম্যানসন সাজানো হয়েছে লাল নীল সবুজ রঙের লাইটিং দিয়ে। আলোর ঝলকানিতে আলোকিত হয়েছে পুরো বাড়ি এবং বাড়ির আশপাশের সবকিছু।
এইদিকে অয়নের বাড়িতেও ধুমধাম অনুষ্ঠান চলছে। আত্নীয়স্বজন, পরিবার, প্রতিবেশি সবাই এসেছে। আনন্দের মুহুর্ত গুলো খুব সুন্দর করেই বন্দী হয়ে আছে অয়নন্দিতার মোবাইলের গ্যালারিতে।
সন্ধ্যায় প্রায় ৩০০ মানুষ নিয়ে অয়নরা পৌছায় মাহির বাসায়। অত্যন্ত ভদ্রতার সহিত তাদের সাদরে আপ্যায়ন করে মাশফিক এবং তার পরিবার।
অয়নের পেছনে অয়নন্দিতা থাকায় প্রথমে মাশফিক খেয়াল করে নি। কিন্তু পরে যখন নিজে ভাইয়ের পেছন থেকে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তখনই মাশফিকের চোখে লাগে তার হলুদ মায়াবতী পরীকে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব মেয়েদের মধ্যে হয়তো এই একটি নারীই আছে যার দিক থেকে মাশফিক এক নজরের জন্য মুখ ফেরাতে পারে নি।
হলুদ জামদানি শাড়ির ভাজে লুকিয়ে থাকা সেরা নারী টি তার চোখে নেশা লাগিয়ে দিয়েছে মনে হচ্ছে। মাশফিক মেহমান আপ্যায়ন করবে কি সে তো তার মায়াবতীকে দেখতেই ব্যস্ত হয়ে আছে।
অবশেষে, অনুষ্ঠান শুরু হয়। অয়নন্দিতার বাবা~মা, মাহির বাবা~মা, তারপর এক এক করে সবাই বর~কনে কে হলুদ পরাতে থাকে। তারপর শুরু হয়ে নাচ~গানের অনুষ্ঠান।
সেখানে অবশ্য বেশিরভাগই দুই দলের কাজিনরাই বেশি ছিল। বড়দের জন্য বাসার ছাদে অন্য ভাবে আয়োজন করা হয়। নাচ~গানের এক পর্যায়ে সবাই মাশফিককে জোকের মতো ধরে গান গাওয়ার জন্য। মাশফিক তো একদম না করে দিয়েছে। সে গান গাইবেই না।
সে গান পারে না। মাহি অয়ন সবাই রিকুয়েস্ট করে করে ক্লান্ত কিন্তু মাশফিক গাইবে না। এক কালে ভার্সিটিতে দারুন গাইতো মাশফিক। কিন্তু কয়েকদিন না গাওয়ায় তার ধারণা তার কন্ঠ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গাইবে না।
এই না না এর মাঝেই হঠাৎ মাশফিকের মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসে। মাশফিক পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে ম্যাসেজ বক্স ওপেন করে। সেখানে লিখা আছে,
“যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছ”
মাশফিক হুট করে সামনে বসে থাকা অয়নন্দিতার দিকে তাকায়। সবার আড়ালে থেকে মুচকি হেসে হালকা চোখ টিপ দেয় অয়নন্দিতা মাশফিককে। কিন্তু মাশফিক তারপরও চুপ। এমতাবস্থায় অয়নন্দিতা চেয়ার থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল আর ঠিক তখনই একটা কন্ঠস্বর তার পা আটকে দেয়।
“যেটুকু রোদ ছিল লুকনো মেঘ দিয়ে বুনি তোমার শালে ভালবাসা
আমার আঙুলে হাতে কাঁধে তুমি লেগে আছ
যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে
কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে
আমার চোখে ঠোঁটে গালে তুমি লেগে আছ”
মাশফিকের কন্ঠে গান শুনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতা। সেখানে থাকা আরেকটা চেয়ারেই বসে বসে মাশফিকের গান শুনছে অয়নন্দিতা।
এক রকম ঘোর লেগে গেছে তার পুরো শরীরের মাঝে। অসাধারনভাবে গানটা শেষ করে মাশফিক। আর সবাই করতালির মাধ্যমে তাদের ভালো লাগার জানান দেয়।
এইবার মাশফিককে ছেড়ে অয়নন্দিতাকে ধরে সবাই। সবার বক্তব্য কনের ভাই গেয়েছে এইবার বরের বোন নাচবে। হাজারো মানা করার পরেও কেউ শুনছে না অয়নন্দিতার কথা।
এই সময় সেম আরেকটা ম্যাসেজ টোন অয়নন্দিতার মোবাইলেও বেজে ওঠে। অয়নন্দিতা ম্যাসেজ বক্স ওপেন করে দেখে তাতে লিখা আছে,
“তুমি আমার দেখা সেরা নারী
তোমার চলণ বলে তুমি স্বাধীন
তোমার হাসি বলে তুমি বিহঙ্গ
ওগো মুক্ত মায়াবতী কন্যা
আজ তোমার নাচের তালে হারাতে
চাই আমার আমি ওই দূর অজানাতে
যেখানে ঝড়ে যাচ্ছে খুশি বন্যা”
সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা মাশফিকের দিকে তাকায় অয়নন্দিতা। মুচকি হেসে সেও একটা চোখ টিপ দিয়ে দেয় অয়নন্দিতাকে। অয়নন্দিতা বুঝে নেয় তার একটু আগেই করা কর্মের
ফলাফল স্বরূপ তাকে সবটা ফেরত দিলো মাশফিক।
কি আর করার অগত্যা তাকেও শাড়ির আঁচল হালকা করে কোমড়ে গুজে নাচতে হলো। রবি ঠাকুরের” এ কি লাবন্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে” গানের সাথে নেচে সবার চোখে তাক লাগিয়ে দেয় অয়নন্দিতা।
আর মাশফিক সে তো বিরতিহীন পলক রেখে তার মায়াবতীকে দেখেই যাচ্ছে তো দেখেই যাচ্ছে। নাচ শেষ হয় অসম্ভব করতালি আর শিষ এর মাধ্যমে। অয়নন্দিতা অনেক লজ্জাও পায়। তবে লজ্জাটা বেশিরভাগই ছিল মাশফিকের জন্য।
তারপর সবাই মিলে শুরু হয় গ্রুপ ফোটো তোলার পালা। সবাই মিলে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরে আর এই ফাকে মাশফিক অয়নন্দিতাকে নিয়ে বাড়ির পেছনের সাইডে চলে আসে।
~ এখানে আনলেন কেন? কেউ দেখে ফেললে?
~ হুসসসসসস
~ কি হুসসসসস, আমি ওইখানে যাবো
~ পরে,
~ না না এখনি, প্লিজ যাই।
~ বলেছিনা পরে আগে তোমায় দেখতে দাও।
~ কি আর দেখবেন, এতো টাইম তো দেখে গেলেন।
~ দেখে গেছি স্পর্শ তো করতে পারি নি?
~ ধুর, যাই না ওইখানে,
~ চুপ
মাশফিক অয়নন্দিতার একদম কাছে চলে আসে। বাম হাত টা দিয়ে অয়নন্দিতার কোমড় চেপে ধরে মাশফিক।
~ কি করছেন কি?
মাশফিক অয়নন্দিতার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে,
~ ভালোবাসছি, দেখছো না?
~ প্লিজ,
~ কিহ,
~ কিছু না,
~ ভালোবাসতে দেও।
মাশফিক অয়নন্দিতার একদম কাছ থেকে কাছে চলে আসে। দুজনার ঠোঁটের ফারাক মাত্র ১ ইঞ্চি। তবুও অয়নন্দিতা নিজেকে সরিয়ে নেয় মাশফিকের কাছ থেকে। এতে করে মাশফিক খানিকটা অপমানিত বোধ করে। তবুও চুপ থাকে।
~ আসছি,
এটা বলে অয়নন্দিতা দৌড়ে পার্টি ভ্যানুতে চলে যায়। আর মাশফিক সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আজ বেশ অপমানিত বোধ হচ্ছে তার নিজের কাছে।
রাত প্রায় ১ টার দিকে সবাই আস্তে আস্তে চলে যেতে শুরু করে। অবশেষে অয়নদেরও যাবার সময় চলে আসে। পরশুদিন সেন্টারে আল্লাহ বাচালে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে ইনশাআল্লাহ। এই আশা নিয়ে সবাই যে যার মতো করে বিদায় নেয়।
রাত ভর অয়নন্দিতা শুধু একটা কথাই ভেবেছে আজ ওই বাড়িত্ব যা হয়েছে তা কি ঠিক হয়েছে? মাশফিক হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে।
এইভাবে ধাক্কা দেয়াটা ঠিক হয় নি তার। একটা কিস করলে কি এমন হতো? এর বেশি কিছু ছিল না তো। তাহলে এতোটা রিয়্যাক্ট না করলেও পারতো অয়নন্দিতা। একটা ফোন করবে কিনা এই ভেবে ভেবে একটা ফোন দিয়েই বসে মাশফিককে।
রাত প্রায় ৩ টা বেজে ৪৫ মিনিট। এতো রাতে নিজের মোবাইলের রিং টোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় মাশফিকের। এমনিতেই সারাদিনের ধকলে শরীর একদম ক্লান্ত তার।
তার উপরে মাত্রই চোখ টা বন্ধ হয়ে এসেছে। আর এখনি ফোনের আওয়াজ। চোখ মেলে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে মাশফিক। অয়নন্দিতার নাম্বারটা দেখে এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে মাশফিক। এতো রাতে ফোন করেছে ভাবতেই তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তারপরও বারান্দায় এসে মোবাইলটা রিসিভ করে মাশফিক।
~ হ্যালো
~
~ হ্যালো
~
~ কি হলো কথা বলবে না?
~
~ চুপ করে থাকার জন্যই কি কল দিয়েছো?
~
~ আচ্ছা তাহলে রেখে দিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।
~ হ্য,হ্যা,হ্যালো
~ হা হা, শুনছি, বলো
~ কি করছিলেন?
~ ঘুমানোর জন্য চোখটা প্রায়ই অফ হয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু হঠাৎ কোন এক মায়াবতী পরী এসে জাগিয়ে দিল।
~ সরি,
~ কেন?
~ আজকে সন্ধ্যার জন্য।
~ বাদ দাও, আমারও ভুল ছিল। এতো ফাস্ট কিছু করর প্রয়োজন ছিল না।
~ কাল একটু দেখা করতে পারবেন?
~ কোথায় দেখা করতে চাও?
~ কাল দুপুরে বাসায় কেউ থাকবে না, নানার বাসায় মিলাদে যাবেন সবাই। আমি যাবো না আর না যাওয়ার কারণ টা হচ্ছেন আপনি।
~ আমি কি করলাম আবার, কেন যাবে না
~ আপনি আসবেন কিনা বলেন?
~ আচ্ছা আসবো, কখন আসতে হবে বলো।
~ উউউ, এই ধরুন ১২ টার পরে।
~ আচ্ছা, আর কিছু বলবে?
~ কেন? ডিস্টার্ব ফিল করছেন নাকি?
~ খুব ক্লান্ত লাগছে, আজকে অনেক দৌড়াদৌড়ির উপরে ছিলাম তো, একটু ঘুমোতে পারলে ভালো হতো এই আর কি, আর তুমি চাইলে কথা বলতে পারো।
~ নাহ থাক, আপনি ঘুমান, কাল আসলে কথা বলবো।
~ আচ্ছা।
~ আসসালামু আলাইকুম ভালো থাকবেন
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুমিও ভালো থাকো
~ আল্লাহ হাফেজ
~ আল্লাহ হাফেজ।
পরদিন,
আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে মাশফিক। খুব ভালো ঘুম হয়েছে তার। সারাদিন কাজের পর এমন একটা ঘুম হলে মন্দ হয় না। ইসসসস মন টাও তার ফুরফুরা।
একটু পরে ফ্রেশ হয়ে অয়নন্দিতার বাসায় যাবে সে। খাট থেকে নামতে যাবে এমন সময় দেখে আজান হচ্ছে। মাশফিকের চোখ চড়কগাছ।
এখন কিসের আজান হয়? আশেপাশের অবস্থান তো ফজর নামাজের আযান ইঙ্গিত করছে না। তাহলে কিসের আযান, ধরফর করে মোবাইলটা হাতে নেয়, কয়টা বাজে দেখার জন্য।
~ oh shit, মোবাইল অফ কেন?
তাড়াতাড়ি করে দেয়ালের ঘড়িতে নজর দেয় মাশফিক। চোখ একটা তার চারটা হয়ে দুইটা আট টা হয়ে যায়। ঘড়িতে এখন ৪ টা ৪৫ বাজে।
তার মানে এখন আসর নামাজের আযান দিচ্ছে। তার মানে মাশফিক আজ সারাদিন ঘুমিয়েছে।oh shit গতকাল মোবাইল টা চার্জে লাগাতেও ভুলে গেছে সে যার কারণে ব্যাটারী ডাউন হয়ে মোবাইল অফ হয়ে গেছে।
অয়নন্দিতা কতগুলো কল করেছে কে জানে। তাড়াতাড়ি করে মোবাইল চার্জে দিয়ে অন করে মাশফিক
মোবাইল অন করার সাথে সাথে টুংটাং ম্যাসেজ আসতে থাকে।
” ১২ টা ১৫ ~ আপনি কোথায় “
” ১২ টা ৪৫ ~ আপনি কি আসবেন না “
” ১ টা ২৬ ~ মোবাইল অফ কেন “
” ১ টা ৫৫ ~ আসবেন না তাহলে “
” ২ টা ৩৯ ~ এখনও মোবাইল টা অফ “
” ৪ টা ১৩ ~ আসলেন৷ না তাহলে, অপেক্ষায় ছিলাম পাক্কা ৩ টা ঘন্টা। বাসায় সবাই চলে আসছে, আর আসতে হবে না। “
মাশফিকের এখন নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
এটা কি করলো সে। এতো ঘুম কোথা থেকে এলো। যেই ঘুমের জন্য আজ সে অয়নন্দিতার সাথে দেখা করতে যেতে পারলো না ৷ তাড়াতাড়ি করে অয়নন্দিতাকে ফোন করে মাশফিক। ৫ বার ফোন করে আর ৫ বারই ফোন টা কেটে দেয় অয়নন্দিতা।
আর তার ৫ মিনিট পরে একটা ম্যাসেজ আসে মাশফিকের মোবাইলে।
” বাসায় সবাই আছে, আমিও ব্যস্ত। কথা বলতে পারবো না। আর আমি কিছু মনে করি নি। মাহির সাথে কথা হয়েছে, ও নিজ থেকেই বললো আপনি ঘুমাচ্ছেন। কাল দেখা হবে সোজা বিয়েতে। আল্লাহ হাফেজ “
ম্যাসেজ সিন করে কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থাকে মাশফিক।
~ মেয়েটা এমন কেন। অন্য মেয়ে হলে এতক্ষণে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলতো। আর এ, কিছুই বললো না। একদম ইজিলি হ্যান্ডেল করে ফেললো বিষয়টা। হয়তো এইজন্যই এ আমার মায়াবতী। আমার মায়ারাজ্যের মায়ারানী। i love u অয়নন্দিতা। i love u so much
অন্যদিকে, অয়নন্দিতা জুসের গ্লাসে জুস ঢালছে আর বলছে
~ হয়তো আমি অন্য মেয়ে নই, তার জন্য।
দুই বাড়িতেই বিয়ের তোড়জোড় চলছে। আগামীকাল এক দম্পতী একমাত্র মেয়ে বিদায় দিবে আর আরেক দম্পতী একমাত্র ছেলের বউকে বরণ করে নেবে।
পর্ব ১৮
আজ বিয়ের অনুষ্ঠান। সেন্টারে অনেক স্পেশাল ভাবে সব কিছু সাজানো হয়েছে। রাত ৮ টায় বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে।
বধু বেসে মাহি তার ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষাতে আছে। আর অন্যদিকে বর বেসে অয়ন তার ভালোবাসার মানুষকে আনতে যাচ্ছে। আর এইসবের মাঝে একদম আলাদা করে অন্য একজন তার মনের রাজ্যের মায়াবতীকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে।
আজ অয়নন্দিতা সেজেছে, অনেক সেজেছে। মাশফিকের দেয়া গাউন পরে নিজেকে রাঙিয়ে নিছে মাশফিকের রঙে। আজ শুধু মাশফিক কেন বিয়ে বাড়ির সব ছেলের নজর থাকবে অয়নন্দিতার উপরে। ভালোবাসা গুলো আজ দু’হাতে কুড়িয়ে নিবে অয়নন্দিতা।
সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ তে বরের গাড়ি সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে বর আপ্যায়নের জন্য দাঁড়িয়ে আছে মাহির মা সহ আরও অনেকেই। বিয়ে বাড়িতে সবাই সবাই অনেক আনন্দে মেতে আছে। বর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। সেই সাথে নেমে দাঁড়ায় অয়নন্দিতা।
অয়নন্দিতাকে দেখে সবার ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। যেমন সুন্দর দেখা যাচ্ছে তেমন শরীরে পোশাকটা দারুণ মানিয়েছে তাকে। অয়নন্দিতা একটু গুলুমুলু টাইপের হওয়ায় গাউনটা দারুন লেগেছে তার।
মাশফিক অয়নকে দেখবে কি সে তো অয়নন্দিতাকে দেখতেই ব্যস্ত। তাকে চমকে দিয়েছে অয়নন্দিতা। সে কখনও ভাবতেও পারে নি তার দেয়া ড্রেস টা সে এইভাবে বিয়েতে পরবে।
চিকন নেকপিছ টা জ্বল জ্বল করছে। সবার থেকে একদম আলাদা লাগছে অয়নন্দিতাকে। ঠোঁটের লাল লিপস্টিক টা মনে হয় ওর ঠোঁট জোড়া কে আরও বেশি সুন্দর করে তুলেছে। মনে হচ্ছে আল্লাহ নিজ হাতে ওকে আর্ট করে বানিয়েছেন।
আপ্যায়ন শেষে বরকে ভেতরে নেয়া হয়। আর অন্যদিকে মাশফিক শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কখন তার অয়নন্দিতাকে সে একটু একা পাবে।
এইদিকে অয়নন্দিতার মামি, খালা, ফুফুরা সবাই মিলে বউকে মানে মাহিকে গয়না পরাতে ব্যস্ত। আশরাফ সাহেব মেয়ে মাহিকে অঢেল দিয়েছে কিন্তু অয়নের বাবাও তার ছেলের বউকে এইভাবে নিবে না।
তাও যদি হয় একমাত্র ছেলের বউ তাহলে তো কথাই নেই। তিনিও এনেছেন তার পুত্রবধূর জন্য। সেইদব গয়নাই পরানো হচ্ছে মাহিকে। অয়নন্দিতা বেশ খুশি, দুটো কারণে। এক, বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি হতে চলেছে আর দুই, অয়নন্দিতা তার ভালোবাসার মানুষকেও পেতে চলেছে।
ওইদিকে কাজি সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রথমে অয়নকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে আর তারপর অয়নের কাছ থেকে মাহির কাছে গিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করেছেন।
অয়নন্দিতা মোবাইল দিয়ে ছবি তুলছিলো, আনন্দের সব মুহুর্ত গুলো সে তার গ্যালারিতে সেভ করে রাখছে। কিন্তু হঠাৎ করে কে যেনো পিছন দিক থেকে অয়নন্দিতাকে খোচা মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
খোচা খেয়ে অয়নন্দিতা আশেপাশে তাকায়। দেখে ৬ ফুট লম্বা মেরুন কালারের পাঞ্জাবি পরা একজন ভদ্রলোক তার পাশে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে। সে আর কেউ না, মাশফিক দাঁড়িয়ে আছে তার পাশে।
~ খোচা মারলেন কেন?
~ কই?
~ কই তো পানিতে থাকে, আপনি খোচা মারলেন কেন?
~ ওইটা কই না কৈ, বুঝেছো?
~ ভালো হয়েছে।
~ একদিন এইভাবে তোমাকেও বিয়ে করে নিয়ে আসবো।
~ ইশশশশশ
~ ইশ নয় সত্যি কথা। মাথায় টোপর পরে এসে আমার এই মিষ্টি বউটাকে নিয়ে যাবো।
~ অপেক্ষায় রইলাম।
~ ড্রেস টায় দারুণ লাগছে তোমায়।
~ হু
~ থ্যাংকস পরার জন্য।
~ থ্যাংকস এতো সুন্দর ড্রেস দেয়ার জন্য।
~ ড্রেস টার কোন মূল্য ছিলো না, কিন্তু এর মূল্য অনেক কারণ এ তোমায় আবৃত করে রেখেছে।
~ ধুর,
~ সত্যি বললেও ধুর।
~ হি হি।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খাওয়া দাওয়ার পার্ট চুকিয়ে এইবার বিদায়বেলা। একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিতে হবে আজ আশরাফ সাহেব কে।
মাহির মা কান্নায় কথাই বলতে পারছে না। মাহি এতক্ষণ চুপ থাকলেও মায়ের কান্না দেখে নিজেও কেদে দিয়েছে। বাবা শক্ত হয়ে থেকেও চোখে পানি ছেড়ে দিয়েছে।
মাশফিক যথেষ্ট স্ট্রং তবুও আজকে ছোট বোনকে বিদায় দিতে গিয়ে সব কিছু কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে তার। অয়নের হাতে মাহির হাত তুলে দেয় আশরাফ চৌধুরী।
~ আমার এই একটা মাত্র চাঁদ বাবা, তোমার কাছে দিয়ে দিলাম। জানি কখনো কষ্টে থাকবে না, যদিও কখনো ভুল করে তাহলে ছোট ভেবে ক্ষমা করে দিও।
মাহির বাবার কথা শুনে অয়ন কি বলবে বুঝতে পারছে না। পরক্ষনেই অয়নের বাবা গিয়ে মাহির বাবার হাত টা ধরলেন।
~ বেয়াই সাহেব বউ না মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি। চিন্তা করবেন না। সব ঠিকঠাক থাকবে। এইবার যেতে দিন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি ছেড়ে চলে আসে সেন্টারের সামনে থেকে। আসার সময় সাময়িকের জন্য চোখে চোখে কথা হয়ে যায় অয়নন্দিতা আর মাশফিকের। এ যেনো অন্য রকম কথা যা শুধু এরাই বুঝতে পারে।
বাসার গেইটের কাছে অয়নের মা দাঁড়িয়ে আছেন ছেলে, ছেলের বউকে বরণ করার জন্য। মায়ের মন আজ শান্তু। ছেলের বিয়ে নিয়ে তার অনেক চিন্তা ছিল অবশেষে সেই চিন্তা থেকে তিনি মুক্ত হলেন।
রাত প্রায় ১২ টার পর পর। এমন সময়ে বরের গাড়ি পৌঁছে যায় বাড়ির গেইটের কাছে। মাহিকে অয়নন্দিতাই নামিয়ে নেয় গাড়ি থেকে।
ঘরে ঢোকার আগে অয়নন্দিতার মা মাহির হাতে একজোড়া বালা পরিয়ে বউওকে বরণ করে নেয়। সব কিছু ঠিকঠাক মতোই মিটেছে। ভালোবাসার দুটো মানুষ কে এক করতে পেরে আজ অয়নন্দিতাও দায়মুক্ত হতে পেরেছে।
রাত প্রায় ২ টা। মাহি বাসরে বসা। রুম টা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করেছে অয়নন্দিতা। ভাইয়ের বাসর বলে কথা, সুন্দর তো হতেই হতো। অয়ন ঘরের মধ্যে আসে।
তার পুরো রুম জুড়ে ফুল আর ফুল। আর সেই ফুলের মাঝে বসে আছে এক পরী। তার ভালোবাসার মানুষটি। গুটি গুটি পায়ে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অয়ন।
মাহিও যে লজ্জা পাচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আগের দিন থেকে এখনকার দিন টা একদম অন্যরকম। আগে যে ছিল অয়নের দুচোখের বিষ এখন সে অয়নের বউ।
ভয়ে ঢিপ ঢিপ করতে থাকা মাহির বুকেও পানি নেই। তবুও আস্তে করে নেমে গিয়ে অয়নকে সালাম দেয় মাহি। অয়নকে একটু অবাক, সালাম দিল বলে। কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারপরও মাথায় হাত রেখে একটা কথাই বললো,
~ ভালো থাকো আর অনেক সুখী হও।
দুই হাত দিয়ে উঁচু করে মাহিকে সে পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে নিজের সামনে দাড় করায়। তারপর খাটের দিকে ইশারা করে দেয়। মাহিও চুপচাপ গিয়ে বসে থাকে।
~ তুমি খুশি হয়েছো?
~ কি নিয়ে?
~ এইযে আমাদের বিয়ে হলো।
~ অয়ন আমি তোমায় ভালোবাসি, তাই নিজের করে পেতে চেয়েছি আল্লাহর অশেষ রহমতে তোমায় পেয়েছিও এর থেকে খুশির জিনিস আর হয় না।
~ তাই?
~ হ্যাঁ তাই।
~ একটা জিনিস আছে তোমার জন্য।
~ কি?
~ আগে চোখ বন্ধ করো।
~ আবার চোখও বন্ধ করতে হবে?
~ হ্যাঁ, করো।
~ আচ্ছা।
অয়ন একটা বক্স থেকে একটা গোল্ড চেইন উইথ লকেট মাহির গলায় পরিয়ে দেয়। ততক্ষনাৎ মাহি চোখ খুলে দেখে অয়ন তাকে চেইন পরিয়ে দিয়েছে। সব কিছুই স্বপ্নের মতো লাগছে মাহির কাছে।
~ অয়ন
~ হু
~ সব কিছু কেমন জানি স্বপ্নের মতো লাগছে তাই না?
~ হ্যাঁ আসলেই।
~ অয়ন,
~ হ্যাঁ বলো,
~ ভালোবাসি তোমাকে
~ আমিও।
~ আমিও কি?
~ ভালোবাসি।
~ ওহ, তো সুন্দর করে বলতে পারো না?
~ এইখানেও ঝগড়া লাগাবা নাকি তুমি?
~ আমি বুঝি ঝগড়া করি?
~ নাহ আপনি তো ভালো মানুষ।
~ থাক, যাও আর কথাই বলবো না,
~ আচ্ছা সরি।
~ সরি ফরি লাগবে না,
~ কি লাগবে?
~ কিছুই না, শুধু শুধু লাগতে আসো।
~ আচ্ছা ঠিক আছে আর লাগবো না, এইবার কাছে আসো?
~ উহু
~ এইদিকে আসো?
~ উহু,
~ বলছি আসতে,
~ উহু
~ দাড়াও
~ অয়নননননননন
~ হুসসসসসসসসসসসসসসস,
রুমের প্রতিটি লাইট অফ হয়ে যায়। রাত ভারির সাথে সাথে দুইটি দেহের সাথে দুইটি মনেরও মিলন ঘটে। গাছের মগ ডালে বাসা বেধে থাকা চড়ুই দম্পতি যেমন রাতের নীল জোছনায়
উজাড় করে ভালোবাসা বিলায় ঠিক তেমনি অয়ন~মাহিও তাদের ভালোবাসার সর্বোচ্চ শীর্ষে অবস্থান করার জন্য পাড়ি জমিয়েছে। রাতের গভীরতার সাথে গভীর হচ্ছে দুটি মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু পিপাসা। অয়নের পিঠে আচড় লেগে থাকা মাহির নখের প্রতিটা স্পট বলে
দিচ্ছে তার অয়নের মাঝে ডুবে থাকার ভালো লাগা। অয়নের প্রতিটা স্পর্শ বলে দিচ্ছে সে
মাহির গভীরে আরও গাঢ় হয়ে থাকাটা। সব মিলিয়ে রচিত হয়েছে দুটো মনের দুটো আত্নার এক অসমাপ্ত ভালোবাসার এক একটা রচনা।
অন্যদিকে রাতভর অয়নন্দিতার মস্তিষ্কে মাশফিকের আনাগোনা। আর অপর প্রান্তে মাশফিকের চোখে লেগে আছে অয়নন্দিতার নেশা। এই দুটো মনের ভালোবাসার মিলন কবে ঘটবে, প্রকৃতি তার অপেক্ষার অন্তরায়।
পর্ব ১৯
সকালের পড়ন্ত সূর্যের আলোর একটু ঝলকানি গিয়ে অয়নের চোখে লাগে। ঘুমটা ভেঙে যায় অয়নের। হাতরিয়ে খুজে টি~টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে ঘড়ির সময়টা দেখে অয়ন। ৬ টা বাজে, পাশেই মাহি ঘুমিয়ে আছে, একদম পরীর মতো লাগছে ও কে।
জানালার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো চুয়ে এসে মাহির চোখে মুখে পরছে। অয়ন আস্তে করে উঠে গিয়ে জানালার পর্দাটা আরও টেনে দিয়ে আলোটাকে আড়াল করে দেয়।
পাশে এসে বসে সে। দেখছে মাহির ঘুমিয়ে থাকাকে। মনে আছে হাজারো ভালোবাসার বাসনা। যা এক নিমিষেই পূরণ হয়ে গেল। প্রায় অনেক্ষন বসে মাহির ঘুমানোকে দেখছিল অয়ন। এইভাবে কতক্ষন বসে ছিল তা জানা নেই তার।
ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে রেডি করছে অয়ন। ৮ টার বেশি বেজে গেছে। এখনি ডাক পড়বে বাহির থেকে।
সাদা পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে নিজেকে দেখছে অয়ন। বুকের ডান পাশটায় নখের আঁচড় লেগে আছে। খুব গাঢ় না হলেও হালকা পড়ে আছে। পাশ ফিরে পিঠের দিকটায় নজর দেয় অয়ন। পিঠের বাম পাশটায়ও নখের আঁচড় লেগে আছে। অয়ন মিষ্টি হেসে দেয়।
~ পাগলী মেয়ে একটা।
নিজে রেডি হয়ে মাহিকে জাগায়। মাহি এপাশ ওপাশ করে তবুও উঠে না। বড়লোক ঘরের মেয়ে, এতো সকালে উঠার অভ্যাস নেই তার। অয়ন বুঝেও মাহিকে ডাকে।
~ এই যে ম্যাডাম, উঠেন
~ হুউউউউউ
~ উঠো, ফ্রেশ হবে না?
~ হুউউউউ
~ কি হু হু করে, মাহি উঠো
~ আরেকটু ঘুমাই না প্লিজ
~ পরে আবার ঘুমিও এখন উঠো, ফ্রেশ হবা না।
~ কয়টা বাজে?
~ ৮ টা ৩৫ বেজে গেছে।
~ অনেক দেরি হয়ে গেল কি?
~ জ্বি,
~ উপ্সসসসস, সরি। উঠতেছি
মাহিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। সূতির মধ্যে এপ্লিকের কাজ করা হলুদ শাড়িটায় দারুন লাগছিল মাহিকে। চুল শুকিয়ে রেডি হয়ে দুজনেই ৯ টায় বের হয় রুম থেকে। সবাই তো নতুন বউ দেখতে এসে বসে আছে। সেখানে আবার কথাও উঠে নতুন বউ এতো কি ঘুমায়।
~ কি গো অয়নের মা, তোমার বউ তো খালি ঘুমায়?
~ তো কি হইছে?
~ নাহ কিছু না বললাম আর কি।
এমন টাইমেই অয়নন্দিতাও রুম থেকে বের হয়। অয়নন্দিতাকে দেখে রাহেলা বেগম সবার সামনে অনেক জোড়ে ধমক দিয়ে ওঠে অয়নন্দিতাকে।
~ এতক্ষন কি ঘুমাইছিস? ঘরে যে তামাম কাজ পড়ে আছে চোখে লাগে না, বিয়ে বাড়ি সবই কি আমি করবো নাকি। নাকি মামিরা চাচিরা আছে বলে গায়ে লাগে না তোর।
এইভাবে ধমক এর আগে কখনও দেয় নাই তার মা তাকে। ধমক খেয়ে অয়নন্দিতা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এর আগেও তো অয়নন্দিতা লেট করে ঘুম থেকে উঠতো। কিন্তু আজ একেবারে ঘর ভর্তি লোকের সামনে এমনকি নতুন বউয়ের সামনেই ধমক দিয়ে বসে তার মা। পাশের বাসার আন্টি বলে উঠে,
~ আহহ অয়নের মা এইভাবে মেয়েটারে ধমকাও কেন? মেয়ে মানুষ ঘুমাবেই তো।
~ তা আমি কি আমার ছেলের জন্য বুড়ি ধরে আনছি নাকি?
~ মানে?
~ মানে বুঝেন নাই, আপনিই তো বললেন ” কি গো অয়নের মা, তোমার বউ তো খালি ঘুমায় “
~ হ্যাঁ ওইটা তোমার বউ আর এইটা তোমার মেয়ে।
~ হ্যাঁ এইটা আমার মেয়ে আর এইটাও আমারই মেয়ে। আমি বউ আনি নাই মেয়ে আনছি।
~ নতুন বউয়ের জন্য মেয়েটারে এইভাবে সবার সামনে ধমকাইবা?
~ শুনেন ভাবি একটা কথা বলি। ছেলে আমার বউ আমার মেয়েও আমার, আপনি কথা বলেন কম। যেমন ভাবে বললেন যে আমার ছেলের বউয়ের ঘুমে নিষেধ আছে।
কেন ভাবি আমার মেয়েকে কি আমি সারাজীবন ঘরে পালা দিয়ে রাখবো নাকি তাকেও একদিন বউ হয়ে যেতে হবে অন্যের ঘরে। তখন হয়তো আপনার মতো কিছু পাড়া~প্রতিবেশীরা আমার মেয়েকেও বলবে তাই আগে থেকেই ট্রেনিং দিলাম আর কি।
সেখানে উপস্থিত সবাই হা হয়ে অয়নের মা রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নন্দিতাও অনেক খুশি মায়ের এমন আচরণে। আর মাহি তার তো খুশিতে চোখের পানি চলে আসছে। প্রতিবেশী আন্টি অপমান টা হজম করতে পারে নি। তাই কেটে পড়ছে।
অয়নন্দিতার বাবা চাচা মামারা এসে কি হয়েছে জানতে চাইলে রাহেলা বেগম আরও ফায়ার হয়ে যায়।
~ কি হয়েছে এত চিল্লাও কেন তুমি রাহেলা
~ চুপ থাকো তুমি, উটকো মানুষ কই থেকে আসে আর উল্টাপাল্টা বলে, এই বাবলুর মাকে আমার এমনিতেও সহ্য হয় না, তারপরও আসে আর বাজে বাজে কথা বলে আজকে আর ছাড়ি নাই কথা শুনাই দিছি।
সব কিছু শুনে, সবাই মোটামুটি অবাক হয়ে যায়। বুঝতে পারে নি যে রাহেলা বেগম এতো তাড়াতাড়ি মাহিকে আপন করে নেবে।
~ বাবা তোমার সহধর্মিণী শুধু শুধুই আমায় বকলো
~ কি গো আমার মেয়েকে নি পেলে,
~ ও কে না বকলে ওই বেক্কল বেটিরে শিক্ষা দিতে পারতাম না
~ আহহ রাহেলা এইভাবে বলে না।
মাহি অয়ন সব কিছুই দেখছিলো, এমন সময় অয়ন মাহির কানে কানে ফিসফাস করে বলে,
~ তোমার ঘুম নিয়ে একটু বলাতে মা কিভাবে ধুয়ে দিল, বাই এনি চাঞ্চ যদি আমি কিছু বলি তাহলে তো আমিই শেষ।
~ ঠিক মতো হবে
~ ওহ হো, তোমার তো দল ভারী হয়ে গেল
~ হি হি
আদর করে ছেলে আর ছেলের বউকে খেতে বসায় রাহেলা বেগম। ডাইনিংয়ে সবাই বসেছিল। হাসি ঠাট্টায় দিন টা ভালোই কেটে যায় সবার। ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো এমন করেই ভালো থাকুক।
পরদিন রিসিপশন রাখা হয়েছে। অয়ন মাহির জন্য অনেক বড় করে রিসিপশন রাখা হয়েছে। সবাই এসেছে, অয়নের সমস্ত কলিগরা, মাহির বাড়ি থেকে সবাই, মাশফিকও এসেছে। মাশফিকের নজর অয়নন্দিতার দিকে। মাশফিকের নজর তার অয়নন্দিতাকে খুজছে। অপেক্ষার পালা ঘুচিয়ে দিয়ে অয়নন্দিতা মাহিকে নিয়ে হাজির হয় অনুষ্ঠান মঞ্চে। সাদা শাড়িতে অয়নন্দিতাকে বেশ লাগছিল। মাশফিকের চোখ অয়নন্দিতার সব কিছুর উপর। অয়নন্দিতার হাসি, চোখ, ঠোঁট, হাতের চুড়িগুলো অবদি notice করছে মাশফিক। সাদায় যেনো অয়নন্দিতাকে আরও স্নিগ্ধ লাগে। সাইড থেকে উঠে গিয়ে অয়নন্দিতার পাশে দাঁড়ায় মাশফিক। ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,
~ এই যে অপ্সরী,
~ কি
~ আমায় ঘায়েল করার প্ল্যান আছে নাকি?
~ আপনি তো আগেই ঘায়েল হয়ে আছেন।
~ উফফফফফ, এই কথা বলায় আমি পাগল হয়ে যাবো
~ আমি বেচে যাবো
~ অয়নন্দিতা
~ হুম
~ ভালোবাসি
~ ভালোবাসি।
সবাই অনুষ্ঠানের শেষে চলে যায়। মাহি আর অয়নকে বাসায় নিয়ে যান মাহির বাবা।
এক সপ্তাহ পর,
আজ অয়নন্দিতা বাসায় একা। সবাই মিলে গ্রামের বাড়ি গেছে। ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্য মিলাদ দিয়েছে অয়নন্দিতার বাবা~মা। অয়নন্দিতা বরাবরের মতো গ্রামে যেতে নারাজ। গ্রাম তার ভালো লাগে না। তাই সে ঢাকাতেই রয়ে গেছে।
মাশফিকটাও নেই। ব্যবসার কাজে দেশের বাহিরে গেছে গতকাল। মাশফিক এর কথা ভাবতে ভাবতেই মাশফিকের ফোন,
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ জ্বি ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি করে আমার অপ্সরী
~ ঝিমুচ্ছি
~ মানে কি
~ বাসায় একা আছি
~ বাকিরা কোথায়
~ গ্রামে গেছে,
~ ওহ
~ কি করেন, কয়টা বাজে ওখানে এখন?
~ এই তো সকাল ৯ টা
~ ওহ
~ আচ্ছা আপনি আজ্ঞে আর কত করবা এইবার তো তুমি বলো
~ পরে বলবো, আপনি তে আলাদা ভালোবাসা আছে
~ তোমাকে বলছে।
~ হ্যাঁ বলছে তো?
~ ভালো ভালো
~ কবে আসবেন?
~ এই তো আরও ৪/৫ দিন থাকা লাগবে,
~ ওহ। মিস করতেছি
~ তাই, দেশে আসি, পুষিয়ে দিব
~ ইসসসসস, বললেই হলো
~ সত্যি বললাম তো
~ হইছে, এইভাবে আর কতদিন মাশফিক সাহেব। আমার ভিষণ হয়।
~ কেন?
~ এইযে, কোন কিছুই হচ্ছে না। আর আমাদের এই সম্পর্ক কি মেনে নিবে সবাই
~ ইনশাআল্লাহ আমি আছি তো তাই না।
~ হ্যাঁ,
~ আল্লাহর উপরে ভরসা রাখো
~ হ্যাঁ
~ আচ্ছা বের হবো, আল্লাহ হাফেজ, সাবধানে থাকো।
~ ওকে, ফি আমানিল্লাহ। আপনিও
~ বাই
~ বাই।
৩০ মিনিট কথার শেষে অয়নন্দিতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দেড়টার মতো বাজে। অয়নন্দিতা ফ্রেশ হয়ে নামাজে দাড়িয়েছে মাত্র। এমন সময় ডোরবেল টা বেজে ওঠে। জায়নামাজ টা গুছিয়ে অয়নন্দিতা দরজা খুলেই অবাক।
~ আপনারা।
~
~ জ্বি আসুন, ভেতরে আসুন।
পর্ব ২০
রাত ২ টা। রুমে অয়নন্দিতা বসা। নতুন রুম নতুন পরিবেশ। হ্যাঁ অয়নন্দিতা এখন বিবাহিতা। আজ দুপুরেই ওর বিয়ে হয়ে গেলো। জোড় করে, ভয় দেখিয়ে, মার্ডার এর হুমকি দিয়ে অবশেষে বিয়েটা করেই নেয় ফারহান। হাতে পায়ে ধরেও লাভ হয় নি অয়নন্দিতার। এক নিমিষেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়। কিভাবে হলো এইসব?
আজ দুপুরের ঘটনা,
ডোরবেলের সাউন্ড পেয়ে অয়নন্দিতা দরজা খুলে দেয়।
~ আপনারা?
~ ভেতরে আসতে পারি?
~ হ্যাঁ আসুন, কিন্তু কারা আপনারা?
~ বলছি, আগে ভেতরে আসি?
~ জ্বি আসুন
~ আপনার ভাই কোথায় বাবা মা তারা কোথায়?
~ ওনারা বাসায় নাই, বলুন কিছু বলবেন কি?
~ এইটা নিন, রেডি হয়ে আসেন।
~ মানে,
~ মানে এখন এই মুহুর্তে আপনার বিয়ে হবে।
~ what,
~ জ্বি, যান রেডি হয়ে আসেন।
~ how dare you, idiot বেরিয়ে যান এখান থেকে।
~ ওই চুপ, একদম চুপ। গলা কেটে রেখে দিয়ে যাবো এখানে। একদম চিল্লাবি না, এতক্ষণ ভালো মতো বলছি শুনস নাই।
ওই ওর বাপ মা ভাইরে খবর দে, মেয়ের বিয়ে হবে অথচ গার্জিয়েন নাই, তা কিভাবে হয়। ফোন দে ওর সদ্য বিবাহিত ভাইরে
~ কে আপনারা, কেন এমন করছেন?
~ চুপচাপ রেডি হও, কাজী আসবে বিয়েও এখনই হবে।
~ আমি বিয়ে করতে পারবো না
~ তুই করবি না তোর বাপ করবে
~ থামেন, কি বলেন এইসব আপনি, আর আমি আপনাকে কখনো দেখিও নাই। আমি আপনাকে বিয়ে করতে যাবো কেন?
~ করবি করবি, যখন সামনে সব ফাকা দেখবি তখন বিয়ে কেন অনেক কিছুই করবি। তোর ভাই তো বিয়ে করে সুখেই আছে এখন তোর পালা।
~ কে আপনি?
~ জানবি, সব জানতে পারবি। আগে বিয়ে টা তো কর।
~ আমি বিয়ে করবো না, আপনাকে তো কখনোই না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।
~ গ্রেট, ওয়াও। এখন থেকে আমাকে ভালোবাসিস, নেহ তারাতারি রেডি হ
~ প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন, কেন এমন করছেন। কেন?
~ উত্তর পাবি। তার আগে বিয়ে টা হোক?
~ উফফফফ, আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না
~ হ্যাঁ, মাশফিক এর সাথে আমি পরে বুঝে নিবো, আগে তোর সাথে মিটাই।
ছেলেটার কথা শুনে অয়নন্দিতা অবাক হয়ে যায়। মাশফিক কে কিভাবে চিনে সে? তার মানে কি এই ছেলে পূর্ব পরিচিত। কিন্তু অয়নন্দিতার যত টুকু মনে পরে এই ছেলেকে সে এই প্রথম দেখছে। তাহলে সে এতো কিছু জানে কিভাবে।
~ আপনি কে?
~ এর আপনি কে আপনি কে শেষ হবে না? মন টায় চায় এখনি ছুরি চালিয়ে দেই গলার মধ্যে।
~ হ্যাঁ মেরে ফেলুন তবুও আমি বিয়ে করবো না।
~ এতো সহজে মারবো না, তিলে তিলে, পিষে পিষে, নিংড়ে নিংড়ে মারবো। আস্তে আস্তে অনেক কিছুই দেখার বাকি আছে তোর, চোখের সামনে অনেক কিছুই দেখতে হবে তোকে।
~ মানে?
দুই ঘন্টার মধ্যে জোড় করে বিয়ে করে নেয় অয়নন্দিতাকে। তার পরিবার ছাড়াই। বিয়ের ঠিক দেড় ঘন্টা পর অয়নন্দিতার পরিবার আসে বাসায়। অয়নন্দিতা মূর্তির মতো বসা। পরনে সেই হলুদ থ্রি পিছ টা পরা, মাথায় ঘোমটা দেয়া। মা আর মাহিকে দেখে চিৎকার দিয়ে কেদে দেয় সে। সব থেকে কষ্টের কথা হচ্ছে মাশফিককে কি উত্তর দিবে। যার সাথে ৫ ঘন্টা আগেও কথা হয়েছে। আর তার ৫ ঘন্টা পর সে অন্যের স্ত্রী। এটা কি করে সম্ভব হলো।
এইভাবে জোড় জবরদস্তি করে বিয়ে করায় সবাই আতংকিত। অয়নন্দিতার শুধু দুইটা টেনশন ছিল। এক তার ভাই আর দুই তার ভালোবাসা। অয়নের কোন ক্ষতি কিছুতেই অয়নন্দিতা হতে দিবে না আর মাশফিককে কি জবাব দিবে। অয়নন্দিতার জীবনে তীর্থের কাকের মতো উড়ে এসে জুড়ে বসে জায়গায় করে নিলো ফারহান নামের অচেনা অজানা ছেলেটা। ভাগ্য বুঝি এমনি হয়। কপাল বুঝি একেই বলে।
অয়নন্দিতাকে বিদায় দেয়ার পালা। অয়ন হতবাক, কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। মাহির মাথায় বোঝা হয়ে আছে নিজের সব থেকে ভালো বান্ধবীর এই করুণ অবস্থা দেখে। বাবা~মায়ের মনের মধ্যে কে যেন ছুরি চালাচ্ছে মেয়ের এই কান্না আহাজারি দেখে। হঠাৎ ফারহানের মোবাইলে কল আসে।
~ কাজ হয়ে গেছে, টেনশন নিস না৷। শত্রু নিয়েই ঘরে ফিরতেছি
ফারহানের কথায় আরেকটু অবাক হয় অয়ন৷। কিন্তু বলার উপায় নেই। ফারফানের সাথে থাকা ছেলে গুলার এক এক জনের হাতে পিস্তল, ছুরি আরও কিছু অস্ত্র। এই ফ্ল্যাটে এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে অথচ বাহিরে কাক পক্ষিতেও টের পাচ্ছে না। ঘরে নতুন বউ, অয়নন্দিতাও চায় না এর প্রভাব মাহির উপরে পড়ুক। এক রকম নিজেকে বলি দিয়ে দিলো অয়নন্দিতা নিজের পরিবার আর নিজের ভাইটাকে বাচানোর জন্য।
সন্ধ্যার পর জোড় করে অয়নন্দিতাকে তুলে নিয়ে যায় ফারহান। পরশু দিনের জন্য ইনভিটেশনও দিয়ে যায়। অয়নন্দিতার বাবার হাতে বাড়ির ঠিকানা ধরিয়ে দেয় ফারহান। মেয়েকে টেনে হিচরে নেয়ার পর সেখানেই অসুস্থ হয়ে যান অয়নন্দিতার বাবা। মায়ের বাকশক্তিও কাজ করছে না সেই টাইমে। মাহির চোখে অঝোর শ্রাবণ ঝড়ছে।
পুরো রাস্তা গাড়িতে কেদেই গেছে অয়নন্দিতা। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে এইসব মেলাতে। পাগল হয়ে যাচ্ছিল সে। তারপর হঠাৎ গাড়ির পার্কিং লটের এরিয়া দেখেই অয়নন্দিতার বুকে আরও জোড়ে চাপ দেয়। না চাইতেও আপনা আপনি চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার। ফারহান অয়নন্দিতার হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে নামায়। হাতে প্রচন্ড প্রেশার ক্রিয়েট করায় ব্যাথাও পায় অয়নন্দিতা। বাড়ির আশেপাশের এরিয়া অয়নন্দিতাকে নাড়িয়ে রেখে দেয়। ফারহান বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে৷। আর চিৎকার করে একটা নাম উচ্চারণ করতে থাকে,
~ সাজি, সাজি, কোথায় তুই। দেখ কাকে নিয়ে আসছি। সাজি, সাজি।
বাসা দেখে আর ফারহানের মুখে সাজি নামটা শুনে অয়নন্দিতার বুঝতে বাকি নেউ যে সে হয়তো নরকে পা দিয়ে ফেলেছে। ফারহানের চিৎকারে সাজি, সাজির বাবা, মা সবাই নিচে নেমে আসে।
~ ভাইয়া
~ নেহ, তোর চির শত্রুকে সারাজীবনের জন্য তোর সামনে এনে হাজির করিয়ে দিলাম।
~ আহহহহহ, ভাইয়ায়ায়ায়ায়া, আহহহহহ, কি যে শান্তি লাগছে আমার। অয়নন্দিতা, মিস অয়নন্দিতা উহু উহু মিসেস অয়নন্দিতা। হা হা হা যে কিনা আমার ভাইয়ের বউ আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ। তোমার দিন এখন থেকে উল্টো ঘুরবে মিসেস অয়নন্দিতা। আমায় আমার ভালোবাসা পেতে দেও নাই এখন তুমিও তোমার ভালোবাসা থেকে অনেক দূরে। আহহহহ, কি হবে মাশফিক বেচারার।
রমজান সাহেব ছেলে মেয়ের কথোপকথন শুনে অবাক। তার নিজের ছেলে এইভাবে অন্যের মেয়েকে তুলে আনবে তাও বিয়ে করে এটা ওনার কল্পনার বাহিরে ছিল।
~ ফারহান
~ হ্যাঁ বলো
~ এইসব কি?
~ কোন সব কি?
~ অয়নন্দিতা এইখানে কেন
~ এইখানে কেন মানে, তোমার বাড়ির বউ এইখানে থাকবে না তো কি বাহিরে থাকবে নাকি।
~ মানে কি এইসবের?
~ মানে এ তোমার বাড়ির বউ।
ফারহানের কথা শুনে চমকে যায় রমজান সাহেব। ছেলের কথার ধাচ একদম অন্য রকম শুনা যাচ্ছে। আর সাথে মেয়েরও
হঠাৎ করে সাজি চিল্লানি দিয়ে ওঠে।
~ কাউন ডাউন শুরু মিসেস অয়নন্দিতা, তোমার লাইফ আমি নরক করে ছেড়ে দেবো,
এই বলে সাজি উপরে চলে যায়। ফারহানও চলে যায় নিজ গন্তব্যে। নিচে রয়ে যায় রমজান সাহেব এবং তার স্ত্রী। অয়নন্দিতার নজর পড়ে রমজান সাহেব এর উপরে। মেয়েটাকে কি বলবে খুজে পাচ্ছে না রমজান সাহেব। এমন সময় অয়নন্দিতা রমজান সাহেব এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
~ মারে আমায় ক্ষমা করে দিও, আমি জানতাম না এইসব। ফারহান আমাদের কিছুই বলে নাই এই ব্যাপারে।
~ আংকেল আপনি একজন ব্যর্থ বাবা। না পেরেছেন মেয়েকে ভালো করতে না পেরেছেন ছেলেকে মানুষ করতে
~ অয়নন্দিতা, মা আমার কি বলা উচিত জানি না। তবে তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও মা
~ আন্টি আপনার ছেলে মেয়ে আমাকে জিন্দা লাশ করে দিলো।
অয়নন্দিতার এমন কথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে রমজান সাহেব। আজ বড্ড বেশি আফসোস হচ্ছে তার। অবশেষে অয়নন্দিতাকে ফারহানের রুমে রেখে আসে ফারহানের মা।
খাটে বসে এতোক্ষন সব কিছু অনুধাবন করছিল অয়নন্দিতা। মাশফিক না জানি কতবার কল দিয়েছে মোবাইলে। বার বার কল দিয়ে হয়তো মোবাইল টা অফ পাচ্ছে। মাহির কাছে কল দিবে না তো?
~ আল্লাহ এ কেমন খেলা খেললে আমায় নিয়ে। যাকে এতো ভালোবাসলাম আজ আমি নিজেই তাকে ঠকিয়ে দিলাম। মাশফিক আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না। কখনো না, কখনো না।
হঠাৎ এমন সময় রুমের দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে ফারহান। হাব ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে মদ খেয়েছে। অয়নন্দিতার কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখন নিজেকে কি করে বাচাবে সে।
পর্ব ২১
রুমের দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে ফারহান। হাব ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে মদ খেয়েছে। অয়নন্দিতার কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখন নিজেকে কি করে বাচাবে সে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে অয়নন্দিতা। ভয়ে মুখটা শুকিয়ে গেছে। ফারহান রুমে ঢুকে এক মনে কিছুক্ষণ অয়নন্দিতাকে দেখলো। তারপর কি যেনো ভেবে টেবিলের উপর থাকা টেবিল ল্যাম্প টা আছাড় দিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। এক লাফে অয়নন্দিতার একদম কাছে চলে যায় ফারহান। অয়নন্দিতার চুলের মুঠি ধরে ফারহানের একদম কাছে নিয়ে আসে।
~ আমার বোন যতটুকু কেদেছে তার থেকেও দ্বিগুণ কাদতে হবে তোমাকে মিসেস ফারহান শেখ। আজ থেকে এই নামেই তুমি পরিচিত হবে সবার কাছে এমনকি তোমার সো কলড প্রেমিকের কাছেও। তোমার খেলা শেষ এখন আমার খেলা শুরু। দেখি কত দৌড়াতে পারো তুমি।
তারপর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় অয়নন্দিতাকে ফারহান। পাশেই মুখ থুবড়ে পরে। নেশার ঘোরে থেকে ঘুমিয়ে যায় সে। আর অয়নন্দিতা বিমূর্ত হয়ে বসে থাকে। উপলব্ধি করতে থাকে এই বাড়িতে তার সাথে কি কি ঘটতে চলেছে। দুই ভাই বোন মিলে ওর জীবন নরক করে ছাড়বে। জোড় করে বিয়ে তারপর হুমকি। মাশফিক এর সাথে কথা বলতেই হবে তার। কাল সকালেই মাশফিককে কল দিবে অয়নন্দিতা। সারারাত কাদতে কাদতে শেষ রাতের দিকে একটু চোখ লেগে আসে অয়নন্দিতার।
পানির ঝাপটায় লাফ দিয়ে উঠে অয়নন্দিতা। চোখ মেলে দেখে ফারহান সামনে দাড়ানো।
~ নবাবজাদী উঠেন আর কত ঘুমাবেন।
পুরো এক বালতি পানি অয়নন্দিতার গায়ে ঢেলে দেয় ফারহান। এই মুহুর্তে ফারহানকে কষে দুইটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা হচ্ছে অয়নন্দিতার। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় নাই। তাই চুপচাপ উঠে চলে যায়।
~ ওই দাড়াও
~
~ এই ভেজা শরীর নিয়ে কোথায় যাও
~ ভিজিয়েছেন কেন তাহলে
~ প্রশ্ন নয়, কাবার্ডে দেখো জামা কাপড় আছে পরে নেও
~ আপনি নিতান্তই একটা বেয়াদব মানুষ, এটা কি আপনি জানেন?
~ জানি, এই বেয়াদবই তোমাকে আদব শেখাবে এখন থেকে প্রতিনিয়ত, সহ্য করতে হবে।
~ পিছু ডাকবেন না আমায়, বের হবো এখন আমি
~ ওহ রিয়েলি এই ভেজা শরীরে রুম থেকে বের হবে? হও, তারপর নিচে সবার সামনে তোমার শরীর থেকে একটা একটা কাপড় সরাবো, ভালো লাগবে তখন?
~ ohhh shut up, just shut up আপনি একজন নোংরা মানসিকতার নোংরা মানুষ। এটা কি আপনি বুঝেন?
~ হুহ, হাসিও আসে। আমার বোন যতটুকু কষ্ট পেয়েছে তার প্রত্যেকটা সুদ সমেত আদায় করবো। সেই অবদি অপেক্ষা করে থাকো।
~ আপনি বের হোন এখান থেকে, বের হোন
~ বাহ আমার রুম থেকে আমাকেই বিতারিত, তোমার অবস্থা অনেকটা ফাঁদে পড়া সিংহের মতো। সব আছে শুধু ফাঁদ থেকে বের হবার মতো চাঞ্চ নাই।
~ আপনি বের হোন।
দরজা আটকে কিছুক্ষণ কেদে নেয় অয়নন্দিতা। কান্না করা ছাড়া আপাতত আর কোন উপায় নেই তার। পুরাই আটকে গেছে সে। না না সময় নষ্ট করলে হবে না। তারাতারি মাশফিক কে সব জানাতে হবে।
অয়নন্দিতা কোন রকম রেডি হয়ে ল্যান্ড লাইন থেকে মাশফিক এর নাম্বারে ডায়াল করে। দুইবার রিং বেজে যায়, কিন্তু রিসিভ করার নাম নাই। তৃতীয় বার নাম্বার টা ডায়াল করতেই ফোন নট রিচেবল বলে। ৫/৬ বার বার বার ডায়াল করে যায় কিন্তু ফোনই যাচ্ছে না। এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠে,
~ মিসেস অয়নন্দিতা ফারহান, লুক এট মি
ভয়েস টা ফারহানের তার অয়নন্দিতা বুঝতে পারে। টেলিফোন টা কান থেকে নামিয়ে নিয়ে পিছন ফিরে তাকায় অয়নন্দিতা।
~ কি ব্যাপার, ফোন যাচ্ছে না?
~
~ ফোন যাবে কিভাবে আমি তো এই রুমের ল্যান্ড লাইন এইমাত্র কেটে দিলাম।
~ মানে, আপ,আপনি
~ হ্যাঁ, আমি
প্রচন্ড ক্ষীপ্ত হয়ে এসে জোড়ে অয়নন্দিতার দুই বাহুতে প্রেশার দেয় ফারহান।
~ how dare you কাকে ফোন করতে গেছিলি? হ্যাঁ কাকে ফোন দিতে গেছিলি? তোর নাগরকে? আমি বুঝতে পারবো না ভাবছিস? আমি তোর মতো এমন হাজার টা অয়নন্দিতা জন্ম দেই প্রতিনিয়ত আর তুই এক রত্তি মেয়ে আমায় ফাকি দেস।
~ আমার হাত টা ছাড়ুন, লাগছে আমার।
~ লাগুক, লাগাতেই তো চাই, লাগুক। তোর সাহস হয় কি করে তুই আমার বাসায় দাঁড়িয়ে তোর পুরাণ প্রেমিক কে ফোন দেস, তোর কি জানের ভয় নাই?
~ নাহ নাই, নাই আমার জানের ভয়। কা~পুরুষ, নির্লজ্জ, বেহায়া পুরুষ। চোরের মতো পরিচয় গোপন করে আমায় জোড় করে বিয়ে করছিস এটা জানা সত্যেও আমি একজনকে ভালোবাসি, লজ্জা করে না আমার সামনে দাড়াতে তোর।
~ চুপ, চুপ কর
~ কেন চুপ করবো, করবো না চুপ আমি, খারাপ লোক, কা~পুরুষ, নোংরা মানসিকতার লোক। আমি তো ভেবেছিলাম তোর বোন সাইকো এখন তো দেখি তুইও সাইকো।
~ কিহহহহ, চুপ একদম চুপ। আমার বোনের দিকে আঙ্গুল তুলিস না, বার বার বলতেছি।
~ তোর পুরা বংশটাই সাইকো, অসভ্য, অশিক্ষিত বর্বর লোক। ছাড় আমাকে। আমি মাশফিকের কাছে যাবো।
~ কোথায় যাবি তুই? কোথায় যাবি?
~ কানে শুনতে পাস না, আমায় ছাড়। আমি মাশফিকের কাছে যাবো।
~ যাওয়াচ্ছি তোকে মাশফিকের কাছে। এমন অবস্থা করবো না, মাশফিক কেন জীবনে অন্য পুরুষের নাম মুখ দিয়ে আসবে না।
~ কুত্তারবা ছাড় আমায়।
ফারহান বুঝতে পারে নি যে অয়নন্দিতা গালি দিয়ে দিবে। ওর মেজাজ এমনিতেই হাইভোল্টেজ হয়ে থাকে। কিন্তু এইভাবে গালি খাবে ভাবে নাই। গালিটা শুনে আরও হিংস্র হয়ে যায় ফারহান। অয়নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফালায়। তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। শার্টের বোতামগুলো খুলতে খুলতে অয়নন্দিতার সামনে এগিয়ে আসে ফারহান।
~ আমি কুত্তারবাচ্চা? হ্যাঁ আমি কুত্তারবাচ্চা?
~ ক,ক,কি, কর,করছেন কি আপনি?
~ এখন আপনি, এতক্ষন তো দিব্বি তুই তুকারী করলি
~ সরে যান বলতেছি
~ আমি কুত্তারবাচ্চা, আজ এই কুত্তারবাচ্চার প্রতিটা আচর সহ্য করতে হবে তোকে। তারপর দেখি তুই কোন মাশফিকের নাম নেস তোর ওই মুখে।
~ প্লিজ না, আমার ভুল হয়েছে, আমি আর কিছু বলবো না। দয়া করে ছেড়ে দিন আমায় প্লিজ।
ফারহান হিংস্র পশুর মতো অয়নন্দিতার উপর পড়ে। অয়নন্দিতার দুহাতে নিজের দুহাত আবদ্ধ করে দেয় ফারহান। বুকের ওড়না টা সরিয়ে নেয়, দুটো পা কে নিজের দু পায়ের ভাজে নিয়ে নেয়। অয়নন্দিতা যেন চিৎকার করার শক্তিটাও হারিয়ে ফেলেছে। ওর মায়ের কাছে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওর বাবাকে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওর ভাইয়ের পিছনে লুকাতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ ও একদম একা। সকাল বেলা চিৎকার করলে বাড়ির লোকের সাথে বাড়ির কাজের লোক গুলাও শুনবে। চাপা স্বরে আর্তনাদ করছে অয়নন্দিতা। বার বার নিজেকে রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা। বিছানার চাদর ওলটপালট হয়ে গেছে। ফারহানের পা ধরা বাকি ছিল অয়নন্দিতার। অয়নন্দিতার আর্তনাদ ফারহানের কানে যায় নি। হাতের চাপে চুড়ি ভেঙে হাত দিয়ে ঢুকে যায় অয়নন্দিতার। গলার নিচে বুকের একটু উপরে কামড়ের যন্ত্রণাটায় যেন কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে তার। আধা ঘন্টা পর প্রচন্ড ব্যাথায় শেষ চিৎকার করেই বসে অয়নন্দিতা। ফারহান তখনও অয়নন্দিতার মুখ চেপে ধরে আছে। দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। পুরো শরীর অসার হয়ে গেছে তার। কখন যে সেন্সলেস হয়ে গেছে নিজেও জানে না।
এক ঘন্টা পর অয়নন্দিতার উপর থেকে সরে দাঁড়ায় ফারহান। রক্তাক্ত অবস্থায় অয়নন্দিতা বিছানায় পড়ে আছে। জ্ঞানহীন শরীর টা যেন লাশ হয়ে আছে। ফারহান উঠে শার্ট টা পরে নেয়। একবার অয়নন্দিতার মুখের দিকে তাকায়। ঘাড়ের দিকটায় রক্ত। বুকেও সেম, দুইহাতের বাহুর উপরে আচরের দাগ আর সব থেকে মর্মান্তিক যেটা তা হচ্ছে অয়নন্দিতার পায়ের নিচে রক্ত। সাদা নূপুরগুলোও রক্তে লাল হয়ে গেছে। ঠিক মতো খেয়াল করায় ফারহান দেখে নূপুরের হুক গিয়ে পায়ের গোরালির উপরের অংশে ঢুকে গেছে। ফারহানের মাথায় কাজ করছে না। কি থেকে কি হয়ে গেলো। এটা তো রে হলো। ফারহান সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ফারহানের মা অয়নন্দিতার কথা জিজ্ঞেস করে। উত্তরে কিছু না বলেই বাড়ির বাহিরে চলে যায় ফারহান। রমজান সাহেবও অবাক।
~ রওশন
~ জ্বি বলুন
~ অয়নন্দিতার বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমাকে
~ আমাকেও চাইতে হবে। ছেলে~মেয়ের কৃতকর্মের দ্বায়ভার তো আমাদেরই নিতে হবে।
~ হ্যাঁ, গিয়ে দেখো তো অয়নন্দিতা কি করছে, ডেকে আনো কথা বলি
~ জ্বি আচ্ছা।
রওশন বেগম সিড়ি দিয়ে বেয়ে রুমে যায় অয়নন্দিতাকে ডাকার জন্য। কিন্তু উনি বুঝতে পারে নি রুমে অন্য কিছু অবস্থান করতেছিল। রওশন বেগম রুমে ঢুকে পুরাই বেকুব হয়ে যায়। অয়নন্দিতা এইভাবে পড়ে আছে। পা থেকে মাথা অবদি খেয়াল করেন তিনি। তিনি বুঝে যন কি হয়েছে। তিনি তারাতারি নিচে নেমে আসেন।
~ কি হলো, অয়নন্দিতা আসে নাই?
~ আসলে গিয়ে দেখলাম ঘুমাচ্ছে, তাই আর ডাকি নি। তুমি অফিস থেকে ফিরে আসো তখন না হয় কথা বলে নিও
~ আচ্ছা, সাজি কোথায়?
~ রুমেই আছে ঘুমাচ্ছে
~ ওহ আচ্ছা, আসছি তাহলে।
~ আচ্ছা এসো।
রওশন বেগম সব কিছু সেড়ে তারাতারি রুমে যায়। কিছু এন্টিসেপ্টিক নিয়ে আসে। তারপর অয়নন্দিতার রুমে যায়।
আস্তে করে অয়নন্দিতার মাথার কাছে বসেন তিনি। অয়নন্দিতার শরীর বলে দিচ্ছিলো তার শরীরে লেগে থাকা ক্ষতগুলো ওনার নিজের পেটের ছেলের করা। ছি ছি এমন কুলাঙ্গার ছেলেকে পেটে ধরেছেন তিনি যে কিনা বিয়ে করা বউকেই,। ছি ছি ছি
আস্তে আস্তে অয়নন্দিতাকে ডাকে রওশন বেগম। রওশন বেগমের লাগাতার ডাকে অয়নন্দিতার শরীর নড়ে ওঠে। চোখ মেলে তাকায় সে। শরীরে শত শত ওজন ব্যাথা মনে করছে সে। বহুত কষ্টে উঠে বসেন। এই মুহুর্তে নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে অসহায় মনে করছে অয়নন্দিতা। তার মাকে লাগবে এখন। রওশন বেগমকে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে অয়নন্দিতা।
~ মায়ায়ায়ায়ায়ায়া, ও মা, মায়ায়ায়ায়া
মাগো, সব শেষ মা। ও মা, মায়ায়ায়ায়া
অয়নন্দিতার আর্তনাদে রওশন বেগমের আত্না লড়ে যায়। জড়িয়ে ধরে রাখেন তিনি অয়নন্দিতাকে।
~ কাদিস না মা। কাদিস না।
~ ও মা, মা, আমার সব শেষ হয়ে গেছে মা
~ মারে উঠ, গোসল করতে হবে, উঠ মা
~ উনি কেন এমন করলেন, আপনার ছেলে কেন এমন করলো মা, আমি কি ক্ষতি করছিলাম আপনাদের মা
~ মারে উঠ মা, দেখি দাড়া, আয় ওয়াসরুমে আয়।
ওড়নাটা কোন রকমে শরীরে পেচিয়ে ওয়াসারুমে নিয়ে যায় অয়নন্দিতাকে। শাওয়ার ছেড়ে অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে আছে। পানির সাথে আজ লাল রক্তের ছাপও বের হচ্ছে। পানির সাথে লাল রক্তও মিশে লাল হয়ে পড়ছে অয়নন্দিতার শরীর থেকে। ওয়াসরুমের সাদ টাইলস গুলো রক্ত পানির স্বাক্ষী হয়ে আছে। চোখ যেনো আর বাধ মানছেই না। অঝোরে ঝরেই যাচ্ছে। এই মুহুর্তে অয়নন্দিতার তার মাকে প্রয়োজন। তার বাবাকে প্রয়োজন তার ভাইকে প্রয়োজন।
ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখে সামনে রওশন বেগম দাঁড়িয়ে আছে। মহিলাটা বড়ই নিরুপায়। চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। না চাইতেও অয়নন্দিতা তাকে মা ডেকে ফেলেছে।
~ মা আমায় একটা ফোন দিবেন? আমি বাসায় ফোন দিবো
~ হ্যাঁ রে মা দিবো, তুই আগে এইদিকে আয়।
অয়নন্দিতাকে খাটের উপরে বসিয়ে দুইটা ওষুধ হাতে ধরিয়ে দিলেন। ওষুধ গুলো দেখে বড় অবাক অয়নন্দিতা।
~ মা এইগুলা?
~ এন্টিবায়োটিক আর প্যারাসিটামল ঘা আর ব্যাথা শুকাতে কাজে আসবে। আর এইটাও খেয়ে নেও
~ এইটা কি?
~ প্রশ্ন করো না।
~ আমায় তুই করে বলিয়েন মা।
~ খেয়ে নে মা।
রওশন বেগমের কথায় ৩ টি ওষুধই খেয়ে নেয় অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতা রওশন বেগমের ফোন থেকে বাসায় ফোন দেয়।
ফোন রিসিভ করে মাহি।
~ হ্যালো
~ হ্যালো মাহি
~ অয়নি? মা ও মা অয়নি ফোন দিয়েছে
~ হ্যালো মাহি মাকে দে
~ এই নে মায়ের সাথে কথা বল
মা মেয়ে মোবাইলের অপরপ্রান্তে আহাজারি আর আর্তনাদ করছে। রওশন বেগম নিজের অজান্তেই কেদে দিয়েছে।
~ মাগো কবে আসবা মা
~ সাজির ভাই যে এমন করবে ভাবি নাই আমরা, অয়ন মাথা ফাটায় ওর জন্যই তোর এমন হলো
~ ভাইয়াকে বলো শান্ত হতে। মাগো বাবা কই
~ তোর বাবা অসুস্থ হয়ে গেছে। এখন ঘুমায়
~ মা কবে আসবা আমায় দেখতে?
~ কাল আসবো সাথে কিছু প্রশ্ন নিয়ে।
~ মা ভাইয়াকে এনো না
~ আমরা না আনলেও ও ঠিকই আসবে রে মা। মারে পুরো এপার্টমেন্ট জেনে গেছ্ব তোর বিয়ে হয়ে গেছে। আবাই আসে ধরে ধরে প্রশ্ন করে। উত্তর দিতে পারি নারে মা।
~ আমি কেন মরে যাই না মা, কেন মরে যাই না আমার জন্য সব হলো।
~ কাদিস না, আল্লাহ আছেন। কাদিস না। ফারহানের মা কোথায়
~ এই তো এখানেই আছে।
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় অয়নন্দিতা। রওশন বেগম নিচে গেলে নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করায় অয়নন্দিতা। ফারহানের করা প্রতিটা আঘাতের চিহ্ন তার গায়ে। শেষ সম্বল টুকুও আজ কেড়ে নিয়েছে সে।
রাত ১ টা,
অয়নন্দিতা শুয়ে আছে খাটে। হঠাৎ ফারহান রুমে আসে। দরজার আওয়াজ পেয়ে অয়নন্দিতা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ফারহান ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে লাইট অফ করে শুয়ে থাকে। দুজন দুদিকে, ফারহান এর মনে কোথাও লজ্জাবোধ কাজ করছে।
তখন মাথা গরম করে একটা ভুল করে ফেলেছে। একটা গালির শাস্তি আর যাই হোক এইভাবে জোড় করে সব কেড়ে নেয়া হতে পারে না। আবার ভাবে এই মেয়ের জন্যই তো তার বোন এতো কষ্ট পেয়েছে। আর অয়নন্দিতা সে ভাবছে, তার সব কিছুই শেষ। মাশফিকের কাছে ফিরে যাওয়ার মুখ আর তার নেই। কি মুখ নিয়ে দাড়াবে সে মাশফিকের কাছে। কাল বাবা~মা, ভাই আসুক। তখনই সব কথা হবে।
পর্ব ২২
পরদিন দুপুরের দিকে অয়নন্দিতার পরিবার সেখানে হাজির হয়। অয়নন্দিতার বাবা মা ভাই মাহি পুরো চার জনই আসে। বাসায় তখন সবাই ছিল। অয়নন্দিতাও অপেক্ষায় ছিল কখন ওর পরিবার আসবে। আয়োজন ছিল অনেক কিছুরই। কিন্তু তাদের চিন্তাভাবনা ছিল অন্য রকম।
মুখোমুখি হয়েছে অয়নন্দিতার বাবা আর ফারহানের বাবা। প্রশ্ন অনেক, কিন্ত রমজান শেখ এর মাথা নিচু। সন্তান কাজই এমন করছে। যার কোন উত্তর নেই।
উপরের ঘরে মাহি অয়নন্দিতা আর অয়নন্দিতার মা। কেদে কূল পাচ্ছে না অয়নন্দিতা। সামলাতে কষ্ট হচ্ছে নিজের। নিচে অয়ন আর অয়নের বাবা সাথে রমজান শেখ আর রওশন বেগম। কি বলবে না বলবে সব ধোয়াশা।
~ আপনার ছেলে এক জেদ বজায় রাখতে গিয়ে আরেক অন্যায় করে ফেললো।
~ ভাই, আমি বুঝতে পারছি আপনাদের কষ্ট টা, কিন্তু ভাই বিশ্বাস করেন আমি কিছুই জানতাম না।
~ আংকেল সাজির ব্যাপার নিয়ে আপনার ছেলে আমার বোনের লাইফ নষ্ট করে দিল আমরা নিতান্তই ভদ্র সমাজের তাই আমরা এসেছি অন্য কেউ হলে আপনার ছেলেকে জেলের ভাত খাওয়াতো।
~ বাবা অয়ন, আমি সব বুঝি বাবা। কসম আল্লাহর বাবা আমি বা তোমার আন্টি সাজির ব্যাপারে ছিলামই না। ফারহান এমন কাজ করবে ভাবিও নাই বাবা।
~ আংকেল আমরা বাসায় ছিলাম না এই সুযোগ টাই ও কাজে লাগিয়েছে। ও গুন্ডা নিয়ে গেছে বাসায়। প্রত্যেকের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আংকেক আপনারা এতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এতো পাওয়ার আপনাদের, এইসবের জন্যেই কি এমন করলেন?
~ অয়ন শুনো, বাবা আমিও মা। সন্তানের কষ্ট আমিও বুঝি কিন্তু বাবা আমরা এইসব জানতাম না। অয়নন্দিতা ঘরে আসার পরে সব জানছি।
~ দেখুন আপা, আমি বরাবরই শান্ত স্বভাবের মানুষ। আপনাদের মতো এতো বড়লোক না তবে আমারও কিছু সম্মান আছে। আপনার ছেলে আমার অবর্তমানে আমারই বাসায় ঢুকে জোড় করে আমার মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে। পুরা এপার্টমেন্ট ভাবছে হয়তো আমার মেয়েই খারাপ। এটা হওয়ার কথা ছিল না
~ ভাই আমি খুবই লজ্জিত, আমার জন্য আমার ছেলের জন্য এতো কিছু হয়েছে।
~ আংকেল এতো কিছু যখন হয়েছে তখন এর সমাধানও আছে। আমরা আমাদের মেয়েকে নিয়ে যাবো।
~ এটা কি বলো অয়ন, বিয়ে হয়ে গেছে। অয়নন্দিতা এখন এ বাড়ির বউ
~ কিসের বউ আন্টি। কেমন বউ? কাজী ডেকে, উকিল এনে জোড় করে বিয়ে করছে আপনার ছেলে।
~ সেইজন্যেই তো বলা বাবা, বিয়ে হয়ে গেছে। এখন নিয়ে যাই বললে কি করে হবে।
অপরদিকে উপরের ঘরে মাকে জড়িয়ে কেদেই যাচ্ছে অয়নন্দিতা। মাহিও কাদছে। নিজের সব থেকে কাছের মানুষ টার এতো দুঃখ সহ্য করতে পারছে না সে যেই জায়গায় আজ অয়নন্দিতার জন্যেই সে অয়নের ঘরে আছে।
~ মা রে, শুন মা। কাদিস না। চল তোকে নিয়ে যেতে এসেছি আমরা।
~ হ্যাঁ অয়নি, মা ঠিকই বলেছে। চল তোকে আমরা নিয়ে যাবো।
পরক্ষনেই গতকাল সকালের কথা মনে পড়ে যায় অয়নন্দিতার। কিসের জোড়ে যাবে সে। তার তো সব শেষ হয়ে গেছে। জোড় করে ফারহান তার সব কেড়ে নিয়েছে। সম্মান, ইজ্জত সব কিছু কেটে নিয়েছে। দাগ লাগিয়ে দিয়েছে তার গায়ে। যে দাগ কখনোই মুছবে না। শরীরের প্রতি জায়গায় জায়গায় ফারহান তার চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছে। এখন চাইলেও পিছনে ফেরার উপায় নেই তার। শরীর নেড়ে ওঠে কালকের কথা মনে হলে। চোখের পানি বার বার থামতে গিয়েও থেমে নেই।
~ বাবা আর ভাইয়াও কি সেইজন্য এসেছে?
~ হ্যাঁ রে মা,
~ নাহ মা, তা আর হয় না
~ মানে কি হয় না?
~ বিয়েটা তো হয়েই গেছে মা।
~ কি সব বলছিস তুই অয়নি
~ হ্যাঁ রে, হয়ে গেছে বিয়ে টা।
~ এটা কোন বিয়ে?
~ কবুল বলেছি তো তিন বার। সাইনও করেছি
~ হ্যাঁ সেটা তো চাপে পড়ে।
~ হয়তো কপালে এটাই ছিল
~ আমার জন্য এইসব করলি, তাই না রে অয়নি?
~ নাহ, কপালে ছিল।
~ কি সব বলছিস তুই মা
~ হ্যাঁ মা। আসো নিচে যাই।
~ কিন্তু,
~ চলো,
~ দাড়া অয়নি, মা আপনি আগান আমরা আসছি।
~ আচ্ছা,
~ অয়নি দাড়া,
~ হ্যাঁ বল
~ যেতে চাচ্ছিস না কেন?
~ কিছু নিরবতা লুকানো থাক
~ নাহ বল,
~ এই দেখ।
এই বলে অয়নন্দিতা তার বুক থেকে আঁচল টা সরিয়ে দেয়। পিছন ফিরে পিঠ টাও দেখিয়ে দেয়।
~ এইসব কি আল্লাহ?
~ আমার শরীরে এখন তার দেয়া দাগ। শেষ সব শেষ। আমি এখন আর আমি নাই। ঘেন্না লাগে নিজের প্রতি তবুও বেচে আছি। শুধু শাস্তি দেয়ার জন্য। সব শোধ তুলবো এক এক করে।
~ তোদের মাঝে কি?
~ আমাদের মাঝে না। ও নিজ থেকে, কাল কুত্তারবাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলাম তার শোধ নিয়েছে এইভাবে
~ ছি, এ কেমন জানোয়ার।
~ চল নিচে যাই।
~ থাকবি কেমন করে?
~ মেরে নিজেও মরে যাবো
~ কি সব বলিস।
~ আয় নিচে
নিচে ড্রইংরুমে সবাই কথা বলছে। অয়নন্দিতার পরিবার তাকে নিয়েই যাবে। পরিস্থিতি টাই ছিল তেমন। সেখানে রমজান শেখ কিংবা রওশন বেগম কিছুই বলতে পারছে না।
~ অনুমতি দিলে আমরা এখন উঠবো
~ খাওয়া দাওয়া করে যান ভাই
~ নাহ, অয়নন্দিতা কে ডেকে দিলে ভালো হতো।
~ হ্যাঁ আন্টি আমরা আমাদের মেয়েকে নিয়ে যাবো। ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন আপনারা।
~ কিসের ডিভোর্স পেপার ভাইয়া?
কথা টা শুনে সবাই সিড়িতে তাকায়। শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কুমারী অয়নন্দিতা আজ পরিপূর্ণ বউ। সব থেকে বেশি অবাক হয়ে অয়নন্দিতার বাবা। তার মেয়ে আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে তাও বউ সেজে।
~ অয়নি মা
~ বাবুইপাখি
~ কিসের ডিভোর্স পেপার ভাইয়া?
বাবা কিসব বলছো তোমরা?
~ মারে তোকে নিয়ে যাবো এইখান থেকে।
~ কিভাবে বাবা?
~ মানে,
~ আমি তো এই বাড়ির বউ
~ বাবুইপাখি
~ হ্যাঁ ভাইয়া, মেনে নিয়েছি। তোমরাও মেনে নেও
~ আমরা মানতে আসি নাই, চল এখনি
~ নাহ ভাইয়া, তা হয় না। এটাই আমার ঘর আর ফারহান শেখই আমার স্বামী।
~ তুই বলছিস এইসব।
~ হ্যাঁ ভাইয়া, আমিই বলছি
~ কিন্তু, এভাবে কিসের বিয়ে এটা?
~ বাবা, কাজীই তো বিয়ে পড়ায়, আমার বিয়েও কাজীই পড়িয়েছে। এজেননামায় সাইন হয় আমিও সাইন করেছি। হলো না এটা বিয়ে।
~ কিন্তু?
~ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, আর কি চাও বলো আর
~ মারে অভিমান করেছিস আমাদের উপরে?
~ একদম না বাবা। যা হওয়ার হয়ে গেছে, তাই মেনে নিয়েছি। তোমরাও মেনে নেও এটাই ভালো হবে।
~ বাবুইপাখি?
~ হ্যাঁ ভাইয়া বলো
~ সুখে থাকতে পারবি তো?
~ ইনশাআল্লাহ, পারবো।
বেড়াতেও যাবো~ চোখের কোণে পানি রেখে সবার সামনে দিব্যি সুখী হওয়ার অভিনয় টা বড়ই ভালো জানিস তুই। তুই যে আমার বাবুইপাখি, বুক ফেটে যাবে তবু মুখ ফুটবে না তোর। আমার জীবনের সুখ খুজতে গিয়ে আজ নিজেই অসুখী হয়ে গেলি, ক্ষমা করে দিস তোরভেই ভাইয়া টাকে, সে পারে নি তোকে বাচাতে (মনে মনে)
ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বোন বুঝে গেছে, ভাইয়ের মনে কি চলে। এ যে আত্নার টান। একজনের কষ্টে আরেকজনের কলিজা জ্বলে। যা মুখে বলার প্রয়োজন নেই। চোখ দিয়েই বুঝে যায়।
~ ভাবিস না তুই ভাইয়া। তোর বোন অনেক স্ট্রং। দেখিস সে হাসবেই।
নিজের পরিবারকে শান্ত মনে বিদায় দিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অয়নন্দিতা শুধু মাশফিককেই ভাবছে। না চাইতেও এক রকম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে মাশফিকের সাথে। ভালোবাসায় কোন খুত ছিল না মাশফিকের। তবুও আজ মাশফিক একা। বাহির থেকে ফিরে আসবে একটা টেনশন নিয়ে অয়নন্দিতার খোঁজ খবর নেই কেন? কিংবা বাহির থেকেই খবর পাবে বিয়ে হয়ে গেছে তার অপ্সরার।\
এমন সময় ফারহান প্রবেশ করে রুমে। ফারহান কে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে অয়নন্দিতার ভেতর থেকে।
~ সংসার করার জন্য এখানে পড়ে থাকতে রয়ে যাই নি মিষ্টার ফারহান শেখ। তোমার জীবন ভয়াবহ করে তুলবো। একদম পিষে দিবো তোমাকে। নরক করে দিবো তোমার প্রতিটা দিন। খেলা খেলতে ভালোবাসো তুমি আজ থেকে আমিও খেলবো। The game is begin now just wait & watch .
পর্ব ২৩
সকালে ডাইনিং এ সবাই নাস্তা খাচ্ছিলো। সাজি, ফারহান সহ সবাই নাস্তার টেবিলে বসা। অয়নন্দিতাই সার্ভ করে দিচ্ছে সবাইকে। হঠাৎ করেই অয়নন্দিতা রমজাম শেখ কে বলে ওঠে,
~ বাবা একটা কথা বলার ছিল?
ওর কথায় সবাই অনেকটাই অবাক। সবচেয়ে বেশি অবাক হলো ফারহান নিজে। বাবা বলে ডেকেছে। রওশন বেগমও স্তব্ধ, সাথে রমজান শেখ নিজেও। সাজিও কম অবাক হয় নি, সেও অনেকটাই অবাক হয়েছে।
~ কি ব্যাপার, এইভাবে তাকানোর কি আছে? আমি আপনাদের ছেলের বউ, শত হোক, যেইভাবেই হোক বিয়েটা তো হয়েছে, অস্বীকার করি কিভাবে বলুন? তাই আমিও বাবা মা ডাকবো, কেমন?
~ আলহামদুলিল্লাহ, আচ্ছা মা। বলো কি বলবা?
~ আপনি এতো বড় মাপের একজন মানুষ বাবা, আর আপনার ছেলে এইভাবে মানে আমাকে এইভাবে বিয়েটা করলো, এটা খারাপ দেখায় না বাবা? একটা পার্টি থ্রো করলে ভালো হতো না?
~ কোন প্রয়োজন নেই এইসবের। বাবা কোন প্রয়োজন নেই।
~ তুই থাম, বউমা তো ঠিকই বলেছে। হ্যাঁ গো একটা পার্টি অর্গানাইজ করো। সবাইকে ইনভাইট করা হবে সেখানে।
~ ওকে। ঠিকাছে বউমা, আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলবো।
~ ধন্যবাদ বাবা। সবারই তো জানা উচিত যে আমি মিষ্টার ফারহান শেখ এর স্ত্রী।
~ হ্যাঁ অবশ্যই সবাই জানবে মা।
ফারহান আর সাজি ভেতরে দিয়ে জ্বলে খাক হয়ে যাচ্ছে। ফারহানের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। আর অয়নন্দিতা এটাই চেয়েছিল। রাগে কটমট করতে করতে উপরে রুমে চলে যায় ফারহান।
~ বাবা, উনি কি অফিসে যান না?
~ কোথায় আর যায়,
~ ওহ তার মানে বাপের পয়সায় ফুটানগিরি করে আর মেয়ে তুলে আনে।
~ হেই হোয়াট ডু ইউ মিন?
~ আস্তে সাজি, চিল্লাও কেন। ভুলে যেও না আমি তোমার ভাইয়ের বউ মানে তোমার ভাবী। এখন থেকে চিল্লাবা কম শুনবা বেশি। অভদ্রতা করবা না। মা আপনারা নাস্তা করেন আমি একটু আসতেছি।
অয়নন্দিতা সোজা উপরে চলে যায়। সাজি সামনে থাকা খাবারের প্লেট টা ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। রমজান শেখ আর রওশন বেগমও চুপচাপ। তাদের ধারণা, ছেলে এইভাবে বিয়ে করে এনেছে এখন বউ যা বলবে শুনতে হবে। কিন্তু আসলে অয়নন্দিতা কোন খেলা খেলছে তা কেউই বুঝে নি।
রুমে গিয়ে বিছানা গোছাচ্ছে সে। ফারহান বারান্দা থেকে এসে দেখে অয়নন্দিতা রুমে। ততক্ষনাৎ সে অয়নন্দিতাকে চেপে ধরে।
~ এইইইইই মেয়ে
~ অয়নন্দিতা, আমার নাম অয়নন্দিতা। এখন থেকে অয়নন্দিতা ফারহান শেখ। রাইট?
~ সাট আপ
~ কাজ করছি, হাত ছাড়ুন
~ লুক এট মি। কি করতে চাইছো তুমি হ্যাঁ, এইসব বউ, পার্টি, হোয়াট ইজ দিস?
~ ও মা, বিয়ে করলেন। সংসার করবেন, আর বাহিরে মানুষ জানেবে না? এটা কিভাবে হয়। আমি তো আর আপনার রক্ষিতা না, তাই না?
~ কোন জানা জানি হবে না।
~ কেন? হবে না কেন? হলে কি আর মেয়েবাজী করতে পারবেন না?
~ কিপ ইউর মাউথ স্টপ, ওকে?
~ পার্টি হবে, সবাই জানবেও। অবশ্য আপনার মতো কা~পুরুষ রা এইসব বুঝবে না।
~ হাউ ডেয়ার ইউ
~ কা~পুরুষ না হলে কি এইভাবে কোন মেয়েকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে কেউ বিয়ে করে। জোর করে তার সাথে সহবাস করে, ওহ সরি সরি রেইপ করে।
~ চুপ করতে বলছি আমি।
~ বাপের হোটেলে বসে ফুটানি গিরি দেখিয়ে এমন ১০ টা মেয়ে মানুষ পালা টা নিশ্চয়ই খুব একটা কঠিন কিছু না তাই না?
~ চুপ করতে বলছি কিন্তু।
~ আমার মাশফিক এর পায়ের নখের যোগ্যতাও আপনার নাই, শুধু শুধু আসছেন ওর সাথে নিজেকে মেলাতে।
কথাটা ফারহান নিতে পারে নি, কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অয়নন্দিতাকে ফারহান। থাপ্পড় টা বেশ জোড়েই পড়ে অয়নন্দিতার গালে। ব্যাথাও পায় সেই রকম তবুও শক্ত আছে সে।
~ হ্যাঁ, এই একটা কাজই তো পারেন আপনি, কথায় কথায় মার ধর আর টেনে হিচরে বিছানায় নেয়া। শিক্ষিত পশু একটা। অমানুষ, যাযাবর একটা অসুস্থ ব্যাক্তি আপনি।
~ চুপ করবি তুই?
~ নাহ, কেন চুপ করবো, আর চুপ না করলে কি করবেন, কি করবেন চুপ না করলে, আবার রেইপ করবেন নাকি, এখন আর ভয় পাই না, কষ্টও লাগে না। কারণ আপনি যে অমানুষ আমি বুঝে গেছি। নিন আসুন, ১৬ কলা পূরণ করে ফেলুন, আসুন?
এই বলে অয়নন্দিতা বুক থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে দেয়। বুকের ঘা টা এখনও জ্বলজ্বল করছে। শুকায় নি ভালো ভাবে যা ফারহান এর গরম মস্তিষ্কে পানির শ্রোত বইয়ে দেয়। বুক থেকে নজর সরিয়ে নেয় সে। আঁচল টা কোন রকম অয়নন্দিতার বুকে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর অয়নন্দিতা রাগে গজ গজ করতে থাকে
~ পশুর আবার মায়া দয়া। তোর সব কিছু আমি শেষ করে দিবো। দেখিস তুই, আমাকে দেয়া প্রতিটা কষ্টের শোধ তুলবো আমি। দেখে নিস তুই।
দুই দিন পর,
আজ সন্ধ্যায় নির্বাস নিবাসে অনেক বড় করে আয়োজন করা হয়েছে৷ অনেক নামি দামী লোক এসেছে। সবাই রমজান শেখ এর পরিচিত। ফারহান এর বন্ধু মহলও এসেছে। তার কিছুক্ষণ পর অয়নন্দিতার পরিবারও আসে। অয়নন্দিতা সবাইকে দেখে একটু ইমোশনাল হলেও নিজেকে সামলে নেয়।
এইদিকে সাজির নজর অয়নের দিকে। মাহিকে অয়নের পাশে দেখতে পারছে না সে। আর অয়ন সাজিকে দেখেও না দেখার ভানে রপ্ত আছে।
~ কেমন আছিস অয়নি?
~ দেখতেই তো পাচ্ছিস।
~ শুধু শুধু জেদ করলি।
~ আমার আব শেষ রে মাহি, সব শেষ।
~ কি শেষ, কি সব যে বলিস
~ বাদ দে, আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
~ হ্যাঁ বল
~ আংকেল আন্টি কি জানে আমার বিয়ে হয়ে গেছে?
~ হ্যাঁ, কাল বলেছি। আব্বু আম্মু খুব আপসেট।
~ আর মাশফিক ভাই, উনি কোথায়?
~ ভাইয়া কাল দেশে আসবে। এইখানের পরিস্থিতি কিছুই বলি নি, শত হোক আমার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন নিয়ে নিজের পরিবারের কাছে কিভাবে বলি। তাই আর বলি নি কিছু।
কথাটা কেমন যেনো শুনালো। অয়নন্দিতা বুঝতে পেরেও চুপ হয়ে যায়। মাশফিককে নিয়ে আপাতত তার ভয়। কি করবে না করবে, বুঝে উঠতে পারছে না সে।
অনুষ্ঠান শেষে সবাই আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে। অয়ন অয়নন্দিতাকে নিয়ে যেতে চাইলে সেখানেও বাধা দেয় অয়নন্দিতা।
~ এমন করছিস কেন?
~ কেমন করলাম
~ বাসায় যেতে চাচ্ছিস না কেন?
~ এখন বাসায় গিয়ে কি করবো
~ কি আজব কথাবার্তা
~ আমি একা কিভাবে বাসায় যাই, কেমন দেখায়
~ তোর জামাইও যাবে।
~ দরকার নাই, বাদ দে। আমি সময় করে এক ফাঁক গিয়ে ঘুরে আসবো।
~ তাই বলে যাবি না তুই মা
~ যাবো বাবা, একদিন সময় করে ঘুরে আসবো। কেমন?
~ আমাদের কিছুই বলার নাই। ভালো থাক,
~ ভেবে নে না ভাইয়া, তোর বোনের ভালো থাকার দিন শেষ।
~ আসছি আমরা
~ আয়, ভালো থাক। মাহি বাবা মাকে দেখে রাখিস।
~ হুম।
সেদিন রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অয়নন্দিতা শুধু একজনকেই ভেবে যাচ্ছিলো আর সে হচ্ছে মাশফিক। মাশফিক দেশে আসবে কাল। হয়তো সব কিছু শুনবে। ওর কাছে অয়নন্দিতার পরিচয় হবে একজন ঠক, চিটার, প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। যার কোন টাই অয়নন্দিতার সাথে যায় না। অয়নন্দিতা তো পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র।
এইসব ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে
হঠাৎ করেই ফারহান ঘরে আসে। ফারহানকে দেখলে অয়নন্দিতার গায়ে ৮৮০ ভোল্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
~ কোন দিন যে একে খুন করবো আমি? কোন দিন যে একে নর্দমার পঁচা নোংরা আস্তাকুঁড়ে ফেলবো আমি?
এইসব ভাবছে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফারহানের তামাশা দেখছে অয়নন্দিতা। ধুপধাপ গাড়ির চাবিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে কাবার্ড থেকে জামা~কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফারহান। ফ্রেশ হয়ে এসে লম্বা হয়ে বিছানায় শোয়। ব্যাস এইবার অয়নন্দিতাও শুরু করে দেয়। চট করেই এসি টা অফ করে দেয়।
~ কি ব্যাপার? এসি অফ কেন করছো
~ শীত লাগে আমার
~ বেক্কলের মতো কথা বলে, মানুষ গরমে মরে যাচ্ছে আর তার নাকি শীত লাগে।
~ লাগে মানে লাগে, এসি চালাবেন না।
~ এসি চলবে,
অয়নন্দিতা এসি র রিমোট টা আছাড় মেয়ে ফেলে দেয়। এমন আছাড় দেয় যে, রিমোট দুই ভাগ হয়ে যায়।
~ এইবার চালিয়ে দেখান।
~ এইটা কি করলি তুই,
~ অশিক্ষিত, বর্বর লোক, কথায় কথায় তুই তুকারী করে।
~ স্যাট আপ
~ বাপের হোটেলে খায় আর সারাদিন পর রাতে ফূর্তি করে এসে এসি চালিয়ে ঘুমায়
~ আবার শুরু করছে।
~ আপনি তো অশিক্ষিত কা~পুরুষ, আপনার তো কোন যোগ্যতাই নাই। ওহ হ্যাঁ, নাই কে বলছে আছে তো যোগ্যতা, সব থেকে ভালো যোগ্যতাই তো আছে আপনার, মেয়েদের জোর করে তুলে এনে বিয়ে করা আর জোর করে তাদের সব কিছু কেড়ে নেয়া।
~ তুমি কয়জনকে আমার বউ হতে দেখছো
~ বউ শব্দটা বেমানান আপনার মুখে, আপনার কাছে আমি মূলত একটা প্রতিশোধ এর টোটকা মাত্র।
~ এইবার আরও বেশি হবে বলে দিলাম।
~ আমি ডিভোর্স চাই
~ কিহহহহহহ
~ কানে কথা যায় না, ডিভোর্স চাই
~ তারপর,
~ তার আর পর নাই, ডিভোর্স চাই
~ সবে মাত্র বিয়ে হলো, হানিমুনটাও করি নাই, তার আগেই ডিভোর্স? তা কই যাবি তোর ওই মাশফিকের কাছে। নিবে তোকে এখন? ইউজেস হয়ে গেছিস তো।
~ তুই যে একটা জানোয়ার তোর কথায় প্রমাণ হয়। তোর বোন একটা সাইকো তুই আরেকটা সাইকো
~ খবরদার আমার বোনের দিকে যাবি না
~ ১০০ বার যাবো, হাজার বার যাবো। আমিও তো কারো বোন। ক্ষমতা দেখিয়ে কয়েকটা গুন্ডা নিয়ে আমার বাসায় গিয়ে আমাকে জোর করে বিয়ে করে এনেছিস আবার এইখানে এই বিছানায় আমায় ছিহ তুই তো অমানুষ।
ফারহান আর সহ্য করতে পারে নি। থাপ্পড় আরেকটা মেরে দেয় অয়নন্দিতাকে। তারপর নিজের মোবাইল টা এক আছাড় দিয়ে ভেঙে দেয়।
~ মূর্খের মতো গায়ে তুলে, অশিক্ষিত একটা।
সেদিন রাতে ফারহান আর রুমে শোয় নাই। আরেক রুমে চলে যায়। আর অয়নন্দিতা ওর চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ও ওর কার্যক্রম দিয়ে ফারহানকে শেষ করবে।
কয়েকদিন পর,
অয়নন্দিতা একটু বাহিরে বের হয়। সুপার মার্কেটে কাজ ছিল কিছু তার। সেখানেই গিয়েছিল। যাবতীয় কাজ শেষ করে পিছন ফিরে এক কদম ফেলতেই চেনা কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
পর্ব ২৪
~ অয়নন্দিতা
অবশেষে, অয়নন্দিতার কান জুড়িয়ে সেই সেই কন্ঠস্বর পৌঁছে যায়। উল্টো দিক ঘুরতেই দেখে মাশফিক তার সামনে দাঁড়িয়ে।
~ আপনি,
আজ অনেকদিন পর দুজন দুজনার মুখোমুখি। মাশফিকের মলিন চেহারাই বলে দিচ্ছে সে কেমন আছে। অয়নন্দিতার সব কথা জেনো গলা অবদি এসে আটকে গেছে। চোখের কোণে জমে যাওয়া পানিই বলে দিচ্ছে মাশফিক সব জানে।
~ কেমন আছো তুমি?
~ আ,আ,আপনি এখানে?
~ উত্তর টা পেলাম না
~ এইতো সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছি।
~ আসো ওই কফি সপে বসি।
~ তাড়া আছে একটু।
~ স্বামী অপেক্ষা করে থাকে বুঝি?
কথাটা অয়নন্দিতার কলিজায় গিয়ে লাগে। খুব তীক্ষ্ণ ভাবেই ছুরি টা কলিজা টাকে ফালি ফালি করে দিচ্ছে।
~ আসছি আমি,
~ আমি কি এটাই ডিজার্ভ করেছিলাম?
~ আসছি
~ পালিয়ে যাচ্ছো?
~ ভেবে নিন তাই
~ ১০ মিনিট সময় হবে?
~ কিছু বলবেন?
~ হ্যাঁ
~ বলুন,
~ আসো কফি সপ টায় গিয়ে বসি।
~ চলুন
মুখোমুখি অয়নন্দিতা ~ মাশফিক। কিছুদিন আগেও যাদের দুচোখে অনেক স্বপ্ন ছিল। ঘর বাধার আশা ছিল। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ছিল আর আজ দুজনের রাস্তা দু’দিকে বেকে গেছে। অয়নন্দিতার বুক ফেটে কান্না আসতেছে আর মাশফিকের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।
~ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না অয়নন্দিতা?
~ হয়ে গেছে, কি করা যাবে
~ মেনে নিলে সব টা?
~ উপায় নেই।
~ আমার ভালোবাসা টা কি ছিল?
~ হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছি
~ আমাদের স্বপ্ন গুলোর কি হবে?
~ ঘুম ভেঙে গেছে স্বপ্ন গুলোও ভেঙে গেছে
~ আমার অপরাধ টা কোথায় ছিল?
~ আমার অপরাধটাই বেশি ছিল
~ আটকাতে পারলে না?
~ পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলাম, ছাড়ে নি
~ এতই ক্ষোভ ছিল ওই ফারহানের?
~ হয়তো
~ কিন্তু কেন?
~ আমার বিয়ে হয়েছে মাহি বলেছে আপনাকে?
~ হ্যাঁ কাল বললো, আর মাহি এটাও জানে যে আমাদের একটা সম্পর্ক ছিল। অনেক কেদেছে ও।
~ এমন শুকিয়ে গেছেন কিভাবে?
~ আজ কয়েকটা দিন বাহিরে আমি কিভাবে ছিলাম ধারণা আছে তোমার? তোমার মোবাইল বন্ধ কথা হচ্ছিলো না, ফেসবুকে নাই, ইমুতে নাই। কাউকে আস্কও করতে পারি নি। আমি তো আর জানি না আমার পোষা ময়না আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে অন্যের খাঁচায়।
~ ফাঁকি দেই নাই। সাজিকে ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে সরানোর শাস্তি দিলো ওর ভাই। বিয়ে না করলে হয় মাহি নয় ভাইয়ার ক্ষতি করে দিত ফারহান। আমি বেচে থাকতে মাহি কিংবা ভাইয়ার কিংবা আপনার কারোই ক্ষতি হতে দিতে পারতাম না। তাই নিজেই বলির পাঠা হলাম।
~ অয়নন্দিতা লুক এট মি
~ হু বলুন
~ এই জায়গায় টা না অনেক ব্যাথা করে, অনেক ব্যাথা করে। আমি আমার ভালোবাসা টা পেলাম না অয়নন্দিতা।
~ ভেবে নেন কোন এক বেইমান কে ভালোবেসেছিলেন? যে আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
~ তাও ভাবতে পারছি না আমি।
~ আসছি মাশফিক সাহেব। অনেম দেরি হয়ে গেলো। নিজের মতো কাউকে খুজে নিয়েন।
অয়নন্দিতা টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে এক পা দিতেই মাশফিক অয়নন্দিতার হাতটা ধরে নেয়। ততক্ষনাৎ হাত ধরায় একটু ঘাবড়ে যায় অয়নন্দিতা
~ মাশফিক আর অয়নন্দিতা কি আর মিলবে না?
~ হয়তো না।
~ এটাই কি তবে আমাদের ভবিতব্য?
~ হয়তো হ্যাঁ।
~ থাকতে পারবে আমায় ছাড়া?
~ থাকছি তো।
~ কষ্ট হয় না?
~ হয় তো, এইখান টায় অনেক কষ্ট হয়।
অয়নন্দিতার বুকের বাম পাশ টায় মাশফিকের নজর পড়ে। চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রু গুলো মাশফিকের বুকে তীরের মতো বিধছে।
~ আমার তোমাকে চাই অয়নন্দিতা।
~ অয়নন্দিতা আর মাশফিকের নেই।
~ তবুও চাই আমার অয়নন্দিতাকে।
~ অয়নন্দিতা অন্যের হয়ে গেছে।
~ তবুও চাই, ফিরিয়ে দেও অয়নন্দিতাকে
~ অয়নন্দিতা মরে গেছে, এখন যাকে দেখছেন সে শুধুই অয়নন্দিতার দেহ, প্রাণ ভ্রমরা টা মরে গেছে।
~ তুমি ফিরিয়ে দেও তাকে আমায়।
~ আমার হাতে আর কিছুই নেই।
~ কিভাবে থাকবে আমায় ছাড়া?
~ শিখে নিবো।
~ থাকতে পারবে তো?
~ হ্যাঁ পারবো
~ এতো টা কঠিন হয়ে গেলে অয়নন্দিতা?
~ আসছি। ভালো থাকুন।
অয়নন্দিতার পায়ের দু কদম এগিয়ে যায় কফি সপের দরজার দিকে। তখনই মাশফিক আবার বলে ওঠে,
~ পরশু শেখ গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির কম্পিটিশন। যে কোন একটা কোম্পানি টেন্ডার পাবে। খেলাটা কি আমি সেখান থেকেই শুরু করবো মিসেস অয়নন্দিতা ফারহান শেখ
শেখ ইন্ডাস্ট্রির নাম টা শুনে অয়নন্দিতা চমকে যায়। এটা তো ফারহানদের কোম্পানি। আর তার থেকেও বড় অবাক হয় মাশফিকের মুখ থেকে অয়নন্দিতা ফারহান শেখ কথা টা শুনে। বাহ মাশফিকও প্রস্তুত হয়ে গেছে প্রতিশোধ নিতে।
~ একটা হ্যাল্প করতে পারবেন?
~ বলো
~ পরশু দিন যাতে কোন মতেই টেন্ডার শেখ গ্রুপ অফ কোম্পানির হাতে না যায়।
~ তুমি চাচ্ছো এটা?
~ হ্যাঁ আমিই চাচ্ছি।
~ কিন্তু কেন?
~ ফারহান শেখকে শেষ করে দেবো। তবে অয়নন্দিতা কখনো মাশফিকের হবে না,
আসছি।
~ অয়নন্দিতা
~ আর ডাকবেন না। মাঝে সাঝে যোগাযোগ করবো তবে তা প্রয়োজনে। নতুন কাউকে নিয়ে ভালো থাকুন। আসছি, আর ডাকবেন না
অয়নন্দিতার চলে যাওয়াটা মাশফিক মেনে নিতে পারছে না। সিগারেট একটার পর একটা শেষ হচ্ছে। কিন্তু অয়নন্দিতাকে ভুলা যাচ্ছে না। অয়নন্দিতা এমন একটা পেইন যে কিনা মন থেকে মাইন্ডে গিয়ে পেইন দিচ্ছে মাশফিককে। হঠাৎ করেই মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে।
রাত প্রায় দুইটা, এতো রাতে কে ফোন দিবে। ভেবে আর ফোন রিসিভ করে নি মাশফিক। ফোন আবার বেজে উঠে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোন টা রিসিভ করে কানের কাছে নেয় মাশফিক। নিঃশ্বাস টা শুনেই বুঝে যায় ফোনের ওপারে থাকা মানুষ টা থাকা আর কেউ না। তার অয়নন্দিতা ফোন করেছে।
~ অয়নন্দিতা
~ চিনে ফেলেছেন
~ হুম, চেনা আওয়াজটা ভুলার না
~ কি করেন
~ কিছু না
~ সিগারেট খাচ্ছেন তাই না
~ উহু সিগারেট আমাকে খাচ্ছে
~ আমায় ভালোবাসেন?
~ আজ এতো দিন পর এই কথা বলতেছো তাও অন্যের ঘরে যাওয়ার পরে।
~ ভালোবাসলে ভালো থাকতে শিখুন, নিজেকে কষ্ট দিবেন না
~ খেয়েছো?
~ উহু
~ ফারহান কোথায়?
~ ঘুমায়
~ ফোন দিলে যে
~ মাশফিক আমায় ক্ষমা করে দিন, আমি পারি নি নিজেকে রক্ষা করতে। আমাদের রাস্তা দু দিকে বেকে গেছে মাশফিক।
~ আমার খুব কষ্ট হয় অয়নন্দিতা
~ আমি প্রতিনিয়ত ঝলসে যাচ্ছি। রাখি ভালো থাকতে শিখুন।
~ শুনো
~ বাই
লাইন কেটে দিয়ে অয়নন্দিতা ঢুকরে কেদে দেয়। বুক ফাটা চাপা আর্তনাদ বের হয়ে ভেতর থেকে। পাগল পাগল লাগছে ওর এই মুহুর্তে। বারান্দার রেলিং ধরে কেদে যায় অয়নন্দিতা।
~ এতো রাতে এইখানে কার সাথে কথা বলো তুমি?
আওয়াজ টা শুনে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। শুনে ফেলেনি তো সব টা?
~ মাঝ রাতে এইভাবে কাঁদার কি আছে
~ কারণ আমি জানোয়ার না আমি মানুষ
~ তাহলে কি আমি জানোয়ার?
~ তার থেকেও নিকৃষ্ট আপনি?
~ চুপপপপপ
~ সরে দাড়ান
অয়নন্দিতা খাটে এসে এক কোণায় শুয়ে বালিশ চেপে কান্না করতে থাকে। আর ফারহান বারান্দায় স্মোকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মাশফিক অয়নন্দিতার ছবিতে চোখের পানি ফেলে।
এক সাথে তিন টা জীবনের সূতা এক লাটাইয়ে আটকে যায়।
পর্ব ২৫
রমজান শেখ বাসায় এসেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছেন। তার অভিযোগ টাও ফেলে দেয়ার মতো নয়। এইভাবে আর কতদিন। নিজেরও তো বয়স হচ্ছে। এতো বড় ছেলে থাকতে নিজেকে সব সামলাতে হয়। এটাই তার বড় কষ্ট। আজ বাদে কাল টেন্ডার পাওয়ার পালা। কিন্তু সেখানে রমজান শেখ একা হাতে সব করছেন।
~ ফারহান, এই ফারহান
~ কি হয়েছে?
~ ফারহান কোথায়?
~ রুমে আছে হয়তো
~ ডাকো ও কে
রওশন বেগম স্বামীর কথায় কিছুক্ষণ ডাকে ফারহানকে। ফারহান নিচে নেমে আসে আর অয়নন্দিতা উপর থেকে তামাশা দেখতে থাকে।
~ কি হয়েছে? চিল্লাও কেন
~ স্যাট আপ, ইডিয়েট কোথাকার। বাড়িতে মেয়ে তুলে বিয়ে করে আনতে পারো। আর বাপের টাকায় ফুটানি করতে পারো। আর বাপ যে এতো কষ্ট করে কামাই করে তার খেয়াল রাখো না।
~ খোটা দিচ্ছো নাকি?
~ এমন থাপ্পড় মারবো, বেয়াদব ছেলে কোথাকার, শরীরের জেদের কারনে তো মেয়েটাকে বিয়ে কিরে ফেলছো খাওয়াবা কি? ভাবো নাই, বাপের তো অঢেল আছে তাই গায়ে লাগে না তাই না?
~ আজব তো, সমস্যা কি?
~ কাল টেন্ডার পাশ হবে, অথচ তোমার সেদিকে কোন খেয়াল নেই?
~ কাল যে কোন ভাবেই চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির হাতে যাতে টেন্ডার না যায়।
~ যাবে না রিলেক্স থাকতে পারো।
~ যাতে রিলেক্স থাকতে পারি সেদিকে ভাবো।
সব কথাবার্তা বলে ফারহান উপরে আসে, রেডি হয়ে অফিসে যাবে বলে।
“আলালের ঘরের দুলাল সে
নাই তার কোন কাজ
বাপের টাকায় ফুটানি করে
সব কিছু তার সর্বনাশ”
অয়নন্দিতার মুখ থেকে এই কবিতা শুনে ফারহানের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। উঠে গিয়ে অয়নন্দিতার হাতে জোড়ে চাপ দিয়ে ধরে সে।
~ বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু, একদম মেরে ফেলে রাখবো।
~ হেহহহহ, হা হা হা, মেরে ফেলে রাখবে, হা হা হা, আমার হাসি কেন থামে না
~ স্যাট আপ, ইডিয়েট
~ আরে ধুর, আগে টেন্ডার নিয়ে দেখান। দেখি আপনি কেমন বাপের পোলা, টেন্ডার নিয়ে দেখান।
~ টেন্ডার আমিই নিবো,
~ নেন, আমিও চোখ জুড়াই। আর কত দিন বাপের টাকায় চলবেন, নিজের কিছু করুন না?
~ ওয়েট এন্ড ওয়াচ
সারাদিন, সারারাত অনেক কষ্ট করেছে ফারহান। রাত প্রায় ৪ টার পর ঘুমিয়েছে। টেন্ডার টা পেলে অনেক লাভ হবে কোম্পানির। কিন্তু প্রবলেম হলো প্রতিপক্ষ চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি। যাদের সামনে কেউই হার মানে না। ফারহানকে এউ ব্যাপার টাই ভাবাচ্ছে।
সে একটা ভুল করে ফেলেছে, তার অফিসে বসা উচিত ছিল। বাহিরের কান্ট্রি থেকে ম্যানেজমেন্ট এর উপরে পড়াশোনা করে এসে এইভাবে না ঘুরাঘুরি করলেও পারতো সে। কালকের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে ফারহান এর।
অবশেষে সেই মুহুর্ত। আজ টেন্ডারশীপ সাইন হবে। রমজান শেখ এবং ফারহান বের হয়ে যাবে। রওশন বেগম পায়েস করেছেন তাদের জন্য। অয়নন্দিতা সার্ভ করে সবাইকে দিয়েছে। সময় অল্প তাই বাপ ছেলে দাড়িয়েই খাচ্ছে।
পায়েস মুখে দেয়ার পর ফারহান এর চোখ অয়নন্দিতার চোখে। কিছুই বলতে পারছে না। বাবার সামনে ঝামেলা করতে চায় না সে। এইদিকে রমজান শেখ পায়েস খেয়ে কি বলবে বুঝতেছে না।
~ আজ পায়েস কে রান্না করেছে রওশন, তোমার হাতের পায়েস তো এটা না।
~ আজ বউমা রান্না করছে, কেন?
~ এতো ভালো হয়েছে যে তোমার ছুটি, যাও আজ থেকে পায়েস আমার বউমা রান্না করবে, কেমন বউমা?
~ জ্বি বাবা।
ফারহান বুঝতেছে না এক পায়েস কিন্তু এতো আলাদা কেন। মুখ জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে আছে সে। অয়নন্দিতা কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
~ পায়েস একই, শুধু আপনার বাবার টায় চিনি দেয়া আর আপনার টায় মরিচ, গোল মরিচও আছে। শুনেছি শুভ কাজে মিষ্টি খেয়ে যেতে হয়। আমি না হয় মরিচ দিয়ে দিলাম। অল দ্যা বেষ্ট মিষ্টার ফারহান শেখ।
অয়নন্দিতাকে এই মুহুর্তে ছিলে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে ফারহানের। তবে এখন কিছুই করবে না। চোখের কোণে পানি চলে আসছে তার। সুন্দর মানুষ তো, চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। কেউ দেখার আগেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
আর অয়নন্দিতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক ভালোই হলো। যাওয়ার আগে একটা বাধা দিয়ে দিল।
মুখোমুখি দুই গ্রুপ। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টার মিটিং চলে। মাশফিক আর তার বাবা এবং অফিসের কয়েকজন অন্যদিকে ফারহান এবং তার বাবা সাথে অফিসের কয়েকজন আছে।
হাড্ডাহাড্ডি ভাবেই মিটিং চলে। কেউ কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নন। এ ৫০ বলে তো অন্যজন ১০০ এই অবস্থা।
কিন্তু লাস্টে শেষ রক্ষা টাও হলো না। টেন্ডার চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির হাতেই যায়। ৩% শেয়ারের বিনিময়ে টেন্ডার আজ চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির হাতে চলে যায়। রমজান শেখ মনে একটা আঘাত পায়। এতো কষ্ট করার পরেও টেন্ডার টা মিস হয়ে গেলো। আর ফারহান তো দুটো দিন এক টা রাত পুরো এক করে দিয়ে সব রেডি করছিল তবুও হাত ছাড়া হলো। এমন সময় কেউ একজন পিছন থেকে ফারহানকে ডাক দিয়ে বসে।
~ মিষ্টার ফারহান শেখ?
ফারহান পিছনে তাকিয়ে দেখে মাশফিক দাঁড়িয়ে। রাগে শরীর এমনিতেই জ্বলছে তার উপর আবার মাশফিককে দেখছে। না জানি মেরেই দেয় একে এখানে।
~ হারতে শিখুন মিষ্টার ফারহান শেখ, হারতে শিখুন। গুড বাই
মাশফিকের চলে যাওয়ার পর নিজের হাতের মোবাইল টা এক আছাড় মারে ফারহান। সমস্ত জেদ মোবাইল টার উপরেই মেটায় সে। বাসায় গিয়ে অয়নন্দিতার খবর করবে তাই হন্তদন্ত হয়ে বাসার দিকে মুভ করে ফারহান।
বাসায় এসে সোজা উপরে চলে যায় ফারহান। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে তার। যতক্ষণ না শোধ নিবে তার শান্তি নেই।
অয়নন্দিতা তখন বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে বাহিরে আকাশ দেখছিল। টেন্ডার যে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির হাতে গেছে এতে অয়নন্দিতা বেশ খুশি। দুইটা কারণ আছে খুশি হওয়ার।
কারণ নাম্বার এক, সে চায় মাশফিক আরও অনেক উপরে উঠুক। মাশফিক ভালো থাকুক।
কারণ নাম্বার দুই, সে চায় এইভাবেই প্রতি পদে পদে ফারহান শেখ হেরে যাক। কষ্টের মাঝে ডুবে যাক সে। অন্ধকারে ছেয়ে যাক তার পুরো জীবন।
যাতে করে অয়নন্দিতার সাথে করা প্রতিটা অন্যায়ের শাস্তি ভোগ করতে পারে সে। এটা ভেবে অনেক খুশি অয়নন্দিতা।
কিন্তু তার খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল না। হঠাৎ কে যেন ঝড়ের বেগে এসে অয়নন্দিতাকে বসা থেকে টেনে দাড় করায় তারপর টেনে হিচরে রুমে নিয়ে আসে। ফারহানের এমন আচরণে অনেকটাই অবাক অয়নন্দিতা। বুঝে গেছে মাথা গরম আছে।
তবুও শক্ত আছে সে। আর এইদিকে ফারহান সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অয়নন্দিতার গালে। থাপ্পড় টা এতোটাই জোরে ছিল যে অয়নন্দিতার দাতের সাথে ঠোঁট লেগে ঠোঁটটাই ফেটে যায় তার। ব্যাথার যন্ত্রণায় চোখে পানি চলে আসে তার। ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ছে তবুও চেচিয়ে ফারহানের কলারে হাত রাখে অয়নন্দিতা।
~ জানোয়ার, এইভাবে কেউ কাউকে মারে?
~ আমি মারি,
~ তুই তো জানোয়ার, বদ্ধ উন্মাদ তুই।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি বদ্ধ উন্মাদ, আমি জানোয়ার, কি করবি এখন। বল কি করবি, মাশফিকের কাছে যাবি? যা যা মাশফিকের কাছে যা।
~ হ্যাঁ যাবোই তো, ১০০ বার যাবো, হাজার বার যাবো। তোর কাছে থেকে জীবন হারাবো নাকি? একটু পরেই যাচ্ছি দেখ তুই শুধু
~ এইইইইইইই, ওই খবরদার। পা কেটে ফেলে রেখে দিবো আমি। চিনস না তুই আমায়।
~ একটা টেন্ডার নিতে পারস না আবার বউ মারিস। জানোয়ার, কা~পুরুষ, বেইমান, অজাতের ঘরের অজাত। যা আমার মাশফিকের পা ধরে বসে থাক যা। তোকে ভিক্ষা দিবে টেন্ডার যা তুই। দেখছিস এইখানেই তোর আর আমার মাশফিকের তফাৎ৷ আমার মাশফিক কত কাজের। তোর মতো মেয়েবাজী করে না।
নিজের দিকে যথেষ্ট সিনসিয়ার। তুই তো ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে জোর করে আমায় বিয়ে করে এনেছিস আর আমার মাশফিক আমায় সাধনা করে পেয়েছিল। তুই তো জোর করে আমার জীবনের চরম সর্বনাশ করেছিস আর আমার মাশফিক আমার গায়ে টাচ অবদি করে নাই। এখানেই তফাৎ তোর আর আমার মাশফিকের মধ্যে। তুই তো গলির নোংরা জানোয়ার, তুই একটা পাগলা কুত্তা যে শুধু কামড়াতে শিখেছিস।
অয়নন্দিতা অনেকটাই চেচিয়ে কথা গুলো বলছিল। নিজের নামে এতো কিছু শুনে ফারহান আরও ক্ষেপে যায়। অয়নন্দিতার চুলের পিছন দিকে হাত দিয়ে চুল গুলো মুঠোয় পেচিয়ে নেয়।
~ আর একটা কথা বের করবি মুখ দিয়ে, একদম মেরে ফেলবো। একদম মেরে ফেলবো বলে দিলাম। আমার হাত কাঁপবে না একটুও।
~ তোর কাছে এইটার থেকে ভালো কিছুই আশা করা যায় না। এক কাজ কর মেরেই ফেল তুই আমায়। মেরেই ফেল না হয় আমি হয় তোকে মেরে ফেলবো নয়তো নিজেকে শেষ করে দিবো।
অয়নন্দিতার চোখ থেকে ক্রমাগত পানি পড়তেছে। ঠোঁটের কোণে রক্তগুল জমাট হয়ে আছে। ফারহানের কোথাও একটু মায়াও হচ্ছে অয়নন্দিতার জন্য। ধুপ করেই চুল গুলো ছেড়ে দেয় ফারহান। তারপর ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দেয় অয়নন্দিতাকে। সোজা বেরিয়ে যায় রুম থেকে ফারহান।
সিড়ির কাছে এসে আবার কি যেনো ভেবে রুমে যায় ফারহান। অয়নন্দিতা তখন দুইহাতে মাথা চেপে হাটু গেড়ে খাটে বসে কাঁদতে থাকে। ফারহান সোজা এসে অয়নন্দিতাকে টান দিয়ে দাড় করায়। কোন কথা বলতে সুযোগ না দিয়ে এক হাত দিয়ে অয়নন্দিতার মাথার পিছে ধরে আরেক হাতে অয়নন্দিতার মাজার পিছনে হাত নিয়ে অয়নন্দিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। সযত্নে শুষে নেয় অয়নন্দিতার ঠোঁটের রক্ত গুলো।
অয়নন্দিতার তখন কিছুই করার ক্ষমতা নেই। শরীর একদম ক্লান্ত হয়ে ছিল মাথা টাও ঝিমিয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ এইভাবে থাকার পর অয়নন্দিতা ধাক্কা দেয় ফারহানকে। ফুপিয়ে কেঁদে দেয় অয়নন্দিতা।
~ তোর আমায় ভালোবাসতে হবে না। তুই মানুষ না তুই জানোয়ার। চাই না আমার আদর। মেরে ফেল তুই আমায়। মেরে ফেল।
ফারহান দুচোখে অয়নন্দিতাকে দেখছিল। ফারহানের চোখের সামনেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে জ্ঞান হারায় অয়নন্দিতা। আচমকাই এমনটা হয়ে যাবে বুঝে নি ফারহান।
~ অয়নন্দিতায়ায়ায়ায়ায়া
এইদিকে মাশফিক চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। অয়নন্দিতার মোবাইল অফ। একটু কথা বলার জন্য, ওর কন্ঠ টা একটু শুনার জন্য সে উতলা হয়ে আছে। কিন্তু কোন রকম যোগাযোগ করতে পারছে না বলে সেও নিজের রুমে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। সময় যে কেন এমন করলো? ভাগ্য যে কেন এমন পরিহাস করলো ওদের সাথে? অয়নন্দিতা কার? কে অয়নন্দিতার? কার ভাগ্যে আছে অয়নন্দিতা? অয়নন্দিতার ভাগ্যে কে আছে?
প্রশ্ন গুলো সব তাল~গোল পাকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সঠিক উত্তর মেলে না।
অঝোরে চোখের পানি অয়নন্দিতারও পড়ে, মাশফিকেরও পড়ে আবার ফারহানেরও। শেষ টা কি হবে? আদৌ কি এই গল্পের নাম হবে? নাকি নামবিহীন একটা অসম্পূর্ণ গল্প হয়েই থেকে যাবে এদের তিন জনের জীবন?
পর্ব ২৬
এভাবেই কেটে যায় এক সপ্তাহ। টেন্ডার মিস হওয়ার পর থেকে রমজান শেখও একটু দমে গেছে। ফারহানের মনেও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। ইদানীং আর অয়নন্দিতার সাথে লাগে না, মারেও না, ঝগড়াও করে না।
অন্যদিকে মাশফিক নিজেকে কাজের মাঝে ডুবিয়ে রাখে। মন টাই নেই আর। ভেঙে যাওয়া কাচের টুকরো হয়ে গেছে তার মন টা। অয়নন্দিতাও চুপসে গেছে, সারাক্ষণই চুপ করে থাকে। ফারহানকে তেমন কিছুটা বলে না।
বারান্দায় বসে আকাশ দেখছিল হঠাৎ করেই ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে মাশফিকের নাম্বার। ধরবে কি ধরবে না ভেবেও ফোন টা রিসিভ করেই নেয় অয়নন্দিতা।
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ অয়নন্দিতা
~ হুম
~ কেমন আছো?
~ বেঁচেও নেই আবার মরেও নেই
~ মানে
~ বাঁচার মতো বাঁচতে পারছি না আবার মরতেও পারছি না
~ কিছু কথা আছে তোমার সাথে?
~ জ্বি বলুন
~ দেখা করতে পারবা?
~ আজকে?
~ এই ধরো ৫ টার পর
~ কিন্তু,
~ রিকুয়েস্ট করলাম
~ কোথায় আসতে হবে?
~ লেকে আসবে?
~ আচ্ছা আসবো, তবে আজকেই শেষ।
~ রাখছি
~ হুম
হঠাৎ এইভাবে ডাকলো কেন? হিসাব মেলাতে পারছে না অয়নন্দিতা। কিন্তু কথা যখন দিয়েছে যে সে যাবে সো সে যাবেই। ৪ টা অলরেডি বেজে গেছে।
অয়নন্দিতা উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। মাশফিকের পছন্দ কালো, অয়নন্দিতার সাদা ভালো লাগে। আজ সাদা পরবে অয়নন্দিতা।
সাদা একটা থ্রি পিছ পরে, চুল গুলো ছেড়ে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে নেয়। অয়নন্দিতা এমনিতেই নাদুসনুদুস, চোখ গুলো ফুলে আছে মনে হয় এখনি কেঁদে দিবে। মনে হয় যেন আল্লাহ নিজ হাতে আর্ট করে পাঠিয়েছেন একে।
যাই হোক, রেডি হয়ে অয়নন্দিতা নিচে যায়। রওশন বেগম নিচেই ছিলেন।
~ মা, আমি একটু বের হবো
~ আচ্ছা মা, কোথাও কি যাওয়ার আছে?
~ না মানে একটা ফ্রেন্ড ফোন দিলো বললো দেখা করতে চায়। তাই আর কি
~ বেশ ভালো তো, যাও মা দেখা করে আসো তবে আমাদের বাসায় আসতে বললে অনেক খুশি হতাম।
~ মা, আমি আসি
~ দাড়াও
~ জ্বি
~ কান্না করছো?
~ নাহ তো মা
~ এমন যে লাগে,
~ কেমন মা?
~ মারে মায়ের চোখ কে ফাঁকি দেয়া যায় না।
~ আসছি মা
অয়নন্দিতা বেরিয়ে যায়। মনে মনে খারাপ লাগে তার মিথ্যা টা না বললেও পারতো, মহিলা টা বেশ ভালো মনের। এমন মায়ের ঘরে ওমন সন্তান গুলা কিভাবে জন্মায় আল্লাহ পাক জানেন। তারপরও মিথ্যাটা বলা উচিত হয় নি। বাসায় এসে মাকে বলে দিবে ঠিক করে অয়নন্দিতা।
বাড়িতে এতো গুলো গাড়ি কিন্তু সে রিক্সা নিয়ে চলে যায়। পড়ন্ত বিকেল, নিঃস্ব মন এক রাশ দীর্ঘশ্বাস, কিছু জমাট বাধা কষ্ট। এ নিয়েই অয়নন্দিতা।
লেকের ভেতরে প্রবেশ করে অয়নন্দিতা। আশেপাশের দিকে চোখ বুলায় সে। চারপাশের দিকটা একদম অন্যরকম। কতগুলা ছেলে মেয়ে ভাগে ভাগে বসে আছে। কেউ বাদাম খায় তো কেউ বুট। কেউবা ভালোবাসার মিষ্টি কথা বলে তো কেউবা ঘাসে বসে লুডো খেলে। অয়নন্দিতার ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই
সাদায় লাগে গো ভালো তোমায়
আমার সাদা পরী
এই সাদাতেই কাফন আমার
আমি যে কষ্টে মরি
চোখের কোণে পানি তোমার
তবুও রাখো আড়াল
আমার মনের মনিকোঠায়
বানানো আছে দালান
তুমি চুপটি করে অবাক রাতে
এলে আমার পাশে
আমি শূন্য হাতে এগিয়ে গিয়েও
পাইনি তোমায় কাছে
অয়নন্দিতা বুঝে যায়, ভয়েস টা মাশফিকের। হয়তো অয়নন্দিতাকে দেখেছে। না হয় বুঝতে পারতো না যে সে সাদা পরেছে আজ।
~ কোথায় আপনি?
~ খুজে নেও
~ হেয়ালি অফ করুন, হাতে সময় বেশি নিয়ে আসি নি
~ সোজা তাকাও
~ তারপর
~ বামে চোখ দাও
~ তারপর
~ আরেকটু সাইডে দেখো,
~ দেখেছি
দুজন মুখোমুখি সামনাসামনি বসা। মাশফিক দেখছে তার অয়নন্দিতাকে। মন মরা হয়ে আছে মেয়েটা।
~ কি খাবে?
~ কিছুই না
~ ফুচকাও না?
~ আজকাল খেতে ইচ্ছা করে না
~ ফারহানকে তো বলতে পারো এনে খাওয়াবে
~ ঠাট্টা করছেন, বিদ্রুপ করছেন আমায় নিয়ে?
~ নাহ তেমন কিছু না
~ তাহলে ফারহানকে টানলেন কেন? নাকি কথা শুনানো শুরু করবেন?
~ এমন কিছুই না অয়নন্দিতা।
~ তাহলে ডাকলেন কেন আমায়?
~ তোমায় দেখতে মন চাইলো
~ মাশফিক কেন বুঝেন না, আমি এখন অন্যের। কারো স্ত্রী, কারো বউ সো এইসবে আমায় মানায় না
~ বাসায় যাও না কেন?
~ ইচ্ছা করে না
~ তারা তো অন্যায় করে নাই?
~ আমি তো বলি নাই যে তারা অন্যায় করেছে
~ তাহলে বাসায় যাও না কেন?
~ যাবো সময় হোক
~ মাহি কান্না করে কল দিয়ে, তোমার জন্য ওর কষ্ট লাগে। আর ও নিজেকেই দায়ী করে এইসবের জন্য।
~ আমি কথা বলে নিবো ওর সাথে
~ অনেক বদলে গেছো তুমি অয়নন্দিতা।
~ কি বদলে গেছি
~ হ্যাঁ অনেক বদলে গেছো
~ বদলানো ভালো, আপনিও বদলে যান
~ আমি বদলে গেলে তুমি খুশি হবে তো?
~ আপনি ভালো থাকেন, আর আমি ভালোই আছি।
~ আচ্ছা আমরা কি আবার এক হতে পারি না?
~ অসম্ভব, কখনোই না
~ কেন অয়নন্দিতা?
~ আমি অন্যের স্ত্রী,
~ এটা তো বিয়ে নয় এটা তো ছলনা
~ ছলনা হোক আর যাই হোক, বিয়ে হয়ে গেছে, সহবাসও হয়ে গেছে
~ অয়নন্দিতাআয়ায়া,
~ কষ্ট হচ্ছে তাই না? এটাই সত্যি, বিয়ের পর দিন ফারহানকে কুত্তারবাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলাম আর সে তার ঝাল মিটিয়েছে আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে।
~ কিহহহহহহ
~ বাদ দিন, সে আমার স্বামী, আর এটা আমাদের ব্যাপার
~ আমি হারিয়ে ফেললাম আমার ভালোবাসাকে
~ ভালোবাসা কখনো হারায় না মাশফিক, হয়তো পথ দুটো দুদিকে বেকে যায়। দুটো পথ আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু অনুভূতিগুলো এক থাকে। সারাজীবন এক থাকবে।
~ হারিয়ে ফেললাম আমার চিরচেনা সাদা পরীকে
~ আমি থেকে যাবো ওই হৃদয়ের মাঝে
~ এইগুলা শুধুই শান্তনা অয়নন্দিতা।
~ আসছি মাশফিক, নিজেকে গুছিয়ে নেন
ভালো থাকবেন।
~ এমন তো হওয়ার কথা ছিল না
~ হয়ে গেলো,
~ আমার অয়নন্দিতাকে চাই
~ আবারও এক কথা বলেন, অয়নন্দিতা চাইলেও আর হবে না আপনার।
~ কেন না, তুমি ফারহানকে ডিভোর্স দিবে
~ আর ইউ মেড, অহেতুক কথা আপনার মুখে মানায় না। অনেক বুঝের মানুষ আপনি, আসছি ভালো থাকবেন। আর এমন কিছু করবেন না যাতে আমাকে আপনাকেও ঘৃণা করা লাগে।
~ অয়নন্দিতা
~ আসছি
বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যার পর হয়ে যায় অয়নন্দিতার। এতোটাও লেট হতো না যদি না রাস্তায় জ্যাম না লাগতো। জ্যামে প্রায় আধাঘন্টা বসে ছিল বেচারি।
বাসায় পৌঁছে দেখে, ফারহান ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। পায়ের উপর পা তুলে পেপার দেখছে। সাথে সাজি বসা আর আরেক সোফায় রওশন বেগম বসা। ফারহান এর তাকানো বলে দিচ্ছে ঝড়ের আশংকা আছে।
~ চলে আসছো বউমা
~ জজ্বি মা
~ এতো দেরি হলো যে
~ আসলে মা জ্যামে আটকে গেছিলাম
~ গাড়ি নিয়ে যেতে পারতে?
~ ঝামেলা করতে চাই নি মা
~ আচ্ছা যাও ফ্রেশ হও
~ আচ্ছা মা
অয়নন্দিতা সোজা উপরে উঠে যায়। পেপার রেখে ফারহানও উপরে যায়। অয়নন্দিতা রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে গা থেকে ওড়নাটা খুলে রাখে। এমন সময়ে ফারহান রুমে ঢোকে। দরজা লাগিয়ে দেয় সে। অয়নন্দিতা দেখেও না দেখার ভান করে ওয়াসরুমে যেতে ধরে। ফারহান ঠাস করে হাতটা ধরে টান দেয় অয়নন্দিতার। হঠাৎ করে টান দেয়ায় থতমত খেয়ে যায় অয়নন্দিতা।
~ কোথায় গেছিলা?
~ মানে
~ মানে কোথায় গেছো বিকাল বেলায়?
~ ফে,ফে,ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছিলাম
~ কোন ফ্রেন্ড
~ ভা,ভা,ভার্সিটির ফ্রেন্ড
~ ওয়াও, মিথ্যাও বলো আজ কাল
~ সমস্যা কি আপনার, হাত ছাড়েন
~ চোরের মায়ের বড় গলা তাই না
~ উফফফফফফফ, হাত ছাড়েন আমার
~ চুপ, একদম চুপ। একদম চিল্লাবা না, বিয়ের পর পর~পুরুষের সাথে দেখা করতে যাস, তুই কেমন মেয়ে?
~ আমি পর পুরুষের সাথে দেখা করতে যাই নাই
~ তাহলে এটা কে? কার সাথে বসে আছিস তুই?
ফারহান মোবাইল থেকে একটা ছবি স্ক্রিনে এনে অয়নন্দিতার সামনে ধরে ফারহান। আজ বিকেলে লেকে মুখোমুখি অয়নন্দিতা আর মাশফিকের বসে থাকার পিক। মনে হচ্ছে খুব ক্লোজ থেকেই তোলা হয়েছে পিক টা। ফারহান এখন চিল্লাপাল্লা করবে। কিন্তু ছবিটা তুলেছে কে?
~ এখন বল, এইটা তুই না,
~ এটা আমিই আর ও মাশফিক
~ কেন গেছিলি?
~ ছবিটায় বোঝা যাচ্ছে তো কথা বলতেছি তাই না?
~ তুই আসলেই একটা নোংরা মানসিকতার মেয়ে।
~ হেএএএএ, কে কাকে বলে। তা আমি যখন নোংরা মানসিকতার মেয়ে আমায় বিয়ে করছেন কেন? তাও জোর করে
~ স্যাট আপ বেয়াদব
~ ইউ স্যাট আপ, আমার যার সাথে ইচ্ছা হবে আমি তার সাথেই দেখা করবো তাতে আপনার কি?
~ আমার কি মানে, তুই আমার বউ, ফারহান শেখ এর বউ। তুই তোর আগের প্রেমিকের সাথে কেন দেখা করতে যাস
~ ১০০ বার যাবো, হাজার বার যাবো, আর আপনাকে দেখে কি মনে হয় জানেন? কোন এক বস্তির পাতি মাস্তান কিংবা কোন এক রিক্সাওয়ালা, যার মুখের ভাষা এমন।
~ আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো
বলে অয়নন্দিতার গলায় চেপে ধরে ফারহান। অয়নন্দিতাও চুপ করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে। মনে মা নে ঠিক করেছে মেরে ফেলুক আজ ফারহান তাকে। এইভাবে বাঁচার থেকে মরে যাওয়াটা অনেক ভালো হবে। মাশফিকের কষ্ট গুলো আর দেখতে হবে না, ফারহানের পৈশাচিকতা গুলোও আর দেখা লাগবে না।
তাই চুপ করে আছে সে, ফারহান বেশ জোরেই গলায় চাপ দেয় তার। অয়নন্দিতার চোখে পানি দেখে কেন জানি ছেড়ে দেয় সে অয়নন্দিতাকে। ফারহান হাতটা ছাড়ার সাথে সাথে অয়নন্দিতা বসে পড়ে, কাশতে শুরু করে। চোখ মুখ মুহুর্তেই লাল হয়ে যায়। ফারহান দরজার দিকে যেতে ধরলে অয়নন্দিতা ফারহানের হাতে ধরে। নিজের দিকে ঘুরিয়ে দুইহাত আবার গলায় নেয়,
~ মেরে ফেলেন, এই আপনি আমায় মেরে ফেলেন। কসম আল্লাহর একটা টু~শব্দ করবো না। মেরে ফেলেন
~ হাত টা ছাড়ো
~ মেরে ফেলেন আমায়, এইভাবে আর বাঁচতে চাই না আমি। মেরে ফেলেন আমায়।
কিছুক্ষণ জোড়াজুড়ির পর ফারহান কি ভেবে যেনো অয়নন্দিতাকে কাছে টেনে নেয়। অয়নন্দিতার হাত দুটো পিছনে ধরে অয়নন্দিতার ঠোঁটে ডোবায় নিজের ঠোঁট। তারপর বিছানায় ফেলে অয়নন্দিতাকে। অয়নন্দিতার মাঝে ডুবে যায় ফারহান। কিন্তু অয়নন্দিতার চাপা আর্তনাদ ফারহানের কানে যায়। আর তখনই ছেড়ে দেয় সে অয়নন্দিতাকে। সোজা বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এমনকি বাসা থেকেও। আর অয়নন্দিতা বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশ মুখে চেপে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
অন্যদিকে, ফারহান উলটাপালটা গাড়ি ড্রাইভ করে একটা সময় রাস্তার সাইডে দাড় করায়। নিজের হাত টা দিয়ে গাড়ির সাথে জোরে ঘুষি মারে। কেন বার বার সে নিজের রাগের উপরে কন্ট্রোল আনতে পারে না? কেন বার বার সে না চাইতেও অয়নন্দিতাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে? কেন অয়নন্দিতার চোখের পানির কারণ সেই হয়? কি আছে মাশফিকের মধ্যে যে অয়নন্দিতা মাশফিক মাশফিক করে?
প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে ফারহানের মাথায়। উত্তর গুলো খুজতে গিয়েও খুজে পায় না ফারহান। কষ্টের পাল্লা ভারী হয়ে যাচ্ছে অয়নন্দিতা, মাশফিক এবং ফারহানের। কোথায় কিভাবে শেষ হবে এই গল্প যেই গল্পের নাম টা ই নাই।
পর্ব ২৭
সময় নাকি কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এখানেও সেইম হচ্ছে। সময় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে না। তবে ফারহানের মাঝে অনেক পরিবর্তন চলে আসছে। এখন আর বেশি রাত করে না। বাসায় খাওয়া দাওয়া করে। অফিসে বসে, ব্যবসা দেখে। আর অয়নন্দিতাও তার মতো করেই আছে। ইদানীং ফারহানের অয়নন্দিতাকে দেখতে বেশ লাগে। ওর কথা বলা ওর হাটা চলা ওর হাসি যদিও ও হাসে খুব কম।
হিসাবের খাতা টা আজও বেহিসেবি হয়ে আছে। অন্যদিকে মাশফিক বাঁচতে শিখে গেছে। এখন আর ততটা কষ্ট হয় না তার। কথায় আছে প্রিয় মানুষের মৃত্যু হলে অপর মানুষটা কেঁদে কেটে চুপ হয়ে যায়। শোক সামলে নেয় তাই সেও চুপ হয়ে গেছে।
আর এইদিকে অয়নন্দিতাও বাঁচাতে শিখে গেছে। কিন্তু কোথাও একটা ঝড় বেড়াজালের মতো ঘিরে রেখেছে অয়নন্দিতাকে। যার জন্য অয়নন্দিতা ফারহান কেউই তৈরি ছিল না। অয়নন্দিতা ফারহানের সাথে কথাই বলে না। কচিতে দুই একটা, হ্যাঁ / না, এই দুইটা শব্দই বেশি ব্যবহার করে। মাঝে দিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছে আবার সব ঠান্ডা। শনিবার সন্ধ্যায় অয়নন্দিতা কিচেনে কাজ করছিল, সেখানে ফারহান গিয়ে উপস্থিত হয়।
~ উহুম উহুম
ফারহানের কাশিতে অয়নন্দিতা বুঝে যায় ফারহান কিছু চাইবে।
~ কিছু লাগবে?
~ নাহ
~ ওহ
~ একটা কথা বলার ছিল?
~ জ্বি বলেন
~ কাল সন্ধ্যায় রেডি থেকো
~ কেন?
~ একটা পার্টি আছে
~ সেখানে আমার কি কাজ?
~ যেতে হবে, তাই বলা আর কি
~ না গেলে হয় না?
~ না যাওয়া লাগলে তোমাকে বলতাম না
~ আচ্ছা যাবো
~ ওকে
~ শুনো
~ হ্যাঁ বলেন
~ নাহ থাক
~ হুম
কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে নি ফারহান। কিচেন থেকে বের হয়েও আবার অয়নন্দিতাকেই দেখছে সে। কিছু একটা আছে মেয়েটার মাঝে যা ফারহানকে খুব টানে। তবে ফারহান এখন আর আগের মতো অয়নন্দিতার কাছে যায় না। জোর করে কিছু আদায়ও করে না।
এইদিকে সাজি ব্যাপার গুলো খুব ভালো ভাবেই notice করে। তার ভাই যে অয়নন্দিতাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা তার বুঝতে এক মিনিটও লাগে নি। তবে সে চায় ফারহান বরাবরের মতো অয়নন্দিতাকে ঘৃণা করুক। কারণ এই অয়নন্দিতার জন্যই সে তার ভালোবাসা অয়নকে হারিয়েছিল। সেই জন্য সাজিও প্ল্যানিং করে রাখে। সময় মতো এক্সিকিউট করে দিবে সে।
পরদিন সন্ধ্যার ঠিক ১০ মিনিট আগে অয়নন্দিতার ফোনে ফোন আসে। নাম্বার টা সম্পূর্ণ অপরিচিত। অয়নন্দিতার মা বাবা ভাই ভাবি ফারহানের বাবা মা আর মাশফিক ছাড়া নাম্বার আর কেউ জানে না। তাহলে এটা কে হতে পারে। দুইবার বাজার পরে আবারও যখন রিংটোন বেজে ওঠে তখন অয়নন্দিতা রিসিভ করে
~ আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
ভয়েস টোন শুনে বুঝে গেছে, এটা ফারহান। ফারহানের ভয়েস টাই একদম অন্যরকম। সহজেই যে কারো কানে লাগার মতো ভয়েস। অয়নন্দিতা এই তিন মাসে এই প্রথম ফারহানের সাথে মোবাইলে কথা বললো। নাম্বার পাওয়াটা বড় কথা না হয়তো নিজেই নিয়ে নিয়েছে। এইসব ভেবে ভেবে আর কথা আসে না তার মুখে।
~ অয়নন্দিতা, শুনতে পাচ্ছো?
~ জ্বি বলেন
~ রেডি হয়েছো কি?
~ তেমন না
~ তেমন না মানে কি?
~ আরেকটু সময় লাগবে
~ ১০/২০ মিনিট?
~ হ্যাঁ
~ আচ্ছা আমি বের হচ্ছি অফিস থেকে, তুমি রেডি হও
~ আচ্ছা
লাইন কেটে দেয় ফারহান। অনেকটাই পরিবর্তন ফারহানের। আগের মতো তুই তুকারী, গালিগালাজ করে না। কথায় কথায় থাপ্পড় টাও কমে গেছে। এইসব ভাবছে আর নিজেকে আয়নায় দেখছে অয়নন্দিতা। ইদানীং কেন যেন আরও সুন্দর হয়ে যাচ্ছে সে যা হবার কথা না।
হালকা হলুদ রঙের শাড়ি টাতে বেশ মানিয়েছে তাকে। গহনা একদম পছন্দ না তার। তাই গলা খালি রেখে দিয়েছে কিন্তু খালি গলাও ভালো লাগছে না। বেছে বেছে একটা চেইন গলায় দিয়ে নেয় সে। হলদে আর সাদা ম্যাচিং করে চুড়ি গুলো দুই হাতে ভর্তি করে দেয়। কানে এক জোড়া ঝুমকো।
প্রবলেম হচ্ছে চুল নিয়ে। কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে খোঁপা করে নেয় সে, গাজরা টা গোল করে খোঁপায় পরে নেয়। অয়নন্দিতার সাজগোজ বলতে হালকা পাউডার আর চোখে কাজল। হাতে ৫ মিনিট থাকতেই ফারহান রুমে প্রবেশ করে। ফারহান ঢুকেই যেন অবাক হয়ে যায়।
লাইটের আলোকেও ভেদ করছে অয়নন্দিতার রূপ। অনেক সুন্দর বললেও কম হবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে সে অয়নন্দিতাকে। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হচ্ছে অয়নন্দিতা বুঝতেও পারে নি যে কেউ তার রুমে ঢুকে তাকেই পর্যবেক্ষণ করছে। ইসসসস মেয়েটা এতো মন ভোলা হয় কি করে?
সে আপন মনে চুপ করে আয়নায় নিজেকে দেখতে ব্যস্ত। কোথাও কমতি আছে কিনা দেখছে সে। ফারহান মানেই হাই ক্লাস সোসাইটি, বড় বড় পার্টি, হাই লেভেলের মানুষ। ফারহান শেখ এর বউ সে। রমজান শেখ এর একমাত্র পুত্রবধু সে। যদিও এইসব তার একদমই পছন্দ না। ভাবছে একবার বাসা থেকে ঘুরে আসবে। আজকে পার্টির পরে ফারহানকে বলবে দিয়ে আসার জন্য না হয় সে নিজেই যাবে।
~ কমপ্লিট?
কথা টা আচমকা শুনেই হাত থেকে পারফিউম এর বোতল টা পড়ে যায়। সাইডে তাকিয়ে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে সেটা ভাবছে অয়নন্দিতা। ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকা অয়নন্দিতার ধ্যান ভেঙে ফারহান আবারও বলে ওঠে,
~ কমপ্লিট হয়েছে?
~ হ,হ,হ্য,হ্যাঁ, হ্যাঁ হয়েছে
~ ওকে, আমায় ৫ মিনিট দাও আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি
~ হু
অয়নন্দিতা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে অন্ধকার নেমে গেছে। প্রকৃতিটাও শান্ত হয়ে গেছে৷। পশ্চিমের আকাশে কয়েকটা পাখি দেখা যাচ্ছে উড়ে যাচ্ছে। হয়তো নীড়ে ফেরার সময় হয়ে গেছে। ফারহানদের গার্ডেন টা অনেকটা মাশফিকদের গার্ডেনের মতো। অনেক ফুলের সমাগম এখানে। অয়নন্দিতার বেশি ভালো লাগে বেলী ফুল। চার টা গাছে অজস্র বেলী ফুল ফুটে আছে। হঠাৎ করেই ফারহানের ডাক।
~ চলো
পেছন ফিরে তাকিয়েছে অয়নন্দিতা। ভাবছে ৫ মিনিটে কি এমন রেডি হয়েছে সে। কিন্তু তাকিয়ে একরকম ধাক্কা খায় সে। এ কাকে দেখছে অয়নন্দিতা। এ কি ফারহান?
মোটামুটি ৬ ফুট লম্বার সুঠাম দেহ ফারহানের। চুরিদার দিয়ে হালকা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে সে।
একদম অন্যরকম লাগছে। আনফরচুনেটলি অয়নন্দিতার শাড়ির সাথে অনেকটাই মিলে গেছে ফারহানের পাঞ্জাবিটা। হাতে মোবাইল আর সানগ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। যে কোন প্রেমে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাবে তার। কেউ বুঝতেই পারে না এই প্রেমিক পুরুষের ভেতরে একটা পাশবিক পুরুষ লুকিয়ে আছে। যা অয়নন্দিতার উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল কোন এক সকালে।
~ চলো, না হয় আমাদের ঢুকতে দেবে না, আর যদিও দেয় তোমায় দেবে আমায় বের করে দেবে।
~ হ্যাঁ চলুন।
~ ওয়েট, দাড়াও
~ কি
~ বাহিরে হালকা ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে শাল টা নিয়ে নেও
~ লাগবে না চলুন
~ তোমার মাইগ্রেন আছে অয়নন্দিতা, ভুলে যাও কেন?
আসলেই তো অয়নন্দিতার যে ভিষণ মাইগ্রেন। মাঝে মাঝে সেন্সলেস হয়ে যায়। নাকে কানে বাতাস ঢুকলে হয়েছে কাজ। তাই যত সাবধানে থাকা যায় ততই ভালো।
ফারহানের কথায় শাল টা হাতে নিয়ে নেয় অয়নন্দিতা। রওশন বেগম আর রমজান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা বেরিয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয় ফারহান। অনেক দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে ফারহান।
~ এতো জোড়ে গাড়ি কেন চালান
~ তাড়াতাড়ি যেতে হবে তাই
~ এমন করে চালালে যেই জায়গায় যাচ্ছি সেখানে যাওয়ার বদলে সোজা উপরে যেতে হবে।
~ হা হা হা।
~ কি হলো?
~ তুমি তো ভালো জোক্স বলতে পারো।
অয়নন্দিতা জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখছে। আর ফারহান গাড়ি ড্রাইভ করে।
~ আমরা যাচ্ছি কোথায়?
~ গেলেই দেখতে পাবা
~ ওহ
~ তোমার কিছু শব্দ আমার ভালো লাগে না
~ যেমন?
~ ওহ, হুম, হ্যাঁ, না
~ এখানে অপছন্দের কি আছে? কথার ভাজে কথা বলতে হয়। তাই না?
~ হ্যাঁ তবে আমার ভালো লাগে না
~ মাথা ধরে গেছে আমার
~ খারাপ লাগছে?
~ উহু, তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করেন
গাড়ি ছুটে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। যার গন্তব্য ফারহানের জানা অয়নন্দিতার অজানা। স্তব্ধ শহরে গাড়ি ছুটে চলছে সাথে হালকা শীতল বাতাস বইছে। ফারহান সময়টাকে এঞ্জয় করার জন্য গাড়িতে থাকা ডিসপ্লে তে একটা গান চালিয়ে দেয়। গান টা কানে যায় অয়নন্দিতার, আর সাথে সাথে অজানা ব্যাথায় বুকে চিন করে একটা ব্যাথা অনুভব করে অয়নন্দিতা। চিরচেনা সেই গান টা আবারও অয়নন্দিতার সামনে বাজছে।
“আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম”
চোখের কোণ থেকে অটোমেটিকলি পানি গড়িয়ে পড়ছে অয়নন্দিতার। গানটার সাথে কিছু অপূর্ণ স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
~ ফারহান সাহেব গান টা অফ করুন
~ কেন? ভালোই তো লাগছে শুনতে
~ আমার ভালো লাগছে না
ফারহান কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তবুও কিছু বলে নি কারণ সে অয়নন্দিতার চোখের পানি দেখে ফেলেছে। কথা না বাড়িয়ে গান টা অফ করে দেয় ফারহান। মন চাচ্ছে গাড়িটা ঘুরিয়ে বাসায় চলে যেতে কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি রাস্তা চলে এসেছে তাই যেতেও পারছে না। দুজনেই চুপচাপ। আর গাড়ি অজানা পথ পাড়ি দিচ্ছে।
পর্ব ২৮
গাড়ি এসে একটা বাংলোর সামনে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতা বেশ অবাক, জায়গাটা অনেকটা চুপচাপ। জনবসতি নেই বললেই চলে। এর মাঝে বাংলো টাও একদম চুপচাপ। রীতিমতো ভয়ে ধরে গেছে তার। মনের মাঝে কু ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। ফারহান মেরে ফেলবে না তো তাকে। এতো দূরে নিয়ে আসার কারণ তো নেই। তাহলে এইখানে কেন নিয়ে আসলো। প্রশ্ন গুলো গাড়িতে বসে বসেই ভাবছে সে। আর ওইদিক দিয়ে ফারহান যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে কখন থেকে তাকে ডাকছে সেদিকে খেয়াল নেই অয়নন্দিতার।
~ অয়নন্দিতায়ায়ায়ায়ায়া
~ কেএএএ
~ কি কে, গাড়িতেই থাকবে নাকি?
~ ~ ওহ আপনি
~ আবার বলে আপনি? নামো না কেন
একটু চুপচাপ থেকে আবার ভাবনায় ডুব দেয় অয়নন্দিতা। নিশ্চয়ই মেরে ফেলার জন্য এসেছে এইখানে। ভালোই হবে মেরে ফেললে মেরে ফেলবে। তার আরও ভালো হবে। প্যারার থেকে মুক্তি পাবে সে। আবারও ফারহানের ডাকে ধ্যান ভাঙে তার। তারপর গাড়ি থেকে নামে।
~ তুমি কি এতটাই লেট লতিফ নাকি?
~ মানে?
~ পাক্কা ১০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে আছি আর তুমি নামছোই না।
~ আমাকে বের করার জন্য আপনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাই না?
~ তো, ভেতরে যেতে হবে তাই না?
~ হ্যাঁ যাতে কাজ টা সুসম্পন্ন করতে কষ্ট না হয়।
~ হে কি বলো, বুঝি নি
~ চলুন যাই
~ হ্যাঁ এসো।
ভেতরে গিয়ে বেশ অনেকটাইববাক হয় অয়নন্দিতা। চারপাশে শুধু গাছ আর গাছ। এতো গাছ এর আগে দেখে নি অয়নন্দিতা। মাঝেই একটা বিল্ডিং। লাইটের আলোয় গাছে ফুটে থাকা ফুল গুলো দেখা যাচ্ছে। একটু পর কারা যেনো বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।
~ কিরে শালা, এতো লেট কেন?
~ একটু লেট হলো আর কি, বুঝিসই তো অফিসে বসতে হয়।
~ হ্যাঁ৷ আমরা তো ঘোড়ার ঘাস কাট?
~ আরে তা না রে ভাই, ভাবীরা সবাই আসছে?
~ হ্যাঁ আসছে ভেতরে, ইনি কে আমাদের ভাবী নাকি?
~ হ্যাঁ
~ আসসালামু আলাইকুম ভাবী, আমি ইভান
~ আসসালামু আলাইকুম ভাবী, আমি সজিব
~ আসসালামু আলাইকুম ভাবী আমি চঞ্চল
একাধারে সবার সালাম শুনে একটু অভাক হয় অয়নন্দিতা। কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছে এরা ফারহানের ফ্রেন্ড। তাই অয়নন্দিতাও মলিন হাসি দিয়ে সবাইকে এক সাথে ” ওয়ালাইকুম আসসালাম ” বলে।
তারপর ভেতরে প্রবেশ করে তারা। ভেতরটা অনেক সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে কারো birthday কিংবা marriage anniversary ভেতরে তিন জন অয়নন্দিতার বয়সী মেয়ে আছে আর একটা পুচকি বাবুও আছে।
ফারহান এগিয়ে গিয়ে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে।
~ কি ব্যাপার ফারহান ভাইয়া? এতো লেট কেন?
~ সরি ভাবী, আসলে অফিসের চাপে লেট হয়ে গেছে।
~ তা ইনিই কি সেই অপ্সরা যার কথা আমাদের শুনান ভাইয়া
~ মুনা ভাবী আপনিও জায়গা মতো হাত দেন।
~ ওর কাজই তো ওইটা, ওর কথা ছাড়েন। তা এতো সুন্দর বউয়ের জন্যই বুঝি লেট হলো?
~ কান্তা ভাবী আপনিও কম যান না।
~ ভাইয়া সবার সব কথা রাখেন মিনি তো সেই কখন থেকেই বলে যাচ্ছে ফারহান চাচ্চু কখন আসবে।
~ এক মিনিট ভাবী ও কে এইখানে আনি
~ যান তাড়াতাড়ি বেচারি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে নিয়ে আসুন।
ফারহান এসে অয়নন্দিতার কাছে দাড়ায়। অয়নন্দিতাও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
~ কি হলো, আসো?
~ ওনারা কারা
~ বাহিরে যেই তিনজন দেখলে এরা তাদের বউ।
~ ওহ
~ আজ ইভান আর শিরিন ভাবীর marriage anniversary আর ওইযে পুচকিটা দেখছো ওটা মিনি ইভান আর শিরিনের মেয়ে।
~ ওহ
~ আসো, পরিচিত হয়ে নাও।
তারপর অয়নন্দিতাকে নিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ফারহান। শিরিন ইভানের স্ত্রী, কান্তা সজিবের স্ত্রী আর মুনা চঞ্চলের স্ত্রী। অয়নন্দিতাকে সবার থেকে বেশি আকৃষ্ট করছে পুচকিটা। অনেক কিউট যার তুলনা হবে না। একদম পুতুলের মতো দেখতে।
পিংক কালারের একটা পার্টি ফ্রক পরেছে মাথায় দুইপাশে দুইটা ঝুটি, হাতে ছোট ছোট চুড়ি, চোখ গুলো গোল গোল, ল্যাশ গুলো মাশা~আল্লাহ অনেক বড়। একদম পুতুল। অয়নন্দিতার নজর নজর বার বার ওর দিকেই পড়ছে। ফারহানের কোলে চেপে অনেক আদর খাচ্ছে মিনি। ফারহানের গলা চেপে ধরে আছে।
অয়নন্দিতা যেনো অন্য ফারহান দেখছে। যে অনায়াসেই সবার আপন হয়ে যায়। এখানে উপস্থিত সবাই ফারহান বলতে অজ্ঞান। হঠাৎ মিনি অয়নন্দিতাকে দেখিয়ে ফারহাকে বলে ওঠে,
~ ফারনান, এই ফারনান ওইতা তোমাল তউ(বউ)
~ জ্বি আম্মাজান ওইতা আমাল তউ(বউ)
~ অনেত(অনেক) তুন্দর(সুন্দর)
~ তাই
~ হুম
~ তোমাল ভালো লেগেতে(লেগেছে)
~ হ্যাঁ অনেত(অনেক) ভালো লেগেতে(লেগেছে), নাম তি(কি)
~ অয়নন্দিতা
~ তি(কি)
~ অয়নন্দিতা
~ তি(কি) কতিন(কঠিন)
~ হা হা হা
~ ওলে(ওরে) ডাতো(ডাকো)
~ তুমিই ডাকো
~ এই আন্তি(আন্টি) আন্তি(আন্টি)
মিনি ফারহানের কোল থেকে নেমে দৌড়ে অয়নন্দিতার কাছে যায়। অয়নন্দিতা তখন বাকিদের সাথে বসে কথা বলছিল।
মিনি গিয়ে অয়নন্দিতার শাড়ির আঁচল ধরে অয়নন্দিতার কোলে উঠতে বায়না ধরে।
~ আহহহহ মিনি এমন করছো কেন? আন্টি কথা বলছে তো, তাই না?
~ থাক না ভাবী, দেখি কি বলে
মামুনি, কি হয়েছে কোলে আসবে?
~ তাড়ি(শাড়ি) ধলে(ধরে) তানি(টানি) বুতো(বুঝো) না
~ ওহ আচ্ছা, সরি, আসো আন্টি কোলে নেই।
~ তুমি ফারনান এর তউ(বউ)
~ হা হা হা, ওরে পাকনি বুড়ি আয় তোকে একটু চটকাই
~ হিহিহি তাড়ো(ছাড়ো) আমায় তাড়ো(ছাড়ো)
তারপর মিনি আর অয়নন্দিতা গল্পে মেতে ওঠে। মিনির হাজার টা প্রশ্ন আর অয়নন্দিতার খিল খিল হাসি সাথে উত্তর
যা ফারহানের চোখে লাগে। মুগ্ধ নয়নে অয়নন্দিতাকে দেখছে সে। এ যেনো স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন এক পরী। যা বার বার ফারহানের সব কিছু ওলট পালট করে দিচ্ছে।
প্রায় এক ঘন্টা পর মিনি অয়নন্দিতার কোলেই ঘুমিয়ে যায়। শিরিনের রিকুয়েস্টে অয়নন্দিতা ওকে শুইয়ে দিতে রুম খুজছে, হঠাৎ ফারহান সামনে এসে দাঁড়ায়।
~ নিয়ে এসো ওকে এইদিকে।
~ এইদিকে রুম আছে?
~ অভাব নেই
~ ওহ
~ উপরে আসো
~ উপরে?
~ হুম, ওকে কোলে নিয়ে আসতে পারবে নাকি হ্যাল্প করবো?
~ নাহ লাগবে না, পারবো আমি
~ আচ্ছা নিয়ে আসো
~ আপনার ফ্রেন্ডের বাংলো আর আপনি সব চিনেন দেখছি
~ এটা আমার ফ্রেন্ডের বাংলো না।
~ তাহলে?
~ এটা আমাদের। ইনফ্যাক্ট আমার, আমি এখানে এসে আগে সময় কাটাতাম। ওদের বিয়ের পর ওরা এখানেই ছিল কয়েকদিন।
~ ওহ
~ ওরা মাঝে মাঝেই এখানে get together এর আয়োজন করে। যদিও আমায় আসতে বলে আমিই আসি না, আজ ভাবলাম তোমাকে নিয়ে আসি।
~ ওহ
কথা বলতে বলতে অয়নন্দিতা আর ফারহান উপরে চলে আসে। একটা রুমের লক খুলে দেয় ফারহান। তাতে মিনিকে শুইয়ে দেয় অয়নন্দিতা। মিনিকে শুইয়ে দিয়ে পেছনে দিকে ফিরতেই নিচে পাপসের সাথে পায়ের বারি খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তেও বেচে যায় অয়নন্দিতা।
~ আয়ায়াউউচচচচ
~ আস্তে, পড়বা তো
~ ওহ সরি
~ সরি কেন, পড়লে তো ব্যাথা টা তো তুমিই পাবা তাই না
~ চলুন যাওয়া যাক
~ হু
নিচে গিয়ে সবাই মিলে আড্ডায় মেতে ওঠে। অয়নন্দিতা সবার মাঝে থেকেও যেনো নেই। কোন এক অন্য দুনিয়ায় সে বিচরণ করছে। ফারহানের দৃষ্টিতে সব টাই আটকাচ্ছে তবুও সে নিজেকে সংযত রাখছে। তামাশা হোক এটা সে চায় না।
রাত প্রায় ১২ টা নাগাদ সবাই চলে যায়। পুচকি মিনিটাকে অয়নন্দিতাই কোলে নিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়। কেমন যেনো একটা টান চলে আসছে মিনির প্রতি ওর। এইবার তাদেরকেও ফিরতে হবে। কিন্তু ফিরবে কিভাবে প্রচুর ঝড় শুরু হয়ে গেছে।
গাড়ি নিয়ে এই মুহুর্তে বের হওয়া সম্ভব না। এরই মাঝে অয়নন্দিতার ফোনে একটা ফোন আসে। মোবাইল টায় চোখ পড়তেই দেখে মাশফিকের ফোন। সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ফারহানেরও নজর আড়াল করে নি ব্যাপার টা। ফোনের দিকে এক নাগারে তাকিয়ে আছে। তারপর ফারহানের দিকেও তাকায় সে। ফারহান সবপ্টাই বুঝে নেয়।
~ কথা বলো, আমি একটু আসছি
অত্যন্ত শান্ত মেজাজে ফারহান সেখান থেকে চলে যায়। ফোন টাও রিসিভ করে অয়নন্দিতা।
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ কেমন আছো
~ এটা কোন সময় নাকি কল দেয়ার?
~ মানে
~ আমি যে বিবাহিতা আপনি কি তা ভুলে গেছেন? কেন এমন করতেছেন
~ কি হলো
~ রাত ১২ টা বেজে ২৫ বাজতেছে আর আপনি এখন আমায় কল দিয়ে বলেন কেমন আছো। উত্তর টা কি শুনতে চান? আমি ভালো আছি, আমি ভালো আছি মাশফিক, খুব সুখে আছি। জামাইর বুকে ছিলাম এতক্ষণ, আর কি শুনতে চান। দয়া করুন আমায় আপনি। অয়নন্দিতা~মাশফিক আলাদস হয়ে গেছে, সারাজীবনের জন্য আলাদা হয়ে গেছে। কখনো আর তারা এক হবে না। কেন বুঝেন না আপনি?
~ ফারহানের ভালোবাসা তোমায় বদলে দিয়েছে অয়নন্দিতা।
~ উফফফফফফ, বার বার এক কথা বলে। হ্যাঁ বদলে দিছে তো? কি হয়েছে তাতে, জীবনের সব গল্পের নাম হয় না এটা বুঝেন না আপনি? আমাদের ভবিতব্য এটাই ছিল।
আমাদের ভালোবাসা হয়েছিল কিন্তু আমরা দুজন দুজনার কপালে ছিলাম না তাই আলাদা হতে হয়েছে আর ফারহান উছিলা মাত্র। আমি তো মেনে নিয়েছি। এইবার নিজেও মানতে শিখুন। কেন একটা নিয়ে পড়ে আছেন। আপনি কি ভুলে গেছেন একজন অন্যের স্ত্রীকে এতো রাতে কল দেয়া টা কি খুব ভালো দেখায়।
~ আমি কি খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি?
~ আলবাত করেছেন। আমি আপনার কষ্ট সহ্য করতে পারি না, এটা বুঝেন না আপনি? আপনি এখন চোখের পানি ঝরাচ্ছেন এটা চাই না আমি। আপনি হাসি খুশি থাকুন এইটা চাই আমি। আমার মাশফিক ভালো থাকবে এটা চাই আমি। মাশফিক সব ভালোবাসা নাম পায় না। কিছু ভালোবাসা এইভাবেই বিলীন হয়ে যায়। আমায় ঘৃণা করতে শিখুন দেখবে আপনি ভালো থাকবেন।
~ তা চাইলেও পারি না, অয়নন্দিতা ঘৃণার জন্য জন্মায় নাই, ভালোবাসার জন্য তার জন্ম।
~ তাহলে ভালোবাসুন, আর ভালোবেসে ভালো থাকুন মাশফিক। আপনি আমার হৃদয়ের এক লুকায়িত জায়গায় থাকবেন আজীবন ৷ যা কেউ চাইলেও সরাতে পারবে না। কিন্তু ভবিতব্যকে মানতে শিখুন প্লিজ। আমায় যদি ভালোবেসে থাকেন তাহলে ভালো থাকুন নিজে।
যাতে ৫০ বছর পর দেখা হলেও মুচকি হাসি দিয়ে বলতে পারেন আমি ভালো আছি অয়নন্দিতা আর আমিও যাতে বলতে পারি আমি ভালো আছি মাশফিক। ভালোবাসা মানেই পাওয়া না ভালোবাসা মানে কিছু না পাওয়াও হয়ে মাশফিক। জীবনের কাছে কেন হেরে যাবেন। আমি তো বেঁচে আছি, আপনিও বাঁচুন।
~ তুমি ভালো আছো তো? থাকবে তো ভালো আমায় ছাড়া?
~ আমি ভালো থাকতে শিখে গেছি। আপনাকে ছাড়া নয়। আপনাকে মনে নিয়েই বেচে আছি আমি। ইনশাআল্লাহ বেচে থাকবো। মরার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আত্নহত্যা মহাপাপ। তার থেকে বরং ভালো কিছু করতে বেচে থাকি। মাশফিক আমি হয়তো আর কখনো আপনার হবো না কিন্তু আমি ফারহানেরও না। সে আমার স্বামী হোক আর যাই হোক।
নিজেকে ভালো রাখতে শিখুন। একটা বিয়ে করুন। আপনি অনেক ভালো মানুষ, নিশ্চয়ই কোন এক ভালো মেয়ে অপেক্ষা করে আছে আপনার জন্য। প্লিজ কিছু ভালোবাসা তার জন্যেও রাখুন আর আমি থাকবো আপনার মনের সেই লুকায়িত স্থানে যেখানে আমি আপনাকে স্থা দিয়ে রেখেছি। ভালো থাকুন, আমিই ফোন দিবো আপনাকে, দয়া করে আর ফোন দিবেন না
রাখলাম, আসসালামু আলাইকুম
লাইন টা কেটে দেয় অয়নন্দিতা। ওপারে মাশফিক ঢুকরে কেদে দেয়। আর এপাশে অয়নন্দিতা মোবাইল টা সোফায় রেখে দৌড়ে উপরে উঠে যায়। সব গুলো কথা ফারহান শুনে নেয়। ফারহানও উপরে উঠে যায়।
রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছে অয়নন্দিতা, বিছানায় উপুর হয়ে বালিশ চেপে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। কলিজা ফেটে কাঁদছে সে।
যা দেখে ফারহানের বুকের কোথাও চিন চিন একটা ব্যাথা অনুভব হয়। বুকটা চেপে ধরে সেইখান থেকে সরে আসে ফারহান।
রাতের গভীরতার সাথে পাল্লা দেয় কষ্ট গুলো। এক রুমে অয়নন্দিতার বুক ফাটা কান্না, অন্য রুমে বুকের ব্যাথা নিয়া ফারহান স্তব্ধ। আর অন্যদিকে মাশফিক ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রনায় কাতর।
পর্ব ২৯
সকালবেলা নিজেকে বিছানাতেই আবিষ্কার করে অয়নন্দিতা। কাল রাতে এখানেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। কিন্তু ফারহান, সে কই? কাল মাশফিকের ফোন আসার পর আর ফারহানকে দেখে নি সে। একটু তাড়াতাড়িই বিছানা থেকে নেমে রুমের বাহিরে আসে সে। এদিক সেদিক খুজেও পায় না ফারহানকে।
অবশেষে, পাশের একটা রুমের দরজা খোলা দেখে সেই রুমে উঁকি দেয় অয়নন্দিতা। ফারহান সেখানেই শুয়ে আছে। অয়নন্দিতা ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। নিচে তখন কাজের ছেলেটা ডাইনিং এ খাবার সার্ভ করছে। অয়নন্দিতাকে দেখে লম্বা সালাম ঠুকে ছেলেটা।
~ আসসালামু আলাইকুম ভাবী
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
~ বসেন ভাবী
~ হ্যাঁ, বসছি। এতো কিছু তুমি করেছো?
~ হ, আমিই করছি
~ বাহ, বেশ ভালো রান্না জানো দেখছি।
~ একটু আধটু
~ নাম কি তোমার?
~ রনি, রনি মোল্লা
~ বাড়ি?
~ সাতক্ষীরা, এইদিকে কামের জন্যে আইছিলাম, তখন বড় স্যারের লগে দেহা অইলো, আর তিনি আমারে এইখানে রাইখা দিছে।
~ ওহ আচ্ছা
~ ভাইয়ে উডে নাই
~ উঠবে হয়তো
~ ওহ
~ বাড়িতে কে কে আছে তোমার?
~ মা বাপ একটা বইন, বইন ডারে বিয়া দিয়া দিছি, ভালা আছে আলহামদুলিল্লাহ আর মায়ও ভালা আছে। বাপে অন্ধ বড় স্যারে কইছে বাপের চোখ ভালা কপিরা দিবো
~ ওহ, বিয়ে করো নাই?
~ নিজেরাই তো খাইতে পারি না আবার তার উপরে বাড়তি মানুষ
~ বেতন তো পাওই, আর থাকো এইখানে। বউ নিয়ে না হয় এখানে রইলে, অর্ধেক বেতন তোমার বাবা মা কে বাড়িতে পাঠালে বাকি অর্ধেকে এইখানে চলবে। জীবন টা আর কতই বা বলো। আজ মরলে কাল দুইদিন। যত ভালো থাকা যায় ততই ভালো।
~ দেহি কি করন যায়
~ পছন্দের কেউ আছে? থাকলে বলো তোমার ভাইকে বলে ব্যবস্থা করে দিবো আমি।
~ ভাইয়ে শুনলে মাইরা ফালাইবো
~ কেন, মারবে কেন। ভালোবাসা কি অপরাধ নাকি? তুমি আমায় বলো আমি ব্যবস্থা করবো।
~ না মানে অইলো কি ভাবী,
~ কি হইলো?
~ না মানে,
~ কি না মানে না মানে করছো, ক্লিয়ার করে বলো, পছন্দ করো কাউকে?
~ হ
~ কে সে
~ আপনাগো বাসায় যে কাজ করে তার ছোট বইন আছে না সুমি, ওরে
~ রহিমা আপার বোন সুমিকে?
~ হ
~ আচ্ছা আমি তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখবো, দেখি সে কি বলে পরে রহিমা আপার সাথে কথা বলবো।
আনফরচুনেটলি উপর থেকে সব কথা শুনে নেয় ফারহান। ফারহান অয়নন্দিতাকে যত দেখে ততই অবাক হয়। একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে তার মধ্যে। এইজন্যই তো মাশফিক ওর জন্য পাগল। এখন সে নিজেই হাত কামড়াচ্ছে অয়নন্দিতার সাথে এতো খারাপ না হলেও পারতো। এতোটা হিংস্র না হলেও পারতো সে।
নিজের মুড কে স্বাভাবিক করে নিচে যায় ফারহান। ফারহান কে দেখে কথার প্রসঙ্গ চেঞ্জ করে রনি আর অয়নন্দিতা।
~ বাহ রনি, ভালোই তো রান্না পারিস
~ তেমন কিছুই তো পারি না ভাইয়া
~ এইবার তোর একটা বিয়ে দিয়ে দিবো, আমি আর তোর ভাবী প্রায় সময়েই আসবো এখানে, তোরা আমাদের রান্না করে খাওয়াবি। কি বলো অয়নন্দিতা?
যা নিয়ে সবে মাত্রই আলোচনা করা হলো আর তা ফারহানের মুখে শুনে অয়নন্দিতা বেশ অবাক। কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। প্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করছে সে।
~ অয়নন্দিতা, অয়নন্দিতা, এই অয়নন্দিতায়ায়া,
~ হে, জ্বি জ্বি
~ কি ঠিক বললাম তো?
~ হে, হু হু
~ তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো, তোমাকে বাসায় ড্রপ করে আমি অফিসে যাবো অলরেডি নয়টা বেজে গেছে
বাসায় এসে চুপচাপ আছে অয়নন্দিতা। ভালো লাগছে না কিছুই। রুমে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। বাড়ির জন্যও কম কেমন জানি করছে। যদিও রোজই কথা হয়। তবুও মনটা ভালো লাগছে না। যেই ভাবা সেই কাজ। শ্বাশুড়ির রুমে গেলো অয়নন্দিতা।
~ মা আসবো?
~ আরে আসো আসো, অনুমতি লাগে নাকি?
~ কি করেন মা
~ একটু বই পড়তেছিলাম, কিছু বলবা?
~ মা আমি না বাসায় যেতে চাই?
~ বাবার বাসায় যেতে চাও?
~ হ্যাঁ মা, এখানে ভালো লাগছে না, একটু ঘুরে আসি?
~ কি দরকার যাওয়ার কোন দরকার নাই, শ্বশুরবাড়িতে আছো এইদিকেই থাকো। ইশশশ শখ কত বাবার বাসায় যাবে।
পেছন থেকে সাজি কথা গুলো জোরে জোরে বলে ওঠে। রওশন বেগম ব্রু কুচকে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে।
~ তোমার সমস্যা কি ও গেলে?
~ কেন যাবে মা ও?
~ কেন যাবে না ও?
~ ও কে আমার ভাই বিয়ে করছে কি বাবার বাসায় থাকার জন্য
~ এমন থাপ্পড় মারবো তোমাকে আমি, তোমার ভাই কিভাবে বিয়ে করছে তা আমাদের সবার জানা। আর যেখানে আমি উপস্থিত তুমি কোন সাহসে কথা বলো। ভেবো না তুমি আমার মেয়ে বলে পার পেয়ে যাবে। বিয়ের পরে তুমি কিভাবে বাবার বাসায় না এসে থাকো আমিও দেখবো
~ মা, তুমি ওর জন্য আমাকে কথা শুনাও আমি তোমার নিজের পেটের মেয়ে আর ও?
~ ও কি, হে, ও কি? ও কি আরেক মায়ের পেটের না? নাকি আকাশ থেকে টুপ করে পড়ছে ও। দেখো সাজি তর্ক করবা না। যাও এখান থেকে
~ ওকে, ওকে ফাইন।
অয়নন্দিতা ব্যাপার টায় বেস মজা নিচ্ছে আর এইটা ভেবে শান্তি পাচ্ছে যে কেউ তো আছে যে তাকে সার্পোট করে।
নিজের কিছু জামা কাপড় গুছিয়ে, প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় অয়নন্দিতা। কয়েকটা দিন ব্রেক দরকার তার৷। বাড়িতে সবার সাথে থাকলে একটু ব্রেক পাবে সে ৷ সেই ভেবেই যাওয়া। বাবা অনেক খুশি হবে, মা টাও আনন্দে কেদে দিবে, আর ভাইটারও মান অভিমান ভেঙে যাবে।
অতঃপর, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে। সেই বাসা যেইখান থেকে জোর করে বিয়ে করে নিয়ে গেছিলো ফারহান তাকে। কাপা কাপা হাতে কলিংবেলের সুইচ অন করে অয়নন্দিতা।
তিন চার বার বাজার পরে, মাহি দরজা খুলে। বেশ একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে দরজা খুলে মাহি।
মাহির বিরক্তির কারণ প্রতিদিন এই টাইমে দুধওয়ালা এসে নক করে শুধু।
~ মা দেখছো আজকেও অসভ্য বেটা আবাত আসছে, আজকে এর দুধ দিয়া এরেই গোসল করাবো আমি, পরে কিছু বলতে পারবা না।
~ আহহহ মাহি, এমন করে না মা
~ না বাবা আজকে এই বেটার খবর আছে
~ ঠিকই করে, খোল তো মা দরজা খোল, আজকে বেটার খবর আছে
শ্বাশুড়ি বউমার কথায় নিজেকে অসহায় ভাবছেন মজিব সাহেব। যেমন শ্বাশুড়ি তেমন বউ খাপে খাপ।
মাহি এক ধমকের সহিত দরজা খুলেই পুরাই বেকুব বনে যায়। ও ভাবতেই পারে নি যে অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে থাকবে এভাবে। ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে ও অয়নন্দিতার দিকে। এইদিকে রাহেলা বেগম মানে অয়নন্দিতার মাও তেড়ে আসছে আজকে দুধওয়ালার খবর করে ছাড়বে বলে।
~ অয়নিইইইইইইইইইইইই
~ কেমন আছিস মাহি
~ ভালো, মা বাবা অয়নি আসছে।
রাহেলা বেগম, মজিব সাহেব লাফিয়ে দরজার কাছে চলে আসে। কত দিন পর নিজেদের মেয়েকে দেখছে তারা। অয়নন্দিতাও কেদে ফেলেছে তাদের দেখে। মাহিও কেদে ফেলছে অয়নন্দিতাকে দেখে। যাক এতো দিন পর নিজের বাসায় এসে, নিজের রুমে এসে একটা নিঃশ্বাস নিতে পারছে সে।
~ আসবো?
~ আয় না মাহি, অনুমতি নেস কেন
~ কেমন আছিস অয়নি
~ এইতো দেখছিসই তো কেমন আছি
~ হু, ফারহান এলো না?
~ অফিসে ছিল আমি মা কে বলে চলে এলাম।
~ ওহ
~ তোকে সরি বলার ছিলো
~ কি কারণে অয়নি
~ সবটাই তো জানিস, ভাইয়ের বোন তুই। হয়তো আমাকেই দোষ দিবি
~ নাহ, একদমই না। দোষী তো আমিই।
~ বাদ দে
~ ফারহান কে বলবি না আসতে
~ কি দরকার? যেমন আছে থাকুক না
~ হু, আয় খেতে আয়
~ ভাইয়া কখন আসবে?
~ ঝুলিয়েছি গলায় ব্যাংকার
তার পিছনেই সময় বরবাদ
~ হি হি হি হি
~ লেট হবে তার, রাতে আসে সে
~ আচ্ছা, রাতে এলে কথা বলে নিবো আমি।
রাতে ভাইয়ের মান অভিমান কাটিয়ে রুমে এসে নিজেকে বিছানায় ছাড়ে অয়নন্দিতা। হঠাৎ করেই ফোন আসছে। ফোন নাম্বার দেখে একটু বিচলিত হলেও চুপচাপ দেখছে। তারপর রিসিভ করে কানের কাছে নেয়।
পর্ব ৩০
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, ফারহান বলছিলাম
~ হু
~ কেমন আছো?
~ ভালোই
~ না বলে চলে গেলা যে?
~ মাকে বলে আসছি
~ আমার অনুমতি কি লাগে না?
~ আমার কাছে লাগে না। মা অনুমতি দিলেই হলো।
~ ওহ আচ্ছা তাই, খেয়েছো?
~ হ্যাঁ
~ বাসার সবাই কেমন আছে?
~ ভালোই
~ আর তুমি?
~ চলে যাচ্ছে এক রকম
~ কোথায় চলে?
~ এখন ঘুমের রাজ্যে যেতে চায়।
~ একটা কথা বলতাম?
~ জ্বি বলেন,
~ নাহ থাক, ঘুমাও
~ হুম
~ কবে আসবা?
~ দেখি
~ রাখছি
~ আচ্ছা, আসসালামু আলাইকুম
~ হুম
ফোন টা ছেড়ে একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে অয়নন্দিতা। সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে দেখছে। সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে। টিউবলাইটের আলোতে নিজেকে দেখছে সে। ইদানীং কেন জানি অনেকটাই সুন্দর হয়ে গেছে। নাদুসনুদুস ভাব টা তো আছেই। সব মিলিয়ে বেশ লাগছে তাকে।
প্রায় ২ ঘন্টা পরে আবার ফোন আসে অয়নন্দিতার ফোনে। ঘুমে কাতর অয়নন্দিতা ঢিপ ঢিপ চোখে তাকায় মোবাইলের দিকে। আন্দাজেই রিসিভ করে নেয়।
~ হ্যালো কে বলছেন
~ অয়নন্দিতা আমি
~ আমি ফারহান, নাম্বার চিনো না?
ফারহান নাম টা শুনে একটু চমকে যায় অয়নন্দিতা। শোয়া থেকে উঠে বসে সে। দেয়ালে থাকা ঘড়ি টার দিকে নজর দেয় অয়নন্দিতা। প্রায় আড়াইটা বাজে। এতো রাতে ফোন দিয়েছে। কোন বিপদ আপদ হলো না তো?
~ হ্যালো, কথা বলো
~ হে,হে,হু, হু
~ কি হয়েছে?
~ এতো রাতে ফোন দিলেন যে?
~ বারান্দায় আসো
~ কিহহহহহ
~ হু, আসো বারান্দায়
~ এতো রাতে বারান্দায় যাবো কেন?
~ আসতে বলছি না?
~ আসছি
অয়নন্দিতা গায়ে শাল টা পেচিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। অবাক থেকে আরও অবাক হয়ে গেল অয়নন্দিতা। ফারহান নিচে দাঁড়িয়ে আছে। এইটা আশা করে নি অয়নন্দিতা। সাদা শার্টে একটা সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। কানে ফোন, শার্টের হাতা ফোল্ড করা।
~ এতো অবাক হচ্ছো যে?
~ আশা করি নি আপনাকে?
~ ওহ,
~ এতো রাতে এইখানে আসার কি প্রয়োজন পড়লো
~ কেন আমি কি আসতে পারি না?
~
~ চুপ করে ঘাড় টা নিচু করে যখন রাখো বুকের বা পাশ টায় খুব লাগে
~
এমন সময় নাইট গার্ডের উপস্থিতি সেখানে। নাইট গার্ডের আসারও আর টাইম হলো না।
~ এইযে কে আপনি?
~ ফারহান
~ তা এইখানে এই কলনিতে কি করেন?
~ কিছুই না
~ দাঁড়িয়ে আছেন এখন প্রায় পৌনে ৩ টা বাজে, তারপরও বলেন কিছু না
~ আজব আপনি আপনার কাজ করুন
~ গাড়িতে কি আছে, খুলেন?
~ গাড়িতে কি আছে মানে, কিছুই নাই?
~ আছে আছে, না হয় এতো রাতে এইখানে কি, ইয়াবা আছে নাকি?
~ কি সব উলটাপালটা বলতেছেন আপনি, আপনি জানেন আমি কে?
~ জানি, গুন্ডা লাফাঙ্গা রাতের অন্ধকারে এইখানে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই কু~মতলব আছে। আমি এক্ষুনি পুলিশ কে খবর দিবো
~ আরে কি আশ্চর্য,
অয়নন্দিতা এতক্ষণ ফোনে সব শুনছিল আর চোখে সব দেখছিলো। বেচারা ফারহান ঝামেলায় ফেসে গেছে। অয়নন্দিতা কোন রকম শালটা ঠিকঠাক করে মাথায় কাপড় দিয়ে দরজা খুলে নিচে যায়। কেচি গেইটের তালা খুলে মেইন গেইট থেকে বেরিয়ে আসে সে।
~ রহমান চাচা,
~ কে?
~ চাচা আমি অয়নন্দিতা
~ আরে অয়নি মা যে, কি ব্যাপার মা এতো রাতে নিচে নামলা যে?
~ চাচা উনি আপনাদের জামাই। গুন্ডা কিংবা লাফাঙ্গা নন
~ হেএএএ, হাছা নি আমাগো জামাই?
~ জ্বি চাচা
~ ওহ আমি বুঝি নাই মা
~ না বুঝারই কথা চাচা আপনি তো আর দেখেন নি তাকে
~ আইচ্ছা যাও ঘরে নিয়া যাও
~ আপনি আসবেন চাচা একদিন
~ আচ্ছা
গার্ড রহমান চাচা চলে যায়। অয়নন্দিতা ফারহান এর দিকে চেয়ে আছে। আর ফারহানও সেম তাকিয়ে আছে।
~ উলটাপালটা কাজ করলে এমন টাই হয়
~ বুঝতে পারি নি
~ কলনিটা ভালো না
~ ওহ
~ আর কি আসছি আল্লাহ হাফেজ
~ বাসায় আসতে বলবে না
~ বাসায় যাওয়ার জন্য বলা লাগে নাকি?
বাসায় তো এমনি চলে আসা যায়, জোর করে বিয়ে করা যায়
একটু হলেও অপমানিত হলো ফারহান।
অয়নন্দিতা এটা বলে গেইটের কাছে চলে যায়। সে ভেবেছে ফারহান হয়তো আসবে কিন্তু ফারহান ডেকে বসে,
~ অয়নন্দিতা,
~
~ আসছি আমি, তোমাকে দেখতে এসেছিলাম। আল্লাহ হাফেজ
অয়নন্দিতা কিছু বলার আগেই ফারহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। অয়নন্দিতা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে গেইটের ভেতরে চলে যায়।
দরজা লাগিয়ে রুমে যাওয়ার সময় কারো কথায় দাঁড়িয়ে যায় অয়নন্দিতা।
~ ভেতরে আসতে বলতে পারতি?
~ ঘুমাও নাই তুমি
~ নাহ, অফিসের কাজ করতেছিলাম
~ মাহি কি করে
~ ঘুমাচ্ছে
~ তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো, যাও
~ সব টাই যখন মেনে নিলি, তাহলে এইসব কেন
~ বাদ দাও, ঘুমাই
সময় টা যেন কিভাবে দ্রুত বেগে চলছে। কিন্তু সম্পর্ক গুলো ঠিক হচ্ছে না। কিছু সম্পর্ক এখনও আলাদা হয়ে আছে।
আজ রাত ১ টায়, আবার ফোন আসে।
ফারহান ফোন দিয়েছে। না চাইতেও আবার রিসিভ করে অয়নন্দিতা।
~ আসসালামু আলাইকুম,
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
~ আজ আবার এই সময়ে?
~ বারান্দায় আসো
অয়নন্দিতা বুঝে গেছে ফারহান আজকেও এসেছে। অয়নন্দিতা একটা জিনিস বুঝে না যে মানুষটা সারাদিন খোঁজ খবর নেয় না সে রাত ১ টার পর এমন করে কেন। গায়ে শাল টা পেচিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সে। ফারহান আজকেও দাঁড়িয়ে আছে নিচে।
মেরুন রঙ এর শার্টে দারুণ লাগে ওকে। তবে আজকে কেন জানি অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো ওকে। অয়নন্দিতার কোথাও যেন একটা মায়া হচ্ছিলো। আজকে দাড়ানোর স্টাইল টাও কেমন জানি।
~ কিছু বলবেন?
~ উহু, একটু দেখি তারপর চলে যাবো
~ খেয়েছেন কিছু?
~ অফিস থেকে এখানেই এলাম, বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবো
~ ওহ
~ নীল পরছো আজকে?
~ হু
~ ভালো দেখাচ্ছে।
~ আপনি কি অসুস্থ?
~ নাহ ঠিক আছি আমি, তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছিলাম?
~ কি
~ নিচে আসবা?
~ এখন?
~ হ্যাঁ
অয়নন্দিতা আর কথা না বাড়িয়ে নিচে আসে। এই দুইদিন নিজেকে কেমন জানি চোর চোর লাগে তার। এইভাবে চুপি চুপি বের হয়নি সে কখনো, তার উপর কাল অয়ন দেখে ফেলেছে।
~ বলুন
~ এই নাও
~ কি এটা
~ দেখো
প্যাকেট টা খুলে দেখে ফুচকা রাখা। সদ্য বানানো ফুচকা। এতোটাই অবাক হয়েছে যে সে কথাই বলতে পারে না। রাত দেড়টায় কই থেকে ফুচকা আনলো উনি।
~ রাত দেড় টায় কে ফুচকা নিয়ে বসেছিল
~ কেউই না
~ তাহলে পেলেন কই
~ ফুচকাওয়ালার থেকে
~ মানে
~ জাগিয়ে বানিয়ে এনেছি
~ কিহহ
~ হ্যাঁ
~ আপনি কি পাগল?
~ কেন?
~ ওই বেচারাকে জাগিয়ে তুলেছেন মাত্র ২০ টাকার ফুচকার জন্য
~ আমি তো ২০ টাকা দেই নি?
~ কত দিয়েছেন
~ ১০০০ টাকা দিয়েছি
~ কিহহহহ
~ হ্যাঁ
এই মুহুর্তে ফারহানকে বড্ড বেশি অবুঝ লাগছে। কিন্তু এই সেই ফারহান যে কিনা অয়নন্দিতার সব শেষ করে দিয়েছে। ফুচকা গুলো দেখে বুক ফেটে কান্না আসতেছে অয়নন্দিতার তবুও দাত মুখ খিটে আছে সে।
~ খাবে না ফুচকা?
~ খাবো
~ তাহলে খাও আমি দেখি
ফারহানের সামনে ফুচকা একটা মুখে পুরে দেয় অয়নন্দিতা। ফুচকা দিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা তার।
কিন্তু ফারহানকে জানি কেমন লাগছিল। একটু হেলে যায় সে সাথে ঘামছিল। নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে ওঠে,
~ আমি চলে যাই
~ ভেতরে আসতে পারতেন
~ আমার সাথে কেউই তো কথা বলে না তোমার পরিবারের। গিয়ে কি হবে।
~ আমার বাবা আমার ছবি দেখে এখনও কাদে, আমার মা আমায় দেখে বুক ভাসায়, আমার ভাইটা আমায় দেখে আড়ালে চোখ মুছে সে তার বোনকে বাচাতে পারে নাই, আর আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড যাকে ভাইয়ের বউ করে এনেছিলাম সে ভাবে তার জন্যই আমার এই অবস্থা।
চারজনের হাহাকার কিভাবে সহ্য করি ভেবেছেন কখনো?
অয়নন্দিতার কথায় নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে তার। এদিকে শরীরের অবস্থাও ভালো না। তাই তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করছে ফারহান।
~ আসছি, ভালো থাকো
~ হু
গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় শরীর খারাপ হয়ে যায় ফারহানের। গাড়ির ভেতরে আর যেতে পারে নি। মাথা ঘুরে উঠাতে গাড়ির সাথেই হেলান দিয়ে আছে ফারহান। অয়নন্দিতা দেখে একটু থমকে গেলেও নিজেকে সামলে নেয়।
~ কি হলো
~ কিছু না,
ফারহানকে না চাইতেও ধরে ফেলে অয়নন্দিতা। শরীরের তাপমাত্রা অনেক হাই। এমতাবস্থায় গাড়ি চালানো তো দূরে থাক এক কদম দেয়াও রিস্কি হয়ে যাবে। তাই অয়নন্দিতা ফারহানকে ধরে বাসায় নিয়ে যায়।
সবাই ঘুমে থাকায় কেউ টের পায় নি। ফারহানকে নিয়ে নিজের রুমে যায় অয়নন্দিতা। তারপর কিচেনে গিয়ে খানা নিয়ে আসে। না খেয়ে থাকার কারণে বিপি লো হয়ে গেছে হয়তো। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না যে নিজ হাতে খেতে পারবে না। অয়নন্দিতাই খাইয়ে দেয়। ফারহানও খেয়ে নিচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না যে ফারহান অয়নন্দিতার হাত থেকে খাচ্ছে। ফারহানকে কেনো জানি অনেক অসুস্থ লাগছে।
~ অয়নন্দিতা আমি একটু ঘুমাবো।
~ ফ্রেশ হবেন না?
~ একটু ঘুমাই? পরে না হয় করে নিবো
~ একটু হাত মুখে পানি দিন, ভালো লাগবে, উঠুন ওয়াসরুমে যান। আর এটা পরে নিন
অয়নন্দিতার কথায় ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি পরে নেয় ফারহান। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে সোজা খাটে গিয়ে গা এলিয়ে দেয় ফারহান। অয়নন্দিতা বুঝে গেছে, যে শরীর আসলেই অনেক খারাপ লাগছে না হয় এতো টা দমে যাওয়ার পাত্র তো ফারহান না।
ভোর হতেই লাফিয়ে উঠে। শেষ রাতে চোখ লেগে আসে অয়নন্দিতার। সারারাত ফারহানের মাথায় পানি দিয়েছে সে। শোয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফারহানের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। আর এইসব দেখে অয়নন্দিতাও চুপ করে বসে থাকতে পারে নি। মাথায় পানি কপালে জলপট্টি সব দিয়েছে বসে বসে।
এখন বাসায় কল দিয়ে জানিয়ে দিবে ফারহান এই বাসায়। আর নিজের বাবাকে ভাইকেও তো জানাতে হবে, একজন ভালো ডাক্তার আনতে হবে। তাই তাড়াহুড়ো করেই উঠতে যাচ্ছিলো। কিন্তু উঠতে গিয়েও উঠতে পারে নি অয়নন্দিতা।
ফারহান এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। ফারহানের শরীরের তাপমাত্রায় অয়নন্দিতার শরীরও গরম হয়ে গেছে। এতো পরিমাণ জ্বর এসেছে তার।
অন্যদিকে মাশফিক,
আলহামদুলিল্লাহ নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে সে। সেইদিনের রাতের পর নিজেকে অনেকটাই সামলে নিয়েছে সে। অয়নন্দিতার কথস গুলাও ফেলে দেয় নি। নিজের মতো করে সাজিয়ে রেখে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে সে।
অয়নন্দিতা যে তার ভাগ্যে নেই এটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে। অয়নন্দিতা বলেছে ভালো থাকতে যাতে ৫০ বছর পর দেখা হলেও তারা একে অপরকে যাতে বলতে পারে, ” আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি “। এই কথাটাকেই সে মেনে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।
ব্রেকফাস্ট সেরেই অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। আজকে অফিসে কিছু নতুন employees রাখা হবে। তার জন্য তার আগে আগে বেরিয়ে যেতে হয়েছে।
অফিস,
~ সাহাদাত,
~ জ্বি স্যার, এক এক করে সবাইকে পাঠাও
~ জ্বি স্যার
~ female employee কয়জন?
~ স্যার একজনই
~ তাহলে তাকে সবার শেষে দিবে, আগে male গুলো দেখি
~ জ্বি স্যার।
সবার ইন্টারভিউ নেয়া হয়ে গেছে। পোষ্ট তিন টা, মানুষ ২০ জন এর উপর।
~ হ্যালো সাহাদাত
~ জ্বি স্যার
~ female employee যে আছে আছে তাকে পাঠাও
~ ওকে স্যার
মাশফিকের কথায় সাহাদাত মেয়েটাকে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। মেয়েটাও ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য ভেতরে যায়।
~ may i come in sir?
~ yes come
পর্ব ৩১
~ may i come in sir
~ yes come
মেয়েটি আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে মাশফিক এর সামনে দাঁড়ায়। মাশফিক তখনও ফাইলে মুখ গুজে আছে। মেয়েটি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারপর সালাম দেয়,
~ আসসালামু আলাইকুম,
সালাম শুনে মাশফিক এর ভেতর টা নড়ে ওঠে। মুহুর্তের মধ্যেই অয়নন্দিতাকে মনে পড়ে যায় তার। অয়নন্দিতাও ঠিক এইভাবেই সালাম দিতো। হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটির দিকে তাকায় সে। ছিপছিপে গড়ন এর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসুন
~ জ্বি ধন্যবাদ
~ এর আগে কোথাও জব করেছেন?
~ জ্বি না, এটাই প্রথম
~ তাহলে তো অভিজ্ঞতাই নেই আপনার, পারবেন কিভাবে?
~ স্যার আমার চাকরিটা অনেক প্রয়োজন, একটা চাকরির জন্য অনেক দৌড়েছি, গত সপ্তাহে পেপারে বিজ্ঞাপন দেখলাম তাই সিবি জমা দিয়েছিলাম।
~ এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড?
~ স্নাতক ৩য় বর্ষে আছি এইবার স্যার
~ পড়াশোনাও তো কমপ্লিট না, পারবেন তো পড়াশোনার পাশাপাশি জব করতে, আমার কিন্তু সব কিছুই পারফেক্ট চাই।
~ স্যার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো, তবে চাকরি টা খুব প্রয়োজন আমার স্যার।
~ ওকে, সাহাদাত এর কাছ থেকে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যাবেন।
~ স্যার ইন্টারভিউ টা?
~ হয়ে গেছে, আসতে পারেন
~ জ্বি স্যার, স্যার আরেকটা প্রশ্ন?
~ জ্বি বলে ফেলুন
~ স্যার, মানে, বলছিলাম যে কোন ডিপার্টমেন্টে এপয়েন্ট করলেন
~ সাহাদাত এর কাছ থেকে এপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে যাবেন সেখানেই সব লিখা আছে।
~ জ্বি স্যার,
~ এক্সকিউজ মি মিস,
~ জ্বি স্যার
~ নাম মেহেরাজ আফরিন?
~ জ্বি স্যার,
~ আসুন
~ আসসালামু আলাইকুম
~ হুম
মাশফিকের চেম্বার থেকে বেরিয়ে মেয়েটা সাহাদাত এর কাছে যায়। মেয়েটা যাওয়ার আগেই সাহাদাত সব রেডি করে রেখেছে।
~ মেহেরাজ আফরিন?
~ জ্বি স্যার
~ আপনার এপয়েন্টমেন্ট লেটার
~ ধন্যবাদ স্যার
~ কাল থেকে ঠিক ৮ টা ৩০ এ আপনাকে অফিসে থাকতে হবে।
~ জ্বি স্যার,
স্যার একটা প্রশ্ন করি?
~ করুন
~ স্যার আমার ডিউটি টাইম টা কয়টা থেকে কয়টা যদি বলতেন?
~ কেন, কোন সমস্যা
~ না আসলে সন্ধ্যার সাথে সাথে চলে যেতে হবে তো স্যার তাই আর কি।
~ ওইটা স্যার দেখবে। আপনি কাল জয়েন করুন
~ জ্বি স্যার
~ ওকে
~ বাই দ্যা ওয়ে মেহেরাজ আফরিন নামটা একটু কঠিন শর্টকাট নেই?
~ আছে তো স্যার
~ তা মি সেটা, সেটা বলেন সেই নামেই ডাকবো
~ তুতুল, মেহেরাজ আফরিন তুতুল। তুতুল বলে ডাকিয়েন স্যার।
~ আমাকে স্যার বলতে হবে না, ভাই ডাকিয়েন
~ তাহলে আমাকেও আপনি না তুমি করে বলবেন
~ হা হা, আচ্ছা
~ আচ্ছা ভাইয়া আসি কাল দেখা হবে
~ ওকে আজ আসো
~ জ্বি, আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
অফিস থেকে বের হয়ে এপয়েন্টমেন্ট লেটার টা খুলে দেখে সে। MD এর PA, এ পোস্ট এ রাখা হয়েছে তাকে। সেলারি খারাপ না ভালোই, সব মিলিয়ে ২৫০০০ টাকা। ভালো ভাবেই চলে যাবে এখন থেকে তাদের। তারপর একটা রিক্সা নেয় তুতুল। তারপর গন্তব্যস্থলে চলে যায় সে।
অন্যদিকে,
ফারহানকে যে সে ডক্টর দেখানো যায় না। ফারহানদের এক্সট্রা আলাদা পারসোনাল ডক্টর আছে। তাদের ফ্যামিলি ডক্টর আর কি। অয়নন্দিতা সকাল সকাল রমজান সাহেবকে কল দিয়ে ডক্টরকে বাসায় আনায়।
ওইদিলে রওশন বেগমও অনেকটা উদ্বিগ্ন ছেলের অসুস্থতায়। বিকেলে ফারহানকে নিয়ে আসবে বলে ঠিক করেন তিনি। অপরিচিত পরিবেশে অয়নন্দিতার পরিবারকে এতো কষ্ট দিতে চাইছেন না রমজান সাহেব এবং রওশন বেগম।
অয়নন্দিতার পরিবারও যথেষ্ট কেয়ার নেয় ফারহানের। অয়ন ডক্টরের প্রেসক্রাইভড করা ওষুধ গুলো নিয়ে আসে। অয়নন্দিতার বাবা মাও যথেষ্ট করে ফারহানের জন্য। হঠাৎ করে এতো জ্বর আসার কথা না তবুও এতো জ্বর কেন? এটার জন্যই টেনশন সবার।
দুপুর প্রায় ১২ টার দিকে অয়নন্দিতা কিচেনে আসে। সেখানে মাহি আর রাহেলা বেগমও ছিলেন। দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা হচ্ছে সেখানে।
~ কিরে, তুই এখানে? কিছু লাগবে
~ নাহ, একটু স্যুপ বানাবো
~ ওহ
~ ম্যাগি স্যুপ আছে না বাসায় মা?
~ হ্যাঁ, আছে তো
~ তাহলে ওইটাই দাও,
~ জামাইয়ের জন্যে?
~ হ্যাঁ,
~ শুধু স্যুপ দিবি অয়নি?
~হ্যাঁ, আজ আর ভারী খাবার না দেই আর তাছাড়া ডক্টর আংকেলও তো বলেছে হালকা পাতলা খাবার দিতে। বিকেলে ওনার বাবা মা আসবেন, হয়তো চলে যেতে হবে
~ দুইটা দিনও হয় নি আসলি আর চলে যাবি
~ বুঝো না কেন মা, তারা তাদের ছেলে কে এখানে রাখবে না আর আমাকে তো যেতেই হবে তাই না, এখন না গেলে খারাপ দেখাবে তাই না?
~ হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক, মা অয়নি তো ঠিকই বলছে
সেখানে আর কোন কথা বাড়ায় নি কেউ। অয়নন্দিতা স্যুপ বানিয়ে ঢেকে রেখে যায়, এইদিকে আজানও দিয়ে ফেলছে। রুমে এসে দেখে ফারহান তখনও শোয়া। শরীরে হয়তো অশান্তি হচ্ছে। তাই এইভাবে পড়ে আছে মানুষ টা।
~ শুনছেন, এই যে, শুনছেন?
~ হু
~ উঠুন, ফ্রেশ হয়ে নিবেন
~ পরে
~ কিছুই তো খেলেন না, সেই ১০ টায় এক পিছ ব্রেড আর একটু চা খেলেন এখন ১ টা বেজে গেছে, উঠুন, ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে মেডিসিন নিয়ে নিন
~ ভালো লাগছে না কেন জানি
~ অসুস্থ শরীর ভালো লাগবে কিভাবে? উঠুন,
ফারহানকে ফ্রেশ করিয়ে দেয় অয়নন্দিতা। ওয়াসরুমের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফারহানকে আবার বিছানায় নিয়ে আসে। চুলের পানি মুছে দেয়।
~ এই ওষুধ টা খেয়ে নিন, ৩০ মিনিট পর খাবার দিবো, কেমন?
~ হু
ফারহানকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে, নিজে গোসল করতে চলে যায়। গোসল করে নামাজ আদায় করে নেয় অয়নন্দিতা। তারপর কিচেন থেকে স্যুপ নিয়ে আসে। এসে দেখে ফারহান আবার ঘুমিয়ে গেছে। এতো সুন্দর মানুষটা এক দিনের জ্বরে কেমন হয়ে গেছে। চোখ নাক মুখ পুরা লাল হয়ে রয়েছে।
~ শুনছেন, উঠুন
~ পরে
~ ২ টা বাজে, আর কত পরে, উঠেন
ফারহানকে উঠিয়ে স্যুপটুকু খাইয়ে দেয় সে। শরীরে এখনও তাপমাত্রা রয়েছে। কোন রকম খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে ফারহান। দুনিয়ার কোন খবর নাই তার এখন।
বিকেলের দিকে রমজান সাহেব এবং রওশন বেগম বাসায় আসেন।
অনেক কিছুই নিয়ে আসেন সবার জন্য। রমজান সাহেব তো পারেন নি পুরা বাজার তুলে আনেন ছেলের শ্বশুরবাড়িতে। এই প্রথম এই বাড়িতে আসছে তারা, তাই হাত ভরে বাজার নিয়ে আসছে। রমজান সাহেব এবং রওশন বেগম মানুষ খারাপ না তবে হয়তো সন্তানদের মানুষ করতে কোথাও কোন ভুল~চুক হয়েছিল তাই সন্তানগুলো এমন হয়েছে বিশেষ করে মেয়েটা।
এতো এতো বাজার দেখে অয়নন্দিতার বাবা মা একটু মনোমালিন্য করেন। এইসবে টাকা নষ্ট করার কোন মানেই ছিল না। অয়নন্দিতার পরিবার থেকেও কম আপ্যায়ন করা হয় নি তাদের। বিকেল টাইম হিসেবে যথেষ্ট আপ্যায়ন করেছেন তারা। তারা ফারহানকে নিয়ে যাবে সাথে বউকেও। অয়নন্দিতার বাবা প্রথমে অমত করলেও পরে অয়নন্দিতার জন্য রাজি হয়ে যায়।
কোন রকম জামা কাপড় গুছিয়ে ফারহানকে রেডি করিয়ে তারা বেরিয়ে যায় সন্ধ্যার পর পরই৷। অয়নের সাথে দেখা করে যেতে পারে নি বলে ফোন দিয়ে কথা সেড়ে নেয় অয়নন্দিতা
বাসায় এসে ফারহানকে শুইয়ে দিয়ে অয়নন্দিতা মাথায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করে। শরীরে এতো পরিমান হাই টেম্পারেচার যে গায়ে হাত দেয়া যায় না।
স্পঞ্জ দিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয় ফারহানের অয়নন্দিতা। ফারহান একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। চোখ খুলে তাকাতেও তার কষ্ট হয় মনে হয়।
রাতের মধ্যভাগে হঠাৎ ফারহানের কাঁপুনি উঠে। দিক বিক না ভেবেই অয়নন্দিতা জড়িয়ে নেয় তাকে। নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। ফারহানের শরীরের গরমে অয়নন্দিতার শরীরে ঘাম ধরে যায়। কম্বল দুইটা দিয়ে পেচিয়েও
কাঁপুনি কমে নি ফারহানের।
প্রায় অনেক্ষন পর আস্তে আস্তে কাঁপুনি বন্ধ হয় ফারহানের। তারপর আস্তে করে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায় সে।
আর ফারহান ঘুমানোর পর অয়নন্দিতাও একটু শান্তি পেল। এক রকম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারলো মেয়েটা।
পরদিন সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিট,
~ সাহাদাত, রুমে আসো
~ জ্বি স্যার
~ স্যার আসবো
~ হ্যাঁ আসো
~ জ্বি স্যার বলেন
~ কয়টা বাজে?
~ ৮ টা ৫৫ স্যার
~ মিস মেহেরাজ কোথায়?
~ স্যার এখনও এসে পৌছান নি তিনি
~ এটা কোন কথা?
~ স্যার আজকে প্রথম তো ছেড়ে দেন
~ সে আসলে রুমে পাঠিয়ে দিও
~ জ্বি স্যার অবশ্যই।
PA যদি এমন হয় তাহলে হয়েছেই, যেখানে অফিসের MD সকাল ৮ টা ৩০ এ পৌঁছে যায় সেখানে তারই PA সকাল ৮ টা ৫৫ তেও অফিসে এসে পৌঁছাতে পারে নি। ব্যাপারটা দারুণ অবাক হওয়ার মতো।
অবশেষে ৯ টা ১২ তে হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢোকে তুতুল। প্রথম দিনেই এতো লেট, আল্লাহ জানে চাকরি টা থাকে কিনা?
সামনেই সাহাদাত কে দেখতে পায় সে। ফাইল নিয়ে হাটাহাটি করতেছে।
~ আসসালামু আলাইকুম, সাহাদাত ভাই
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, তুতুল আজকে এতো দেরি করলা কেন?
~ জ্যামে আটকে গেছিলাম ভাই, স্যার কি চলে এসেছেন?
~ ৮ টা ৩৫ এ অফিসে ঢুকেছে
~ ইন্নালিল্লাহ,
~ স্যার বলছে আসলেই রুমে যাওয়ার জন্য, যাও তাড়াতাড়ি।
~ ভাই চাকরি থেকে বের করে দিবে না তো?
~ যাও দেখো কি বলে, বলিও যে জ্যামে আটকে গেছিলা
~ আচ্ছা
বড় খতমের দোয়া পড়তে পড়তে রুমে গিয়ে নক করে তুতুল।
~ স্যার আসবো
~ আরে মিস মেহেরাজ যে? আসুন আসুন
বসুন, তা বলুন কি নেবেন, চা নাকি কফি?
~ স্যার আই এম সরি
~ আগেই বলেছিলাম, পারবেন না জোর করলেন চাকরি দেয়ার জন্য, এখন কি হলো, মনে হচ্ছে আমি কর্মচারী আর আপনি মালকিন
~ সরি স্যার আসলে রাস্তায় অতিরিক্ত জ্যাম ছিল। অর্ধেকটা পথ হেটে আসতে হয়েছে। স্যার আর হবে না এমন
~ জ্যামের এক্সকিউজ দেখাবেন না নেক্সট টাইম।
~ জ্বি স্যার
~ কাল থেকে ৮ টা ২০ এ অফিসে থাকবেন আপনি
~ জ্বি স্যার
~ নোট করা শুরু করুন
~ জ্বিইইইই,
~ বললাম পেন আর পেপার হাতে নিন, যা বলবো নোট করা শুরু করুন
~ জ্বি স্যার,
তারপর মাশফিক বলা স্টার্ট করে, আর তুতুল লিখা স্টার্ট করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাশফিক এতোই দ্রুত বলছিল যে তুতুল মেলাতে পারছিল না। তাই বলেই ফেলে,
~ স্যার,
~ হু
~ স্যার একটু আস্তে বলুন, আমি তো লিখছি তাই না, মেলাতে পারছি না।
~ খেয়ে আসেন নি?
~ স্যার খেয়ে আসছি তবে এইভাবে দ্রুত বললে কিভাবে লিখি আমি
~ আচ্ছা আচ্ছা বলতেছি লিখুন আপনি।
প্রায় ১২ পৃষ্ঠা লিখার পর মাশফিক এর বলা শেষ হয়। তুতুলের হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। এতো লিখা কখনো লিখে নি সে এইভাবে।
~ এইবার এইগুলোকে টাইপ করবেন, ফাইল করবেন, দুপুর ১ টার মধ্যে এই ফাইল আমার টেবিলে চাই আমি
ওকে?
~ জ্বি স্যার
~ আর হ্যাঁ, একটা ব্ল্যাক কফি উইদাউট সুগার, কেমন?
~ আমি?
~ PA মানে কি?
~ Personal Assistant
~ রাইট, এইবার বুঝা গেছে কেন আপনি?
~ জ্বি স্যার
~ আসতে পারেন
~ ওকে স্যার
মনে মনে ৫ কথা শুনিয়ে তুতুল রুম থেকে বের হয়ে আসে। অফিসের দক্ষিন পাশেই কফি জোন রাখা। সবাই সেখান থেকেই কফি চা নিয়ে খায়। সেখান থেকেই মাশফিকের জন্য কফি রেডি করে নেয় তুতুল।
~ হাই
~ হ্যালো
~ কি নাম তোমার
~ মেহেরাজ আফরিন তবে আমাকে তুতুল বলে ডাকতে পারো
~ ওকে আমি হিয়া,
~ ওহ
~ স্যার বকেছে তাই না?
~ বকে নাই তবে রূডলি বিহেভ করলো
~ বাদ দাও মন খারাপ করো না। বড় স্যারও এমন
~ ওহ, আচ্ছা আমি কফিটা দিয়ে আসি কেমন?
~ ওকে যাও
~ স্যার আসবো
~ হু
~ স্যার আপনার কফি
~ রাখুন, ধন্যবাদ
~ ওকে স্যার
~ কাজটা কমপ্লিট করে ফেলুন
~ জ্বি স্যার।
এইদিকে,
দুপুরে ফারহানকে খাইয়ে দিয়ে সব মেডিসিন দিয়ে দেয় অয়নন্দিতা। কিন্তু বেচারা ফারহান এতোটাই অসুস্থ হয়ে যায় যায়, সেখানেই বমিটিং করে ফেলে। বিছানার এক সাইড পুরো নষ্ট করে ফেলে। ফ্লোরটাও নষ্ট করে দেয়। একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে ফারহান এখন।
অয়নন্দিতা নিজ হাতে ফারহানকে চেঞ্জ করিয়ে দেয়। বিছানায় নতুন চাদর পেতে দেয়। ফ্লোরের ম্যাট চেঞ্জ করে ফেলে। সর্বোপরি সব কাজ একা হাতে সামাল দিয়েছে সে। রওশন বেগম ছেলের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।
~ মা দুইদিন তো হলো, জ্বর তো কমছে না
~ হ্যা রে মা, তোর বাবা আসুক, ডক্টরকে আবার আসতে বলবো
~ হুম
~ যা তুই কিছু খেয়ে নে মা
~ নাহ মা এখন আর খাবো না কিছু, এইগুলা পরিস্কার করে আর খাওয়ার ইচ্চা নেই
~ আহারে আমিই পরিস্কার করতাম
~ কি সব বলেন মা, আমি থাকতে আপনি কেন, বাদ দিন। আপনি যান মা রুমে গিয়ে রেস্ট নেন, আমি আছ এখানে
~ না থাক, তুই এইদিকে আয় একটু শুয়ে থাক আমি বরং বসি
~ নাহ মা যান, আমি আছি এখানে আপনি যান মা
~ পারবি তো?
~ পারবো মা, যান আপনি।
রওশন বেগম চলে যাওয়ার পর অয়নন্দিতা দরজা লক করে দেয়। বিছানায় এসে নিজের শরীরটাও এলিয়ে দেয় সে। বিছানায় শুয়ে ফারহানকে এক মনে দেখে যাচ্ছে অয়নন্দিতা।
মানুষটা জ্বরে একদম নেতিয়ে গেছে। ফর্সা গড়নের মানুষটা একদম লাল হয়ে আছে। এতো জ্বর হওয়ার তো কোন কারণ নেই, তাহলে কমছে না কেন? ডক্টর কে আরেকবার আসতে বলতেই হবে। এইসব ভেবে ভেবে অয়নন্দিতাও এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে তাও ফারহানের দিকে মুখ করেই।
পর্ব ৩২
আজ আকাশে এতো পরিমাণ মেঘ ধরেছে। চারদিকটা কালো হয়ে রয়েছে। একদম অন্ধকার, মনে হচ্ছে চারিদিক বৃষ্টিতে ভেসে যাবে।
রুমে ফারহানের পাশে বসে আছে অয়নন্দিতা।
ডক্টর এসে মেডিসিন চেঞ্জ করে দিয়ে গেছে। হয়তো এখন জ্বরটা কমবে। এদিকে অয়নন্দিতার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না, ফারহানের সেবা করতে করতে সে নিজেই প্রায় অসুস্থ হয়ে গেছে। শরীর মনে হয় আর চলে না তার। ফারহান ঘুমিয়ে আছে শান্ত হয়ে।
অয়নন্দিতা সেখান থেকে সরে গিয়ে বারান্দায় রাখা বেতের সোফায় বসে আছে। ঝুম ঝুমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে রুমে ফারহানকে এক নজর দেখে নেয় অয়নন্দিতা। গায়ে কম্বল ঠিকঠাক আছে কিনা। বাহিরে ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি হচ্ছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি পর্যবেক্ষন করছে অয়নন্দিতা।
ঘুমও আসছে তার খুব। হাতে নেয়া ম্যাগাজিন টা টি~টেবিলের উপর রেখে আবার রুমে যায় অয়নন্দিতা। ফারহানের সাইডের খালি জায়গায় শুয়ে পড়ে সে। শরীর এতোটাই দুর্বল লাগছিল যে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসে তার চোখে।
অন্যদিকে,
বাহিরে তুমুল বৃষ্টি দেখে ভেতরে তুতুলের চিন্তার শেষ নেই। সব কাজ উলটাপালটা করছে সে আজ। মনে হচ্ছে কিসের জন্য একটা টেনশন কাজ করছে তার উপর। মাশফিকের সামনে দাঁড়ানো সে অথচ নজর তার জানালার বাহিরে বৃষ্টির দিকে।
ঘড়িতে টাইম দেখে সবে মাত্র তিন টা বাজে ৷ কি জানি সব ঠিকঠাক আছে কিনা?
দিক~বিক না দেখে মাশফিককে প্রশ্ন টা করেই ফেলে তুতুল।
~ স্যার, একটা কথা ছিল
~ হ্যাঁ, বলুন
~ স্যার আমাকে আজ ছুটি দেন না প্লিজ
~ কিসের ছুটি?
~ স্যার আমি আজকে বাসায় চলে যাই, প্লিজ স্যার
~ কোন ইমারজেন্সি আছে?
~ একটু
~ বৃষ্টির মধ্যে যেতে পারবেন?
~ হ্যাঁ স্যার আমি চলে যেতে পারবো,
~ আচ্ছা যান, কাল তাড়াতাড়ি চলে আসবেন।
~ জ্বি স্যার, অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার
অনুমতি পেয়ে মেয়েটা এক দৌড়ে মাশফিকের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ফাইল টাইল রেখে কোন রকম দৌড়ে নিচে নামে সে। অপেক্ষা করছে একটা রিক্সা কিংবা সি এন জি ‘ র।
এতো বৃষ্টির মধ্যে ভিজে যাচ্ছে মেয়েটা। হাতের ব্যাগ টা দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছে সে।
মাশফিক রুমের জানালা দিয়েই নিচে দেখছে তুতুলকে।
~ কিসের এতো তাড়া মেয়েটার? আজকে তিন দিন হলো জয়েন করেছে, তিন দিনই মনে হয়েছে কোন একটা তাড়ায় থাকে। আর সারাদিন কি যেন ভাবে? কি সমস্যা এর? আর আজ এতো বৃষ্টির মাঝেও বাসায় যাওয়ার কি এমন দরকার হলো।
এইসব চিন্তা করে যাচ্ছে আর তুতুলকে দেখে যাচ্ছে মাশফিক। হঠাৎ একটা সি এন জি নিয়ে তুতুল হাওয়া হয়ে যায়।
সন্ধ্যার দিকে মাগরিবের আজান এর সময় ফারহানের ডাকে ঘুম ভাঙে অয়নন্দিতার। শরীর অনেক খারাপ থাকায় কখন যে সময় পার হয়ে গেছে অয়নন্দিতার খেয়ালই নাই।
ফারহানের ডাকে চোখ খুলে অয়নন্দিতা। চোখ খুলে ফারহানকে বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে অয়নন্দিতা। তার খেয়ালই নেই যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
~ কি হলো, কি হলো, শরীর কি বেশি খারাপ?
~ উহু
~ তাহলে কি কিছু লাগবে,
~ উহু
~ তাহলে কি হয়েছে, ওয়াসরুমে যাবেন?
~ নাহ, ঘড়িতে দেখো
ফারহানের কথায় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে ৭ টা বেজে গেছে। আকাশ থেকে পড়েছে মনে হচ্ছে অয়নন্দিতা। এতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে। আছর নামাজ টা মিস হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ওযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নেয় সে।
আর ফারহান সেখানেই বসে বসে অয়নন্দিতার নামাজ আদায় দেখছে। জ্বরের ঘোরের মধ্যেও মুচকি ঠোঁট বাকানো হাসি দেয় ফারহান।
~ অয়নন্দিতা একটা কথা বলি?
~ জ্বি বলেন
~ তুমি যখন ওড়না টা এইভাবে ঘুরিয়ে দুই পার্ট করে মাথায় দাও না তোমাকে মাশা~আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগে।
~ ওহ, আচ্ছা কেমন লাগছে?
~ ভালো লাগছে এখন
~ জ্বর টা আছে আর, দেখি তো?
অয়নন্দিতা ফারহানের কপালে হাত রাখে দেখে জ্বর অনেকটাই কমে গেছে।
~ কি খাবেন?
~ ভালো লাগছে না খেতে
~ সন্ধ্যার মেডিসিন টা তো নিতে হবে তাই না,
~ নুডুলস খাবো তাহলে, আর প্লিজ ওই স্যুপ খাবো না আর
~ আচ্ছা, নুডুলস এর সাথে আর কি খাবেন?
~ আর কি খাবো,
~ একটু ফ্রাই করে দেই? খাবেন?
~ আচ্ছা,
~ তাহলে আপনি বসেন, আমি নিচ থেকে করে নিয়ে আসি
~ আচ্ছা
অয়নন্দিতা দরজা খুলে নিচে চলে যায়। কিন্তু মনের ভুলে নিজের মোবাইলটা রুমেই রেখে যায়। তাও আবার ফারহানের মোবাইলের পাশেই রেখে যায় নিজের মোবাইলটা।
ফারহান নিজের মোবাইলটা নিয়ে কিছু কাজ করছিল হঠাৎ অয়নন্দিতার ফোন বেজে ওঠে। ফারহান মোবাইলটা হাতে নেয় দেখে স্ক্রীনে মাহির নাম, বুঝে যায় যে অয়নের ওয়াইফ সে।
~ হ্যালো,
~ আসসালামু আলাইকুম, কে ফারহান ভাইয়া?
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, জ্বি ফারহান বলছি
~ ভালো আছেন ভাইয়া?
~ জ্বি, আপনি?
~ আছি ভালো, অয়নি কই ভাইয়া?
~ নিচে গেলো, আমি তো রুমে
~ ওহ আচ্ছা তাহলে পরেই কল দিবো ভাইয়া, ভালো থাকেন তাহলে
~ আচ্ছা, বাসায় আসবেন
~ জ্বি আচ্ছা আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম
কাজ সেড়ে মাশফিক বাসায় ফিরেছে। বাসায় এখন ওরা তিন জন থাকে। মাশফিকের মায়ের মাথায় এখন বিয়ে নিয়ে চিন্তা উঠেছে। ছেলেকে বিয়ে করাবেন তিনি, ঘরে বউ আনবেন। কিন্তু মাশফিক এখনও প্রস্তুত না, তাই সে এই ব্যাপারে ভাবতে চাচ্ছে না।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়েই ল্যাপটপ নিয়ে বসে যায় সে। বাকি কাজ গুলো শেষ করে নিবে এখন।
অন্যদিকে,
অয়নন্দিতার মোবাইলটা ফারহানের হাতে। মোবাইলে কোন লক দেয়া নেই তাই সহজেই স্ক্রিনটাচ টা আনলক করে ফেলে ফারহান। ঘুরতে ঘুরতে গ্যালারিতে যায় সে। সেখানে বেশ কয়েকটা ফোল্ডার।
একটায় অয়নন্দিতার ফ্যামিলির ছবি আরেকটায় অয়নন্দিতার নিজের কিছু ছবি আরেকটায় অয়নন্দিতার বন্ধুদের ছবি। না চাইতেও ফারহান অয়নন্দিতার ফোন্ডারে যায়। সেখানে অয়নন্দিতার অনেক গুলো ছবি। যা দেখে ফারহান অবাক থেকে অবাক তর হয়।
ছবি দেখা শেষে ম্যাসেঞ্জারে চোখ যায় তার। ম্যাসেঞ্জারে ঢুকবে এমন সময় অয়নন্দিতাও খাবার নিয়ে রুমে চলে আসে। পপরিস্থিতি সামলে নেয় ফারহান, আস্তে করে ব্যাকে গিয়ে মোবাইল টা এমনি ধরে বসে থাকে।
~ কেউ ফোন করেছিল?
~ হ্যাঁ
~ কে?
~ মাহি
~ ওহ, কিছু বলছে?
~ তোমাকে চাইছিল
~ আচ্ছা আমি পরে কথা বলে নিবো, এই নিন আপনার নুডুলস আর ফ্রাই।
~ তুমি খাবা না?
~ রান্না করে স্মেল ভেতরে চলে গেছে, এখন আর ইচ্ছা করবে না খেতে
~ তবুও একটু খাও
~ আপনি খান আমি পরে খেয়ে নিবো
~ সাজি কোথায়?
~ মা তো বললো রুমেই নাকি আছে।
~ ওহ
~ আপনি খান আমি দেখি মাহি কেন ফোন দিলো,
মাহিকে ফোন দিয়ে বসে অয়নন্দিতা,
~ কিরে ফোন দিছিলি
~ হ্যাঁ সেই কখন
~ নিচে ছিলাম, বল
~ ২৯ তারিখ থেকে এক্সাম ফালাইছে
~ কিহহহহ,
অয়নন্দিতার কিহহহহহ শুনে ফারহানের হাত থেকে চামচ পড়ে যায়। কিহহহ টা একটু জোরেই বলে ফেলেছে অয়নন্দিতা
~ আমার কান খাইস না বইন
~ রুটিন দিয়ে দিছে
~ হ্যাঁ, অনেক আগেই দিছে আমরা তো আর খোঁজ খবর রাখি নাই, জুবায়ের আজকে কল দিছে, দিয়ে বলছে। অয়ন ইচ্ছামতো ঝাড়ছে আমাকে, আমি কি পড়াশোনা করি এই সেই, রুটিন দেয় জানি না আরেকজন জানায়, দুনিয়ার কথা শুনাইছে। পরে মা বকা দিছে আর বাবাও তাই রেগে মেগে সকালে বেরিয়ে গেছে।
~ আজকে ১৫ তারিখ আর ২৯ তারিখ এক্সাম। আমি কিছুই পারি না। এডমিট তুলছিস?
~ উহু, কেমনে তুলবো, আজকেই জানলাম আমি কালকে গিয়ে তুলে আনবো। তুই যাবি?
~ তুই গিয়ে নিয়ে আয়, আমি পরে যাবো,
~ শুন, জুবায়ের অনেকগুলা সীট দিছে, এক্সামের জন্য, আমার মেইলে পাঠাইছে
~ আমায় দিবি না?
~ কাল কে বাসায় আয়,
~ সম্ভব না এখন,
~ এক কাজ কর তোর তো মেইল নাই ফারহান ভাইয়ার মেইল আছে কিনা আস্ক কর
~ ধুর, এইসবের জন্যেও এখন হাত পাতবো?
~ যখন বলছিলাম নিজে খুলো, খুলো নাই কেন, এখন কাহিনী কইরো না। তাড়াতাড়ি কর, আমি তোকে পাঠিয়ে দেই তারপর পড়তে বসবো। তোর মা বহুত খারাপ অয়নি, আমাকে বলছে আমি যাতে রান্না ঘরের মুখও না দেখি এখন শুধুই পড়াশোনা করতে হবে।
~ এতো দিন আমি বাশ খেতাম এবার থেকে তুমি খাও, লাইনে থাক আস্ক করি,
“~ শুনছেন,
~ হুম
~ আপনার মেইল আছে?
~ হ্যাঁ, কেন
~ বলেন তো মেইল আইডি টা
~ farhan_88@
~ ওকে “
~ হ্যাঁ মাহি, এই নে মেইল আইডি, পাঠিয়ে দে বইন
~ আচ্ছা রাখ। তুই কিছুক্ষণ পর ভাইয়াকে চেক করতে বলিস। রাখি রে
~ আচ্ছা
যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। একজনের সেবা করতে করতে অয়নন্দিতা নিজেই অসুস্থ তার উপর এক্সাম তাও আবার ফাইনাল। কোন প্রস্তুতি নেই তার।
~ খেয়ে একটু আপনার মেইল টা চেক দিয়েন তো?
~ আচ্ছা, কিন্তু কেন?
~ মাহি কিছু সীট পাঠিয়েছে। আপনার তো প্রিন্টার আছেই, একটু প্রিন্ট করে দেন।
~ আচ্ছা
~ আপনি হাসেন যে
~ এক্সাম?
~ হুম
~ আমি আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি, এখন নিজের এক্সামের কথা ভাবো।
~ যে কাল অবদি ভালো ছিল না সে আজ ভালো হয়ে গেলো
~ এইগুলা রাখো, তারপর পড়তে বসো
ফারহানকে মেডিসিন দিয়ে, অয়নন্দিতা বই গুলা নিয়ে বসে। আর ফারহান ওর সীট গুলা প্রিন্ট করতে থাকে।
২০ মিনিট পরে সীট গুলো প্রিন্ট করে অয়নন্দিতার হাতে দেয়।
~ এতো পড়া শেষ করতে পারবা?
~ জানি না
~ কাঁদতেছো নাকি
~ মজা নেন নাকি আপনি?
~ আজকে পড়তে হবে না বইগুলা নাড়াচাড়া করো, কাল থেকে স্টার্ট করো কেমন?
~ বলতে হবে না এতো কিছু, আমি কাল কলেজে যাবো, এডমিট কার্ড তুলতে হবে
~ আমি নিয়ে যাবো পরে, তুমি পড়াশোনায় মন দাও।
অয়নন্দিতা ভাবে, বাপের বাড়িতেও মায়ের দৌড়ানির উপরে ছিল শুধু এই পড়াশোনা নিয়ে আর এইখানেও দৌড়ানি খেতে হবে মনে হচ্ছে তাও আবার এই লোকের কাছে। ভাবতেই প্যারা লাগছে অয়নন্দিতার কাছে।
ল্যাপটপের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সাহাদাত এর নাম্বারে ডায়াল করে মাশফিক।
~ হ্যালো, স্যার
~ সাহাদাত মেহেরাজ এর নাম্বার টা দাও
~ তুতুলের?
~ তুতুল কে
~ মেহেরাজ আফরিনই তুতুল, ওকে তুতুল বলেই তো ডাকি স্যার
~ আচ্ছা যেই হোক না কেন, নাম্বার দাও
~ আচ্ছা স্যার
নাম্বার নিয়ে ফোন করে তুতুলকে। দুইটা ফোন হওয়ার পরে রিসিভ হয় ফোন টা।
পর্ব ৩৩
লেখিকা : আফরোজা
~ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম, কে?
~ মাশফিক চৌধুরী বলছি,
~ জ্বি স্যার, স্যার বলুন
~ এম কে কোম্পানির ফাইল টা হাতে নিন, তাড়াতাড়ি
~ জ্বি স্যার এক্ষুনি নিচ্ছি
~ নিয়েছেন?
~ জ্বি স্যার বলুন
~ ২য় পেইজের ২৫ নম্বর লাইনটা কারেক্ট করুন
~ জ্বি স্যার বলুন,
~ ওকে ভালো থাকুন মিস তুতুল
~ জ্বি স্যার
একটু অবাক হয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে নেয় তুতুল। কি ব্যাপার মিষ্টার চৌধুরী হঠাৎ তুতুল বলে ডাকলেন?
আজকে অনেকদিন পর অয়নন্দিতা ক্যাম্পাসে আসে। তাও এডমিট তুলতে। সাথে ফারহান। নিজের কাছে কেমন কেমন জানি লাগছে তার। পড়শু মাহির সাথে আসলেই ভালো হতো। কেন যে আসে নাই সে সেই আফসোস এ তার দিন যাচ্ছে।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসের মেয়েগুলো মনে হয় ফারহানকে পারে না গিলে খায়। আর ফারহানও যেমন, ব্ল্যাক জিন্স, হোয়াইট শার্ট তাও ইন করা, হাতা গুলো ফোল্ড করা সানগ্লাস পড়া, সব মিলিয়ে পুরাই অস্থির। অন্যদিকে অয়নন্দিতাও আছে ঠিকঠাক। কিন্তু মেয়েদের এইসব দেখে অয়নন্দিতার রাগ উঠে যায়। নাক মুখ ফুলে গেছে।
অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অয়নন্দিতা আর ফারহান।
~ ফরম ফিল~আপ করছিলা?
~ হ্যাঁ,
~ এমন করছো কেন?
~ কি করছি
~ এমন ফুলে পেকে আছো যে
~ যত্তসব আজগুবি কথা
~ তুমি দাড়াও আমি ভেতর থেকে আসছি
~ কেন
~ এডমিট তুলে আনি, না হয় আজকে বসিয়ে রাখবে
~ পাওয়ার দেখিয়ে?
~ এখানে পাওয়ারের কি আছে
~ পরেই যাবো
এমন সময় অয়নন্দিতার কিছু ফ্রেন্ডস রা আসে।
~ অনুউউউউউউ
~ কে রেএএএ
~ কিরেএএএএ দোস্ত কেমন আছিস
~ আলহামদুলিল্লাহ তুই কেমন আছিস তুরিন
~ ভালো
~ এই জুবায়ের তুই আমাকে সীট গুলা দিলি না কেন
~ তোর ভাবি থুক্কু মাহিকে তো দিছিলাম
~ আমাকে তো দিলি না
~ পাইছস তো নাকি
~ হুম
~ এডমিট তুলতে আসছিস?
~ হ্যাঁ,
~ বিয়েতে তো ইনভাইট করলি না?
বিয়ের কথা বলাতে অয়নন্দিতার মন খারাপ হয়ে যায়। হুট করেই ফারহান এর দিকে তাকায়। ফারহানও বুঝে যায় ওর তাকানোর রহস্য। এই মুহুর্তে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তার।
~ উনি কে, দুলাভাই?
~ হুম
~ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া
সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেয় ফারহান। এডমিট কার্ড তুলে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে হতে প্রায় দেড়টা বেজে যায় তাদের। অয়নন্দিতাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই ফারহান অফিসে যায়। আজকে প্রায় এক সপ্তাহ পর অফিসে যাচ্ছে সে। এই কয়েকদিন রমজান সাহেবই সব টা সামলে নিয়েছেন।
অফিসে ঢুকতেই এক কান্ড ঘটে গেছে। মাশফিক সামনে এগুতে না এগুতেই কেউ একজন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।
উঠে গিয়ে খেয়াল করে তুতুল হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি বুঝতে একটু টাইম লাগে মাশফিকের। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
তারপর বুঝে উপরে কিছু রিপেয়ার করা হচ্ছিলো। আর ওই টাইমেই মাশফিক ওইখান দিয়ে যাচ্ছিলো আর ওই টাইমেই একটা কাঠের টুকরো মাশফিকের গায়ের উপরে পড়া ধরে তুতুল দেখে মাশফিক কে সরিয়ে দেয় আর সেই কাঠের টুকরো তুতুলের হাতে এসে পড়ে।
বেচারির চোখের পানিই বলে দিচ্ছে সে কি পরিমান ব্যাথা পেয়েছে। তবুও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
~ সাহাদাত, এই সাহাদাত
~ জ্বি স্যার
~ কাজ চলাকালীন সময়ে কিসের কাজ করাও অফিসে
~ স্যার উপরে অল্প একটু কাজই ছিল ভাবলাম করিয়ে ফেলি
~ তাই বলে অফিসে কাজ চলছে আর রিপেয়ার করা হয়, এখন কারো সমস্যা হলে কি করতে
~ সরি স্যার আর হবে না
~ আচ্ছা, ভবিষ্যতে খেয়াল রেখো, মিস তুতুল আমার রুমে আসুন।
মাশফিক রুমে চলে যায়। সাহাদাতও তুতুলের কাছে আসে।
~ ভাই আজকে হয়তো চাকরি থেকে বের করে দিবে
~ কেন
~ এইযে ওইভাবে ধাক্কা দিলাম
~ উনি বুঝেছে কেন ধাক্কা দিছো, বেশি ব্যাথা পাইছো তাই না?
~ নাহ, ঠিক আছি ভাইয়া
~ আচ্ছা যাও শুনে আসো কি বলে
~ হুম।
তুতুল মাশফিকের রুমে যায়। মাশফিক তখন ফাইল চেক করছিল। তুতুল রুমে গিয়ে মাশফিকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
~ স্যার, ডাকলেন যে
~ বসুন
তুতুল সামনে থাকা চেয়ারটায় বসে পড়ে।
মাশফিক ফার্স্ট এইড এর বক্স এনে তুতুলের হাতে স্প্রে করে দেয়।
~ ব্যাথা কি কমেছে?
~ জ্বি স্যার কমেছে।
~ কি প্রয়োজন ছিল
~ কিসের
~ এইযে এইভাবে নিজের গায়ে ব্যাথা নিলে
~ না হলে যে আপনি ব্যাথা পেতেন
~ হেএএএ
~ নাহ, কিছু না
~ ওকে
অন্যদিকে,
সাজি মোটামুটি ব্যবস্থা করে ফেলেছে। প্ল্যানিং প্লটিং সব রেডি। এখন শুধু এক্সিকিউট এর অপেক্ষায়।
পর্ব ৩৪
কাল অয়নন্দিতার এক্সাম। আজ সারাটাদিন বেচারি পড়ার উপরে আছে। শ্বাশুড়ি মাশা~আল্লাহ খুবই ভালো। নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দেয় ছেলের বউকে। যদিও কোন এক দমকা হাওয়ার মতো অয়নন্দিতা এই পরিবারে এসেছিল। কিন্তু এখন অনেক বেশি আপন লাগে এদের। শুধু সাজির সাথে তার বন্ডিং টা জমে ওঠেনি।
বিকেলে বারান্দায় পড়ছিলো অয়নন্দিতা। হঠাৎ করে মোবাইলে ফোন আসে। নাম্বার টা দেখে আগের মতো এখন আর চমকায় না অয়নন্দিতা। ফোন টা রিসিভ করে সে।
~ আসসালামু আলাইকুম
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো অয়নন্দিতা
~ আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
~ আলহামদুলিল্লাহ
~ বাসায় সবাই কেমন আছে?
~ আলহামদুলিল্লাহ
~ আপনি ভালো আছেন তো?
~ আলহামদুলিল্লাহ
~ যাক এই আলহামদুলিল্লাহ শব্দ টা শুনে আমিও শান্তি পেলাম
~ কাল তো তোমার এক্সাম?
~ হুম
~ প্রিপারেশন কেমন?
~ খুব বাজে, সারাবছর না পড়লে যা হয় আর কি
~ ফারহান কেমন আছে?
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে
~ ওহ
~ আমাকে ক্ষমা করতে পারেন নি তাই না? ভাবছেন আমি খুব স্বার্থপর। আপনাকে ছেড়ে চলে গেলাম এই সেই তাই না?
~ প্রথম প্রথম তাই ভাবতাম, কিন্তু এখন আর মনে হয় না।
~ আমি আমার দিক থেকে ক্লিয়ার করলাম আর কি
~ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি
~ তা এতো দিন পর কল দিলেন যে?
~ এমনি আজ হঠাৎ মনে পড়লো তোমাকে তাই দিয়ে ফেললাম
~ কোথায় আছেন?
~ অফিসে
~ ওহ ফারহানও অফিসে
~ ওহ
~ কিছু বলতে চান?
~ নাহ, রাখি
~ আচ্ছা
মাশফিক লাইন টা কেটে কিছুক্ষণ চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? একটা ঝড় এলো আর সব ওলট পালট করে দিলো। দুজনের দুটো রাস্তা সম্পূর্ণ আলাদা করে দিলো। এমন ভাবেই আলাদা করে দিলো যে আর এক হওয়ার উপায় রাখলো না।
হঠাৎ করেই রুমে তুতুলের আগমন ঘটে। মাশফিক তখনও মাথা নিচু করে বসা টেবিলে। তুতুল মাশফিককে এইভাবে দেখে আস্তে করে আবার ফিরে যেতে নিলে হঠাৎ করেই মাশফিক ডাক দিয়ে বসে।
~ কিছু প্রয়োজন ছিলো কি মিস তুতুল?
~ জ্বি, না, মানে
~ আসুন, বলুন কি বলবেন
~ আপনি কি অসুস্থ?
~ নাহ, কেন
~ এমনি, স্যার এই ফাইল টা একটু দেখার ছিল
~ আচ্ছা দিন
তুতুলের হাত মোড়ানি দেখে মাশফিক বুঝে যায় তুতুল কিছু একটা বলতে চায়।
~ হেজিটেশন ফিল না করে বলে ফেলুন, কি বলতে চান
~ নাহ মানে
~ নাহ মানে কি, বলুন, কি বলবেন বলুন
~ আপনার কি মন খারাপ স্যার?
~ হাসি পাচ্ছে খুব কথা টা শুনে
~ মানে
~ কিছু না, কাজ শেষ। আসতে পারেন
~ জ্বি স্যার।
বিষন্ন মনে রুম থেকে বের হয় তুতুল। তার কাছে মনে হচ্ছে মাশফিক তাকে মজার ছলেই অপমান করে দিলো।
সকাল বেলা ফজর নামাজ পড়ে বই নিয়ে বসে অয়নন্দিতা। ১৩০ থেকে এক্সাম তার। আজ ফারহানও অফিস যায় নি। অয়নন্দিতাকে নিয়ে যাবে বলে।
১২ টার দিকে রেডি হয়ে বেরিয়ে যায় তারা। গাড়িতে অয়নন্দিতা চুপচাপ বসে আছে। কিছু একটা ভাবছে সে। কিন্তু কি ভাবছে তা মাথায় আনতে পারছে না ফারহান।
~ অয়নন্দিতা
~ হুম
~ কি হয়েছে
~ কোথায়
~ মন খারাপ?
~ নাহ
~ এক কাজ করো, মাশফিককে ফোন দেও
~ কোন প্রয়োজনে
~ কথা বলে নেও
~ প্রয়োজন নেই
~ আমি সামনে বলেই কি প্রয়োজন নেই?
~ মানে কি
~ নাহ মানে আমি যখন থাকি না তখন তো ভালোই কথা চলে
~ কিহ
~ অভিনয় করো না অয়নন্দিতা, তোমাকে অভিনয় তে মানায় না।
~ কিসের অভিনয়?
~ কাল বিকেলে মাশফিকের সাথে তো প্রায় অনেক্ষণ কথা বললে আর আজ বলছো প্রয়োজন নেই
~ আমার পিছনে স্পাই লাগিয়ে রেখেছেন নাকি, ও ও ও, আপনার বোনই তো যথেষ্ট, তাই নয় কি?
~ আমার বোন কে টানবে না খবর দার
~ আপনি আমাকে টানছেন কেন তাহলে
~ যা করেছো তাই বললাম,
~ কাল মাশফিক নিজে আমাকে কল দিয়েছিল আমি শুধু কিছু কথা ক্লিয়ার করেছি আর এখন সেও বুঝে গেছে যা হিবার নয় তার পিছনে দৌড়ে কোন লাভ হয় না। আর আপনি ভাবলেন কি করে আপনার হাতে রেপ হওয়ার পরেও আমি এই শরীর নিয়ে মাশফিকের কাছে যাবো? আমি কি বাজাইরা মেয়ে যে একজনের সাথে শোয়ার পরে আবার অন্যের সাথে, ছিহহহহহ
~ অয়নন্দিতাআয়ায়া
~ চিৎকার করে সত্য কে ধামাচাপা দেয়া যায় কি মিষ্টার শেখ? আপনার কি ধারণা আমি আপনাকে সেবা যত্ন কেন করেছি, আপনি আমার স্বামী তার জন্যে? নাহ মানুষ হিসেবে মানবিক দ্বায়িত্ব থেকে।
আমি আপনাকে স্ট্রেটলি বলে দেই যান মাশফিকের কাছে। গিয়ে শুনে আসুন অয়নন্দিতা তাকে কি বলছে। আরে আমি আপনার সাথে সংসারই করবো না আবার মাশফিকের কাছেও যাবো না। আরে আমি তো মাটি কামড়ে পড়ে আছি এখানে না হয় আমি অয়নন্দিতা একজন রেপিস্টের সাথে, কিভাবে?
~ অয়নন্দিতা,
~ গাড়ি থামান, আমি নামবো
ফারহান এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে অয়নন্দিতার সেন্টার চলে আসছে। ফারহান আর কথা বাড়ায় নি। গাড়িতে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে ফাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ফারহান কয়েকবার ডাকার পরেও অয়নন্দিতা পিছনে ফিরে তাকায় নি। সোজা ভেতরে চলে গেছে।
গাড়ির সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে। নিজের উপরে প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। আজকে প্রথম এক্সাম আর আজকেই এতো ঝামেলা তাও গাড়ির মধ্যে। না চাইতেও বার বার অয়নন্দিতার কাছে ছোট হচ্ছে সে।
ভাগ্য কোথায় এনে দাড় করিয়েছে। কেন সেইদিন সাজিকে বুঝানো হলো না? কেন সেইদিন মাথা ঠান্ডা করে ভাবা হলো না? কেন সেইদিন ঝোকের বসে বিয়ে টা করে ফেললো? কেন সেইদিন সকালে সামান্য একটা গালির জন্যে সে অয়নন্দিতার সাথে,? তার জন্যে সব শেষ হয়ে গেলো আজকে। এর শেষ কোথায়?
পর্ব ৩৫
এক্সাম হল থেকে বের হয়ে মাহির সাথে বেরিয়ে আসে রাস্তায় অয়নন্দিতা। ৪ ঘন্টা এক্সাম দিয়ে ৫ টা ৩০ মিনিটে বেরিয়ে যায় দুজনে। সাথে অন্যান্য বন্ধুরাও ছিল। অয়ন এসেছে মাহিকে নিতে।
এইদিকে ফারহান কাজ শেষ করেই গাড়ি নিয়ে ছুটে অয়নন্দিতাকে আনতে। সেন্টারের পাশেই কিছু ফুচকার স্টল আছে। অয়নন্দিতা মাহি তো ফুচকা পাগলী। মন্দ হয় না এই সময়ে খেলে। অয়নকে বসে ওরাও বসে পড়ে ফুচকাওয়ালার দোকানে।
~ এক্সাম কেমন দিলা মাহি
~ ভালোই
~ বাবুইপাখি তোর?
~ হয়েছে মোটামুটি
~ তোর তো এই ডায়ালগ টাই আছে মোটা + মুটি = মোটামুটি
~ চুপচাপ অর্ডার করো
~ অয়নি শুন
~ হুম বল
~ ফারহান ভাই আসলো না যে তোকে নিতে
~ কেন, এটা কি দিল্লী নাকি যে আমাকে নিতে আসতে হবে, আমি চলে যেতে পারবো
~ ওহ
~ এই বাবুইপাখি ঝাল টক নাকি মিষ্টি টক
~ ঝাল টা নেও
~ ওকে
~ অয়ন আমাকে মিষ্টি টক দিও
~ আমি কি ফুচকা বিক্রেতা নাকি যে দিবো
~ হলে মন্দ হয় না আমরা খেতে পারতাম আর কি
~ বাসায় চলেন আজকে খবর আছে আপনার
~ আজকে রাতে অয়নির বাসায় চলে যাবো
~ ভুল ওইটা আমার বাসা না,
~ মানে
~ কিছু না
এমন সময়ে ফারহানের গাড়ি সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ফারহান এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু ততক্ষণে আশপাশটা খালি হয়ে গেছে। অয়নন্দিতাকে না পেয়ে বুকে কামড় দেয় ফারহানের।
দুপুরের বলা কথা গুলো বার বার কানে বাজে ফারহানের। অয়নন্দিতা সত্যি সত্যি চলে যায় নি তো। এইসব ভেবে ভেবে বিষন্ন মনে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময়ে অয়নের ডাকে সামনে থাকা ফুচকার স্টলে চোখ যায় ফারহানের।
~ ফারহান, এই ফারহান
~
~ এই যে, এইদিকে আসো
~ কি অবস্থা
~ ভালো, তোমার
~ ভালোই,
~ বাবুইপাখি ভেতরে, মাহিও আছে। ওরা নাকি ফুচকা খাবে তাই নিয়ে আসছি
~ ওহ
~ আসো ভেতরে গিয়ে বসি
~ তা তুমি বাহিরে এলে যে
~ অফিস থেকে কল আসছিল একটা তাই বের হতে হলো
~ ওহ আচ্ছা
~ আচ্ছা আসো ভেতরে চলো
~ চলো
মাহির সাথে হাসিমুখে কথা বলাটা হঠাৎ অফ হয়ে যায় অয়নন্দিতার, কারণ সামনে ফারহান কে দেখেই অয়নন্দিতার হাসি কালো মেঘে পরিনত হয়ে যায়।
রাতে রুমে বসে অয়নন্দিতা বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেছে। ফারহান কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে নি। আজ টোটালি ইগনোর করছে অয়নন্দিতা তাকে। আর কারো ইগনোরেন্স সে সহ্য করতে পারে না। তার ইগোতে বাধে এটা। তাই নিজেই অয়নন্দিতার কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে।
~ কিছু বলবেন?
~ নাহ
~ কিছু লাগবে?
~ নাহ
~ তাহলে ঘুমান গিয়ে
~ তুমি?
~ প্রেম করবো কিছুক্ষণ পর
~ মানে
~ নাথিং
~ মাশফিক কল দিবে নাকি?
~ হা হা, হ্যাঁ, তার কলের অপেক্ষায় আছি আমি
~ ওহ, ভালো, ওকে কন্টিনিউ
~ ওকে, ইউ অলসো
~ মুভ অন করো তাহলে
~ সিউর, আপনিও
অয়নন্দিতার বাকা কথা গুলো ফারহানের গায়ে খুব লাগে। সে ভাবতে পারে না অয়নন্দিতা এইভাবে কথা বলতে পারে। রুম থেকে সোজা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় ফারহান। সিগারেট ধরায় তবুও মনে শান্তি পাচ্ছে না ফারহান।
ফারহান ঝোকের বসে মুভ অন এর কথা বললেও অয়নন্দিতা তাতে সায় দেয় কিভাবে। ধুপ করেই সিগারেট টা ফেলে রুমে এসে অয়নন্দিতা টেনে সোফা থেকে উঠায় ফারহান। আচমকা টান দেয়ায় ব্যাথাও পায় সে। তবুও সে চুপচাপ। কারণ এইসব এখন তার কাছে পানি ভাত। তাই আর এতোটা ভাবে না সে।
~ এতো সোজা?
~
~ ওই, কথা বলো না কেন?
~
~ ওই কথা বলো, এতো সোজা?
~ বাকা ছিলো কবে
~ shut up
~ ok
~ কি সমস্যা অয়নন্দিতা? এমন করতেছো কেন?
~ কি হলো, কোথায় কি সমস্যা, আমার কোন সমস্যা নেই
~ মুভ অন করতে চাচ্ছো এখন?
~ কখন বললাম করতে চাচ্ছি
~ খানিকক্ষণ আগেই তো বললা
~ আপনি বললেন মুভ অন করো তাহলে আমি বললাম ওকে আপনিও
~ এতে কি বুঝা যায়
~ কি?
~ বুঝো না কি?
~ নাহ
~ অয়নন্দিতা বড্ড বেশে বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু তুমি
~ কি বাড়াবাড়ি করলাম, আপনি বললেন আমি হ্যাঁ বললাম
~ মাশফিক চাই তোমার? বলো মাশফিক চাই
~ মানে
~ মুভ অন কাকে নিয়ে করতে চাও? মাশফিককে নিয়ে?
~ হা হা হা,
~ আবার হাসে, বলো কাকে নিয়ে করতে চাও মুভ অন?
~ হা হা হা, হাসালেন আপনি আমাকে, তবে কি জানেন আপনাকে অনেকটা এবনরমাল লাগছে আমার কাছে। অনেকটা প্রতিবন্ধী টাইপ। টিপিক্যাল স্বামীদের মতো আচরণ, হা হা হা
~ অয়নন্দিতাআয়ায়ায়ায়ায়া,
~ হা হা হা, মাশফিক মাশফিক মাশফিক
ওই কিসের মাশফিক, মাশফিকের সাথে মুভ অন করতে চাইলে আরও আগেই করতে পারতাম। এইভাবে এইখানে বসে থাকতাম না।
আর কি মুভ অন মুভ অন লাগিয়ে রাখছেন। লজ্জা করে না মাশফিকের নাম নিতে এই মুখে। আমার সাজানো গোছানো জীবনটাকে আপনি শেষ করে দিয়েছেন। জোর করে স্বামীত্ব গিরি ফলিয়েছেন। আমার সম্ভ্রমটুকুও শেষ করে দিয়েছেন, তারপরও বলেন মুভ অন৷ বেক্কল নাকি আপনি।
আর এই, এইদিকে তাকান, আমাকে আপনার কেমন মনে হয়? আমি বাজাইরা মাইয়া? হ্যাঁ আমি বাজাইরা মাইয়া? যে যখন তখন যার সাথে না তার সাথে শুয়ে পড়বো, এটা আপনি ভাবতে পারেন আমি না। আরে আপনার তো নিজেরই চরিত্রের ঠিক নাই। জোর করে একজনকে বিয়ে করবেন তারপর তার সব টুকু কেড়ে নিবেন। আরে নিজেই তো নিকৃষ্ট পর্যায়ের মানুষ।
~ অয়নন্দিতাআয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,
ঠাসসসসসস ঠাসসসসসস
অনেক শুনেছি, এনাফ ইজ এনাফ। আর কত শুনাবে তুমি হ্যাঁ আর কত
~ হা হা হা, দাড়ান একটু হাসি, হা হা হা
অয়নন্দিতা থাপ্পড় খেয়ে জোরে জোরে হেসে দেয়। ফারহান অয়নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফারহান চলে এলে তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দেয় অয়নন্দিতা। তারপর বালিশ চেপে চিৎকার দেয়া শুরু করে দেয় সে।
~ আয়ায়ায়ায়া, আয়ায়ায়া, আয়ায়ায়া, মায়ায়ায়ায়া, মাগোওঅঅঅঅ, এমন কেন হয় আমার সাথে। কেন এমন হয়, যাকে ভালোবাসলাম তাকে পেলাম না। যে বিয়ে করলো সে একটা অমানুষ। আমি আর পারছি না, নাহ এইভাবে আর নাহ। থাকবো না আর, আর থাকবো না এইভাবে।
আজ মাশফিকের কেন জানি ভালো লাগছে না। মন টাও বেশ চঞ্চল হয়ে আছে। মনে হয় কি যেন হারিয়ে গেছে, কি যেন নেই। বুকের মাঝখানটায় কেমন যেনো শূন্যতা বিরাজ করে তার। হঠাৎ তুতুলের কথা মনে পড়ে তার।
মেয়েটার হাতের ব্যাথা কেমন হয়েছে কে জানে।
যেইভাবা সেই কাজ। ফোন দিয়ে বসে সে তুতুলকে।
কয়েক বার রিং হওয়ার পরে তুতুল ফোন ধরে।
~ আসসালামু আলাইকুম, স্যার কোন সমস্যা? এতো রাতে কল দিলেন? বাসায় সবাই সবাই ভালো আছে তো? বড় স্যারের কিছু হয় নি তো স্যার?
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, আস্তে আস্তে এক সাথে এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবো
~ জ্বি মানে আসলে
~ কেমন আছো?
~ হুউউউউউউ
পর্ব ৩৬
~ আসসালামু আলাইকুম, স্যার কোন সমস্যা? এতো রাতে কল দিলেন? বাসায় সবাই সবাই ভালো আছে তো? বড় স্যারের কিছু হয় নি তো স্যার?
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম, আস্তে আস্তে এক সাথে এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবো
~ জ্বি মানে আসলে
~ কেমন আছো?
~ হুউউউউউউ
হঠাৎ মাশফিকের মুখ থেকে তুমি করে বলা টায় একটু ধাক্কা খেয়ে যায় তুতুল। অনেকটা অবাক হয় সে। কথা বলতে গিয়েও কথা গুলো আটকে যায় তুতুলের। তুতুলের সাড়াশব্দ না পেয়ে মাশফিক প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি আবার করে।
~ কেমন আছো?
~ জ্বি স্যার ভালো
~ হাতের ব্যাথা কেমন হয়েছে
~ ভালোই
~ কেন ফোন দিলাম এটাই ভাবছো তো?
~ নাহ স্যার, তেমন নাহ
~ কাল অফিসে আসছো তো?
~ জ্বি স্যার, চেষ্টা করবো
~ ওকে, রাখলাম
~ জ্বি স্যার
~ ওয়েট ওয়েট, কে কান্না করে ওইখানে?
~ ক,ক,কই,
~ হ্যাঁ, কেউ মে বি কান্না করে
~ নাহ, কেউ কান্না করে নাহ, রাখছি স্যার
~ শু,শু,শুনো
~ টুট টুট টুট
তুতুল মেয়েটা রহস্যে ঘেরা। বুঝা যায় না কিছুই তার। তবুও কেন জানি মাশফিকের তাকে ভালো লাগে। একাকীত্ব টা দূর করা খুব দরকার তার
নিজেকে স্পেস দেয়া প্রয়োজন। অতীত নিয়ে সামনে আগানো যাবে না। তবে আজকে এতো দিনে তুতুলকে ভালোই লাগে তার।
কেন ভালো লাগে তার ব্যাখ্যা জানা নেই তার। তার চোখে তুতুলকে অনেকটাই অয়নন্দিতার মতো লাগে। আচার ব্যবহার কথা বার্তা চলাফেরা প্রায়ই অয়নন্দিতার মতো। তাই হয়তো ভালো লেগেছে। কারণ অয়নন্দিতাই প্রথম যার মাঝে মাশফিকেরমন আটকেছে।
পরদিন সকাল বেলা, নাস্তার টেবিলে সবাই আছে শুধু অয়নন্দিতা নেই। রমজান সাহেব, ফারহান, রওশন বেগম এবং সাজি সহ সবাই ডাইনিং এ বসা আছে। শুধু অয়নন্দিতা নেই। নিচ থেকে কয়েকবার ডাকা হয়েছে তাকে, সবার আড়ালে সাজির দিকে নজর যায়
ফারহানের বার বার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে। ফারহানের কাছে ব্যাপার টা অস্বাভাবিক লাগছে। কিন্তু তবু সে চুপ আছে। কাটা চামচ দিয়ে ডিমের অংশ মুখে ঢুকাচ্ছে আর হাসছে সাজি।
ফারহান বুঝে যায় সাজি কিছু তো একটা করেছে, কিন্তু কি করেছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। এমন ভাবে বোন কে অবজার্ভ করছে সে যাতে কেউ বুঝতেই না পারে। ওইদিকে অয়নন্দিতাও রুম থেকে বের হয়ে গেছে।
সিড়ি দিয়ে নেমেই নিচে আসবে সে। ওইদিকে অয়নন্দিতার হাটা, এইদিকে সাজির বার বার সিড়িতে নজর দেয়া আর মুচকি হাসি কিছু তো একটা মিন করছে যা ফারহান ধরতে গিয়েও ধরতে পারছে না। ৫ সেকেন্ডের মাথায় ফারহান ধুপ করে ডাইনিং থেকে উঠে সিড়িতে যায়।
~ দাড়াও অয়নন্দিতা,
ফারহানের এইভাবে দাড়াও বলাতে সবাই অবাক সাথে অয়নন্দিতা নিজেও অবাক। উপর থেকে মাত্র ৪ সিড়ি ক্রস করেছিল অয়নন্দিতা।
~ রহিমা আপা, এই রহিমা আপায়ায়া
~ জ্বে ভাইয়া
~ কি কাজ করো আজ কাল, হ্যাঁ কি কাজ করো, এইখানে এইভাবে তেল ফালিয়ে রেখেছো কিভাবে?
তারপর সবার নজর যায় সিড়িতে পড়ে থাকা তেলের দিকে। যদি অয়নন্দিতা আর একটা পা সিড়িতে ফেলতো তো সোজা স্লিপ কেটে এমন নিচে। যার ব্যবস্থা অত্যন্ত নিখুত ভাবেই করে রেখেছে সাজি। কিন্তু সবার সামনে এমনকি অয়নন্দিতার সামনে নিজের বোনকে এক্সপোস করবে কিভাবে সে শত হোক বোন তার। তাই দোষ টা রহিমার উপর দিয়ে দেয়।
রহিমা বেচারি প্রথমে বুঝে উঠতে পারে নি ফারহানের এমন ধমকে সে বোকা হয়ে গেছে। পরে সবার অগোচরে রহিমাকে চোখে আর হাতে ইশারা করে দেয় ফারহান। আর রহিমাও বুঝে যায় নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে।
~ কথা কেন বলো না এখন, এইভাবে যেখানে সেখানে তেল ফালাও কেন তুমি
~ কি ব্যাপার রহিমা, এমন ভুল তো এর আগে কোনদিন করো নাই তুমি। আজ হঠাৎ তেল ফালাইছো এখন যদি আল্লাহ না করুক অয়নন্দিতা পা দিতো তাহলে কি হতো ভেবে দেখছো।
~ খালাম্মা আমার ভুল অইয়া গেছে, আসলে
~ আসলে মা আমিই বলছিলাম আমাকে একটু তেল দিতে প্রয়োজন ছিলো একটু কিন্তু রহিমা আপা যে এইভাবে তেল ফালাবে আমি বুঝতে পারি নাই।
অয়নন্দিতা বোকার মতো সিড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে। আর সবার কথা শুনছে। নিচে পড়ে থাকা তেল গুলো দেখছে। স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে ইচ্ছে করে কেউ তেল টা ফালাইছে।
~ খালাম্মা আমারে মাপ কইরা দেন। আর হইবো না
~ আচ্ছা, বাদ দাও, মুছে ফেলো
~ রহিমা আপা, বাদ দাও তো, ভুল হতেই পারে। ব্যাপার না। তুমি মুছে দেও
~ ভাবি, আপনে কত ভালা
~ মুছে দেও আপা
ফারহান অয়নন্দিতার হাত ধরে তাকে নিচে নামিয়ে আনে। অন্যদিকে সাজি সেখানেই বসে আছে। প্লেট ভেঙে ফেলবে মনে হচ্ছে। কাটা চামচ দিয়ে জেদ মেটাচ্ছে সে।
ফারহান সাজিকে দেখছে আর ভেতর ভেতর রাগে ফেটে যাচ্ছে। সে অয়নন্দিতার ক্ষতি করতে চেয়েছে। এটা সে আশা করে নাই। এখন শুধু অপেক্ষায় আছে সবার আড়ালে তাকে ধরার। নাস্তা শেষে সবাই যে যার কাজে চলে যায়। অয়নন্দিতা উপরে চলে যায়। এর ফাঁকে ফারহান সুযোগ বুঝে রহিমার সাথে দেখা করে।
~ রহিমা আপা
~ জ্বে ভাইয়া
~ কষ্ট নিও না আপা, তুমি আমাদের বাড়িতে আজকে অনেক বছর কিন্তু আজকে আমি চিল্লাইলাম তোমার উপরে
~ ভাইয়া কি সব বলেন, বাদ দেন তো
~ যতক্ষণ বাসায় থাকবে অয়নন্দিতাকে দেখে রাখবে কেমন
~ আইচ্ছা
এইবার সাজির রুমে যায় সে। সাজি তখন ফুল ভলিউমে গান শুনছে রুমে। দরজা খুলে সাথে সাথে মিউজিক অফ করে দেয়।
~ কি ব্যাপার ভাইয়া, গান অফ করলা যে
~ খুব মজা পাইছিস নাকি?
~ মানে
~ মজা আরও পাইতি যদি অয়নন্দিতা পড়ে যেতো
~ মানে কি
~ ঢং করবি না আমার সাথে, তোকে আমি চিনি খুব ভালো করেই
~ কি সব যে বলো না ভাইয়া
~ চুপ একদম চুপ, এটাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং।
~ উহহহহ
~ অয়নন্দিতার আশেপাশে যাতে না দেখি তোকে আমি
ফারহান চলে যাওয়ার পর সাজি আরও রেগে যায়।
~ এখনও তো কিছুই শুরু করি নি। সবে তো মাত্র খেলা শুরু করলাম। এতো তাড়াতাড়ি মাঠ ছেড়ে বের হবো না আমি। গেইম যখন শুরু করেছি শেষ না করে ছাড়ছি না আমার প্রাণের ভাই। হা হা হা
পর্ব ৩৭
কয়েকটা দিন সব ভালোই চলে সব। অয়নন্দিতাও চুপচাপ ফারহানও চুপচাপ। অন্যদিকে মাশফিকের মন আস্তে আস্তে তুতুলের দিকে ঘুরছে। কাল সন্ধ্যায় বিরাট বড় একটা পার্টি থ্রো করা হয়েছে। সেরা ১০ কোম্পানি আমন্ত্রিত সেখানে। যার মাঝে এক নাম্বারে আছে চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি এবং তিন নাম্বারে আছে শেখ গ্রুপ অফ কোম্পানি।
স্টাফ + মালিক সবাইকেই ইনভাইট করা হয়েছে। চৌধুরী গ্রুপ থেকে মাশফিক সহ বাকিরা যাবে মাশফিকের বাবা আউট অফ ঢাকা থাকায় তিনি জয়েন করতে পারবেন না। শেখ গ্রুপ থেকে ফারহান যাবে বাকি স্টাফ রাও যাবে।
মাশফিকের পিএ হিসেবে তুতুলের সেখানে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
~ হ্যালো স্যার
~ রুমে আসো
~ জ্বি স্যার
~ স্যার আসবো
~ হ্যাঁ এসো
~ স্যার কোন প্রয়োজন?
~ শুনেছো তো কাল পার্টি দেয়া হয়েছে
~ জ্বি স্যার
~ আমরা সবাই সেখানে আমন্ত্রিত
~ জ্বি স্যার
~ তুমিও যাচ্ছো
~ কিন্তু স্যার আমি, আমি কিভাবে
~ কিভাবে মানে? যেতে হবে এজ এ পিএ হিসেবে তোমাকে সেখানে আমার প্রয়োজন পড়বে
~ কয়টা থেকে কয়টা স্যার
~ সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১১ টা
~ স্যার এতক্ষণ তো
~ কিছু শুনতে চাচ্ছি না, তুমি যাচ্ছো
~ জ্বি স্যার
~ ওকে, আসতে পারো
অন্যদিকে রমজান সাহেবের আদেশ বউমাকেও পার্টিতে নিয়ে যেতে হবে। রমজান একটা মিটিং এর জন্যে সিলেট যাবেন তাই তিনি জয়েন করবেন না সেইজন্য বউমা যাবে। ফারহান প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু অয়নন্দিতা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে ফারহানের। রাতে এসে ক্লিয়ার করে নেবে ফারহান অয়নন্দিতা যাবে কি যাবে না।
রাত,
~ ব্যস্ত?
~ নাহ বলেন, কিছু বলবেন
~ রেগে আছো?
~ রাগ কি?
~ মানে?
~ কিছু না, বলেন কি বলবেন?
~ ওইদিনের জন্যে সরি
~ তারপর
~ বুঝতে পারি নাই আমি
~ তারপর
~ সরি তার জন্যে
~ তারপর
~ থাপ্পড় টা জেদের বসে দিয়ে ফেলছিলাম
~ তারপর
~ তার আর পর নাই, তারপর সরি
~ খুব সহজ তাই না?
~ মানে?
~ যখন মন চাইলো মারলেন যখন মন চাইলো জোর করলেন। আমার নিজের অস্তিত্ব আছে কি? কে আমি?
~ অয়নন্দিতা,
~ হ্যাঁ ওই একটা নামই আছে আমার অয়নন্দিতা, অয়নি, অনু, বাবুইপাখি, এছাড়া আর কিছুই নেই
~ আছে তো, মিসেস ফারহান শেখ
~ হা হা হা, যা ক্ষনস্থায়ী
~ মানে?
~ কিছু না বলুন কি বলবেন
~ কাল সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে, তোমাকে যেতে হবে সেখানে আমার সাথে
~ আমি কেন যাবো
~ সবাই নিজেদের ওয়াইফ + পার্টনার নিয়ে যাবে
~ ভালো তো
~ আপনি যাবেন আপনার স্টাফদের সাথে সেখানে আমার কোন কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না।
~ কিন্তু,
~ আশা করি বুঝেছেন
~ আমি না হয় বুঝেছি কিন্তু বাবাকে কি দিয়ে বুঝ দিবে
~ বাবা মানে, বাবা আসছে কোথা থেকে
~ বাবা নিজেই বলেছেন যাতে তুমি যাও
~ ওহ
~ এখন কি করবা, ভাবো
~ ভাবার কি আছে, বাবা যখন বলেছেন তখন যাবো
~ ওকে
~ হুম
~ এক্সাম কেমন হয় তোমার
~ জানি না
~ ফেইল মারলে লজ্জায় মাথা আটা যাবে আমার, সবাই জানে ফারহানের বউ এক্সাম দেয়
~ ঘুমিয়ে যান আল্লাহ হাফেজ
~ কথা এডিয়ে গেলে
~ কোথায় এড়ালাম
~ ওকে গুড নাইট
~ হুম
~ আর শুনো, কাল আমি ড্রাইভার পাঠিয়ে দিবো, সে তোমাকে পিক করে নিবে। আমি অফিস থেকে চলে যাবো
~ লাভ টা হলবে কিসে
~ কিসের লাভ
~ আমি একা একা যাবো ওখানে?
~ কেন যেতে পারবে না?
~
~ ঘাড় টা নিচু করে রাখো কেন? একদিন বলছিলাম না তুমি ঘাড় নিচু করে রাখলে আমার কাছে তোমাকে আরও বেশি ভালো লাগে। আমি হারিয়ে যেতে যাই তোমার মাঝে, আমার সামনে ঘাড় নিচু করে রাখবা না
~ ঘুমিয়ে যান
~ কোথায় যাচ্ছো এত রাতে
~ বারান্দায়
~ এখন?
~ চাঁদ উঠেছে আজ, দেখবো একটু
~ জোছনা বিলাশ করতে যাচ্ছো তাও একা একা
~ হয়তো, ঘুমিয়ে পড়েন
অয়নন্দিতা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান বিছানা থেকেই অয়নন্দিতাকে দেখছে। মেয়েটা বড্ড বেশিই উদাসীন। হয়তো মাশফিককে আজও সে ভুলতে পারে নি। হয়তো আজও তার অন্তর মাশফিকের জন্যই পোড়ে।
আর অয়নন্দিতা চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলে দেয়। জোছনা বিলাশ টা হয়তো মাশফিকের সাথেই হতো। চাঁদ টা হয়তো মাশফিকের পাশে বসেই দেখা হতো। কিন্তু আজ সবই ধোয়াশা। সব টাই অনেক অনেক দূরে।
আজ যেন চোখ বিশ্রাম নিচ্ছে না।
সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে ফারহানের ফোন।
~ হ্যালো
~ হু
~ রেডি হচ্ছো তো?
~ উহু
~ কেন?
~ একটু পরে হবো
~ কাবার্ড খুলো
~ কেন
~ খুলো
~ খুলেছি
~ একটা ব্যাগ আছে দেখো, আজ এটা পরবে, রাখছি। বাসায় এসে রেডি দেখতে চাই
লাইন টা কেটে দেয় ফারহান। অয়নন্দিতা প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে আছে।
~ লোক টা এমন কেন? বুঝি না একে আমি, নাকি এ আমাকে বুঝে না? কখনো পশুর মতো হিংস্র কখনো মোমের মতো নরম।
কখনো ঘেন্না কখনো ভালোবাসা। কখনো সুখ দেয়ার নেশায় মত্ত্ব কখনো কষ্ট যত বেশি দেয়া সেই ভাবনায় মোহিতো। তবে ফারহান কখনো মাশফিক হবে না। মাশফিক একজনই হয়, যাকে আমি পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। কোন এক ভাগ্যবতীর কপালেই মাশফিক আছে। যাকে মাশফিক রাজকুমারী করে রাখবে। তবুও মাশফিক ভালো থাকুক। আমার ভালোবাসা ভালো থাকুক।
কিছুক্ষণ কেদে চোখের পানি মুছে প্যাকেট টা খুলে অয়নন্দিতা। অনেক বড় একটা প্যাকেটে। বক্স খুলে একটু আ অনেকটাই অবাক হয় অয়নন্দিতা।
একটা শাড়ি রাখা আছে তাতে। শাড়ি রেখে শাড়ির রঙ দেখেই আটাশ হয়ে যায় অয়নন্দিতা। সাদা রঙের শাড়ির পাড়ের মধ্যে মেরুন কালারের জরিসূতার কাজ ত্তে ছোট ছোট স্টোন বসানো। ভেতরে ব্লাউজ রাখা ফুল হাতা মেরুন কালারের ভেলভেট ব্লাউজটাও অসাধারণ। পাশেই একটা ছোট বক্স, তাতে হোয়াইট স্টোনের একটা নেকলেস।
আরেকটা বক্সে সাদা চুড়ি। আরেকটা বক্সে একটা পারফিউম সেট। এইসব দেখছে আর অবাক হচ্ছে অয়নন্দিতা। অয়নন্দিতার ভাবনার সাথে একদম মিলে গেছে জিনিস গুলো। অয়নন্দিতার সাদা রঙ টা অনেক পছন্দের।
সে সাদায় পবিত্রতা খুজে বেড়ায়। আই সে বেশির ভাগ সময় সাদা পরে। আজও ফারহান তার ইচ্ছা পূরণ করে দিলো।
ভাবনার মাঝেই একটা টেক্সট আসে অয়নন্দিতার মোবাইলে।
“চুল ছাড়বে না বা হিজাব পরবে না, চুল খোপা করবে আজকে, আমি আসতেছি
ফারহান”
টেক্সট টা দেখে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি আসে অয়নন্দিতার, তবুও হাসিটাকে আটকে ভেতরে রেখে দেয় সে।
প্রায় ১ ঘন্টা পর আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে অয়নন্দিতা। সাদা শাড়ি তে নিজেকে সাদা পরী লাগছে। নেকলেস টা গলাটাকে অন্যরকম করে ফুটিয়ে তুলেছে। টিপ অয়নন্দিতার পছন্দ না তাই টিপ পরে নি সে।
~ সাজ টা আজ মাশফিকের জন্যে হলেও পারতো। সাজ টা পূর্ণ হয়েও কোথাও যেনো অপূর্ণ রয়েই গেলো। আমি কি করে সামনে আগাবো মাশফিক। তোমাকে সরিয়ে আমি ভালো নেই মাশফিক। আমি ভালো নেই। আমার বুকে প্রতিদিন ছুড়ি চলে, তুমি কি জানো আমার বুকে প্রতিদিন ছুড়ি চলে। আমার কলিজা ফেটে যায়। আমি নিরুপায় মাশফিক। আমি নিরুপায়।
ঢুকরে কেদে দেয় অয়নন্দিতা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় সে। ফারহান এসে দেখলে বুঝে যাবে কান্নার রহস্য কি তারপর আবার ঝামেলা করবে। টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
সময়ের কি সুন্দর মেলবন্ধন, ওই সময়ই ফারহান রুমে আসে। রুমে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে যায় সে। তার ঘরে আজ পরী নেমেছে। সাদা পরী যে কিনা আস্তে আস্তে তার মনের সব টা জুড়ে আছে।
~ উহুম উহুম
ফারহানের গলার আওয়াজে একটু নড়ে ওঠে অয়নন্দিতা। পিছনে ফিরে দেখে ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। আজ অয়নন্দিতার চোখ কথা বলছে মনে হচ্ছে। কারো চোখ এতো সুন্দর হয় ফারহানের তা জানা ছিল না। ফারহান ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে দেখছে অয়নন্দিতাকে যেটায় অয়নন্দিতা নিজেই আনকমফোর্ট ফিল করছে।
~ আপনি রেডি হবেন না?
~
~ কি হলো?
~
~ এইযে ফারহান, শুনছেন
~ হ্যাঁ, বলো
~ রেডি হবেন না?
~ ওয়েট
তারপর ফারহান আয়নার সামনে আসে। অয়নন্দিতাকে আয়নার সামনে ঘুরায়। তারপর টুলে বসিয়ে দেয়। কাগজের প্যাকেট থেকে গাজরা বের করে তারপর অয়নন্দিতার খোপায় বেধে দেয়। গাজরা টা থেকে বেলী ফুলের ঘ্রাণ বের হচ্ছে। একটা মাতাল করা ঘ্রাণ।
~ ক্লিপ কোথায়
~ কেন
~ এই সাইডে লাগাতে হবে তো?
~ আচ্ছা আমি লাগাচ্ছি আপনি রেডি হোন
~ আচ্ছা, আর শুনো
~ হুম
~ আজকে সত্যিই সুন্দর লাগছে তোমাকে
গাজরায় ক্লিপ দিতে দিতে ফারহানও রেডি হয়ে গেছে। অয়নন্দিতার পাশে এসে নিজেকে ঠিক করে নিচ্ছে ফারহান। আয়নায় ফারহানকে দেখছে অয়নন্দিতা। ততটা খারাপও লাগছে না তাকে। হোয়াইট শার্ট মেরুন ব্লেজার অনেকটা ম্যাচিং করে পরেছে ফারহান। সানগ্লাস টা হাতে নিয়েছে। মোবাইল টাও হাতে।
এক কথায় যে কোন মেয়ের চোখে পড়ার মতো ছেলে ফারহান। এইদিক থেকে মাশফিক আর ফারহান এক জনের থেকে অন্যজন কম না।
দুজনেই রেডি। অফিস থেকেও ফোন চলে আসছে। তারাও রওনা দিয়ে দিছে। এখান থেকে ওরা দুজন যাবে। দুজনে রওশন বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, অফিসের সামনে মাশফিক অপেক্ষা করছে গাড়ি নিয়ে। তুতুলকে এক ঘন্টা আগে ফোন করেছিল মাশফিক। এখনও আসার নাম নেই। তার কিছুক্ষণ পরই একটা রিক্সা থেকে নামে তুতুল। মাশফিক দেখছে তুতুলকে। লাল শাড়ি তে ততটাও মন্দ লাগছে না তুতুলকে।
~ না আসলেই পারতে?
~ সরি স্যার লেট হয়ে গেছে, আসলে কি
~ আসলে নকলে সুদে কিছুই শুনতে চাই না চলো
~ হুম
মাশফিক মুভ অন করতে চায়। কিন্তু কোথাও একটা দ্বিধা বোধ কাজ করে। তুতুলকে যে তার ভালো লাগে তা সে মনেই রেখে দিয়েছে। এভাবে ওকে বলাটাও ঠিক না। তাই চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয়।
গাড়ি চলে যাচ্ছে তার আপন গতিতে। পাশে অয়নন্দিতা চুপচাপ বসা। কিছুই বলছে না।
~ বুঝলে অয়নন্দিতা, তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যাবো একদিন
~
~ কি হলো, কথা বলো না যে
~ হুম শুনছি
~ তোমাকে নিয়ে হারাবো,
~ কোথায় হারাবেন তাও আবার আমাকে নিয়ে
~ যেখানে নীলচে আকাশে নীল রঙ ভেসে বেড়ায়
~ তাহলে সাথে কিছু নীলচে বিষ রাখেবন আমার কাজে লাগবে
~ আমি কি এতোই খারাপ? এতোটাই নোংরা যে আমার সাথে থাকার থেকে বিষ খাওয়া টা অধিক বেশি ভালো ভাবছো তুমি
~ ওইটা কথার কথা বললাম। এখনকার যুগে বিষ খেয়ে কেউ বোবাই হয় না মরা তো দূরে থাক।
~ শাক দিয়ে মাছ টা খুব ভালোই ঢাকতে পারো তুমি
~ হয়তো বা
মাশফিকের গাড়ি পার্টি সেন্টারের সামনে এসে থামে। তুতুলকে নিয়ে পার্টি সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করে মাশফিক। চৌধুরী গ্রুপের সব স্টাফরাও ছিল সেখানে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে মাশফিক আর তুতুলকে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন মাশফিক স্যারের সাথে তুতুল কেন?
আধা ঘন্টা পর ফারহানের গাড়িও এসে থামে সেখানে। অয়নন্দিতাকে নিয়ে ফারহান ভেতরে যায়। সেখানে তাদের ওয়েলকাম করার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। ফারহান এর সাথে অয়নন্দিতা ভেতরে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে আগে মুখোমুখি হয়ে যায় মাশফিকের। এক প্রান্তে মাশফিক আর আরেক প্রান্তে অয়নন্দিতা~ফারহান। মাশফিককে দেখে অবাক হয় নি ফারহান কিন্তু অয়নন্দিতার অবাক হওয়া টা ছিল বিশাল।
সে যদি জানতো আজ এখানে মাশফিক আসবে সে মরে গেলেও এখানে আসতো না। লজ্জায় ঘেন্নায় মাথা নিচু হচ্ছে তার। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে তার। মাশফিকের দিকে তাকাতে পারছে না সে। আর মাশফিকও হতভম্ব তার চিরচেনা সেই মুখটি দেখে। কিন্তু চিরচেনা মুখটি আজ অন্যের। আর ধরা ছোয়ার বাহিরে সেই মুখটি।
শুধু এক টুকরো হাসি দেয়া ছাড়া আর কিছুই করনীয় নেই মাশফিকের। তাই বুকের বা পাশে কষ্ট জমিয়ে রেখে মুখে ম্লান হাসি দিয়ে অয়নন্দিতার সাথে চোখে আলাপন সম্পন্ন করে নেয় মাশফিক। মাশফিকের হাসি দেখে অয়নন্দিতাও হালকা হাসি দিয়ে ঘাড় টা নিচু করে ফেলে।
~ কেন আজ আবার দেখা হলো আমাদের। না দেখা হলেই ভালো হতো, ও তো ফারহানকে নিয়ে ভালোই আছে। শুধু ব্যাথা নিয়ে আমিই পড়ে আছি।
~ কেন আজ আবার দেখা হলো আমাদের দুজনার। যার জন্য আমার বুক ফাটে আল্লাহ কেন তার সামনেই বার বার আমায় নিয়ে এসে হাজির করে। এ কেমন খেলা খেলছেন বিধাতা আমায় নিয়ে।
~ যাক একদিকে ভালোই হলো, দুজন দুজনাকে দেখতে তো পেয়েছে। ভুল টা আমারই ছিল অয়নন্দিতাকে তার ভালোবাসার কাছ থেকে কেড়ে তো আমিই নিয়েছি। মাশফিকই ওর জন্যে পারফ্যাক্ট। আমি তো খারাপ, নোংরা। মানায় না আমায় ওর সাথে। দুজনের চোখে আজও হাজার মায়ার বসবাস যা আমার জন্য আমি দেখি নি অয়নন্দিতার চোখে।
তিনজনের জীবনে ঘুড়ির সূতা আজ এক লাটাইতে বাধা। নাকি ভিন্ন হবে কিছু। নাকি কাহিনীতে আসবে নতুন মোড়। দেখাই যাক কি হয়?
পর্ব ৩৮
পার্টিতে অয়নন্দিতা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর ফারহান অন্যদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে মাশফিক দাঁড়িয়ে আছে। না চাইতেও চোখ সেখানেই যাচ্ছে তার। এমন সময় কোন এক কারণে তুতুল মাশফিকের কাছে আসে। যা অয়নন্দিতার চোখে লাগে।
খুব ভালো ভাবেই পরখ করছিল অয়নন্দিতা তুতুলকে।
~ ফারহান সাহেব শুনছেন,
~ হ্যাঁ বলো, কিছু বলবে
~ সামনে দেখুন
~ কি?
~ মেয়েটিকে দেখুন
~ কোন মেয়েটা
~ ওই যে লাল শাড়িতে আছে, চুল গুলো ছাড়া
~ হ্যাঁ তো কি হয়েছে
~ মাশফিকের কাছেই গেছে, দুজনকে দারুণ লাগছে তাই না?
ফারহান তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতার দিকে। কত সহজেই মাশফিকের সাতগে অন্য একজনকে জুড়ে দিল অয়নন্দিতা। কষ্ট পেতে পেতে অয়নন্দিতা আজ আসলেই বেহুশ। তবুও বেচে আছে মেয়েটা। তবুও হেসে দেখায় সে ভালো আছে।
~ মেয়েটা কে হতে পারে? মাশফিকের ওয়াইফ না তো? আমি তো আরও অন্যকিছু প্ল্যান করে রেখেছিলাম। এখন বিয়ে হলে তো সব প্ল্যান ভেসতে যাবে।
(মনে মনে)
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অয়নন্দিতাকে ফারহান নিজেই বলে ওঠে,
~ কিছু খাবে?
~ উহু
~ আচ্ছা এখানে বসো
~ নাহ ঠিকাছি আমি,
~ ওইযে দেখো
~ কি
~ কালো ড্রেস পরা মেয়েটা আছে না
~ হুম
~ সে নাকি আমার উপরে ফিদা
~ তাই নাকি
~ হ্যাঁ, এখন দেখবা এইখানে আসবে আর শুরু হবে তার পক পকানি
~ কে তিনি
~ খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির খান আংকেলের মেয়ে, তবে এর চলাফেরা বাজে
~ কই ড্রেস তো ভালোই পরেছে
~ দেখবে এখন এসে কি করে, ওইযে আসতেছে
সামনে খান সাহেবের মেয়ে রিতি এগিয়ে আসে। বাবার একমাত্র মেয়ে। তাই তার অনেক দেমাগ।
~ ফারহাননননন
বলে জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে আসে রিতি। মাঝখান থেকে অয়নন্দিতা ফাঁক পেয়ে ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।
আর রিতি ফারহানের জায়গায় অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে। মুহুর্তেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
ফারহান এই কান্ড দেখে হাসবে না কি করবে ভেবে পায় না। তবুও হাসি বহু কষ্টে চেপে রাখে সে।
~ হেয় ইউ, হু আর ইউ?
~ মানুষ
~ এক্সকিউজ মি
~ হোয়াট
~ হু আর ইউ
~ ফারহাননননন বলে যাকে জড়িয়ে ধরতে এসেছো আমি তার বউ, আই মিন মিসেস ফারহান।
~ হোয়াট
~ কি খাবেন বলুন
~ এই ফারহান, বিয়ে করেছো কবে?
রিতির কথা এবং ফেস থেকে ফারহানের চরম হাসি আসে। তবুও চুপ করে আছে সে। রিতি পাত্তা না পেয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়।
~ এইবার বুঝলা তার চলাফেরা কেমন?
~ হ্যাঁ, গঙ্গাফড়িং
~ মানে
~ আজ এখানে তো কাল ওখানে
~ হা হা
পার্টি জমে গেছে। সবাই কথা বলছে কেউ কেউ ছবি তুলছে। কেউ ড্রিংক করছে, সফট গান বাজছে। এমন সময় সব গান অফ করে দেয়া হলো।
এনাউন্সমেন্টে সবার আগে মাশফিককে গান গাইতে বলা হয়। মাশফিক রীতিমতো অবাক তাকে হঠাৎ গান গাইতে বলা হলো বলে।
কয়েকবার বারণ করার পরেও তারা শুনেন নি কেউ৷। গাইতেই হবে তাকে গান। অয়নন্দিতাও তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। যা ফারহানের চোখ এড়ায় নি।
তারপর নিজেকে বেহাল অবস্থায় দেখে আর কিছুই করার থাকে না তার। শুরু করে তার এবং অয়নন্দিতার ভালো লাগার সেরা গানটি।
“আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম”
অয়নন্দিতা মুগ্ধ হয়ে শুনছে। ওদিকে তুতুলও পলকহীন চোখে তাকিয়ে দেখছে মাশফিককে।
তারপর ফারহানের দিকে আসে। গান তো হলো এইবার আরেকটা গান হলে মন্দ হয় না। ফারহানকে গান গাইতে বলা হলে সে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়। আর অয়নন্দিতা ঘাড়টা আবার নিচু করে ফেলে। ফারহান স্টেজে তো যায় তবে গান গায় নি,
প্রিয় সখী ভালোবাসি তোকে
জানি না কতটা বাসিস তুই
কত ব্যাথা দিয়েছি আমি তোকে
মুখ ফুটে বলিস নি কিছু তুই
তোর ওই স্তব্ধ মুখে যখন তাকাই আমি
বিশ্বাস কর কলিজা ফাটে আমার
তবু আমি চুপ থাকি
যখন অন্যায় ভাবে কষ্ট দেই তোকে
তুই চুপটি করে থাকিস
তখন যেনো আমার হৃদয়
পাগল করে ওঠে
সাদা রঙে দারুন লাগে
তুই কি তা জানিস
তোকে ভেবে দিন কাটে মোর
তার কি খবর রাখিস
তুই যেমন আছিস
তেমন থাক
ওগো মোর প্রিয়া
তোর ভালোবাসার মাঝেই
থাকুক আমার মনের হিয়া
কিছু নীলচে আভাস তোকে দিবো
কুড়িয়ে নিস তুই
পাজর ভাঙা কান্না নিয়ে
আমিই দূরে সরে রই
ভালো তুই বাসবি না
এটা আমি জানি না
তাই তো তোকে ছাড়ি না আমি
জড়িয়ে ধরে রাখি
খাচার পাখি চলেই যাবি
এটাও আমার জানা
কেমন করে থাকবো আমি
বল তোকে ছাড়া
দিনের শেষে ক্লান্ত দেহে
ঘরে যখন আসি
দেখে আমার প্রাণ টা জুড়ায়
তোর পাগল করা হাসি
লজ্জা চোখে যখন তুই
ঘাড় টা নিচু করিস
বিশ্বাস কর তখন আমি
তোকেই ভালোবাসি
পাগলীরে তুই ভালো থাক
এটাই আমি চাই
তোর সুখের নীড়ে ভালোবাসা
একটু যেনো পাই
আলতা পরে যখন তুই যাবি
অন্যের ঘরে
আমি হাসি মুখে চেয়ে রবো
থাকবে না দুঃখ মনে
সব শেষে বলবো আমি
তোকে ভালোবাসি প্রচুর
ভুলে যাস তুই আমার
করা কিছু অন্যায় কিছু ভুল
তোর ভালোবাসার মাঝেই আমি বেচে থাকবো
তোকে যে আমি আমার হৃদমাজারে রাখবো
কবিতা টা এক মনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনে এবং দেখে গেলো অয়নন্দিতা। একটুর জন্যেও পলক পড়ে নি তার চোখে। এটা কি ফারহান বললো? সে তার কান কেও বিশ্বাস করে নি।
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে সে ফারহানের দিকে। ফারহানের চোখেও পানি তখন চিক চিক করছে। কবিতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারিদিকে একটা স্তব্ধতা কাজ করেছে। তারপর সবাই এক সাথে করতালি দেয়। সেই করতালির শব্দেই অয়নন্দিতার ধ্যান ভাঙে।
ফারহান অয়নন্দিতার আড়ালে নিজের চোখের পানি আড়াল করে ফেলে। অয়নন্দিতাও বুঝে নেয়। অয়নন্দিতা এমন একজন নারী যার দিকে একবার হলেও মন হৃদয় মাইন্ড একবারের জন্যে হলেও প্রেমে পড়বেই। অয়নন্দিতা যেনো ফারহানকে কিছু বলতে গিয়েও বলে নি। চুপ করে চেয়ে আছে ফারহানের দিকে। আর ফারহান নিজেকে লুকানোর চেষ্টায় ব্যর্থ।
অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে ফারহানের নজর মাশফিককে খুজে বেড়ায়। অবশেষে পেয়েও যায়। পার্টি ভ্যানুর এক পাশে মাশফিক মোবাইলে কথা বলছিলো। আর ফারহান সেই সুযোগ টাই কাজে লাগায়।
পর্ব ৩৯
~ এক্সকিউজ মি
~ ইয়েস
~ মাশফিক কিছু কথা ছিল
~ আমার সাথে
~ হ্যাঁ
~ জ্বি বলুন
~ ওই সাইডে আসবে একটু
~ অবশ্যই আসুন
অতঃপর ফারহান মাশফিককে নিয়ে এক সাইডে। প্রায় দুই মিনিট অতিবাহিত হয়ে যায়, কিন্তু ফারহানের মুখে কোন কথা নেই। মাশফিক অনেকটাই বিরক্ত হয়ে যায়। ডেকে এনে কথা না বলার কারণ দেখছে না সে।
~ ফারহান,
~ হুম
~ কিছু তো বলেন
~ আসলে কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতেছি না
~ বলেন, সমস্যা নাই
~ আসলে মাশফিক, আমি অত্যন্ত দুঃখিত আসলে ক্ষমা করা যায় না, যেই অপরাধ আমি করেছি তার হয়তো ক্ষমা নেই।
~ এখন বলে কি লাভ?
~ লাভ যাতে হয় তাই করতেই তো এসেছি
~ মানে?
~ ফিরিয়ে নেও তাকে
~ কাকে?
~ অনুকে
~ অয়নন্দিতা?
~ হ্যাঁ, ফিরিয়ে নেও। আমি ডির্ভোসের সব ব্যবস্থা করে ফেলবো কালকের মধ্যেই
~ তা হয় না ফারহান
~ কেন হয় না
~ ও ফিরবে না আর আমার কাছে
~ ফিরবে, ও ফিরবে। ও তোমাকে ভালোবাসে
~ হয়তো বাসে, আমিও বাসি কিন্তু য়া লুকায়িত
~ আমি আমার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই মাশফিক
~ যা হয়েছে মেনে নিয়েছি আম ফারহান।
একবার নয় দুইবার নয় কয়েক হাজার বলেছি, ফিরে এসো ফিরে এসো। আসে নি, সে আসবে না ফারহান, সে আর আসবে না
~ ওটা ওর জেদের কথা
~ ওটাই ওর মনের কথা ফারহান। তুমি হয়তো ওর আশেপাশে এবং ওর জীবনে রাজত্ব করছো কিন্তু আমি জোড় গলায় বলতে পারি আমি অয়নন্দিতার মনে রাজত্ব করছি। ওর মনের খবর আমি জেনে যাই তদ্রুপ অয়নন্দিতাও আমার মনে রাজত্ব করে
~ মেহেরাজ ওরফে তুতুল, কি হয় তোমার?
~ হা হা হা, হাসালে। আমার পিএ এর খবরও রাখো দেখছি
~ আজকেই নিলাম কিছুক্ষণ আগেই নিলাম
~ কারণ কি
~ আজ অয়নন্দিতা দেখছিলো তোমাদের
~ আমি তো দেখেছি যে সে আমাদের দেখছে। ওর চোখের ভাষা টুকু আমি বুঝে যাই, কেন জানি না? হয়তো ভালোবাসা টা কোথাও হলেও আছে। চোখে ইশারা করলো আমার পাশে তুতুলকে দারুণ মানিয়েছে
~ মানে?
~ হা হা হা, কিছু না। তোমরা ভালো আছো তো?
~ মজা করতে আসি নি আমি মাশফিক
~ আমি তো মজা করছি না। অয়নন্দিতা এখন অন্যের, অন্যের অর্ধাঙ্গিনী সে। অন্যের সম্পদ সে। আমি আমার সাদা পরীকে তোমায় দিয়ে দিলাম, দেখে রালহার দ্বায়িত্ব তোমার
~ চাইলেই কি দিয়ে দেয়া যায়?
~ তাহলে তো এখন বলতে হয়, সেইদিন কিসের ভিত্তিতে ওকে বিয়ে করেছো। ও কে কওন অপরাধের শাস্তি দিয়েছিলে। তোমার বোনের একটা কথায় ওর লাইফ হেল করে দিলা? তুমি কি জানতে না আমার বোনটা অয়নকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর অয়নটাও আমার বোনকে। আর ওদের ভালোবাসা বাচাতে গিয়ে আমি আর অয়নন্দিতা আমাদের ভালোবাসার বকি দিলাম তোমার কাছে। এখন কেন এইসব?
~ আমি ভুল করেছি মাশফিক। অয়নন্দিতা কখনো ফারহানের না, অয়নন্দিতার জন্ম শুধুই মাশফিকের জন্যে। অয়নন্দিতার পাশে মাশফিক নামটাই যায় ফারহান নয়
~ ভুল, ভুল বলেছো। ও আমার কপালে নেই তাই তোমার কাছে চলে গেছে। অয়নন্দিতার জন্ম হয়তো ফারহানের জন্যই হয়েছে। মাশফিক ছিল তাশের ঘরের মতো, মানে ক্ষনস্থায়ী।
~ মাশফিক, তুমিই পারো এখন ও কে ফিরিয়ে নিতে
~ আমি পারি কিন্তু আমি করবো না। কারণ আমার কাছে অয়নন্দিতার চেয়ে অয়নন্দিতার আত্নমর্যাদা এবং আত্নসম্মানটা বেশি। সে মাথা উঁচু করে থাকবে নিচু করে নয়।
~ এখানে মাথা উঁচু নিচুর তো কিছু নেই
~ অবশ্যই আছে, অয়নন্দিতা এখন বিবাহিতা, সে অন্যের ঘরের ঘরনী। এখন আমি তাকে আমার কাছে আনবো। ওকে মানলাম নিয়ে আসছি আমার কাছে কিন্তু সবার কাছ থেকে তাকে কথা শুনতে হবে, আর যেটা আমার সহ্য হবে না। ও কে আমার কাছে মাথা নিচু করে থাকতে হবে
যা আমি দেখতে পারবো না
~ মাশফিক
~ ফারহান অয়নন্দিতা এখন তোমার স্ত্রী। অনেক ভাগ্য তোমার যে সে তোমার বউ হয়ে তোমার ঘরে গেছে। আপন করে নেও, জানি না সে করবে কিনা। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
~ তুমি বলছো এই কথা
~ হ্যাঁ, আবেগে দুনিয়া চলে না ফারহান। আর যাকে নিয়ে এতো কিছু সেই আসবে না। আর বলে কি লাভ? বাস্তবতার কাছে হেরে গেছি, বাস্তবতার কাছে আমাদের ভালোবাসা হেরে গেছে। তোমার আকাশে রঙ ছড়াতে অয়নন্দিতা আজ তোমার সাথে। ও কে আপন করে ধরো দেখবে ঠকবে না
~ ধরতেই পারছি না, বার বার সরে যাচ্ছে
~ মনের হাত দিয়ে ধরো, হয়তো কষ্টের হবে তবুও চেষ্টা করো, পারবে। অয়নন্দিতা উদাসীনতা নিয়ে থাকতে ভালোবাসে বেশি কিন্তু অন্যের আকাশে রঙ ছড়াতে এক মিনিট লাগে তার
~ জানি না পারবো কিনা
~ পারবে, একটা কথা বলবো?
~ বলো
~ অয়নন্দিতাও তোমাকে ভালোবাসে
~ মানে?
~ হ্যাঁ, বললাম না আমার রাজত্ব চলে ওর মনে, আজ তুমি যখন স্টেজে ছিলে তখন তোমার এক একটা লাইনে অয়নন্দিতার চোখের অশ্রু ঝরেছে। ওর মনে তখন উথাল পাতাল ঝড়। কোথায় যাবে কি করবে বুঝে নি।
তাই বললাম সময় থাকতে হাত টা ধরো
~ আসছি মাশফিক, ভালো থেকো
~ চেষ্টায় আছি, অয়নন্দিতা ছাড়া মাশফিক অচল তবুও মাশফিক বাচবে অয়নন্দিতার ভালো থাকার জন্য ভালো থাকবে সে।
~ আমায় ক্ষমা করে দেও
~ ওর জুড়ি তোমার সাথেই ছিল তাই হয়েছে এইবার যেইভাবেই হোক হয়েছে।
শুভ কামনা তোমাদের জন্য
~ অয়নন্দিতাকে ভুল বুঝো না
~ কখনোই না, যাকে ভালোবাসি তাকে কিভাবে ভুল বুঝি। অয়নন্দিতা ভালো থাকলেই আমিও ভালো থাকবো। আর হ্যাঁ জীবনের সব গল্পের নাম হয় না ফারহান, ভেবে নেও আমাদের গল্পেরও কোন নাম হয় নি।
~ তুতুল মেয়েটাও ভালো মাশফিক
~ জানি, অয়নন্দিতার মতো অনেকটা। তবে হতে পারবে না, অয়নন্দিতা একটাই হয়, আর সে ফারহানের হয়ে গেছে
~
~ ৫০ বছর পরেও কিন্তু আমাদের দেখা হবে কি বলো? তখন কিন্তু যাতে শুনি তুমি আমার অয়নন্দিতাকে ভালো রেখেছো।
~ অবশ্যই
~ আসছি, ভালো থেকো
~ মাশফিক, জীবনের সব গল্পেরই নাম থাকে তবে তা অপ্রকাশিত থেকে যায়
~ হয়তো, তবে এ গল্পের সত্যিই নাম হয় না। ভালো থেকো
এই বলে সামনের দিকে পা বাড়াতেই মাশফিক আরেক জোড়া পা দেখতে পায় সেখানে। অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাশফিক তার দিকে। কিছুক্ষণ পর ফারহান পিছনে ঘুরতেই স্তব্ধ হয়ে যায়।
অয়নন্দিতা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বিকার মুখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে।
মুখে কথা নেই শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে তার।
ওর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ও সব শুনে ফেলেছে। তাই কি রিয়েক্ট করা উচিত তার ধারণা নেই এই মুহুর্তে।
~ অয়নন্দিতা, তুমি এখানে
~ ভাগ বাটোয়ারা শেষ?
~ মানে?
~ কি ব্যাপার শেখ সাহেব, ভাগ বাটোয়ারা করেছেন?
~ নাহ মানে আসলে
~ আসলে আমি বলছি, অয়নন্দিতা ফারহান তোমার ভালোর কথা ভেবেই আমার সাথে কথা বলতে এসেছে
~ আর আপনিও সুর সুর করে চলে এলেন
তা ভাগ বাটোয়ারার রেজাল্ট কি? কে নিবে আমায়?
~ অয়নন্দিতাআয়ায়ায়া
~ আস্তে শেখ সাহেব, এটা আপনার বাসা না
~ অয়নন্দিতা আমি আসছি, ভালো থেকো
মাশফিক সেখান থেকে প্রস্থান করে। অয়নন্দিতা তখনও এক দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নন্দিতার তাকানো দেখে মনে হচ্ছে ফারহান চোর, কি যেনো চুরি করেছে। সংকোচ ভেঙে ফারহানই কথা বলে।
~ অয়নন্দিতা, আসলে
~ বাসায় যাবো
~ অয়নন্দিতা প্লিজ সরি
~ বাসায় যাবো
~ সরি, প্লিজ
~ বাসায় যাবো আমি
~ যাবো, চলো
~ আমি একা যাবো
~ কি সব বলছো তুমি?
~ আমি বাসায়ায়ায় যাবো
~ অনু, আস্তে কি হচ্ছে
~ বলছি না বাসায় যাবো
~ হ্যাঁ, চলো
সারা রাস্তা অয়নন্দিতা শুধু তার দুই হাত মুচড়িয়েছে। অপেক্ষায় আছে কখন বাসায় যাবে আর কখন ফারহানকে ধরবে। কিসের জন্যে মাশফিকের কাছে গেছে সে। কে সাহস দিয়েছে তাকে এইসব করার? শুধু সে এইটার উত্তর চাইবে।
অবশেষে বাসায় এসেছে তারা। অয়নন্দিতা সোজা উপরে চলে যায়। রাত প্রায় ১২৪৫ বাজে তাই সবাই শুয়ে পড়েছে। অয়নন্দিতা রুমে গিয়ে খাটের বসে আছে। ফারহান রুমে আসে, ড্রেসিং টেবিলের উপরে গাড়ির চাবি আর মোবাইল টা রাখে। ওমনি অয়নন্দিতা ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর অয়নন্দিতা সোজা এসে ফারহানের কলার ধরে।
~ how dare you
~ অয়নন্দিতা
~ how dare you, আপনার সাহস হয় কিভাবে? কিভাবে হয় এতো সাহস, আপনি মাশফিকের কাছে গেছেন ভিক্ষা চাইতে৷, আমাকে ফিরিয়ে নিতে, ওই আমার দিকে তাকান, এইদিকে তাকান আপনি, আপনার সাহস হয় কিভাবে?
~ অয়নন্দিতা, আস্তে সবাই জেগে যাবে
~ জাগুক, অনেক সহ্য করেছি আর না, বলেন কে এতো সাহস দিছে আপনাকে যেখানে আমি নিজ হাতে সব রাস্তা অফ করে দিয়েছি সেখানে আপনি কোন অধিকারে গেছেন আপনার স্ত্রীকে আরেকজনের কাছে দিতে
~ অয়নন্দিতাআয়ায়ায়া
~ চুপ, একদম চুপ, ঘেন্না করি, ঘেন্না করি আমি আপনাকে
~ অয়নন্দিতা, কোথায় যাচ্ছো, অয়নন্দিতা
অয়নন্দিতা ওয়াসরুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। আর ফারহান হতভম্বের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
~ অয়নন্দিতা, দরজা খুলো। অয়নন্দিতা দরজা খুলো প্লিজ।
~
~ অয়নন্দিতা, ভুল হয়ে গেছে সরি। দরজা খুলো
~
~ দরজা খুলো প্লিজ,
~
~ open the door, অয়নন্দিতা
~
~ অয়নন্দিতা লাস্ট বার বলতেছি দরজা খুলো না হয় ভেঙে ঢুকবো কিন্তু
~
~ অয়নন্দিতা মেজাজ খারাপ করো না, দরজা খুলো
~
~ open the door, you idiot
~
~ অয়নন্দিতা, প্লিজ প্লিজ প্লিজ দরজা খুলো
~ …..
পর্ব ৪০
~ অর্ডার অর্ডার,
জনাব ফারহান শেখ এবং তার স্ত্রী অয়নন্দিতা শেখ কে খুন করার অপরাধে মিস সাজিকে বাংলাদেশের দন্ডনীয় আইন অনুযায়ী ৩০২ ধারা মোতাবেক ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো। উক্ত মামলার শুনানি হতে হয়তো ৩ বছর লেগে গেছে ঠিকই তবে সঠিক বিচার করা হয়েছে বলে মনে হয়। নিহতদের পরিবারের নিকট আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়ে গেছে। আজ ৩ বছর পর রায় হলো। আদালতে উপস্থিত সবার চোখেই পানি। দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে থাকা সুট পরা ভদ্রলোকের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে গেলো। চোখের পানি মুছে সানগ্লাস টা পড়ে বেরিয়ে যায় সে। বাহিরে দুজন মানুষ তার জন্যে অপেক্ষা করছে। ব্ল্যাজারের বোতাম লাগিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে সে।
~ পাপাইইইইই, পাপাইইইইইই
তিন বছরের বাচ্চা মেয়েটা পাপাই বলে চিৎকার করে ডাকে তার পাপাইকে।
~ আম্মুন ওই যে পাপাই
~ হ্যাঁ, ওইযে পাপাই, ডাকো তাকে
~ পাপাইইইইই ও পাপাইইইইইই
চশমা খুলে দৌড়ে এসে বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে নেয় সে।
~ ও কে নিয়ে এলে এখানে?
~ ও কি কথা শুনে? যা বলে তাই করে সে
~ পাপাই তলো(চলো) আমলা(আমরা)চলে তাই(যাই)
~ আম্মুন পাখি, নান্নান নান্নুনের সাথে দেখা করে নাও
~ মামা সোনা আসতে(আসছে)?
~ হ্যাঁ আসছে তো
~ আর পি~মনি?
~ পি~মনিও আসছে
~ অমি আসতে(আসছে)?
~ নাহ, অমি বাসায় আছে, তুমি দেখা করে নাও, তারপর আমরা চলে যাবো
~ আত্তা(আচ্ছা)
কোর্ট রুম থেকে সবাই বের হয়ে গেছে। মাহি~অয়ন, অয়নের বাবা~মা সবাই। বাচ্চা টা দৌড়ে গিয়ে অয়নের মায়ের কোলে চড়ে বসে।
~ আহহহহ অনুষ্প্রিয়া, আস্তে যাও, পড়ে যাবে তো মা
~ থাক যেতে দেও
~ হুম
~ কেমন আছো নান্নুন
~ ভালো আতি(আছি)
~ কিরে দিদিভাই কেমন আছো?
~ ভালো আতি(আছি) বুড়ো জামাই
~ একদম আমার অয়নন্দিতা
এইটা বলে অয়নের মা কেদে দেয়। অনুষ্প্রিয়া কে দেখে চোখ ভরে যায় মাহিরও। কিছুক্ষণ কথা বলে অনুষ্প্রিয়াকে ছেড়ে দেয় তারা।
~ মাশফিক
~ হু
~ অবশেষে সব মিটে গেলো
~ হ্যাঁ, অবশেষে মিটেই গেলো
~ খুনী তার প্রাপ্য সাজা পেয়েছে
~ হ্যাঁ, শুধু মানুষগুলোই আর নেই
~ অনুষ্প্রিয়াকে দেখে রেখো
~ আমার অয়নন্দিতার শেষ স্মৃতি ও অয়ন, আমার শরীরের রক্ত দিয়ে হলেও ও কে আগলে রাখবো আমি।
~ জানি
~ আচ্ছা আসছি
~ হু এসো
গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কোর্ট রুমের সেই লোক টি তাহলে মাশফিক ছিলো। মাশফিক অনুষ্প্রিয়াকে নিয়ে আদালত ত্যাগ করে।
গাড়ির ব্যাক সাইডে একা একা বসে খেলছে অনুষ্প্রিয়া। সামনে মাশফিক আর তার স্ত্রী। বার বার সে তার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটা আজ ৫ টা বছর শুধু করেই গেলো। বিনিময়ে কিছুই চাইলো না।
~ তুতুল
~ হু
হ্যাঁ তুতুল, মেহেরাজ আফরিন তুতুল। মাশফিকের স্ত্রী সে এখন। অনুষ্প্রিয়ার মা সে এখন।
গাড়ি এসে থামে চৌধুরী ভিলার সামনে। মাশফিক তুতুল অনুষ্প্রিয়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। বাড়ির মধ্যে চলে যায় সে।
এই ৩ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। মাশফিক তার বাবাকে হারিয়েছে। হার্ট~এট্যাকে মারা গেছেন মাশফিকের বাবা। এখন চৌধুরী ভিলায় মাশফিক, তুতুল, মাশফিকের মা আর অনুষ্প্রিয়া।
বাড়ি এসে অনুষ্প্রিয়া দৌড়ে তার দাদির কাছে চলে যায়। মাশফিক সোজা উপরে চলে যায়।
~ এক কাপ কফি দিও তো
~ হু
আজকাল মাশফিক একটু গম্ভীর হয়ে গেছে। খুব কম কথা বলে এখন সে, তার দিন কাটে অফিস আর অনুষ্প্রিয়াকে নিয়ে। তুতুল যেনো সব পেয়েও সব থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে এখানে। তুতুল কফি নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে মাশফিক বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
~ শুনছেন?
~
~ এই যে,
~ হ্যাঁ
~ আপনার কফি
~ হুম থ্যাংকস, অনুষ্প্রিয়া কোথায়?
~ মায়ের কাছে,
~ মা কি করে
~ রুমে শুয়ে আছে হয়তো
~ ওহ
~ কি হলো,
~ কই
~ ওহ বললে যে।
~ নাহ এমনি।
~ আজ ৩ বছর পর অনেক শান্তি পাচ্ছি আমি তুতুল।
~ আমিও।
~ অবশেষে আমি পেরেছি।
~ হ্যাঁ।
~ তোমাকেও অনেক থ্যাংকস।
~ কিসের থ্যাংকস দিচ্ছেন।
~ আজ ৩ টা বছর আমার জীবনের সাথে নিজের জীবন টা জড়ানোর জন্যে।
~ হাসি পাচ্ছে ভিষণ তবে হাসবো না।
~ কেন, হাসির কিছু বলছি কি?
~ নাহ
~ তাহলে
~ এমনি,
~ আজকে সময় হবে তোমার?
~ কেন?
~ তোমাকে আর অনুষ্প্রিয়াকে নিয়ে বের হবো ভাবছিলাম।
~ কখন?
~ ৬ টায়।
~ আচ্ছা।
মাশফিক আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আর অয়নন্দিতাকে মনে করছে। সেইদিনের কথা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে তার। হাসপাতাল থেকে যখন কল টা এসেছিল তখন সে অফিসে কাজ করতেছিল।
দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে সব কিছুর। অয়নন্দিতা ফারহানকে নিয়ে বেশ ভালোই আছে। তাদের এখন দুই মাসের ফুটফুটে একটা মেয়েও আছে। মাশা~আল্লাহ মেয়ে একদম মায়ের মতই হয়েছে।
মাশফিকও ভালোই আছে। তুতুলকে মনে ধরেছে তার। মাঝে মাঝে আকার ইংগিত করে সে তুতুলকে কিন্তু তুতুল বুঝতে পারে না এইসব। তবে তুতুলকে অয়নন্দিতার কথা সব বলে দিয়েছে মাশফিক। অফিসের কাজের চাপের মাঝেই হঠাৎ করেই মাহির ফোন পায় মাশফিক।
৩ বছর আগে,
~ হ্যালো মাহি,
~ ভাইয়া কোথায় তুমি।
~ আমি তো অফিসে, কেন? কি হয়েছে তোর ভয়েস এমন লাগছে কেন?
~ ভাইয়া মেডিকেলে আসো।
~ মানেএএএ, কি হয়েছে।
অয়ন ঠিক আছে তো? কিংবা আন্টি আংকেল, কার কি হয়েছে।
~ ভাইয়া মেডিকেলে আসো প্লিজ।
~ আচ্ছা আচ্ছা আমি আসতেছি।
বোনের ফোন পেয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অফিস থেকে বের হতে নেয় মাশফিক। কিন্তু সামনে তুতুল পড়ে যায়। তাই তুতুলও সাথে যায়। কোন রকম দ্রুত গাড়ি চালিয়ে মেডিকেলের সামনে গিয়ে থামে। তাড়াতাড়ি উপরে চলে যায় মাশফিক।
ইমার্জেন্সীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায় মাশফিক। অয়নের গায়ে রক্ত লেগে আছে। অয়নন্দিতার মা রাহেলা বেগম, ফারহানের মা রওশন বেগম এর আহাজারীতে হাসপাতাল ভারী হয়ে গেছে।
মাশফিকের বুকের বা পাশ টায় কিসের যেনো প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে পেলো সে। ভয়ে আত্না টা ছোট হয়ে গেছে তার। মাহির কোলে অয়নন্দিতার মেয়েটা। ভাইকে দেখে মাহি দৌড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। আর্তনাদ করে ওঠে মাহি।
এমন সময় OT থেকে ডক্টর সালাউদ্দীন বেরিয়ে আসে। ফারহানের বাবা রমজান শেখ তাড়াতাড়ি ডক্টর এর কাছে যায়।
~ ডক্টর সাহেব কি বুঝলেন?
~ i am sorry Farhan is no more
কথা টা শুনে উপস্থিত সবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। রওশন বেগম চিৎকার দিয়ে ওঠে। সাথে বাকিরাও। মাহি তখন বাচ্চাটাকে ঝাপটে ধরে রাখে তার বুকে।
~ আপনি এইগুলা কি বলেন ডক্টর।
~ রমজান ভাই ফারহানকে বাচাতে পারলাম না ভাই, অনেক ব্লিডিং হয়ে গেছে ব্লাড দিচ্ছি কিন্তু শরীর ব্লাড নিচ্ছে না। সরি ভাই, ছেলেটাকে বাচাতে পারলাম না।
~ আর আমার মেয়ে, আমার মেয়ে।
~ হ্যাঁ আমার বউমা, অয়নি কেমন আছে?
~ আশংকাজনক অবস্থায় আছে, কিছুই বলা যাচ্ছে না। ওনারও ব্লিডিং হয়েছে অনেক।
~ ওহ আল্লাহ, এ তুমি কেমন খা খেললা আমাদের সাথে।
রাহেলা বেগমের চিৎকারে হাসপাতালের মানুষ সব একত্রিত হয়েছে। মাশফিক তখনও ভাবনায়। কি হয়েছে এমন, বোধগম্য নেই তার, কি হচ্ছে এইসব, ফারহান আর এই দুনিয়ায় নাই ভাবতে পারছে না সে। অয়নের কাছে যায় সে।
~ অয়ন।
অয়ন তখন শোকে পাথর। এক ভাবেই এক জায়গায় বসে আছে সে।
~ অয়ন, এই অয়ন।
~
~ অয়ন শুনছো।
~ মা,মা,মাশ,মাশফিকককক।
এই বলে জড়িয়ে নেয় মাশফিককে সে। চাপা স্বরে কেদে দেয় অয়ন। অয়নের কাছ থেকে সব শুনে নেয় মাশফিক।
~ মাশফিক আমি তখন আমার বোনকে বাচাতে পারি নি আমি আজও আমার বোনের জামাইকে বাচাতে পারলাম না।
~ এইসব কিভাবে হয়েছে?
~ বাবুইপাখির ফোন এসেছিলো, কথাগুলো জানি কেমন কেমন লাগছিলো, শুধু এতোটুকুই বললো ভাই আমার বাচ্চা বাচা
~ কোন রকম ছুটে গেলাম, গিয়ে দেখি সব শেষ, আমার বাবুইপাখি ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে অচেতন শরীর নিয়ে।
আর ওয়াসরুমে ফারহান রক্তাক্ত অবস্থায় বাবুকে জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে আছে।
~ কিহহহহহহ।
~ তারপর কোন রকম এম্বুলেন্স খবর দিয়ে ওদের নিয়ে আসি, কিন্তু ফারহানকে তো বাচাতেই পারলাম না মাশফিক, বোনকে কি উত্তর দিবো
~ বাসায় আর কেউ ছিলো না?
~ কাউকেই তো দেখি নাই।
~ ফারহানের বাবা মা এক ঘন্টা পর আসছে, ওনাদের কে খবর দেয়া হয়েছিল।
সব কিছু শুনে হতবাক মাশফিক। এটা কিভাবে সম্ভব। এমন বাড়িতে এই রকম ঘটনা তো ঘটার কথা না। আর তাছাড়া গেইটে তো দারোয়ান থাকে। কে করবে এমন টা। ফারহান আর নেই এটা মানতে পারছে না মাশফিক।
যেই মানুষ টা নিজের সব দোষ গুলো বুঝে নিজেকে ভালো করার পথে চলে আসছে যার সাথে তার অয়নন্দিতা এই দুইটা বছর বেশ সুখে ছিল আর আজ সেই ফারহান নেই এটা কি করে সম্ভব।
তুতুল এতক্ষন সব দেখছিল। কিন্তু কি থেকে কি হয়েছে? কেনো হয়েছে তার কিছুই তার মাথায় আসছে না। মাহির কাছ থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নেয় তুতুল। এতক্ষন মাহির কোলে প্রচুর জ্বালাচ্ছিলো কিন্তু তুতুলের কোলে আসার সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় সে। ছোট ছোট হাত দিয়ে বার বার তুতুলের বুকে হাতরাচ্ছিলো সে। তুতুল বুঝে যায় যে তার দুধের নেশা উঠেছে। কিন্তু এ যে অসম্ভব।
কিভাবে দুধ দেবে সে, সে যে কুমারী। তাই একটু তাড়াতাড়ি করেই মাশফিক কে বলে দুধ আনায় সে। হাসপাতালের কিচেনে গরম পানি করে দুধ বানিয়ে বাচ্চাকে দুধ দেয় সে। পেটে ক্ষুধা ছিল অনেক, তাই খেয়েও নেয়। খাওয়ার পর তুতুলের বুকেই ঘুমিয়ে যায় সে।
প্রায় দুই ঘন্টা পর অয়নন্দিতার OT শেষ হয়। ডক্টর সালাউদ্দীন OT রুম থেকে বেরিয়ে আসেন। মাশফিক কোন রকম দৌড়ে ডক্টর এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
~ ডক্টর, কি অবস্থা অয়নন্দিতার?
~ আপনি?
~ উনি আমার ছেলের বউয়ের ভাই।
~ ওহ আচ্ছা, রমজান ভাই।
~ হ্যাঁ,
~ আপনার ছেলের বউয়ের হাতেও সম্য নেই, ইন্টারনাল ব্লিডিং প্রচুর হয়ে গেছে, যদি পারেন সবাই দেখা করে নিন।
~ এইসববব কি বলছেন কি আপনিইইইই।
মাশফিক জেদের বসে ডক্টর সালাউদ্দীন এর কলার চেপে ধরে। আর তা দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়।
অয়ন আর মাহি কোন রকম মাশফিককে ছাড়িয়ে নেয়। রওশন বেগম যদিও ব্যাপার টা বুঝতে পারে তবুও সে চুপ থেকে যায় কারণ তখন তার ব্রেইনে এইসবের চাইতে অয়নন্দিতার টেনশন বেশি ছিল। কারণ তিনি ছেলে হারিয়েছেন এখন বউয়ের চিন্তায় অসার হয়ে আছেন।
~ এইসব কি বলেন সালাউদ্দীন ভাই,
~ অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, কোপ গুলো এমন এমন জায়গায় পড়েছে যে কি বলবো।
~ তাহলে আপনারা ডাক্তার রা আছেন কিসের জন্যে।
~ মাশফিক সাহেব, আমরা ডাক্তার আমরা আল্লাহ নই। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়েছি বাকিটা আল্লাহ পাকের কাছে।
অয়নন্দিতার মা রাহেলা বেগম ফ্লোরে বসে পড়ে, আর বাবা ঘুরান খেয়ে পড়ে যায়। এই রকম ভরা বয়সে মেয়ে এবং মেয়ে জামাই দুজনকেই হারাতে হচ্ছে তাদের। এই শোক কিভাবে কাটাবে তারা।
মাহির আর্তনাদ, অয়নের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাদছে সে। যার জন্য তার এই সংসার আজ সে কিনা চলে যাবে তাও চিরদিনের জন্যে এটা মানতে পারছে না সে। এই বয়সে বোন কে হারানোর কষ্ট কি দিয়ে পূরণ করবে অয়ন তাই ভেবে পাচ্ছে না সে। এতগুলো মানুষের আহাজারি দেখে তুতুল বিস্মিত। কাকে রেখে কাকে সাপোর্ট দিবে সে।
মাশফিক পারছে না সব ভেঙে ফেলে। দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা কতক্ষণ জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে সে। তুতুল এইসব আর দেখতে পাচ্ছে না। দৌড়ে গিয়ে মাশফিককে আটকায়।
~ এইসব কি।
~ আমার অয়নন্দিতায়ায়া।
~ আল্লাহ ভরসা, ঠিক হয়ে যাবে।
~ কিভাবে ঠিক হবে, ঠিক থাকার জন্যই তো এতকিছু করছি আর আজ আমার অয়নন্দিতা বেডে, আর ফারহান তো একেবারেই চলে গেলো।
~ এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে হবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।
~ আমি অয়নন্দিতাকে দেখবো।
~ হ্যাঁ অবশ্যই দেখবেন, তবে সময় দিন।
মাশফিকের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তার অয়নন্দিতা এইভাবে সব ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। ওকে থাকতে হবে। কিছুক্ষণ পর,
~ মাশফিক?
~ হ্যাঁ অয়ন।
~ ভাইয়া, অয়নি তোকে খুজে ভাইয়া।
~ যাও মাশফিক, শেষ দেখা করে আসো।
~ তুতুল তুমিও যাও।
~ আমি?
~ হ্যাঁ
মাশফিক আস্তে আস্তে পায়ের কদম ফেলে OT রুমে যায়। দরজা খুলে ভেতরে যায় মাশফিক। অয়নন্দিতা পড়ে আছে বেডে। মাথার নিচে বালিশ টাও নেই তার। মাশফিক গিয়ে আস্তে করে হাত টা ধরে অয়নন্দিতার।
~ অয়নন্দিতা ।
~
~ অয়নন্দিতা।
~ হু।
অয়নন্দিতার হু শব্দটা মাশফিকের বুকে ছুড়ির মতো বিধে যায়। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার ডাক দেয় অয়নন্দিতাকে।
~ অয়নি।
~ হু।
~ ক,কে,কেমন আছো।
~ আ,আ,আচ,আছি, বাবু কই।
~ আমি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি ও কে।
~ তু,তু,তুউতুল।
~ হুম বলো,
~ আমার মেয়েটাকে তোমায় আর মাশফিককে দিয়ে গেলাম, ও কে দেখে রেখো।
~ অয়নন্দিতা, এইসব কি বলছো।
~ ফারহান কই মাশফিক।
~
~ কি হলো, ফারহান কই।
~ ফারহান আছে, আরেক রুমে।
~ উহু উহু, ফারহান আর নেই তাই না?
~ নাহ তেমন না, আছে রেস্ট নিচ্ছে।
~ উহু, সে আর নাই, আমাকে রেখে চলে গেছে।
~ অয়নন্দিতা, একটু রেস্ট নেও।
~ তুতুল আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে আসো তো আমি দেখবো একটু।
~ হ্যাঁ যাচ্ছি।
তুতুল দৌড়ে বাচ্চাকে আনতে যায় আর এইদিকে মাশফিকের হাত ধরে অয়নন্দিতা।
~ অয়নন্দিতা, ঠিক হয়ে যাবে।
~ হ্যাঁ, ফারহান ডাকে আমায়, ওর কাছে গেলেই ঠিক হয়ে যাবো আমি।
~ এইসব বলো না।
~ মাশফিক, তুতুল অনেক ভালো মেয়ে, ও কে বিয়ে করে নিও।
~ তুমি চুপ থাকো তো, বাজে বকো না।
~ উহু বাজে না, সত্যিই ও অনেক ভালো।
~ হুম।
~ তুতুল কই এখনও আসে না যে।
~ এসে যাবে।
~ আমায় মাফ করে দিও মাশফিক, সব গল্পের নাম আসলেই হয় না মাশফিক।
~ এইসব কি করে হলো?
~ সা,সা,সাজি।
~ হোয়াটট।
~ সাজি সব করেছে মাশফিক, ও কে তুমি ছাড়বে না, কথা দাও আমায়, ও কে তুমি ছাড়বে না।
~ কথা দিলাম, ও কে আমি আজকেই শেষ করে দিবো।
~ ও নাই মাশফিক, আমাদের মেরে কোথায় যেন চলে গেলো ও আমার বাচ্চাটাকেও মেরে ফেলতো, ফারহান বাবুকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেছে।
~ সাজিকে আমি খুজে বের করবোই।
~ কথা দিয়েছো কিন্তু।
~ দিলাম।
তুতুল বাচ্চাকে নিয়ে দৌড়ে রুমে আসে। বাচ্চাকে এনে অয়নন্দিতার সামনে ধরে তুতুল।
~ তুতুল, আজ থেকে আমার বাচ্চাকে তোমায় দিয়ে গেলাম আর মাশফিকও তোমার।
~ মানে?
~ আমার মাশফিককে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি তুতুল, আমি বুঝি মাশফিক তোমায় চায়, তুমি মাশফিককে একা করে দিও না।
~ অয়নন্দিতা রেস্ট নাও একটু প্লিজ।
~ আজ বলতে দেও, তুতুল অনুকে দেখে রেখো আর মাশফিককেও।
মাশফিক ফারহান আসছে ওই তো দাঁড়িয়ে আছে। কত সুন্দর লাগছে ও কে দেখো। আমায় ডাকছে সে।
আসছি ফারহান, আমি আসছি দাড়াও একটু।
তারপর আর কোন কথা হয় নি। অয়নন্দিতা এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে। অবশেষে মুক্তি হলো তার। জীবনের অবসান ঘটে গেলো এখানেই। এক হাতে মাশফিকের হাত টা ধরে রেখে সামনে তাকিয়েই মরণ কে আপন করে নেয় অয়নন্দিতা।
অয়নন্দিতার নিঃশ্বাস ত্যাগের পর তুতুল অনুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চায়া স্বরে কেদে দেয়।
~ ও আজ থেকে আমার সন্তান, ও আজ থেকে আমাদের সন্তান, অনুষ্প্রিয়া।
মাশফিক জমে আছে, তার হাত ধরেই অয়নন্দিতার মৃত্যু। তার চোখের সামনেই অয়নন্দিতার মৃত্যু ঘটে গেলো। অবশেষে সারাজীবনের জন্য চলে গেলো অয়নন্দিতা।
দুপুরের দিকে হাসপাতালের সমস্ত ফর্মালিটিস পূরণ করে অয়নন্দিতা~ফারহানের মরদেহ বাহির করে আনে সবাই। তারপর সোজা নিয়ে যাওয়া হয় নির্যাস ভিলায়, মানে ফারহানের বাসায়। সেখান থেকে গোসল দিয়ে দুজনকে সাজিয়ে নেয় সবাই।
তারপর বাদ আসর জানাজা দিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে একত্রে পাশাপাশি শায়িত করা হয় অয়নন্দিতা~ফারহানকে।
অনেক বড় ধাক্কা খায় দুই দুইটা পরিবার। রমজান শেখ এবং রওশন বেগম দুজনেই হাসফাস করতেছে তাদের এক সন্তান আজ তাদের অন্য সন্তানকে খুন করেছে।
ভাবতেও গা শিউরে উঠে তাদের। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। তবুও এমন হলো কেন?
গত দুইটা বছর তাহলে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল সাজি, কবে বাগে পাবে আর কবে শেষ করে দিবে তাদের।
~ পাপাইইইইইইইইইই,
~ জ্বি মা।
~ আমি আসতি। (আসছি)
~ হ্যাঁ মা।
~ পাপাই আমলা(আমরা) ঘুত্তে(ঘুরতে) তাবো। (যাবো)
~ হ্যাঁ মা।
~ হুররেএএএএএএএএএ।
অনুষ্প্রিয়া তার ঝুটি দুটো নাড়াতে নাড়াতে দৌড়ে চলে যায়।
মাশফিক এতক্ষন আগের কথা গুলো ভাবছিল। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সব শেষ হয়ে গেছে।
জীবনের শেষ মুহুর্তে এইভাবে যে অয়নন্দিতা চলে যাবে ভাবেনি মাশফিক। অয়নন্দিতা পাষানের মতো চলে গেলো। আর তুতুল সেই থেকেই মাশফিকের জীবনের সাথে জড়িয়ে যায়। নিজের সব টুকু দিয়ে আগলে রাখে সে অনুষ্প্রিয়াকে।
বিকালের দিকে অনুষ্প্রিয়াকে নিয়ে বের হয় মাশফিক আর তুতুল। একটা আইসক্রিম পার্লারে বসে তারা। অনুষ্প্রিয়া তখন আইসস্ক্রিম খাচ্ছে। তুতুল তাকিয়ে দেখছে অনুষ্প্রিয়াকে। একদম অয়নন্দিতার মতো হয়েছে অনুষ্প্রিয়া। মাশফিক চেয়ে দেখছে তুতুলকে। মেয়েটাই অন্যরকম, যার নেই কোন চাহিদা নেই কোন অভিমান নেই কোন চাওয়া পাওয়া।
হঠাৎ করেই সে তুতুলের হাত টা ধরে মাশফিক।
~ কিছু বলবেন?
~ তুমি এমন কেন?
~ কি?
~ রাগ হয় না আমার প্রতি?
~ নাহ তো।
~ আমি তো কিছুই দিতে পারি না তোমাকে।
~ অনেক কিছুই তো দিয়েছেন।
~ ভালোবাসা টাও কি দিতে পেরেছি?
~ সেটাও দিয়েছেন তবে অপ্রকাশিতভাবে।
~ একটা জিনিস চাইবো?
~ হুম বলেন।
~ ভালোবাসি তুতুল।
~ আমিও বাসি, খুব করে বাসি, শুধু সাহস হয় না অয়নন্দিতার মাশফিককে বলতে কারণ মাশফিক শুধু অয়নন্দিতার,
মাশফিক, অয়নন্দিতা একটাই হয়, আর আমি সেই অয়নন্দিতা হতে পারি নি।
~ অয়নন্দিতা একটাই হয় তবে তুতুল তুতুলই হয়। আর এই তুতুলকেই আমি ভালোবাসি। অয়নন্দিতা আমার মনে রাজ করবে আর তুমি আমার জীবনে।
~ মনে জায়গা পাবো না?
~ তাতে আগেই আছো তুমি।
~ ওহ
~ তুতুল।
~ হুম।
~ ভালোবাসি।
~ ভালোবাসি।
~ আমিও ভালোবাসি পাপাই আম্মুন।
অনুষ্প্রিয়ার কথা শুনে মাশফিক আর তুতুল হেসে দেয়।
~ তুতুল।
~ হু।
~ সব গল্পের আসলেই নাম হয় না।
~ নাহ, সব গল্পের আসলেই নাম হয় না। কিছু গল্প বেনামি হয়ে থাকে সারাজীবন।
~ আমাদের গল্পের নাম হয়েছে।
~ মাশফিক-অয়নন্দিতার গল্পের নাম হয় নি কিন্তু মাশফিক-তুতুলের গল্পের নাম হয়েছে। তবে মাশফিক~অয়নন্দিতা সারাজীবন এক হয়ে থাকবে। কারণ অয়নন্দিতা মতো করে তার মাশফিককে কেউই ভালোবাসতে পারবে না। অয়নন্দিতা যে একজনই হয়।
তারপর, মাশফিক-অনুষ্প্রিয়া-তুতুল একসাথে তিন জন দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে থাকে। আজ পাশাপাশি দুইটা তারা উজ্জ্বল হয়ে আছে। হয়তো সেই তারা গুলোই অয়নন্দিতা-ফারহান। দূর থেকে ওদের দেখছে।
সব গল্পের নাম হয় না। কিছু গল্প বেনামি হয়ে রয়ে যায় সারাজীবন।
আর রইলো বাকি তুতুল~মাশফিক, তারা ভালো থাকুক, তারা সুখে থাকুক, তারা সংসার জীবনে আরও এগিয়ে যাক। এটাই শুভ কামনা রইলো তাদের জন্যে।
লেখা – আফরোজা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “সব গল্পের নাম হয় না – সেরা প্রেমের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)