সেই মেয়েটি – রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প: আরেক হাতে রবির বাহু আকরে ধরে রবির ঠোটের কাছে ঠোট নিয়ে গিয়ে, তাঁকিয়ে রইলো। রবির ঠোটের দিকে। দুজনের নিশ্বাসই ভারী হয়ে এসেছে। রবি আর একটুও দেরী না করে দুই হাতে রুপার কোমড় জরিয়ে ধরে, রুপার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
পর্ব ১
নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ঠিকভাবে মনে করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসলে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার বিয়ে হয়ে গেছে, তাও এইভাবে। আমি এখন বসে আছি আমারই রুমে। ভাবছেন, তো বিয়ে হয়েছে তাহলে এখনো কেনো শশুরবাড়ি না গিয়ে। বাবার বাড়িতে বসে আছি।
আসলে আমার ভাগ্যটাই এমন।
কিন্তু আমার ভাগ্যটা যে এমন হবে আমি তা কখনো ভাবতেই পারিনি।
ছোটবেলা থেকে বলতে পারেন বাবার আহ্লাদে আর মায়ের স্নেহে বড় হয়েছি।
অভাবটা কি তা কখনো বুঝিনি।
বাড়ির ছোট মেয়ে বলে কথা।
আমাদের জয়েন ফ্যামিলি।
সবাই একসাথেই হাসি মজায় মেতে থাকি। এইভাবেই লাইফটা চলছিল।
কিন্তু কখনো ভাবিনি লাইফে এমন একটা ঝড় বয়ে যাবে। তাও আমার সাথে।
আসলে সব ঠিক ঠাকই চলছিল।
বিপত্তিটা ঘটলো সেইদিন।
সেই দিনটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাড়াবে, তা আমি কখনোই ভাবিনি।
ছয় মাস পূর্বে…
সেইদিন রাস্তায় খুব ঝামেলা হয়েছিল।
দুইদল সন্ত্রাসী নাকি মারপিট করেছে।
তাই একা আসার সাহস করলাম না। তাওহীদ ভাইয়া (বড় চাচার ছেলে)কে কল করলাম।
ভার্সিটিতে আসার জন্য।
ভাইয়া ও বলল, আসবে।
কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর আবার তাওহীদ ভাইয়ার কল আসলো।
জানালো যে, সে আসতে পারবেনা।
বাড়িতে জানিয়ে দিবে কেউ এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
ততোক্ষন যেনো আমি ভার্সিটিতেই অপেক্ষা করি।
কিন্তু আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না।
একা একা বসে থাকতে।
কারন তখন প্রায় সবাই চলে গিয়েছে।
তাই আমি তারাতারি করে ভাইয়াকে বললাম যে, এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত।
আমি একাই আসতে পারবো।
শুনে ভাইয়া বলল।
- না পাকামো করিসনা। রাস্তাঘাঁটের অবস্থা ভালো না কখন কি হয় বলা যায়না তুই ওখানেই থাক আমি দেখছি। (ভাইয়া)
- না ভাইয়া তোমাকে বলছি তো এখন সব ঠিক আছে।
আমি আসতে পারবো শুধু শুধু টেনশন নিয়ো নাতো। (আমি)
- ঠিক বলছিস তো। পারবি আসতে। (ভাইয়া)
- হ্যাঁ ভাইয়া পারবো তুমি অযথাই টেনশন করছো। (আমি)
- ঠিক আছে সাবধানে বাড়ি চলে যাস। বাই। (ভাইয়া)
- ওকে ভাইয়া বাই। (আমি)
ভাইয়াকে তো বলে দিলাম টেনশন না করতে। কিন্তু
আমার তো খুব ভয় লাগছে।
কি করবো শুধু শুধু আর বাড়ির লোকদের টেনশন দিতে চাইনা।
মা খুব শক্ত টাইপের। কিন্তু বড় আম্মু। (বড় চাচি) আমাকে নিয়ে খুব বেশি পজেটিভ।
যদি শুনে একবার এখানে গন্ডগোল হচ্ছে।
তাহলে আর আমার বাড়ি না গিয়ে সোজা হাসপাতালে যেতে হবে।
ব্যাগটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
রাস্তায় চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিলাম।
না পরিবেশ ঠান্ডা এখন আর টেনশনের কিছু নেই।
কিন্তু কোনো রিকশা দেখতে পাচ্ছিনা।
তাই বাধ্য হয়ে এক প্রকার হাঁটা শুরু করলাম।
হাঁটছি একা একা খুব ভয় লাগছে।
পুরো রাস্তা ফাঁকা, হাতে গুনা কয়েকজন মানুষ মাত্র।
কিছু দুর যেতেই যা দেখলাম, তা দেখার মতো। মানসিকতা আমার একদমই ছিলনা।
খুব ভয় পেয়ে গেলাম। দেখি একটা লোক রাস্তায় পরে আছে।
আর তার পেট দিয়ে রক্ত পরে ভেসে যাচ্ছে পুরো রাস্তা।
আমার কি হলো, আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না।
পুরো শক্ত হয়ে গেলাম, সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
লোকটা যন্ত্রনায় ছটফট করছে। কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছেনা।
যে যার মতো দৌড়িয়ে পালাচ্ছে।
আমার মূহুর্তেই যে কি হলো, আমি দৌড়িয়ে লোকটার কাছে গেলাম।
দেখি এখনো সেন্সলেস হয়নি সেন্স আছে।
আমি লোকটার মাথা আমার কোলে তুলে নিলাম।
ব্যাগ থেকে পানি বের করে মাথাটা একটু তুলে পানি খাওয়ালাম।
লোকটা একবার আমার দিকে তাঁকালো। তারপর
আবার যন্ত্রনায় কাঁতারাতে থাকলো।
আমি হেল্প হেল্প বলে চিৎকার শুরু করে দিলাম। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসলোনা।
আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই অবাক লাগলো। কিন্তু, তখন আমার এতকিছু ভাবার টাইম ছিলনা।
কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
তারাতারি করে, নিজের ওরনাটা দিয়ে লোকটার পেট শক্ত করে বেঁধে দিলাম।
হঠাৎ একটা রিকশা যাচ্ছিলো। ডাক দিতেই থেমে গেলো। আমি হাত জোর করে বললাম।
- মামা প্লিজ আমাকে একটু তারাতারি হাসপাতালে নিয়ে চলুন আমার হাতে টাইম নেই।
ভাগ্য সদয় হলো রিকশাওয়ালা যেতে রাজি হলো।
তার সাহায্য নিয়ে লোকটাকে রিকশায় তুললাম।
লোকটা কে আমার কাঁধে মাথা রেখে বসালাম।
আমি আরেক হাত দিয়ে শক্ত করে তার বাহুডোর জরিয়ে ধরে রাখলাম।
সবাই হা করে আমাকেই দেখছিল আমার খুব রাগ হচ্ছিলো। এইটা ভেবে।
হা করে দাঁড়িয়ে ঠিকই দেখছে কিন্তু সাহায্য করতে কেউই এগিয়ে এলোনা। কি আজব সব দুনিয়ার লোক।
যেই আমি রক্ত দেখলে বেহুশ হয়ে যাই। সেই আমিই কিনা আজ এতোকিছু করছি।
রক্তাতো মানুষটা কে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে চলেছি।
লোকটা আমার এক হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। কেমন যেনো একটা অসস্তি হচ্ছে।
হবেই তো, লাইফে ফার্স্ট কোনো ছেলের স্পর্শ।
কিন্তু কিছু করার নেই।
লোকটা তো আর স্বাভাবিক না মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
আমি রিকশাওয়ালা মামা কে আরেকটু তারাতারি যেতে বললাম।
লোকটার কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা সেন্সলেস হয়ে গেলো নাতো।
লোকটার গালে হাত রেখে কয়েকবার ঝাঁকাতেই। লোকটা চোখ মেলে তাঁকালো।
আমার দিকে তাঁকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলো।
আমিতো পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।
মরে যাচ্ছে তাও আবার আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসছে। আজব তো।
ঢাকা মেডিকেলের সামনে এসে রিকশা থামলো।
আমি রিকশাওয়ালা কে, লোকটাকে ধরতে বলে মেডিকেলের ভিতরে ছুটে গেলাম।
দুটো লোককে সাথে করে, ফিরে আসলাম আর তাকে নিয়ে ভিতরে গেলাম।
কিন্তু এখন হলো আরেক বিপত্তি।
ডাক্তার বলছে, পুলিশ কেস আগে পুলিশকে খবর দিতে হবে।
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
আমি রিকোয়েস্ট করলাম।
তারা যেনো আগে চিকিৎসাটা শুরু করে তারপর আমি দেখছি ব্যাপারটা।
কিন্তু কেউ আমার কোনো কথা শুনছে না।
আমি তাদেরকে হাত জোর করে রিকোয়েস্ট করছি।
- বলছি লোকটা আরেকটু লেট হলে মরে যাবে প্লিজ কিছু একটা করুন।
আমি কথাগুলো বলতেই দেখলাম একদল লোক আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে।
ডাক্তারকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আর বলছে। - এক্ষুনি চিকিৎসা শুরু না করলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিবে।
আমি তো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিনা।
এইগুলো আমার সামনে ঘটছে।
আমি ভয়ে দেওয়ালের সাথে মিশে রইলাম।
কি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করছি।
ডাক্তার কে দেখলাম ভয়ে গুটিয়ে গেছে।
কিন্তু আরেকটু পর যা দেখলাম।
তা দেখে হাসবো না কাঁদবো, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
আরেকজন ডাক্তার এসে বললো।
- স্যরি স্যরি ব্রাদার ও আসলে নতুন জয়েন করেছে
তোমাদের কে চিনতে পারেনি।এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো এখনি বড়ভাই কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাও কুইক। ফার্স্ট। (ডাক্তার) - দয়া করে দেখবেন যেনো ভাইয়ের কিছু না হয়।
(কাঁদতে কাঁদতে ছুরি হাতে লোকটি বলল)
- চিন্তা করোনা আল্লাহ কে ডাকো। আমি দেখছি।
(লোকটার কাঁধে শান্তনা স্বরুপ হাত রেখে) ( ডাক্তার)
আমি আর ভয়ে সেখানে এক মূহুর্তও দাঁড়ালাম না।
দৌড়িয়ে বাহিরে চলে আসলাম।
হাটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছি আর তখনি কারো ডাকে সম্মতি ফিরে পেলাম যেনো।
- আপামণি যাইবেন না। (রিকশাওয়ালা)
- তু… তুমি যাওনি এখনো। আচ্ছা আচ্ছা চলো তারাতারি এখানে আর এক মূহুর্ত দাঁড়ানো যাবেনা। (আমি)
বলেই লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে গেলাম।
রিক্সায় বসে ভাবছি আমার সাথে এইগুলো কি ঘটছে। লোকটা কে?
আরে ধুর এখনো বাসায় যেতে পারলাম না। এতক্ষনে বোধয় বাড়িতে হৈচৈ পরে গেছে। আমাকে নিয়ে।
আল্লাহ জানে বাসায় গিয়ে কি বলব আজকে।
আস্তে আস্তে বাড়িতে ঢুকছি।
হে আল্লাহ নিজের বাড়িতেই আজ চোরের মতো ঢুকছি।
হাতের কব্জি উলটিয়ে একবার টাইমটা দেখে নিলাম।
ইয়া আল্লাহ ৫:২০ বেজে গেছে।
আল্লাহ বাঁচাও। আজ আমাকে।
বলতে বলতেই কলিংবেল চাপলাম একবার।
আশ্চর্য ব্যাপার একবার চাপতেই দরজা খুলে দিলো।
সবটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো সবাই দরজার সামনে।
আমাকে চোখ বড় বড় করে দেখছে। আর বড় আম্মু আমাকে দেখে একবার রুপা বলেই সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পরে গেলো।
মা দৌড়িয়ে এসেই বলল।
- রুপা কি। কি হয়েছে তোর। এই অবস্থা কেনো।
এতক্ষন কোথায় ছিলি। (মা) - আপু তুই জানিস সবাই কতো টেনশনে আছে।
(ছোট ভাই তানিম)
- এই তোর কি হয়েছে, সারা শরীরে রক্তমাখা কেনো। আর তোর ওরনাই বা কোথায়। (বড় চাচার মেয়ে তৃন্নি)
আমি এতক্ষনে বুঝলাম। সবাই আমাকে এলিয়েন
ভাবার কারনটা কি।
আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমার পুরো শরীরে রক্ত দিয়ে যা তা অবস্থা।
আমি আর এতো কিছু না ভেবে বড় আম্মুর কাছে গেলাম।
এখনো সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।
তৃন্নি কে বললাম, এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতে।
পানির ছিটা দিতেই বড় আম্মু চোখ খুলে তাঁকালো।
আর আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
এই হচ্ছে এক মহিলা সত্যি পাগল।
কি বলব আমাকে নিয়ে যতোটা ভাবে ততোটা বোধয় তৃন্নির জন্যও ভাবেনা।
- রুপা মামনি তুই কোথায় ছিলি। জানিস চিন্তায়
আমার এখানে কি অবস্থা। (বড় আম্মু) - জানিতো, নাও তো আগে একটু পানি খেয়ে নেও
(বলেই মাথাটা তুলে পানি খাইয়ে দিলাম) - তোর এই অবস্থা কেনো। (তৃন্নি)
- এই চুপ কোনো কথা বলতে হবেনা। আগে যা ফ্রেশ হয়েনে তারপর সব কথা হবে। (ভাবি)
- ভাবি তুমি কি বলছো। ও এই অবস্থায় বাড়িতে ফিরলো আর আমরা কোনো কিছু না জেনে চুপ করে থাকবো এখনো। (তৃন্নি)
- তাওহীদটা তো বাসায় এসেই ওরে না পেয়ে পুলিশের কাছে ছুটলো। (মা)
- কি। ভাইয়া পুলিশের কাছে গেছে। (আমি)
- হ্যাঁ বড় আব্বুও গিয়েছে। (তানিম)
- তারাতারি কল কর বল যে আমি বাসায় ফিরে এসেছি। (আমি)
- আমি কল করে দিয়েছি আব্বু, ভাইয়া বাসায় আসছে। (তৃন্নি)
- এই আর কোনো কথা না সবাই চুপ। রুপা মা তুই রুমে যা আগে। সকালে আজ ভালো মতো খেয়েও যাসনি। এখন পর্যন্ত নিশ্চই কিছু খাওয়া হয়নি।
যা যা তুই তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার বাড়ছি। (বড় আম্মু)
আমি মিষ্টি করে একটু হেসে রুমে চলে আসলাম।
বাথরুমে ঢুকে পরলাম গোসল করতে হবে।
গোসল করে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনে পরে গেলো।
আমার প্রিয় ওরনাটা ওই লোকটার কাছে রয়ে গেলো।
ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো একটু।
বড় আম্মুর ডাক শুনা গেলো।
নিশ্চই টেবিলে খাবার নিয়ে বসে আছে আমার জন্য।
আর কোনো কিছু না ভেবে চলে গেলাম খেতে।
আমি বসে আছি আর বড় আম্মু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর ড্রয়িংরুমে সবাই গোল করে বসে আমাকে দেখছে।
বড় আব্বু আর তাওহীদ ভাইয়াও এতক্ষনে চলে এসেছে।
সবাই আমার দিকে জিঙ্গাসা ভরা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
কিন্তু বড় আম্মুর ভয়ে কিছুই বলছেনা।
জানি খাওয়া শেষ হলেই, আমাকে সবাই একগাদা প্রশ্ন ছুরে দিবে।
আমি খেয়ে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ভাইয়া যেই কিছু বলতে যাবে। তখনি আমি হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলাম।
আমি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখি কোনো রিকশা নেই। তাই বাধ্য হয়ে হেটেই আসছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটা লোককে দেখি পরে আছে রাস্তায়।
দেখে মনে হলো কেউ পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। কেউ কোনো সাহায্য করছিলো না। তাই আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই।
তাই এতোটা দেরি হয়ে গেলো।
বলে। সবার দিকে তাঁকাতেই দেখি।
সবার চোখ যেনো আরো বড় হয়ে গেছে।
- কি হলো সবাই এইভাবে তাঁকিয়ে আছো কেনো। (আমি)
- রুপা এইটা তো পুরো সিনেমা। (তৃন্নি)
- আপুরে তুই একটুও ভয় পেলিনা। তুইনা রক্ত দেখলেই অজ্ঞান হয়ে যাস। (তানিম)
- না রে লোকটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলো তখন
আমার এতোকিছু ভাবার টাইম ছিলোনা। (আমি) - তোকে আমি বার বার বলেছিলাম ভার্সিটিতেই থাক, আমি একটা ব্যাবস্থা করছি নিশ্চই কোনো সন্ত্রাসী হবে হয়তো। তা না হলে ছুরি মারবে কেনো। (ভাইয়া)
এতোক্ষন পর সবার বলা শেষে বড় আব্বু মুখ খুলল। - তা হে রে মা পুলিশ কেস হয়নি। পুলিশ আবার তোকে কিছু বলেনি তো। (বড় আব্বু)
- না বড় আব্বু আমি ওখানে যেতেই তাদের লোক
এসে গিয়েছিলো। তাই আমি আর দেরি না করে চলে আসি। (আমি) - তুই একবার ফোন করে জানাতে তো পারতি
আমাদের। (মা) (রেগে গিয়ে) - মা আমি আসলে তখন।
কথা শেষ হওয়ার আগেই বড় আম্মু থামিয়ে দিলো।
- হয়েছে হয়েছে এবার সবাই থামো মেয়েটা আজ
অনেক বড় কাজ করেছে, একজনের জীবন বাঁচিয়েছে। মেয়েটার উপর দিয়ে অনেক খাটুনি গিয়েছে এবার ওরে একটু রেস্ট নিতে দাও। (বড় আম্মু)
আমি বড় আম্মুকে জরিয়ে ধরে গালে একটা চুমু
খেয়ে। রুমে চলে আসলাম।
তৃন্নিও আমার পিছু পিছু এলো।
এসেই আবার প্রশ্ন করা শুরু করলো। - এই আপু লোকটা কি অনেক ইয়াং ছিলো। সুন্দর হেন্ডসাম ছিলো। (তৃন্নি)
আমি রাগি লুক নিয়ে বললাম। - খুব পাঁকামো শিখে গেছো না। বড় আম্মু সেই কথা জানে তো।
- এই আপু তুই না পঁচা খুব। একটু বললে কি হয়। (তৃন্নি)
- আর কথা না বাড়িয়ে পড়তে বস। যা যদি বকা খেতে না চাস। (আমি)
- উফফ। তুই না।
রাগ দেখিয়ে চলে গেলো তৃন্নি।
আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। শরীরটা আজ খুব ক্লান্ত।
আচ্ছা লোকটা এখন কেমন আছে।
আর যা দেখে আসলাম তাতে তো আমি এইটা সিউর। লোকটা কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী।
ওদের কাউকেই এইসবের কিছু বললাম না।
শুধু শুধু টেনশন করবে।
আচ্ছা তৃন্নি ওইগুলো কি বলে গেলো।
আমি সেইভাবে তাকে দেখিই নাই।
তবে এটুকু মনে পরছে লোকটা দেখতে খুব সুন্দরই হবে।
যেই লম্বা বাবাহ।
উফফ আমি যে কি বোকা মেডিকেলের রিসিপশনের নাম্বারটা নিয়ে আসলেও তো। জানতে পারতাম লোকটা কেমন আছে।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে নাস্তা করে বের হবো। তখন আব্বু ডেকে বলে দিলো। আর যেনো কালকের মতো না করি।
আমি মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম।
ভার্সিটিতে আজ কিছুতেই মন বসাতে পারলাম না। শুধু ভাবছি, লোকটা কেমন আছে।
শায়লা(ব্রেস্ট ফ্রেন্ড)অবশ্য বার বার জিঙ্গাসা করেছে। তাই শায়লা কে সব খুলে বলি।
তারপর এইভাবে ৭দিন কেঁটে গেলো।
আমি ওইদিনের সবকিছু ভুলেই গেলাম।
কিন্তু হঠাৎ একদিন ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম।
দেখি আমার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।
আমি তাঁকাতেই দেখি, কিছু লোক নেমে এলো কি রকম ভিলেন টাইপের।
তারপর একটা ছেলে নেমে এলো।
আমি তো দেখে পুরাই ক্রাশ খেলাম।
ইয়া লম্বা, ফর্সা, চোখ গুলোর দিকে তাঁকিয়ে তো। আমি হারিয়েই যাচ্ছিলাম।
সাদা-আকাশি চেকের শার্ট পরা, হাতে ব্রেন্ডের ঘড়ি, চুল গুলো বাতাসে সামনে এসে রয়েছে।
দেখে তো আমার চোখের পলকই পরছেনা।
- হ্যালো এই যে ম্যাডাম।
ডাক শুনে বাস্তবে ফিরে এলাম।
ছেলেটা আমার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আমি তো খেয়ালই করলাম না।
- জ্বি। জ্বি আমাকে বলছেন। (আমি)
- হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। সেইদিন আমাকে হাসপাতালে রেখে এসে আরতো কোনো খোঁজ খবরই নিলেন না। (ছেলেটা)
আমি তো কথাটা শুনে, পুরোই আকাশ থেকে মাটিতে পরলাম।
তারমানে সেই লোকটাই, এই ছেলেটা?
আমি ভয়ে পুরো গুটিয়ে গেলাম।
তারমানে এই ছেলেটা সন্ত্রাসী।
আমি আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালাম না।
হাটা শুরু করলাম।
কিন্তু আমার পুরো শরীর যেনো কাঁপছে।
পা যেনো আগেই বাড়ছে না।
ছেলেটা আমাকে পিছন থেকে ডাকছে।
না আমি কারো, কোনো কথা শুনতে চাইনা।
পর্ব ২
পিছোন থেকে ডাকছে।
না আমি কারো কোনো কথা শুনতে চাইনা।
বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে একটা বই নিয়ে।
কখন থেকে এই পৃষ্ঠা ওই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যাচ্ছি।
কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছিনা।
এখনো ভয়ে মনটা সেধিয়ে রয়েছে।
যদি ওই, লোকটা কাল আবার আসে।
না না আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।
আচ্ছা লোকটা কেনো এসেছিলো আজ।
যেই কারনেই আসুক না কেনো, তাতে আমার কি।
আমি কিছুতেই আর তার সামনে পরতে চাইনা।
দেখলে কেউ বলবেই না।
ছেলেটা একজন সন্ত্রাসী।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি।
খেয়ালই ছিলনা।
আম্মুর ডাকে ঘুমের দেশ থেকে ফিরে আসলাম।
- উফফ মা মাত্রই তো ঘুমিয়েছি এখনি আবার ডাকছো
কেনো। (আমি) - রুপা তুই না কাল বললি সকালে তোর একটা ক্লাস আছে। তাহলে এখন কেনো আবোল তাবোল বকছিস। (মা)
- হ্যাঁ আছে তো কয়টা বাজে এখন। (আমি)
- ৯:২০ বেজে গেছে। উঠবি কি উঠবি না সেইটা বল। (মা)
- কিহহহ্।আরো আগে ডাক দিবা না তুমি যে কি করো না মা। ভালো লাগেনা। (আমি)
অনেক দেরি হয়ে গেছে তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।
টেবিলে বসতে বসতে বললাম।
- আম্মু খাওয়ার বেশি সময় নেই তারাতারি দাও। (আমি)
- রুপা আস্তে আস্তে খেয়ে নে। (বড় আম্মু)
খেতে খেতে বললাম।
- উহু। বড় আম্মু তুমি জানো না আজ একটা জরুরি ক্লাস আছে মিস করা যাবেনা। আমি অলরেডি লেট। (আমি)
- আপু ভালো করে খেয়ে নে, তা না হলে আম্মু সারাদিন। এই আফসোসই করে যাবে। (তৃন্নি)
- রুপা আরেকটু বস আমি অফিস যাওয়ার পথে তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যাবো। (ভাইয়া)
খাবার রেখে উঠতে উঠতে। - ভাইয়া একটুও সময় নেই আমি যাচ্ছি। তুমি চলে যেও। বাই। (আমি)
- দেখেছো মেয়েটা কিছুই খেলো না। (বড় আম্মু)
- আম্মু আমার দিকে তো একটু নজর দাও। (তৃন্নি)
- তোর দিকে আবার কি নজর দিবো তুই তো দিব্বি খাচ্ছিস। এখন তারাতারি খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। (বড় আম্মু)
- আরে ভাবি মেয়েটা কে একটু খেতে দাও। মা তুই খা আস্তে আস্তে। (আম্মু)
উফফ কতোটা লেট হয়ে গেলো। একটা রিকশাও পাচ্ছিনা আজকে।
মনে হচ্ছে আমার দিনটাই কুফা, ভালো লাগেনা আর। - এই মামা যাবা। (আমি)
- হো যামু, আপনার লিগাই তো আইলাম আপামুনি। (সেই রিকশাওয়ালা)
উঠতে উঠতে। - এতো বেশি কথা বইলো না তারাতারি যাও
আমি আজকে অনেক লেট। (আমি)
যেতে যেতে। - হো আপামুনি। আমারে চিনতে পারছেন। (রিক্সাওয়ালা)
- ভ্রুঁ কুঁচকে, এই তুমি সেই মামাটা না। ওয়েট আমার জন্য আসছো মানে। (আমি)
থতোমতো খেয়ে। - এইদিক দিয়া যাইতাছি আপনারে দেইখা মনে পইরা গেলো।কি ভালা মানুষ আপনে তাই আইলাম।
আপামুনি সত্যিই আপনি অনেক ভালা। (রিক্সাওয়ালা) - হয়েছে হয়েছে যাও তো। (আমি)
ভালোগিরি করতে গিয়ে যে সেদিন।
কি বিপত্তি টা ঘটিয়েছি সেইটা তো শুধু আমিই জানি।
সন্ত্রাসী একটা আমার পিছু পিছু।
কাল ভার্সিটি পর্যন্ত চলে এসেছে।
কারো ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। - আপামুনি আইসা পরছি। (রিক্সাওয়ালা)
- এ্যা। হ্যা ওহ এসে পরেছি। আচ্ছা এই নেও তোমার ভাড়াটা। (আমি)
হেসে হেসে। - কি যে কন আপামুনি আপনে এতো
ভালা মানুষ আর আমি কিনা আপনার থেকে ভাড়া নিমু। (রিক্সাওয়ালা)
বলেই রিকশা নিয়ে চলে গেলো।
আজবতো।
ধ্যাৎ এতো কিছু ভাবার টাইম নেই আমার।
যাক বাঁচা গেলো এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। শায়লা, নাঈম, টুম্পা ওরা সব আড্ডা দিচ্ছে।
আমি কাছে যেতেই নাঈম আর বাকি ছেলে গুলো সব সরে গেলো। আজব তো।
- এই শায়লা কিরে কি হইছে ওদের চলে গেলো
কেনো। (আমি) - আমি কি জানি।(শায়লা)
টুম্পার দিকে জিঙ্গাসা চোখে তাঁকালাম। - আমিও জানি না কি হলো। (টুম্পা)
অথৈ এসে বলল।
- আরে রুপা তোকে আজ যা সুন্দর লাগছে না।তাই বোধয় ওরা লজ্জা পাইছে।কারন তুই তো আর কোনো ছেলেকে পাত্তা দিসনা।
বলেই ওরা সবাই হাসতে শুরু করে দিলো।
আর আমি বাংলার পাচের মতো মুখটা করে বসে রইলাম।
প্রথম ক্লাস শেষে বসে আছি।
হঠাৎ নাঈম এসে ক্লাসের সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল।
- আজ আর কোনো ক্লাস হবেনা।
তাই সবাই বেড়িয়ে পরলাম।
শায়লা আর আমি কথা বলছি।
আর খিলখিলিয়ে হাসছি আর হেটে চলেছি।
এমন সময় কালকের মতো আজকেও একটা গাড়ি এসে থামলো। পথ আটকে।
আমি ভয় পেয়ে শায়লার হাত ধরলাম।
গাড়ি থেকে দুটি লোক নেমে শায়লাকে বলল। - তুমি বাড়ি চলে যাও।
উনি আমাদের সাথে যাবে।
বলেই আমার হাত ধরে গাড়িতে তুলে নিলো।
আর আমি চেচেয়ি বলছি।
- কে কে আপনারা। আমাকে এইভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। ( আমি)
একটি লোক বলে উঠলো। - ভাবি আস্তে আস্তে কথা বলেন। টেনশন নিয়েন না
আমরা থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি হবেনা। (লোকটা) - ভাবি। কে ভাবি। (আমি)
কেউ আর কোনো কথা বলল না। শুধু হেসে গেলো।
আমি তো এইদিকে ভয়ে কাঠ হয়ে গেছি।
গলা শুকিয়ে গেছে খুব পানি খেতে ইচ্ছা করছে।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
ওরা গাড়ির দড়জা খুলে আমাকে নামতে বলল।
আমি নেমে চারপাশ টা দেখতে লাগলাম।
এইটা তো একটা বাড়ি চারপাশে সিকিউরিটির ব্যাবস্থা।
সবাই বন্দুক হাতে দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে।
এদিকে তো আমি শেষ, আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু
করে দিয়েছে।
একটা লোক বলল।
- ভাবি ভিতরে চলেন।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে তাকে অনুসরণ করে ভিতরে গেলাম।
লোকটা আমাকে ভিতরে ঢুকতে বলে, বলল। - ভাইয়া ভিতরে আছে, আপনি যান।
আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।
- কি আজব ব্যাপার, বাড়ির ভিতরে তো কেউই নেই।
আমি দাড়িয়ে এদিক সেদিক তাঁকাচ্ছি বাড়িটা খুব সুন্দর।
মনে হচ্ছে যার বাড়ি সে খুব রুচিশীল ব্যাক্তি। বাড়িটা, অনেক বেশি সুন্দর যেমন বাহিরটা,
তেমনি বাড়ির ভিতর টা।
হঠাৎ আমার পিছনে কারো আসার অনুভূতি হলো।
পিছন ফিরে তাঁকাতেই আমি আর আমি নেই।
ভয়ে, আমার হাত পা আরো দিগুন কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিলো।
- কেমন আছো রুপা। (মিষ্টি করে হেসে)
- আ। আ। আ। প। নি। নি। (আমি)
- তুমি কাল কোনো কথা না বলে চলে গেলে
কেনো। (লোকটা)
কি বলব বুঝতে পারছিনা। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে পুরো জমে গিয়েছে। - সেদিন যখন আমার জ্ঞান আসলো। তোমার কথা জিঙ্গাসা করতেই ওরা বলল, তুমি নাকি কাউকে কিছু না বলেই চলে গিয়েছো। তোমাকে তারপর অনেক খুঁজাখুজি করে খুঁজে বেড় করলাম। ওহ তুমি তো আমার নামটাই জানো না, আমি মোঃ রবিউল হোসেন ছোট করে রবি। রুপা তুমি এইভাবে ঘামছো কেনো। (রবি)
বলেই আমার দিকে হাত বাড়ালো।
আর তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
সেন্স আসতেই দেখি আমি একটা বিছানায় শোয়া। আর ওই লোকটা, মানে রবি আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
- রুপা তোমার কি হয়েছিলো। এইভাবে সেন্সলেস হয়ে গেলা কেনো। (রবি)
আমি আস্তে আস্তে উঠে পিছনে সড়তে লাগলাম। - রুপা কথা বলছো না কেনো। আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গাসা করছি। আচ্ছা পানি খাবে। (রবি)
আমি শুধু পিছনে সড়ে যাচ্ছি আর রবি শুধু আমার কাছে আসছে। - রুপা নাও পানিটা খাও। (গ্লাস টা সামনে এগিয়ে দিয়ে)। (রবি)
আমি চুপ। ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাঁকাচ্ছি। - রুপা। (জোরে চিৎকার করে)। (রবি)
- জি। জ। জু। জ্বি। (তোতলাতে তোতলাতে)। (আমি)
- আমি তোমাকে পানিটা খেতে বলেছি(শান্ত গলায়)। (রবি)
আমি পানিটা ভয়ে তার কাছে থেকে নিয়ে।
এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।
আর রবি হো হো হো করে হেসে উঠলো। পুরো রুম যেনো ওর হাসির শব্দে গমগম করে উঠলো।
আমি একবার তাঁকিয়ে আবার মাথাটা নিঁচু করে ফেললাম।
এক নজরে যা দেখলাম তাতেই আমি আবার নতুন করে ক্রাস খেলাম।
এত্ত সুন্দর এই সন্ত্রাসী টা ভাবতেই অবাক লাগে।
- রুপা তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো। (রবি)
- না.. না.. মা..নে আ..আপনি আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন। (আমি)
- তুমি তো কাল আমার সাথে কোনো কথা বললে না।
দৌড়ে পালিয়ে গেলে তাই বাধ্য হয়ে এখানে নিয়ে আসলাম। (রবি) - কেন, থ্যাংকস বলার জন্য। (আমি)
ঐ সন্ত্রাসী রবি তখন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল। - না ভালোবাসি বলার জন্য। (রবি)
পর্ব ৩
- না ভালোবাসি বলার জন্য। (রবি)
- আ। আ। আ। আ। মি। বা। বা। সা য়। যাবো। (আমি)
রুপার একদম কাছে গিয়ে দুই গালে হাত রেখে
রবি বলতে শুরু করলো। - আমি তোমাকে ভালোবাসি রুপা। তুমি কি সেইটা শুনতে পাওনি। যেদিন তুমি আমার এই জীবন বাঁচিয়েছো সেইদিন থেকে রবি শুধুমাত্র তোমার রুপা।
(আল্লাহ তুমি আমারে বাঁচাও এই সন্ত্রাসীটা হাত থেকে, আমি এখন কি করি। ) - রুপা তুমি কিছু বলছোনা কেনো। (রেগে গিয়ে শক্ত করে রুপার হাতটা ধরে)। (রবি)
- আউচ। (ব্যাঁথায় কুঁকিয়ে)
হাতটা ছেরে দিয়ে রবি উঠে দাঁড়ালো।
আর দেওয়ালের সাথে জোরে হাতটা মুঠিবদ্ধ করে বাড়ি দিলো।
আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
এখন মনে হচ্ছে সেদিন এই সন্ত্রাসীটাকে বাঁচিয়ে ভুল করেছি।
তা না হলে আজ আমার লাইফে এই ঝড় আসতো না।
উফফ হাতটা ব্যাঁথা করছে দেখছো।
কীভাবে ধরেছিলো আমায় পুরো লাল হয়ে গেছে।
শয়তান বদমাস একটা এখন মনে হচ্ছে।
বলতে বলতেই রবি আবার আমার কাছে।
এসে দাঁড়ালো।
আমি ভয় পেয়ে একটু পিছনে সরে গেলাম।
- রুপা যাও ওরা তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে
দিবে। (মাথা ঠান্ডা করে)। (রবি)
আমি কি করব বুঝতে পারলাম না।
গুটিশুটি মেরে বিছানাতেই বসে রইলাম মাথা নিঁচু করে। - আমার সামনে থেকে যাও। এরপর কিন্তু আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। (একটু চিৎকার করেই বলল কথাটা)। (রবি)
আমি রবির দিকে একবার তাঁকালাম কি ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।
চোখ দুটো পুরো লাল হয়ে আছে।
মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই আমাকে গিলে খাবে রাক্ষস একটা।
আমি আর দেরি করলাম না।
তারাতারি বিছানা থেকে নেমে যেই চলে যেতে নিব তখনি।
রবি আমার হাত টান দিয়ে ওর কাছে টেনে নিলো।
রবির দিকে তাঁকাতেই বলল।
- রুপা তুমি শুধু আমার কথাটা যেনো মনে থাকে। (রবি)
- ছারুন বলছি আমাকে। (আমি)
- তুমি এইভাবে আমার দিকে তাঁকালে তো আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা। কি করবো বলো।
বলেই আমার কাছে আসতে লাগলো।
না না আর কাছে আসতে দেওয়া যাবেনা।
তাহলে আজ আমার সব শেষ।
আর রিস্ক নেওয়া যাবেনা, তাই শরীরের সব শক্তি দিয়ে ওরে ধাক্কা দিয়ে চলে আসলাম।
বাহিরে এসে হাঁপাতে লাগলাম জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।
হায় আল্লাহ তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
তুমি আজ আমাকে জোর বাঁচা বাঁচিয়ে দিলে।
ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পিছু তাঁকালাম।
এ বাবা সন্ত্রাসীটা আমার দিকে তাঁকিয়ে কীভাবে অসভ্যের মতো হাসছে দেখো।
আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালাম না।
ছুটে গাড়ির সামনে চলে এলাম।
যেই লোকটা সেদিন হাসপাতালে ছুরি দিয়ে ডাক্তারকে ভয় দেখাচ্ছিলো।
সেই লোকটা আমার সামনে আসলো।
- ভাবি আমাকে চিনতে পারছেন। আমি ভাইয়ের সব থেকে কাছের। আমার নাম জনি ভাবি। চলেন আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।
বলেই জনি গাড়ির দড়জা খুলে দিলো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে, গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
ইসস্ বলে কিনা ভাবি।
মন চাচ্ছে বলি, ওই আমি তোর কোন জন্মের ভাবি
ছিলাম রে।
হঠাৎ গাড়িটা থেমে গেলো।
কি হলো জিঙ্গাসা করতেই জনি বলল যে। চলে এসেছি। উফফ আল্লাহ।
আমি যেনো আমার জীবন ফিরে পেলাম।
তারাতারি করে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় ঢুকতেই আম্মু জিঙ্গাসা করলো যে,
এতো দেরি হলো কেনো।
আমি কিছু বললাম না রুমে চলে এলাম।
বসে আছি বেলকনিতে, ঘুম আসছেনা।
কিছুতেই আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলতে পারছিনা। কি নাম যেনো বলল ও হে মনে পরেছে রবি।
ছেলেটা কে প্রথম দেখায়ই অনেক ভালো লেগেছিলো।
যে কোনো মেয়ে দেখলেই প্রেমে পরে যাবে আমার বিশ্বাস।
প্রেমে পরারই কথা মাশাআল্লাহ ছেলেটা খুবই সুন্দর।
লম্বা তো সেই ৬ ফুটের উপরে ছারা নিচে তো হবেই না।
আমি যে ৫ ফুট ৪ ইন্চি লম্বা তাতেও আমি তার বুক সমান ছিলাম।
শক্ত সুঠাম দেহ মনে হয় নিয়মিত জিম করে।
জোরা ভ্রুঁ, ফর্সা, চেহারাটা একটু লম্বা টাইপের।
ঠোট টার কথা কি বলব, মনে হচ্ছিলো কোনো বাচ্চা ছেলের ঠোট।
চুল গুলো সিল্কি সব মিলিয়ে পুরা হিরো একদম
সালমান খানের মতো দেখতে।
যদি সন্ত্রাসী না হতো তাহলে আমি নিশ্চই প্রেমে পরে যেতাম।
কিন্তু না এখন তো প্রশ্নেই আসেনা।
লম্পট একটা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।
আজ তো একটু হলে আমার সব লুঠ করে নিচ্ছিলো। আমি তার প্রেমে পরবো কি, দেখলেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে কাঁপতে থাকে।
- আপু তুই ঘুমাবি না। (তৃন্নি)
- হু। তুই যা আমি আসছি। (আমি)
- আপু তোর কি কিছু হয়েছে। (তৃন্নি)
- (একটু হেসে বললাম)কি হবে আবার। এমনি রাতের অন্ধকার দেখছিলাম। সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। (আমি)
- হুমমম। তুমিই শুধু জেগে আছো চলো তো। (তৃন্নি)
আমার হাত টেনে নিয়ে গেলো।
আমি ও ঘুমোতে চলে গেলাম।
এতো ভেবে লাভ নেই, যা হবার তা হবে।
আমি এখন থেকে খুব কেয়ারফুল থাকবো।
কি করবে টা কি ওই সন্ত্রাসী আমার। হু।
এরপর আমাকে কিছু বললে ডিরেক্ট থানায় গিয়ে ওর বিরুদ্ধে মামলা করে দিব।
আমি আর একটুও ভয় পাবোনা। হুমম।
ভার্সিটিতে।
ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছি আর গল্প করছি।
একটু পর খেয়াল করলাম।
আমি আসাতে ছেলে গুলো সব উঠে চলে যাচ্ছে।
কি ব্যাপার কি হলো আজিব।
হঠাৎ আশিক আসলো, আমাকে দেখেই চলে যেতে লাগলো।
আমি ডাক দিলাম কিন্তু না শোনার ভান করে চলে গেলো।
- কিরে অথৈ আশিক চলে গেলো কেনো। ও না এই সময় আমাদের সাথে বসে আড্ডা দেয়। (আমি)
- তোরে দেখে সবাই লজ্জা পাইছে তাই সবাই চলে গেলো দেখলি না।
বলেই হাসতে শুরু করে দিলো।
মন চাচ্ছে দেই একটা থাপ্পর। - ওয়েট ওয়েট, না ব্যাপারটা খুব ভাবাচ্ছে।
-এই রুপা কিছু কি হয়েছে। (শায়লা) - কই কিছুই তো হয় নাই। (আমি)
- তাহলে ওরা এমন আচারণ কেনো করছে।
আচ্ছা বাদ দে, ভালো কথা তোকে কাল গাড়িতে কে তুলে নিয়ে গেলোরে। (শায়লা)
ইসস্ এখন আমি ওদের কি বলব।
ওদের কে তো বলা যাবেনা, যে আমি এক সন্ত্রাসীর পাল্লায় পরেছি। - কিরে কি ভাবছিস। তারমানে রুপা তুই ও। (অথৈ)
- আরে দোস্ত কি যে বলিস তোরা, তো জানিস আমি প্রেমের ধারে কাছেও নেই। একদম বিয়ের পর হাজবেন্ডের সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো। (আমি)
- রুপা আমি কিন্তু এখনো আমার উত্তর পেলাম না। (শায়লা)
- ও আমার এক কাজিন নিতে আসছিলো। (এড়িয়ে
গেলাম)। (আমি) - ওহহহ্। (শায়লা)
- আচ্ছা আমি এখন উঠিরে বাসায় যেতে হবে বাই। ( আমি)
আর বসলাম না।
শায়লা যে কথাটা বিশ্বাস করেনি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।
ক্যান্টিন থেকে বের হতেই দেখি রবি।
তারাতারি ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য ব্যাক করলাম। না এর সামনে পরা যাবেনা।
কিন্তু তার ডাকেই থমকে দাড়াঁলাম।
- রুপা এখান থেকে চলে গেলে কিন্তু আমার
থেকে খারাপ আর কেউই হবেনা। (রবি)
এক পা এক পা করে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম মাথা
নিঁচু করে।
আর মনে মনে বলছি আল্লাহ বাঁচাও, আমারে এই সন্ত্রাসীটার হাত থেকে। - কেমন আছো। (রবি)
- (চুপ)।
- তুমি আমাকে ভয় কেনো পাও। (রবি)
- সন্ত্রাসীকে ভয় সবাই পায়। (আমি)
সাহসের সাথে বলে ফেললাম।
কিন্তু এইটা আমি কি করলাম নিজেই নিজের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।
আল্লহ তুমি আমারে রক্ষা করো।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি।
হাসির শব্দে চোখ খুললাম। এইটা কি হলো।
সন্ত্রাসীটা আমার দিকে তাঁকিয়ে হাসছে।
মাশাআল্লাহ হাসি টাও অনেক সুন্দর।
না রুপা একদম এই সন্ত্রাসীটার হাসির প্রেমে পরা যাবেনা।
- আমি সন্ত্রাসী। (রবি)
- (চুপ)।
- তাহলে তুমি সন্ত্রাসীর বউ।
বলেই আবার হাসতে শুরু করলো।
কি বলল, আমি সন্ত্রাসীর বউ।
ইসস এতোটা দুর্ভাগ্য এখনো হয়নি যে, সন্ত্রাসীর বউ হতে হবে।
দেখো কিরকম নির্লজ্জ এখনো হেসেই চলেছে।
তবে আজকে তাকে আরো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। কেউ বলবেই না যে সে একজন সন্ত্রাসী।
আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল।
- এভাবে তাঁকিয়ে থেকো না নজর লেগে যাবে
আমার। ( রবি)
ইসসস্ কি লজ্জ কি লজ্জা।
তারমানে আমি এতক্ষন, তার দিকে তাঁকিয়ে ছিলাম।
সন্ত্রাসীটা নিশ্চই ভাবছে আমি তাকে দেখে তার প্রেমে পরে গিয়েছি।
ইসস উনি সুন্দর হলে। আমি কম কীসে।
আমি ও যথেষ্ট সুন্দরি, লম্বায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, গায়ের রং উজ্বল শ্যামবর্ণ।
দেখতে অনেক বেশি কিউট সব ছেলেরা আমার জন্য পাগল। হুহ। - তুমিও অনেক সুন্দরি, ভেবো না। (রবি)
এইটা কি হলো আমার মনের কথা সে জানলো
কীভাবে। জাদু জানে নাকি আবার। - আমি সুন্দরি সেইটা আমি জানি। আর আপনাকে আমি কেনো দেখবো। আপনি মোটেও দেখতে সুন্দর না। রাগি, বদমেজাজি, গম্ভির, লম্পট, সন্ত্রাসী একটা। (আমি)
- (আমার দিকে এগোচ্ছে আর বলছে) আমি লম্পট।
আমি বদমেজাজি। আমি সন্ত্রাসী। (রবি)
রুপা রে তুই অনেক বলে ফেলেছিস।
মানসম্মান বাঁচাতে চাইলে। পালিয়ে যা তারাতারি। তা না হলে যে আজ তোর কি হবে তা তুই নিজেও জানিসনা।
আর কোনো কিছু না ভেবে দিলাম একটা দৌড়।
সন্ত্রাসীটা আমাকে একটু চিৎকার করেই বলল।
- রুপা আজকে পালিয়ে গিয়ে বেঁচে গেলে।
কে শুনে কার কথা, আমি আর নেই।
বাসায় চলে আসলাম।
দুদিন আর ভার্সিটিতেই যাবোনা ঠিক করলাম।
- এই আপু আব্বু তোকে ডাকছে। (তানিম)
- কেনো। (আমি)
- জানিনা বলল তোকে একটু ডেকে দিতে। (তানিম)
আব্বু আবার কেনো ডাকছে। কিছু কি জেনে গেলো।
ধ্যাৎ আমার মাথাটা পুরো গেছে। আব্বু এইসব জানবে কীভাবে। ভাবতে ভাবতে আব্বুর রুমে গেলাম। - আব্বু তুমি আমাকে ডেকেছো। (আমি)
- হ্যাঁ তোর জন্য একটা সম্বন্ধো এসেছে। (আব্বু)
- আব্বু আবার তোমাকে না বলেছি, লেখাপড়াটা শেষ করি তারপর এইসব নিয়ে ভাবা যাবে। (আমি)
- কিন্তু ছেলেটা খুবই ভালো। ( আব্বু)
- কোনো কিন্তু না। আমি তোমাকে নিজে থেকে
জানাবো বিয়ের সময় হলে এখন প্লিজ এইসব বাদ
দাও। (আমি) - মেয়ে বলল, অমনি তুমি চুপ হয়ে গেলে। মেয়ের যে বয়স দিন দিন বারছে সে খেয়াল নেই। (আম্মু)
- মা তুমি প্লিজ আর আব্বুকে কানপোড়া দিওনা। (আমি)
- শুনেছো মেয়ের কথা। সব তোমার কারনে হয়েছে,
মেয়েকে আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো। (আম্মু)
- আহহ্ তনিমা থামো তো। রুপা মা যা তুই তোর ঘরে যা। (আব্বু)
আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে কপালে একটু আদর দিয়ে
রুমে চলে আসলাম।
আর আম্মু আব্বুর সাথে রাগারাগি শুরু করে দিলো।
দুজনের দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া সবসময়ই চলে, দেখতে ভালোই লাগে।
দুদিন হলো ভার্সিটি যাই না।
আজ যাচ্ছি, জানি না আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।
- এই রুপা জানিস সব ছেলেরা তোকে দেখলে
পালিয়ে বেড়ায় কেনো। (অথৈ) - কেনো। (আমি)
- সেদিন যেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কথা বলছিলো সেই ছেলেটা নাকি সব ছেলেদের বলেছে তোর থেকে দূরে দূরে থাকতে। (অথৈ)
- কিহহহহ্। (আমি)
- কি রোমান্টিক ব্যাপারটা তাইনা। উফফ আমার তো ভাবতেই ভালো লাগছে। আর ছেলেটা কি জোশ ইসস্ তোর জায়গায় যদি আমি থাকতাম। (অথৈ)
- আমার জায়গায় তুই থাকবি মানে। (আমি)
- কিরে হিংসা হচ্ছে। (অথৈ)
- আমার কেনো হিংসা হবে। আমি রবি কে ঘৃণা করি। আর আজকে পেয়েনি, ওর একদিন কি আমার, একদিন কি। ভেবেছেটা কি ভয় পাই বলে যা খুশি তা করবে। (আমি)
বলেই ক্যাম্পাসে খুঁজতে লাগলাম।
আর অথৈ আমার পিছু পিছু ছুটছে আর থামতে বলছে।
ওইতো রবির গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর ওর চ্যালারা ওর সাথেই আছে।
আশেপাশে তাঁকাতেই দেখলাম ওর দিকে সব মেয়েরা তাঁকিয়ে আছে।
ইসস্ জীবনে মনে হয় এতো সুন্দর ছেলে দেখে নাই। চোখ দিয়েই ওরে গিলে খাবে।
রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
- আপনি কি শুরু করেছেন টা কি, আপনাকে ভয় পাই বলে যা খুশি তা করবেন। সব সহ্যের একটা সীমা থাকা উচিত। আপনি আমার মানসম্মান নিয়ে এভাবে খেলতে পারেন না। আপনার মতো সন্ত্রাসীকে আমি, ভালোবাসব আপনাকে কে বলল। তাই বলছি আমার থেকে দূরে থাকুন। (আমি)
- তোমাকে ভালোবাসতে তো বলিনি। আর আমি যা করেছি ঠিক করেছি। তোমার আশেপাশে কোনো ছেলেকে যেনো আমি না দেখি। মনে থাকে যেনো কথাটা। (রবি)
- (রেগে গিয়ে)আমার চারপাশে হাজারটা ছেলে থাকবে। সব ছেলের সাথে আমি প্রেম করব। আপনি কি করবেন কি। (আমি)
কথা শেষ না হতেই। এইটা কি করলো।
আমি এখন ভার্সিটিতে মুখ দেখাবো কীভাবে।
পর্ব ৪
এইটা কি করলো।
আমি এখন ভার্সিটিতে মুখ দেখাবো কীভাবে।
আমি বুঝতেই পারিনি যে সে, এইভাবে সবার সামনে আমার গালে কিস করবে।
সবাই আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে হা করে।
কোনো মানুষ কি সবার সামনে এইটা করতে পারে।
অবশ্য উনি পারবেন না কেনো উনি তো একজন সন্ত্রাসী।
আমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এখনো ঘটে যাওয়া ঘটনা টা বিশ্বাস করতে পারছিনা।
- আমি কি করতে পারি তা নিশ্চই এখন বুঝে গিয়েছো। আর এরপরে তোমার সাথে কোনো ছেলে কি রিলেশন করতে রাজি হবে বলে, তোমার মনে হয়। আর তারপরও যদি কোনো ছেলে তোমার সাথে রিলেশন করতে আসেও। তাহলে তো আমি আছিই তার হাত পা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। (রবি)
রবির কথা শুনে সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো।
এতক্ষন যারা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখছিলো আর মজা নিচ্ছিলো।
তারা সবাই চলে গেলো।
অনেক সহ্য করেছি আর না।
আজকে আমি এর শেষ দেখেই ছারবো।
আজকে আমার মানসম্মান সব ধুঁলোয় মিশিয়ে দিয়েছে এই লম্পট টা।
মনে হচ্ছে নিজেই নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেই।
গালে হাত ঘসতে ঘসতে বললাম।
- আমি এখন পুলিশের কাছে যাবো। সারাজীবন যেনো, জেলেই থাকতে হয় সেই ব্যাবস্থা করবো আপনার। ( আমি)
- তাই বুঝি। ঠিক আছে চলো আমিই তোমাকে থানায় নিয়ে যাই। (রবি)
বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে নিলো।
আমি ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।
পারবো কীভাবে এই সন্ত্রাসীটার সাথে একে তো পুরুষ মানুষ।
তারপর আবার নিয়মিত জিম করে গায়ে অনেক বেশিই শক্তি।
বাধ্য হয়ে সন্ত্রাসীটার সাথে বসেই যাচ্ছি।
আমার দিকে তাঁকিয়ে হাসছে মিটি মিটি।
উফফ রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
গাড়িতে বসে রাগে ফুঁসতে লাগলাম।
রাগলে আমার গাল নাক লাল হয়ে যায়।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
- ভাই আমরা এসে গেছি। (জনি)
- নামো থানায় চলে এসেছি। (রবি)
গাড়ি থেকে যখনি নামবো, তখনি রবি আমার হাত ধরলো। ফিরে তাঁকাতেই। - পুলিশের কাছে যেহেতু নালিশ করবাই। তাহলে আরেকটু অপরাধ করি কি বলো। (দুষ্টু হাসি দিয়ে) বলেই।
ওদের দিকে তাঁকাতেই, জনি ড্রাইভার কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
আর রবি আস্তে আস্তে আমার কাছে আসছে।
আমি গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা।
গাড়ির দড়জা লক করে রেখেছে।
আমি পিছু সরতে সরতে একদম গাড়ির সাথে মিশে গেলাম।
আর রবি একদম আমার কাছে চলে এসেছে।
হঠাৎ রবি ওর এক হাত আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে।
ওর কাছে টেনে নিয়ে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
প্রথম কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করলো।
আমি চোখ বন্ধ করে শক্ত করে ওর পিঠ আঁকড়ে ধরলাম।
আমার ঠোট ছাড়ার নামই নিচ্ছেনা।
এদিকে আমার অবস্থা খারাপ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এইভাবে অনেক্ষন কিস করার পর আমাকে ছেরে দিলো।
দুজনেই হাঁপাচ্ছি আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।
রবি ওর ঠোট মুছতে মুছতে হেসে বলল।
- রাগলে তোমাকে এতো সুন্দর লাগে তাই আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। অপরাধ তো করেছিই তাই ভাবলাম আরেকটু বেশি অপরাধ করি। ক্ষতি কি তাতে। (রবি)
গাড়ির লক খুলে দিলো।
আমি ঠোট মুছতে মুছতে নেমে ডিরেক্ট থানার ভিতরে চলে গেলাম।
ভিতরে গিয়ে দেখি ইন্সপেক্টর সাহেব ফোনে কথা বলছে।
আমি টেবিলে হাত রেখে বলতে শুরু করলাম।
- আমি মানহানির মামলা করতে চাই। (আমি)
- জ্বি ম্যাডাম বলুন। আপনি আগে বসুন। (পুলিশ)
- (বসতে বসতে)একটা গুন্ডা, সন্ত্রাসী, লম্পট আমাকে।
পিছন থেকে এসে রবি বলল। - হ্যাঁ হ্যাঁ সন্ত্রাসী তোমাকে কি করেছে বলো বলো সবটা খুলে বলো। না হলে পুলিশ সাহেব বুঝবে কীভাবে। (রবি)
আমি রেগে গিয়ে রবির কলার চেপে ধরলাম। - আপনাকে। আপনাকে। আপনাকে। আমিইইইই। (আমি)
- আমাকে তুমি কি। (লুচু মার্কা হাসি দিয়ে)। (রবি)
- খুন করে ফেলবো। (আমি)
- (পুলিশকে উদ্দেশ্য করে) দেখেছেন তো পুলিশ
সাহেব। কে কাকে মারার হুমকি দিচ্ছে। আর কে কার মানহানি করছে। (রবি)
পুলিশ আমাদের দিকে হা হয়ে দেখছে।
আমি কিছুটা শান্ত হয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে পুলিশকে বললাম। - আমি আপনাকে যার কথা বলছিলাম এই সেই সে আমাকে ভার্সিটিতে। (আমি)
- হুমমম তারপর বলো। (রবি)
- আরে রবি তুই এখানে। (অন্য পুলিশ)
- হুমম তোর ভাবির কারনে আসতে হলো। (আমার দিকে তাঁকিয়ে হেসে হেসে)। (রবি)
- ভাবি! ওহ আচ্ছা গতকাল ফোনে যার কথা বলছিলি। তাহলে এই সেই ভাবি যে এতোদিনে রবি সাহেবের শপথ ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছে। (পুলিশ)
আমি তো ওদের কথা শুনে পুরা হা।
কি ব্যাপার এইটা কি হইলো।
আমি হাসবো না কাঁদবো সেইটাই বুঝতে পারলাম না।
একবার রবির দিকে তাঁকাচ্ছি, একবার পুলিশের দিকে।
- ভাবি কিছু মনে করবেন না। আমি আপনাকে প্রথমে চিনতে পারিনি। আমি রায়হান ভাবি। রবির বন্ধু। আপনি আমাকে রায়হান বলেই ডাকতে পারেন। আরে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। বস। ভাবি বলেন কি খাবেন, ঠান্ডা না গরম। (পুলিশ)
- (আমার দিকে তাঁকিয়ে সেই লুচু মার্কা হাসি দিয়ে) আরে রায়হান কি বলিস। এমনিতেই তোর ভাবি যেই গরম হয়ে আছে। তাতেই আমি জ্বলে পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছি। তুই বরং তোর ভাবিকে ঠান্ডা খাওয়া তাতে যদি মাথাটা একটু ঠান্ডা হয়। (রবি)
- ভাবি।কীসের ভাবি। আমি কারো ভাবি নই।
আর আপনি পুলিশ হয়ে আমার অভিযোগ না শুনে এই সন্ত্রাসীটার সাথে হাত মিলিয়েছেন। কত টাকা ঘুষ দিয়েছে আপনাকে। (আমি) - কিরে রবি ভাবি এইসব কি বলছে। সন্ত্রাসী।
কে সন্ত্রাসী। তোকে ভাবি। (রায়হান) - (ইশারায় থামিয়ে দিয়ে) আরে তোর ভাবির মাথা ঠিক নেই। তাই আবল তাবল বকছে। (রবি)
- কিহহ্ আমার মাথা ঠিক নেই। আমি অসুস্থ। (আমি)
- অসুস্থ নয়তো কি। এতো ভালোবাসি তোমাকে তাও
বুঝতে পারছো না। (রবি) - আপনি অসুস্থ। আপনার ভালোবাসা অসুস্থ।আর ইন্সপেক্টর রায়হান সাহেব আপনাকে আর আপনার বন্ধুকে আমি দেখে নিবো। (আমি)
চলে আসলাম ওখান থেকে।
লম্পট টা সবাইকে হাত করে রেখেছে।
শেষে কিনা পুলিশও ওর পক্ষ নিলো।
বাসায় আসতেই বড় আম্মু বলল। কি হয়েছে।
আম্মু তানিম কে খাওয়াচ্ছিলো।
আমাকে দেখে জিঙ্গাসা ভরা দৃষ্টিতে তাঁকালো।
আমি বড় আম্মুকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
বড় আম্মুও আমার সাথে সাথে কেঁদে দিলো।
দুজনেই গলা মিলিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম।
তাওহীদ ভাইয়া পিছন থেকে এসে।
- কি হইলো আম্মু তুমি কাঁদো কেন। (কেঁদেই চলেছে বড় আম্মু)
আমি কান্না থামিয়ে বললাম। - তুমি কাঁদো কেন। (আমি)
- তাহলে তুই কান্না করছিলি কেন। (বড় আম্মু)
আমি সবার দিকে তাঁকালাম একবার করে।
তারপর সবাই একসাথে শব্দ করে হেসে উঠলাম।
এই হচ্ছে এক পাগল। আমার কিছু হলে কি যে করবে আল্লাহ জানে।
- কিরে তুই ভার্সিটি থেকে এসে এভাবে কাঁদছিলি
কেনো। (ভাইয়া)
ইসস বড় আম্মুকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারিনি।
তাই কেঁদেই দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন কি বলব। - কিরে আপু তুই কান্না করলি কেন। (তানিম)
- ওই আসার সময় একটু হলে একটা এক্সিডেন্ট হতো তাই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ( আমি)
- কি। তুই ঠিক আছিস তো। কোথাও লাগেনি তো। (বড় আম্মু)
- বার বার বলি রুপা একটু সাবধানে চলাফেরা কর। কে শুনে কার কথা। ভালোতো কিছু হয় নাই। (আম্মু)
- আমি তোকে বার বার বলি। তোর ছুটি হলে আমাকে কল দিবি। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। তখন না বলিস, একাই পারবি। (ভাইয়া)
- আপু তুই না। তোর কিছু হলে আমাদের কি হতো। বলেই তৃন্নি জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তানিম ও এসে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
- আরে পাগল কান্না থামা তোরা। আমার তো কিছু হয়নি দেখ একদম ঠিক আছি। (একটু হেসে আমি)
- এখন থেকে তুই তাওহীদের সাথে যাবি। যেখানে যাওয়ার। (বড় আম্মু)
- উফফ্ বড় আম্মু থামবে তোমরা। আমি ঠিক আছি আর এরকম একটু হয় সবারই। এখন আমাকে খেতে দাও তো, প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। (আমি)
- আম্মু নেও এইবার তোমার আহ্লাদের ঢঙ্গিকে খাওয়াও। (ভাইয়া)
আমার মাথায় হালকা করে একটা থাপ্পর দিয়ে রুমে চলে গেলো ভাইয়া।
যে যার কাজে মন দিলো।
আর বড় আম্মু আমাকে খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।
খেয়ে রুমে আসলাম।
ইসসস্ সন্ত্রাসীটার জন্য সবাইকে মিথ্যে বলে কাঁদালাম।
হে আল্লাহ তুমি আমারে মাফ করো।
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই মনে পড়ে যাচ্ছে।
ওর করা কিসের কথা।
আমাকে অপবিত্র করে দিলো সন্ত্রাসীটা।
এইরকম ভালোবাসাকে অসুস্থ_ভালোবাসা বলে।
এতো শুদর্ষন ছেলেকে সবাই ভালোবাসবে।
কিন্তু সে একজন সন্ত্রাসী।
আর আমি কিছুতেই কোনো সন্ত্রাসীকে ভালোবাসতে পারবোনা। যাই হোক না কেনো।
সব মেয়েরা তার জন্য পাগল হতে পারে।
কিন্তু রুপা কোনো সন্ত্রাসীর জন্য পাগল নয়।
সে কি ভেবেছে, এইভাবে আমাকে তার করে নিবে। না কিছুতেই না।
আমি কোনো দিনও তার হবোনা।
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাঁকালাম।
- আব্বু তুমি। (আমি)
- কিরে মা, কি ভাবছিস। (আব্বু)
- কিছু না আব্বু। (আমি)
- মা রে তুই এখন বড় হয়েছিস। কিন্তু আমার কাছে সেই ছোট্ট রুপাই রয়ে গেছিস। তোকে কিছুদিন ধরে দেখছি, মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। মা যাই হোক না কেনো রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় একটু সাবধানে চলবি। জানিস তো তোর বাবা তোকে কতো ভালোবাসে। (আব্বু)
- (আব্বুকে জরিয়ে ধরে) আব্বু তুমিও না। কি হবে। কিছুই হয়নি চিন্তা করো না তো। এখন একটু হাসো। (আমি)
আব্বু আমার দিকে তাঁকিয়েই হেসে দিলো। তারপর কপালে চুমো দিয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেলো।
আমি ও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে গেলাম।
আজ তিন দিন হলো ভার্সিটিতে যাইনা।
সেদিনের পর, আর ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করেনি।
বাসায় বলেছি শরীরটা তেমন ভালো লাগছেনা।
অবশ্য এই মিথ্যা বলার শাস্তিও, পেয়েছি।
আমার শরীর খারাপ শুনে, বড় আম্মু এক্সট্রা টেক কেয়ার করে।
বেশি বেশি খাইয়ে সত্যি সত্যি অসুস্থ করে দিচ্ছে।
তাই ভাবছি কাল ভার্সিটিতে যাবো।
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো।
মোবাইল হাতে নিয়ে ভাবছি, রিসিভ করব। কি করবনা। আর ভাবতে ভাবতেই কেঁটে গেলো।
আবার কল আসলো। হয়তো জরুরি।
দরকার বোধয়।
তাই এবার রিসিভ করলাম।
পর্ব ৫
হয়তো জরুরি দরকার বোধয়।
তাই এবার রিসিভ করলাম।
- হ্যালো। (আমি)
- রুপা তুমি যা করছো ঠিক করছো না। তুমি জানো না, তোমাকে না দেখলে। আমার মনের ভিতর অস্থির করে উঠে। নিজেকে নিস্ব্য মনে হয়। তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো। আমার অপরাধটা কি। (রবি)
কথা বলতে বলতে গলাটা ধরে আসছিলো রবির।
মনে হচ্ছিলো এখনি বোধয় কেঁদে দিবে।
রুপা বেশ বুঝতে পারছিলো।
কিছুটা সময় রুপা চুপ থেকে বলল। - আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না। আমি আপনাকে পছন্দ করিনা। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন। (রুপা)
- আমাকে তোমার পছন্দ না। তুমি জানো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল। সবাই রবিকে নিজের করে পেতে চায়। আর তুমি বলছো তোমার আমাকে পছন্দ না। (রবি)
রুপা রেগে, মনে মনেই বলতে লাগলো।
ইসসস্ জানি তো, রবি বলতে সব মেয়েরা ফিদা।
তাতে যে আপনার বেশ অহংকার বুঝি বুঝি।
কিন্তু সবাই পাগল হলেও রুপা কোনো সন্ত্রাসীর জন্য পাগল না। হুহ।
- হ্যাঁ তাহলে যান না ওই মেয়েদেরকেই বিয়ে করুন।
ধরে রেখেছে কে আপনাকে। আমি কোনো সন্ত্রাসীকে পছন্দ করিনা। আমি আপনাকে ঘৃণা করি জাস্ট ঘৃণা করি। আর আপনি আমার সাথে যেই,
অসভ্যতামি করেছেন। তার জন্য মনে হয়েছিলো
আপনি আমাকে যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছেন।
সেখানে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেই। আপনার স্পর্শও আমার সহ্য হয়না, ঘৃণা করি। জাস্ট ঘৃণা করি বুঝতে পেরেছেন। আর কখনো আপনি আমার সামনে আসবেন না। (রুপা)
- (শীতল কন্ঠে) রুপা তুমি এইসব বলার জন্য তৈরি থেকো। তুমি জানো না তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে। (রবি)
কথাটা বলেই ফোন টা রেখে দিলো।
খুব শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললেও।
খুব ভয়ঙ্কর শুনা গেলো।
কথা গুলো রুপা বসে বসে ভাবতে লাগলো।
আল্লাহ জানে সত্যি তার জন্য কাল কি অপেক্ষা করছে।
ইসসস্ কি করবে টা কি সন্ত্রাসীটা।
আমি কি তাকে ভয় পাই।
নাকি কিছুই করতে পারবেনা আমার।
পরক্ষনেই আবার রবির বলা।
শেষ কথা গুলো রুপার কানে বাজতে থাকে।
সকালে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়েছে রুপা।
কিন্তু, কোনো গাড়ি পাচ্ছেনা।
তাই রাস্তার পাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
আর তখনি একটা গাড়ি এসে থামলো রুপার সামনে। রুপা কিছু বুঝে উঠার আগেই।
কেউ একজন রুপার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে
গাড়িতে তুলে নিলো।
গাড়িতে উঠেই রুপা, রবিকে পাশে দেখতে পেয়ে। চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
- আপনি। (রুপা)
- ( চুপ)।
- আপনি এইভাবে আমাকে গাড়িতে তুলে নিলেন
কেনো। (রুপা) - (চুপ)।
- কি হলো কথা বলছেন না কেনো। (রুপা)
হঠাৎ রুপার, রবির চোখে চোখ পরতেই প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।
রবির চোখ রক্ত বর্ণ ধারন করে আছে।
মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে অগ্নিবর্ষন হচ্ছে।
রবি কোনো কথা বলছে না।
শুধু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রুপার দিকে।
রুপার গলা শুকিয়ে আসছে।
গলা দিয়ে, যেনো কোনো কথাই বের হতে চাচ্ছেনা।
তাও খুব কষ্টে ভয়ে ভয়ে জিঙ্গাসা করে।
- আ। আ। আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
প্লিজ আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
রুপা, রবির দিকে তাঁকালো।
রবি গাড়ি থেকে নেমে। রুপা কে হাত ধরে নামালো।
রুপা আশেপাশে তাঁকালো, সামনে উপরের দিকে। তাঁকাতেই সাইনবোর্ডে লেখা দেখতে পেলো পার্লার।
রুপা বিষ্ময় নিয়ে রবির দিকে তাঁকালো।
রবি কোনো কথা বলল না।
দুজন মহিলা এসে রুপা কে নিয়ে গেলো।
রুপা শুধু অবাক হচ্ছে।
আসলেও বুঝার চেষ্টা করছে, কি হচ্ছে ওর সাথে এইসব।
মহিলা দুটো রুপা কে পার্লারের ভিতরে নিয়ে গিয়ে সাজাতে শুরু করে দিলো।
কিন্তু…
তেমনভাবে সাজালো না। হাল্কা মেকাপ করলো।
চোখে গাড় করে টানা কাজল দিয়ে দিলো।
ঠোটে লাল লিপস্টিক দিয়ে দিলো। কপালে লাল টিপ। চুল গুলো খোপা করে বাম পাশে দুটো লাল
গোলাপ গুজে দিলো কানের পাশ দিয়ে। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরালো। দের ইঞ্চি উঁচু একটা হিল পরালো। কানে সোনার এক জোরা ঝুমকো পরিয়ে দিলো। নাকে ডায়মন্ডের একটা নোস পিন পরালো। হাতে দুটো বালা পরিয়ে দিলো। দেখে মনে হলো খুব পুরানো কিন্তু এখনো এখনো চকচকে করছে খুব সুন্দর। সব শেষে গলায় একটা হাল্কা গহনা পরিয়ে দিলো।
রুপার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলো না।
রুপা যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছে।
হঠাৎ একটা মহিলা বলল,
- স্যারের হুকুম ছিলো আপনাকে এইভাবে যেনো সাজাই। স্যারের বেশি সাজ পছন্দ না। কিন্তু আপনাকে যে এই হাল্কা সাজেও এতো ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগবে। তা আমার জানা ছিলো না। সত্যি আপনি অতুলনিয় সুন্দরি। স্যার যেমন সুন্দর তার পাশে আপনার মতো কাউকেই মানায়। (প্রথম মহিলা)
- হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, ম্যাডাম সত্যি অনেক সুন্দরি।
তাই তো আমাদের স্যারের ম্যাডামকে এতো পছন্দ।
এই রে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে, স্যার বলেছিলো সময় কম নিতে। (দ্বিতীয় মহিলা)
তারপর দুজনে রুপা কে নিচে নিয়ে এলো।
রুপা যেনো নিজের মাঝেই ছিলো না।
সব বাধ্য মেয়ের মতো করে যাচ্ছে।
রবি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
রুপা কে দেখেই অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলো।
- স্যার পারফেক্ট জুটি, খুব ভালো মানাইছে আপনাদের। (প্রথম মহিলা)
তার কথায় রবির হুশ ফিরলো। রুপা হাত ধরেই আবার গাড়িতে তুলে নিলো।
গাড়ি চলছে, রুপা এখনো ভাবছে। কি হচ্ছে এইসব।
গাড়ি আবার থামলো রবি, রুপা কে নিয়ে নেমে আসলো।
ভিতরে ঢুকে গেলো রুপা হাত ধরে।
একটা রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো।
রুপা আবারও অবাক।
একটা টেবিলের সামনে একটা বৃদ্ধ লোক বসা।
সেই ইন্সপেক্টর রায়হান রবির বন্ধু সেও আছে।
এখানে আরো অবাক করা বিষয়। শায়লা, অথৈ ও রয়েছে।
রুপা কে নিয়ে রবি দুটো চেয়ার টান দিয়ে বসে রইলো।
ওদের পিছনে জনিও এসে দাঁড়ালো।
এইবার রুপার যেনো হুশ হলো যে। এখানে হচ্ছেটা কি।
- শায়লা, অথৈ তোরা এখানে। আর আমি এখানে কেনো। কি হচ্ছে এইসব। (রুপা)
রবি, রুপার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল। - তোমার আর আমার বিয়ে হচ্ছে। (মৃদু হেসে)
রুপা কথাটা শুনে যেনো অনেক বড় ধাক্কা খেলো।
নিজের কানকেই বিশ্বাস করাতে পাচ্ছেনা।
রুপা দাঁড়িয়ে গেলো। - অসম্ভব! আমি কোনো বিয়ে করব না। আমি কোনো সন্ত্রাসীকে বিয়ে করবনা। এইটা কিছুতেই
হতে পারেনা। (রুপা)
রুপার মুখে সন্ত্রাসী কথাটা শুনে।
সবাই যেনো অনেক অবাক হলো।
রবি সবাইকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বলে।
আর রুপার হাত ধরে জোর করে আবারো বসিয়ে দেয়। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
- রুপা বিয়েটা তোমাকে করতেই হবে। তাই যা
বলছি তা চুপচাপ মেনে নাও। তাতে তোমারই ভালো। (রবি) - আমি আমার জীবন থাকতে আপনাকে কোনো
দিনো বিয়ে করব না। (রুপা) - তোমার ছোট ভাই তানিম রোজ স্কুলে যায় একা একা। (বলেই একটা হাসি দিয়ে রুপার দিকে তাঁকায়)। (রবি)
- আপনি কি বলতে চাইছেন টা কি। (রুপা)
- তুমিই ভেবে দেখো। তুমি কোনো ক্ষতি চাও কিনা তোমার ছোট ভাইয়ের। (রবি)
- ছি ছি ছি। আপনি এতটা জঘন্য। আপনি শেষ পর্যন্ত এতটা নিচে নামলেন। (রুপা)
- এখনো কিছুই করিনি, তবে সামনে দেখবে কি হয়।
এখন চুপ থেকে কবুল বলে সাইনটা করে দেও। (রবি)
রুপা আর কিছুই বলল না। শুধু কেঁদে গেলো।
রায়হান, জনি, শায়লা, অথৈ বিয়েতে সাক্ষি হয়ে থাকলো।
তিনবার কবুল বলে বিয়েটা হয়ে গেলো।
বিয়ে শেষে সবাই মিষ্টি মুখ করলো।
রবি একটা মিষ্টি নিয়ে নিজে কিছুটা খেয়ে রুপা মুখের সামনে ধরে।
রুপা মুখ সরিয়ে নেয়। রবি, রুপার দুই গাল চেপে ধরে। জোর করে রবির এটো মিষ্টিটা খাইয়ে দেয়। আর রুপার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
- ঘৃণা করো আমায় তাই না। এখন আমার এটো ও তোমাকে খাইয়ে দিলাম। (লুচু মার্কা হাসি দিয়ে) (রবি)
সবাইকে রবি চলে যেতে বলে।
জনিকেও বলে চলে যেতে। রবি, রুপাকে, গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে। নিজে ড্রাইভ করে।
রুপা, রবির দিকে তাঁকায় দেখে।
রবির মুখে এখন আর হাসি নেই।
চোখ সেই ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে।
খুব ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে রবি কে?
রবি সামনের দিকে তাঁকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
রুপা কে একবারও দেখছেনা।
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
সেই বাড়িটার সামনে।
পর্ব ৬
হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো।
সেই বাড়িটার সামনে।
রবি, রুপাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে।
হাত ধরে টানতে টানতে একটা রুমের ভিতর নিয়ে। ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে দড়জা লক করে দেয়।
তারপর রুপার দিকে তাঁকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।
রুপা নিজেকে সামলিয়ে বিছানায় উঠে বসে।
দেখে, রবির চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে।
কি ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে রবির চোখ।
রুপা ভয়ে শিউরে উঠে।
রুপা, রবির এই দৃষ্টিকে খুব ভয় পায়।
রুপা ভালো ভাবে বুঝতে পারছে।
আজ ওই আগুনে রুপাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে শেষ করে দিবে রবি।
রুপা ভয়ে ভয়ে রবি কে জিঙ্গাসা করলো।
- আ। আ। আ। প। প। নিইইই আমার সাথে ক। ক। কি কি করতে চাইছেন। (রুপা)
রবি কিছু না বলে রুপার কাছে এগিয়ে আসছে। - আ। আ। পনি কি করছেন টা কি। আপনি একদম আমার কাছে আসবেন না। (রুপা)
রবি, রুপার খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
এইবার রুপা খুব ভয় পেয়ে গেলো, প্রায় কেঁদে কেঁদেই বলল।
- প্লিজ আ। আপনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না। আমাকে প্লিজ স্পর্শ করবেন না। (রুপা)
রবি, রুপার এক হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে। বিছানা থেকে টেনে তুলে হাত উল্টো দিকে শক্ত করে চেপে ধরে। চিৎকার করে বলল। - কেনো আমার স্পর্শ পেলে তোমার ঘৃণা লাগে। (রবি)
- আউচ। উফফ ব্যাঁথা লাগছে। (রুপা)
- আমার ভালোবাসাকে তোমার অসভ্যতামি মনে হয়। (রবি)
- প্লিজ ছারুন, আমার হাতে লাগছে। (কেঁদে দিয়ে) (রুপা)
- লাগুক। (জোরে চিৎকার করে)। (রবি)
রুপা প্রচন্ড ভয়ে দু চোখ বন্ধ করে ফেলে। - তারপর আর কি যেনো বলেছিলে। আমি যেনো আর তোমার সামনে না আসি। নেও এইবার তোমাকে আমি বিয়ে করে নিলাম সারাজীবনের জন্য। এখন থেকে তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে পালাতে পারবেনা। (রবি)
রেগে দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলে, রুপার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে রবি।
- আহহ্।
রুপা ব্যাঁথায় শব্দ করে উঠতেই রবি, রুপাকে পিছনে ঘুরিয়ে।
রুপার পেটে এক হাত রেখে শক্ত করে জরিয়ে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। - আমার স্পর্শ অনেক ঘৃণা লাগে তাইনা। আজ থেকে তোমার শরীরের সব জায়গায় আমার স্পর্শ লেগে থাকবে। আমার ভালোবাসাকে তোমার অসুস্থ ভালোবাসা মনে হয়েছিল তাইনা। আজ থেকে দেখবে অসুস্থ ভালোবাসা কাকে বলে। (রবি)
- প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না। আমাকে প্লিজ ছেরে দিন। (রুপা)
- কেনো আমি তোমাকে জরিয়ে ধরে আছি। এতে
তোমার ভালো লাগছে না। ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি। আমি তোমাকে, জরিয়ে ধরেছি বলে তোমার ঘৃণা লাগছে তাই তো। (রবি) - প্লিজ আমি আপনার পায়ে পরছি। আমাকে ছেরে দিন। আমি এই বিয়ে মানি না। আপনি প্লিজ আমার সম্মান নষ্ট করবেন না। (রুপা)
রবি, রুপার মুখে বিয়ে মানি না।
কথা শুনে প্রচন্ড রেগে গিয়ে রুপার শাড়ির আচঁল ধরে টান দিয়ে খুলে ফেলে।
রুপা সাথে সাথে তার দুহাত দিয়ে লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করে। আর বলে। - আ। আ। প। নি এইটা করতে পারেন না। (রুপা)
রবি, রুপার চারপাশে ঘুরছে।
আর একটু একটু করে শাড়ি টান দিয়ে খুলছে।
রুপা কান্না করে দেয়। - প্লিজ এমন করবেন না। আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার কেনো করছেন। (রুপা)
রবি আরো জোরে টান দিয়ে।
পুরো শাড়ি খুলে ফেলে।
রুপা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়।
রবি, রুপার মুখের দিকে তাঁকিয়ে পরোক্ষনেই চোখ সরিয়ে নেয়।
রুপা বাসা থেকে যেই পোশাকটা পরে বেড়িয়ে ছিলো।
সেই পোশাকটা রুপার দিকে ছুরে মেরে।
আর বলে।
- এইটা তারাতারি পরে নেও। (রবি)
রবি আর এক মূহুর্ত ওখানে দাঁড়ালো না।
রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
রুপার দিকে তাঁকালেই অজানা এক নেশা রবিকে ঘায়েল করে দিচ্ছিলো।
রবি জানে আর একটু দেরি করলেই।
নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারত না।
রবি তাই আর রিস্ক না নিয়ে চলে আসলো।
রুপা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাঁকালো।
দেখলো রবি নেই, চলে গিয়েছে।
রুপা তারাতারি করে দড়জা লক করে।
কাপড় চেঞ্জ করে সব গহনা খুলে ফেলল।
নাকের নোসপিন টা খুলার সময়।
অজানা মায়া আকরে ধরছিলো যেনো রুপাকে।
রুপা ওয়াশরুমে গিয়ে।
চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো।
এখন অনেকটা ফ্রেশ লাগছে।
ব্যাগটা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে নিচে নেমে এলো রুপা।
নিচে নেমে দেখলো রবি দুপকেটে হাত দিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে।
রুপা পিছনে এসে দাঁড়াতেই।
রবি ফিরে তাঁকালো মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে। বলল।
- চলো। (রবি)
- কোথায়। (ভ্রঁ কুঁচকে)। (রুপা)
- ইসসস্ আমার বউটা। আমাকে রেখে কোথাও যেতেই চাইছেনা। কতো ভালোবাসে আমাকে। (রবি)
- মোটেও তাই নয়। আমি তো। (থামিয়ে দিলো)।
- এখন তুমি চাইলেও। তোমাকে আমি আমার কাছে রাখব না। চলো বাসায় দিয়ে আসি তোমাকে।
বিয়ের পর শশুর বাড়ি না থেকে। বাবার বাড়িতে থাকবে এইটাই তোমার শাস্তি। (রবি)
রুপা কথাগুলো শুনে যেনো নিজের জীবন ফিরে পেলো।
আর মনে মনে বলল, শাস্তি না ছাই।
আমার ভেবেই খুশি লাগছে যে, আমি আপনার হাত থেকে রেহাই পেলাম।
আপনার মতো সন্ত্রাসীর সাথে আমাকে থাকতে হবেনা।
রবি কথাগুলো বলে।
মনে মনে ভাবছে, জানি তুমি খুশি হয়েছো। তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবেনা শুনে।
এতক্ষন পর তোমার মুখে একটু হাসি ফুটে উঠেছে।
তোমাকে আমি জোর করে এখানে থাকতে বাধ্য করতাম।
কিন্তু তাতে তুমি বার বার পালানোর চেষ্টা করতে।
তাই তো তোমাকে অন্যরকম ভাবে শাস্তি দিব ঠিক করেছি।
তুমি জানো না ফোনে ওই কথা গুলো বলে, তুমি আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছো।
তার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
অসুস্থ ভালোবাসা কাকে বলে, তা তুমি দেখবে।
রবি আর কথা বাড়ালো না। গাড়িতে গিয়ে বসলো।
রুপাও রবির পিছু পিছু গিয়ে গাড়িতে বসলো।
কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।
রবি ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর রুপার দিকে তাঁকিয়ে দেখছে।
মেয়েটা কেঁদে চোখ নাক মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে। খুব কষ্ট দিয়েছে আজ।
হঠাৎ রবির, রুপার হাতের দিকে চোখ গেলো।
রাগে রুপার হাতটা এতটা শক্ত করেই চেপে ধরেছিলো যে লাল হয়ে কিছুটা ফুলে গিয়েছে।
রবির এখন মন চাইছে ওখানে একটু আদর করে দিতে।
কিন্তু সেইটাও সে করতে পারবে না।
রুপাকে তার দুর্বলতা বুঝতে দিতে চায়না রবি।
রবি হঠাৎ খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে।
রুপা চমকে গিয়ে রবির দিকে তাঁকায়।
- এইটার জন্য তুমিই দায়িইইই। (রবি )
রুপা অবাক হয়ে রবির দিকে তাঁকায়।
কি বলছে এইসব কিছুই রুপা বুঝতে পারছে না।
রবি, রুপার দিকে একবার তাঁকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে থাকে।
রুপা বাইরের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। - চলে এসেছি নামো। (রবি)
রুপা গাড়ি থেকে নেমে।
চুপ করে চলে যেতে থাকে।
আর তখনি রবি, রুপার হাত ধরে।
- ভেবো না সুইসাইড করবে। তাহলে আমার থেকে
বেঁচে যাবে। তুমি তোমার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও। আমি তোমার ফ্যামিলির ক্ষতি করে দিব। তুমি খুব ভালো করেই জানো সন্ত্রাসীরা কি করতে পারে। (রবি)
কথাগুলো বলে রুপার দুই গাল ধরে।
কপালে আলতো করে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে দেয় রবি।
রুপা রাগে, রবিকে দেখিয়ে দেখিয়েই।
কপালে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
রবি, রুপার চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
আর আনমনেই বলতে থাকে।
- ভাঙ্গবে তবু মোঁচকাবে না। এতো জেদ তোমার। সবসময় কীভাবে আমাকে রাগিয়ে দিতে পারো। তা নিয়ে ব্যাস্ত থাকো। এতো ভালোবাসি সেইটা বুঝার চেষ্টাই করো না। তুমিও জানো না এইভাবে তুমি নিজেই নিজের ক্ষতি করে যাচ্ছো।
এইভাবেই ছয় মাস আগে।
আমার জীবনে রবি নামের সন্ত্রাসীটা এসেছিলো।
ঝড় হয়ে এসেছিলো আমার জীবনে।
যেই বিয়ে নিয়ে আমার হাজারটা স্বপ্ন ছিলো।
সেই বিয়েকে আমার জীবনে অভিশাপ করে দিয়েছে।
বিয়ের রাতটাকে ঘিরে কতো সপ্ন থাকে মেয়েদের।
আর আমি বিয়ের রাত বাবার বাসায় বসে।
একা একা চোখের পানি ফেলছি, কি ভাগ্য আমার।
ফ্যামিলির কেউ জানতেও পারলো না যে। তাদের রুপার বিয়ে হয়ে গেছে।
রুপা চোখের পানি মুছে নিলো।
অনেক হয়েছে, সে আর এইগুলো মেনে নিবে না।
সেও দেখতে চায় রবি আর কি কি করতে পারে।
আর এই বিয়েটা তো রুপা মানেই না।
এভাবে বসে ভাবতে ভাবতেই।
কখন যে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে।
রুপা খেয়ালই করেনি।
রুপা বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।
বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো।
জানে না আজ কি অপেক্ষা করছে তার জীবনে।
কিন্তু এইভাবে হেরে গেলে চলবে না।
রুপা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকলো।
পর্ব ৭
রুপা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকলো।
রুপা ক্যাম্পাসের এক কোণায় গাছের নিচে বসে আছে।
মন খারাপ থাকলে রুপার এই খানটায় বসে থাকতে ভালো লাগে।
শায়লা আর অথৈ পাশে এসে বসেছে। কিন্তু সেদিকে রুপার কোনো খেয়াল নেই।
শায়লা রুপা কে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল,
- এই রুপা। (শায়লা)
- কি। (রুপা)
- কিরে দোস্ত ক্লাসেও দেখলাম তোকে চুপচাপ
বসে থাকতে। কোনো কথা বললি না। আর ক্লাস শেষ করে এখানে চলে আসলি। কি হইছে। (শায়লা) - আমি জানি ওর কি হইছে। (অথৈ)
- কি জানিস তুই। (রুপা)
- হ্যাঁ বল কি জানিস তুই। (শায়লা)
অথৈ একটু হেসে বলল। - আরে শায়লা তুইও না একটা গাধি কিছুই বুঝিস না। আমাদের রবি ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ রুপার। ( অথৈ)
- ওরে আমার চান্দু তুমি সব বুঝে ফেলছো। (রেগে গিয়ে)। (রুপা)
- সত্যি রুপা। (শায়লা)
- শায়লা তুইও। আর হ্যা ভালো কথা, তোরা দুইটা কাল ওখানে কীভাবে গিয়েছিলি। আর আমার পক্ষ থেকে বিয়েতে সাক্ষিই বা কেনো দিলি। (রুপা)
- আমাদের তো রবি ভাই বলল। তোদের বিয়ে।
কাজি অফিসের ঠিকানা দিয়ে বলল, আমরা যেনো ওখানে চলে আসি। তাই তো গেলাম। (অথৈ) - তোদের বলল, আর তোরা চলে গেলি। (রুপা)
- কেনো, আমরা গিয়েছিলাম তোর ভালো লাগেনি। (শায়লা)
- লুকিয়ে লুকিয়ে এতো দিন প্রেম করছিস। আর
আমরা কিছুই জানি নাই। তাও তো রবি ভাই আমাদের বিয়েতে রেখেছিলো, তোর বান্ধবি বলে।
রবি ভাই কত্ত ভালো। আর তুই আমাদের নিজে থেকে কিছুই বলিস নি। (অথৈ) - তোর ভাগ্যটা আসলেই ভালোরে। রবি ভাইয়ের মতো এমন একটা হাজবেন্ড পেয়েছিস। কি লাকিরে তুই। (শায়লা)
- উফফ। তোরা চুপ করবি। আর কে প্রেম করছে ওই সন্ত্রাসীটার সাথে। আর হাজবেন্ড। আমি মানি না ওই সন্ত্রাসীটা কে, আমার হাজবেন্ড হিসেবে।বুঝছিস। (রুপা)
- কি বলছিস এইসব তুই। রবি ভাই সন্ত্রাসী হতে যাবে
কেনো। এত্ত সুন্দর। মাশাআল্লাহ আমরা দেখলেই
তো ফিদা হইয়া যাই। (শায়লা) - সুন্দর না ছাই। ওর ওই সুন্দর চেহারার পিছোনে যে,
কি ভয়ঙ্কর রুপ লুকিয়ে আছে তা আমি জানি। (রুপা) - আরে থাম তো তুই রুপা। বল তোদের বাসর কেমন কাটলো। (অথৈ)
বলেই শায়লা আর অথৈ হাসতে লাগলো।
রুপা রেগে যখনি কিছু বলতে যাবে। - রুপা দেখ দেখ তোর হিরো। ওয়াও। রবি ভাইকে তো আজ জোশ লাগতেছে। (অথৈ)
রুপা অথৈর কথায় সামনে তাঁকালো।
সত্যি রবি ওদের দিকেই আসছে।
রবিকে দেখেই রুপার রাগ আরো কয়গুন বেড়ে গেলো।
- রুপা মাই লাভলি ওয়াইফ তুমি এখানে। আর আমি তোমাকে কত জায়গায় খুঁজছি। তুমি জানো সেইটা। (রবি)
রুপা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। - এই রুপা, তুই রবি ভাইয়ের সাথে এমন করছিস কেনো। রবি ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে দেখ। আজ রবি ভাইকে কি সুন্দর লাগছে। (অথৈ)
- তোরাই দেখ ভালো করে। (রুপা)
- দেখেছো আমার শালিকা বৃন্দুরা। তোমাদের বান্ধবি এখনো আমার উপর রেগে আছে। ওর কথা মত আমি ওরে বিয়েও করলাম। তাও রেগে আছে। (মন খারাপ করে)। (রবি)
রুপা অবাক চোখে তাঁকালো রবির দিকে। - এই রুপা তুই এমন কেনো। তুই রবি ভাইকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাস। তাই বিয়ে করতে চাইলি। তোর কথা মতো রবি ভাই কাউকে কিছু না জানিয়ে তোকে বিয়েও করলো। তাও তোর এতো রাগ। (শায়লা)
- আসলে রুপা তোমাদেরও জানাতে চায়নি। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম তোমরা থাকো বিয়েতে। (রবি)
- রুপা তলে তলে এতো দূর। (অথৈ)
- বিশ্বাস কর তোরা। এই সব কথা মিথ্যা। (রুপা)
- থাক রুপা ওদের আর মিথ্যা শান্তনা দিতে হবেনা।
আমি ওদের সবকিছু বুঝিয়ে বলেছি। ওরা আর
তোমার উপর রাগ করে নেই। (রবি)
রবি কথাগুলো বলেই। রুপা কে চোখ মারলো।
রুপা রাগ সামলাতে না পেরে, রবির শার্টের কলার চেপে ধরলো। - আ। আ। আপনাকে আমি খুন করে ফেলব। আর একটা মি।
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রবি, রুপা কে কোলে
তুলে নিলো।
রুপা বুঝতেই পারেনি। সবার সামনে রবি এমন একটা কাজ করে বসবে।
রুপা হাত পা ছুরতে শুরু করে দিলো। - আপনি এইটা কি করলেন। নামান আমাকে। (রুপা)
রুপার দিকে তাঁকিয়ে, একটু হেসে রবি ওদের দিকে তাঁকিয়ে বলল।
- আসলে কি হয়েছে শালিকা বৃন্দু। বিয়ের পরও
আমার কাছে থাকতে পারছে না তো। তাই এমন রাগ করে আছে। আমাকে ছারা এক মূহুর্ত থাকতে পারেনা তোমাদের বান্ধবি। বড্ড বেশিই ভালোবাসে কিনা। (রবি) - এই শায়লা আমাকে একটু ধর। আমি বোধয় এবার সেন্সলেস হয়ে যাবো। আমাদের রুপা যে এতো জামাই পাগল আগে জানতাম না। (অথৈ)
- এই না না তোদের কে ভু। (রুপা)
রবি আর রুপাকে কিছু বলতে না দিয়ে।
হাটা শুরু করেছে। আর যেতে যেতে বলল।
- আচ্ছা শালিকা বৃন্দু এখন আমরা আসি। দেখি
তোমাদের বান্ধবির রাগ ভাঙ্গাতে পারি কিনা। (রবি) - আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। আর
আমাকে নামান বলছি সবাই দেখছে। (রুপা) - কোথায় যাচ্ছি, গেলেই বুঝতে পারবে। আর আমি
আমার বউকে কোলে নিয়েছি। সবাই দেখলে দেখুক তাতে আমার কি। (রবি) - ভালো হচ্ছে না নামান বলছি। (রুপা)
রবি, রুপা কে একটু ফেলে দেওয়ার নাটক করলো। আর সাথে সাথে রুপা চোখ বন্ধ করে রবির গলা
জরিয়ে ধরলো। - ভয় পেয়েছো। (রবি)
- (চোখ বন্ধ করে)। (রুপা)
- আমার জীবন থাকতে কি। আমি তোমাকে ফেলে দিতে পারি বলো। এটুকু নাটক না করলে তো। তুমি আমাকে জরিয়ে ধরতে না। (রবি)
গাড়ির সামনে আসতেই জনি দড়জা খুলে দিলো।
রবি, রুপাকে গাড়িতে বসিয়ে।
জনির কাছ থেকে গাড়ির চাবিটা নিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগলো। - আপনি ওদেরকে এতোগুলো মিথ্যে বললেন কেনো। (রুপা)
- (চুপ)। (রবি)
- আর আপনি এতো লুচু কেনো। যেখানে সেখানে। (রুপা)
থামিয়ে দিয়ে। - আমি লুচু। (রবি)
- হ্যাঁ অবশ্যই। (রুপা)
- তোমার সাথে কি করেছি আমি। এখনো তো
কিছুই করিনি। (লুচু মার্কা হাসি দিয়ে। ) (রবি) - আপনি ওইরকম লুচু মার্কা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে
তাঁকাবেন না। (রুপা) - তাহলে কীভাবে তাঁকাবো। জান তুমিই বলে দেও। (রবি)
- আমি আপনার জান না। (রুপা)
- তাহলে তুমি আমার কি। ( রবি)
- আমি আপনার কিছুই না। (রুপা)
- তুমি কি জানো, তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি। (রবি)
- আপনি কি জানেন, , আপনাকে আমি কতটা ঘৃণা করি। (রুপা)
গাড়ি ব্রেক করে রুপার দিকে এগিয়ে এসে।
- কতটা ঘৃণা কর। (রবি)
- এই আপনি একদম আমার কাছে আসবেন না। (রুপা)
- বলো কতটা ঘৃণা কর। (রবি)
- যতটা ঘৃণা করলে একটা মানুষকে সহ্য হয়না। ততোটা ঘৃণা করি আমি আপনাকে। সেদিন আমি আপনাকে বাঁচিয়ে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করেছি। (রুপা)
- ভুল যেহেতু করেছো। তার মাশুলও তো তোমাকেই
দিতে হবে। আর সেই ভুলের মাশুল সারাজীবন ভরে
দিতে হবে তোমাকে। (রেগে) (রবি) - আপনাকে যেহেতু বাঁচিয়ে ভুলটা করেছিই। তাহলে সেই ভুলটা আমিই শুধরিয়ে নিব। (রুপা)
- কীভাবে শুধরাবে। কি ঠিক করেছো আমার সাথে
থাকবে সারাজীববন। (রবি) - আপনার মৃত্যু আমার হাতেই হবে। (রুপা)
রবি রেগে গিয়ে গানটা রুপার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
- তাহলে দেরি করছো কেনো। এই ধরো মারো আমাকে। আমি এমনিতেই তোমার প্রেমে মৃত্যু বরণ করেছি। তোমার মুখে ঘৃণা শব্দটা শুনলে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয় তা বলে বুঝাতে পারবনা। (রবি)
- আ। আ। প। নি এইটা সরান আমার সামনে থেকে। (রুপা)
- না তোমার এই মূহুর্তে আমাকে মারতে হবে। (রবি)
- প্লিজ রবি, আপনি ওইটা সরান। আমার ভয় লাগছে। (চোখ বন্ধ করে) (রুপা)
রবি নিজেকে শান্ত করে।
চোখের কোনায় জমে থাকা পানি টুকু মুছে নিলো।
তারপর আবার গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো। রবি এইটাই বুঝতে পারেনা। কেনো রুপা তাকে সহ্য করতে পারেনা।
রুপা, রবির দিকে তাঁকালো।
ছেলেটার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ।
স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তাতে রুপার কোনো মাথা ব্যাঁথা নেই।
রুপা একরাশ ঘৃণা নিয়ে রবির দিকে তাঁকিয়ে আছে।
গাড়ি থেমে গেছে অনেক্ষন। সেদিকে রুপার কোনো খেয়ালই নেই।
সে রবির দিকেই তাঁকিয়ে আছে। ওই চোখের গভীরতায় যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
- এইভাবে তাঁকিয়ে থেকো না। তোমার ওই চোখে
আমার সর্বনাশ অনেক আগেই হয়ে গেছে। (রবি)
রুপা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। - তুমি যখন লজ্জা পাও। তখন তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে সেইটা কি তুমি জানো। (রবি)
- সন্ত্রাসীর মুখে এইসব মিষ্টি মিষ্টি কথা শোভা পায়না। (রুপা)
রবি রেগে গিয়ে রুপার হাত চেপে ধরলো।
- আমি কি করেছি। যাতে তুমি এইভাবে আমাকে
সন্ত্রাসী বলে অপমান করো। (রবি) - সন্ত্রাসী কে, সন্ত্রাসী বললে অপমান করা হয়
আমার জানা ছিলনা। আর একটু আগেও আমি আপনার কাছে গান দেখেছি। আমার হাতে লাগছে ছারুন। (রুপা) - লাগুক। তুমি কেনো এমন করছো। আমাকে কষ্ট
দিয়ে তুমি কি সুখ পাও। ( রবি) - ছারুন বলছি, আমাকে যেতে দিন। (রুপা)
- যাও। রাতে কল দিব, রিসিভ করবে। (রবি)
- করবনা। (রুপা)
- তাহলে কিন্তু বাসায় চলে আসবো। (রবি)
- আপনি কি পাগল। (রুপা)
- হ্যাঁ তোমায় ভালোবেসে পাগল। (রবি)
- এইটা ভালোবাসা না। অসুস্থ ভালোবাসা। আপনি আমার সাথে যেইসব ব্যবহার করেন তাকে অসুস্থতা বলে। (রুপা)
- রুপা যাও বলছি। এরপরে আমি কিছু করে বসলে
তাতে তোমারই খারাপ লাগবে। (রবি)
রুপা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে। চলে আসলো।
এই ছেলে কে দিয়ে কিছুই বিশ্বাস নেই।
যা খুশি তা করে বসতে পারে।
পর্ব ৮
এই ছেলে কে দিয়ে কিছুই বিশ্বাস নেই।
যা খুশি তা করে বসতে পারে।
- তানিম, রুপা কে একটু ডেকে দে তো। (আম্মু)
- আম্মু তুমি দেখছো না আমি টিভি দেখি। তৃন্নি আপুকে বলো। (তানিম)
- ওই বান্দর তুই টিভি দেখছিস, আর আমি কি ঘুমাচ্ছি। (তৃন্নি)
- যা না, আপুনি একটু ডেকে দে না রুপা আপু কে। (তানিম)
- কাউকেই ডাকতে হবেনা আমি চলে আসছি। (রুপা)
- আপু তুই না ঘুমিয়েছিলি। (তৃন্নি)
- ছিলাম এক্ষনি উঠলাম। আম্মু ডাকছো কেনো। (রুপা)
- তোর বড় আম্মু, বড় আব্বু, আর তাওহীদ।সনিয়ার(বড় আম্মুর বোনের মেয়ে) বিয়েতে গেছে। তাই তোকে আর কাল ভার্সিটি যেতে হবেনা। (আম্মু)
- কিহহ্ আমি কিছু জানিনা কেনো। আর আমাদের সবারই তো যাওয়ার কথা ছিল। (রুপা)
- তুই জানবি কীভাবে, এসেই তো ঘুমিয়ে পরলি।
আর একটু সমস্যা থাকায় বিয়েটা দুদিন আগে হচ্ছে। আর তানিম, তৃন্নির তো এক্সাম চলছে তাই ওরা গেছে। (আম্মু)
- জানিস আপু, মনটা খুব খারাপ যেতে পারলাম না। (তৃন্নি)
- আমি ও তো ভেবে ছিলাম যাবো। আর আব্বু কবে আসছে। (রুপা)
- আরো দুদিন পর আসবে। জরুরি কিছু কাজ পরে গেছে। রুপা এইবার তোর বাবা ফিরে আসলে। তুই নিজে জানাবি যে, তোর বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। (আম্মু)
- কিহহ্ বিয়ে। (রুপা)
- ওয়াও আপুর বিয়ে। (তৃন্নি)
- এই আপু তুই একটা বিয়ে করনা প্লিজ। আমার অনেক সখ দুলাভাইয়ের সাথে অনেক মজা করব। (তানিম)
- এই তোর না এক্সাম চলে। যা পড়তে বস। আর তৃন্নি তুইও দেখছি পড়তে বসিস নি এখনো। (রুপা)
তৃন্নি আর তানিম মন খারাপ করে উঠে চলে গেলো।
রুপার মা, রুপার একটু কাছে গিয়ে বসলো। - রুপা লক্ষি মা আমার, ছেলেটা খুবই ভালো।আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার মা মারা গিয়েছে ছোটবেলায়। আর বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছে। এখন ছেলের নিজের বলতে কেউ নেই।
বাবার ব্যাবসা ছেলে নিজেই দেখাশোনা করছে।
আর ছেলে খুব শিক্ষিত বিদেশ থেকে MBA করেছে। আর দেখতেও খুব সুদর্শন। সব মিলিয়ে ছেলেকে আমার পছন্দ। আমি চাই এখানেই তোর বিয়েটা হোক। (আম্মু)
- আমি এখন বিয়েটা করতে চাচ্ছি না। (রুপা)
- তোর বাবা, তোর অনুমতি ছারা কিছুই করবেনা।
আমি চাইনা ছেলেটা হাত ছারা হয়ে যাক। আমার কথা আমি বুঝাতে পেরেছি আশা করি। (আম্মু)
বলেই চলে গেলো রেগে।
রুপা এখন কি করবে, সেইটাই ভাবছে।
আল্লাহ তুমি আমারে বাঁচাও, আমি এখন কি করব।
ওই সন্ত্রাসীটা যদি শুনে আমার বিয়ে।
তাহলে যে কি করবে কে জানে।
আর আম্মুও খুব রেগে গেছে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই রুমে গেলো রুপা।
গিয়ে দেখে ফোন বেজে চলেছে।
ফোনটা হাতে তুলে নিতেই কেটে গেলো।
৫ টা মিসডকল, নিশ্চই সন্ত্রাসীটা।
আবার ফোনটা বেজে উঠলো।
- হ্যালো। (রুপা)
- কোথায় ছিলে এতক্ষন। এতবার কল করছি শুনতে পাওনা নাকি। তোমাকে কি বলেছিলাম।
রাতে কল দিব, বলেছি না। (রবি) - হুম। (রুপা)
- তাহলে ফোনের কাছে বসে ছিলে না কেনো। (রবি)
- ওয়েট। আপনি কে বলুন তো। আপনার ফোনের অপেক্ষায় আমি কেনো থাকব। (রুপা)
- আমি তোমার হাজবেন্ড রুপা। (রবি)
- আমার এখনো বিয়ে হয়নি। তাই হাজবেন্ড থাকার
প্রশ্নই আসেনা। (রুপা) - তুমি কি ভুলে গেছো। সব নিয়ম মেনে আমাদের বিয়ে হয়েছে। তুমি তিনবার কবুলও বলেছো। (রবি)
- ওইটা বিয়ে ছিলনা, শুধু মাত্র একটা ড্রামা হয়েছিলো। আমি ওই বিয়ে মানিনা। আর সামনেই আমার বিয়ে শুনেছেন। তাই আশা করব আপনি আর আমার পিছনে ঘুর ঘুর করবেন না, ক্লিয়ার। (রুপা)
- রু। রু। পা। তুমি কিন্তু বারাবারি করছো। তোমার ভাগ্য ভালো যে, তুমি কথাগুলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলনি। (প্রচন্ড রেগে)। (রবি)
- কি করবেন টা কি। খুন করবেন আমাকে।
আপনি অবশ্য এইসব ছাড়া আর কি বা পারেন। হুহ। (রুপা) - খুন করলে তো সব মিটেই গেলো। তোমার এমন ব্যাবস্থা করব। আর দ্বিতীয় বার বিয়ের নাম নিতেও ভয়ে শিউরে উঠবে। (রবি)
- ওহ ভুলেই তো গিয়েছিলাম, আপনি একটা লুচু।
লুচুমি ছারা তো আর কিছুই করতে পারেন না। মেয়ে দেখলে আর লোভ সামলাতে পারেন না। (রুপা)
- রুপা তুমি কিন্তু বেশি বলে ফেলছো। (একটু চিল্লিয়ে। )। (রবি)
- একদম চিৎকার করে কথা বলবেন না আমার সাথে। আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই। (রুপা)
বলেই রুপা ফোনটা কেটে দিলো।
রবি বার বার কল দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু রুপা আর ফোনটা রিসিভড করলো না।
বালিশের নিচে মোবাইলটা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।
আর রবির ঘুম যেনো নিমিশেই উড়েগেলো।
রবি শুধু এইটা ভাবছে, রুপা এইগুলা কি বলল।
ও ওদের বিয়েটাকে অস্বিকার করে। আবারো বিয়ে করবে। বলছে।
রবির আর রাতে ঘুম হলোনা। পাগলের মত লাগছে। ওর সবকিছু।
একটু পর পর রুপা কে কল করে যাচ্ছে।
কিন্তু রুপা কলটা ধরছেই না।
সুর্যের আলো মুখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো
রুপার।
টাইম দেখার জন্য বালিশের নিচে থেকে, মোবাইল টা বের করতেই।
রুপা অবাক, ৬৫ টা মিসডকল কিন্তু রুপার তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
রুপার রাগ হচ্ছে, কল দিতে দিতে তার মোবাইলের
চার্জ সব শেষ করে ফেলেছে রবি।
আবারো কল করেছে রবি। এবার কলটা রিসিভড করলো রুপা।
রবি কে কিছুক্ষন না বকলে তার মেজাজ ঠিক হবেনা।
- আপনার সাহস হলো কীভাবে। আমাকে এতবার কল করে মোবাইলের চার্জ সব শেষ করার। (রুপা)
- রুপা আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। শুধু ছটফট
করেছি। এইটা একবারও তোমার চোখে পরলোনা। তুমি শুধু মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়াটা কে দেখলে। (রবি) - আপনি ঘুমান, না জেগে থাকেন। তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। (রুপা)
- রুপা আমি তোমাকে ভালোবাসি। (রবি)
- আমি বাসিনা, আমি আপনাকে ঘৃণা করি। (রুপা)
- ভার্সিটিতে আসছো কখন। (রবি)
- দুদিন আসবনা। আবার ভাববেন না, আপনার ভয়ে যাচ্ছিনা। আমি আপনাকে এখন আর ভয় পাইনা। (রুপা)
- হা হা হা হা হা। (রবি)
- হাসবেন না, ভিলেনের মতো। (রুপা)
- আমি তো, তোমার কাছে ভিলেনই। (রবি)
- এতদিনে একটা সত্য কথা বলেছেন। (রুপা)
- রুপা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, বুঝার চেষ্টা কর প্লিজ। (রবি)
- বকবক করবেন না তো। মাথা ব্যাঁথা করছে।
দিলেন তো আমার দিনটাই মাটি করে। ওকে রাখছি। (রুপা)
বলেই ফোন টা রেখে দিলো রুপা।
কেনো এমন করে মেয়েটা রবির সাথে।
রবির ভাবলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়।
এতটা ভালোবাসি বুঝতেই চায়না।
আবার ওরে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ের কথা বলে।
রুপাকে একদিন না দেখলেই যেনো মনে হয়।
রবির পুরো পৃথিবী থেমে গেছে।
সারারাত পর যেভাবেই কথা বলুক না কেনো।
রবি যে রুপার কন্ঠটা শুনতে পেরেছে। এতেই শান্তি পাচ্ছে।
কিন্তু না, রুপা কে আজ একবার দেখতেই হবে রবির।
তা না হলে বুকের ভিতরের ঝড়টা থামবে না।
অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল বাজিয়ে চলেছে।
রুপা গোসলে ছিল, তাই দড়জা খুলতে পারেনি।
বাসায় কেই নেই যে, দড়জাটা খুলবে।
আম্মু একটু খালার বাসায় গেছে। ফিরতে রাত হবে। আর তৃন্নি, তানিম তো স্কুলে।
রুপা কোনো রকমে বের হয়েই। চুল মুছতে
মুছতে দড়জা খুলল।
একটা দাড়িওয়ালা লোক দাড়িয়ে আছে।
- কাকে চাই। (রুপা)
পর্ব ৯
একটা দাড়িওয়ালা লোক দাড়িয়ে আছে।
- কাকে চাই। (রুপা)
দরজা খুলে কে জিঙ্গাসা করতেই। আমাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই ভিতরে ঢুকে গেলো। তারপর দরজা লক করে দিয়ে। আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি যখনি চিৎকার দিতে যাব। সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি বড় বড় চোখ করে লোকটার দিকে তাঁকালাম। আর ছুটার চেষ্টা করলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। মানে আমি সেন্সলেস হয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাঁকাতেই দেখি। রবি আমার সামনে।
- আপনি। (রুপা)
- নিজের হাজবেন্ড কে, কেউ ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। (রবি)
- আপনি বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন। কীভাবে আসলেন। (রুপা)
- হুমমমম। আমার বউটাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিলো। তাই একটু কষ্ট করে নকল দাড়ি লাগিয়ে, চলে আসছি। কিন্তু তোমাদের দাড়োয়ানটাও তোমার মত খুব পাঁজি। আসতে দিচ্ছিলো না। তারপর ঘুষ দিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করালাম। (রবি)
- কিহহ্। আজ ওই দাড়োয়ানের একদিন, কি আমার একদিন। ওর চাকরি আজই আমি আউট করে দিব। এইভাবে চলতে থাকলে, তো যে কেউ ঢুকে যাবে বাড়িতে। ঢুকে যাবে বলছি কেনো। অলরেডি ঢুকে পরেছে। (রেগে গিয়ে)। (রুপা)
- আরে তোমাদের দাড়োয়ানটা যথেষ্ট ভালো। আমি তাকে বুঝালাম যে, আমি তোমার হাজবেন্ড। আর এইটাও বলেছি যে, আমাকে ঢুকতে দিয়েছে। ঠিক আছে, কিন্তু আর কোনো অপরিচিত কাউকে যেনো ঢুকতে না দেয়। তাকে কিছু বইলো না প্লিজ। চাকরি চলে গেলে খাবে কি বেচারা। (রবি)
আমি সোফা থেকে উঠে বসলাম। রাগে আমার পুরো শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীটা শেষ পর্যন্ত আমার বাড়ি চলে আসছে। ও আল্লাহ আমাকে বাঁচাও তুমি।
- আপনি এক্ষুনি চলে যান বলছি, সবাই এসে যাবে। (রুপা) রবি আমার পাশে বসতে বসতে বলল।
- আমার বউ কি, আমাকে এতদিনে এই চিনলো। আমি কি এতই বোকা। (রবি)
- মানে। (রুপা)
- তোমার আম্মু মানে, আমার শাশুরিমা। সে আসবে রাতে। আমার শালাবাবু আর শালিকা দেবি আসবে ৫:৩০ এ। (রবি)
আমি তো পুরাই অবাক। হাসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। রবি বাম হাতের কব্জি উল্টিয়ে ঘড়ি দেখতে দেখতে বলল।
- আর এখন বাজে ১ টা। তাই আমার হাতে ৪ ঘন্টা সময় আছে। আর এই ৪ ঘন্টা আমি আমার বউর সাথে প্রেম করবো, রোমান্স করবো। (রবি)
সেই চিরচেনা লুচু মার্কা হাসি ঠোটে লেগে আছে। আর লুচু মার্কা চাহনি আমার দিকে।
- এত বউ বউ করছেন কেনো। আমি আপনার বউ না। বুঝতে পেরেছেন। (রুপা)
আমার দিকে এগোচ্ছে আর বলছে।
- না বুঝিনি। আরেকটু বুঝিয়ে দাও। (রবি)
আমি পিছু সরতে সরতে সোফায় শুয়ে পরলাম। আর রবি আমার উপর শুয়ে। আমার একদম কাছে এসে, চোখে চোখ রেখে তাঁকিয়ে আছে।
- কি হলো বুঝাও। (রবি)
আমি শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলাম। তারপর উঠে দাঁড়ালাম।
- কেনো এসেছেন আপনি। (রুপা)
- বললাম না, আমার বউয়ের সাথে প্রেম করতে। এই আম্মু তো সেই সকালে বেড়িয়েছে। রান্নাও করতে পারেনি মেবি। তাহলে তুমি খাবে কি। (রবি)
- কেনো আমি রান্না করেছি। আমি কি রান্না জানি না নাকি। (মুখ ভেংচি দিয়ে)। (রুপা)
- ওহহ্। এইভাবে মুখ ভেংচি দিলেও যে, কাউকে এত্ত সুন্দর লাগে আমি জানতাম না। (রবি)
আমি কোমরে হাত দিয়ে রাগি লুক নিয়ে তাঁকালাম।
- হইছে হইছে আর এইভাবে তাঁকাতে হবে না। আমি আমার বউকে অনেক ভয় পাই। আমার বউ যে, রান্নাও জানে। আমি জানতাম না। খুব ক্ষুদা লাগছে। আর তুমি রান্না করছো শুনে, ক্ষুদাটা আরো কয়গুন বেড়ে গিয়েছে। দাও তো খেতে দাও। (রবি)
বলেই ডাইনিং এ গিয়েই একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। আমি তো শুধু অবাকই হচ্ছি। এই ছেলের কান্ড দেখে।
- আপনার লজ্জা করেনা। চেনা নেই, জানা নেই, এক বাসায় এসেই নিজে থেকে খেতে বসে পরছেন। (রুপা)
- রুপা কি বলো এইসব তুমি। এইটা আমার শশুর বাড়ি। লজ্জা করবে কেনো। (রবি)
- আমি আপনাকে খেতে দিবনা। (রুপা)
- কেউ খেতে চাইলে, তাকে এইভাবে না করতে হয়না। সে তোমার যত বড় শত্রুই থাক না কেনো। আর আমি তো তোমার হাজবেন্ড। (রবি)
হাজবেন্ড না ছাই। তবে এইটা ঠিক বলছে, কেউ খেতে চাইলে না করতে নেই। তাই আর কিছু না ভেবে খেতে দিলাম।
- রুপা তুমি খাবে না। (রবি)
- না। (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে) (রুপা)
- তাহলে আমি ও খাবো না। (রবি)
এ তো দেখছি, ভালো মুছিবতে পরলাম। খাবার বেড়ে দেওয়ার পর বলে, আমি না খেলে খাবে না। আজব। তাই আর কি করব, বাধ্য হয়ে আমাকেও বসতে হলো। উফফ্ আমি শেষ পর্যন্ত, এই সন্ত্রাসীটার সাথে বসে খাচ্ছি। রবি একটু হেসে খেতে লাগলো।
- উফফ্। মাংস টা যা রেঁধেছো না দারুন হয়েছে। (রবি)
- আমি সব সময়ই ভালো রান্না করি। (রুপা)
- হুমমম। ভালোই হয়েছে। যখন তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো। তখন আর ওই বাজে টেস্টের রান্না করা খাবার খেতে হবেনা। (রবি)
বলেই আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো রবি। আমি আমার খাওয়া রেখে, রবির খাওয়া দেখছি। কি তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। আমার দেখতেই ভালো লাগছে। আর রান্নার প্রশংসা শুনে তো ভুলেই গেলাম সব রাগের কথা। রবি খেতে খেতে বলল।
- রুপা আমার খাওয়া দেখতে হবে না। তুমি খাও। (রবি)
আমি অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেলাম। মাথা নিঁচু করে খাওয়া শেষ করলাম। রবি সোফায় গিয়ে বসলো। নিজেই টিভি অন করে দেখতে লাগলো। আমি টেবিল পরিষ্কার করছি, আর রবি কে দেখছি।
কি আজব লোক, এমন ভাব করছে। যেনো উনি এই বাড়িতে কত এসেছে। উনি এই বাড়িরই মেম্বার। কাজ শেষ করে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
- আপনি কখন যাচ্ছেন। (রুপা)
- রুপা তুমিও না। মাত্র খেয়ে বসলাম, রেস্ট নিতে দাও একটু। এইভাবে কেই নিজের হাজবেন্ড কে তাড়িয়ে দেয় বলো। (রবি)
রবি আবার টিভি দেখায় মন দিলো। বাতাসে উনার সিল্কি চুল গুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে।
জোরা ভ্রুঁ, গোলাপি ঠোট আর ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা হাল্কা দাঁড়ি খুব সুন্দর লাগছে। না এইভাবে তাঁকিয়ে থাকলে নির্ঘাত আমি। এই সন্ত্রাসীটার প্রেমে পরে যাবো। নিজেই নিজের মনকে শাসন করতে লাগলাম। হঠাৎ উনার হাতের দিকে নজর গেলো। লম্বা আঙ্গুল, নখ গুলোও লম্বা নখ। বড় করেনি, কিন্তু আমার মত এমনিতেই লম্বা। নখগুলো খুব গোলাপি, আর পরিষ্কার। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, উনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। মেয়েদের এমনিতেই ছেলেদের সুন্দর হাতের প্রতি। একটু বেশি দুর্বলতা কাজ করে। কি ভেবে যেনো, পায়ের দিকে তাঁকালাম। নাহ পা গুলোও খুব সুন্দর।
ঠিক আমার মনের মত রবি। আমার এমন ছেলেই পছন্দ। আমার থেকেও বেশি সুন্দর রবি, আবার খুব স্মার্ট ও। সন্ত্রাসীরা যে এতো সুন্দর হয়। আমার জানা ছিলো না। আমি জানতাম, সন্ত্রাসীরা খুব বাজে দেখতে হয়। গোল গোল চোখ, বড় বড় দাঁত, ভয়ঙ্কর হাসি। কিন্তু রবি ঠিক এইসবের উল্টো। যেমন সুন্দর সে, তেমনি স্মার্ট। কিন্তু আপনি যত সুন্দরই হন না কেনো। আপনি আমাকে কখনো পাবেন না। আমি কোনো সন্ত্রাসীকে চাই না। হু।
- এইভাবে আমার দিকে তাঁকিয়ে থেকোনা। নজর লেগে যাবে তো। (টিভির দিকে তাঁকিয়েই)।
রবি বললো, আবারো লজ্জা পেয়ে গেলাম। উনি তো টিভি দেখছে। তাহলে বুঝলো কীভাবে, আমি উনাকে দেখছি। আমি আর দাঁড়ালাম না এখানে। রুমে চলে আসলাম। ডেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াতে লাগলাম। হঠাৎ রবি এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। রবির দুহাত আমার পেটে জরিয়ে রেখেছে। আমার পিঠ রবির বুকের সাথে লেগে আছে।
- কি করছেন টা কি। ছারুন। (রুপা) রবি চোখ বন্ধ করে, ওর নাক মুখ, আমার চুলে ডুবিয়ে দিয়ে বলল।
- উহুঁ ছারবো না। রুপা তোমার চুলগুলো আমার নেশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। (রবি)
আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে উনার স্পর্শে। আমি চোখ বন্ধ করে আছি। জানি, আমি এখন ছুটতে চাইলেও ছুটতে পারবোনা। তাই বৃথা ছুটার চেষ্টাও আর করছিনা। রবি আমার চুল থেকে মাথা তুলে। আমার মাথার সাথে হাল্কা করে মাথাটা লাগিয়ে আয়নায় আমাকে দেখছে।
- রুপা চোখ খুলে তাঁকাও। (রবি)
আমি চোখ খুলে তাঁকালাম। দুজন দুজনাকে দেখছি আয়নায়।
- জানো তোমাকে আজ কত সুন্দর লাগছে। গোলাপি থ্রি পিছটাতে তোমাকে খুব মানিয়েছে। যখন তুমি দরজা খুলে প্রথম আমার সামনে দাঁড়ালে। তোমাকে ভেজা চুলে খুব সুন্দর লাগছিলো। ইচ্ছা করছিলো তোমার ঠোটে কিস করি। কিন্তু তুমি সেন্সলেস হয়ে, আমার ইচ্ছাতে পানি ঢেলে দিলে। তুমি এতো ভিতু কেনো। হুম। (রবি)
- আমি তো আপনার মত সুন্দর না। আপনার থেকে একটু কালো। তারপরও কেনো আপনি আমার পিছনে পরে আছেন। (রুপা)
- মেয়ে তুমি কি জানো তুমি কত সুন্দর। তুমি এই উজ্জল শ্যামলা হওয়ায়, তোমার সৌন্দর্য আরো বেড়ে গিয়েছে। তোমার রুপে আমি পাগল হয়ে যাই। নেশা লেগে যায় আমার দু চোখে। তোমার এই উজ্জল শ্যামলা ফর্সা গায়ের রঙ আমাকে উম্মাদ করে দেয়। তোমার কাছে খুব টানে আমাকে। (রবি)
বলেই আবার আমার চুলে নাক মুখ ডুবিয়ে দিলো। কি সুন্দর করে কথা বলে। আমি যেনো তার কথার প্রেমে পরে যাচ্ছি। সন্ত্রাসীরা এত সুন্দর করে কথা বলতে জানে। আমার জানা ছিলনা। আমি যেনো উনার চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।
- রুপা। সব সময় এইভাবে শান্ত থাকতে পারোনা। আমি কাছে আসলেই, শুধু ছুটোছুটি করো কেনো। আমার থেকে পালাতে চাও কেনো। (রবি)
বলেই আমার চুলগুলো সাইডে সরিয়ে। ঘাড়ে আলতো করে কিস করলো। আমি কেঁপে উঠলাম। রবির হাত শক্ত করে খাঁমছে ধরলাম। রবি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
- এইভাবে হাত ধরে একবারে নখ গেঁথে গেছে। ছারো ব্যাঁথা পাচ্ছি তো। (রবি) রবির কথায় আমার হুঁশ ফিরে পেলাম। উনার হাত ছেরে দিয়ে, উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরে গেলাম।
- আমার বউ তো দেখছি, খুব বেশি লজ্জা পেয়েছে। (হাসি দিয়ে) (রবি)
রবি আমার বিছানায় শুয়ে পরলো লম্বা হয়ে। আমি তো অবাক।
- আপনি আমার বিছানায় শুয়েছেন কেনো। (রুপা)
- আমার বউয়ের বিছানায় আমি শুতেই পারি। বাহ্ তোমার ঘরটা তো খুব সুন্দর করে সাজানো। (রবি)
- হুমম। আমি গুছানো পছন্দ করি। অগুছালো দেখলে রাগ উঠে যায়। আর আপনি যে খুব গুছানো, তা আপনাকে দেখলেই বুঝা যায়। আপনার বাড়িটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। একদম আমার পছন্দ মত। তবে আপনি একটু অপরিস্কার। আর আমি আপনার মত অপরিষ্কার না। হুহ, (মুখ ভেংচি দিয়ে)। (রুপা)
- ওয়াও। দেখি দেখি আরেকবার ভেঙ্গাও তো। (রাগি লুক)আর কি বললে আমি অপরিষ্কার। আমাকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয়। (রবি)
- হ্যাঁ তাই মনে হয়। (মিথ্যে করে, রাগানোর জন্য)। (রুপা)
- আচ্ছা যাও যাও আমার জন্য কফি নিয়ে এসো। (রবি)
যাহ। এতো রাগলোই না। বরং উল্টো আমাকে হুকুম করছে। ইসস্ আমি কেনো তার হুকুম মানবো।
- হুহ “” আপনার হুকুম মানতে আমি বাধ্য নই। (রুপা)
রবি কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে। আমার দিকে এগোতে থাকলো। আর আমি পিছোতে থাকলাম।
- কি। কি ব্যাপার। এইভাবে এগোচ্ছেন কেনো। (রুপা) রবি শুধু আমার দিকে এগোচ্ছে। আমি পিছু সরতে সরতে একদম দেওয়ালের সাথে মিশে গেলাম। রবি আমার দুই পাশে দেওয়ালে হাত রেখে। ওর মুখ আমার কাছে নিয়ে এলো।
- তুমি আমার ওয়াইফ। আমার সব হুকুম মানতে তুমি বাধ্য। বুঝতে পেরেছো। (চিৎকার করে)। (রবি)
আমি উনার এইভাবে চিৎকার করে, কথা বলায় ভয়ে কেঁপে উঠলাম। একটু আগে কি মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলছিলো। আমার সাথে। আর এখন আসল রুপ বেরিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসী তো, সন্ত্রাসীই থাকে। আমিই ভুলে গিয়েছিলাম। ভয়ে ভয়ে বললাম।
- যা। যা। চ্ছি। বলেই উনার হাতের নিচ দিয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে রান্না ঘরে পৌছে গেলাম। মন চাচ্ছে মরিচ দিয়ে কফি বানিয়ে দেই। শয়তান একটা। লম্পট, গুন্ডা, লুচু, সন্ত্রাসী, বান্দর। বকতে বকতে কফি বানিয়ে রুমে আসলাম। কিন্তু সন্ত্রসীটা কোথায় গেলো? সামনে বেলকনিতে গেলাম। না এখানেও নেই। তাহলে গেলো কোথায়? আমার এই কষ্ট করে বানানো, কফিটা এখন কে খাবে তাহলে?
পর্ব ১০
আমার এই কষ্ট করে বানানো কফিটা।
এখন কে খাবে তাহলে।
ভাবতে ভাবতে নিজেই চুমুক দিলাম। কফিতে।
তারপর পিছনের বেলকনিটাতে গেলাম।
দোলনায় যেই বসতে যাবো।
দেখি রবি বসে আছে।
- আপনি। আমি তো ভাবলাম আপনি চলে গেছেন। (রুপা)
- তুমি সত্যি একটা বোকা। আমি যদি চলে যেতাম তাহলে, নিশ্চই বলে যেতাম। আর দরজা টাও নিশ্চই খোলা থাকতো। (রবি)
- হুমমম। তাই তো।আচ্ছা এই নিন আপনার কফি। (রুপা)
কফি টা রবির দিকে বাড়িয়ে ধরলাম।
রবি ও হাত বাড়ালো নেওয়ার জন্য।
কিন্তু হঠাৎ মনে পরে গেলো।
উনি চলে গিয়েছে ভেবে কফিটাতে।
একটা চুমুক দিয়েছিলাম আমি।
তারাতারি করে কফি টা সরিয়ে নিলাম। - কি হলো দাও। ( রবি)
- না না এইটা দেওয়া যাবে না। (রুপা)
- কেনো। (রবি)
- আপনি চলে গেছেন ভেবে, আমি এইটা খেয়েছিলাম। (রুপা)
রবি আমার কথা শুনে, একটা দুষ্টুমি মাখা হাসি দিলো।
আমি ভ্রুঁ কুঁচকিয়ে জিঙ্গাসা করলাম। - কি। (রুপা)
- কফি টা দাও। (রবি)
- না। আপনি বসুন, আমি বরং আরেক কাপ কফি বানিয়ে আনি। (রুপা)
যাওয়ার জন্য সামনে ঘুরতেই।
রবি আমার হাত ধরলো।
আমি মাথা ঘুরিয়ে একবার আমার হাতের দিকে তাঁকালাম। একবার রবির দিকে তাঁকালাম।
- তোমাকে আমি এইটাই দিতে বলেছি। (রবি)
- না, আমি আমার খাওয়াটা আপনাকে দিবনা। (রুপা)
- রররুপা। (একটু জোরে)। (রবি)
ভয়ে তারাতারি করে কফিটা দিয়ে দিলাম রবি কে। রবি কফিতে চুমুক দিয়ে বলল। - কফি টা একটু বেশিইই মিষ্টি মনে হচ্ছে। (রবি)
- আমি তো মাত্র এক চামচ চিনি দিয়েছি। (রুপা)
- তোমাকে সব বুঝিয়ে বলতে হয়। এই কফি তে আমার বউয়ের ছোয়া লেগে আছে। তাই একটু বেশি মিষ্টি। (রবি)
- ওহ। আচ্ছা। এ্যা। কি বললেন। (রুপা)
- শুননি। (রবি)
- আপনার সব কথাই আজব। (রুপা)
রবি আমার হাত টান দিয়ে, রবির পাশে দোলনায় বসিয়ে দিলো।
তারপর এক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে রাখলো।
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল। - জানো তো। হাজবেন্ড আর ওয়াইফ একে অপরের
এটো খেলে ভালোবাসা বাড়ে। আমি সত্যি কফি টা খুব উপভোগ করছি। আমার মনে হচ্ছে এর আগে কখনো কফির স্বাদ এতোটা ভালো লাগেনি। আজ যেনো অন্যরকম তৃপ্তি পাচ্ছি। (রবি)
আমি এই কাকে দেখছি।
একটু আগেই আমার সাথে কত খারাপ ব্যাবহার করেছে। আর এখন মূহুর্তের মধ্যেই চেঞ্জ। সত্যি আজব।
- রুপা জানো তো। তুমি আসার আগেও আমার জীবনটা অন্যরকম ছিল। কখনো ভাবিনি আমি কোনো মেয়েকে ভালোবাসবো, তাও এতটা। (রবি)
আমি শুধু অবাক হয়ে শুনছি।
আসলে বুঝার চেষ্টা করছি সব সত্যি শুনছি কিনা।
- যেদিন আমি রক্তাক্ত অবস্থায় পরে ছিলাম রাস্তায়।
সেদিন তো ভেবেই ছিলাম আমি আর বাঁচবো না।
কেউ ভয়ে আমার কাছে আসছিলো না। সবাই শুধু তাঁকিয়ে দেখছিলো। অবশ্য সেদিন আমি মরে গেলে, কোনো আক্ষেপও থাকতো না। (রবি)
রবি কথাগুলো বলে থামলো।
আমার কেনো জানি রবির মরে যাওয়া কথাটা। শুনে বুকে খুব কষ্ট অনুভব হলো।
আমিও রবির হাতটা নিজের অজান্তেই শক্ত
করে ধরলাম।
রবি কফি তে চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।
- হঠাৎ দেখলাম আমার কাছে একজন এগিয়ে আসছে। চোখে ঝাপসা দেখছিলাম, কাছে আসতেই দেখলাম তুমি (আমার দিকে তাঁকালো তারপর আবারো সামনে তাঁকিয়ে বলতে লাগলো) মূহুর্তেই যেনো আমার মনে হলো আমাকে বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকার এক অনুপ্রেরণা খুঁজে পেলাম। আমি যেনো এতদিন তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম। (রবি)
আমাকে যেনো রবি তার কথার জালে আটকে ফেলেছে।
আমি সব ভুলে গেলাম। আমি শুধু রবির দিকে তাঁকিয়ে ওর কথা শুনছি।
রবি কফিটা এক চুমুকে শেষ করে আমার দিকে তাঁকালো।
- ভালোবাসি তোমাকে অনেকটা বেশি। আমি শুধু এইটা জানি। আমাকে বেঁচে থাকতে হলে, তোমাকে চাই আমার। তোমাকে আমার খুব প্রয়জন রুপা। (রবি)
আমি কিছুই বলতে পারছিনা।
আমার হার্টবিট যেনো প্রচন্ড গতিতে উঠানামা করছে।
আমার সমস্ত শরীর অসার হয়ে যাচ্ছে।
রবি একটু একটু করে ওর মুখ। আমার মুখের কাছে
নিয়ে আসছে।
আমি যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছি।
রবি আমার একদম কাছে, ওর ঠোট আমার
ঠোটের কাছে চলে এসেছে।
আরেকটু ফাঁকা জায়গা নেই।
ওর ঠোট আমার ঠোট কে স্পর্শ করলো।
যেই আমার ঠোটে, ওর ঠোট ডুবিয়ে দিতে যাবে। তখনি রবির ফোনটা বেজে উঠলো।
রবি আমাকে ছেরে দিলো। ফোনের দিকে তাঁকালো।
- দেখেছো কখন যে ৫ টা বেজে গিয়েছে। আমি
খেয়ালই করিনি। তোমার সাথে থাকলে, আমার কোনো কিছুর প্রতি খেয়াল থাকেনা। কোথায় যেনো হারিয়ে যাই। (রবি)
কথাটা বলেই রবি হঠাৎ।
আমার কোমর জরিয়ে ধরে, ওর দিকে হ্যাচকা টান দিলো।
আমি ঝুক সামলাতে না পেরে, দুহাতে ওর বাহুডোর জরিয়ে ধরলাম।
রবি আমার মুখের একদম সামনে, ওর মুখ এনে বলল।
- তুমি আমাকে এইভাবে নেশা ধরিয়ে দেও কেনো। হুম। তোমার এই নেশা যে প্রচন্ড বাজে নেশা। আমাকে ক্রমশো মাতাল করে দিচ্ছে।
আমি যে তোমার এই নেশায়, দিন কে দিন আক্রান্ত হয়ে পরছি। আমি তোমার এই নেশায় পাগল হয়ে গিয়েছি। চাইলেও এখন আর ছারতে পারবো না। তুমি প্লিজ কখনো আমাকে ছেরে যেওনা। (রবি)
বলেই আমার কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাড়ালো।
আমি চোখ বন্ধ করলাম।
রবি যখন কথা গুলো বলছিলো, তখন ওর গলা ভারি হয়ে আসছিলো। নিশ্বাস দ্রুত চলাচল করছিলো।
আমাকেও যেনো নেশা ধরিয়ে দিচ্ছিলো।
আমি যেনো কোনো ঘোরের মাঝে আছি।
রবি রুমে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে আয়না দেখে। দাড়ি গুলো ঠিকভাবে লাগিয়ে নিলো।
তারপর হালকা পিছু ঘুরে মিষ্টি করে একটু হেসে বলল।
- আসি। জানু বউ। (রবি)
আমি ওর হাসিতে আবারো ক্রাশ খাইলাম।
আজকে আমাকে দেখছি, পাগল করে দিবে এই ছেলে।
সবাই চলে এসেছে অনেক্ষন।
আমি পিছোনের বেলকনিতে বসে আছি।
হাতে হুমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাসের বই। সামনে টেবিল টাতে কফি রাখা।
কিন্তু আমার মন পরে আছে, আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোতে।
আজ আমার এমন কেনো হলো। আমি কেনো। কোন রিয়াক্ট করলাম না।
আমি সবকিছু কেনো মেনে নিচ্ছিলাম।
রবি র কাছে আসা গুলোকে, মনে পরতেই।
যেনো কেমন লাগছে। শিউরে উঠছি।
ওর প্রতিটা স্পর্শের কথা মনে করে।
রবি আসলে বহুবিরী। ও আজ আমাকে ওর
মায়াজালে আটকিয়ে ছিলো।
আচ্ছা রবি আবার কোনো জাদু-মন্ত্র জানে নাকি।
তাই হবে বোধয়। সন্ত্রাসীরা সব পারে।
আর রবি খুব ভয়ঙ্কর মায়াবী সন্ত্রাসী।
ধ্যাত কি যে বলিনা, সন্ত্রাসী আবার মায়াবী হয় কীভাবে।
আমার মাথাটা বোধয় সত্যিই এবার যাবে।
মিঃ রবি সন্ত্রাসী তুমি যাই করো না কেন।
আমি কখনো তোমার হবো না হুহ।
কারো ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলাম।
- এই। এই রুপা আপু। (তৃন্নি)
- কি। আবার ডাকছিস কেনো। (রুপা)
- চাচ্চু কল করেছে। তোর সাথে কথা বলবে। (তৃন্নি)
- ওহ তাই আব্বু। দে। (রুপা)
- এই নে। (তৃন্নি)
তৃন্নি আমাকে ফোন টা দিয়ে পাশে দাঁড়ালো। - হ্যালো। আব্বু। তোমার সাথে কথা নেই যাও। (অভিমানি সুরে)। (রুপা)
- রাগ করেছে আমার রুপা মামনি। (আব্বু)
- তুমি কতদিন হলো দেশের বাহিরে। তোমাকে দেখিনা, খুব মনে পরছে। (মন খারাপ করে)। (রুপা)
- রাগ করিসনা নেক্সট উইকে চলে আসবো। হঠাৎ আরেকটা কাজে আটকা পরে গেলাম। (আব্বু)
- আচ্ছা তুমি ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করছো তো। আচ্ছা পেশারের ঔষুধটা খাচ্ছো তো। (রুপা)
- হে রে মা খাচ্ছি টেনশন করিস না। (একটু হেসে)। (আব্বু)
- আর হে, আমরা সবাই খুব ভালো আছি। তোমাকে খুব মিস করছি। (রুপা)
- আচ্ছা মা বেশি রাত করিস না, যা শুয়ে পর। (আব্বু)
- ওকে গুড নাইট। মাই সুইট বয়। ( রুপা)
- গুড নাইট মামনি। (আব্বু)
বাবার সাথে কথা বলে যেনো। খুব শান্তি লাগছে।
মনটা ভালো হয়ে গেলো।
তৃন্নি কে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললাম। - এই নে ধর। খেয়েছিস তোরা। ( রুপা)
- হুমম। (তৃন্নি)
- আম্মু কি করে। (রুপা)
- ঘুমিয়ে গেছে। তানিমও মাত্র শুইলো। (তৃন্নি)
- তুই ঘুমাস নাই কেন। (রুপা)
- আমি মাত্র পড়ে উঠলাম। ঘুমাতে যাবো আর চাচ্চু কল দিলো। (তৃন্নি)
- আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পর। সকালে আবার তোর এক্সাম আছে। (রুপা)
- হুমমম। তুমিও শুয়ে পরো। (তৃন্নি)
তৃন্নি হাই তুলতে তুলতে ওর রুমে চলে গেলো।
আমিও রুমে এসে শুইলাম। চোখটা বন্ধ করতেই মোবাইল টা বেজে উঠলো। - হ্যালো। (রুপা)
- ঘুমাও নি এখনো।
রবি কল করেছে, দুপুরের কথা গুলো আবার মনে পরে
গেলো। মূহুর্তে রাগ এসে ভর করলো।
- ঘুমাতেই তো যাচ্ছিলাম। ঘুমাতে আর দিলেন কই। (রুপা)
- আমার ঘুম তো তুমি কেড়ে নিয়েছো। রুপা আমি ঘুমাতে পারছিনা। তোমাকে খুব মনে পরছে। (রবি)
- তো আমি কি করবো। (রুপা)
- আমার কাছে চলে এসো। (রবি)
- কিহহহহ্। (রুপা)
- মন চাচ্ছে তোমাকে নিয়ে আসি। বিয়ে ছারা এক কথা। আর বিয়ের পর কি বউকে ছারা থাকা যায় বলো। (রবি)
- আমি আপনার বউ না। (রুপা)
- তাহলে আমার বউ কি পাশের বাড়ির জরিনা। (রবি)
- হ্যাঁ তাই হবে হয়তো। (রুপা)
- মাইর খাইছো। (রবি)
- (চুপ)।
- রুপা। এই রুপা। (রবি)
- কি। (রুপা)
- আমি আজ সারা রাত জেগে থাকতে চাই। (রবি)
এই কথা বলে কি ইঙ্গিত করতে চাচ্ছে রবি।
আমি কথাটা কে এড়িয়ে গেলাম। - আমি ঘুমাবো এখন। ফোনটা রাখেন। (রুপা)
- খুব ঘুম পাচ্ছে। (রবি)
- হুম। (রুপা)
- আচ্ছা ঘুমাও। (রবি)
- (চুপ)
- এই শুনো শুনো রুপা। (রবি)
- কি। (রুপা)
- আজকের দিনটার জন্য থ্যাঙ্ক ইউ। তোমাকে আজ নিজের করে পেয়েছিলাম কিছুটা। (রবি)
- এইবার রাখি ফোনটা। (রুপা)
- শুনো। ভালোবাসি তোমাকে তুমি শুধুই আমার। (রবি)
আর কোনো কথাই বললাম না। কেটে দিলাম।
এই কথাটা শুনলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।
ফোনটা বালিশের পাশে রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
রবি আজ খুব খুশি। রুপাকে এতটা শান্তভাবে কখনো কাছে পায়নি।
আজ রুপাদের বাড়িতে গিয়ে যে, এইভাবে রুপাকে
কাছে পাবে। ভাবতেই পারেনি।
হয়তো রুপার মনে, রবি একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে।
ভাবতেই রবির ঠোটের কোনায় হাসি ফুটে উঠলো।
রুপাকে প্রতি মূহুর্তে অনুভব করতে পারে রবি। রুপাকে নিজের করে পাবার আশায় সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রবি।
আজ দুদিন পর ভার্সিটিতে এলাম।
ক্লাস শেষে সবাই গল্প করছে।
আমি যেতেই দেখলাম নাঈম আর আশিক চলে যাচ্ছে।
আমি আটকালাম।
- এই দাড়া তোরা। কোথাও যাবিনা। (রুপা)
- যেতে দে রুপা। (নাঈম)
- দোস্ত দেখ, তোরা এমন করিস না। কত দিন তোদের সাথে আড্ডা দেই না। আয় বস আজ জমিয়ে আড্ডা দিবো। (রুপা)
বলেই আমি নাঈম আর আশিক কে টেনে বসিয়ে দিলাম। আর গল্পে মেতে উঠলাম সবাই।
হঠাৎ একটা ছেলে এসে আমাকে ডাকলো। - জ্বি আমাকে বলছেন। (রুপা)
- হ্যা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। (ছেলেটা)
সবাই চোখ বড় বড় করে তাঁকালো।
কারন পিছনেই রবি দাঁড়িয়ে আছে। - দেখুন আমি এইসব পছন্দ করিনা। (রুপা)
- এইভাবে না বলো না রুপা। চলো একটু, একসাথে বসে কফি খাই। (রুপার হাত ধরে)। (ছেলেটা)
আমি সাথে সাথে হাত ছারিয়ে। শায়লাকে ডাকতে পিছু ফিরেই দেখি। রবি দাঁড়িয়ে আছে।
ভীষণ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে রবি কে।
অগ্নিদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে।
মনে মনে বলে উঠলাম, আল্লাহ রক্ষা করো।
- ক্লাস শেষ হওয়ার পর এখানে কি করো। (রবি)
- ভাইয়া আমরা একটু আড্ডা দিচ্ছিলাম। (ভয়ে ভয়ে বললো। ) (শায়লা)
- রুপা চলো আমি তোমাকে বাসায় পৌছে দিচ্ছি। (রবি)
না, না, আজকে এর সাথে যাওয়া যাবেনা।
তাহলে সন্ত্রাসীটা আমাকে আজ মেরেই ফেলবে।
আমি খুব দ্রুত বলে উঠলাম, একটু হাসির রেখা টেনে। - থাক না আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা। আমি শায়লার সাথে চলে যাচ্ছি। এই আসি রে আমরা, তোরা থাক বাই। (রুপা)
বলেই শায়লার হাত ধরে টেনে হাটা শুরু করলাম।
ওই ছেলেটা আবার পিছন থেকে বলে উঠলো।
- হেই রুপা তুমি তো কিছুই বললে না। আমি অনিক। আর এইটা আমার নাম্বার, নিয়ে যাও।
ছেলেটার কি মাথা খারাপ নাকি।
ভাই তুই বাঁচতে, চাইলে চুপ কর।
আমি পিছু ফিরে বললাম। - নাম্বার লাগবে না।
আর একটুও দাঁড়ালাম না।
এক প্রকার দৌড়েই চলে আসলাম ওখান থেকে।
উফফ আল্লাহ বাঁচাইলা তুমি। - এই রুপা, তুই রবি ভাইকে এতো ভয় পাস এখনো। (শায়লা)
- ভয় পাবো না আবার, সন্ত্রাসী একটা। ফিসফিসে বললাম। আমি।
রুপা যে মাঝে মাঝে কিসব বলে না। সব একবারে মাথার উপর দিয়া যায়। মনে হয় রেগে আছে। তাই হাজবেন্ড কে এইসব বলছে। - এই রুপা চল না ফুচকা খাই। (শায়লা)
- তোর আবার এই সময় ফুচকা খাইতে ইচ্ছা করলো। (রুপা)
- হে রে বাবা চল না।
বলেই আমাকে টেনে নিয়ে গেলো শায়লা।
অবশ্য আমারও খুব পছন্দ।
আর এই মামা ফুচকা টা যা বানায় না রিয়েলি অসাধারাণ।
দুজনে মন ভরে ফুচকা খাচ্ছি।
আর হঠাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো।
উফ আমার ফুচকা খাওয়ার সময় যে কল করছে। তার খবর আছে।
মোবাইল বের করে স্ক্রিনে তাঁকাতেই দেখি অথৈ। কি ব্যাপার ও কল দিলো কেন।
- হ্যালো বল। (রুপা)
- রুপা এইখানে ঝামেলা হইয়া গেছে। (অথৈ)
- মানে। কেন কি হইছে। (রুপা)
- রবি ভাই, নাঈম আর আশিক রে তোর সাথে কথা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। আর ওই ছেলেটা অনিক ওরে। (অথৈ)
- ওরে কি। (রুপা)
- ওরে রবি ভাইয়ের লোক ইচ্ছা মত মাইর দিছে। মনে হয় হাত পা ভাইঙ্গা ফেলছে। তারপর আবার নিজেই হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। (অথৈ)
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না।
নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা।
শুধু মাত্র সামান্ন প্রপোজাল দেওয়ায় তাকে এইভাবে মারতে হবে? - এই রুপা কি হয়েছে। (শায়লা)
- ওই সন্ত্রাসীটা। (রুপা)
- সন্ত্রাসী কে। (শায়লা)
- আরে রবি। রবি ওই ছেলেটা কে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ফেলছে। (রুপা)
- কিহহ্। (শায়লা)
- আর ফুচকা খওয়া হইছে, চল বাসায় চল। (রুপা)
- হে চল। (শায়লা)
বাসায় ঢুকতেই দেখি, বড় আম্মুরা চলে আসছে।
রুমে আসলাম।
কি হচ্ছে আমার সাথে এইগুলা।
এইরকম ঘটনা ঘটবে আমার জীবনে কখনো চিন্তাও করি নাই।
আজ কিনা একটা ছেলে আমার জন্য হাসপাতালে ভর্তি।
নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আজ।
এইভাবে আর কতদিন চলবে?
আমি কি ওই সন্ত্রাসীটার হাত থেকে কখনো মুক্তি পাবো
না।
না আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।
মোবাইলটা হাতে নিলাম।
কল লিস্টে চেক করতেই নাম্বারটা পেয়ে গেলাম।
হ্যা রিং হচ্ছে।
- আজ আমার ভাগ্যটা এতো ভালো জানতাম না তো। আমার প্রিয়তমা নিজ থেকে আমাকে কল দিলো। (রবি)
- আপনি এইসব কি শুরু করেছেন। (রুপা)
- কি করেছি আমি। (রবি)
- আমার ফ্রেন্ডরা আমার সাথে কথা বলতে পারবে না। কোনো ছেলেই আমার সাথে কথা বলতে পারবেনা। আমাকে কেউ প্রপোজ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিবেন। এইগুলো কি শুরু করছেন আপনি। (রুপা)
- এই বিষয় কথা না বলি, আমরা। (রবি)
- বারাবারির একটা সীমা থাকা দরকার। আপনি এইভাবে আমার লাইফ টাকে হেল করে দিতে পারেন না। (রুপা)
- তোমার এতো ছেলেদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন টা কি। তোমার হাজারটা মেয়ে ফ্রেন্ড থাক। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বাট কোনো ছেলে ফ্রেন্ড তোমার থাকতে পারবেনা। ক্লিয়ার। (রবি)
- আজব, ওরা জাস্ট আমার ফ্রেন্ড। ওদের নিয়ে আপনার এতো প্রবলেম কেনো। আপনার চিন্তাধারা এতো খারাপ। ছি। ( রুপা)
- হ্যাঁ আমি এতো খারাপ। তুমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে পারবে না। তুমি যদি, তোমার ফ্রেন্ডদের ভালো চাও। তাহলে আর ওদের সাথে কথা বলবা না। আর আজকের পর কোনো ছেলে তোমাকে প্রপোজ করবে না আশা করি। (রবি)
- আমি একটা মেয়ে, আমাকে কারো ভালো লাগতেই পারে। প্রপোজ করতেই পারে। তাই বলে তাকে এইভাবে মারতে হবে। (রুপা)
- কেনো ছেলেটাকে তোমার ভালো লেগেছিলো। তোমার হাত ও তো ধরেছিলো। তখন খুব ভালো লেগেছিলো তাই না। (রবি)
কি বাজে মাইন্ডের লোক। যা মুখে আসছে, তাই বলছে। রেগে গিয়ে বললাম। - হ্যাঁ আমার ভালো লেগেছিলো। তাতে আপনার কি। (রুপা)
- ভালো লেগেছে তাইনা। এতক্ষন তো তাও হাসপাতালে রেখেছিলাম। এখন ওরে আমি মেরেই ফেলবো। (রবি)
- কিহহহ্! দেখেন আপনি এমন কিছু করবেন না। আমার জন্য। দয়া করে আর কারো কোনো ক্ষতি করবেন না। (রুপা)
- ওকে এই টাই লাস্ট। আমি যেনো আর কখনো এইসব না দেখি। (রবি)
- হুম। (রুপা)
- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি রুপা। (রবি)
- আপনার ভালোবাসা অসুস্থ, এইটা কে অসুস্থ ভালোবাসা বলে। (রুপা)
- তোমার যদি তাই মনে হয়, তাহলে তাই। (রবি)
- আপনার সাথে আমার কথা বলতেও ঘৃণা হচ্ছে। (রুপা)
কেটে দিলাম।
এর সাথে কথা বলার থেকে সারাজীবন বোবা হয়ে থাকা অনেক ভালো।
আমাকেও চিনে না, সন্ত্রাসীটা।
বাবা একবার আসুক শুধু।
ভার্সিটিতে এখন আর আমার সাথে কেউ কথা বলে না। এমন কি মেয়েরাও আমার সাথে কথা বলতে ভয় পায় ওইদিনের পর থেকে।
- দেখ রুপা তুই শুধু শুধু রবি ভাইয়ার উপর রাগ করছিস। রবি ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তো এমন করে। (শায়লা)
- চুপ থাক তো। এই অসুস্থ ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেই। (রুপা)
- ইসস রবি ভাইয়ের মত, যদি আমাকে কেউ ভালোবাসতো আমি ধন্য হয়ে যাইতাম। (অথৈ)
- এতো সখ। তাহলে যা না রবির গলায়ই ঝুইলা পর। তাহলে অত্যন্তপক্ষে আমি বেঁচে যাইতাম। (রুপা)
- যা রুপা তুই যে কি বলিস না। আমার লজ্জা লাগেনা। আর রবি ভাই তো তোকে ছারা কিছু বুঝেই না। (অথৈ)
- রুপা, রবি ভাই আসতেছে। (শায়লা)
রবি আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে।
কোনো সন্ত্রাসীর রাগে আমার কিছু যায় আসে না।
- আরে রবি ভাই। আপনি এই দুইদিন কোথায় ছিলেন। (শায়লা)
- ওই একটা কাজে দেশের বাহিরে যেতে হয়েছিলো।
তোমরা কেমন আছো। (রবি) - আমরা ভালো। রবি ভাই আপনাকে আজকে যা লাগতেছে না পুরাই জোশ। ব্লাক শার্ট টাতে আপনাকে মানিয়েছে খুব। (অথৈ)
- থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু তোমার বান্ধবি তো আমাকে দেখেও, দেখে না। (রবি)
- ওর কথা বাদ দেন। ও তো মঙ্গলগ্রহের প্রাণী।
আজ পর্যন্ত একটাও প্রেম করতে পারেনি। তারপর আপনার সাথে যাও শুনলাম প্রেম করছে। কিন্তু এখন দেখি আপনার নামে শুধু উল্টা পাল্টা কথা বলে। এমন হিরোর মত জামাই পাইছে তো তাই বুঝতেছে না। (অথৈ)
- তোমরা একটু বুঝাও ওরে। (রবি)
ওদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। আর আমার দিকে একটু পর পর চোখ গরম করে তাঁকাচ্ছে।
ভিলেন একটা। - তোদের গল্প তো বেশ জমে গেছে। তোরা গল্প কর আমি গেলাম। ক্লাস আর করবো না, পরে কল করে পড়া নিয়ে নিব। (আমি)
আমি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই রবি আমার হাত ধরলো। - আচ্ছা তোমরা থাকো, আমি রুপাকে নিয়ে যাচ্ছি। (রবি)
- ছারেন বলছি। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না। (রুপা)
রবি আর আমার সাথে কোনো কথা বলল না। আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তোলো।
-ভাই কই যাইবেন। (জনি) - বাসায় চল। (রবি)
- আমি আপনার বাসায় যাবো না। আমাকে যেতে দিন, ক্লাস আছে। (রুপা)
- তুমি না, একটু আগে বললা ক্লাস করবা না। (রবি)
- আমি আমার বাসায় যাবো। (রুপা)
- আমার বাড়িই তো তোমার বাড়ি। (রবি)
- আমি আপনাকে একবার বলছি না। আমি আপনার সাথে আমার বিয়েটা মানি না। (রুপা)
- ( চুপ)
- কি হলো আমাকে যেতে দিন প্লিজ। (রুপা)
আজ আব্বু আসবে, আমি আব্বুকে বলে দিব।
আমি তাদের পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়েতে রাজি। - বিয়ে, করবা আবার। আমি তোমার বিয়ের সখ মিটাবো। আজকে চলো বাসায়। (রবি)
পর্ব ১১
- বিয়ে করবা আবার। আমি তোমার বিয়ের সখ মিটাবো। আজকে চলো বাসায়। (রবি)
রবি আস্তে আস্তে রুপার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আর রুপা ভয়ে বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।
আর একটু পর পর রবির দিকে চোখ তুলে তাঁকাচ্ছে।
রুপার মনে হচ্ছে এখনি বুঝি তার আত্মা দেহ ত্যাগ করবে।
রবি, রুপার খুব কাছে চলে এসেছে।
রুপা একবার দেখেই কিছুটা শব্দ করে কেঁদে দিলো।
রবি মূহুর্তেই রুপাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে দাঁড়া করালো। শক্ত করে হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে খুব চাপা গলায় বলল।
- কাঁদছো কেনো। (রবি)
কাঁদতে কাঁদতে বলল, - আপনাকে খুব ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। (রুপা)
রবির রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো।
চিৎকার করে বলল। - চুপ করো, তোমার এই ন্যাকামি কান্না আমার সহ্য
হচ্ছে না। (রবি)
রুপা, রবির দিকে তাঁকিয়ে এতটাই ভয় পেলো যে।
কান্না নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেলো।
গলা দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হচ্ছে না, চোখ দিয়ে পানি পরছে না।
রবি এবার স্বাভাবিক গলায় বলতে শুরু করলো।
- আমি এই দুদিন পাগলের মত কল করেছি রিসিভড করলে না কেনো। সেদিন কল কাটার পর থেকে, তোমাকে কল করেই যাচ্ছি করেই যাচ্ছি। তোমার কি একবারও ইচ্ছে করলো না। একবার রিসিভড করি। আমাকে কি তোমার মানুষ বলে মনে হয়না? ( রবি)
রুপা চুপ করে আছে। রবির মেজাজ যেনো তাতে
আরো বেশি খারাপ হচ্ছে।
এইবার খুব জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো।
- কি হলো কথা বলছো না কেনো। (রবি)
রুপা ভয়ে আঁতকে উঠলো।
কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এই দুদিন ইচ্ছে করে একটা কল ও রিসিভড করেনি রবির।
আস্তে করে বলল, - আ। আ। আমি ই.. ই..ই..চ..(রুপা)
- ইচ্ছে করে ধরোনি তাই তো। (রবি)
রবি রাগে, রুপাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
রুপা তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো।
রুপার সামনে রবি হাটু মুরে বসে। রুপার হাত চেপে ধরে আবার জিঙ্গাসা করলো।
- এই বিয়ে মানো না। আবার বিয়ে করবে।
একটু থামলো।
তারপর রুপাকে আস্তে করে ধরে বিছানায় বসালো।
রবি হাটুগেরে রুপার সামনে বসে রুপার দুই হাত ধরে শান্ত গলায় বলল। - তুমি কেনো এমন করছো জান। আমি তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি। তুমি সেইটা বুঝার চেষ্টা করো। আমার মত করে তোমাকে আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না। তুমি প্লিজ এমন করো না জান। তুমি ছারা আমার জীবনে সব অর্থহীন।
আমাদের বিয়েটা সব নিয়ম মেনে হয়েছে। আমরা এখন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। (রবি)
কথা গুলো বলতে বলতে রবির গলা ধরে আসছিলো।
মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে। কিন্তু রুপা এইসবের
কিছুতেই মন দিলো না।
রুপা শুধু ভাবছে এই লোকটা না তাকে আজ মেরেই ফেলে।
- রুপা তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না। (রবি)
রুপা ভয়ে ভয়ে বলল। - আমি আপনাকে হাজবেন্ড হিসেবে মানি না।
প্লিজ আমাকে যেতে দিন। (রুপা)
রবি, রুপার মুখের দিকে তাঁকালো।
ওই চোখে মুখে শুধু ভয়ের ছাপ কিন্তু কেনো?
রুপা কি একটুও রবির চোখে তাঁকিয়ে দেখতে পারেনা। ওই চোখে রুপার জন্য কতটা ভালোবাসা।
একটু খানি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য রবি ছটফট করছে, পাগল হয়ে যাচ্ছে।
কেনো রুপা বুঝতে চায় না।
রবি তার ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
আজ রুপাকে মন ভরে ভালোবাসবে রবি।
রুপাকে বেধে রাখবে, তার ভালোবাসার বাধনে। ভাবতে ভাবতেই রবি, রুপার দুই গালে হালকা ভাবে ধরে বলল।
- আজ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসতে চাই রুপা।
আমি তোমাকে আমার ভালোবাসায় বেধে রাখতে
চাই। আমার হৃদয় নিঙ্গরানো ভালোবাসা দিয়ে
তোমাকে সিক্ত করতে চাই।
আমি এইভাবে আর পারছি না। আমি তোমাকে খুব কাছে পেতে চাই রুপা। (রবি)
রবি, রুপাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে।
খুব যত্ন সহকারে শুইয়ে দিয়ে। রবি, রুপার খুব কাছে গেলো।
একবার চোখে চোখ রাখলো। তারপর মনে মনে বলল, আজকের পর তুমি আর আমাকে দুরে
সরিয়ে রাখতে পারবে না।
রবি, রুপার দুগাল ধরে, ঠোটে ঠোট রেখে গভীর চুমু খেতে লাগলো।
রবি যেনো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে রুপার মাঝে।
রুপার নেশায় মাতাল হয়ে যাচ্ছে।
রবির নিশ্বাস দ্রুত গতিতে বেড়ে চলল। রবি, রুপার কপালে, চোখে, গালে, ঠোটের স্পর্শ দিতে লাগলো।
রবি যেনো অজানা সুখের সন্ধানে মেতে উঠছে। গলায় ঘাড়ে পাগলের মত চুমু খেতে লাগলো।
রবি, রুপার দুহাত চেপে ধরতেই ভয় পেয়ে গেলো।
রুপা কোনো রেসপন্স করছে না।
রবি হালকা মাথা তুলে রুপার দিকে তাঁকালো। গালে আলতো করে ধাক্কা দিলো, বুঝতে পারলো সেন্সলেস হয়ে গেছে রুপা।
সাথে সাথে রবি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে বসে। গ্লাসের পানিটা নিয়ে কয়েকবার চোখে মুখে দিতেই
রুপা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাঁকালো।
রবি, রুপার মাথাটা হালকা করে তুলে পানি খাওয়ালো।
রুপা ওইভাবেই শোয়া অবস্থায় পরে রইলো।
রবি রুপার পাশেই দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো।
অতিরিক্ত ভয়ে কান্নাকাটির ফলে রুপা সেন্সলেস
হয়ে গিয়েছিলো।
রবি উঠে দাঁড়ালো।
- চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। (রবি)
- ( চুপ)
- আজকের পর আর আমি কোনো কিছুতে জোর করব না তোমাকে। তুমি নিজের মত থাকো।
চলো তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসি। (রবি)
রুপা আস্তে আস্তে উঠে বসলো।
ওড়না ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়ালো।
রবি আর রুপার দিকে না তাঁকিয়ে বেড়িয়ে গেলো। রুপাও রবির পিছু পিছু চলল।
সেদিন রাতেই রুপা বাবার রুমের সামনে এসে
দাঁড়ালো।
খুব শান্ত গলায় বলল।
- আসবো আব্বু। (রুপা)
- হে মা আয়। (আব্বু)
- আব্বু আমি বিয়েতে রাজি। তুমি যেই ছেলের কথা বলেছিলে। আমি তাকেই বিয়ে করবো। (রুপা)
- ভেবে বলছিস তো মা। (আব্বু)
- হ্যাঁ আব্বু। (রুপা)
রুপার মা রুমে ঢুকতেই, শুনতে পেলো কথাগুলো।
এসেই রুপাকে জরিয়ে ধরে বলল। - আমি জানতাম তুই ঠিক বিয়েতে রাজি হবি।
রুপা একটু হেসে নিজের রুমে ফিরে এলো।
আজকে রুপার খুশির দিন। একবার বিয়েটা হয়ে গেলেই। তাহলে ওই সন্ত্রাসী রবির হাত থেকে মুক্তি পাবে।
কিন্তু রবি যদি ওর বিয়ের কথা জানতে পারে।
ভেবেই ভয় হলো খুব।
তারপর ভাবলো কিছু একটা প্ল্যান করতেই হবে।
যেনো রবি কিছুতেই বিয়েটা ভাঙ্গতে না পারে।
রবি বসে বসে ভাবছে। আজ রুপা কীভাবে পারলো
সেন্সলেস হয়ে যেতে।
একটুও রবির অনুভূতির কথা ভাবলো না।
কিসব ভাবছে মেয়েটা। আসলে এইটা নিতে পারেনি।
তাই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।
খুব রাগ হয়েছিলো তখন রুপার উপর।
অনেক কষ্টে, সামলে নিয়ে রুপাকে বাড়িতে দিয়ে এসেছিলো।
একবার ভেবেছিলো আর যেতে দিবেনা।
ওর কাছে রেখে দিবে। কিন্তু পরে কি ভেবে যেনো দিয়ে এসেছিলো।
নাহ ভালো লাগছে না কোনো কিছুতে।
রুপার ভয়েজ টা খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।
ভাবতে ভাবতেই মোবাইলটা হাতে নিলো।
রবি আর কোনো কিছু না ভেবে।
রুপাকে কল দিলো?
পর্ব ১২
রবি আর কোনো কিছু না ভেবে।
রুপা কে কল দিলো।
ফোনটা সেই কখন থেকে বেজে চলেছে।
রুপা ফোনের স্ক্রীনের দিকেই তাঁকিয়ে আছে। কিন্তু রিসিভড করবে না বলে যেনো, শপথ নিয়েছে।
আর ওই দিকে রবি একের পর এক কল দিয়েই চলেছে।
রুপা খুব বিরক্তের সাথে কল টা রিসিভড করলো বাধ্য
হয়ে।
- এইভাবে কল দিয়ে আমার মোবাইলের চার্জ শেষ
করছেন কেনো। (রেগে)। (রুপা) - তোমার ভয়েসটা খুব শুনতে ইচ্ছে করছিলো। (রবি)
- শুনা হয়েছে। (রুপা)
- হুমমম। (রবি)
- তাহলে আর দয়া করে ডিস্টার্ব করবেন না। (রুপা)
- এখন কেমন আছো। (রবি)
- অনেক ভালো আছি। (রুপা)
- হুম আমার থেকে দূরে থাকতে পারলেই তো তুমি
ভালো থাকো। (রবি) - এতো দিনে বুঝতে পেরেছেন তাহলে। (রুপা)
- কি করছো। (রবি)
- ক্রিকেট খেলি। (রুপা)
- এভাবে কথা বলছো কেনো রুপা। (রবি)
- এতো রাতে মানুষ কি করতে পারে। নিশ্চই ঘুমায়।
তাহলে জেনেও এই আজব প্রশ্ন করলে, কি বলব। (রুপা) - তুমি ঘুমাচ্ছিলে না রুপা। (রবি)
- (চুপ)
- আচ্ছা শুনো। (রবি)
- কি। (রুপা)
- খুব মিস করছি আমার বউটাকে। (রবি)
রুপা মনে মনে হাসলো। কে কার বউ। তা কিছুদিন পরই বুঝা যাবে। হুহ। - রুপা I love you। (রবি)
- এই এক কথা বলতে বলতে তো, আমার কান ঝালাপালা করে দিলেন। আর কতো বার বলবেন। (রুপা)
- আমার এই নিশ্বাস যতো দিন আছে। ততোদিন আমি বলে যাব ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। (রবি)
- দেখুন কদিন পর আমার এক্সাম প্লিজ আমাকে এইভাবে ডিস্টার্ব করবেন না। (রুপা)
- এবার তো তোমার অনার্স শেষ তাইনা। শুনো তারপর কিন্তু তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো বলে রাখছি। (রবি)
- হি হি হি হি। (রুপা)
- হাসছো কেনো। হাসির মত কি বললাম। (রবি)
- না এমনি ( কেনো হাসছি তা যদি জানতেন)। (রুপা)
- যে কারনেই হাসোনা কেন। তোমার হাসি শুনতে
পেলাম এইটাই আমার অনেক সৌভাগ্য। (রবি) - (চুপ)
- তোমার মতো, তোমার হাসিটাও খুব সুন্দর। আমি আরেকবার তোমার প্রেমে পরে গেলাম। (রবি)
- (চুপ)
- স্যরি রুপা বউ। (রবি)
- কেনো। (রুপা)
- আজকের জন্য। আমি আসলে নিজেকে কন্ট্রোল
করতে পারিনি তখন। রিয়েলি স্যরি রুপা। (রবি) - আমি আর সেই কথা মনে করতে চাই না। (রুপা)
-প্লিজ স্যরি। আমি তোমার অনুমতি ছাড়া কখনো কিছু করতে চাই না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। (রবি) - আমি ঘুমাবো এখন। (রুপা)
- ওকে গুড নাইট। (রবি)
রবি সেদিনের পর থেকে।
রুপাকে আর সেইভাবে ডিস্টার্ব করেনি।
শুধু দূর থেকে দেখেছে।
রবি চায়না রুপা ওরে ভুল বুঝুক।
তাই একা ছেড়ে দিয়েছে, চলুক নিজের মত।
কিন্তু একবার এক্সামটা শেষ হলেই।
আর নিজের থেকে আলাদা থাকতে দেবেনা রুপাকে।
একবারের জন্য নিয়ে আসবে নিজের কাছে।
রুপা আজ খুব খুশি, এক্সাম শেষ।
এখন থেকে আর রবি সাথে দেখা হবেনা।
বিয়ের দিনও সামনে এগিয়ে আসছে।
আর কিছুদিনের মধ্যে রুপার বিয়ে হয়ে যাবে।
বিয়ের আয়োজন রিতিমত শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু রুপা খুব ভয়ে আছে।
রবি যদি কোনো গোন্ডগোল করে বসে।
সন্ত্রাসী তো কোনো বিশ্বাস নেই।
আজ রুপা তৃন্নিকে নিয়ে একটু বেড়িয়েছে।
বিয়ের কিছু কেনাকাটা করার জন্য।
অনেকটা লুকিয়েই বিয়েটা করছে রুপা।
নিজের ফ্রেন্ডদের কেউ বলেনি বিয়ের কথা।
ওদের কে বললেই রবি জেনে যাবে, তাই বলেনি।
আজ রুপা ভাবছে এসেছেই যেহেতু।
নিজের পছন্দেই বিয়ের বেনারসিটা কিনে নিয়ে যাবে।
- এই আপু দেখ এই শাড়িটা সুন্দর না। (তৃন্নি)
- দেখি দেখি। এ্যা বাবা লাল। না আমি বিয়েতে লাল শাড়ি পরবো না। (রুপা)
- বিয়েতে তো সবাই লাল শাড়িই পরে। (তৃন্নি)
- আমি লাল পরতে চাচ্ছিনা। অন্য কোনো কালার
দেখ না। আমি কিছুই চুজ করতে পারছি না। (রুপা) - আপু তোরে নিয়ে আমার আসাই উচিত হয় নাই।
দোকানের সব শাড়ি দেখে ফেলছি কোনোটাই তো
তোর পছন্দ হচ্ছে না। (তৃন্নি) - আরেকটু দেখনা বোন। (রুপা)
- আচ্ছা আপু এইটা দেখ। লাল পাড়ের সাদা শাড়ি
আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। (তৃন্নি) - ওয়াও সত্যিই তো অনেক সুন্দর। ভাইয়া আপনি
এইটা এতক্ষন লুকিয়ে রেখেছিলেন কেনো। আচ্ছা
তুই বস আমি একটু ট্রাই করে দেখি। (রুপা)
রুপা শাড়িটা নিয়ে যাচ্ছিলো। আর তখনি কেউ একজন রুপার হাত ধরে টান দিয়ে আড়ালে নিয়ে এলো।
চিৎকার করতে যাবে তখনি মুখ চেপে ধরলো।
- এক্সাম শেষ হলো, আজ দশ দিন। এই দশটা দিন তোমাকে আমি দেখিনা। জানো আমার মনের অবস্থা কি। কোনো ধারণা আছে তোমার সেই বিষয়ে।
আমার মনের ভিতর কি চলছে সেইটা তুমি বুঝো।
কথা বলো না কেন। (রবি)
রবি, রুপার হাতের দিকে তাঁকালো, বিয়ের শাড়ি।
এইটা দেখে যেনো রবির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো।
এক হাত দিয়ে রুপার মুখ চেপে ধরে আছে।
আর এখন আরেক হাত দিয়ে রুপার হাত শক্ত করে
চেপে ধরলো।
- বিয়ের শাড়ি। তুমি বিয়ে করছো আবার। এতো সাহস পাও কীভাবে। কিছু বলিনা বলে কি ভেবেছোটা কি যা খুশি তাই করবা। কি হলো বলো না কেন। (রবি)
রুপা চোখ দিয়ে ইশারা করলো, রবি তার মুখ চেপে
ধরে রেখেছে।
রবি মুখ ছেরে দিলো কিন্তু হাত এখন ধরে রেখেছে।
রুপা ভয়ে ভয়ে বলল, - এইটা আমার কাজিনের বিয়ের শাড়ি। আমাকে বলল পছন্দ করে কিনে আনতে। তাই। (রুপা)
- আমাকে তুমি বোকা পাইছো। তোমার কাজিনের বিয়ের শাড়ি। তুমি নিজে টায়াল দিচ্ছো। (রবি)
- ও তো নাই। তাই আমি ট্রাই করছি। সত্যি বলছি। (রুপা)
- বুঝলাম। আমি যে কল দিচ্ছি। তোমার মোবাইল বন্ধ পাই কেনো। (রবি)
- মোবাইল ছিনতাই হয়ে গেছে। আর আমার তো মোবাইল তেমন দরকার হয়না। তাই এখনো কেনা হয়নি। (রুপা)
- তুমি কি আমাকে পাগল করে দিতে চাইছো। (রবি)
- (চুপ)
- আমাকে বিনা দোষে আর কত শাস্তি দিবা। বলতে
পারো। আমার অপরাধ কি। এতটা ভালোবাসি
তোমাকে। বুঝতেই চাও না। (রবি)
রবির চোখ বেয়ে পানি পরছে।
তাতেও রুপার কিছু যায় আসে না।
রুপা সিমটা ভেঙ্গে ফেলেছে। যেনো রবি আর যোগাযোগ করতে না পারে।
রুপা এখন শুধু অপেক্ষায় আছে। কবে বিয়েটা হবে।
- আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি রুপা।
আমি পারবো না তোমাকে ছারা থাকতে। প্লিজ
তুমি উল্টা পাল্টা কিছু করোনা। আমি সহ্য করতে পারবো না। (রবি) - আমাকে যেতে দিন। তৃন্নি একা বসে আছে। (রুপা)
রবি, রুপাকে ছেড়ে দিলো।
রুপা চলে যেতে নিলেই। আবার রুপাকে টান দিয়ে জরিয়ে ধরলো রবি।
এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে।
রুপার নিশ্বাস ছারতেও কষ্ট হচ্ছে।
রবি, রুপাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।
- রুপা প্লিজ এমন কিছু করোনা। যা আমি সহ্য করতে পারবোনা। (রবি)
- যেতে দিন প্লিজ। (রুপা)
রবি, রুপাকে ছেরে দিতেই। রুপা দৌড়ে চলে এসেই শাড়িটা নিয়ে চলে আসে।
তৃন্নি জিঙ্গাসা করেছিলো, এমন করছে কেনো রুপা।
রুপা কিছুই বলল না।
তারাতারি বাসায় ফিরে।
বাবাকে রাজি করালো। যেনো বিয়েটা গ্রামের বাড়িতে থেকে হয়।
রুপার বাবা মেয়ে বলতে অজ্ঞান।
যখন যা বলছে, তাই করছে।
সবাই একটু অবাক হচ্ছে রুপার ব্যবহারে।
কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছে, এইটাই তাদের কাছে অনেক।
গ্রামে চলে এসেছে সব। বিয়ের আয়োজন এখানেই হচ্ছে।
কোনো অপশন রাখলো না রবির জন্য।
রবি চাইলেও আর রুপার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
আর দুদিন পর বিয়ে।
পর্ব ১৩
রবি চাইলেও আর রুপার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
আর দুই দিন পরে বিয়ে।
আজ রুপার গায়ে হলুদ।
খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আজ রুপা কে।
রুপা যা চেয়েছে তাই হচ্ছে।
কিন্তু রুপা আনন্দ করতে পারছে না।
কেনো সে আনন্দ করতে পারছেনা, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা।
একটু পর পর মোবাইলের দিকে তাঁকাচ্ছে।
- এই আপু তোকে আজ যা সুন্দর লাগছে না। পুরো হলুদ পরি লাগছে। (তৃন্নি)
রুপা কিছু বলল না।
মনে হচ্ছে, সে এখানে, কিন্তু তার মনটা অন্য কোথাও রয়েছে।
তৃন্নি এবার একটু ধাক্কা দিয়ে রুপা কে জিঙ্গাসা করলো।
- এই আপু তোর কি হয়েছে।
তৃন্নির ধাক্কায় যেনো রুপার হুশ ফিরে এলো।
কিছু বলতে যাবে, তখনি রুপার মায়ের ডাক এলো। - এই তৃন্নি, রুপাকে নিয়ে আয়। এখনি হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। (মা)
- আসছি। এই আপু চল চল। (তৃন্নি)
হলুদের পর্ব শেষ হয়েছে।
তেমন ভাবে অনুষ্ঠান না হলেও সবাই খুব আনন্দ করছে।
রুপার জেদের কারনেই, এইভাবে লুকিয়ে বিয়ে হচ্ছে।
কিন্তু রুপা কেনো যেনো।
কোন কিছু মন থেকে করতে পারছেনা।
কেনো পারছে না তাই ভাবছে বসে বসে।
মোবাইলের দিকে তাঁকিয়ে আছে রুপা এক দৃষ্টিতে।
রবি একবারো কল করেনি।
রবি বলে, সে নাকি রুপা কে খুব ভালোবাসে।
এই কি তার ভালোবাসার নমুনা?
ওহ না, রবি কীভাবে কল করবে রুপা কে।
রুপা নিজেই তো সব রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।
সিম টা ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছে।
এখন নতুন সিম ইউস করছে।
আর এই নাম্বার ফ্যামিলি মেম্বাররা ছারা আর কেউই জানে না।
রুপা কি যেনো একটা ভেবে মোবাইল টা হাতে নিলো।
কিছু একটা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না।
পাবে কীভাবে রবির নাম্বার তো আর সে সেভ করে
রাখেনি।
হতাশ হয়ে মোবাইল টা রেখে দিলো রুপা।
রাত পোয়ালে কাল রুপার বিয়ে।
এখন সে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
রবি কে খুব মনে পরছে।
বুকের ভিতর শুণ্যতা অনুভব করছে।
রবির থেকে দূরে আসার পর।
রুপা এখন বুঝতে পারছে।
সে আসলে রবি কে ভালোবেসে ফেলেছে।
এতো দিন কেনো বুঝতে পারলো না।
সেইটা ভেবে রুপার নিজের উপরেই খুব রাগ হচ্ছে।
আর কিছুক্ষন পর বিয়ে হয়ে যাবে।
এখন কি করবে।
নিজের দোষে আজ এতোকিছু হচ্ছে।
না কিছুতেই এই বিয়ে করতে পারবেনা রুপা।
রুপা ভাবতে ভাবতে দড়জার দিকে এগিয়ে গেলো। ঠিক তখনি।
- রুপা মা দেখতো, এই পাঞ্জাবিটা কেমন। আমার মেয়ের বিয়েতে আজ এই পাঞ্জাবিটা পড়বো। (বাবা)
- সুন্দর আব্বু। ( রুপা)
কি করতে যাচ্ছিলো রুপা।
সবাই কতো খুশি। এই বিয়েটা না করে কিনা রুপা পালিয়ে যাচ্ছিলো।
রুপা বাবার দিকে একবার তাঁকালো।
চোখে মুখে কতো খুশি।
রুপার বাবা, রুপার মাথায় হাত রেখে বলল।
- মা রে আমি অনেক খুশি। তুই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করছিস। ( বাবা)
একটু হেসে চলে গেলো রুপার বাবা।
রুপার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
আচ্ছা রবি এখনো আসছে না কেনো।
রবি তো রুপা কে নিয়ে যেতে পারে।
এখানে এসে বলতে পারে রুপা আমার বউ।
আমার বউকে অন্য কোথাও বিয়ে কেনো দিচ্ছেন।
রবি তুমি কোথায় তারাতারি আসো।
তোমার রুপার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
আবার রুপার মনে পরলো রবি এখানে কীভাবে আসবে।
রবি তো জানেই না রুপা কোথায় আছে।
নিজেই নিজের চুল ছিরতে ইচ্ছে করছে।
কেনো সে বুঝলো না আগে।
রবি কে সে এতোটা ভালোবাসে।
কাঁদছে রুপা এখন। এই কান্না করা ছারা কিছুই করার নেই রুপার।
- এই রুপা মা তোকে সাজাতে লোক এসে গেছে। (বড় আম্মু)
রুপার কান্না দেখে থমকে গেলো। - রুপা কি হয়েছে।
রুপা বড় আম্মুকে জরিয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করে
দিলো।
সাথে বড় আম্মুও কেঁদে দিলো।
কিছুক্ষন কাঁদার পর রুপা কান্না থামিয়ে জিঙ্গাসা করলো। - তুমি কাঁদো কেন। (রুপা)
- তুই কাঁদছিস তাই। তুই কাঁদছিস কেনো। (বড় আম্মু)
কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা রুপা। - ত। ত। তোমাদের ছেরে চলে যাবো তো তাই। (রুপা)
- থাক কাঁদিস না মা। নে। সেজে নে এখন, বর এসে যাবে। বর ঢাকা থেকে আসবে তাই তারাতারি আসছে। (বড় আম্মু)
বড় আম্মু চলে গেলো।
পার্লারের লোক রুপাকে সাজানো শুরু করে দিলো।
রুপার সেদিনের কথা মনে পরে গেলো।
সেদিনও রুপাকে বউর মতোই সাজানো হয়েছিলো। ঠিক রবি যেমনটা চেয়েছিলো সেভাবেই সাজিয়ে ছিলো।
- আপু তোকে এতো সুন্দর লাগছে আজ। দুলাভাই তো মাথা ঘুরে পরে যাবে। (তৃন্নি)
যার দেখার কথা সেই তো দেখবে না।
তাই যতো সুন্দর করেই সাজানো হোকনা কেনো। তাতে রুপার কিছু যায় আসেনা।
- সবাই কোথায় রে। (রুপা)
- সবাই খুব ব্যাস্ত এক্ষনি বর এসে যাবে। (তৃন্নি)
বলতে বলতেই হৈচৈ শুনা গেলো বর এসে গেছে। তৃন্নিও ছুটে গেলো।
বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয়ে গেলো।
রুপা এখন শশুর বাড়িতে আছে।
রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
কবুল বলতে চায়নি রুপা। কিন্তু যখন, কিছুতেই রুপা কবুল বলছিলো না।
তখন রুপার মা এসে বলল, রুপা কবুল বলছে না দেখে নাকি সবাই খারাপ মন্তব্য করছে।
তা শুনে রুপার বাবা অসুস্থ হয়ে পরছেন।
তখন বাধ্য হয়ে কবুল বলে ছিলো।
আসার সময় খুব কেঁদেছিলো।
এক পরিবারকে ছেরে চলে যাচ্ছে।
দুই যাকে ভালোবাসে। তাকে হারিয়ে ফেলল নিজের দোষে।
কিন্তু রুপা এই বিয়ে মানে না।
সে ঠিক করেছে লোকটা আসলে।
তাকে সব খুলে বলবে, তার আগে বিয়ে হয়েছে।
সে যেনো রুপাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।
কিন্তু লোকটা আসছে না কেনো।
আচ্ছা লোকটা যদি রুপাকে ডিভোর্স না দেয়।
আজ যদি রুপার কাছে অধিকার চায়।
না, কিছুতেই না। রুপার উপর শুধু রবির অধিকার আছে।
আগে লোকটা আসুক তাকে সবটা বুঝিয়ে বলবে।
তারপর না মানলে সুইসাইড করবে।
এসব ভাবতে ভাবতে রুপা পিছু ঘুরতেই দেখলো। লোকটা রুমের দড়জা লক করছে।
রুপার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
এখন কি হবে তার সাথে, তা ভেবে।
পর্ব ১৪
রুপার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
এখন কি হবে তার সাথে, তা ভেবে।
লোকটা দরজা লক করে পিছু ফিরতেই।
রুপা যা দেখলো, তার জন্য একেবারেই প্রস্তুুত ছিলো না।
- রবি তুমি। তুমি এসেছো আমাকে নিতে। আমি জানতাম তুমি আসবে আমার কাছে। (রুপা)
রুপা কথাগুলো বলেই রবিকে জরিয়ে ধরলো।
কিছুক্ষন পর নিজে থেকে ছেরে দিয়ে আবার বলতে
শুরু করলো। - স্যরি রবি। আমি বুঝতেই পারিনি। কখন তোমাকে, এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। আমি যখন তোমার থেকে দূরে সরে আসছি। তখন একটু একটু করে ফিল করছিলাম। তুমি আমার কতোটা জুড়ে আছো। জানো যখন আমি বুঝতে পারলাম, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তখন আর কিছুই করার ছিল না। অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো। একবার, পালাতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবার মুখের দিকে
তাঁকিয়ে আর পারিনি। বিয়েটা আমাকে করতেই হলো। কিন্তু, বিশ্বাস করো আমি এই বিয়ে মানি না। আমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে তোমার সাথে।
তাইনা বলো। তাই এই বিয়ের কোনো ভেলুই নেই।
রবি শুনো আমাদের হাতে একদম সময় নেই কিন্তু।
এখনি পালাতে হবে ওই লোকটা আসার আগে।
তোমার তো সন্ত্রাসী দলের অনেক লোক আছে।
তোমার তো অনেক পাওয়ার তাই না। যখন এই লোকটা আমাদের মাঝে আসতে চাইবে। তখন তুমি কিছু একটা করবে। যেনো ভয় পেয়ে আর না আসে তাহলেই হবে। রবি চলো আর এক মূহুর্ত এখানে দাঁড়ানো যাবে না। (রুপা)
রুপা, রবির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
কিন্তু রবি কে বিন্দু পরিমাণ হেলাতে পারলো না
জায়গা থেকে।
রুপা আবার পিছু ফিরে বলল।
- রবি তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেনো। চলো। (রুপা)
- (চুপ)
- রবি তুমি কি চাও, ওই লোকটা এসে আমাকে
তোমার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দিক। (রুপা)
রবি কোনো কথা বলল না।
রুপার হাতটা ছারিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হাতের ঘড়িটা খুলছে।
- রবি কি শুরু করেছো, অযথা সময় নষ্ট করছো। (রুপা)
রবির পরনে থাকা সাদা পাঞ্জাবীটা খুলে।
তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
খুব ক্লান্ত আজ রবি।
কথা বলার শক্তিটুকুও যেনো নেই।
রবি ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে।
একটা টি-শার্ট পরে নিয়ে, বিছানায় শুয়ে পরলো।
রুপা অবাক হয়ে।
রবির সামনে এসে আবার বলল, - রবি তুমি এখানে শুয়ে পড়লে কেনো। তুমি কি বাসর টা এই লোকটার বাড়িতেই, করবে বলে ঠিক করলে নাকি। এইটা যদি ভেবে থাকো। তাহলে আমি, বলব ভুল করছো তুমি। যতো বড় সন্ত্রাসীই হও না কেনো। যতো পাওয়ারই থাকনা কেনো। এখানে থাকাটা আমাদের জন্য বিপদজনক।
চলো তো। (রুপা)
রুপা, রবির হাত ধরতেই, এইবার রবি এক ঝাটকায়
সরিয়ে নিলো হাত।
মনে হলো রুপায় হাত ধরায়, রবির হাতে ফসকা পরে যাচ্ছে।
- রবি এমন করছো কেনো। চলো এই বাড়ি থেকে। (রুপা)
এইবার রবি মুখ খুলল। শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো।
রবির চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে।
রুপা, রবির চোখের দিকে তাঁকিয়ে আঁতকে উঠলো।
রবি দাঁতে দাঁত চেপে বলল। - এই বাড়িটা আমার। তাই বাড়ি, ছেরে চলে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। (রবি)
- তোমার বাড়ি। তুমি কি আমাকে এখানে তুলে এনেছো। আর ওই লোকটাকে কি করেছো। (রুপা)
- রুপা তুমি কি এখনো কিছুই বুঝতে পারছো না। (রবি)
- কি বুঝবো। কি বুঝার কথা বলছো তুমি। (রুপা)
- বিয়েটা তোমার, আমার সাথে হয়েছে। এই নিয়ে তোমাকে আমি দুু-দুবার বিয়ে করলাম। (রবি)
- সত্যি বলছো। (রুপা)
রবির মুখে এই কথা শুনার পর রুপার খুশি আর কে দেখে।
খুশিতে যেনো এবার পাগলই হয়ে যাবে।
রুপা দৌড়ে এসে রবি কে জরিয়ে ধরতেই।
রবি, রুপা কে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে।
চিৎকার করে বলল,
- তোমাকে আমি আমার এই বুকে জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সেই মর্যাদা রাখতে পারোনি। তোমাকে আমি আমার জীবনের থেকে, বেশি ভালোবেসে ছিলাম। আমার শূণ্য জীবনে তোমাকে দেখে, আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিলো।
কিন্তু তুমি কি করেছো রুপা। (রবি)
রুপার যেনো সবটাই গুলিয়ে যাচ্ছে।
কি শুনছে সে এইসব। সব সত্যি শুনছে তো।
- আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে চাইলাম। আর তুমি আমাকে কিছু না জেনে সন্ত্রাসী বলে দূরে সরিয়ে দিলে। বার বার অপমান করলে। একবার আমার কাছে জানতে চাইতে পারতে। আমি কেমন। তা না করে তুমি তোমার মনগড়া আজব সব উদ্ভট চিন্তা করে নিলে।
সেদিন কিছু সন্ত্রাসী চাঁদা নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা করছিলো। এক পর্যায় আমাকে পেটে ছুরি মেরে দেয়। এইসব কারনেই সবসময় জনি আর ওর লোকজন আমার সাথে থাকে। আমাকে প্রটেক্ট করার জন্য। কিন্তু সেদিন আমি একা থাকায় ওরা সেই সুযোগ বুঝে। আমার উপর হামলা করে। বেঁচে থাকার কোনো আশাই ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ তুমি এলে সবকিছু পাল্টে দিলে। বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা খুঁজে পেলাম। (রবি)
রবি থামলো, হাপিয়ে গেছে কথাগুলো বলতে বলতে।
বুকের ভিতর যেনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
আজ রুপা সবথেকে বড় কষ্টটা দিয়েছে রবি কে।
- স্যরি রবি। আমার ভুল হয়ে গেছে। (কেঁদে কেঁদে)। (রুপা)
- কীসের স্যরি। সব কিছুতে স্যরি বললেই সবঠিক হয়ে যায়না রুপা। আমি জানো তো, আজকেও অনেক আশা করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি কবুল বলবে না। কিন্তু যখন শুনলাম সবাই হৈচৈ করছে কনে কবুল বলেছে বলে। তখন যেনো মূহুর্তেই সব আমার কাছে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে সেখানে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। (রবি)
- আমি। (রুপা)
থামিয়ে দিয়ে রবি আবার বলতে লাগলো।
- কীভাবে পারলে রুপা অন্য কারো উদ্দেশ্যে কবুল
বলতে। একবারো আমার কথা মনে হয়নি।
আমার ভালোবাসার কথা মনে হয়নি। আমাদের বিয়ের কথা মনে হয়নি। (রবি)
রুপা কিছুই বলতে পারছেনা। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।
সে আজ বুঝতে পারছে, সে কতো বড় ভুল করেছে। - চুপ করে আছো কেনো। কীভাবে পারলে। বলছো না কেনো। আচ্ছা তোমার কি একবারো আমার
ভালোবাসার স্পর্শের কথাও মনে পড়ে নি? তোমার ওই ঠোটে তো এখনো আমার ঠোটের স্বাদ লেগে
রয়েছে। সেই কথা মনে পড়ে নাই তোমার। ছিঃ রুপা ছিঃ। আজ আমারই ঘৃণা হচ্ছে যে আমি
তোমাকে ভালোবেসেছি। (রবি)
রুপা দুই কানে হাত চেপে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলল।
- প্লিজ রবি চুপ করো। আমি আর শুনতে পারছিনা। (রুপা)
রবি বেলকনিতে চলে গেলো। আর রুপার সামনে দাঁড়ালো না।
কারন রুপার কান্না সহ্য করতে, পারবে না রবি। নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসেছে কিনা।
রুপা ফ্লোরে বসে বেশ কিছুক্ষন কেঁদে দু হাতে চোখের জল মুছে বেলকনিতে গেলো।
রবি গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রাতের অন্ধকার দেখছে।
- রবি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও। (রুপা)
রবি, রুপার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। শান্ত কন্ঠে বলল।
-সেইটা আর সম্ভব না। তুমি যেই মূহর্তে, আজ কবুল বলেছো। ঠিক সেই মূহুর্তে আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছো চিরদিনের জন্য। আমি আর তোমাকে। আমার, স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। তুমি তোমার মতো করে থাকো, আমি আমার মতো। (রবি)
রবি, রুপাকে পাশ কাঁটিয়ে চলে যেতে নিলেই রুপা রবির হাত ধরলো।
- আমি তোমাকে ভালোবাসি রবি। অনেক বেশিই ভালোবাসি। (রুপা)
রুপার মুখে এইভাবে ভালোবাসি। কথাটা শুনে
রবির বুকে অজানা ব্যাঁথা অনুভব হলো।
এতোদিন যেই কথাটা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো।
আজ সেই কথাটা শুনেও রবি, রুপাকে কাছে টেনে নিতে পারলো না।
বার বার একটা কথাই মনে পরে যাচ্ছে। রুপা অন্য কারো উদ্দেশ্যে কবুল বলেছে।
ওদের বিয়েটা কে অস্বীকার করেছে।
রবি হাতটা ছারিয়ে নিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। জানে তার আজ ঘুম আসবেনা।
তবুও রুপাকে দেখানোর জন্যই মিথ্যে ঘুমের ভান ধরলো রবি।
রুপা বেলকনির দরজার পাশেই বসে পরলো। আজ যেনো চোখের পানিও বাধ মানছে না।
এতো ভালোবাসা পেয়ে হারানোর কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।
এতো দিন ভালোবাসাটা বুঝতে চায়নি।
আর আজ যখন নিজে বুঝতে পারলো।
রবি কে সে কতোটা ভালোবাসে। তখন একটা ভুলের কারনে, সব তছনছ হয়ে গেলো।
রবিকে ভালোবেসে, রবির এতোটা কাছে থেকেও। সে আজ অনেকটা দূরে।
সারারাত এখানে বসে বসেই কেঁদে গেলো রুপা।
রবি শেষ রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলো নিজেই জানে না।
ঘুম ভাঙ্গতেই ঘড়ি দেখলো ৮ টা বাজে।
রুপার কথা মনে পরতেই বেলকনির দিকে তাঁকালো।
ওখানেই বসে আছে। মেয়েটা সারারায় ঘুমায়নি বোধয়।
রবি বিছানা ছেরে উঠে দাঁড়ালো। রুপার দিকে আরেকবার তাঁকালো, চোখ লাল হয়ে আছে।
মুখটা শুকিয়ে গেছে।
রবি মনে মনে বলল, এইসবের জন্য তুমিই দায়ী।
রবি চলে গেলো রেডি হতে।
অফিসে যেতে হবে। বাসায় থাকা যাবে না। রুপাকে এড়িয়ে যেতে চায় রবি।
রবি রেডি হয়ে রুপার সামনে এসে দাঁড়ালো।
রুপা, রবির দিকে তাঁকালো।
ভাবছে হয়তো রবির রাগ কমেছে। এখন রুপাকে কাছে টেনে নিবে।
- এভাবে বসে থেকে কি প্রমাণ করতে চাচ্ছো, আমি
তোমার উপর অত্যাচার করি। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি অফিসে যাচ্ছি। (রবি) - আমি একা থাকবো বাড়িতে। (রুপা)
রবি আর কিছু বলল না, চলে গেলো।
রুপা আবারো কাঁদতে শুরু করলো।
রবির এভাবে ইগনোর করা দেখে। একটা ভুলের শাস্তি রবি ওরে এভাবে দিচ্ছে। ভাবতেই যেনো বুক ফেটে কান্না আসছে রুপার।
রবি যাওয়ার সময়, শান্তা কে বলে গেলো।
রুপার দিকে খেয়াল রাখতে। আর ল্যান্ড লাইনে ফোন করলে যেনো, রুপা কি করছে সেই আপডেট রবি কে জানায়। আর এইসব যেনো রুপা না জানে।
শান্তা, রবির চলে যাওয়ার পর রুপার কাছে আসলো।
রুপার পাশে ফ্লোরে বসে গালে হাত দিয়ে।
রুপাকে দেখতে লাগলো।
রুপা হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে। শান্তা কে হঠাৎ দেখতে পেয়ে প্রথমে ভয় পেয়ে গেলো।
তারপর দেখলো একটা ১৪-১৫ বয়সী মেয়ে বসে আছে তারপাশে।
রুপা জিঙ্গাসা ভরা চোখে তাঁকালো।
- ম্যাডাম আপনে তো অনেক সুন্দরি। আপনেরেই কি, কালকে স্যার বিয়া কইরা নিয়াসছে। (শান্তা)
কান্না থামিয়ে রুপা বলল। - হুমম। তুমি কে। (রুপা)
- আমি শান্তা। এই বাড়িতেই থাকি, কাজ করি। (শান্তা)
- তুমি কি কাজ করো। তুমি কাজ করতে পারো।
তুমি তো অনেক ছোট। ( রুপা) - কি যে কন ম্যাডাম, আমি গ্রামের মাইয়া কি পারিনা হেইডা কন। (শান্তা)
- লেখাপড়া করো না। (রুপা)
- না, স্যারের কাছে আসার পর। ভর্তি করাইতে
চাইছিলো। কিন্তু আমি হইনাই আমার পড়ালেখা
ভালা লাগে না। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছিলাম। তারপর আর পরি নাই। আমার কাজ করতেই ভালা লাগে। (শান্তা) - এখানে আসলা কীভাবে। (রুপা)
- সৎ মা ঘরে রাখতে চায়না মারে ধইরা। পরে একদিন আব্বায় এই বাড়ির দাড়োয়ানরে কইলো। হে জানি আমার লাইগা ঢাকায় একটা কাজ দেখে। পরে হে আমারে স্যারের কাছে নিয়াইলো। স্যার অনেক ভালা মানুষ আমারে থাকতে দিছে। (শান্তা)
- ওহ। (রুপা)
- আচ্ছা ম্যাডাম আপনে কাঁদতাছেন কেন। (শান্তা)
রুপা এই কথা শুনে আবার জোরে শব্দ করে কান্না
করে দিলো।
আর শান্তা আবার গালে হাত দিয়ে রুপার কান্না দেখতে লাগলো।
কিছুক্ষন কাঁদার পর বলল।
- রবি আমাকে ভালোবাসে না। (রুপা)
- স্যার আপনেরে ভালা না বাসলে। কি বিয়া
করতো। (শান্তা) - ঠিক বলছো তো তুমি। তাহলে রবি আমাকে
ভালোবাসে। (রুপা) - হো ম্যাডাম, স্যার একদিন বলছিলো আপনার কথা। (শান্তা)
- কি বলেছিলো। (রুপা)
- বলছিলো শান্তা, আমি বিয়ে করে রুপাকে নিয়ে
আসলে। তুই সবসময় রুপার খেয়াল রাখিস। (শান্তা) - তুমি নিজেই তো বাচ্চা একটা মেয়ে। তুমি আমার
খেয়াল রাখবা কীভাবে। (রুপা) - আমি বাচ্চা হইলেও আমি অনেক বুঝি। আমার
অনেক বুদ্ধি আছে। এখন আপনে কন তো কি হইছে। (শান্তা) - তোমার স্যার আমাকে বলছে আমাকে আর নাকি
ভালোবাসে না। (রুপা) - স্যার কি রাগ করছে আপনার উপর। (শান্তা)
- হুমমম আমি একটা ভুল করছি তাই। (রুপা)
- এর জন্যই স্যার ওই কথা বলছে আপনারে। আপনে লাইগা পরেন, এইভাবে বইসা না থাইকা। স্যার রে বুঝান আপনে স্যাররে অনেক ভালাবাসেন। (শান্তা)
- তুমি জানলা কীভাবে এইসব। (রুপা)
- সিনেমায় দেখছি ম্যাডাম। আমিও বিয়ার পর আমার জামাই রাগ করলে, তার রাগ ভাঙ্গামু। তারে
বুঝামু আমি তারে কত্ত ভালাবাসি। (শান্তা) - সত্যি বলছো। (রুপা)
- আপনেরে মিথ্যা কেন কমু। (শান্তা)
- আচ্ছা তুমি যাও নিচে। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। আজকে আমি রান্না করবো। (রুপা)
শান্তা নিচে চলে গেলো। আর রুপা চলল ফ্রেস হতে।
আজ নিজের হাতে রবির সব পছন্দের রান্না করে।
রবিকে চমকে দিবে।
ভেবেই চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো রুপার।
পর্ব ১৫
ভেবেই চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো রুপার।
রুপা শান্তার থেকে রবির পছন্দের খাবার গুলো
জেনে নিয়ে।
খুব যত্ন করে রান্না শেষ করলো।
কিন্তু সমস্যা হলো রবিকে কীভাবে বাসায় আসতে রাজি করাবে।
- শান্তা এখন কি করবো। তোমার স্যার তো বাসায় আসবে না। ( রুপা)
- ম্যাডাম আপনি স্যার রে ফোন কইরা কন। স্যার না আসলে খাইবেন না। দেখবেন স্যার হাজির। (শান্তা)
- ঠিক বলছো তো। (রুপা)
- আমার কি ঠ্যাকা পরছে বেঠিক কইতে যামু। (শান্তা)
শান্তা রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে চলে গেলো।
মেয়েটা এমনই অদ্ভুত, রুপা কিছুক্ষন শান্তার চলে
যাওয়া দেখে। রবি কে কল করলো।
রিং হচ্ছে কিন্তু রবি ধরছে না।
রুপাও ছারার পাত্রি নয় অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে।
- হ্যালো। (রবি)
- এই তোমার ফোন ধরার সময় হলো। কখন থেকে কল দিচ্ছি। (রুপা)
- কল দিয়েছো কেনো তুমি। (রবি)
- আমি তোমাকে কল দিতে পারিনা বুঝি। (রুপা)
- তোমার সাথে ফালতু কথা বলার সময় আমার নেই। (রবি)
- তুমি এইটা বলতে পারলা। (রুপা)
- এতো কথা না বলে, কি বলবা বলে ফেলো। (রবি)
- বাসায় আসো একসাথে খাবো। (রুপা)
- আমি আসতে পারবো না। (রবি)
- তুমি না আসলে আমি খাবো না বলে দিলাম। (রুপা)
- যা খুশি তা করো রাখছি। আমাকে ডিস্টার্ব করো
না। (রবি) - হ্যালো। হ্যালো।
রবি, রুপা কে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে।
কেটে দিলো।
রুপা মোবাইলের দিকে একবার তাঁকালো।
টেবিলে রাখা খাবার গুলোর দিকে একবার তাঁকিয়েই কান্না করে দিলো। খুব কষ্ট হচ্ছে রুপার।
এতোটা খারাপ ব্যবহার করতে, রবি কীভাবে পারছে
সেইটা ভেবেই খুব কান্না পাচ্ছে।
রুপা না খেয়ে থাকবে। এইটা কিছুতেই মানতে
পারবেনা রবি। তাই বাধ্য হয়ে বাসায় আসলো।
এসে দেখে রুপা খাবার টেবিলেই গালে হাত দিয়ে
বসে আছে।
আজ রুপা লাল পারের কালো শাড়ি পরেছে।
চুল গুলো ছেরে রেখেছে, নাকে নাকফুল।
হাতে চুরি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে রুপাকে।
রবি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
বেশিক্ষন তাঁকিয়ে থাকতে পারলো না।
চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল।
- তোমার জন্য আমার সব কাজ ফেলে আসতে হলো। আর কখনো আমাকে অফিসে কল করে ডিস্টার্ব করবে না। দাও খেতে দাও। (রবি)
রুপা, রবির কথায় চমকে উঠলো সামনে তাঁকাতেই
দেখে রবি।
এক গাল হেসে দিয়ে বলল।
- আমি জানতাম তুমি আসবে। বসো আমি খাবার দিচ্ছি। (রুপা)
- কি ব্যাপার তুমি খেতে বসছো না কেনো। (রবি)
-আমি তোমার হাতে খাবো। তুমি নিজে খাবে আর
আমাকে খাইয়ে দিবে। (রুপা) - আমি পারবো না তোমাকে খাইয়ে দিতে। ঢং করো না খেয়ে নাও নিজে। (রবি)
- খাইয়ে না দিলে খাবো না বললাম তো। (রুপা)
রবি আর কোনো উপায় না দেখে রুপা কে খাইয়ে
দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে।
- কেমন হয়েছে রান্না। আজ আমি রান্না করেছি
তোমার জন্য। সব তোমার পছন্দের খাবার। (রুপা) - কি হলো বলছো না কেনো। কথা বলো। (রুপা)
- ভালো। (রবি)
- শুধু ভালো। (রুপা)
- চুপ করে খাও তো। আর আমাকেও খেতে দাও। (রবি)
রবি, রুপার মুখে খাবার দিতেই। রুপা, রবির
আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিলো। রবি ব্যাঁথায় শব্দ করে উঠলো। - উফফ। এভাবে কেউ কামড় দেয়। (রেগে গিয়ে)। (রবি)
রুপা কিছু না বলে হাসতে হাসতে খেতে লাগলো। - আমি তোমাকে খাইয়ে দিবনা। (রবি)
- উফফ। তুমিও না। বউয়ের আদরও বুঝো না। আমি তো তোমাকে একটু আদর করলাম। (রুপা)
বলেই আবার হাসতে শুরু করলো রুপা। - এইটা কে আদর বলে। (রবি)
- হুমম বলে তো। এতো কথা না বলে খাওয়াও তো। (রুপা)
খাবার খেয়ে রবি আর অফিসে গেলো না আজ। ফোন করে জানিয়ে দিলো।
রুমে এসে পোশাক চেঞ্জ করছে রবি।
রুপা রুমে ঢুকতেই দেখলো, রবি খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রুপা একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে রবিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। - রবি আমি সারাজীবন এইভাবে তোমাকে জড়িয়ে
ধরে থাকতে চাই। তুমি জানো না, তোমাকে আমি
কতোটা ভালোবাসি। (রুপা) - ছারো রুপা। (রবি)
রবি মুখে বলছে ঠিকই ছেরে দিতে।
কিন্তু মনে মনে চাইছে রুপা এইভাবেই ওকে জড়িয়ে ধরে রাখুক।
রুপার নরম হাত রবির বাহু জড়িয়ে আছে।
রবির শরীর যেনো শীতল হয়ে যাচ্ছে।
রবি কিছুই বলতে পারছে না।
রুপা, রবির পিঠে নাক ঘসতে ঘসতে বলল।
- উহু ছারবো না। রুমে ঢুকে তোমায় খালি গায়ে দেখে, নিজেকে সামলাতে পারলাম না। তোমার কাছে খুব টানছিলো আমায়। (রুপা)
রবির নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। রুপা, রবিকে ছেড়ে দিয়ে। সামনে এসে দাঁড়ালো।
দুজন দুজনার দিকে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে আছে।
রুপা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের উপর ভর করে উঁচু হয়ে। রবির ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেয়ে।
ঘাড়ে নাক মুখ ঘসতে লাগলো।
রবি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে।
রুপাকে দেওয়ালে চেপে ধরে, রুপার দুই গাল ধরে ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে পাগলের মতো কিস করতে লাগলো।
রুপা, রবির পিঠ আকরে ধরলো।
অনেকক্ষন পর রবি, রুপা কে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে। রুম থেকে চলে গেলো।
রুপা অবাক হয়ে গেলো। রবির ব্যবহারে বিশ্বাস করতে পারছে না। রবি এমনটা করতে পারে।
রুপা দুই হাটু মুরে, হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে থাকলো।
সকালে রবি অফিসে যাওয়ার সময় বলে গেলো।
রুপা যেনো তৈরি থাকে।
রায়হান ওদের জন্য নাকি আজ সন্ধায় একটা পার্টি রেখেছে।
রুপা তাই রেডি হচ্ছে। খুব সুন্দর করে সাজলো। আর মনে মনে ভাবলো, আজ দেখবো।
তুমি আমাকে ভালোবাসো, নাকি ভালোবাসো না।
মনের অজান্তেই বলে উঠলো মিঃ রবি।
রেডি থেকো আজকের ডোজ টা নেওয়ার জন্য।
হি হি হি!
পর্ব ১৬
রবি ভাবতে ভাবতে অফিসের দিকে পা বাড়ালো।
কে জানে আজ রাতে কি অপেক্ষা করছে রবির জন্য।
রবি অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখে।
সারাবাড়িতে ক্যান্ডেল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
খুব সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
রবি ভাবছে রুপা আজ কি করতে চাইছে।
রবি ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে, ক্যান্ডেলের আলো ছাড়া আর কোনো আলো নেই।
কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না।
রবি কয়েক বার রুপা বলে ডাকলো।
কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না।
রবি ড্রয়িং রুম ছেরে সিড়ি দিয়ে উঠছে।
আর একটা মিষ্টি সুগন্ধি ভেসে আসছে।
রবি রুমে প্রবেশ করতেই। দেখতে, পেলো ক্যান্ডেল আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। কিন্তু রুপা কোথায়।
হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে রবি পিছু ঘুরতেই।
দেখতে পেলো রুপা দরজা লক করে দাঁড়িয়ে আছে।
অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজ।
রুপাকে লাল শাড়িতে। রবি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে রবি, রুপার নেশায়।
রবি ভাবছে, রুপা এইরকম, আবেদনময়ী হয়ে ইচ্ছে করে এসেছে।
যেনো খুব সহজে ঘায়েল করতে পারে।
রুপা এগিয়ে আসছে রবির দিকে।
রবির শরীরে যেনো অদ্ভুত শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
রুপা, রবি কে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
এতটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে যে, দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেনো আলাদা নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে।
রুপা আস্তে আস্তে গহনা গুলো, খুলছে আর আয়না দিয়েই।
রবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
রবির দুর্বলতা, রুপা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।
তাই তো এতো আয়োজন রবিকে নিজের করে ফিরে পাওয়ার।
রুপার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে রবির উপর।
জানে রবির সবটা জুড়ে শুধু রুপার অস্থিত্বই বিরাজমান।
রুপা, রবির দিকে এগিয়ে আসছে।
রবি ঠাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
রবি বেশ বুঝতে পারছে, আজ রুপার জয় হবেই হবে।
রুপা, রবির একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। নিশ্বাসের গতি বেড়েই চলেছে দুজনের।
রবি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে আছে, অনেক আগেই।
রুপা, রবির দুই হাত ধরে নিজের কোমড়ে রাখলো।
তারপর একটু উঁচু হয়ে দুই হাতে রবির গাল ধরে মুখের সামনে, মুখ এনে বলল।
- আমি শুধু তোমার হতে চাই। তোমাতে, হারিয়ে যেতে চাই। তোমাকে নিজের করে নিতে চাই। যেনো তুমি চাইলেও আমাকে আর দূরে, সরিয়ে দিতে না পারো। আজ আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না। (রুপা)
কথা গুলো বলতে গিয়ে রুপার বার বার গলা ভারি হয়ে আসছিল।
আর রবির হার্টবিট প্রচন্ড গতিতে উঠা নামা করছিলো।
কথা শেষ হতেই রুপা, রবির ঠোটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
রবিও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।
রুপার ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে, রবির বুকে আবিষ্কার করলো।
মাথাটা একটু উঁচু করে রবির দিকে তাঁকাতেই। গতকাল রাতের কথা মনে পরে গেলো।
লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে রুপার।
কীভাবে পারলো ভাবতেই, লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে রুপার।
রবি কি ভেবেছে কে যানে।
রুপা নিজেকে রবির কাছ থেকে ছারিয়ে নিলো। খুব সাবধানে।
রুপার মন চাইছে না রবিকে ছেরে উঠতে।
মনে হচ্ছে এইভাবেই রবি ঘুমিয়ে থাকুক।
আর রুপা মন ভরে দেখবে।
রুপা, রবির কপালে একটু ঠোটের ছোয়া দিয়ে।
উঠে পরলো।
যেনো রবির কাছে আর, লজ্জায় না পরতে হয়।
আচ্ছা রবি আবার আগের মত হয়ে যাবে তো।
ভাবতেই মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো রুপার।
ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুপা চা নিয়ে রুমে ফিরে আসতেই, দেখে রবি এখনো ঘুমাচ্ছে।
হাজারো লজ্জাকে উপক্রম করে।
রুপা, রবির পাশে গিয়ে বসলো।
রবিকে ডাকতেই রবি চোখ খুলে তাঁকালো।
রবি চোখ খুলেই রুপার দিকে, এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো।
রবির কাছে আজ রুপাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
চোখে মুখে পূর্ণতার ছাপ।
কতক্ষন এইভাবে, তাঁকিয়ে রইলো দুজন দুজনার দিকে জানা নেই।
রুপা আগে মুখ খুলল।
- উঠো, অফিসে যাবে না। (রুপা)
-…. - তোমার চা। (মিষ্টি করে হেসে)। (রুপা)
রবির কি হলো নিজেও জানে না।
রুপার হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিয়ে মেঝে তে ফেলে দিলো।
রুপা বুঝতেই পারেনি, রবি এমন কিছু একটা করবে।
রুপা ভয়ে উঠে দাঁড়ালো।
রবি কিছু না বলে, ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রুপা পাথরের মুক্তির মতো ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
রবি কোনো কথা বলছে না, নিজের মত রেডি হচ্ছে।
রুপা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
এবার রুপা, রবির কাছে আসলো।
- তুমি এমন কেনো করছো রবি। ( রুপা)
-.. - কাল রাতে তো আমাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেলো। তুমি এখন এমন কেনো করছো আমি কিছুই
বুঝতে পারছি না। (রুপা) - …
- কি হলো কথা বলছো না কেনো রবি। ( রুপা)
- …
- এভাবে তুমি চুপ করে থাকতে পারো না রবি। ( রুপা)
রবি রাগি চোখে রুপার দিকে ফিরে তাঁকালো।
তারপর বলতে লাগলো। যা শুনার জন্য, রুপা একদমই প্রস্তুত ছিল না।
- কাল রাতের কথা ভুলে যাও। যা ছিল তা, শুধু মাত্র
একটা এক্সিডেন্ট। (রবি)
রুপা কথাটা শুনা মাত্রই কয়পা পিছু সরে গেলো।
নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।
এইটা কি বলছে রবি।
- রবি তুমি মজা করছো। আমার সাথে তাইনা। (কান্না মিশ্রিত হাসি দিয়ে)। ( রুপা)
- তুমি যেনো আমাকে কি বলতে। আমি লুচু।
তাই না। জানোই তো কাল মাথা ঠিক ছিলনা।
মেয়ে মানুষ সামনে থাকলে কি আর, মাথা ঠিক থাকার কথা বলো। তাও এতটা আবেদনময়ী ভাবে,
এসেছিলে সামনে। তাই ওটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করো না। (রবি) - না, তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি আমাকে ভুল বুঝাচ্ছো। কাল রাতের তোমার প্রত্যেকটা ছোয়ায়
ভালোবাসা ছিল। আমার বুঝতে এতোটুকু ভুল হয়নি। (রুপা) - সেইটা তোমার প্রবলেম। আমি আমার দিক থেকে, তোমাকে ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিলাম। (রবি)
রুপা কাঁদতে কাঁদতে রবির শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
- তুমি মিথ্যে বলছো। বলো তুমি মিথ্যে বলছো।
তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না রবি। (রুপা) - ছারো আমাকে লেট হয়ে যাচ্ছে আমার। ( রবি)
- আমি ছারবো না তোমাকে। তুমি বলো, যা বলেছো সব মিথ্যা। তুমি আমাকে ভালোবাসো। (রুপা)
রবি আর কোনো কথা না শুনে।
নিজেকে ছারিয়ে চলে গেলো, অফিসের উদ্দেশ্যে।
রুপা ওখানেই মেঝেতে বসে পরলো।
চিৎকার করে কাঁদছে আজ রুপা।
কি বলে গেলো এইসব রবি।
সবটা এক্সিডেন্ট।
ভালোবাসা কিছুই ছিলো না।
না আর কিছুই ভাবতে পারছে না। চোখের জল ও
বাধ মানছে না।
রবি আর এক মুহূর্ত দাঁড়াতে পারলো না।
রুপার কান্না দেখতে পারছিল না।
কিন্তু ওর যে কি হয়ে গেলো।
নিজেও বুঝতে পারলো না।
এখন নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছে রবির।
এইটা না করলেও পারতো।
কিন্তু এটাও তো ঠিক। এক সময়।
রুপাও তো রবিকে কম কষ্ট দেয়নি।
প্রতিনিয়ত ঘৃণা আর অপমান ছারা কিছুই দেয়নি।
বিশেষ করে বিয়ের ব্যাপারটা রবি কিছুতেই ভুলতে পারছে না।
রবি কাজ করছিল হঠাৎ মনে পরলো।
এমন ভাবে কথা গুলো বলে এসেছে।
যদি রুপা ভুল, কিছু করে বসে।
ভাবতেই রবির বুকটা কেপে উঠলো।
রবি ফোন করলো বাসায়।
- হ্যালো।
- কে শান্তা। তোর ম্যাডাম কোথায়। (রবি)
- স্যার ম্যাডাম ঘরেই আছে। কি হইছে স্যার। (শান্তা)
- নাহ কিছু না। তুই একটু রুপার উপর নজর রাখিস। (রবি)
বলেই ফোন রেখে দিলো।
রবি একটু সস্তির নিশ্বাস ছারলো।
আর ভাবতে লাগলো আজ যা হলো।
এরপর কি রুপা আর ওর সাথে সহজ হতে পারবে।
আর কি ওর কাছে আসবে।
রুপা আজকের পর আর রবির সাথে কথা বলবে কিনা এইটা ভাবতেও।
এখন রবির ভয় হচ্ছে।
এইরকম আজ না করলেও পারতো।
রুপা গতকাল রাতে সব থেকে সুখ, দিয়েছিল রবিকে।
পূর্ণ করে দিয়েছিল রবিকে।
আর, তার বিনিময় রবি কি করলো।
ভাবতেই রবির এখন রাগ হচ্ছে।
পর্ব ১৭ (অন্তিম)
ভাবতেই এখন রবির রাগ হচ্ছে।
সেদিনের পর আর কেউ ই কারো সাথে তেমন কথা বলেনি, দরকার ছাড়া।
রুপা কথা বলেনি অভিমান থেকে। আর রবি অপরাধ বোধ থেকে।
রবি বেশ কয়েক বার চেয়েছিল, সম্পর্কটা ঠিক করে নিতে।
কিন্তু কোনো এক অজানা কারনে আর সেইটা হয়ে উঠেনি।
দুই মাস পর রবি অফিস থেকে ফিরে রুমে ঢুকতেই দেখে।
রুপা হাতে একটি কাগজ নিয়ে বসে আছে।
রবি ভাবছে, আবার কি হলো।
রবি, রুপার দিকে আড়চোখে, তাঁকিয়েই।
হাতের ব্যাগটা রাখলো।
ড্রেসিং টেবিলের সামন গিয়ে, হাতের ঘড়িটা খুলছে।
তখনি। রুপা বলে উঠলো।
- আমি মা হচ্ছি।
রবির হাত থেকে ঘড়িটা পড়ে গেলো।
রুপার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না রবি।
রুপা কি বলেছে।
- কি বললে। (রবি)
- আমি মা হবো। (রুপা)
রবি কয়েক সেকেন্ড রুপার দিকে তাঁকিয়ে থেকে।
বেড়িয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে।
রুপা, রবির এই ব্যবহারে, বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো।
ভেবেছিলো আজ হয়তো রবি আর রাগ করে থাকতে পারবেনা।
ওদের বেবি হবে এইটা শুনে।
হয়তো রুপা কে কাছে টেনে নিবে।
কিন্তু রবি খুশি হলো কিনা সেইটাই ঠিক বুঝতে পারলো না রুপা।
রবির এইভাবে বেরিয়ে যাওয়াটা, ঠিক মানতে পারছে না রুপা।
রবি গিয়েই রায়হানকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
রায়হান, রবির এই কান্ড দেখে, হতোভম্ব হয়ে গেলো।
আবার, কাঁদতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলো।
- র.. বি..রবি। কি হয়েছে দোস্ত। (রায়হান)
রবি কেঁদেই যাচ্ছে। - রবি প্লিজ দোস্ত বল কি হয়েছে। আবার তোর এই খারাপ ব্যবহার নিতে না, পেরে ভাবি কিছু করে বসেনি তো। প্লিজ দোস্ত টেনশন হচ্ছে খুব। (রায়হান)
রবি কাঁদতে কাঁদতে বলল। - আমি বাবা হচ্ছি দোস্ত। (রবি)
রায়হান রবির এই কথা শুনে, হাসবে না কাঁদবে
সেইটাই বুঝতে পারছে না।
বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল। - বাবা হবি তো খুশির খবর কিন্তু, তুই এমন রাম ছাগলের মত কাঁদছিস কেনো। (রায়হান)
- দোস্ত খুশিতে। এই কথা শুনার পর মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব সুখ আমি পেয়ে গেছি। অবশ্য আরেকটা কারনেও কাঁদছি। (রবি)
রায়হান অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করলো। - আবার আরেকটা কারন কি। (রায়হান)
- রুপা আজ আমাকে সব থেকে খুশির খবরটা শুনালো। আর আমি ওর সাথে, এতোদিন যা তা ব্যবহার করে গিয়েছি। খুব অপরাধ বোধ হচ্ছে। (রবি)
রবি মাথা নিঁচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রায়হান বলল,
- আমি তো, তোকে আগেই বলেছি। ভাবি একটা ভুল করে ফেলেছিলো। কিন্তু শেষে ঠিকই বুঝতে
পেরেছে, যে ভাবি তোকেই ভালোবাসে। কিন্তু তখন কিছু করার ছিল না, বলেই বিয়েটা করতে বাধ্য
হয়েছে। আর বিয়েটা তো অন্য কারোর সাথে হয়নি,
তোর সাথেই হয়েছে তাই না। কিন্তু তুই ওই কথাটা
মনে রেখে ভাবিকে কষ্ট দিলি। (রায়হান) - সত্যি আমিও ভুল করে ফেলেছি। আমার এইটা করা উচিৎ হয়নি। (রবি)
- আচ্ছা তুই এখানে কেনো। এই সময় তোর ভাবিকে সময় দেওয়া উচিৎ। এক্সট্রা কেয়ার নেওয়া দরকার। (রায়হান)
- আসলে রুপার মুখে এই কথা শুনার পর। খুশিতে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তাই তখনি রুপা কে, কিছু না বলে তোর কাছে চলে আসলাম। (রবি)
- তোর কি মাথা খারাপ রবি। তুই এমনটা কীভাবে করলি। ভাবি নিশ্চই উল্টা পাল্টা ভেবে বসে আছে। তুই আর এখানে গাধার মতো দাঁড়িয়ে না
থেকে ভাবির কাছে যা। (রায়হান) - আসলে প্রথমবার বাবা হচ্ছি তো। তাই কিছু মাথায় আসছিলো না। স্যরি দোস্ত। (রবি)
- স্যরিটা আমাকে না বলে, ভাবি কে গিয়ে বল। হালা। (রায়হান)
- আচ্ছা বাই এখন আসি। (রবি)
রবি চলে যেতে নিলেই রায়হান, রবিকে ডাক দিয়ে বলল।
- ভাবির জন্য কোনো গিফট নিয়ে যাস। আবার খালি হাতে চলে যাস না। (রায়হান)
- থ্যাংকস দোস্ত, আমার মাথায় এইটা একদমই ছিলনা। আসি এখন বাই। (রবি)
রবি বাড়িতে ঢুকেই শান্তা কে সামনে পেয়ে গেলো। - এই রুপা কোথায় রে। (রবি)
- স্যার, ম্যাডাম রে অনেক্ষন হলো দেখিনা। আজকে আমার সাথে আইসা, কোনো গল্পও করলো না। (শান্তা)
- আচ্ছা আমি দেখছি। তুই যা। (রবি)
শান্তা কিছু দূর যেতেই আবার রবি ডাক দিলো। - শান্তা শুন। (রবি)
- জ্বি স্যার। (শান্তা)
রবি শান্তার হাতে দুটো এক হাজার টাকার নোট দিয়ে বলল।
- এই টাকা দারোয়ান কে দিয়ে, মিষ্টি আনিয়ে তোরা মিষ্টি মুখ করে নিস। (রবি)
- মিষ্টি ক্যান স্যার। (শান্তা)
- আমি বাবা হবো বলে কথা। (রবি)
রবি শান্তা কে আর কিছু বলতে না দিয়ে উপরে চলে গেলো।
শান্তা টাকা নিয়ে বিষ্ময়ের সাথে, ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন।
তারপর একটা লাজুক হাসি দিয়ে দারোয়ানের কাছে ছুটে গেলো।
রবি রুমে ঢুকে দেখে রুপা নেই।
রবির বুকটা ধুক ধক করে উঠলো।
ওয়াশরুম, বেলকোনি কোথাও নেই।
আচ্ছা রুপা, রবিকে ফেলে চলে গেলো নাতো।
ভাবতেই রবির মুখ থেকে, না। শব্দটা বেড়িয়ে এলো।
রবি এখন কি করবে সেইটাই ভাবছে।
রুপা কে হাড়িয়ে ফেললে, রবি পাগলই হয়ে যাবে।
রবি আর কিছু উপায় না পেয়ে।
রায়হান কে কল করলো।
ওই পাশ থেকে হ্যালো বলার আগেই। রবি বলতে লাগলো।
- দোস্ত আমি এইটা কি করলাম। (রবি)
- ক্যান কি হইছে। (রায়হান)
- রু। পা। রুপা। (রবি)
- ভাবি কি। (রায়হান)
- রুপা কে খুঁজে পাচ্ছিনা কোথাও। (রবি)
- আমি তোকে আগেই বলেছিলাম রবি। (রায়হান)
- তুই প্লিজ একটু দেখ। (রবি)
- ওকে আমি দেখছি, বাট তুই মাথা ঠান্ডা রাখ
উল্টা পাল্টা কিছু করিস না। (রায়হান)
রায়হান ফোন রেখেই সব জায়গায়, খুঁজা শুরু করে দিল। এমন কি হাসপাতাল গুলাও বাকি রাখলো না। বলা তো যায় না কখন কি হয়।
রবি ও সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে।
ড্রাইভ করছে আর পাগলের মত, আশেপাশে খুঁজছে।
কিন্তু রুপা?
না কোথাও রুপাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।
রবি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরলো।
ঘড়ির কাটা ১০ টা ছুই ছুই।
রবি বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে।
রুপার সাথে যতই মিস বিহেভ করুক না কেনো। রুপা সব সময় রবির সাথে সাথেই থাকতো।
এই সময়টা তে রুপা, রবির পাশেই বসে থাকতো।
আজকে সব থেকে খুশির খবরটা পেয়েছে রবি।
আর তার সাথে যে এটাও ওয়েট করছিল।
একবারো ভাবতে পারেনি রবি।
নিজেকে খুব অসহায় লাগছে আজ।
নিজের ভুলের কারনেই সব থেকে সুখের দিনটা
দুঃখের কারন হয়ে গেলো।
রবির কিছুই ভালো লাগছে না।
কি করবে এখন সে, রুপাই ছিল ওর একমাত্র বেঁচে থাকার প্রেরণা।
আর সেই বেঁচে থাকার প্রেরণাই, যেনো হারিয়ে গেছে।
রায়হান একটু আগে কল করে জানিয়েছে।
কোথাও পাওয়া যায়নি রুপাকে।
তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রবি মোবাইলটা বিছানায় ছুরে ফেলে ছাদে চলে গেলো।
রবি ছাদে উঠতেই দেখলো কেউ বসে আছে দোলনায়।
রবির আর বুঝতে বাকি রইলো না।
ওইটা কে, দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
রুপা সামনে তাঁকাতেই, দেখতে পেলো।
রবি দাঁড়িয়ে আছে।
রুপা, রবি কে দেখে আৎকে উঠলো।
এ কি হাল করেছে মুখের, এক সন্ধার মধ্যে।
পুরো বিদ্ধস্ত লাগছে রবি কে।
রুপা দাঁড়িয়ে গেলো।
রবি দিকে জিঙ্গাসা ভরা চোখে তাঁকালো।
রবি কিছু না বলেই রুপাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
রুপা, রবি এভাবে কাঁদতে দেখে, ভয় পেয়ে গেলো।
কি হয়েছে সেইটাই ভাবছে।
তবে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে।
এই প্রথম রবি, রুপাকে জরিয়ে ধরলো।
রুপা, রবির কাধে মাথা হেলিয়ে দিলো। মনের অজান্তেই খুব শান্তি অনুভব করছে আজ রুপা।
রুপা জরিয়ে ধরতেই রবি কাঁদতে কাঁদতে বলল।
- প্লিজ রুপা তুমি কখনো আমাকে ছেরে যেও না।
আমার রাগটা একটু বেশি, তুমি তো জানো। কিন্তু আমাকে কখনো ছেরে যাবার চিন্তাও করোনা। (রবি)
রুপা, রবির এই রিয়াকশন কীভাবে নিবে সেইটাই ভাবছে।
আজ যেনো এক অন্য রবিকে দেখছে রুপা।
কিন্তু রবি হঠাৎ কাঁদছে কেনো।
রবির কান্না যে রুপা সহ্য করতে পারছে না।
রবির কান্নার প্রতিটা শব্দ রুপার বুকে গিয়ে বিধছে।
- রবি।
রুপাকে থামিয়ে দিয়ে আবার বলতে লাগলো। - আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি তো জানো বলো, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আসলে সেইদিনের ঘটনা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলাম না। তাই তোমার কাছে আসতে চেয়েও, আসতে পারিনি। আর ইগোটা বড্ড সার্থপর কিছু তেই সরাতে পারছিলাম না। কিন্তু তুমি আমাকে কথা দাও, যাই হয়ে যাক না কেনো তুমি কখনো আমাকে ছেরে যাবেনা। (রবি)
- রবি ছারো আমাকে। (রুপা)
- না আমি ছারবো না। তুমি আগে বলো, তুমি আমাকে কখনো ছেরে যাবেনা। (রবি)
- আচ্ছা বাবা যাবো না। কিন্তু তুমি আগে বলো তোমার এই অবস্থা কেনো। আর তুমি কাঁদছোই বা কেনো। (রুপা)
- তুমি আমাকে ছেরে চলে গিয়েছিলে কেনো। আমি তোমাকে কত্ত জায়গায় খুঁজেছি। তুমি সেইটা জানো। আমার পাগলের মত লাগছিল সবকিছু। (রবি)
এতক্ষন জরিয়েই ছিল দুজনে।
রুপা নিজেকে রবির বাহুডোর থেকে ছারিয়ে বলল। - আমাকে খুঁজেছো মানে। আমি কোথায় যাবো। তোমাকে এত বড় নিউজ দিলাম।
বাট তুমি তো কোনো রিয়াকশনই দিলানা। তাই খুব মন খারাপ লাগছিল। তাই এখানে এসে বসেছিলাম। কখন যে এতো রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। (রুপা)
রুপা কথা গুলো বলে, সামনে তাঁকাতেই দেখে। রবি নেই।
রুপা হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে নিচে তাঁকালো।
রবি এক হাটু গেরে রুপার সামনে বসে আছে। আর এক হাতে রুপার একটা হাত ধরে আছে।
আরেক হাতে একটা রিং।
- স্যরি আমার জান। আমাকে কি আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায়। কথা দিচ্ছি আর কখনো কষ্ট দিবনা। পৃথিবীর সমস্ত সুখ তোমার পায়ের কাছে
হাজির করব। প্লিজ সুইটহার্ট লাস্ট চাঞ্জ। (রবি)
রুপা একটু দুষ্টুমি করে। অন্যদিকে, মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
রবি আবার বলতে শুরু করলো।
- আমাদের পুচকুটার হতভাগ্য। পিতা টা কে, কি একটা বারের জন্য ক্ষমা করে দেওয়া যায়না। (রবি)
রুপা এবার হেসেই দিলো। - পুচকুর পিতা টা, এতো বোকা কেনো।
হাতের রিং টা কি আমাকে পড়াবে না। শুধু দেখানোর জন্যই নিয়ে আসছে। হুম। (রুপা)
রবি একটু মুচকি হেসে রুপার আঙ্গুলে রিং টা পরিয়ে দিয়ে, উঠে দাড়ালো।
এখন দুজনেরই চোখে মুখে ভালোবাসার পূর্ণতার হাসি।
রুপা দুই হাতে রবির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল।
- পুচকুর পিতা যে এইভাবে কাঁদতে পারে।
মেয়েদের মতো, আগে জানতাম নাতো। (রুপা) - পুচকুর মায়ের জন্য পুচকুর পিতা, অনেক কিছুই করতে পারে। (রবি)
- তা মিঃ রবি সাহেব। আমি কি একটু আপনাকে জরিয়ে ধরতে পারি। এই বুকে মাথা রাখতে পারি।
এই বুকে আমার পৃথিবীর সমস্ত, সুখ খুঁজে পাই সেইটা কি আপনি জানেন। (রুপা)
রুপার কথা শেষ হওয়ার আগেই।
রবি, রুপাকে জরিয়ে ধরলো।
রুপাও শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে।
এইভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর। রবি, রুপাকে ছেরে। দুই গালে হাত রেখে, দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল।
- আমি ভালোবাসার পিপাসায় তৃষ্ণার্থ।
এখন তো আর সেইভাবে তোমাতে ডুব দিয়ে তৃষ্ণা মিটানো যাবেনা। তা তোমার এই মিষ্টি ঠোটের,
শীতল উষ্ণতা কি পেতে পারি। (রবি)
রুপা, রবির কথার মানে বুঝতে, না পেরে জিঙ্গাসা করলো।
- সেইভাবে বলতে, কোন ভাবে। (রুপা)
- ওই যে ওইভাবে, সেইরাতে যেভাবে আমাকে তুমি পূর্ণ করেছিলে। আমি তো রাগ না করলে জানতেই পারতাম না। আমার বউটা এত্ত রোমান্স জানে। (রবি)
রুপা, রবির বুকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে লজ্জা মাখা সুরে বলল। - যাও তো, তুমি অনেক ফাজিল। (রুপা)
- যা বাব্বাহ, এখন আমি ফাজিল হয়ে গেলাম। আর সেদিন। সেদিন তো আমার পুরো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিলে। (রবি)
- রবি।
রুপা রাগি লুক নিয়ে তাঁকালো রবির দিকে।
- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর বলব না কিন্তু এখন এইটা চাই। (রবি, রুপার ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে বলল)
রুপা আস্তে আস্তে রবির দিকে এগিয়ে আসছে। রবি, রুপার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
রুপা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে দাঁড়িয়ে।
একটু উঁচু হয়ে, এক হাতে রবির চুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে ধরে।
আরেক হাতে রবির বাহু আকরে ধরে রবির ঠোটের কাছে ঠোট নিয়ে গিয়ে, তাঁকিয়ে রইলো। রবির ঠোটের দিকে। দুজনের নিশ্বাসই ভারী হয়ে এসেছে। রবি আর একটুও দেরী না করে দুই হাতে রুপার কোমড় জরিয়ে ধরে, রুপার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
এইভাবে সেই মেয়েটির ভালোবাসা।
পরিপূর্ণ রুপ খুঁজে পেল।
লেখা – সামান্তা রনি
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “সেই মেয়েটি – রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – ভয়ংকর বাসর রাত – তাই চিৎকার করিনি