রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১০: গত পর্বে আমরা দেখেছি মিরার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আমাদের কাব্য। অন্যদিকে স্বর্ণা যেন পিছুই ছাড়ছে না কাব্যের। এখন দেখার পালা কাব্য কি করে? শেষ পর্যন্ত কাব্যকে কে পায়? মিরা নাকি স্বর্ণা? চলুন দেখি কি হয়।
মিরার সৌন্দর্যে কাব্য মোহিত
তারপর আমি মিরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে যেন হঠাৎ কোন এক স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। মিরা আজ একটা কালো সিল্কের শাড়ি পরে আসছে, হাতে ম্যাচিং করা কালো চুড়ি, কপালে ছোট একটা কালো টিপ, আর ঠোঁটের ছোট ঐ তিল। এ যেন পরীর রাজ্য থেকে আমার সামনে কোন এক পরী দাড়িয়ে আছে।
আর সে রাজ্যের সমস্ত সৌন্দর্য যেন এই পরীর কাছে তুচ্ছ। মিরাকে কালো এই শাড়িটাতে যা লাগছে না, আমি মিরাকে যতই দেখছি ততই যেন ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি….
মিরাঃ কিরে কাব্য এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস? আমাকে কেমন লাগছে বললি না তো? (মিরা একটু লজ্জা পেয়ে বললো)
কাব্যঃ অপূর্ব। কি দেখবো আর আমার পরীকে দেখছি। মন চাইছে সারাজীবন তোমার নেশায় যেন আমি মাতাল হয়ে যাই। (আমি যেন এখনো কল্পনার ভিতর আছি) বুঝতেও পারি নাই কি বলে ফেলেছি মিরাকে।
মিরাঃ সত্যিইইই বলছিস তুই? (মিরা খুশি হয়ে বলল)
কাব্যঃ আরে এত খুশি হয়ে লাভ নেই। তুই আমার বন্ধু হস তাই তোর মন রাখতে মিথ্যা বলেছি। সত্যি কথা বলতেকি তোকে না দেখতে একদম পেত্নির মত লাগছে শাঁকচূর্ণী একটা। (বুঝতেই পারছেন মজা করে বললাম)
মিরাঃ কিহ্ সত্যিই আমাকে দেখতে খুব খারাপ লাগছে! (মন খারাপ করে বলল মিরা)
আমি মিরার চোঁখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি ছল ছল করছে মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে দিবে।
কাব্যঃ আরে পাগলি মন খারাপ করছিস কেন? আমি তো তোর সাথে মজা করছিলাম। সত্যি কথা বলতে তোকে আজ অনেক কিউট আর অনেক সুন্দর লাগছে মিরা। তুই যদি আমার ফ্রেন্ড না হয়ে গালফ্রেন্ড হতি তাহলে তোকে আমি এখনি জড়িয়ে ধরে একটা ইয়ে দিতাম।
মিরাঃ তুই চাইলেই কিন্তু এটা সম্ভব কাব্য। (মিরা একটু লজ্জা পেয়ে বললো)
কাব্যঃ মানেএএ, কি সম্ভব?
মিরাঃ আচ্ছা কাব্য, তুই কি কিছুই বুঝিস না। শুন একটা মেয়ের হাতে গুণা তিন জন বান্ধবী ছাড়া একটামাত্র ছেলে বন্ধু আছে। আর সে ছেলে বন্ধুটার ছোট ছোট বিষয়গুলোতে অধিকার খাটায় সে। তাকে সে সব সময় অন্য মেয়েদের থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। তার ভালো খারাপ যাই হোক না কেন সব পরিস্থিতে তার ছায়া হতে চায়। সে তোর কাছে কি চায় এটা কি তুই বুঝিস না।
মিরার ভালবাসা প্রকাশ
কাব্য একটু চুপ থেকে বলে- মিরা তোর কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতেছি না আমি।
মিরাঃ তুই সত্যিই কিছু বুঝতেছিস না কাব্য।
কাব্যঃ না। আচ্ছা যা বলার পরিস্কার করে বল।
মিরাঃ ঠিক আছে তাহলে শোন। কাব্য আমি তোকে ভালোবাসি। আর শুধু ভালোবাসি না খুব খুব ভালবাসি। I Love You Kabbo. I Love You Very Much. (মিরা চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলল)
কাব্যঃ কিহ্ মিরা আমাকে ভালবাসে এটা শুনে আমি কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না। মিরা আমাকে ভালোবাসে এটা শুনে আমার মনের ভিতর কেমন যেন একটা শান্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো ও যদি আমার সাথে নাটক করে? ধুর আমি এসব কি ভাবছি ও যদি আমার সাথে নাটকও করে তো করুক। আর আমি তো নিজেই চাচ্ছিলাম যে মিরা যেন আমার সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক করুক। উপর আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যেই করে। (কাব্য মনে মনে ভাবলো)
মিরাঃ কিরে কাব্য কিছু বলছিস না যে? প্লিজ তুই আমাকে না করিস না তুই না করলে আমি ঠিক থাকতে পারবো না। তোকে না পেলে আমি মরে যাবো কাব্য। (কাঁদতে কাঁদতে বললো মিরা)
হঠাৎ মিরার মুখে মরার কথা শুনে আমার বুকটা কেমন যেন কেপে উঠলো।
(জানি ও হয়ত মিথ্যা কথা বলছে। তবুও ওর মুখে মরার কথা শুনে আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে।)
কাব্যঃ চুপ কর মিরা, একদম চুপ। আমি কি বলেছি নাকি যে আমি তোকে ভালোবাসি না। আমিও তোকে ভালবাসি মিরা। কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নাই। যদি তুই আমার সাথে তোর বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিস। আর হ্যাঁ আরেকবার যদি তুই মরার কথা বলেছিস তো, তোর আগে তুই আমার মরা…।
(আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। কিভাবে বলবো কেউ আমার ঠোট দুটো যে তার রসাল মিষ্টি ঠোট দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাঁ সে আর কেউ নয় মিরা। প্রায় ৩মিনিট পর ও আমাকে ছেরে দেয়)।
মিরার দম বন্ধ করা কিস
এখন দুজনেই হাপাচ্ছি। আর আমি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললাম,
কাব্যঃ মিরা এভাবে কেউ কিস করে। আর একটু হলে তো মা..। (আর কিছু বলতে পারলাম না। কারণটা নিশ্চয় বুঝেছেন)
এবার তো প্রায় ৫মিনিট। ৫মিনিট পর ছাড়া পেয়ে আমি আবারো হাপাতে হাপাতে মিরাকে কিছু বলতে যাবো। তার আগেই আমি মিরার পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।
কারণ আমি মিরার পিছনে তাকিয়ে দেখি যে স্বর্না দুর থেকে আমাদের দেখে কাঁদতেছে। হঠাৎ ওর কান্না আমার মনে ছুরির মত আঘাত করতেছে। কিন্তু মুহুর্তেই ওর দেওয়া কষ্ট মনে হতেই আমার মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে ওঠে। স্বর্নাকে দেখিয়ে আমি মিরাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলি,
কাব্যঃ এভাবে কেউ কিস করে পাগলী।
মিরাঃ কেউ না করলেও আমি করি। তোর কোন সমস্যা?
কাব্যঃ না না কোন সমস্যা নেই। তবে একটা কথা এখনো কি তুই আমাকে তুমি বলেই ডাকবি ডাকটা কেমন জানি বেমানান লাগছে।
মিরাঃ ওহ্ আচ্ছা এই কথা ঠিক আছে। আজ থেকে আমি তোকে তুমি বলে ডাকবো। আর তুইও আমি তুমি বলে ডাকবি।
কাব্যঃ হ্যাঁ ঠিক আছে আমার রাজকন্যা রাইসার আম্মু।
মিরাঃ এই এই এক মিনিট এই রাজকন্যা রাইসাটা কে আর ওর আম্মুটাই বা কে? (হঠাৎ মিরা একটু অভিমানের শুরে বললো)
কাব্যঃ আরে আরে পাগলী রাগ করছিস কেন? রাজকন্যা রাইসা হলো আমাদের ভবিষ্যৎ মেয়ের নাম আর তার আম্মু যে সেতো আমার সামনেই আছে।
মিরাঃ যাহ্ কাব্য তুমিও না। জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ের আগেই আমাকে সতিনের মুখ দেখতে হবে। (বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে মিরা)
আর এদিকে স্বর্না এসব সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। ও কাঁদুক তাতে আমার কি! ওর জন্য আজও আমি প্রতিরাতে কাঁদতে হয়। ওর জন্য আজ আমি বাবা মা থাকা সত্যেও অনাথের মত চলতে হচ্ছে।
প্রেম ভাবনা
যাইহোক, এর পর থেকে স্বর্নাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমিও মিরার সাথে প্রেম করতে থাকি। এখন আর স্বর্না আমার কাছে এসে ক্ষমা চায় না। বরং দুর থেকে আমাদের দেখে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।
আর কিছুদিন থেকে দেখছি স্বর্নার চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। আর আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে।
এভাবে আরো কিছুদিন চলে যায়।
একদিন অফিসে বসে বসে ভাবছি, আমি এখন মিরার প্রতি এত দূর্বল হয়ে পড়ছি কেন? আর ইদানীং মিরার কোন আচরণেও মনে হচ্ছে না ও আমার সাথে অভিনয় করছে। কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি করি, কি করি? ঠিক সেই সময় আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে পিয়ন চাচা এসে বলল। আমাকে নাকি ম্যাডাম ডেকেছে। তাই সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ম্যাডামের রুমে গেলাম।
ম্যামের রুমের দরজা নক করে বললাম…!
কাব্যঃ মে আই কাম ইন ম্যাম।
ম্যামঃ ইয়েস কাম ইন। তা মিঃ কাব্য কেমন যাচ্ছে দিন কাল?
কাব্যঃ এইতো ম্যাম আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই যাচ্ছে। তা আপনি আমাকে কি জন্য ডেকেছিলেন?
ম্যামঃ দিন কাল তো ভালো যাওয়ারি কথা। আজ কাল যা করে বেরাচ্ছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
কাব্যঃ ঠিক বুজলাম না, ম্যাম।
ম্যামঃ এখন তো বুঝবেন না কাব্য সাহেব। কিছুদিন আগে দেখলাম একটা মেয়েকে পার্কের ভিতর জড়িয়ে ধরে আছেন। মেয়েটা নিশ্চয় আপনার গার্লফ্রেন্ড?
আমি অবাক হয়ে বললাম,
কাব্যঃ আপনি কিভাবে জানলেন, ম্যাম?
ম্যামঃ কিছুদিন আগে মানে ঐদিন আমিও ঐ পার্কে আমার এক বান্ধবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখনি দেখলাম। যাই বলুন কাব্য সাহেব, আপনার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। চলবে…
পরের পর্ব- রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১১