রাগী মেয়ের ভালোবাসা – অফিসের বসের সাথে প্রেম পর্ব ১: মানুষ জীবনে যতটা ছোট আর অপমান হয় তার বেশিরভাগ প্রেম ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। কারণ এটি যে কোন মানুষকে দূর্বল করে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। বারবার রাগ, গালি আর অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। সব কিছু সহ্য করেছি, হাসি মুখে মেনে নিয়েছি শুধু মনের মানুষটার মুখের দিক চেয়ে। চলুন তবে আমার প্রেমের গল্পটা শুরু থেকে শুরু করি।
রাগী মেয়ে
ম্যাম বরাবর আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে উচ্চ স্বরে বলল- এইটা কি!
আমিঃ জি ম্যাম, ফাইল।
ম্যামঃ সেটাতো আমিও দেখছি। কার ফাইল এইটা?
আমিঃ ফয়সাল সাহেবের ফাইল।
ম্যামঃ আপনি আনলেন ক্যান, ওনি কোথায়?
আমিঃ না ম্যাম, আসলে ভাবলাম আমরা আমরাই তো। তাছাড়া ওনার পা ব্যথা করছে, তাই নিয়ে আসলাম।
ম্যামঃ ঠাটিয়ে দুটো চর মারলে জন দরদি ছুটে যাবে। যান সামনে থেকে।
আমি ও চুপচাপ বেরিয়ে পরলাম ম্যামের কেবিন থেকে।
এবার মূল কথায় আসি। আমি ‘জাহিদ হাসান জনী।’ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি। আর যিনি
আমাকে ধমকালেন, তিনি হলেন আমার বস। মানে এই কোম্পানির মালিক। ওনার নাম নিলা।
ম্যাম আমার থেকে ছোট হবে। দেখতে সেই লাগে। তাই তো জনদরধি হয়ে বার বার ওনার কেবিনে ওনাকে দেখতে যাই।
কি করবো মন তো মানেনা। মনে ধরে গেছে ওনাকে। তাই তো সবসময় ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি চেহারা! দেখলেই জরিয়ে ধরতে মন চায়।
কিন্তু সমস্যা একটাই, ওনি আমাকে দেখতে পারেন না। যাক, আর বক বক না করে এবার আসল গল্পে আসি।
ম্যামের কেবিন থেকে বের হয়ে নিজ ডেক্সে এসে বসলাম। তখন ফয়সাল সাহেব বলে উঠলো,
ফয়সালঃ কি ব্যাপার, জনী সাহেব? আমার ফাইল কোথায়?
আমিঃ ওহ নো! ম্যামের রুমে ফেলে এসেছি। দাঁড়ান নিয়ে আসছি।
আবার ম্যামের রুমে গেলাম।
আমিঃ ম্যাম আসবো।
ম্যামঃ আবার আপনি, কি হয়েছে?
আমিঃ না মানে ম্যাম, ওই ফাইলটা নিতে এসেছি।
ম্যামঃ নিয়ে যান। আর সামনে থেকে দূর হোন।
আমিঃ ম্যাম, একটা কথা বলি।
ম্যামঃ তাড়াতাড়ি বলে দূর হোন?
আমিঃ আপনি গারো করে কাজল দিতে পারেন না, তাহলে সুন্দর দেখা যেত।
ম্যামঃ কি বললেন আপনি? (রেগে গিয়ে)
আমিঃ না মানে কেউ যাতে নজর না লাগায়।
ম্যামঃ আপনি যাবেন সামনে থেকে।
ম্যাম রেগে গেছেন। তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম।
এই মেয়েটার মনে কি রস টস নেই নাকি! সারাক্ষণ শুধু গম্ভীর হয়ে থাকে।
অফিসে বস গিরি
আজ দুপুরে কাজ করছি। তখন পাশে চিল্লাচিল্লির আওয়াজে তাকিয়ে দেখলাম, আমার কলিগ জহিরুল ভাইকে ধমকাচ্ছেন।
ম্যামকে দেখে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকলাম। ওনাকে নিয়ে কল্পনায় সুখের সাগরে ভাসছি। তখন কারো ধমকের কারণে বাস্তবে ফিরলাম। চেয়ে দেখি, ম্যাম সামনে দাড়িয়ে আছে।
ম্যামঃ কি ব্যাপার, আপনি কাজ রেখে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন? কাজ করতে ভালো না লাগলে চাকরি ছেড়ে দেন। কেন যে এসব অকর্মা লোককে বাবা চাকরি দিয়েছে! (ম্যাম তার কেবিনে যেতে যেতে বিরবির করে বললেন)
আজ অন্য কোম্পানির সাথে আমাদের পেজেন্টেশন আছে। আমরা যথা সময়ে চলে গেলাম। সাথে নিলা ম্যামও আছে।
প্রেজেন্টেশন চলছে। সব ঠিকঠাকই চলছিল। এক পর্যায় ম্যামের সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়ে ডিলটা ক্যান্সেল হয়ে গেল।
ম্যাম সেইই রেগে আছে। কনফারেন্স রুম থেকে বের হতেই ম্যাম আমার গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিল।
আমি চোখে সরষে ফুল দেখছি। আমি প্রতি উত্তর বললাম,
আমিঃ ম্যাম মারলেন কেন?
ম্যামঃ তোদের রাখি কি জন্য, বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ার জন্য।
আমিঃ আমরা আবার কি করলাম?
ম্যামঃ তোদের জন্যই তো ডিলটা ক্যান্সেল হলো। তোরা কিছু বললি না কেন?
আমিঃ আমরা কিছু বলার আগেই তো আপনি ওদের সাথে রেগে গেলেন।
ম্যামঃ তোর সাহস তো কম না। তুই আমার দোষ দিচ্ছিস। এখনই সামনে থেকে যা, তা না হলে তোকে কি করবো তা আমি নিজেও জানিনা।
ম্যামের রেগে যাওয়া দেখে আমি সামনে থেকো চলে আসলাম। ভুল করেছে ওনি আর দোষ চাপাচ্ছে আমাদের উপর।
ওনার বাবা কত ভালো মানুষ আর ওনি এমন বজ্জাত হলেন কোথা থেকে?
কেন যে ওনার বাবা অসুস্থ হলেন আর উনি এই কোম্পানির বস হলেন?
আর ভালো লাগেনা। মন চায় চাকরিটা ছেড়ে দিতে। কিন্তু চাকরিটা অনেক প্রয়োজন। তাই ছাড়তেও পারি না ।
তাছাড়া কোম্পানিতে জয়েন করার সময় পাচ বছরের শর্ত দেওয়া ছিল। এর আগে কোম্পানি থেকে যেতে পারবো না।
রাগ ও অপমান
পরের দিনের প্রস্তুতি নিয়ে বের হলাম।
অফিসে গিয়ে নিজের ডেক্সে বসলাম।
নাহ, যাই একবার ম্যাম কে দেখে আসি।
ম্যামের কেবিনের সামনে গিয়ে যেই একটু দেখে চলে আসতে যাব তখনই ম্যামের ডাক।
ম্যামঃ কি ব্যাপার কিছু বলবেন ?
আমিঃ না?
ম্যামঃ তাহলে এখানে কি করছেন? কাজ করতে মন চায় না নাকি!
আমিঃ না মানে ম্যাম আসলে….
ম্যামঃ আসলে কি! কাজ ফাকি দেওয়ার বাহানা শুধু। যান গিয়ে কাজ করুন।
যাহ, একটু দেখতে গিয়েছিলাম তাও ধরা খেয়ে গেলাম। সব সুন্দরি মেয়েরা কি রাগী থাকে নাকি! আমার পরীটা এমন, মনে হয় জন্মের সময় মুখে মধু দেয়নি। যার কারণে মুখে সব তিতা তিতা কথা।
এভাবেই বেশ কিছুদিন চলে গেল।
আর ম্যামের ব্যবহারেও জীবন অতিষ্ট হয়ে গেছে।
হঠাৎ এক সকালে অফিসে কাজ করছি। একটা ফাইল সাইন করার জন্য ম্যামের কাছে যাচ্ছিলাম। কে জানতো একই সময় ম্যামও কেবিন থেকে বের হচ্ছিলো।
যার ফলে দরজার কোণার সাথে হোচট খেয়ে ম্যামকে নিয়ে পরে গেলাম। আহা কি শান্তি লাগছে। চোখটা বুঝে আছি, খেয়াল আসতেই ম্যামের উপর থেকে উঠলাম। চার পাশ ঘুরতেই দেখলাম অফিস স্টাপরা সবাই জরো হয়ে গেছে।
ম্যাম আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ সরি ম্যাম, আমি দেখতে পাইনি।
ম্যামঃ ঠাস ঠাস ঠাসস! ছোট লোকের বাচ্চা তুই ইচ্ছা করে আমার সাথে অসভ্যতামি করছিস।
আমিঃ কি বলছেন এসব, আমি কিছুই করিনি।
স্টাফরাঃ ছি ছি জনি ভাই, তোমাকে কত ভালো ভেবেছিলাম। আর তুমি কি না ছি ছি!
আমিঃ বিশ্বাস করো তোমরা, একরম কিছুই করিনি আমি।
ম্যামঃ কি বিশ্বাস করতো ওরা! তুই আগে থেকে সুযোগ খুজছিলি আমার সাথে অসভ্যতামি করতে। আজ সুযোগ বুঝে তুই আমার সতিত্য নষ্ট করতে চেয়েছিলি।
এই বলে ম্যাম নেকা কান্না শুরু করে দিল।
প্রতিবাদী মন
আমি তো অবাকের পর অবাক! কি থেকে কি হয়ে গেল। ম্যাম যা বলছে, তাই সবাই বিশ্বাস করছে।
আমিঃ ফয়সাল ভাই তুমিও কি বিশ্বাস ক…
সে মাথাটা নিচু করে ফেললো।
ইরা তুমিও। ইরা সেখান থেকে চলে গেল।
আমি তো প্রায় পাগল প্রায় অবস্থা।
আমিঃ তোমরা সবাই বিশ্বাস করো। আরে আমি তো ম্যামকে ভালোবাসি। ওনার সাথে কিভাবে এসব করবো। একটু বিশ্বাস করো!
স্টাফরাঃ কিভাবে বিশ্বাস করি? কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে? তুমি যে ম্যামের সাথে অসভ্যতামি করনি।
আমিঃ প্রমাণ না এক দৌরে কন্টোল রুমে চলে গেলাম। সেখান থেকে তখনকার সিসিকেমারা ফুটেজ চেক করলাম। হ্যা এইতো পেয়েছি তখন কার ফুটেজটা। পেয়ে গেছি ফুটেজটা। পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম।
সবার সামনে ফুটেজটা চালু করে দিলাম।
আমিঃ সবাই এবার বিশ্বাস করলে তো আমি ইচ্ছা করে এসব কিছু করি নি।
সবাই মাথা নিচু করে ফেললো।
সবাই কে উদ্দ্যেশ করে বললাম,
আমিঃ কি করিনি তোমাদের জন্য, কত কাজ আমি নিজে করে দিয়েছি তোমাদের। ম্যামের বকা খেয়েও তোমাদের ফাইল সাইন করে এনে দিয়েছি। এত দিন তোমাদের সাথে কাজ করছি এতটুকু চিনলে না আমাকে। সব কিছু মনে থাকবে আমার।
প্রশান্তির ভালোবাসা
এবার ম্যামের দিকে তাকালাম। মাথা নিচু করে আছে।
আমিঃ আর আপনি! কি বলেছেন আপনার সতিত্য নষ্ট করতে চেয়েছি। এত নিচ মন মানসিকতা আপনার। আরে আমি আপনাকে ভালোবাসি। এত অপমানের পরেও আপনার পাশেপাশে থাকি। কারণে অকারণে আপনার কাছে যাই। এই চেহারা নিয়ে এত অহংকার করেন। আরে ফর্সা হলে যদি সুন্দর হতো তাহলে আপেলের চেয়ে মুলার দাম বেশি হতো। একটা কথা মনে রাখবেন, ভালোবাসি বলে এতটা রিস্পেক্ট করি। তা না হলে আর কিছু বললাম না। নিজের ডেক্সে এসে মাথা টেবিলে দিয়ে বসে পরলাম। রাগে আর ভয়ে গা কাপতে থাকলে চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকালাম।
আমিঃ তুমি?
ইরাঃ হ্যা, আমি। আমি জানতাম আপনি এমন কাজ করতে পারেন না। তাইতো সামনে থেকে চলে আসলাম। এখন চলেন দুপুর হয়ে গেছে লান্সটা করে আসি।
আমিঃ না, তুমি যাও?
ইরাঃ আরে চলেন তো মনটাও পাতলা হয়ে যাবে। একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো বাইরে।
ফিরে এসে কাজ জমা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাতটা নির্ঘুম কাটালম। আর চিন্তা করলাম নিলা মানে ম্যামের সামনে আর এতো যাবো না। ওকে, ভালোবাসার ভুত মাথা থেকে তাড়াতে হবে। বামন হয়ে চাদে হাত বাড়ানো ঠিক হবে না। আল্লাহ যা করে ঠিকই করে।
পরের দিন অফিসে চলে আসলাম।
অফিস স্টাফরা সবাই কালকের ব্যবহারের জন্য সরি বলল।
আমি ‘ইটস ওকে’ বলে দিলাম।
তারপরেও ওদের প্রতি একটা অভিমান থেকেই গেলো।
আর ফয়সাল ভাইর সাথে তো কথাই বলিনি। এতো ভালো যানতাম ওনাকে।
আর ওনি কিনা আমাকে অবিশ্বাস করলো। কেউ না জানুক উনি জানতো, আমি ম্যামকে ভালোবাসি।
অবহেলিত ভালোবাসা
যাক, সে দিন আর ম্যামের সাথে দেখা হয়নি। ওনার বের হওয়ার আগে আমি বের হয়ে গেছি। তার পরের দিন সকালে ডেক্সে এসে বসলাম। ম্যাম সামনে দিয়ে ওনার কেবিনে গেলো সবাই দাড়িয়ে গেল, সাথে আমিও। যাওয়ার সময় একবার আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে গেল।
আমি আমার মতো কাজে মননিবেশ করলাম। সমস্যা বাধলো বিকালের দিকে। ফাইলে সাইন লাগবে ম্যামের। ওনার সামনে কিভাবে যাবো?
তাই ফাইলটা পিওন দিয়ে পাঠালাম।
চিন্তায় আছি এত কিছুর পরও আমার ফাইলে সাইন করে না, না করে তা নিয়ে।
কিছুক্ষণ পর পিওন ফাইল নিয়ে আসলো। নাহ সাইন করে দিয়েছে। তাহলে ফাইলটা জমা দিয়ে চলে আসলাম।
এরকম করে আরো তিনদিন চলে গেল। এই তিনদিন ম্যামের সামনাসামনি হইনি। বিপওি বাধলো চতুর্থ দিন।
ফাইল দেওয়া হলো অনেকগুলো। এত্তগুলো কাজ করতে করতে বিকাল হয়ে গেল। একএক করে সবাই চলে যাচ্ছে। কাজগুলো শেষ না করেও যেতে পারছি না। একএক করে সবাই চলে গেল। এখন শুধু আমি আর ম্যাম আর পিওন।
বুঝিনা, আজ কি আমাকে ইচ্ছা করে এত বেশি কাজ দিয়েছে।
কি ব্যাপার ম্যাম এখনো যাচ্ছে না কেন? উফ কখন না সামনে এসে পরে।
কাজগুলো শেষ করে পিওনকে বুঝিয়ে দিয়ে যেই বের হতে যাব। তখনই কারো কোমল সুরে ডাক পরলো। পিছন ফিরে দেখি, ম্যাম। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। ম্যাম আমার সামনে আসলো। আমতা আমাতা করে বললো,
ম্যামঃ আমি সরি, আসলে বুঝতে পারিনি।
আমি চুপ করে আছি। তাই ম্যাম আবারো বললো,
ম্যামঃ জনি সাহেব, আমি সরি। ভুল তো মানুষেরই হয়।
আমিঃ না ঠিক আছে। আমিও সরি। কি থেকে কি বলে ফেলেছি সেদিন।
ম্যামঃ আচ্ছা চলুন, আপনাকে বাসায় ড্রোপ করে দেই।
আমিঃ ধন্যবাদ ম্যাম, আমি একাই যেতে পারবো।
এই বলে আমি সেখান থেকে চলে আসলাম।
অভিমানী ভালবাসা
এখন আর বেশি দরকার ছাড়া ম্যামের কেবিনে যাইনা। ফাইল সাইন লাগলে পিওনকে দিয়ে করিয়ে আনি। এখন ম্যাম শুধু আর চোখে তাকায় আমার দিকে। কেন, তা অজানা।
ফয়সাল সাহেবের সাথে এখনো ভালোভাবে কথা বলি না। বিকালে ফয়সাল সাহেব আমার ডেক্সে আসলেন।
ফয়সালঃ জনি সাহেব, আমি জানি আপনি এখনো আমার উপর রেগে আছেন। আসলে ঐ দিন আপনি যেভাবে ম্যামকে জড়িয়ে ধরেছিলেন যা অবিশ্বাস করার মতো।
আমিঃ কেউ না জানুক, আপনি তো যানতেন যে আমি ম্যামকে ভালোবাসি। তার সাথে এরকম আমি করতে পারি না।
ফয়সালঃ আচ্ছা ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো ক্ষমা করে দে।
এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমিও আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। যাইহোক, সব কিছু আগের মতো চলতে লাগলো। শুধু ম্যামের সাথে দুরুত্বটা বাড়িয়ে দিয়েছি।
দুপুরে ফয়সাল সাহেবকে দিয়ে ম্যামের কাছে ফাইলটা পাঠালাম।
ফয়সালঃ ম্যাম আসবো?
ম্যামঃ হমম আসুন।
ফয়সালঃ ফাইলটা একটু সাইন করে দিতেন যদি।
ম্যামঃ দ্যান।
ফয়সাল সাহেব ফাইলটা ম্যামের দিকে বাড়িয়ে দিল।
ম্যামঃ কার ফাইল এইটা?
ফয়সালঃ জনি সাহেবের।
ম্যামঃ ওনার ফাইল আপনি আনলেন কেন?
ফয়সালঃ আসলে ওনার পা ব্যথা তো, তাই।
ম্যামঃ ওনাকে ডাক দিন?
মনের অনুভূতি প্রকাশ
ফয়সাল সাহেবের ডাক শুনে ম্যামের কেবিনে চলে আসলাম।
আমিঃ ম্যাম আসবো?
ম্যামঃ হমম আসুন।
আমিঃ ডেকে ছিলেন আমাকে।
ম্যামঃ আগে বসুন!
বসলাম চেয়ারটা টেনে।
নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।
ম্যামঃ আপনার পায়ে কি হয়েছ?
আমিঃ হালকা চোট লেগেছে।
ম্যামঃ আপনি আমাকে বললেই তো আমি আপনার ডেক্সে গিয়ে ফাইল সাইন করে দিয়ে আসি।
আমিঃ….?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো ম্যাম।
ম্যামঃ অন্যের হাতে পাঠানো কি দরকার? আমি কি কলাগাছের সাথে কথা বলছি নাকি! আমার চোখের দিকে তাকান।
ম্যামের কথায় ম্যামের দিকে তাকালাম। ভয়ে আমারর বুক শুকিয়ে যাচ্ছে।
ম্যামঃ দেখুন, আমি জানি আপনার পায়ে কোনো চোট লাগেনি। আমি সত্যিই সরি, ওই দিন আমি বুঝে উঠতে পারি নি। হঠাৎ এসে আমার উপর পরলেন, আমি সত্যি সরি।
আমিঃ আগের কথা কেন তুলছেন? ভুলতো আমারি অযথা আপনার রুমে যেতাম।
একথা বলতেই ম্যাম আমার চোখের দিকে বিস্মিতভাবে তাকালো। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়েছে।
ফাইল সাইন করা শেষ। আমি ফাইল নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। এভাবে আরো কিছু দিন চলে গেল।
অপমানের পর ভালোবাসা
এখন দেখি ম্যাম তার কেবিন থেকে প্রায়ই বের হয়ে আমার ডেক্সের পাশে আসে, হেটে বেরায়। আমার প্রতি নজর দারি করে। আমি আমার মতো, ওনার প্রতি এখন অতোটা আগ্রহ দেখাই না। ওনি আমাকে খুব ভালোবাবেই নজর রাখে। ওনার প্রতি আগ্রহ দেখাই না বিধায় হয়তো আমারর প্রতি এতটা আগ্রহি।
আমি কোনো মেয়ে কলিগের সাথে কথা বললে ম্যামের চোখ মুখ লাল হয়ে যেত।
আজ দুপুরে ডেক্সে বসে কাজ করছি। তখন ইরা আসলো।
ইরাঃ কি করেন ভাইয়া? লান্স করবেন না।
আমিঃ হম্ম করবো।
ইরাঃ তাহলে ভাইয়া, আমার সাথে চলেন। আমি আজ নিজের হাতে রান্না করে এনেছি। প্লিজ প্লিজ না করবেন না।
আমিঃ তুমিও না বাচ্চাদের মতো করো। আচ্ছা, চলো।
আমি আর ইরা হাসতে হাসতে আমার ডেক্স থেকে বের হচ্ছি। হঠাৎ কে যেন আমার কলার ধরলো। আমি তাকিয়ে দেখি নিলা ম্যাম।
মুখ চোখ কেমন রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। কি করলাম আবার কে জানে।
তখই ম্যাম বলল,
ম্যামঃ কি পেয়েছিস, আমাকে এড়িয়ে চলবি আর অন্য মেয়ের সাথে হাসাহাসি। তুই না আমাকে ভালোবাসিস। এই তোর ভালোবাসা।
আমিঃ কি করছেন ম্যাম, কলার ছাড়ুন। সবাই দেখছে।
ম্যামঃ ছাড়বো না তোকে। আমাকে প্রেমের জালে ফাসিয়ে এখন এড়িয়ে চলছিস। অন্য মেয়ের সাথে হাসাহাসি করছিস। চল, এই বলে আমাকে কলার ধরে টানতে টানতে ওনার কেবিনে নিয়ে গেল। ইরা সহ বাকি সবাই দেখি হাসছে।
অল্প অল্প প্রেমের গল্প
ওনার কেবিনে নিয়ে,
ম্যামঃ এখানে চুপচাপ বসে থাকবি। আমি চুপচাপ চেয়ারে বসে থাকলাম। ম্যাম দপ করে ওনার চেয়ারে বসে পরলেন। আমার সামনে বসে বারবার হাত দিয়ে চোখের পানি মুচছে। মানবতার খাতিরে এক পিজ টিস্যু এগিয়ে দিলাম। এবার তিনি শব্দ করে কেঁদে দিলেন।
ম্যামঃ আর যদি কোনো মেয়ের সাথে দেখি তোকে খুন করে ফেলবো। দেখিস, শয়তান একটা।
এই বলে আবার কান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
ম্যাম কান্না করছে আর আমার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছে। অনেকক্ষণ বসে থাকলাম।
নাহ আর বসে থাকা যায় না।
আমিঃ ম্যাম আমি চলে যাই।
এ কথা বলতেই ম্যাম আমার গলা চেপে ধরলো।
ম্যামঃ কই যাবি হ্যা, কই যাবি। এখানে চুপচাপ বসে থাক। না হলে গলা চেপে মেরে ফেলবো কুত্তা। ওই ডাইনিটার কাছে যাইতি তাইনা। এখানে চুপ করে বসে থাক।
ওনি গলা চেপে ধরাতে আমি কেশে উঠলাম। আর ওনি আমাকে পানি খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন।
ও খোদা তুমি কোথায় আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবে। কিছুক্ষণ পরপর শুধু কফি খাওয়াচ্ছেন। আর বসে বসে কান্না করছেন। আমার এখন কাজ হচ্ছে কফি খাওয়া। আর ওনার কান্না দেখা। এ পর্যন্ত চার মগ খাওয়া শেষ। আল্লা তুমি রক্ষা করো। এই মেয়েতো আমাকে মেরে ফেলবে। আর কতক্ষণ? চলবে….
পরের পর্ব- অফিসের বসের সাথে প্রেম পর্ব ২