ছাত্রী যখন বউ

ছাত্রী যখন বউ – ছাত্রী স্যারের ভালোবাসার গল্প

ছাত্রী যখন বউ – ছাত্রী স্যারের ভালোবাসার গল্প: ঢাকা শহরে খুব কমন একটি গল্প হল স্যার ও ছাত্রীর প্রেমের গল্প। তবে এই গল্পের শেষ পরিণতি বেশিরভাগ সময় অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প হিসেবেই থেকে যায়। চলুন আজ এরকম একটি গল্প পড়ি যা কিছুটা ভিন্ন রকমের।

পর্ব: ১ – প্রথম দেখা

খুলনা থেকে ঢাকায় যাচ্ছি। উদ্দেশ্য লেখা-পড়া। নিজের ব্যাপারে বলার মতো কিছুই নেই। আমি অনাথ। তবে একসময় সবই ছিলো কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনায় হাড়াতে হয় সব। ছোট থাকতেই আমার কাকা সব কিছু নিজের করে আমায় ঠেলে দিয়েছিলো অনাথ-আশ্রমে। সেখানে থেকেই বাবার এক বন্ধুর সাহায্যে লেখা পড়া চালিয়েছি। বাবার বন্ধুর নাম ইয়াসিন চৌধুরি। আমার ইন্টার শেষ। ভালো রেজাল্ট করেছি। তাই উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যদিও ঢাকায় নতুন। ঢাকা বিশ্বদিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ইয়াসিন আঙ্কেলের বন্ধু। তিনি আমাকে তার সাথেই আগে দেখা করতে বলেছে। তাই ঢাকা পৌছেই আগে চলে গেলাম তার কাছে।

ও হ্যা, আমার নাম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ রানা। গ্রামের অতি অসাধারণ ছেলে, পুরোনো কাপড় যা স্বাধারনত মানুষ এতিমদের দিয়ে থাকে সেগুলোই গায়ে। ঠিকানা অনুযায়ী এসে পৌছালাম এক বিশাল অট্টালিকার সামনে।

দারোয়ান আমায় ভিতরে যেতে দিচ্ছিলো না। কেনই বা দিবে! আমার চেয়ে হয়তো এই বাড়ীর চাকরগুলোর গেট-আপ ও অনেক ভালো। নিরাশ হলাম না নিচে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কাছে ফোনও নেই যার দ্বারা ইয়াসিন আঙ্কেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। যাইহোক, বিকাল পর্যন্ত বাড়ীর সামনে বসে থাকলাম। বিকালে এক লোক আমায় জিগ্গাসা করলো।

তুমি কে বাবা! (লোকটি)

জ্বি আমি মাসুদ।

এখানে কি চাই বাবা! (লোকটি)

জ্বি আমি পলাশ স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি।

তুমি কি খুলনা থেকে এসেছো! খাদিজা তোমায় পাঠিয়েছে! (লোকটি)

জ্বি। ইয়াসিন আঙ্কেলই আমায় পাঠিয়েছে। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?

আমি পলাশ আলম। তুমি যার সাথে দেখা করতে এসেছো এমি সে। তা তুমি ভিতরে না গিয়ে এখানে কেন বসে আছো? (লোকটি)

আসলে স্যার, দারোয়ান আমায় দেখে ডুকতে দিচ্ছিলো না তাই বাহিড়েই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

ও আমারই ভুল। আমার ওকে তোমার ব্যাপারে বলে রাখা উচিৎ ছিলো। আচ্ছা আসো ভিতরে এসো। (পলাশ আঙ্কেল)

তারপর আমি তার বাড়ী ডুকলাম। খুব বড় আর সুন্দর বাড়ী। ভিতরে গিয়ে তিনি আমায় বসতে বললেন। আমি বসলাম,

খাদিজা তোমার ব্যাপারে সবই বলেছে। আর আমি তোমার রেজাল্টও দেখেছি। আমি তোমার বাবাকে চিনতাম। অনেক ভালো লোক ছিলেন তিনি। অনেক উপকার করেছেন আমার। আজ তোমার জন্য কিছু করতে পেরে নিজের কাছে একটু আনন্দ লাগছে। তোমার ভর্তি পরিক্ষার আর পনেরো দিন আছে। আমি আজই তোমায় প্রয়োজনীয় বইয়ের ব্যবস্থা করে দিবো। তুমি তোমার প্রস্তুতি শুরু করে দিও। (পলাশ আঙ্কেল)

জ্বি আঙ্কেল।

রহিম! মাসুদকে ওর রুমটা দেখিয়ে দে (একজন কাজের লোককে উদ্দেশ্য করে)। যাও বাবা ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নাও। (পলাশ আঙ্কেল)

জ্বি

আমি চলে আসলাম। বেস ভালো একটা রুম। এযেন আমার মতো অনাথের কাছে সপ্নের মতো। আমি ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম ”’সত্যি কি আজব দুনিটা! নিজের রক্তের সাথে সম্পর্কিত মানুষগুলো আমায় অনাথ হয়ে জীবন যাপনে বাধ্য করলো আমার সব কিছু নিয়ে নিলো আর কিছু অপরিচিত মানুষ আমায় অনাথ জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে, এনে দিতে চাইছে অনেক কিছু, দেখাতে শেখাচ্ছে সপ্ন। সত্যি সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে মানবতা নামের আজকের সমাজের মরিচিকাটা এখোনো বেঁচে আছে। কিন্তু একজন অপরিচিত মানুষ আমার জন্য আর কতো করবে!

আমি অপরিচিত হওয়ার পডরেও যায়গা দেয় নিজের ঘড়ে, তিন বেলা আহারের ব্যবস্থা করে। তার কাছ থেকে আর কিছু কিভাবে চাই আমি! আমার লেখাপড়া চালাতে গেলেতো টাকার প্রয়োজন। আর তা আমি ইয়াসিন আঙ্কেল বা পলাশ আঙ্কেলের কাছ থেকে কিছুতেই নেওয়া যাবে না। আমাকে কিছু একটাতো করতেই হবে। আর এই ছেড়া কাপর পরে ঢাকায় চলাচল করাও সম্ভব না, এতে আমার কিছু না হলেও পলাশ আঙ্কেলের মানহানী হবে কারন তিনি আমায় আশ্রয় দিয়েছেন। আর আমার দ্বাড়া আমার উপকারকরীর কোনো ক্ষতি হোক এটা কখনোই চাইনা।

যাই হোক কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকালে উঠে ফ্রেস হয়ে দেখি টেবিলে কিছু বই রাখা আছে তার মানে এগুলো পলাশ আঙ্কেল রেখে গেছেন।
আমি একটা বই নিয়ে পড়তে লাগলাম। হঠাৎ করেই পলাশ আঙ্কেল,

বাবা রাতের খাবারটা খেয়ে তারপর আবার পড়তে বসো। এখন আসো।

আঙ্কেলের কথা শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখি রাত হয়ে গেছে। তাই আঙ্কেলের সাথে চলে গেলাম খাবার টেবিলে। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, আমি বাড়ী আসার পর থেকে আঙ্কেল ও কিছু কাজের লোক ছাড়া আর কাওকে দেখলাম না। তাই খাওয়ার টেবিলে আঙ্কেলকে জিগ্গাসা করলাম,

আঙ্কেল! বাড়ীতে কি আপনি একাই থাকেন? মানে আন্টিকে দেখছি না!

তোমার আন্টি তার বাবার বাড়ী গেছে। কিছুদিন সোখানেই থাকবে। তার এখানে আসতে আসতে হয়তো তোমার এডমিশন টেস্ট শেষ হয়ে যাবে (পলাশ আঙ্কেল)

ও আচ্ছা।

তারপর খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম। আর কিছুক্ষন বই পড়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম। আসলে এখন সপ্ন পড়া লেখা করে অনেক বড় কিছু করার অনাথ বাদেও নিজের আরো একটা পরিচয় গড়তে চাই।

এভাবেই চলছে দিনগুলো। দেখতে দেখতে এডমিশন টেস্ট চলে আসলো। খুব ভালো হয়েছে পরিক্ষা। এখন মূল সমস্যা হচ্ছে ভর্তি ফি। আমার দ্বাড়া এখন এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। চাকরিই খোজ করতে লাগলাম। কিন্তু জানা ছিলো না এখন ছোটখাটো একটা চাকরির জন্যেও মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। এক রাশ হতাশা নিয়ে ফিরে আসি প্রতিদিন।

দেখতে দেখতেই এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট চলে আসে আল্লাহর রহমতে ভালো রেজাল্ট করেছি। যার কারণে অনেক সুবিধাই পাওয়া যাবে। এখন কথা হচ্ছে ভর্তি হওয়া। আজও চাকরির আশায় বেড়িয়ে ছিলাম ফলাফল শূন্য। রাতে বাড়ী এসে ফ্রেস হয়ে বসলাম। মাথায় নানার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রাতে আঙ্কেল খাওয়ার জন্য ডাকলেন আমি চলে গেলাম খাবার টেবিলে।

শোনো কাল তোমার প্রয়োজনীয় বই আমি এনে দেব। আর হ্যা তোমার ভর্তি ফি জমা দেওয়া হয়ে গেছে। (রাশের আঙ্কেল)

আঙ্কেল আপনি আমার জন্য এতো কেন করছেন?

কারন তোমার বাবার কাছে যে আমি চির-ঋণী। সেই ঋণের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা করার চেষ্টা করছি কেবল মাত্র (পলাশ আঙ্কেল)

আঙ্কেল আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন। কিন্তু আমি আপনার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি নিতে পারবো না। আপনি বাবার ঋণ সোধ করতে গিয়ে আমায় ঋণী বানিয়ে ফেলছেন আমি এই ঋণগুলো কি ভাবে মেটাবো! আঙ্কেল আপনি আমায় আরেকটা উপকার করে দিতে পারবেন!

কি বলো? (আঙ্কেল)

আমাকে একটা ছোটখাটো জবের ব্যবস্তা করে দিতে পারবেন?

জব করলে তুমি পড়ালেখা করবে কিভাবে। না তোমার জব করা লাগবে না তুমিতো ভালো স্টুডেন্ট তুমি বরং দুটো টিউসনি করাও। আচ্ছা আমি তোমায় দুজন স্টুডেন্টে ব্যবস্তা করে দিবো তোমার নিজের পড়ার পাশাপাশি তাদেরকেও পড়িয়ে দিও। (আঙ্কেল)

ঠিক আছে আঙ্কেল।

আর হ্যা তোমাকে তো বলাই হয়নি! কাল তোমার আন্টি আর খাদিজা আসছে (আঙ্কেল)

আঙ্কেল খাদিজা কে?

খাদিজা হচ্ছে আমার মেয়ে। এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কাল ওর সাথে তোমায় পরিচয় করিয়ে দিবো। (আঙ্কেল)

জ্বি আঙ্কেল।

খাওদা-দাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম এখানে আশার পর আঙ্কেল আমায় বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলেন সেগুলো দিয়ে কিছু সপিং করতে হবে। আঙ্কেলের বাড়ী এভাবে থাকা যাবে না। আর এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েও যাওয়া যাবে না।তাই ভাবলাম কাল সকালেই মার্কেটে যাবো।

রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। সকালে আঙ্কেলের সাথে ব্রেক-ফাস্ট করে বেড়িয়ে পরলাম মার্কেটের উদ্দেশ্যে। এরপর কিছু কেনাকাটা করে বাড়ী ফিড়লাম। কলিং বেল বাজিয়ে বাইরে দারিয়ে আছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজা খুলে দিল। আমি তাকিয়ে তো অবাক।

একি মানুষ নাকি সাক্ষাত কোনো রূপকথার পরী!

চলবে

পর্ব ২ – প্রথম ভালোলাগা

দরজায় ওপাশে যেন কোন রূপকথার পরী দাড়িয়ে আছে। তার চোঁখ, তার ঠোট, ঘন কালো চুল, টোল পরা গাল যেন তার কোনো তুলনাই হয় না।

ও হ্যালো! (মেয়েটি)

ও হ্যা বলুন। (ওর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো)

কে আপনি! আর এখানে কি চাই? (মেয়েটি)

জ্বি আমি এই বাড়ীতেই থাকি।

ওই এটা আমাদের বাড়ী। (মেয়েটি)

হতে পারে! কিন্তু আমি এখানেই থাকি।

কে এলো রে মা? (ভিতর থেকে পলাশ আঙ্কেল)

চিনি না বাবা। বলছে এ বাড়ীতেই থাকে। (মেয়েটি আঙ্কেলকে বললো)

আরে এতো মাসুদ! লিমা এ হলো মাসুদ আমাদের সাথেই থাকবে (মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে)। আর মাসুদ এ হলো লিমা আমার মেয়ে। (পলাশ আঙ্কেল)

আসুন ভিতরে আসুন (লিমা আমাকে উদ্দেশ্য করে)

আমি বাড়ীর ভেতরে গেলাম। রাতে খাবার টেবিলে আন্টির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই আমায় মেনে নিলো কিন্তু লিমার দিকে দেখে মনে হলো ও খুশি নয়।
যাই হোক আমি এ ব্যাপারটাকে বেশি পাত্তা দিলাম না। কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাস শুরু হয়ে গেলো।

আজ প্রথম ক্লাস তাই সকাল সকাল ফ্রেস হয়ে সবার সাথে ব্রেক-ফাস্ট করে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। শহড়ে আমার মতো একটা গ্রামের ক্ষ্যাত এতিম ছেলে।
কখনো কখনো নিজের কাছেই অদ্ভুদ মনে হয় কারণ আমার মতো একটা এতিম ছেলের এমন অবস্থায় অবস্থান করা সত্যি যেন কাল্পনিক মনে হয়।

যাই হোক, ক্লাসে গেলাম। অনেক নতুন মুখ। প্রথম ক্লাসে স্যার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। কিন্তু কোন বন্ধু হলো না।

ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক।

যেই মানুষটার পরিচয় ‘আমি একজন এতিম, যে অন্যের আশ্রয়ে থাকে এবং নিজের কোনো পরিচয় নেই’ সেই মানুষটার সাথে কেই বা বন্ধুত্ব করতে চায় যেখানে অন্যেরা বলছে আমার বাবা ডাক্তার, আমার বাবা অধ্যাপক, আমার বাবা বড় ব্যবসায়ী।

হা হা হা নিয়তি। যাক সে কথা ক্লাস করে বাইরে এসে বসলাম।

মনে করতে লাগলাম, সেই দিনগুলি।তখন আমার বয়স ছিলো ৫ বছর। কতটা ভালো ছিলো সেই দিনগুলো! মা নিজ হাতে আমায় খাইয়ে দিতো, রাতে আমায় ঘুম পাড়িয়ে দিতো, মায়ের কোলে মাথা রাখে শুয়ে থাকতাম। মা আমায় অনেক গল্প শোনাতো। বাবা আর আমি দুজনে মিলে ফুটবল খেলতাম। কিন্তু কপালটা দেখুন নিয়তি সব ছিনিয়ে নিলো আমার কাছ থেকে। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমার কাকা আমার বাবার সকল সম্পত্তি নিজের করে নেয়। কাকাকে বলেছিলাম আমাকে তোমার কাছে রেখে দাও আমি অনাথ আশ্রমে থাকতে পারবো না। আমি অনাথ নই, তোমরা আছো আমার।কিন্তু সেদিন তারা আমার কথাগুলো শোনেনি। খোদার উপর কোনো অভিযোগ নেই আমার। তিনি আমায় ভালো রেখেছেন।

হয়তো মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি কিন্তু তাদের মিস করি নি। আমি যখন বালিসে মাথা রাখতাম মনে হতো মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আমার কানে মায়ের কন্ঠ ভেসে আসতো যেন মা আমার বসে বসেই গল্প শোনাচ্ছে।”

মা-বাবার কথা মনে পরতেই নিজের অজান্তে চোখে পানি চলে আসলো। এখনকার সমাজে একটা জিনিস ভালোই লক্ষ করলাম। এখনকার মায়েরা সন্তানদের আর গল্প শোনায় না, খাইয়ে দেয় না, বাবাগুলো সব টাকার পিছনে ছোটে ভাবে না তার পরিবার চায় তার একটু ফোটা সঙ্গ। আর ছেলে-মেয়েগুলো বোঝে না মা-বাবার সঙ্গ।

এদের দেখে মনে হয়, যদি আমার ও মা-বাবা থাকতো হয়তো আমিও এদের মতোই হয়ে যেতাম। তারা নেই বলেই হয়তো আমি তাদের সঙ্গ মিস করছি।

যাইহোক অনেক সময় হয়েগেছে বাড়ী ফিড়ে আসলাম অবশ্যই আমার বাড়ী নয় পলাশ আঙ্কেলের বাড়ী যার ছাদের নিচে খোদা আমার মাথা রাখার জায়গা করে দিয়েছে।
আজ দুপুরে খেতে ইচ্ছা করলো না। আমি আমার রুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে বই নিয়ে বসে পরলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো এই বইগুলোই। এরা কখনো আমার সঙ্গ ছাড়েনি।

রাতে লিমা আমায় খাবার জন্য ডাকলো। আমি জানি লিমা ইচ্ছা করে আমায় ডাকে না আঙ্কেলের আদেশের ফলে অনিচ্ছা সত্যেও আমায় ডাকতে হয়।খাবার টেবিলে চলে গেলাম।

বাবা মাসুদ! তোমার জন্য দুটো নিউশনির ব্যবস্থা করেছি। পাশের ২২ নাম্বার বাড়ীতে একটা ছেলে আছে ইন্টার 1st year এর খুব ভালো ছাত্র তুমি just ওকে একটু গাইড করবে। (আঙ্কেল)

জ্বি আচ্ছা। আর আরেক জন?

আরেক জন হচ্ছে আমাদের লিমাকে। (আঙ্কেল)

কি লিমাকে! কিন্তু আঙ্কেল লিমাকে তো আপনি নিজেই আমার থেকে ভালো গাইড করতে পারবেন। আর লিমার কোনো জায়গায় সমস্যা হলে এমনিও আমার কাছ থেকে দেখে নিতে পারবে তার জন্য ওকে আমার কাছে টিউশনি দেওয়া লাগবে কেন?

আমি জানি আমি নিজেও লিমাকে গাইড দিতে পারবো। কিন্তু শাড়াদিন ক্লাস করে আমার খুব ক্লান্ত লাগে তাই আর লিমাকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। আর এইবার ওর ইন্টার পরিক্ষা রয়েছে তাই আমি তাই তুমি ওকে গাইড করো। আমি জানি তুমি ওকে গাইড করলে ও ভালো রেজাল্ট করবে। তুমি না করো না বাবা। (আঙ্কেল)

আমার আর কিছু বলার থাকে না। তাই মেনে নিতে হয়।

পরদিন থেকে পালটে যায় আমার রুটিন। সকালে বেড়িয়ে যাই নিউশনি পড়ানোর জন্য। তারপর সেখান থেকে ক্লাস করে বিকেলে বাড়ী ফেড়া এবং সন্ধায় লিমাকে পড়ানো।
লিমাকে দেখলেই যেন নিজের অজান্তেই ওর মায়ায় জড়িয়ে যেতে ইচ্ছা করে। আমি দিন দিন ওর মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলছি। ওর মুখটা আমায় খুব টানে মনে চায় আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেই কিন্তু পারলাম না কারণ লিমা আমায় একদমই সহ্য করতে পারে না। আমি যেন ওর চোঁখের কাঁটা।

যাই হোক ওর প্রতি আমার নিরব ভালোবাসা কোনো দিন প্রকাশ করতে পারবো না জানি, আমি জানি এ ভালোবাসা কখনো বাস্তবে রূপ নেবে না, কোন বাবাই তার মেয়েকে কি করে একটা অনাথ ছেলে হাতে তুলে দেবে যার মাথা গোজার জন্য নিদ্রিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। তবুও আমার মনটাকে মানাতে পারি নি। ওর মুখটা দেখলেই যেন আমার সকল বাধাগুলোই দুর্বল হয়ে যায়, আমি যেন হাড়িয়ে যেতে চাই ওর মাঝে।

দিনগুলো ভালোই কাটছে। এখন আমার একটা ভালো বন্ধুও হয়েছে ওর নাম তারিকুল। বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান কিন্তু স্বাধারন থাকতে পছন্দ করে আর ওর এই স্বাধারনতার কারণেই ও আমার সাথে বন্ধুত্ব করে। ও যদি অন্য সব বড়লোক বাবার ছেলেদের মতো হতো তবে হয়তো কোনোদিন আমার পাশেও আসতো না।

ছেলেটা অনেক ভালো। ও কিছুটা আমার মতোই অনাথ। কিছুটা অনাথ বলার কারন আছে ছোটবেলায় মাকে হাড়ায় আর বাবা যদিও ওর কথা ভেবে বিয়ে করেনি কিন্তু সম্পদ উপার্যনের নেশায় নিজের সন্তানকে সময় দিতে পারে না। তাই ও কিছুটা আমার মতোই।

আমরা দুজন একদম ভাইয়ের মতো, খুব কেয়ার করে আমার।

সকালে ফ্রেস হয়ে নিউশনি করিয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নিউশনির কারণে সকালে ব্রেক-ফাস্ট করা হয় না। ইউনিভার্সিটিতে পৌছাতেই তারিকুলের সাথে দেখা।

কিরে ভাই কি খবর! (তারিকুল)

হ্যারে ভাই ভালো। তোর কি খবর?

এই তো ভাই পুড়াই ঝাকানাকা। চল ক্যান্টিনে চল কিছু খেয়ে আসি। (তারিকুল)

নারে ভাই ভালো লাগছে না। তুই যা।

আমি জানি তুই সকালে কিছু খাসনি চল। (তারিকুল)

দেখ তারিকুল তুই কেনো আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করিস বল!

কারণ তুই আমার বন্ধু না তুই আমার ভাই। চল আমিও এখনো কিছু খাইনি চল ব্রেক-ফাস্ট শেড়ে আসি। (তারিকুল)

হুমম চল।

তারিকুল যতক্ষন পাশে থাকে খুব ভালো সময় কাটে আমার।

খোদার কাছে আর কি বা চাওয়ার থাকতে পারে! না চাইতেই সব দিয়ে দিলো আমায়। সত্যি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।

ক্লাস শেষ করে তারিকুলের সাথে একটু ঘুরে বাড়ী চলে আসলাম। ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম আর সন্ধায় লিমাকে পড়াতাম এভাবেই চলতে থাকে আমার দিন। দিন দিন লিমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলি কিন্তু কোনো ভাবেই আমি তা প্রকাশ করি নি বা প্রকাশ করার চেষ্টাও করি নি।শুধু নিরবে ভালোবেসে গেছি। কিন্তু লিমার কাছে আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ও এখনো আমায় সহ্য করতে পারে না, একান্ত ঠেকায় না পরলে ও আমার সাথে কথা বলে না।

এভাবেই চলতে থাকে দিন, দিন কেটে মাস আর মাস কেটে বছর। লিমার পরিক্ষা এখন শেষ। আঙ্কেল চায় লিমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। লিমার ও এতে কোনো আপত্তি দেখলাম না। লিমার বিয়ের কথা শুনে নিজের মধ্যেই কেন যেন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। হয়তো এটা এতো দিনের জমানো ভালোবাসা হারানোর ব্যথা। কিন্তু এখানে আমি কিছুই বলতে পারি না কারণ আঙ্কেল আমায় অনেক ভরসা করে। আমায় আশ্রয় দিয়েছে নিজের ঘড়ে।

লিমার জন্য ছেলে দেখা হলো। ছেলে খুব বড় ঘড়ের, দেশের বাইরে থাকে। লিমার ও ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে।

বিয়ের আয়োজন করা হলো। বাড়ীর সবাই অনেক খুশি আর সবার খুশি দেখে নিজের মুখেও হাসি রাখার চেষ্টা করছি।

দেখতে দেখতে লিমার বিয়ের দিন চলে আসলো। আজ লিমার বিয়ে। লিমাকে দেখে বোঝা যায় ও অনেক খুশি। বাড়ী ভর্তি অনেক লোক। এখন বাড়ীতে উৎসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

চলবে…

পর্ব ৩ – না বলা ভালোবাসার ব্যথা

বাড়ী ভর্তি লোক, সবার মুখে হাসি। নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়েতে কোনো কমতি রাখেন নি পলাশ আঙ্কেল। লিমা ও অনেক খুশি নিজের নতুন জীবনের সূচনাক কথা ভেবে আর এই সবার মাঝে একা আমি শুধু অভিনয় করে যাচ্ছি ভালো থাকার। ভিতরটা যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে, ‘কিভাবে বলি আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি, আমি আপনার কাছ থেকে ওকে ভিক্ষা চাইছি, ওকে please আমার হাতে তুলে দিন’ যেখানে আমি নিজেই তার বাড়ী আশ্রয় নিয়ে থাকি। কিভাবে লিমাকে বলি,’লিমা অনেক ভালোবাসি তোমায়, আমায় ছেড়ে যেও না, কথা দিলাম শরীরের শেষ বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত তোমায় খুশি রাখার চেষ্টা করবো’ যেখানে লিমা আমায় দেখতেই পারে না।

সত্যি এযেন এক কঠিন দহন যা আমার ভিতরটাকে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে। আজ লিমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরই আমি আঙ্কেলের বাড়ী ছেড়ে চলে যাবো ঠিক করলাম। এখন চলে গেলে আঙ্কেল নিজেও খারাপ ভাববে তাই বিয়ের অনুষ্টানে সর্বদাই আঙ্কেলের সঙ্গ দিতে লাগলাম।

এদিকে বর আসার সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু বরের কোন খোজ নেই। আঙ্কেল অনেক ফোন দিচ্ছে কিন্তু বরের বাড়ীর লোকজন কেউ ফোন তুলছে না। বরের বাড়ী থাকা আমাদের এক লোকের দ্বাড়া জানতে পারাগেলো বর নাকি বিদেশে অনেক বে-আইনি কাজ করতো যার কারনে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে।

এখবর পাওয়া মাত্রই বিয়ে বাড়ির আনন্দ যেন মূহুর্তের মধ্যেই হাড়িয়ে যায়। আঙ্কেল ভেঙ্গে পরেন, “নিজের একমাত্র মেয়েকে কিনা এমন একটি ছেলের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন যে নিজেই অ-সত। সে কিনা নিজেই নিজের মেয়ের জীবন ধঃস্ করতে যাচ্ছিলেন!”

আমি তাকে সান্তনা দেওয়া চেষ্টা করি। আন্টিরও মন খারাপ নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে এভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে। আঙ্কেল কে আমি ধরে একটি ছোফায় বসিয়ে দিলাম। সে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে ভাবলেন। তারপর উঠে সবার সামনে যা ঘোষনা করলেন তার জন্য আমি কেন কেউই প্রস্তুত ছিলেন না।

সান্ত হোন আপনারা! আল্লার আমার মেয়ের জীবনটা ধঃসের হাত থেকে বাচিয়েছেন। শুধু ক্যারিয়ার দেখেই আমি আমার মেয়েটাকে একটা অ-সত ব্যাক্তির হাতে তুলে দিতে যাচ্ছিলাম! কখনো খোজ নেই নি ছেলেটা কেমন! আল্লাহ আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। ক্যারিয়ার তো মানুষই তৈরি করে আর সেই মানুষটার যদি একটা মন থাকে তবেই সেইতো প্রক্রিত সফল ব্যাক্তি। আমি আমার মেয়ের বিয়ে কোন সম্পদশালী ছেলের সাথে দেবো না। এমন একটা ছেলের সাথে অামার মেয়ের বিয়ে দের যে দায়িত্বশীল, সত এবং অবশ্যই একজন ভালো মানুষ। আমার মেয়ের বিয়ে আজই হবে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই আমার মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করতে চাই। আর আমার মেয়ের বিয়ে হবে মাসুদের সাথে (পলাশ আঙ্কেল সবার সামনে এমনটা ঘোষনা করলেন)

আঙ্কেল আমি!! কিন্তু আমি কেন? আমার থেকে অনেক ভালো ছেলেও আছে। যাদের ভালো একটা পরিবার আছে তা বাদ দিয়ে কেন আমার মতো অনাথের হাতে আপনি নিজের মেয়ে তুলে দিচ্ছেন!

কে বললো তুমি অনাথ! আমরা তো আছি তোমার। আর আমি জানি আমার লিমার জন্য আমি তোমার থেকে ভালো ছেলে আরেকটা বাছতে পারবো না। আমাকে যদি নিজের বাবার মতো সম্মান করে থাকো তবে তুমি এ বিয়েতে অমত করো না! (আঙ্কেল)

কিন্তু আঙ্কেল লিমা কি আমায় মেনে নিবে! ওকে তো একবার জিগ্গাস করে নেওয়া উচিৎ?

লিমা অমত করবে না। ও কখনো আমার কথার অমত করেনি। আমি জানি আজও করবে না। চলো তুমি প্রস্তুত হয়ে আসো আমি সব আয়োজন করছি। (আঙ্কেল)

আর কি আল্লাহ সত্যি খুব দয়াবান। তার কাছে চেলে সব কিছুই পাওয়া যায়। খুব খুশি লাগছিলো! অবশেষে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেই পেলাম সাথে একটা পরিবারও এখন আর নিজেকে এতিম মনে হবে না।

বিয়ে সম্পন্ন হলো। আঙ্কেল ও আন্টি অনেক খুশি কিন্তু লিমাকে দেখে মনে হচ্ছে না ও এই বিয়েতে খুশি।

এর পর অন্যান্ন কার্যক্রম করতে করতে সন্ধা হয়ে গেলো। এরি মধ্যে আমি তারিকুলকে খবর দিয়ে দিছি আর আমার বিয়ের কথা শুনে ও ছুটে এলো বিয়ে বাড়িতে।

সন্ধায় ছাদে বসে ওকে সব ঘটনা খুলে বললাম,

যাক দোস্ত অবশেষে তুই তোর ভালোবাসার মানুষটাকেই পেলি (তারিকুল)

হুমম। কিন্তু লিমা কি আমায় মেনে নিবে! ও তো আমায় দেখতেও পাড়ে না!

এখন তো মেনে নিতেই হবে কারন তুই ওর স্বামী। (তারিকুল)

ভাই মেনে নিলেই ভালো।

আরে দুড়! তুই চিন্তা করিস না তো সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এখন বসে না থেকে যা তোর ছাত্রী বউয়ের কাছে যা। অনেক রাত হয়ে গেছে (তারিকুল)

এরপর তারিকুল আমায় জোড় করেই বাশর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিলো। রুমে ঢুকে দেখি লিমা চুপচাপ বসে আছে। আমাকে দেখেও কোনো কথা বলছে না। আমি গিয়ে লিমার বিছানায় বসতেই,

ঐ ছোটলোকের বাচ্চা! তুই আমার বেডে বসলি কেন? (অনেকটা রেগে লিমা)

লিমা! এগুলো কি বলছো! আমি তো তোমার স্বামী।

স্বামী আর তুই! হা হা হা হা।আমি তোকে আমার স্বামী মানি না। আরে তুইতো আমাদের বাড়ির চাকর হওয়ারও যোগ্য নস। (লিমা)

তাহলে আমায় বিয়ে করলে কেন? তখনতো না করে দিতে পারতে?

তখন না করলে বাবার সম্মান নষ্ট হতো। তাই তোকে বিয়ে করলাম। শোন কখনো আমার কাছে স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবি না। আমি তোকে কোনোদিনও স্বামী হিসেবে মানবো না। (লিমা)

তো কি এভাবেই চলবে নাকি!

না এভাবে চলবে না। আমি তোকে খুব তারাতারি ডিবোর্স দিব।কিন্তু তার আগে তুই বাবার কাছে খারাপ সাজতে হবে। (লিমা)

কেন?

কারন বাবা তোকে অনেক বিশ্বাস করে। আর তাই আমাদের যদি বিনা কারনে ডিবোর্স হয়ে যায় তবে বাবা আমাকে খারাপ ভাববে। তাই তোকে বাবার সামনে খারাপ সাজতে হবে যাতে বাবা নিজেই আমাদের ডিবোর্স করায়। (লিমা)

যা তোমার ইচ্ছা।

আমি খাটের থেকে একটা বলিস নিয়ে ছোফায় শুয়ে পরলাম। এই ব্যপারটা আগেই আচ করতে পেরেছিলাম যে লিমা আমায় কিছুতেই মেনে নেবে না তাই বেশী একটা অবাক হলাম না।

পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো লিমার ডাকে।

ঐ উঠ। যা খাটে গিয়ে ঘুমা (লিমা)

আহ্ এতো সকালে ডাকার কি আছে। তোকে ডাকছি কি আর স্বাধে! যা খাটে গিয়ে ঘুমা না হলে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে (লিমা)

নাহ্ এই মেয়ের হিটলারি বুদ্ধি অনেক। সব সময় নিজেকে সেভ রাখার রাস্তা খোজে।

একবার যখন ঘুম ভেঙ্গে গেছে তখন আর ঘুম হবে না জানি তাই একদম উঠে পরলাম। ফ্রেস হয়ে একটু বই নিয়ে বসলাম। এরপর সকালে সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করলাম। অবশ্য আজ একটু জামাই আদর পেলাম খুব ভালোই লাগলো কিন্তু কপাল খারাপ বৌয়ের আদর পেলাম না।

যাই হোক ব্রেক-ফাস্ট শেড়ে ইউনিভার্সিটিতে চলে গেলাম। সেখানে তারিকুলের সাথে দেখা।

কিরে ভাই! কাল তোর বিয়ে হলো আর আজ তুই এখানে? (তারিকুল)

কেনো ভাই কোথাও লেখা আছে নাকি বিয়ে হলো পরের দিন ক্লাস করা যায় না!

না সেটা না। আচ্ছা ভাই বল রাতে কি কি হলো! (তারিকুল)

আর বলিস না ভাই। রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি!

কি বলিস কি! ভাই তা কি করলি সাড়া রাত (অনেক আগ্রর নিয়ে তারিকুল)

আরে শালা তুই যা ভাবছিস তার কিছুই হয়নি। রাতে ছোফায় শুতে হয়েছিলো তাই ঘুমাতে পারি নি।

কি বলছিস এগুলো! ছোফায় শুয়েছিস মানে? (তারিকুল)

তোর ভাবি কাল রাতে আমার কাছে কি চেয়েছে জানিস?

কি! (তারিকুল)

ডিবোর্স

কিহ্! (তারিকুল)

হুম। লিমা আমায় একদমই মেনে নিতে পারবে না।

আরে ভাই তুই চিন্তা করিশ না। ৬ মাসের আগে তোদের ডিবোর্স হবে না। সুতরাং তোর হাতে ৬ মাস সময় আছে। দেখ লিমার মনে তোর জন্য ভালোবাসার জন্ম নেওয়াতে পারিস কি না! (তারিকুল)

হুম আমি তাই করবো। এতো সহজে ওর হাত ছেড়ে দেবো না। ভাগ্য যখন ওকে আমার কাছে এনে দিয়েছে আমি আর ওকে দুরে যেতে দেবো না।

এরপর তারিকুলের সাথে আরো টুকটাক কিছু কথা বলে চলে গেলাম ক্লাস করতে। ক্লাস করে তারিকুলকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম বাড়ীতে।

বাড়ীতে আসার পর আঙ্কেল আমায় যা বললো তার আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।

চলবে…

পর্ব ৪ – ব্যথাময় জীবন

তারিকুলের সাথে কিছু কথা বলে বাড়ী চলে আসলাম।

বাড়ী এসতেই,

বাবা মাসুদ! তোমার টাকা লাগবে তুমি আমাকে বলো নি কেন? দেখ এখন তুমি লিমার স্বামী আমাদের সব কিছুই তোমাদের। তোমার কিছু লাগলে তুমি সোজা এসে আমাকে বলবে তুমি তা না করে লিমার সাথে রাগারাগি করলে কেন? দেখ বাবা তুমি আমাদের সব নিয়ে নাও কিন্তুলিমাকে কষ্ট দিও না (পলাশ আঙ্কেল কথাগুলো বলেই আমার হাতে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো ধড়িয়ে দিলেন)

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তার কথা। আমি তো কিছুই করি নি বা বলিনি তবে আঙ্কেল এগুলো কি বললেন আমায়!

ছোফায় চোখ পরতেই দেখি লিমা আন্টির কাছে বসে কাদছে।

তখন কাল রাতে লিমার কথাগুলো মনে পড়ে গেলো “আমার বাবা তোকে অনেক বিশ্বাস করে। আগে তোকে বাবার কাছে খারাপ বানাবো তারপর বাবা নিজেই আমাদের ডিবোর্স করাবেন”

এবার বুঝলাম এসই লিমার সাজানো খেলা। আমী ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে ছোফায় বসলাম তখনি লিমা রুমে আসলো।

কেমন লাগলো আজকের নাটক? (লিমা)

হুম ভালোই। তোমার টাকা টেবিলের উপর রাখা আছে।

হুমম গুটবয় আমার বাবার টাকায় তুই হাত দিবি না। (লিমা)

আচ্ছা লিমা আমি তোমায় বলেছি তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবো তবুও কেন আমায় আঙ্কেলের কাছে খারাপ বানাচ্ছো?

কারন তোকে আমি দেখতে পারি না। তোকে দেখলেই আমার গা-জ্বলে তাই তোকে এ বাড়ী থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি মাত্র। (লিমা)

তোমার যা ইচ্ছা করো তবে মনে রেখো তুমি যত বড় গর্ত খুড়বে একদিন তাতে তোমাকেই পড়তে হবে এবং সে দিন তুমি হাজার় চেষ্টা করেও নিজের খোড়া গর্ত থেকে উঠতে পারবে না।

কথাটা বলেই আমি রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।

আরে যা যা বেশি নীতি কথা বলতে আসিস না। (লিমা)

আমি চলে আসলাম ছাদে বসে বসে ভাবতে লাগলাম,

“লিমাতো আমায় দেখতেই পারে না তো ওকে কেন ভালোবাসবো আমি! কেন আমি ঐ মানুষটাকে আকড়ে বাঁচতে চাইবো যাক দুই চোঁখের কাটা আমি! না লিমাকে মুক্তি দিয়ে দিবো। ও যা চায় করুক। কিন্তু আঙ্কেল যদি আমায় বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয় আমি কোথায় থাকবো! আমার পড়ালেখার খরচই বা চালাবো কি করে! না যাই হয়ে যাক আমার পড়া লেখা চালিয়ে যেতে হবে। পৃতিবীতে আমার থাকার জায়গার অভাব হবে না। আর অনাথ হওয়ার পরেও খোদা যখন আমায় এতো দুড় এনেছে তবে বাকী পথটাও আমায় কোনো ভাবে চালিয়ে নিবেন।”

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সন্ধা হয়ে গেলো। রুমে গিয়ে একটু বই নিয়ে বসলাম। রাতে সবার সাথে ডিনার করে এসে ছোফায় সুয়ে পড়লাম। এখন এটাই আমার বেড হবে গেছে। একটু কষ্ট হলেও এখন ধিরে ধিরে সয়ে যাচ্ছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেক-ফাস্ট করে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এখন আর পলাশ আঙ্কেল আমায় নিউশনি করতে দেয় না।
কেম্পাসে পৌছাতেই তারিকুলের সাথে দেখা।

ভাই কেমন যাচ্ছে তোর দিনকাল? (তারিকুল)

হ্যা রে ভাই ভালো। তোর?

আমার আর কি ভাই সব কিছু থেকেও নেই নেই। এভাবে ভালো থাকার কোন মানেই নেই রে ভাই। জীবনটা উদ্দেশ্যহীন হয়ে পরেছে। জানি না কোন তীরে গিয়ে ভিড়বে আমার জীবন। (তারিকুল)

ভাই মন খারাপ করিস না।

আচ্ছা বাদ দে। বল লিমার সাথে তোর কি কত দূর? (তারিকুল)

না রে ভাই লিমার সাথে আমার কিছুই হবে না। ও আমায় একদমই সহ্য করতে পারে না। ভাই জানিস কতটা ভালোবাসি ওকে কিন্তু ওকে বোঝাতে পরি নি। পরি নি ওকে বলতে ভালোবাসি। কখনো সুযোগই দেয়নি ও বলার। আমি দূড়ে সড়ে গেলেই ও ভালো থাকবে ভাই তাই ভাবছি ও যা চায় তাই হবে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেব। মুক্ত করে দিব ওকে।

কিন্তু ভাই তোর কি হবে! তুই তো ওকে ভালোবাসিস! (তারিকুল)

ছোট থাকতে আমার একান্ত আপন মানুষ দুটোকে হাড়িয়ে ফেলেছি, নিজের রক্তও যখন আমায় দূরে ঠেলে দিয়েছিলো তখনও আমি বেঁচে ছিলাম। তো এবারও পারবো বেশি কষ্ট হবে না। আসলে ভালোবাসার মানুষগুলোকে হাড়াতে হাডাতে অভ্যাস হয়ে গেছে।

ভাই রে কিছুই বলার নেই তোকে। তোর নিয়তিটা তোকে দিন দিন পাথর বানিয়ে দিচ্ছে তবে আল্লার ওপর নিরাশ হোস না তিনি নিশ্চই তোর জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছে। (তারিকুল)

হ্যা ভাই আল্লাহর কাছে অভিযোগ নেই। হয়তো এখন জীবনে কষ্ট আছে তবে সেই কষ্টগুলো সেয়ার করার মতো একটা ভাইওতো দিয়েছে আমায়।
কথাটা বলতেই তারিকুল আমায় জড়িয়ে ধরলো।

তারপর আরো কিছু কথা হলো তারিকুলের সাথে। তারপর ক্লাস করতে গেলাম। ক্লাস শেষে তারিকুলকে বিদায় জানিয়ে বাড়ী ফিড়লাম।

আজও লিমার একটা সাজানো নাটক শুরু। আঙ্কেল আমায় অনেক কিছুই বললো, চুপচাপ থাকলাম। কোন প্রতিবাদ করলাম না। জানি প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হবে না।
আমি রুমে চলে আসলাম। বাথরুমে সাওয়ারের নিচে অনেক সময় দাড়িয়ে থাকলাম ভাবতে লাগলাম আমার ভালোবাসার মানুষটাকে। ওর কাজের ফলে মনে চায় ঠাটিয়ে দুটো চর মাড়ি কিন্তু ওর ঐ মায়াবি মুখটা দেখলেই নিজের মধ্যে কোন রাগ ধরে রাখতে পারি না। খুব ভালোবাসি তো ওকে। ও কি আমায় মেনে নিতে পারতো না! কি ক্ষতি হতো আমায় মেনে নিলে! কি ক্ষতি হতো আমার একটু ভালোবাসে বুকে জড়িয়ে নিলে! ও কি বোঝে না শত অপমানের পড়েও একমাত্র ওর কারনেই পড়ে আছি ওর কাছে!”

খুব কাদতে ইচ্ছা করে। কেদে একটু নিজেকে হালকা করতে মন চাইছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু চোখ দিয়ে একটুও পানি বেড় হচ্ছে না চিৎকার করতে মন চাইছে। আমি যেন দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি।

গোছল শেষ করে রুমে এসে বসলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমা রুমে এসে শুয়ে পড়লো। অপলক তাকিয়ে আছি ওক চাঁদ মুখানার দিকে। কতটা মায়া ভড়া এই মুখটায়! যত দেখি যেন মন ভড়েনা! খুব ইচ্ছা করছে কপালে অলতো একটা ছোয়া দিই। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে পারছি না।

বিকেল টাইম তাই বাড়ীর বাইড়ে চলে গেলাম একটু হাটতে। রাস্তা দিয়ে হাটছি এমন সময়,

এই যে মাসুদ ভাইয়া! (একটি মেয়ে)

আমি পিছনে ফিরে,

জ্বি আমাকে বলছেন!

জ্বি ভাইয়া। (মেয়েটি)

হুমম বলুন!

ভাইয়া আমি সালমা। আপনার এক বেজ জুনিয়র। আসলে ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো কিন্তু কিভাবে যে বলি! (মেয়েটি মাথা চুলকাতে চুলকাতে)

আরে বলো সমস্যা নেই।

চলুন ভাইয়া হাটতে হাটতে বলি (মেয়েটি মানে শিউলি)

হুমম চলো।

তারপর দুজন হাটতে লাগলাম। মেয়েটি হয়তো এমন কিছু বলতে চাইছে যা বলতে একটু একটু ভয় পাচ্ছে।

হুমম বলো কি বলতে চাও!

আসলে ভাইয়া! আমি তারিকুলকে ভালোবাসি। কিন্তু ওকে কিছুতেই বলতে পারছি না। আপনি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড প্লীজ একটু help করুন! (শিউলি)

এ কথা তো তুমিও তারিকুলকে বলতে পারো!

ভাইয়া খুব ভয় পাই যদি ও আমায় না করে দেয়! আমি মড়েই যাবো। অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি। (শিউলি)

আচ্ছা কাল ক্যাম্পাসে এসো আমি ব্যবস্থা করে দেও।

ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি জানতাম আপনি আমায় না করবেন না। ভাইয়া আপনার নাম্বারটা একটু দিবেন! (শিউলি)

সরি আসলে আমি ফোন use করি না।

ও আচ্ছা। তাহলে ভাইয়া আজ আসি কাল ক্যাম্পাসে দেখা হবে। (শিউলি)

হুমম বায়।

মেয়েটি চলে গেলো। খুব সুন্দর মেয়েটি। তারিকুলের সাথে বেশ ভালোই মানাবে। আর মেয়েটির চোখ ও কথা বলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা সত্যি তারিকুলকে ভালোবাসে। যাক ভালোই হলো। আমার ভাইটারও একটা পথচলার সাথী হয়ে গেলো।

সন্ধায় বাড়ী চলে আসলাম। এসে কিছুক্ষন বই পড়লাম তারপর ডিনার করে ছোফায় এসে শুয়ে পড়লাম। এখন আর বাড়ীর কেউ আমার সাথে বেশী একটা কথা বলে না। এখন সবাই আমাকে খারাপ ভাবতে শুরু করেছে।

যাক বাদ দেই সে কথা।

সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম ক্যাম্পাসে। আজ উঠতে একটু দেড়ি হওয়ায় ব্রেক-ফাস্ট করা হলো না।

চলে আসলাম ক্যাম্পাছে।

চলবে…

পর্ব ৫ – বেদনাময় ভালোবাসা

সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেড়ী হওয়ায় আর ব্রেক-ফাস্ট করা হলো না। না খেয়েই ক্যাম্পাছের দিকে রওনা দিলাম।

ক্যাম্পাছে পৌছাতেই তারিকুলের সাথে দেখা। এই একটা মানুষই এখন আমার একটু কেয়ার করে।

কি রে ভাই! কি খবর?

এইতো ভাই ভালো। তোর? (তারিকুল)

হুম আমিও ভালো। আচ্ছা তারিকুল তুই কারো সাথে প্রেম করিস না কেন?

ভাই আজকাল প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই রে। যা আছে সব সার্থ উশুল করার একটি প্রক্রিয়া। এখানে সত্যকারের ভালোবাসার কোন দামই নেই। (তারিকুল)

তবুও তোর এমন একজনকে খোজা উচিৎ ছিলো যে তোর কেয়ার করবে, তোকে ভালোবাসবে, তোর সুখ-দুঃখের ভাগিদার হবে।

আমার সুখ-দুঃখের ভাগিদার তো তুই আছিস ভাই! (তারিকুল)

দেখ তবুও তোর উচিৎ কারো সাথে ঘড় বাধা। আমার এটাই একমাত্র তোকে তোর এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারবে।

কিন্তু ভাই আজকাল কাউকে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়। আর জানিস তো বিশ্বাস জিনিসটা নষ্ট হলে কতটা কষ্ট লাগে। (তারিকুল)

আরে ভাই এমনোতো কেউ থাকতে পারে যে তোকে তার জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসে!

হা হা হা। নেই রে ভাই! আমার জীবনে এমন কেউ নেই (তারিকুল)

চল আমার সাথে।

কই যাবি! (তারিকুল)

আগে চলতো।

এরপর ক্যাম্পাছে শিউলিকে খুজতে লাগলাম। ঐ তো শিউলি।

ঐ শিউলি দাড়াও।

আমার সাথে তারিকুলকে দেখে শিউলি অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি তারিকুলকে নিয়ে শিউলিের কাছে গেলাম।

হুমম শিউলি কাল আমাকে যে কথাগুলো বলেছিলে তা এখন তারিকুলকে বলে ফেলো।

শিউলি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তাই দেখে আমি বললাম,

চল তারিকুল শিউলি মনে হয় তোকে কিছু বলবে না! (শিউলি শুনিয়ে আমি তারিকুলকে নিয়ে হাটতে শুরু করলাম)

এই বার শিউলি মুখ খুললো,

ভাইয়া আমার খুব লজ্জা করছে! (শিউলি)

এসব বিষয়ে চুপ থাকলে তার জন্য অনেক বড় কিছু হাড়াতে হয়। তাই বলছি তারাতারি বলে ফেলো। আমি ঐ সাইডে যাচ্ছি তুমি ওর সাথে কথা বলে দুজন একসাথে এসো।
আমি শিউলি আর তারিকুলকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে আসলাম।

কিছু বলবেন! (তারিকুল)

হুম বলবো। (শিউলি)

কি বলবেন বলুন? (তারিকুল)

আসলে (শিউলি)

হুম বলুন? (তারিকুল)

তারিকুল আমি তোমাকে ভালোবাসি। (শিউলি)

কিহ!! তুমি তো আমাকে ঠিক ভাবে চিনোও না। আর আমি তো তোমার নামটাও আজই জানলাম! কি ভাবে হলো এসব! (তারিকুল)

আসলে তোমায় প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়। তারপর তোমায় ফলো করতে শুরু করি। তুমি সবার থেকে আলাদা এবং খুব ভালো তাই তোমায় ভালোবেসে ফেলি (শিউলি)

আবেগ! এসব আবেগ ছাড়া আর কিছুই নয়। কিছু দিন আমার সাথে থাকলে এ আবেগ আর থাকবে না। আমার বেপারে জানার আগ্রহকেই তুমি ভালোবাসা বলছো। একে অপরের মনের কথা বুঝতে পারার শক্তিকেও ভালো বন্ধুত্ব বলে আর ভালোবাসা তও আরো গভীর একটা প্রক্রিয়া। (তারিকুল)

WOW! আমি আবার তোমার উপর লাড্ডু হয়ে গেলাম। আচ্ছা যাও ভালোবাসার নাম দিলাম না অন্তত্য তোমাকে বোঝার সুযোগ দাও। তারপর বাকিটুকু দেখাযাবে। (শিউলি)

হুম ঠিক আছে আজ থেকে আমরা বন্ধু। এখন চলো মাসুদ বসে আছে। (তারিকুল)

এরপর ওরা আমার কাছে আসলো।

কিরে তারিকুল! তাহলে মনের মানুষ পেয়ে গেলি!

না রে এখনো অনেক বড় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে তোমার বোনকে। (তারিকুল)

আরে আমার বোন ঠিকই করে নিবে কোন ব্যাপার না। কি বলো শিউলি!

জ্বি ভাইয়া।

তারপর একসাথে বসে কিছুক্ষন কথা বললাম। জানতে পারলাম শিউলি সম্পর্কে।

বড়লোকের মেয়ে কিন্তু অহঙ্কার নেই, আমাদের মতোই স্বাধারণ জীবন-যাপন করতে ভালোবাসে।

কিছুক্ষন কথা বলার পর তারিকুল একটা দরকারের ফলে আমাদের মাঝথেকে উঠে গেলো। তখন আমি আর শিউলি।

তা ব্যাপার কতদুর!

আর বইলেন ভাইয়া! আপনার বন্ধু আস্ত একটা খাটাশ। এতো ভালোবাসি তবুও বিশ্বাস করতেই চায় না। না পেরে বন্ধু হয়ে থাকতে হচ্ছে। (শিউলি)

ওর বন্ধুত্বটাই অনেক। আর হ্যা ওর মনে জায়গা করার সকল সুযোগ আমি করে দিব। চিন্তা নাই।

ধন্যবাদ ভাইয়া। (শিউলি)

শোনো একটা কথা! তোমার ফলে যদি কোনো কারনে আমার ভাইটা কষ্ট পায় তবে আমি কিন্তু তোমায় ক্ষমা করবো না।

ভাইয়া আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। আমি এমন কোনো কাজ করবো না যাতে ও কষ্ট পায়। (শিউলি)

হুম ধন্যবাদ (তারপর আমি শিউলিকে তারিকুলের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে সব বলতে লাগলাম)

এরি মধ্যে তারিকুল চলে আসলো।

ভাই এইটা রাখ (তারিকুল)

মোবাইল কেন?

ভাই তোকে অনেক মিস করি। রাখ না ভাইয়েদ দেওয়া একটা জিনিস! (তারিকুল)

আচ্ছা ঠিক আছে দে।

তারিকুল ফোনটায় নিজের নাম্বার করে দিলো। তারপর শিউলিও আমার নাম্বার নিলো।তারপর তিনজনে কিছুক্ষন গল্প করে তারপর আমি আর তারিকুল ক্লাছে গেলাম আর শিউলি নিজের ক্লাছে গেলো।

ক্লাস শেষ করে বাড়ী ফিড়লাম। বাড়ীর ভিতরে ঢুকতেই ….

ঠাসসসসসস

তোকে কতো বিশ্বাস করতাম আর তুই আমার মেয়েটাকে ঠকাচ্ছিস। তোকে বলেছিলাম তোর যা লাগে সব নিয়ে নে কিন্তু আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিস না। কিন্তু তুই এতোটা নিচ আগে জানতাম না। (লিমার বাবা)

বাবা আমার অপরাধ!

এমন ভাব দেখাচ্ছিস যেন কিছুই জানিস না! এটা কি? (বলেই আমাকে একটা ছবি দেখালো যেখানে শিউলি আমায় জড়িয়ে ধরেছে)

আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। শিউলি কখনোই আমার এতোটা কাছে আসে নি। আর ওকে তো আমি বোন মনে করি।

বাবা বিশ্বাস করেন এগুলোর কিছুই সত্য না।

ঠাসসসসসস

আমি নিজেও আজ তোকে এই মেয়েটার সাথে দেখেছি। আবার মিথ্যা বলছিস লজ্জা করে না! তোকে বিশ্বাস করে আমার মেয়েটাকে তোর হাতে তুলে দেওয়াই ছিল আমার সব চেয়ে বড় ভুল। আমি নিজেই আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিলাম। তোকে বিশ্বাস করে আমার বাড়ী ঠায় দেওটাও ছিল আমার ভুল। আরে তোর বাবা-মা তো অনেক ভালো ছিলেন তুই এমন কেমনে হলি! (লিমার বাবা)

বাবা ওকে তুমি কিছু বলবে না। ভালো হোক, খারাপ হোক ও আমার স্বামী। ওকে কিছু বললে আমার খারাপ লাগে। (লিমা)

দেখ! দেখ! আমার মেয়েটাকে দেখ। তোকে কত্তটা ভালোবাসে। তবুও তুই কি করে ওকে ঠকাচ্ছিস! (লিমার বাবা)

বাবা ওকে যদি তুমি আর একটা কথা বলো তো আমি ওকে নিয়ে এই বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যাবো (লিমা)

যতটা না কষ্ট হচ্ছে লিমার বাবার কথায় তার চেয়ে বেশী অবাক হচ্ছি লিমার আচরনে।

লিমা আমার হাতটা ধরে রুমে নিয়ে গেল। রুমে এসেই দরজা আটকে দিলো।

কিরে ছোটলোকের বাচ্চা! কেমন লাগলো আজকের অভিনয়? (লিমা)

লিমার উপর এতোটাই রাগ উঠে গেলো যে ঠাসস করে একটা বসিয়ে দিলাম ওর গালে।

আমি তো বলেই ছিলাম তোকে মুক্তি দিয়ে দিবো তবে কেন এমন করছিস?

কারন তোকে শুধু আমার জীবন থেকেই নয় আমার বাড়ী থেকেও বেড় করতে চাই। (চিৎকার করে বললো লিমা)

এটাই যদি তোর উদ্দেশ্য হয় তবে কাল থেকে তুই আর এ ছোটলোকের বাচ্চাটার মুখ দেখতে পারবি না।

চলে যা। মুক্ত কর আমায় (বলেই রুম থেকে চলে গেলো লিমা)

আমি ছাদে চলে আসলাম।

‘এ আমি কি করলাম! আমি লিমাকে চড় মাড়লাম! কি করবে পারলাম আমি! আর আমি লিমার আছে এতোটাই বিরক্তি কর! পলাশ আঙ্কেলও আমায় ভুল বুঝলো! কেউ বিশ্বাস করলো না আমার কথা! ঠিক আছে লিমা যখন চায় তবে চলেই যাবো। থাকবো না ওর চোখের সামনে। ভালো থাকুক ও”

ছাদে দাড়িয়েই সন্ধা পেড়িয়ে রাত হয়ে গেলো। রাতেও কেউ আমায় খাবার জন্য ডাকলো না। আজ সাড়াদিন কিচ্ছু না খাওয়া মাথা খুব ব্যথা করছে।

হঠাৎ করেই ছাদে মাথা ঘুড়ে পরেগেলাম। কিছুক্ষন পর শরীরে পানি পড়ায় জ্ঞান ফিরলো। চোখ খুলে দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। আমি রুমে চলে গেলাম। মাথাটা এখনো ঝিনঝিন করছে।
পড়ার টেবিলে বসে লিমার জন্য একটা চিঠি লিখলাম। যাতে আমার না বলা কথাগুলো লিখে রেখেছিলাম লিমার জন্য।

তারপর খালি হাতেই বেড়িয়ে পড়লাম অজানার উদ্দেশ্যে।

চলবে…

পর্ব ৬ – অসহায় ভালোবাসা

সকালে ঘুম থেকে উঠে আর ছোফায় মাসুদকে দেখতে পেলো না লিমা।

ও ভাবছে হয়তো বাইড়ে গেছে। তারপর তার স্বাভাবিক কাজগুলো করতে লাগলো। সকাল পেড়িয়ে দুপুর, দুপুর পেড়িয়ে সন্ধা হয়ে গেলো এখনো মাসুদের দেখায় পায়নি লিমা।
তখনি গত কালের কথাটা মনে পড়ে গেল “কাল থেকে আর এই ছোটলোকের বাচ্ছাটার মুখ দেখা লাগবে না তোমার।”

তার মানে কি মাসুদ সত্যি সত্যি চলে গেছে! যাক ভালো হয়েছে! আমি বেঁচে গেলাম।

কথা গুলো ভাবতে থাকে লিমা। এরপর সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো লিমা। বাড়ীতে কেউ মাসুদের কথা একটা বার জিগ্গাসাও করলো না।

আজ লিমার ঘুম আসছে না। ”আচ্ছা আমি মাসুদের সাথে কেন খারাপ ব্যবহার করলাম! আমি তো ওকে মেনেও নিতে পারতাম! আর তাছাড়া মাসুদের সাথে তো আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ওকে কেনো এতোটা অপমান করলাম!”

আবার ভাবে “আরে ধুর! কোথাকার কে তার জন্য এতো ভাবার কি আছে! আমি যার বিষয়ে কিছুই জানি না তার জন্য কেন এতো চিন্তা করবো! যাক আপদ বিদায় হয়েছে ভালোই হয়েছে।”

এসব ভাবতে ভাবতে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো লিমা। সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলো। মাসুদের আজো কোনো খোজ নেই। লিমার আজ কিছুই ভালো লাগছে না। কিছু যেন একটা খুব করে ভাবাচ্ছে ওকে।

“আচ্ছা মাসুদের সাথে কি এমনটা করা ঠিক হলো! না ওতো আমায় জোড় করে বিয়ে করে নি! বাবাই ওকে বাধ্য করেছে এই বিয়েতে। কিন্তু ওকে এতো অপমান করার পরও কেন কোনো প্রতিবাদ করলো না! আচ্ছা আমি কেনই বা ওকে সহ্য করতে পারছিলাম না!”

মনে মনে লিমা এখন মাসুদকে মিস করতে শুরু করেছে। দুটি বছর একসাথে থাকার ফলে কিছুটাতো ভালোলাগা তো কাজ করেই।

তারপর তাদের বিয়ের তিনমাস সম্পূর্ন হয়েছে। তিন মাস এক ছাদের নিচে থাকলে একটু তো মায়া জন্মাবেই যতই একে অন্যকে সহ্য করতে না পারুক।

লিমা ব্রেক-ফাস্ট করে রুমে গেলো। না কিছুই ভালোলাগছে না ওর। মন খারাপ করে খাটের উপর বসে পরলো। তার চোখের সামনে পড়ে আছে একটি টেবিল। মাসুদ এই টেবিলটায় বসে পড়তো।

লিমা কি যেন মনে করে টেবিলটির কাছে গেলো। খুব সুন্দর গুছানো একটি টেবিল। বইগুলো আগের মতোই পরে আছে কিন্তু এগুলো পড়ার মানুষটাই নেই। হঠাৎই তার চোখে পরলো কলম দিয়ে চাপা দেওয়া একটি কাগজ।

লিমা কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

“লিমা!”

আমি জানতাম যে আমি তোমার কাছে এতোটাই বিরক্তিকর। জানো লিমা প্রথম যে দিন তোমায় দেখেছিলাম যেন আমার সময় সেখানেই থেমে গিয়েছিলো। আমি তোমায় মাঝেই হাড়িয়ে গিয়েছালাম। প্রথম দেখায় তোমার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। তারপর যখন জানলাম তুমি পলাশ আঙ্কেলের মেয়ে, আমি সেই মায়া কাটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু রোজ সকাল-বিকাল যখনই তুমি আমার সামনে আসতে, আমার মন যেন আর আমার বাধা মানতে চাইতো না! কি যেন একটা আকর্ষন করতো আমার মনটাকে। তুমি চোখের সামনে থাকলে মনে হাজারো কল্পনার সৃষ্টি হতে যার মূলটা তুমি ছিলে। তবুও চেষ্টা করতাম তোমার থেকে দূড়ে থাকার। আমি জানতাম তুমি আমায় একদমই সহ্য করতে পারতে না আর এখনো পারো না। তাই নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাইতাম তোমার থেকে। খাবার টেবিলে যখন তুমি আমার সামনে বসতে, আমার চোখ দুটো আমার সাথে বেইমানী করতো, শুনতো না আমার কোনো কথা। তোমার দিকেই চেয়ে থাকতো অপলক।

এরপর আঙ্কেল যখন তোমায় পড়ানোর কথা বললো আমি আঙ্কেলকে অনেক ভাবেই না করেছি কিন্তু তার সাথে পারিনি।

জানো লিমা তুমি যখন মন দিয়ে পড়তে তখন দুটি চোখ যেন তোমার দিকেই চেয়ে থাকতো। আমি পারতাম না তাদের ফেড়াতে।

আস্তে আস্তে মনে মধ্যে তোমায় নিয়ে হাজারও সপ্ন দেখতে থাকি।

যদিও জানতাম এগুলো কখনোই সত্যি হবার নয়। মিত্যেই হোক তবুও যেন মনে সান্তি পেতাম। আমি বলতে চাইতাম আমার মনের কথা তোমায় কিন্তু পারি নি। পারি নি মুখ ফুটে বলতে,’লিমা ভালোবাসি’ হ্যা ভালোবাসি তোমায়। অনেক ভালোবাসি কিন্তু বলার সুযোগ পাইনি। হয়তো সেই সুযোগটা তুমি আমায় দাওনি।তবুও তোমায় নিবরেই ভালোবেসে জেতাম। এতেই যেই ছিল পরম সান্তি।

লিমা যখন তোমার বিয়ে ঠিক হলো তখন যেন আমার ভেতটা চিড়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমি আগে থেকেই জানতাম তোমায় পাওয়া আমার দ্বারা সম্ভব না কারন আমি তো অনাথ তাই না। কি আছে আমার! কি দিয়ে সপ্ন দেখাবো তোমায়। সবার খুশির মাঝে আড়াল হয়ে গিয়েছিল সেদিন আমার বোবা কান্না।

কিন্তু পড়ে যখন বরের সমস্যার পর আঙ্কেল তোমার সাথে আমার বিয়ের কথা বললো, তখন সময়টা আমার কাছে সপ্নের মতো লাগছিলো।

আমি জানতাম তুমি কখনোই আমায় মএনে নিবে না। তআই বিয়েতে তোমার মত জানতে অনেক বার বলেছিলাম আঙ্কেলকে। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেন নি।

তোমায় ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু তোমার মনের বিরুদ্ধে আমি তোমায় কখনোই পেতে চাই নি। জানো লিমা যখন তোমার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছিলো আমার মনে হচ্ছিলো আমি যেন আর অনাথ নই, আজ থেকে আমারও একটা পরিবার হলো কিন্তু দেখো এটাও আমার কপালে সইলো না।

ছোট থাকতে অনাথ আশ্রমে ছিলাম, আঙ্কেল আমায় বিশ্বাস করে এখানে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু তা আজ নষ্ট হয়ে গেলো।

লিমা জানো তোমার কোনো প্রতিবাদ করিনি আমি কেন করিনি! কারন আমি আঙ্কেলকে সত্যটা বললে সে তোমায় খারাপ ভাববে। তোমার বাবা, তোমার পরিবার সেখানে আমি কে!

তাই ভাবলাম তুমি ভালোথাকো। আমি শড়ে গেলাম তোমার জীবন থেকে।

জানো লিমা তোমার অপমানেও ততোটা কষ্ট পাইনি যতটা লাগতো ছোটলোকের বাচ্চা বললে। জানো লিমা আমার একসময় সবই ছিলো কিন্তু নিয়তি আমার কাছ থেকে সব কিছুই নিয়ে নিয়েছিলো।

আমার বাবা ছোটলোক ছিলো না।

যাক সে কথা এই ছোটলোকের বাচ্চাটা আর তোমার সামনে আসবে না। কোন ভুল করে থাকলে আমায় মাফ করে দিও আর হ্যা নিজের খেয়াল রেখো,

ইতি,
ছোটলোকের বাচ্চা

কাগজটি পরে লিমা কিছুক্ষনের জন্য পাথর হয়ে গেলো। নিজের ভুলেই এমন একটা মানুষকে হাড়ালো যে কিনা তাকে এতো ভালোবাসতো!

আসলে লিমা মাসুদের ব্যাপারে কিছুই জানতো না।

লিমা দৌড়ে নিজের বাবার কাছে চলে গেলো।

বাবা মাসুদ কে? (লিমা)

কেন? (লিমার বাবা)

বলো please (লিমা)

মাসুদ হচ্ছে তোর শহীদ আঙ্কেলের ছেলে। জানিস মা আমিও অনাথ ছিলাম। তোর শহীদ আঙ্কেল ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আজ আমি এই পজিশনে একমাত্র তোর শহীদ আঙ্কেলের কারণেই। মাসুদ ছোট থাকতে তোর আঙ্কেল আর আন্টি একটি দুর্ঘটনায় মাড়া যান। তারপর মাসুদ অনাথ আশ্রমেই বড় হয়। আমি ভেবেছিলাম আমি তোর জন্য ভালো ছেলেই নির্বাচন করেছি কিন্তু কে জানতো ও এমন হবে! আমি নিজের অজান্তেই তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম রে মা! (লিমার বাবা)

বাবা আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি! অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি! (লিমা)

কি হয়েছে মা বল আমায়! (লিমার বাবা)

বাবা আমি মাসুদের সাথে অনেক বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি! (লিমা)

কি হয়েছে বলবি তো! (লিমার বাবা)

(এরপর লিমা বাবাকে সবকিছু খুলে বললো)

ঠাসসসস

তুই আমার মেয়ে হয়ে এমন একটা কাজ করতে পারিস আমি ভাবতেও পারি নি! আমি ছেলেটা কে কি থেকে কি বলে ফেলেছি! মাসুদ এখন কোথায় আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই? (লিমার বাবা)

বাবা মাসুদ কাল থেকে বাড়ী নেই। (কান্না করতে করতে লিমা)

বাড়ী নেই মানে কোথায় ও? (লিমার বাবা)

জানি না বাবা। ও আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওকে তারিয়ে দিয়েছি (হাউ মাউ করে কেদে উঠে লিমা)

ঠাসসসস…

তুই কি করে করতে পারলি এমনটা ছেলেটার সাথে! (লিমার বাবা)

বাবা তুমি আমায় যা করবে করো কিন্তু আমায় মাসুদকে এনে দাও বাবা। আমায় মাসুদকে এনে দাও (কাদতে কাদতে লিমা)

লিমার বাবার মেয়ের উপর প্রচন্ড রাগ ওঠে কিন্তু মেয়ের কান্না সে সহ্য করতে পারে না।

কাদিস না মা। আমি মাসুদের খোজ করছি। (লিমার বাবা)

লিমার বাবা পুলিশকে খবর দেয়।লিমার বাবা জানতো যে তারিকুল মাসুদের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই সে লিমাকে নিয়ে তারিকুলের কাছে চলে যায়।

তারিকুলের বাড়ী গিয়ে জানতে পারে তারিকুল সদর হাসপাতালে আছে তাই লিমার বাবা ও লিমা চলে যায় হাসপাতালে। তারা তারিকুলের কাছে পৌছাতেই।

তারিকুল বাবা! মাসুদ কোথায়? মাসুদের খবর জানো? (লিমার বাবা)

(তারিকুল চুপচাপ দাড়িয়ে আছে)

ভাইয়া! ভাইয়া বলো মাসুদ কোথায় প্লিজ ভাইয়া আমাকে মাসুদের কাছে নিয়ে চলো (লিমা তারিকুলের হাত ধরে কাদতে কাদতে বললো)

তারিকুল একঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে।

আর কতো নাটক করবি লিমা! আমার ভাইটার জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস তুই। মাসুদের যদি কিছু হয় সত্যি বলছি আমি তোর খুন করে ফেলবো (অনেকটা রাগের সাথে বললো তারিকুল)

ভাইয়া আপনি আমায় যা করবেন করেন। আমি ভুল করেছি আমায় একবার মাত্র একবার ওর কাছে নিয়ে চলুন। (এখনো কাদছে লিমা)

তারিকুল কোন কথা না বলে একটি কেবিনে ঢুকে গেলো। লিমাও অনুরোধ করতে করতে তারিকুলের পিছে পিছে কেবিনটিতে ঢুকলো।

ঢুকতেই যেন লিমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো।

মাসুদ! মাসুদ এখানে শুয়ে আছে কেন! কি হয়েচে ওর!

চলবে…

পর্ব ৭ – কান্নাময় জীবন

একি! মাসুদ এখানে! কি হয়েছে মাসুদের!

লিমা দেখলো মাসুদ বেডে শুয়ে আছে আর মুখে অক্সিজেন মাষ্ক লাগালো।

মাসুদকে এ অবস্থায় দেখার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না লিমা।

কি করে হলো তারিকুল ভাই! (লিমা)

আমি জানি না। আগেরদিন ক্যাম্পাছে মাসুদকে একটা ফোন কিনে দিছিলাম। রাতে ওর নাম্বার থেকে রাতে কল আসে।

তখন একজন অরিচিত লোক বলে মাসুদের এক্সিডেন্ট হয়েছে। যদি সেদিন ওকে ফোন না দিতাম তবে আজ হয়তো মাসুদকে আর পেতাম ও না। (তারিকুল)

ডাক্তার কি বললো ভাইয়া! (লিমা)

ডাক্তার ওর সম্পর্কে কিছুই পরিষ্কার ভাবে বলে নি। কখন জ্ঞান ফিড়বে কিছুই বলেনি। (তারিকুল)

আমি জানি মাসুদের কিছুই হবে না ও ঠিক হয়ে যাবে ও অবশ্যই ঠিক হয়ে যাবে (কাদতে কাদতে লিমা)

লিমাকে রেখে তারিকুল ক্যাবিন বেড়িয়ে গেলো। তারিকুলের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে লিমার উপর কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা কেন না লিমা হলো তার প্রিয় মানুষটার ভালোবাসা।

তারিকুল বেড়িয়ে যাওয়ার পর লিমা মাসুদের কাছে বসলো। আজ নিজের কাছেই নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে লিমার। মাসুদের এ অবস্থার জন্য নিজেকেই দায়ী করছে লিমা।

আজ ৩দিন হয়ে গেলো মাসুদের জ্ঞান ফেড়ে নি। লিমাও এই ৩দিন মাসুদকে রেখে এক মুহুর্তের জন্যও কোথাও যায় নি। সব সময় মাসুদের সুস্থ্যতা প্রার্থনা করেছে। লিমা এই রূপ দেখে তারিকুলের ও লিমার উপর থেকে রাগ সরে গেছে।

বিকাল বেলা,

তারিকুল ডাক্তারদের সাথে কথা বলছে আর লিমা বসে আছে মাসুদের মাথার কাছে। সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মাসুদের মুখখানির দিনে।

হঠাৎ সে খেয়াল করলো মাসুদের চোখের পাতা নড়ছে।

সে চিৎকার করে তারিকুলকে ডাকতে লাগলো। তারিকুল ক্যাবিনে এসে দেখে মাসুদ আস্তে আস্তে চোখ খুলছে।

তারিকুল আর লিমা মাসুদের দুই পাশে বসা। মাসুদ চোখ খুলতেই,

ভাই! ভাই দেখ আমী তারিকুল। (তারিকুল)

(মাসুদ চুপচাপ শুয়ে আছে)

আমায় ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে আর কোন দিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না। please আমাকে ছেড়ে যেও না। (অন্য পাশ থেকে লিমা মাসুদের হাত সক্ত করে চেপে ধরে)

তারিকুল আমি কোথায়? (মাসুদ)

তুই তোর শ্বশুর বাড়ী আছিস। শালা সুইসাইড করতে গেছিলি কেন? (তারিকুল)

কি বলছিস এসব! আমি কেন সুইসাইড করতে যাবো? (মাসুদ)

তো তোর এবস্থা হলো কি করে? (তারিকুল)

দাড়া মনে করে নিসে দিন রাতে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে পরি। বাইড়ে বৃষ্টি হচ্ছিলো আর স্বাড়াদিন কিছু না খাওয়ার ফলে ভালোকরে চলতে পারছিলাম না। হাটতে হাটতে কোথায় যাচ্ছিলাম কিছুই বলতে পারছিল না। চোখে ঝাপসা দেখছিলাম হঠাৎ কি যেন একটা এসে প্রচন্ড জড়ে ডাক্কা মাড়ে তারপর আর কিছউ মনে করতে পারছি না। (মাসুদ)

আমার জন্যই সব কিছু হয়েছে। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে। (লিমা)

তারিকুল ওকে চলে যেতে বল। (মাসুদ)

আমি যাবো না। তুমি যাই বলো আমাকে যাই করো আমার সাথে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। (লিমা)

তারিকুল! (মাসুদ)

তারিকুল নিজেই ক্যাবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। লিমা মাসুদকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো।

মাসুদ লিমাকে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না। হয়তো লিমা ছাড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিলো না মাসুদের। কারন লিমাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়াটাইতো ছিলো তার সপ্ন।

কিন্তু মাসুদ এখনো ভুলেনি সেই আগের দিন গুলোর কথা। তাই লিমার সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করছে।

কিছুক্ষন পড়েই তারিকুল মাসুদ ও লিমার জন্য খাবার নিয়ে আসলো।

লিমা তুমি এই চারদিন ঠিকমতো কিছুই খাওনি আজ অন্তত্য খেয়ে নাও আর মাসুদকে এটা খাইয়ে দাও। (তারিকুল)

তারিকুল! (মাসুদ)

তারিকুল আর কোন কথা না বলেই বেড়িয়ে গেলো। লিমা খাবার গুলো হাতে নিয়ে।

নাও হা করো (লিমা)

না আমি খাবোনা।

হা করতে বলেছি কিন্তু! (লিমা)

বলছিনা খাবো না। একবার বললে কানে যায় না! (চিৎকার করে বললো মাসুদ)

ঠিক আছে তাহলে আমিও খাবোনা। (লিমা)

লিমা খাবারগুলো পাশে টেবিলে রেখে দেয়। তারপর আবার মাসুদকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে। মাসুদ চার দিন অজ্ঞান থাকার ফলে সে ঠিকমত হাত, পা লাড়াতে পারছিলো না তাই সে লিমাকে সড়িয়ে দিতেও পারলো না।

কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমার শক্ত করে জড়িয়ে ধরা হাত তার বাধন ছেরে দেয় এবং লিমা চেয়ার থেকে পড়ে যায়।

মাসুদ চিৎকাক করে ডাক্তারকে ডাকতে থাকে। মাসুদের চিৎকার শুনে বাইড়ে থেকে তারিকুল ভিতরে এসে দেখে লিমা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তারিকুল লিমাকে ধরে পাশের বেডে শুইয়ে দেয়।

ভাই তুই লিমাকে আর কষ্ট দিস না। আমি জানি ও তোর সাথে যা করেছে তা ঠিক করে নি কিন্তু এখন ও ওর ভুল বুঝতে পেড়েছে। জানিস তুই যএ কয়দিন অজ্ঞান ছিলি লিমা তোকে ছেড়ে এক মুহুর্তের জন্যেও কোথাও যায় নি। আরে আমিও তো তিন বেলা নিজের মতো কর খেয়েছি কিন্তু লিমা ঠিক মতো একটা ভাতও মুখে দেয়নি। অনেক কেঁদেছে এই কয়দিন ভাই আর কাদাইস না ওকে। (তারিকুল)

(মাসুদ চুপকরে শুয়ে আছে)

তারিকুল লিমার মুখে পানির ছিটা দিতে থাকলো এতে করে লিমার জ্ঞান ফিড়লো। জ্ঞান ফেড়ার পর লিমা বেড থেকে উঠে এসে আমার মাসুদের পাশে বসলো।
লিমা আমার খুব খুদা লেখেছে।

মাসুদের একথা শুনতেই লিমার মুখে এক চিতলে হাসি ফুটে উঠলো। সে খুশি মনে টেবিল থেকে খাবারগুলো নিয়ে আসলো।

হুম খাবো তবে একটা শর্ত আছে!

কি শর্ত? (লিমা)

আমার সাথে তোমাকেও খেতে হবে।

ঠিক আছে (লিমা)

এরপর লিমা মাসুদকে খাইয়ে দিলো এবং নিজেও খেলো।

এরপর মাসুদকে আরো ৩দিন হাসপাতালে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তারিকুল আমাকে তোর বাড়ী একটু থাকতে দিবি!

কেনো তুই তো এখন লিমাদের বাড়ী থাকবি। (তারিকুল)

না ভাই আমি ও বাড়ী আর যাবো না। তোর কাছে রাখতে যদি সমস্যা হয় তবে আমি অন্য কোথাও মেনেজ করে নিবো।

না ভাই চল তুই আমার সাথে চল। (তারিকুল)

মাসুদের এরূপ আচরনে লিমা খুব কষ্ট পায়। লিমা কাদতে কাদতে বাড়ী চলে যায় আর মাসুদ চলে আসে তারিকুলের সাথে তারিকুলের বাড়ী।

মাসুদকে বাড়ী আনতেই শিউলি ছুটে আসে মাসুদের কাছে।

ভাইয়া এখন কেমন আছেন? (শিউলি)

হুমম ভালো। তা তুমি এতোদিন আসো নি কেন?

আসলে ভাইয়া সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ফিড়েই আমি নানু বাড়ী চলে যাই। তাই আর আসা হয়নি। (শিউলি)

ও তো কতদুর এগুলো তোমাদের প্রেম কাহিনী?

আর এগুনো! আপনার এক্সিডেন্টের পর তারিকুলের সাথে এক মিনিট কথাও বলতে পারি নি! (শিউলি)

আচ্ছা এখন আমি আছি না সব ঠিক হয়ে যাবে।

আচ্ছা ভাইয়া আজ আসি। আর আপনার বন্ধুটাকে একটউ বোঝাইয়েন। (শিউলি)

শিউলি চলে গেলো।

মাসুদ লিমাকে খুব মিস করছে। তার মন চাইছে লিমাকে নিজের বুকে আগলে রাখতে।

কিন্তু আবার কিছুদিন আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যেই মেয়ে ওকে দেখতে পারতো না সে আজ ওকে এতো ভালোবাসে কেমনে নাকি এটাও লিমার কোনো চাল?

লিমার আর কোনো চাল খাটানো লাগবে না। আমি আর লিমার সামনেই যাবো না। আর আমাদের বিয়ের ৬মাস পূর্ন হলেই ডিভোর্স পেপার চলে আসবে তখন লিমাকে মুক্ত করে দেব।

তারিকুলের সাথে ভালোই সময় কাটে মাসুদের। তারিকুলের বাসায় দুইদিন কেটে যায় মাসুদের।

পরদিন সকালে আব্দুল্লা বসে একটি বই পড়ছিলো হঠাৎই কলিং বেল বেঁজে ওঠে। তারিকুল বাড়ী ছিলো না তাই মাসুদই গিয়ে দরজা খুললো।

দরজার ওপাসের মানুষটাকে আশা করে নি মাসুদ।

চলবে…

পর্ব ৮ – স্বস্তির নিঃশ্বাস

একি আঙ্কেল আপনি!

এতো তারাতারি বাবা থেকে আঙ্কেল হয়ে গেলাম! (লিমার বাবা)

সরি বাবা! আসুন ফিতরে আসুন।

এর পর তাকে নিয়ে ভেতরে গেলাম।

তা বাবা মাসুদ তোমার শরীর এখন কেমন আছে? (লিমার বাবা)

হ্যা বাবা ভালোই আপনার?

আমার এই কোন রকম। তা বাবা আমাকে আর লিমাকে কি ক্ষমা করা যায় না! (লিমার বাবা)

একি বলছেন বাবা আপনি! আপনি কেন ক্ষমা চাইছেন?

দেখো আমি তোমাকে না জানি কি কি বলে ফেলেছি আর লিমাও তোমার সাথে কম খারাপ ব্যবহার করে নি। দেখো মাসুদ আমি তো তোমার বাবার মতোই আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে আমাদের কাছে চলো। (লিমার বাবা)

ছি ছি বাবা এগুলো কি বলছেন! আমি আপনাদের উপর রাগ করে ঐ বাড়ী ছাড়ী আর আসল কথা আমার কোনো রাগই নেই। আমি ঐ বাড়ী ছেড়েছি একটা কারণে আর তা হলো লিমা আমার মুখ দেখতে পারে না। ও আমায় একদমই সহ্য করতে পারে না। আর আমি যে ওকে কথা দিয়েছি আমি চলে যাবো ওর জীবন এবং ওর বাড়ী থেকেও।

দেখো বাবা লিমা যা করেছে খুব খারাপ করেছে কিন্তু এখন ও আর সেই আগের লিমা নেই। তোমার এক্সডেন্ট হওয়ার পর লিমা যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল। ঠিক মতো খেতো না, ওর কোন কাজই করতো না শুধু তোমার পাশে বসে সাড়া দিন কাদতো। তুমি ঠিক হওয়ার পরে ও একটু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল কিন্তু তুমি যখন তারিকুলের সাথে এ বাড়ী চলে আসলে তখন থেকে ও এক ফোটা পানিও মুখে নেয় নি। এখন ও হাসপাতালে ভর্তি। (লিমার বাবা)

কি বলছেন এগুলো বাবা!

বাবা লিমা আমার একমাত্র মেয়ে। ও এখন তোমায় ছাড়া বাঁচবে না। আমি তোমার কাছে আমার একমাত্র মেয়ের জীবন ভিক্ষা চাইছি। please তুমি না করো না। (লিমার বাবা)

মাসুদ কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। ভাবতে লাগে একি সেই লিমা! যে কিনা কিছুদিন আগেও তাকে ইচ্ছামতো অপমান করতো! একি সেই লিমা! যে কিনা মাসুদ নামটাই সহ্য করতে পারতো না! একি সেই লিমা! যার একটু কাছে যেতে চাইলো শুনতে হতো হাজারও কথা!

লিমা কি এখন সত্যি আমায় ভালোবাসে নাকি এটা ওর নতুন কোনো নাটক! লিমা কেন করছে এসব!

নিজের রুমে এসে বসে বসে এসব ভাবতে লাগে। আর লিমার বাবা হতাশ হয়ে চলে যেতে লাগে।

পথে লিমার বাবার সাথে তারিকুলের দেখা হয়।

আঙ্কেল! আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে? (তারিকুল)

তারিকুল বাবা তুমি একটু মাসুদকে বোঝাও ওকে ছাড়া এখন লিমাকে বাঁচানো সম্ভব না। লিমা আমাদের একমাত্র মেয়ে ওর মুখে পাণে চেয়েই আমরা বুড়ো-বুড়ি বেঁচে আছি। আমার মেয়েটা এখন হাসপাতালে। তুমি বাবা একটু মাসুদকে বোঝাও। তুমি বোঝালে ও নিশ্চই বুঝবে। (লিমার বাবা তারিকুলের হাত ধরে)

আঙ্কেল আমি দেখছি। আপনি যান। (তারিকুল)

বাবা লিমার কিছু হয়ে গেলে আমরা বুড়ো-বুড়িও বাঁচবো না। তুমি please মাসুদকে নিয়ে আসো। (লিমার বাবা)

আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না। আপনি লিমার কাছে যান। আমি মাসুদকে নিয়ে আসছি। (তারিকুল)

তারিকুল লিমার বাবাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ী এসে দেখে মাসুদ ওর রুমে বসে আছে।

দোস্ত তোর হৃদয় এতোটা পাথর কি করে হলো! দোস্ত তোর ভালোবাসা আজ হাসপাতালের বেডে আর তুই এখনো নিষ্ঠুরের মতো বসে আছিস! (তারিকুল)

দোস্ত আমি যে লিমাকে কথা দিয়েছিলাম ওর সামনে যাবো না।

দোস্ত মেয়েটামড়েই যাবে রে। চল নআ একবার। (তারিকুল)

কিন্তু ওর কাছে আর কেনো যাবো ও তো আমায় সহ্যই করতে পারে না।

তুই কি কিছুই বুঝিস না! আরে একটা মেয়ে তোর সঙ্গ পাওয়ার জন্য় এতো কিছু করছে আর তুই বলছিস ও তোকে সহ্য করতে পারে না। আরে লিমা তোকে অনেক ভালোবাসে। (তারিকুল)

না আমার বিশ্বাস হয় না। লিমা যদি সত্যি আমায় ভালোবাসে তবে তার প্রমান দিতে হবে। আমি ওর পরিক্ষা নিবো।

তা তুই যা করবি করিস আগে হাসপাতালে চল। (তারিকুল)

তারপর তারিকুল আর মাসুদ রওনা হলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

বাবা মাসুদ আসে নি! বাবা মাসুদ কোথায়? (লিমা)

ও আসছে মা। কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। (লিমার বাবা)

তুমি মিথ্যা বলছো। আমি জানি ও আসবে না। তাই না বাবা ও তোমায় না করে দিয়েছে তাই না! (লিমা)

  • লিমার বাবা নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে।

বাবা ও আমায় কখনো ক্ষমা করবে না। বাবা আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে চাইনা বাবা আমই মড়তে চাই। আমায় মেড়ে ফেলো বাবা আমি মড়তে চাই (লিমা কথাগুলো বলেই কাদতে লাগলো)

কিছুক্ষন নিরবতার পরেই লিমার চোখ গেলো দরজায়। দেখে সেখানে মাসুদ দাড়িয়ে আছে। লিমার মুখে একচিতলে হাসি খেলে গেলো। মেয়ের মুখে হাসি দেখে লিমার বাবাও দরজার দিকে তাকালো সে মাসুদকে দেখতে পেয়ে সস্তির নিঃস্বাশ ফেললো।

লিমার বাবা উঠে ক্যাবিন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময়।

বাবা লিমাকে গত দু-দিন হাজার চেষ্টা করেও কিছু খাওয়াতে পারি নি। টেবিলে খাবার রাখা আছে। ওকে একটু খেয়ে নিতে বলো।

বলেই লিমার বাবা ক্যাবিন থেকে চলে গেলো।

মাসুদ সোজা টেবিল থেকে খাবারগুলো নিয়ে লিমার কাছে গেলো।

লিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর প্রিয় মানুষটির দিকে।

মাসুদ খাবারগুলো নিয়ে লিমার পাশে বসলো। লিমার দিকে তাকিয়ে দেখলে কতটা বদলে গেছে আগের লিমা! চোঁখের নিচে কালো দাগ, রোগা শরীর, চোখ দুটো ফুলে আছে।

লিমাকে এ অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,

লিমা! খাবারগুলো খেয়ে নাও।

(লিমা কোনো কথা বলছে না)

লিমা (ওর গায়ে হাত দিয়ে হালকা নাড়া দিলাম)

হ্যা বলো (লিমা)

খাবারগুলো খেয়ে নাও।

আমি হাত নাড়াতে পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি একটু খাইয়ে দেবে please (লিমা)

লিমার এমন করুন কন্ঠ শুনে নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে মাসুদের। মাসুদ নিজ হাতে লিমাকে খাবারগুলো খাইয়ে দিতে থাকে আর লিমা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মাসুদের মুখের পাণে।

মন ভরে দেখছে ওর প্রিয় মুখ খানি।

খাবার শেষ করে। মাসুদ লিমার পাশেই বসে থাকে, লিমার হাতে এখনো ছেলাইন চলছে।

একটু বাবাকে ডেকে দিবে please (লিমা)

মাসুদ লিমার বাবাকে ডেকে আনে ক্যাবিনে।

কি হয়েছে মা বল! (লিমার বাবা)

আমি আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। আমি বাসায় যাবো। (লিমা)

কিন্তু মা তুইতো এখনো অসুস্থ! (লিমার বাবা)

কিচ্ছু হবে না বাবা। আমি এখন ঠিক হয়ে যাবো। এখানে আমার থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে না। (লিমা)

লিমার কথায় আর না করলো না লিমার বাবা। বিকেলে গাড়ীতে করে লিমাকে বাড়ী নিয়ে আসা হলো।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে লিমার রুম দু-তলায় আর সিড়ি দিয়ে হুইল চেয়ার উঠানো সম্ভব না আর লিমা এতোটাই দুর্বল যে দাঁড়াতেও পারছে না তাই মাসুদ বাধ্য হয়ে লিমাকে কোলে করে নিতে হলো।

লিমা মাসুদের গলা দুই হাত দিয়ে জড়ীয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো। এই প্রথম লিমা মাসুদের বুকে মাথা রাখলো এক অন্য রকম সুখ অনুভুত হচ্ছে লিমার। লিমা প্রার্থণা করছে এই সময় যেন না শএষ হয়ে যায়।

মাসুদ লিমাকে রুমে নিয়ে লিমার বিছানায় লিমাকে শুইয়ে দিলো। লিমা মাসুদের গলা ছাড়তে চাইছিলো না কিন্তু মাসুদ জোড় করে ছাড়িয়ে ওয়াস রুমে চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর এসে লিমার পাশে বসেই একটা বই পড়তে লাগলো।

লিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাসুদের দিকে।

রাতেও লিমাকে খাইয়ে দিতে হলো। লিমার ঘুম আসছিলো না।

আমার খুব ভয় করছে তুমি please আজ আমার কাছে শোবে! (লিমা)

মাসুদ কোন কথা না বলে ছোফা থেকে উঠে গিয়ে লিমার পাশে আধ-শোয়া হয়ে বসলো।

আমার না ঘুম আসছে না একটু ঘুম পারিয়ে দিবে খুব মাথা ব্যথা করছে! (লিমা)

মাসুদ কোনো কথা না বলেই লিমার মাথা হাতিয়ে দিতে লাগলো।

প্রিয় মানুষটির হাতের ছোয়া পেয়ে লিমার ভালো লাগছে তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে পরলো।

লিমা ঘুমিয়ে গেছে দেখে মাসুদও বিছানা ছেড়ে এসে ছোফায় সুয়ে পড়লো।

চলবে…

পর্ব ৯ – মায়াবতীর মায়া

লিমাকে ঘুম পারিয়ে আমি ছোফায় গিয়ে সুয়ে পরলাম।

জানি না লিমা এখন এমন কেন করছে! ও তো আমার কাছ থেকে মুক্তি চায় তবে কেন আবার আমায় কাছে টানছে! কেন আবার জড়িয়ে ফেলছে আমায় ওর মায়াজালে! লিমা আসলে কি চাইছে!

এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালে কারো গরম নিঃস্বাশে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলতেই চমকে উঠলাম আমি।

দেখি লিমা মাটিতে বসে ছোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আর মুখটা একদম আমার মুখের উপরে থাকায় আমি হঠাৎ চোখ খুলেই চমকে উঠি।

তারমানে লিমা রাতেই এসে এখানে ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছিলো ওর মুখ খানি। মন চাচ্ছিলো আলতো করে একটা ভালোবাসার চিহ্ন একে দেই ওর কপালে।

কিন্তু ইচ্ছা থাকতেও পারলাম না কারণ লিমা আমায় সে অধিকার দেয় নি। ও আমায় দেয় নি ওকে ভালোবাসার অধিকার।

একটি বার আমায় সুযোগ দিয়েই দেখতো কতটা কেয়ার করি ওর।

কেন আমায় মেনে নিলো না! আমি এতিম বলে! আমার কিছু নেই বলে!

তাতে কি হয়েছে, আমার কি মন নেই! আমি তো সেখানেই বসাতে চেয়েছি ওকে। হ্যা আমার কিছু নেই, আমার পরিবার নেই, সম্পদ নেই, কোনো আশ্রয় স্থান নেই। একটা সুযোগ দিয়ে তো দেখতে পারতো, ওকেই আমি আমার দুনিয়া বানিয়ে নিতাম।

ওকে নিয়েই তৈরী করতাম আমার পরিবার, ওই হতো আমার একমাত্র সম্পদ, ওর বকেই আশ্রয় স্থান করে নিতাম আমি।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো। চোখটা মুছলাম। কেঁদে আর কি হবে!

ভালোবাসার পাখিটাকে মুক্তই করে দেই, ও উরুক নিজের মতো, বাসা বাধুক নিজের পছন্দে।

আমি ছোফা থেকে উঠলাম। লিমা এখনো গভীর ঘুমে।

ও অসুস্থ্য এই ভাবে ফ্লোরে বসে ঘুমানোটা ঠিক না তাই ওকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসলাম।

বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে যাবো ঠিক সেই সময় লিমা আমার হাত শক্ত করে জড়ীয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো। আমি ওর ঘুমটা নষ্ট করতে চাইছিলাম না।

ঘুমের মধ্যেখুব ভালোলাগছিলো ওকে দেখতে। এ কয়দিন হয়তো ঠিক মতো ঘুমায় নি আর ঘুমার আমিও দেখি আমার প্রিয় মুখটা।

লিমার বাসে বসে অপল তাকিয়ে থাকে মাসুদ লিমার দিকে।

৯টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে লিমার। সে দেখে মাসুদ তার পাশে বসেই অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে আর সে মাসুদের হাত জড়িয়ে ধরে আছে।

লিমা এবার মাসুদের হাতটা আরেকটু আপন করে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় হাতটাতে।

এর ফলে মাসুদের ঘোড় কাটে,

লিমা উঠে গেছো! উঠো অনেক সকাল হয়েছে। ফ্রেস হয়ে ব্রেক ফাস্ট করতে হবে।

উঠতে পারছি না। শরীর খুব দুর্বল লাগছে। তুমি একটু সাহায্য করবে please! (লিমা)

মাসুদ লিমাকে উঠতে সাহায্য করলো।

(আসলে লিমা এখন একটু স্বুস্থ্য আছে। সে এমন করছে কারন এতে সে মাসুদের সঙ্গ পাচ্ছে)

আমাকে একটু ওয়াস রুম পর্যন্ত নিয়ে যাবে! আমি একা একা হাটতে পারবো না। (লিমা)

কি আর করার মাসুদ লিমাকে ধরে ওয়াস রুমে নিয়ে যাচ্ছে আর লিমা মাসুদকে জড়িয়ে ধরে হাটছে।

লিমাকে ওয়াস রুমে দিয়ে আসার পর মাসুদ ওয়াস রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল ঠিক তখনি।

শুনো না! আমি হাত নাড়াতে পারতেছি না একটু ব্রাস করিয়ে দিবা! (লিমা)

দেখো লিমা আমি জানি তুমি এগুলো ইচ্ছা করে করছো। আমি আর কিছু করতে পারবো না।

ঠিক আছে আমি ব্রাসও করবো না আর ব্রেক ফাস্টও করবো না। যাও তোমাকে লাগবে না। (লিমা অভিমানী কন্ঠে)

মাসুদ জানে লিমার রাগ তাই হাড় মেনে যায় ওর রাগের কাছে।

সে লিমাকে সাহায্য করে তার পর লিমা মাসুদের উপর ভড় করেই খাবার টেবিলে আসে।

লিমার রাগ, অভিমান ও জোরাজোরির ফলে মাসুদ নিজ হাতেই লিমাকে খাইয়ে দেয়।

তাদের মধ্যে এমনটাই চলতে থাকে। রাতে লিমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হয়। লিমা মাসুদকে খাটে শোয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করলেও লিমা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ ছোফায় এসে শুয়ে পরে।

আর সকালে মাসুদের ঘুম ভাঙ্গে লিমার গরম নিঃস্বাশে।

এভাবেই চল এদের দিনগুলো। দেখতে দেখতে লিমা স্বাভাবিক হয়ে উঠে। তাই মাসুদ আবার লিমার থেকে দুরত্ব সৃষ্টি করতে থাকে। মাসুদ আবার মনোযোগ দেয় পড়াশোনায়, প্রতিদিন সকালে উঠে ইউনিভার্সিটিতে চলে যায়, আর দুপুরে আসে। যার ফলে লিমা এখন সকালে না খেয়েই থাকে কারণ ওর প্রিয় মানুষটি এখন আর তাকে আগের মতো আদর করে কাইয়ে দেয় না। রাতে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না, তাকে একটউ সময় দেয় না। লিমার কষ্ট হয় কিন্তু এটা ভেবে সে খুশি থাকে যো তার প্রিয় মানুষটি এখন আর তাকে ছেড়ে যাচ্ছে না।

কিন্তু মাসুদের মাথায় চলছে অন্য় কিছু।

অপরদিকে তারিকুলের সাথে এখন ভালো সম্পর্ক শিউলিের। শিউলি তারিকুলের খুব কেয়ার করে সাথে মাসুদেরও মাসুদ তার অনাথ জীবনে একটা ছোট বোন পেয়ে যায় আর তারিকুল পেয়ে যায় তার একলা জীবনে পথ চলার সাথী।

সবাই যখন খুশি তখন লিমা ভুগছে কিছু না পাওয়ার যন্ত্রণায়। সে আজও মাসুদের কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকার পায়নি। মাসুদকে আপন করে নিতে পারে নি।

লিমার ইন্টার কম্পিলিট হলেও সে আর লেখাপড়া করতে চায় নি। যদিও আগে তার ইচ্ছা ছিলো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া কিন্তু এখন তার দুনিয়াটাই মাসুদকে ঘিড়ে। সে এখন সপ্ন দেখে ছোট্ট একটা পরিবারের।

সুখ, শান্তি, ভালোবাসার কিন্তু সে আজও পারেনি মাসুদকে আপন করে নিতে।

দুপুরে মাসুদের পথ চেয়ে বসে আছে লিমা।

ইউনিভার্সিনি শেষ হয়ে এখন চলে আসার কথা কিন্তু আসছে না।

দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো তবুও আসে নি। মাসুদের অপেক্ষায় বসে থেকে দুপুরেও খাওয়া হলো না লিমার।

মাসুদকে ফোন অনেক করেছে কিন্তউ একবারও ফোন তোলে নি। খুব রাগ হতে থাকে মাসুদের উপর কিন্তা চিন্তা হচ্ছে বেশি।

রাতে বাড়ী ফেড়ে মাসুদ। কলিং বেল পড়তেই লিমা দরজা খুলে দেয়।

তুমি ঠিক আছো তো! কই ছিলা এতোখন! ফোন তুলো নি কেন! (লিমা) (যদিও কিছুক্ষন আগে মাসুদের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো লিমার কিন্তু সে আর এখন মাসুদের উপর রাগ দেখাতে পারে না ভালোবাসাটাই বেশি দেখায়)

আস্তে আস্তে। আমি বন্ধুদের সাথে ছিলাম। ফোন সাইলেন্ড করা ছিলো তাই ধরতে পারি নি।

আচ্ছা ভিতরে আসে। ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে আসো। আমি খাবার দিচ্ছি। (লিমা)

লিমা আমি বাইড়ে থাকে খেয়ে এসেছি তুমি খেয়ে নাও।

মাসুদ কথাটি বলেই রুমে চলে যায়।

লিমা মাসুদের এ অচরণে খুব কষ্ট পায়। যার জন্য সে শাড়াদিন না খেয়ে অপেক্ষা করলো তার আছে এটুকুও হতে পারলাম না আমি!

লিমাও খাবার খেলো না।

রাতে মাসুদ বুঝতে পারে লিমা অভিমান করেছে তাই লিমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো।

মাসুদ খাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আর লিমা অভিমান করে থাকতে পাড়লো না। কারণ অনেক দিন হলো লিমা মাসুদের হাতে খায়নি।
খাবার খেয়ে রুমে আসলো দুজনই।

শোন আজ থেকে তুমি আমার পাশে শুবে। (লিমা)

না আমি ছোফাতেই ঠিক আছি।

আমি বলছি না তুমি বিছানায় শোবে। (লিমা)

দেখো লিমা আমায় বেশি জোড় করবা না। বেশি জোড় করলে আমি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাবো।

মাসুদের এ কথায় বাক-রুদ্ধ হয়ে যায় লিমা। সে মাসুদের কাছ থেকে এমন কথা আশা করে নি। আর কোন কথা বলে না লিমা শুধু এক করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মাসুদের দিকে।

মাসুদ নিজের মতো সব কিছু গুছিয়ে ছোফাতেই শুয়ে পড়ে।

লিমা খাটে বসে কাদতে থাকে। অনেক কাদে সে দিন। কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা নেয় যাই হয়ে যাক না কেন মাসুদকে সে নিজের করেই ছাড়বে।

সে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।

সকালে মাসুদের ঘুম ভেঙ্গে। সে তার বুকের উপর খুব ভাড়ী কিছুর চাপ অনুভব করতে পারে। চোখ মেলে তাকিয়েই দেখে লিমা ছোফাতেই তার বুকের উপর এসে তাকে জড়ীয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

মাসুদ বুঝতে পারছে যে লিমা এখন তাকে অনেস ভালোবাসে কিন্তু সে চায় এ কথা লিমা নিজেই বলুক। আর মাসুদ যে লিমাকে ভালোবাসে না তা নয় মাসুদও লিমাকে অনেক ভালোবাসে হয়তো লিমার চেয়েও বেশি।

মাসুদ লিমার ঘুমন্ত চেহারার দিকেই চেয়ে আছে। খুব মায়া লিমার এই মুখখানিতে যা সেই প্রথম দিনই মাসুদের মন কেড়ে নিয়ে ছিলো।

লিমা মাসুদের বুকেই গভীর ঘুমে মগ্ন।

মাসুদ আলতো করে লিমার কপালে একটা চুমু একে দেয় এর ফলে লিমা তাকে আরেকটু চেপে জড়িয়ে ধরে পরে থাকে।

আর মাসুদ মগ্ন থাকে লিমার মুখের মায়ায় নিজের অস্তিত্য খোজায়।

চলবে…

পর্ব ১০ – স্বামী স্ত্রীর কষ্ট

লিমার মুখের পাণে চেয়েই সময় কেটে যায় মাসুদের। এই সময়টা যেন মাসুদের অনেক প্রিয় সময় যেখানে তার মনের মানুষটি তার বুকেই শান্তির নিদ্রায় মগ্ন।
সকাল ৮টায় ঘুম ভাঙ্গে লিমার।

ঘুম থেকে উঠেই দেখে সে মাসুদের বুকে শুয়ে আছে এবং মাসুদ তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সরি আসলে রাতে একা খুব ভয় করছিলো তাই তোমার কাছে চলে আসলাম। (লিমা)

আচ্ছা ঠিক আছে এখন উঠো।

এরপর লিমা উঠে ফ্রেস হতে চলে যায়। মাসুদ ভাবতে লাগে লিমার পাগলামি। কিন্তু লিমা এখনো কেন বলছে না ওর ভালোবাসার কথা! ও যদি সহজে না বলে তবে আমাকে আরো একটু নিষ্ঠুর হতে হবে কারন আমি লিমাকে আমার মনের কথা একবার জানিয়ে দিয়েছি এখন সময় ওর। সহজে না বললে অন্য ভাবেই কিন্তু বলতে তো ওকেই হবে।
লিমা ফ্রেস হয়ে আসলো। আজ ছুটির দিন তাই মাসুদও ফ্রেস হয়ে নিচে গেলো।

মাসুদ ছোফায় বসে পলাশ সাহেবের সাথে কথা বলছেন। (তার শ্বশুর)

আর লিমা আজ নিজে রান্না করতে গেছে। হয়তো মাসুদকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে বলেই।

মাসুদ ও তার শ্বশুরের কথা বলতে বলতেই ব্রেক-ফাস্ট তৈরী। আজ যদিও একটু দেড়ি হয়েছে তবুও কেউ কিছু বললো না কারণ আজ লিমা প্রথম রান্না করলো তাও আবার নিজের ইচ্ছায়।

মাসুদ মনে মনে অনেক খুশি তবে তা প্রকাশ করলো না।

আর পাঁচটা দিনের মতো আজও স্বাভাবিক ভাবেই ব্রেক-ফাস্ট শেড়ে নিলো।

লিমার কিছুটা মন খারাপ হলো। কারণ যার জন্য সে এতো কষ্ট করে খাবার রান্না করলো সে কোনো কথাই বললো না!

মাসুদ খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলো। লিমাও ব্রেক-ফাস্ট করে নিলো।

ব্রেক-ফাস্ট করে রুমে এসে লিমা।

একটা কথা বলবো! (লিমা)

হুমম বলো।

আজ বিকেলে একটু শপিং এ যাবো please যাবে আমার সাথে! (লিমা)

না গেলে হয় না!

please না করো না! (লিমা)

আচ্ছা ঠিক আছে। বিকালে তৈরী থেকো।

ধন্যবাদ। (লিমা)

মাসুদ রাজী হওয়াতে লিমা অনেক খুশি হয়।

লিমা কিছুই বুঝতে পারছে না! মাসুদ কি ওকে ভালোবাসে! কারন মাসুদ লিমা আপন করেও নিচ্ছে না আবার একেবারে পর করেও দিচ্ছে না! মাসুদের ছোট খাটো অবহেলায় যতটা কষ্ট পায় তার থেকে বেশি খুশি হয় যখন মাসুদ ওর কোনো কথা রাখে।

বিকালে লিমা একটি হলুদ শাড়ী পড়ে তৈরী হয়।

লিমাকে হলুদ শাড়ীতে দেখেতো মাসুদ আবার লাড্ডু লিমার উপর কিন্তু কি করবে বলুন ও তো তা প্রকাশ করবে না।

মাসুদ এমন ভাব করছে যেন সে লিমাকে নটিসই করেনি!

চলো যাই (লিমা)

ও হ্যা চলো।

লিমা এতো কষ্ট করে সাঁজলো আর মাসুদের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই!

যাই হোক লিমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো মাসুদ।

তবে গাড়ীতে নয় রিক্সায়। লিমা আর মাসুদ রিক্সায় পাশাপাশি হলেও মাসুদ বেশ দুরত্ব রেখে বসেছে মাসুদ।

লিমার চোঁখের আরালেই মাসুদ বারবার লিমার দিকে তাকাচ্ছে আর লিমা এই ভেবে মন খারাপ করে আছে যে ‘যার জন্য এতো কষ্ট করে সাঁজলাম তার চোখেই পরলো না!’
এমন ভাবে বসছো কেন পড়ে যাবে তো! (লিমা)

না আমি ঠিক আছি।

কি ঠিক আছো এদিকে আসোতো (বলেই লিমা মাসুদের এক হাত জড়িয়ে ধরে বসে)

মাসুদও কোন কথা বলে না। বাইড়ে দিয়ে লিমাকে এবইড করলেও ভিতরে ভিতরে লিমাকেই চায় সে।

রিক্সা থামলো অনেক বড় একটাশপিং মলের সামনে। তারপর দুজনে মিলে শপিং করলো সন্ধার একটু আগে তারাদুজন রাস্তাদিয়ে হাটছিলো এমন সময় খাদিজার আগমন।
(খাদিজা হচ্ছে শিউলিের বন্ধু। শিউলি আর তারিকুলের সম্পর্ক তৈরীর সুবাদে মাসুদের সাথে পরিচয় খাদিজার)

আরে ভাইয়া কি খবর আপনার! (খাদিজা)

এই তো ভালো তুমি?

জ্বি আমি ও ভালো। তা ভাইয়া চলেন না একটু ফুচকা খাবো। (খাদিজা)

ফুচকা খাবে! আচ্ছা চলো।

(আজব আমি পাশে দাড়িয়ে আছি কিন্তু আমাকে একদম কিছু বললোই না) মনে মনে ভাবছে লিমা।

লিমা চলো আমরা ফুচকা খেয়ে আসি।

হ্যা চলো। (অনিচ্ছা থাকলেও সে মাসুদকে না করতে পারে নি)

তারপর একটা ফুচকার দোকানে গিয়ে তিন প্লেট ফুচকার ওয়াডার দিলো মাসুদ।

সবাই ফুচকা খাচ্ছে কিন্তু লিমার ইচ্ছা হচ্ছে সে মাসুদকে খাইয়ে দিক ঐর মাসুদ ও তাকে খাইয়ে দিক।

ভাইয়া হা করুন (খাদিজা)

আমি খাচ্ছি তো তুমি খাও।

আপনাকে হা করতে বলেছি না! আপনি হা করুন। (খাদিজা)

আচ্ছা নাও হা।

এরপর খাদিজা মাসুদকে খাইয়ে দিলো।

নিন ভাইয়া এবার আপনি আমায় খাইয়ে দিন। (খাদিজা)

তারপর মাসুদ ও খাদিজাকে খাইয়ে দিলো। এটা দেখে তো লিমা রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। তার ইচ্ছা হচ্ছে এখনি খাদিজার মাথার চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। হাজার রাগ সত্যেও সে মাসুদকে কিছুই বলতে পারছে না কারন হাড়ানোর ভয়। যদি মাসুদ আবার তাকে ছেড়ে চলে যায়!

তাই সে সেখানেই চুপচাপ নিজের মতো দাড়িয়ে আছে।

একি লিমা তুমি ফুচকা খাচ্ছো না কেন?

না এই তো খাচ্ছি (লিমা)

ভাইয়া আমি কিন্তু আপনার উপর রাগ করে আছি! (খাদিজা)

রাগ! কিন্তু কেন?

আপনাদের ডিভোর্স পার্টিতে আমায় কেনো ইনভাইট করলেন না! (খাদিজা)

কথাটা শুনেই লিমা চমকে উঠলো।

কি বললে ডিভোর্স! (লিমা)

হ্যা কেন আপনি জানেন না! আপনার আর মাসুদ ভাইয়ার বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হয়ে গেছে তাই মাসুদ ভাইয়া আগামী পরশু একটা ডিভোর্স পার্টির আয়োজন করেছে। (খাদিজা)
ও কি বলছে এগুলো? (মাসুদ কে উদ্দেশ্য করে লিমা)

আরে খাদিজা দিলে তো সব শেষ করে! আমি চেয়েছিলাম লিমাকে সারপ্রাইজ দেব আর তুমি দিলে সব শেষ করে।

মাসুদের কথা শুনে লিমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তার মনে কি সে সত্যি মাসুদকে হাড়িয়ে ফেলতে চলেছে! না যে কোনো কিছুর বিনিময় হলেও মাসুদকে তার চাই
আচ্ছা খাদিজা তুমিও এসো সবার সাথেই আর হ্যা সব কিছুর ম্যানেজ করো তোমরাই।

ঠিক আছে ভাইয়া। (খাদিজা)

এরপর আরো কিছু কথা বলে খাদিজা চলে গেলো। এরপর মাসুদ লিমাকে নিয়ে বাড়ি ফিড়লো।

লিমা যেন কাঠের পুতুল হয়ে গেছে কোনো কথাই বলতে পারছে না সে।

বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয় মাসুদ।

অপরদিকে লিমা যেন ভুলেই গিয়েছে সে এই পৃথিবীর একজন।

রাতে মাসুদের জোড়াজুড়িতে খেতে হয় লিমার।

খাওয়া দাওয়া শেষে মাসুদ ও লিমা উভয়ই রুমে আসলো। মাসুদ যথারীতি ছোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

লিমা মাসুদের কাছে গিয়ে,

একটা কথা বলবো! (লিমা)

হুমম বলো।

বলছিলাম কি আমাকে ডিভোর্স দেওয়াটা কি বেশি জরুরী? (লিমা)

লিমা দেখো তোমায় আমি অনেক ভালোবাসতাম। বলবো না যে তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা কারণ সেটা বললে হবে সব চেয়ে বড় মিথ্যা কথা। আমি পৃথিবী সর্ব প্রথম যে মানুষদের ভালোবেসেছি তারা হলো আমার মা-বাবা। তাদের পরে যদি আমি কাউকে বেশী ভালোবেসে থাকি তবে সেটা ছিলে তুমি। তোমার আমার বিয়ের পর হয় তো ভেবেছিলাম তোমায় আগলে ধরেই কাটিয়ে দেব বাকি জীবনটা কিন্তু তুমি আমায় সেই সুযোগটা দাওনি। তুমি প্রথমেই আমার কাছে যা চাইলে তা হলো ডিভোর্স! আর আমার ভালোবাসার মানুষ আমার কাছে কিছু চাইলো আর আমি তা দিতে পারবো না সেটা হবে আমার চরম ব্যর্থতা। তাই তোমায় ডিভোর্সটা দিয়ে দিচ্ছি।

আমার এখন জীবনে এমন একজন চাই যাকে আমি নই বরং যে আমায় ভালোবাসে। কারণ আমার ভালোবাসার মানুষগুলো সব সময় আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আর হ্যা তোমার আমার ডিভোর্স হওয়ার পর আমি খাদিজাকে বিয়ে করে নিব কারণ আমি জানি ও আমায় ভালোবাসে আর আমার একটু খেয়াল রাখবে।

মাসুদের কথা গুলো শুনে লিমা আরো পাথর হয়ে যায়,

“মাসুদের এতোটা কাছে থেকেও এতোটা দুড়ে শড়ে গেছে সে আজ! যে মাসুদ আমার ভালোবাসার জন্য শত অপমান সহ্য করেও পড়ে ছিলো আমার কাছে সে আজ নিজেই আমায় দূড়ে ঠেলে অন্যের সাথে ঘড় বাধার সপ্ন দেখছে! দেখুক আমি আর ওকে বাধা দিবো না। সেই অধিকার টুকু যে আমার নেই। কি করে বাধা দেব ওকে! এক সময় আমি নিজেই তো ওকে দুড়ে ঠেলে দিয়েছি আর আজ সে আমার থেকে এতোটাই দূড়ে সড়ে গেছে যে আজ শত চেষ্টায় ও তাকে আগলে রাখতে পারবো না।”

আর মাসুদ ভাবছে “এবার তো বলো ভালোবাসি! চুপ করে আছো কেন আমি জানি অনেক ভালোবাসো আমায়! আমি জানি খাদিজার সাথে ওতোটা ক্লোজ হওয়ায় কতটা জ্বলেছিলে তুমি। তবে কেন বলছো আজ! কেন হাড়িয়ে যেতে দিচ্ছো আমায়! কেন টেনেনিচ্ছো না নিজের বুকে!”

কি হলো লিমা! কিছু বলছো না যে?

না কিছু না। (লিমা)

লিমা চলে যায় মাসুদের সামনে থেকে। অঝড়ে কেদেছিলো লিমা সেই রাতে। নিজেকেই গালি দিচ্ছিলো নিজের করা ভুলের কারনে।
সকালটা স্বাভাবিকই কাটলো। আজ আর মাসুদ ঘুম থেকে উঠে লিমাকে পাশে পায় নি।

লিমা মাসুদের থেকে কিছুটা দূড়ে শড়ে থাকার চেষ্টা করছিলো। হয়তো মাসুদের থেকে নিজের কান্নাগুলো আড়াল করতে চাইছিলো সে।

বিকেলে মাসুদের সকল বন্ধুরা লিমাদের বাড়ী চলে আসলো সাথে লিমার বান্ধবীরাও।

দোস্ত যাক তুই অবশেষে সেই ছোটলোকের বাচ্চাটার থেকে মুক্তি পেতে চলেছিস আজ। (লিমার এক বান্ধবি বললো কথাটি)

ঠাসসসসস

লিমা বসিয়ে দিলো তার গালে স্বজোড়ে এক চড়

মুখ সামলে কথা বল নুশরাত। (লিমা)
(লিমার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম নুশরাত)

দোস্ত তুই আমায় মাড়লি! (নুশরাত)

তুই আমার স্বামীর ব্যাপারে উল্টা পাল্টা বললি কেন? (চিৎকার করে বললো লিমা)

তুই তো নিজেই বলতি ঐ ছোটলোকের বাচ্চাটা তোর জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে! (নুশরাত)

তুই যদি ওকে নিয়ে আরেকটা কথা বলিস তো আমি ভুলে যাবো তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! (লিমা)

নুশরাত আর কোনো কথা না বলে অন্য বান্ধবীদের নিয়ে রুম থেকে বেড়ীয়ে যায়।

সবাই ছাদে পার্টির ব্যবস্থা করছে। আর লিমার বাবা-মাও কিছু বলছে না।

বেলা যত গড়াতে লাগলো লিমার কান্নাটাও ততই বাড়তে লাগলো। আজ রাত ১২ হারাতে চলেছে তার প্রিয় মানুষটাকে।

“না আমি মাসুদকে কিছুতেই ডিভোর্স দিবো না। ও যাই করুক আমি ডিভোর্স লেটারে সাক্ষর করবো না। “

এদিকে বিকেল পেড়িয়ে রাত হয়। লিমা আজ দুপুরে ও রাতে কিছুই খায় নি। অনেকই ওকে জোড় করেছিলো কিন্তু ফলাফল সূন্য।

রাত ১১টা ৫০

লিমা

রুমে ঢুকে লিমাকে ডাক দিলো মাসুদ।

মাসুদের চোখের আড়ালেই নিজের চোখের পানি মুছে নিল লিমা।

হ্যা বলো (লিমা)

চলো ছাদে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ যে তোমার খুশির দিন। তুমি কি খুশি নও!

হ্যা আজ আমার খুশির দিন। আজ আমি সত্যি অনেক খুশি। হ্যা চলো। (লিমা)

ছাদের দিকে হাটতে লাগলো লিমা আর মাসুদ।

হঠাতই লিমা মাথা ঘুড়ে পড়ে যেতে লাগলো। সাথে সাথে মাসুদ লিমাকে ধরে নিলো,

লিমা! লিমা! কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন?

লিমা মুখে একটা হাসি নিয়ে

আমি কখনোই পারবো না ডিভোর্স লেটারে সাক্ষর করতে, কখনোই পারবো না তোমায় পড় করে দিতে। তাই মাসুদের দিকে একটি বিষের শিশি এগিয়ে দিয়ে মাসুদের কোলেই অচেতন হয়ে পড়ে লিমা।

চলবে…

পর্ব ১১ – অবশেষে পাওয়া

হাসি মুখে মাসুদের দিকে একটি ছোট্ট শিশি এগিয়ে দিয়ে মাসুদের কোলেই জ্ঞান হাড়ায় লিমা।

মাসুদের বুঝতে আর বাকি থাকে না লিমার কি হয়েছে। লিমাকে তারাতরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে লিমার মা-বাবা আর পার্টিতে আশা সবাই যায় হাসপাতালে।
লিমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সবাই বাইড়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

কিছুখনের মধ্যেই ডাক্তার বেড়িয়ে আসে অপারেশন থিয়েটার থেকে।

ডাক্তার আমার মেয়ে? (লিমার বাবা)

দেখুন হাসপাতালে আনতে বেশি দেড়ি না হওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছো (ডাক্তার)

ধন্যবাদ ডাক্তার। (লিমার বাবা)

ধন্যবাদ আমাকে নয় উপরওয়ালাকে দিন আমরা তো শুধু চেষ্টাই করতে পারি। (ডাক্তার)

ডাক্তার আমরা কি এখন ওর সাথে দেখা করতে পারি? (লিমার বাবা)

এখন ওকে একটু বিশ্রাম দিন। ২০ মিনিট পর ওর সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেব। (ডাক্তার)

ধন্যবাদ ডাক্তার। (লিমার বাবা)

২০ পর সবাই এক সাথে গেলো। লিমার সাথে দেখা করতে,

কেন করলি মা এটা? (লিমার মা)

(লিমা চুপ করে আছে)

আমাদেরকে একা করে চলে যেতে চাইছিলি! (লিমার বাবা)

বাবা আমি এমনটা চাইনি। কিন্তু কি করে পারতাম আমি মাসুদকে ডিভোর্স দিতে! আমি যে ওকে খুব ভালোবাসি। (লিমা)

কখনো এ কথা মাসুদকে বলেছিস!! (লিমার মা)

না। বলার সুযোগ পাই নি। তার আগেই তো ও ডিভোর্সের সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে। (লিমার চোঁখের কনে জল নিয়ে)

কে বললো মাসুদ তোকে ডিভোর্স দিচ্ছিলো! (লিমার বাবা)

মানে!! কি বলছো এগুলো আজতো আমাদের বাড়ী ডিভোর্স পার্টি হচ্ছিলো। (লিমা)

ডিভোর্স পার্টি কখনো দেখেছিস! আর শোন মাসুদ তোকে তোর থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসে। (পাশ থেকে তারিকুল)

তাহলে এসব কি ছিলো? আর এই পার্টি? (লিমা)

আজ তোর জন্মদিন ছিলো দোস্ত। (নুশরাত)

তবুও বাবা মাসুদ এখন খাদিজাকে নিয়ে ঘড় বাধার সপ্ন দেখে ও আর আমায় ভালোবাসে না। (লিমা)

হা হা হা। আমি এখানেই আছি কিন্তু হ্যা। মাসুদ আমাকে নয় তোমাকেই ভালোবাসে। সেদিন বিকেলের দেখা করা, কথা বলা, ফুচকা খাওয়া এমনকি ডিভোর্সের কথাটা তোলাও ছিলো একটা প্ল্যাল যাতে তুমি তারাতারি মাসুদকে নিজের মনের কথাটা বলে দাও। (খাদিজা)

তার মানে এসবই মিথ্যা ছিলো! (লিমা)

হ্যা মা। (লিমার মা)

ওনি কোথায়? ওনাকে দেখছি না যে? (লিমা মাসুদকে কে খুজছে)

এখানে আবার ওনিটা কে? (নুশরাত)

আরে মীল নাটের গুড়ুই তো এখানে নেই। চলো আমরা সবাই বাইড়ে যাই। আর লিমার “ওনি” কে ভিতরে আসার সুযোগ করে দিন। (তারিকুল)

হ্যা সবাই বাহিড়ে চলো (লিমার বাবা)

এরপর সবাই বাইরে চলে গেলো। মাসুদকে পাঠিয়ে দিলো লিমার কাছে।

মাসুদ মাথানিচু করে এসে লিমার পাশে বসলো।

মুখ দিয়ে কথা বেড় হচ্ছেনা তার। সে ভাবতেও পারেনি লিমার সারপ্রাইজ দিতে যেয়ে এতো বড় কষ্ট দিয়ে দেবে। আজ লিমার এ অবস্থার জন্য সে নিজেকেই দায়ী করছে।
অপরদিকে লিমা তাকিয়ে আছে তার একান্ত আপন ও প্রিয় মুখ খানির দিকে। লিমা এটা ভেবে শান্তি পাচ্ছে যে তাকে আর এই মানুষটিকে হাড়াতে হবে না।

মাসুদ এবার নিচের দিকে তাকিয়েই লিমাকে সরি বলতে যাবে ঠিক তখনি লিমা মাসুদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাসুদও তার একমাত্র আপন মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

কেন করতে গেলে এমন?

ভয়ে! আপনাকে হাড়াবার ভয়ে। (লিমা)

তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হতো!

তবুও তো আপনার বউ হিসেবেই মড়তাম। ডিভোর্স পেপারে তো আর সই করতে হতো না। আর ডিভোর্স পেপারে সই করা থেকে এই কাজটাই আমার কাছে সহজ মনে হলো তাই এটাই বেছে নিলাম। (লিমা)

তুমি না থাকলে আমার কি হতো? কাকে নিয়ে সপ্ন দেখতাম!

কেন আপনাষ খাদিজা আছে না! (লিমা)

আমি যে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

হুম জানি আপনি আমাকেই ভালোবাসেন। (বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো লিমা)

আচ্ছা তুমি আমায় আপনি আপনি করে বলছো কেন?

কারণ আপনি আমার স্বামী তাই। (লিমা)

এতো দিনতো তুমি করেই বলেছো!

তখন আমি আপনাকে ভালোবাসতাম। (লিমা)

তারমানে এখন আমাকে ভালোবাসো না!

বাসি অনেক ভালোবাসি আর তার থেকেও বশি সম্মান করি। তাই এখন থেকে আপনি করেই বলবো। (লিমা)

তোমায় বুঝতে আমার আরেক জীবন লাগবে প্রথমে ‘তুই’ তারপর ‘তুমি’ আর এখন ‘আপনি’ করে বলছো!

আগের কথা গুলো ভুলে যান না। আগে অহংকারের পর্দার কারনে আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারি নি। প্লিজ আমায় মাফ করে দিন। (লিমা)

আরে কি বলছো। আমি তোমার কোনো ব্যবহারে কষ্ট পাইনি কিন্তু তোমার সাথে যা করেছি তা সত্যি ভুল হয়ে গেছে তুমি দয়াকরে আমায় ক্ষমা করে দাও।

একথা শুনার পরই লিমা মাসুদের বুক থেকে শড়ে অন্য দিকে মুখ ফিড়িয়ে বসে,

কি হলো ও দিকে বসলে কেন?

কথা বলছোনা কেন?

আমি আপনার উপর রাগ করে আছি। এ কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমায়। অনেক কাদিয়েছেন। আমায় একটুও আদর করেন নি। (ফোপাতে ফোপাতে লিমা)
ও এই কথা। আসো।

বলেই মাসুদ লিমার মুখটা ধরে নিজের কাছে এনে কপালে আলতো করে চুমু খেলো।

এবার খুশি!

হুমম (বলেই আবার মাসুদকে জড়িয়ে ধরলো লিমা)

(একটা উপদেশ: মেয়েদের ঠোটে চুমু দিলে শারীরিক লালশা বাড়ে এতে ভালোবাসা বিন্দু মাত্র বাড়ে না। আপনি যদি কাওকে সত্যি ভালোবেসে থাকেন তবে পরম আদরে তার কপালে একটি চুমু দিন সে আপনার প্রতি ভরশা পাবে, বিশ্বাস বাড়বে, আপনাকে সম্মান করবে আর অবশ্যই আপনার প্রতি তার ভালোবাসা হাজার গুনে বৃদ্ধি পাবে)

এভাবে শাড়া জীবন আপনার এই বুকটাতে মাথা রাখতে দেবেন তো? (লিমা)

কতদিন দেবো তা জানি না তবে যতদিন বেঁচে থাকবো এই বুক শুধুই তোমার।

দেখো কখনো উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না। (লিমা)

উল্টা পাল্টা কি বললাম! আমি কি আর শাড়া জীবন বেঁচে থাকবো নাকি! তো তোমায় কথা দিব কি করে যে আমার এই বুকটা শাড়া জীবনের জন্য তোমার?

দেখুন যে দিন মাথা রাখার জন্য আপনার এই বুকটা পাবো না সেদিনই মাটিতে মাথা রেখে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে যাবো। (লিমা)

লিমা কথাটা বলেই আরো শক্ত করে জড়ীয়ে ধড়লো মাসুদকে। আর মাসুদও পরম আদরে নিজের ভালোবাসাকে আগলে নিলো নিজের বুকে।

আচ্ছা তুমি কি এটুকুও চিন্তা করো নি যে তোমার বাড়ীতে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি পার্টি করে আর তোমার বাবা-মা কেন বাধা দিলো না বা তুমি এটুকুতো ভাবতে পারতে যে ডিভোর্সই যখন দেবো তখন এতো রাত করার কি আছে! কেউ কি কখনো রাত ১২টায় ডিভোর্স পার্টির আয়োজন করে?

আপনার কাছ থেকে ডিভোর্সের কথা শুনেই আমার দুনিয়াটা উল্টে গিয়েছিলো। হাড়িয়ে ফেলেছিলাম সব চিন্তা শক্তি। আপনি খুব কষ্ট দিয়েছেন আমায়। (লিমা)

মাসুদ লিমাকে বুকে জড়িয়ে,

আমি খুব সরি। তোমায় একটু সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!

যাই হোক। আজ আমি আমার জন্মদিনের বেস্ট উপহারটা পেয়েছি তা হলো আপনার ভালোবাসা। সত্যি এটা আমার জন্য অনেক। (লিমা)

ভাবী আমি কি একটু আসতে পারি! আপনারা বাকি রোমেন্স বাড়ী গিয়ে কইরেন। (খাদিজা দরজা থেকে)

হ্যা খাদিজা আসো আসো।

(লিমা তখনো মাসুদে জড়ীয়ে ধরে আছে)

বাব্বাহ্ ভাবীতো ভাইয়াকে পুরো নিজের মধ্যে লক করেই রেখেছেন। ভায় নেই আমি ভাইয়াকে চুরি করবো না আপনার কাছ থেকে! (খাদিজা)

খাদিজার কথা শুনো আমরা তিনজনই হেসে উঠলাম।

আগেরদিন যখন ভাইয়া আমায় ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন আপনি আমার দিকে যে লুকছ দিচ্ছিলেন না ভাবি সত্যি খুব ভয় করছিলো। আপনি আমার মাথায় না ফুচকার প্লেট মেড়ে দেন! (খাদিজা)

হ্যা সে দিন খুব রাগ হচ্ছিলো তোমার উপর কিন্তু এখন নেই। (লিমা)

তা ভাবী ভাইয়াকে আপনি ভালোবাসার কথা বলেছেন নাকি আমি প্রপোস করে দিব! (খাদিজা)

করো সমস্যা নাই। আমি জানি তোমার ভাইয়া এখন শুধু আমারই। (লিমা)

এভাবে আরো কিছুখন কথা হলো তিনজনের মধ্যে। তখনোও লিমা মাসুদের বুকেই ছিলো।

আজ যেন এই বুক ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না লিমার।

২দিন লাগলো লিমার সম্পূর্ণ স্বুস্থ্য হতে। এদুদিন মাসুদ তার পাশেই ছিলো। লিমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতো, রাতে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।

লিমা কখনোই মাসুদকে চোখের আড়াল হতে দেয়নি এই দুদিন। রাতে যখন মাসুদ লিমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত তখন লিমা মাসুদের এক হাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরতো যাতো ঘুমানোর পরেও মাসুদ তাকে ছেড়ে না যায়।

মাসুদ রাতে ঘুমাতো না, লিমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়েই রাত পাড় করে দিতো সে। রাতে লিমার অজান্তেই কতো চুমু খেয়েছে এই মায়াবী মুখ খানিতে তা মাসুদ নিজেও জানে না।

কি যেন একটা টানে তাকে। তার ভিরটা কেন যেন বার বার লিমার দিকে আকর্ষন করে। যাই হোক মাসুদ এটুকু তো বুঝে গিয়েছে যে তার দুঃখের জীবনের অবসান ঘটেছে আর তার একটা জীবনে পথচলার একজন সাথী পেয়ে গেছে যে এখন হাজার ঝড়েও তার হাত ছেড়ে দেবে না।

লিমাকে হাসাপাতাল থেকে বাড়ী নিয়ে আসা হয়। সে এখন সম্পুর্ন স্বুস্থ্য।

লিমাকে সকালে খাইয়ে দিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায় মাসুদ। অনেকদিন ভার্সিটিতে আশা হয় না বিধায় তাকে আগের পড়া গুলো সংগ্রহ করতে হয় আর এতে দুপুর পেড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। এর মধ্যে সে লিমাকে ফোন দেওয়ার কথাও ভুলে গিয়েছিলো। বিকেলে বাড়ী ফিরে রুমে যায়। দেখে লিমা খাটের এক কোনে বসে আছে। মাসুদ ফ্রেস হয়ে এসে লিমার সামনে একটি চেয়ারে বসে লিমার হাতটি ধরে,

ঔষধ খেয়েছো?

খালি পেটে কি ভাবে খাবো! (লিমা)

তুমি খাওনি কেন?

আপনিতো আমায় এ কয় দিন খাইয়ে দিয়েছেন। তাই আর একা একা খেতে ইচ্ছে হলো না। (লিমা)

আরে এ কয়দিনতো তুমি অস্বুস্থ্য ছিলে তাই।

তার মানে আমি আবার অসুস্থ্য হলে আপনি আমায় খাইয়ে দিবেন! (লিমা)

কি বলছো এগুলো!

হ্যা। (বলেই লিমা টেবিল থেকে ফল কাঁটা ছুরি নিয়ে দিলো নিজের হাতে এক টান)

এই কি করছো!

এখন তো আমার হাত কাঁটা। এখন আপনি আমায় খাইয়ে দিবেন? (লিমা)

আরে পাগলি আমি তোমায় তিনবেলাই খাইয়ে দিবো এবার হয়েছে। এদিকে আসো অনেক রক্ত পরছে।

এরপর লিমার হাত ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। তারপর ওকে খাইয়ে দিতে হলো।

বিকেলে ছাদে লিমাকে কোলে বসিয়ে গল্প করতে হলো। লিমা মাসুদের বুকেই মাথা এলিয়ে দিলো। দুজনে বসে একসাথে সন্ধার গোধুলি দেখলাম।

যেমনটা আমার সপ্ন ছিলো। রাতে লিমাকে খাইয়ে দিলাম তারপর রুমে গেলাম।

আমি জানি লিমা আর আমায় ছোফায় ঘুমাতে দেবে না। সামান্য খাইয়ে দেওয়ার কথা নিয়ে এভাবে হাত কাঁটলো ছোফায় ঘুমালে না জানি কী করে! তাই আমিও আর ছোফায় ঘুমানো কথাই তুলিনি।

আমি লিমার পাশেই শুয়ে পড়লাম। লিমা নিজের মাথার নিচ থেকে বালিশটা ফেলে দিলো।

একি বালিশ ফেলে দিলে কেনো? তুমি শোবে কিসে?

আমি এখানে শোবো (বলেই লিমা মাসুদকে জড়িয়ে মাসুদের বুকে মাথা রাখলো)। আজ থেকে এটাই আমার মাথা রাখার আশ্রয়। (লিমা)

লিমার এ কথায় লিমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাসুদ।

আপনার কাছে একটা আবদার করবো! (লিমা)

হুমম বলো।

আমি একটা ছোট্ট পরিবারের সপ্ন দেখি। এখন আমার একটাই সপ্ন “বিকেল গড়িয়ে সন্ধা আসবে, পশ্চিম আকাশে গোধুলির রঙ, আপনি আর আমি পাশাপাশি হাটছি আর আমাদের দুজনের হাত ধরে হাটছে আমাদের আগামি দিনের আলো”। আপনি কি দিবেন আমাকে সেই আলোটা এনে! (লিমা)

কি বলছো এগুলো!

বলছিলাম কি আমার একটা ছোট্ট বেবি লাগবে। please না করবেন না। (লিমা)

কিন্তু আমি তো এখনো পড়ালেখাই শেষ করি নি!

তাতে কি হয়েছে আমাদের কি কম আছে নাকি। আমি আর পড়ালেখা করবো না এখন একটা সুন্দর সংসার সাঁজাতে চাই। আপনি আপনার মতো পড়া লেখা করেন। বাবা বিজনেজ সামলালো আর আমি বেবি নিয়ে থাকবো। প্লিজ না করবেন না। (লিমা)

তো আমার বউটা এই আবদার করলো! তা এখনতো আমাকে একটু দুষ্টুমি করতে হবে!

আপনার বউ তো আপনাকে না করলো কে? (লিমা)

তো চলো।

তারপর আর কি।

সেদিন থেকেই শুরু মাসুদ আর লিমার সুখের সংসার।

মাসুদ এতিম হলেও তার নিয়তি আজ তাকে আবার সব ফিড়িয়ে দেয়েছে। হয়তো নিয়তি পারেনি তাকে তার মা-বাবার ভালোবাসা ফিড়িয়ে দিতে! হয়তো পারে নি তার শৈশবের দিনগুলি ফিড়িয়ে দিতে কিন্তু আজ নিয়তি তাকে দিয়েছে একটি পরিবার, লিমার মা-বাবা মাসুদকে অনেক ভালোবাসে আর লিমা তো নিজের থেকেও মাসুদকে ভালোবাসে।
নিয়তি হয়তো পারেনি তার ফাঁকা স্থানগুলো পূর্ন করতে কিন্তু নিয়তি তাকে একেবারেই নিরাশ করে নি।

“জীবনে যেই পরিস্থিতি আসুক না কেন উপরওয়ালার উপরে ভরশা রাখুন, তিনি আপনাকে কখনোই নিরাশ করবেন না।”

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
বেঁচে থাকলে পরবর্তি গল্প নিয়ে আবারও হাজিড় হবো আপনাদের সামনে।

খোঁদা হাফেজ

আরো পড়ুন – স্যারের সাথে প্রেম

1 thought on “ছাত্রী যখন বউ – ছাত্রী স্যারের ভালোবাসার গল্প”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *