রোমান্টিক পুলিশ ম্যাম – চুমু অতঃপর গোপন ভালোবাসার গল্প: অন্ধকার রাত। সেলের মধ্যে অন্য কেউ নেই। সিমি ম্যাম ধীরে ধীরে আমার কাছে চলে আসলো। আমার শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হতে থাকল। অতঃপর তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে লাগতেই আমি ভালোবাসার এক অতল সমুদ্রে ঢুব দিলাম।
পর্ব ১
শীতের দিন সকালে ৪- ৫ টা কম্বল একসাথে গায়ে দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকার ভান করার মজাই আলাদা। আর সেই মজাটাই উপভোগ করছিলাম। কিন্তু সেই মজাটা আর বেশিক্ষণ থাকলো না।
- রাজ! এই রাজ! ওঠ (মা)
- আরে আমি ঘুমাই নাই তো! শুয়ে আছি। উঠতে ইচ্ছা করছে না। (আমি)
- তা বললে হবে? কোচিংএ যাবি না?
- যেতে তো ইচ্ছা করে। কিন্তু বিছানা ছারতেই তো মায়া হয়। বেচারা কত কষ্ট পাবে আমি উঠে গেলে!
- আচ্ছা, তাহলে তুই শুয়ে থাক। আমি গিয়ে বরং তোর বাবাকে বলি। যে ছেলে বিছানার মায়া ছারতে পারছে না।
- কককি? বাবা এখনো অফিসে যায় নি? (লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে)
- না, রেডি হচ্ছে। তোকে ডাকতে বললো।
- তুমি যাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
- হুম, তারাতারি কর।
- হুম
উঠে চলে এলাম ফ্রেশ হতে।
- রাজ! এখনো হয়নি তোর! (মা)
- এইতো আসছি মা! (খাবার টেবিল এর সামনে এসে)
- বস এখানে।
- আব্বু কোথায় আম্মু?
- এইমাত্র বেড়িয়ে গেল।
- ওও।
সকালের নাস্তা করে একটা খাতা আর একটা কলম নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম কোচিংয়ের উদ্যেশে। প্রতিদিনের মতো রিকশা করে পৌঁছে গেলাম। ভাগ্যিস লেট হয় নাই, নাহলে স্যারের আরো কিছু নীতিবাক্য শুনতে হতো।
কোচিং শেষ করে বাইরে এসে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। বসে চা সহ আরো কিচু নাস্তা করে নিলাম।
হঠাৎ চোখ গিয়ে পরলো দুইটা ছেলের ওপর। দুঃখি, ছেলে বললে ভুল হবে। ওরা তো হিজরা। আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিল। একটু একটু একটু ভয়ও করছিলো। ছোট বেলা থেকেই আমি এই জিনিসগুলোকে প্রচুর ভয় পাই। (বাস্তবেও)
একটু পর দেখলাম ওরা উঠে আমার দিকেই আসছে। আমি ভয়ে ভয়ে কোনমতে পকেট থেকে টাকা বের করে দোকানদারকে দিয়েই হাটা ধরলাম রাস্তা দিয়ে। ওরাও আমার পিছু নিলো। অবস্তা ভালো ঠেকছে না।
দিলাম দৌড় ওরাও পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো। কোনদিকে যাচ্ছি তার কোনো হোস নেই। শুধু এতটুকুও জানি আমাকে এদের হাত থেকে পালাতে হবে। এভাবে অনেক্ষণ দৌড়ানোর পর পিছন ফিরে দেকি ওরা নেই। তার মানে পিছু ছেরেছে। রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে হাঠুতে ভর দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো সামনে কোনো একটা গাড়ি এসে দারালো। সামনে তাকিয়ে তো ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল।
- পপপুলিশ। (পুলিশের গাড়ি এসে দারিয়েছিল আমার সামনে)
দৌড়ে পালাতে যাবো ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা লোক এসে শার্টের পিছনে ধরে ফেলল। - কিরে পালাচ্ছিলিস কেন? (পুলিশ)
- না ভাই, কই আমি তো পালাচ্ছিলাম না!
- চোপ! আমি নিজে দেখলাম তুই দৌড়ে আসছিলি।
- স্যার এমনি দৌড়াচ্ছিলাম। মানে জজজগিং, হ্যা স্যার জগিং করছিলাম
- এই দুপুর বেলা জগিং? তাও আবার রাস্তার মাঝখানে? কিছুতো ঝামেলা আছে।
- না স্যার কিচ্ছু ঝামেলা নাই। আমি স্টুডেন্ট, এইমাত্র কোচিং শেষ করে জগিং করতে করতে বাসায় যাচ্ছিলাম। এই দেখেন খাতা!
খাতা দেখাতে গিয়ে আরও বড় রকমের টাসকি খাইলাম। কারণ আমার হাতে কোনো খাতাই নাই। ভয়ে সেই চায়ের দোকানেই ফেলে চলে এসেছিলাম। - কোথায়?
- সরি স্যার, ফেলে এসেছি।
- আবার মিথ্যা কথা? চল আমার সাথে, থানায় চল।
- প্লিজ স্যার আমাকে ছেরে দিন।
কিন্তু কে শুনে কার কথা? পুলিশ আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে এলো থানায়। থানার সামনে সাইনবোর্ড দেখে আরও বেশি চমকে গেলাম।
- স্যার স্যার, এ আমি কোথায় চলে এলাম? এটা তো আমাদের এরিয়ার থানা নয়? (আমি পুলিশকে বললাম)
- তাহলে কোন থানায় বাস করিস তুই?
- (আমাদের থানার নাম বললাম)
- কি? আরে ওইটা তো অনেক দূর। তুই এখানে এসেছিলিস কেন?
- স্যার সে এক দুর্ঘটনা
- চোপ! আবার আরেক নতুন স্টোরি।
পুলিশের ধমকে একেবারে চুপ হয়ে গেলাম। চলে গেলাম থানার ভিতরে। ভয় ভয় করছে। অচেনা এক থানায় এলাম। কোনো পরিচিত মানুষ নেই। সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো আমি এখানে এলাম কি করে? তার মানে আমি এত দৌড় দিছিলাম, যে এক থানা পেরিয়ে অন্য থানায় চলে আসছি। আরেকটু দৌড়াতে থাকলে তো জেলা পার হইয়া যাইতাম। থাক সে কথা না ভাবলেও চলবে।
- ম্যাম এই ছেলেটি কিছু একটা চুরি করে পালাচ্ছিল, আমি ধরে এনেছি। (পলিশটা)
- না ম্যাম মুটেও না। (মহিলা পুলিশটা এখনো অন্য দিকে তাকিয়ে আছে)
- চোপ! চোরের আবার বড় গলা? কি হয়েছিল বল তাহলে? (পুলিশ)
- হুম কি হয়েছিল? (ম্যাম এদিকে ঘুরে)
একি দেখছি আমি? এটা কি কোনো মেয়ে নাকি আকাশের পরী পুলিশের ড্রেস পরে এসেছে। প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খাইলাম। হোক না সিনিয়, তাতে কি? ক্রাশ যেহেতু খাইছি, প্রেমতো করমুইড্রেসে নাম দেখে নিলাম “সিমি”। কি কিউট নাম মাইরি
- এই ছেলে! (সিমি ম্যামের মিষ্টি কন্ঠের ডাক শুনে ঘোর কাটলো)
- না মানে ম্যাম কি করে যে বলি? মান ইজ্জতের বেপার। (আমি)
- চুরি করার সময় মনে ছিলনা? (আবির- যে আমাকৈ ধরে এনেছিল, লোকটার নাম আবির)
- হোপ! বারবার শুধু চোর চোর করে মাথা খাচ্ছেন কেন? বলছি না আমি কিছু করি নাই? আমাকে দেখে কি আপনার চোর চোর মনে হয়? (আবিরকে বললাম কথাগুলো)
- আহ্ আবির! বলতে দাও ওকে। হুম, আপনি বলেন কেন দৌড়াচ্ছিলেন? (সিমি ম্যাম)
- এই দেখুন, কত মিষ্টি শুরে বলতে বললো! আর আপনি! আপনার কন্ঠ শুনলেই কুকুকু(পুরোটা বলতে পারলাম না, সামনে তাকিয়ে দেখলাম সিমি ম্যাম লাঠিটাকে নারাচারা করছিলেন। অন্তরে ভয় ডুকে গেল)
- আসলে ম্যাম হয়েছিল কি! সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কোচিংয়ে গিয়েছিলাম(পুরোটা বললাম)
আমার কথা শুনে সিমি ম্যাম হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কি সুন্দর হাসি মাইরি। সারাদিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছিলো।
- ও তাহলে এই ব্যাপার? শেষে হিজরাদের দৌড়ানি খাইয়া এই অবস্তা হইছে তোমার? (হাসতে হাসতে)
- জ্বি ম্যাম। কিন্তু এখন ওই দুইটা হিজরাকে ধন্যবাদ দিতে খুব ইচ্ছা করছে? (আমি)
- কেন কেন? (সিমি ম্যাম)
- না মানে ওরা যদি না দৌড়ানি দিতো, তাহলে তো আপনার মতো এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে পরিচিত হওয়া যেত না।
- ও হ্যালো! সাবধান হ্যাঁ? এখন যান বাড়ি ফিরে যান। (সিমি ম্যাম লাঠি দেখিয়ে)
পর্ব ২
কিন্তু ওনি যা বললেন তা শুনে আমি আরও দ্বিগুন অবাক হলাম।
- একটা মার্ডার করে চলে এসো। পার্মানেন্ট থেকে যেতে পারবে। (সিমি ম্যাম)
সিমি ম্যাম এর কথা শুনে দুইবার ছোটছোট কাশি দিলাম। তা দেখে সিমি ম্যাম এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন।
পানি খাওয়ার পর সিমি ম্যাম এর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওনি এখন আবার সেই ফাইল নিয়ে বেস্ত হয়ে পরেছেন। কই ভাবলাম আমার সাথে একটু কথা বলবে আরও কত কি! আর এসব না করে ফাইল নিয়ে বসে আছেন।
- কিরে এখানে বসে আছিস কেন? যা এখান থেকে? (হঠাৎ আবির বলে উঠলো)
- কেন আপনার কোন সমস্যা? (এখানে পার্মানেন্ট থাকার উপায় পেয়ে গেছি )
- চোপ! পুলিশের সাথে গলা নামিয়ে কথা বল! (আবির)
- রাখ তোর পুলিশ। (হাতে থাকা গ্লাসটা দিয়ে সোজা মাথা বরাবর জোরে আগাত করলাম)
গ্লাসটা ভেঙে গেল। আবিরের মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। চারদিকে হৈ হুল্লোড় পরে গেল। সাভাবিক ভাবেই দারিয়ে রইলাম। সিমি ম্যাম কয়েকটা পুলিশ দিয়ে আবিরকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিল।
- কেন মারলি ওকে? (সিমি ম্যাম সাভাবিক গলায়)
- এখানে থেকে যাবার জন্য। (আমিও সাভাবিক ভাবেই বললাম)
- ঠাসসস, ঠাসসস(দুই গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল)
আমি ভাবতেই পারিনি সিমি ম্যাম এমনটা করতে পারবেন। চরটা সজোরেই দিয়েছে। গালে হাত দিয়ে দারিয়ে আছি। - খুব সখ তোর জেলের ভাত খাবার তাই না! আয় তাহলে এদিকে।
সিমি ম্যাম আমার হাত ধরে টানতে টানতে সোজা কারাগারে ঢুকিয়ে দিল। তালা লাগিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরল। মনে হচ্ছে বেশ রেগে গেছে। এমনটা হয়ে যাবে তা ভাবতে পারিনি।
দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি। সিমি ম্যাম এর টেবিলটা আমার কাছ থেকে স্পস্ট দেখা যায়। আমি সেদিকেই তাকিয়ে আছি।
অনেক্ষণ ধরে দেখলাম সিমি ম্যাম চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিল। হয়তো কিছু ভাবছিলো। কিছুক্ষণ পর আবার কারাগারের দরজা খুলে আমার পাশে আসলো।
- সবাই এখান থেকে পালাতে চায়, আর তুমি এখানে থাকতে চাও কেন? (সিমি ম্যাম তুমি করে বলছে, হয়তো রাগ কমেছে)
- এমনি, এখানে থাকলে কেমন লাগে এটাই জানতে? (মিথ্যা বললাম)
- জানা হইছে?
- কেন?
- জানা হইলে এখান থেকে যাও।
- পুলিশকে মারার শাস্তি শুধু এইটুকুই।
- দেখো রাজ এখানে থাকলে তোমার জীবনটা বরবাদ হয়ে যাবে। কেন নিজের হাতে নিজের লাইফটাকে নষ্ট করতে চাও? (সিমি ম্যাম)
- নষ্ট করছি নাতো, শুধু সাজানোর চেষ্টা করছি। (মুচকি হাসি দিয়ে বললাম)
- মানে?
- কিছু নাহ।
- তোমাকে বুঝালেও কিচ্ছু হবে না। থাকো এখানে।
সিমি ম্যাম চলে গেল। ওনার কথা শুনে এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে সিমি ম্যাম এখন আর একটুও রেগে নেই।
এভাবেই কিছুক্ষণ কেটে গেল। বিকেল হয়ে এসেছে। খিদেও পাইছে। আসেপাশে কোন পুলিশ দেখতে পারছি না। গেল কই সব?
দেখতে পেলাম সিমি ম্যাম নিজের চেয়ারে বসে আছে। এখনো খেয়েছে বলে মনে হয় না। ডাকবো কি ডাকবো না এসব ভাবতে ভাবতেই আস্তে করে একটা ডাক দিলাম।
- সিমি ম্যাম!
- হুম! (মনে হলো আমার ডাকের অপেক্ষায় বসে ছিল)
- এক গ্লাস পানি হবে?
- কেন? এখন কার মাথা ফাটাবে?
- মাথা ফাটাবো কেন? আসলে খিদে লাগছে খুব। কিছু খাইতে দিবেন?
- নাহ্, তোমার জন্য কোনো খাবার নাই। এভাবেই থাকো।
- আসামিদের জন্যেও তো খাবার থাকে। তাহলে আমার বেলায় উল্টা কেন?
- কারণ তুমি আসামি না, মহা আসামি।
- হুম। আচ্ছা আপনি খাইছেন?
- সেটা জেনে তোমার কি?
- হ সেটাই তো।
অতঃপর চুপ করে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর একটা পুলিশ আসলো। দুইটা টিফিন বক্সে খাবার নিয়ে আসলো। ম্যাম ইশারা করে বলে দিল একটা ওইখানে রেখে আরেকটা বক্স যেন আমাকে দিয়ে যায়। আমি তো সিমি ম্যাম এর কর্মকান্ডে অবাক। আমার জন্য আর ম্যাম এর জন্য আলাদা খাবার! ভাবা যায় এগুলা?
পুলিশ আমার কাছে খাবার আর পানি দিয়ে চলে গেল।
খিদে ছিল প্রচুর। চুপচাপ বসে বসে গিলিতেছিলাম।
ঝাল লাগছে প্রচুর, হয়তো মরিচ ২- ৪ টা একসাথে কামড়াই ফেলছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। পানি শেষ কইরা ফেলছি। জীবনটাই বেদনা, ঝালতো আর থামেনা।
আমার অবস্থা দেখে সিমি ম্যামকে দেখলাম পানি নিয়ে আসছে। এসে দেখলো পানিতে কাজ হবে না।
- দেখে শুনে খেতে পারিস না! রাক্ষস কোথাকার।
- (আমি তো কথায় বলতে পারতেছি না)
- এদিকে আয়(মাথার পেছনে ধরে মুখের সামনে নিয়ে নিজের ঠোঁট দুটি লাগিয়ে দিল আমার ঠোটে। নাউযুবিল্লা)
মনে হচ্ছিল মুখের সব ঝাল আস্তে আস্তে উধাও হয়ে যাচ্ছে। অনেক্ষন এভাবে থাকার পর সিমি ম্যাম নিজে থেকেই ছাড়িয়ে নিল। - এখনো ঝাল আছে? (সিমি ম্যাম)
- নাহ্(মুচকি হাসি দিয়ে বললাম)
- হুম জানি থাকবে না। (সিমি ম্যাম উঠে যাচ্ছিলো)
আমি বসা থেকেই একটা হাত ধরে ফেললাম। - কি হলো? ছারো।
- আরেকবার দিবেন ম্যাম?
- কি?
- যে ঔষধ দিয়ে ঝাল থামালেন সেটা।
- ঔষধ সবসময় খেতে নেই। পেটে অসুখ করবে।
- আমি তে খাবই।
আমিও উঠে দারালাম, এবং সিমি ম্যাম এর দিকে এগুতে লাগলাম। ওনিও পিছুতে লাগলেন। - কি হলো? এভাবে আসছো কেন? (সিমি ম্যাম)
- ঔষধ খাবো বলে।
- এটা কিন্তু ভালো হবে না। (পিছনে দেয়ালে আটকে গেল)
আমি ওনার মুখের ঠিক সামনে চলে আসলাম। সিমি ম্যাম নিজের চোখ দুটি বন্ধ করে ফেললেন।
হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। সবকিছু ভন্ডুল করে দিল। আমি ফোনটা বের করে রিসিভ করা মাত্রই সিমি ম্যাম ফোনটা কেরে নিয়ে কথা বলা শুরু করলো। - কিরে রাজ কোথায় তুই? সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো আসছিস না কেন? (কন্ঠ শুনে বুঝলাম আপু ফোন করেছে)
- তোর আদরের ভাই এখন আমার কাছে। জেলের হাওয়া খাচ্ছে। (সিমি ম্যাম বলছে। আমি শুধু শুনছি আর মুচকি হাসছি)
- সিমি তুই! রাজ ফোন তোর কাছে গেল কি করে? (আপু)
- তোর ভাই আমার কাছে। তো ফোন কি অন্যের কাছে থাকবে নাকি? (সিমি ম্যাম)
- আমার ভাই তোর কাছে কেন?
- পুলিশকে মারার দায়ে হাজতে ডুকিয়ে দিয়েছি। এখন শাস্তি দিচ্ছিলাম, আর তুই ডিস্টার্ব করছিস! রাখ ফোন! (সিমি ম্যাম)
- এই সাবধান, আমার ভাইকে কিছু করলে তোর খবর আছে বলে দিলাম। (আপু)
- তোর আদরের ভাইয়ের চিৎকার শুনবি?
- পারলে শুনা তো দেখি!
পর্ব ৩
পারলে শুনা তো দেখি!
বলার সাথে সাথে সিমি ম্যাম আমার পেটে জোরে একটা চিমটি কাটলো।
- ওমাগো! মরে গেলাম গো। (আমি)
- শুনলিতো! তোর ভাইয়ের চিৎকার! (সিমি ম্যাম)
- তুই মারলি, অথচ কোনো শব্দ হলো না কেন? ওই এটা কোন ধরনের মার রে! (আপু সন্দেহের গলায়)
- যে ধরনেরই হোক। তোর কি! ডিস্টার্ব করবি না। ফোন রাখ! (সিমি ম্যাম ফোনটা কেটে দেবে, এমন সময়)
- হ্যাঁ রাখছি, ভালো করে যত্ন নিস আমার ভাইটার। (আপু হাসছিলো আর বলছিলো)
- সেটা তোকে বলে দিতে হবে না। (সিমি ম্যাম ফোনটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে দিল)
- এত জোরে কেও চিমটি দেয়! (দেয়ালে হাত রেখে বললাম)
- ব্যথা পাইছো?
- আমি একটা দেই? পরে দেখেন ব্যথা লাগে নাকি আরাম লাগে!
- এই! বাজে ধান্দা সরাও! আজে বাজে জায়গায় হাত দিলে হাত ভেঙে ফেলবো।
- আমাকে আঘাত করতে পারবেন আপনি! (মুখটা মায়াবী করে বললাম)
- আপনি আমার কোন বাপের মেয়ের জামাই যে আপনাকে আমি আঘাত করতে পারবো না! যা ভাগ! সর সামনে থেকে। (ঝাড়ি মেরে চলে গেল)
বলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ২ কেজি ওজনের ছ্যাঁকা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। এতক্ষণ মনে করেছিলাম যে সিমি ম্যাম হইতো আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পুরোটাই আমার ভুল ধারণা। যাই হোক ছ্যাঁকা খেয়ে দেবদাস হয়ে দেবদাসের মতো দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলাম।
রাত হয়ে এল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সিমি ম্যাম এখনে বাসায় যাচ্ছে না কেন? ওনার ডিউটি কি এখনো শেষ হয় নাই?
যাই হোক। এভাবে কিছুক্ষন বসে থাকার পর হঠাৎ দেখতে পেলাম সিমি ম্যাম এর ফোনে একটা ফোনকল আসলো। কথা শুনে মনে হচ্ছিল যে এটা আঙ্কেলের/সিমি ম্যাম এর বাবার ফোন। ফোনের ওপর পাশ থেকে কিছুই শুনা যাচ্ছিল না। কিন্তু সিমি ম্যাম এর কথাগুলো স্পষ্ট শুনা যাচ্ছিল।
কথাগুলো ছিল এরকম।
- হ্যাঁ বাবা বলো। (সিমি ম্যাম)
- (ওপর পাশের লোকটি)
– না বাবা। আজকে আর বাসায় ফিরবো না। থানায় থেকে যাবো।
– একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে তাই। তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।
- মেয়ে বলে কি হয়েছে? তাছারা এখানে আমার(কথাটা আস্তে বলার কারণে শুনতে পাই নি। তবে সিমি ম্যাম এর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেওয়ার চাপ দেখতে পেয়েছি)
- তুমি যা মনে করো তাই করো। রাখি বাই(বলেই সিমি ম্যাম ফোনটা কেটে দিল)
তারপর কিছুক্ষণ চেয়ারে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর আমার কাছে এসে আমার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পরলো। আমি একনজর সিমি ম্যাম এর দিকে তাকিয়ে আবার চোক নামিয়ে নিলাম।
- কি হলো বাসাই যাবে না! এখানেই থেকে যাবে নাকি? (সিমি ম্যাম)
- এটা কি আমার শশুড়বাড়ি নাকি যে যখন ইচ্ছা ক্রিমিনাল হয়ে ঢুকবো আবার যখন ইচ্ছা বেরিয়ল যাবো? আমাকে এভাবে চেরে দিলে বেচারা আবির কি ভাববে? (এক নিশ্বাসে বলে দিলাম কথাগুলো)
- Shut upআগে তোমার মুখ বন্ধ করো। আবিরের সাথে আমার কথা হয়েছে। আবির তোমার প্রতি একটু রেগে নেই। সে বলেছে আমি যেন তোমাকে ছেরে দেই। (সিমি ম্যাম)
- আহ্, ছেলেটা কি ভালো তাই না! এমন ছেলে ঘরে ঘরে থাকা দরকার। (বলে সিমি ম্যাম এর দিকে তাকালাম)
- (সিমি ম্যাম কিছু না বলে রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকালো)
- না মানে কি আর বলবো! আমি নিজেই তো ঠিক নাই। কিন্তু আর একটা কথা, আমি কিন্তু ঠিকই এখনো রেগে আছি। (আমি)
- কার ওপর!
- আপনার ওপর।
- কেন?
- আবির কোনে কমপ্লেন না করার পরেও কেন আপনি আমাকে জেলের ভাত খাইয়েছেন? (মন খারাপ করে)
- চর মেরে মেরে গুনে গুনে ৩২ টা দাত ফেলবো। তোমাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াই নি। আমার মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খাওয়াইছি।
- তাই তো বলি। এত ঝাল আসে কোত্থেকে! (সিমি ম্যামকে রাগানোর জন্য বললাম)
- চোপ! আমার মায়ের রান্নার ব্যাপারে একটা বাজে কথা বললে ডান্ডার বারি খাওয়াবো বলে দিলাম। (সিমি ম্যাম রেগে গিয়ে)
- না থাক, সব একদিনে খেলে আরেকদিন এসে কি খাবো?
- মানে? জেলে ঢুকার ইচ্ছা আরও আছে তোমার?
- মাঝে মাঝে তো আসতেই হবে। না আসলে কি এত স্বাদের খাওয়া খেতে পারতাম? (আমি নিজের ঠোঁটে হাত রেখে বললাম। এতে সিমি ম্যাম স্পষ্ট বুঝে গেল যে আমি কিসের কথা বলছি)
- আর একটা কথা বললে মাথা ফাটিয়ে দিব বলে দিলাম। (সিমি ম্যাম)
- আর একটা কথায় বলবো। বলি? (সিমি ম্যাম আমার দিকে একবার তাকালো)
- বল।
- পুলিশের ড্রেসে না আপনাকে হেব্বি কিউট লাগে।
- হয়েছে! (সিমি ম্যাম)
- (চুপ করে আছি। এত সুন্দর পাম মারলাম। তবুও একটু আদর করলো না! )
- চল আমার সাথে। (সিমি ম্যাম)
- কোথায় যাবো?
- মামার বাসায়!
- কেন?
- কারণ আমরা এখন মামার বাসায় গিয়ে থাকবো। (সিমি ম্যাম)
- আমরা মানে? আপনি আর আমি? বেশ মজা হবে।
- (কোনো কথা না বলে রাগে খটমট করতে করতে উঠে চলে গেল)
সিমি ম্যাম এর পিছন পিছন আমিও বাইরে বেরিয়ে এলাম। কিছুক্ষন মাত্র কারাগারে ছিলাম। মনে হচ্ছিল অনেক বছর পর মুক্ত হলাম।
শরীরটাকে লম্বা করে টান করে নিলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম সিমি ম্যাম রেগে তাকিয়ে আছে।
- কি করছিলে ওইটা! (সিমি ম্যাম)
- না মানে ছোটবেলায় সিনেমায় দেখতাম ভিলেন জেল থেকে ছারা পাবার পর শরীরটাকে মুচর দেয়। তাই আমিও টটট্রাই ককরলাম আরকি। (সিমি ম্যাম রেগে রেগুন হয়ে লাঠিটাকে নারাচ্ছিল)
- তুই ভিলেন! (সিমি ম্যাম)
- ননা মানে(আর কিছু বলতে পারলাম না)
- চোপ! তুই জীবনে আর মানুষ হবি না। চল! (সিমি ম্যাম আগে আগে চলে গেল)
বাইরে এসে একটা গাড়িতে উঠে বসলো। আমি ভেবেছিলাম হয়তো পুলিশের গাড়ি করে যাবো। কিন্তু এখন দেখছি সিমি ম্যাম একটা পার্সনাল কার’এ গিয়ে উঠে বসলো। আমাকে ইশারা করলো ওনার পাশের সিটে বসার জন্য। আমিও বাধ্য ছেলের মতো গিয়ে বসে পরলাম। সিমি ম্যাম নিজেই ড্রাইভিং করছিল।
- ম্যাম একটা কথা বলবো! (আমি)
- মুখ খুলতে ইচ্ছে করছে আবার তাই না! (সিমি ম্যাম)
- না আসলে তা না। (আমি)
- বলো কি বলবে?
- আপনি আমাকে একবার তুমি একবার তুই। এমন করে বলেন কেন?
- আমার ইচ্ছা, তোর কোনে সমস্যা?
- না থাক। এটাই ভালো। (যা’ও তুমি বলা শুরু করছিলো কিন্তু এখন আবার তুই)
- হুম।
- আচ্ছা ম্যাম এটা কার গাড়ি? (আমি)
- আমার। (সিমি ম্যাম)
- আমার না, বলেন আমাদের, আপনি নিশ্চয় নিজের টাকায় কিনেন নি। তাই এটা এখনো আপনার হয় নি। আপনার বাবার। So আমাদের বলবেন। (একটু জ্ঞান দেওয়ার চেস্টা করে। ভুলেই গেছিলাম ওনি আমার সিনিয়র)
- বললাম তো আমার! (চিৎকার দিয়ে বলেই গাড়িটা থামিয়ে দিল)
- সসরি। বুঝতে পারি নাই। (জ্ঞান আকাশে উরে গেল)
- হুম, তোর পুরো নাম কি? (সিমি ম্যাম)
- রাজ। আপনি ভালোবেসে।। ডাকতে পারেন। (খুশি হয়ে বললাম)
- হোপ! আমি কেন তোকে ভালোবাসতে যাবো! নাম গাড়ি থেকে! (আবারও ছ্যাঁকা খাইলাম)
আবারও ছ্যাঁখা খাইলাম। ভাবতেও পারি নাই এভাবে না করে দিবে।
ঐদিকে সিমি ম্যাম গাড়ি থেকে নেমে গেল। সাথে সাথে আমিও নেমে গেলাম। এখানে নামালো কেন কিছুই বুঝতে পারলাম না। হয়ত এটাই সিমি ম্যাম এর মামার বাড়ি।
- ম্যাম এখানে নামালেন কেন। (আমি)
- কেন আরোও যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি তোমার?
- দূর, কথা পেচাইয়েন নাতো! এমনিতেই ঠান্ডা লাগছে। একেতো এই শীতের রাতে রাস্তার মধ্যে দাড় করাইয়া রাখছেন।
- ওহহ sorry, আমরা যেখানে যেতে চেয়েছিলাম, এটাই সেই জায়গা। চলো ভিতরে যাওয়া যাক।
সিমি ম্যাম আর আমি বাড়ির ভিতরে চলে গেলাম। ভিতরে গিয়ে আমি একটু অবাকই হলাম। কারণ, বাড়িতে কেও নাই। বাড়িটা একদম ফাঁকা।
- আপনার মামা, মামি ওনারা কোথায়। বাড়িটা একদম ফাঁকা লাগছে। (আমি)
- আসলেআমি তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বলছি। (সিমি ম্যাম)
- কি মিথ্যা কথা? (অবাক হয়ে জিঞ্জেস করলাম)
- আসলে এটা আমার মামার বাড়ি না।
- তাহলে কার বাড়ি?
পর্ব ৫
- আমাদের পুরোনো বাড়ি। এখন কেও থাকে না। ফাঁকা’ই থাকে।
- মমানে? এটাকি বাংলো নাকি? (ভয়ে ভয়ে বললাম)
- হুম, কিন্তু তুমি এভাবে ভয় পাচ্ছো কেন?
- না কিছুনা, আপনি থাকেন, আমি যাই। (বলে বেড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিমি ম্যাম হাতটা ধরে ফেলেছেন)
- আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছো? (সিমি ম্যাম মায়াবী কন্ঠে বলে উঠল)
- কি আর করবো বলেন! ছোট থেকে শুনে এসেছি পুরোনো বাড়িতে ভূত থাকে। (আমার কথা শুনে সিমি ম্যাম আমার হাতটা ছেরে হাসতে লাগলো)
- কি হলো হাসেন কেন? (আমি)
- তুমি এসবে বিশ্বাস করো? (সিমি ম্যাম হাসতে হাসতে বলল)
- বিশ্বাস না করে কি আর উপায় আছে? আমি কয়েকটা জিনিসকে জন্ম থেকেই ভয় পাই, তার মধ্যে এই ভূত কাক্কু অন্যতম।
- সেতো হিজরাকে দেখেও ভয়ে তোমার জান বেড়িয়ে যাচ্ছিলো। (ওনার হাসি যেন আরো বেড়ে গেল)
- দূর! একদম হাসবেন না। হাসলে আপনাকে একদম ভালো লাগে না। ঠিক শাকচুন্নীর মতো লাগে। (বলেই নিজের মুখে নিজেই হাত দিলাম। একি বলে ফেললাম? )
- (কোনো কথা বলছে না। হাসি বন্ধ করে মুখ ঘোমড়া করে ঠাই দাড়িয়ে আছে)
- Sorry! (কান ধরে বললাম)
- (এখনো কোনো কথা বলছে না)
মাথা নিছু করে দাড়িয়ে আছে। হয়তো আমার কথাই অনেক কষ্ট পেয়েছে। কেন যে ওই কথাটা বলতে গেলাম! এখন নিজেকে নিজেই মারতে ইচ্ছে করছে। দেখি মন ভালো করা যায় কিনা!
- বললামতো Sorry! ভুলে বলে ফেলছি। আপনার হাসিতো অনেক মিষ্টি হাসি। প্লিজ রাগ কইরেন না! (সিমি ম্যামের একটা হাত ধরে)
- হুম চলো। (হাত ছারিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলো)
- বুঝেছি, এভাবে হবে না। অনেক হয়েছে, এবার একটু এদিকে এসো দেখি। (এক টানে কাছে এনে চার ঠোঁট এক করে দিলাম)
প্রথমে একটু চারিয়ে নেবার চেষ্টা করলেও, পরে আর করলো না। ও নিজেও রেস্পন্স দিতে শুরু করলো। প্রায় 2 মিনিট এভাবে থাকার পর সিমি ম্যাম আস্তে করে নিজেকে ছারিয়ে নিল। আমিও আর জোর করিনি।
- কি করছো এসব? এসবের মানে কি? (সিমি ম্যাম)
- কেন? বুঝেন না? (আমি)
- না।
- সত্যি?
- দেখোরাজ! আমি তোমার থেকে সিনিয়র। আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক হয় না।
- আপনি চাইলেই হয়। আমি আপনাকে দেখার পর থেকে আর কিছু ভাবতেও পারি না। শুধু আপনাকে নিয়েই ভাবতে ভালো লাগে। আমি এটা বুঝে গেছি যে আমার জীবনে শুধু আপনাকেই দরকার। (সিমি ম্যাম এর এক হাত ধরে)
- রাজ এটা তোমার ভালোবাসা নয়, এটা তোমার আবেগ। কতক্ষন থাকবে তোমার এই আবেগ? একদিন? দুইদিন? একসপ্তাহ! একটা সময়তো ঠিকই সব আবেগ শেষ হয়ে যাবে। (হাতটা ছারিয়ে বললেন)
- আপনাকে নিয়ে আমার অনুভুতিগুলো যদি আবেগ হয়! তাহলে ভালোবাসা কাকে বলে? (সিমি ম্যাম এর কাদে হাত রেখে বললাম)
- (নিশ্চুপ)
- আচ্ছা আপনি আমাকে একটা কথা বলবেন? (আমি)
- কি?
- আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না?
- (কিছুক্ষন ভাবলো) না।
- কিহ্
আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম। কি হবে এখানে থেকে? যেখানে একটা পুলিশেরই মন জয় করতে পারলাম না! শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?
- কোথাই যাচ্ছো? (পেছন থেকে সিমি ম্যাম বলে উঠল)
- বাড়িতে।
- এত রাতে?
- তাতে কি হয়েছে? (আমি)
- না মানে তেমন কিছু না! সামনে একটা ছোট গুরস্তান আছে। তাই বলছিলাম সাবধানে যেতে। (পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সিমি ম্যাম মুখ টিপে হাসছিলো)
- দিলেন তো আমার এত স্বাদের ইমোশনটা নষ্ট করে!
- কি হলো দাড়িয়ে আছো কেন? যাও! (হাসতে হাসতে বলছিল)
আর এদিকে আমার গা জ্বলছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল যে দেখিয়ে দেই, আমি এসব ভয় পাই না। কিন্তু কি আর করার? অন্তরের ভয় কি আর কারো কথা শুনে? অবশেষে হার মানতে হলো নিজের ভয় এর কাছে।
কি হলো! সাহসের হাওয়া বেড়িয়ে গেল? (বলেই হাসতে লাগলো সিমি ম্যাম)
- এটা বলা কি খুব জরুরি ছিল? (আমি)
- বুজেছি, এখন লক্ষি ছেলের মতো ঐ ঘরে গিয়ে শুয়ে পরো। (আঙ্গুল দিয়ে একটা ঘরকে দেখিয়ে)
- আর আপনি কোথায় থাকবেন?
- কেন? ঐ ঘরেই! (ঐ একই ঘর দেখিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে)
- কি? এতক্ষন তো খুব বলছিলেন, যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, তাহলে এখন কেন এক ঘরে আমার সাথে থাকতে চাচ্ছেন? ভয় করে না আপনার?
- নাতো! তুমিতো আমার একমাত্র ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ছোট ভাই! তোমার সাথে থাকতে আমার কেন ভয় করবে?
- কিন্তু আপনার সাথে থাকতে আমার ভয় করে। থাকবো না আমি আপনার সাথে!
- তাহলে কি করবে? বাসায় চলে যাবে? বাইরের ভূতের কথা মনে আছেতো! (আবারও হাসতে লাগলো)
- আমার মিষ্টি মনের রাগটাকে নিয়েতো ভালোই মজা নিচ্ছেন! একদিন ঠিক বুঝিয়ে দিব। (ভিলেনের মতো একটা হাসি দিয়ে বললাম)
- তুমি আবার কি করবে? তুমি তো একটা পিচ্ছি। (নিমিষেই আমার ভিলেনমার্কা হাসি উধাও)
- কি? আমি পিচ্ছি? তাকবো না আমি আপনার সাথে। আমি অন্য ঘরে গিয়ে শুয়ে পরছি। (সিমি ম্যাম যে ঘরটা দেখিয়েছিল তার পাশের ঘরটাতে চলে যাচ্ছিলাম)
- দেখা যাবে একা একা কতক্ষন থাকতে পারো! ভয় করলে চলে এসো! আমার দরজা খোলায় থাকবে। (পেছন থেকে সিমি ম্যাম বলে উঠলো)
কিছু না বলে ঘরের ভিতর গিয়ে সোজা দরজা লাগিয়ে দিলাম। মোবাইলের ফ্লাশলাইট দিয়ে প্রথমে ঘরের লাইটের সুইচ খুজে ওইটা জ্বালিয়ে নিলাম। চারপাশটা ভালো করে দেখে নিলাম। দেখে মনে হচ্ছে এখানে দেখাশোনা করার জন্য কেও নিশ্চয় থাকে।
ঘরটা গুচানো। বিছানার ওপর একটা বালিশ রাখা ছিল, গিয়ে শুয়ে পরলাম। চোখটা বন্ধ করতেই মনে হলো কেও আমার পাশে শুয়ে আছে। তারাতারি করে চোখ খুললাম। কিন্তু কাওকে দেখতে পেলাম না। মনের মধ্যে অদ্ভুদ ধরনের ভয় কাজ করতে লাগলো। তখনই মনে হলো সিমি ম্যাম এর কথাগুলো। ওনি তো বলেছিলেন এখানে ভুত আছে। তবে কি ওনি সত্যি বলেছিলেন?
মাথায় কিছু কাজ করছে না, শুধু ভয় করছে। সিমি ম্যামতো বলেছিল ওনার ঘরের দরজা খোলা থাকবে। তাই আস্তে আস্তে করে উঠে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। পাশের ঘরেই সিমি ম্যাম থাকে। ওনার ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। আমি কিছু না ভেবেই ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ফেললাম।
দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সিমি ম্যাম এর বিছানার পাশে গিয়ে দারিয়ে রইলাম। সিমি ম্যামকে দেখলাম ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আমি ভাবছি আমি থাকবো কোথায়? ছোট্ট একটা বিছানা। সেখানে সিমি ম্যাম কি সুন্দরভাবে গুমিয়ে আছে।
আচমকা সিমি ম্যাম আমার হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল। তারপর আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
- এইযে লুচুনী! কি করছেন কী? ছারেন বলছি। (আমি)
- চুপচাপ শুয়ে থাকো! কোনো কথা বলবা না। আমি জানতাম তুমি এখানে আসবা।
- জানেন যখন ভালো করছেন। এখন ছারেনতো! নাহলে কিন্তু
- নাহলে কি করবা? করো! মানা করছে কে? (সিমি ম্যাম মুচকি হাসি দিয়ে বলল)
- উফ্, ব্যথা পাচ্ছিতো!
- তো! আমি কি করবো?
- ঠিক আছে দেখাচ্ছি কি করবেন? (আমি আরও বেশি শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
- ওমাগো! ব্যথা পাচ্ছিতো! (সিমি ম্যাম)
- তো! আপনার জন্য আমি কি করতে পারি? (একই ডায়লগ মারলাম)
- কি করবা মানে! আস্তে জরিয়ে ধরো!
- কি লুচুনী মেয়েগো বাবা। তবুও ছারতে বলে না!
- ছারতে কেন বলবো? আমারতো ভালোই লাগছে। (বুকের মাঝে মাথা লুকিয়ে)
- আচ্ছা ম্যাম একটা কথা বলবো?
- হুম বলো।
- দুই দিনের পরিচয়ে একটা ছেলের সাথে এভাবে শুয়ে থাকতে আপনার ভয় করছে না?
- না। তোমার প্রতি আমার পুরো বিশ্বাস আছে।
- হঠাৎ এত বিশ্বাস কোথা থেকে উদয় হলো?
- তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা থেকে। (মুচকি হাসি দিয়ে)
- কী? কিন্তু তখন যে না করলেন!
- ওইটা তো এমনি করেছিলাম।
- সত্যি?
- এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। রাত হয়েছে অনেক, ঘুমাও এখন। (সিমি ম্যাম)
- কিন্তু
- আবার কি হলো? (মাথাটা ওপরে এনে)
- খিদে পাইছে খুব! সেই যে দুপুরে খাইছিলাম, তার পর থেকে তো আর খাওয়া নাই! (মিনতির শুরে)
- ঠান্ডা লাগছে খুব। এখন আমি তোমার জন্য বিছানা চেরে রান্না ঘরে যেতে পারবো না।
- তাহলে আমার কি হবে?
- আজ রাতের মতো লিপস্টিক খেয়ে পার করে দাও! প্লিজ! চলবে না? (সিমি ম্যাম মুচকি হাসি দিয়ে)
- চলবে মানে! একেবারে দৌড়াবে। (ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে আমার ঠোঁটগুলো বসিয়ে দিলাম সিমির ঠোঁটে)
কতক্ষন এভাবে ছিলাম নিজেও জানি না। কিছুক্ষন পর সিমি ম্যাম নিজেই নিজেকে চারিয়ে নিল। তারপর আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল।
- আমার ঠোটগুলোকে তো খেয়েই ফেলছো! এখনো পেট ভরে নাই? (সিমি ম্যাম)
- সারারাত না খেয়ে থাকতে হবে। এখনি কি করে পেট ভরবে বলেন! কিস করতে না দিলে কিন্তু রান্না করতে পাঠাবো! (সিমি ম্যাম কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল)
- আচ্ছা তুমি এখানেই থাকো। আমি রান্না করতে যাচ্ছি। (বিছানা থেকে উঠে যাচ্ছিলো)
দেখে মনে হচ্ছে ওনার মনটা খুব খারাপ।
সিমি ম্যাম এর একটা হাত ধরে আবার আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে আস্তে করে জরিয়ে ধরলাম।
- হঠাৎ এতটা পাল্টে গেলেন কি করে? (জরিয়ে ধরেই বললাম)
- হিমান্ত আমার খুব ভয় করছে। যদি আমাদের মাঝে কিছু একটা হয়ে যায়! (মন খারাপ এর কন্ঠে বলল)
- এত তারাতারি আমার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেল? কিচ্ছু হবে না। ঘুমিয়ে পরেন।
- হুম।
সিমি ম্যাম আমার বুকের মাঝে থাকা অবস্তায় ঘুমিয়ে পরলো। আমিও কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সিমি ম্যামকে পাশে দেখলাম না। কেও একজন ঘরের দিকেই আসছে মনে হলো।
- ঘুম ভাঙছে তাহলে! (সিমি ম্যাম ঘরে আসতে আসতে বলল)
সিমি ম্যামকে দেখে আবারও ক্রাশ খাইলাম। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অবাক হলাম কারণ…
পর্ব ৬
যখন চোখ খুললাম, তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। পাশে একজন ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেলাম। কিন্তু মহিলাটাকে কিছুতেই চিনতে পারলাম না। উঠে বসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। সারা গায়ে ব্যথা অনুভব করছি। বিশেষ করে মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। আমি উঠে বসার চেষ্টা করছি তা দেখে ভদ্রমহিলাটি কাছে আসলো।
- কি করছো বাবা? তুমি এখন অসুস্থ! শুয়ে থাকো। (মহিলাটি)
- কে আপনি? আর আমি কে? এখানে কি করছি? (আমি)
- তুমি আমার মেয়ের গাড়ির নিচে পরেছিলে? তুমি কি কিছু মনে করতে পারছো না?
- না, আমি কিচ্ছু মনে করতে পারছি না। কে আমি? কি আমার পরিচয়?
- মাথায় প্রচন্ড আঘাতের ফলে ওনার সৃতিশক্তি চলে গেছে। আপনি ওনাকে একটু বিশ্রাম দিন। আজ অনেক দিন পর সবে মাত্র ওনার জ্ঞান ফিরেছে। একটু বিশ্রাম করতে দিন! (একজন ডাক্তার বলে উঠলো)
- কতদিন পর আমার জ্ঞান ফিরেছে? (আমি)
- আজ ২০ দিন হলো। (মহিলাটি)
- ওও(আমি)
- ওকে বাবা, তুমি বিশ্রাম নাও, আমি ওনার সাথে কথা বলে আসছি। (ডাক্তারকে দেখিয়ে বলল মহিলাটি)
- জ্বি আচ্ছা।
তারপর ডাক্তার আর মহিলাটি চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে ভবতে লাগলাম কে আমি? নাম কি আমার? আমি কি একা? আমার কি কেও আছে? থাকলে আমি এতদিন ধরে এখানে পরে আছি, কেও আমার খোজ নিল না কেন?
এসব ভাবতে গিয়ে মাথায় আবার ব্যাথা করা শুরু করে দিয়েছে। এভাবেই কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নাই। চোখ মেলে দেখলাম একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে। মেয়েটাকে যেন আমি আগে কথাও দেখেছি। কিন্তু কিছুতেই মনে পরছে নাহ।
- এখন কেমন আছেন? (মেয়েটি)
- হুম্ম ভাল।
- নাম কি আপনার?
- জানিনা। আপনি কে? (আমি)
- আপনি আমার গাড়ির নিচেই পরেছিলেন।
- ওও
- হুম, আচ্চা আপনার কি কিছুই মনে পরছে না?
- না।
- ওকে সমস্যা নাই। আমি লোপা, আপনি? (মেয়েটি আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
- (আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলাম। মেয়েটার কান্ড দেখে আমার অনেক হাসি পাচ্চে)
- ওহহ sorryআপনি ত আপনার নাম জানেন না। আপনার হাসি টা কিন্তু অনেক সুন্দর।
- হুম, আপনারটাও।
- আচ্চা আমি আপনাকে একটা নাম দেই?
- হুমম, (মেয়েটা হাসিমুখে বলল, তাই না করতে পারলাম না)
- কিন্তু কি নাম দেওয়া যায়! আচ্ছা আমার একটা পছন্দের নাম আছে, ঐটা রাখবো!
- আপনার যা ইচ্ছা!
- আচ্ছা অভি রাখলে কেমন হয়?
- ভালোইতো
- আপনার পছন্দ হইছে?
- হুম।
- কি একটু একটু কথা বলছেন! যা জিজ্ঞেস করি শুধু তারই রিপ্লে দিচ্ছেন। আপনার কিছু জিজ্ঞাসা করার নাই?
- হুমম!
- তাহলে জিজ্ঞেস করেন কি জিজ্ঞাস করবেন?
- আমার পরিচয়।
- উফ্ফ্, থাকেন আপনি আপনার পরিচয় নিয়ে। (মেয়েটি রেগে চলে গেল)
বুঝতে পারছি না লোপা হঠাৎ এত রেগে চলে গেল কেন? আল্লাহই জানেন!
কিছুক্ষন এভাবেই শুয়ে রইলাম। লোপা যতক্ষন ছিল ততক্ষন ভালোই লাগছিল, যদিও মেয়েটি বেশি কথা বলে। কিছুক্ষন এভাবে শুয়ে থাকার পর দেখতে পেলাম সেই ভদ্র মহিলাটি(লোপার আম্মু) কেবিনে আসলো। সাথে লোপাও আসলো।
- এইযে মিঅভি! আপনি এখন আমাদের সাথে বাড়ি যাচ্ছেন। (লোপা)
- অভি! এটা আবার কে? (লোপার আম্মু লোপাকে জিজ্ঞেস করল)
- এই হলো অভি! আমি নাম দিয়েছি।
- তুই পারিসও বটে।
- এইযে মি, উঠে বসুন! (লোপা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
- হুম, কিন্তু আমি কার বাড়ি যাব?
- কেন? আমাদের বাড়ি! (আন্টি, মানে লোপার আম্মু)
- কিন্তু(আমাকে আর বলতে না দিয়ে)
- কোন কিন্তু না, উঠে বসো। (আন্টি)
তারপর একটা ড এসে আমাকে তুলে দার করালো। ধরে ধরে বাইরে একটি গাড়িতে নিয়ে বসালো। আমা ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটাতে বসানো হলো। আন্টি বসলো পিছনের সিটে। এবং লোপা বসলো আমার পাশের ড্রাইভিং সিটে। তার মানে লোপা গাড়ি ড্রাইভ করবে।
লোপা ড্রাইভ করছিল
- অভি তোমার সামনে বসতে সমস্যা হলে তুমি পিছনের সিটে এসে বসতে পার! (আন্টি)
- না মা, ওর কোন সমস্যা হবে না। আমি আছিতো! (আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই লোপা বলে দিল)
আমি আর গাড়িতে কোন কথা বললাম না। গাড়ি গিয়ে থামলো এক বিশাল বাড়ির সামনে। একে একে গাড়ি থেকে সবাই নামলাম।
লোপা আমাকে ধরে ধরে একটা ঘরে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিল।
- আজ থেকে এখানেই তুমি থাকবে। কোন অসুবিধে হলে আমাকে বলবে ঠিক আছে! (লোপা হঠাৎ তুমি করে কেন বলছে বুঝতে পারছি না)
- হুমম।
- আচ্ছা আমরা তো সমবয়সি। আমরা কি বন্ধু হতে পারি না? (লোপা)
- হুমম।
- আচ্ছা তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
- হুমম।
- খালি হুমম আর হুমম। আর একটা কথাও বলতে পারে না। (বিরবির করতে করতে চলে গেল)
আমি কিছুক্ষন বসে থেকে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষন পর লোপা খাবার নিয়ে এল। আমি সেগুলো থেকে কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর লোপা আমাকে কিছু ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, “লোপা মেয়েটা সত্যি খুব ভালো। অল্পতেই মানুষকে আপন করে নেয়। আমারও অনেক কেয়ার করে। ও যদি পাশে থাকে তাহলে ভুলেই যাই যে আমার একটা অতীত আছে। কিন্তু কি সেই অতীত! আমি কে? এখানেই বা কি করে এলাম? আমার কি কোনো আত্মিয়স্বজন আছে? তাহলে তারা কেন আমাকে খুজছে না! এসব ভাবতে ভাবতেই আবার মাথাটায় ঝিমঝিম করছে। কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
6 মাস পর
এই ছয়মাসে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। লোপা আর আমার মাঝেকার বন্ধুত্বটাও অনেক ঘনিষ্ট হয়ে গেছে। আমারটা নাহয় বাদই দিলাম, লোপা আমাকে এক মূহুর্তের জন্যও আড়াল করতে চায় না।
লোপার পরিচয়টা দিয়ে দেই।
“লোপা হলো পরিবারের একমাত্র মেয়ে। লোপার আপন বলতে একমাত্র মা ছারা আর কেও নেই। লোপা এখন ইন্টার ২য় বর্ষে লেখাপড়া করছে। “
পরিচয় পর্ব শেষ। এখন আমার কথায় আসা যাক। বাড়িতে সারাদিন শুয়ে বসে কাটাতে হয়। এখন আমার সৃতিগুলো আমাকে আরও বেশি তারা করে বেড়ায়। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারি না, কে আমি! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
রাস্তা দিয়ে একা হাঠছিলাম।
- এই রাজ! (কেও একজন পিছন থেকে ডাক দিল)
- (পিছনে তাকিয়ে দেখলাম লোপা আমাকে ডাকছে। কিন্তু লোপা আমাকে রাজ বলে কেন ডাকবে? রাজকে? )
- এই রাজ তোমাকেই বলছি!
- (কথা বলার চেষ্টা করছি, কিন্তু কেন জানি শত চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছি না)
- কবে ফিরবে তুমি? কতদিন ধরে তোমার অপেক্ষায় আছি। আর রাগ করে থেকো না। ফিরে এসো! (লোপা আমাকে দূর থেকেই এগুলো বলছে। এক পা’ও নরচে না)
- (অনেক চেষ্টা করেও কোন কথা বলতে পারছি না)
আস্তে আস্তে লোপা অদৃশ্য হয়ে গেল। লোপা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমি যেন কথা বলার শক্তি ফিরে পাচ্ছি।
- হলোপা! (চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম)
সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম!
ঐদিকে আন্টি আর লোপা আমার চিৎকার শুনে ঘরে চলে এসেছে। লোপা আমার পাশে এসে বসল - রাজ কে? (লোপাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
- রাজ কে? (লোপাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
- আমি কি করে বলবো রাজ কে? আমি তো এই নাম এই প্রথম বার শুনলাম। (লোপা)
- তাহলে তুমি আমাকে এই নামে ডাকতেছিলে কেন?
- আমি কখন তোমাকে এই নাম ধরে ডাকছি? (লোপা অবাক হয়ে)
- এইতো কিছুক্ষন আগে!
- অভি তুমি নিশ্চয় সপ্ন দেখেছো! আমি এইমাত্র আমার ঘর থেকে এলাম! (লোপা)
- হ্যাঁ বাবা! লোপাতো এইমাত্র আমার সাথে এলো! (আন্টি)
- (কোনো কথা বলছি না। হতে পারে এটা আমার সপ্ন। কিন্তু এরকম সপ্ন আমি কেন দেখলাম? )
- প্লিজ অভি তুমি এখন ঘুমাও। কালকে তোমাকে একটা সংবাদ দিব। আমি জানি তুমি ওইটা শুনে অনেক খুশি হবে। (লোপা মুচকি হেসে বলল)
- কি সংবাদ? (আমি)
- উহুঁ! সেটা সকালেই বলবো! আম্মু চলোতো এখান থেকে! (লোপা)
লোপা আর তার আম্মু সেখান থেকে চলে গেল। আমি ওভাবেই শুয়ে পরলাম। আর ভাবতে লাগলাম এই সপ্নের মানে কি? কেন দেখলাম আমি এই সপ্ন? এটা কি আমার অতীতের কোন দৃশ্য?
এসব হাজারো প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
সকালবেলা
লোপার ডাকে ঘুম ভাঙলো। ঘরিতে তাকিয়ে দেখলাম ৯টা বাজে।
উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম। লোপাকে দেখে আবারো ক্রাশ খাইলাম। মানে লোপার প্রতি আমি সবসময় ক্রাশিত।
খাবার টেবিলে এসে দেখলাম লোপা রেডি হয়ে টেবিলে বসে আছে। সাধারনত লোপা যখন কোথাও ঘুরতে যায়! তখনই এভাবে তৈরি হয়। কিন্তু আজ কোথায় যাবে?
খাওয়ার শেষে
- লোপা তুমি না বলেছিলে একটা সুসংবাদ দিবে! কি সেটা? (আমি)
- বলবো! (লোপা)
- আর বেশি কথা বলিশ না। বলে ফেল! (আন্টি)
- আমি
- হ্যাঁ তুমি!
- পুলিশে জয়েন করছি!
- কি! এটাতো দারুন খুশির সংবাদ! (আমি)
- হুম। এই নাও মিষ্টি খাও! (লোপা টেবিলে থাকা মিষ্টির পেকেট থেকে একটা মিষ্টি আমার মুখের সামনে ধরে)
আমি সেটা তার হাত থেকেই খেয়ে নিলাম। মিষ্টিতো এমনিতেই মিষ্টি, তার মাঝে সেটা যদি ক্রাশের হাতে খাওয়া যায় তাহলেতো আর কোনো কথায় নাই। আন্টিও রান্নাঘরে চলে গেল।
- কিন্তু তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো? (আমি)
- কেন? থানায়! (লোপা)
- তাহলে এই পোশাকে কেন? পুলিশের ড্রেস কোথাই? (আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম)
- কারন পুলিশের ড্রেস পরলে তুমি ঠিক থাকতে পারবে না, তাই। (লোপা আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলছিল)
- মমানে কি?
জবাবে কিছুই বলল না। শুধু একটা চোখ টিপ মারলো। আর তা দেখে আমার পরান যায় যায়
- এই লোপা তুই কি এখনি বেরিয়ে পরছিস? (হঠাৎ আন্টি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল। আর এইদিকে লোপা তারাতারি করে দূরে সরে গেল)
- হ্যাঁ মা! কেন?
- কিন্তু তোর ড্রেস কোথায়? (আন্টি)
- ব্যাগে। থানায় গিয়ে চেঞ্জ করে নেব। (লোপা)
- আর হ্যাঁ! অভিকেও সাথে নিয়ে যাস! বেচারা বাড়িতে একা একা আর কত বসে থাকবে? কিছুদিন তোর সাথে ঘুরে আসুক(আন্টি)
- হুমতুমি ঠিক বলেছো। আমিও এটাই ভাবছিলাম। অভি! তুমি তৈরি হয়ে এসো! আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। (লোপা)
- কিছুদিন মানে? কতদিন? (আমি)
- সপ্তাহখানেক! (লোপা)
- না লোপা। আমার ভালো লাগছে না। আমি বরং অন্য একদিন যাবো।
- কোন অজুহাত শুনবো না। তুমি এখনি রেডি হবে ব্যাস। (বলেই লোপা একটা সোফায় বসে পরলো)
অনেক চেষ্টার পরেও লোপার জেদের সাথে হার মানতে হলো। অবশেষে তৈরি হয়ে নিতে হলো।
আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লোপার সাথে বেড়িয়ে এলাম। লোপা আর আমি একটা গাড়ি করে যাচ্ছিলাম। লোপাকে দেখলাম অনেকটা খুশি খুশি লাগছে।
- হঠাৎ এত খুশি কেন জানতে পারি? (আমি)
- আজ প্রথম তোমার সাথে লংড্রাইভে যাচ্ছি তো! তাই। (লোপা মুচকি হেসে উত্তর দিল)
- ও, এখানে এত খুশি হওয়ার কি আছে?
- তুমি বুজবা না।
- আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?
- কলেজে।
- কেন? আমাদের তো এখন থানায় যাওয়ার কথা তাই না!
- হুমকিন্তু কলেজফ্রেন্ডদের কাছ থেকে বিদায় নিতে হবে না?
- আচ্ছা সবার কাছ থেকেই তো বিদায় নিচ্ছো! তুমি কোন থানায় জয়েন করছো সেটা তো বলছো না! (আমি)
- সেটা গেলেই দেখতে পারবে! (লোপা)
তারপর আর কিছুক্ষন গিয়েই লোপা গাড়িটাকে দার করিয়ে ফেলল।
চারদিক লক্ষ করে বুঝতে পারলাম যে এটা লোপাদের কলেজ। আমি কিছু বলার আগেই লোপা বলতে লাগল
- চুপচাপ এখানে বসে থাক। আমি আসার আগ পর্যন্ত এখান থেকে কোথাও যাবে না। ঠিক আছে? (লোপা)
- হুম। কিন্তু তুমি কোথায় যাচ্ছো?
- ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করে আসার জন্য।
- তাহলে আমিও আসি!
- এহহ! লুচু কোথাকার! খুব সখ মেয়ে দেখার তাই না? (লোপা মুখ ভেংছি কেটে বলল)
- হুম। আমার খুব ইচ্ছে একটা সত্যিকারের সুন্দরী মেয়ে দেখব। জ্ঞ্যান ফিরার পর থেকে শুধু একটা ময়দা সুন্দরি দেখতে দেখতে আর ভাল্লাগে না। (লোপাকে রাগানোর জন্য বললাম)
- চুপচাপ বসে থাক! আর একটা কথা বললে তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যাবো। (লোপা দাতে দাত চেপে)
- (চুপ করে বসে আছি)
লোপা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাইরে চলে গেল। যাওয়ার সময় ভুলবসত ফোনটা ফেলে রেখে চলে গেছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম লক করা। পাশেই একটা হেডফোন পরেছিল। ফোন লক করা থাকলেও হেডফোন দিয়ে গান শুনা যায়। ওইটা কানে লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম।
প্রায় ১০ মিনিট পর দেখলাম লোপা তার তিনজন বান্ধবী নিয়ে এদিকেই আসছে।
গাড়ির কাছে এসে
- এই রিমি! তোরা তিনজন পিছনে গিয়ে বস। (লোপা)
- হুম, কিন্তু ছেলেটি কে? (তাদের মাঝে একজন মেয়ে বলে উঠলো)
- সেটা জেনে তোরা কি করবি? (লোপা)
- না কিছু না। এমন একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে ঘুরছিস! এটা লোকে জানলে ছেলেটাকে মেয়েরা কবেই কিডন্যাপ করতো! (সবকটা হেসে দিল, শুধু লোপা ছারা)
- তোরা উঠবি নাকি আমি চলে যাবো? (লোপা)
- উঠব না মানে? এমন সুযোগ কি হাতছারা করা যায়।
সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। আমি বসে আছি লোপার পাশে, মানে ড্রাইভিং সিটের পাশে। লোপাকে দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে। কিন্তু লোপা এই মেয়েগুলো আর আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে? আর এই মেয়েগুলোই কিসের সুযোগ এর কথা বলছিল? ৪ জনে মিলে আমাকে জবাই করবে নাতো আবার!
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। কারো মাঝে কোন কথা নাই। শুধু পিছনের মেয়েগুলো ফিসফিস করে কথা বলছিল।
পর্ব ৭
- এইযে শুনছেন! (পিছনের মেয়েগুলোর মধ্যে একজন আমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল)
- জ্বি শুনছি বলেন!
- আপনার নামটা জানতে পারি? (একজন)
- অভি(আমি)
- বাহ্, খুব সুন্দর নামতো! কে রেখেছে এই নামটা? আন্টি নিশ্চয়? (অন্য একজন)
- আন্টি মানে? (আমিতো অবাক! আন্টি ডাকে কাকে? )
- মানে আপনার আম্মুর কথা বলতেছি আর কি! (একজন মেয়ে বলল, আর লোপা ঐদিকে রাগে ফুসছে)
- না। (লোপার দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বললাম)
- তো!
- হলোপা রাখছে। (লোপার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম)
- কিহ্? (সবাই একসাথে)
- কেন শুনতে পাসনি? তোদের আন্টি রাখছে। লোপা আন্টি। আর এই ছেলে তোদের আঙ্কেল হয় বুঝলি? (লোপার কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেল। সাথে আমিও)
- (কেও কোনো কথা বলছে না। সবাই চুপ)
তারপর গাড়িটি গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামল। লোপা তার সকল বান্দবীদের নিয় রেস্টুরেন্টের ভেতরে ডুকে গেল। আর আমি পালিয়ে যাবো এই ভয়ে আমাকে গাড়ির ভিতরে রেখে দরজা চাবি দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে গেছে লোপা।
অনেক্ষন বসে থাকার পর লোপাকে বাইরে আসতে দেখা গেল। লোপা একা একা গাড়ির কাছে আসছিলো, লোপা গাড়ির কাছে আসতেই একটি ছেলে লোপার পথ আটকে দারায়
- কে আপনি? আমার পথ কেন আটকে দিছেন? সরেন বলছি! (লোপা)
- সিমি তুমি এসব কি বলছো? তুমি এখানে কি করে? তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? (ছেলেটি)
- নাতো! আমি আপনাকে কি করে চিনবো? আর আমি “সিমি” না, “লোপা”। (লোপা)
- সিমি তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি হিরন।
যখন চোখ খুললাম, তখন নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। পাশে একজন ভদ্রমহিলাকে দেখতে পেলাম। কিন্তু মহিলাটাকে কিছুতেই চিনতে পারলাম না। উঠে বসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। সারা গায়ে ব্যথা অনুভব করছি। বিশেষ করে মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। আমি উঠে বসার চেষ্টা করছি তা দেখে ভদ্রমহিলাটি কাছে আসলো। - কি করছো বাবা? তুমি এখন অসুস্থ! শুয়ে থাকো। (মহিলাটি)
- কে আপনি? আর আমি কে? এখানে কি করছি? (আমি)
- তুমি আমার মেয়ের গাড়ির নিচে পরেছিলে? তুমি কি কিছু মনে করতে পারছো না?
- না, আমি কিচ্ছু মনে করতে পারছি না। কে আমি? কি আমার পরিচয়?
- মাথায় প্রচন্ড আঘাতের ফলে ওনার সৃতিশক্তি চলে গেছে। আপনি ওনাকে একটু বিশ্রাম দিন। আজ অনেক দিন পর সবে মাত্র ওনার জ্ঞান ফিরেছে। একটু বিশ্রাম করতে দিন! (একজন ডাক্তার বলে উঠলো)
- কতদিন পর আমার জ্ঞান ফিরেছে? (আমি)
- আজ ২০ দিন হলো। (মহিলাটি)
- ওও(আমি)
- ওকে বাবা, তুমি বিশ্রাম নাও, আমি ওনার সাথে কথা বলে আসছি। (ডাক্তারকে দেখিয়ে বলল মহিলাটি)
- জ্বি আচ্ছা।
তারপর ডাক্তার আর মহিলাটি চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে ভবতে লাগলাম কে আমি? নাম কি আমার? আমি কি একা? আমার কি কেও আছে? থাকলে আমি এতদিন ধরে এখানে পরে আছি, কেও আমার খোজ নিল না কেন?
এসব ভাবতে গিয়ে মাথায় আবার ব্যাথা করা শুরু করে দিয়েছে। এভাবেই কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নাই। চোখ মেলে দেখলাম একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে। মেয়েটাকে যেন আমি আগে কথাও দেখেছি। কিন্তু কিছুতেই মনে পরছে নাহ।
- এখন কেমন আছেন? (মেয়েটি)
- হুম্ম ভাল।
- নাম কি আপনার?
- জানিনা। আপনি কে? (আমি)
- আপনি আমার গাড়ির নিচেই পরেছিলেন।
- ওও
- হুম, আচ্চা আপনার কি কিছুই মনে পরছে না?
- না।
- ওকে সমস্যা নাই। আমি লোপা, আপনি? (মেয়েটি আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
- (আমি কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসি দিলাম। মেয়েটার কান্ড দেখে আমার অনেক হাসি পাচ্চে)
- ওহহ sorryআপনি ত আপনার নাম জানেন না। আপনার হাসি টা কিন্তু অনেক সুন্দর।
- হুম, আপনারটাও।
- আচ্চা আমি আপনাকে একটা নাম দেই?
- হুমম, (মেয়েটা হাসিমুখে বলল, তাই না করতে পারলাম না)
- কিন্তু কি নাম দেওয়া যায়! আচ্ছা আমার একটা পছন্দের নাম আছে, ঐটা রাখবো!
- আপনার যা ইচ্ছা!
- আচ্ছা অভি রাখলে কেমন হয়?
- ভালোইতো
- আপনার পছন্দ হইছে?
- হুম।
- কি একটু একটু কথা বলছেন! যা জিজ্ঞেস করি শুধু তারই রিপ্লে দিচ্ছেন। আপনার কিছু জিজ্ঞাসা করার নাই?
- হুমম!
- তাহলে জিজ্ঞেস করেন কি জিজ্ঞাস করবেন?
- আমার পরিচয়।
- উফ্ফ্, থাকেন আপনি আপনার পরিচয় নিয়ে। (মেয়েটি রেগে চলে গেল)
বুঝতে পারছি না লোপা হঠাৎ এত রেগে চলে গেল কেন? আল্লাহই জানেন!
কিছুক্ষন এভাবেই শুয়ে রইলাম। লোপা যতক্ষন ছিল ততক্ষন ভালোই লাগছিল, যদিও মেয়েটি বেশি কথা বলে। কিছুক্ষন এভাবে শুয়ে থাকার পর দেখতে পেলাম সেই ভদ্র মহিলাটি(লোপার আম্মু) কেবিনে আসলো। সাথে লোপাও আসলো।
- এইযে মিঅভি! আপনি এখন আমাদের সাথে বাড়ি যাচ্ছেন। (লোপা)
- অভি! এটা আবার কে? (লোপার আম্মু লোপাকে জিজ্ঞেস করল)
- এই হলো অভি! আমি নাম দিয়েছি।
- তুই পারিসও বটে।
- এইযে মি, উঠে বসুন! (লোপা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
- হুম, কিন্তু আমি কার বাড়ি যাব?
- কেন? আমাদের বাড়ি! (আন্টি, মানে লোপার আম্মু)
- কিন্তু(আমাকে আর বলতে না দিয়ে)
- কোন কিন্তু না, উঠে বসো। (আন্টি)
তারপর একটা ড এসে আমাকে তুলে দার করালো। ধরে ধরে বাইরে একটি গাড়িতে নিয়ে বসালো। আমা ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটটাতে বসানো হলো। আন্টি বসলো পিছনের সিটে। এবং লোপা বসলো আমার পাশের ড্রাইভিং সিটে। তার মানে লোপা গাড়ি ড্রাইভ করবে।
লোপা ড্রাইভ করছিল
- অভি তোমার সামনে বসতে সমস্যা হলে তুমি পিছনের সিটে এসে বসতে পার! (আন্টি)
- না মা, ওর কোন সমস্যা হবে না। আমি আছিতো! (আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই লোপা বলে দিল)
আমি আর গাড়িতে কোন কথা বললাম না। গাড়ি গিয়ে থামলো এক বিশাল বাড়ির সামনে। একে একে গাড়ি থেকে সবাই নামলাম।
লোপা আমাকে ধরে ধরে একটা ঘরে বিছানায় নিয়ে বসিয়ে দিল।
- আজ থেকে এখানেই তুমি থাকবে। কোন অসুবিধে হলে আমাকে বলবে ঠিক আছে! (লোপা হঠাৎ তুমি করে কেন বলছে বুঝতে পারছি না)
- হুমম।
- আচ্ছা আমরা তো সমবয়সি। আমরা কি বন্ধু হতে পারি না? (লোপা)
- হুমম।
- আচ্ছা তুমি এখানে বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
- হুমম।
- খালি হুমম আর হুমম। আর একটা কথাও বলতে পারে না। (বিরবির করতে করতে চলে গেল)
আমি কিছুক্ষন বসে থেকে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষন পর লোপা খাবার নিয়ে এল। আমি সেগুলো থেকে কিছু খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর লোপা আমাকে কিছু ঔষধ খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, “লোপা মেয়েটা সত্যি খুব ভালো। অল্পতেই মানুষকে আপন করে নেয়। আমারও অনেক কেয়ার করে। ও যদি পাশে থাকে তাহলে ভুলেই যাই যে আমার একটা অতীত আছে। কিন্তু কি সেই অতীত! আমি কে? এখানেই বা কি করে এলাম? আমার কি কোনো আত্মিয়স্বজন আছে? তাহলে তারা কেন আমাকে খুজছে না! এসব ভাবতে ভাবতেই আবার মাথাটায় ঝিমঝিম করছে। কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
6 মাস পর
এই ছয়মাসে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। লোপা আর আমার মাঝেকার বন্ধুত্বটাও অনেক ঘনিষ্ট হয়ে গেছে। আমারটা নাহয় বাদই দিলাম, লোপা আমাকে এক মূহুর্তের জন্যও আড়াল করতে চায় না।
লোপার পরিচয়টা দিয়ে দেই।
“লোপা হলো পরিবারের একমাত্র মেয়ে। লোপার আপন বলতে একমাত্র মা ছারা আর কেও নেই। লোপা এখন ইন্টার ২য় বর্ষে লেখাপড়া করছে। “
পরিচয় পর্ব শেষ। এখন আমার কথায় আসা যাক। বাড়িতে সারাদিন শুয়ে বসে কাটাতে হয়। এখন আমার সৃতিগুলো আমাকে আরও বেশি তারা করে বেড়ায়। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারি না, কে আমি! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
রাস্তা দিয়ে একা হাঠছিলাম।
- এই রাজ! (কেও একজন পিছন থেকে ডাক দিল)
- (পিছনে তাকিয়ে দেখলাম লোপা আমাকে ডাকছে। কিন্তু লোপা আমাকে রাজ বলে কেন ডাকবে? রাজকে? )
- এই রাজ তোমাকেই বলছি!
- (কথা বলার চেষ্টা করছি, কিন্তু কেন জানি শত চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছি না)
- কবে ফিরবে তুমি? কতদিন ধরে তোমার অপেক্ষায় আছি। আর রাগ করে থেকো না। ফিরে এসো! (লোপা আমাকে দূর থেকেই এগুলো বলছে। এক পা’ও নরচে না)
- (অনেক চেষ্টা করেও কোন কথা বলতে পারছি না)
আস্তে আস্তে লোপা অদৃশ্য হয়ে গেল। লোপা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমি যেন কথা বলার শক্তি ফিরে পাচ্ছি।
- হলোপা! (চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসলাম)
সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরছে। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম!
ঐদিকে আন্টি আর লোপা আমার চিৎকার শুনে ঘরে চলে এসেছে। লোপা আমার পাশে এসে বসল - রাজ কে? (লোপাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
- রাজ কে? (লোপাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
- আমি কি করে বলবো রাজ কে? আমি তো এই নাম এই প্রথম বার শুনলাম। (লোপা)
- তাহলে তুমি আমাকে এই নামে ডাকতেছিলে কেন?
- আমি কখন তোমাকে এই নাম ধরে ডাকছি? (লোপা অবাক হয়ে)
- এইতো কিছুক্ষন আগে!
- অভি তুমি নিশ্চয় সপ্ন দেখেছো! আমি এইমাত্র আমার ঘর থেকে এলাম! (লোপা)
- হ্যাঁ বাবা! লোপাতো এইমাত্র আমার সাথে এলো! (আন্টি)
- (কোনো কথা বলছি না। হতে পারে এটা আমার সপ্ন। কিন্তু এরকম সপ্ন আমি কেন দেখলাম? )
- প্লিজ অভি তুমি এখন ঘুমাও। কালকে তোমাকে একটা সংবাদ দিব। আমি জানি তুমি ওইটা শুনে অনেক খুশি হবে। (লোপা মুচকি হেসে বলল)
- কি সংবাদ? (আমি)
- উহুঁ! সেটা সকালেই বলবো! আম্মু চলোতো এখান থেকে! (লোপা)
লোপা আর তার আম্মু সেখান থেকে চলে গেল। আমি ওভাবেই শুয়ে পরলাম। আর ভাবতে লাগলাম এই সপ্নের মানে কি? কেন দেখলাম আমি এই সপ্ন? এটা কি আমার অতীতের কোন দৃশ্য?
এসব হাজারো প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম মনে নেই।
লেখা – জাহিদ হাসান জিহান (রাজ)
চলবে
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “রোমান্টিক পুলিশ ম্যাম – চুমু অতঃপর গোপন ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ুন – রোমান্টিক পুলিশ ম্যাম (২য় খণ্ড) – ভালোবাসার গোপন কথা