খাঁটি ভালোবাসার গল্প – তোমায় পাওয়া: আমি পেছন দিকে তাকাতেই সানজিদা বেশ বড় করে আরেকটা ভেংচি কাটলো আমায় দেখে ,আমি বেশ বিব্রত হই মেয়েটার এ ব্যবহার গুলো দেখে। যেই না আমি চোখ বড় বড় করে সানজিদার দিকে তাকালাম সে আমায় চোখ টিপ মারলো আর এ চোখমারা টা দেখে ফেললো ক্লাসে থাকা এনামুল স্যার। সাথে সাথেই হুংকার মেরে বলে উঠলো
-এই মেয়ে তুমি ক্লাসে চোখ মারছো কেন ইমুকে?
- স্যার কেন মারছি সেটা আপনি বুঝেছেন কিন্তু এ রোবট টা কেন বুঝে না বলুন তো!
- কি বেয়াদব মেয়ে,মুখে মুখে আবার কথা বলছে।
- স্যার কথা তো মুখ দিয়েই বলে,তো মুখে বলবো না?
- কি সাংঘাতিক !এই মেয়ে দাড়াও,পুড়টা ক্লাসে দাড়িয়ে থাকবে তুমি।
- আমার পায়ে ব্যাথা, স্যার আমি পুড়টা ক্লাসে বইসা ই থাকি কেমন?
- এই মেয়ে তুমি কি চাচ্ছো আমি র্ভাসিটি পড়ুয়া মেয়েকে বেত দিয়ে আঘাত করি ?
- না স্যার কখনো ই না, এগুলো তো আইন বিরোধী ।
- সানজিদা তুমি যদি এবার না দাড়াও আমি কিন্তু সত্যি সত্যি তুমায় বেত দিবো।
সানজিদা আর কিছু না বলে দাড়িয়ে রইলো আর আমার সাথে চোখে চোখ পরতেই সে ঠোট টা পাউট করে ফ্লাইং কিস দিতে লাগলো।সত্যিই মেয়েটা সাংঘাতিক। ক্লাস শেষ হতেই আমি আমার বন্ধুদের সাথে টং দোকানে বসে সিগারেট টানতে লাগলাম,হঠাৎ করে বন্ধু আমার ঠেস মেরে বললো-
-দেখ তোর নায়িকা দৌড়ে আসতেছে।
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি সানজিদা দৌড়ে ঠিক দোকানের ভেতর প্রবেশ করলো। আমি ভাবতে লাগলাম এত বড় একটা মেয়ে আর আচরন করে বাচ্চাদের মতো। সে দোকানে ঢুকে আমার হাতে সিগারেট দেখে দোকানি কে বলতে লাগলো-
-মামা ভালো দেখে একটা সিগারেট দাও তো!
তার কথা শুনে দোকানে থাকা সবাই হা করে রইলো। সে সিগারেট টা সুন্দর করে ধরালো আর একটা টান দিতেই খুক খুক করে কাশতে লাগলো। তবুও সে সিগারেট টা হাতে নিয়ে আমার পাশে এসে ঠিক আমার মতো পা এর উপর পা তুলে বসলো আর বলতে লাগলো-
-কি খাও এটা? ফিল নাই তো কোন ?
- আচ্ছা তোমার সমস্যা কি এমন কেন করছো ?
- তুমি জানো না? দুদু খাও ?
- এসব কোন ধরনের কথা?
- তবে জিজ্ঞাস করো কেন? তুমি জানো না তুমায় দেখলে আমার প্রেম প্রেম পায়?
- মারবো একটা কানের নিচে ,তখন বুঝতে পারবা।
- আচ্ছা নাও মারো কিন্তু একটু আস্তে দিও কেমন ?
এই বলে সে গালটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল, আমি তার এ আচরনে ভরকে গেলাম। আশে পাশে থাকা সবাই আমাদের কে দেখছে আর বন্ধুদের কথা না ই বলি । পাশে থাকা একটা বন্ধু বলে উঠলো- - আরে ভাবি ও আপনাকে মারবে কেন? আপনি তো আমাদের ভাবি, আর আমাদের সামনে সে মারতে পারবে আপনাকে ?
- বাহ্ ভাবি ডাক টা শুনতে তো জোস লাগে। আচ্ছা যাও আজ সব বিল আমার।
অতঃপর আমার হারামি বন্ধু গুলা হেব্বি দাত কেলাতে লাগলো আর সানজিদার টাকায় এটা সেটা গিলতে লাগলো। মেয়েটাও কেমন অদ্ভুত, সারাদিন আমার পেছন লাগবে আর দুষ্টুমি করে বেড়াবে।
তার পরের দিন দেখি সে বাচ্চাদের মতো দু পাশে বেণী করে হেলে দুলে আমার সামনে এসেই চোখ মারলো। আর বলতে লাগলো
- এই ইমু শোন!
- কিহ ?
- তোমায় দেখে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
- আচ্ছা তোমার মাথায় কি সারাদিন এগুলোই চলে?
- তোমারে তো আমার কাঁচা তেতুলের মতো খাইয়া ফেলতে ইচ্ছে করে সেটা তুমি জানো?
সানজিদার এ কথা শুনে দিলাম এক চড়। আশে পাশে থাকা সবাই চড়ের শব্দে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। সানজিদা বাম হাতটা গালে চেপে রাখলো আর বলতে লাগলো- - একটু বেশিই জোরে হয়েছে অবশ্য ,কিন্তু সমস্যা নেই তুমি তুমার হাত দিয়ে আমার গালটা র্স্পশ করে দাও।
তার এ কথা শুনে বোকাবনে গেলাম, কোথাই ভাবছিলাম কান্না করে চলে যাবে, কি না কি বলবে। - না পারবো না ।
- তাহলে সরি বলো।
- সেটাও পারবো না।
- আচ্ছা আমি চললাম।
সানজিদা চলে যাবার পর পর ই আমার বন্ধুরা আমার চেপে ধরলো। সবাই বলতে লাগলো কাজটা আমার ঠিক হয় নি। আমি নিজেও একটু কষ্ট পেয়েছি কেননা আমিও বুঝতে পারিনি যে এমন কিছু হয়ে যাবে।
তারপরের দুই দিন সানজিদা র্ভাসিটিতে আসে নি, এর ভেতর আমি বুঝতে পারছি যে আমি সানজিদাকে বড্ড মিস করছি। কেন মিস করছি তার কারণ আমি নিজেও জানিনা। তৃতীয় দিন মেয়েটা আসলো আর সাথে সাথে আমার সামনে দৌড়ে আসলো। আমি তাকিয়ে দেখি তার বাম গালটা এখনো ফুলে আছে। সে আমার হাতে একটা পান্জাবি ধরিয়ে দিয়ে বললো
- এটা পড়ে আসো ঘুরতে যাবো ।
- এখন ?
- হুহ…
আমি চুপ করে পান্জাবি টা পরে আসলাম আর বের হলাম তার সাথে ঘুরতে। পুড়টা রাস্তা মেয়েটা তেমন কোন কথা বলে নি। দিয়াবাড়ি আসতেই সে আমার হাতটা ধরে টানতে লাগল , একটু সামনে এগুতেই সে বলে উঠলো
- আমি আইসক্রিম খাবো ।
- আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি ।
- সাথে দুইটা সিগারেট ও ।আর হ্যা আমার আমার কাছে কিন্তু লাইটার আছে ।
সানজিদা বাচ্চাদের মতো বসে বসে আমার সামনে আইসক্রিম খাচ্ছে আর আমি তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। আরেকটু খেয়াল করতেই দেখলাম সে আজ চোখে কাজল দিয়ে এসেছে। বাদামি রঙের শাড়ি সাথে তার গাল ও ঠোটের মধ্য পর্যায় থাকা তিলটা আজ আমাকে আরো একটু বেশিই নাড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যি বলতে সে এতটা কিউট যে তার থেকে চোখ ফেরানো টা আমার জন্য সত্যিই কষ্টের। কিন্তু সানজিদা আজ মুখের বাম পাশটা বারবার আমার থেকে লুকাতে চাচ্ছে কেননা বাম গালেই তার সেই আঘাতের চিহ্ন। আমি মেয়েটার এই প্রথম বারের মতো হাত টা ধরে আমার দিকে ফেরালাম আর আলতো করে তার বাম গালে র্স্পশ করার সাথে সাথেই সে কেঁপে উঠলো অপর দিকে আমিও ভরাট গলায় বললাম “সরি”
এই সরি বলাটা যেন আমার কাল ছিল। কেননা সানজিদা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি বেশ চমকে গেলাম কেননা মেয়েদের এমন আচরনের সাথে আমি মোটেও পরিচিত না। সে বেশ কিছুক্ষণ কান্না করার পর থামলো, আসলে সে কেন কান্না করেছে আমি তা এখনো বুঝতে পারি নি। জিজ্ঞাস করলে যদি আবার কান্না করে এই ভয়ে আর প্রশ্নটা করা হয়ে উঠেনি। মেয়েটা বলতে লাগলো-
- তাহলে তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো তাই না?
- আমি কি বলেছি এ কথা?
- পছন্দ তো করো তাই না?
- হ্যা, এটা বলা যায়।
- তোমার হাতটা দাও ধরবো।
- নাহ,আশে পাশে মানুষ রয়েছে।
- দুর, ছেলে মানুষ এত লজ্জা পায় নাকি? রোবট একটা
তারপর সে জোর করে আমার হাত চেপে ঘন্টা খানেক সময় ঘুরলো। এর ভেতর সে কতবার আমাকে ভালোবাসি শব্দটা বলেছে তা হিসেব নেই। এরপর থেকে সে প্রতিদিন র্ভাসিটিতে আসার সময় আমার জন্য কিছু না কিছু খাবার নিজে তৈরি করে নিয়ে আসবে, আমার ঠিক পাশের ছিটে এসে বসবে আর পুড়টা ক্লাস হয়তো হাতে হাত রাখবে নয়তো তার দু পা দিয়ে আমার একটা পা চেপে রাখবে। আসলে সে এতটা ভয়ানক ভাবে আমায় ভালোবেসেছে যে আমি তাকে থামাতে পারিনি , আমি আমাকে তার ছায়া রেখে দুরে কোথাও পালাতে পারিনি। সানজিদার এ পাগলামির দিন গুলো খুব লম্বা সময় কেটেছে। আমি আমার র্ভাসিটির লাইফ শেষ করেছি কিন্তু এখনো তাকে ভালোবাসি শব্দটা বলা হয়ে উঠেনি।
নতুন একটা ব্যবসার প্ল্যান করেছিলাম সেটায় সফল হয়ে হাসি মুখে বাসায় আসতেই দেখি সানজিদা আমার বাসায়। আমার মা তাকে খায়িয়ে দিচ্ছে এ দৃশ্য দেখার পর আমি মনস্থির করে রেখেছিলাম যে সে বাসায় নিশ্চই উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে। হঠাৎ মা বলে উঠলো
-কিরে এতদিন ধরে পছন্দ করিস তাহলে এখন বিয়ে করতে মানা করছিস কেন ?
-মানে! কিসের কার বিয়ে ?
হঠাৎ আফসানা বলে উঠলো-
- জানেন আন্টি সে এতদিন আমার সাথে প্রেম করে এখন বলে আমায় নাকি বিয়ে করবে না। কেন আমি কি দেখতে খুব পচা আন্টি?(বলেই গালটা এদিক সেদিক করে দেখাতে লাগলো)
-কই মোটওে না। তুমি দেখতে অনেক সুন্দরী ।
- প্লিজ আন্টি বিয়েটা সর্ম্পূণ করে দেন না ওর সাথে প্লিজ! নয়তো দেখবেন ও অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়ে আসবে। তখন কিন্তু আমি মইরা গেলে ওর নাম ই সুসাইড নোটে লিখা দিয়া যাবো হু।
- নাহ্ এসব কিছুই হবে না। বিয়ে আজ রাতে এখন ই হবে।
তাদের কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম,আর সানজিদার অভিনয়ের কথা না ই বললাম এখানে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার বেশ অনেকগুলো বন্ধু এসে আমায় অভিনন্দন দিতে লাগলো। এর ফাকে সানজিদার বাবা এসে ও হাজির, সানজিদার বাবা আমায় দেখে একগাল হেসে ফেললো আর আমি ওনার হাসি দেখেই বুঝলাম ওনার মেয়ের এ সব পাগলামি ওনি জানে। তারপর হুজুর এসে আমাদের বিয়ের কাজ টা শেষ করলো আর এখন আমি বসে আছি আমার রুমে পাশে সানজিদা কেননা আজ নাকি বাসর রাত। এই কয়েকঘন্টায় আমার সাথে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, এ যেন হিন্দি মুভি বার বার দেখ এর মতো হয়ে যাচ্ছে । - ওই সিগারেট খাবা সোনা জামাই ?
- এটা কি হলো?
- শোন তুমারে দেইখা আমি চুমু খাওয়া থেইকা কন্ট্রোল করা খুব কষ্টের। তাই এত কষ্ট নিজেকে না দিয়ে পারমানেন্ট ভাবে তোমারে আমার কইরা নিলাম।
- তুমি কি পাগল? আর সিগারেট কই পাইলা ?
- আসার আগে তোমার জন্য কিনে নিয়ে আসছি গো।
- ওকে, থ্যাংক্স
- এখন ভালোবাসি বলো আমায়।
- আচ্ছা পরে বলবো ।
কিন্তু সেটা আর হয় নি, সে রাতে সে আমার মুখ দিয়ে ভালোবাসি শব্দটা বের করিয়ে ই নিল। সে সারারাত্র আমার বুকে মাথা রেখে হাজারো কথা বলেছিল কিন্তু কি বলেছিল সেটা আমি মোটেও শুনতে পাই নি। কেননা আমি অবাক নয়নে আবছা আলোতে তাকে দেখে যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম এ পাগলী মেয়েটাকে নিয়ে। ভোরের আলোতে সানজিদার মুখখানা পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম, তার মুখে থাকা তিলটা যেন আমাকে চুম্বকের মতো টানছিল। আমি ধীরে ধীরে তার ঠোটের কাছে আমার ঠোট টা নিয়ে তার তিলে আলতো করে চুমু খেলাম আর খেয়াল করলাম সানজিদা একচোখ খোলা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে আর গাধা উপাধি দিয়ে সে সঠিক চুম্বনে আমাকে আবদ্ধ করেছে।
আমাদের বিয়ের তিনমাস সময়ে সে সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন রাতে বাসায় আসার সময় তার জন্য কিছু না কিছু অবশ্যই নিয়ে আসতে হয়। কখনো দেখিনি নিজের হাত ভাত খেতে, পরিবারের সদস্য যারা আছে তাদের হাত থেকেই খাবে এখনো বাচ্চাদের মতো পাশের বাসার পিচ্ছিদের সাথে দৌড়াবে আর রাতে একজন প্রকৃত বউ হয়ে আমার ট্রিট করবে। প্রতিদিন অফিসে যাবার সময় সে তার চোখের কাজলের কিছুটা আমার শরীরে লাগিয়ে দিবে। আমি জিজ্ঞাস করতেই বলবে-
- অন্য কোন মেয়ের নজরে যেন না থাকো তাই।
আমি হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে গালে ছোট একটু চুমু খেয়ে বলি পাগল একটা। আবার হয় কি সে জগড়া করে আমার রুমে না থেকে আম্মুর রুমে গিয়ে শুয়ে থাকবে, আর আমি শিওর সেদিন আমি ছাড়া বাড়ির কোন মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কেননা সে সবাই কে টেনে নিয়ে এসে লুডু খেলতে বসবে আর যখন সবার ঘুম ধরবে তখন কফি নিয়ে আসবে। অতঃপর সারারাত্র তার পাগলামো সবাই সয্য করবে।
মেয়েটা এতটা পাগলপণা করে যে তাকে ছাড়া যেন শ্বাস নেওয়া টা আমার জন্য কষ্টের হয়ে উঠে। সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর নিয়ে বাসায় এসেছিলাম। আসার পর থেকে সানজিদা আমাকে এক মুহূর্তের জন্য আড়াল করে নি। গভীর রাত পযন্ত সে আমার পাশে বসে ছিল আমার হাতটা চেপে মেয়েটা কান্না করেছিলো। রাত তখন অনেক গভীর,জ্বরের কারনে কিছুক্ষন পর পর পানি পিপাশা পাচ্ছে তাই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তাকাতেই দেখি মেয়েটা চেহারে বসে বিছানায় হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি আলতো করে তাকে আমার পাশে টেনে নিয়ে বালিশে দিয়ে দিলাম।
আমি সেদিন জ্বর নিয়েও রাতে আর ঘুমাতে পারিনি,কেননা মেয়েটার এ ঘুমন্ত ফেইসটার মায়া রেখে আমি ঘুমাতে পারিনি। মুখখানা শুকনো দেখে বুঝতে পারলাম রাতে মেয়েটা কিছু খায় নি আজ আমার চিন্তায়। হঠাৎ করেই সে ঘুম থেকে জেগে উঠলো আর আমার বাহুতে আবিষ্কার করার পর একটা লম্বা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো। আমি হাসলাম মেয়েটার পাগলামি দেখে, আমি মাতোয়ারা হই তার চুলের ঘ্রাণে, আমি আফিম নেশার মতো বুদ হই তার ঠোটে থাকা লিপস্টিকের নতুন স্বাধে।
আমি পুনরায় নেশায় পাগল হই তার সেই ঘুমন্ত মুখ আর গালে থাকা সেই তিলক টা দেখে। আমি জানি তার এ মায়া ছেড়ে পালানোর কোন জায়গা আমার জানা নেই।
বেশ কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ করছি সানজিদা আমায় কিছুটা সন্দেহ করছে। প্রথমে আমি এ বিষয়ে পাত্তা না দিলেও পরে এ বিষয়টা আমার কাছে একটু অন্যরকম ঠেকছে। কেননা সানজিদা আমাকে খুব ভালো করেই বুঝতে পারে, সে আমার চোখের তাকানোর ভাষাও কিছুটা বুঝে সুতরাং এখানে সন্দেহের কারণটা কি তা আমি নিজেও জানিনা। আমি আজ অফিস থেকে আসার পর সে আমার সাথে কেমন যেন একটা ব্যবহার করলো যা আমার মন টা পচন্ড খারাপ করে দিয়েছে তবুও আমি তাকে কিছু বলিনি। আমি মনে করেছিলাম সব কিছু ঠিক তো আছে। রাত্র প্রায় ২ টা বাজে, হঠাৎ করেই মেয়েটা ফুফিয়ে কান্না করতে লাগলো আর আমি তাকে টাচ করতেই সে চিৎকার করে বলে উঠলো-
- র্স্পশ করবে না তুমি আমায় একদম ইমু .
- কি হয়েছে এমন কেন করছো?
সাথে সাথে সে তার মোবাইল বের করে আমায় একটা ভিডিও ক্লিপ দেখালো, যেখানে আমি আমার অফিসের একটা মেয়ে কলিগের সাথে খুব কাছাকাছি অবস্থায় থেকে দুষ্টুমি করছি, মেয়েটার হাত ধরেছি এমন কি মেয়েটার গালে আমি চুমু ও খেয়েছি। এ ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিও টা সর্ম্পূণ ভাবে আমায় স্তব্ধ করে দিল। আমি বেশ বুঝতে পারছি এটা ইডিট করা কিন্তু সানজিদাকে আমি কিছুতেই বুঝাতে পারিনি। সে সারারাত্র ফ্লোরে শুয়ে হাউমাউ করে কান্না করেছে। আমি তাকে বুঝাতে গিয়েও র্ব্যাথ হয়েছি বারবার। ভোরের দিকে ঘুম পেয়েছিলো আর সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি সানজিদা আমার পাশে নেই শুধু বিছানার পাশে রয়েছে একটা কাগজ যেখানে লিখা রয়েছে
“সেই মেয়েটাকে নিয়ে ভালো থেক আর আমাকে ও কষ্টে রেখ”
সেই ঘটনার আজ তিন দিন হয়ে গেল সানজিদার সাথে আমার কোন প্রকার যোগাযোগ হয় নি।আমি তাকে যতবার ফোন দিয়েছি সে ঠিক ততবার ফোনটা কেটে দিয়েছে।অফিসে ঢুকার সাথে সাথে আমার সেই কলিগ নিহা বলতে লাগলো
- ইমু আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টা এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে। তুমি ই তো বলেছিলে সে তোমাকে পচন্ড ভালোবাসে আর সে কখনো তোমায় সন্দেহ করবে না।
- আমি তো বলেছিলাম কিন্তু এটা বলিনি যে ইডিট করে এমন জঘণ্য ভিডিও বানাতে।এখানে সে কেন অন্য যে-ই হোক না কেন আমাকে ঠিক ই ভুল বুঝবে।
- সরি ইমু, আমি তো শুধু মঝা করেছিলাম ।
- সত্য বলতে কি তুমি এখনো মঝা করাটা শিখো নি। কোন জঘন্য ভিডিও ক্লিপ কখনোই মঝার কিছু হয় না।
- আমি তাকে তাহলে সবকিছু বুঝিয়ে বলি।
- নাহ্ তোমায় দেখলে সে তোমাকে খুন ও করতে পারে। তুমি জানোনা সে কতটা পাগল আমার। সেই র্ভাসিটি লাইফ থেকে সে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আমাকে বিয়ে পযন্ত নিয়ে এসেছে। আর তার এই ভালোবাসি শব্দটা শুনতে শুনতে আমি এখন এতই অসুস্থ হয়ে গিয়েছি যে, তার মুখে সেই ভালোবাসি শব্দটা তিনদিন ধরে না শুনে মনে হচ্ছে আমি শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় মারা যাবো। তার তিলটা এতটাই নজর কেড়েছে যে সেই তিল না দেখতে পেয়ে আমাকেই আমার কাছে অসম্পূর্ণ লাগছে, তার সেই হাসি সেই পাগলামি আমি এতটাই মিছ করছি যে মনে হচ্ছে আমার ভেতর থেকে সুখ টাই ছিনিয়ে নিচ্ছে।
- আমি সত্যিই সরি ইমু।ইমু তুমি ঠিক আছো তো ?
-জানো ছেলেদের পাজরের হাড় দ্বারা নাকি তার স্ত্রী কে সৃষ্টি করা হয়,আর আজ সেই পাজরের একটা হাড় ই মিসিং।তো বলো আমি কিবাবে ভালো থাকি।তুমি জানো আমার এমন মনে হচ্ছে যে আমার শ্বাস টা ই এখন আটকে যাবে আর আমি নিস্তব্ধ হয়ে যাবো একেবারে।
সে রাতে আমি কখন বাসায় গিয়েছি তা আমার ও জানা নেই, বাসায় এ বিষয়ে আপাদত কেউ ই জানে না কিছু। তাই তারা সবাই এক রিলেটিভের বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছুদিনের জন্য গিয়েছিল। রাতে উল্টাপাল্টা কিছু খেয়ে রুম লক করে ঘুমিয়ে ছিলাম।হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, কেউ যেন দরজায় কাড়া নাড়ছে।আমি ঘড়িতে দেখে দিলাম এখন সময় বিকাল ৫ টা বাজে। তারমানে আমি কাল রাত থেকে এখনো ঘুমে। মাথাটা কেমন যেন ব্যাথা করছে সেই জন্য দড়জার অপর পাশে থাকা গলাটা আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি না। এবার দরজায় বেশ জোরে আঘাত করতে লাগলো, আমি উঠতে গিয়েও উঠতে পারছি না কেননা কালকের এ বিশ্রি নেশা আমায় পচন্ড কাবু করে ফেলেছে।
হঠাৎ এ ডেক আসলো আর সাথে সাথেই নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরতে লাগলো। আমি হেলেদুলে দরজা টা খুলতেই সানজিদা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরলো তারমানে সে ছিল দরজার অপর পাশে। আমার নাকে সানজিদার দেহের গন্ধ আসতেই আমি স্থীর হয়ে গেলাম, তার বুকে আমার মাথা রাখতেই আমার সমস্ত নেশা কেটে গিয়েছে। সে আমার নাক মুখে রক্ত দেখে কান্না করতে লাগলো আর আমি শক্ত করে তাকে জড়িয়ে রেখে বললাম আমি ঠিক আছি আমার কিছু ই হয় নি,আমি এখনি সুস্থ হয়ে উঠবো।
অতঃপর ফ্রেশ হয়ে আসতেই মেয়েটা আবারো আমায় ধরে কান্না করতে লাগলো আর তার কারণ জানতে চাইলে সে বলতে লাগলো-
-আমি প্রায় ঘন্টা ধরে দরজায় নক করছিলাম কিন্তু তুমি দরজা খোল নি, আমি ভয় পেয়ে ছিলাম ইমু।আর নিহা আমাকে সব বলেছে এবং তুমি তাকে কালকে যা বলেছিলে সেটার বয়েস ও আমাকে পাঠিয়েছে।আমার ভুল হয়ে গেছে ইমু,সরি।
-আমি তোমাকে হারাতে চাই না মেয়ে ,আমি তুমিহীনা হয়তো বাচঁতে পারবো না।
-আমিও না ইমু,,,
- ছাড়লে কেন আবার? জড়িয়েই রাখো না
সেদিন পুড়টা বিকেল, পুড়টা সন্ধ্যা আমাদের ছিল।একে অপরকে আলিঙ্গনে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে গোধূলি কখন শেষ হলো টের ও পাই নি। অবশ্য পাওয়ার ও কথা না কেননা তিনদিনের থাকা মান অভিমান সবকিছুই তো জমা আছে আর মান-অভিমান-ভালোবাসা বেশিক্ষণ জমিয়ে রাখতে নেই। অতঃপর এদিকে চাঁদের আর্বিভাব অপর দিকে ভালোবাসা মাখানো এ পাগলীর সোহাগ ।
”এখানে রোধের পর বৃষ্টি পড়েছিল,
আবার বৃষ্টির পর রোধও উঠেছিল,
শুধু মাঝখানে থাকা সময়ের ক্যালকুলেশনে
একটু ভুল বুঝাবুঝি ছিল ”
(ফান করার অনেক ধরণ থাকে কিন্তু কখনোই র্পারসোনাল জিনিস নিয়ে মজা করতে হয় না কেননা এটা হাসি তামাসার চেয়ে বেশি দুঃখ বহে আনে ।)কেউ একজন নক করে বলেছিল এমন একটা গল্প লিখার জন্য সুতরাং হতেও পারে গল্পের কিছু অংশ কারো জীবনের সাথে মিলে যায় ।
গল্প – তোমায় পাওয়া
শাহরিয়ার আহমেদ
আরো পড়ুন- সত্যিকারের ভালোবাসা