তার শহরে – সিজন ৩ | কষ্ট পাওয়া ভালোবাসার গল্প: গত সিজনে আমরা এমন কিছু ঘটনা দেখেছি যা আমরা ভাবতেই পারিনি। দুজন কেমন যেন রহস্যময়ী একটা ভালোবাসার মাঝে ডুবে আছে।
পার্ট : ২১
- সকাল বেলা সিফাতের রুমে আসার কারণ তোমাকে একটা কথা বলতে এসে ছিলাম!
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
- কি বলতে এসেছ জেনি?
জেনি স্বাভাবিক গলায় বলল,
- আসলে গতকাল তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি, তার জন্য আই এম সরি। গতকাল আমার এক বন্ধুর বার্থডে পার্টি ছিল তো, তাই সেখানে চলে গিয়ে ছিলাম।
জেনির কথা শুনে চাপা হেসে বললাম,
- ইট স ওকে জেনি এটা কোনো ব্যাপার না, এরজন্য সরি বলতে হবে না। আমি মাইন্ড করিনি।
জেনি হাল্কা হেসে আমাকে বলল,
- তোমাদের ম্যারিড লাইফে কংগ্রেস। ওর বলা কথায় কেমন যেন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছিলাম।
এ কথা বলেই জেনি যখন রুমের বাহিরে চলে যাবার জন্য পা বাড়াল, তখনি আমি ওকে পিছনে ডাক দিলাম,
- জেনি এক মিনিট শুনো।
জেনি পিছন ঘুরে আমার দিকে জিজ্ঞাসা চোখে তাকাল,
আমি মৃদু হেসে বললাম,
- তুমি একটা কথা ভুল বলেছো। জেনি প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলে উঠল,
- কোন কথা ভুল বললাম অনিতা?
আমি হাল্কা কেশে বললাম,
- ওই যে বললে সিফাতের ঘর এ কথা, এই রুম এখন একা উনার না, তুমি হয়তো ভুলে গেছ এখন আমরা হাসবেন্ড, ওয়াইফ। সো তোমাদের রুম বলবে।
জেনি যেন আমার কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। আমার কথাটা হয়তো মানতে পারেনি, রুক্ষ গলায় বলল,
- বাহ! অনিতা বিয়ের এখনো পুরোপুরি একদিন হলো না, আর অমনি শুরু করে দিয়েছো আমাদের, তোমাদের? তাহলে তো কয়েকদিন পর বলবে,
- সিফাতের সব প্রোপার্টি তোমার করে নিতে চাও?
জেনির বলা কথায় আমি বাকরুদ্ধ শ্রোতা হয়ে গেলাম।
আমি কি বলতে চাইলাম আর ও কি বললো? নাহ আর নিরব থাকা যায় না, আজ এই নোংরা মনের মেয়েটিকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দেবও। পেয়েছে কি আমি কি ওর মতো লোভী নাকি?
জেনি ঠাট্টার সুরে আবার বলল,
- কি হলো অনিতা কথা বলছো না যে, কি বা আর বলবেই যা সত্যি তাই তো বললাম।
আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না, ঝাঁজালো গলায় বলে উঠলাম,
- সব কে নিজের মতোই ভাবো, না জেনি? আসলে যে যেরকম তার অন্যের প্রতি ধারণাটাও থাকবে সে রকম। তোমার তো দেকি সেই প্রথম দিন থেকেই উনার প্রোপার্টি নিয়ে মাথা ব্যাথা, কেন জেনি?
একটা কথা কান খুলে শুনে রাখও জেনিফার, আমার উনার প্রোপার্টির প্রতি কোনো লোভ নেই, আমি কোনো ভিকারির মেয়ে নয়। আমার বাবার যথেষ্ট টাকা পয়সা রয়েছে, তোমার মতো তিন, চার জন জেনি সারা জীবন বসে খেতে পারবে।
জেনি রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
- তা তোমার বাবার যখন এতো টাকা তো কানাডার ভার্সিটির হোস্টেল এ থেকে পড়ালেখা করলেই তো পারতে, এ বাসায় উঠে ছিলে কেন? সিফাত কে পটিয়ে ওর সব কিছু হাতিয়ে নেওয়ার জন্য?
জেনির যুক্তিহীন কথা শুনে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে যেন, নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক রেখেই বললাম,
- কানাডায় আমি নতুন। তেমন কিছু চিনতামও না।
তারজন্য মামার বাসায় উঠা। কিন্তু এখানে বিনা পয়সায় থাকছি না জেনি, বাবা প্রতি মাসে মামার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দেন। মামা- মামি নিতে চাননি, বাবা জোর করেই দিচ্ছেন। আর রইল আমার হাত খরচের টাকা, আমি বালিশের নিচ থেকে আমার ক্রেডিট কার্ড জেনি কে এনে দেখালাম। দেখিয়ে বললাম, জেনি আমি আমার ক্রেডিট কার্ড থেকেই টাকা খরচ করি, অনিতা আহমেদ কারো টাকায় চলে না। অনিতা আহমেদের বাবা ই অনিতা আহমেদের জন্য এনাফ।
জেনি খানিকটা লজ্জা পেল তার এমন যুক্তিহীন কথায়, তাই আর কোনো কথা না বারিয়ে আমার রুম থেকে হনহন পায়ে চলে গেল। আমার আজ খুব ভালো লাগছে ওই মেয়েকে ধুয়ে দিতে পেরে। নিজে কে ভাবে কি ও, সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে। আমি সবই বুঝি জেনিফার তুমি কেন এতো লেগে থাকো আমার পিছনে? অনিতা রহস্যময়ী হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রেখে বলল,
- জেনি তুমি যা- ই করো না কেন, আমিও অতো সহজে হেরে যাওয়ার মেয়ে না, আমি মিসেস সিফাত মেহবুব।
এরমধ্যে সিফাত মুচকি হেসে রুমে ঢুকল,
আমি উনার হাসার কারণ টা ঠিক বুঝলাম না। আমি উনাকে আস্তে করে বললাম,
- আপনি কই গিয়ে ছিলেন, এতক্ষণ দেখলাম না যে?
উনি আমাকে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
আর কানে কানে বললেন,
- মিস করছিলে বুঝি?
আমি কেঁপে উঠা গলায় বললাম,
- কি শুরু করলেন সকাল বেলা, ছাড়ুন তো ভার্সিটির যাবো লেট হয়ে যাবে।
আমার কথা যেন উনার কান অব্দি গেলনা, উনি আমার চুলে মুখ গুজে নেশা জড়ানো কন্ঠে বললেন,
- আজ ভার্সিটি না গেলে হয় না মিসেস মেহবুব? উনার স্পর্শে আমি চোখ বুজে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,
- জি না আমার যেতে হবে, ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে তো। আর আপনার তো অফিস আছে যাবেন না?
অফিসের কথা বলতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
- হ্যাঁ, আনি আমার তো আজ একটা মিটিং আছে, তুমি রেডি হয়ে নাও। আমিও রেডি হচ্ছি তোমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দিয়ে যাবনে।
উনি যখন ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবেন তখন আমি পিছনে ডাক দিলাম,
- “এই যে শুনছেন “?
উনি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে এসে আমার সামনে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালেন,
নিচের দিকে তাকিয়ে উনাকে মৃদুস্বরে বললাম,
- আপনি রুমে ঢুকে মুচকি হাসলেন কেন?
উনি খানিকক্ষণ কি যেন ভাবলেন, ভেবে বললেন,
- তোমার কি কারণ টা এখনি জানতে হবে নাকি পরে জানলে হবে?
“মানুষ মাত্রই কৌতূহলী ” আমিও আমার কৌতূহল ধমিয়ে রাখতে না পেরে বললাম,
- এখনি জানতে চাই, যদি বলি পরে তাহলে আপনার মনে থাকবে না কাজেই এখন বলুন।
উনি আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন, আমাকে অবাক করে দিয়ে পাঁজো কোলে তুলে বেলকোনির দিকে হাঁটা শুরু করলেন।
আমি বুঝলাম না উনার এমন কান্ডের মানে কি? উনার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখে চেয়ে রইলাম।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলে উঠলেন,
- নিচে বাগানের দিকে তাকাও আনি।
উনার কথায় আমি এক মিনিটও লেট না করে বাগানের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলাম, কারণ সেখানে জেনি রাগি মুখ করে একমনে পায়চারি করছে। জেনির এমন রাগের মানে আমার জানা।
তাই জেনির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
উনি হেসে আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
- মিসেস মেহবুব কিছু বুঝলেন?
আমার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না, উনার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে, উনি আমার একদম কাছে চলে এসেছেন। যার জন্য উনার নিঃশ্বাস এর শব্দও শুনতে পারছি, অন্যরকম এক অনুভূতি অনুভব করছি। আমি উনার গলা শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলাম, উনি ঘোর লাগা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমিও উনার সবুজ চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম, উনার সবুজ রংয়ের চোখ দুটো যেন অামায় টানছে খুব করে।
হঠাৎ দরজায় নখ হওয়ার আওয়াজে আমি ধড়ফড়িয়ে উঠলাম।
উনি সাথে সাথে আমাকে উনার বুকে চেপে ধরে উতলা গলায় বলে উঠলেন,
- তুমি ঠিক আছো আনি? ভয় পেয় না পাগলি, জিসান এসেছে। তুমি এতো ভয় পাও কেন সব কিছুতে? বলেই উনি রুমের দিকে আসতে লাগলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে আছি, হঠাৎ আওয়াজ হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আমাকে কোলে করেই উনি দরজার কাছে গিয়ে জিসান কে ভেতরে আসতে বললেন।
জিসান ভেতরে আসবে শুনে আমি কোল থেকে নামানোর জন্য ছটফটানি শুরু করলাম।
উনি দুষ্টমি হাসি দিয়ে বললেন,
- আরে তুমি এতো লাফাচ্ছো কেন, জিসানই তো। দেখলে দেখবে আমি আমার বউকে কোলে নিয়েছে অন্যকাউকে তো না। এখানে লজ্জার কি আছে মিসেস মেহবুব? উনার সাথে কথায় পারা যায় না তাই চুপ করে রইলাম।
জিসান বাহির থেকেই বলল,
- ভাইয়া তুমি আর আপু নাস্তা করতে নিচে যাচ্ছো না দেখে ডাকতে আসলাম, তোমারা ফ্রেশ হয়ে গেলে নিচে নাস্তা করতে চলে এসো। সবাই ওয়েট করছে।
সিফাত জিসান কে বলল,
- ওকে আমরা আসছি, তুই যা।
জিসান চলে যেতেই উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,
- জেনি কে সব সময় এরকম মুখের উপর উচিত জবাব দেবে, যেরকম টা আজকে দিয়েছ। তাহলে ও আর এরকম অহেতুক কথা শুনাতে আসবে না।
যে যেরকম তার সাথে তেমন বিহেভ করতে হয়, কাঁটা দিয়ে একমাত্র কাঁটাই তুলা যায় মিসেস মেহবুব। আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে তোমার আর জেনির সব কথোপকথন শুনেছি। “ও ভালো ব্যবহারের দাম দিতে জানে না, ভালো ব্যবহার করলে দূর্বল ভাবে”।
উনার কথায় শুধু মৃদু হাসলাম, হেসে বললাম,
- আপনি কি এরজন্যই মুচকি হাসছিলেন?
উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলেন,
- হ্যাঁ, গো আমার আদুরী মাখা বউ। লেট হয়ে যাচ্ছে তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলো সবাই ওয়েট করছে।
কিছুক্ষণ পরে আমরা রেডি হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি, নামার সময় খেয়াল করলাম জেনি বাঁকা চোখে আমার দিকে আর উনার দিকে তাকালও।
সোহেল ভাইয়াও একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলেন।
নিচে নেমে মামিমা আর মামা কে সালাম করলাম,
মামা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
- তোমরা সুখী হও মা দোয়া করি, আজ থেকে তুমি আমার ভাগ্নি নয় আমার মেয়ে। অনিতা এখন থেকে তুমি আমাকে পাপা বলে ডাকবে ঠিকছে?
আমি হেসে মামা কে জড়িয়ে ধরে বললাম,
- ঠিক আছে পাপা, আজ থেকে আমি তোমার বড় মেয়ে। সোহেল ভাইয়ার বউ হবে মেজে মেয়ে আর জিসানের বউ হবে তোমাদের ছোট মেয়ে।
মামিমা মুখ গুমরা করে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলেন,
- হ্যাঁ, আমি তো মামনির কিছুই না, আমি মামিমা ই রয়ে গেলাম!
আমি মামা কে ছেড়ে মামিমা কে জরিয়ে ধরে বললাম,
- কে বলেছে আপনি আমার মামিমা? আপনি তো আমার মম।
মামিমা খানিক রেগে বললেন,
- আমি যেহেতু তোমার মম তাহলে আপনি বলে সম্মোধন করছো কেন? তুমি করে বললেই আমি খুশি হবো মামনি।
হেসে বললাম,
- ওকে মম তুমি যা বলবে তাই হবে।
মামিমা খুশি হয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
- দোয়া করি মা তুমি আর সিফাত যেন সুখে থাকা।
জেনি রাগে ফেটে পড়ছে, অনিতা কে সবাই ভালোবাসে এটা জেনি সহ্য করতে পারছে না।
অনিতার দিকে রাগের চোখে তাকালো, তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিলো।
জিসান মাঝকানে বলে উঠল,
- দূর, তবে তো আপু কে আর ভাবি ডাকতে পারব না। ভেবে ছিলাম মাঝে মধ্যে আপু কে ভাবি ডাকব, কিন্তু এখন তো আপু বড় আপু হয়ে গেল!
অনিতার দিকে চেয়ে বলল, আপু তুমি কি এখন আমায় শাসনও করবে?
জিসানের কথায় আমি না হেসে পারলাম না, এই ছেলেটা মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো কথা বলে।
হাসি থামিয়ে বললাম,
- হুম, শাসন তো করবোই, কথা না শুনলে মাইরও দিতে পারি।
অনিতার কথা শুনে সিফাত হেসে বলে উঠল,
- আনির মাইর তোর জিম করা বডির জন্য কোনো ব্যাপার না, ওর আর কি শক্তি?
কি যেন বল ছিলে জিসান আনি কে ভাবি ডাকতে পারবি না?
তোর যখন ইচ্ছে আনি কে ভাবি ডাকিস কারণ ও আগে তোর ভাইয়ার বউ, এরপর তোর আপু।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস ইসাবেলা ওদের কথাবার্তা শুনে হাসছেন।
জিসান অনিতার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমি করে বলল,
- ভাবি তুমি খাচ্ছ না কেন, আমি কি হেল্প করবো?
জিসানের ভাবি ডাক শুনে সবাই এক সাথে হু হু করে হেসে উঠল, জেনি ছাড়া। জেনি বিরক্তি ভাব নিয়ে বসে আছে।
জেনি মনে মনে বলছে,
- হেসে নাও মেহবুব পরিবার মন খুলে হেসে নাও, এরপরে তোমাদের শুধু কাঁদতে হবে।
সিফাত অনিতা নাস্তা শেষ করে এক সাথে বেরিয়ে পড়ল। জিসান চলে গেল তার কলেজে, সোহেল বাহিরে বেরিয়ে পড়ল, তার ক্লাস নেই। জেনি শয়তানি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রুমে গেল।
সিফাত গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে অনিতার দিকে তাকাচ্ছে। আজ যেন সিফাতের চোখে অনিতা কে অপরূপ সুন্দরী লাগছে।
অনিতা ডার্ক- ব্লু কালার টি- শার্ট পরছে, সাথে হোয়াইট জিন্স আর হোয়াইট স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে। চুল গুলো রাবার দিয়ে উঁচু তে বাঁধা, পায়ে ডার্ক – ব্লু সু। ঠোঁটে পিংক কালার লিপস্টিক, এতেই অনিতা কে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।
অনিতা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, বাতাসের ঝাঁপটায় সামনের ছোট ছোট চুল গুলো অনিতার চোখে মুখে পরছে। অনিতা হাত দিয়ে আলতো ভাবে চুল গুলো কে কানের পিছে গুছে দিচ্ছে।
এই দৃশ্যটা সিফাত খুব উপভোগ করছে, তার কাছে এই ব্যাপার মনোমুগ্ধকর মনে হলো।
কিছুসময় পর তাদের গাড়ি ভার্সিটির সামনে এসে থামল, থামতেই অনিতা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল, সিফাতও নামল।
অনিতা বাই বলে ভার্সিটির দিকে চলে যাচ্ছিল, তখনি সিফাত, আনি বলে ডাক দিল।
অনিতাও যেন এই ডাকের অপেক্ষায় ছিলো, সিফাত ডাক দিতেই অনিতা দ্রুত এসে সিফাতের সামনে এসে জিজ্ঞেস করল,
- ডাক ছিলেন কেন?
সিফাত মুচকি হেসে অনিতার কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল,
অনিতা কপালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
- এটা কি হলো, আপনি কি এর জন্য ডাকছিলেন?
সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- তুমি তো এটা পাওয়ার জন্যই চলে গিয়েও এতো দ্রুত ফিরে এসেছো মিসেস সিফাত মেহবুব?
অনিতা লজ্জায় সিফাতের দিকে তাকাতে পারছে না। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
- আপনি যা ভাবছেন তা নয়, আমি ভেবেছি কিছু ফেলে গেছি বোধহয়। তাই আপনি ডাকছেন।
সিফাত আর কথা না বারিয়ে বলল,
- আচ্ছা তোমার ক্লাসের লেট হয়ে যাচ্ছে, সব স্টুডেন্ট ভেতরে চলে গেছে।
অনিতা ও তাড়া দেওয়া গলায় বলল,
- আপনিও যান, আমি চলে যাচ্ছি।
সিফাত অনিতা দুজনেই তাদের গন্তব্যের দিকে চলে গেল।
দুপুর ১টার দিকে আমি ক্লাস শেষে ভার্সিটির বাহিরে বেরোলোাম, বাসার উদ্দেশ্য। দেখি জিসান দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। জিসানের কাছে যেতেই ও বলে উঠল,
- আপু তোমার ক্লাস শেষ? ভাইয়া ফোন দিয়ে বললেন তোমাকে ড্রপ করে যেন নিয়ে যাই। ভাইয়া একটা কাজে আঁটকে গেছেন, আসতে পারবেন না।
আমি মৃদু হেসে বললাম,
- জিসান চলো আজ তোমার ভাইয়ার অফিস থেকে ঘুরে আসি, এখন বাসায় যেতে ভাল লাগছে না।
জিসান আমার কথায় সম্মতি দিয়ে বলল,
- চলো, গাড়ি তে বসো।
আমরা অল্প সময়ের মধ্যে এসে উনার অফিসে পৌঁছালাম। জিসান গাড়ি পার্ক করে বলল,
- আপু তুমি যাও, ভাইয়ার সাথে দেখা করে এসো, আমি ওয়েট করছি। আমি আর কিছু না বলে অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। এর আগে একবার এখানে আসায় সবাই আমাকে চেহারায় হয়তো চিনে ফেলেছে, তাই হাই, হ্যালো জানালো। আমিও হাই, হ্যালো বলে উনার কেবিনের দিকে চলে গেলাম।
উনার কেবিনের সামনে গিয়ে দেখলাম দরজা ফাঁক করা, উনার সামনে পলাশ ভাইয়া বসে আছেন।
ভেতরে প্রবেশ করার জন্য দরজার কাছে গিয়ে উনার আর পলাশ ভাইয়ার কথা গুলো শুনে প্রচন্ড রাগ হলো। রাগে আর ভেতরে গেলাম না। কান্না পাচ্ছে খুব, কান্না চেপে রেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গজগজ করতে করতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম। কান্না থেকে রাগটাই বেশি হচ্ছিলো।
পার্ট: ২২
কান্না পাচ্ছে খুব, কান্না চেপে রেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গজগজ করতে করতে উল্টো দিকে হাঁটা দিলাম। কান্না থেকে রাগটাই বেশি হচ্ছিলো।
অতি দ্রুত হেঁটে গাড়ির কাছে গেলাম। আমাকে দেখেই জিসান বলে উঠল,
- আপু চলে এলে যে, ভাইয়া কি অফিসে নেই?
আমি খানিকটা রাগিস্বরে বললাম,
- তোমার ভাইয়া খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজে আছেন। চলো আমি বাসায় যাব।
জিসান আমার রাগিস্বর বুঝতে পেরে বলল,
- কি হয়েছে আপু তুমি এতো রেগে আছো কেন, ভাইয়া কিছু বলেছেন?
ওর প্রশ্ন গুলো এখন আমার কাছে বিরক্তিকর লাগছে, কোনো উত্তর না দিয়ে বললাম,
- এতো প্রশ্ন করো না তো জিসান, বাসায় চলো।
ও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না, গাড়িতে গিয়ে বসল। আমিও গাড়িতে বসে পরলাম।
জিসান ড্রাইভ করছে, আর মাঝে মাঝে গান গাইছে। আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুই ভালো লাগছে না, মন চাইছে দেশে চলে যাই। এই মূহুর্তে যেন সব কিছু কে আমার কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে। উনি এরকম করলেন কেন, আমাকে বললে কি এমন হতো?
এসব ভাবতেই চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠল। চোখের জল কে আঁটকে রাখতে পারলাম না সতো চেষ্টার পরেও। কয়েক দন্ড অবাধ্য অশ্রু গড়িয়ে পরল আমার অজান্তেই।
হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুছে নিলাম, জিসান দেখতে পেলে হাজার খানেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।
যা এই মূহুর্তে আমার কাছে বিরক্তিকর লাগবে।
জিসান আমার সাথে আর কথা বললো না, সারা রাস্তাই নিরব ছিল।
অনেকটা সময় পর আমরা বাসায় পৌঁছালাম। জিসান গাড়ি থামাতেই আমি তাড়াতাড়ি নেমে বাসার ভেতর ঢুকে পরলাম। বাসায় ঢুকে উপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যাবো, তখনি মামিমা ডাক দিলেন,
- মামনি আজ ফিরতে এতো লেট হলো যে?
আমি ম্লানস্বরে বললাম,
- উনার অফিসে গিয়ে ছিলাম মম তাই ফিরতে একটু লেট হলো।
মামিমা হেসে বললেন,
- একা গিয়েছিলে মামনি?
জিসান পিছন থেকে বলে উঠল,
- তোমার বউমা একা কেন যাবে মম, তার ছোট দেবর থাকতে? অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- ঠিক বলছি না ভাবি?
জিসানের কথায় মামিমা হা হা করে হেসে উঠলেন, আমার কেন জানি এখন হাসি পাচ্ছে না। মন খারাপ থাকলে হাসতে ভাল লাগে না, আমারও হাসি এলো না।
মামিমা আমার নিরবতা দেখে হাসি থামিয়ে বললেন,
- মামনি তোমার কি হয়েছে, মুখ এরকম শুকনো লাগছে কেন? মন খারাপ না কি অনিতা?
ম্লান হেসে বললাম,
- না, মম মন খারাপ না ওই একটু মাথা ব্যাথা করছে তাই হয়তো মুখ এরকম লাগছে।
মামিমা আমার কথা বোধ হয় পুরোপুরি বিশ্বাস করলেন না, সন্দেহজনক গলায় বলে উঠলেন,
- মাথা ব্যাথা না অন্য কিছু মামনি, যা তুমি আমার নিকট ব্যক্ত করছো না।
জোর পূর্বক গলায় বললাম,
- অন্য কিছু কি হতে যাবে মম, তুমি অযথা চিন্তা করছো। আমি উপরে গেলাম, বলেই দ্রুত রুমের দিকে হাঁটা দিলাম।
উনার রুমে গেলাম না আমার রুমে চলে এলাম।
জিসান নিচে চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে কি একটা ভাবছিল, তখনি মিসেস ইসাবেলা বলে উঠলেন,
- জিসান, মামনির কি হয়েছে, তুমি তো সাথে ছিলে? সিফাত কিছু বলেছে?
জিসানের কপালে চিন্তার সুক্ষ্যভাজ পরল, তরপর মৃদু আওয়াজে বলল,
- আপু ভাইয়ার সাথে দেখা করতে ভেতরে গিয়ে দেখা না করে আবার ফিরে আসে। জিজ্ঞেস করি আপু দেখা করেছো, আপু কে তখন খুব হাইপার দেখাচ্ছিল। এর কারণ আমার জানা নেই মম।
মিসেস ইসাবেলা ও চিন্তায় পরে গেলেন, অনিতা কেন এমন রাগি বিহেভ করল? সিফাত কে ফোন দিবেন ভেবেও আর দিলেন না। জিসান তার রুমে চলে গেল।
অনিতা রুমে এসে পা থেকে সু খুলে ছুড়ে মারল দরজার দিকে।
অনিতার রাগ হচ্ছে খুব, সে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে রইল আধা ঘণ্টার মতো।
আর নিরব অশ্রু চোখ দিয়ে ঝরে পরল।
অনিতা শাওয়ার করে রুমে এসে বাড়িতে ফোন করল, তার মা, বোনের সাথে কথা বলল যাতে মনটা হাল্কা হয়। ওর মন খারাপ এটা বুঝতে দিলো না।
সন্ধ্যা ৭ টা বাজে সিফাত অনিতা কে ফোন দিলো, কিন্তু অনিতা ফোন রিসিভ করল না।
সিফাত অনেক বার ট্রাই করলো, অনিতা রিসিভ করল না।
শেষে বাধ্য হয়ে সিফাত অনিতা কে টেক্সট করলো,
- বউ ফোন রিসিভ করো, কথা বলবো তো।
তাও অনিতা রিপ্লাই করলো না। সিফাত কিছু টা রেগে গেল অনিতা ফোন রিসিভ না করায়।
অনিতা রুম ভেতর থেকে লক করে বসে আছে।
মিসেস ইসাবেলা অনেক বার লাঞ্চ করার জন্য বলে ছিলেন, অনিতা প্রতিবারই মাথা ব্যাথার দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দিল।
সেই এসে যে রুমে ঢুকে ছিল এখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে রুম থেকে বাহির হয়নি অনিতা।
ব্যাপার টা মিসেস ইসাবেলা কে খুব ভাবাচ্ছে, অনিতা এমন করছে কেন? তিনি সিফাত কে ফোন দিলেন, সিফাত জরুরি মিটিং এ থাকায় ফোন সাইলেন্ট করে রাখা ছিল। অনেক বার ট্রাই করলেন, কিন্তু সিফাত ফোন রিসিভ করলো না।
মিসেস ইসাবেলা চিন্তিত ভাবে রুমে বসে রইলেন।
অনিতা কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে।
সিফাত রাত ১০:৩০ এ অফিসের কাজ শেষ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিসেস ইসাবেলার অনেক গুলো মিসেড কল। সিফাত ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
- মম এতো ফোন দিয়ে ছিলেন কেন, কোনো বিপদ হলো না তো?
সিফাত তাড়াতাড়ি কল বেক করল।
মিসেস ইসাবেলা দ্রুত ফোন রিসিভ করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
- সিফাত তুমি কোথায় ছিলে এতো কল করলাম?
সিফাত স্বাভাবিক গলায় বলল,
- আমি মিটিং এ ছিলাম মম, ফোন সাইলেন্ট ছিল। বাসায় সব কিছু ঠিক আছে তো মম?
মিসেস ইসাবেলা শান্ত কন্ঠে বললেন,
- হ্যাঁ, হ্যাঁ সব ঠিক আছে, তবে সিফাত অস্থির হয়ে বলে উঠল,
- তবে কি মম কি হয়েছে, আনি ঠিক আছে তো? ওকে অনেক বার কল করলাম কিন্তু রিসিভ করলো না।
মিসেস ইসাবেলা বললেন,
- তোমার অফিস থেকে আসার পর থেকেই মামনি দরজা বন্ধ করে আছে, লাঞ্চ ও করেনি।
সিফাত চেঁচিয়ে বলল,
- হোয়াট? কি বলছো মম ও কখন আমার অফিসে আসল?
মম ফোন রাখছি, আমি বাসায় আসছি।
মিসেস ইসাবেলা ফোন রেখে ডিনার প্রস্তুত করতে গেলেন।
জেনি, সোহেল, জিসান খাবার টেবিলে বসে আছে।
জনাব আলী মেহবুব ও আসলেন, তিনি এসেই জিজ্ঞেস করলেন,
- ইসাবেলা অনিতা কোথায় ও খাবে না?
মিসেস ইসাবেলা বললেন,
- সিফাত আসলে হয়তো খেতে আসবে, সিফাত এসে পরবে এখনি কল করে ছিলাম।
এরমধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল, মিসেস ইসাবেলা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
সিফাত চিন্তিত ভাবে তাড়াতাড়ি করে উপরের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল।
সবাই সিফাতের এরকম ভাবে চলে যাওয়া দেখল,
জনাব আলী মেহবুব মিসেস ইসাবেলা কে জিজ্ঞেস করলেন,
- ইসাবেলা সিফাতের কি হলো ওকে এরকম টেন্স দেখাচ্ছে কেন?
জেনি বলে উঠল,
- আর ও এতো দ্রুত হেঁটে উপরেই বা গেল কেন?
হঠাৎ সিফাতের চিৎকার শুনা গেল, সিফাত চিৎকার করে বলছে,
- আনি ওপেন দ্যা ডোর, তোমার কি হয়েছে বলবে তো? অনিতার কোনো সারাশব্দ পেল না সিফাত।
সিফাত এর এরকম অনিতা কে ডাকায় সব এসে জড়ো হলো অনিতার রুমের সামনে।
জনাব আলী মেহবুব সিফাতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
- সিফাত তোমার আর অনিতার মাঝে কি কোনো মনোমালিন্য হয়েছে?
সিফাত অস্থির হয়ে বলল,
- না পাপা ওর সাথে তো সব কিছুই ঠিক ছিলো, বুঝতে পারছি না কেন এরকম করছে?
জেনি মনে মনে খুশি হয়ে বলল,
- ভালোই হলো সিফাত অনিতার মাঝে যদি এখন দূরত্ব সৃষ্টি হয়, এই ফাঁকে আমি সিফাতের মনে জায়গা করে নিবো।
জনাব আলী মেহবুব সিফাতের উদ্দেশ্য বললেন,
- তোমরা তোমাদের নিজেদের ব্যাপার মিটিয়ে নাও, আমরা গেলাম। চলো সবাই।
সবাই চলে গেল ডিনার করতে, সিফাত অনিতা কে ডেকেই যাচ্ছে।
অনিতা চুপ করে বেডে বসে আছে, তার সিফাতের সামনে যেতে ভালো লাগছে না।
এবার সিফাত প্রচন্ড রেগে গর্জে উঠে বলল,
- আনি তুমি দরজা খুলবে কি না বলো? যদি এখন না খুলে দাও তাহলে খুব খারাপ কিছু ঘটবে।
সিফাতের রাগ দেখে অনিতা দরজা খুলে দিতে বাধ্য হলো, দরজা খুলতেই সিফাত দ্রুত রুমে ঢুকল। ঢুকেই অনিতার দিকে রক্তচুক্ষু করে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে উঠল,
- এই মেয়ে তোমার কি হয়েছে, এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাওনি? আমাকে চিন্তায় রাখতে তোমার খুব মজা লাগে না?
অনিতা কিছু বলল না, অন্য মনস্ক হয়ে বেডে গিয়ে বসে পরল।
অনিতার এমন বিহেভ সিফাত মানতে না পেরে চিৎকার করে বলল,
- তুমি কথা বলছো না কেন, আমার কথা কি কানে যায় না?
অনিতা মৃদু গলায় বলে উঠল,
- আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
অনিতার এমন নিরব গলা শুনে সিফাতের রাগ পুরে গেল, রাগ পুরে গিয়ে সিফাতের মনে জন্ম এক রাশ ভয়। অনিতার কন্ঠ সিফাতের কাছে অন্যরকম শুনালো।
সিফাত অনিতার কাছে হাঁটো গেড়ে বসে অনিতার হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বলল,
- তোমার কি হয়েছে আনি, মন খারাপ কেন?
অনিতা আবারও আস্তে করে বলল,
- কই না তো আমার কিছু হয়নি, আর মনও খারাপ না।
আমার অফিসে কেন গিয়েছিলে আনি, আর দেখা না করে চলে আসলে কেন?
অনিতা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠল,
- আপনার অফিসে না গেলে তো জানতেও পারতাম না “আপনি যে আমায় ভালেবাসেন না”। আমাকে শুধু পলাশ ভাইয়া আর জেনির উপর জেদ মেটাতে বিয়ে করছেন।
সিফাত বিস্মিত গলায় বলল,
- তুমি কি সব বলছো আনি, আমি জেদ মেটাতে তোমাকে বিয়ে করেছি?
অনিতা রাগে দাঁড়িয়ে গেল, দাঁড়িয়ে চাপা চিৎকার দিয়ে বলল,
- তা নয়তো কি মি সিফাত মেহবুব? আপনি আমায় ভালবাসেন না, আজ জানলাম।
কথা বলার মধ্যে অনিতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। অনিতার চোখে জল দেখে সিফাতের বুকে তোলপাড় শুরু হলো। তাই হ্যাচকা টানে সিফাত তার বুকের সাথে অনিতা কে মিশিয়ে নিলো।
অনিতার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল। সিফাত অনিতার কপালে কয়েকটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিল, তারপর ধীর কন্ঠে সিফাত জিজ্ঞেস করল,
- তুমি কি এমন শুনলে আনি যার জন্য বুঝে গেলে আমি তোমায় ভালবাসি না?
অনিতা কান্না মাখা গলায় বলল,
- পলাশ ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন এই বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না আজ জানতে পারলাম। জেনি আমার আর পলাশ ভাইয়ার একটা ফটোও পাঠিয়ে ছিল আপনার কাছে তাও আমি জানি না। এগুলো দেখে আপনি রাগে আমাকে বিয়ে করেছেন মাত্র, কোনে ভালবাসায় না।
সিফাত অনিতা কে বেডে বসালো, তার পাশে সিফাত ও বসল। সিফাত অনিতা কে বলল,
- আনি যে কোনো বিষয় পুরোপুরি না জেনে ভুল বোঝা উচিত না। পলাশের মা কে মম না করে দিয়িছিলেন বিয়ের ব্যাপারে, তোমাকে না জানিয়ে।
সে কথা শুনে পলাশ ভার্সিটি গিয়েছিল তোমাকে এটা জিজ্ঞেস করতে যে তুমি কি তাকে বিয়ে করবে কি না? আর সেদিনই জেনি তোমার আর পলাশের ফটো আমাকে পাঠায়, আমি বুজতে পারি এটা জেনির কারসাজি। তাই তার চালে পা না দিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করে নেই, যাতে ও বুজে সিফাত মেহবুব তার ভালবাসা কে অবিশ্বাস করে না। আমার অফিসে পলাশ আজকে এসেছিল, জিজ্ঞেস করছিল তোমাকে এরকম হুটহাট বিয়ে করার কারণ কি? সংক্ষেপে তাকে বুঝিয়ে দিলাম কেন হুটহাট বিয়ে করলাম। তুমি সবটা না বুঝে আমাকে ভুল বুঝে গেলে।
অনিতা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,
- আপনি আমাকে এসব আগে জানালেই তো পারতেন তাহলে তো আমি ভুল বুঝতাম না। আমার রাগ হয়েছে এ কথা ভেবে আপনি মনে হয় আমাকে ভালবাসেন না তাইতো সব কথা গোপন করে গেলেন?
সিফাত মুচকি হেসে বলে উঠল,
- আমি চাই নি পাগলি তুমি এসবে জড়িয়ে মন খারাপ করো, তাই তোমাকে বলিনি।
শুনো আনি ভালোবাসা বলে বা কয়ে বুঝানোর জিনিস না, “ভালবাসা মন দিয়ে উপলব্ধি করতে” হয়। ভালবাসা শুধু মুখে বললেই ভালবাসা হয় না, প্রকাশ করেও ভালবাসা হয় না “ভালবাসা কেবল হৃদয়ের ব্যাপার”।
অনিতা তার ভুল বুঝতে পেরে সিফাতের দিকে তাকিয়ে নিচুস্বরে বলল,
- আই এম সরি, আর এরকম করবো না।
সিফাত মুখ গুমরা করে বলে উঠল,
- তোমার সরি একসেপ্ট করব না, তুমি আমায় কষ্ট দিয়েছে।
অনিতা পরলো মহামুসকিলে সিফাত তো বেঁকে বসল, অনিতা বাচ্চা বাচ্চা ফেইস করে বলল,
- বললাম তো সরি আর হবে না। কি করলে আপনি আমার সরি একসেপ্ট করবেন বলুন?
সিফাত যেন এমন কিছুই চাইছিল, সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- আগে রুমে চলো, আমি ফ্রেশ হয়ে গেলে বলব।
অনিতা ভ্রু নাচিয়ে সন্দীহান গলায় বলে উঠল,
- কি বলবেন যা এখন বলতে পারবেন না, ফ্রেশ হয়ে বলবেন? সিফাত আবারও বাঁকা হাসি ঠোঁটে রেখে বলল,
- কি আর করবো রোমান্স করবো, বলেই চোখ টিপ মারল।
অনিতা লজ্জায় মাথা নিচু কর নিলো, তার চোখ মুখ লজ্জায় লাল রাঙা হয়ে উঠল।
সিফাত অনিতার লজ্জা পাওয়া দেখে মাদক গলায় বলল,
- জানো মিসেস মেহবুব লজ্জা পেলে তোমাকে খুব সুন্দর দেখায়, ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।
অনিতা মুখ টিপে হেসে বলে উঠল,
- দুর কি বলেন আপনার যতো আজগুবি কথাবার্তা।
চলোন তো রুমে চলেন রাত অনেক হয়েছে, ফ্রেশ হয়ে ডিনার করবেন। সিফাত অনিতা রুমে গিয়ে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল ডিনার করার জন্য।
সবাই ডিনার করে অনেক আগেই যে যার রুমে চলে গেছে। অনিতা ফ্রিজে রাখা খাবার গুলো ওভেনে গরম করে এনে টেবিলে রাখল।
সিফাত বলল,
- আনি আমাকে খাইয়ে দাও তোমার হাত দিয়ে।
অনিতা মুচকি হেসে বলল,
- কেন আপনি নিজ হাতে খেতে পারেন না?
সিফাত হাল্কা হেসে বলে উঠল,
- পারি তো, কিন্তু আজ আমার বউয়ের হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। যদি আমাকে খাইয়ে দাও তাহলে তোমার সরি একসেপ্ট করবো।
অনিতা আর কিছু না বলে সিফাত কে খাইয়ে দিচ্ছে, সিফাত মিটিমিট হাসছে আনির নার্ভাস অবস্থা দেখে। জেনি উপর থেকে দেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে মনে মনে বলল,
- তাহলে দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি, আরো পিরীতি বাড়ছে? যতসব আধিক্যেতা, বলেই হনহন করে ওর রুমে চলে গেল।
সিফাত, অনিতা খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল।
রাতে প্রতিদিনকার মতোই সিফাত অনিতা কে বুকে নিয়ে শুয়ে পরল। অনিতা কে বুকে না নিলে যেন রাতে সিফাতের ঘুম আসে না। অনিতাও সিফাতের বুকে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে গেল। সিফাত, অনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল।
সকালে ৯ টার দিকে অনিতার ঘুম ভাঙল, ভাঙতেই সিফাতের দিকে চেয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল। সিফাতের কপালে ভালবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বেড থেকে উঠে পরল। সিফাত মুচকি হাসল, অনিতার ছোঁয়া পেয়ে।
আজ অনিতা সিফাত কে না ডেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বাহির হলো। অনিতা কয়েক সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কারো ধাক্কায় সিঁড়ি থেকে পরে গেল। অনিতা দেখতে পায়নি কে ধাক্কা দিলো, অনিতার মাথা ফেটে অঝর ধারায় রক্ত বের হচ্ছে। অনিতা মাথায় হাত দিতেই দেখল তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে, রক্ত দেখে অনিতা ভয়ে সিফাতের নাম ধরে চিৎকার দেয়, তারপরই জ্ঞান হারায়।
পার্ট : ২৩
অনিতা মাথায় হাত দিতেই দেখল তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে, রক্ত দেখে অনিতা ভয়ে সিফাতের নাম ধরে চিৎকার দেয়, তারপরই জ্ঞান হারায়।
অনিতার সিফাত বলে চিৎকার সিফাতের কানে বাজতেই সিফাত ঘুম থেকে ধরপড়িয়ে উঠে।
সিফাত বসে ভাবছে সে কি সঠিক শুনলো অনিতা তার নাম ধরে ডাক দিলো? তবে কিশের জন্য অনিতা এমন বিকট চিৎকার দিলো? সিফাতের এসব চিন্তা ভাবনার মাঝেই মিসেস ইসাবেলা কান্না করা গলায় ডাক দিলেন,
- সিফাত তাড়াতাড়ি নিচে আসো, মামনি পা পিছলে পরে গেছে।
সিফাত লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে দৌঁড়ে নিচে গেল। নিচে নেমেই সিফাতের শরীরর দিয়ে এক ঠান্ডা শ্রোত বয়ে গেল, এই মূহুর্তে সিফাতের মনে হচ্ছে ভেতর থেকে কেউ তার হৃৎপিণ্ড টা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সিফাত চেয়ে আছে অনিতার চোখ বন্ধ করা মুখের দিকে।
অনিতার চারপাশ রক্তে লাল হয়ে গেছে। অনিতা পরে আছে ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্তায়। মিসেস ইসাবেলা এক নাগারে অনিতা ডেকেই চলছেন, আর কান্না করছেন।
জেনি মিসেস ইসাবেলা কে বলল,
- আন্টি অনিতা সেন্সলেস হয়ে আছে, আগে ওর সেন্স ফিরাতে হবে।
জনাব আলী মেহবুব এম্বুলেন্স কে ফোন দিলেন।
মিসেস ইসাবেলা কান্না করতে করতে সিফাত কে বললেন,
- সিফাত তুমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? মামনি কে ডাক দাও, দেখনা মামনি চোখ খুলছে না।
সিফাত ধীর পায়ে অনিতার কাছে এসে বসল, কিছুক্ষণ অনিতার রক্তে লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপরই সিফাত অনিতা কে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে এক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে বলল,
- তোমার কি হয়েছে আনি কথা বলছো না কেন, তোমার এ অবস্থা হলো কিভাবে? সিফাত এগুলো বলছে আর সিফাতের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।
মিসেস ইসাবেলার দিকে তাকিয়ে সিফাত বলে উঠল,
- মম আমার আনির এরকম হলো কি করে, ও পরে গেল কিভাবে? নাকি কেউ ওকে ফেলে দিয়েছে ইচ্ছে করে? এ বাড়িতে তো আনির শত্রুর অভাব নেই।
জনাব আলী মেহবুব সিফাতের কথার মানে কিছুই বুঝলেন না, উনি পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস না করে বললেন,
- আমরা কেউই সঠিক ভাবে কিছু জানি না সিফাত, এটা কেবল অনিতাই বলতে পারবে কিভাবে কি হলো।
সোহেল, জেনি একে উপরের দিকে তাকাল।
সিফাত প্রচন্ড রাগে গর্জে উঠে বলল,
- যদি কেউ ইচ্ছে করে এই কাজ করে থাকে তবে সিফাত মেহবুবের হাত থেকে তার রেহাই নেই। বলেই সিফাত অগ্নিচুক্ষু দিয়ে তাকাল সোহেল, জেনির দিকে। সিফাতের তাকানোয় মনে হয়েছিল এখনি বোধ হয় এদের দুজন কে অগ্নিচুক্ষু দিয়ে ভস্ম করে দিবে।
সোহেল চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল।
মিসেস ইসাবেলা সিফাতের উদ্দেশ্য বললেন,
- এখন এতো কিছু ভাবার টাইম নেই সিফাত, মামনি কে আগে ডক্টর এর কাছে নিতে হবে। মামনির খুব ব্লিডিং হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই এম্বুলেন্স এসে গেল, অনিতা কে এম্বুলেন্সে তোলা হলো। মিসেস ইসাবেলা, জনাব আলী মেহবুব আর সিফাত অনিতার সাথে গেলেন।
সিফাতের পরনে শুধু একটা থ্রি – কেয়াটার আর একটা টি- শার্ট। সিফাতের কোনো দিকে হুঁশ নেই।
খানিক বাদে তারা পৌঁছালো কানাডার একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে, এখানেই অনিতা কে ভর্তি করা হলো।
ডক্টররা জানিয়েছে অনিতার অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল, অনিতা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। একথা শুনে সিফাত পাগলের মতো করতে থাকে, সে অনিতা কে একা কোথাও যেতে দিবে না।
জনাব আলী মেহবুব সিফাত কে শান্ত না স্বরে বললেন,
- সিফাত বাবা আমার পাগলামি করো না, অনিতা কে যদি এখন অপারেশন থিয়েটারে যেতে না দাও তাহলে অনিতার অবস্থা আরো ক্রিটিকাল হবে।
তুমি একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হয়ে এটা কোন ধরনের পাগলামি করছো?
সিফাত কথা বলতে পারছে না, তার গলায় কান্না আঁটকে আছে। গলায় বিঁধে থাকা কান্না গুলো আঁটকানোর জন্য সিফাত ঢুক গিলল, ঢুক গিলে জড়ানো গলায় বলল,
- পাপা আমার আনির কিছু হবে না তো বলো, ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
জনাব আলী মেহবুব ছেলের এমন কথায় চোখের কোণে জমে থাকা জল গুলো আড়ালে মুছে নিয়ে বললেন,
- হ্যাঁ, সিফাত, অনিতা আবার ঠিক হয়ে যাবে। যাও তুমি এখন ভালো ছেলের মতো পেপারে সাইন করে দিয়ে আসো।
সিফাত বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে রিসিপশনের দিকে এগিয়ে গেল, রিসিপশনের মেয়েটির কাছ থেকে পেপার টা নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করছে।
রিসিপশনের মেয়েটি অবাক হয়ে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি মনে মনে বলল,
- মি সিফাত মেহবুবের হাত এভাবে কাঁপছে কেন, আর উনার এ অবস্থা কেন? উনাকে তো এর আগেও এই হসপিটালে অনেক বার দেখেছি, অনেক হ্যান্ডসাম আর অনেক নাম করা বিজনেস ম্যান। যাকে এক ডাকে সবাই চিনে সিফাত মেহবুব, তার এমন উুসকো খুসকো চেহারা কেন কি হয়েছে মি মেহবুবের? একবার কি জিজ্ঞেস করব পেসেন্ট মি মেহবুবের কি হয়? যারজন্য পেপারটাতে সাইন করতে উনার হাত কাঁপছে?
সিফাত পেপারে সাইন করা শেষে মেয়েটির দিকে পেপার এগিয়ে দিলো। যখনি আসতে উদ্বেত্য হলো তখন মেয়েটি নম্র কন্ঠে ডাক দিল,
- এক্সকিউজ মি স্যার,
সিফাত পেছন ঘুরে মেয়েটির দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাল,
মেয়েটি কোনো ভণিতা ছাড়াই জিজ্ঞেস করল,
- ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড স্যার, পেসেন্ট আপনার কি হয়?
এই মূহুর্তে সিফাতের কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, ভদ্রতার খাতিরে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেয়ে সিফাত আস্তে করে বলল,
- আমার ওয়াইফ, মিসেস সিফাত মেহবুব।
সিফাতের মুখে ওয়াইফ কথাটা শুনে মেয়েটি বিস্মিত গলায় বলে উঠল,
- স্যার আপনি বিয়ে করে নিয়েছেন, কবে? কোনো নিউজে তো আপনার বিয়ের কিছু দেখলাম না?
সিফাত এবার প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলল,
- হেই লিসেন, আমি তোমাকে সব উত্তর দিতে বাধ্য নয়।
সিফাতের এমন খরা কথায় মেয়েটি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আই এম সরি স্যার,
সিফাত আর কোনো কথা না বলে হসপিটালের বারান্দার চেয়ারে বসে পড়ল।
রিসিপশনের মেয়েটি মনে মনে বলল,
- স্যার বোধহয় উনার ওয়াইফ কে বেশিই ভালবাসেন? উনার বিদধস্ত চেহারায়ই প্রকাশ করছে উনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন?
সিফাতের দু পাশে ওর মম, পাপা বসে আছেন, সিফাত দু হাঁটোর উপর দু হাত ঠেকিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। অনিতা কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সোহেল, জিসান, জেনি হসপিটালে আসলো, জেনির হাতে কিছু শুকনো খাবার। কারণ সকালে কেউই নাস্তা করেনি।
জেনি মিসেস ইসাবেলার হাতে খাবার দিয়ে বলল,
- আন্টি তোমরা নাস্তা করে নাও। আমরা তিন জন অল্প কিছু নাস্তা করে এসেছে বাসা থেকে।
মিসেস ইসাবেলা আর জনাব আলী মেহবুব উনারও অল্প নাস্তা করলেন, অনিতার চিন্তায় তাদের গলা দিয়ে খাবার নামছে না। সিফাত কে কিছুতেই খাওয়ানো যাচ্ছে না। তার মুখে শুধু একটাই কথা,
- আমার আনি না খেয়ে আছে, আমি কি করে খাই। আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না, আমি খাবো না।
মিসেস ইসাবেলা সিফাত কে কঠিন গলায় বলে উঠলেন,
- সিফাত তুমি এটা কেন বুঝতে পারছো না, তুমি যদি এখন খাওয়া- দাওয়া বন্ধ করে দাও তাহলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে? তুমিও অসুস্থ হয়ে গেলে আমরা কাকে রেখে কাকে দেখবো? এতো ভেঙে পরলে চলবে না সিফাত তোমাকে শক্ত হতে হবে।
সিফাত মিসেস ইসাবেলার হাত থেকে খাবার গুলো নিয়ে অল্প খেয়ে এক পাশে রেখে দিলো।
জনাব আলী মেহবুব এক নাগারে হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছেন, উনাকে বিষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
উনার এমন চিন্তিত মুখ সোহেলের চোখে পরল, সোহেল দ্রুত হেঁটে জনাব আলী মেহবুবের সামনে এসে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করল,
- পাপা তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? তুমি কি কোনো বিষয় নিয়ে খুব ওয়ারিড?
জনাব আলী মেহবুব বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভাবে বললেন,
- হুম, সোহেল আমি একটা বিষয় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
সোহেল শান্ত কন্ঠে বলল,
- কোন বিষয়ে পাপা, আমাকে কি বলা যাবে?
জনাব আলী মেহবুবের চিন্তিত চেহারায় ফুটে উঠল ম্লান হাসি, উনি ম্লান হেসে সোহেল কে বললেন,
- হ্যাঁ, বলা যাবে সোহেল। তেমাদের কে আমার দুশ্চিন্তার কারণ বলবো না তো কাকে বলবো?
সোহেল মৃদু হাসল, তার পাপার কথায়।
জনাব আলী মেহবুব গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
- সোহেল আমার চিন্তা হচ্ছে অনিতার বাবা- মার কথা ভেবে। ওরা যখন ফোন দিবে তখন আমি কি বলে জবাব দেবো? যদি অনিতার এই অবস্থার ওর বাবা- মা জানতে পারে তাহলে পাগল হয়ে যাবে।
অনিতা তাদের খুব আদরের মেয়ে, খুব ভালবাসে তারা অনিতা কে।
জেনি পিছন থেকে বলে উঠল,
- কি আর বলবেন আংকেল যা সত্যি তাই বলবেন।
সোহেল ভ্রু কুঁচকে জেনি কে প্রশ্ন করল,
- কি সত্যি সিস?
জেনি আত্নবিশ্বাসী গলায় বলল,
- অনিতা সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পরে গেছে, এটাই তো সত্য।
সোহেল শক্ত কন্ঠে বলে উঠল,
- তুমি এতো কনফিডেন্সে এর সহিত বলছো কি ভাবে সিস যে অনিতা পা পিছলে পরেছে? অন্য কিছু ও তো হতে পারে?
জেনি কাঠ কাঠ গলায় বলল,
- তা নয় তো কি সোহেল, অন্যকিছু কি হতে যাবে? এক মিনিট সোহেল তাহলে কি তুই অনিতা কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিস?
সোহেল চোখ বড় বড় করে জেনির দিকে তাকালো, তাকিয়ে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলে উঠল,
- হোয়াট, আমি অনিতা কে ধাক্কা দেবো কেন? আর ইউ ক্রেজি সিস?
জেনি ভ্রু নাচিয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
- এতো অবাক হওয়ার মতো কিছু বলিনি সোহেল, এটা অসম্ভব কেনো ব্যাপার না, হতেও তো পারে এই কাজ টা তুই করেছিস? যা এখন আমাদের কাছ থেকে লুকচ্ছিস! তা না হলে অন্য কিছু বলতে তুই কি বুঝাতে চাইছিস?
জেনির এমন কথায় জনাব আলী মেহবুব জেনি কে কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন,
- জেনি তুমি এসব কি বলছো, সোহেল কেন অনিতা কে ধাক্কা দিতে যাবে? অনিতা তো সোহেলের কোনো ক্ষতি করেনি?
জেনি রাগি ভাব নিয়ে বলল,
- ক্ষতি তো করেছে আংকেল, সোহেলকেই জিজ্ঞেস করে দেখেন? বলেই জেনি রেগেমেগে চলে গেল।
সোহেল হতবাক নয়নে চেয়ে আছে জেনির যাওয়ার দিকে।
সেখানে মিসেস ইসাবেলাও এসে উপস্থিত হলেন, তিনি জিজ্ঞেস করলে,
- তোমরা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
জনাব আলী মেহবুব মিসেস ইসাবেলার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে, গমগম গলায় সোহেলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,
- সোহেল জেনি কি বলে গেলও, সত্যিই কি অনিতা তোমার কোনো ক্ষতি করেছে।
সোহেল একটু অপ্রস্তুত গলায় বলল,
- না, পাপা অনিতা আমার কি ক্ষতি করবে? আমি তো আ এটুকুনি বলে সোহেল থেমে গেল।
মিসেস ইসাবেলা কিছু আন্দাজ করতে পারছেন না কি নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি নিরব শ্রোতা হয়ে শুধু শুনে যাচ্ছেন।
জনাব আলী মেহবুব আবারও চাপা রাগ দেখিয়ে বললেন,
- তুমি তো কি সোহেল, বলো?
জনাব আলী মেহবুবের এমন হঠাৎ রাগ দেখে সোহেল খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। খালি গলায় সোহেল একটা ঢুক গিলে ভয় পাওয়া কন্ঠে বলে উঠল,
- পাপা অনিতা কে আমি ভালবাসতাম, অনিতা কানাডায় আসার পরে ওকে দেখে আমার ভালো লেগে যায়।
মিসেস ইসাবেলা এখন ব্যাপার টা বুঝতে পারলেন, তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
- তাহলে সেদিন তুমি আর জেনি অনিতার কথাই বলতে গিয়েছিলে সোহেল?
সোহেল মাথা নিচের দিয়ে ছোট করে উত্তর দিল,
- হ্যাঁ, মম।
জনাব আলী মেহবুব আগের মতোই বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন, গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছেন।
সোহেল তার মম – পাপার নিরবতা দেখে ভয়ে ভয়ে বলল,
- তাই বলে আমি অনিতা ধাক্কা দেইনি পাপা ট্রাস্ট মি? হ্যাঁ, আমি মানছি ভাইয়া অনিতা কে বিয়ে করায় আমার রাগ হয়েছিল, বাট আমি এতো নিচু কাজ করতে পারি না।
জনাব আলী মেহবুব নিরবতা ভেঙে বলে উঠলেন, - সোহেল ছোট বেলা থেকেই তোমার একটা অভ্যাস ছিল, সিফাত যা পছন্দ করতো তা তুমিও পছন্দ করতে।
যদি সে জিনিস একটা থাকতো তাহলে সিফাত তোমাকে দিয়ে দিতো, কেন জানো তোমাকে খুশি রাখার জন্য। সিফাত তোমাদের দু ভাইকেই খুব ভালবাসে।
সিফাতের সব কিছু তে ভাগ বসাতে বসাতে এখন তার ভালবাসার উপরও ভাগ বসালে?
মিসেস ইসাবেলা তীব্র রাগি গলায় বললেন,
- আসলে এটা সোহেলের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে, সিফাতের সব কিছুতে ভাগ বসানো।
সোহেল কোনো উত্তর দিচ্ছে না, তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সবাই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে কারো মুখে কোনো কথা নেই।
আচমকা ভাবে সেখানে সিফাতের কন্ঠ শুনতে পেয়ে সবাই যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল।
মিসেস ইসাবেলা ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
- সিফাত তুমি কখন এলে? সিফাতের চোখ মুখ রক্তিম বর্ণ হয়ে আছে, যার থেকে বুঝা যাচ্ছে সিফাত ভয়ানক রেগে ফুঁসছে।
অনেক্ষণ হলো এসেছি মম, এখানে না এলে তো জানতেও পারতাম না সোহেলের গোপন কথা।
সিফাত খানিক নিরব থেকে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে তাকল, কিছু সময় পরে ফ্লোরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সোহেলের দিকে অগ্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
- সোহেল তুই আনি কে পছন্দ করিস আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু তুই ওকে না পেয়ে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছিস? আমার উপরে প্রতিশোধ নিতে?
সিফাতের রাগ দেখে জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস ইসাবেলা ভয় পাচ্ছেন, তারা ভাবছেন এখন যদি সিফাত উল্টা – পাল্টা কোনো কান্ড করে ফেলে?
সোহেলও ভয় পাচ্ছে সিফাতের রাগ কে, তারপরও মনে সাহস এনে বলল, - ভাইয়া তুমি না জেনে আমাকে দোষ দিতে পারো না। আমি এরকম নিচুস্তরের কাজ করতে পারি এটা তুমি বিশ্বাস করো? হাজার হোক আমি তোমার ভাই সোহেল মেহবুব, আমার মন মানসিকতা এতো খারাপ না ভাইয়া।
জেনি দূরে আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছে, মুখে তার একখানা শয়তানি হাসি ঝুলে আছে।
সিফাত হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে কোনো জবাব দিল না।
এর মাঝে একজন ডক্টর এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
- মি মেহবুব শুনুন মিসেস মেহবুবের অবস্থা ভালো না উনার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত করণ হয়েছে। এখন আপনার ওয়াইফের রক্তের প্রয়োজন, এই মূহুর্তে আমাদের কাছে O নেগেটিভ রক্ত নেই। আর যা ও পেয়েছি সেগুলো বেশি ভালো না, পরবর্তীতে মিসেস মেহবুব এর শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
সিফাত ডক্টর এর কথা শুনে উত্তেজিত গলায় বলল,
- ডক্টর প্লিজ যে কোনো ভাবে রক্তের ব্যবস্থা করুন, যত টাকা লাগে আমি দেবো।
ডক্টর নিরাশ কন্ঠে বললেন, - মি মেহবুব কুল ডাউন, আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোথাও ভালো রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
সোহেল ডক্টর এর দিকে তাকিয়ে বলল,
- ডক্টর আমার ব্লাডগ্রুপ O নেগেটিভ, আমি ব্লাড দেবো অনিতা কে।
ডক্টর মৃদু হেসে শান্ত গলায় বললেন,
- থ্যানক্স মাই সন, তুমি আমাকে চিন্তা মুক্ত করলে, কাম উইথ মি।
সোহেল ডক্টর এর সাথে চলে গেলো, সিফাত আর তার মম- পাপা সোহেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন।
সিফাত হসপিটালের লম্বা বারান্দায় চেয়ারে বসে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেওয়ালের দিকে। মিসেস ইসাবেলা, জনাব আলী মেহবুব চিন্তিত ভাবে বসে আছেন সিফাতের পাশে।
সিফাত স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও তার চোখ মুখ বলছে সে কোনো গভীর চিন্তা করছে। বা কোনো সমীকরণ মিলাচ্ছে।
১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর ডক্টর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলেন। ডক্টর সিফাতের সামনে আসতেই সিফাত সহ তার মম – পাপা ও দাঁড়িয়ে গেলেন।
সিফাত ভয়ার্ত কন্ঠে ডক্টর কে জিজ্ঞেস করল,
- ডক্টর আমার ওয়াইফ এখন কেমন আছে?
ডক্টর বললেন,
- মি মেহবুব আপনার ওয়াইফের অপারেশন সাকসেসফুলি হয়েছে। কিন্তু এখনও মিসেস মেহবুব বিপদমুক্ত না, আগামি ৭ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে হয়তো উনি অতীত ভুলে যাবেন নয়তো কোমায় চলে যেতে পারেন। কারণ উনার মাথার আঘাত টা খুব গুরুতর ভাবে পেয়েছেন।
গড কে ডাকেন গড চাইলে সব কিছুই সম্ভব, বলেই ডক্টর চলে গেলেন।
সিফাত ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল, চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখছে। মিসেস ইসাবেলা কান্না শুরু করলেন, জনাব আলী মেহবুব মাথায় হাত দিয়ে অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন।
পার্ট :২৪
মিসেস ইসাবেলা কান্না শুরু করলেন, জনাব আলী মেহবুব মাথায় হাত দিয়ে অপর পাশের চেয়ারে বসে পড়লেন।
সিফাতের ভেতর বুকফাটা যন্ত্রণা হচ্ছে, সিফাতের নিরবে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। তার ফর্সা মুখকানা লাল হয়ে আছে, কান্না করার ফলে।
দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছে সোহেল, জিসান।
জিসানের চোখে জল টলমল করছে হয়তো এখনই বেরিয়ে যাবে। জিসান কখনো সিফাত কে কাঁদতে দেখেনি, তার ভাইয়া কাঁদছে এটা জিসানের মনে বিষণ ভাবে পিড়া দিচ্ছে। জিসান দ্রুত চলে গেলো সেখান থেকে।
সোহেল হসপিটালের বারান্দার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সোহেল উদাস মনে ভাবছে,
- সিস আমাকে হঠাৎ ফাঁসাতে চাইছে কেনো? আমি তো সিসের কোনো ক্ষতি করিনি? নিজের বোনের মতো ভাবতাম, আর সেই কি না আজ আমায় ফাঁসাতে চাইছে, কেন? সোহেলের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল, তাহলে কি সিস কোনো ভাবে জড়িত অনিতার আচমকা পা পিছলে পড়ে যাওয়ায়? সোহেল আর কিছু ভাবতে পারছে না, তার মাথা ঝিমঝিম করছে, শরীরও দূর্বল লাগছে তাই সে বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল।
শুনশান নীরবতার মাঝে জনাব আলী মেহবুবের ফোন বেজে উঠল, উনি ফোন বের করেই আঁতকে উঠে বললেন,
- ইসাবেলা অনিতার মা কল করেছে, এখন কি বলব?
মিসেস ইসাবেলা চোখ মুছে ধীর কন্ঠে বললেন,
- আগে ফোন রিসিভ করুন, দেখুন না কি বলে?
জনাব আলী মেহবুব কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলেন। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে অনিতার মা শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
- আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া, তুমি কেমন আছো?
জনাব আলী মেহবুব কন্ঠ স্বাভাকি করে বললেন,
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস আলেয়া?
অনিতার মা হাল্কা হেসে বললেন,
- আমি ভালো আছি ভাইয়া। ভাইয়া অনিতা ফোন রিসিভ করছে না কেন, অনেক বার ট্রাই করলাম।
জনাব আলী মেহবুব থতমত গলায় বলে উঠলেন,
- অনিতা কে একটু ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসেছি আলেয়া।
অনিতার মা মিসেস আলেয়া আতংকিত হওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
- ভাইয়া আমার অনিতার কি হয়েছে, ও ঠিক আছে তো ভাইয়া?
জনাব আলী মেহবুব শান্তনাস্বরে বললেন,
- চিন্তা করিস না আলেয়া, ও মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছে। ডক্টর বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।
মিসেস আলেয়া এবার কেঁদেই দিলেন, কান্না করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন,
- ভাইয়া অনিতার বেশি লাগেনি তো, কি ভাবে মাথায় আঘাত পেলো?
মিসেস ইসাবেলা ফোন জনাব আলী মেহবুবের কাছ থেকে নিয়ে নরম গলায় বললেন,
- তুমি এতো চিন্তা করো না তো আলেয়া, আমরা আছি তো। অনিতার বেশি লাগেনি, ডক্টর ওর ট্রিটমেন্ট করছে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি খামোকা দুশ্চিন্তা করো না, অনিতা ডক্টর এর চেম্বার থেকে বের হলে তোমাকে ফোন দিবনে।
মিসেস আলেয়া কান্না করা গলায় বললেন,
- ভাবি তোমরা সবাই আমার মেয়েটা কে দেখে রেখো প্লিজ।
মিসেস ইসাবেলা ভরসা দিয়ে বললেন,
- তুমি কোনো চিন্তা করো না, অনিতা তো আমারও মেয়ে তাই না? ওর কোনো অযত্ন আমি হতে দিব না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো, এখন রাখছি বলেই মিসেস ইসাবেলা লাইন কেটে দিলেন।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস ইসাবেলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছেন, তারা আদৌও জানেন না অনিতার কি হবে? তারা শুধু মিসেস আলেয়া কে মিথ্যা শান্ত না দিলেন।
সিফাত সব কিছুই শুনছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না, সিফাতের চোখ গুলো বার বার ভিজে আসছে।
জেনি খানিক দূরে একটা চেয়ারে বসে ফোনে কিছু একটা করছে আর আড় চোখে সবাই কে দেখছে।
মনে মনে সে পৈশাচিক আনন্দ বোধ করছে, জেনি শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল,
- আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম এতো দিন মেহবুব পরিবার আমার সামনে বসে কাঁদুক। আমাকে বিয়ে না করার এই শাস্তি মি সিফাত মেহবুব। বলে ছিলাম না আমাকে চড় দেওয়ার শাস্তি, আমার সাথে মিসবিহেভ করার শাস্তি তোমার ভালোবাসার আনি পাবে? মিললো তো আমার কথা সিফাত বেবি? বলেই আরেক বার শয়তানি হাসি দিলো জেনি। তুমি ভুলে গিয়েছিলে মি সিফাত মেহবুব তুমি কার সাথে লাগতে এসেছিলে, জেনিফার সাথে লাগার শাস্তি এরকমই হয়। এখন এই মেয়েটা মরে গেলেই বাঁচি, আমার রাস্তার কাটা সরে যাবে।
সন্ধ্যা পেড়িয়ে গেছে সিফাত এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছে। অনিতা কে একটা কেবিনে সিফ্ট করা হয়েছে, কেবিনের কাচের জানালা দিয়ে সিফাত মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে দেখছে বাহির থেকে অনিতার জ্ঞান ফিরছে কি না?
সিফাতের কাছে মনে হচ্ছে সময় পেরচ্ছে না। প্রত্যেক সেকেন্ড কে মনে হচ্ছে মিনিটের সমান, মিনিট গুলো কে মনে হচ্ছে ঘন্টার সমান, ঘন্টা কে মনে হচ্ছে এক দিনের সমান।
আমাদের সকলের কাছেই এমনটা মনে হয় ভালো সময় গুলো বোধ হয় একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, আর খারাপ সময় গুলো যেন যেতেই চায় না বা খুব দেড়িতে পার হয়।
সিফাতের কাছে আজ এমনটাই লাগছে, আর মাত্র ১ ঘন্টা সময় বাকি তারপরই বুঝা যাবে অনিতার কি হবে।
এই ১ ঘন্টা সময় যেন সিফাত কে গলায় বিঁধে থাকা কাটার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে। সিফাত বার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, সবাই বসে আছে অনিতার জ্ঞান ফিরবার অপেক্ষায়।
দুপুরে সিফাত কিচ্ছু খায়নি, তাকে জোর করেও কিছু মুখে দেওয়াতে পারলো না কেউ। যে ই সিফাত কে খাওয়ার রিকুয়েস্ট করেছে সিফাত সাফ সাফ জানিয়েছে,
- আগে আমার আনির জ্ঞান ফিরুক, তারপর খাবো। আনিও অনেক্ষণ হলো কিছু খায়নি। সিফাত যেভাবে বাসা থেকে এসেছিল ওভাবেই আছে। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সিফাতের চোখ মুখের নাজেহাল অবস্থা।
জেনি সিফাতের কথা শুনে মনে মনে ব্যঙ্গ করে বলে উঠল,
- আদৌও অনিতা বাঁচবে কি না সেটাই জানেনা, আর উনি বসে আছেন অনিতার জ্ঞান ফিরলে খাবেন। যত্তসব আধিক্যেতা গা জ্বলে যায় এসব ন্যাকামি দেখলে।
জেনি কপাল কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ডহং। জেনি চাচ্ছে অনিতা একবারে মরে যাক, অনিতা বেঁচে থাকলে সে সিফাত কে পাবে না।
৭ ঘন্টা হতেই সিফাত তাড়াহুড়ো করে ডক্টর কে ডাক দিলো।
ডক্টর একা অনিতার কেবিনে ঢুকলেন, সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু অনিতার কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না, ডক্টর কিছু সময় পর বাহিরে আসলেন।
ডক্টর বেরোতেই সিফাত ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
- ডক্টর আমার ওয়াইফের জ্ঞান ফিরেছে?
ডক্টর নিচুস্বরে বললেন,
- মি মেহবুব আরো কিছু সময় ওয়েট করুন, হয়তো জ্ঞান ফিরতে মিসেস মেহবুবের খানিক লেট হতে পারে? আশা করছি উনার জ্ঞান ফিরবে, উনার লক্ষণ ভালো আছে।
সিফাত জড়ানো গলায় বলল, - কেন ডক্টর আরো লেট হবে কেন? আমার আনি ঠিক হবে তো?
জনাব আলী মেহবুব সিফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,
- সিফাত তুমি শান্ত হও, অনিতার জ্ঞান ফিরতে লেট হবে ডক্টর তো সেটাই বললেন।
সিফাত উত্তেজিত হয়ে ডক্টর কে বলল,
- ডক্টর আমাকে প্লিজ আনির কাছে যেতে দিন, আমি একবার ওকে দেখে আসব প্লিজ। না করবেন না ডক্টর রিকুয়েষ্ট করছি আপনার কাছে।
ডক্টর সিফাতের এমন কাকুতি ফেলতে পারলেন না, তিনি শান্ত কন্ঠে বললেন,
- ঠিক আছে মি মেহবুব আপনি একা ভেতরে যান, আর হ্যাঁ মনে রাখবেন পেসেন্ট এর কাছে গিয়ে জোরে কোনো ডাকা ডাকি করবেন না। এতে পেসেন্ট এর ক্ষতি হতে পারে।
সিফাত ডক্টর কে ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।
কেবিনে প্রবেশ করতেই সিফাতের বুকের ভেতর ধুকধুক শুরু করেছে, এক অজানা ভয়ে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটার মতো শব্দ তুলছে।
সিফাত ধীর গতিতে হেঁটে অনিতার বেডের পাশে যেয়ে দাঁড়াল, অনিতার মুখখানা কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে সিফাতের কাছে। মাথায় ব্যন্ডেজ করা, মুখে অক্সিজেন লাগানো।
সিফাত আস্তে করে বেডের পাশে থাকা চেয়ারে বসল।
অনেক সময় ধরে সে তাকিয়ে আছে অনিতার মুখের দিকে, একসময় তার চোখ দিয়ে অঝরে জল গড়িয়ে পরতে লাগল। অনিতার একটা হাত সিফাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে কয়েক বার চুমু খেল।
সিফাত ক্ষীণ আওয়াজে অনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আনি তোমার এ অবস্থার জন্য আমি দায়ী, আমি তোমাকে দেখে রাখতে পারিনি। আনি আমি তোমার ব্যর্থ স্বামী, যে তার স্ত্রী খেয়াল নিতে পারে না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও আনি। আমি তোমাকে সত্যিই খুব বেশি ভালবাসি আনি।
তোমার যদি কিছু হয় আনি আমি হয়তো বাঁচব না, নয়তো পাগল হয়ে যাবো। সিফাতের চোখ থেকে কয়েক দন্ড জল গড়িয়ে পড়ল অনিতার হাতে।
সিফাত কান্না জড়ানো গলায় আবার বলতে শুরু করল,
- তোমাকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে পেয়েছি আনি, এখন যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও তা আমার জন্য মেনে নেওয়া পসিবল না।
তার থেকে আমার মৃত্যু শ্রেয় হবে।
অনিতার হাত অল্প নড়েচড়ে উঠল, অনিতা অনুভব করছে তার হাত ধরে কেউ বসে আছে।
অনিতা পিটপিট চোখে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কেউ কি সত্যি বসে আছে?
সিফাত মাথা নিচের দিকে রেখে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ চোখের জল ফেলছে।
অনিতা পিটপিট চোখে তাকিয়ে সিফাত কে দেখল, অনিতা বুঝতে পারছে সিফাত কাঁদছে।
অনিতা মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে নিয়ে বসা গলায় আস্তে করে বলল,
- আপনি কাঁদছেন কেন, আমি ঠিক আছি তো।
অনিতার গলা শুনে সিফাত চমকে উঠল, সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার অনিতার জ্ঞান ফিরেছে।
মাথা তুলে সিফাত অনিতার দিকে তাকাতেই অনিতা ম্লান হাসল।
সিফাত যেন তার হারানো প্রাণ ফিরে পেল, তার আঁটকানো নিঃশ্বাস স্বস্তির ভাবে ছাড়ল।
সিফাত অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অনিতার দিকে মনে হচ্ছে যেন শত যুগ পরে দেখা হয়েছে দু জনার।
অনিতাও শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাদের দুজনের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।
সিফাত বসা থেকে উঠে অনিতার ব্যন্ডেজ করা কপালে অজস্র চুমু এঁকে দিল, অনিতা অনুভব করছে সিফাতের ভালবাসা গুলো।
সিফাত দেড়ি না করে ডক্টর কে ডাক দিলো, ডক্টর তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে দেখলেন অনিতার জ্ঞান ফিরেছে।
ডক্টর শান্তির নিঃশ্বাস পেলে বললেন,
- মি মেহবুব আপনার ওয়াইফ মিসেস মেহবুবের ভাগ্য উনাকে ফেবার করেছে, আর গড আপনাদের সহায় ছিলেন। নচেৎ এরকম পেসেন্ট ইমপ্রুভ করতে অনেক দিন লেগে যায়।
ডক্টর চেকাপ করে দেখলেন অনিতার সব কিছু ঠিকঠাক আছে, ডক্টর চলে গেলেন।
এরপর ভেতরে মিসেস ইসাবেলা, জনাব আলী মেহবুব আর জিসান প্রবেশ করলেন।
জেনি অনিতার জ্ঞান ফিরায় চিন্তিত হয়ে পড়ল, অনিতা যদি থাকে দেখে থাকে তাহলে তো সিফাত কে বলে দেবে।
সিফাত কি করবে তা জেনি মনে করতেই তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। আবার মনে মনে নিজেকে শান্তনা দিলো, নাহ আমাকে অনিতা দেখতে পায়নি আমি তো পিছনে ছিলাম দেখবে কি করে?
মেয়েটার কি পুঁটি মাছের প্রাণ এতো বড় আঘাতের পরেও বেঁচে গেল কি করে? ইচ্ছে তো করছে এখন গিয়ে গলা টিপে মেরে ফেলি।
মিসেস ইসাবেলা গিয়ে অনিতার পাশে বসে কান্না করছেন আর বলছেন,
- মামনি তুমি পা পিছলে পড়ে গেলে কি ভাবে? তুমি এতো কেয়ারলেস হয়ে চলা ফেরা করো কেন মামনি?
জনাব আলী মেহবুব ধমকের সুরে মিসেস ইসাবেলা কে বলে উঠলেন,
- ইসাবেলা কি শুরু করলে, এখন এতো প্রশ্ন করো নাতো। সবে মাত্র মেয়েটার জ্ঞান ফিরলো ওকে রেস্ট করতে দাও।
মিসেস ইসাবেলার দিকে অনিতা তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না, অনিতার মনেও হাজার প্রশ্ন ধলা বেঁধে আছে, যার উত্তর সে মিলাতে পারছে না।
জিসান অনিতার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
- আপু এখন কেমন লাগছে?
অনিতা আস্তে করে উত্তর দিল,
- একটু ব্যাটার লাগছে জিসান। অনিতা চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল সবাই আছে শুধু সোহেল, জেনি বাদে। তার খটকা লাগল ওদের দুজন কে না দেখে।
অনিতার ভাবনার মাঝে জেনি কেবিনে ঢুকল, ঢুকেই হাল্কা হেসে জিজ্ঞেস করল, - অনিতা কেমন ফীল করছো, শরীর ঠিক আছে তো?
অনিতা চোখ বন্ধ করে দূর্বল গলায় বলল,
- হ্যাঁ, জেনি খানিকটা ব্যাটার ফীল করছি।
ডক্টর এসে অনিতা কে কিছু খাওয়ানোর কথা বলে মেডিসিন খাওয়াতে বলে গেলেন।
সিফাত একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল অনিতা ইশারা করে ডাক দিল কাছে আসার জন্য।
সিফাত দ্রুত কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,
- অনিতা তোমার কি মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে, ডক্টর কে ডাকব?
অনিতা ম্লান হেসে আস্তে করে বলল,
- না, না আমার যন্ত্রণা হচ্ছে না, আমি ডেকেছি এরজন্য আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। চোখে মুখের কি হাল করেছেন সে দিকে খেয়াল করেছেন?
সিফাত অনিতার কথায় শুকনো হাসি দিয়ে বলে উঠল,
- তুমি তো আছো আমার খেয়াল রাখার জন্য তাই না বউ? অনিতা সিফাতের কথায় লজ্জা মাখা হাসি দিল কিছু বলল না।
সিফাতও হাসল অনিতার হাসি দেখে, অনিতা কে বলল,
- হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না, এখন তুমি অসুস্থ চাইলেও আদর করতে পারব না। বলেই চোখ টিপ মারল। অসুস্থ চেহারায় ও অনিতা লজ্জায় লাল রাঙা হয়ে উঠল সিফাতের কথায়।
সিফাত অনিতার কপালে আরো কয়েকটা ভালবাসা পরশ এঁকে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
সবাই বাসায় চলে গেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য, আর ডিনার করে সবাই আবার আসবে। সিফাত কে রেখে গেছেন অনিতার পাশে।
কিছুক্ষণ পর সিফাত ফ্রেশ হয়ে এসে অনিতা কে স্যুপ খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল।
অনিতা মেডিসিন খাবে না বলে কান্না করল, সিফাত অনেক বকাঝকা করে মেডিসিন খাইয়ে দিল।
অনিতা এক দৃষ্টিতে সিফাতের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
- আপনার বুকে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে করছে, প্লিজ একবার আমাকে বুকে নিবেন?
সিফাত অবাক হলো সাথে খুশিও লাগছে এই প্রথম অনিতা তাকে বুকে নেওয়ার জন্য বলছে, নিজের ইচ্ছা থেকে। কিন্তু সিফাতের খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না, যখন মনে পড়ল অনিতার তো মাথায় আঘাত পেয়েছে ওকে বুকে নেওয়া যাবে না। বেশি নড়াচড়া করলে মাথার ক্ষতি হতে পারে।
সিফাত অনিতার হাত ধরে আদুরে গলায় বলল,
- শুনো আমার আদুরে পিচ্চি বউ তোমার তো মাথায় ব্যাথা পেয়েছ এখন বেশি নড়াচড়া করলে প্রবলেম হবে। তুমি সুস্থ হয়ে গেলে যত ইচ্ছা আমার বুকে মাথা রাখবে, সিফাত হাত দিয়ে তার বুকের বা পাশ দেখিয়ে বলল, এই জায়গাটা তোমার আনি, আজীবন তোমারি থাকবে। মন খারাপ করো না প্লিজ।
অনিতা কিছুটা মন খারাপ করে বলল,
- ঠিক আছে, তাহলে আমার পাশে শুয়ে থাকেন।
সিফাত হেসে অনিতার পাশে বেডে শুয়ে গেল। সিফাত অনিতাকে জড়িয়ে ধরে গলার এক সাইডে মুখ গুজে নিল। অনিতা ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না মাথায় অল্প ব্যাথা করছে। সিফাত কে তা বুঝতে না দিয়ে লজ্জা পাওয়া কন্ঠে বলল,
- এই এরকম করছেন কেন? আমার সুড়সুড়ি লাগছে তো। সিফাত মুখ গুজে রেখেই বলল,
- লাগুক এটা তোমার শাস্তি, আমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য। অনিতা হেসে ধীর গলায় আবার বলে উঠল,
- কেউ এসে পড়বে তো, তখন আপনার তো লজ্জা লাগবে না, লাগবে আমার। সিফাত গম্ভীর কণ্ঠে অনিতা কে বলল,
- আচ্ছা আনি আমি ভাবছি ফুফি আর আংকেল কে ব্যাপার টা জানিয়ে দেওয়া উচিত।
অনিতা বুঝতে পারছে না কোন ব্যাপার এর কথা বলছে, আস্তে করে প্রশ্ন করল,
- কোন ব্যাপারের কথা বলছেন? আমার মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা?
সিফাত বলল,
- না। অনিতা সিফাত কে কিছু বলতে না দিয়ে কিছুটা উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন করল,
- মা- বাবা কি জানেন আমার মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা, আপনারা কি ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন?
সিফাত শান্ত কন্ঠে বলে উঠল,
- এতো উত্তেজিত হইওনা তো, ফুফি কল করে ছিলেন পাপা কে। তুমি কল রিসিভ করছো না দেখে, পাপা বলেছেন তুমি মাথায় অল্প ব্যাথা পেয়েছ তোমাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসেছেন। পাপা ব্যাপার টা এতো গাড় ভাবে ফুফি কে বলেন নি, উনি চিন্তা করবেন বলে।
এখন তুমি অনেক সুস্থ আছো পাপা ফোন করে জানিয়েছেন।
অনিতা স্বস্থীর শ্বাস ফেলে বলল,
- পাপা একদম ঠিক করেছেন, মা – বাবা শুনলে অস্থির হয়ে পড়বেন। অযতাই চিন্তা করবেন।
সিফাত গলায় মুখ গুজেই গম্ভীর গলায় বলল,
- আনি তুমি পড়লে কি ভাবে? আর সকালে আমাকে ঘুম থেকে না উঠিয়ে নিচে কেন যাচ্ছিলে?
অনিতা মনে মনে ভাবছে আমি কি উনাকে সত্যি কথা বলে দিবো, না কি পরে বলবো?
সিফাত খানিক বিরক্তি নিয়ে বলল,
- কি হলো আনি উত্তর দাও?
অনিতা ভয়ে ভয়ে বলল
- আমি যখনি সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাব তখন কেউ অনিতা কথা সম্পূর্ণ করতে পারলো না সোহেল কেবিনে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। অনিতা সোহেল কে দেখেই থেমে গেল।
সোহেল অপ্রস্তুত বোধ করলো সিফাত, অনিতা কে এ ভাবে দেখে।
সোহেল চলে যেতে নিলেই অনিতা ক্ষীণ আওয়াজে ডাক দিল,
- সোহেল ভাইয়া চলে যাচ্ছেন কেন, ভেতরে আসুন।
সোহেল এসেছে দেখেই সিফাত দেড়ি না করে শুয়া থেকে উঠে বসল।
পার্ট : ২৫
সোহেল ভাইয়া চলে যাচ্ছেন কেন, ভেতরে আসুন।
সোহেল এসেছে দেখেই সিফাত দেড়ি না করে শুয়া থেকে উঠে বসল।
সোহেল ধীর পায়ে অনিতার বেডের দিকে এগিয়ে এসে অনিতা কে বলল,
- প্রথমে আমি সরি অনিতা, আমি তোমার জ্ঞান ফিরছে যখন দেখতে আসিনি, আমি বাসায় ছিলাম।
অনিতা লজ্জায় সোহেলের দিকে তাকাতে পারছে না কারণ সোহেল, সিফাত আর তাকে ওভাবে দেখেছে। অনিতা নিচের দিকে চোখ রেখেই আস্তে করে বলল,
- ইট স ওকে সোহেল ভাইয়া এখানে সরি বলার কি আছে? আমি মাইন্ড করিনি ভাইয়া।
সিফাত বেড থেকে পা নামিয়ে বসে সোহেলের উদ্দেশ্য বলল,
- সোহেল দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস, তর শরীর ঠিক আছে?
সোহেল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
- হ্যাঁ, ভাইয়া একটু ব্যাটার ফীল করছি। সোহেল অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- অনিতা তোমার শরীর এখন কেমন লাগছে, মাথায় কি কোনো ব্যাথা করছে?
অনিতা মৃদু গলায় বলে উঠল,
- মাথায় কোনো ব্যাথা করছে না, শরীর ও অনেকটাই ভালো লাগছে।
অনিতা সোহেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
- সোহেল ভাইয়া আপনার কি কিছু হয়েছিল? উনি না জিজ্ঞেস করলেন আপনার শরীরের কথা?
সোহেল কিছু উত্তর দিচ্ছে না দেখে সিফাত বলে উঠল,
- আনি তোমার শরীরে রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল, সোহেল তোমাকে রক্ত দিয়েছে।
অনিতা কৃতজ্ঞতার সুরে সোহেল কে বলল,
- সোহেল ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ দিবনা, ধন্যবাদ টা আপনার এই উপকারের জন্য অনেক ছোট হয়ে যাবে। আমি সারা জীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব, আপনার এই উপকার আমার আজীবন মনে থাকবে।
সিফাত ঠান্ডা গলায় অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- আনি তুমি একা শুধু কৃতজ্ঞ না, আমিও সোহেলের কাছে অনেক ঋণী হয়ে গেলাম। সোহেল যদি ঠিক সময় তোমায় রক্ত না দিতো তাহলে যে, কি হতো আল্লাহই ভালো জানেন?
সোহেল অবাক হলো সিফাতের এমন নরমাল বিহেভ এ।
সোহেল মনে মনে ভাবছে,
- তাহলে কি অনিতা পা পিছলে পড়ে ছিল সিঁড়ি থেকে? আর সত্যি টা ভাইয়া কে এখন অনিতা বলেছে হয়তো, তাইতো সত্যি জেনে ভাইয়া এমন নরমাল বিহেভ করছে। সোহেল শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, যাক ভালেই হলো ভাইয়ার কাছে ব্যাপার টা ক্লিয়ার হয়ে, নয়তো আমি দোষী বনে যেতাম সকলের কাছে?
সোহেল কে এক ধ্যানে ভাবতে দেখে সিফাত ডাক দিয়ে বলল,
- কি রে সোহেল কি এতো ভাবছিস আনমনা হয়ে?
কিছু লাগবে, লাগলে বল তর ভাইয়া তো আছে?
সোহেল ধাতস্থ গলায় বলে উঠল,
- ক কই কিছু ভাবছি না ভাইয়া। আমার কিছু লাগবে না, তবে একটা কথা বলে রাখতে চাই।
সিফাত অনিতা দুজনেই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে সোহেল কি কথা বলে রাখতে চায় সেটা শুনার জন্য।
সোহেল বলছে না দেখে সিফাত তাড়া দেওয়া গলায় বলল,
- আরে ভাই বলছিস না কেন বল, আমরা দুজনে শুনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি, বল।
সোহেল কেশে গলা পরিষ্কার করে আস্তে করে বলল,
- ভাইয়া অনিতা যখন পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে যাবে তখন আমরা সবাই একসাথে কোথাও ঘুরতে যাবো।
সিফাত হাল্কা হেসে বলে উঠল,
- ওহ্, এই ব্যাপার ঠিক আছে, আনি আগে সুস্থ হয়ে যাক পরে কোথাও ঘুরতে যাবনে।
সোহেল হেসে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
অনিতা চোখ বন্ধ করে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।
অনিতা চোখ বন্ধ করে আছে দেখে সিফাত আস্তে করে ডাক দিল,
- এই আনি ঘুমিয়ে গেছো নাকি, মাথায় কোনো যন্ত্রণা করছে নাতো?
সিফাতের ডাকে অনিতার ভাবনায় ছেদ পড়ল, অনিতা চোখ খুলে তাকাল।
সিফাত অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- বাসায় কি না করে দেবো এখন আর তাদের আসতে হবে না? রাত তো অনেক হয়েছে আমি মনে করি রাতে না আসাই ভালো। মম- পাপার কষ্ট হয়ে যাবে।
অনিতা ধীর কন্ঠে বলল,
- হ্যাঁ, সেটাই করুন, সকালে আসতে বলেন।
সিফাত ফোন করে না করে দিলো বাসায়, সকালে আসার জন্য বলে দিল।
সিফাত আবার শুয়ে পড়ল অনিতার পাশে, অনিতা আগের মতো চোখ বন্ধ করে রইল।
সিফাত অনিতার গলায় মুখ গুজে নিল, অনিতা খানিক শিউরে ওঠে বলল,
- এই আমার সুড়সুড়ি লাগে তো, আপনার তো কোনো লাজ লজ্জার বালাই নেই। সোহেল ভাইয়া এ অবস্থায় আগে দেখে গেলেন। লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছিলাম না, বলে ছিলাম এরকম করবেন না কেউ এসে যাবে।
সিফাত আরো গভীর ভাবে মুখ গুজে বলল,
- এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমি আমার বউয়ের পাশে শুয়ে আছি এতে দেখেছে বলে লজ্জা পেতে হবে কেন? তোমার তো যা লজ্জা দেখছি আনি, তাতে বুঝা যাচ্ছে আমি কখনো বাবা হতে পারব না?
সিফাতের এমন কথায় অনিতা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।
সিফাত না তাকিয়েই বুঝতে পারছে অনিতা লজ্জা পাচ্ছে, সিফাত অনিতার উদ্দেশ্য মুচকি হেসে বলল,
- হয়েছে লজ্জার রাণী আর লজ্জা পেতে হবে না, ঘুমিয়ে পড়ো।
অনিতাও হেসে সিফাতের হাতের উপর তার হাত রেখে কিছুক্ষণ বাদেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল।
অনিতা ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে সিফাত শুয়া থেকে উঠে বসল।
সিফাত অনিতার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
- মায়াকুমারী আমি খানিক হলেও আন্দাজ করতে পারছি তোমার সাথে কেউ ইচ্ছা করে এটা করেছে।
শুধু এখন অপেক্ষায় আছি তুমি সুস্থ হয়ে যাও, তোমার কাছ থেকে সত্যি টা কি জেনে নিবো।
সিফাত রক্তচুক্ষু করে বলল, সিফাত মেহবুবের কলিজায় হাত দেওয়ার পরিণতি খুব ভয়ংকর হবে।
সে যেই হোক তাকে আমি ছেড়ে দিব না।
সকালে অনিতার ঘুম ভেঙে দেখতে পেলো সিফাত তার পাশে নেই। অনিতা চিন্তিত ভাবে মুখ করে রইল।
একটু পরই সিফাত নাস্তা নিয়ে কেবিনে ঢুকল, সিফাত কে দেখে অনিতা তাকিয়ে তাকল কিছু বলল না।
সিফাত অনিতার দিকে এগিয়ে হাল্কা হেসে বলে উঠল,
- গুড মর্নিং আনি, ঘুম কেমন হলো?
অনিতা চোখ জোড়া বন্ধ করে মৃদুস্বরে বলল,
- হুম, ভালো হয়েছে।
সিফাত বুঝতে পারছে না অনিতা চোখ বন্ধ করে আছে কেন?
সে গিয়ে অনিতার সামনে চেয়ার নিয়ে বসল, অনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অনিতার কপালে চুমু এঁকে দিল।
অনিতা মুচকি হাসল, চোখ বন্ধ রেখেই অভিমানী কন্ঠে বলল,
- আপনি কোথায় গিয়েছিলেন এই সকালে, আমাকে একা রেখে?
সিফাত বাঁকা হেসে বলে উঠল,
- আমাকে মিস করছিলে বউ? নাকি আমার আদর কে, কোনটা?
অনিতা লজ্জা মিশ্রিত গলায় বলল,
- কোনোটাই না, আমার চিন্তা লাগছিল এই সকালে না দেখে।
সিফাত হেসে বলল,
- বুঝতে পারছি কেমন চিন্তা হচ্ছিল সবই আমার আদর পাওয়ার বাহানা।
অনিতা মুখ গুমড়া করে বলল,
- হ্যাঁ সত্যিই আপনার জন্য আমার চিন্তা হচ্ছিল আমার পাশে না দেখে।
সিফাত অনিতার মাথার পাশে বসে শান্ত গলায় বলল,
- দূর পাগলি আমার জন্য এতো চিন্তা করো না তো, আমি ছোট নাকি হারিয়ে যাবো? আমি তো আমাদের জন্য নাস্তা আনতে বাহিরে গিয়ে ছিলাম। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই বলে যাই নি।
আসো তোমাকে ওয়াশরুমে দিয়ে আসি, তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। ডক্টর আসবেন তোমাকে চেক- আপ করতে।
অনিতা কে সিফাত পাজো কোলে করে ওয়াশরুমে ভেতর দিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকল ওয়াশরুমের সামনে।
যদি অনিতার কিছু প্রয়োজন হয় সে জন্য।
কিছু সময় বাদে অনিতা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে ডাক দিল সিফাত কে ভেতরে যাওয়ার জন্য।
সিফাত ভেতরে গিয়ে অনিতা কে আবার পাজো কোলে করে রুমে নিয়ে আসল।
সিফাত নিজ হাতে অনিতাকে নাস্তা খাইয়ে দিলো,
সে নিজেও নাস্তা করে নিলো।
অনিতা মনে মনে ভাবছে,
- আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান, ভাগ্যবান না হলে কেউ এমন একজন স্বামী পায়?
উনি নিজের সব কিছু ফেলে রেখে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমি উনাকে জীবন সঙ্গি করে কোনো ভুল করিনি। উনাকে পেয়ে আমি ধন্য মনে করছি নিজেকে।
সিফাত অনিতা কে ডাক দেওয়ায় অনিতার ভাবনার ঘোর কাটল।
সিফাত অনিতার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
- কি এতো ভাবছো মিসেস মেহবুব?
অনিতা কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু তাকিয়ে রইল সিফাতের দিকে।
অনিতার তাকানো দেখে সিফাত উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
- আনি কথা বলছো না কেন, কোনো প্রবলেম হচ্ছে?
সিফাতের এমন উদ্বিগ্ন ভাব দেখে অনিতা হাল্কা হেসে বলল,
- আমার কোনো প্রবলেম করছে না আমি ঠিক আছি।
এতো টেনশন নিবেন না তো। আচ্ছা মম- পাপা কখন আসবেন, ফোন করে কিছু বলেছেন?
এর মধ্যে মিসেস ইসাবেলার কন্ঠ শুনা গেল, মিসেস ইসাবেলা কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
- এইতো মামনি আমরা এসে গেছি। তোমার শরীর এখন কেমন আছে?
অনিতা মৃদু গলায় বলল,
- অনেকটাই ব্যাটার মম। অনিতা বেবি ফেস করে মিসেস ইসাবেলা আর জনাব আলী মেহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল,
- মম – পাপা আমি বাসায় যাবো, এখানে আমার ভাল লাগছে না।
জনাব আলী মেহবুব অনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন,
- হ্যাঁ, মা তুমি বাসায় যাবে তবে সেটা কয়েক দিন পর। এখনো তো তুমি পুরোপুরি সুস্থ না।
মিসেস ইসাবেলা বললেন,
- আগে সুস্থ হয়ে উঠো তারপর বাসায় যাবে। নাস্তা করেছো মামনি?
অনিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
অনিতা মিসেস ইসাবেলা কে জিজ্ঞেস করল,
- মম জেনি, সোহেল ভাইয়া তারা আসলো না যে?
মিসেস ইসাবেলা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
- জেনির নাকি কি একটা কাজ আছে তাই সে আসতে পারবে না, আর সোহেল ঘুমিয়ে আছে দেখে ডাকিনি।
অনিতা ছোট করে হুম বলল শুধু।
জনাব আলী মেহবুব অনিতার উদ্দেশ্য বললেন,
- অনিতা তোমার চিন্তায় তোমার বাবা – মা অস্থির হয়ে পড়েছে। তাদের সাথে কথা বলে নাও তাহলে তোমার বাবা- মা স্বস্তি পাবে।
অনিতা তার বাবা- মা দুজনের সাথেই কথা বলে নিল, তাদের কে বুঝতে দিলনা তার গুরুতর কিছু হয়েছে। উনারা দুশ্চিন্তা করবেন বলে, সে এখন ভালো আছে জানিয়ে বিদায় নিয়ে ফোন কেটে দিল।
অনিতা ফোন রাখতেই ডক্টর আসলেন তাকে চেক- আপ করার জন্য।
ডক্টর অনিতা কে জিজ্ঞেস করলেন,
- এখন তোমার শরীরের কন্ডিশন কেমন মিসেস মেহবুব?
অনিতা মৃদু হেসে আস্তে করে বলল,
- এখন আগের থেকে অনেক টা ব্যাটার ফীল করছি ডক্টর।
ডক্টর শান্ত স্বরে বললেন,
- তোমার ভাগ্য ভালো মিসেস মেহবুব, মি সিফাত মেহবুবের মতো একজন দায়িত্ববান হাসবেন্ড পেয়েছো।
সিফাত মাথা নিচের দিকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।
অনিতার মুখ হাস্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল, সে মৃদু হেসে বলল,
- আমি জানি ডক্টর উনি কতটা দায়িত্ববান একজন মানুষ। সত্যিই ডক্টর উনি আমার জন্য স্পেশাল।
অনিতার মুখে এরকম কথা শুনে সিফাত লজ্জা পেল। ডক্টর চেকা- আপ করে বলে গেলেন,
- মিসেস মেহবুব তোমার শরীর আগের চাইতে এখন অনেক গুণ ভালো, আশা করছি তিন থেকে চারদিনের মধ্যেই তুমি বাসায় চলে যেতে পারবে।
অনিতা ডক্টর কে থ্যানক্স জানালো, ডক্টর মৃদু হেসে ওয়েলকাম জানিয়ে চলে গেলেন।
আজ অনিতা কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে, অনিতা এখন মোটামুটি সুস্থ।
এই কয়দিন সিফাত অনিতা কে চোখের আড়াল করেনি, তার অফিস এসব কিছু জনাব আলী মেহবুব দেখাশুনা করছেন।
সিফাতের কাছে সব কিছুর আগে তার আনি।
অনিতা আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছে সিফাত কে। সিফাতের এমন পাগলামো ভালবাসা গুলো দেখে অনিতা মুগ্ধ। অনিতার সব কাজ সিফাত নিজ হাতে করেছে, নার্স কে পর্যন্ত কিছু করতে দেয়নি।
অনিতার ভালোবাসা সিফাতের প্রতি আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে। অসুস্থ অবস্থায় অনিতার কোনো খারাপ লাগেনি সিফাত তার পাশে থাকায়, বরং তার কাছে এই সময়টা স্পেশাল মনে হয়েছে।
সিফাতের এতো ভালবাসা এতো কেয়ারিং একসাথে পেয়েছে।
সোহেল ড্রাইভ করছে পাশে জেনি বসে আছে, সিফাত, অনিতা পেছনের সিটে বসা। তারা হসপিটাল থেকে বাসায় যাচ্ছে। জেনি আর সোহেল হসপিটাল থেকে নিতে এসেছে, সিফাত অনিতা কে।
অনিতা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, সিফাত বাহিরে তাকিয়ে আছে। সোহেল ড্রাইভ করছে চুপচাপ।
সিফাত বাহিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অনিতার দিকে তাকাল। অনিতা চোখ বন্ধ করে আছে দেখে সিফাত ধীর গলায় ডাক দিল,
- আনি তোমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো, এরকম চোখ বন্ধ করে আছো কেন?
অনিতা চোখ খুলে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
- আমার না ভালো লাগছে না, কেমন কেমন করছে।
সিফাত অস্থির গলায় বলে উঠল,
- কেন আনি কি হয়েছে, আমাকে বলো প্লিজ।
অনিতা শান্ত ভঙ্গিতে বলল,
- জানিনা কি হয়েছে, আপনি এতো অস্থির হবেন না। বলেই অনিতা সিফাতের বুকে মাথা রাখল।
সিফাত মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে অনিতা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
সিফাতের বুকে মাথা রাখতেই যেন অনিতার মনে শান্তি পেল, সিফাতের বুকই একমাত্র স্থান যেখানে অনিতা শান্তির অস্তিত্ব খুঁজে পায়।
জেনি আর সোহেল দুজনেই লুকিং গ্লাসে দেখতে পেলো অনিতা সিফাতের বুকে মাথা রেখে মিটিমিটি হাসছে।
সোহেল দেখেও না দেখার ভান করে ড্রাইভ করতে মনোযোগ দিলো।
জেনি ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে অনিতা কে সিফাতের বুকে দেখে। জেনি ভেতরে রাগে ফেটে পড়ে মনে মনে বলল,
- এই বাঙালি মেয়ের জন্য সিফাত এতে দেওয়ানা কেন? ইচ্ছে তো করছে এই মেয়ে কে সিফাতের বুক থেকে টেনে গাড়ির নিচে ফেলে দেই।
জেনি সোহেল কে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
- সোহেল গাড়ি থামা, আমি শপিং মলে যাবো।
জেনির এই রাগের কারণ সোহেলের জানা, তাই সোহেল হেসে বলল,
- ওকে সিস থামাচ্ছি, তোমার যেখানে ইচ্ছা যাও।
সোহেল একটা খালি জায়গা দেকে গাড়ি পার্ক করে জেনি কে নামিয়ে দিল। জেনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।
সিফাত বাঁকা হাসল, অনিতা চুপচাপ দেখলো কিছু বলল না।
খানিকক্ষণ বাদে গাড়ি বাসার সামনে থামল। সোহেল জোরে জোরে কয়েকবার হর্ণ বাজাতেই মিসেস ইসাবেলা দ্রুত পায়ে গাড়ির কাছে আসলেন। অনিতা কে মিসেস ইসাবেলা আর সিফাত গাড়ি থেকে ধরে নামালেন।
অনিতা হেসে মিসেস ইসাবেলা কে বলল,
- মম আমি এখন ঠিক আছি, একা হাঁটাচলা করতে পারি।
মিসেস ইসাবেলা কঠিন গলায় বললেন,
- হয়েছে আর একা হেঁটে যেতে হবে না বেশি পাকামো করো না। অনিতা হেসে দিল মিসেস ইসাবেলার কঠিন গলা শুনে। সিফাত সোহেল দু ভাই ই হাসছে মিসেস ইসাবেলার কথায়।
অনিতা হাসি মুখে রেখেই মিসেস ইসাবেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
- মম এখন কিন্তু তোমার মধ্যে একটা মম, মম ভাব এসে গেছে। কি শাসন শুরু করেছো আসতেই?
মিসেস ইসাবেলা হেসে উঠলেন অনিতার কথায়,
হেসে সিফাতের উদ্দেশ্য বলে উঠলেন,
- সিফাত মামনি কে ভেতরে নিয়ে যাও, আমি আসছি।
সিফাত পারমিশন পেতেই অনিতা কে কোলে তোলে নিলো, অনিতা লজ্জায় দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখল। সিফাত সোজা অনিতা কে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে গেলো।
মিসেস ইসাবেলা সোহেল কে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
- সোহেল জেনি কোথায়? তোমরা তো এক সাথে ওদের কে আনতে গেলে?
সোহেল বলল,
- মম সিসের কাজ আছে বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল।
মিসেস ইসাবেলা আর কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলেন। সোহেলও পিছু পিছু ভেতরে চলে গেল।
সিফাত বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেল। অনিতা আর মিসেস ইসাবেলা অনেকক্ষণ গল্প করলেন তাদের রুমে এসে।
রাত ১১ টা বাজে অনিতা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো, সিফাত সোফায় বসে ল্যাপটপে নিয়ে অফিসের কাজ করছিল।
অনিতা কে দেখে সিফাত ল্যাপটপ রেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল।
অনিতা কেঁপে উঠল সিফাতের স্পর্শ পেয়ে।
সিফাত বাঁকা হেসে মাদক মিশানো গলায় বলল,
- আনি আমার না খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
অনিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,
- তাহলে পানি পান করেন, দাঁড়ান আমি নিয়ে আসছি। বলেই অনিতা যখন চলে যতে নিলো সিফাত হ্যাঁচকা টানে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
- বোকা মেয়ে কোথাকার আমি কি এই তৃষ্ণার কথা বলেছি নাকি?
অনিতা অবাক হওয়া গলায় বলল,
- তাহলে কিসের তৃষ্ণার কথা বলেছেন, মানুষ তো তেষ্টা পেলে জলই খায়।
সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- ঠিক আছে পানি নিয়ে এসো। অনিতা পানি আনার জন্য টেবিলে রাখা জগের দিকে এগিয়ে গেল। সিফাত হেসে বলল,
- এই মেয়ে এতো বোকা কেন আল্লাহ?
হঠাৎ সিফাতের সে দিনের কথাটা মনে পড়ে গেল, যে কথাটা অনিতা সম্পূর্ণ করতে পারেনি সোহেল চলে এসে ছিল। সিফাত ধীর পায়ে অনিতার দিকে এগি যাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
- আজ আনির কাছ থেকে সত্যি টা আমাকে জানতে হবে। আমি যা সন্দেহ করছি যদি তাই হয়, তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে।
সমাপ্ত
সিজন ৪ এখানে – তার শহরে – সিজন ৪ | অনেক কষ্টের গল্প
তার শহরে – সিজন ২ | আবেগি প্রেমের গল্প
তার শহরে – সিজন ১ | আবেগি ভালোবাসার গল্প
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “কষ্ট পাওয়া ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।