তার শহরে – আবেগি ভালোবাসার গল্প: বিচিত্র এই জীবনে কত নাম না জানা ভালোবাসা আর রং বেরঙের প্রেমের সমাহার তা কি আমরা জানি? চলুন তবে আজ এরকম একটা রঙ্গীন জীবনের সেরা ভালোবাসার গল্প পড়ি।
পার্ট : ১
আচমকাই সিফাত ভাইয়া আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।
আমি চোখঁ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। যখন বুঝতে পারলাম কি ঘটছে আমি উনাকে দু হাত দিয়ে ধাক্কাতে লাগলাম।
কিন্তু উনার কোনো হেলদুল নেই। উনি উনার কাজে ব্যস্ত। অনেকক্ষণ পর উনি আমাকে ছাড়লেন।
উনি ছাড়তেই আমি জোরে জোরে নিঃস্বাস নিতে লাগলাম। মনে হচ্ছেছিল যেন আর কিছুক্ষণ হলেই ধমটা বেরিয়ে যেত।
উনার এই কাজের মানে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ছলছল চোখে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।
উনি রক্ত চোক্ষু নিয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বলতে লাগলেন,
আর কোনো দিন যদি পলাশ এর সাথে কথা বলতে দেখি এর থেকে বেশি কিছু হবে মাইন্ট ইট!
বলেই উনি রেগেমেগে হনহনিয়ে চলে গেলেন।
আমি বিম্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলাম না।
পলাশ ভাইয়া উনার ফ্রেন্ড সেই হিসাবে উনার সাথে কথা বলেছি তার জন্য সিফাত ভাইয়া এত রিয়েক্ট করলেন কেন?
আর আমার সাথে এত জগন্য আচরণ করলেন কেন?কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
আমি অনিতা। আজ কয়েক দিন হলো কানাডায় এসেছি। আর সিফাত ভাইয়া হচ্ছেন আমার আপন মামাতো ভাই।
আমি তাদের বাসায় উঠেছি থেকেই খেয়াল করছি উনি আমার সাথে কেমন যেন রুড বিহেভ করছেন।
আজ তো উনি উনার আচরণের মাএাই ছাড়িয়ে গেছেন।
কাদঁতে কাদঁতে আমি নিচে বসে পরলাম। কেউ আমার সাথে আজ পর্যন্ত এতটা খারাপ আচরণ করেনি।
এখানে আসছি থেকে উনি যতটা করছেন। আমার দোষ টা কোথায় সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
সিফাত ভাইয়া একবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তখন তার সাথে আমার একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে জামেলা হয়। সে ব্যাপারটা না হয় পরে বলব।
তখন থেকে উনি আমাকে দু চোখে দেখতে পারনে না।
চোখের জল মুছে দাড়িয়ে পরলাম। এখন আর এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না।
কাল থেকে আমার ভার্সিটির ক্লাস শুরু। কানাডা আসার একমাএ কারণ আমার লেখা পড়া।
বাবা- মা আমাকে অনেক আশা নিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
পার্ট: ২
বাবা- মা আমাকে অনেক আশা নিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
পরের দিন আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।
বেবি পিংক কালারের একটা শার্ট পরলাম, সাথে ব্লাক কালারের জিন্স আর পায়ে বেবি পিংক কালার সু পরলাম। সঙ্গে একটা ব্লাক কালার স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে নিলাম। তারপর ঠোঁটে পিংক কালার লিপস্টিক দিলাম, চোখে একটু কাজলও দিলাম।
সব চুল গুলো কে রাবার দিয়ে উঁচু তে বেঁধে নিলাম।
তারপর নিচে নামলাম, নিচে নামতেই লক্ষ্য করলাম।
সিফাত ভাইয়া, সোহেল ভাইয়া আর জিসান আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
আমি এদের ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
আমি কি আমার সাঁজগুজে কোনো মিস্ট্রেক করলাম?
নিজের দিকে একবার ভালো করে তাকালাম, নাহ সবই তো ঠিক আছে!
তাহলে এরা তিন ভাই আমার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছে কেন?
ওদের তাকিয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো এলিয়েন কে দেখছে।
মামা আর মামিমা র কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পরল।
মামা বলছেন, বাহ! আজ তো অনিতা কে দারুণ লাগছে। সাথে মামিমা ও তাল মিলালেন সত্যিই মামনি আজ তোমায় দারুণ দেখাচ্ছে।
মামা- মামিমা আমার প্রসংসা করছেন, উনাদের করা প্রসংসায় আমি বিষন লজ্জা পেলাম।
লজ্জা পেয়ে আমি আরচোখে সিফাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকাচ্ছেন। সেটা দেখে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম।
ভয়ে ভয়ে নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসলাম।
কেন জানি না উনাকে দেখলে আমার ভিষন ভয় লাগে। মনে হয় কখন না জানি আবার কোন শাস্তি দিয়ে বসেন।
খেতে খেতে মামা বলে উঠলেন আজ অনিতার ভার্সিটির প্রথম দিন,
ওকে আজ কে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিয়ে আসবে? বলেই উনার তিন ছেলের দিকে তাকালেন।
সোহেল ভাইয়া এটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলেন, আমি অনিতা কে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিয়ে আসি পাপা?
সেটা শুনে সিফাত ভাইয়া সোহেল ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। পারলে যেন উনাকে চিবিয়ে খাবেন।
সিফাত ভাইয়ার এমন আচরণের মানে আমি বুঝতে পারলাম না।
সিফাত ভাইয়া সোহেল ভাইয়া কে বললেন, আমার ওদিকে একটা কাজ আছে আমিই আনি কে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিবনে।
সিফাত অনিতা কে সংক্ষেপে আনি বলেই ডাকে।
সেটা শুনে সোহেল ভাইয়া যেন আশাহত হলেন।
হতাশ চোখে সোহেল ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন।
এদিকে তো ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কাঁপছে, সিফাত ভাইয়ার সাথে যাওয়ার কথা শুনে।
না জানি বজ্জাত টা আবার কি শাস্তি দিয়ে বসে?
শেষমেষ, উনার সাথেই আমার যেতে হলো।
আমি গাড়িতে বসে আছি, জল্লাদ টা ড্রাইব করছে।
আর মাঝে মাঝে আমার দিকে আরচোখে তাকাচ্ছে।
গাড়িতে বসে উনি কোনো কথা বললেন না।
ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে সোজা চলে গেলেন।
আমিও আর কিছু না ভেবে ভার্সিটির ভেতর ঢুকে পরলাম।
এই হচ্ছে আমার স্বপ্নের ভার্সিটি। আজ থেকেই আমার স্বপ্ন পূরণের দিন শুরু।
আস্তে আস্তে ভেতরের দিকে পা বাড়ালাম।
আমি তো কিছুই জানি না, আর কাউকে চিনিওনা।
তারপর ও ধীর গতিতে হাঁটছি।
হঠাৎ শুনতে পেলাম,
- এক্সকিউজ মি!
আমি পেছনে তাকালাম তাকিয়ে দেখলাম, এক জোরা গাঢ়ো ব্রাউন কালারের চোখের মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে।
- মেয়েটি আমাকে বলল, তুমি কি এই ভার্সিটিতে নতুন?
- আমি হেসে মাথা নাড়লাম যে, হে।
- মেয়েটি তার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি চার্লি!
- আমিও আমার হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম আমি অনিতা।
মেয়েটি মুচকি হেসে বলল,
- হেই! আনিটা, নাইস টু মিট ইউ।
- আমি মৃদু হেসে চার্লি কে বললাম সেম টু ইউ।
তারপর আবার বললাম মাই নেম ইজ অনিতা ইট স নট আনিটা।
কিন্তু ও আর উচ্চারণই করতে পারল না। আমিও আশা ছেড়ে দিলাম।
তারপর ওর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
এরপর ভার্সিটির সব ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম।
বাসায় ফিরে আমার রুমের দিকে যাচ্ছিলাম আর হঠাৎ আচমকাই কেউ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
তারপর আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল, চেয়ে দেখি সে আর কেউ নয় সিফাত ভাইয়া!
পার্ট: ৩
তারপর আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল, চেয়ে দেখি সে আর কেউ নয় সিফাত ভাইয়া!
সিফাত ভাইয়া কে দেখা মাএই ভয়ে আমার হৃৎপিণ্ড টা থেমে যাবার অবস্থা।
উনি আমার দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আমি বুঝতে পারলাম না আজ আমি আবার কি করলাম?
সিফাত ভাইয়া আরও শক্ত করে দেওয়ালের সাথে আমাকে চেপে ধরলেন।
আমি ব্যাথায় চোখ বুঁজে নিলাম, আর বলতে লাগলাম,
আদি ভাইয়া প্লিজ আমার লাগছে, আমায় ছাড়ুন।
আদি ভাইয়ার রাগ যেন চোখ থেকে টিকরে পরছে।
উনি রাগে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন,
এত সাঁজগুজ করে ভার্সিটিতে যাওয়ার কারণ কি?
ভার্সিটিতে লেখা পড়া করার জন্য যাও নাকি নিজেকে শো- অফ করানোর জন্য যাও?
উনার এমন কথায় যেন আমি আকাশ থেকে পরলাম,
আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উনি জোরে ধাক্কা মেরে আমাকে নিচে ফেলে দিলেন।
আর শাসিয়ে গেলেন, ফারদার যদি এরকম হয় তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে।
আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।
নিচে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।
মায়ের কথা বিষণ মনে পরছে, ইচ্ছে হচ্ছে মা কে জরিয়ে ধরে কাঁদি।
আমার ছোট বোন শিউলির কথাও খুব মনে পরছে।
ও সামনে থাকলে ওকে নিজের মনের কথা বলে হয়তো কিছু টা বেটার ফিল করতাম!
এইসব মনে করছি আর কাঁদছি। উনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?
আমি তো উনার কোনো ক্ষতি করিনি, তবে কেন উনি এমন রুড বিহেভ করছেন?
আমি আর ভাবতে পারছি না। এর একটা বিহিত করতেই হবে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না।
আমার ও একটা ফ্রিডম দরকার!
বসা থেকে উঠে পরলাম, উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এখন কিছু খাওয়া দরকার ক্ষিধের যন্ত্রনায় পেটের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েগেছে।
সিফাত ভাইয়ার কথা পরে ভাববো।
এর মধ্যে মামিমা আমাকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন।
আমি খাওয়ার জন্য নিচে নামলাম।
খাওয়ার টেবিলে দেখলাম সবাই আছেন, শুধু মামা ছাড়া।
মামিমা কে জিজ্ঞেসা করলাম মামা কেথায়?মামা কি দুপুরে খাবনে না?
মামিমা মৃদু হেসে বললেন, না মামনি তোমার মামা দুপুরের খাবার বাহিরে খেয়ে নিবেন।
আমি বললাম, ওহ।
খেতে বসে পরলাম পেটের ক্ষিধায় আর পারছি না।
সিফাত ভাইয়া আমার অপোজিট চেয়ারে বসলেন।
আমি আর উনার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না।
মামিমা আমাদের কে খাবার সার্ফ করছেন। মামিমা কে বললাম তুমিও খেয়ে নাও না আমাদের সাথে?
উনি মিষ্টি হেসে বললেন, না মামনি আমি পরে খেয়ে নিবনে তোমরা খাও।
মামিমার ব্যবহারে আর এমন আন্তরিকতায় সত্যিই আমি মুগ্ধ।
একজন কানাডিয়ান মহিলাও এত আন্তরিকতা পরায়ণ হতে পারেন আমার ভাবনার বাহিরে।
আমার মামিমা একজন কানাডিয়ান মেয়ে। উনি আমার মামাকে ভালবেসে বিয়ে করেছেন।
মামিমা দেখতে খুব সুন্দর, বিশেষ করে উনার চোখ দুটো খুব সুন্দর।
শুনে ছিলাম মামা নাকি মামি মার চোখ দেখে প্রেমে পরছিলেন।
উনার চোখের রং হালকা সবুজ রংয়ের। তাতে যেন উনার সুন্দর্য অনেক গুন বারিয়ে দিয়েছে।
মামিমার বয়স একদম বুঝাই যায় না।
সিফাত ভাইয়ার চোখ দুটো হুবহু দেখতে মামিমার চোখের মতন।
সিফাত ভাইয়ার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। কেমন যেন একটা ঘোর লেগে যায়।
আচমকাই অনুভব করলাম আমার পায়ের মাঝে কেউ স্লাইড করছে।
আমি সাথে সাথে তাকালাম কে আমার পায়ে স্লাইড করছে দেখার জন্য।
দেখলাম সোহেল ভাইয়া একমনে খাচ্ছেন, জিসান ও তার খাওয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে।
ভয়ে ভয়ে তাকালাম সিফাত ভাইয়ার দিকে।
তাকিয়ে দেখলাম উনি খাচ্ছেন আর আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছেন। আর বুঝতে বাকি রইল না এই কাজটা কার?
আমি আমার পা ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
কিন্তু উনার কাছ থেকে আমার পা ছাড়াতে ব্যর্থ হলাম।
উনার এমন গন্ডারের শক্তির কাছে আমি এক তুচ্ছ অসহায় প্রাণি!
আমার মুখ নিমিষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তা দেখে জিসান জিজ্ঞেস করলল, আপু আর ইউ ওকে?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, হে আই এম ওকে!
মামিমা আর সোহেল ভাইয়া ও জিজ্ঞেস করলেন কোনো প্রবলেম কি না?
আমি মৃদু হেসে জবাব দিলাম, না আমি ঠিক আছি।
এদিকে আমার জান যায় যায় অবস্থা। উনি যতবারই আমার পায়ে স্লাইড করছেন, আমি ততবারই কেঁপে কেঁপে উঠছি।
তা দেখে যেন সিফাত ভাইয়ার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।
শেষমেশ আমি আর খেতেই পারলাম না। উঠে চলে এলাম। আমি আমার রুমে এসে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম। পড়াতে কিছুতেই মন লাগাতে পারছিনা। বার বার মনে হচ্ছে উনার করা কাজ গুলোর কথা। কখনো রাগ দেখান আবার কখনো রোমান্টিক মুডে চলে যান। কি হচ্ছে আমার সাথে এইসব, আমি কোনো হিসাব মিলাতে পারছি না।
হঠাৎ মামিমা আমার রুমে এলেন। এসে বললেন,
কাল উনার এক বন্ধুর বার্থডে আমাদের সবাইকে যেতে হবে।
সবার যাওয়ার কথা শুনে আমার মনে পরল নিশ্চয়ই বজ্জাত টা ও যাবে?না না আমি যাব না।
কখন আবার কি করে বসে? মামিমা কে না করে দিলাম আমি যাব না। কিন্তু উনি যা নাছুর বান্দা শেষমেশ কি আর করার রাজি হয়ে গেলাম।
রাতে আমরা রেডি হচ্ছি যাওয়ার জন্য। মামিমার জোরাজুরিতে আমি একটা জরজেটের শাড়ি পরলাম। একদম ডার্ক ব্লু কালার আর এর মধ্যে হোয়াইট স্টোনের কাজ করা। আমি একটু হালকা মেকাপ করে নিলাম।
তারপর ঠোঁটে মেরুন কালার লিপস্টিক দিলাম, চুল গুলো কে কোপা করে বাঁধলাম। চোখে কাজল ও দিলাম। এখন নিজেকে আয়নায় দেখছি কেমন লাগছে, নাহ মন্দ লাগছে না।
আমি রেডি হয়ে মামিমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
উনি রেডি হয়েছেন কি না দেখতে?গিয়ে আমি পুরাই অবাক, মামিমা কে আশ্চর্য সুন্দর লাগছে।
উনি আমাকে দেখা মাএই বললেন, অনিতা মা এদিকে আসো তো। উনার কাছে গেলাম, মামিমা ইশারা করে আমাকে বসতে বললেন আমি বসলাম।
উনি যেন কি খুঁজছেন দেখলাম, তারপর হাতে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস আমার সামনে রাখলেন। বললেন আমার গলায় কিছু নেই বলে আমার সাঁজ অপূর্ণ লাগছে এটা পরলে সব সাঁজ পূর্ণ হবে।
আমি বললাম পরবা না। কিন্তু কে শুনে কার কথা?
উনি নিজ হাতে আমায় পরিয়ে দিলেন। পরিয়ে দিয়ে বললেন, যাও মামনি এখন আয়নায় একটু দেখোতো। কেমন লাগছে তোমায়?
আয়নায় নিজেকে দেখে অবাকই হলাম সত্যিই তো নেকলেসে যেন সুন্দর্যটা আরো বারিয়ে দিয়েছে।
মামিমা আমাকে নিচে নামতে বললেন, আর উনি উনার ছেলেরা রেডি হয়েছে কি না দেখতে যাচ্ছেন।
আমরা দুটো গাড়ি দিয়ে যাব। তাই আমি মামা আর মামিমার গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। কিছুক্ষণ বাদে দেখলাম সবাই গাড়ির দিকে আসছেন। আমার চোখ গেল সিফাত ভাইয়ার দিকে, আমি পুরাই ক্রাস।
উনাকে যা লাগছে, যে কোনো মেয়েই উনার প্রেমে পরতে বাধ্য।
সিফাত ভাইয়া একটা ডার্ক ব্লু কালারের কোট পরেছেন আর ভিতরে হোয়াইট কালার শার্ট।
চুল গুলো কে স্পাইক করে রেখেছেন। তাতে উনাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। চোখ দুটো থেকে যেন সবুজ আভা ছড়াচ্ছে। পুরাই কিউটের ডিব্বা।
মামার কথায় আমার ঘোর কাটল, মামা বললেন অনিতা তুমি কি আমাদের গাড়িতেই যাবে?
আমি হে বললাম।
মামিমা মাঝখানে বলে উঠলেন কিন্তু মামনি সোহেল ও জিসান আমাদের গাড়িতে করে যাবে।
তুমি বরং সিফাত এর গাড়িতে করে যাও। ও তো একাই যাবে। সোহেল ভাইয়া বলে উঠলেন, না মম আমরা এক সাথেই যাই?ভাইয়া না হয় একাই যাক, ওর তো একা থাকা পছন্দ।
সোহেল ভাইয়া একথা বলা মাএই দেখলাম সিফাত ভাইয়া উনার দিকে কটমট চোখে তাকালেন।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম উনার তাকানো দেখে। উনি যেন এখনি সোহেল ভাইয়া কে গিলে খাবেন।
তার মধ্যে মামা বললেন, তুমি নেমে আসো আর সিফাত এর গাড়িতে যাও। আমি আর না করার সাহস পেলাম না উনি যা রেগে গেছেন। কখন না জানি আমার উপর শাস্তির মামলা চালায়।
আমি নামতেই জিসান বলে উঠল, ও আপু ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস!
ওর কথায় মুচকি হাসলাম। সোহেল ভাইয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন, কিছু বলছেন না।
সিফাত ভাইয়া চোরা চোখে অনেক বার তাকালেন।
দেখে ও না দেখার ভান করলাম।
আমরা যে যার গাড়িতে উঠে পরলাম। উনি গাড়িতে বসেই আমার দিকে তাকালেন কিছু টা রাগি দৃষ্টিতে।
বুঝলাম না উনার এমন ভাবে তাকানোর মানে!
সিফাত ভাইয়া হঠাৎ আমার দিকে ঝুঁকে আসছেন দেখে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল। আবার কি শাস্তি দিবেন?
কিন্তু না হলো তার উল্টো উনি আমার কোপা করা চুল গুলো ছেড়ে দিলেন। আমি অবাক হলাম উনার এমন কাজে!
উনি নিজেই বলতে লাগলেন, আনি তোমাকে কোপাতে বেমানান লাগে, কেমন যেন একটা বিয়েতি ভাব চলে আসে। তাই চুল গুলো ছেড়ে দিলাম।
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না!
ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম।
উনার সব কিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে আমাদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন।
হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করায় আমি চোখ খুললাম। বুঝতে পারলাম আমরা গন্তব্য স্থানে এসে গেছি। সবার সাথে ভেতরে গেলাম সব কিছুই খুব সুন্দর করে সাঁজানে হয়েছে।
মামিমার বন্ধু এসে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। আমার সাথে পরিচয় হলো। আমি কাউকে চিনি না তাই এক সাইডে দাঁড়িয়ে জুস খাচ্ছি আর চারিদিক দেখছি।
আমি হঠাৎ অনুভব করলাম আমার পেটে কেউ নকের আছর দিল।
পার্ট: ৪
আমি হঠাৎ অনুভব করলাম আমার পেটে কেউ নখের আচঁর দিল ভয়ে আমি তাকালাম কে এমন কাজ করছে দেখার জন্য!চেয়ে দেখি সিফাত ভাইয়া!
আমার তাকানো যেন উনার রাগকে আরো দ্বিগুণ বারিয়ে দিল। উনার চোখ যেন আরো সবুজ রং ধারন করল। আবার জোরে আমার পেটে নখের আচঁর দিলেন, আমি ব্যাথায় উনার হাত চেপে ধরলাম। ব্যাথায় আর ভয়ে চোখ থেকে অঝর ধারায় পানি পরছে।
চোখ খুলে উনার দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকালাম,
উনি চাপা চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন, তোমার মেদহীন পেট কি সবাই কে দেখানোর জন্য এমন শাড়ি পরেছ?চেয়ে দেখও সবাই কি ভাবে তোমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শাড়ি যখন সামলাতে জানো না তাহলে এমন শাড়ি পরো কেন?
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ভাইয়া শাড়িটা মামিমা আমাকে পরতে দিয়েছেন।
সিফাত ভাইয়া বললেন, তোমার চোখ কোথায় ছিল তখন, তুমি দেখতে পাওনি?
আর কিছু না বলে আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
উনি আমাকে বললেন, এক জায়গায় বসে থাকো। কোথাও যেও না, পার্টি শেষ হলে আমি এসে নিয়ে যাব।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
উনি চলে গেলেন আর আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলাম।
উনি চাইছে টা কি?আমার সাথে এমন করেন কেন?
এসব ভাবছি আর কাঁদছি।
হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম,
একজন অল্প বয়সী ছেলে। আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
এসেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। ছেলেটি বলল হেই, আমি জন।
আমি কিছু বলছি না দেখে, ছেলেটি আবার বলল তুমি বোবা নাকি?
আমি বললাম, না। তখন জন ছেলেটি জিজ্ঞেস করল আমার নাম কি?
বললাম, অনিতা। জন যেন বুঝলো না, জিজ্ঞেসা চোখে তাকাল, আমি আবার বললাম, অনিতা।
জন বলল ওহ আনিটা, আমি মনে মনে ভাবলাম, এখানকার মানুষেরা আমায় কখনো অনিতা বলে ডাকতে পারবে না বোধহয়!
আমি বলি অনিতা আর তারা বলে আনিটা!
দুর ডাকোক গে আমার কি?তার পর ও কেমন যেন একটা খারাপ লাগে, হাজার হোক নিজের নাম তো। (কিছু টা মন খারাপ করে)
এরই মাঝে জন বলে উঠল, আমি তোমার মামির বন্ধুর ছেলে জন।
সো, আমার সাথে কথা বলতে নিশ্চয়ই তোমার কোনো প্রবলেম নেই?
জনের দিকে তাকালাম, ছেলেটার গায়ের রং ধবধবে সাদা। চোখ গুলো ছোট ছোট, অনেকটাই লম্বা। আমার হঠাৎ মনে হলো জন জানলো কিভাবে আমি ওর মায়ের বন্ধুর মেয়ে? এসব ভাবনার মাঝে আমার হাতে কারো স্পর্শ পেলাম। চেয়ে দেখি জন হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে। চলো আনিটা আজ তুমি আমার ডান্স পার্টনার হবে?
জনের কথায় আমি ভেবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম!
আমি কেন ওর সাথে ডান্স করব?আর আমি ডান্স পারলে তো ডান্স করব?
জনের হাত আমার হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম, সরি মি জন আমি ডান্স পারি না।
আমার কথায় যেন ও একটু অবাক হলো!তারপর জন বলল, কোনো প্রবলেম নেই আমি শিখিয়ে দিবনে। আমি পরলাম মহা ঝামেলায়, এই জনের উপর আমার প্রচন্ড রাগ লাগছে। মনে হচ্ছে চিবিয়ে খাই। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই, তার উপর ওর এমন ন্যাকা আবদার। না আসাটাই ভালো ছিল তাহলে আমার কোনো ঝামেলাই পোহাতে হতো না।
মনে পরল বজ্জাত টার কথা উনি কোথায় আছেন?
যদি আমাকে জনের সাথে কথা বলতে দেখেন তাহলে কি হবে আমার কল্পনার বাহিরে হয়তো?
ভাবতেই আমার ভয়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল।
জনকে না করে দিলাম, আমি ডান্স করব না।
জন যেন মূর্হতেই তার রূপ বদলে ফেলল, আমার দিকে চেয়ে হালকা হেসে উঠল সে, আর বলল তা তো হবে না আনিটা আমার যা ইচ্ছে হয় আমি তা যে কোনো মূল্যে পূরণ করেই ছাড়ি। বলেই একটা শয়তানি হাসি দিল।
তা দেখে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল, আশেপাশে তাকালাম কেউ আছে কি না দেখার জন্য।
এদিক টায় তেমন কেউ নেই, যারা আছে তারা তাদের ডান্স নিয়ে ব্যস্ত।
জন আবার বলে উঠল দেখ আনিটা আমি তোমার সাথে কোনো খারাপ বিহেভ করতে চাই না।
কারণ, তুমি আমাদের অতিথি। ভালোই ভালোই বলছি আমার পার্টনার হয়ে যাও নয়তো খুব খারাপ হবে।
জনের কথায় ভয়ের বদলে আমার প্রচন্ড রাগ লাগছে। আমি অন্যদেশি বলে আমাকে দুর্বল ভাবছে জন। না তো হতে দেয়া যাবে না।
আমি বলে উঠলাম, আমাকে হুমকি দিচ্ছেন না কি মি জন?
জন বলল, যদি মনে করো হুমকি দিচ্ছি তবে সেটাই। আমি পাল্টা জবাব দিলাম, ডান্স করব না আপনার সাথে দেখি কি করেন আমার?
আমার কথা টা যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান, জন আমার দিকে হিংস্র ভাবে এগিয়ে আসছে।
তা দেখে আমার এখন সত্যিই বিষণ ভয় করছে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। যাতে জন বুঝতে না পারে আমি ভয় পাচ্ছি।
জন কাছে চলে আসছে আমার, এসেই আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল আর বলতে লাগল,
শুনলে না তো আমার কথা এখন দেখো কি কি হয় তোমার সাথে।
বলেই টেনে নিয়ে যেতে লাগল আমাকে। আমি ছুটার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
হঠাৎ মাথায় এলো ওর হাতে কাঁমড় দেওয়ার কথা।
যেই ভাবা সেই কাজ, জনের হাতে কাঁমড় দিতেই ও আমার হাত ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে ছুটে আসছি, আর পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জন ও আসছে।
ভাবলাম এর হাত কে আজকে বাঁচার উপায় নেই।
আচমকাই আমি কারো সাথে ধাক্কা খেলাম, চেয়ে দেখি সিফাত ভাইয়া। উনাকে দেখে আর নিজে কে আটকে রাখতে পারলাম না, সিফাত ভাইয়া কে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।
উনি আমার এমন আচরণে অবাক হলেন, উনি আমার কান্নার কারণ জানতে চাইলেন।
ভয়ে আমার শরীর ঈষৎ কাঁপছে, আমি কিছুই বলতে পারছি না, উনাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।
বুঝতে পারলাম উনিও আমাকে জরিয়ে ধরছেন।
জন এর মাঝে এসে গেছে, জন বলছে হেই সিফাত এটা আমার শিকার আমার কাছে দাও।
জনের আওয়াজ পেয়ে উনাকে আমি আরে আঁকরে ধরলাম।
সিফাত ভাইয়া আমার ভয়ের কারণ বুঝতে পারলেন,
বুঝতে পেরে আমাকে বললেন, শান্ত হও আনি ভয়ের কিছু নেই। আমি থাকতে কার এতো বড় সাহস তোমাকে টাচ করার?বলেই উনি জনের দিকে তাকালেন। উনার তাকানো দেখে আমি বুঝতে পারলাম আজ জনের কি হতে চলছে।
জন বলল, ওহ রিয়েলি সিফাত কারো সাহস নেই?
উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, না।
জন আবার বলে উঠল, আমার আছে সিফাত।
উনি বললেন সাহস থাকলে ওকে ছুঁয়ে দেখাও আমার সামনে?
বাই দা ওয়ে সিফাত, তুমি ওই মেয়েটার প্রতি এতো পসেসিভ কেন?
সিফাত ভাইয়া আমাকে আস্তে আস্তে উনার বুক থেকে সরালেন, খুব শান্ত কন্ঠে বললেন আনি ভয় পেওনা তোমার সিফাত ভাইয়া আছে তো তোমার সাথে সব সময়, আর থাকবে ও।
আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম আমার এমন এহেন কান্ডে। তারপর সরে আসলাম উনার কাছ থেকে।
সিফাত ভাইয়া জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, এই মেয়ে আমার অনেক কিছু হয় জন!
অবাক হলাম আমি, উনার দেওয়া জবাবে। কি বলেন উনি?
জন বলল, আমি অতোশতো বুঝি না সিফাত আমার এই মেয়েটিকে চাই। এট এনি হাউ, এট এনি কস্ট।
জনের এমন জবাবে যেন সিফাত ভাইয়ার রাগ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল। উনি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, তর এই মেয়ে কে চাই না?বলেই উনি রাগে জনের দিকে এগিয়ে গেলেন, তারপর ঘটল এক অঘটন যা দেখে আমি মাথা ঘুরেপরে গেলাম।
পার্ট: ৫
জনের এমন জবাবে যেন সিফাত ভাইয়ার রাগ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল। উনি জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, তর এই মেয়ে কে চাই না?বলেই উনি রাগে জনের দিকে এগিয়ে গেলেন, তারপর ঘটল এক অঘটন যা দেখে আমি মাথা ঘুরপরে গেলাম।
সিফাত ভাইয়া জনের দিকে হিংস্র বাঘের ন্যায় তেড়ে গেলেন। আর এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি মারতে লাগলেন জন কে।
আজ যেন আমি উনার অন্য রূপ দেখলাম, উনি কতটা হিংস্র হতে পারেন। ইতিমধ্যে সিফাত ভাইয়া উনার প্যান্টের বেল্ট খুলে বেধারাম পেটাচ্ছেন জন কে।
কেউ আসছে না উনাকে থামাতে, সবাই তাকিয়ে দেখছে। সোহেল ভাইয়া, জিসান, মামা আর মামিমা চলে এসেছেন তার মধ্যে। জনের শরীর রক্তে ভিজে একা কার। রক্ত দেখে আর আমি ঠিক থাকতে পারলাম না, মাথা ঘুরছে, চোখে ঝাপসা দেখছি তারপর কিছু মনে নেই।
সিফাত ইচ্ছে মতো জন কে মারছে। আর বলছে,
জন তুই নিজেও জানিস না তুই আমার কোথায় হাত বারিয়েছিস?
সিফাতের বলা কথা গুলো সবাই শুনছে কিন্তু ওর প্রত্যেক কথায় অবাক হচ্ছে ওর ফ্যামিলি!
সোহেল মনে মনে ভাবছে ভাইয়া কি সব বলছে?
অনিতা ওর অনেক কিছু হতে যাবে কেন?এদিকে সিফাত এর বাবা- মা কিছুই বুঝছেন না। জন কি এমন করছে যে, যার জন্য সিফাত এরকম ভয়ানক রেগে গেল?
সিফাতের বাবা সব চিন্তা বাদ দিয়ে সিফাত কে থামাতে গেলেন। যদি এখনি না থামান তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে, সিফাত এর রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত।
সিফাতের বাবা জনাব আলী মেহবুব থামানোর জন্য ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন, কিন্তু সিফাত বলছে আমাকে ছাড়ো পাপা আমি ওকে মেরেই ফেলব। ও আমার কলিজায় হাত দিতে চাইছে এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে।
জনাব আলী মেহবুব শান্ত সুরে বললেন, থামো সিফাত আইন নিজের হাতে কেন নেবে?ওর অন্যায়ের জন্য আইন জন কে শাস্তি দিবে। সিফাত কিছু টা শান্ত হলো, তবে পুরোপুরি নয়।
অন্যদিকে অনিতা মাথা ঘুরে পরে গেছে দেখে ওর মামিমা ওকে একটা রুমে নিয়ে গেলেন কিছু মানুষের সাহায্যে। এর মধ্যে জনের মা এসে অনেক কথা শুনাতে লাগলেন সিফাতের মা মিসেস ইসাবেলা মেহবুব কে। তা দেখে সিফাতের মা ও চুপ থাকতে পারলেন না উনি ও পাল্টা উত্তর দিলেন।
অনিতার জ্ঞান ফিরছে না দেখে মিসেস ইসাবেলা কে বিষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে। উনি কিছু বুঝতে পারছেন না কি করবেন, এর মাঝে সিফাত এসে পাগলের মতো বলতে লাগল মম আনির জ্ঞান ফিরছে না কেন মম? আমার বিষণ চিন্তা হচ্ছে মম।
আনি কথা বলছে না কেন?সিফাত অনিতার বেডের পাশে বসে পরল আর অনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, আনি উঠো না আমি আর তোমা খারাপ ব্যবহার করব না। কখন যে সিফাতের সবুজ রংয়ের চোখের কোণে জল জমা হয়েছে খেয়াল নেই ওর।
সেটা সিফাতের মায়ের চোখ এড়ালো না।
মিসেস ইসাবেলা ভাবছেন সিফাত মামনির জন্য কাঁদছে? তবে কেন?
নাকি সিফাত মামনি কে ভালোবাসে?হুম, ভালোইবাসে না হলে এমন পাগলের মতো আচরণ করছে কেন ও?মিসেস ইসাবেলা খুশি হলেন কারণ,
সিফাত আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে ঠিক করে দুটো কথা বলেছে বলে মনে পরছে না উনার।
সিফাত দেখতে সুদর্শন স্মার্ট শিক্ষিত, কত মেয়ে সিফাতের সাথে রিলেশন করতে চেয়েছে, কিন্তু সিফাত তার বদলে ওদের কঠো কথা শুনিয়ে দিয়েছে।
আর আজ সেই সিফাত কাঁদছে, তা ও আবার একটা মেয়ের জন্য?
মিসেস ইসাবেলা আর ভাবতে পারলেন না, জনাব আলী মেহবুব হতদন্ত হয়ে রুমে এসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন, অনিতা কে নিয়ে ডা এর কাছে চলো।
মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই এরকম ভয় পেলে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সিফাত তাৎক্ষণিক ভাবেই দাঁড়িয়ে পরল, আর অনিতা কে পাঁজা কোলে করে রুমের বাহিরে নিয়ে এলো।
জন কে নিয়ে জনের মা হসপিটালে চলে গেছেন খানিক আগে। জনের অবস্থা খুব জটিল।
অনিতা কে সিফাত তার গাড়িতে করে নিয়ে গেল।
সাথে মিসেস ইসাবেলা ও গেলেন।
সিফাত অনিতা কে বাড়িতে নিয়ে এসে ওর রুমে শুয়ে দিল আর ডা কে কল করল ইমেডিয়েটলি আসার জন্য।
রুমে সবাই বসে আছে ডা চেকাপ করছেন অনিতা কে। ডা বললেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই প্রচন্ড ভয় পাওয়ার কারণে এমটা হয়েছে।
কিছুক্ষণ বাদেই অনিতার জ্ঞান ফিরবে। সিফাত যেন তার জান ফিরে পেল এতক্ষণে।
সে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
একটু পর অনিতা চোখ খুললো। অনিতার মামিমা ওর পাশে বসা ছিলেন। জ্ঞান ফিরছে দেখে উনিও যেন চিন্তা থেকে রেহাই পেলেন।
মিসেস ইসাবেলা অনিতা কে জিজ্ঞেস করলেন, এখন কেমন লাগছে মামনি?অনিতা ক্ষীণ আওয়াজে বললো, কিছুটা ভালো লাগছে।
অনিতা বুঝতে পারলো সে এখন বাসায় আছে। আর কিছু না বলে আবার চোখ বন্ধ করে রইল।
ও ভাবছে জন কি বেঁচে আছে না কি মরে গেছে?
কারণ সিফাত ভাইয়া যে পরিমাণ রেগে গিয়ে ছিলেন। যদি এমন কি কিছু হয় জন মারা গেছে তবে? নাহ আমি আর ভাবতে পারছি না আমার জন্য সিফাত ভাইয়া জেল কাটবেন! যদি উনার ফাঁসি হয়ে যায়?এ সব ভাবতেই অনিতার শরীর দিয়ে এক হিম শীতল স্রোত বয়ে গেল।
হঠাৎ অনিতার কানে সিফাত এর আওয়াজ এলো,
মম আনি কে কিছু খাইয়ি দাও, ওর মেডেসিন খেতে হবে।
অনিতা চোখ খুলে তাকাল, দেখল সিফাত তার বেডের ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছে, আর সিফাতের সবুজ চোখ গুলো কেমন ফোলে গেছে।
এতে যেন সিফাত কে আরো সুন্দর লাগছে। অনিতা আর চেয়ে থাকতে পারলো না তার হৃদ কম্পন বাড়ছে ঘোর লেগে যাচ্ছে, সিফাত কে দেখার নেশা পেয়ে বসছে। সব মিলেয়ে খুব বাজে ব্যাপার লাগছে অনিতার কাছে।
মিসেস ইসাবেলা একটা বাটিতে করে সামান্য স্যুপ আনলেন অনিতা কে খাওয়ানোর জন্য।
অনিতার মুখের কাছে খাবার নিতেই মুখ উল্টো দিকে ঘুরে নিল, সে খাবে না।
মিসেস ইসাবেলা বললেন, একটু খেয়ে নাও মামনি। মেডেসিন খাবে তো প্লিজ মামনি খেয়ে নাও।
অনিতা কে তার মামিমা খাইয়ে দিচ্ছেন।
সবাই একে একে রুম ত্যাগ করলেন। অনিতা চারিদিকে চোখ বুলালো কেউ নেই।
এখন মামিমা কে জিজ্ঞেস করি জনের কথা ও বেঁচে আছে কি না?আবার ভাবছে যদি মামিমা রেগে যান?
মিসেস ইসাবেলা লক্ষ্য করছেন অনিতা কিছু নিয়ে চিন্তা করছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি নিয়ে এতো ভাবছো মামনি?
অনিতা তার সম্মতি ফিরে পেয়ে বলল, মামিমা একটা কথা বলি?
উনি বললেন, হে মামনি বলো এতো সংকোচ বোধ করছো কেন?
অনিতা যেন কথা টা জিজ্ঞেস করতে ভরসা পেল।
সে বলল, মামিমা জন কি বেঁচে আছে? উনি একটু হাসলেন অনিতার প্রশ্নে। তারপর বললেন, হুম মামনি জন বেঁচে আছে তবে অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল।
একথা শুনা মাএ অনিতা তার মামিমা কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল। উনি যেন অনিতার এমন কান্ডের মানে বুঝতে পারলেন না।
মিসেস ইসাবেলা অনিতা কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাদঁছো কেন মামনি? অনিতা ফুফিয়ে কেঁদে উঠে বলতে লাগল, মামিমা যদি জন মরে যায় তাহলে তো পুলিশ সিফাত ভাইয়া কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। ভাইয়ার যদি ফাঁশি হয়ে যায়?
উনি শান্ত কন্ঠে জবাব দিলেন, এমন কিছুই হবে না মামনি তুমি খামোকাই এসব চিন্তা করছো।
আমার ছেলে কে একদিন ও কেউ জেলে রাখতে পারবে না। এই কানাডার মতো দেশে আমার ছেলে কে সবাই এক নামে চিনে সিফাত মেহবুব।
সে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
মামিমার কথায় যেন অনিতা কিছুটা স্বস্তি পেল।
এরপর অনিতা খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে শুয়ে পরল। কাল আবার ভার্সিটি যেতে হবে।
অনিতা ঘুমানোর খানিক বাদে কেউ একজন খুব সাবধান পায়ে অনিতার রুমে প্রবেশ করল।
সে অনিতার মাথার পাশে বসে অনিতার মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে রইল।
তারপরই তার চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে পরল।
আর রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলতে লাগল, আমাদের দু জনের মাঝে যে আসতে চাইবে তার পরিণতি খুব ভয়ানক হবে খুব ভয়ানক!
অনিতার কপালে তার ঠোঁট জোরা দিয়ে খুব গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিল। যেই না লোকটি তার রুম থেকে বের হতে যাবে অমনি অনিতা লোকটার হাত ধরে ফেললো। সে ভয় পেয়ে গেল যদি অনিতা জেগে যায়, তাহলে কি জবাব দেবে? এসব ভাবনার মাঝে আবার হাতে টান পরল।
পার্ট: ৬
এসব ভাবনার মাঝে আবার হাতে টান পরল অনিতা ঘুমের ঘরেই সিফাতের হাত চেপে ধরেছে। খুব শক্ত ভাবেই ধরেছে। সিফাত অনিতার হঠাৎ হাত ধরায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল। অনিতা সজাগ আছে কি না দেখার জন্য সিফাত তাকাল অনিতার দিকে।
নাহ, তার মায়াকুমারী জেগে নেই। সে ঘুমের ঘোরে তার হাত ধরেছে। সিফাত যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো যাক তাহলে আমার কথা আনি শুনতে পায়নি। সিফাত আবার বসে পরল অনিতার বেডের পাশে।
আবার তাকাল তার মায়াকুমারীর দিকে, আর বলতে লাগলো আনি আমি তোমাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু আমি প্রকাশ করিনি যদি তুমি রেগে যাও বা আমায় না করে দাও যে, তুমি আমাকে ভালোবাস না এই ভয়ে। জানতো মায়াকুমারী আমি অন্যদের মতো আবেগ, ভালবাসা এই সব প্রকাশ করতে জানি না, তাইতো তোমায় মনের সুপ্ত অনুভূতি গুলো গুছিয়ে বলতে পারছি না।
মায়াকুমারী তোমাকে প্রথম যেদিন বাংলাদেশে দেখে ছিলাম সে দিনই তোমাকে ভালবেসে ফেলি। তুমি কারো সাথে কথা বললে আমি নিজে কে কন্ট্রোল করতে পারি না মনে হয় তোমায় এই বুঝি হারিয়ে ফেলছি। তাইতো সেদিন বাংলাদেশে তোমার সাথে রুড বিহেভ করে চলে আসি।
বাংলাদেশ থেকে কানাডা যখন চলে আসলাম তখন মনে হয়ে ছিল আর আমার মায়াকুমারী কে দেখতে পারব না। কিন্তু প্রতি রাত তোমার কথা ভেবে পার করে দিতাম।
তোমায় বিষণ মিস করতাম। মন চাইতো ছুটে যাই #তার_শহরে। আমাকে তো একদিন যেতেই হতো তোমার কাছে। তোমাকে ছাড়া যে আমি নি:স্ব আনি। বড্ড বেশি ভালবেসে ফেলেছি তোমায়। দেখো ভাগ্যের কি খেলা ভাগ্য আবার তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসলো।
তুমি চলে আসলে তোমার বাবা- মার সপ্ন পূরণ করতে আমার পৃথিবীতে।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। আমি বের হয়ে আসলাম আনির রুম থেকে। আসার আগে আবারও ওর কপালে গভীর ভাবে চুমু একেঁ দিলাম। আমার রুমে এসে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।
আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় দরজায় কেউ নক করল। আমি বললাম ভেতরে আসতে পারেন এই বলে আবার আমার কাজে মনোযোগ দিলাম।
হঠাৎ আয়নায় সিফাত ভাইয়া কে দেখতে পেলাম।
আমি চমকে উঠে পিছনে ঘুরে তাকালাম হে সত্যিই সিফাত ভাইয়া!
উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন দেখে আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আপনার কি কিছু দরকার? উনি কোনো জবাব না দিয়ে আমার দিকে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
উনার এভাবে আসা দেখে আমি বললাম, সিফাত ভাইয়া আমি কি আবার কোনো ভুল করেছি? আমার কথায় উনি একটু বাঁকা হাসলেন তারপর বললেন হে করেছ।
উনার এমন জবাবে ভয়ে আমি একটা শুকনো ঢুক গিললাম, আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি আবার কি করলাম?বুঝতে পারলাম ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে।
সিফাত ভাইয়া আমার একদম কাছে এসে বললেন, কাল যে ক্ষতটা হয়েছিল সে জায়গায় এই মলম টা লাগিয়ে নিয়ও।
বলেই আমার হাতে একটা মলম দিয়ে চলে গেলেন।
আমি ভাবছি সিফাত ভাইয়া এমন কেন নিজে ব্যাথা দিবে আবার নিজেই মলম লাগিয়ে দিবে। আর ভাবলাম না, উনার কথা যত ভাবতে যাব ততো আমার মাথা খারাফ হবে। সিফাত ভাইয়া কে বুঝা বড় দায়!
আমি নিচে আসলাম নাস্তা করতে। মামিমা আমাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলেন, সাথে গুড মর্নিং ও জানালেন। আমি ও গুড মর্নিং জানালাম সবাইকে।
নাস্তার টেবিলে বসে আছি এমন সময় দেখলাম সিফাত ভাইয়া সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, উনাকে দেখা মাএ আমার হৃৎপিন্ড টা অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। উনি এত কিউট কেন?দেখলেই ইচ্ছে করে গাল টেনে দিতে। উনাকে দেখলে মনেই হবে না যে, উনি এত রাগি!
মামার কথায় আমার ভাবনায় ছেদ পরল।
অনিতা খাওয়া শুরো করো তোমার লেট হয়ে যাবে মামা বললেন।
এর মধ্যে সিফাত ভাইয়া আমার অপোজিট চেয়ারে বসে পরলেন। উনার বসা দেখে ভয়ে আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না, বজ্জাতটা আবার কি করে বসে?
এই ভাবনার মধ্যে হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম, সিফাত ভাইয়া আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছেন। উনার এমন চাহনির কারণ টা আমি ঠিক বুঝলাম না। নিজের দিকে তাকালাম আমার সব ঠিক আছে কি না, আমার তো সব ঠিক আছে। আজ আমি ব্লু শার্ট পরেছি, আর হোয়াইট জিন্স সাথে হোয়াইট স্কার্ফ গলায় ঝুলিয়ে রেখেছি, পায়ে ব্লু সু পরেছি। আয়নায় তো দেখলাম আমায় মন্দ লাগছে না!
সাজগোজ তো করিনি একদম জল্লাদটার ভয়ে।
তাহলে উনি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?
জিসান হয়তো ফলো করছে এসব, জিসান আমার পাশের চেয়ারে বসা ছিল। জিসান আমার কানের কাছে তার মুখ এগিয়ে বলতে লাগল, আপু আমার ভাইয়া তোমার দিকে তাকানোর কারণ টা কি বুঝতে পারো নি?
আমি প্রশ্ন বোধক চোখে তাকালাম জিসান এর দিকে, আর কিছুটা অবাক হয়ে!
জিসান আমার তাকানোর মানে বুঝতে পেরে বলল, আপু তুমি বড় হয়েছ ঠিকি কিন্তু তুমি অনেক কিছু এখন ও বোঝনা।
আমি আরো অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। আর মনে মনে বললাম বলে কি এই ছেলে আমি নাকি অনেক কিছু বুঝিনা?
ফিসফিসিয়ে ওকে বললাম, তা কি বুঝিনা আমার বুড়ো দাদা একটু বুঝিয়ে বলোতো তোমার এই অবুঝ নাতনি টা কে?
জিসান আমার কথায় চাপা হাসলো। তার পর একটু ভাব নিয়ে বলল, ভাইয়া আর তুমি সেম কালার শার্ট পরেছ।
জিসান এর কথায় আমি তাকালাম সিফাত ভাইয়ার দিকে। ঠিকি তো আমার আর উনার শার্ট এর কালার প্রায় একি।
সিফাত ভাইয়া জানলেন কি করে আমি এই কালার শার্ট পরবো!
এটা কি কোনো কো- ইনসিডেন্স নাকি অন্যকিছু?এই সব ভাবছি আর খাচ্ছি।
তার মাঝে মামা বলে উঠলেন, আজ তো সিফাত এর জরুরি মিটিং আছে ওকে মাস্ট এটেন্ড করতে হবে কথা টা বলে মামা থামলেন। মামা আবার বললেন, তাই অনিতা কে আজ ভার্সিটিতে জিসান ড্রপ করে দিবে। জিসান কিছু বলার আগে সোহেল ভাইয়া বলে উঠলেন, আজ তো জিসানের কলেজ আছে পাপা!
আমি তাকালাম সিফাত ভাইয়ার দিকে, চেয়ে দেখি উনি চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন সোহেল ভাইয়ার দিকে।
উনার চাহনি দেখে বললাম, আমি একা যেতে পারবো মামা।
সোহেল ভাইয়া মাঝে বলে উঠলেন, একা কেন যাবে অনিতা?আজকে আমার ভার্সিটিতে অফ ডে, আমি তোমায় ড্রপ করে দিবনে। মামা ও সায় দিলেন সোহেল ভাইয়ার কথায়।
সিফাত ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না। জিসান ও আর কিছু বললো না।
সোহেল ভাইয়া অনুমতি পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে এমন ভাব করছে।
হঠাৎ বিকট আওয়াজ পেয়ে আমার সামনে তাকালাম, চেয়ে দেখি সিফাত ভাইয়া তার চেয়ার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আমার বুঝতে বাঁকি রইলো না উনার এমন কান্ডের কারণ।
মামিমা কে বায় বলে চলে গেলেন উনি।
কিছুক্ষণ পর আমি আর সোহেল ভাইয়া ও ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলাম।
সোহেল ভাইয়া ড্রাইভ করছেন আর বক বক করছেন।
আমার মন এসবে নেই, আমি ভাবছি সিফাত ভাইয়ার কথা। লোকটা কেমন অদ্ভুত টাইপের আমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারেন না এমন কি নিজের আপন ভাইকে ও না। তবে কেন?আমি যা ভাবছি তবে কি তাই?
সোহেল ভাইয়ার ডাকে আমার ধ্যান ভাঙ্গল, এসে গেছি মেম আপনার ভার্সিটিতে নামুন। আমি হেসে বললাম, হে ভাইয়া নামছি। উনি বললেন, তোমার হাসিটা খুব সুন্দর অনিতা। মুচকি হাসি দিয়ে আমি উনাকে বায় বলে চলে আসলাম।
একটু তাড়াহুড়া করে ক্লাস এর দিকে যাচ্ছি।
হঠাৎ কারো সাথে জোড়ে ধাক্ষা লাগল ঠাল সামলাতে না পেরে ওই ব্যক্তি সহ নিচে পরে গেলাম। আমি অনুমান করলাম আমি কারো বুকের উপর আছি। ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালাম, কে সে দেখার জন্য।
আমি তো ওই ব্যক্তি কে দেখে পুরাই অবাক!
পার্ট : ৭
আমি তো ওই ব্যক্তি কে দেখে পুরাই অবাক!
আমি যার সাথে ধাক্ষা লেগে পরে গেছি তাকিয়ে দেখি লোকটা দেখতে একদম চার্লির ফটো কপি। আরো ভাবছি একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের চেহারার এত মিল হয় কি করে?আমার অবাক হয়ে তাকানো দেখে ছেলেটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে তার বুক থেকে উঠার জন্য বলল।
আমি লজ্জায় নতোজানু হয়ে ছেলেটার বুক থেকে সরে আসলাম। তার মধ্যে শুনতে পেলাম চার্লির কন্ঠ, সে আমাকে বলছে হোয়াট স আপ আনিটা?এই মূহর্তে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। যেন পৃথিবীর সব লজ্জা আমায় আকঁড়ে ধরছে তিব্র ভাবে। এতো তাড়াহুড়া করে না আসলে এমন বাজে কান্ডের সম্মুখীন হওয়া লাগতো না। আমার ভাবনার মাঝেই ছেলেটা বলল, আই এম সরি ফর এভরি থিং।
আমি মাথা তুলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম, সরি আমার বলা উচিত তোমার না। কারণ দোষ টা আমার আমি খেয়াল করিনি। আই এম সরি!
আমাদের কথা বার্তা চার্লি কিছুই বুঝল না, তাই আমাকে জিজ্ঞেস করল ওর সাথে কি হয়েছে?আমি আমতা আমতা করে ওঁকে পুরো ঘটনা টা বললাম। চার্লি কিছু সময় নিরব থেকে তারপর হু হু করে হাসতে লাগল। ওর এমন হাসির কারণ বুঝতে না পেরে ওর দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকালাম।
চার্লি তার হাসি থামিয়ে বলল, ও আমার আপন ভাই চার্লস। আর আমরা জমজ তাই দেখতে একি রকম। আমি বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেলাম না।
চার্লি তার ভাইকে বলল, চার্লস তকে কাল ওর কথাই বলে ছিলাম আমার নিউ ফ্রেন্ড।
ভাবছিলাম আজ তদের পরিচয় করিয়ে দিব আগামীকাল তো তুই ভার্সিটিতে আসিসনি। কিন্তু তার আগেই তোমরা পরিচিত হয়ে গেলে বলেই চার্লি দুষ্ট হাসি দিল।
চার্লস আমার দিকে তার হাত বারিয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। আমিও আমার হাত বারিয়ে হ্যান্ডশেক করলাম। ও আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করল, মৃদু হেসে বললাম অনিতা। চার্লস ও হালকা হাসি দিয়ে বলল, ওহ আনিটা নাইচ নেইম।
মনে মনে বললাম এই জাতি ঠিক হবে না, আর আমার নাম টা আনিটাই থেকে যাবে!এরমধ্যে চার্লি তাড়া দিল ক্লাসে যাওয়ার জন্য। আমরা তিন জন চললাম ক্লাসের দিকে। আমি হাঁটছি আর ভাবছি, চার্লস ছেলেটা খুব মিশুক মনের। কি সুন্দর তার চোখ জোরা, চার্লির চোখ থেকেও আরেকটু সুন্দর। গাড়ো ব্রাউন কালার চোখের মনি, চুল গুলোও ব্রাউন কালার। র্ফসা চেহারা আর ব্রাউন কালার চোখ, চুল দুটোই যেন পার্ফেক্ট। এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাস রুমে এসে গেলাম। আমরা তিন জন এক জায়গায় বসলাম।
আমি ওদের দুজনের মধ্যেকানে বসলাম। ওরা ভাই, বোন বিরতিহীন ভাবে কথা বলেই যাচ্ছে। আমি নিরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করছি। লক্ষ্য করলাম চার্লস কিছু সময় বাদে বাদে আমার দিকে তাকাচ্ছে যার কারণে আমি অপ্রস্তুতবোধ করছি। হঠাৎ চার্লস বলে উঠল, আনিটা তুমি কথা বলছ না কেন?ওর করা প্রশ্নে আমি কিছুটা মৃদু হেসে বললাম, তোমরা কথা বলো আমি শুনছি। আমার শুনতেই ভাল লাগে। চার্লস যেন আমার জবাবে সন্তুষ্ট হলো না। মনে মনে ভাবছি আমি যেভাবে চার্লস এর পাশে বসেছি!সিফাত ভাইয়া যদি এখন এমন দৃশ্য দেখেন তাহলে নিশ্চিত কিয়ামত ঘটাবেন?
ভেবেই যেন আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমি উনাকে এতো ভয় পাই কেন এর কারণ আমার অজানা!
মনকে শান্তনা দিলাম এই বলে, উনি এখানে আসবেন কোথা থেকে?আমি অযতাই চিন্তিত হচ্ছি।
চার্লির ধাক্ষায় আমার ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসলাম। তুমি মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাও আনিটা? চার্লি বলল।
আমি হেসে বললাম কই না তো!কি বলবে বলো চার্লি শুনছি।
চার্লি একটু কেশে বলল, তোমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?দেখলাম চার্লস ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি একটু পর বললাম, নাহ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। চার্লস আর চার্লি যেন অবিশ্বাসি চোখে তাকাল। আমাদের আর কোনো কথা হলো না ইতিমধ্যেই স্যার চলে আসছেন ক্লাসে।
আমার সব ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছি বাসার উদ্দেশ্য। আমাকে একাই ফিরতে হবে কোনো ক্যাব নিয়ে। ভার্সিটির বাহিরে এসে আমি থ হয়ে গেলাম। চেয়ে দেখি সিফাত ভাইয়া উনার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন।
একটা ফাঁকা ঢুক গিললাম। ভাবছি সিফাত ভাইয়া এখানে কি করছেন?
আমাকে দেখে উনি ইশারা করলেন উনার কাছে যাওয়ার জন্য। ভয়ে জড়সড় হয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম উনার দিকে।
নিশ্চয়ই আমি আবার কোনো বড় মাপের ভুল করেছি তাইতো উনি আমার ভার্সিটি চলে আসছেন, শাস্তি দিতে। মনে মনে ভাবছি। উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, সিফাত ভাইয়া আমাকে ধমকে বলে উঠলেন এই মেয়ে তুমি আমায় এতো ভয় পাও কেন?আমি বাঘ না সিংহ যে তোমায় খেয়ে ফেলব?
আমি কিছু বলছি না আমার অন্তর আত্মা কাঁপছে উনার ধমকে। ভয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার মুখ থেকে।
সিফাত ভাইয়া আমার একটু কাছে এসে বললেন, তোমার কাঁপাকাঁপি বন্ধ কর। আর গাড়িতে গিয়ে বস। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখলাম তোমার ভার্সিটি ছুটি তাই ভাবলাম তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাই। কোনো শাস্তি দেওয়ার জন্য না। সিফাত ইচ্ছে করেই এসেছে অনিতা কে নিতে। এখন মিথ্যা বলছে যদি অনিতা মাইন্ড করে তাই।
অনিতা গাড়িতে বসে ভাবছে, বজ্জাতটা আমার মনের কথা জানল কি ভাবে?
সিফাত গাড়ি ড্রাইব করছে আর বলছে এতো ভেবোনা আনি। মুখ দেখে আমি অনেক কিছু বুঝে ফেলি।
আমি মনে মনে বললাম উনার দেখি অনেক গুন। আর কিছু না ভেবে সামনের দিকে একমনে তাকিয়ে রইলাম। কানাডা দেশটা সত্যিই সুন্দর। মানুষরা যে যার নিজ গতিতে হাঁটছে।
আমার এসব ভাবনার মাঝে সিফাত ভাইয়া জোরে গাড়ি ব্রেক করলেন, আমি উনার এমন জোরে ব্রেক করায় তাকালাম উনার দিকে। তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে কিছুটা রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।
ভয় পেলাম উনার রাগি চোখে তাকানো দেখে। সিফাত ভাইয়া কিছু না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন, আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম ভয়ে আমার হৃৎপিন্ডটা ট্রেনের গতিতে ছুটছে। অনুভব করলাম উনার গরম নি:শ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচরে পরছে।
কিছুক্ষণ বাদে দেখি গরম নি:শ্বাসটা আর আমার মুখে পরছে না। আমি চোখ খুলে তাকালাম তাকিয়ে দেখি উনি মুখে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে রয়েছেন। বুঝলাম না উনার এমন কাজের মানে কি?
সিফাত ভাইয়া মুখে শয়তানি হাসি রেখেই বললেন, তোমার সিট বেল্ট বাঁধনি। তাই সিট বেল্ট বেঁধে দিলাম।
এখন লজ্জায় ইচ্ছে করছে সিফাত ভাইয়ার সামনে থেকে ছুটে পালাই। আমি কি থেকে কি ভাবছি ইসস এই লজ্জা এখন রাখি কোথায়?
সিফাত অনিতার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।
তারা এর মধ্যেই বাসায় চলে এসেছে। অনিতা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। কিছু না বলে অনিতা গাড়ি থেকে ছুটে পালাল।
সিফাত অনিতার যাওয়ার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বলল, লজ্জা পেলে কাউকে এতো মারাত্মক সুন্দর দেখায় আনি কে না দেখলে জানতেই পারতাম না!
অনিতা তার রুমে এসে কয়েকটা বড় বড় নি:শ্বাস নিল। উনি এমন কেন?আমার নি:শ্বাস টা প্রায় আটকে যাচ্ছিল উনার এমন করে কাছে আসায়!
আর কিছু ভাবার টাইম নাই প্রচন্ড ক্ষিধায় পেটে আমার ইঁদুর দৌড়ঁচ্ছে। ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম খাওয়ার জন্য। মামিমা আমায় দেখে হাসলেন আর বললেন আসো মামনি খেয়ে নাও। আমি ও খেতে বসে গেলাম।
সবাই খাচ্ছে সাথে বজ্জাতটা ও আছে। আজও সিফাত ভাইয়া আমার পায়ে উনার পা দিয়ে স্লাইড করছেন। আর আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি উনার স্পর্শে। তাকিয়ে দেখলাম উনি খাচ্ছেন আর হাসছেন। একটু খেয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। উনার এসবের মানে কি উনার কি সব সময় রোমান্টিক মুড অন থাকে নাকি?যত্তসব ফালতু পাবলিক খাওয়ার মুড টাই নষ্ট করে দিল।
বাবা- মার কাছে ফোন দিয়ে উনাদের সাথে কথা বলে নিলাম।
আমি আমার বই নিয়ে পড়তে বসলাম। এখনও আমার বই গুলো ভালো ভাবে দেখা হয়নি। বেডের মাঝে বসে বসে বই গুলো একের পর এক দেখছি।
হঠাৎ ই সিফাত ভাইয়া আমার রুমে এসে আমার কোলে মাথা রাখলেন। তারপর আদেশের সুরে বললেন, আনি আমার চুলটা একটু টেনে দাঁওতো। খুব মাথা ধরেছে আজ। আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছিনা, এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বসে রইলাম!
উনি আমার হাত উনার মাথায় রাখলেন, আর বললেন দাওনা আনি?
উনার আবদারটা একদম বাচ্ছা বাচ্ছা লাগছিল। আমি হেসে দিলাম, উনার এমন আবদার আর উপেক্ষা করতে পারলাম না। উনার চুল টেনে দিতে লাগলাম। সিফাত ভাইয়া আচমকাই উনার দু হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন। উনার এমন কান্ডে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। সিফাত ভাইয়া খানিক বাদে আমার পেটে মুখগুজলেন আমি একদম ফ্রিজড হয়ে গেছি। জড় পর্দাথের ন্যায় বসে আছি আমার হাত পা অবশ হয়ে আসছে।
আর উনি উনার কাজে ব্যস্ত।
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে আমার পায়ের তলার মাঠি সরে গেল, আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরেছে। ভয়ে আমার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল।
পার্ট: ৮
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে আমার পায়ের তলার মাঠি সরে গেল, আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পরেছে। ভয়ে আমার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল।
দরজার ওপাশের ব্যক্তিটি আর কেউ নয় উনি সোহেল ভাইয়া, সাথে জিসান ও আছে। সোহেল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে রক্তচুক্ষ নিয়ে চেয়ে আছেন। যেন এখনি সব কিছু ধংস করে দিবেন। এদিকে সিফাত ভাইয়া আমার পেটে মুখগুজে রয়েছেন। আর উনার কোঁচা কোঁচা দাঁড়ি আমার পেটে লেগে সুড়সুড়ি লাগছে। যেন এক অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে। উনি আরো গভীর ভাবে পেটে মুখগুজে বলছেন, চুল টেনে দিতে। আমি তো ভয়ে আর লজ্জায় একাকার হয়ে যাচ্ছি। সোহেল ভাইয়ার এমন ভয়ংকর রিয়্যাকশ দেখে আমার ভিষণ ভয় করছে।
কারণ এর আগে আমি কখনও সোহেল ভাইয়ার এমন ভয়ংকর রূপ দেখিনি। হঠাৎ করেই জিসান হাল্কা কাশি দিল, আর উনি ধরফরিয়ে আমার কোল থেকে মাথা তুললেন। তাৎক্ষণিক ভাবে ওরা রুমে প্রবেশ করল। রুমে ঢুকেই সোহেল ভাইয়া, সিফাত ভাইয়ার উদ্দেশ্য বললেন সরি ভাইয়া তোমাদের রোমান্টিক মূর্হতে ডিস্টার্ব দিলাম। উনার কথায় আমি লজ্জায় নিচের দিকে চেয়ে রইলাম। চাপা রাগ নিয়ে কথাটা বলেছেন সোহেল ভাইয়া। লক্ষ্য করলাম সিফাত ভাইয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে, উনি হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলেন। আমি বুঝতে পারছি এখন কি হতে চলছে। তাই আমিই আগ বারিয়ে সোহেল ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া আপনি ভুল ভাবছেন।
আসলে আমি বা উনি এখানে এমন কিছুই করছিলাম না যার জন্য আপনি এতো হাইপার হচ্ছেন। উনার নাকি প্রচন্ড মাথা ধরেছে তাই চুলটা টেনে দিচ্ছিলাম। দ্যাট স ইট!
আমার কথায় সোহেল ভাইয়া কিছুটা ধমে গেলেন। তারপর বললেন ওহ ওকে অনিতা।
বাই দ্যা ওয়ে, আমি আর জিসান তোমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছি তুমি কি ঘুরতে যাবে?
আমরা বাহিরে যাচ্ছি তাই ভাবলাম তোমাকে ও সাথে নিয়ে যাই। জিসান বলল, আপু অনেক দিন হলো তুমি কানাডা এসেছ। কোথাও ঘুরতে যাওনি তাই তোমাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাব। ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে তাকালাম সিফাত ভাইয়ার দিকে উনি আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আতংকে উঠলাম। রাগে উনার সবুজ রংয়ের চোখ দুটো চিকচিক করছে। আমি কি ওদের না করে দিব?
এরমধ্যেই মামিমা আমার রুমে এসে বললেন, যাও মামনি বাহির থেকে ঘুরে এসো ভাল লাগবে। সিফাত ভাইয়, সোহেল ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে হনহনিয়ে চলে গেলেন। ভয়ে আমার চেহারা বির্বণ হয়ে গেল। সিফাত ভাইয়ার এমন নিরবতা যেন ঝড় আসার আগের পূর্বাভাস।
মামিমার কোনো কথা আমি ফেলতে পারিনা। কারণ উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসেন। আর কোনো কথা না বলে আমি রেডি হতে গেলাম বাহিরে যাওয়ার জন্য। রেডি হয়ে নিচে নেমে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ওরা দুজন আগেই বসে আছে। আমি পেছনের সিটে বসে ছিলাম। কিন্তু সোহেল ভাইয়ার জোড়াজোড়িতে বাধ্য হয়ে সামনের সিটে বসতে হলো। আর জিসান গিয়ে বসল পেছনের সিটে। সোহেল ভাইয়া ড্রাইভ করছেন আর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন।
উনার এমন ভাবে তাকানোয় অস্বস্তি লাগছে খুব। সহ্য করতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ভাইয়া কিছু বলবেন?আমার করা প্রশ্নে সোহেল ভাইয়া একটু হাসলেন তারপর বললেন, অনিতা তোমাকে আজ দারুণ লাগছে। তোমাকে শার্ট আর জিন্স এ একদম বিদেশি মেয়েদের মতো লাগে। দেখলে বুঝাই যায় না তুমি বাংলাদেশি, পুরো কানাডিয়ান লুক।
সোহেল ভাইয়ার কথায় আমি তেমন কিছু বললাম না। উনার বলা কথায় আমি কোনো আগ্রহবোধ করি না। আগের করা ঘটনার জন্য সোহেল ভাইয়াকে মনে মনে কয়েকটা ভয়ংকর গালি দিলাম। উনি খুব ন্যারর মাইন্ডের মানুষ। এই সোহেল কে এখন আমার কাছে প্রচন্ড রকমের বিরক্তি লাগছে।
জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। কেন জানিনা সিফাত ভাইয়ার জন্য মন খারাফ লাগছে। আমার পেটে উনার মুখগুজে থাকার কথা মনে পরতেই আনমনেই আমার পিটের শির দ্বারা দিয়ে এক শীতল শ্রোত বয়ে গেল। অজানা এক অনুভূতিতে আমি শিহরিত হতে লাগলাম।
জিসান এর ডাকে আমি ফিরে তাকালাম ওর দিকে। আপু আমরা পৌঁছে গেছি, জিসান বলল। চারদিকে চেয়ে দেকি এটা একটা শপিংমল। ওর দিকে জিজ্ঞেসা চোখে তাকালাম, আমরা এখানে কেন জিসান?ইতিমধ্যে সোহেল ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে এসেছেন। উনি আমার দিকে চেয়ে বললেন, জিসান এর কিছু দরকার আছে তাই শপিংমলে এলাম। আমি বললাম, আমার তো কোনো দরকার নেই আমি গাড়িতে বসছি তোমরা যাও। সোহেল ভাইয়া বললেন চলো তো অনিতা ঘুরে আসবে। আর একা একা গাড়িতে বসে বরিং হবে তারচেয়ে ভাল চলো। ভেতরের দিকে চললাম।
জিসান আর সোহেল ভাইয়া অনেক কিছু কিনল। আমি কিছু কিনব না বলেও কাজ হলো না। সোহেল ভাইয়া আমাকে একটা টি- শার্ট আর একটা জিন্স গিফট হিসেবে দিলেন। আমরা শপিংমল থেকে বের হয়ে একটা রেষ্টুরেন্ট এ গেলাম খাওয়ার জন্য।
সেখানে গিয়ে আমার চোখ চরকগাছ!কারণ অনেক গুলো মেয়ে এসে সোহেল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরছে। মেয়ে গুলোকে দেখে আমার অস্বস্তি হচ্ছে। তাদের পরনের ড্রেস গুলো অতি মাত্রায় ছোট। মেয়ে গুলো আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, আমি কে?
সোহেল ভাইয়া ফিসফিসিয়ে কি বললেন আমি ঠিক বুঝলাম না। তারপর একে একে আমাকে হায়, হেলো বলে ওরা চলে গেল।
আমরা খেয়ে দেয়ে আরো কিছুক্ষন ঘুরে বাসায় ফিরলাম সন্ধ্যা সাত টায়। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। শরীর টা ক্লান্ত লাগছিল তাই শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ কারো ধাক্কায় আমার ঘুম ভাঙ্গল, চেয়ে দেখি মামিমা। আমার তাকানো দেখে মামিমা বললেন, উঠে যাও মামনি ডিনার করতে হবে। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম রাত প্রায় বারো টার কাছাকাছি। কিছুটা অবাক হলাম আজ এতো ঘুমিয়েছি!মামিমা আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য বলে গেলেন।
একটু পরে নিচে গেলাম গিয়ে চেয়ারে বসলাম। মামিমা খাবার সার্ভ করছেন সবাইকে। দেখলাম সিফাত ভাইয়ার চেয়ারটা খালি। কিছু সময় পরও যখন উনি আসলেন না,
অনেকটা সংকোচবোধ নিয়েই মামিমা কে সিফাত ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করলাম। মামিমা বললেন উনি নাকি বিকেল থেকে দরজা খুলছেন না। একথা শুনে অজানা ভয়ে আমার মন ধক করে উঠল।
আমার আর খাওয়া হলো না, গলা দিয়ে খাবার নামছে না। হাত ধুয়ে উপরে চলে আসলাম। রুমে এসে মনে শান্তি পাচ্ছিনা ইচ্ছে করছে সিফাত ভাইয়া কে এক নজর দেখে আসি। আমি যে উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছি তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।
নিজের ইচ্ছাটাকে আর ধমিয়ে রাখতে না পেরে উনার রুমের দিকে চললাম। যত এগোচ্ছি ততো হৃৎপিন্ড টা ক্রমান্বয়ে দ্রত গতিতে দৌড়াঁচ্ছে ভয়ে আর জড়তায়।
উনার রুমের সামনে এসে আমার হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। সাহস করে নক করলাম দরজায়। কিছু সময় অপেক্ষা করে চলে আসার জন্য যখন উদ্বেত হলাম, তখনি সিফাত ভাইয়া আমাকে হ্যাচকা টান দিয়ে উনার রুমের ভিতর নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
উনার রুমে গিয়ে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
পার্ট : ৯
উনার রুমে গিয়ে আমি যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
রুমের ভেতরের অবস্থা একদম সিরিয়াস। কোনো জিনিসের ঠিক নেই। মনে হচ্ছে এই রুমের উপর দিয়ে বড় কোনো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। রুমের ভেতরকার সব জিনিসপত্র ভাঙ্গা, ফ্লোরে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। আমি যখন এসব দেখায় ব্যস্ত তখনি সিফাত ভাইয়া হ্যাচকা টানে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। বুঝতে পারছি উনার এসব কিছুর কারণ কি। সিফাত ভাইয়ার দিকে এই মূর্হতে তাকানোর বিন্দুমাত্র সাহসটুকু নেই আমার। ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে আছি। সিফাত ভাইয়া মৃদু গর্জে উঠে বললেন, চোখ খুলো আনি তাকাও আমার দিকে।
কি করে তাকাবো আমি? তাকালেই তো উনার ভয়ংকর চেহারা দেখব। তারপর সাহস করে পিটপিট চোখে তাকালাম উনার দিকে। তাকিয়ে দেখি উনার চোখ দুটো রাগে অগ্নি হয়ে আছে। চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যেন আমাকে গিলে খাবেন। আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, উনি যখন খুব বেশি রেগে যান তখন উনার নাকের ডগা লাল বর্ণ ধারণ করে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নাকের ডগা লালচে হওয়ার কারণে ফর্সা চেহারাটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। উনি আবার দাঁতেদাঁত চেপে বলে উঠলেন, আনি ভালো করে তাকাও আমার দিকে নয়তো খারাপ হবে।
এ কথা বলেই উনি আরো শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলেন। চোখ খুলে উনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, সিফাত ভাইয়া প্লিজ আমার লাগছে ছাড়ুন। উনি আমার কথা কে উপেক্ষা করে বললেন, নিজের ব্যাথাটা ভালো ভাবে বুঝতে পারো আনি, কিন্তু অন্যের ব্যাথাটা বুঝতে পারনা?সিফাত ভাইয়ার এমন কথার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না। উনার দিকে জিজ্ঞাসা চোখে তাকালাম। উনি কোনো জবাব না দিয়ে বলতে শুরু করলেন।
- তুমি সোহেলের সাথে কেন বাহিরে গিয়েছ?তোমাকে আর কত বার বুঝাব তুমি কারো সাথে মিশলে আমার সেটা সহ্য হয় না। বলেই উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
- ভয়ে আমি আমার এক হাত দিয়ে অন্য হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। উনার এমন চিৎকার যেন ঘরময় ফেটে পড়ল বোমার শব্দের মতো। সিফাত ভাইয়া আবার হুংকার ছেড়ে বললেন, স্পিক আউট আনি?
আমি ভয়ে তুতলাতে তুতলাতে বললাম, আমি তো একা যাইনি সোহেল ভাইয়ার সাথে। জিসানও ছিল,
আর মামিমার অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি তাই চলে গিয়েছিলাম।
- সিফাত বুঝতে পারছে অনিতা তাকে এখন বিষণ ভয় পাচ্ছে। এসির মধ্যেও অনিতা ধরধর করে ঘামছে। তাই সিফাত তার রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিল। তারপর শীতল গলায় অনিতা কে বলল, আনি তুমি আর কখনো সোহেলের সাথে কোথাও যাবে না।
এটা আমার পছন্দ না। আর আমার যা পছন্দ না সে টা যদি করো বা করার চেষ্টা করো তার শাস্তি কি হবে তা তোমার কল্পনার বাহিরে। মাইন্ড ইট।
- আমি দু দিকে জোড়ে জোড়ো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম, আমি যাব না। সিফাত ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বললেন, গুড গার্ল।
হঠাৎ আমার চোখ পড়ল উনার ডান হাতের দিকে। আমি চমকে গেলাম উনার হাতে রক্ত কেন?
- একটু ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম, সিফাত ভাইয়া আপনার হাতে রক্ত কেন? কি হয়েছে?
উনি তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বললেন, হাতের রক্তটাই দেখলে আনি, ভেতরের রক্তটা কি করে দেখাব?
- মনে মনে ভাবছি আজ সিফাত ভাইয়ার কি হলো, উনি এমন আচরণ করছেন কেন?আর কি সব জানি বলছেন?আমি আবারও অনুরোধের গলায় বললাম, সিফাত ভাইয়া প্লিজ আপনার হাত টা ধুয়ে আসুন আর বেন্ডেজ করুন। আমার মাথা জিম জিম করছে, রক্তে আমার হিমো ফোবিয়া আছে। উনি তাৎক্ষণিক ভাবে আমার কাছে এসে বললেন, আই এম সরি আনি।
- তুমি এসো বলেই উনি আমার হাত ধরে উনার বেডে বসালেন। তারপর উনি ওয়াশরুমে যেয়ে হাত পরিষ্কার করে আসলেন। উনি আমার থেকে একটু দূরে বসে আছেন। মাথাটা নিচের দিকে ঝুকে রেখেছেন।
ভয়ে ভয়ে বললাম, সিফাত ভাইয়া আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করে নিন। নয়তো আবার ব্লিডিং হতে পারে।
- আমি এ কথা বলার সাথে সাথে উনি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর বললেন,
- এই মেয়ে তোমার মুখে কি সিফাত ভাইয়া ছাড়া আর কোনো শব্দ বের হয় না?
- কিছুটা অবাক হলাম উনার কথায়। ভয়ার্তকন্ঠে আস্তে করে জবাব দিলাম, আপনি আমার ভাইয়া হন তো আপনাকে তো ভাইয়া ই ডাকব!
- উনি চাপা গলায় বললেন, সিফাত ভাইয়া, সিফাত ভাইয়া শুনতে শুনতে আমি ফেড আপ। ভাইয়া মাই ফুট।
- ভাবছি উনাকে তো দেকি কিছুই বলা যায় না, তাহলে বলব টা কি?
ভাবখানা এমন যেন, যে কোনো সময় উনার অগ্নিকুন্ড দ্বারা ভষ্ম করে দিবেন আমায়।
আমি একটু নম্র আওয়াজে উনাকে ডাক দিলাম, এই যে শুনছেন?
- উনি জবাব দিলেন, হুম বলো।
- আপনার ঘরে ফাস্ট এইড বক্সটা কোন জায়গায়?আমার দিকে না তাকিয়েই সিফাত ভাইয়া ইশারা করে উনার কাবার্ড দেখিয়ে দিলেন।
- আমি ধীর পায়ে গিয়ে কাবার্ড খুলে বক্সটা নিয়ে আসলাম। তারপর উনার ক্ষত হওয়া স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। আর উনি মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
- সিফাত মনে মনে ভাবছে, আমি তো এটাই চেয়ে ছিলাম আনি। তুমি তোমার হাত দিয়ে আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দাও। আমি জানি আনি তুমি আমার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছো। তাইতো আমার সামান্য ব্যাথা পাওয়াতে তোমাকে এতো বিচলিত আর উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে।
তুমি আমাকে ভালবাসো আর নাই বাসো আমার কিছু যায় আসে না। তুমি তো আমার হবেই আনি। এট এনি কস্ট।
- তুমিই হবে আমার মিসেস সিফাত মেহবুব।
সিফাত মেহবুব তার সব কিছু সবাইকে দিতে পারে কিন্তু তার ভালবাসা কে নয়।
অনিতার ডাকে সিফাতের ভাবনায় ছেদ পড়ল।
- আপনি ডিনার করেননি কেন?
- আমার ইচ্ছা তাই, সিফাত বলল।
- ইতিমধ্যে আমার ব্যান্ডেজ করা শেষ। উনাকে ডিনার করার জন্য বললাম, কিন্তু উনি না করলেন। উনার শরীরে যে জ্বর এসেছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝছি।
সিফাত ভাইয়া আমাকে বলছেন,
- আনি তুমি রুমে চলে যাও। অনেক রাত হয়েছে কাল তোমার ভার্সিটি আছে।
- আমি উনাকে জ্বর এর মেডিসিন খাওয়ার জন্য বলছি। কিন্তু উনি খাবেন না। উনি নাকি ঠিক আছেন। অনেক কষ্টে উনাকে মেডিসিন খাওয়াতে সক্ষম হলাম।
যখনই রুম থেকে চলে আসতে যাব তখন উনি আমার হাত ধরে বললেন,
- আনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে প্লিজ?আমি ঘুমিয়ে গেলে চলে যেয়।
- না করতে পারলাম না উনার আবদারটা। উনার কোনো কিছুতেই আমি না করতে পারি না, কেন জানি না!উনার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। খানিক বাদেই বুঝতে পারলাম উনি ঘুমে তলিয়ে গেছেন। রুমে আসতে যাব হঠাৎ উনার কপালে আর চোখে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিলাম জানিনা এমনটা করতে কেন মন চাইল!
- ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলাম। নাস্তার টেবিলে সিফাত ভাইয়াও আছেন। উনি নি:শব্দে খাচ্ছেন আমার দিকে একটা বারের জন্যও আজ তাকালেন না। উনার এমন ব্যবহারে আমার খুব কষ্ট লাগছে। উনার এমন পরিবর্তন এর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।
হঠাৎ করেই বাসার কলিং বেল বেজেঁ উঠল, মামিমা দরজা খুলে দিলেন।
আর সাথে সাথে ভেতরে একজন অতি রূপসী, অতি সুন্দরী মেয়ে প্রবেশ করল। যার কারণে আমার মুখ হা হয়ে আছে।
পার্ট : ১০
আর সাথে সাথে ভেতরে একজন অতি রূপসী, অতি সুন্দরী মেয়ে প্রবেশ করল। যার কারণে আমার মুখ হা হয়ে আছে!
- আমি হা করে আছি দেখে সোহেল ভাইয়া ডহং এর সুরে বললেন,
- আনি তোমার হা করা মুখটা বন্ধ করো, নয়তো মাছি ঢুকে যাবে।
- সোহেল ভাইয়ার এমন কথায়, আমি খানিকটা লজ্জা বোধ করলাম। তাই মাথাটা নিচের দিকে করে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। এরমধ্যে মেয়েটি মামিমা কে জড়িয়ে ধরে বলল, কেমন আছো আন্টি?
- বুঝলাম মেয়েটি মামিমা র বোনের মেয়ে। মামিমা বলে ছিলেন উনার এক বোন আছে। একে একে মেয়েটি সবাই কে কুশালাদি জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সিফাত ভাইয়া কে ঝাপটে ধরে কুশালাদি জিজ্ঞেস করছে। মনে হচ্ছে সিফাত ভাইয়ার প্রান বায়ু বার করে দিবে, এমন ভাবে ধরে আছে। আমার কষ্টটা যেন আরো দ্বিগুণ আকাঁরে বাড়ল। বুকটা ভারি ভারি লাগছে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। আমার এমন লাগছে কেন জানি না, তবে এই মেয়ে কে আমার সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে গলা টিপে ধরি মেয়েটার। ছলছল চোখে আমি তাকিয়ে আছি সিফাত ভাইয়ার দিকে। আমার তাকানো উনি দেখতে পাননি। খানিক বাদে উনি মেয়েটি কে বলে উঠলেন,
- জেনি আমায় ছাড়, এমন ভাবে ধরে আছো আমার ধম আটকে আসছে। তোমার স্বভাবটা আর যাবে না। বলেই উনি বিরক্তি ভাব নিয়ে মেয়েটি কে সরিয়ে দিলেন।
মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে মামিমা কে জিজ্ঞেস করল, আন্টি ও কে?
- মামিমা বললেন, ও অনিতা। আমার ননদের মেয়ে। অনিতা বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছে লেখা পড়া করার জন্য।
মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে বলল, হাই আনিটা!
আমি জেনিফার!তুমি আমায় সর্ট স করে জেনি বলে ডাকতে পারো। মেয়েটি আমাকে বলল,
- আমি মৃদু হেসে বললাম, হ্যালো!
মনে মনে বলছি এই জেনিও দেখি আনিটা বলে?এর মধ্যে আমার ভার্সিটির টাইম হয়ে গেছে। মামিমা আর মামা কে বললাম, আমি একাই চলে যাব আজ। আমার কোনো প্রবলেম হবে না। উনারা রাজি হচ্ছেন না, তারপরও আমি জোড় করে যেতে চাচ্ছি।
এরমাঝে সিফাত ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
- একা যেতে হবে না, আমি তোমাকে ড্রপ করে তারপর আমার অফিসে যাব, চলো।
মামা- মামিমাও সায় দিলেন এতে। কি আর করবো উনার এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে আর কোনো কথা বলতে সাহস পাইনি।
আবার কি করে বসেন তার ঠিক নেই, কাল যা করলেন ভাবলেই শরীর এর লোম দাঁড়িয়ে যায়।
সোহেল ভাইয়া, সিফাত ভাইয়ার উদ্দেশ্য বললেন,
- ভাইয়া তুমি অফিসে চলে যাও, তোমার লেট হয়ে যাবে। আমি অনিতা কে ড্রপ করে দিবনে।
সিফাত ভাইয়া যেন মূর্হতেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠলেন, আর সোহেল ভাইয়াকে বললেন,
- তুই আবার কখন থেকে আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলে সোহেল? আমি আমার টাইম বুঝে নিব। তকে এত ভাবতে হবে না বলেই উনি হনহন করে গাড়ির দিকে চললেন। আমি যাওয়ার আগে একবার সোহেল ভাইয়ার দিকে তাকালাম, দেখলাম উনি রাগে সাপের মতো ফুসফুস করছেন। আর সবাই উনাদের দু জনের দিকে তাকিয়ে আছেন। লক্ষ্য করলাম জেনি আমার দিকে তীব্র রাগ নিয়ে চেয়ে আছে। জেনির হঠাৎ আমার উপরে রাগের কারণ টা বুঝলাম না।
আর কোনো কিছু না ভেবে সবাই কে বাই জানিয়ে গাড়ির দিকে চললাম। লেট হলে আবার কি শাস্তি দিয়ে বসেন মহাশয় কে জানে?
গাড়ির কাছে যেয়ে দেকি উনি রাগি মুখ করে বসে আছেন। উনার রাগি রাগি চেহারা দেখে ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিললাম। সোহেল ভাইয়া কে নিয়ে উনার এতো প্রবলেম কেন বুঝিনা আমি!আস্তে আস্তে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমি বসতেই উনি গম্ভীর সুরে বলে উঠলেন,
- আনি সিট বেল্ট বাঁধবে নাকি আমি বেঁধে দিবো?
উনার এমন কথায় আমি অপ্রস্তুত গলায় বললাম,
- না, না ভাইয়া আমি বাঁধছি। আসলে খেয়াল করিনি। উনি আমার দিকে চেয়ে বাঁকা হাসলেন। গাড়ি চলছে লক্ষ্য করলাম এটা আমার ভার্সিটির রাস্তা নয়। তাই একটু জোড়ে সিফাত ভাইয়া কে বললাম,
- সিফাত ভাইয়া আপনি ভুল পথে যাচ্ছেন, এই রাস্তা আমার ভার্সিটি যাওয়ার রাস্তা না। আমার কথায় উনি আবার বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
- আমি চিনি আনি তোমার ভার্সিটির রাস্তা।
উনার কথায় উনার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালাম,
উনি বললেন গেলেই দেখতে পাবে কোথায় যাচ্ছি। আর এতো প্রশ্ন করোনা তো, নয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।
- চুপটি করে গাড়িতে বসে রইলাম। উনার সাথে বসে থাকতে আমার বিষণ ভালো লাগছে। আর উনার বাঁকা হাসিতে উনাকে আরো কিউট লাগে। ইচ্ছে করে তাকিয়ে তাকি। আবার নিজে নিজেই বলছি দূর কি সব ভাবছি আমি?
আমার এই সব ভাবনার মাঝে সিফাত ভাইয়া বলছেন,
- আনি গাড়ি থেকে নামো, আমরা এসে গেছি।
উনার কথায় আমি গাড়ি থেকে নামলাম। চেয়ে দেখি একটা বড় বিল্ডিং, আর সামনে বড় বড় করে লিখা (আলী মেহবুব গ্রুপ অফ ইন্ডাস্টিজ)।
বুঝতে পারলাম এটা উনার অফিস। কিন্তু আমাকে হঠাৎ উনার অফিসে নিয়ে আসার কারণ কি?
ইতিমধ্যে উনি গাড়ি পার্ক করে চলে আসছেন। উনি আমার কাছে এসে বলছেন,
- চলো আনি ভেতরে চলো।
ভয়ে ভয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- সিফাত ভাইয়া আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?উনি আবারও উনার বিখ্যাত বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
- তোমাকে এখানে আনার কারণ, তোমার সিফাত ভাইয়া এখানে কি কাজ করে দেখানোর জন্য।
বলেই উনি আমার দিকে চেয়ে চোখ মারলেন।
উনার চোখ মারা দেখে আমার বিষণ লজ্জা করছে।
সিফাত ভাইয়া আমার লজ্জা মাখা মুখ দেখে বললেন,
- এতো লজ্জা পেতে হবে না, এখনো তো কিছুই করলাম না। সাধারণ চোখ মারায় এতো লজ্জা!আনি তুমি এতো লজ্জা রাখো কোথায়? বলেই শয়তানি হাসি দিলেন।
উনার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না। সিফাত ভাইয়ার সাথে ভেতরে গেলাম।
ভেতরে প্রবেশ করতেই অফিসের সব স্টাফ রা হা করে আমার আর সিফাত ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে। উনাদের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে অফিসে কোনো এলিয়েন ঢুকেছে!
উনাদের এমন এক্সপ্রেশন দেখে সিফাত ভাইয়া বলে উঠলেন,
- আপনারা কাজে মনোযোগ দিন। সিফাত ভাইয়ার কথায় সবাই যে যার কাজে আবার মনোনিবেশ করলো। আর আমি সিফাত ভাইয়ার পিছনে হাঁটছি।
অফিসে আসতেই উনার মধ্যে একটা বস বস ভাব চলে আসছে। আর মেয়ে স্টাফ গুলো উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মনে মনে মেয়ে গুলো কে লুইচ্ছা বলে গালি দিলাম। এভাবে কেউ তাকায়, তাও আবার অফিসের বসের দিকে? বিদেশি মেয়ে গুলো বোধ হয় একটু লজ্জা, শরম কম থাকে। সিফাত ভাইয়াকে ও বলিহারি এতো হ্যান্ডসাম হয়ে আসার দরকার কি অফিসে?মেয়ে গুলো কিভাবে গিলে খাচ্ছিলো উনাকে!
দুর আমি এতো জেলাস হচ্ছি কেন? উনাকে যার ইচ্ছা গিলে খাক বা চিবিয়ে খাক আমার কি?
সিফাত ভাইয়ার ডাকে আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল। উনি বলছেন,
- কি এতো ভাবছো আনি?কখন থেকে দেখছি অন্য মনস্ক হয়ে হাঁটছ।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
- না সিফাত ভাইয়া আপনার অফিসটা দেখছি, খুব পরিপাটি আপনার অফিস।
উনি আমার দিকে হাল্কা ঝুকে বললেন,
- তোমার সত্যিই আমার অফিস পছন্দ হয়েছে?
আমি মাথা নাড়িয়ে, হে বললাম। উনি আবার আমার দিকে ফিরে বললেন,
- তাহলে আনি তোমার জন্য আমার অফিসে একটা রুম বানিয়ে ফেলি? এখানে থেকে যাবে।
চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে বললাম,
- আমি একা ভয়ে মরে যাব সিফাত ভাইয়া অতো বড় অফিসে!উনি বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
- একা থাকবে কেন, আমার সাথে থাকবে?বলেই চোখ মারলেন।
আমি বললাম,
- আপনার সাথে কেন থাকতে যাব সিফাত ভাইয়া? উনি মৃদু হেসে বললেন,
- সময় হলে দেখবে কেন থাকতে যাবে!ভাবছি উনি কি বুঝাতে চাইছেন?
উনার তো দেকি মুখে কিছুই আটকায় না, আমাকে লজ্জা দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। আমি আর কোনো উত্তর দিলাম না। তারমধ্যেই উনার বিশাল বড় কেবিনে এসে পৌঁছালাম। সিফাত ভাইয়ার কেবিন টা খুব গোছালো। অত্যন্ত সুন্দর করে সাঁজিয়ে রেখেছেন, দামি দামি জিনিসপত্র দ্বারা।
উনি আদেশের সুরে বললেন,
- আনি তুমি আমার সামনের চেয়ারে বসে থাকো। আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক পা ও নড়বে না।
আমিও চুপচাপ ঘুটিশুটি মেরে উনার সামনের চেয়ারে বসে পড়লাম।
আর মহাশয় কাজ করছেন এক মনে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। সিফাত ভাইয়ার তাকনোতে ভালোও লাগছে, অস্বস্তি ও কাজ করছে। উনার একেবারে সামনে বসে আছি তাই অস্থিত্ব বোধ করছি।
উনার কাজ শেষ হলে নাকি কোথায় নিয়ে যাবেন বললেন।
এরই মাঝে ঝড়ের বেগে কোথা থেকে যেন জেনি আসলো, এসেই সুইট হার্ট বলে সিফাত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল। আবেগি ভালোবাসার গল্প শুরু এখান থেকেই!
লেখা: ইসরাত সিনহা
পরের সিজন – তার শহরে – সিজন ২ | আবেগি প্রেমের গল্প