তার শহরে – সিজন ৪ | অনেক কষ্টের গল্প: অনি আর সিফাতের মাঝে একটা ভুল বোঝাবোঝি চলছে। আজ এই শেষ সিজনে সব কিছুর রিভিল হবে। তবে তাদের ভালোবাসার শেষ পরিণতি কি হবে তা জানতে শেষ পর্যন্ত চোখ রাখুন।
পার্ট : ২৬
আজ আনির কাছ থেকে সত্যি টা আমাকে জানতে হবে। আমি যা সন্দেহ করছি যদি তাই হয়, তাহলে ভয়ানক কিছু ঘটবে।
সিফাত আস্তে আস্তে অনিতার সামনে যেয়ে দাঁড়াল। অনিতা যখনই পানির গ্লাস নিয়ে পিছন ঘুরলো তখন দেখলো সিফাত তার সামনে গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সিফাত কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনিতা থতমত কন্ঠে বলল,
- আপনি গিয়ে বসুন না, এখানে কেন?
সিফাত গুরু গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
- আনি তুমি পানি টা রেখে আমার সাথে এসো, কথা আছে।
সিফাতের এমন গুরু গম্ভীর গলা শুনে অনিতা ভয় পেয়ে মনে মনে বলল,
- দেখে তো মনে হচ্ছে উনি রেগে আছেন, তবে কেন? আমি কি উল্টা – পাল্টা কিছু করলাম? উনার গলাটাও কেমন শুনাচ্ছে।
অনিতা কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিফাত জোরে ডাক দিয়ে বলল,
- মিসেস মেহবুব তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না, আমার সাথে আসলেই জানতে পারবে কেন ডেকেছি।
অনিতা অবাক হলো সিফাত কিভাবে বুঝতে পারলো সে কি নিয়ে ভাবছে?
অনিতা বিড়বিড় করে বলে উঠল,
- মনে মনে কোনো কথা ভেবেও শান্তি পাইনি উনি কিভাবে যে বুঝে ফেলেন আল্লাহ ভাল জানেন।
সিফাত অনিতা কে ইশারা করে বেডে বসতে বলল।
অনিতা চুপচাপ বেডে বসে পড়ল। সিফাত অনিতার কাছে এসে ওর হাতটা তার হাতে নিলো।
তারপর অনিতার দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে উঠল,
- আচ্ছা আনি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
অনিতা ভাবছে উনি কি এমন জিজ্ঞেস করতে চাইছেন, যার জন্য পারমিশন নিচ্ছেন?
অনিতা ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় পাচ্ছে, একটা শুকনো ঢুক গিলে মলিন স্বরে বলল,
- হুম, জিজ্ঞেস করতে পারেন, তার জন্য পারমিশন নেওয়ার কি আছে?
সিফাত হাল্কা হেসে বলল,
- না এমনিতেই নিলাম। যা জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম সেটা হলো, তুমি সিঁড়ি থেকে পড়লে কিভাবে?
অনিতা নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে সিফাত কে কি সত্যি কথা টা বলে দিবে, না কি দিবে না?
সিফাত অনিতার নিরবতা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল,
- কি হলো আনি আনসার মি।
অনিতা বুঝতে পারছে না কি করবে, সিফাত যা রাগি এই কথা শুনার পর কি রিয়েক্ট করবে তা ভেবেই অনিতা ভয় পাচ্ছে।
অনিতার নিরবতা দেখে সিফাত রেগে গেল, রাগে চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
- আনি তোমাকে আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করছি, তুমি কথা বলছো না কেন?
সিফাতের রাগ দেখে অনিতা ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,
- আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি বলছি কি ভাবে পড়ে গেলাম।
সিফাতের রাগ খানিক ধমে গেছে অনিতার ভয় পাওয়া দেখে, সিফাত আবার অনিতার পাশে বসল।
অনিতা বলতে লাগল,
- ওইদিন সকালে আমি আপনাকে ঘুম থেকে না জাগিয়ে কিচেনে যাচ্ছিলাম, আপনাকে আমার হাতের বানানো কফি খাওয়াবো বলে। আমি যখন রুম থেকে বাহির হলাম দেখলাম জেনি ওর রুম থেকে বাহির হলো। আবার আমাকে দেখে ভেতরে ঢুকে গেল। এই বিষয়ে আমি অতোটা না ভেবে সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম। আর কয়েক সিঁড়ি নামতেই হঠাৎ কেউ আমাকে পিছন দিয়ে ধাক্কা দেয়, আমি ঠাল সামলাতে না পেরে পরে যাই।
সিফাত চিৎকার দিয়ে বলল,
- কি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে? তুমি কি থাকে দেখেছো আনি?
অনিতা নিচু সুরে বলল,
- না, আমি কাউকে দেখতে পাইনি।
সিফাত প্রচন্ড রকম রেগে গেছে, তার সবুজ চোখ গুলো রাগে ঝলঝল করছে। সিফাত রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
অনিতা বুঝতে পারছে সিফাত এখন ভয়ানক রেগে আছে। তাই অনিতা সিফাতের হাত ধরে ভয়ার্ত গলায় বলল,
- আপনি এতো রাগবেন না প্লিজ, যে এই কাজ টা করেছে আমি তো তাকে দেখিনি।
সিফাত রাগানিত্ব স্বরে বলে উঠল,
- আমি জানি আনি এই নোংরা কাজ কার হতে পারে, কে তোমাকে আমার জীবন থেকে সরাতে চায়। তবে যে তোমাকে আমার জীবন থেকে চিরকালের জন্য সরাতে চায় সে হয়তো জানে না, সিফাত মেহবুবের মনে তার মিসেস মেহবুব ছাড়া আর দ্বিতীয় কারো স্থান নেই।
সিফাতের কথা শুনে অনিতা সিফাত কে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করা গলায় বলল,
- আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেন?
অনিতা জড়িয়ে ধরতেই সিফাত মুচকি হেসে বলল,
- তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারিনা তাই এতো ভালবাসি মিসেস মেহবুব।
অনিতা কান্না করতে করতে বলল,
- জানেন যখন আমি পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারাই, জ্ঞান হারানোর আগমূর্হতে আপনার মুখ, মা- বাবা আর শিউলির মুখ চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছিল। মনে মনে বলছিলাম হয়তো আমার আপনজনদের মুখ আমি আর চিরকালের জন্য দেখতে পারব না। মনে হয়ে ছিল আমি আর বাঁচব না।
অনিতার এমন কথা শুনে অনিতা কে পিছন থেকে টান দিয়ে সামনে এনে সিফাত তার বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।
অনিতা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল সিফাতের বুকে মাথা রেখে।
সিফাত শান্ত কন্ঠে বলল,
- কেঁদো না আনি তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়, বুকের বা পাশটায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করি।
অনিতা সিফাত কে ধরে কেঁদেই চলছে।
সিফাত উপায় না পেয়ে ধমকের সুরে বলে উঠল,
- আনি তুমি কান্না করা বন্ধ করো, তোমার মাথার ক্ষত এখনি শুকায়নি। পরে মাথা ব্যাথা করবে।
অনিতা সিফাতের ধমকে কান্না বন্ধ করে দিলো কিন্তু হেঁচকি থামছে না।
সিফাত ধীর গলায় অনিতা কে বলল,
- তোমার কিছু হবে না আনি আমি আছি তো, সিফাত রাগে চোখ লাল করে বলল, তোমাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি ছাড়ব না।
আমি নিশ্চিত আনি তোমার এ অবস্থার জন্য জেনি দায়ী, জেনি তোমাকে ধাক্কা দিয়েছে।
অনিতা সিফাত কে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বলল,
- আমি তো দেখিনি কে ধাক্কা দিয়েছে।, না জেনে কাউকে সন্দেহ করা ঠিক না।
সিফাত রাগি গলায় বলে উঠল,
- আনি তুমি সবাই কে নিজের মতো ভালো ভেবোনা, জেনি কে তুমি কতটুকু চিনো বা জানো? জেনিফার কে আমি ছোট থেকেই জানি ও কি করতে পারে আর পারে না।
অনিতা চিন্তিত ভাবে বলল, - জেনি যে এটা করেছে তার তো কোনো প্রুভ নাই আমাদের কাছে। কি ভাবে প্রুভ করবেন ও এটা করেছে?
সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- তুমি এতো ভেবোনা তো মিসেস মেহবুব, তুমি তোমার বর কে এখনো চিনোনা। চলো শুতে যাবে রাত অনেক হয়েছে।
অনিতা শুয়ে আছে সিফাতের বুকে, সিফাত পরম যত্নে অনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
অনিতা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু সিফাতের দুচোখের পাতায় আজ ঘুম নেই।
সিফাত অনিতার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া ভরা গলায় বলল,
- মায়াকুমারী তোমার সাথে যে এ অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি তো আমি দেবো। সিফাত অনিতার কপালে গভীর ভাবে ভালবাসার পরশ এঁকে দিল।
সকালে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে সিফাত, অনিতার অপেক্ষায়।
সিফাত ফ্রেশ হয়ে এসে অনিতা কে পাজো কোলে তুলে নিল। অনিতা লজ্জা পেয়ে বলল,
- আর কোলে নিচ্ছেন কেন?
সিফাত মুচকি হেসে বলল,
- নিচে যাবো তাই কোলে নিয়েছি।
অনিতা বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল,
- নিচে যাবেন ভালো কথা, আমাকে কোলে নিয়ে যাবেন কেন?
সিফাত গম্ভীর গলায় বলল,
- এতো কথা বলো না তো। চুপচাপ বসে থাকো আর কোনাে লাফালাফি করবে না।
অনিতা চুপচাপ সিফাতের গলা জড়িয়ে বসে রইল।
সিফাত নিচে নামলো অনিতা কে নিয়ে, অনিতা কে সিফাতের কোলে দেখে জেনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো।
অনিতা লজ্জা পাচ্ছে সবাই তাকে এভাবে কোলে দেখছে ভেবে। সিফাতের কোনো হেলদুল নেই অনিতা কে এভাবে নিয়ে নামছে বলে।
সিফাত অনিতাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে সে নিজেও পাশের চেয়ারে বসল।
মিসেস ইসাবেলা অনিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- মামনি তোমার শরীর ঠিক আছে?
অনিতা হাল্কা হেসে বলল,
- হ্যাঁ, মম শরীর ঠিক আছে।
সবাই যে যার মতো নাস্তা করছে, হঠাৎ সিফাত গম্ভীর সুরে বলে উঠল,
- নাস্তা করে সবাই একটু সময় বসবে আমার কিছু কথা আছে।
অনিতা ভয় পেয়ে গেল সিফাতের কথা শুনে।
অনিতা মনে মনে বলল,
- উনি আবার কি কথা বলবেন?
জনাব আলী মেহবুব অনিতা কে বললেন,
- অনিতা তুমি খাচ্ছ না কেন? এরকম হাত গুটিয়ে বসে আছো যে?
অনিতা কিছু বলার আগে মিসেস ইসাবেলা বলে উঠলেন,
- মামনির বোধহয় হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না, আমি খাইয়ে দেই?
অনিতা খুশি হয়ে বলল,
- ওকে মম, তুমি আমাকে খাইয়ে দাও।
মিসেস ইসাবেলাও নিজ হাতে অনিতা কে খাইয়ে দিলেন।
সবার নাস্তা শেষ হলে জনাব আলী মেহবুব বললেন,
- সিফাত তুমি কি বলতে চাও বলো?
সিফাত আগের থেকে আরো বেশি গম্ভীর হয়ে বলে উঠল,
- পাপা আমরা সবাই জানি আনি পা পিছলে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিলো। কিন্তু না পাপা আনি কে কেউ ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিল।
মিসেস ইসাবেলা আর জনাব আলী মেহবুব দুজনেই বিস্মিত গলায় বলে উঠলেন,
- কি অনিতা পা পিছলে পড়েনি, তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে?
জেনি ভয়ে কাঁপছে তাহলে কি সত্যি টা সবার সামনে বের হয়ে আসবে? জেনি ভাবছে,
- অনিতা কি আমায় দেখতে পেয়েছিল সে দিন?
জেনি ভয়ে খালি গলায় কয়েকটা ফাঁকা ঢুক গিলল। নিজেকে স্বাভিক রেখে দাঁড়িয়ে রইল জেনি।
সোহেল জেনির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল জেনির অবস্থা।
সিফাত চিৎকার দিয়ে বলল,
- ইয়েস পাপা আনি কে প্লান মাফিক ধাক্কা দিয়ে ফেলা হয়েছে।
জনাব আলী মেহবুব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
- সিফাত কে এই কাজ করেছে তুমি জানো?
সিফাত রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,
- হ্যাঁ, পাপা। যে এই কাজ টা করেছে আনি কে ধাক্কা দেওয়ার সময় তার হাতের আংগুল থেকে একটা রিং আনির চুলে আটকে গিয়েছিল।
ডক্টর সেটা আনির চুলে পেয়ে আমাকে দিয়েছেন।
রিং এর কথা শুনতেই জেনি তার আংগুলের দিকে তাকায়, তাকিয়ে বলে, নাহ আমার তো সব রিং ঠিক আছে। জেনির এভাবে তাকানো কারো চোখ এড়ায়নি।
অনিতা, জিসান, সোহেল তারা নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিসেস ইসাবেলা রাগি গলায় জেনি কে বললেন,
- কি ব্যাপার জেনি তুমি তোমার রিং দেখছো কেন?
জেনি ভয়ে আমতা আমতা করে বলল,
- না আন্টি আমি কই আমার রিং দেখছি, এমনিতেই তাকালাম রিং এর দিকে।
জনাব আলী মেহবুব বলে উঠলেন,
- সিফাতের কথার সাথে সাথে তুমি তোমার রিং এর দিকে তাকিয়েছো সেটা আমরা সবাই লক্ষ্য করেছি জেনি। কই এখানে তো আর কেউ তাদের আংগুলের দিকে তাকালো না? তাহলে কি প্রমাণ হয় জেনি?
জেনি ধরা খাওয়ার ভয়ে বলে উঠল,
- আমি কেন অনিতা ধাক্কা দিতে যাবো শুধু শুধু?
অনিতা হয়তো মিথ্যা বলছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য।
জেনির মুখে অনিতা মিথ্যা বলছে এ কথা শুনে সিফাত ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে জেনির গলা টিপে ধরে বলল,
- কি বললি তুই আনি মিথ্যা বলছে? মিথ্যা তো বলছিস তুই। সত্যিটা কি বল জেনিফার সবার সামনে।
সিফাতের এমন ভয়ংকর রাগ দেখে জেনি অনবরত কাঁপছে, সে সিফাতের এই রূপের সাথে পরিচিত না। জেনি বার বার তার হাত দিয়ে সিফাতের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সিফাতের এমন হিংস্র শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।
সিফাতের সবুজ রংয়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে।
সিফাত গর্জন করে বলে উঠল,
- জেনিফার সত্যি টা কি বল, নয়তো আজ আমার হাত থেকে তকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
জেনির শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে সিফাত গলা চেপে ধরায়। জেনি চোখে অন্ধকার দেখছে, আস্তে করে বলল,
- সিফাত আমার গলা থেকে হাত সরাও আমি সব বলছি।
সিফাত জেনির গলা ছেড়ে দিয়ে রাগে চিৎকার করে বলল,
- বল জেনি বল কেন তুই আমার আনি কে এতো কষ্ট দিলি ও তর কি ক্ষতি করেছিল, যার জন্য তুই আনি কে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছিলি?
জেনি কাশতে কাশতে চাপা রাগ নিয়ে বলল, - তোমার পাশে ওই মেয়ে কে আমার সহ্য হয় না সিফাত।
মেরে তো ফেলতে চেয়েছিলাম ওই বাঙ্গালি মেয়ে কে, কিন্তু মরতে মরতে আবার বেঁচে ফিরেছে।
মিসেস ইসাবেলা জেনির দিকে দু কদম এগিয়ে এসে কষে জেনির দু গালে দুটো থাপ্পড় দিয়ে রাগে লাল হয়ে বললেন,
- তুমি এতো নিচু মনের মানুষ জেনি ছি! আমার ভাবতে ঘৃণা করছে তুমি আমার আপন বোনের মেয়ে? তুমি অনিতা কে মেরে ফেলতে চাও তোমার সার্থ সিদ্ধির জন্য?
জেনি চিৎকার দিয়ে বলল, - হ্যাঁ আমি আমার সার্থের জন্য সব করতে পারি, অনিতার মতো মেয়েকে মারতে আমার হাত কাঁপবে না।
সিফাত রাগে কটমট করে চিৎকার দিয়ে বলল,
- জেনি তুই নিজেও জানিস না তুই কতো বড় ভুল করতে গিয়েছিলি, তুই সিফাত মেহবুবের কলিজায় আঘাত করতে চাইছিলি?
জনাব আলী মেহবুব সিফাতে কে বললেন, - সিফাত তুমি শান্ত হও, আমি দেখছি।
সিফাত জেনির কাছে এসে জেনির গালে একটা জোরে চড় মেরে বলল,
- তুই আমার ভাইকে ও আমার কাছে দোষী বানাতে চাইছিলি না? নিজে সবটা করে পড়ে সোহেলের গাড়ে সব দোষ চাপাতে চাইছিলে?
জেনি সিফাতের দেওয়া চড়ে নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেড়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
অনিতা ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিসানের পাশে। অনিতা জানতো সিফাতের রাগ বেশি কিন্তু এমন ভয়ংকর রাগের কথা জানতো না।
সিফাত যেন হিংস্র হয়ে উঠেছে।
সিফাত জনাব আলী মেহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল,
- পাপা পুলিশে ফোন দাও, ও যা করেছে তার জন্য ওর শাস্তি হওয়া দরকার।
পুলিশের কথা শুনে জেনি ভয়ে ঢুক গিলল।
মিসেস ইসাবেলা সিফাতের সামনে এসে ধীর গলায় বললেন,
- সিফাত জেনি কে পুলিশে দেওয়ার দরকার নেই, আমি ওর মা কে ফোন করে বলছি জেনি কে যেন এসে নিয়ে যায়। আর এ কথাও বলব জেনি যেন আমাদের বাসায় আর কখনো না আসে।
জনাব আলী মেহবুব ও মিসেস ইসাবেলার কথায় সায় দিয়ে বললেন,
- হ্যাঁ, সিফাত আমিও তোমার মমের সাথে একমত, পুলিশে দেওয়ার দরকার নাই। হাজার হোক জেনি আমাদের আত্মীয়, আমি ওর বাবা মার কথা ভেবে বলছি। জেনি কে পুলিশে দিলে সেটা জেনির বাবা মার সম্মানে আঘাত হানবে।
সিফাত রক্তচুক্ষু নিয়ে জেনির দিকে তাকিয়ে বলল,
- ঠিক আছে পাপা, কিন্তু ও যেন আর এক মূর্হত আমাদের বাসায় না থাকে।
জেনি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, ভুলেও যদি কোনো দিন আনির কোনো ক্ষতি করতে চাইবে তাহলে তার পরিণাম কি হবে কিছুটা হলেও আজ আন্দাজ করতে পারছো নিশ্চয়ই?
মম- পাপার কথায় তুমি আজ রেহাই ফেলে, নয়তো তোমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়তাম। মাইন্ড ইট!
তখন বুঝতে সিফাত মেহবুবের কলিজায় হাত দেওয়াটা তোমার কত বড় ভুল ছিল।
সোহেল তার রুমে চলে গেল তার এখন জেনি ঘৃণা করছে, মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো সাপ।
সিফাত অনিতার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে উঠল,
অনিতা একদম জিসানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, মুখ দেখেই সিফাত বুঝতে পারছে অনিতা বিষণ ভয় পাচ্ছে।
সিফাত গম্ভীর গলায় অনিতা কে বলল,
- আনি রুমে চলো।
জেনি ফনা তুলা সাপের মতো রাগে ফুঁসছে সিফাত তাকে এতো অপমান করলো, ওই বাঙ্গালি মেয়ের জন্য?
মিসেস ইসাবেলা ফোন করে জেনির মাকে আসতে বললেন, সাথে এ- ও জানিয়ে দিলেন জেনি কি কি করেছে।
জেনির মা লজ্জিত হলেন জেনির এহেন কান্ডে, মিসেস ইসাবেলার কাছে ক্ষমা ও চাইলেন।
সিফাত রুমে বসে আছে অনিতা ভয়ে ভয়ে রুমে প্রবেশ করলো, তার এখন সিফাত কে খুব ভয় করছে। সিফাত অনিতার ভয় পাওয়ার কারণ বুঝতে পেরে অনিতা কে শান্ত গলায় বলল,
- আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে মিসেস মেহবুব? আমি সবার প্রতি কঠোর না শুধু যারা অন্যায় করে তাদের প্রতি কঠোর।
অনিতার ভয় কিছুটা কমে গেল সিফাতের নরম কন্ঠ শুনে। অনিতা সিফাতের পাশে বসে সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
- আচ্ছা আপনি ওখানে মিথ্যা বললেন কেন? নাকি সত্যি আমার চুলে জেনির রিং আঁটকে ছিল?
সিফাত বাঁকা হেসে অনিতার কাছে এসে বলল,
- এটা একটা টেকনিক ছিল মিসেস মেহবুব জাস্ট আর কিছু না। যদি এই কাজটা না করতাম তাহলে জেনি অতো সহজে ধরা দিত না। জেনি যদি বুনো ওল হয় তাহলে সিফাত মেহবুব হবে বাঘা তেঁতুল। অনিতা বিস্মিত গলায় বলে উঠল,
- আপনার তো খুব বুদ্ধি মি সিফাত মেহবুব। আপনি ভালো লয়ার হতে পারবেন। সিফাত হেসে দিল অনিতার কথায়।
আজ একমাস হলো সিফাত অনিতার বিয়ের।
সিফাত অফিস যাওয়ার আগে মিসেস ইসাবেলা কে বলে গেল,
- মম আমি অফিসে চলে যাচ্ছি, আজ আমাদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হলো তুমি ফুফি আর আংকেল কে জানিয়ে দাও আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।
মিসেস ইসাবেলা সিফাতের কথায় সম্মতি জানালেন।
মিসেস ইসাবেলা অনিতার মায়ের কাছে ফোন দিলেন, মিসেস আলেয়া কিছু সময় পর কল রিসিভ করলেন। মিসেস ইসাবেলা অনিতার মা কে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বললেন,
- আলেয়া আমি তোমাকে একটা কথা বলার জন্য কল করে ছিলাম। মিসেস আলেয়া হাল্কা হেসে বললেন,
- হ্যাঁ, ভাবি বলো।
মিসেস ইসাবেলা খানিক ইতস্তত গলায় বলে উঠলেন,
- সিফাত আর অনিতা বিয়ে করে নিয়েছে আলেয়া।
মিসেস আলেয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন, তারপর চাপা চিৎকার দিয়ে বললেন,
- কি বলছো ভাবি তুমি এসব, অনিতা কখন বিয়ে করে নিল?
পার্ট : ২৭
- কি বলছো ভাবি তুমি এসব, অনিতা কখন বিয়ে করে নিল?
মিসেস ইসাবেলা শান্ত গলায় বললেন,
- একমাস আগে সিফাত অনিতা কে বিয়ে করেছে।
মিসেস আলেয়া এবার চিৎকার করে উঠে বললেন,
- কি একমাস আগে বিয়ে করেছে ওরা, আর আজ তুমি আমায় বলছো ভাবি?
মিসেস ইসাবেলা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
- আলেয়া শুনো সিফাত অনিতা একে অপর কে ভালবাসে। ভালবেসে তারা বিয়েটা করেছে।
মিসেস আলেয়া খানিক রেগে গিয়ে বললেন,
- ভালো কথা ভাবি ছেলে মেয়ে দুজন দুজন কে ভালবাসে, কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটা আমাদের বললে কি আমরা বাঁধা দিতাম? সব বাবা- মা ই চায় তার সন্তান সুখে থাকুক ইভেন আমরাও সেটাই চাই।
ভাবি আমরা কি চাইনা আমাদের অনিতা সুখে থাকুক ভালো থাকুক? আমার খারাফ লাগছে ভাবি একটা কথা ভেবে অনিতা কেন আমাদের কে কিছু বলল না, আমরা কি ওর কথা ফেলে দিতাম?
মিসেস ইসাবেলা নরম গলায় বললেন,
- অনিতার কোনো দোষ নেই আলেয়া এ ব্যাপারে, সব দোষ সিফাতের ও ই তোমাদের বলতে নিষেধ করেছিল। সিফাত বলে ছিল বিয়ের একমাস হলে তোমাদের জানাতে তাই আজ জানালাম।
অনিতার মা মিসেস আলেয়া রুুক্ষ গলায় বলে উঠলেন,
- ভাবি তুমি অনিতার কাছে ফোনটা দাও, এখন যা কথা হবে ওর সাথে হবে। আমি অনিতার কাছ থেকে জানতে চাই আমরা ওর বাবা- মা নই, যে এতো বড় ডিসিশন নিয়ে ফেললো আর আমাদের কে জানানোর প্রয়োজন টুকুও মনে করল না?
মিসেস ইসাবেলা ভালো করে বুঝতে পারছেন মিসেস আলেয়া খুব ক্ষেপে আছেন উনার মেয়ের উপর। তিনি বেশ ভয় পাচ্ছেন মিসেস আলেয়ার কথা ভেবে না জানি এখন অনিতা কে কি বলেন?
মিসেস ইসাবেলার ভাবনায় ছেদ পড়ল অনিতার মায়ের কথায়, মিসেস আলেয়া বলছেন,
- কি হলো ভাবি অনিতা কে ডাক দাও, নাকি ও বাসায় নেই?
মিসেস ইসাবেলা থতমত গলায় বললেন,
- হ্যাঁ, হ্যাঁ আলেয়া মামনি কে ডাকছি ওয়েট করো মামনি বাসায় ই আছে। আজ ভার্সিটি যায়নি।
মিসেস ইসাবেলা একটু উঁচু স্বরে অনিতা কে ডাক দিলেন। অনিতা উনার গলার স্বর শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি পায়ে নিচে নামলো। নেমেই মিসেস ইসাবেলা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
- মম আমায় ডাক ছিলে?
মিসেস ইসাবেলা চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
- হ্যাঁ, মামনি তোমায় ডাক ছিলাম। তোমার মা ফোনে তোমার সাথে কথা বলতে চায়। মিসেস ইসাবেলার চিন্তিত মুখ দেখেই অনিতা আন্দাজ করতে পারছে কিছু একটা তো হয়েছে।
অনিতা ভয় পাচ্ছে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিলো, মিসেস ইসাবেলার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে অনিতা।
মিসেস ইসাবেলা ইশারায় অনিতা কে বললেন,
- ডোন্ট ওয়ারি।
অনিতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
- হ্যালো, মা কেমন আছো?
মিসেস আলেয়া অনিতার ভয় পাওয়া গলার আওয়াজ বুঝতে পারলেন, মিসেস আলেয়া মুখ টিপে হেসে আবার গম্ভীর গলায় বললেন,
- আমরা ভালো আছি অনিতা, তুমিও নিশ্চয়ই ভালো আছো? ভালো থাকবেই না বা কেন?
অনিতা ভয়ে ভয়ে বলল,
- মা তুমি এরকম কথা বলছো কেন? তোমার শরীর ঠিক আছে?
মিসেস আলেয়া খানিকটা রাগি কন্ঠে বলে উঠলেন,
- তো অনিতা তোমার সাথে আর কি রকম কথা বলব, তুমি যা করেছো তারপরে তোমার সাথে আর কিভাবে কথা বলা যায়?
অনিতা বুঝে গেছে তার মা কোন বিষয়টা ইঙ্গিত করছেন, অনিতার বুক মূর্হতেই অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল। ভয় হচ্ছে অনিতার তার সিফাত কে হারানোর, সে তো সিফাত নামক ব্যাক্তি কে ছাড়া থাকতে পারবে না। যদি এখন তার মা বলেন সিফাত কে ছেড়ে দিতে এই ভেবে অনিতার অবচেতন মন কুঁকড়িয়ে উঠছে বারংবার।
অনিতা এক বুক ভয় আর কান্না জড়ানো গলায় বলল,
- মা আমি সরি, মা আমি উনাকে ভালবাসি। অনিতা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না বার বার কথা গুলো জরিয়ে যাচ্ছে। তারপর আবার অনিতা অনুনয়ের সুরে বলল, মা প্লিজ উনাকে ছেড়ে যাবার কথা বলো না। তাহলে যে তোমার অনিতা বাঁচবে না।
মিসেস ইসাবেলা কেঁদে দিলেন অনিতার কান্না দেখে, তিনি খুশিও হলেন সিফাতের প্রতি অনিতার এমন ভালোবাসা দেখে।
মিসেস আলেয়া ফোনের অপর পাশে নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন মেয়ের এমন পাগলামো দেখে। মিসেস আলেয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজ মনে বললেন,
- যাক এই প্রথম আমার মেয়ে কাউকে ভালোবাসল, তাও আবার আমরা যে ছেলে কে মনে মনে পছন্দ করতাম ওর জন্য তাকেই বিয়ে করেছে।
ফোনের দু পাশেই নিরবতা, এই নিরবতা ভেঙে কান্না করা গলায় অনিতাই বলল,
- মা কিছু বলছো না যে?
কিন্তু তিনি বুঝতে দিলেন না অনিতা কে কিছু, তাই আবার মিসেস আলেয়া গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
- আমি কি বলব অনিতা? আমি তোমার বাবার সাথে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে দেখব, তোমার বাবা কি বলেন? তুমি তো আমার একার মেয়ে না তোমার বাবারও মেয়ে। তাই উনার সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি। উনি যা বলেন তাই তোমার মানতে হবে। বলেই মিসেস আলেয়া এখন রাখছি বলে লাইন কেটে দিলেন।
অনিতার মা ফোন রাখার পরেই অনিতা কান্নায় ভেঙে পড়ল। অনিতার একটাই ভয় যদি তার মা- বাবা বলেন #তার_শহরে আর থাকতে হবে না, চিরদিনের জন্য চলে যেতে হবে। মিসেস ইসাবেলা অনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত ভাবে বললেন,
- মামনি কি বলেছে আলেয়া আমায় বলো, কাঁদছো কেন পাগলি মেয়ে?
অনিতা মিসেস ইসাবেলা কে ঝাপটে ধরে কান্না করতে করতে বলল,
- মম, মা বলেছেন বাবা যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে। আমার ভয় লাগছে মম বাবা যদি আমাদের বিয়েটা না মানেন?
মিসেস ইসাবেলা জোর গলায় বলে উঠলেন,
- তোমার বাবা আলবাত মানবেন, তোমার বাবা কে আমার চিনা আছে। তোমার বাবা শিউলি কে আর তোমাকে সুখি দেখতে চান।
আমার সিফাত তোমার অযোগ্য নয় মামনি, কাজেই সিফাত কে রিজেক্ট করার কোনো যথাযথ কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমার পাপা কে বলছি তোমার মা- বাবার সাথে কথা বলতে। যাও রুমে যাও কান্না চিন্তা কোনোটাই করো না। আমরা দেখছি,
অনিতা রুমে এসে সিফাত কে কল করলো, সিফাত অনিতার কল দেখেই মুচকি হেসে রিসিভ করল।
সিফাত হেসে অনিতা কে বলল,
- মিসেস মেহবুব কথা বলছো না কেন, মিস করছো বুঝি?
সিফাতের গলা শুনে অনিতা ফুফিয়ে কেঁদে উঠল।
সিফাত অনিতার কান্নার শব্দ শুনে, ভয়ার্ত গলায় বলে উঠল,
- আনি তোমার কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন? তোমার শরীর ঠিক আছে?
অনিতার কান্নার বেগ আরো বেরে গেল, অনিতা কান্না মাখা গলায় বলল,
- আপনি বাসায় আসুন আমার ভালো লাগছে না।
সিফাত বুঝতে পারছে না অনিতার কি হয়েছে, সিফাত উত্তেজিত হয়ে বলল,
- আমার লক্ষী বউ তুমি একদম কাঁদবা না আমি আসছি এক্ষুনি। তোমার কি হয়েছে আনি?
অনিতা কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিল।
অনিতার হৃদয়ে সিফাত কে হারিয়ে ফেলার ভয় ঝেকে বসেছে। তার কেবল মনে হচ্ছে এই বুঝি তার বাবা ফোন করে বলেন,
- অনিতা তুমি চলে এসো, তোমাকে আর কানাডা থাকতে হবে না।
অনিতা এসব ভাবছে আর চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। অনিতা নিজের মনেই বলে উঠল,
- আমি যে পারবনা উনাকে ছাড়া থাকতে, #তার_শহরে ভালবাসায় আঁটকা পড়ে গেছে আমার মন। অনিতা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ল।
সিফাত দ্রুত ড্রাইভ করছে, তার কোনো দিকে কোনো হুঁশ নেই। তার মন মস্তিষ্ক ছুড়ে একটাই চিন্তা আনি এভাবে কাঁদলো কেন? অনিতার চিন্তায় সিফাতের মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, সিফাত যেন চিন্তা শূন্য হয়ে পড়েছে।
১ ঘন্টার ভেতর সিফাত বাসায় পৌঁছালো,
মিসেস ইসাবেলা জনাব আলী মেহবুবের সাথে এই বিষয় নিয়ে ডিসকাসড করছেন তাদের রুমে।
সিফাত দরজার কাছে এসেই জোরে কলিং বেল চাপ দিল, কাজের লোক দ্রুত পায়ে দরজা খুলে দিলো।
সিফাত ঝড়েরবেগে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের রুমের দিকে রওয়ানা হলো।
সিফাত ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে, তার একটাই প্রার্থনা অনিতা যেন ঠিক থাকে।
সিফাত রুমে ঢুকে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো অনিতা কোথাও নেই, অজানা ভয়ে সিফাতরে বুক ধক করে কেঁপে উঠল।
হঠাৎ সিফাতের চোখ গেল রুমের এক কোণায় অনিতা দু হাঁটোর উপর মাথা রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।
সিফাত এক মূূর্হত দেরি না করে চিৎকার করে বলে উঠল,
- আনি তোমার কি হয়েছে, তুমি ফ্লোরে বসে আছো কেন?
সিফাতের গলা শুনতে পেয়ে অনিতা বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে সিফাতের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
সিফাত অনিতা কে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে ভয় মাখা কন্ঠে বলে উঠল,
- আনি তোমার কি হয়েছে, আমাকে বলো প্লিজ?
আমার খুব ভয় হচ্ছে আনি তুমি কান্না থামাও।
অনিতা বাচ্চাদের মতো কান্না করে বলতে লাগল,
- আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালবাসি।
অনিতার মুখে ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনে সিফাত চমকে উঠল, অজানা আশংকায় তার বুক কেঁপে উঠছে। সিফাতের বুক ভারি হয়ে আসছে।
সিফাত কাঁপা গলায় অনিতার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
- আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা তোমাকে কে বলেছে আনি? আর হঠাৎ ই বা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা উঠছে কেন?
অনিতা সিফাত কে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে, মিসেস আলেয়ার সাথে যা যা কথা হয়েছে সব বলল।
সিফাত সব কিছু শুনে শান্ত সুরে বলল,
- আনি তুমি আগে শান্ত হও, চোখ মুখের কি অবস্থা করেছো? কান্না করে একদম চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছো।
সিফাত অনিতার কপালে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিল। অনিতা সিফাতের দিকে কান্না চোখে তাকিয়ে বলল,
- আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাব না।
সিফাত বাঁকা হেসে অনিতা কে বুকে আগলে ধরে বলে উঠল,
- তা মিসেস মেহবুব আমাকে কি বেশি ভালোবেসে ফেলেছেন?
সিফাতের প্রশ্নে অনিতা রেগে গেল, রাগি কন্ঠে বলল,
- এটা কোন ধরনের প্রশ্ন? আপনি কি চান আমি আপনাকে সত্যি ছেড়ে চলে যাই?
সিফাত রাগে চিৎকার করে অনিতা কে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠল,
- তুমি কি বললে আনি, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
অনিতা ভয় পেয়ে গেল সিফাতের হঠাৎ রাগ দেখে।
সিফাত আবার রেগেমেগে বলল,
- এই মেয়ে যদি আর কোনো দিন শুনেছি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখে এনেছো তাহলে খুব খারাপ হবে। আমি তোমায় যেতে দিলে তো তুমি যাবে? আমি যতদিন বাঁচব ততদিন তুমি আমার হয়ে থাকবে, মাইন্ড ইট!
অনিতা সিফাত কে জড়িয়ে ধরল, ধরে অপরাধীর স্বরে বলল,
- আই এম সরি, আর কখনো এরকম বলব না। প্লিজ রাগ করবেন না।
সিফাতের রাগ নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল অনিতার জড়িয়ে ধরায়।
সিফাত মুচকি হেসে বলে উঠল,
- হুম ঠিক আছে, তবে আর যেন এরকম কথা না শুনি। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, আমি মম- পাপার রুমে যাচ্ছি। তুমি এতো চিন্তা করো না তো।
অনিতা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
সিফাত তার মম- পাপার রুমের দিকে পা বাড়াল আর অনিতা ওয়াশরুমের দিকে।
সিফাত তার মম- পাপার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
- মে আই কামিং?
জনাব আলী মেহবুব হাল্কা হেসে বললেন,
- এসো সিফাত ভেতরে এসো। অফিস থেকে চলে এসেছো নাকি?
সিফাত ম্লান হেসে বলল,
- হ্যাঁ, পাপা একটা দরকারে আসতে হলো।
মিসেস ইসাবেলা মুচকি হেসে বললেন,
- সিফাত তোমাকে নিশ্চয়ই মামনি ফোন করে আসতে বলেছে?
সিফাত কিঞ্চিৎ লাজুক হেসে মিসেস ইসাবেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
- মম তুমি কি ফুফি কে বলে ছিলে?
মিসেস ইসাবেলা একটু নড়েচড়ে বসে গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
- হ্যাঁ, সিফাত বলেছিলাম। তোমার ফুফি তো রাগ করলো তোমাদের বিয়ের কথা শুনে।
সিফাত জনাব আলী মেহবুবের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে অনুরোধের কন্ঠে বলল,
- পাপা প্লিজ তুমি ফুফি কে মেনেজ করো, আমি সিউর ফুফি তোমার কথা শুনবেন। পাপা আনি কে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। বিকোজ আই লাভ হিম পাপা।
জনাব আলী মেহবুব আর মিসেস ইসাবেলা হেঁসে কুটিকুটি হচ্ছেন সিফাতের পাগলামো দেখে।
জনাব আলী মেহবুব হেসে সিফাত কে বললেন,
- সিফাত উঠে দাঁড়াও, আলেয়া আর তার স্বামী তো তোমাকে অনেক আগে থেকেই মেয়ের জামাই হিসাবে পছন্দ করতো। কিন্তু আমাদের কিছু বলেনি কারণ অনিতা যদি তোমায় পছন্দ না করে এরজন্য।
তবে খানিক রাগ করছে তোমরা না জানিয়ে বিয়ে করেছো বলে। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার সিফাত ওরা তো রাগ করবেন, আমি অনিতার বাবা – মা কে পুরো ঘটনা খুলে বলেছি। তারা আর দ্বিমত করেনি।
সিফাত আনন্দে আপ্লূত হয়ে জনাব আলী মেহবুব কে জড়িয়ে ধরে বলল,
- পাপা তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি ফুফির কাছে মাফ চেয়ে নিব। আর তোমরা তো জানোই কেন আমি সেদিন আনি কে বিয়ে করে নিয়ে ছিলাম?
সিফাতের খুশি দেখে তার মম- পাপাও খুশি হলেন।
সিফাত তার পাপা কে ছেড়ে দিয়ে চিন্তিত ভাবে বলল,
- পাপা ফুফিরা কি বিয়ের কথা কিছু বলেছেন? মানে উনারা কানাডা আসবেন নাকি আমরা সবাই বাংলাদেশে যাবো?
মিসেস ইসাবেলা বলে উঠলেন,
- তোমার ফুফি আর আংকেল বলেছেন, তোমরা দুজনে যদি বলো কানাডায় বিয়ের অনুষ্ঠান করতে তাহলেও তারা রাজি, অনিতার ফ্যামেলি কানাডা আসবে। আর যদি বলো বাংলাদেশে যেয়ে অনুষ্ঠান করতে তাহলেও তারা রাজি। এখন তোমরা ডিসাইড করো কি করবে?
সিফাত তার মম- পাপার দিকে প্রশ্নে ছুড়ে দিল,
- মম- পাপা এ বিষয়ে তোমাদের কি মতামত আগে বলো?
জনাব আলী মেহবুব হাসি মুখে বললেন,
- তোমরা যা চাও সিফাত তাই হবে, আমরা তোমাদের ইচ্ছা কে আগে প্রাধান্য দিবো।
সিফাত তার পাপা কে বলল,
- ঠিক আছে পাপা, আমি আর আনি মিলে ডিসাইড করে তোমাদের জানাবনে। বলেই সিফাত তার রুমে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলো।
এর মধ্যে অনিতা ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখলো রুমে সোহেল দাঁড়িয়ে আছে, কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে। হঠাৎ সোহেল কে তাদের রুমে দেখে অনিতা ভ্র কুঁচকে তাকাল সোহেলের দিকে।
পার্ট : ২৮
হঠাৎ সোহেল কে তাদের রুমে দেখে অনিতা ভ্রু কুঁচকে তাকাল সোহেলের দিকে।
সোহেল অনিতা কে দেখেই বলল,
- অনিতা তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
সিফাত তাদের রুমে সোহেলের কন্ঠ শুনতে পেয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ল।
অনিতা সোহেলের দিকে দু পা এগিয়ে এসে স্বাভিক হয়ে বলল,
- হ্যাঁ, সোহেল ভাইয়া বলুন। কি বলতে চান?
সোহেল হাল্কা কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে উঠল,
- অনিতা আমি আজ একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম, তো সেখানে একটা ছেলে তোমার কথা জিজ্ঞেস করল।
অনিতা ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত ভাবে বলল,
- কি জিজ্ঞেস করেছে ভাইয়া? ছেলেটার নাম কি?
- তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি, শুধু বলল আজ তুমি ভার্সিটি কেন যাওনি? আমি নাম জিজ্ঞেস করিনি তো।
অনিতা ভাবছে ছেলেটা কে হতে পারে? খানিক বাদে অনিতা সোহেলের উদ্দেশ্য বলল,
- ভাইয়া ছেলেটা দেখতে কি রকম ছিল? ছেলেটার বর্ণনা দিতে পারবে?
সোহেল চোখ বন্ধ করে ছেলেটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করল, কিছু সময় পর চোখ খুলে তাকিয়ে বলল,
- হুম, পারব। ছেলেটার চোখের মনি ব্রাউন কালার, চুলের কালার ও ব্রাউন এবং ছেলেটা খুব ফর্সা ছিল।
অনিতা মৃদু হেসে তার ফোন হাতে নিল, তারপর গ্যালারি থেকে একটা ফটো বের করে সোহেল কে বলল,
- দেখতো সোহেল ভাইয়া এই ছেলে কি সেই ছেলে?
সোহেল অবাক ভঙ্গিতে বলে উঠল,
- হ্যাঁ, হ্যাঁ অনিতা এই ছেলেই সেই রেস্টুরেন্টের ছেলে! তুমি ওকে চিনো কি ভাবে অনিতা? আর আমাকেই বা চিনে কি করে ওই ছেলেটা?
অনিতা মুচকি হেসে বলল, - ভাইয়া শুনো ও আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড ওর নাম চার্লস। ওর পাশে যে মেয়েটা দেখছো চার্লস এর বোন চার্লি। আর আমি একদিন তোমাদের সবার ফটো দেখিয়ে ছিলাম চার্লস কে তাই হয়তো এখন দেখে চিনে ফেলেছে।
সোহেল হেসে বলল,
- ওহ্, অনিতা তাই বলো। আমি তো রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। যে ছেলেটা কে আমাকেও চিনে আবার অনিতা কে ও চিনে? সব চিন্তা বাদ দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করতে আসলাম, ভাবলাম তোমার পরিচিত কেউ হবে হয়তো।
সিফাত রুমে প্রবেশ করতেই সোহেল অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- অনিতা আমি আসি তাহলে, আমার কাজ আছে।
অনিতা সিফাত কে দেখে খানিক ভয় পেল, যদি সিফাত রাগ করে সোহেল কে রুমে দেখে?
অনিতা ঠোঁটে জোর পূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,
- ঠিক আছে ভাইয়া যান।
সিফাত বুঝতে পারছে অনিতা তাকে ভয় পাচ্ছে, অনিতা জোর করে ঠোঁটে হাসি আনার ব্যাপার টা সিফাত বেশ বুঝতে পারল।
সোহেল দ্রুত রুম থেকে চলে গেল।
সিফাত অনিতার সঙ্গে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
অনিতা ভয় পাচ্ছে, মনে মনে বলে উঠল,
- যে ভয়টা পাচ্ছিলাম তবে কি সেটাই হলো, উনি কি রাগ করলেন সোহেল ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি বলে?
অনিতা তোয়ালে হাতে নিয়ে বেডে বসে পড়ল।
অনিতা ঠিক বুঝতে পারছে না সিফাত রাগ করলো কি না?
অনিতা আপন মনেই বলল,
- দূর এই লোকটা কে আমি জীবনেও বুঝতে পারব না। কখন রাগ করে কখন মিজাজ ঠিক থাকে কিচ্ছু বুঝা যায় না।
মম- পাপার রুমে তো গেলেন উনাদের সাথে কি কথা হলো সেটাও বললেন না। সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলেন।
বাবা- মা কি রাজি হবেন?
অনিতার চোখ দিয়ে আবার কয়েক ফুটো জল গড়িয়ে পড়ল তার গাল বেয়ে।
এসব ভাবলে অনিতার বুক ফেটে কান্না আসে, সে সিফাত কে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারে না।
অনিতা ঠায় বসে আছে বেডে, অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে দেওয়ালে ঝুলানো সিফাতের ফটোর দিকে।
২০ মিনিট পর সিফাত ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখলো অনিতা তার ফটোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অনিতার চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।
সিফাত রাগে গর্জে উঠে বলল,
- আনি তোমাকে না বাড়ন করেছি না কাঁদতে, তারপরও তুমি কাঁদছো কেন?
অনিতা দ্রুত হাত দিয়ে চোখ মুছে থতমত গলায় বলল,
- ক কই না তো, আমি কাঁদছি না।
সিফাত রাগি কন্ঠে বলে উঠল,
- আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া অতো সোজা না মিসেস মেহবুব।
তুৃমি ভাবছো আমি হয়তো রাগ করেছি সোহেলের সাথে কথা বলায়? যদি এরকম কিছু ভেবে থাকো তবে ভুল, আমি তোমাদের সব কথোপকথন শুনেছি দরজায় দাঁড়িয়ে।
আর যদি না ও শুনতাম তোমরা দুজনে কি কথা বলছিলে তাও রাগ করতাম না। কারণ আমার বউ কে আমি ভালো করেই জানি।
অনিতা মৃদু হাসলো সিফাতের কথায়।
সিফাত অনিতার আরেকটু কাছে এসে বলল,
- আর আনি তোমার বরের মাইন্ড এতো নোংরা নয় বুঝলে।
অনিতা মুখ গোমড়া করে বলল,
- তাহলে রুমে ঢুকে আপনি কথা বলেননি কেন আমার সাথে?
সিফাত হেসে বলল,
- ওহ্ এই ব্যাপার। ভাবলাম আগে ফ্রেশ হয়ে নেই তারপর কথা বলব।
অনিতা ভয়ে ভয়ে বলল,
- মম- পাপা কি বললেন?
সিফাত টি- শার্ট গায়ে পরিধান করতে করতে বলে উঠল,
- বলেছেন তো অনেক কিছু।
অনিতা অধর্য্য গলায় বলে উঠল,
- আরে বলুন না কি বলেছেন? আমার খুব ভয় হচ্ছে মা- বাবা যদি বেঁকে বসেন?
সিফাত বাঁকা হাসল, হেসে বলল,
- এতো ভয় পাও কেন মিসেস মেহবুব? আমার উপর ভরসা করতে পারো না?
অনিতা সিফাতের এক হাত ধরে বলল,
- আমি আপনাকে ভরসা করি বলেই তো আপনাকে বিয়ে করতে দ্বিমত করিনি। এবার বলুন না মম- পাপার কি কথা হলো মা- বাবার সঙ্গে?
সিফাত অনিতা কে বেডে বসিয়ে সে অনিতার কোলে মাথা রাখল।
আস্তে আস্তে অনিতার পেটে মুখ গুজল।
অনিতা কেঁপে উঠল সিফাতের স্পর্শ পেয়ে,
সিফাত তার দু হাত দিয়ে অনিতার কোমড় জরিয়ে ধরে বলল,
- ফুফি এবং আংকেল দুজনই রাজি হয়েছেন মিসেস মেহবুব।
অনিতা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
- কি, সত্যি? মা- বাবা রাজি হয়েছেন? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না?
সিফাত অনিতার পেটে মুখ গুজে রেখেই বলল,
- উনারা তো আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতেন, তোমার বর হিসাবে। একটু রাগ করেছেন না জানিয়ে বিয়ে করেছি বলে, কিন্তু পাপা সব কিছু বুঝিয়ে বলেছেন।
অনিতা চিন্তিত ভাবে বলল, - তাহলে মা আমার সাথে রুড বিহেভ করলেন কেন?
সিফাত মুচকি হেসে ধীর কন্ঠে বলল,
- পাগলি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য ফুফি এরকম কথা বলেছেন, তুমি তো বোকা তাই এতো সহজে সব বুঝোনা।
অনিতা আর কিছু বলতে পারল অনিতার ফোনে কল আসল, অনিতা হাত বারিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে দেখল তার মা ফোন করেছেন।
সিফাত অনিতা কে বলল,
- আনি কল রিসিভ করছো না কেন, কে কল করেছে?
অনিতা সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
- মা কল করেছেন।
- কল রিসিভ করো দেখো ফুফি কেন কল করছেন?
অনিতা কল রিসিভ করে আস্তে করে বলল,
- হ্যালো, মা, আই এম সরি। আমাকে মাফ করে দাও।
মিসেস আলেয়া হেসে বললেন,
- দূর বোকা মেয়ে সরি বলতে হবে না, বরং আমি সরি তর সাথে আগে রুড বিহেভ করেছি বলে।
আসলে তকে ভয় দেখানোর জন্য এরকম বলেছিলাম। কষ্ট পেয়েছিস মায়ের কথায়?
অনিতা হেসে আনন্দ ভরা গলায় বলল,
- না, মা আমি কষ্ট পাইনি। তোমরা কেমন আছো মা?
এদিকে সিফাত বার বার তার কোঁচা কোঁচা দাঁড়ি দিয়ে অনিতার পেটে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, আর মিটিমিটি হাসছে।
অনিতা কেঁপে উঠছে, আর এক হাত দিয়ে সিফাত কে সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
সিফাত আরো শক্ত করে অনিতার কোমড় জড়িয়ে ধরল।
অনিতার ফ্রীজড হয়ে বসে রইল, অনিতা বুঝে গেছে সিফাত তাকে নিজ থেকে না ছাড়লে সে ছুটতে পারবে না।
মিসেস আলেয়া শান্ত কন্ঠে বললেন,
- আমরা ভালো আছি মা। আচ্ছা তকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য কল দিলাম।
অনিতা আস্তে করে বলল,
- হ্যাঁ, মা বলো।
মিসেস আলেয়া খানিক হেসে বললেন,
- তোমরা তোমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় করতে চাও, বাংলাদেশে না কি কানাডা?
তোমরা দুজনে যেখানে চাইবে সেখানেই আমরা রাজি আছি মা।
অনিতা তার মায়ের কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, খানিক পর লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
- মা আমি #তার_শহরে অনুষ্ঠান করে আবার বিয়ে করতে চাই, তোমাদের সবার দোয়া নিয়ে।
মিসেস আলেয়া মেয়ের কথায় মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
- ঠিক আছে অনিতা আমরা সবাই কানাডায় আসব। এখন রাখি মা তোমার বাবার সাথে কথা বলে সব কিছু রেডি করার ব্যবস্থা করতে হবে।
মিসেস আলেয়া ফোন কাটতেই অনিতা সিফাতের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে উঠল, - মি সিফাত মেহবুব আপনি বারি দুষ্ট হচ্ছেন দিন দিন।
সিফাত ঘোর লাগানো গলায় বলল,
- বউ এরকম বলছো কেন? এখানে আমাদের বেবি থাকবে না আনি?
অনিতা লজ্জা পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,
- উঠুন তো।
সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- আমাকে বাসায় ডেকে আনলে কেন মিসেস মেহবুব? আমি অফিসে থাকলে তো আর এই জ্বালা সহ্য করতে হতো না? নিজে যখন ডেকে এনেছো তাহলে এইটুকু তো সহ্য করো বউ।
অনিতা সিফাতের গায়ে আস্তে করে কিল দিয়ে বলল,
- আপনার মুখে তো দেখি কিচ্ছু আঁটকায় না? এতো র্নিলজ্জ কেন আপনি?
সিফাত অনিতা কে জরিয়ে ধরে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,
- আমার বউ কে আমি লজ্জা পাবো কেন? আমার এতো লজ্জা নেই বাবা তোমার মতো।
হঠাৎ দরজায় নক পড়ায় সিফাত অনিতার কোল থেকে মাথা তুলে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
- কে? ভেতরে আসো।
মিসেস ইসাবেলা হাসি হাসি মুখে রুমে প্রবেশ করে বললেন,
- মামনি তোমার মা ফোন করে জানিয়েছে তুমি নাকি কানাডায় অনুষ্ঠান করতে চাও?
অনিতা কিছু বলার আগে সিফাত বলল,
- হ্যাঁ, মম। আর আমিও চাই কানাডায় অনুষ্ঠান হোক। পরে একসময় আমরা বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসবনে।
মিসেস ইসাবেলা হেসে বললেন,
- ঠিক আছে, আমি আর তোমার পাপা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে অনিতার বাবা- মা কে জানিয়ে দেই?
সিফাত হেসে মাথা নিচু করে বলল,
- মম তুমি আর পাপা যা ভালো মনে করো তাই করো, আমাদের কোনো প্রবলেম নেই।
মিসেস ইসাবেলা চলে গেলেন উনার রুমের উদ্দেশ্য।
সিফাত অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
- তোমার মত কি আনি?
অনিতা মৃদু হেসে বলল,
- আপনার মতই তো আমার মত। আমার এক্সট্রা কোনা মত নেই এই ব্যাপারে।
সিফাত হেসে অনিতা কে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।
১৫ দিন পর
অনিতার বাবা – মা আর তার ছোট বোন শিউলি কানাডায় এসেছে দু দিন হলো।
আজ তাদের বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছে, সোহেল, জিসান, শিউলি, সিফাত ও অনিতা।
দু দিন পরই সিফাত, অনিতার বিয়ে।
সবাই মিলে কানাডার সব চাইতে বড় শপিং মলে গেল বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য।
সিফাত সবার উদ্দেশ্য বলল,
- আগে আনির কনে সাজার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিনব। পরে তোমাদের যার যা লাগবে তা নিবে।
শিউলি অনিতার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমি হেসে ফিসফিসিয়ে বলল,
- আপু ভাইয়া দেখি আগে বউয়ের জিনিস কেনার জন্য কেমন উতলা হয়ে উঠেছে?
অনিতা শিউলির মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলল,
- শিউলি তুই বেশি পেকে গেছিস, দ্বারা বাবা- মা কে বলে তর ব্যবস্থা করতে হবে। ফাজিল কোথাকার?
শিউলি হেসে বলল, - ব্যবস্থা করও না কে না করেছে?
অনিতা চোখ রাঙিয়ে বলে উঠল,
- কি বললি শিউলি?
শিউলি ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল,
- কই কিছু বলিনি তো আপু। বলেই জিসানের পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনিতা হেসে ফেললো শিউলির ভয় পাওয়া দেখে।
সিফাত অনিতার কানের কাছে মুখ এনে বলল, - বউ এখন ঝগড়া করার দরকার নেই, বাসায় গিয়ে শিউলি কে আচ্ছা মতো দুলাই দিয়।
অনিতা চাপা হেসে বলল,
- হুম, ভেতরে চলুন।
জিসান শিউলির দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলল,
- শিউলি তুমি দেখছি খুব দুষ্ট প্রকৃতির, প্রথমে তোমাকে দেখার পর যেমনটা মনে করে ছিলাম তুমি তেমনটা না।
শিউলি ভ্রু নাচিয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
- তা মি জিসান আমাকে কেমন ভেবেছিলে প্রথমে?
জিসান মাথা চুলকাতে চুলকাতে আস্তে করে বলল,
- ভেবে ছিলাম তুমি আর আপু একি রকম শান্ত শিষ্ট কিন্তু না তুমি খুব চটপটে। একদম আপুর বিপরীত।
শিউলি জিসানের দিকে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
- আমি আর আপু পোশাকে- আশাকে একরকম হলেও আমরা ভিন্ন স্বভাবের। দেখতে আমি আপুর মতো ঠিকই কিন্তু অতো শান্ত বা ভদ্র কোনোটাই নয়।
আমি শিউলি আহমেদ, অনিতা আহমেদ না, মাইন্ড ইট। জিসান মুচকি মুচকি হাসছে শিউলির কথা বলার ধরণ দেখে। জিসান মনে মনে বলল,
- শিউলির রাগ টা এখনও কমেনি বোধহয়, গতকাল ওর হাত থেকে চিপস কেড়ে খেয়েছি বলে।
শিউলি রাগি হলেও বেশ ভালো মনের।
শিউলি এ কথা বলেই হনহন করে সিফাত, সোহেল অনিতার পিছন হাঁটতে লাগল, আনওশা তাদের থেকে খানিক দূরে রয়েগেছে এখনো।
আচমকা এক ছেলে এসে শিউলির হাঁটার মধ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে গায়ে ধাক্কা দিলো। শিউলি পেছনে থাকায় কেউ দেখল না, শুধু জিসান দেখলো ছেলেটা শিউলি কে নিজ থেকে ধাক্কা দিয়েছে। শিউলি রেগে ছেলেটার দিকে তাকালো। তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় জিসান রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে ছেলেটা কে তার দিকে ঘুরিয়ে নাক বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,
- হেই স্কাউন্ড্রেল। জিসানের চিৎকার শুনে তিনজনই অবাক হয়ে পিছনে তাকালো।
পার্ট : ২৯
- হেই স্কাউন্ড্রেল। জিসানের চিৎকার শুনে তিনজনই অবাক হয়ে পিছনে তাকাল।
সিফাত দ্রুত এসে জিসানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
- জিসান কি হয়েছে, তুই এই ছেলে কে মারছিস কেন?
কে শুনে কার কথা জিসান ছেলেটার পেটের মধ্যে আরেকটা ঘুষি দিল। ছেলেটা জিসানের হাত থেকে ছুটার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে। জিসান ছেলেটা কে মারছে আর গালি দিচ্ছে।
শিউলি এগিয়ে এসে বলল,
- জিসান ওই স্কাউন্ড্রেল টা কে আমার হাতে দাও, আমিও কিছু দেই এই বজ্জাত কে। এই বখাটে ছেলে গুলো মেয়েদের কে কি মনে করে? বলেই শিউলি ছেলেটার গালে কষে একটা থাপ্পড় দিল।
অনিতা এসে সিফাতের পাশে দাঁড়িয়ে শিউলির উদ্দেশ্য বলল,
- স্টপ শিউলি, তুই ছেলেটা কে মারছিস কেন?
জিসান প্রচন্ড রাগ নিয়ে বলে উঠল,
- আপু শিউলির কাজ শিউলি কে করতে দাও, ছেলেটার উচিত শিক্ষা দরকার।
ছেলেটা হাত জোর করে জিসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আই এম সরি, প্লিজ ফর গিভ মি।
জিসান চিৎকার দিয়ে ছেলেটার শার্টের কলার চেপে ধরে বলল,
- তর কোনো ক্ষমা নেই, তকে আমি পুলিশে দেবো।
মেয়েদের কে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে শিখ, তদের মতো গুটা কয়েক বখাটেদের জন্য সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, মেয়েদের নিরাপত্তা নষ্ট হয়।
আজ যদি এর একটা বিহীত না করি তবে তুই অন্য মেয়েদের সাথেও সেম কাজ করবি।
অনিতা সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
- প্লিজ জিসান কে থামান ও যা রেগে আছে কিছু একটা অঘটন ঘটাবে নিশ্চিত।
সিফাত অনিতার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,
- আনি তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন, জিসান তো অন্যায় কিছু করছে না? ও জাস্ট অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। জিসান এতো সহজে রাগে না আনি, নিশ্চয়ই ছেলেটা বাজে কিছু করেছে?
সোহেল জিসানের সামনে গিয়ে বলল,
- ভাই কি হয়েছে আমাকে বল, এতো রেগে আছিস কেন? ছেলেটা কে ছাড় দেখ নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে?
রক্ত বের হচ্ছে এটা শিউলি দেখেনি, রক্তের কথা শুনে শিউলি খানিক ঘাবড়ে জিসান কে বলল,
- জিসান ওকে ছেড়ে দাও, ওর শাস্তি অনেক হয়েছে। আর কারো সাথে এই অসভ্যতামো করতে গেলে দু বার ভাববে, শিউলি ছেলেটার দিকে আংগুল উঠিয়ে কথা গুলো বলল।
জিসান ছেলেটার শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে রাগে ফুঁসছে, শিউলির কথায় ছেলেটা কে ছেড়ে দিল।
ছেলে টা ছাড়া পেয়ে শিউলির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় হাত জোর করে বলল,
- ম্যাম আই এম সরি, আমি আর এমন অসভ্যতামো করব না।
শিউলি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ছেলেটা কে বলল,
- এখন এখান থেকে যাও, আর ভুলেও কোনো মেয়েদের সাথে এমন করবা না। তোমার ভাগ্য ভালো পুলিশে দেইনি।
সাথে সাথে ছেলেটা দৌঁড়ে পালালো।
সোহেল শিউলির কাছে এসে বলল,
- শিউলি ছেলেটা কি করে ছিল?
শিউলি কথা বলার আগে জিসান গর্জে ওঠে বলল,
- ছোট ভাইয়া ও শিউলি কে নিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে ছিল। তোমরা যদি বাঁধা না দিতে তাহলে আজ একে এখানেই পুঁতে ফেলতাম।
অনিতা শিউলির গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
- তুই ঠিক আছিস তো শিউলি?
শিউলি মুচকি হেসে বলল,
- হ্যাঁ, আপু আই এম ফাইন।
সিফাত জিসানের কাঁধে হাত রেখে হেসে বলে উঠল,
- মি জিসান মেহবুব অনেক তো মারা মারি করলেন এবার ভেতরে চলুন, লেট হয়ে যাচ্ছে।
সবাই হেসে উঠল সিফাতের কথায়।
শিউলি বার বার আড় চোখে জিসানের দিকে তাকাচ্ছে। জিসান সেটা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেল। শপিং মলে তারা যত সময় ছিল শিউলি এই একি কাজ করেছে বার বার তাকিয়েছে জিসানের দিকে।
জিসানের এতে কোনো হেলদুল নেই, সে গম্ভীর মুখ করে আছে।
শিউলি বুঝতে পারছে না জিসান এরকম মুখ করে আছে কেন?
অবশেষে তারা সব কেনাকাটা করে বাসায় ফিরল সন্ধ্যার দিকে।
বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
শিউলি ফ্রেশ হয়ে জিসানের রুমের দিকে গেল, জিসানের রুমের দরজায় নক করল।
জিসান সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে, জিসান তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে বলল,
- ভেতরে আসো।
শিউলি রুমে ঢুকে জিসান কে খালি গায়ে দেখে অপ্রস্তুত বোধ করল, শিউলি আমতা আমতা করে বলল,
- জিসান আমি এখন যাই, পরে আসব।
জিসান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
- কেন এসেছ বলো, আর পরে আসবে কেন?
শিউলি ধীর গলায় বলল,
- জিসান তেমার কি হয়েছে তুমি আমার সাথে কথা বলছো না? শপিং মলের ঘটনার পর থেকেই কেমন একটা যেন বিহেভ করছো?
জিসান ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল,
- তোমার সাথে কি রকম বিহেভ করবো বলে দাও, তোমার সাথে আমার কথা বলার দরকার থাকলে অবশ্যই বলতাম, আমার তো কোনো দরকার নেই।
শিউলি ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল, তারপর আস্তে করে বলল, - জিসান আমি সরি, আমার ভুল হয়েছে তোমার সঙ্গে যেঁচে কথা বলা। যদি যেঁচে কথা বলতে না আসতাম তাহলে এরকম অপমান করতে পারতে না। বলেই শিউলি অশ্রু বেজা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
জিসান রাগ নিয়ে নিজ মনে বলল,
- ছেলেটা কে তো আজ আস্ত পুঁতে ফেলতাম যদি তুমি নিষেধ না দিতে, তার জন্যই আমার রাগ হচ্ছে শিউলি।
আনি তোমার হলো আমি ওয়েট করছি তো বউ। সিফাত অনিতা কে ওয়াশরুম থেকে বাহির হওয়ার জন্য ডাকছে।
অনিতা একটু পরে বের হয়ে বলল,
- আপনার জন্য ভালো ভাবে শাওয়ার করতে পারলাম না। কি হয়েছে ডাকছিলেন কেন?
সিফাত বাঁকা হেসে পিছন দিক দিয়ে অনিতা কে জড়িয়ে ধরল, জড়িয়ে ধরে অনিতার কাঁধে তার থুঁতনি রেখে আস্তে করে বলল,
- তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগে না তুমি বুঝ না? তাই তো পাগলের মতো তোমায় ডাকছিলাম।
অনিতা হেসে বলল,
- এখন তো দেখেছেন এবার আমায় ছাড়ুন জনাব।
সিফাত আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,
- না, না তোমায় তো এখন ছাড়ব না মিসেস মেহবুব। আমার এভাবে ধরে থাকতে মন চাইছে।
অনিতা অস্থির গলায় বলল,
- দূর, ছাড়ুন না যদি কেউ এসে পড়ে? আমি লজ্জা পাবো, আপনার তো লজ্জা নেই।
সিফাত অনিতা কে ছেড়ে দিয়ে বলল,
- ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম, তোমাকে লজ্জায় ফেলতে চাই না লজ্জার রাণী।
অনিতা হেসে দিল সিফাতের কথা শুনে।
সিফাত নিচে চলে গেল তার ফুফি আর আংকেলর সাথে গল্প করবে বলে।
অনিতা শিউলির রুমে দিকে পা বাড়ালো।
অনিতা রুমে ঢুকে দেখল, শিউলি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে উদাস মনে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
আস্তে করে অনিতা শিউলি কে ডাক দিল,
- শিউলি তর শরীর ঠিক আছে? এরকম একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
শিউলি বাহির থেকে চোখ ফিরিয়ে অনিতার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলল,
- আমার শরীর ঠিক আছে আপু, ভালো লাগছিল না তাই এখানে দাঁড়িয়ে বাহির দেখছিলাম।
অনিতা শিউলির চোখের দিকে তাকিয়ে সন্দীহান কন্ঠে বলে উঠল,
- শিউলি তর চোখ এতো লাল হয়ে আছে কেন, তুই কি কান্না করেছিস?
শিউলি সত্যিটা ধরা পড়ার ভয়ে অন্যদিকে চেয়ে থতমত হয়ে বলল,
- না, না আপু আমি কান্না করব কেন বলতো?
এমনিতেই বোধ হয় লালা হয়ে আছে, আগে কি যেন একটা ঢুকে ছিল চোখে।
অনিতা শিউলি কে বলল,
- ওহ্ আমি আরও ভাবলাম তুই কাঁদছিলি। আচ্ছা নিচে চল, এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকবি কেন?
শিউলি আর অনিতা নিচে গেল, জিসান বসে আছে একটা সোফায়।
জিসান কে দেখে শিউলি চোখ ফিরিয়ে নিল। তাদের মধ্যে কোনো কোনো হলো না।
রাত ১১ টার দিকে সবাই ডিনার শেষ করে সব রুমে চলে গেল।
সিফাত বেডে গিয়ে অন্য পাশে ফিরে শুয়ে পড়ল।
অনিতা সিফাত কে এভাবে শুতে দেখে বলল,
- আপনি অন্য দিকে ফিরে আছেন কেন?
সিফাত নিশ্চুপ কোনো কথা বললো না, মুখ টিপে হাসছে।
অনিতা ভয়ার্ত গলায় বলল,
- কথা বলছেন না কেন, আমি কি কিছু ভুল করেছি? প্লিজ বলুন না।
সিফাত তাও কোনো উত্তর দিল না, নিরব হয়ে আছে।
অনিতা কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠল,
- এ যে শুনছেন, আপনি কথা বলছেন না কেন?
সিফাত আর চুপ থাকতে পারল না অনিতার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে, সিফাত অনিতার দিকে ঘুরে টান দিয়ে অনিতা কে বুকে জড়িয়ে ধরল।
অনিতাও সিফাত কে শক্ত করে পেছিয়ে ধরল।
সিফাত হেসে বলল,
- এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? আমি তো জাস্ট তোমাকে রাগানোর জন্য এটা করেছিলাম, কিন্তু হলো তার উল্টো তুমি কান্না করে দিলে।
আমি চেয়ে ছিলাম তুমি আমার সঙ্গে রাগ করো, আর আমি তোমার রাগ ভাঙ্গাই।
অনিতা সিফাতের বুকে মুখ গুজে বলে উঠল,
- আমি পারি না আপনার সাথে রাগ করতে, মোট কথা আপনার সাথে তো রাগ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
সিফাত অনিতার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
- তোমাকে বুকে না নিলে আমার ঘুম আসে না আনি।
অনিতা আস্তে করে বলল,
- আপনার বুকে মাথা না রাখলে আমরাও ঘুম আসে না।
রাত গভীর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো জিসানের চোখের পাতায় ঘুম নেই। তার বার বার শুধু শিউলির ছলছল চোখের দৃষ্টি মনে পড়ছে।
জিসান অস্বস্তি বোধ করছে সে চায় না শিউলি কে ভাবতে, তারপরও শিউলির কথাই মনে পড়ছে।
শিউলির সাথে দূর ব্যবহারের কথা টা একদম ভুলতে পারছে না। জিসান বুঝে উঠতে পারছে না তার কি করা উচিত।
জিসান এসব ভাবছে আর রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।
শিউলিও বসে আছে বেডের এক কোণায় গুটিশুটি মেরে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিসানের অপমানের কথা তার বিষণ মনে হচ্ছে।
শিউলির কষ্ট লাগছে, শিউলি ভাবছে,
- জিসানের কথায় আমার এতো খারাপ লাগছে কেন, আর এতো কষ্টই বা হচ্ছে কেন?
শিউলি নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলল, দূর আমরা তো আর কয়েকদিন মাত্র আছি কানাডায়।
এসব কথা ভেবে নিজের আনন্দ কে মাটি করার কোনো মানে হয় না।
আপুর বিয়েটা হয়ে যাক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে যাব।
তবে আমি জানি না জিসান কেন আমার সঙ্গে অযতাই ঝামেলা করছে, আমার তো মনে হয় না আমি ওর সাথে কোনো মিস বিহেভ করেছি বলে।
ঠিক আছে জিসান আমি তোমার সঙ্গে আর কখনো কথা বলব না।
শিউলি চোখ মুছে শুয়ে পড়ল।
জিসানের চোখে কিছুতেই ঘুম আসল না, সে অনেক চিন্তায় বিভোর। এভাবেই সারা রাত পার করে ভোরের দিকে ঘুমালো।
সকালে অনিতার ঘুম ভাঙলো সিফাতের ভালবাসার স্পর্শ কপালে পেয়ে।
অনিতা তাকাতেই সিফাত বাঁকা হেসে বলল,
- এখন আমার পাওনা টা মিটিয়ে দিন মিসেস মেহবুব।
অনিতা লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।
সিফাত অভিমানী গলায় বলে উঠল,
- ওকে আমাকে দিতে হবে না, আমি উঠলাম। বলেই চলে যেতে নিলে অনিতা সিফাতের হাত ধরে নিল।
সিফাত প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো অনিতার মুখের দিকে, অনিতা লজ্জা রাঙা চেহারায় এগিয়ে সিফাতের কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিল।
সিফাত অনিতা কে জড়িয়ে ধরে ধীর কন্ঠে বলল,
- প্রথমেই যদি দিয়ে দিতে তাহলে এই নাটক করতে হতো না। অনিতা সিফাতের বুকে কয়েকটা কিল, ঘুষি বসিয়ে লজ্জা নিয়ে বলল,
- আপনি তো ভালো নাটক জানেন দেখছি?
সিফাত বাঁকা হেসে বলে উঠল,
- হুম বউয়ের ভালবাসা পাওয়ার জন্য এরকম একটু আধটু নাটক করতেই হয়, না হলে তো বউ আদর দেয় না। বলেই চোখ টিপ মারল।
অনিতা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল, সিফাত অনিতা লজ্জা পাচ্ছে বুঝতে পেরে বলল, - মিসেস মেহবুব এতো লজ্জা পেতে হবে না যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, সবাই হয়তো নাস্তার টেবিলে আমাদের জন্য ওয়েট করছে। আমি পরে ফ্রেশ হবো।
এসব কিছুর মধ্যে দু দিন চলে গেল, আজ সিফাত অনিতার আবার নতুন ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হবে।
পার্লারের মেয়েরা এসে গেছে অনিতা কে সাজানোর জন্য। জিসান আর শিউলি কেউ কারো সাথে কথা বলেনি সেদিনের পর থেকে। একে অপর কে দেখলেই এড়িয়ে যায়।
সব গেস্টরা ও আস্তে আস্তে আসতে শুরু করে দিয়েছে। জিসান, সোহেল খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাজে, তাদের বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা তারা গেস্টদের কোনো ত্রুটি হতে দিবে না।
শিউলিও যতটুকু পারছে তার মা আর মামিমা কে কাজে হেল্প করছে।
জেনির মা ও এসেছেন বিয়েতে শুধু জেনি বাদে।
তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ, জেনি একদম ভিন্ন হয়েছে তার মায়ের থেকে।
জনাব আলী মেহবুব এবং অনিতার বাবা এনাম আহমেদ গেস্টদের সাথে কথা বলছেন।
সিফাত কে বর সাজোনোর জন্য তার বন্ধুরা তাকে তার রুমে নিয়ে গেল।
১ ঘন্টার মধ্যে অনিতার সাজ শেষ হলো, সিফাত পার্লারের মেয়েদের বলে ছিল অনিতা কে যে ভাবে সাজানোর জন্য ঠিক সে ভাবে সাজানো হলো।
হঠাৎ করে সোহেলের চোখ পড়ল এক ব্যক্তির উপর সে এদিক দিয়ে ভেতরের দিকে আসছে, সোহেল ছোট করে একটা ঢুক গিলল।
পার্ট : ৩০
হঠাৎ করে সোহেলের চোখ পড়ল এক ব্যক্তির উপর সে এদিক দিয়ে ভেতরের দিকে আসছে, সোহেল ছোট করে একটা ঢুক গিলল।
সে ব্যক্তটি আর কেউ নয় জন, জন তার মা কে নিয়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে এলো।
সোহেল মনে মনে বলে উঠল,
- আজ যদি জন কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসে থাকে, তাহলে ভাইয়া তো এ কে জ্যান্ত কবর দিবে। না জানি ভাইয়া এখন জন কে দেখলে কেমন রিয়েক্ট করবে?
সোহেল একমনে এসব ভেবে যাচ্ছিলো জনের ডাকে তার ধ্যান ভাঙ্গে।
জন হেসে সোহেলের দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বারিয়ে বলল,
- হাই, সোহেল।
সোহেলও আন্তরিকতার খাতিরে হাত বারিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল,
- হ্যালো, ব্রো। সোহেল জনের মায়ের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বলল, আন্টি ভেতরে যান আপনারা।
জন এবং তার মা ভেতরে চলে গেলেন।
মিসেস ইসাবেলা জনের মাকে দেখে খুশি হলেন ঠিকি কিন্তু পেছনে জন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিক ভয় পেলেন সিফাতের কথা ভেবে। মিসেস ইসাবেলা জনের মা র সাথে মিসেস আলেয়ার আলাপ করিয়ে দিলেন। জন তার মা কে নিয়ে একটা সোফায় বসে পড়ল। জন চারপাশে চোখ বুলিয়ে সব কিছু দেখছে, বাড়ি টাকে বেশ ঝাঁকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে শুধু লাইটিং আর লাইটিং। মেহবুব হাউজ কে যেন আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। আশেপাশে মানুষ জনদের আনাগোনা, একেঅন্যের সাথে আলাপে ব্যস্ত। জনাব আলী মেহবুব সোফায় জন কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তিনি চিন্তিত হলেন সিফাতের কথা চিন্তা করে। জনাব আলী মেহবুব দ্রুত পায়ে হেঁটে মিসেস ইসাবেলা কে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
- ইসাবেলা শুনো তুমি কি জনের মায়ের সাথে জন কেও আসতে বলেছিলে?
মিসেস ইসাবেলা আস্তে করে বললেন,
- না, আমি তো শুধু ওর মাকে ইনভাইট করেছিলাম। জন কি কোনো ঝামেলা বাঁধানোর জন্য এলো?
জনাব আলী মেহবুব চিন্তিত ভাবে উত্তর দিলেন,
- আমিও তো সেটাই ভাবছি ইসাবেলা। আচ্ছা এতো চিন্তা করো না দেখি কি করে? যদি কোনো ঝামেলা করতে চায় তবে আমি ডিরেক্ট পুলিশে ইনফর্ম করব। জনাব আলী মেহবুব তাড়া দেওয়া গলায় মিসেস ইসাবেলা কে বললেন,
- যাও তো ইসাবেলা তুমি আর আলেয়া অনিতা কে নিচে নিয়ে এসো বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে গেছে।
মিসেস ইসাবেলা আর কোনো কথা না বলে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পরে সিফাত বর বেশে সিঁড়ি দিয়ে নামল তার বন্ধুদের সাথে। সিফাতের দিকে বিয়েতে আসা সব মেয়েরাই তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। সিফাত কে রেড কালার শেরওয়ানিতে অসম্ভব রকম হ্যান্ডসাম আর ডেশিং দেখাচ্ছে। তার অফিসে কাজ করা মেয়ে স্টাফরাও হা করে তাকিয়ে আছে, এ যেন এক অন্য সিফাত মেহবুব। তাদের চোখে এমনিতেও সিফাত মেহবুব অনেক সুন্দর কিন্তু এতটা সুন্দর তাদের কাছে আগে লাগেনি। ফর্সা মুখের মধ্যে কোঁচা কোঁচা চাপ দাঁড়ি, মাথার কালো চুল গুলো স্পাইক করে রাখা।
রেড কালার শেরওয়ানিতে গোল্ডেন স্টোন এর কাজ করা। সিফাত তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে হাসছে, যা সিফাত কে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। সব মিলিয়ে সিফাত কে অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। সিফাত গেস্টদের সাথে কথা বলছে এমন সময় তার চোখ গেল জনের দিকে। জনও সাথে সাথে সিফাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে সিফাতের কাছে গেল। সিফাত জন কে দেখে রাগে ফুঁসছে, জনের উপর পুরাতন রাগ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সিফাতের।
জন হেসে সিফাতের দিকে হাত বারিয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য, সিফাত হ্যান্ডশেক না করে ইশারায় জন কে বলল আড়ালে আসার জন্য।
জন সিফাতের ইশারা বুঝতে পেরে সিফাতের পিছনে হাঁটতে লাগল। সিফাত হেঁটে হেঁটে বাগানের কাছে এসে থামল, জনও থেমে গেল।
সোহেল আড়ালে দাঁড়িয়ে পুরো ব্যাপার নোটিশ করছিল, সোহেলও বাগানে এসে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। সিফাত গম্ভীর কন্ঠে জন কে বলল,
- জন তুমি আবার কোন কুমতলবে আমার বিয়েতে এসেছো? জন ম্লান সুরে বলল,
- দেখো সিফাত এখানে আমি কোনো ঝামেলা করতে বা কোনো কুমতলবে আসিনি।
সিফাত গলার স্বর আরো গম্ভীর করে বলে উঠল,
- তাহলে কেন এসেছো জন?
জন মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বলল,
- সিফাত আমি আসলে সেদিনের ব্যাপারটার জন্য লজ্জিত, আমার উচিত হয়নি এভাবে একটা মেয়ের সাথে মিস বিহেভ করা। আমাকে তুমি আর আনিটা ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
সিফাত রাগে গর্জে উঠে বলল,
- এটা আবার তোমার কোন ড্রামা জন? তোমার এই মিথ্যা ড্রামাও আমায় বিশ্বাস করতে বলছো? তা জন কোনো নতুন প্লানিং করছো নাকি?
জন অসহায় কন্ঠে সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
- জানি সিফাত তুমি আমাকে এতো সহজে ট্রাস্ট করতে পারছো না। বাট ট্রাস্ট মি সিফাত আই এম নট লাইং টু ইউ, আই সয়ার টু গড।
সিফাত খানিক নিরব থেকে জনের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
- জনের মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ও মিথ্যা বলছে, একবার কি বিশ্বাস করে দেখবো? হুম একবার সুযোগ দেওয়া উচিত, হয়তো তার আগের ক্যারেক্টার পাল্টে ফেলেছে?
সিফাত অন্যদিকে চেয়ে গুরুগম্ভীর ভাবে বলে উঠল, - জন আমি তোমার কথা বিশ্বাস করলাম। বাট রিমেম্বার ইট, তুমি যদি আমার বা আনির অথবা আমার ফ্যামেলির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করো তাহলে, সিফাত মেহবুব থেকে ভয়ংকর আর কেউ হবে না। জন হেসে বলল,
- না সিফাত আমি এরকম কিছুই করব না, নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করতে পারো।
সিফাত আর কোনো কথা না বারিয়ে বলল,
- লেট স গো জন, লেট হয়ে যাচ্ছে।
সিফাত এবং জন তারা দুজনে বাড়ির ভেতর চলে গেল। সোহেল আড়াল থেকে বের হয়ে এসে নিজ মনে বলল,
- ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে জন কে কি ভাইয়া মারার জন্য এখানে নিয়ে এলো? যাক জন বেঁচে গেছে, এই জন কি সত্যি ভালো হয়ে গেল? যদি সত্যি ভালো হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই। আর জন যদি মনে মনে কোনো ফন্দি আঁটে থাকে ভাইয়ার ক্ষতি করবে বলে, তাহলে জনকে ভয়ংকর মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। জন যেভাবে কথা বলল তাতে তো মনে হয় ভালো হয়ে গেছে।
নাহ, আর ভেবে লাভ নেই ভেতরে যাওয়া যাক।
সিফাত তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে এমন সময় তার চোখ আঁটকে গেল অনিতার উপর। অনিতা সিঁড়ি দিয়ে নামছে, সাথে শিউলি তার মা এবং মামিমা। সিফাত কে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার বন্ধুরাও তাকালো সে দিকে, সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অনিতার দিকে। সিফাতের হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে, সিফাত তার বুকের বা পাশে হাত দিয়ে আপন মনে বলল,
- এই মেয়ে কি আমাকে আজ মেরে ফেলতে চায়? আজ আনি কে এতো আর্কষণীয় লাগছে কেন?
অনিতা লাজুক লাজুক মুখ করে আছে, শিউলি লক্ষ্য করল সিফাত এক নজরে তাকিয়ে আছে।
শিউলি শয়তানি হাসি দিয়ে সিফাতের কাছে গিয়ে বলল,
- এহেম এহেম, ভাইয়া ঐদিক দিয়ে কি দেখছো আপু তো নিচে চলে এসেছে।
সিফাত লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিল, সিফাত আড়চোখে দেখলো তার বন্ধু পলাশ সহ সবাই অনিতার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
সিফাত চাপা রাগ নিয়ে তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলে উঠল,
- এই লুইচ্চার দল তোমরা আমার বিয়ে করা বউয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছো?
সিফাতের চাপা রাগ কারো বুঝতে বাকি রইল না সবাই নিচের দিকে দৃষ্টি দিল।
অনিতা লজ্জা পেল সিফাতের কথায়।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে শিউলির দিকে তাকিয়ে আছে জিসান, শিউলি কে আজ জিসানের চোখে এক অনিন্দ্য সুন্দরি লাগছে।
শিউলি ব্লাক কালার জর্জ জেটের শাড়ি পড়েছে, সাথে অল্প মেকাপ, চোখে ঘনকরে কাজল, ঠোঁটে রেড লিপস্টিক। চুল গুলো খুলাই রেখেছে, গলায় সেম্পল এক সেট ডায়মন্ডের নেকলেস যা শিউলি কে আরো সুন্দর লাগছে।
অনিতা আর সিফাত কে একত্রে বসানো হলো, অনিতা লজ্জায় কারো দিকে চোখ তুলে তাকতে পারছে না। অনিতা রেড কালার লেহেঙ্গা পড়েছে সিফাতের সাথে মেচ করে। অনিতার ফর্সা গায়ে রেড কালার লেহেঙ্গা টা বেশ মানিয়েছে। লেহেঙ্গার মধ্যে গোল্ডেন স্টোন এর কাজ থাকায় লাইটের আলোয় আরো বেশি ঝিলিক দিচ্ছে যা অনিতার সুন্দরর্য বারিয়ে দিয়েছে। সিফাত তাকালো অনিতার দিকে তার কাছে অনিতা কে এইমূর্হতে কোনো অপ্সরী থেকে কম লাগছে না। সত্যিই তার মায়াকুমারী কে আজ অন্য রকম লাগছে।
জন তাকিয়ে আছে অনিতার দিকে। কিন্তু অনিতা সেটা দেখতে পেল না। সিফাত খেয়াল করছে জন বার বার তাকাচ্ছে অনিতার দিকে। সিফাত বুঝতে পারছে না জন কেন বার বার অনিতার দিকে তাকাচ্ছে?
খানিকক্ষণ বাদে কাজি এসে তাদের আবার নতুন করে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন। বিয়ে পড়ানো শেষে জন এগিয়ে এলো সিফাত অনিতার দিকে। অনিতা জন কে দেখামাত্র ভয়ে চোখ বড় বড় করে জনের দিকে তাকিয়ে সিফাতের হাত চেপে ধরল।
জন আন্দাজ করতে পারছে অনিতা থাকে ভয় পাচ্ছে, তাই জন নম্র কন্ঠে বলল,
- আনিটা আই এম সরি, সেদিনের বিহেভ এর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাদের দুজনকে কংগ্রেস ম্যারিড লাইফে। অনিতা মাথা নিচু করে রইল কিছু বলল না। জন আবার বলল,
- আনিটা তোমাদের দুজন কে বেশ মানিয়েছে।
অনিতা হাল্কা হাসল, হেসে চাপা রাগ নিয়ে বলল,
- মি জন লিসেন, পৃথিবীতে আমার জন্ম হয়েছে সিফাত মেহবুবের জন্য আর সিফাত মেহবুবের জন্ম হয়েছে আমার জন্য।
সিফাত একটা তৃপ্তির হাসি দিল, যে হাসি অনেক কিছু প্রকাশ করল। জন মৃদু হেসে আস্তে করে বলল,
- রাইট আনিটা, তোমরা পারফেক্ট কাঁপল।
সিফাত বা অনিতা আর কোনো কথা বলল না।
শিউলি মনে মনে জিসান কে খুঁজছে কিন্তু কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা।
জনাব এনাম আহমেদ সিফাতের পাশে বসে সিফাতের এক হাত ধরে কান্নার স্বরে বললেন,
- বাবা সিফাত আমার আদরের মেয়েটাকে আজ থেকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। উনি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেন না, তারপর আবার বললেন, আমার মেয়েটাকে কোনো কষ্ট দিয় না বাবা, যদি কখনও মনে হয় অনিতা তোমার যোগ্য নয় তবে আমার মেয়েকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়। সিফাত হতভম্ব হয়ে এনাম আহমেদর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
- আংকেল আপনি এসব কি বলছেন, আমি কেন আনি কে আমার অযোগ্য মনে করব? আংকেল আপনি প্লিজ কাঁদবেন না, আই প্রমিজ আংকেল কোনো দিনও আনি কে কষ্ট দেবনা। অনিতা তার বাবার কান্না দেখে সেও কেঁদে যাচ্ছে, মিসেস আলেয়া ও কাঁদছেন। মিসেস ইসাবেলা এসে সিফাতের উদ্দেশ্য বললেন,
- কি ব্যাপার সিফাত এখনো আংকেল, ফুফি বলবে?
সিফাত লাজুক হেসে মাথা নিচু করে নিল।
জনাব আলী মেহবুব সিফাত কে বললেন,
- এখন থেকে আলেয়া কে আর এনাম কে বাবা- মা বলে ডাকবে। মিসেস আলেয়া চোখের পানি মুছে সিফাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
- আজ থেকে সিফাত আমার ছেলে, আমি অনিতা কে ভাবিকে দিয়ে দিয়েছে আর সিফাত কে আমি নিয়ে নিয়েছে। সবাই হেসে দিল মিসেস আলেয়ার কথায়, সিফাত বসা থেকে উঠে তার ফুফিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
- হ্যাঁ মা আজ থেকে আমিও তোমার ছেলে। জনাব এনাম আহমেদ বিড়বিড় করে বলে উঠলেন,
- আমি তো কেউ না? সিফাত এনাম আহমেদর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
- তুমিও তো আমার বাবা, তোমরা দু জনেই আমার মা এন্ড বাবা। সিফাত এনাম আহমেদর হাত ধরে বলল, বাবা তুমি আনির জন্য কোনো চিন্তা করবে না, আমার সবটা দিয়ে আমি আনি কে আগলে রাখব। জনাব এনাম আহমেদ আর মিসেস আলেয়া সিফাতের কথায় খুশি হলেন।
রাত ১২টা বেজে ১৫ মিনিট। আমি বধু বেশে বসে আছি বেডে। গেস্টরা সবাই চলে গেছে, আজ আমাদের রুম কে ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সারা রুম জুড়ে শুধু গোলাপের সুভাস, অনিতা সিফাতের কথা ভেবে বার বার লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে।
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে আমি কেঁপে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি উনি বাঁকা হেসে দরজা বন্ধ করে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। উনাকে দেখে আমি লজ্জায় নতজানু হয়ে বসে রইলাম। উনি আমার লজ্জা পাওয়া বুঝতে পেরে বলে উঠলেন,
- তো মিসেস মেহবুব আজ এতো লজ্জা পাওয়ার কারণ কি, জানতে পারি?
আমি বেড থেকে নেমে ধীর পায়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। জানি না এখন কেন উনাকে এতো লজ্জা পাচ্ছি। উনাকে যখন সালাম করতে যাবো তখন উনি আমার দু বাহু ধরে বললেন,
- তোমাকে না, না করেছি পায়ে ধরে সালাম না করতে, তোমার স্থান আমার বুকে। উনি আমাকে উনার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর গভীর ভাবে কয়েকটা চুমু এঁকে দিলেন আমার কপালে। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, যাও ফ্রেশ হয়ে আসো এই বারি লেহেঙ্গা গহনায় তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি আর কোনো কথা না বলে একটি শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম। আজ যদি আবার এই থ্রি – কোয়াটার আর টি- শার্ট পড়ি তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে খুব হাসবেন? যে রকম পারি অরকমই শাড়ি পরে নিবো। আমি প্রায় ২০মিনিট পর কোনো রকম শরীরে শাড়ি পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই উনি আমার দিকে তাকালেন, আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। উনি আমার দিকে ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন। যা আমাকে আরো অস্বস্থির মধ্যে ফেলে দিল, এমনতেই বার বার শাড়ি কুঁচি গুলো খুলে যাচ্ছে। উনার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
- কি হলো অমন করে কি দেখছেন?
উনি আমার দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
- তোমাকে দেখছি মিসেস মেহবুব, আজ তোমায় অনেক আর্কষণীয় লাগছে।
আমিও এক পা এক পা করে পিছনে পিছাতে লাগলাম, এক সময় আমার পিট দেওয়ালে ধাক্কা খেল বুঝতে পারলাম এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে উনার দু হাত আমার দু পাশে রাখলেন। আমি মূহুর্তেই চোখ বন্ধ করে নিলাম, উনি একদম আমার কাছে চলে এসেছেন। উনার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে।
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মাদক মিশানো গলায় বললেন,
- তোমাকে এরকম এলোমেলো শাড়িতে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। উনি আমাকে আস্তে করে বললেন, চোখ খুলো আনি, এতো লজ্জা পাও কেন?তোমাকে লজ্জা পেলে কেমন লাগে তুমি জানো? আমার তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। উনার এমন কথায় আমি আরো বেশি লজ্জা পেলাম। আমি পিটপিট করে চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম।
উনার সবুজ রংয়ের চোখ গুলো কেমন যেন নেশা ধরিয়ে দেয়, আমার চোখ জোরা সরিয়ে নিলাম লজ্জা লাগছে। উনি কেমন নেশা নেশা চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
উনি আস্তে করে উনার এক হাত আমার পেটে রাখলেন, উনার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম। উনি এক দৃষ্টিতে ঘোর লাগা চোখে আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছেন,
তারপর ধীরে ধীরে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন, আমার ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে, আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আচমকাই উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলেন, আমি লজ্জায় আবারো চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনি আমার ঠোঁটে আলতো কর চুমু খেলেন। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। উনি আমার দিকে তাকিয়ে নেশা গলায় বলে উঠলেন,
- আনি আজ এই রাত শুধু তোমার আমার। লজ্জায় অনিতার মুখ লাল বর্ণ ধারণ করল। অনিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অনিতার মাঝে ডুব দেয় সিফাত।
ভোর ৫ টার দিকে অনিতার ঘুম ভেঙে নিজেকে আবিষ্কার করলো সিফাতের বুকে। সিফাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অনিতা কে। অনিতা গতকাল রাতের কথা ভেবে লজ্জায় সিফাতের বুকে মুখ লুকালো। অনিতা সিফাতের বুকে মাথা রেখে মনে মনে বলল, - #তারশহরে আজ আমার ভালবাসা পূর্ণতা পেল, এখন শুধু মা- বাবার সপ্ন পূরণ বাকি। তবেই না #তারশহরে আমার সব সপ্ন আর ভালবাসা পূর্ণতা পাবে।
শিউলির আজ খুব সকাল ঘুম গেছে বলে সে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে। জিসান সারা রাত ঘুমায় নি সে এসে ছাদে দাঁড়াল, ছাদ থেকে শিউলি কে বাগানে দেখে অবাক হলো, জিসান দ্রুত পায়ে বাগানে ছুটে গেল। শিউলি অনুভব করছে তার পিছনে কারো উপস্থিতি। শিউলি কিছু বলার আগে জিসান বলে উঠল, - শিউলি তুমি এই সকাল ভেলা এখানে কি করো?
শিউলি আস্তে করে উত্তর দিল,
- ঘুম ভেঙে গেছে তাই আর শুয়ে তাকতে মন চাইলো না, বাগানে হাঁটতে চলে এলাম।
জিসান ছোট করে ওহ্ বলল। জিসান চারিদিকে চোখ বুলিয়ে তারপর শিউলির উদ্দেশ্য বলল,
- শিউলি আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
শিউলি আনমনা হয়ে বলল,
- হুম বলো,
জিসান অপ্রস্তুত ভাবে বলল,
- শিউলি আমি তোমাকে ভালবাসি কি না জানি না তবে তোমাকে আমার জীবনে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছু কল্পনা করতে পারি না। শিউলি প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা। শিউলি স্বাভাবিক গলায় জিসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
- জিসান যেদিন তুমি ভালো ভাবে তোমার ফিলিনিংস রিয়েলাইজ করতে পারবে যে তুমি আমাকে ভালবাস সেদিন আসবে। বলেই শিউলি ভেতরের দিকে চলে গেল। শিউলির যাওয়ার দিকে জিসান ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে তাকিয়ে আছে। জিসানও হয়তো শিউলিকে ভালবাসে কিন্তু গুছিয়ে বলতে পারছে না। শিউলির চোখ থেকে দু দন্ড জল গড়িয়ে পরল, শিউলি মনে মনে বলল,
- জিসান আমিও যে তোমাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু জিসান আমি চাই তুমি তোমার ভেতরের ফিলিনিংস টা আগে বুঝো। যেদিন জিসান বুঝতে পারবে সে আমাকে ভালবাসে সেদিন তার শহরে আমার ভালবাসার আরেক নতুন গল্প শুরু হবে। আমি ফিরে আসব আবার তার শহরে তার ভালবাসার টানে।
সমাপ্ত
তার শহরে – সিজন ১ – তার শহরে – সিজন ১ | আবেগি ভালোবাসার গল্প
তার শহরে – সিজন ২ – তার শহরে – সিজন ২ | আবেগি প্রেমের গল্প
তার শহরে – সিজন ৩ – তার শহরে – সিজন ৩ | কষ্ট পাওয়া ভালোবাসার গল্প
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “-তার শহরে গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।