স্মৃতি – Notun prem golpo Bangla

স্মৃতি – Notun prem golpo Bangla: স্মৃতি শাওনের বুকে শান্তিতেই মাথা রেখে আছে। শাওন কোনো কথা বলছে না, স্মৃতিকে কিছু বলা মানে কষ্ট দিগুণ করা। তার চেয়ে একটু বেশিই ভালোবেসে তার কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়াই ভাল হবে।


মূলগল্প

স্মৃতি সেভেনআপ মুখে দিয়ে কেমন করে তাকিয়ে আছে নিজের স্বামীর দিকে। স্মৃতির তাকানো দেখে শাওন ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে, স্মৃতি মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে বুঝালো কিছু হয় নি। শাওন নিজের খাবারের দিকে মন দেয়।

শাওন আর স্মৃতির বিয়ে হয়েছে মাত্র ১৭দিন হলো। পারিবারিক ভাবেই দুজনের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পূর্বে কেউ কাউকে দেখেনি কখনো।

স্মৃতি শহরের মেয়ে, আর শাওন গ্রামের ছেলে। চাকরির সুবাদে শহরে নিজের পরিবারকে নিয়ে এসেছে শাওন এক বছর হতে চলল।

শাওন আজ প্রথম স্মৃতিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার কারণে দুজনই ক্লান্ত, তাই ভালো একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিল দুজন।

শাওন মাঝেমধ্যে স্মৃতির দিকে তাকাচ্ছে, শাওন স্মৃতির খাওয়ার স্টাইল দেখে মনে মনে একটু ভয় পায়।

স্মৃতির খাবার গুলো কী ভালো লাগেনি? শাওন স্মৃতির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে।

স্মৃতি বড়লোক ঘরের মেয়ে, হয়তো আরো বড় রেস্টুরেন্টে এর চেয়ে অনেক ভালো খাবার খেয়ে জীবন কাটিয়েছে।
এমন ভাবে কী দেখছো?

স্মৃতির কথায় শাওন বাস্তবে ফিরে। শাওন স্মৃতির কথার উত্তর না দিয়ে খাবারের দিকে মন দেয়।

স্মৃতির মনে অনেক প্রশ্ন। এই প্রশ্ন গুলো কাকে করবে? শাওনকে? তাহলে শাওন যে সব জেনে যাবে! স্মৃতির ভেতর কেঁদে উঠে, শাওন সব জানলে নিশ্চয় কষ্ট পাবে। স্মৃতি আর কিছু না ভেবে নীরবে খাবার খাচ্ছে।

শাওন আর স্মৃতি দুজনের বাসায় আসতে আসতে রাত ৯টা হয়ে যায়।
স্মৃতি কাপড় চেঞ্জ করেই রান্না ঘরে চলে যায়। আর নিজের শাশুড়িকে কাজে সাহায্য করতে থাকে। আর বলে,
আম্মা আপনাকে কষ্ট দিয়ে দিলাম আজ! আসলে উনি আজ অনেক জায়গায় ঘুরলেন আমায় নিয়ে।

মেহেরুন হাসলেন নিজের ছেলের বউয়ের কথায়।
মা তুই খুব ক্লান্ত, যা গিয়ে ঘুমা।

মেহেরুন স্মৃতির মাথায় হাত ভুলিয়ে কথাটা বলেন।

স্মৃতি কেঁপে উঠে ঠাণ্ডার মধ্যে ঠাণ্ডা হাতের পরশ পেয়ে, স্মৃতিকে কেঁপে উঠতে দেখে মেহেরুন নিজের হাতটা সরিয়ে নেন স্মৃতির মাথা থেকে। স্মৃতি নিজের শাশুড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে চলে যায়।

মেহেরুন ঠিক বুঝতে পেরেছেন স্মৃতির মধ্যে এমন রহস্য লুকিয়ে আছে, যা হয়তো খুব ভয়ানক। নয়তো কোনো শহরের মেয়ে কেন শাশুড়িকে এতো ভালোবাসবে? মেহেরুন আবার ভাবেন, গ্রামের মেয়েরা তো শাশুড়িকে অনেক কষ্ট দেয়।

স্মৃতির মতোই হয়তো শহরে প্রতিটা মেয়েই নিজের শাশুড়িকে ভালোবাসবে।

এই মূহুর্তে মেহেরুন এর মনে শহর আর গ্রামের মেয়ে নিয়ে অনেক ভাবনা আসছে। সব ভাবনা মাথা থেকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেন মেহেরুন।

শাওন চুপ করে শুয়ে আছে বিছানায়, শাওনের ভাবনায় স্মৃতির এমন আচরণ। স্মৃতি হয়তো এমন পরিবারে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।

শাওন চায়নি বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করতে। কিন্তু নিজের বাবামার কথার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস হয়নি শাওনের। তাই বড়লোক ঘরের মেয়েকেই নিজের সঙ্গী বানিয়েছে।

কিন্তু স্মৃতির চলাফেরা, খাবার থেকে সব কেমন জানি লাগছে শাওনের কাছে। মনে হচ্ছে স্মৃতি খুব কষ্টে এমন পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে চাচ্ছে নিজেকে।

শাওন নিজের স্ত্রীকে রুমে আসতে দেখে বিছানা থেকে উঠে বসে।
স্মৃতিকে কিছু বলবে শাওন, কিন্তু তার পূর্বেই স্মৃতি ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়।

শাওনের মা বাবা আর ছোট্ট দুই বোন খাবার টেবিলে বসে শাওন-স্মৃতির জন্য অপেক্ষা করছিলো।

শাওন এসে বলে যায়, ওরা বাহিরে খেয়ে এসেছে। শাওনের মা বাবাও আর কিছু বলেন নি। ওরা যার যার মতো খাবার খেয়ে নিজেদের রুমে চলে যায়।

স্মৃতি রাতে ঘুমানোর পূর্বে বিছানা ঠিক করতে করতেই নিজের স্বামীকে বললো, তোমার থেকে কিছু জানার ছিলো? আর কিছু জানানোর ছিলো।

স্মৃতি চায় নিজের স্বামীকে সব জানাতে। একদিন এমনিতেই সে সব জানবে। তাহলে দেরীতে কেন?

শাওন নিজের স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে বললো।
লাইট অফ করে আসো? বিছানায় শুয়ে শুয়েই না হয় দুজনে কথা বলি।
স্মৃতিও নিজের স্বামীর কথা মতো লাইট অফ করে বিছানায় এসে শোয়। স্মৃতির মনে কিছুটা ভয় কাজ করছে, তবে তার চেয়ে বেশি লজ্জা পাচ্ছে। শাওন সব শুনে কী ভাববে তাই।

দুজনের মধ্যে কিছুটা নীরবতা, নীরবতা ভেঙে শাওনই বললো।
ঘুমিয়ে গেলে নাকি?

না জেগে আছি।

কী যেন বলতে চাইছিলে?
স্মৃতি নিজের স্বামীর কথায় চুপ থাকে। শাওন স্মৃতিকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই বললো।

তোমার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল স্মৃত?
হুম করো কী প্রশ্ন।
শাওন উঠে বসে, আর বলে,

আমি জানি তুমি বড়লোক ঘরের মেয়ে। এটাও জানি খুব কষ্টে আমাদের পরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছো। তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের সাথে থাকতে, তাই না?

স্মৃতি নিজের স্বামীর প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে উঠলো, আর বললো।
তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?

হুম,

সেভেনআপ এর স্বাদ এমন কেন?
কেমন?

আজ রেস্টুরেন্টে যখন সেভেনআপ খেয়েছিলাম, তখন স্বাদটা অন্য রকম লেগেছে। এর পূর্বে কখনো এমন সেভেনআপ খাইনি আমি।
শাওন নিজ স্ত্রীর কথা শুনে খুব অবাক হয়, শাওন বুঝতে পারে তখন স্মৃতি কেন এমন করেছিল। শাওন এটা বুঝতে পারছে না।

সেও একই বোতল থেকে সেভেনআপ খেয়েছে, কোথায় স্বাদ তো ভিন্ন লাগেনি।

শাওন আর না ভেবে নিজ স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলো।
এর পূর্বে সেভেনআপ এর স্বাদ কেমন ছিলো?

সাধারণ পানির ন্যায়, এই ধরো স্যালাইন এর মতো।
শাওন অনেক অবাক হয়। স্মৃতির দিকে তাকিয়ে আছে শাওন।

শাওন বিয়ের পর স্মৃতির সম্পর্কে তেমন জানতে চায় নি কখনো, বড়লোকের মেয়ে, তাই শাওন কখনো স্মৃতির কোনো কিছু জানতে চায় নি।

এবার কেমন? শাওন অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে।
এইতো সেভেনআপ খাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো এই পানিতে খুব ত্যাজ।

ওওও,
শাওন চুপ থাকে। স্মৃতি এবার বলে,

জানো তুমি! এই প্রথম আমি কোথাও এতক্ষণ ঘুরাফেরা করি। আর এই প্রথম আমি রেস্টুরেন্টে খাবার খাই।

মানে? শাওন এবার একটু শব্দ করেই প্রশ্ন করে উঠে।
শাওনের এমন অবাক হওয়া দেখে স্মৃতি মাথা নিচু করে বলে,
আমার মা আমায় ১বছরের রেখে মারা যান। তার পর বাবা আবার বিয়ে করেন।

তাহলে উনি তোমার আসল মা না? স্মৃতিকে থামিয়ে প্রশ্ন করে শাওন। স্মৃতি নিজের স্বামীর প্রশ্ন শুনে বলে,
না, উনি আমার আম্মুর খালাতো বোন ছিলো।

তাহলে তোমার চেহারা আর উনার চেহারা একরকম দেখতে কেন?
ওই যে আম্মুর খালাতো বোন।

শাওন কিছু বললো না, স্মৃতি এবার বললো।

তুমি বলছিলে না! আমি বড়লোক ঘরের মেয়ে। হ্যাঁ আমি বড়লোক বাবার মেয়ে, কিন্তু বড়লোক ঘরের না।

আর বলছিলে, আমি তোমাদের পরিবারে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আসলে সত্যিই কষ্ট হচ্ছে। কারণ জানো?

আমি সেই ছোট থেকে আলুর ভর্তা, আর সবার এঁটো করে রাখা খাবার খেতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে ভালো খাবার পেতাম, তবে সেটা চুরি করে।

আর জানো রেস্টুরেন্টের খাবার এই প্রথম খেয়েছি। এমন খাবার এর পূর্বে খাওয়া হয়নি আমার। পড়ালেখাও করতে দেয়নি আমার সৎমা। আর আরেকটা কথা কী জানো?

সেভেনআপের সাথে পানি মিশিয়ে খেতে দিতো আমার সৎমা। দু একদিন আমি নিজেই দেখেছি পানি মেশাতে। তাই আজ সেভেনআপের আসল স্বাদ পেয়ে এমন করেছিলাম।

তোমাদের পরিবারের এতো ভালো খাবার এর পূর্বে আমি কখনো খাইনি। আমি চাইনি তুমি এসব জানো। কারণ তুমি আমার বাবা আর মা কে অনেক সম্মান করো। চাইনি ওদের প্রতি সম্মান কম হোক তোমার।

স্মৃতি কথাগুলো বলে শাওনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শাওন সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। সে স্মৃতিকে নিয়ে কী ভেবে আসছিলো, আর কী হলো। স্মৃতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।

সে ভেবেছিলো, স্মৃতি হয়তো এমন পরিবারে খুব খারাপ ভাবে আছে। কিন্তু তার ধারণা সব ভুল।

যেই সৎমা এতো কষ্ট দিলো তাকে, তবুও তার প্রতি সম্মান কমবে বলে লুকিয়ে রেখেছে সব। স্মৃতির প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান দিগুণ হলো শাওনের। ঘৃণা আর রাগ হচ্ছে ওই মানুষ গুলোর উপর, শাওন এখন বুঝতে পারছে এই কয়দিন স্মৃতি কেন এমন আচরণ করেছে।

স্মৃতি শাওনের বুকে শান্তিতেই মাথা রেখে আছে। শাওন কোনো কথা বলছে না, স্মৃতিকে কিছু বলা মানে কষ্ট দিগুণ করা। তার চেয়ে একটু বেশিই ভালোবেসে তার কষ্ট ভুলিয়ে দেওয়াই ভাল হবে।

লেখক: হানিফ আহমেদ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “স্মৃতি – Notun prem golpo Bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – স্ত্রীর চাওয়া – স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *