রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ৪: গত পর্বে রিমঝিম আপুর কেয়ারিং, শাসন এবং আমার প্রতি রাগ ও অভিমান দেখছেন। আমিও মনে হয় একটু একটু করে তার দিকে ঝুঁকে পড়ছি। সারাক্ষণ যদি খোঁজখবর নেয় তাহলে মনের মধ্যে একটা অনিভুতি তো জাগবেই। তো আজকে দেখি কি হয়?
ইনসিকিউরিটি ও ভয়
রিমঝিম আপুঃ আরেকদিন যদি এই আবাল মার্কা কথা বলেছিস তাহলে তোর খবর করে দিবো বলদ কোথাকার।
তখন রিমঝিম আপুর এক বান্ধবি কোথা থেকে এসে জেনো পাশে বসলো।
তখন রিমঝিম আপু যা করলো, তা শুনলে আপনিও অবাক হবেন।
রিমঝিম আপু রেগে আগুন হয়ে গেলো।
আমার হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।
রিমঝিম আপুঃ আয়েশা তুই এখানে!
আয়েশাঃ কেনো আসা যাবে না নাকি?
রিমঝিম আপুঃ আমি কি সেটা বলছি নাকি!
আয়েশাঃ আসলে একা একা ভালো লাগছে না। তাই তোদের সাথে গল্প করতে চলে এলাম।
রিমঝিম আপুঃ ও খুব ভালো করেছিস। (রাগে কটমট করে আপু)
আয়েশাঃ ছেলেটা কে রে?
রিমঝিম আপুঃ দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দেই। রিয়াদ এ হচ্ছে তোমার বড় আপু আয়েশা। আজ থেকে ওকে বড় বোনের মতো সম্মান দিবি ঠিক আছে। আর আয়েশা এ হচ্ছে রিয়াদ। আজ থেকে ওকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখবি।
আয়েশাঃ কি বলছিস এসব?
রিমঝিম আপুঃ ঠিকি তো বললাম।
আমি শুধু ওদের কথা শুনছি। তারপর আয়েশা রিমঝিম আপুকে সাউডে নিয়ে গেলো। দুজনে কি যে কথা বলছে কিন্তু দূর থেকে যা বুঝলাম খুব ঝগড়া করছে।
ভালবাসার জ্যেলাসি
এক পর্যায়ে রিমঝিম আপু কি জেনো বললো আর আয়েশা আপু ওখান থেকে চলে গেলো। তারপর আপু আমার কাছে আসলো।
আমিঃ এত্তক্ষন লাগে আসতে, কি কথা বললা?
রিমঝিম আপু কোনো কথা না বলে চুপচাপ পাশে বসে পরলো।
আমিঃ কি হলো, কিছু বলছো না যে?
রিমঝিম আপুঃ শুন, কাল থেকে তুই কলেজে আসবি না!
আমিঃ আসবো না কেন?
রিমঝিম আপুঃ তাহলে আয়েশা তোর সাথে কথা বলতে পারবে না।
আমিঃ কিন্তু কথা বললে কি সমস্যা?
রিমঝিম আপুঃ সমস্যা আছে, ওর সাথে কথা বলার কোনো দরকার নেই।
আমিঃ আমি কথা না বললেই তো হলো। তাতে কলেজ না আসার কি হলো?
রিমঝিম আপুঃ সেটাও কথা তুই আয়েশার সাথে কথা বলবি না। এমনকি কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলবি না, ঠিক আছে। আর যদি দেখি তাহলে তোর একদিন কি আমার এক দিন।
কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। রিমঝিম আপুর এমন আচরণ আমায় বেশ অবাক করেছে।
রিমঝিম আপুঃ কি হলো কি কথা বল। মনে থাকবে তো?
আমিঃ হুম, থাকবে।
রিমঝিম আপুঃ এই তো ভালো ছেলে। এখন ক্লাসে যা।
সিনিয়র প্রেমে পড়লাম
রিমঝিম আপু নিজের ক্লাসে গেলো। আমি আমার ক্লাসে চলে গেলাম। এভাবেই বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলো। রিমঝিম আপু আমার জীবনটাকে নিজের মতো চালাতে শুরু করলো। যেমনটা কোনো আপন জন করে। এসব করার অধিকার আমি রিমঝিম আপুকে অনেক আগেই নিজের মন থেকে দিয়ে দিছি। কারণ আমি মনে মনে রিমঝিম আপুকে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি৷
নিজের এই মনটাকে অনেকবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি। তার সাথে আমার যায় না। কিন্তু মনটা মানেনি ছুটে গেছে তার কাছে। আমি জানি আমি যেদিন রিমঝিম আপুকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো সেদিন হয়তো সবশেষ হয়ে যাবে আর আমি সেটা চাই না তাই আমি তাকে নিরবে ভালোবেসে যাব। কখনো তার কাছে নিজের ভালোবাসার দাবি নিয়ে যাব না। হয়তো শেষে আমার ভালোবাসাটা এক কোনে পরে রয়ে যাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
রিমঝিম আপুঃ কি রে মন খারাপ করে এভাবে বসে আছিস কেনো?
আমিঃ কই না তো।
রিমঝিম আপুঃ মিথ্যা বলবি না।
আমিঃ তেমন কিছু না আপু।
রিমঝিম আপুঃ আচ্ছা বাদ দে। আয় তোর সাথে একজনকে পরিচয় করিয়ে দেই।
আমি রিমঝিম আপুর সাথে গেলাম। রিমঝিম আপু কাকে জেনো ফোন দিয়ে ডাকলো।
একটু পর একটা ছেলে বাইক নিয়ে আসলো।
রিমঝিম আপুঃ রিয়াদ এ হলো রনি। আমার কাজিন আর রনি এ হলো রিয়াদ।
আমিঃ হায়, কেমন আছেন?
রনিঃ হ্যালো। তুমিই তাহলে রিয়াদ।
আমিঃ হুম। আপনি আমাকে চিনেন?
রিমঝিম আপুঃ আরেহ না। কিন্তু রিমঝিমের মুখে তোমার কথা অনেক শুনেছি। এই বয়সে তুমি একাই চলাফেরা করো। এটা অনেক ভালো ব্যাপার সবাই পারে না।
আমিঃ আমার আব্বু একটা কথা বলতেন পাশে যখন কেউ থাকবে না তখন নিজেই উঠে দাঁড়াতে হয়। উঠে দারানোর সময় কাউকে পাশে পাবি না। তাই নিজে নিযে চলতে শিক্ষতে হবে আর আমি একাই চলতে শিক্ষে গেছি। সামনের দিন গুলোতেও একাই হয়তো থাকতে শিক্ষে যাব।
কথাটা বলার পর রিমঝিম আপু আমার দিকে তাকালো। তারপর তিনজনে বসে অনেক কথা বললাম। রিমঝিম আপু রনির বাইকে করে বাসায় চলে গেলো আর আমি আমার বাসায় চলে আসলাম। রনি নাকি এখন থেকে আমাদের কলেজেই পরবে। পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কলেজের দিকে বেরিয়ে পরলাম।
আবদার ও শাসন
কলেজে ঢুকার আগে চায়ের দোকানে গেলাম এক কাপ চা অর্ডার দিলাম। চা আসতে আসতে একটা সিগারেট কিনে ধরালাম।
এর মধ্যে রিমঝিম আপুর ফোন।
আমিঃ হ্যালো।
রিমঝিম আপুঃ কই তুই?
আমিঃ এইতো যাচ্ছি।
রিমঝিম আপুঃ তাড়াতাড়ি আয়।
চা আর সিগারেট খেয়ে কলেজে গেলাম।
রিমঝিম আপু মাঠের এক কোণে বসে আছে।
আমি রিমঝিম আপুর থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলাম। রিমঝিম আপু আমার কাছে চেপে আসলো। আমি চুপচাপ আছি।
রিমঝিম আপুঃ তোকে কতোবার বলেছি সিগারেট খাস না।
আমিঃ তুমি হয়তো এক দিন চলে যাবে। কিন্তু এই টাই হয়তো আমার পাশে থেকে যাবে।
আমার কথাটা শুনতে পেয়ে কিচ্ছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রিমঝিম আপুঃ তুই কি কিছুই বুঝিস না।
আমিঃ কেন, কি আবার বুঝলাম না?
রিমঝিম আপুঃ কিছু না।
রিমঝিম আপু মন খারাপ করে বসে রইলো।
আমি চুপচাপ তার মায়াবী মুখটা দেখতে লাগলাম। তারপর আপু উঠে কিছু না বলে চলে যেতে লাগলো। আমি পিছন থেকে ডাক দিলাম কিন্তু শুনলো না। নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আমি গাড়ির সাইডে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিচ্ছুক্ষণ পরে গাড়ির গ্লাস খুললো। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
রিমঝিম আপুঃ উঠ বাসায় নামিয়ে দেই।
আমি উঠে বসলাম। রিমঝিম আপু আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অন্যদিন আসার সময় হাজারটা কথা বলবে কিন্তু আজ একটাও কথা বললো না। এরপর কাজের চাপে এক সপ্তাহ কলেজে যাওয়া হলো না।
ভিলেনের আগমন
এক সপ্তাহ পর, কলেজে গিয়ে দেখলাম রিমঝিম আপু আর রনি বসে আছে। দুজনে বসে আছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। আজ রিমঝিম আপু কলেজে আসলো তবুও একবার ফোন দিলো না। খুব অবাক হলাম।
এই কয়দিন অনেকবার দেখা করতে বলেছে কিন্তু এই এক সপ্তাহে প্রায় সারাদিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। অনেক বড় একটা ক্লাইন্ট পাওয়ায় কাজ অনেক বেশি ছিলো।
আমি ভাবলাম হয়তো ভাবছে আমি কলেজে আসবো না। তবুও একটা ফোন তো দিতে পারতো। আমি ওদের না দেখার ভান করে ক্লাসে যেতে লাগলাম। তখন পিছন থেকে রিমঝিম আপু ডাক দিলো। আমি ওদের কাছে গেলাম।
রিমঝিম আপুঃ কেমন আছিস?
আমিঃ ভালো আপু, তুমি।
রিমঝিম আপুঃ হুম ভালো বস এখানে।
ওদের থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে বসলাম। ওরা দু’জনে কথা বলছে। আমি চুপচাপ ফোন টিপতেছি।
এর মাঝে রিমঝিম আপু আমার সাথে একটা কথাও বলে নি। ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগলো।
অন্যদিন কলেজে না আসলে ডেকে এনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো। আর আজ পাশে বসে আছি তাও মুখ ফুটে একটা কথা বলছে না। এক সপ্তাহে এতটা বদল।
রিমঝিম আপুঃ তোমরা একটু কথা বলো আমি স্যারের সাথে কথা বলে আসি।
রিমঝিম আপু উঠে চলে গেলো।
রনিঃ জানো রিয়াদ, রিমঝিমের মতো মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আমিঃ মানে বুঝলাম না।
রনিঃ তুমি জানো না, রিমঝিম আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমাদের পরীক্ষা শেষ হলে বিয়ে দেওয়া হবে। চলবে…
পরের পর্ব- রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ৫