রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ১: সিনিয়র আপুর উপর ক্রাস খাওয়া কিংবা জুনিয়র ছোট ভাইয়ের সাথে প্রেম খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় বর্তমানে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রেম বা ভাল লাগা হয় টাইম পাস কিংবা প্রয়োজনের খাতিরে। খুব কম সংখ্যক সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। আজকের গল্পটা এরকম একটি অসম বয়সের ভাললাগা, ভালবাসা এবং প্রেম নিয়ে লেখা। তো চলুন আর দেরী না করে শুরু করা যাক।
সিনিয়রগিরি
এই ছেলে প্রত্যেকদিন স্যার ম্যাডামদের সামনে ক্যাম্পাসে সিগারেট খাস কেনো? বাবা-মা ভদ্রতা শেখায় নি?
ক্যাম্পাসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম, তখুনি একটা মেয়ে এসে বললো।
চুপচাপ হয়ে সিগারেট খাইতে লাগলাম৷
মেয়েটিঃ কি হলো, তোকে আমি কিছু বললাম।
আমিঃ চুপচাপ।
মেয়েটিঃ এভাবে হবে না, তোর আব্বুর নাম্বার দে।
আমিঃ ফোন নাম্বার বন্ধ।
মেয়েটিঃ আম্মুর নাম্বার দে।
আমিঃ 01871655…..।
মেয়েটি ফোন দিলো, আমার পকেটের ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনটা বাইর করে কেটে দিলাম।
মেয়েটিঃ নিজের নাম্বার দিলি কেনো, ফাইজলামি করিস?
আমিঃ এটাই আম্মুর নাম্বার। আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর এটা আমার কাছে।
মেয়েটা চুপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে নিস্তব্ধতা চললো।
মেয়েটিঃ নাম কি?
আমিঃ রিয়াদ।
মেয়েটিঃ শুধু রিয়াদ আর কিছু নেই।
আমিঃ আছে, কিন্তু যাদের দেওয়া ছিল তারা না থাকায় ব্যবহার করার প্রয়োজন মনে করি না।
মেয়েটিঃ বাসায় কে কে আছে?
আমিঃ কেউ নেই।
মেয়েটিঃ মানে।
আমিঃ একা থাকি, কেউ নেই আমার।
মেয়েটিঃ থাকিস কোথায়?
আমিঃ কলেজের পিছনে একটা বাসায় থাকি।
মেয়েটিঃ পড়ালেখা কেমন করে চলে?
আমিঃ ফ্রিল্যান্সিং করি, ওটা দিয়েই চলে যায়।
মেয়েটিঃ কোন ইয়ারে পড়িস?
আমিঃ সেকেন্ড ইয়ারে।
প্রথম দেখায় ভাল লাগা
মেয়েটা কিচ্ছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
আমিঃ আপনার সব জানা হয়ে গেলে এখন আসি। (বলেই চলে আসতে লাগলাম)
মেয়েটিঃ আমার পরিচয় জানতে চাইবি না।
আমিঃ প্রয়োজন মনে করি না।
মেয়েটিঃ কিন্তু আমার প্রয়োজন আছে। আমি রিমঝিম অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।
আমিঃ আচ্ছা, এখন আসি।
রিমঝিমঃ আচ্ছা, যা৷
ওখান থেকে চলে আসলাম।
মেয়েটাকে আমি চিনি।
এমনকি কলেজের সবাই চেনে।
কলেজের ক্রাসদের মধ্যে রিমঝিম আপু একজন। যেমন সুন্দর দেখতে তেমন রাগ। কলেজের কত ছেলে তার হাতের জন্য হাসপাতালে গেছে তার হিসাব নেই।
রিমঝিম আপুর ভাই পুলিশ কমিশনার। তাই সবাই তাকে ভয় করে চলে।
কলেজে যেদিন প্রথম তাকে দেখেছিলাম কেমন যেন ভালো লেগেছিলো। কিন্তু সেটাকে আমি পাত্তা দেই নি। কারণ এসব মায়া জড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না।
এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় আসলাম, ফ্রেশ হয়ে রান্না করলাম।
তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কারণ খুব কম রাতেই আমি ঘুমাই, কাজের জন্য জেগে থাকা লাগে।
কেয়ারিং ও শেয়ারিং
সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেলাম। এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়ে আসলাম।
সারা রাত জেগে কাটানোর জন্য বক্সে গান আর সিগারেট এরাই আমার সাথি।
এরপর দুদিন কলেজে গেলাম না। এমনিতেই আমি ওতটা কলেজে যাই না। যেদিন বাসায় বোরিং লাগে সেদিন কলেজে যাই। আর আমার তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই। একা থাকতে ভালো লাগে। অনেকে আমাকে নিজের বন্ধু ভাবলেও আমি ভাবি না।
কারণ আমার সময় সময় মনে হয়। আমি আমার নিজেরি না অন্য কারো কেমন করে হবো।
এক সপ্তাহ পর রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম।
হটাৎ কারো ডাক শুনতে পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি রিমঝিম আপু।
রিমঝিম আপুঃ ওই শুন।
আমিঃ জি, বলেন।
রিমঝিম আপুঃ কলেজে আসিস না কেন?
আমিঃ ভালো লাগে না, কলেজে আর কিসের জন্যই বা যাবো!
রিমঝিম আপুঃ কেন, বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে যাবি।
আমিঃ আমার একা থাকাটাই পছন্দ। তাই বন্ধু বান্ধব পাতাই না।
রিমঝিম আপুঃ খুব অদ্ভুত কথা বলিস তো দেখছি।
আমিঃ এমনি।
রিমঝিম আপুঃ কাল কলেজে আসবি।
আমিঃ দেখি।
রিমঝিম আপুঃ দেখি না আসবি, আর তোর নাম্বার আছে আমার কাছে। না আসলে ফোন দিয়ে আনব, দরকার হলে বাসা থেকে টেনে আনব।
আমিঃ আচ্ছা, যাব। কিন্তু কেন যাব সেটা বলেন?
রিমঝিম আপুঃ এমনিতেই আসবি।
আমিঃ আমি কারণ ছাড়া কারো কথা মানতে পারব না। ওটা আমার অভ্যাস না। আপনি যদি কোনো কারণে ডাকলে আমি যাব। কিন্তু অহেতুক বিনা কারণে ডাকলে আমি যেতে পারব না।
রিমঝিম আপুঃ আসবি না মানে, তোকে আসতেই হবে।
আমিঃ আচ্ছা, আমি যাব।
রিমঝিম আপুঃ হুম, এইতো ভালো ছেলের মতো কথা।
আমিঃ আচ্ছা, আমি এখন আসি।
রিমঝিম আপুঃ কই যাবি? আমি নামিয়ে দিচ্ছি, আয়।
আমিঃ ধন্যবাদ বলার জন্য, কিন্তু আমি হেটেই চলে যেতে পারব।
রিমঝিম আপুঃ আচ্ছা, যা ইচ্ছে কর। কিন্তু কাল জেনো কলেজে তোকে দেখি।
আমিঃ আমি যখন বলেছি নিশ্চয়ই যাব।
রিমঝিম আপুঃ হুম মনে থাকে জেনো।
কথাটা বলেই রিমঝিম আপু চলে গেলো।
একটু একটু কাছে আসা
আমিও বাসায় চলে আসলাম। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কারণ আজ কোনো কাজ নেই। এমনিতেও আমি কাল কলেজে যেতাম। বাসায় ভালো লাগছিলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
কলেজের সামনে একটা চায়ের দোকান। ওখানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে সিগারেট খেতে লাগলাম।
চা খেয়ে কলেজের ভিতরে গেলাম। এরপর একটা ক্লাস করে বের হয়ে আসলাম। বাইরে আসতেই রিমঝিম আপু সামনে এসে দাড়ালো।
আমিঃ আপু, আপনি!
রিমঝিম আপুঃ আয়।
রিমঝিম আপুর পিছন পিছন যেতে লাগলাম৷ কি জানি আবার নিজের ভাইকে ডাক দিলো নাকি। যদি আবার জেলে দিয়ে দেয় কলেজের আইন ভংগো করার জন্য।
আমিঃ এই যে আপু, কই যান?
রিমঝিম আপু আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার হাটতে লাগলো।
তারপর মাঠের এক কোণায় গিয়ে বসলো। আমি গিয়ে পাশে দাড়িয়ে রইলাম।
রিমঝিম আপুঃ কি হলো বস?
আমি একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম।
রিমঝিম আপুঃ এত দূরে গিয়ে বসলি কেন কাছে এসে বস?
আমিঃ না, ঠিক আছে।
রিমঝিম আপুঃ আমার ঠিক নেই কাছে এসে বস।
গল্পে গল্পে পরিচয়
তারপর একটু কাছে গিয়ে বসলাম।
রিমঝিম আপুঃ সকালে খেয়েছিস?
আমিঃ হুম, খেয়েছি।
রিমঝিম আপুঃ দেখলাম তো কলেজের সামনের দোকানে কি খেলি?
আমিঃ আমার সকালে খাওয়া লাগে না। ওই দুটো জিনিস দিয়েই সকাল পার হয়ে যায়।
রিমঝিম আপুঃ তোর বাসায় রান্না করে কে?
আমিঃ আমি করি।
রিমঝিম আপুঃ তুই রান্না করতে পারিস!
আমিঃ হুম।
রিমঝিম আপুঃ যাক, ভালোই হলো।
আমিঃ কেন বলুন তো?
রিমঝিম আপুঃ আমি তো রান্না করতে পারি না।
আমিঃ তাতে ভালোর কি হলো?
রিমঝিম আপুঃ ওত তোকে বুঝতে হবে না।
তারপর দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলাম।
রিমঝিম আপুঃ আচ্ছা, তুই এমন এলোমেলো থাকিস কেন?
আমিঃ এলোমেলো থাকাটাই ভালো লাগে, কার জন্য গুছিয়ে থাকবো?
রিমঝিম আপুঃ তোর কথার মধ্যে কোনো রসকষ নেই।
আমিঃ সকলের মন যোগানো কথা আমি বলতে পারি না। তাই হয়তো সবার আমার কথা ভালো লাগেনা।
রিমঝিম আপুঃ আচ্ছা, বাদ দে চল।
আমিঃ কোথায়?
রিমঝিম আপুঃ সকাল থেকে কিছু খাই নি ক্ষুদা লাগছে চল কিছু খেয়ে আসি।
আমিঃ আপনি যান। আমি বাসায় যাব।
রিমঝিম আপুঃ আমি বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসব, এখন চল।
আমিঃ না, আমার ক্ষিদে নেই।
রিমঝিম আপুঃ আরেকটা কথা বললে তোর খবর আছে।
তারপর রিমঝিম আপু হাত ধরে টানতে টানতে ওর গাড়িতে নিয়ে গেলো।
সিনিয়র আপু যখন অভিভাবক
গাড়ি চালিয়ে একটা বড় রেস্টুরেন্ট আসল।
দুজনে ভিতরে গেলাম।
রিমঝিম আপুঃ কি খাবি বল?
আমিঃ আমি কিছু খাব না।
রিমঝিম আপুঃ মেজাজ খারাপ করাবি না বলে দিলাম।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।
রিমঝিম আপু নিজেই খাবারের অর্ডার দিলো।
কিচ্ছুক্ষণ পর খাবার চলে আসলো৷
আমি শুধু খাবার নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। কারণ খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।
সেটা হয়তো রিমঝিম আপুর চোখে পরছে। রিমঝিম আপু আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালো।
রিমঝিম আপুঃ কি হলো খাচ্ছিস না কেনো?
আমিঃ ইচ্ছে নেই।
রিমঝিম আপুঃ ইচ্ছে নেই কেনো?
আমিঃ জানিনা।
তারপর রিমঝিম আপু আমার কাছে এসে আমার মুখের সামনে খাবার ধরলো।
রিমঝিম আপুঃ নে খেয়ে নে।
আমিঃ করুনা করছেন। চলবে…
পরের পর্ব- রোমান্টিক লাভ স্টোরি – সিনিয়র আপু যখন বউ – পর্ব ২
Nice.অনেক সুন্দর গল্প ধন্যবাদ। আমার পড়া সেরা গল্প।
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️