ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – শেষ পর্ব: গত পর্বে পলাশের পাগলামি শেষ পর্যন্ত অসাধ্য ভালবাসা সাধন করেছে। সে যে জীবন দিয়ে ভালবাসে সেটার প্রমাণ ম্যাম পেয়েছে। পলাশের পাগলামি ম্যামের রাগের কারণ হলেও দিনশেষে পলাশের প্রেমেও কিন্তু ম্যাডাম পড়েছিল যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি গত পর্বে। চলুন তবে দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয় এই অসম ভালবাসার?
ম্যাডাম যখন বউ
২ বছর পর,
কল্পনাঃ এই উঠো।
পলাশঃ উমম, আরেকটু বাবু।
কল্পনাঃ না, এখনি উঠবা। কলেজে যেতে হবে না তোমাকে?
পলাশঃ আজকে ক্লাস তো ১১ টায়। আরেকটু ঘুমাই বাবু।
কল্পনাঃ তো কি? আমাকে ক্লাস নিতে হবে না? তাড়াতাড়ি উঠো।
পলাশঃ আজকে নাহয় একাই যাও।
কল্পনাঃ কিহ! আমি একা যাবো। থাক, তুই ঘুম নিয়া। আমি গেলাম।
পলাশঃ এই নাহ, বাবু। আমি উটতেছি।
কল্পনাঃ নাহ, তুই ঘুমা। আমি যাই।
পলাশঃ কই যাও?
পলাশ কল্পনার হাত ধরে টান দিয়ে তার বুকের উপর ফেলে বলল,
পলাশঃ কোথায় যেতে দিলে তো যাবে?
কল্পনাঃ কি হচ্ছে? ছাড়ো। সকাল বেলা দুষ্টামি শুরু করছো?
পলাশঃ উমমমমমমমমমম!
কল্পনাঃ এই ছাড়োতো।
পলাশঃ আজ আর ছাড়তেছি না।
কল্পনাঃ আরে কলেজে যেতে হবে না?
পলাশঃ হুমমমম, নাস্তা রেডি?
কল্পনাঃ হুমমম। রেডি, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি আর বাবা টেবিলে অপেক্ষা করতেছি।
সিনিয়র বউয়ের সাথে দুষ্টামি
পলাশ কল্পনাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। তাদের বিয়ে হয়েছে একবছর হয়ে গেছে। সারাদিন খুনসুটি করে তাদের দিন কাটে। মাঝে মাঝে মিষ্টি ঝগড়া। নাস্তা করে পলাশ আর কল্পনা কলেজে রওনা দিল।
কল্পনাঃ আজকে বাইকে যাব না। রিক্সা আনো।
পলাশঃ আমার কাছে টাকা নাই। বাইকেই যাবো।
কল্পনাঃ আমি রিক্সা আনতে বলছি। রিক্সাই যাব।
পলাশঃ আমি রিক্সায় যাব না
কল্পনাঃ আমি বাইকে যাব না।
পলাশঃ আজব, তাহলে একা একা রিক্সায় যাও
কল্পনাঃ কিহ! আমি একা যাব। আচ্ছা, যাচ্ছি।
পলাশঃ এই আমিও যাব। দাঁড়াও।
অগ্যতা কল্পনার সাথে রিক্সায়ই যেতে হলো। কল্পনার জেদের কাছে সবসময়ই পলাশ হেরে যায়। মাঝে মাঝেই ইচ্ছা করেই রাগায়। রিক্সায় যেতে যেতে পলাশ আবার কল্পনাকে রাগানোর জন্য একটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল,
পলাশঃ দেখো, মেয়েটা কত সুন্দর!
কল্পনাঃ ভালো তো।
পলাশঃ কত্ত কিউট। দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে।
কল্পনাঃ তো যাও প্রেম করো।
পলাশঃ তোমার মত বুড়িকে বিয়া কইরা তো আমি ফাইসা গেছি?
কল্পনাঃ আমি বুড়ি?
পলাশঃ হুমমম। বুড়িই তো।
সিনিয়র বউয়ের অভিমান
কল্পনা একটু চুপ করে তারপর বলে উঠে- এই মামা রিক্সা থামাও।
পলাশঃ রিক্সা থামাইলা ক্যান?
কল্পনাঃ তুই নাম রিক্সা থেকে।
পলাশঃ কেনো?
কল্পনাঃ তোরে রিক্সা থেকে নামতে বলছি।
পলাশঃ রাস্তার মাঝে সিন ক্রিয়েট কইরো না।
কল্পনাঃ তুই নামবি?
পলাশঃ আচ্ছা, নামতেছি। আমি ওয়ালেট আনিনি। কিছু টাকা দাও।
কল্পনাঃ কোন টাকা দিমু না।
পলাশঃ আমি কি হেটে যাব নাকি? ২০ টাকা দাও।
কল্পনাঃ দিমু না। হাইটাই যা। এই মামা চলেন।
কল্পনা খুব রাগ করে রিক্সা নিয়ে চলে গেল। পলাশ মনে মনে হাসতেছে। পলাশের কাছে টাকা আছে। পলাশ আরেকটা রিক্সা নিয়ে কলেজে গেল।
ম্যাম বউয়ের শাস্তি
কলেজ শেষ হলো ২ টায়। পলাশ কল্পনার জন্য কাম্পাসে অপেক্ষা করতেছে। কল্পনা বের হয়ে একা একাই হাটা শুরু করল। প্রতিদিনের ন্যায় আজও পলাশ আগে বের হয়ে কল্পনার জন্য অপেক্ষা করতেছে। কিন্তু কল্পনা পলাশ কে রেখে একাই হাটা শুরু করল। পলাশ কল্পনাকে চলে যেতে দেখে দৌড়ে তার কাছে আসল।
পলাশঃ এই কল্পনা, আমাকে রেখে চলে যাচ্ছ যে?
কল্পনাঃ হোয়াট ননসেন্স, তুমি আমাকে তুমি করে এবং নাম ধরে ডাকতেছো ক্যান?
পলাশঃ মানে?
কল্পনাঃ মানে, ম্যামের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
পলাশঃ জ্বী, জানি। তো আপনাকে কি এখন ম্যাডাম বলে ডাকতে হবে?
কল্পনাঃ হুমমমম। আর কখনো যেন আমার নাম ধরে ডাকতে না দেখি।
পলাশঃ জ্বী, ঠিক আছে। এখন কি আমরা যেতে পারি?
কল্পনাঃ আমি কেনো তোমার সাথে যাব? স্টুডেন্ট স্টুডেন্ট এর মতো থাকবা।
পলাশঃ ঠিক আছে ম্যাডাম। আসি, আসসালামু আলাইকুম।
কল্পনাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
পলাশ কল্পনার কাছ থেকে চলে যায়। ভাবতে থাকে, আমার সাথে ম্যাডামগীরি। দাঁড়াও এর রিভেন্জ যদি আমি না নেই, তাহলে আমার নাম পলাশ না। এইসব ভাবতে ভাবতে পলাশ মিশুর বাসায় চলে গেল। এখন আর সে বাসায় যাবে না।
ছাত্র বরের অভিমান
পলাশ বাসায় আসলো রাত ১০ টায়। কলিং বেল বাজাতেই কল্পনা দরজা খুলে দিল।
কল্পনাঃ কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
পলাশঃ জ্বী ম্যাডাম, বন্ধুর বাসায় ছিলাম।
কল্পনাঃ ম্যাডাম কি? আর বন্ধুর বাসায় ছিলা মানে? রাতের খাবার বন্ধ।
পলাশঃ হুমমমম।
পলাশ আগেই জানত এমনটা হবে। তাই সে আগেই মিশুর বাসায় খেয়ে এসেছে। রুমে ড্রেস চেন্জ করে একট। বালিশ নিয়ে বের হচ্ছিল এমন সময় কল্পনা রুমে আসলো।
কল্পনাঃ বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
পলাশঃ গেস্টরুমে।
কল্পনাঃ কেনো?
পলাশঃ ঘুমাইতে?
কল্পনাঃ তাইলে আমি কার সাথে ঘুমাবো?
পলাশঃ আমি কি জানি আপনি কার সাথে থাকবেন?
কল্পনাঃ আপনি আপনি করতাছো, ক্যান?
পলাশঃ দেখুন, ম্যাম। ম্যাম এর মতো থাকবেন। আমি গেস্ট রুমে গেলাম। খবরদার ডিস্টার্ব করবেন না।
কল্পনাঃ আহারে, আমার বয়েই গেছে আপনারে ডিস্টার্ব করতে। আমি একা থাকতে পারি, হুহহহ।
পলাশঃ ওকে, গুড নাইট।
ছাত্র ও ম্যাডামের সুখের সংসার
পলাশ গেস্ট রুমে ঢুকে দরজা লাগাইয়া শুয়ে পড়ল। মাঝরাতে বুকের উপর কোন কিছুর চাপে ঘুম ভেংঙে গেল। কল্পনা তার বুকের উপর ঘুমাচ্ছে। পলাশ জানে কল্পনা একা ঘুমাইতে পারে না। তাই ঘুমানোর আগে দরজা খুলে রেখেছিল। ঘুম অসহায় কল্পনাকে অস্পরির মত লাগতেছে।
কল্পনাঃ এইভাবে কি দেখতেছো?
কল্পনার যে কখন ঘুম ভেংঙে গেছে পলাশ টেরই পায় নি।
পলাশঃ কিছুনা তো ম্যাডাম। আপনি এখানে কেন? তখন তো খুব বলছিলেন একা ঘুমাইতে পারি?
কল্পনাঃ পারিই তো। তুমি দরজা খোলা রেখে ঘুমাইছো ক্যান?
পলাশঃ বুঝলাম। তো আমার বুকে মাথা রেখে আছেন ক্যান? এইটা কি বালিশ নাকি?
কল্পনাঃ রাখমুই তো। এইটা আমার সম্পত্তি। কাথা বালিশ যা ইচ্ছা বানামু। তোমার কি?
পলাশঃ নাহ, আমার কিছুই না।
কল্পনাঃ শীত লাগতাছে।
পলাশঃ কাথা নিয়া আসেন।
কল্পনাঃ নাহ, তুমি জরাইয়া ধরো।
পলাশঃ পারমু না।
কল্পনাঃ ধরবি না?
পলাশঃ ধরতেছি তো।
কল্পনাঃ ভালবাসি খুব।
পলাশঃ আমিও ভালবাসি, ম্যাডাম বউ।
হাজার বছর বেঁচে থাকুক কল্পনা পলাশের ভালবাসা। হাজার বছর খুশি থাকুক পলাশ তার ম্যাডাম বউকে নিয়ে।
ভালবাসার জন্য কোন কিছুই ফ্যাক্ট না। শুধু দুটি মনের অটুট বন্ধন থাকতে হয়। তাহলে পুরা বিশ্ব টাকেই জয় করা যায়। ধন্যবাদ। সমাপ্ত।
লেখা- সাকিব আহমেদ