ম্যাডাম যখন বউ ৩

ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৩

ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৩: গত পর্বে পলাশের সাথে ম্যাডাম অনেক খারাপ ব্যবহার করে, কারণ পলাশ প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আর এ কারণে ম্যাম বেশ রেগে আছে পলাশের উপর। কিন্তু পলাশ নাছোড়বান্দার মত ম্যাডামের পিছনে ঘুরেই চলেছে। দেখা যাক এরপর কি হয়?

ভালবাসার কষ্টে জর্জরিত পলাশ

কল্পনার কলেজ ছেড়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারেনি। কেননা, পলাশ প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে তার বাবার কথা বলিয়ে দিয়েছে। যাতে করে প্রিন্সিপাল স্যার কল্পনাকে আটকায়। কল্পনারও চাকরীটা খুব দরকার ছিল। তাই সেও আর ছাড়েনি। সব কিছুই আবার ঠিকঠাক চলতে লাগল। পলাশ আর এই কলেজে আসে না। অন্য কলেজে ভর্তি হইছে। তাতে কল্পনাও খুশি। এখন আর কেউ তাকে ডিস্টার্ব করে না। তার দিনগুলো এখন ভালই কাটতে লাগল।

পলাশ আর আগের মত নাই। সারাদিন দরজা লাগাইয়া রুমে বসে থাকে। মাঝে মাঝে নতুন কলেজে যায়। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়তেছে। আসাদ সাহেবের (পলাশের বাবা) খুব চিন্তা হয়। একটা মাত্র ছেলে তার। কখনো কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখে নি। আর এখন তার ছেলের একি অবস্থা। তিনি জানেন, এভাবে চলতে থাকলে তার ছেলে বেশিদিন বাঁচবে না। নিজের রুম থেকে বের হয়ে ছেলের রুমে গেলেন।

পলাশের বাবাঃ কিরে আসব?

পলাশঃ বাবা, আসো।

পলাশের বাবাঃ কি করতেছিস?

পলাশঃ কি, কিছুনা।

পলাশের বাবাঃ ইদানিং সিগারেটও খাচ্ছিস?

পলাশের বাবাঃ আচ্ছা বলতো, আমি কখনো তোর কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখছি? কখনো তোর মায়ের অভাব বুঝতে দিয়েছি?

পলাশঃ নাহ, তা দাওনি।

পলাশের বাবাঃ তাহলে এভাবে নিজেকে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস? কি চাই আমাকে বল?

পলাশঃ আমার কিছুই চাই না আব্বু।

পলাশের বাবাঃ প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে সব বলছেন।

পলাশঃ হুমমম।

পলাশের বাবাঃ আমি কালই কল্পনার সাথে কথা বলব।

পলাশঃ নাহ, বাবা। তার কোনই দরকার নাই।

পলাশের বাবাঃ আমি তোর কথা শুনবো নাতো। আমার ছেলেটা আমার সামনে এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবে আর আমি তা মেনে নিব? কখনো না।

পলাশঃ বাবা, শুনো

পলাশের বাবাঃ আমি তোর কোন কথাই শুনব না। ওহ হ্যা, কোন ব্রান্ডের সিগারেট ঔটা? কথা বলতেছিস না ক্যান?

পলাশঃ গোল্ডলিফ।

পলাশের বাবাঃ আমারই ব্রান্ড। প্যাকেট টা এইদিকে দে। আমার সিগারেট শেষ।

আসাদ সাহেব সিগারেট এর প্যাকেট নিয়ে চলে গেলেন। পলাশ এতে মোটেই অবাক হয়নি। কারণ ছোটবেলা থেকে তার বাবা তার সাথে ফ্রেন্ডলি।

ছেলের জন্য বাবা

অফিস শেষ করে আসাদ সাহেব কলেজ এ গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে কল্পনা কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেছে। প্রিন্সিপাল এর থেকে কল্পনার বাসার ঠিকানা নিয়ো বাসায় চলে গেলেন।
বাসায় গিয়ে আসাদ সাহেব কল্পনাকে পেলেন না। কল্পনার মায়ের সাথে কথা বললেন তিনি। কিছুক্ষণ এর ভিতর কল্পনাও চলে আসল। কল্পনা আসাদ সাহেবকে বাসায় দেখে চমকে গেলেন। কল্পনা আসাদ সাহেবকে আগে থেকেই চিনত। কল্পনা আসাদ সাহেবকে সালাম দিল।

আসাদ সাহেবঃ বসো মা, তোমার সাথে কিছু কথা বলি।

কল্পনাঃ জ্বী, স্যার। বলুন।

আসাদ সাহেবঃ পলাশ আমার একমাত্র ছেলে। ছোটবেলায় ওর মা কে হারিয়েছে। আমি ওর কখনো কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখি নি। সব দিতে পারলেও সময় টা দিতে পারিনি। নিজের মত করেই বড় হয়েছে। ছেলেটা সত্যিই তোমাকে ভালবাসে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতেছে না। সিগারেট খাওয়া শুরু করছে। ওর অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি জানি, এরকম চলতে থাকলে আমার ছেলেটা বেশিদিন বাঁচবে না। আমার ছেলেটা না বাচলে আমি কি নিয়া বাঁচবো।

কথাগুলো বলতে বলতে আসাদ সাহেব এর চোখের কোনে পানি চলে আসল। কল্পনা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না!

আসাদ সাহেবঃ আমি জানি, পলাশ তোমার ছোট। আমি জানি, আমার ছেলেটা বেপরোয়া। কিন্তু ততটাও খারাপ না। ছেলেটা কষ্ট পাবে তাই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। কিন্তু দেখো, এখন আবার ঠিকই কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের বাবা, ছেলের সংসারে কাউকে দরকার। আমি চাই, এখনই তোমাকে আমার বৌমা করে বাসায় নিতে। আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছি। এবার তুমি সম্মতি দিলেই বিয়ের আয়োজন করতে পারি।

কল্পনাঃ স্যার, আমাকে একটু সময় দিন। আমি আগে পলাশ এর সাথে কথা বলতে চাই। তারপর আপনাকে জানাবো।

আসাদ সাহেবঃ ঠিক আছে, মা। আমি আজ তবে উঠি।

ভালবাসার পাগলামি

সন্ধায় পলাশ ঘুমাচ্ছিল। এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। ঘুম ভাব নিয়াই ফোন রিসিভ করল।

পলাশঃ হ্যালো!

কল্পনা ম্যাডামঃ কি ব্যাপার? নিজেকে কষ্ট দিতাছো ক্যান?

পলাশঃ কে আপনি?

কল্পনা ম্যাডামঃ আমি যেই হই, এইসবের মানে কি?

পলাশঃ ম্যাডাম! ম্যাডাম আপনি?

কল্পনা ম্যাডামঃ হুমম, আমি। তুমি পাগলামি কেনো করতেছো?

পলাশঃ কারণ, আমি আপনাকে ভালবাসি।

কল্পনা ম্যাডামঃ ভালোবাসো তো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো কেনো?

পলাশঃ আমি শুধু আপনাকে ভালবাসি, আপনাকে ছাড়া যে এখন নিজেকে শূন্য মনে হয়।

কল্পনা ম্যাডামঃ তোমার বাবাকে ক্যান পাঠাইছো?

পলাশঃ আমিতো পাঠাইনি। সে নিজে থেকেই গেছে।

কল্পনা ম্যাডামঃ তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসে। এইসব ভালবাসা বাদ দিয়া পড়াশোনায় মনযোগ দাও। বাবার সপ্ন পুরন করো।

পলাশঃ কিন্তু আমি আপনাকে ভালবাসা বাদ দিতে পারব না। আমার আপনাকে দরকার।

কল্পনা ম্যাডামঃ ভালো থেকো। তোমার বাবা এসেছিল তাই তোমাকে ফোন দিলাম। নিজেকে কষ্ট দিয়ো না। বাই।

পলাশঃ ম্যাডাম আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনাকে না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।

আর কোন রিপ্লাই না দিয়েই ফোনটা কেটে দিল। পলাশ এর চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। কত্তগুলা ঘুমের ঔষধ খাইয়া ঘুম দিল।

স্বার্থক ভালোবাসা

পরেরদিন পলাশ নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করল। চোখ খুলে তাকাতেই কল্পনা ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল পলাশের এর গালে। পলাশ গালে হাত দিয়ে কল্পনার চোখের দিকে তাকাল। স্পর্ষ্ট দেখতে পেল কল্পনার চোখে পানি টলমল করতেছে। কেবিনে পলাশ আর কল্পনা ছাড়া আর কোউ ছিল না।

এরপর কল্পনা পলাশ এর কলার ধরে বলল,

কল্পনা ম্যাডামঃ কি জন্য করলি, এইসব?

পলাশঃ আমিতো বলছি আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনাকে না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।

কল্পনা ম্যাডামঃ এত্ত কেনো ভালবাসিস আমাকে?

পলাশঃ জানিনা, কেনো এতো ভালবাসি। শুধু জানি, আমি আপনাকে ভালবাসি। আর আপনাকে ছাড়া আমি বাচবো না।

কল্পনা ম্যাডামঃ আমিও তোকে ভালবাসি।

বলেই কল্পনা পলাশকে জরাইয়া ধরল। পলাশ ও শক্ত করে জরাইয়া ধরল।

কল্পনা ম্যাডামঃ সারাজীবন এইভাবে ধরে রাখবে তো?

পলাশঃ হুমমমম, সারাজীবন ধরে রাখবো। ভালবাসি যে খুব।

কল্পনা ম্যাডামঃ আমিও ভালবাসি। চলবে…

পরের পর্ব- ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – শেষ পর্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *