মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ৯ | স্যারের সাথে প্রেম: গত পর্বে দেখেছি কিভাবে মিষ্টি স্যারকে সুযোগ পেলেই খোঁচা মারে। বাইক নিয়ে স্যারের সাথে বেশ মজাই করে এই পাগলি মেয়েটি। আজ রোদ ও সে বাইকে করে বেরেয়িছে বিয়ের ফুল আনতে। তো দেখা যাক কি হয় তাদের মাঝে।
রোদের মিষ্টি প্রতিশোধ
মাঝ রাস্তায় এসে হঠাৎ রোদ জোরে বাইক ব্রেক করায় আমি ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে রোদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। রোদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
রোদঃ নামো।
আমি চোখ বন্ধ করেই আছি। রোদের গা থেকে খুব মিষ্টি একটা পারফিউম এর ঘ্রাণ আসছে। পারফিউমের ঘ্রাণটা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। এই প্রথম আমি রোদের এতোটা কাছে। আশে পাশের কথা আমার মনেই পড়ছে না।
রোদঃ কি হলো? উঠো বলছি। (ধমক দিয়ে)
মিষ্টিঃ (আমি ভয় পেয়ে তাকিয়ে) উফফফ, চিল্লাচ্ছেন কেনো? কি হইছে?
রোদঃ আমি তোমাকে উঠতে বলেছি?
মিষ্টিঃ কেনো? উঠবো কেনো?
রোদঃ আমি বলছি তাই।
মিষ্টিঃ আপনি বললেই আমাকে উঠতে হবে।
রোদঃ তুমি আমার সাথে আসছো। তাই আমি যা বলবো তুমি তাই শুনবে।
মিষ্টিঃ পারবো না শুনতে আমি। আমাকে আপনি নিয়ে আসছেন কেনো? আমি কি বলছিলাম আমাকে নিয়ে আসতে।
রোদঃ (আমার হাত ধরে টান দিয়ে নামিয়ে) আমি তোমাকে নিয়ে আসতে চাইনি বুঝছো। ফুপ্পি বললো তাই নিয়ে আসছি। না হলে তোমাকে কখনো নিয়ে আসতাম না।
মিষ্টিঃ ইশশ! আপনার সাথে আসার জন্য যেমন আমি বইসা ছিলাম। আমিও আপনার সাথে আসতে চাইনি বুঝছেন। মামি আমাকে জোর করল তাই আসছি। আমার ও আপনার সাথে আসার কোন ইচ্ছাই নেই। (ভেঙিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে)
রোদঃ একমিনিট তুমি এমন পেত্নীদের মতো করে আসছো কেনো?
(আমি কোমরে দুই হাত দিয়ে)
মিষ্টিঃ আবার আপনি আমারে পেত্নী বললেন। তো এই পেত্নীর সাথে আসছেন কেনো আপনি?
রোদঃ তোমাকে পেত্নী লাগছে, তাই বলছি। আমি যাকে তাকে আমার সাথে নেই না বুঝছো। তবুও তোমাকে সাথে নিচ্ছি। যা তোমার লাক বলতে পারো।
মিষ্টিঃ কিহ! আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন?
মিষ্টিকে বিরক্ত করা
তারপর রোদ হঠাৎ করে আমার খোঁপার কাঠি খুলে দেয়।
মিষ্টিঃ কি হলোটা কি এটা (অবাক হয়ে)।
রোদঃ অন্তত পেত্নী থেকে কিছুটা ভালো লাগছে। আমার সাথে তোমার মতো এই পেত্নীকে দেখলে আমাকে মানুষ কি ভাবতো।
মিষ্টিঃ কিহ! সত্যিই আমাকে এতোটাই খারাপ লাগছে।
রোদঃ তোমাকে ভালো কোনোদিন লেগেছিলো নাকি?
মিষ্টিঃ আপনি সত্যি খুব খারাপ।
রোদঃ হুম। এবার উঠো তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাবে না হলে…
তারপর আমরা ফুল কিনে নেই। রোদ বাড়ির সামনে এসে আমাকে নামিয়ে দিয়ে সব ফুল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে-
রোদঃ এবার তুমি এগুলো নিয়ে যাও।
মিষ্টিঃ যাবো মানে? আপনি কই যাবেন। আর আমি এতোগুলা একা একা নিয়ে যাবো। আপনি নিবেন না?
রোদঃ আমি কোথায় যাচ্ছি তা তোমাকে জানতে হবে না। আর হ্যা তুমিই এইগুলা সব নিয়ে যাবে। বুঝেছো? আমি না।
মিষ্টিঃ আমি কিভাবে নেবো এতো ফুল।
রোদঃ আমার সাথে যেভাবে গেছো। ঠিক সেইভাবেই।
মিষ্টিঃ আশ্চর্য। আমি ইচ্ছা করে গেছি নাআক…
বলতে যাবো তখনই রোদ চলে যায়।
মিষ্টিঃ আমি এতোগুলা নিবো কিভাবে?
একা মিষ্টির পথচলা
এতো ফুল যে আমি সামনে ভালো করে কিছুই দেখছি না। হাত দিয়ে নিতে ও পারছি না। যেকোন সময় ফুলগুলো পরবে তো পড়বেই সাথে আমিও পরবো। তাই সাবধানে হাটচ্ছি।
তখনই তিয়াষ আমার সামনে আসে।
তিয়াষঃ আরে মিষ্টি দাঁড়াও! দাঁড়াও। তুমি এতোগুলো ফুল একা নিয়ে আসছো কেনো? আর কেউ নেই এইগুলা নেয়ার।
মিষ্টিঃ (মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে আমার। দেখছে এতো ফুল নিতে পারছিনা তুই একটু হেল্প করবি তা না প্রশ্ন করতাছে। ইচ্ছা করছে মাথাটা ফাটাইয়া দেই)। হ্যা কেউ নেই। তাই কি আর করার। আমাকেই নিতে হচ্ছে।
তিয়াষঃ দাও, তুমি আমাকে দাও। আমি নিচ্ছি।
মিষ্টিঃ হ্যা! এই নাআ।
বলতে যাবো তখনই আবার বান্দর খাম্বায় এসে বলে তিয়াষ তোকে ফুপ্পি ডাকছে। তুই যা।
তিয়াষঃ মা আমাকে এখন ডাকছে কেনো?
রোদঃ সেটা আমি কিভাবে বলবো? তুই যা তারপর দেখ ফুপ্পি কেনো ডাকছে।
তিয়াষঃ হুম যাচ্ছি। রোদ শোন না ভাই তুই মিষ্টির হাত থেকে ফুলগুলা নে না। ও পারছেনা এতো গুলা নিতে।
রোদঃ তুই যা। আমি দেখছি।
তিয়াষঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তিয়াষ চলে যায়।
মিষ্টিঃ কি হলো নিন?
রোদঃ মানে?
মিষ্টিঃ আপনি না তিয়াষকে বললেন আপনি আমার থেকে ফুলগুলা নিবেন।
রোদঃ জ্বি না। আমি নিবো বলিনি। আমি বলেছি আমি ফুলগুলো দেখছি।
মিষ্টিঃ ওই একইতো হলো।
রোদঃ না একই হইনি।
মিষ্টিঃ তাহলে আপনি তিয়াষকে মিথ্যা বললেন কেনো?
রোদঃ কি মিথ্যা বলেছি?
মিষ্টিঃ এই যে, মামি ওকে ডাকছে। মামি যদি ওকে ডাকেই তাহলে সেটা আপনি জানলেন কিভাবে? আপনিতো বাইরে থেকে আসলেন। হুম।
রোদঃ ইনটেলিজেন্ট।
মিষ্টিঃ তার মানে আপনি ইচ্ছা করেই তিয়াষকে সরিয়ে দিলেন। তাই না।
রোদঃ যাক, তোমার মাথায় কিছু বুদ্ধি অন্তত আছে। আমিতো ভাবছিলাম পুরো মাথায়ই গোবর ঢোকানো।
মিষ্টিঃ আপনি আমার সাথে এমন কেনো করছেন বলুনতো?আমাকে প্লিজ হেল্প করুন না, প্লিজ।
রোদঃ তুমি এগুলা নিতে পারবে। যাও এগুলা আস্তে আস্তে করে নিয়ে যাও।
মিষ্টিঃ আপনি খুব খারাপ। খুব..
মিষ্টিকে নাঝেহাল করল রোদ
বলে আমিই আস্তে আস্তে করে ফুল গুলো নিয়ে রেখে রুমে গিয়ে দেখি মুন আর তিশা একসাথে গল্প করছে।
মিষ্টিঃ কিরে! তোরা আমাকে রেখেই গল্প করছিস।
মুনঃ ওই হারামি তুই কই গেছিস আমারে ছাড়া?
মিষ্টিঃ আমি ফুল আনতে গেছিলাম।
মুনঃ আমাকে নিয়া যাইতে পারতি।
মিষ্টিঃ তুই তো ঘুমাইতাছিলি। আর আমিই নিজেইতো রেডি হইতে পারিনি। কোনমতে রেডি হইয়া গেছি। আর সব থেকে বড় কথা কি জানিস আমি কার সাথে গেছি?
মুনঃ তুই না বললে জানমু কেমনে?
মিষ্টিঃ আমি খাম্বার সাথে গেছি।
মুনঃ কিইহহ! স্যারের সাথে গেছিস।
মিষ্টিঃ হ….
মুনঃ স্যার কিছু করে নাই।
মিষ্টিঃ করে নাই আবার। জানিস কি কি করছে?
মুনঃ বল শুনি।
এরপর আমি আজকের সব কথা বলি।
মুনঃ আল্লাহ্, তুই এতোগুলা ফুল নিজে নিজে আনছিস।
মিষ্টিঃ হ।
তিশাঃ এক মিনিট। সবই বুঝলাম। কিন্তু এই খাম্বাটা কে? আবার তোমরা স্যার ও বলছো।
মিষ্টি আর মুনঃ রোদদদদদদদ (একসাথে জোরে বলি)
তিশাঃ রোদ ভাইয়া। কিন্তু রোদ ভাইয়া তো অনেক ভালো।
মিষ্টিঃ হ, কি ভালো তা আমরা খুব ভালো করেই জানি।
তিশাঃ কিন্তু তোমরা। চলবে…
পরের পর্ব: মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১০ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প