মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৮ | স্যারের সাথে প্রেম: গত পর্ব অনেক উত্তেজনাকর কেটেছে সবার আশা করি। কারণ মিষ্টি জানেই না যে স্যার মানে তার প্রিয় ভালবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে হয়েছে। রোদের গলা শুনে যেন নতুন এক জীবনের সন্ধান পেল মিষ্টি। দেখা যাক এখন তাদের বাসর কেমন হয়? মিষ্টির প্রতিক্রিয়া কি হয়? চলুন দেখি।
মিষ্টিকে বোকা বানানো
মিষ্টিঃ আপনিই (অবাক হয়ে)।
রোদঃ হুম, আমিই।
মিষ্টিঃ আপনি এখানে? কিভাবে? আপনার সিমাকে বিয়ে করা হয়ে গেছে?
রোদঃ কিহ! আমি তোমার পাশে বর সেজে দাঁড়িয়ে আছি আর তুমি বলছো সিমাকে আমি বিয়ে করে ফেলছি। এতো বোকা তুমি, হুম।
মিষ্টিঃ তার মানে।
রোদঃ তার মানে তুমি যা ভাবছো তাই হয়েছে!
এরপর আমি একটু আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মুন, রিফাত, শিমু, ওর বর সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। তার মানে ওরা ইচ্ছা করে এসব প্ল্যান করছে। ওরা সবকিছু জানতো। মুন সব জানতো কিন্তু আমারে মিথ্যা বলছে এতোদিন। ও আগে থেকেই জানতো। কুত্তী তোরে খালি আমি একবার একলা পাই তোরে আমি কুচিকুচি করে কাটমু।
মিষ্টিঃ আমি আপনাকে..।
রোদঃ এখন একদম বেশি কথা বলো না। সবাই ভাববে নতুন বউ বাঁচাল। পরে আমারই বদনাম হবে। বলবে আমার বউ বাঁচাল।
তারপর মিষ্টি একটু রেগে গিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।
এরপর আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে বিদায় দেয়। গাড়িতে আমি রোদের দিকে একটু ও তাকাই নি। মাথা নিচু করে খালি রাগটাকে সামলাচ্ছি। ইচ্ছা করছে এক ঘুষিতে খাম্বার নাকটা ফাটায় দিতে। কিন্তু আমি এখন তা করতে পারছি না। আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে।
এরপর খাম্বার বাড়ি মানে আমার নতুন শ্বশুরবাড়িতে পৌছে যাই। তারপর ওখানের সব নিয়ম শেষ করে আমাকে বাসর ঘরে বড় করে ঘোমটা টেনে বসানো হয়।
স্যারের সাথে বাসর রাত
আমিও চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষণ পর রোদ আসে। আমি কিছুটা নড়ে চড়ে বসি। তারপর রোদ আমার পাশে আস্তে করে বসে যেই আমার ঘোমটা সরাতে যাবে অমনি আমার সব রাগ এক করে রোদকে জোরে একটা ধাক্কা দিই। রোদ ধাক্কা সামলাতে না পেরে খাটের নিচে পড়ে যায়।
রোদঃ আআউউউচ, কি করলেটা কি তুমি এটা?
মিষ্টিঃ যা করেছি, একদম ঠিক করেছি আমি। (ঘোমটা ফেলে রেগে)
রোদঃ কিহ্! ঠিক করেছো মানেহ? (উঠে দাঁড়িয়ে)
মিষ্টিঃ (খাট থেকে নেমে) মানে হলো আমি কোন ভুল করিনি। আপনাকে তো আমি মাত্র খাট থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি। কিন্তু আমার তো উচিত ছিলো আপনাকে দশ তালা বিল্ডিং থেকে ফেলে দেয়া।
রোদঃ তাই নাকি!
মিষ্টিঃ হুম, তাই।
রোদঃ কেনো ফেলে দেওয়া উচিত ছিলো, হুম?
মিষ্টিঃ আপনি আমাকে কিচ্ছু বলেননি, কিচ্ছু না। আপনি আমাকে বিয়ে করে ফেললেন অথচ আমিই জানতে পারলাম না। আপনি সবাইকে জানালেন অথচ আমাকে জানালেন না। আপনি জানেন আমি এতোদিন কতোটা কষ্টে ছিলাম। আপনি জানেন আমি আপনাকে কতোটা মিস করেছি।
রোদঃ কতোটা?
মিষ্টিঃ এই এতোটা! (বাচ্চাদের মতো দুই হাত ছড়িয়ে)
রোদঃ তাই, এতোটা ভালোবাসো তুমি আমাকে?
মিষ্টিঃ হ্যা, না বাসি না। আমি আপনাকে একটু ও ভালো বাসি না।
রোদঃ হ্যা, আবার না। কোনটা, হুম।
মিষ্টিঃ একটাও না। আমি আপনার সাথে কোন কথাই বলবো না। আপনি আমার সাথে একদম কথা বলবেন না। একদম না।
বলে অন্য পাশে ফিরে দাঁড়িয়ে আছি।
রোদঃ আচ্ছা, সরি সরি। আ’ম রিয়েলি সরি। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা রেগে যাবে। আমিতো তোমাকে জাস্ট সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তার জন্য যে তুমি খাওয়া দাওয়া অফ করে দিয়ে ঘরে বসে কান্না করতে করতে শুটকি হয়ে যাবে তা কি আমি জানতাম। (মজা করে)
মিষ্টিঃ কিহ্! আমি শুটকি, হ্যা।
রোদঃ আগে শুধু পেত্নী ছিলা আর এখন শুটকি হইছো এই আর কি!
মিষ্টিঃ (রেগে চুল টেনে ধরে) আমি শুটকিই হ্যা। আমি শুটকি হইলে আপনি খাম্বা।
রোদঃ হুম তাতো তুমি বলবেই। আমি কতো লম্বা! আর তোমার মতো মেয়েতো আমাকে খাম্বা বলবেই, তাই না।
মিষ্টিঃ আমি মোটেই খাটো না। আমি যথেষ্ট লম্বা। আপনার কানের নিচ পর্যন্ত, হুম।
রোদঃ ও বাবা তাহলে তো মিষ্টি খুব লম্বা, হুম।
স্যার যখন বর শাস্তি তখন প্রাপ্য
মিষ্টি একটু চুপ করে বলে উঠে- আচ্ছা, আমি আপনার সাথে কথা বলছি কেনো? আপনার তো আমার সাথে কথা বলা বারণ ছিলো।
রোদঃ মাফ করে দাও না, প্লিজ।
মিষ্টিঃ মাফ নাই।
রোদঃ দাও না, প্লিজ, প্লিজ।
মিষ্টিঃ দিতে পারি কিন্তু কিছু শর্ত আছে।
রোদঃ কি শর্ত? বলো, বলো। আমি সব মানবো।
মিষ্টিঃ সত্যিই মানবেন তো?
রোদঃ হুম সত্যি।
মিষ্টিঃ ঠিক আছে, তাহলে প্রথমে কানে ধরুন। তারপর একশো বার কানে ধরে উঠবস করবেন।
রোদঃ কিহ্ কানে ধরে উঠবস। প্লিজ প্লিজ অন্য কিছু বলো। আমি করবো। কিন্তু এইটা দিও না। আমি জীবনে কোনদিন কানে ধরিনি। আজকে কিভাবে কানে ধরবো।
মিষ্টিঃ আজকে ধরবেন। আপনি ও তো আমাকে প্রথমবার কানে ধরিয়েছিলেন মনে নাই। তাও আবার সবার সামনে। আর আমিতো আপনাকে মাএ আমার সামনে কানে ধরতে বলছি।
রোদঃ ওইটার শোধ তুমি এইভাবে নিবা?
মিষ্টিঃ হুম, এইভাবেই নিবো।
রোদঃ মাফ করা যায় না।
মিষ্টিঃ একদমই না।
রোদঃ আচ্ছা ঠিক আছে, উঠবসটা বাদ দিয়ে দাও না।
মিষ্টিঃ ওকে তাহলে কানে ধরে সরি বলুন।
রোদঃ হুম।
তারপর রোদ কানে ধরে সরি বললো।
রোদঃ এবার কি রাগ ভাঙছে?
মিষ্টিঃ নাহ, আর একটা কাজ আছে আপনার।
ছাত্রী বউকে প্রপোজ করা
রোদঃ আরো একটা কাজ! কি কাজ?
মিষ্টিঃ আমাকে প্রপোজ করতে হবে।
রোদঃকিহ্! প্রপোজ করবো আমিই।
মিষ্টিঃ এহ্, এমন ভাব করছেন যেনো জীবনে প্রপোজ নামটাই শুনেন নাই। হুম আপনিই করবেন।
রোদঃ আমি জীবনে কাউকে প্রপোজ করিনি। এসবে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই।
মিষ্টিঃ ইসস! আমার যেমন কতো অভিজ্ঞতা। আচ্ছা, আপনি কি আমায় সত্যি ভালোবাসেন?
রোদঃ তোমার কি কোন ডাউট আছে?
মিষ্টিঃ আমার একটু একটু ডাউট হচ্ছে।
রোদঃ কিইইই?
মিষ্টিঃ তাহলে ভালোবাসি বলুন। আমার অনেক ইচ্ছা আমাকে আমার জামাই ভালোবাসি বলবে।
রোদঃ ওকে।
তারপর রোদ কোথা থেকে যেন একগুচ্ছ লাল গোলাপ এনে বলে-
রোদঃ ভালোবাসি কথাটা কি করে বলতে হয় তা হয়তো আমার জানা নেই। কিন্তু তোমাকে আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি। আমার থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমায়। তুমিই আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে, শিরা উপশিরায় তুমি মিশে আছো। আমার মনের গহীনে পুরোটা জুরে তুমি। এইগুলা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে আমি তোমায় ভালোবাসি। সত্যিই বড্ড বেশি ভালোবাসি। তোমার অনুপস্থিতি আমায় যে কষ্ট দেয়, তুমি আমার আশে পাশে থাকলে আমার ভিতর যেই ভালোলাগার অনুভূতিগুলো কাজ করে তা যদি ভালোবাসা হয় তাহলে সত্যি আমি তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমার করা দুষ্ট-মিষ্টি রাগ, ঝগড়া এবং প্রতিটি মুহূর্তকে, ভালোবাসি তোমার সব কিছুকে।
মিষ্টিঃ ওয়াও।
রোদঃ কি হইলো? এতো অবাক হলে কেনো?
মিষ্টিঃ ভাবছি রাগী খাম্বার মুখে এতো মিষ্টি কথা আসলো কিভাবে?
রোদঃ তুমি আবারো আমাকে নিয়ে মজা করছো।
মিষ্টিঃ হি হি হি!
রোদঃ এবার রোদ একটু রেগে যায়।
মিষ্টিঃ আবারো রোদকে দেখে, হি হি হি!
বাসর রাতে ছাত্রীর দুষ্টামি
রোদঃ মিষ্টি, আই লাভ ইউ।
মিষ্টিঃ ইসসস! বাবুটারে।
রোদঃ উত্তরটা কিন্তু পেলাম না।
মিষ্টিঃ হু্ম, উত্তরটা কি আমাকে বলতেই হবে?
রোদঃ মানেএএএ।
মিষ্টিঃ ওকে তাহলে বলি, হ্যা।
রোদঃ হুম বলো।
মিষ্টিঃ বলছি কিন্তু।
রোদঃ উত্তর দিতে এতো টাইম লাগে নাকি?
মিষ্টিঃ আচ্ছা তাহলে বলেই দেই, আই লাভ….।
রোদঃ তারপর বলো থেমে গেলে যে।
মিষ্টিঃ আই লা….।
রোদঃ হুম, তারপর..(উৎসাহ নিয়ে)
মিষ্টিঃ আই লাভ ফুড।
রোদঃ কিহহহহহ!
মিষ্টিঃ হুম, (রোদের হাত থেকে ঠাস করে গোলাপগুলো নিয়ে) গোলাপগুলো সুন্দর। তার জন্য থ্যাংকস। বাট আমার খুব খুব খুব ক্ষুধা পেয়েছ এই মুহূর্তে আমার আর কিছু মাথায় আসছে না। তাই আপনি প্লিজ কিছু করেন, আপনার জন্য আমি না খেয়ে থাকতে থাকতে আমার এখন প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে, শুকিয়ে গেছি আমি।
রোদঃ আমি এসব… চলবে…
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৯ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প