মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৬ | স্যারের সাথে প্রেম: গত পর্বে আমরা দেখেছি মিষ্টি ও রোদের মাঝে ভবিষ্যৎ নিয়ে কথোপকথন। মিষ্টি রোদের মনের কথা জানতে চায় আর রোদ চায় মিষ্টির মনের কথা। দুজনেই মন নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়?
রোদের বিয়ে নিয়ে মিষ্টির দুশ্চিন্তা
মিষ্টিঃ ও নাকি সিমাকে বিয়ে করবে।
মুনঃ কে বিয়ে করবে?
মিষ্টিঃ (কান্না করে দিয়ে) রোদ..
মুনঃ ওহ! রোদ স্যার বিয়ে করলে তাতে তোর সমস্যা কোথায়?
মিষ্টিঃ কুত্তী! আমার সমস্যা কই তুই জানিস না?
মুনঃ কোথায়? ওওওওও বুঝেছি।
মিষ্টিঃ হ! তুই এখন বুঝ।
মুনঃ তুই স্যারকে ভালোবাসিস, তাই না!
মিষ্টিঃ জানি না, আমি।
মুনঃ হুম। বাসিস, বাসিস। আচ্ছা, স্যারকে তুই যদি ভালোইবাসিস তাহলে বলে দে।
মিষ্টিঃ আমি পারবো না, বলতে।
মুনঃ কেনো?
মিষ্টিঃ আমি কেনো আগে বলবো উনি বলবে আগে।
মুনঃ আচ্ছা, স্যার যদি আগে না বলে, তো?
মিষ্টিঃ আগে বলবে না কেনো?
মুনঃ আচ্ছা, স্যার তোকে ভালোবাসে, তুই কি শিওর?
মিষ্টিঃ নাহ্!
মুনঃ তাহলে স্যার যদি তোরে আগে প্রপোজ না করে তো? তুইতো আর শিওর না যে স্যার তোকেই ভালোবাসে।
মিষ্টিঃ শিওর না। তবে উনি যদি আমাকে ভালো নাই বাসতো তাহলে আমার সব ব্যাপারে উনি এতো ভাবেন কেনো, তুই বল?
মুনঃ হুম। তাইতো। আর স্যার সিমাকে বিয়ে করবে তুই কি করে জানিস?
মিষ্টিঃ আমার মনে হচ্ছে, উনাকে আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম কিন্তু উনি আমায় বলেনি।
মুনঃ তাহলে তুই একটা কাজ কর। তুই বরং স্যারকে আগে প্রপোজ করে দে।
মিষ্টিঃ কেনো?
মুনঃ স্যার যদি সত্যি সত্যি সিমাকে বিয়ে করে নেয় তখন!
মিষ্টিঃ আমি কিচ্ছু জানি না। কিচ্ছুনা!
মুনঃ আচ্ছা আর কিছুদিন দেখ। তারপর তুই যা ভালো মনে করিস তাই করবি। কেমন!
মিষ্টিঃ হুম।
রোদের বিয়ের আলোচনা
পরের দিন শিমুকে বিদায় দিয়ে আমরা সকলে চলে যাই। রোদেরাও চলে যায়। রোদের সাথে আমার আর কোন কথা হয়নি।
পরেরদিন-
আমি আর মুন আমরা একসাথে ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করে নেই। ভার্সিটিতে রোদ যেনো আমাকে চিনছেই না। জীবনে কোনদিন আমাকে দেখেইনি। এমনভাব করছে।
মুনঃ কি ব্যাপার? বলতো, স্যারতো তোকে আজকে চিনছেই না!
মিষ্টিঃ হুম। তাইতো। খাম্বার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেলো নাকিরে।
মুনঃ দূর! কি বলিস এইসব আবোল-তাবোল।
মিষ্টিঃ তাহলে আমাকে চিনছেনা কেনো, তুইই বল।
মুনঃ ইচ্ছা করেই বলছেনা মনে হয়।
মিষ্টিঃ ইচ্ছা করে না বলার কি আছে?
মুনঃ স্যারকে জিজ্ঞাসা কর?
মিষ্টিঃ হ, অপমানিত হওয়ার জন্য, তাই না!
মুনঃ আচ্ছা থাক, পরে দেখা যাইবো নে।
তারপর আমরা ক্লাস করে চলে যাই বাসায়।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন ভার্সিটির ক্লাস শেষে বাসায় গিয়ে আমি গোসল করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে একটা ঘুম দেই। বিকালে মুনর ফোনে ঘুম ভাঙে আমার।
মিষ্টিঃ হ্যালো, কে? (ঘুমের ঘোরে)
মুনঃ হ্যালো, মিষ্টি।
মিষ্টিঃ মুন তুই! হুম বল।
মুনঃ ওই তুই এখনো ঘুমাস। জানিস, এদিকে কি হইছে?
মিষ্টিঃ কি হইছে?
মুনঃ রোদ স্যারের বিয়ে ঠিক হইয়া যাইতাছে?
মিষ্টিঃ (এক লাফে ঘুম থেকে উঠে) কিহ! কিভাবে? তুই কি করে জানলি?
মুনঃ আমিতো রিফাতের কাছ থেকে জানলাম। ওই আমাকে বললো।
মিষ্টিঃ রিফাত তোকে বলছে? তুই শিওর।
মুনঃ হুম। ওই আমাকে বলছে।
মিষ্টিঃ কারে বিয়ে করতাছে, তুই জানিস?
মুনঃ কারে আবার সিমাকে।
মিষ্টিঃ কিহ! ওই নাকবুচিটারেই রোদ বিয়ে করবো।
মুনঃ রিফাততো তাই বললো।
মিষ্টিঃ ওহ!
বলে ফোন রেখে দিলাম। ফোন রাখার পর আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। রোদ সত্যিই ওই নাকবুচিটাকে বিয়ে করবে? কেমনডা লাগে। ওই নাকবুচিটা আমার চোখের সামনে রোদের বউ হইয়া যাবে। আর আমি কিছুই করতে পারবো না। খালি দেখমু।
ওইদিন কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। আব্বু আম্মু অনেক ডাকার পরও আমি দরজা খুলিনি।
রোদকে নিয়ে চিন্তিত মিষ্টি
পরেরদিন কলেজ গিয়েই আগে খাম্বাকে খুঁজতে লাগলাম। কোথাও খুঁজেই পাচ্ছি না। আমার রাগ উঠছে খুব। মেজাজ ভীষণ খারাপ হচ্ছে। উফফ কই খাম্বাডায়।
তখনই চোখ যায় খাম্বায় ভার্সিটির ভিতরে ঢুকছে। আমি দৌড়ে উনার সামনে গিয়ে বলি,
মিষ্টিঃ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?
রোদঃ আমার সাথে?
মিষ্টিঃ হুম, আপনার সাথে।
রোদঃ বলো, কি বলবে?
মিষ্টিঃ আপনি নাকি বিয়ে করছেন?
রোদঃ হুম, করছি। কেনো?
মিষ্টিঃ কাকে?
রোদঃ সিমাকে।
মিষ্টিঃ ওই নাকবুচিকে বিয়ে করার কি আছে? কেনো ওই নাকবুচিকে বিয়ে করতে চাইছেন আপনি?
রোদঃ সিমাকে নাকবুচি বলবা না মিষ্টি।
মিষ্টিঃ ওওও! খুব গায়ে লাগছে বুঝি আপনার।
রোদঃ হুম, লাগছেই তো। তো গায়ে লাগবে না। যতোই হোক, ও আমার হবু বউ।
মিষ্টিঃ হবু বউ (ভেঙিয়ে)। আপনি থাকেন আপনার হবু বউ ওই নাকবুচি সিমাকে নিয়ে। আমার কি আপনি যারে ইচ্ছা তারে বিয়ে করেন। আমি দেখতেও যাবো না। আর শুনতেও যাবো না।
রোদঃ তাই বুঝি।
মিষ্টিঃ হম্মম তাই!
তারপর আমি ক্লাসে চলে যাই। ক্লাসে গিয়ে কিছুক্ষণ বসতেই মুনও চলে আসে।
মুনঃ কিরে তুই এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি, কিভাবে?
মিষ্টিঃ যেইভাবে আসে, সেইভাবেই আসছি। (রেগে)
মুনঃ এইভাবে কথা বলছিস কেনো? রোদ স্যার কিছু বলছে তোরে?
মিষ্টিঃ কি বলবো ওই খাম্বায় আমারে।
মুনঃ আচ্ছা, বাদ দে। শুনছিস তুই, রোদ স্যারের বিয়ে নাকি আর দুই সপ্তাহ পরে।
মিষ্টিঃ সত্যি বলছিস তুই?
মুনঃ আরে হ্যা। সত্যি।
মিষ্টিঃ ওহ! বিয়ে করুক। তাতে কি হইছে? আমাকে এসব কথা একদম বলতে আসবি না তুই।
মুনঃ দেখ, স্যারকে তুই আগে প্রপোজ করে দে। নাহলে কিন্তু পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
মিষ্টিঃ নাহ্! আমি কিছুতেই আগে প্রপোজ করবো না। উনি যদি আমাকে সত্যি ভালোবাসে তাহলে উনিই আমাকে আগে ভালোবাসি কথাটা বলবে। আর না বললে ওই সিমাকেই বিয়ে করুক। আমি কিছুই বলবো না।
মুনঃ কি জানি, তুই এই আগে আগে করতে যেয়ে দেরি না করে ফেলিস।
মিষ্টিঃ ওম্মম।
রাকিবের সাথে মিষ্টি
ক্লাস শেষ করে বাইরে আসতেই রাকিবের সাথে দেখা হয়।
মুনঃ কিরে তুই এখানে আমাদের সামনে দাঁড়ালি কেন?
রাকিবঃ আমি তোমার এক ব্যাচ সিনিয়র মুন। আর তুমি আমাকে সবসময় তুই করে বলো কেনো, হ্যা।
মিষ্টিঃ আমি বলছি তাই ও তোরে তুই বলে। তোর কি কোন সমস্যা আছে?
রাকিবঃ তুমি আমাকে তুই বলো তাতে আমার কোন সমস্যা নাই কিন্তু ও আমাকে তুই বলবে এইটা মোটেই ঠিক না।
মিষ্টিঃ কেন? আমি তোরে তুই বললে তোর সমস্যা নাই কেনো আর ও বললেই তোর কি সমস্যা?
রাকিবঃ মিষ্টি, তুমি আমার সাথে যেই ভাবেই কথা বলো, আমার কাছে তোমার কথাগুলো খুব ভালো লাগে। তোমার মুখে তুইটাও কতো মধুর।
মিষ্টিঃ দেখ, তোর এই লুতুপুতু কথা আমার একদম পছন্দ না। বুঝছিস! আমার মোটেই ভালো লাগছে না আজকে।
রাকিবঃ ও তোমার ভালো লাগছে না। আচ্ছা চলো, আমরা সবাই একসাথে ফুচকা খাই তাহলে দেখবে তোমার অনেক ভালো লাগবে।
মিষ্টিঃ তোর সাথে ফুচকা খাইলে আমার ভালো লাগবে।
মুনঃ ওই মিষ্টি, চল না খাই। অনেকদিন আমাদের ফুচকা খাওয়া হয়নি। তুই চল না, প্লিজ।
মিষ্টিঃ ওর সাথে ফুচকা খাবি।
মুনঃ হ্যা, ফুচকাইতো খাবো। আর ওইতো আমাদের ফুচকার কথা মনে করালো বল। তাই ওরেও নেওয়া উচিত, তাই না বল!
মিষ্টিঃ আচ্ছা রাকিব, চল।
রোদের অভিমান
তারপর আমরা সবাই ফুচকা খেতে খেতে অনেক মজা করলাম। মনটা এখন অনেকটাই হাল্কা লাগছে। রোদের কথা মনেই নেই আমার। তখনই মুনর আম্মু মুনকে ফোন করে। মুনর কথা বলার পর-
মুনঃ বান্ধুবি, আমাকে যেতে হবেরে।
মিষ্টিঃ তুই কই যাবি, এখন। আমরা একসাথেই যাবোনে।
মুনঃ নারে, আম্মু এখনই যাইতে বলছে। আমি যাই, তুই পরে আসিস।
মিষ্টিঃ ওকে, যা তাহলে।
মুনঃ হুম।
এই বলে মুন চলে যায়।
রাকিবঃ মিষ্টি চলো, আমরা একটু হাটাহাটি করি।
মিষ্টিঃ হুম, চলো।
এরপর আমি আর রাকিব অনেক গল্প করে রাকিবের ক্লাস থাকায় ও চলে যায়। তখনই একজন এসে বলে রোদ স্যার আমাকে তার কেবিন ডেকেছে বলে চলে যায়।
মিষ্টিঃ খাম্বায় আমারে ডাকছে কেন? কি বলবো কি খাম্বায় আমাকে? বলতে বলতে খাম্বার কাছে চলে গেলাম।
মিষ্টিঃ স্যার আসবো?
রোদঃ আসো।
মিষ্টিঃ স্যার আপনি আমাকে…।
রোদ আমার দিকে তাকাতেই দেখি রোদের চোখ লাল হয়ে আছে।
মিষ্টিঃ স্যার, আপনি এতো রেগে আছেন কেনো?
রোদঃ তোমার রাকিবের সাথে কথা বলার কি ছিলো? আর তুমি ওর সাথে ফুচকা খাচ্ছিলে কেনো?
মিষ্টিঃ আপনি আজকেও আমাকে নজরে রাখছেন। আমি রাকিবের সাথে ফুচকা খেলে আপনার সমস্যা কি? আপনিতো আর কিছুদিন পর নাকি বিয়ে করে ফেলবেন তাহলে আপনি আমার ব্যাপার নিয়ে এতো ভাবেন কেনো? আমি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে যা ইচ্ছা তাই করবো আপনি আমার ব্যাপারে আর কোন কথা বলবেন না,ব্যস।
বলেই বাসায় চলে যাই। আর রোদ আরো রেগে যায়।
এরপর আমি আর……চলবে…..
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৭ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প