মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৫ | স্যারের সাথে প্রেম: বিগত পর্বে আমরা রোদ ও মিষ্টির কণ্ঠে গান গাওয়া দেখেছি। ছাদে আড্ডাটা বেশ ভালই জমেছিল। চলেন দেখতে থাকি তারা কি করে?
ঘুমন্ত মিষ্টিকে কোলে নিয়ে রোদ
অন্যদিকে মুন আর তিয়াষ ওরা দুইজন গল্প করছেতো করছেই।
আর এদিকে রোদ মিষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে চলে আসতে গেলে মিষ্টির গলার চেনের সাথে রোদের শার্টের বোতামের প্যাচ লাগে। রোদ সেটাকে খুলতে গেলে মিষ্টির আরো একধাপ কাছে চলে আসে। মিষ্টির ঘুমন্ত মুখ দেখে রোদ যেন চোখই সরাতে পারছে না। রোদের খুব ইচ্ছা করছে মিষ্টির কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিতে। রোদ নিজের মনের সুপ্ত বাসনাটা নিজের মনেই রেখে এভাবে চেনের প্যাঁচটা খুলে দিয়ে আস্তে করে বাইরে চলে যায়।
ভোরে মুন এসে তাড়াতাড়ি করে মিষ্টির সাথে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়। সকালে সিমা এসে মিষ্টিকে রোদ ভেবে ডাকতে থাকে। কারণ মিষ্টি আর মুন দুইজনই কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মিষ্টি রোদের জায়গায় ঘুমিয়ে ছিলো। তাই সিমা বুঝতে পারেনি।
সিমাঃ রোদ, এই রোদ। উঠো না। দেখো আমি তোমার জন্য স্পেশাল কফি নিয়ে আসছি। দেখো বিয়ে বাড়িতে কতো লোক কেউ কি আর আলাদা করে তোমার খবর নিবে। তাই আমিই তোমার জন্য কফি নিয়ে আসছি। রোদ উঠোনা…(আসলে শাঁকচুন্নিটা রোদকে ইম্প্রেস করতে চাইছে)।
মিষ্টি Vs সিমা
আমি এক লাফ দিয়ে উঠে শাঁকচুন্নিটার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে একটু খেয়ে বলি,
মিষ্টিঃ বাহ! সিমা তুমিতো খুব ভালো কফি বানাতে পারো। আমাকে আরেক মগ বানিয়ে দিওতো।
সিমাঃ তুমি এখানে, রোদ কই?
মিষ্টিঃ হ্যা, আমি এখানে। তাতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আর রোদ কই আমি কিভাবে বলবো?
সিমাঃ এখানেতো রোদের ঘুমানোর কথা। তুমি এখানে কি করে আসছো?
মিষ্টিঃ ওহ! আমি কিভাবে আসছি। হ্যা তাইতো আমি কিভাবে আসছি? আসলে আমি না নিজেও জানি না। যে আমি কিভাবে আসছি।
সিমাঃ মানে।
মিষ্টিঃ আসলে কি বলোতো আমারতো ঘুমানোর জায়গা ছিলো না। তাই হয়তো কালকে রাতে ঘুমের ঘোরে এখানে চলে আসছি।
সিমাঃ চলে আসছি মানে? তাহলে সারারাত রোদ কোথায় ঘুমালো?
মিষ্টিঃ উফফ! এই সারাক্ষণ তুমি রোদ রোদ করো কেনো বলতো। রোদের পিছু ছাড়ছোই না তুমি। কেনো হ্যা কেনো? সারাক্ষণ রোদ আর রোদ করো কেনো তুমি?(রেগে)
সিমাঃ আমি একশোবার রোদ রোদ করবো। তোমার তাতে কি, হ্যা। তুমি জানো রোদের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে।
মিষ্টিঃ কচু হচ্ছে। রোদ কি বলছে তোমাকে বিয়ে করবে হ্যা। বলে নাই তো। তাহলে আগে থেকে এতো লাফালাফি করছো কেনো তুমি? পরে যদি রোদ অন্য কারো হ্যাজবেন্ড হয়ে যায় তখন?
সিমাঃ অন্য কারো হ্যাজবেন্ড মানে। রোদ আমারই হ্যাজবেন্ড হবে, বুঝছো তুমি।
মিষ্টিঃ ও তাই বুঝি।
সিমাঃ হ্যা, অবশ্যই।
মিষ্টিঃ দেখা যাক, তাহলে কি হয়?
রোদের খোঁজে মিষ্টি
এবার সিমা একটু রেগে যায়।
তারপর সিমা রেগে মেগে চলে যায়।
আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে নিই। চুল আচড়াতে আচড়াতে মনে হলো সত্যি আমি এই ঘরে এলাম কি করে। যতটুকু মনে পড়ছে কাল রাতে রোদ গান করছিলো। সত্যি খাম্বার গানের গলা খুবই সুন্দর। কিন্তু তারপর কি হইছিলো? আমি কিভাবে এখানে আসলাম? উড়ে, উড়ে, নাকি ঘুমে ঘুমে।
এক কাজ করি মুনকে ডেকে তুলে দেখি ও কিছু জানে নাকি।
মিষ্টিঃ ওই মুন, উঠতো একটু।
মুনঃ ধুর হ, আমি আর একটু ঘুমাব।
মিষ্টিঃ ওই বান্দরনি।…উঠ না। (মুনকে টেনে উঠিয়ে)
মুনঃ হুম। মিষ্টিই ডাকছিস কেনো? আমি ভোর বেলা ঘুমিয়েছি। এখন একটু ঘুমাইতে দে না। প্লিজ (ঘুমের ঘোরে উঠে)।
মিষ্টিঃ আচ্ছা শোন, আমি এখানে আসলাম কিভাবে? জানিস তুই।
মুনঃ হুম.. জানি।
মিষ্টিঃ জানিস তো বল, আমি আসছি কিভাবে?
মুনঃ রোদ স্যার তোরে দিয়া গেছিলো।
বলে আবার ঠাস করে ঘুমিয়ে পড়ে।
মিষ্টিঃ রোদ আমারে দিয়ে গেছিলো, মানে ওই পুরাটা শেষ কর। ওই…
মুনঃ ওহহো।
মিষ্টিঃ দেখ আবার ঘুমাইয়া গেলো!
আচ্ছা খাম্বায় কই। যাই দেখি, খাম্বায় কি করে দেখে আসি। তারপর আমি রুম থেকে বের হয়ে রোদকে খুঁজতে থাকি।
সারাবাড়ি খুঁজেও খাম্বাকে পাচ্ছি না। তাই আমি মন খারাপ করে খোজা বন্ধ করে দিতে যাবো তখনই মনে পড়লো খাম্বাকে ছাদে দেখা হয়নি। যাই একবার ছাদটা দেখে আসি। তারপর আমি দৌড়ে ছাদে গিয়ে দেখি মশাই ছাদের রেলিং ধরে উপরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিষ্টির না বলা কান্নাজড়িত ভালবাসা
আমি তা দেখে চুপিচুপি ওনার পিছে পিছে গিয়ে দাঁড়াই।
রোদঃ মিষ্টি এতো সকালে তুমি এখানে? ঘুম ভেঙেছে তাহলে তোমার? (উপরের দিকে তাকিয়েই)
মিষ্টিঃ (অবাক হয়ে) আপনি কিভাবে জানলেন আমি আসছি?
রোদঃ (পিছনের দিকে তাকিয়ে) জেনেছি কোন একভাবে।
মিষ্টিঃ কোনো একভাবে মানে?
রোদঃ …
মিষ্টিঃ আচ্ছা আপনি এখানে কি করছিলেন?না মানে এখন তো আকাশে তারা নেই যে তারা গুনবেন। তাহলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলেন?
রোদঃ কিছু নাতো।
মিষ্টিঃ ওহ! আচ্ছা স্যার, সত্যি সত্যি একটা কথা বলুন তো, আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
রোদঃ হুম বাসি, কেনো?
মিষ্টিঃ (প্রায়ই কান্নাই করে দিবে) ওহ আচ্ছা। আপনি কাকে ভালোবাসেন?
রোদঃ সেটা তোমায় বলবো কেনো?
মিষ্টিঃ হ্যা, সেইতো আমায় বলবেন কেনো আপনি? আমি জানি আপনি ওই সিমাকেই ভালোবাসেন। সিমাকেই বিয়ে করবেন। ওই নাকবুচিটাই আপনার বউ হবে। (কান্না করে দিয়ে)
রোদঃ কিহ! সিমা বুঝি নাকবুচি। (মুচকি হেসে)
মিষ্টিঃ তা নয়তো কি, হ্যা? ওই সিমাই নাকবুচি। আপনার কি চোখে পড়ে না। ওরে আমার একদম সহ্য হয়না। আপনি ওরে একদম বিয়ে করবেন না। প্লিজ।
রোদঃ কেনো সহ্য হয় না, হুম। আর তুমি কাঁদছ কেনো বলতো?
মিষ্টিঃ জানি না আমি। আপনি ওরে বিয়ে করবেন না। ব্যস।
রোদঃ (মিষ্টির কানের কাছে গিয়ে) আর যদি বিয়ে করি তো… (মজা করে)
মিষ্টিঃ তাহলে আমি আপনারে মেরেই ফেলবো।
রোদঃ কেনো? হুম।
মিষ্টিঃ জানি না বলে।
এক দৌড়ে আমি আবার নিচে চলে গেলাম। গিয়ে কান্না করতে লাগলাম।
মুন তখন ঘুম থেকে উঠে বলে-
মুনঃ কিরে তুই কাঁদিস কেনো? কি হইছে?
মিষ্টিঃ এমনি! কিছু হয়নি। (চোখ মুছে)
মুনঃ সত্যি করে বলতো কি হইছে?
মিষ্টিঃ ওই…চলবে…
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৬ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প