মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৪ | স্যারের সাথে প্রেম: গত পর্বে তিশার শশুড় বাড়িতে যাওয়া থেকে আসা পর্যন্ত রোদ ও মিষ্টির খুনসুটি দেখেছি। রোদের একতরফা যত্ন, শাসন আর মিষ্টির মজা করার অভ্যাস দুজনের মনে দাগ টেনে দিচ্ছে। দেখা যাক কি হয় এবার?
রোদের সাথে ছাদে মিষ্টির দেখা
বাসায় ফিরে ঘুমানোর জন্য খাট খুঁজছি কিন্তু কোথাও একটু খালি নেই। সবাই নিজ নিজ সুবিধামত শুয়ে পড়েছে আগে। মুন এসে আমাকে বলে ঘুমাতে-
মুনঃ কেনো খাটে!
মিষ্টিঃ কুত্তি! খাটে তো আমি ও জানি! কিন্তু এখন খাটইতো নাই ঘুমামু কিভাবে?
মুনঃ কেন, যেখানে ঘুমাইতাম?
মিষ্টিঃ যেখানে ঘুমাইতাম মানে?
মুনঃ কেনো তিশার ঘরে।
মিষ্টিঃ বলদি, তুই তিশার রুমে এখন ঘুমাবি। তিশার না আজকে সেকেন্ড ফুলসজ্জা হইতাছে। আর তুই ওখানে গিয়ে কি পাহারা দিবি ছাগল।
মুনঃ ও হো। তাইতো। আমিতো ভুইলাই গেছি।
মিষ্টিঃ তুইতো ভুলবিই।
মুনঃ আচ্ছা, তাইলে আমরা ঘুমামো কই?
মিষ্টিঃ ওইটা তো, আমিও ভাবতাছি। আমি না ঘুমাইতে পারলে তো আমি মইরা যামু।
মুনঃ সব রুমইতো ভরা। সিমার রুমে ঘুমাবি চল। একদিন কষ্ট করে ঘুমালে কিছু হবে না।
মিষ্টিঃ নায়ায়ায়ায়ায়ায়া (জোরে চেঁচিয়ে)!
মুনঃ এতো জোরে না করলি কেন?
মিষ্টিঃ আমি ওই সিমার সাথে ঘুমামু না।
মুনঃ কেনো প্রবলেম কি?
মিষ্টিঃ নাহ, কোন প্রবলেম নাই। কিন্তু আমি ওই সিমা টিমার রুমে যামু না।
মুনঃ সিমা সাথে প্রবলেম কি তোর? সিমা ছাড়াও তো ওখানে আরো অনেকেই আছে। চল ওখানে ঘুমিয়ে পড়ি।
মিষ্টিঃ তুই ঘুমা আমি ঘুমামু না ওই সিমার সাথে।
(কেন জানিনা সিমাকে আমার একদম সহ্য হয়না। একদম পচ্ছন্দ না ওরে আমার)।
মুনঃ আচ্ছা, চল আজকের রাতটা গল্প করে কাটিয়ে দেই। গল্প করলে রাত তাড়াতাড়ি কেটে যাবে।
মিষ্টিঃ কিহ! সারারাত গল্প কইরা কিভাবে কাটাবো?
মুনঃ চল, কিছু হবে না।
বলে মুন আমাকে নিয়ে ছাদে চলে আসে। এখানে এসে দেখি রোদ আর তিয়াষ আগেই এখানে বসে বসে গল্প করছে। আমারও ওদের দেখে কিছুটা ভালো লাগছে। আসলে এতোদিনে খাম্বাকে একটু একটু ভালো লাগছে। খাম্বাটা আমার আশে পাশে থাকলে আমার বুকের ভিতর ধুকধুকানি বেড়ে যায়। কেমন একটা অনুভূতি হয়। কি জানি এই খাম্বার হয় কিনা।
রোদের সাথে ছাদে আড্ডা
তিয়াষ আমাদের দেখে বলে,
তিয়াষঃ তোমরা এখানে এতো রাতে (অবাক হয়ে)।
মুনঃ মশা মারতে আসছি। যত্তসব। আমরা ঘুমানোর রুম পাচ্ছি না। তাই ভাবলাম এখানে গল্প করলে রাত তাড়াতাড়ি চলে যাবে।
তিয়াষঃ ওহ্। আজকেতো তিশার রুমে..
মুনঃ হুম জানি।। আর বলতে হবে না। তাই আমরা আসছি এখানে গল্প করতে। আর এসে দেখি তোমরা এখানে।
রোদঃ ঠিক আছে। তোমরা আমাদের রুমে ঘুমিয়ে পড়।
মিষ্টিঃ হুম। কিন্তু আমরা এখানে গল্প করতে আসছিলাম।
রোদঃ এখন কিসের গল্প। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড় যাও।
মিষ্টিঃ তাহলে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
তিয়াষঃ হতবাক হয়ে যায়।
মুনঃ একই অবস্থা।
মিষ্টিঃ তোমরা অবাক হচ্ছো কেনো?
তিয়াষঃ শুধু রোদের চিন্তা করছো তুমি তাই আরকি অবাক হচ্ছি। আমিও ছিলাম কিন্তু।
মিষ্টিঃ আমি কই ওনার চিন্তা করলাম। আমিতো তোমার কথাও জিজ্ঞাসা করলাম। তুমি ঘুমাবে না।
তিয়াষঃ হুম। কিন্তু তোমরা ঘুমাও যাও।
মিষ্টিঃ না থাক। আমরাও তোমাদের সাথে বসে গল্প করি।
রোদঃ না, যাও। তুমি না ঘুমিয়ে থাকতে পারো না। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাও।
মিষ্টিঃ বলছে আপনাকে। (ভ্যাংচিয়ে)
রোদঃ তুমি আবার হা করছো কেনো?
মিষ্টিঃ আপনি কি করে জানলেন আমি না ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। আমি তো আপনাকে বলিনি, হুম।
রোদঃ তোমার মতো একটা পেত্নীকে জানতে কারো সাহায্য লাগে না বুঝছো।
মিষ্টিঃ আপনি আবার আমারে অপমান করলেন?
মুনঃ উফফ, তোমরা চুপ কর। আমরা এখানে গল্প করতে আসছি। ঝগড়া করতে না। আপনাদের সমস্যা হইলে আমরা একা একাই গল্প করবো। আপনারা চলে যান।
তিয়াষঃ আমি কি বলছি আমার প্রবলেম হচ্ছে। আমি তোমাদের সাথে সাথেই আছি। আর রোদ ও।
মিষ্টির গান গাওয়া
তারপর আমরা সবাই ছাদের মাঝখানে বসে পড়ি। রোদ আর আমি, তিয়াষ আর মুন মুখোমুখি বসি। আমরা অনেক গল্প করতে থাকি।
তিয়াষঃ জানো সবাই, রোদ কিন্তু খুব ভালো গান করে।
মিষ্টিঃ কিহ্! খাম্বা গান জানে। কিভাবে সম্ভব? (আস্তে করে)
তিয়াষঃ কিছু বললা মিষ্টি।
মিষ্টিঃ আমি, কই নাতো। আমি কি বলবো। আচ্ছা খাম্বা, না সরি রোদ স্যার আপনি একটা গান শুনান তো।
রোদঃ আমাকে তুমি কি বললা?
মিষ্টিঃ কি বলছি?
রোদঃ আমাকে খাম্বা বলছো তুমি।
মিষ্টিঃ না তো। আপনাকে আমি খাম্বা বলতে যাবো কেনো?
রোদঃ তুমি বলছো আমাকে।
মিষ্টিঃ নায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
মুনঃ আচ্ছা আচ্ছা হইছে হইছে এবার গান ধরুন না প্লিজ স্যার।
রোদঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি গাইবো কিন্তু তার আগে মিষ্টিকে গাইতে হবে।
মিষ্টিঃ আমি মোটেই গান পারি না।
মুনঃ তুই মিথ্যা বলছিস কেনো, তুই খুব ভালো রবীন্দ্রসংগীত জানিস। বল না একটা।
মিষ্টিঃ মুনয়ায়ায়ায়া।
তিয়াষঃ বলো না মিষ্টি। প্লিজ একটা গান।
মিষ্টিঃ ওকে, ঠিক আছে।
তারপর গাইতে শুরু করি,
আমার পরাণ যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো!
আমার পরাণ যাহা চায়,
তোমা ছাড়া আর এ জগতে,
মোর কেহ নাই, কিছু নাইগো,
আমার পরাণ যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাইগো!
আমারো পরাণ যাহা চায়।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও। যাও সুখের ও সন্ধানে, যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি,হৃদয় মাঝে,
আরো কিছু নাহি চাই গো!
আমার পরাণ যাহা চাই।
পুরো গান শেষ করে দেখি রোদ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রোদের গান গাওয়া
মিষ্টিঃ এহেম… এহেম…এবার কিন্তু আপনি গান গাইবেন স্যার।
তিয়াষঃ মিষ্টি তুমিতো খুব সুন্দর গান গাইতে পারো।
মুনঃ বান্ধুপিটা আমার।
তিয়াষঃ হুম। দাঁড়াও আমার ভাইও খুব ভালো গান গাইতে পারে। এক মিনিট আমি আমার গিটারটা নিয়ে আসছি। বলে তিয়াষ নিচে গিটার আনতে চলে যায়।
গিটার আনার পর রোদ গাওয়া শুরু করে,
আমি এমন একটা তুমি চাই,
এমন একটা তুমি চাই।
যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
আমি এমন একটা তুমি চাই
এমন একটা তুমি চাই
যে তুমিতে আমি ছাড়া অন্য কেউ নাই।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
তুমি একবার বলো যদি,
আমি পাড়ি দিবো খরস্রোতা নদী।
ভালোবাসা দেবো পুরোটা,
পুরো গানটাই রোদ মিষ্টির দিকে তাকিয়ে গেয়েছিলো। মিষ্টি রোদের মুখে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়েই গেছে।
রোদের গান শেষ করে রোদ মিষ্টিকে নিয়ে ওর রুমে দিয়ে আসতে গেলো।
অন্যদিকে মুন আর তিয়াষ, চলবে…
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৫ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প