মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১২ | স্যারের সাথে প্রেম: গত পর্বেও দেখেছি আমরা রোদ আর মিষ্টির মাঝে একটা না বলা মিষ্টি প্রেমের লুকোচুরি। রোদ যেন পিছুই ছাড়ছে না এই পাগলি মেয়েটার। একের পর এক শাসন করেই যাচ্ছে সে। আজ তবে দেখা যাক তাদের দুজনের মনের হাবভাব কোথায় গিয়ে ঠেকে?
রোদর শাসন
তারপর তিশার বিয়েটা হয়ে যায়। তিশাকে বিদায় দেওয়ার সময় আমিও যেতে গেলে আমাকে রোদ টেনে ওর সাথে নিয়ে গিয়ে বলে,
রোদঃ তুমি কই যাচ্ছো?
মিষ্টিঃ কই যাচ্ছি মানে? আমি তিশার সাথে ওর শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।
রোদঃ কেনো?
মিষ্টিঃ কেনো মানে? তিশার শ্বশুর বাড়ি আর আমি যাবো না।
রোদঃ ওইটা তিশার শ্বশুরবাড়ি তোমার না। তাই ওখানে তোমার যাওয়ার কোন মানেই হয় না।
মিষ্টিঃ আপনি বলার কে, হ্যা? সারাক্ষণ আমি কি করি না করি ওইগুলাতেই পইরা থাকেন। আমার সব ব্যাপারে আপনার অনুমতি নিতে হবে কেনো? আপনি যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে কেনো হ্যা কেনো?
এবার রোদ একটু রেগে গেল।
মিষ্টিঃ অমন করে তাকিয়ে আছেন কেনো?
রোদঃ আর একটা কথা ও বলবা না। তুমি কাল যাবে। আজকে যেনো না দেখি আমার কথা আর হেরফের হয়। তোমাকে ওখানে যেতে।
এই কথা বলে চলে যায়।
মিষ্টিঃ বান্দর ছেঁড়া। আমি গেলে তোর কি? তোর এতো কামড়ায় কেন? তুই যা না তোরে কি আমি না করছিলাম। তুই আমারে যাইতে দিলিনা কেনো। আচ্ছা, আমিতো যেতেই পারি। উনি বললেই বা কি, আর না বললেই কি। আমি যাবোই। (বিড়বিড় করে)
বলে দুই পা আগাতেই,
মিষ্টিঃ নাহ্, থাক। খাম্বায় যখন বলছে তখন না হয় নাই যাই। দূর ভালো লাগে না আর। কথা শুনতেও ইচ্ছা করছে না। আবার না শুনে থাকতেও ভালো লাগছে না।
বলতে বলতে তিশার কাছে গিয়ে ওকে বিদায় দিয়ে দেই। আমি মুনকেও যাইতে দেই নাই ইচ্ছা করে। আমি যাইতে পারিনাই ও যাইবো কেনো? তাই তিয়াষরে আর কতোগুলা কাজিনরে পাঠাই দিসি।
মুনের সাথে মিষ্টি
রুমে এসে,
মুনঃ কুত্তি, বিলাই, বান্দরনি তোর লইগা আমি আজকে যাইতে পারি নাই। তুই, তুই, তুই আমারে আটকাইয়া দিছোস।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শুয়ে আছি। যেন আমি কিছু শুনছিই না।
মুনঃ ওই, কিরে! তোর সাথে কথা কইতাছি আমি, তুই কোন দিকে মন দিয়ে আছোস। হ্যা।
মিষ্টিঃ ওহ্, আমাকে বলছিস।
মুনঃ নাহ, তোর নানিরে কইতাছিলাম। কোন দিকে আছিলি তুই?
মিষ্টিঃ আমি এইদিকেই আছিলাম। খালি তোর কথায় ছিলাম না আরকি!
মুনঃ তুই আমারে যাইতে দিলি না কেন?
মিষ্টিঃ সিম্পল, আমি যাইতে পারিনাই তাই তোরেও যাইতে দেই নাই।
মুনঃ তোরে যাইতে কেডা না করছিলো যে তুই আমারে আটকাইয়া দিলি।
মিষ্টিঃ কে না করতে পারে, তুই জানিস না।
মুনঃ কে মা, নে রোদ স্যার।
মিষ্টিঃ ইয়েস, বেইবি, ইয়েস। ওই খাম্বাটাই।
মুনঃ স্যার বললে বলুক। কিন্তু তুই থাকলি কেন? তুই যাইতি।
মিষ্টিঃ আমি যাইতাম। কিন্তু কি জানি কেনো গেলাম না।
মুনঃ হতভম্ভ হয়ে গেল।
মিষ্টিঃ সারাদিন তো তোমারে পাওয়াই যায় না। ব্যাপার কি হুম! কই থাকো সারাদিন! (মজা করে)
মুনঃ কই থাকি মানে! কই আবার এইখানেই ছিলাম।
মিষ্টিঃ তাই বুঝি। তুমি কি ভাবছো আমি খবর রাখি না। হুম।
মুনঃ খ..বর মানে কিসের খবরের কথা বলছিস।
মিষ্টিঃ তলে তলে যা যা করো সবই আমি জানি…বুঝছো।
মুনঃ বলবিতো কি করছি? (উত্তেজিত হয়ে)
মিষ্টিঃ বলবো।
মুনঃ বল।
মিষ্টিঃ বলি।
মুনঃ আরে এ বল না।
মিষ্টিঃ আচ্ছা তাহলে বলেই দেই। কি বল?
মুনঃ বল না। (দাতে দাত চেপে) আমি আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারছি না। বল এবার।
মিষ্টিঃ আমি জানি তুই কিসের জন্য যেতে চাইছিলি । থাক আর কমু না।
মুনঃ মিষ্টিইইইইই! বাকিটা বলনা প্লিজ?
মিষ্টিঃ ঘুমা তুই। আমার ঘুম পাইছে বলে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরি।
মুনঃ বলনা কি জানস? ওই বান্ধুপি বল না।
মিষ্টিঃ ইসসস!
মুনঃ দূর বান্দরনি ঘুমায় গেছে। কি জানে আমার নামে ও কি জানে?
ভাবতে ভাবতে মুনও ঘুম।
রোদ ও মিষ্টির মাঝে সিমা
পরদিন..
সকলে নাস্তা করে তিশার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য সকলেই প্রস্তুত হচ্ছি। বিকালেই সবাই রওনা দিয়ে দিবো। তাই বাড়ির ছোটরা এক গাড়িতে আর বড়রা অন্যসব গাড়িতে।
আমার রেডি হতে হতে দেরি হয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি এসে দেখি কোনো সিট খালি নাই। শুধু রোদের পাশে ছাড়া। দেইখা মেজাজটা ১৮০ ডিগ্রি গরম হয়ে গেলো। খাম্বায় আবার নিশ্চয় আমার সাথে ঝগড়া করবো। কেমনডা লাগে?
মিষ্টিঃ ওই মুন তুই এখানে বস। আমি তোর সিটে বসমু। আমি এখানে বসমু না।
মুনঃ তুই ওই সিটেই বস। আমি এখান থেকে উঠতে পারমু না।
মিষ্টিঃ মুন.. ভালোই ভালোই বলছি উঠ।
মুনঃ পারমু না।
রোদঃ উফফ মিষ্টি। এখানে বসো তুমি।
মিষ্টিঃ নাহ, বসবো না।
রোদঃ বসো বলছি। (ধমক দিয়ে)
আমি ধমক খেয়ে যেই খাম্বার পাশে বসতে যামু ওমনি কই থেকে জানি সিমা এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে রোদের পাশে বসে পড়ে। ব্যস, পুরা গাড়ি হাউসফুল। আমার জন্য কোন সিট খালি নাই। আর এদিকে রোদ আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আর আমি অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছি।
তখনই মামা এসে বলে কিরে মিষ্টি মা। তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? উঠ।
মিষ্টিঃ মামা গাড়িতে জায়গা নাই।
মামাঃ কি বলিস, জায়গা না থাকলে যাবি কিভাবে? আমাদের গাড়িও তো ভরে গেছে।
মিষ্টিঃ আমি যামু না। তোমরা যাও। আমি মামির সাথে এখানে থাকবো।
মামাঃ তুই যাবি না। তা কি করে হয়। রোদ বাবা তুই যদি কিছু মনে না করিস তাহলে তুই মিষ্টিকে নিয়ে যেতে পারবি?
রোদ যেন এই কথাটার জন্যই ওয়েট করছিলো। তবুও কিছু বুঝতে না দিয়ে, বলে।
রোদঃ আমি, ফুপ্পা আমি ওকে কিভাবে নিয়ে যাবো? আমিতো এইখানে।
মিষ্টিঃ মামা আমি যাবো না।
মামাঃ রোদ বাবা, প্লিজ। ওকে নিয়ে যাও না, বাবা। ও একা একা এখানে থাকবে, সেটা কি ভালো হবে!
রোদঃ ঠিক আছে ফুপ্পা। তুমি যখন বলছো তখন আমি ওকে নিয়ে যাবো।
মামাঃ মিষ্টি তুই রোদের সাথে যাবি ব্যস। আর কোন কথা না। রোদ তোকে নিয়ে যাচ্ছে। আর তুইও রোদের সাথে যাচ্ছিস।
বলে চলে যায়। আর আমি ও মন খারাপ করে রোদের সাথে যাই।
তারপর রোদ…চলবে…
পরের পর্ব- মিষ্টি প্রেমের গল্প – পর্ব ১৩ | স্যারের সাথে প্রেম
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প