তোমাতে আমি পূর্ণ – প্রথম প্রেমের গল্প: একটা ছেলে এতো সুন্দর হতে পারে কিভাবে? চুল গুলো খুব সুন্দর করে রেখেছে মাথায় সাজিয়ে, ঠোঁটজোড়া দুটু একবারে লাল, আমি কি প্রথম দেখাতেই ছেলেটিকে কল্পনায় এঁকে নিলাম।
পার্ট ১
একটু পরেই আকাশ অন্ধকার হবে, অন্ধকারে আবদ্ধ আকাশ ফেটে চাঁদটা উঁকি দিবে।
জানিনা আর কতক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজতে পারবো।
তারপরেও মূর্তির মতো করে দাঁড়িয়ে আছি ঝুম ধরা ঝাপসা বৃষ্টিতে।
ভয় হচ্ছে আম্মু কবে জানি দেখে ফেলেন বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য।
তারপরেও বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্ত উপভোগ করতে হবে আমায়।
চোখ বেয়ে পরা প্রতি ফোটা পানিও বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।
হঠাৎ বাসার গেইট দিয়ে আব্বু ঢুকলেন।
আমি ভয়ে দুই পা পিছনে সরে গেলাম।
আব্বু হয়তো খুব রাগ দেখাবেন এখন।
আব্বু আমায় দেখে নিজের মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরিয়ে নিলেন,
কিছুটা না অনেকটাই অবাক হলাম।
আব্বু বললেন।
আব্বুঃ হেমন্তি মা এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন?
আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম।
আমিঃ আব্বু বৃষ্টি দেখলে আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ পতঙ্গ জেগে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে, সরি আব্বু আর ভিজবো না। (নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম)
আব্বু হেসে বললেন।
আব্বুঃ আরে পাগলী এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?
আমিও তো তোর সাথে বৃষ্টিতে ভিজতেছি।
আমি বলেছি, এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কি আর বৃষ্টি উপভোগ করা যায়, তুই নিজেই বল?
আমিঃ তাহলে কিভাবে ভিজবো?
আব্বুঃ শুন কিভাবে ভিজতে হয়!
যখন আকাশ ফেটে ঝুমধারা বৃষ্টি মাটিতে পরতে শুরু করে, তখন একজায়গাতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে নেই।
এতে বৃষ্টিতে ভেজার অনুভূতি আসে না মনে,
প্রতি ২০ সেকেন্ড পরপর জায়গা পালটাবি,
আর হ্যাঁ বৃষ্টি দু’এক ফোটা পানি যদি মুখের ভিতর দিয়ে নিজের ভিতরে না যায় তাহলে বৃষ্টিতে ভেজাটা অহেতুক।
আর হাত দুটো পাখির ডানার মতো করে বৃষ্টিতে ভিজবি,
তাহলে বৃষ্টিতে ভেজার অনুভূতি টা আ,
আমি কান্নাভরা চোখে বললাম।
আমিঃ আব্বু?
হয়তো আব্বু এতক্ষণ ঠিকভাবেই সব বলছিলেন।
কিন্তু নিজের অজান্তেই আমায় কষ্ট দিয়ে ফেলছেন।
আব্বুঃ হেমন্তি মা, আমি সত্যিই আমি দুঃখিত, আমার মনেই ছিলো না।
আব্বুর দিকে তাকিয়ে, চোখের পানি মুছে দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে গেলাম।
আব্বু পিছনে অনেক ডেকেছেন।
কিন্তু আমার কানে আসেনি আব্বুর কণ্ঠস্বর।
রুমের ভিতর এসে চুপসে মাটির মধ্যে বসে পরলাম।
কেন আমার সাথে এমন হলো?
ভেজা চোখ দুটো মেলে উপরের ঝুলন্ত সিলিং ফ্যানের দিকে তাকালাম,
ঝুলে যাবো একদিন এই সিলিং ফ্যানে, আর সহ্য হচ্ছে না আমার।
হাজারো ধর্ষিতা মেয়ে মুক্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারে।
কিন্তু আমি তো ধর্ষিতা নই।
আমার চেয়ে ধর্ষিতারাও ভালো।
চোখ বেয়ে প্রতিটা পানি রুমের মেঝেতে পরছে।
২৬ বছর বয়স এখনো বিয়ের স্বাদ আমি পাইনি।
পাবোই বা কি,
কারো আসার আওয়াজ শুনে সামনে তাকালাম।
আম্মু আব্বু আর ফুপু আসছেন আমার রুমে।
আব্বুর চোখে পানি, আব্বু বললেন।
আব্বুঃ হেমন্তি মা আমায় ক্ষমা করে দে?
সত্যিই আমি আমার অজান্তে তোকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি।
আমিঃ আব্বু আমি কষ্ট পাই নি।
এটা আমার নিয়তি।
আমার চেয়ে বস্তির মেয়েরাও ভালো।
আমার চেয়ে ধর্ষিতা মেয়েরাও ভালো।
শুধু ভালো নেই
(চোখ থেকে ঝর্ণাধারা নামছে।
আম্মু আব্বু চুপ হয়ে আছেন।
কি বলবেন ওরা)
আব্বুঃ মা এসব বলতে নেই।
তুই অনেক ভালো আছিস।
প্লিজ লক্ষী মা আমার মন খারাপ করে থাকিস না।
আম্মুঃ হেমন্তি যা ভেজা কাপড় পালটে আয়?
আম্মুর দিকে অসহায় চোখে তাকালাম।
আমার জন্য সবার চোখে পানি।
কেন বেঁচে আছি আমি?
শুধু মাবাবার চোখের পানি জরানোর জন্য?
আম্মু এভাবে তাকাতে দেখে আবার বললেন।
আম্মুঃ যা মা, ঠাণ্ডা লেগে যাবে!
আম্মুর দিকে তাকিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে।
আব্বুঃ আমার জন্য আবার মেয়েটার মন খারাপ হয়ে গেলো।
ফুপুঃ এভাবে বলিস না রে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মুঃ কবে হবে?
ফুপু আম্মুর দিকে তাকালেন।
এই কবে কথাটার উত্তর কারো কাছে নাই।
থাকবেই বা কি করে?
আব্বুঃ আপা দেখছো, আমার হেমন্তি মা’র রূপ আগের চেয়ে আরো বেশি সুন্দর হয়েছে।
ওয়াশরুম থেকে কথাগুলো শুনছিলাম।
আব্বুর কথা শুনে আয়নার দিকে তাকালাম।
সত্যিই আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছি।
এই রূপটাই আমার বড় শত্রু।
আর কিছু ভাবতে পারছি না। চোখেমুখে পানিরছিটা দিলাম।
ফুপুঃ হুম আমার মা টা পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরী রমণী।
আম্মুঃ মাগরিবের সময় হয়ে যাচ্ছে, হেমন্তিকে একটু একা থাকতে দাও।
আব্বুঃ হুম।
আম্মুঃ আরিফা, ওই আরিফা আর কতো ঘুমাবি, মাগরিব এর আজান দিয়ে দিলো তো, উঠ নামাজ পড়বি।
আরিফা ঘুম ঘুম চোখে তাকালো,
আরিফাঃ আম্মু এইতো উঠলাম।
আপু কি করে?
আম্মুঃ এইতো শুয়েছে, তুই জ্বালাবি না আজ তোর আপুকে, একটু একা থাকতে দে।
আরিফাঃ ওক্কে আম্মু, আজ তোমার পিচ্চি মেয়ে একবারে চুপ থাকবে।
আম্মুঃ মনে থাকবে তো?
আরিফাঃ হুম,
আম্মুঃ যা নামাজ পড়ে, ক্লাসের পড়া পড়তে বস?
আরিফা আর কিছু না বলে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ঘুম ঘুম চোখে তাকালাম, ঘড়ি ৭টা বেজে গেছে।
শুয়া থেকে উঠে, আরিফার রুমের দিকে গেলাম।
আমিঃ কি করছিস রে?
আরিফাঃ ওহ আপু! আসো বসো,
আমিঃ এতো ভালো হয়ে গেলো কিভাবে আমার পিচ্চি বোনটা?
আরিফাঃ আম্মু বলছে আজ কোনো মজা না করতে।
আরিফার দিকে তাকালাম, বয়স মাত্র ১৮ ইন্টার পরীক্ষা দিবে আরিফা, এখনি অনেক বুঝদার।
আরিফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।
রুমে এসে দেখলাম, ফোনটা ভাজতেছে।
হাতে নিয়ে দেখলাম অন্তরা ফোন দিয়েছে।
আমিঃ কেমন আছিস?
অন্তরাঃ অনেকক্ষণ ধরে কল দিতেছি, কোথায় তুই?
আমিঃ আরিফার রুমে ছিলাম।
বল কি জন্য ফোন দিয়েছিস?
অন্তরাঃ কাল তোদের বাসায় আসবো, ঘুরতে যাবো তোকে নিয়ে।
আমিঃ তুই জানিস তো এই বাহিরের পৃথিবী আমার জন্য না।
আমি এই চার দেয়ালে ভালো আছি।
অন্তরাঃ আচ্ছা বলতো শেষ কবে বাহিরে গিয়েছিলি?
আমিঃ কেলেন্ডার দেখতে হবে,
অন্তরাঃ আমি কিছু শুনতে চাই না, কালকে আমি আসছি।
আমিঃ হুম,
অন্তরাঃ রাখছি আমি,
শুয়ে আছি,
জীবনটা এমন কেন?
আমার জীবন জোনাকিপোকা এর মতো,
আলো আছে, কিন্তু আলোর কোনো দাম নাই।
নাকি আছে?
কে দিবে এসবের উত্তর?
~খণ্ড মন, অখণ্ডিত স্বপ্ন,
কেন এমন? ভেঙে দেয় সুখের জীবন।
আরিফাঃ আপু আসবো?
ভাবনার ডিকশনারি থেকে বের হয়ে আসলাম।
আমিঃ আয়,
আরিফাঃ আপু খাবার খাবে আসো?
আমিঃ যা আসছি,
আরিফাঃ তোমার চোখে পানি কেন আপু?
আরিফা আমার পাশে বসে, আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
আমি ওর দিকে তাকালাম,
আমিঃ এ কিছু না, তুই যা, আমি আসছি।
আরিফা আমার দিকে তাকিয়ে নিচে চলে যায়।
খাবার খাচ্ছিলাম।
আব্বুঃ হেমন্তি মা কাল আরিফার জন্য বোরখা কিনতে যাবো।
তোর কিছু লাগলে বল?
আমিঃ না আব্বু কিছু লাগবে না।
আম্মুঃ বাসার মালিক এসেছিলো আজ।
খাবার থেকে আম্মুর কথায় মন দিলাম।
আব্বুঃ কেন এসেছিলো?
আমি তো দুইদিন আগে সব ভাড়া দিয়ে এসেছি।
আম্মু নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন,
আম্মুঃ উনি নাকি বাসা অন্য কাউকে দিবেন।
এই কথাই বলতে আসছিলেন।
কাল বিকেলের ভিতর আমাদের এই বাসা ছাড়তে হবে।
আরিফাঃ কাল বিকেল?
আম্মু এই বাসাটা খুব ভালো ছিলো।
ফুপুঃ এবার না হয় আমার বাসায় আয় তোরা, আর কতো থাকবি ভাড়াটে বাসায়।
সবাই চুপ হয়ে আছে,
বাসা ওয়ালা এতো খারাপ কেন।
সত্যিই বাসাটা খুব ভালো ছিলো।
কিন্তু?
ফুপু কেউ কিছু বলছে না দেখে আবার বললেন,
ফুপুঃ সাজেদুল কিছু বলছিস না কেন?
আব্বুঃ আপা তোমার বাসায় কয়দিন থাকবো বলো?
ফুপুঃ সারাজীবন থাকবি, আমার বাসাটা তো খালি পরে আছে।
ছেলেটা আজ দুই বছর ধরে লন্ডন গিয়ে বসে আছে।
কেন দেশে কি ভালো ভার্সিটি নেই?
হেসে দিলাম আমি, ভাইয়াকে ফুপু সারাক্ষণ বকে, আর আমি সব ভাইয়াকে বলে দেই।
ফুপুঃ হাসবি না বলে দিলাম,
আমিঃ হুম হাসবো না,
তারপরেও মুখটিপে হাসছি।
আব্বুঃ যাও সবাই খাবার খেয়ে তৈরি হয়ে নাও?
আম্মুঃ এতো রাতে,
আব্বুঃ না, সব ঠিক করে রাখতে বলছি, সকালে আপার বাসায় চলে যাবো।
ফুপুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
খাবার খেয়ে রুমে বসে আছি।
ভাইয়াও নেটে নাই, ভাইয়ার সাথে একটা মিথ্যে কথা বলেছি, ভাইয়া যখন সত্য কথা জানবে তখন কি হবে?
ভাইয়া যখন জানবেন এই দুই বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে, তখন কি করবেন?
যখন জানবেন আমরা সবাই উনার কাছ থেকে অনেক বড় সত্য কথা লুকিয়ে রেখেছি,
ভাবতে পারছি না, কষ্ট হচ্ছে খুব,
আমার রাগী ভাইটা কেন দেশে নাই।
তাই তো আমার জীবনে এমন কালো মেঘ আসলো।
এসব ভাবছি আর ডান চোখের পানি নাক বেয়ে বাম চোখের পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।
সকালে,
বাসার বেলকনিতে বসে আছি, কিছুক্ষণ পর ফুপুর বাসায় চলে যাবো।
আর বসবো না এই বেলকনিতে।
ফোন ভাজতেছে।
অন্তরা কল দিয়েছে,
অন্তরাঃ তৈরি হয়ে নে, আমি কিছুক্ষণ পর আসছি।
আমিঃ না রে আজ পারবো না।
অন্তরাঃ প্লিজ বোন না করিস না, তোর দুলাভাইর কাছ থেকে অনেক কষ্টে পারমিশন নিয়েছি।
আমি নীরব হয়ে গেলাম।
চোখজোড়া আবার বৃষ্টি নামিয়ে দিলো।
অন্তরা আর আমার বয়স একই, কিন্তু তার জীবন অনেক সুন্দর আর আমার?
তার বর আছে, মন উজাড় করে ভালোবাসে তাকে।
কিন্তু আমি?
অপূর্ণ রয়ে গেলাম।
~ পূর্ণতা ছোঁয়ার অপেক্ষায় আমার মন,
কবে আসবে আমার সে প্রিয়জন।
অন্তরাঃ কথা বলছিস না কেন, এই তোর অভ্যাস ভালো না।
হঠাৎ করেই চিন্তায় চলে যাস।
আমিঃ একটু পর ফুপুর বাসায় চলে যাবো।
আর এই বাসায় আজকেই শেষ দিন রে।
অন্তরাঃ কেন?
আমি সব বললাম,
অন্তরাঃ তাহলে কাল যাবি আমার সাথে ঘুরতে।
আমিঃ কোথায় যাবি?
অন্তরাঃ মুক্ত পাখি হয়ে আকাশে উড়বো,
আমিঃ আমি তো মুক্ত না!
অন্তরাঃ থাপ্পড় দিবো?
আমিঃ একবারে মেরে ফেলতে পারিস।
অন্তরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোন কেটে দিলাম।
গাড়িতে বসে আছি, প্রায় ৬ মাস পর হবে খুলা আকাশের নিচে বের হলাম।
পলকহীন ভাবে চেয়ে আছি রাস্তার গাড়ি গুলোর দিকে।
আমার মুক্ত জীবন কেন এমন হলো?
চোখের কুণে পানি আসলো,
ফুপুর বাসাটা অনেক বড়, অনেক দিন ধরে বন্ধ ছিলো, তাই ধুলোবালি জমে গেছে বাসার প্রতিটা জিনিসে।
আমি আর অন্তরা বসে আছি একটা রেস্টুরেন্টে,
খুব কষ্ট হচ্ছে, নিয়তি আমার ছিলো না।
কেন এমন হলো আয়ার সাথে?
অন্তরাঃ হেমন্তি এবার একটু হাসিখুশি থাক, এভাবে মনমরা হয়ে থাকিস না প্লিজ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিলাম।
আজ নিজেকে খুব একা লাগছ,
বুঝতে পারছি, আমারো জীবনে কোনো রমণীর আগমন দরকার।
(কথা গুলো রূপক বললো।)
ইশান ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
ইশানঃ হঠাৎ প্রেমের হাওয়া লাগলো তোর মনে?
রূপকঃ কাকের মতো কা কা করিস না তো?
ইশানঃ কোনো রাগি ছেলের মুখে প্রেম শব্দের কথা শুনলে কাকও গান গাইতে শুরু করে দিবে।
রূপকঃ কেন রাগি মানুষের মনে কি প্রেম শব্দ নাই?
ইশানঃ সেটা তুই ভালোই জানিস?
রূপকঃ আমায় আজ কেমন জানি ময়ূর মনে হচ্ছে।
ভাবছি
~ ময়ূরের মতো আয়োজন করে, নিজের প্রিয়জন খুঁজি।
প্রেমের হাওয়ায় নিজেকে হারিয়ে,
প্রিয়জনের ছোঁয়ায় নিজেকে হারাতে।
ইশানঃ তাহলে আমি আয়োজন করি, তুই সেখান থেকে প্রিয়জন খুঁজে নিবি।
রূপকঃ থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো তোর,
ইশান চুপ হয়ে যায়।
রূপকঃ চল বাসায় যাই?
ইশানঃ মিষ্টি নিতে হবে,
রূপকঃ কেন?
ইশানঃ এই যে তোর মনে প্রেম জেগেছে, এই খবর শুনলে বাসার সবাই খুব খুশি হবে।
তখন আর কষ্ট করে দুখানে যেতে হবে মিষ্টি কিনতে।
রূপকঃ টাকলু হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে তোর তাই না।
চল বাসায় যাই।
ইশানঃ বড় আম্মুকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতেছি, অপেক্ষা কর?
রূপকঃ আমি তোর পরে বিয়ে করবো, আগে ছোট আম্মুকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করবো,
ইশানঃ দেখা যাবে কার শানাই আগে বাজে!
রূপকঃ হুম
এবার চলতো বাসায় যাই,
আম্মু যে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলো, সেটা তো করতেই পারিনি।
ইশানঃ বকবে তো আমায়, তোকে কিছু বলবে না।
রূপক হাসলো ইশানের কথায়।
সে নিজেই জানে না কেন সবাই তাকে এতো ভয় পায়।
আমিঃ এবার চল বাসায় যেতে হবে?
অন্তরাঃ মাত্র এক ঘণ্টা হলো, তুই এভাবে বদলে গেলি হেমন্তি?
যে হেমন্তি আগে বলতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো মজা, মাস্তি, সেই হেমন্তি আজ এভাবে?
আমিঃ সময় বড় নিষ্ঠুর রে,
সময় কখন কিভাবে বদলে দেয় মানুষকে সেটা আজো কেউ জানে না।
জানিস পৃথিবীতে সব চেয়ে কষ্টদায়ক শব্দ হলো পরিবর্তন।
এই পরিবর্তন শব্দটা অনেক মানুষকে কাঁদায়।
এই দেখ আমায় কাঁদাচ্ছে।
দুই বছর আগেও আমি ছিলাম তোদের, ফ্যামিলির, চোখের মণি।
আর আজ হয়তো সবাই আমায় সাহায্য করছে।
কিন্তু আমি এই সাহায্য চাই না অন্তরা।
অন্তরাঃ এভাবে বলিস না, আমায় এই কথা বলেছিস ভালো, আমি কিছুই মনে করিনি।
কিন্তু তোর আম্মু আব্বু কে ভুলেও বলবি না তারা তোকে সাহায্য করতেছে।
মনে রাখিস তুই আর আরিফা হলি তোর মাবাবার পৃথিবী।
আমিঃ হুম,
এবার সত্যি সত্যি বাসায় যেতে হবে রে।
চল,
অন্তরাঃ আচ্ছা,
তুই গয়ে গাড়িতে বস আমি দুটু আইসক্রিম নিয়ে আসছি।
আমিঃ আচ্ছা, আমার জন্য আইসক্রিম না এনে চকলেট আনবি?
অন্তরাঃ আচ্ছা,
আমি গাড়িতে বসে আছি, রাস্তা মানুষেরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিলো যে আমি এলিয়েন।
ওরা কি আমার রূপের দিকে তাকাচ্ছিলো?
কিন্তু আমার চোখজোড়া ছাড়াতো আর কিছুই দেখছিলো না।
বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
হঠাৎ রাস্তার এক পাশে দুজনকে দেখে আমার শরীর কেঁপে উঠলো।
চোখ বেয়ে পানি পরছে।
অন্তরা আসলো, আমার এমন অবস্থা দেখে অন্তরা ভয় পেয়ে গেলো,
অন্তরাঃ কি হয়েছে হেমন্তি?
আমি কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা।
চোখের সামনে দুই বছর আগের সব স্মৃতি গুলো ভেসে উঠলো।
অন্তরা আবার জিজ্ঞেস করল,
অন্তরাঃ এবাভে কান্না করছিস কেন?
ভয় পেয়েছিস
আমিঃ ও আবার এসেছে অন্তরা, ও আমায় বাঁচতে দিবে না।
অন্তরাঃ ও মানে?
আমিঃ রাস্তার পাশে সবুজ শার্ট পড়া ও।
অন্তরা ভালোভাবে দেখে, তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করে।
আর খুব স্পীডে গাড়ি চালিয়ে বাসার সামনে চলে আসে।
১ঘণ্টার রাস্তা ৪০ মিনিটে চলে আসে।
অন্তরা আমায় ধরে ধরে গাড়ি থেকে নামালো।
হাটার শক্তি টুকু পাচ্ছিনা।
তাই অন্তরা আমায় ধরে ধরে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়।
এখনো ভয়ে চুপসে আছি।
বাসায় ঢুকবার পর দেখছি আম্মু আরিফাকে বকতেছেন।
এখন আমার এই অবস্থা দেখে না জানি কি করেন।
আরিফা চুপ হয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
অন্তরার কণ্ঠ শুনে আরিফা আর আম্মু ছুটে আসেন।
আম্মুঃ কি হয়েছে হেমন্তির?
আমিঃ কিছু না আম্মু, কেন জানি মাথা ঘোরাচ্ছে।
আম্মু আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।
আমি আর কিছু বলিনি।
আরিফা আমায় ধরে ধরে আমার রুমে নিয়ে গেল।
আমি এখন ভাইয়ার রুমেই থাকি।
এই রুমটাই আমার ভালো লাগে, ভাইয়া দেশে থাকতে কতো ঝগড়াই না হতো এই রুম নিয়ে।
সব জানি কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
অন্তরাঃ আন্টি আমায় যেতে হবে এখন?
আম্মুঃ হেমন্তি কিছু লোকাচ্ছে আমার কাছ থেকে তাই না?
অন্তরা মাথা নাচিয়ে হ্যাঁ জবাব দিলো।
অন্তরা চলে গেলো বাসায়।
আমিঃ আম্মু তোকে বকছিলো কেন?
কি দুষ্টুমি করেছিস।
আরিফাঃ আমি কিছু করিনি?
পাশের বাসার এক আন্টি আসছিলো,
উনার ছেলের জন্য তোমায় নিয়ে যেতে, বউ করে,
কিন্তু আম্মু তোমার বিষয়ে বললে সে নাক ছিটকিয়ে চলে যায়।
কিন্তু আমি তখন ওই মহিলাকে কথা শুনিয়েছিলাম।
তাই আম্মু বকছিলেন।
আরিফার কথা শুনে মুহূর্তেই চোখ বেয়ে পানিধারা নামলো।
আমার জন্য আমার ফ্যামিলি কথা শুনতেছে।
আল্লাহ আমায় কিসের শাস্তি দিচ্ছেন?
আরিফাকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিঃ আমায় কে বিয়ে করবে বল, আমি যে আট দশটা মেয়ের মতো না রে।
আরিফা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
আরিফাঃ আপু তোমার জন্য আল্লাহ রাজকুমার পাঠাবেন।
দেখবে সে তোমায় অনেক ভালোবাসবে।
আরিফার দিকে তাকালাম।
শুকনো হাসি দিয়ে আবার পাগলীটাকে জড়িয়ে ধরলাম।
এখনো বোরখা শরীলে রয়েছে, সাথে চাদরও।
আরিফা কি আমায় মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছে।
সত্যিই কি আমার জন্য কেউ আসবে।
কেউ কি ভালোবাসবে মন উজাড় করে।
করবে কি আপন নিজের সবার প্রিয়জন থেকে আমাকে।
নাকি বেলিফুল হয়ে জন্ম নিয়েছি, কোনো এক শেষ রাতে ঝরে যাবো নিমিষে।
আবারো উপরের ঝুলন্ত সিলিং ফ্যানের দিকে তাকালাম।
সত্যিই কি এই সিলিং ফ্যান আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
নাকি রাজকুমার?
চোখের পানি আরিফার কাঁধে পড়লো।
আরিফার কথা কি কখনো সত্য হবে?
পার্ট ২
ছাদে বসে আছি, হাতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর রচিত উপন্যাস মৃণালিনী, আজ দু’তিন দিনে মাত্র ১৫ পৃষ্ঠা পড়েছি। মন খারাপের সময় কিছুই ভালো লাগে না। এই মন খারাপের আবছা ছায়া আমায় তার রঙে রাঙিয়ে নিয়েছে। আরিফা আপু আপু ডাকে ছাদে আসলো, আমি তড়িঘড়ি করে চোখের পানি মুছে নিলাম। চোখে পানি দেখলে ১০১টা প্রশ্ন করে বসবে।
আমিঃ চিৎকার করছিস কেন এভাবে?
আরিফাঃ আমি তোমার সারা বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজেও পেলাম না, আর তুমি এখানে।
আমিঃ কেন ডাকছিস এভাবে?
আরিফাঃ আমার সাথে মার্কেটে যাবে চলো?
আমিঃ আমি যাবো?
আরিফাঃ হুম তুমি যাবে, যাও তৈরি হয়ে নাও।
আর কিছু বললাম না, বললেও সে শুনবে না। কিন্তু আমার যে ভালো লাগে না বাহিরের পৃথিবী তারপরেও কেন আমায় বাহিরের পৃথিবী টানে? রুমে এসে বোরখা পড়ে নিলাম। সাথে চাদর নিলাম।
ফুপুঃ হেমন্তি মা এই গরমে চাদর কেন? মুক্ত হয়ে চলাফেরা কর মা। লোকে কি বললো, সে দিকে কেন চাইবি। তুই তোর মতো থাকবি।
~ বৃত্ত পৃথিবী, কটূক্ত কথা মানুষের স্বভাব,
তুই নৃত্য হেমন্তি, নতুন ভাবে উপস্থাপন করবি সবার জবাব।
ফুপুর কথা গুলো শুনে ফুপুর দিকে তাকালাম।
আমিঃ বলা সহজ ফুপু, কিন্তু বাস্তবে তা খুব কঠিন। স্বপ্ন সবার আকাশ ছোঁয়া, কখনো জেনেছো কি, পেড়েছে কি ছুঁতে? ওই নীল আকাশ!
ফুপু আর কিছু বললেন না। কী বলবেন ফুপু?
আরিফাঃ আপু তুমি বোরখা কিনবে কি?
আমিঃ না’রে আমার লাগবে না।
আরিফাঃ আপু বোরখা কিনার পর ফুচকা খাবো, প্লিজ প্লিজ?
আমিঃ আচ্ছা,
আমি আর আরিফা বোরখা কিনলাম। পিচ্চিটা আমার জন্যেও কিনেছে। সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। সবার চোখে আমি এলিয়েন।
আরিফাঃ আপু আসো ফুচকা খাবো।
আমিঃ চল,
রূপকঃ
~চল চল দুজনে, মিশিবো ওতি গোপনে,
ততো আপন মনে,
রাঙাবো একে অন্যে দুজনকে সাচ্ছন্ধে।
ওই সবুজ ঘেরা পাহাড়ে,
হারাবো দুজনে,
নৃত্য নতুন প্রকৃতির নিস্তব্ধ বর্ণে।
আসবে কভু সে?
বলবে কানেকানে,
ভালোবাসি খুব,
সবার চেয়ে বেশি তোমাকে।
আমার এ কি হলোরে ইশান? সারাক্ষণ মাথায় প্রেমপ্রেম করে, তাহলে কি আমিও প্রেমিক পুরুষ হয়ে গেলাম?
গাড়িতে থাকা ইশান আর নিশি দুজনেই হুহুহু করে হেসে দেয়।
নিশিঃ দাভাই তুমি আর প্রেম জাস্ট অবিশ্বাস!
রূপক নিশির দিকে রাগী চোখে তাকাতেই, নিশি চুপ হয়ে যায়।
ইশানঃ রূপক সামনে ফুচকার দুখান, ওইটার সামনে গিয়ে গাড়ি থামাবি।
রূপকঃ এই শুরু হয়ে গেলো তোর, মাইয়াদের মতো ফুচকা ফুচকা আর ফুচকা।
ইশান আর নিশি হাসছে,
(নিশি হলো রূপকের ছোট বোন।
ইন্টার পরীক্ষার্থী।)
নিশিঃ দাভাইরা আমি সামনের দুখান থেকে আইসক্রিম নিয়ে আসি, খুব গরম লাগছে আমার, তোমরা ফুচকা গিলতে থাকো।
রূপক রাগী চোখে তাকাতেই নিশি দৌড় দেয়। খুব ভয় পায় ভাইকে।
আরিফাঃ চাচা এক প্লেট ফুচকা দাও? জ্বাল একটু কম দিবে,
ফুচকাওয়ালা: আচ্ছা মা, চেয়ারে গিয়া বইয়েন?
আরিফা আর আমি বসে আছি, মনে হয় ফুচকাওয়ালার ফুচকা বেশি ভালো হয় তাই তো এতো মানুষ এখানে, কয়েকটা ছেলেও আছে, তাই আমি অন্য দিকে চেয়ে আছি।
রূপকঃ আচ্ছা ইশান একটা কথা বলতো?
ইশানঃ কি কথা?
রূপকঃ ফুচকা তো ছেলেমেয়ে সবাই ৫০%&৫০% পছন্দ করে, তাহলে লোকে কেন বলে ফুচকা মেয়েদের প্রিয় খাবার?
আমার দেখা তুই,
মেয়েদের হারিয়ে দিতে পারবি ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতায়।
ইশানঃ বুঝলিনা ভাই, আর তুই বুঝবি কেমনে, সারাক্ষণ তো রাগ নিয়েই থাকিস।
রূপক একটু রেগেই বললো।
রূপকঃ তোকে যেটা আস্ক করছি সেটার উত্তর দে?
ইশান আর রূপক সমবয়সী হলেও, রূপককে ভয় পায় সে। তাই আর না রাগিয়ে বললো।
ইশানঃ দেখ চেয়ে, আমরাও ফুচকা খাচ্ছি, মেয়েরাও খাচ্ছে, আমাদের ফোন পকেটে। আর ওদের ফোন হাতে, দেখ একটা মুখে দিচ্ছে আর ক্লিক মারতেছে, দেখবি এই মেয়ে গুলো আর ১মাসের মধ্যেও ফুচকার দুখানের ধারেকাছেও আসবে না।
কিন্তু ঠিক দু এক দিন পর পর এফবিতে ফুচকা খাওয়ার পিক আপলোড দিবে। আর বলবে, আজকের ফুচকা আড্ডায় আমরা ফ্রেন্ডস ক্লাব। সব শুধু এডিট এর কেরামতি। বুঝলি,
রূপক চেয়ে আছে ইশানের দিকে,
রূপকঃ ভাই তুই মাইর খাওয়াবি নাকি এই মেয়েগুলোর হাতে?
ইশান কথাগুলো শুনে সবার দিকে তাকালো, মেয়েরা কেউ কেউ হাসছে, আর কেউকেউ অগ্নি দৃষ্টিতে অগ্নিময় চাহনিতে গিলে খাচ্ছে ইশান আর রূপক কে।
ইশান আর রূপকের সামনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো।
আরিফাঃ এই যে মিস্টার ফুচকা ওয়ালার মেয়ের জামাইরা, ঠোঁট সুই দিয়ে আবদ্ধ করে নিবন্ধন করে রাখবো ঝুলিয়ে ফুচকার দুখানের সামনে।
আর একবার যদি মেয়েদের নিয়ে এসব বলেছেন তো।
(এক নিশ্বাসে কথা গুলো বললে আরিফা থামলো।)
এতক্ষণ আরিফ আর আমিও কথা গুলো শুনছিলাম।
কিন্তু আরিফা রেগে যায়, আমি আটকাতে পারিনি তার আগেই চলে যায়, আর প্রতিবাদ করতে শুরু করে দিলো। কিন্তু আমি? কেন পারিনা লোকদের কটু কথার জবাব দিতে?
ইশানঃ ওমা এই পিচ্চি মেয়ে দেখি রেগে গেছে,
রূপকঃ ভাই থাম, দেখ রেগে আছে মেয়েটা, যেকোনো সময় তোকে উপরে পাঠিয়ে দিবে।
আরিফাঃ মেয়েরা একদিন ফুচকা খায় তাই না? দেখছেন এখানে সব মেয়েদের ভিরে আপনারা মাত্র ৪&৫ জন ছেলে। সবাই যদি এখন আপনাদের কিলায়, তখন কেমন হবে।
রূপক হেসে বললো,
রূপকঃ আপু এই পোলা হলো পাগল, মাথার ৮৯নং তাড় ছেঁড়া। কথায় রেগে যাবেন না।
আরিফা রূপকের কথায় হেসে দেয়।
ইশানঃ ওই আমি তো সত্য কথা বললাম, আর তুই আমায়?
রূপক কিছু না বলতে দিয়ে,
রূপকঃ আর একটা কথা না?
আপু আপনি গিয়ে ফুচকা খান।
নিশিঃ আরে আরিফা তুই এখানে?
আরিফাঃ হুম, এই দেখ এই বেডা বলে,
সব বলে দেয় এক নিশ্বাসে।
নিশি সব শুনে হেসে দিলো।
নিশিঃ আরিফা, ওই বেডা হলো আমার চাচাতো ভাই ইশানদা,
আর আমার দাভাই রূপক ইসলাম।
দাভাইরা এই হলো আমার ফ্রেন্ড আরিফা মাহবুব।
আরিফা এখন লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিজের ফ্রেন্ড এর ভাইদেরকে কথা শুনিয়ে দিলো।
আমি এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলাম।
এখন আরিফার লজ্জা দেখে উঠে দাঁড়ালাম।
ছেলে দুটুকে ভালোভাবে দেখিও নি।
তারপরেও ওদের কাছে গেলাম।
আমিঃ আরিফা চল তো, অনেক হয়েছে?
নিশিঃ আরিফা তোর আপু তাই না,
আরিফাঃ হুম,
নিশিঃ আসসালামু আলাইকুম, আপু কেমন আছো?
আরিফার মুখে তোমার অনেক কথা শুনেছি।
আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
তুমি নিশি তাই না?
নিশিঃ হুম,
কালো শার্ট পড়া ছেলেটা আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,
কেমন জানি লাগছে এভাবে তাকানো তে।
রূপক,
একটা মেয়ের কণ্ঠ এতো সুন্দর হতে পারে?
মেয়েটার চোখ খুব সুন্দর।
কাজলবিহীন ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ইচ্ছে করছে।
এতদিন শুনেছি, মেয়েদের কাজলকালো চোখ নাকি সুন্দর্যের আসল বাহক।
কিন্তু আজ আমি এই কি দেখছি?
কোনো পরী নাকি সে।
নিশিঃ ভাইয়া এভাবে তাকাচ্ছো কেন?
রূপক কথা শুনে লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকালো।
আরিফাঃ তোর বজ্জাত ভাইয়ারা আমায় রাগিয়ে দিয়েছিলো, তাই ওদের অনেক কথা শ্যনিয়ে দিয়েছি।
নিশি মনে মনে ভয় পাচ্ছে, এই বুঝি বম ফাটবে।
কিন্তু ফাটলো না।
আড়চোখে চেয়ে দেখলো, রূপক চেয়ে আছে হেমন্তির দিকে, তাই বললো।
নিশিঃ আরিফা আর আপু চলো আমরা রেস্টুরেন্ট গিয়ে বসি।
আমিঃ না না, এখন না, অন্য একদিন।
আরিফাঃ আপু নিশি বলছে যখন তখন চলো না?
আমার রাগ হলো, ওই কালো শার্ট ছেলেটা এভাবে তাকাচ্ছে, আর আরিফাও কিনা?
আমরা পাঁচ জন বসে আছি, একটা রেস্টুরেন্টে,
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
আরিফা সবার সাথে কথা বলছে,
আরিফাঃ আচ্ছা আমি সরি আপনাদের কথা শুনানোর জন্য?
রূপকঃ সরি বলতে হবে না, পিচ্চি তুমি তাই বলে ফেলছো এসব। আর ইশানটাও বেশি কথা বলে।
আচ্ছা তোমার আপুর নাম কি?
আরিফাঃ ওও সরি সরি,
আপনাদের সাথে আমার আপুর পরিচয় করিয়ে দেই নি।
আমার আপু, হেমন্তি মাহবুব,
রূপকঃ খুব সুন্দর নাম,
(নিজের অজান্তেই বলে ফেললো)
আমি উনার দিকে তাকালাম।
এতক্ষণ ভালোভাবে দেখিনি ওদের।
ছেলেটার দিকে তাকাতে, আমার অন্তর নাড়া দিয়ে উঠলো।
একটা ছেলে এতো সুন্দর হতে পারে কিভাবে? চুল গুলো খুব সুন্দর করে রেখেছে মাথায় সাজিয়ে, ঠোঁটজোড়া দুটু একবারে লাল, আমি কি প্রথম দেখাতেই ছেলেটিকে কল্পনায় এঁকে নিলাম।
আমার তাকানো দেখে, ছেলেটি নিচের দিকে তাকালো, আর বললো।
রূপকঃ আমি রূপক ইসলাম, নিশির ভাই, আর এ হলো ইশান আমার চাচাতো ভাই।
আমি হাসলাম, পরিচয় না জানতে চাইতেই, বলে দিলো।
নিশিঃ আরিফা তুই না বলছিলে তোর আপু অন্য মেয়েদের মতো না, একবারে ভিন্ন, তাহলে কি মিথ্যে বলছিলে?
(কানেকানে বললো আরিফার)
আরিফাঃ অপেক্ষা কর?
রূপক আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
রূপকঃ আপনি কি পড়েন?
আমিঃ জ্বী না,
রূপক আর কোনো কথা পাচ্ছে না খুঁজে, কিন্তু সে যে এই মধুর কণ্ঠের প্রেমে পড়ে যায়, যেভাবেই হোক্য তাকে আবার হেমন্তির কণ্ঠ শুনতে হবে।
তাই আবার প্রশ্ন করলো।
রূপকঃ আপনি এই গরমের মাঝে, এভাবে বোরখার উপর চাদর পড়ে আছেন কেন?
রূপকের প্রশ্নটা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে।
আবার একি প্রশ্নের সম্মখীন আমি।
হঠাৎ ফুপুর বলা কথাটা মনে হলো,
~বৃত্ত পৃথিবী, কটূক্ত কথা মানুষের স্বভাব,
তুই নৃত্য হেমন্তি, নতুন ভাবে উপস্থাপন করবি সবার জবাব।
আরিফা আমার দিকে অপরাধীর মতো চেয়ে আছে।
কিন্তু আমি যে ফুপুর ওই এক
টা কথায় নিজেকে বদলে দিয়েছি।
আরিফার দিকে তাকালাম।
আরিফা চোখের ভাষায় সরি বললো।
আমি হেসে,
রূপকের দিকে তাকালাম।
সে আগ্রহ নিয়ে বসে আছে আমার প্রশ্নের উত্তরের জন্য।
আর কিছু না ভেবে সরিয়ে দিলাম শরীরের উপর থেকে চাদরটা।
রূপক আর ইশান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।
নিশি চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে রূপকের কাছে আসলো।
আর আরিফা অপরাধীর মতো বসে আছে এখনো।
ওরা তিনজন আমার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু রূপক একটু বেশিই অবাক হয়ে তাকাচ্ছে।
সে হয়তো কখনো আশা করেনি আমার এই অবস্থা?
নীরবতা ভেঙে রূপক প্রথম বললো।
রূপকঃ আপনার বাম হাত?
আরিফা কিছু বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু তার আগেই আমি বললাম।
আমিঃ কোনো ঘাতক আমার হাতটা কেড়ে নিয়েছে।
আমারো দু’হাত ছিলো, আমিও মুক্ত হয়ে এই পৃথিবীতে চলাফেরা করেছি।
কিন্তু কোনো ঘাতক আমার বাম হাতটা কেড়ে নিয়েছে।
সাথে নিয়ে গেছে সুখ নামক শব্দটা।
কথা গুলো বলার সময় কেঁদে ফেললাম।
এক হাত নিয়ে চলা অনেক কষ্টের, আজ দুই বছর ধরে বুঝতে পারছি।
জানি না আল্লাহ্ কিসের শাস্তি দিচ্ছেন আমায়।
আমার পূর্ণ শরীর অপূর্ণ আজ শুধু কোনো পশু রূপে মানুষের জন্য।
রূপকের চোখে স্পষ্ট পানি দেখতেছি আমি।
এই পানি কিসের জন্য?
আমার এই করুণ অবস্থা দেখে, নাকি আমার চোখে পানি দেখে?
রূপকঃ কিভাবে হলো জানতে পারিকি?
আরিফা চিৎলার করে উঠলো।
আরিফাঃ প্লিজ থামেন ভাইয়া, প্লিজ আর সহ্য হচ্ছে না আমার, আর একটা কথাও শুনতে চাই না।
আরিফার চিৎকার শুনে রূপক আর বাকিরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরিফা আমার চোখের পানি মুছে দিলো।
আমার শ্বাষ বন্ধ হয়ে আসছে।
অনপেক্ষণ ধরে নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখছি তাই।
আরিফাঃ নিশি, রাগ করিস না বোন।
তুই জানতে চাইতি না, আমার আপু কেমন, কি করে?
আপুর পিক দেখাই না কেন তোকে?
আজ দেখলি তো আমার আপুকে।
আর ভাইয়া রাগ করবেন না, আমি নার আপুর চোখের পানি সহ্য করতে পারি না।
তাই,
রূপকঃ বুঝতে পারছি আমি,
আমিঃ আরিফা আমার ভালো লাগছে না এখানে।
চল বাসায় যাবো।
আরিফা আর কিছু না বলে দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি সবার দিকে এক নজরে চেয়ে নিলাম।
রূপকের চোখে থাকা পানি গালে এসে গেলো।
কিন্তু কেন?
প্রথম দেখায় কি এমন হলো?
রিকশায় বসে আছি আমি আর আরিফা, দুজন চুপ।
কারো মুখে কোনো কথা নাই।
আরিফা আমার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
কেন নিজেকে অপরাধী ভাবছে, শুধু ওরা কারণ জানতে চাইছে তাই?
বোন আসলে এমনি হয়।
রূপক গাড়ি ড্রাইভ করছে।
কিছুক্ষণ আগেও সে কথার মেলা বসিয়েছিলো।
কিন্তু সে চুপসে গেছে।
সময় এমন কেন।
সবাইকে পালটে দেয় মুহূর্তেই।
রূপক বাসার সামনে এসে থামলো।
রূপকঃ ইশান গাড়িটা পার্ক করে দিবি?
ইশানের উত্তরের অপেক্ষা না করেই বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজায়।
দরজা খুলতে দেড়ি হচ্ছিলো, তাই ঘুসি মেরে কলিংবেলের সুইচ ভেঙে দেয়।
নিশি ভয় পেয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
রূপকের আব্বু এসে দড়জা খুলে দেন।
ভাবছিলো কিছু কথা শুনাবে।
কিন্তু রাজীব চৌধুরীকে দেখে আর কিছুই বললো না।
ভিতরে ঢুকে বরাবর নিজের রুমে চলে যায়।
নিশি বাবাকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো।
কলিংবেল।
রাজীব চৌধুরী গম্ভীর গলায় বললেন।
রাজীব: এই ছেলে কি কখনো ঠিক হবে না?
ইশান গাড়ি পার্ক করে এসে দেখলো যে রূপকের আব্বু খুব রেগে আছেন তাই কিছু না বলে সে তার রুমে চলে যায়।
রূপকের বাসায় তিনজন রাগী মানুষ, তার মধ্যে সব চেয়ে রাগী হলো রূপক।
রাজীব চৌধুরী।
আর নিশানের বড় ভাই মাহির চৌধুরী।
বাসার সবাই এদের ভয় পায়।
আয়েশা: এভাবে গম্ভীর হয়ে বসে আছো কেন?
(ঘুম ঘুম চোখে রূপকের মা আয়েশা বেগম কথাটা বললেন)
রাজীব: তোমার ছেলে দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে।
উঠতে বসতে তার রাগ উঠে যায়।
আয়েশা: বাসায় তিনজন গম্ভীর মানুষকে নিয়ে আমরা এতগুলো মানুষ কিভাবে থাকছি।
রাজীব চৌধুরী রাগীচোখে তাকালে,
আয়েশা: যেমন ছেলে তেমন বাবা,
বলতে বলতে চলে যান ওয়াশ রুমে।
আমি আর আরিফা বাসায় আসলাম।
আমি বরাবর আমার রুমে চলে আসলাম।
জানিনা আজ খুব ভালো লাগছে আমার।
কিন্তু কেন?
গোসল করে ছাঁদে বসে বসে চুল শোখাচ্ছি।
আগের বাসার ছাঁদের চেয়ে এই বাসার ছাঁদটা খুব বড়।
ফোনটা বেজে উঠলো,
ভাইয়া ফোন দিয়েছে,
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো ভাইয়া?
ভাইয়াঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ, তুই কেমন আছিস বুড়ি?
আমি রেগে বললাম।
আমিঃ ভালো, তুই কি করছিসরে আবির?
ভাইয়া হেসে বললো,
ভাইয়াঃ রেগে যাচ্ছিস কেন?
আমিঃ আর কখনো যদি বুড়ি ডেকেছো, তাহলে কথাই বলবো না।
ভাইয়াঃ আচ্ছা আচ্ছা।
খেয়েছিস?
আমিঃ হুম, তুমি?
ভাইয়াঃ খেয়েছি।
ভাইয়া একটা কথা বলি?
ভাইয়াঃ বল,
আমিঃ ভাইয়া কখনো যদি জানো, তোমার ফ্যামিলি, আমি, তোমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়েছি, তখন কি রাগ করবা?
ভাইয়াঃ হঠাৎ এই কথা, কিছু হয়েছে কি?
আমিঃ জানি না, তবে এই দুই বছরে অনেক কিছু পালটে গেছে।
ভাইয়াঃ হেমন্তি কি লোকাচ্ছিস আমার কাছ থেকে?
আমিঃ অনেক কিছুই লুকিয়ে ফেলছি ভাইয়া।
দেশে কবে আসবে?
ভাইয়াঃ আরো ৬ মাস পর, আমার আম্মু শুধু বকাই দিচ্ছে, তাই আর থাকবো না।
আমিঃ হিহিহি, ।
ভাইয়াঃ একটা ফোন আসছে, রাখি এখন।
আমিঃ ভাবি তাই না, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা হচ্ছে।
ভাইয়াঃ একটু, বায়।
হেসে দিলাম।
আকাশের দিকে তাকালাম, সন্ধ্যের আগ মুহূর্তে আকাশটা দেখতে ভালো লাগে,
কারণ অন্ধকার আসার আগে, সব কিছুই ভালো লাগে।
সেটা কারো অজানা নয়।
দুই দিন কেটে গেলো, মাঝেমধ্যে ওই ছেলেটার মুখ আমার সামনে এসে যায়।
ছেলেরাও এত সুন্দর হয়, কিন্তু আমি এতো ভাবছি কেন ওই ছেলেকে নিয়ে?
রূপকঃ কি করছিস?
নিশির রুমে ঢুকে প্রশ্নটা করলো।
নিশিঃ মোবাইল টিপছি, আসো,
রূপকঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
(গম্ভীর গলায় বললো)
নিশিঃ বলো ভাইয়া,
(পঁচাটা সারাক্ষণ গম্ভীর থাকে)
রূপকঃ ওই যে তোর ক্লাসমেট এর বোন কি জেনো নাম।
নিশিঃ হেমন্তি আপুর কথা বলছো?
রূপকঃ হুম, নামটা খুব সুন্দর।
নিশিঃ ভাইয়া বিষয়টা কি?
(মুখ টিপে হাসছে)
রূপকঃ বেশি কথা বলবি না,
হেমন্তির পিক আছে তোর কাছে?
নিশিঃ আমি কখনো দেখিনি ভাইয়া।
আরিফা কখনো আমায় দেখায় নি ওর বোনকে।
আরিফা ওর বোন সম্পর্কে বলতো, আর আমি শুনতাম।
রূপকঃ বুঝি, মেয়েটার অতীতে কি আছে আল্লাহ জানেন।
নিশি তার ভাইয়ার দিকে তাকালো।
বুঝেছে তার ভাইয়া হয়তো হেমন্তির প্রেমে পড়েছে।
কিন্তু এটা কি কখনো সম্ভব।
রূপকঃ আচ্ছা থাক তুই, আমি গেলাম।
নিশিঃ হুম,
রূপক তার রুমে শুয়ে আছে, রাত ৯টা বাজে,
এই কয়দিনে একবারের জন্যেও হেমন্তিকে ভুলতে পারিনি।
ওর মায়াবী চোখ সারাক্ষণ আমার নয়নে বাসে।
কি মধুর কণ্ঠ।
কিন্তু কি আছে ওর অতীতে?
আমি এতো ভাবছি কেন এতো?
তাহলে কি আমি ওর প্রেমে পড়েছি।
কিন্তু ওর হাত?
কিছুই ভাবতে পারছি না।
আমি ওই হেমন্তি মেয়েকেই ভালোবাসবো।
আমি হেমন্তিকেই আমার পৃথিবী বানাবো।
রূপক এসব ভেবেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।
আব্বুঃ ভাবছি এবার হেমন্তিকে বিয়ে দিয়ে দিবো?
আব্বুর রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম
কথাটা শুমে থমকে দাঁড়ালাম।
আম্মুঃ কে বিয়ে করবে আমার মেয়েকে?
আব্বুঃ কেন আমার মেয়ে কি দেখতে কালো?
আম্মুঃ না, কিন্তু সবাই তো পূর্ণ মেয়ে চায়,
আব্বুঃ তুমি দেখে নিয়ো, আমার হেমন্তির জন্য কোনো রাজপুত্র আসবে, যে হবে হেমন্তির পূর্ণতা।
আম্মুঃ তাই যেনো হয়।
চলে আসলাম রুমে,
কে আসবে এই জীবনে, এই অপূর্ণ শরীর কেউ ভালোবাসবে না।
চাই না বাঁচতে, ২৬ বছর বয়সে এখনো আমি অবহেলিত,
কেউ কি আসবে না আমার জীবনে?
যে আমায় পূর্ণ করবে?
পার্ট ৩
দুই বছর আগের পিক গুলো দেখছি আর নীরবে চোখের পানি ফেলছি।
কতোই না সুন্দর ছিলো হেমন্তি নামক আমার জীবন। কিন্তু সময় বদলে, কালো মেঘের ছায়া আমায় অপূর্ণ করে দিলো। আজো সে স্বাধীন ভাবে বেঁচে আছে। কিন্তু আমি স্বাধীন নেই।
পরাধীনতার দেয়ালে আমি মিশে গিয়েছি। বাহিরে ঝুমধারা পানির বর্ষণ হচ্ছে, রক্তে মাংসে গড়া শরীরটা চায় বৃষ্টি স্পর্শ করতে। বৃষ্টির প্রেমে নিজেকে সপে দিবো, এতে আছে পরম সুখ। কিন্তু কিভাবে ভিজবো বৃষ্টিতে? আর কিছু না ভেবে বাসার ছাঁদের দিকে পা দিলাম। কোনো মানুষ রূপী অস্পরী এসে আমার এই খরা পরা মনে প্রেমের ফসল ফলন করে দিলো। কি সুন্দর চোখ, কি সুন্দর কণ্ঠ। আমি হেমন্তিকে চাই, চাই আমার পৃথিবী বানাতে।
রূপকঃ আম্মু তুমি না আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছিলা?
আয়েশা বেগম আর মনিষা বেগম দুজন মিলে রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছিলেন। রূপকের কথা শুনে দুজনি তার দিকে তাকালো। রূপক আবার বললো,
রূপকঃ “আম্মু তোমাদের আর কষ্ট করতে হবে না” আর দেখতে হবে না মেয়ে!
আয়েশা: মানে কি বলছিস বাবা? তুই বিয়ে করবিনা নাকি?
রূপক হেসে বললো,
রূপকঃ বিয়ে তো আমি করবোই, আমার মনে যে প্রেমের রঙ লাগিয়ে উড়াল দিছে পাখি বনে।
মনিষা: আব্বু প্রেমে পরেছো তাই না?
( ইশান আর মাহিরের মা খুব ভালোবাসেন রূপক কে, সারাক্ষণ আব্বু আব্বু করে)
রূপকঃ জানি না, কিন্তু মেয়েটার চোখ দেখেই আমি মায়ায় পরেছি।
আয়েশা: বাবা কে সেই মেয়ে, যে কিনা আমার রাগী ছেলের মনে প্রেমের ফুল ফোটালো।
রূপকঃ জানতে পারবে, এখন থেকে তোমরা আর কোনো মেয়ে খুঁজবে না আমার জন্য।
আয়েশা: আচ্ছা, তাড়াতাড়ি বউ করে আনতো সেই মা’টাকে,
দেখি কে সেই পরী?
রূপক আর কিছু না বলে তার রুমে চলে আসে।
রুমে এসে দেখে ফোনটা বাজতাছে।
ফোনের স্কিনে নামটা দেখে মুহূর্তেই রূপকের রাগ উঠে সপ্তমাকাশে উঠে যায়।
রূপক কল রিসিভ করে বলতে শুরু করলো,
রূপকঃ এই তোকে আর কিভাবে বললে বুঝবি? আমি বলছি না আমি তোকে ভালোবাসি না, আর বাসবোও না। তাহলে কেন আমার পিছনে পরে আছিস?
নিলা; আমি বুঝতে চাই না কিছু, আমি জানি আমি তোমায় ভালোবাসি, এটাই আমার কাছে বড়।
রূপকঃ আর একবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে গান গাইবি তো থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো।
নিলা রাগলো, কিন্তু পরেক্ষণেই সে রাগকে মাটি চাপা দিয়ে দিলো।
রূপক তো মাত্র টুপ, আসল তো, মাহিরকে শিক্ষা দেওয়া।
রূপককে বি
য়ে করে সে চায় রূপকের ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দিতে।
শয়তানী হাসি দিয়ে নিলা বললো।
নিলাঃ থাপ্পড় কেন?
আমায় খুন করে ফেললেও আমি তোমায় ভালোবাসবো রূপক।
তোমার মধ্যে কি মায়া আছে যে আমায় ভালোভাবে বাঁচতে দিচ্ছো না?
রূপকঃ বাঁচতে বলছে কে, মরে যাচ্ছিস না কেন?
নিলাঃ এটা বলতে পারলে তুমি?
রূপকঃ আজাইরা প্যাঁচাল করতে ইচ্ছা করছে না আমার, আর কখনো আমায় ফোন দিবি, তাহলে খুব খারাপ হবে, মনে রাখিস?
রূপক ফোন কেটে দেয়,
৫মাস ধরে এই নিলা মেয়েটা আমায় খুব জ্বালাচ্ছে।
ছোটছোট কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়ায়। যা আমার পছন্দ না।
আর আমি কোনো মর্ডান মেয়েকে বিয়ে করবো না, আমি তো হেমন্তিকে চাই।
হেমন্তির কথা মনে হতেই, রূপক কল্পনার সাগরে ডুব দেয়।
আম্মুর চিৎকার শুনে ছাঁদ থেকে দৌড়ে নিচে চলে আসলাম।
আজ জানি না কপালে কি আছে?
আম্মু আমাকে দেখেন নি এখনো।
আম্মুঃ এই হেমন্তি মেয়েটাকে নিয়ে পারি না, কেন করছে এমন?
দেখো সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না, নিশ্চিত বৃষ্টিতে ভিজতেছে।
মেয়েটা কি কখনো বুঝবে না নিজেকে।
ফুপুঃ ভিজতে দে মেয়েটাকে, এতে যদি সুখ পায় তাহলে ভিজুক সে,
আম্মুঃ আপা এতো বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে তো ওর?
ফুপু আরো কি কি জানি আম্মুকে বললেন, সেগুলো আর শুনলাম না, চলে আসলাম রুমে, কাপড় চেঞ্জ করার জন্য দরজা আটকে দিলাম।
আরিফাঃ এই কয়দিন ফোন দিলি না কেন? সেদিনের ব্যবহারের জন্য রাগ করছিস তাই না?
নিশি হেসে বললো,
নিশিঃ আরে না, রাগ করিনি।
সময় পাচ্ছিলাম না,
কেমন আছিস, ?
আরিফাঃ ভালো, তুই?
নিশিঃ আছি ভালোই,
একটা খবর জানিস?
আরিফাঃ না বললে জানবো কিভাবে?
নিশিঃ হুম তাইতো।
শুন,
ভাইয়া
হেমন্তি আপুকে দেখার পর থেকেই কেমন জানি হয়ে গেছেন।
মনে হয় আপুর প্রেমে পরেছেন?
আরিফা কথাগুলো শুনে অবাক হলো।
তারপরেও বললো।
আরিফাঃ আমার অপূর্ণ আপুকে তোর ভাইয়া ভালোবাসে?
হাসাইলি নিশি।
জানিস আপুর একটা হাত নাই, তাই কোনো ছেলেই আপুকে পছন্দ করে না।
কিন্তু আমার চোখে আমার আপু বিশ্বের সব চেয়ে সুন্দরী।
কিন্তু?
নিশি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো।
নিশিঃ এবার অন্তত তোর আপুর পিক দে?
আরিফা মুচকি হেসে বললো।
আরিফাঃ কি করবে দেখে?
নিশিঃ দে না রে,
আরিফা আবার হাসলো।
আরিফাঃ সামনাসামনি দেখে নিবি।
নিশিঃ তোর সাথে আমি পারবো না।
আরিফাঃ হিহিহি।
আজ ১৫ দিন কেটে গেলো, রূপক কেমন জানি চটপট করছে,
প্রথম দেখায় কি প্রেম হয়?
প্রথম কণ্ঠে কি মায়া লাগে?
প্রথম চোখাচোখি তে কি মানুষ চেনা যায়?
রূপক নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে।
কে দিবে এই উত্তর?
কেন হেমন্তিকে দেখার জন্য আমার মন এতো চটপট করছে?
শুনেছি ভালোবাসার প্রথম ধাপ হলো, ভালোবাসার মানুষটিকে একটি নজর দেখার জন্য চটপট করা।
যখন এক লিঙ্গের মানুষ তার বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে বেশি ভাবে, তখন বুঝে নিতে হবে সে প্রেমে পড়েছে।
রূপক মুচকি হেসে নিশির রুমের দিকে গেলো।
রূপক সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করে, তাই নিশির সাথে সরাসরি সব শেয়ার করে নিলো।
রূপকঃ নিশি তোর কাছে আরিফার নাম্বার আছে?
নিশি রূপকের দিকে হা করে তাকালো,
ভাইয়া আরিফার নাম্বার খুঁজছে কেন।
তাহলে কি ভাইয়া আপুকে না, আরিফাকে পছন্দ করে।
আর আমি কি না কি ভেবে বসে আছি।
রূপক রেকেই বললো।
রূপকঃ এভাবে হা করে আছিস কেন?
নিশিঃ আরিফার নাম্বার দিয়ে কি করবে?
রূপক খুব রেগে বললো,
রূপকঃ জানিস তো আমি বেশি প্রশ্ন করা পছন্দ করি না।
তাই বলছি, যা আস্ক করছি, তার রিপ্লাই কর সুন্দর করে।
রূপকের রেগে যাওয়া দেখে নিশি মিশিনের মতো সব বলে দেয়।
মন চাচ্ছে প্রশ্ন করতে আরিফার নাম্বার দিয়ে কি করতে?
কিন্তু খুব কেলানি নিতে হবে তাকে।
তাই চুপ হয়ে আছে সে,
রূপক আরিফার নাম্বার পেয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
নিশি খুঁজে পাচ্ছে না হাসিটার কারণ?
রূপক রুমে পায়চারি করছে, আর ভাবছে ফোন দিবে কি না।
আমিঃ আম্মু মাথা একট তেল দিয়ে দিবে?
আম্মুঃ কেন তুই পা,
আম্মু থেমে গেলেন।
আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে
ডান হাতের পৃষ্ঠা দিয়ে চোখে আসা পানি মুছে দৌড়ে রুমে চলে গেলাম।
আম্মু পিছন থেকে অনেকবার ডেকেছেন।
কিন্তু পিছনে তাকাই নি।
রুমে এসে দরজা আটকিয়ে দিলাম।
কেন বারবার সবাই আমায় মনে করিয়ে দেয়?
একটু শান্তিতে কি বাঁচতে দিবে না আমায়।
আম্মুঃ হেমন্তি মা দরজা খুল, হেমন্তি ওই হেমন্তি।
দরজায় পিট ঠেকিয়ে বসে আছি।
চোখে ঝর্ণাধারা নেমেছে।
আমি তো চাই জি অসহায় এর মতো বাঁচতে, কিন্তু আমার সাথেই কেন এমন হলো?
এটা কি আমার নিয়তি?
আম্মু অনেকবার ডাকতে ডাকতে চলে যান কাঁদতে কাঁদতে।
রূপক আর কিছু না ভেবেই ফোন দিলো আরিফার নাম্বারে।
আরিফা ফোন রিসিভ করে।
আরিফাঃ হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন আপনি?
আমার নাম্বার কোথায় পেলেন আপনি?
কথা বলছেন না কেন?
বোবা নাকি?
আরিফা এক সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো রূপক কে।
রূপক হাসছে।
এ যেনো মেয়ে না, কোনো বম, আমার চেয়ে বেশি রাগী।
রূপক হেসে বললো।
রূপকঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি রূপক, নিশির দাভাই,
আর নিশির কাছ থেকেই তোমার নাম্বার নিয়েছি।
আর আমি বোবা না, আমি কথা বলতে পারি, এইতো তোমার সাথে কথা বলছি।
রূপক কিছুটা অট্ট হাসিতেই কথাগুলো বললো।
আরিফা রেগে খুব রেগে বললো।
আরিফাঃ কিহহহ?
ওই কুত্তী আমার নাম্বার আপনাকে দিয়েছে,
আমি ওই কুত্তীর গুষ্টি কে খুন করবো।
পাই একবার সামনে।
রূপক আবার হাসলো।
পিচ্চিটা নিশির মতোই।
দুটুর মুখেই চায়নার ডিকশনারি এর বকা গুলো।
রূপকঃ আচ্ছা সবাইরেই খুন কইরো,
যে কারণে ফোন দিয়েছি।
সেট, রূপককে কিছু না বলতে দিয়ে।
আরিফা বললো।
আরিফাঃ জানি আপনি কেন ফোন দিয়েছেন।
এটা বলতে তাই না?
যে আপনি আমার আপুকে পছন্দ করেন।
ঠিক বলছি তো আমি?
রূপক কিছুটা অবাক হয়ে বললো।
রূপকঃ তুমি কিভাবে জানলে?
আরিফাঃ আমি সেদিন আপনার চাহনি দেখেই বুঝেছি।
আমি ভাবছি নিশির ভাই এতো লুচু কেন।
রূপক কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
রূপকঃ বাহ আমার শালিকা তো খুব মজার,
আরিফা এবার একটু রেগেই বললো।
আরিফাঃ আপনি কি সিরিয়াসলি?
রূপকঃ হুম, জানি না তোমার বোনের মাঝে কি আছে, একটু সময়ের মধ্যেই আমি ভালোবেসে ফেললাম।
আরিফা অট্টহাসি দিয়ে বললো।
আরিফাঃ প্রথম দেখায় কোনো ভালোবাসা হয় না, আর আপুর মুখ না দেখেই প্রেমে পড়ে গেলেন।
আর আপুর এক হাত নাই, আপুকে ভালোবাসা ইম্পসিবল তাই না?
রূপকঃ কেন প্রথম দেখায় প্রেম হবে না?
পরিবারের মাধ্যমে যারা বিয়ে করে, তারা কি প্রেম করে বিয়ে করে,
তাদের সাক্ষাৎ হয় বাসরঘরে, আর সেখানেই প্রথম দেখা হয়।
আর তখনি তাদের প্রেম হয়।
তাহলে আমি হেমন্তির প্রেমে পরতে পারি এটাই স্বাভাবিক!
আরিফা চুপ হয়ে আছে, কি বলবে সে, তারপরেও সে বললো,
আরিফাঃ আমার আপুর মুখ যদি দেখতে বিশ্রী হয়, তখন কি করবেন।
বলবেন তখন এই ইতিবাচক কথা গুলো।
নাহ বলবেন না, তখন ঠিক পিছন ফিরে দৌড় দিবেন।
রূপকঃ হতে পারে হেমন্তি দেখতে বিশ্রী।
কিন্তু আমার দেখা প্রথম নারী, যার প্রেমে আমি পরেছি।
সে যদি কালোই হয় না কেন।
আমি তাকেই বিয়ে করব।
আরিফার চোখে পানি চলে আসে, তার আপুকেও কেউ ভালোবাসে, তাহলে কি আপুর জীবনে সুখের আভাস আসতে শুরু করেছে।
আরিফাঃ আমার আপুকে কেউ ভালোবাসবে না, আর আপনিও না, আপনার এইটা হলো ভালো লাগা, আর আমার আপুর এক হাত নাই, সেটা আপনার মাথায় রাখা উচিৎ, সমাজ কখনো মেনে নিবে না।
আর আপনার ফ্যামিলি?
রূপকঃ হেমন্তির যদি দুই পা দুই হাত না থাকে তার পরেও আমি হেমন্তিকেই বউ বানাবো, হেমন্তিকেই আমার পৃথিবী বানাবো।
আমার প্রথম ভালোবাসা হেমন্তি।
রূপকের কথা শুনে আরিফা শব্দ করেই কান্না করে দিলো।
আরিফাঃ জানেন,
আমার আপু সব মেয়েদের মতোই ছিলো।
কিন্তু দুই বছর আগে কিছু কাপুরুষ আপুর বাম হাতটা কেড়ে নিয়েছে, সাথে আমার হাসিখুশি আপুটাকেও।
আপনিই প্রথম ব্যক্তি, যে কিনা বলল আমার আপুকে ভালোবাসেন।
আমার আপুকে পছন্দ হলেও সবাই আপুর হাত নাই বলে বড় অংকের টাকা চাইতো।
বলতো এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে।
আপনিই প্রথম যে কিনা আপুকে না দেখেই ভালোবেসেছেন।
আপনিই প্রথম যে কিনা আপুর হাত নাই দেখেও ভালোবেসেছেন।
আরিফা কথাগুলো কান্নার জন্য বলতে পারছে না।
আরিফার কথা শুনে ড়ূপকের চোখজোড়াও ভিজে যায়।
যদি হেমন্তিকে ভালোবাদায় এই পিচ্চি মেয়েটা এতো খুশি হয়, যে খুশিতে কান্না করে দিয়েছে, তাহলে না জানি হেমন্তির ফ্যামিলি কতোটা খুশি হবে?
আমি আমার লাইফ পার্টনার এই অপূর্ণ রমণীকেই বানাবো।
রূপকঃ কান্না করবে না, আমি তোমার বোনকে কখনো কষ্ট দিবো না, আর একটা কথা, প্রথম দেখায়ও প্রেম হয়,
আমি হেমন্তিকেই আমার বউ বানাবো।
আরিফা কান্না মুখেও হেসে দিলো।
আরিফাঃ পারবেন ১ মাসের মধ্যে আমার আপুকে বিয়ে করতে?
রূপক চুপ হয়ে গেলো, কি বলবে ভাবছে।
আরিফা আবার বললো।
আরিফাঃ পারবেন আমার আপুকে একমাসের মধ্যে আপনার বউ করে আপনার বাসায় নিয়ে যেতে? পারবেন আমার আপুর মুখে হাসি ফুটাতে? পারবেন আমার আপুকে দুই বছর আগের আপুর মতো করে দিতে, যে আপু ছিলো হাসিখুশি এক অস্পরী।
রূপকঃ হুম পারবো, তোমার আপুকে এতো ভালোবাসবো যে, সে তার অতীত ভুলে যাবে, আমি তোমার আপুকে এক মাসের মধ্যেই বিয়ে করবো, আর আমিও তোমায় দেখিয়ে দিবো প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয়, আর এই সমাজকেই দেখিয়ে দিবো, কোনো অপূর্ণ মানুষ’ই অবহেলিত নয়।
আরিফাঃ অপেক্ষায় থাকলাম,
রূপকঃ কাল তোমার আপুকে এই রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসবে।
আরিফাঃ কিভাবে, আপু সেদিনের পর থেকে বাসা থেকে বের হয় নি
রূপকঃ ঘুরতে বের হবা কাল।
তোমার আপুকে একা থাকতে দিবা না, আর কাল থেকেই তোমার আপুর নতুন জীবন শুরু হবে।
আরিফাঃ আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো, কিন্তু একটা কথা?
রূপকঃ কি কথা?
আরিফাঃ আমি আর আপনি ছাড়া কেউ যেনো এসব না জানে।এবং আপুও না।
রূপকঃ আচ্ছা জানবে না।
তুমি আমায় তুমি বা ভাইয়া বলেই ডাকো?
আরিফাঃ আচ্ছা, উঁম না, যেদিন আমার আপুকে আপনার ভালোবাসায় ফেলতে পারবেন, আর আপুকে ভালোবেসে বউ করে নিবেন।
সেদিন আপনাকে আমি ভাইয়া ডাকবো, আর তুমি করে ডাকবো।
রূপকঃ আচ্ছা, কাল দুপুরে দেখা হচ্ছে
আরিফাঃ কথা দিতে পারছি না, কিন্তু চেষ্টা করবো।
রূপক আর কিছু বললো না, ফোন রেখে দিলো, আরিফা আর রূপক দুজনের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
পারবে কি রূপক হেমন্তির মন জয় করতে?
আজো সেই ভয়ংকর দিনটার কথা মনে হয়,
প্রতিটা রাত ঘুম ভেঙে যায় ওই দুঃস্বপ্নে।
আমার ফ্যামিলি আজো পারেনি ওদের শাস্তি দিতে, কারণ একটাই আমরা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি।
কেউ কি আসবে না আমার জীবনে, যে আমার সব শুনে, ওই পশুদের শাস্তি দিবে।
~ কেউ কি করবে আমায় কুর্নিশ,
কেউ কি উড়াবে আমার হয়ে আগুনের ঝান্ডা।
আসবে কি কখনো এমন কেউ?
আরিফাঃ আপু আসবো?
আমিঃ আয়,
আরিফাঃ আপু তুমি আগের মতো হয়ে যাও না প্লিজ?
আমিঃ ইচ্ছা করলেও কি হতে পারবো?
আরিফাঃ চেষ্টার উপরে তো আর কোনো শক্তি নাই আপু।
আমিঃ পারবো না রে আগের মতো হতে, আমি নীরবতাকেই আপন করে নিয়েছি।
আরিফাঃ বাঁচতে পারবে এভাবে?
আরিফার প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকালাম।
সত্যিই এভাবে তো বাঁচতে পারবো না।
আমি চাইলেও বাঁচতে পারবো না।
আমায় চুপ থাকতে দেখে বললো।
আরিফাঃ পারবে না তো আপু, তাহলে কেন এভাবে চার দেয়ালে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছো?
আমিঃ আমি স্বাদেই তো করিনি, নিয়তি বাধ্য করেছে আমায়।
আরিফাঃ আপু একটা কথা জানো,
যে মানুষ চুপ হয়ে যায়,
সে ভাবে নীরব হয়েগেলে সব ঠিক।
নিজেকে চার দেয়ালে রেখে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু এটা ভুল,
তুমি হয়তো ডিপ্রেশন শব্দটা শুনেছো?
ডিপ্রেশন এমন এক ভয়াবহ শব্দ।
যেটা মানুষকে কখনো শান্তিতে থাকতে দেয় না।
কোনো মানুষ ডিপ্রেশনে থাকলে সে সব সময় ভাবে, বেঁচে থেকে কি করবে?
মরে যাওয়া ভালো।
তোমার কাছে আরেকটা প্রশ্ন?
আমরা মানুষ মানেই সংগ্রামী।
তাহলে কেন আমরা ডিপ্রেশন শব্দকে জয় করতে পারি না?
কেন প্রতিটা দিন শুরু হয় কারো আত্মহত্যা এর খবর শুনে।
আমাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে ডিপ্রেশন নামক শব্দটা।
সারাক্ষণ মস্তিস্কে এটাই প্রচার করে।
এই পৃথিবী তোমার জন্য না, তুমি মরে যাও, তোমার কেউ নাই, কেউ তোমায় ভালোবাসে না।
সেও তখন ডিপ্রেশন কে মূল্য দেয়।
কারণ তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
এক সময় সে ডিপ্রেশন কে প্রাধান্য দিয়ে ঝুলে যায় সিলিং ফ্যানে বা অন্য কোনো ভাবে নিজেকে শেষ করে দেয়।
কিন্তু কেন করে এসব?
আমরা কিসের সংগ্রামী মানুষ, যদি ডিপ্রেশন এর সাথে আমরা সংগ্রাম করতে পারি না।
দিতে পারবে উত্তর?
আমি অবাক হয়ে এক পলকে চেয়ে আছি আমার পিচ্চি বোনটার দিকে, কতো সুন্দর কথাগুলো বললো।
সত্যিই তো আমরা সংগ্রামী হয়ে কেন বাড়বার হেরে যাই ডিপ্রেশন এর কাছে।
আমায় চুপ থাকতে দেখে আবার আরিফা বলতে শুরু করলো।
আরিফাঃ আরো কঠিন সত্য কথা জানো কি?
তুমিও কঠন ডিপ্রেশনে আছো, হয়তো প্রতিটা মুহূর্তে তোমার মস্তিস্ক মাইকিং করে, বাঁচতে চাই না, বাঁচতে চাই না।
তুমি ডিপ্রেশনে ভোগছো সেটা আমি তোমার চোখের দিকে তাকালেই বুঝি।
আপু তোমার জীবন এখনো শেষ হয় নি।
তোমার মাত্র একটা হাত নাই।
অনেকের দেখো ডূটো হাত নেই, তারা কিন্তু দিব্বি আছে সুখে, কারণ কি জানো?
তারা ডিপ্রেশন নামক ভয়ংকর শব্দের সাথে নেই।
তুমিও হয়ত ভাবো, কেন বেঁচে আছি, শুধু অবহেলাই পাচ্ছি, আরো ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবো।
ডিপ্রেশন এর আসল ওষুধ কি জানো?
হাসিখুশি থাকা,
মরে যাওয়া কোনো কিছুর সমাপ্তি না, হ্যাঁ একদিন মরবে, কিন্তু সেটা আল্লাহ এর ইচ্ছায়, নিজের ইচ্ছায় না।
জানো সারাক্ষণ তোমার সাথে মজা করি কেন?
আমি চাই তুমি কখনো ডিপ্রেশন কে প্রাধান্য না দেউ।
ডিপ্রেশন যাতে জিততে না পারে, তাই সারাক্ষণ তোমায় হাসাই, মজা করি।
সত্যিই আপু যদি ডিপ্রেশনে ভোগা কোনো রোগির একজন ভালো বন্ধু পেয়ে যায়, যে সারাক্ষণ তাকে হাসাবে, কখনো কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিবে না।
হয়তো একজন ভালো বন্ধু, বোন, মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, পারবে দেয়ালের ওপারে থাকা মানুষটির ডিপ্রেশন ভেঙে দিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরিয়ে দিতে।
আরিফার কথা গুলো খুব মন দিয়ে শুনছিলাম।
সত্যিই তো, আমি ডিপ্রেশনে ভোগছি, একটু একা থাকলেই ভাবী মরে যেতে, একা থাকলেই কষ্টের কথা গুলো মনে হয়।
আরিফার দিকে তাকালাম।
আমার পাশেই বসে কথাগুলো বলছিলো।
আমি ডান হাতে ভর করে ওর পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
আমিঃ সত্যিই আমি তোর ছোট বোন হওয়ার যোগ্য।
কখনো বড় বোন হওয়ার যোগ্য না।
হ্যাঁ রে আমিও দিনরাত ডিপ্রেশনে ভোগী, তুই যে কথাগুলো বললি সব আমার সাথে মিলে গেছে।
জানিস আমিও প্রতিটা রাত ভাবী মরে যে,
আরিফাঃ এই কথা উচ্চারণ করবে না আপু।
তোমার এই পিচ্চি বোন থাকতে তোমায় কখনো ডিপ্রেশন কেন, কোনো কিছুতেই ভোগতে দিবো না।
আরিফার কথা শুনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। সত্যিই আরিফা হারিয়ে দিয়েছে আমার মধ্যে থাকা ডিপ্রেশন কে।
আরিফাঃ কাল থেকে তুমি আর নীরবে থাকবে না।
এতদিন তুমি একা বৃষ্টিতে ভিজেছো, এখন থেকে দু’বোন এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।
কষ্ট পেলে দু’বোন পাবো।
এককথায় সব কিছু ভাগাভাগি করে নিবো দুজনে।
আমি চোখের ইশারায় সম্মতি দিলাম।
আরিফা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
আরিফাঃ আর কখনো কষ্ট পাবে না।
মনে রেখো, এখনো তোমার একটা হাত আছে।
~ হালকা বিদ্যুৎ চমকালে, মানুষ যেমন গভীর জঙ্গল পাড়ি দিতে পারে,
শুধু ওই চমকানো বিদ্যুতে আলোয়।
তাহলে তুমি কেন পারবে না এক হাতে চলতে, আপু জীবনটা মাত্র শুরু তোমার।
আমি আরিফার কপালে চুমু এঁকে দিলাম।
আরিফা আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
আরিফাঃ যাবে কাল আমার সাথে ঘুরতে?
আমিঃ হুম যাবো, ঠিক আগের চঞ্চল হেমন্তি হবো আমি।
আরিফার মুখে বিশ্বজয় এর হাসি,
সে পেরেছে তার আপুকে ডিপ্রেশন থেকে ফিরিয়ে আনতে।
লেখক – হানিফ আহমেদ
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমাতে আমি পূর্ণ – প্রথম প্রেমের গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – সব গল্পের নাম হয় না – সেরা প্রেমের গল্প