দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – সারপ্রাইজ প্রেম: তিহার মন খারাপ থাকলে সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । কম্বল মুড়িয়ে সারা দিন শুয়ে থাকতে আর গান শুনতে ইচ্ছে করে । কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না ।
অবশ্য ওর আশে পাশে এখন কেউ থাকেও না ! এক হাউজ মেট আছে । এলিন নাম ! ব্রিটিস !
মেয়েটা এমনি ভাল তবে যত ভালই হোক বাংলা না জানা কারো সাথে কথা বলে কি সুখ পাওয়া যায় ! যদি কোন বাংলা মন খারাপের গান কথা এলিকে বলা যায় এলিন চোখ বড় বড় করে শুনবে তারপর বলবে ইটস সাউন্ডস কোয়াইট ফানি ইউ নো !
তখন এমন মেজাজ খারাপ হয় ! তিহার মনে হয় থাপড়িয়ে দাঁত দুটো ফেলে দেয় !
কিন্তু চাইলেই কি সব কিছু করা যায় !
এই যেমন এখন আকিবের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আকিবের কোন খোজ নেই । আকিবের সাথে কথা বলার জন্য তিহা সেই সকাল থেকে আছে অথচ তার কোন খোজ নেই ।
গত কাল রাতেও আকিব কথা বলতে পারে নি । কি একটা অফিসের কাজ নাকি আছে সকাল বেলা । সেটার প্রেজেন্টেশন জমা দিতে হবে ।
আরে মাঝ খানে আধা ঘন্টার জন্য কি কথা বলা যায় না !
বদ ছোকড়া !
তিথার অভিমানে মুখ টা ফুলে ওঠে ।
বারবার মনে হয় ছেলেটা এমন কেন করে ?
কেন এমন করে ?
একটু কথা কি বলা যায় না ?
তার কন্ঠস্বর শোনার জন্য তথা যে কত আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে সেটা কি সে জানে না ।
তিহা আবার মোবাইল টা হাতে নেয় । কোন মেসেজ আসে নি । হোয়াটস এপসেও কোন মেসেজ আসে নি । তিহার কান্না আসতে থাকে । ইচ্ছে করে গলা ছেড়ে কাঁদতে । ছেলেটা যদি একটু বুঝতো । কত গুলো কথা তাকে কে বলার আছে ।
গত কাল বিকেল ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে আনমনেই তিহা হাটছিল রাস্তা দিয়ে । ওম নি একটা ছোট্ট বিড়াল ছানা ওর পায়ে সমনে চলে আসে । ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে মিউ মিউ করতে থাকে ।
তিহার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই । এমন কি আশেপাশের ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে এই রাস্তাটা একটু নির্জন । ওয়ারউইকের এই দিক টা একটু নিরবই । জায়গাটা একটা পার্কের মত । বাড়ি ঘর ছাড়া কেবল গাছ গাছালিতে ভরা ।
বিড়ালের বাচ্চা এমন মায়া করা চোখে তিহার দিকে তাকিয়ে রইলো তিহা কোলে করে বাচ্চা টাকে ঘরে নিয়ে । মনে হয় অনেক দিন কিছু খাই নি বাচ্চা টা ! এলিন তো প্রথমে দেখেই চিৎকার করেই উঠলো! রাস্তার ছিল শুনে ফেলে দিয়ে আসতে বলল ।
তিহা শুনে নি । শেষে ভাল করে লিকুইড দিয়ে বিড়াল ছানা কে পরিস্কার করার পরে আর কোন কথা বলে নি ।
তিহা সেই কথা আকিবকে বলার জন্য কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু জনাবের শোনার সময় কোথায় ! তার উপর বিড়াল ছানার নাম কি রাখবে সেটাও তিহা বুঝতে পারছে না । সেই কখন থেকে বিড়াল ছানা ঘরের ভিতর ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে মিউ মিউ করে উঠছে । তিহা দেখেও দেখছে না ! তার চোখ বারবার কেবল মোবাইলের দিকে !
বিড়ালটা আস্তে আস্তে তিহার বিছানার কাছে চলে এল! মিউ মিউ করতে লাগলো!
তিহা বিড়াল ছানা কে কোলে তুলে নিয়ে বলল-
-কি বলবি বল? এক জনের সাথে কথা বলার জন্য কতক্ষন ধরে বসে আছি জনাবের কোনখোজ নাই! আর তুই সেই কখন থেকে মিউ মিউ করছিস ? কি বলবি ?
-মিউ মিউ!
-কোন ছেলেটা?
-মিউ!
-শুনবি? একটা বদ ছেলে!
-মিউ!
-হুম! খুব বদ! কিভাবে আমাকে এসবের ভিতর জড়িয়ে ফেললো টেরই পেলাম না! জানিস ঐ বদ ছেলেটাকে কিভাবে চিনি ?
-মিউ!
বিড়াল ছানা এমন ভাবে মিউ বলল যেন সত্যি সত্যি সে তিহার কথা বুঝতে পারছে। তিহা আপন মনেই কিছুক্ষন হেসে পড়লো! সে কি আসলেই বিড়াল ছানা কে বলছে নাকি নিজের আনন্দের মুহুর্তের কথা গুলো আবার মনে করতে ভাল লাগছে।
বিড়াল ছানাকে আদর করতে করতে কদিন আগের কথা মনে করতে লাগলো!
ওয়ারউইকে ওঠার পর থেকে প্রথম প্রথম বেশ ভালই দিন কাটছিল ! বলতে গেলে প্রথম বারের মত সবাই কে ছেড়ে এই দুর দেশে এসে পরেছে । নতুন দেশ নতুন ইউনিভার্সিটি ।
একটা মজার ব্যাপার ছিল যে ক্যাম্পাসে তিহাই একমাত্র বাঙ্গালী শিক্ষার্থী। প্রথম প্রথম অবশ্য অনেক উপভোগ করেছে বিষয়টা । জীবনে প্রথমবারের মত তার মনে হয়েছে সে মুক্ত, স্বাধীন । কেউ কিছু বলার নেই, সময়মত বাড়ি ফিরার তাড়া নেই । এমন যদি সারাজীবন থাকতে পারতো সে ।
কিন্তু কদিন যেতে না যেতেই সেই সব অনুভুতি কোথায় হারিয়ে গেল ।
নিজের কাছের মানুষগুলোর জন্য, নিজের ভাষায় কারো সাথে কথা বলার জন্য সারাদিন তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতো !
একটু ছুটি পেলেই সোজা চলে আসতো ইস্ট লন্ডনের বাঙলা কলোনিতে । এখানে ওর এক খালা থাকে । সেই সময়টা একটু শান্তিতে কাটে ।
কিন্তু বেশির ভাগ সময়ে তো থাকতে হত এই ওয়ারউইকেই থাকতে হয় !
সময় কাটানোর জন্যই বাংলা ব্লগের খোজ করা।
সেই খানেই আকিবের খোজ পায় তিহা ! আবিক ব্লগে গল্প লিখতো ! সেখান থেকেই তার খোজ পায় ! কিন্তু সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে আকিব কে সে আগে থেকেই চিনে ।
তিহার বড় খালার পাশের ফ্ল্যাটে আকিবরা থাকতো ! খালা বাড়ি যাওয়া আসার সময়ে প্রায়ই দেখা হয়ে যেত ! সেই আকিব যে এই আকিব ফেসবুকে এসে তিহা আরও ভাল করে জানতে পারলো !
একই ব্লগে লেখার সুবাধে ফেসবুকে বন্ধুত্ব্য !
এরপরই তিহার মজা করা শুরু । প্রায় প্রায় দিন তিহা আকিবকে নানা কিছু বলে অবাক করে দিতো !
আপনাদের বাসায় ছাদের ১১ টা গোলাপ গাছ আছে তাই না ?
আপনাদের বাড়ির রংটা হলদেটে !
আপনার বাবা একজন এই…….
আপনি এইখানে পড়েন …..
আপনার একটা বিড়াল আছে ! কালো রংয়ের
আরও কত কিছু !
একদিন তো বলেই দিল যে আপনি আজকে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন ?
আকিব খুব অবাক হত ! এরপর ওদের যোগাযোগ আরও যেন বেড়ে গেল ! ফেসবুক থেকে স্কাইপি তারপর সেখান থেকে হোয়াটস এপস ! কখন যে একে অন্যের অনেক কাছে চলে এল কেউ টেরই পেল না !
তিহা ওর বিড়াল ছানা কে কোলে নিয়ে বারান্দায় এল ! আসার আগে আরও একবার দেখে নিয়েছে আকিবের কোন মেসেজ কিংবা কল এসেছে কি না !
আসে নি !
মন খারাপ লাগছে । লাগছে একটু অস্থিরও ! এমন করেন করছে ছেলেটা ?
এর আগে তো কোন দিন এমন হয় নি !
বিড়াল ছানা কে আদর করতে করতে তিহা বলল
-বাবু ! দেখেছিস তো পচা ছেলেটা আমাকে কিভাবে কষ্ট দিচ্ছে । এভাবে কিভাবে পারে বলতো !
আদর করতে করতে তিহা একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলো ! আকিবের মত একটা ছেলে ওর বাসার সামনের রাস্তা পার হচ্ছে ! চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, গালে সেই চিরোপরিচিত খোচা খোচা দাড়ি !
তিহার একবার মনে হল সে হয় ভুল দেখছে ।
সারাক্ষন ওর চিন্তা করছে বলে মনেই ওর মত কাউকে এমন মনে হচ্ছে ! আকিব কোথা থেকে আসবে এখানে ?
ওর মত কেউ হবে হয় তো ! তবে ছেলেটা যে বাঙ্গালী কিংবা ভারতীয় এটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে । কিন্তু তিহার বুকের ভেতর ততক্ষনে একটা ঢিপঢিপ আওয়াজ শুরু হয়ে গেছে !
ওমা ! ছেলেটি দেখি ওর বাসায় দিকেই আসছে ! তিহার মনে আর কিছু আসলো না ! কেবল বারান্দা থেকে দৌড়ে প্রধান দরজার কাছে চলে গেল ! দরজা খুলতেই ছেলেটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো !
মুখে একটু দুষ্টামীর হাসি !
-কি বিদেশিনী ?
আকিব তিহাকে প্রায়ই বিদেশিনী বলে ডাকে !
তিহার কেবল মনে হল ও অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে ! জীবনে এতো বড় সারপ্রাইজড সে আর কখনও হয় নাই !
এই বদ ছেলে এখানে কিভাবে এল !
কিভাবে ?
তিহার কিছু দিন আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল! আকিব একবার কথার ছলে বলেছিল যে ওদের অফিস নাকি কিছু ইমপ্লোয়ীকে বাইরে পাঠাচ্ছে ট্রেনিংয়ের জন্য । তিহা আর কিছু অবশ্য জানতে চাই নি ।
-আমাকে বলবা না একটা বার ?
আকিব হেসে বলল
-তাহলে কি তোমার চোখ এই অপ্রত্যাশিত হাসিটা দেখতে পেতাম !
-বদ পুলা ! পাজি ছোকড়া কোথাকার !
এই বলে তিহা….
এই বলে তিহা কি করলো সেটা বরং তিহার উপরেই ছেড়ে দিন ! আসুন আমরা অন্য কোন গল্পের দিকে যাই।
লিখাঃ অপু তানভীর
আরো পড়ুন- ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১