বাড়িওয়ালির মেয়ে – দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প

বাড়িওয়ালির মেয়ে – দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প: একটু পর শম্পাকে পড়াতে যেতে হবে। কিন্তু ও যে জেদি আর পাগলি, ওরে পড়ানো আমার পক্ষে কঠিন। বাড়িওয়ালির মেয়ে বলে না করে দিতে পারছি না। কিছুক্ষণ পর শম্পাকে পড়াতে গেলাম।


পর্ব ১

_ শিমুল তারাতারি ঘুম থেকে উঠো। নামাজ পড়তে হবে। (আম্মু)
_ উঠছি আম্মু।

নামাজ শেষ করে পড়তে বসলাম। ৮ টার সময় আম্মু ডাকলো নাস্তা করার জন্য।

নাস্তার টেবিলে গিয়ে বসলাম। দেখি আব্বু মুখ ভার করে বসে আছে। আব্বুকে বললাম, আব্বু এমন করে বসে আছো কেনো?
_ এত সকাল সকাল আর আর অফিস যেতে ইচ্ছা করে না। (আব্বু)
_ কোনো সমস্যা আব্বু?

_ এখান থেকে অফিস অনেক দূর। যেতে অনেক সময় লাগে।
_ আব্বু এক কাজ করো। তোমার অফিসের কাছে বাসা নাও। এতে আমাদের দুজনেরই সুবিধা হবে।
_ এজন্য একটা বাসা ঠিক করেছি। আমার অফিস আর তোর ভার্সিটির কাছেই।

_ ভালো করেছো। প্রতিদিন আর এতদূর থেকে ক্লাস করতে ইচ্ছা করে না। এখন শান্তিতে যাওয়া যাবে।
_ নতুন বাসায় আমাদের কবে নিয়ে যাবে? (আম্মু)
_ আজ ২১ তারিখ। ১ তারিখে নতুন বাসায় উঠবো।
_ ভালই হবে।

খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম।
একটু পর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হই। ওহ আপনাদের কাছে আমার পরিচয়ই দেওয়া হয়নি। আমি শিমুল। আম্মু আব্বুর একমাত্র ছেলে। এরজন্য একটু বেশি আদর করে। লেখাপড়া করি ঢাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে।

ভার্সিটিতে পৌচ্ছে দেখি বন্ধুরা সবাই চলে আসছে।

_ তোর এতক্ষন আসার সময় হলো? (ইমন)
_ সরি দোস্ত একটু জ্যামে পরেছিলাম। তাই দেরি হয়ে গেলো। (আমি)
_ এটা তো তোর প্রতিদিনের কথা। এর জন্য শাস্তিস্বরুপ তোকে আজ একটা কাজ করে দিতে হবে। কথা দে কাজটা তুই করবি? (রাকিব)
_ তোদের কথা কখনও কি না করেছি? (আমি)
_ তারপরও ভেবে বল। হাজার হলেও শাস্তির কাজ। (ইমন)

_ কোনো কিছু না ভেবে বলে দিলাম তোদের দেওয়া কাজটা করবো। (আমি)
_ পরে কিন্তু না করতে পারবি না। (ইমন)
_ আমাকে দেখে কি তোদের কাপুরুষ মনে হয়? (আমি)
_ না। (ইমন)

_ তাহলে কি কাজ করতে হবে সেটা বল? (আমি)
_ কাজটা হলো……(বলতে গিয়ে রাকিব থেমে গেলো)
_ আরে থামলি ক্যান? (আমি)

_ -আমরা দুজন মিলে বুদ্ধি করেছি এখন যে মেয়ে গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবে তাকে প্রপোজ করবি। (ইমন)
_ -এমনটা তোদের থেকে আশা করিনি। এ কাজ আমি পারবো না। (আমি)
_ তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস আমরা যা বলবো তাই করবি। (রাকিব)

_ আচ্ছা প্রপোজ করবো, এখন তোরা থাম। দেখি কোন সুন্দরি আছে আমার কপালে। (আমি)
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দূরে একটা মেয়ে দেখা যাচ্ছে। এদিকেই আসছে। নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলাম। মেয়েটা আরও কাছে চলে আসলো। মেয়েটাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। এ তো ইমনর গার্লফ্রেন্ড।

_ ইমন আমাকে বলল তোকে কোনো প্রপোজ করতে হবে না।

_ কেনো রে? আমি প্রপোজ করবই। (আমি)
_ -অনেক কষ্টে একটা প্রেম করছি সেটা তুই আর ভেঙ্গে দিস না। (ইমন)
_ তোর প্রেম জাহান্নামে যাক। তাতে আমার কিছু করার নেই। (আমি)
_ দোস্ত তোর পায়ে ধরি তুই ওরে কিছু বলিস না। (ইমন)
_ না দোস্ত আমি প্রপোজ করবোই। (আমি)
_ তোকে এক হাজার টাকা দিচ্ছি তাও বলিস না। (ইমন)

_ আচ্ছা বলবো না। (আমি)
_ তোকে কিন্তু প্রপোজ করতেই হবে। (রাকিব)
_ এবার যদি তোর গার্লফ্রেন্ড আসে? (আমি)
_ আসবে না। তুই প্রপোজ করার জন্য রেডি হ। (রাকিব)
প্রপোজ করার জন্য রেডি হয়ে আছি। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না। একটা সুন্দরি মেয়ে আমার দিকে আসতে লাগলো।
_ এই মেয়ে দাড়াও! (আমি)
_ আমাকে ডাকছেন? (মেয়েটি)

_ জ্বি তোমাকে। (আমি)
_ কেনো ডেকেছেন? (মেয়েটি)
_ I love you আমি তোমাকে ভালোবাসি। (আমি)
_ কি বললেন বলে মেয়েটি আমাকে একটা থাপ্পর মেরে দিলো।
_ আমিও মেয়েটাকে উল্টো দুটো থাপ্পর মেরে দিলাম।

_ আপনার সাহস তো কম না আমাকে থাপ্পর মারলেন? (মেয়েটি)
_ হ্যা মেরেছি। তো কি হয়েছে। (আমি)
_ আপনাকে আমি ইভটিজিং এর দয়ে পুলিশে দেবো(মেয়েটা)
_ -আমার নামে ইভটিজিং এর কেস করলে………..

_ আপনার সাহস তো কম না আমাকে থাপ্পর মারলেন? (মেয়েটি)
_ হ্যা মেরেছি। তো কি হয়েছে। (আমি)

_ আপনাকে আমি ইভটিজিং এর দয়ে পুলিশে দেবো(মেয়েটা)
_ -আমার নামে ইভটিজিং এর কেস করলে, পুলিশ ধরার আগে তোমাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। তখন নিজের বরের বিরুদ্ধে ইভটিজিং এর কেস তুলে নিতেই হবে। এখন বলো কেস করবে না আমার সাথে প্রেম করবে? ভাবার জন্য তোমাকে সময় দিচ্ছি ১০ দিন।

_ আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। এর প্রতিশোধ আমি নেবোই। (মেয়েটি)
_ যা প্রতিশোধ বিয়ের পরে নিও কেমন। (আমি)
_ আপনি কি করে ভাবলেন আমি আপনার মতো বখাটেকে বিয়ে করবো? (মেয়েটি)
_ একটু বখাটে গিরি করি? (আমি)
_ এই আপনি আমার কাছে আসবেন না। (মেয়েটি)
_ কেনো? আমি তো তোমার হবু বর। (আমি)

_ আমি কিন্তু চিৎকার করবো। (মেয়েটি)
_ চুপ কর। (ধমক দিয়ে)
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ধমক দেওয়ায় মনে হয় ভয় পাইছে। তাই কিছু বলল না। আমার জন্য এটাই সুবর্ণ সুযোগ এখান থেকে কেটে পরার। মেয়েটাকে বললাম, “ঐ কথাই রইলো ১০ দিন। ঠিক দশ দিন পর তোমার সামনে হাজির হবো উওর জানার জন্য।”
এই যা মেয়েটার নামই তো জানা হলো না। নাম না জানলেও হবে। আগে এখান থেকে কেটে পরি।
_ দোস্ত তুই তো একবারে ফাটিয়ে দিলি। (ইমন)
_ রাখ তোর ফাটিয়ে দেওয়া। আগে পানি খাওয়া। (আমি)
_ এই নে পানি। (ইমন)

_ দোস্ত এইখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। (আমি)
_ কেনো? ওই মেয়েকে ভয় পাইছিস নাকি? (রাকিব)
_ তুই শালা এখনও বলদই থাকলি। (আমি)
_ এখানে তো আমরয় সবসময় আড্ডা দেই। বল এখান থেকে কেনো যাবো? (রাকিব)
_ ওই মেয়ে এখন যদি আমাকে মারার জন্য
লোক ডেকে নিয়ে আসে তাহলে কি হবে? (আমি)

_ তুই মার খাবি। (রফি)
_ আমি বলবো তোরা আমাকে এসব করতে বলেছিস। তখন মজা বুঝবি। (আমি)
_ বুঝেছি। এখন এখান থেকে চল। (ইমন)
_ দোস্ত মেয়েটা কিন্তু খুব সুন্দরি। (রাকিব)
_ হুম দেখলাম তো। কিন্তু দোস্ত আফসোস মেয়েটার নাম জানতে পারলাম না। (আমি)
_ এ নিয়ে তুই চিন্তা করিস না। আমি জেনে নিবো। (ইমন)
_ আচ্ছা, এখন চল ক্যান্টিনে যাই। (আমি)
_ খাওয়াবি নাকি? (রাকিব)

_ ইমনর কাছে ১০০০ টাকা পাই। ওই টাকাটা দিয়ে এখন খাবো। (আমি)
_ আমার কাছে কোনো টাকা নেই। (ইমন)
_ খাওয়াবি না গার্লফ্রেন্ড হারাবি? (আমি)
_ তুই তো দেখছি বন্ধু নামের ডাকাত। জোর করেই খাবি। (ইমন)
_ নিজের করা গর্তে নিজেই পড়ছিস, আমাকে কেনো দোষ দিস? (আমি)
_ আর কোনো কথা নয়। এখন শুরু হবে গার্লফ্রেন্ড ফিরে পাওয়া পার্টি। (রাকিব)
_ ওকে দোস্ত।

খাওয়া শেষ করে ক্লাসে আসলাম। ভদ্রভাবে ক্লাস শেষ করলাম।
_ কাল কখন আসবি? (ইমন)
_ সকালেই। (আমি)
_ দেরি করিস না যেনো। (রাকিব)
_ আচ্ছা। ওহ! তোদের একটা কথা বলবো মনেই নেই। (আমি)
_ কি কথা? (রাকিব)

_ দোস্ত কয়েকদিন পর তোদের এলাকায় চলে আসছি। (আমি)
_ -ভালো কথা। আমাকে একটু তারাতারি বাসায় যেতে হবে। (ইমন)
_ আমাদের কাছে মিথ্যা কথা বলতে হবে না। বল গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবি। (আমি)
_ বুঝেছিস যখন তাহলে এখান থেকে যা। (ইমন)
_ আচ্ছা যাচ্ছি। তুই তোর গার্লফ্রেন্ডের সাথে থাক।
একটু পর বাসায় চলে আসি।

রাতে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি। এমন সময় আব্বু আসলো।
_ ফোনের মধ্যে কি আছে অতো মনোযোগ সহকারে দেখছো? (আব্বু)
_ আসলে আব্বু একটা নিউজ পরছিলাম। (আমি)
_ আমাকে মিথ্যা বলতে হবে না। আমি দেখেছি তুমি ফেসবুক চালাচ্ছিলে। ফেসবুক চালালো বাদ দিয়ে একটু পড়াশুনায় মনোযোগ দিলে ভালো হবে। (আব্বু)
_ আচ্ছা আব্বু।
_ আর শোনো আমরা কালই নতুন বাসায় যাচ্ছি। সকালে অনেক কাজ আছে। তাই তোমাকে বললাম। (আব্বু)
_ আচ্ছা আব্বু।

সকালে বাসার সবকিছু ট্রাকে তুলে চললাম নতুন বাসার দিকে। একঘন্টার মধ্যে নতুন বাসায় পৌচ্ছে গেলাম। বাড়িটা দুতলা। নিচতলায় আমরা থাকবো।
বাসার জিনিস পত্র ট্রাক থেকে নামিয়ে ফেললাম। সবকিছু বাসার ভেতরে গোছাতে দুপুর হয়ে গেলো। কাজ করতে করতে ঘেমে গেছি। গোসল করা দরকার।
বাথরুমে গিয়ে দেখি পানি নেই।

_ আব্বু বলল, “দোতলায় গিয়ে তোর বাড়িওয়ালি আন্টিকে বল।”
আব্বুর কথামতো দোতলায় উঠে কলিংবেল চাপলাম।
একটু পর একটা সুন্দরি মেয়ে দড়জা খুলে দিলো।
আমাকে দেখে মেয়েটা বলল…….


পর্ব ০২

বাথরুমে গিয়ে দেখি পানি নেই।
_ আব্বু বলল, “দোতলায় গিয়ে তোর বাড়িওয়ালি আন্টিকে বল।”

আব্বুর কথামতো দোতলায় উঠে কলিংবেল চাপলাম।
একটু পর একটা সুন্দরি মেয়ে দড়জা খুলে দিলো।
_ আমাকে দেখে মেয়েটা বলল, কে আপনি?
_ আপনাদের নতুন ভাড়াটিয়া, আমি বললাম।
_ আপনাদের রুম তো নিচে। এখানে কেনো? মেয়েটি রেগে বলল।
_ একটা দরকার ছিল, তাই আসলাম। নরম সুরে বললাম।

_ সুন্দরি মেয়ে দেখলেই একটা অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে চাওয়া ছেলেদের একটা বদ অভ্যাস, এটা আমি জানি।
এমনিতেই সকাল থেকে কাজের উপর আছি। তার উপর একটা অচেনা মেয়ের ঝারি শুনে রাগটা লাফ দিয়ে ১০০ ডিগ্রিতে উঠে গেলো। মনে হচ্ছে দিয়ে দেই দুটো থাপ্পর। না থাপ্পর দেওয়া যাবে না, থাপ্পর দিলে বাসা ছাড়তে হবে। তাই আবার নরম সুরে বললাম, “আসলে আপনি যা ভাবছেন তা নয়। সত্যি আমার কথাটা বলার দরকার ছিলো।”
_ একটা অপরিচিত ছেলের সাথে কোনো কথা নেই। এখুনি এখান থেকে যান বলছি, মেয়েটি চেচিয়ে বলল।
_ রাগটা আর নিজের মধ্যে রাখতে পারলাম না। মেরে দিলাম একটা থাপ্পর।
আমাকে মারলেন কেনো? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল।

ওই চুপ! একদম কাঁদবি না। এখন আমি বলবো আর তুই শুনবি। তুই নিজেকে খুব সুন্দরি ভাবিস তাই না। কিন্তু আমি তোকে সুন্দরি ভাবি না, পেত্নী ভাবি। কেনো জানিস চামড়া সাদা হলে সুন্দর হওয়া যায় না। সুন্দর হতে হলে সু্ন্দর মন দরকার। যা তোর নাই। আমি তোর মা’কে বলতে এসেছিলাম ট্যাপে পানি নেই। কিন্তু তোর জন্য আর বলা হলো না।
_ কি হয়েছে মা শম্পা? এতো চেঁচামেচি কেনো? ভেতর থেকে একটা নারি কন্ঠ ভেসে এলো।
_ মেয়েটা মানে শম্পা কিছু বলল না। একটু পর একজন মহিলা রুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল।
“আন্টি আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?” আমি বললাম।
_ ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা ভালো আছি।

_ তোমাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? বাড়িওয়ালি আন্টি বলল।
_ আন্টি আসলে ট্যাপে পানি নেই। সেটা বলতে এসেছিলাম। আমি বললাম।
_ ওহ। আমি পানির লাইন চালু করে দিচ্ছি। আর কোনো সমস্যা হবে না। বাড়িওয়ালি আন্টি বলল।
_ ধন্যবাদ আন্টি। এখন আসি।

_ বাবা একটু দাড়াও, পরিচয় করিয়ে দেই এটা আমার ছোট মেয়ে শম্পা। বাড়িওয়ালি আন্টি বলল।
_ আন্টি আমি ওনার সাথে একটু আগে পরিচিত হয়েছি। খুব সুন্দর ওনার ব্যবহার।
_ রাতে আমার বাসায় তোমাদের সকলের দাওয়াত রইলো। আসবে কিন্তু।
_ আচ্ছা আন্টি আসবো। বসায় কিছু কাজ আছে। এখন আমাকে যেতে হবে।
_ আচ্ছা যাও।

রুমে এসে শুয়ে পরলাম। একটু পর গোসল করে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুম ভাংলো ফোনের রিংটনে। তাকিয়ে দেখি ইমন ফোন দিছে।
_ হ্যালো, বল কি হয়েছে।

_ অনেক কিছু হয়েছে। আগে বল তুই আজ ভার্সিটিতে আসিস নি ক্যান?
_ আর বলিস না। আজই বাসা পাল্টে ফেললাম। তাই আজ যেতে পারিনি।
_ ওহ, ভালো করেছিস। বিকেলে তোদের ওখানে আসছি। ঠিকানা দে।
_ ঠিকানা তোকে মেসেজ করে দিচ্ছি।
_ এসে সব কথা বলবো।
_ আচ্ছা।

বিকেলে ইমন বাসায় আসে। ওর সাথে বাইরে ঘুড়তে যাই।
দোস্ত গতকালের মেয়ের কথা মনে আছে তো?

_ হুম মনে আছে। তা কিছু হয়েছে নাকি?
_ তেমন কিছু না। আজকে ওই মেয়েকে দেখলাম আমাদের উওর পাশের রুমে ক্লাস করছে।
_ ওই রুমে তো আমাদের জুনিয়রদের ক্লাস করানো হয়।
_ হুম, অনেক কষ্ট করে ওর নামটা জানতে পেরেছি।
_ দোস্ত মেয়েটার নাম কি?

_ ইফতি।
_ নামটা তো অনেক সুন্দর। দোস্ত আজ একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিস।
_ আবার কাউকে নিশ্চই মেরেছিস?
_ হুম, মেরেছি।
_ কাকে?
_ বাড়িওয়ালির মেয়েকে।
_ কিহ! তোকে কিছু বলল না?

_ -ইমনকে দুপুরের ঘটনা খুলে বললাম।
_ _ দোস্ত ঠিক করেছিস।
_ _ হুম। দোস্ত সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যেতে হবে।
_ আচ্ছা দেখেশুনে যাস।
রাতে রুমে শুয়ে আছি। এমন সময় আম্মু আসলো।
_ আম্মু কিছু বলবে?
_ হুম।
_ কি? বলো…

_ _ রাতে খাবার জন্য তোর বাড়িওয়ালি আন্টি দাওয়াত দিছে। তোকেও সাথে যেতে হবে।
_ -মা তুমি আর আব্বু যাও, আমি যাব না।
_ কেনো যাবি না?
_ ভালো লাগছে না।
_ কেউ দাওয়াত দিলে যেতে হয়।
_ -কিন্তু মা…..
_ -কোনো কিন্তু নয়। তোর আব্বু বসে আছে, চল।
_ -তোমরা যাও আমি আসছি।
_ আচ্ছা।

আমি আব্বু আম্মু চললাম দুতলায় দাওয়ত খেতে। আম্মু কলিংবেল চাপলো। আন্টি দড়জা খুলে দিলো। আমরা সবাই ভেতরে ঢুকলাম।
আন্টি সোফা দেখিয়ে বলল, “আপনারা এখানে বসুন। আমি খাবার রেডি করছি।”
_ আমরা বসে আছি। একটু পর আন্টি এসে বলল, ” চলেন সবাই। এখন খাবেন।”
খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। ভার্সিটিতে প্রপোজ করা মেয়ে এখানে কেনো? সাথে বসে আছে দুপুরের রাগিনী। দুজন আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে। মাথাটা কেমন যেনো গুলিয়ে যেতে লাগলো।
_ হঠাৎ আন্টি বলল……

_ খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। ভার্সিটিতে প্রপোজ করা মেয়ে এখানে কেনো? সাথে বসে আছে দুপুরের রাগিনী। দুজন আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে। মাথাটা কেমন যেনো গুলিয়ে যেতে লাগলো।
হঠাৎ আন্টি বলল, “আপনারা দড়িয়ে আছেন কেনো? চেয়ারে বসুন।
_ জ্বি আন্টি আমরা বসছি।
_ আম্মু বলল, “এরা দুজন নিশ্চই আপনার মেয়ে।”
_ হ্যা, এরা দুজন আমাদের মেয়ে।

_ তোমাদের নাম কি মা?
_ জ্বি আন্টি আমার নাম ইফতি আর ওর নাম শম্পা।
_ বাহ! ভারী মিষ্টি নাম। তোমাদের পড়াশোনা কতদূর?
_ জ্বি আন্টি আমি আনার্স ১ম বর্ষে আর শম্পা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
_ ভালো। তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই এ হলো আমার ছেলে শিমুল।
_ আন্টি বলল, “শিমুল খুব ভালো ছেলে। আমি প্রথম দেখাতেই বুঝেছি।”
_ ধন্যবাদ আন্টি।

_ ইফতি আর শম্পার দিকে চোখ পরতেই শক খেলাম। দু বোনই আমার দিকে গুন্ডী লুকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে একা পেলে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবে। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কি করা যায়? আসলে বিপদের সময় কোনো বুদ্ধি মাথায় আসে না। এখান থেকে কেটে পরলে বাঁচা যায়। কিন্তু কিভাবে?
খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আর কোনো কথা নয়।
এখান থেকে কেটে পরার বুদ্ধি একটা পেয়েছি।
_ আন্টি আমি খেতে পারবো না।
_ কেনো বাবা?

_ আসলে আন্টি সন্ধ্যার সময় বন্ধুর বাসা থেকে খেয়ে আসছি।
_ তো কি হয়েছে। আমি তোমার মতো থাকতে দিনে পাঁচ বার খেতাম। আর তুমি অল্প কিছু খেতে পারবে না? (আঙ্কেল)
_ -কি বলবো ভেবে পেলাম না। আমার দিকে তাকিয়ে ইফতি শয়তানি হাসি দিলো। এই রকম অবস্থায় নিজেকে অসহায় মনে হতে লাগলো।
_ কথা বলছো না কেনো? (আন্টি)
_ অল্প দিয়েন।
_ আচ্ছা।
_ তারাতারি খাওয়া শেষ করলাম। উঠতে যাব এমন সময় আন্টি বলল, “এখনি চলে যাবে?”
_ হুম, কালকে ক্লাসে গুরুত্বপূর্ণ পড়া দিয়েছে। ওগুলো পড়ে শেষ করতে হবে।

_ তুমি পড়ালেখায় কত মনোযোগী আর আমাদের শম্পা একদমই পড়তে চায় না।
_ ওকে ভালো শিক্ষকের কাছে পড়ান। চলি আন্টি।
_ যাক বাবা কোনোমতে ওখান থেকে সরে আসতে পেরেছি। ইমনকে ফোন দেওয়া উচিৎ।
_ হ্যালো ইমন কি করিস?
_ এইতো শুয়ে আছি। তোর কন্ঠ এমন লাগছে ক্যান?
_ আর বলিস না। ভার্সিটিতে যাকে থাপ্পর মারছিলাম ও আমাদের বাড়িওয়ালির মেয়ে।
_ বলিস কি? তোর তো এখন উভয় সংকট।
_ এখন কি করব বল?

_ তোর কেসটা জটিল। ওদের দু বোনকে মেরেছিস। ওর বাসার লোক জানতে পারলে তোদের বাসা ছাড়া করবে। আমার মতে তুই ওদের কাছে ক্ষমা চা। ওরা মাফ করে দিতে পারে।
_ দোস্ত এ তুই কি বলছিস?
_ হ্যা আমি ঠিকই বলছি। এই বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করলে বাসার কেউ জানতে পারে। এতে তোর ক্ষতি বেশি হবে।
_ আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
_ আচ্ছা, তবে আমার কথাটা একটু ভেবে দেখিস।

_ ওকে, রাখলাম।
এখন কি করি? যদি মাফ না করে উল্টো থাপ্পর দেয় তাহলে মান সম্মান আর থাকবে না। আবার যদি আম্মু আব্বুর কাছে বলে দেয় তাহলে আমার উপর এতোদিনের বিশ্বস সব শেষ হয়ে যাবে। কোন দিকে যাবো আমি?

সারারাত টেনশনে ভালো ঘুম হলো না। শেষরাতের দিকে ঘুম আসি। সকালে আম্মু নামাজ পড়ার জন্য ডাকা শুরু করলো। তারাতারি উঠে নামাজ পরলাম।
বাসার ছাদটায় গিয়ে আশপাশ দেখে হয়তো মনটা ভালো হতে পারে। তাই ছাদে চললাম। আশপাশটা ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। মনটা ভালো হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর পূর্ব রাকিবে সূর্য আস্তে আস্তে বের হচ্ছে।

কারো ছাদে ওঠার শব্দে চমকে পিছন ফিরে তাকালাম। একটু পর ছাদের গেট ঠেলে শম্পা প্রবেশ করলো।

_ কেমন আছো শম্পা?
_ আপনি জেনে কি করবেন?
_ এই মেয়েকে একটা থাপ্পর দিয়েও বাঁকা কথা সোজা করা গেলো না। আরও সোজা করার ইচ্ছা অবশ্য আছে। কিন্তু সেটা করতে গেলে কপালে দুঃখ আছে।
_ কি ভাবছেন? আবার থাপ্পর মারবেন নাকি?

_ (এ কি মেয়েরে বাবা! মনের কথাও বুঝতে পারে। )আসলে সেদিন রাগে তোমাকে থাপ্পর মেরেছিলাম। এজন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। অবশ্য তুমি ক্ষমা না করে আমাকে থাপ্পর মেরে প্রতিশোধ নিতে পারো, আমি কিছু মনে করবো না।
_ আপনি অপরাধ করেছেন। সেজন্য সাজা পেতেই হবে। তবে আপনার সাজাটা হবে একটু অন্যরকম।
_ অন্যরকম করতে হবে না। তুমি থাপ্পর মেরে শোধ নাও।
_ বলেছি তো আমি অন্যরকম প্রতিশোধ নেবো।
_ তোমার অন্যরকম প্রতিশোধ কি শুনি?

_ প্রতিশোধ তো নিতেই হবে। আপনি আমার বয়সে বড়। তাই আপনাকে মারবো না। আপনার শাস্তিটা হলো ১০ দিন সকালে ১০ বার করে আমার সামনে কান ধরে উঠবস করতে হবে।
_ এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
_ তাহলে আমি চললাম আম্মুর কাছে।
_ এই দাড়াও।
_ আবার কি হলো?
_ শাস্তিটা একটু কম করা যায় না?
_ না।

_ প্লিজ একটু কম করো।
_ আচ্ছা ১০ দিন থেকে কমিয়ে ৭ দিন দিলাম। এখন তারাতারি উঠবস শুরু করুন।
_ চারিদিকে চেয়ে দেখি আশেপাশের বাসাগুলোর ছাদে কেউ নেই। চোখ বন্ধ করে উঠবস শুরু করলাম।
_ এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ………দশ। হয়েছে এখন থামুন।
_ আমি উঠে দাড়ালাম। শম্পার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে যুদ্ধ জয়ের হাসি।
_ মেজাজটা বিগড়ে গেলো। মনে হচ্ছে থাপ্পর দিয়ে ওর হাসিটা বন্ধ করি। তা করলে আমার ১০ বার উঠবস করাটাই বৃথা যাবে। রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্চা করছে। শম্পাকে কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলাম।
_ রুমে আসতেই মা বলল, পড়া বাদ দিয়ে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
_ ছাদে হাওয়া খেতে গেছিলাম। (রেগে)

_ কি হয়েছে তোর? এমন করে কথা বলছিস কেনো?
_ আমার কিছু হয়নি। এক গ্লাস পানি দাও। পানি খাবো।
_ -এই নে পানি।
_ পানি খেয়ে গ্লাসটা ফেরত দিলাম।
_ এই নে বাজারের ব্যাগ। তারাতারি বাজার করে নিয়ে আয়।
_ ধুর আর ভালো লাগেনা।

_ আজ সকাল থেকে তোকে অন্যরকম দেখছি? কি হলো তোর?
_ মা আমার কিছু হয়নি, এখন টাকাটা দাও বাজারে যাই।
_ এই নে টাকা।
বাজার করে বাসায় আসলাম। কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে গোসল করলাম। তারপর নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দশ্যে বের হলাম।
_ নাহ, এমন এলাকায় বাসা নিছে সকালে রিকশাা পর্যন্ত দেখছি না। এদিকে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একটা রিকশা পেলাম। রিকশায় উঠে বসছি। এমন সময় পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে ডাক দিলো, “এইযে হবু বর।”
আমি ভাবলাম আমার বিয়ে ঠিক হয়নি। তাই আমি কারো হবু বর না।
তাই রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম, ” রিকশা চালান।”
রিকশা চলতে শুরু করলো।

মেয়েটি আবার ডাক দিলো এইযে আমার হবু বর শিমুল, “আমাকে ফেলে একা চলে যেওনা।”
মেয়েটা আমার নাম বলে কেনো? মেয়েটাকে দেখার জন্য পেছন ফিরে তাকালাম। হায় আল্লাহ! আমার চোখ একি দেখলো? এতো ইফতি।


পর্ব ০৩

_ মেয়েটি আবার ডাক দিলো এইযে আমার হবু বর শিমুল, “আমাকে ফেলে একা চলে যেওনা।”
মেয়েটা আমার নাম বলে কেনো? মেয়েটাকে দেখার জন্য পেছন ফিরে তাকালাম। হায় আল্লাহ! আমার চোখ একি দেখলো? এতো ইফতি।
ইফতি আমার দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো।
_ এই মামা রিকশা থামাও।

ইফতি আমার কাছে চলে আসলো।
_ এই আমাকে একলা করে চলে যাচ্ছো কেনো?
_ তো তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে বুঝি।
_ বারে দেখছি তোমার কিছুই মনে থাকে না।
_ -কি মনে রাখতে হবে হ্যা?
_ আমি তোমার হবু বউ এটা তোমার মনে থাকে না কেনো?
_ তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
_ আমার মাথা ঠিকই আছে। তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এই সরে বসো। আমি তোমার পাশে বসবো।
_ -তুমি আমার সাথে যাবে এটা অসম্ভব।

_ আমাকে না নিলে চিৎকার করবো কিন্তু।
এ কেমন মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে বাবা। এখন যদি চিৎকার করে তাহলে মান সম্মান সব চলে যাবে। তার চেয়ে পাসে বসতে দেওয়া ভালো।
_ রিকশার একপাশে সরে বসলাম। ওমনি ইফতি আমার পাশে বসে পড়লো।
_ এইতো আমার লক্ষি হবু বর।
_ আচ্ছা তোমাকে কে বলেছে আমি তোমার হবু বর?
_ তুমি তো বলেছো।

_ আমি কখন বললাম?
_ বারে তুমি তো দেখছি সবই ভুলে যাও। তবুও এটা কোনো সমস্যা না। বিয়ের পর থেকে আমি তোমাকে সব মনে করে দেবো।
_ আল্লাহ এই পাগলি মেয়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করো। (মনে মনে)
_ এই কি বললে?
_ কিছু না তো। আচ্ছা তুমি আমাকে এটা বলো আমি তোমাকে কখন বলেছি তোমাকে বিয়ে করবো?
_ সেদিন আমাকে প্রপোজ করলে তোমার মনে নেই।
_ হ্যা করেছি। বিয়ের কথা কখন বললাম?

_ জোর করে বিয়ে করার কথা বলেছো। আমাকে জোর করে বিয়ে করতে হবে না। আমি তোমাকে এমনি বিয়ে করতে রাজি আছি।
_ আমি তো তখন মজা করে বলেছিলাম।
_ তাহলে আমিও মজা করে তোমার আব্বু আম্মুকে বলে দেই।
_ এই খবরদার আব্বু আম্মুকে কিছু বলবে না।
_ বলবো না এক শর্তে।
_ কি শর্ত? এখন থেকে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।
_ এটা আমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। আমি এটা মানবো না।

_ আমি আবারও বলছি আমার কথা শুনবে না বাড়ি ছাড়বে?
_ কোনোটাই না।
_ তাহলে তোমার আব্বু আম্মুকে সত্যি বলতে হবে। এই মামা রিকশা থামাও, আমি বাড়ি যাবো।
_ এখন বাড়ি যাবে কেনো?
_ তোমাদের বাড়ি ছাড়া করতে যাবো।
_ এখন গিয়ে যদি সত্যি সত্যি বলে দেয় তাহলে তো আমাদের বাড়ি ছাড়া করতে পারে। আমাকে কিছু একটা করতে হবে।
_ হ্যা বুদ্ধি পেয়েছি। আমার ডান হাত দিয়ে ওর বাম হাত চেপে ধরে বললাম এই প্লিজ যেও না। আমি তোমার সব কথা শুনবো। কিন্তু বাসার কাউকে কিছু বলো না।
_ এইতো গুড বয়। এবার আমার হাতটা ছাড়ো।

_ ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম। আপাতত বাঁচা গেলো।
_ শোনো তোমার ১ম কাজ হলো আমার সাথে ভার্সিটি যাবে আসবে।
_ আমাকে আর কি করতে হবে?
_ আপাতত এটাই তোমার কাজ।
_ আচ্ছা ম্যাডাম।
_ ভার্সিটি পৌচ্ছে গেছি। রিকশা থেকে নেমে ইফতিকে বললাম ম্যাডাম ভাড়াটা দিয়ে দিন।
_ একটা নিরীহ মেয়ের কাছে ভাড়া চাইতে তোমার লজ্জা করে না?

_ অপমানিত হয়ে নিজেই ভাড়াটা দিয়ে দিলাম।
_ এই তোমার ফোনটা দাও।
_ আমার ফোন দিয়ে তুমি কি করবে?
_ দিবে কি না বলো? (রেগে)
এই মেয়ের এত সাহস আসলো কোথায় থেকে বুঝতে পারলাম না। বিপদে যেহেতু পরেছি তাই ওর কথা শুনতেই হবে। এজন্য ফোনটা ওকে দিয়ে দিলাম।
_ কিছুক্ষণ ফোন টিপাটিপি করে আমাকে দিয়ে দিলো।
_ -এইযে ম্যাডাম আমি চললাম।
_ এই শোনো।
_ কি?

_ যাবার সময় আমাকে নিয়ে যাবে।
_ এই মেয়ে আমি তোমার বড়। তাই আমাকে আপনি করে বলবে।
_ আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো। তুমি কতো ভালো শোনা যায় তাই না?
_ আসলে বিপদে পরেছি। তা না হলে থাপ্পর মেরে তোমর ভূত ছাড়াতাম।
_ মারো থাপ্পর, দেখি কত জোরে মারতে পারো?
_ তোমার সাথে ফালতু প্যাচাল করার আমার সময় নাই বলে চলে আসলাম।
বিপদের সময় হারামি বন্ধুগুলোকেও কাছে পাওয়া যায় না। ওদের এখন কোথায় খুজি?
ফোন দিলেই তো ওদের পাওয়া যাবে। আসলে বিপদের সময় বুদ্ধিগুলো পালিয়ে যায়।
_ হ্যালো ইমন কোথায় তুই?
_ আমি ভার্সিটির ছাদে আছি। তুই কোথায়?
_ তুই ওখানেই থাক। আমি তোর কাছে আসছি।
_ আচ্ছা।
প্রায় দৌড়ের মতো গিয়ে ইমনর কাছে গেলাম।
_ দোস্ত আমি তো একবারে শেষ।
_ তোর আবার কি হলো?

_ আর বলিস না ওরা দুই বোন আমাকে ব্লাকমেইল করছে।
_ কিভাবে?
_ সকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা ওদের বললাম।
_ আমি বললাম, সব তোদের জন্য হয়েছে। সেদিন আমাকে দিয়ে ওসব না করালে আমার এই অবস্থা হতো না। এখন বল আমি কি করবো?
_ দেরি কর ভাবতে হবে।

_ আচ্ছা ভাব। কিন্ত আমি এর উপায় চাই।

_ তুই এক কাজ কর, ইফতিকে পটিয়ে ওর সাথে প্রেম কর। তাহলে অন্ত একটার হাত থেকে বাঁচবি।
_ তোর মাথা ঠিক আছে তো? আমি করবো প্রেম?
__ এছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

_ তুই তো জানিস আমাকে কেউ উল্টাপাল্টা কিছু বললে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আর মনে হয় ওই মেয়ের মাথার তাঁর ছেড়া আছে। কখন কি বলবে আবার যদি থাপ্পর মারি তাহলে আমার সব যাবে।
_ আরে বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হয়।
_ হুম তা জানি।
_ তাহলে কাজ শুরু করে দে।
_ কিন্তু দোস্ত প্রেম কিভাবে করতে হয় আমি তো জানি না।
_ শোন ওর সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবি, কথায়, আকার ইঙ্গিতে ওকে বোঝাবি তুই ওকে ভালোবাসিস।
_ এ তো অনেক বড় কঠিন কাজ।
_ হুম কঠিন, কিন্তু এই অসাধ্য সাধন করতে হবে।
_ দোস্ত চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠলো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার।
কলটা কেঁটে দিলাম। একটু পর আবার ওই নাম্বার থেকে কল আসলো।
কলটা রিসিভ করলাম।
_ আসসালামু আলাইকুম, কে আপনি?

_ তোর জম। ওই তুই আমার ফোন কাটলি কোন সাহসে?
_ (মেয়েটার কতবড় সাহস! তুই তুকারি করে কথা বলছে। )আপনি এতো অভদ্র কেনো? আপনার মা বাবা আপনাকে ভদ্রতা শেখায় নাই?
_ -অনেক শিখাইছে।
_ -তাহলে অভদ্রের মতো কথা বলছেন কেনো? আর কেউ সালাম দিলে তার জবাব দিতে হয়।
_ ওহ সরি। রাগে এমন হয়েছে। আর হবে না।
_ সরি বললেই সব অপরাধ মাফ করা যায় না।
_ আপনাকে কাছে পেলে থাপ্পর দিয়ে শিক্ষা দিতাম।

_ ওই তোমার হাতে কি বেশি জোর হয়েছে যে মেয়েদের খালি থাপ্পর দাও?
_ হ্যা হয়েছে।
_ তাহলে আসো আমাকে থাপ্পর মেরে যাও।
_ মেয়েটার এমন কথা শুনে পাগলি টাইপের মনে হলো। তাই বললাম বাই পাগলি আপনার সাথে ফালতু কথা বলার সময় নেই।
_ -ওই আমি পাগলি! আজ তুই বাসায় আয় আমি তোর মাথা ফাটাবো।
_ এ তো দেখছি সত্যিকারের পাগলি। পাগলিকে ক্ষেপিয়ে লাভ নেই। তাই ফোনটা কেটে দিলাম।

_ কি হয়েছে দোস্ত?
_ আর বলিস না। কোথাকার এক পাগলি ফোন করছিলো। বাদ দে ওসব কথা। এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।
_ আচ্ছা যা। তবে আমার কথামতো কাজ করিস কেমন।

_ আচ্ছা করবো।
আমি বাসার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলাম।

_ আর বলিস না। কোথাকার এক পাগলি ফোন করছিলো। বাদ দে ওসব কথা। এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।
_ আচ্ছা যা। তবে আমার কথামতো কাজ করিস কেমন।
_ আচ্ছা করবো।
আমি বাসার উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলাম।
যেতে যেতে ভার্সিটির গেটে পৌচ্ছালাম। একটু অপেক্ষা করতেই রিকশা পেয়ে গেলাম। রিকসাতে উঠতে যাবো এমন সময় ইফতি চলে আসলো।
_ এই তুমি আমাকে পাগলি বললে কেনো?
_ তোমাকে পাগলি কখন বললাম?
_ একটু আগে ফোনে বলেছো।
_ -ওহ! তাহলে তুমি একটু আগে ফোন করেছিলে?

_ হ্যা।
_ পরিচয় দিলে না কেনো?
_ মনে ছিলো না।
_ এই জন্য তো তোমাকে পাগলি বলেছি।
_ কিহ! আমি পাগলি? (রগি কন্ঠে)
_ -আরে না, তুমি তো অনেক ভালো মেয়ে।
_ আমি তো ভালো মেয়ে। কিন্তু তুমি পাগলি বললে কেনো?
_ সরি আর পাগলি বলবো না।
_ সরি বললে সব সমস্যার সমাধান হয় না। এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
_ এতো মানুষের মধ্য প্লিজ কিছু করো না। তাহলে মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তুমি চাইলে বাসায় গিয়ে শাস্তি দিতে পারো।
_ না তোমাকে আমি এখনি শাস্তি দেবো।
প্লিজ এখানে নয়। আড়ালে গিয়ে শাস্তি দিও।

_ আমি তোমাকে মারবো না। তবে জরিমানা করবো।
_ যাক বাবা বাঁচা গেলো। তা তোমাকে ১০ টাকা দিলে জরিমানা মিটবে?
_ ওই আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছো?
_ ওহ! তমি তো বড় মানুষ হয়ে গেছো। সেজন্য তোমাকে ৩০ টাকা দেই কেমন?
_ ওই ফাজলামি বাদ দাও। আমি ফুচকা খাবো। তুমি আমকে ফুচকা খাওয়াবে চলো।
_ তুমি বাচ্চা মেয়ে নাকি যে তোমাকে মুখে তুলে ফুচকা খাওয়াতে হবে?
_ তোমাকে খাইয়ে দিতে বলছি না।
_ তাহলে তোমাকে নিজে গিয়ে খেতে মানা কে করলো?
_ আমি খাবো আর তুমি টাকা দিবে এজন্য তোমাকে নিয়ে যাবো।
_ আমার কাছে অতো টাকা নেই।

_ তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো।
_ সত্যি বলছি।
_ তাহলে তোমার মানিব্যাগ দেখাও।
_ মানিব্যাগ নাই।
_ ছি! ছি! তুমি এতো মিথ্যা বলো আগে জানা ছিলো না।
_ কই মিথ্যা বললাম?
_ -সকালে তুমি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিকসা ভাড়া দিলে আমার সামনে তাও তমি বলছো তোমার কাছে মানিব্যাগ নাই?
_ এই যা মিথ্যা বলেও ধরা খেয়ে গেলাম। আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
_ কিছু বলছো না কেনো?
_ কি আর বলবো? বলার মতো কিছু নেই।
_ না থাকলে চলো ফুচকা খাবো।
গুনে চার প্লেট ফুচকা খেলো। কি রাক্ষস মেয়ে! এর সাথে যার বিয়ে হবে তার কপালে দুঃখ আছে।
আমাকেও জোর করে দুই প্লেট খাওয়ালো।

_ ওই কি ভাবছো?
_ কিছুনা।
_ তাহলে ফুচকার বিলটা দিয়ে দাও।
_ মামা বিল কতো?
_ ৩০০ টাকা।
ফুচাকার বিলের কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। আমার ৭ দিনের হাত খরচের টাকা এক দিনে শেষ করে দিলো। না জানি আমার আরও কত টাকা শেষ করবে একমাত্র আল্লাহ ভালো জানে।
_ চলো এখন বাসায় যাবো।
_ আমি যাবো না।
_ আচ্ছা যাওয়ার টাকা আমি দেবো। এখন চলো।
_ আহারে গরু মেরে জুতা দান করছে।
_ কিছু বললে?
_ না তো।

_ তাহলে চলো বাসায় যাই।
আমি রিকশায় উঠে বসলাম। রিকসা চলতে শুরু করলো।
বাসার সামনে চলে আসছি। রিকসা থামলে ইফতি ভাড়া দিয়ে দিলো।
_ এই শুনো।
_ জ্বি ম্যাডাম বলেন…..
_ -তোমাকে প্রথম দিন দেখে অনেক সাহসী মনে করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো দেখছি একটা ভীতুর ডিম।
_ কিহ আমি ভীতু?
_ তো তাছাড়া কি বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো।
মেয়েদের মন বোঝা বড় দায়। কারণ ক্ষণে ক্ষণে এর রং বদলায়।
যাই হোক ইফতির শেষ কথায় একটা রহস্যের গন্ধ পেলাম। সেই রহস্যটা আমাকে বের করতে হবে।
বাসায় এসে গোসল করে শুয়ে পরলাম।
_ এই দুপুরে শুয়ে পরলি যে, শরীর খারাপ করলো নাকি?
_ -না মা এমনিতেই।
_ -ওহ! তোকে একটা কথা বলার ছিলো।
_ মা কি কথা?
_ তোর এ বাড়িওয়ালি আন্টি তোকে ডেকেছে।

_ আন্টি আমাকে ডেকেছে কেনো?
_ সেটা তো আমি বলতে পারবো না।
_ ওহ! আচ্ছা মা আন্টি কখন এসেছিলো?
_ তুই আসার একটু আগে?
_ ও আচ্ছা। আমি গিয়ে আন্টির সাথে কথা পরে বলবো।
_ আচ্ছা।
শম্পা আবার আন্টিকে কিছু বলে দেয়নি তো? যদি বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে একমাত্র আল্লাহ ভালো জনে।
টেনশনে ঘুমাতেও পারলাম না।
সময় যেনো কাটছে না। বিকেল কখন আসবে?

অপেক্ষার সময় যেনো কাটে না। অবশেষে বিকেল আসলো।
আন্টির সাথে কথা বলতে দোতলায় উঠলাম।
_ আন্টিকে বললাম, “আমাকে ডেকেছিলেন?”
_ আন্টি বলল, “একটা কথা বলার ছিলো।”
_ কি কথা বলবে আল্লাহ ই ভালো জানে। মনে মনে সাহস নিয়ে বললাম, “জ্বি আন্টি বলুন।”
_ আসনে কথাটা তুমি কিভাবে নেবে?
_ এই কথাটা শুনে মনে হলো বিপদ আমার ঘনিয়ে আসছে। নিজেকে শক্ত করে বললাম, “আন্টি আপনি নির্ভয়ে বলুন।”
_ আসলে শম্পা বলল…
_ কি বলেছে শম্পা?

_ তুমি নাকি ভালো হিসাববিজ্ঞান পাড়ো। তাই শম্পা তোমার কাছে পড়তে চায়।
_ যাক বাবা বাঁচলাম। অন্যকিছু বলে নাই। পড়ার কথাই বলেছে।
_ কিছু বলছো না যে?
_ আসলে আন্টি….
_ আমি তোমার আম্মুর কাছে থেকে শুনেছি তুমি কাউকে পড়াও নাই।
_ হ্যা আন্টি, আম্মু ঠিক বলছে। আমার আসলে পড়ানোর অভিঙ্গতা নেই।
_ আসলে শম্পা খুব জেদী মেয়ে। তাই তোমাকে আবার অনুরোধ করছি।
_ -যদি না পড়াই তাহলে আন্টিকে ঐ দিনের কথা বলে দিতে পারে। কি করি এখন? সবকিছুর অভিঙ্গতা রাখতে হয়। এর মধ্যে থেকে পড়ানোর অভিঙ্গতা বাদ যাবে কেনো? তাই আন্টিকে বলে দিলাম আমি পড়াবো।

_ বাবা তুমি আমাকে বাঁচালে আমার জল্লাদ মেয়ের হাত থেকে।
_ আন্টি ওকে জল্লাদ বলছেন কেনো?
_ তুমি ওকে পড়াও তাহলে বুঝতে পারবে।
_ কি বিপদে পরলাম আমি? যা হবার হবে। ভেবে আর লাভ নেই।
_ আন্টি ওকে কখন থেকে পড়াতে হব?
_ রাত ৭ থেকে ৮ পর্যন্ত।
_ আচ্ছা। এখন তাহলে আমি আসি আন্টি।
_ আচ্ছা যাও।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রুমে চলে আসলাম। একটু পর শম্পাকে পড়াতে যেতে হবে। কি থেকে পড়ানো শুরু করবো বুঝে উঠতে পারলাম ন।
এরা দু বোন আমাকে নিয়ে খেলা শুরু করেছে। আমাকে এরা কি করতে চায়? এদের কথায় কিছু বুঝতে পারি না।
এখন এসব নিয়ে ভাবা যাবে না। পড়াতে যেতে হবে। চললাম জীবনের প্রথম প্রাইভেট পড়াতে……..


পর্ব ০৪

এরা দু বোন আমাকে নিয়ে খেলা শুরু করেছে। আমাকে এরা কি করতে চায়? এদের কথায় কিছু বুঝতে পারি না।
এখন এসব নিয়ে ভাবা যাবে না। পড়াতে যেতে হবে।
চললাম জীবনের প্রথম প্রাইভেট পড়াতে।

দোতলায় উঠে কলিংবেল চাপলাম। একটু পর শম্পা দড়জা খুলে দিলো।
ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরতে পারলাম না। আসলে শম্পাকে লাল শাড়িতে একদম অপরূপ সুন্দরি লাগছে।
_ এমন করে কি দেখছেন?

_ কিছু না তো।
_ আপনার চোখ বলছে আপনি মিথ্যা বলছেন।
_ আসলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
_ তাই?
_ হুম।
_ ধন্যবাদ।
_ বাহিরেই দাড়িয়ে থাকবো নকি?
_ ওহ! কথা বলতে বলতে ভুলেই গেছি। ভেতরে আসুন।
ভেতরে গেলাম।
_ তোমার পড়ার টেবিলে চলো।
_ চলুন আমার সাথে।

শম্পার পিছু পিছু চললাম। একটু পর ওর রুমে প্রবেশ করলাম।
আমার রুমের মতো না। বেশ সুন্দর করে গোছানো। এক কথায় রুমটা ভালো লেগে গেলো।
শম্পা টেবিলের পাশে একটা চেয়ার দেখিয়ে আমাকে বসতে বলল। আমি চেয়ারে বসে পরলাম। টেবিলের অপর প্রান্তে আরেকটা চেয়ারে শম্পা বসলো।
এভাবে কখনও কোনো মেয়ের সামনে বসা হয়নি। তাই ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছি। কি বলে পড়ানো শুরু করবো বুঝে উঠতে পরলাম না।
_ কি ভাবছেন?
_ কিছু না।

_ আজকে কিন্তু আমি পড়বো না।
_ কেনো পড়বে না?
_ এমনি। এটা আমার ইচ্ছা।
_ আমি এটা মানতে পারবো না।
_ না মানলে কিছুই করার নাই। আর বেশি চলাকি করলে আম্মুর কাছে আগের কথা বলে দেবো।
_ যাও বলো গিয়ে। আমি তোমাকে পড়াবোই না। (রেগে)
_ আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেনো?

_ তো তোমার কথা শুনে কি করবো বলো?
_ আসলে….
_ -বলতে হবে না। একটা থাপ্পরের জন্য কান ধরে উঠবস করিয়েছো। এতেও তোমার শান্তি হয়নি। এখন আবার ব্লাকমেইল করছো।
_ সরি।
তোমাকে সরি বলতে হবে না। তুমি তোমার আম্মুকে গিয়ে সব বলে দাও। তিনি হয়তো আমাদের বাসা থেকে বের করে দিবে। এতে আমার ভালোই হবে। অন্তত তোমার ব্লাকমেইলের হাত থেকে বাঁচা যাবে। আমি আর এখানে এক মুহূর্ত থাকতে চাই না বলে চেয়ার থেকে উঠে পরলাম।
_ শম্পা উঠে আমার হাত চেপে ধরলো।
_ আমার হাত ধরলে কেনো?
_ আপনি এভাবে চলে গেলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে আর কখনও ব্লাকমেইল করবো না।
_ সত্যি বলছো তো।

_ হুম সত্যি সত্যি সত্যি।
_ আমার একটা কথা আছে।
_ কি কথা?
_ তোমাকে পড়ানোর সময় আমাকে স্যার বলবে।
_ আচ্ছা চেষ্টা করবো।
_ আচ্ছা।
_ এখন তাহলে পড়ানো শুরু করেন।
শম্পাকে কিছুক্ষণ
পড়িয়ে চলে আসলাম।

যাক একটার হাত থেকে বাঁচলাম। আরেকটার হাত থেকে বাঁচতে পারলাই হয়।
এই শুভ সংবাদটা ইমনকে দিলে ভালোই হয়। তাই ওকে ফোন করলাম।
প্রথমবার ফোন দিলাম। ফোন ওয়েটিং। দ্বিতীয় বারও তাই। তৃতীয় বার ফোন ধরলো।
_ এতক্ষণ কার সাথে কথা বললি?
_ গার্লফ্রেন্ড ফোন করছিলো।
_ তা তোর গার্লফ্রেন্ড কি বলল?
_ আর বলিস না। খুব টেনশনে আছি।
_ কি হয়েছে আমাকে বল?
_ ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
_ বলিস কি?
_ হ্যা রে দোস্ত তুই কিছু একটা কর।
_ কবে বিয়ে বল?
_ আর ৭ দিন পর।

_ তুই কোনো টেনশন করিস না। আমি তোদের পালানোর সব ব্যবস্থা করে দেবো।
_ ধন্যবাদ দোস্ত।
_ বন্ধুর বিপদে বন্ধু পাশে দাড়ালে না তো কে দাড়াবে? আর ধন্যবাদ দিয়ে তুই ধন্যবাদ দিয়ে আমাদের বন্ধুত্বকে ছোট করিস না। মনে কর এটা আমার কর্তব্য।
_ তুই কি যেনো বলতে ফোন দিছিস?
তেমন কিছু না। তোর খোজ নিতে ফোন করছিলাম। (ওকে মিথ্যা বললাম। কারণ ওর এখন কষ্টের সময়। ওকে শান্তনা না দিয়ে আমার খুশির কথা বললে ইমন মনে কষ্ট পেত। তাই বললাম না। )
_ ও আচ্ছা।
_ টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

_ ফোনটা কেটে দিলাম। ভেবেছিলাম আজ একটু শান্তিতে ঘুমাবো। তা আর হলো না।
সকালে ঘুম ভাংলো আম্মুর ডাকে। ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরলাম। নামাজ শেষ করে ছাদে গেলাম।
আজ আর কেউ ছাদে আসলো না। একটু পর নেমে আসলাম।
নাস্তা করে রেডি হলাম ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
_ আমাকে ফেলে চলে যেওনা যেনো।

ইতি
ইফতি

আমিও মেসেজ দিলাম।
_ তুমি কি কচি খুকি যে একলা যেতে ভয় করে?
_ হ্যা আমি কচি খুকি। তুমি আমাকে নিয়ে যাবে।
_ আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবো না।
_ কেনো পারবে না?

_ এমনি।
_ তুমি আমাকে নিয়ে যাবেই।
_ আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড বা বর না। তাই তোমাকে সাথে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
_ তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি আমাকে তোমার সাথে নেবে কি না?
_ নেবো না। পরলে তুমি কিছু করো।
_ ওকে তোমাকে দেখাচ্ছি মজা!
_ দেখি তুমি কেমন মজা দেখাতে পারো।
_ আচ্ছা।
এদিকে ইফতি এসে আম্মুকে বলল,
_ আন্টি কেমন আছেন?
_ ভালো, ইফতি মা তুমি কেমন আছো?

_ আন্টি বেশি ভালো না।
_ কেনো মা কি হয়েছে?
_ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় কিছু বখাটে ছেলেরা বাজে কথা বলে। তাই একা একা যেতে ভালো লাগে না।
_ আমি শিমুলকে বলছি এখন থেকে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে।
_ ধন্যবাদ আন্টি।
_ শিমুল শোন তো। (মা আমাকে)
_ আমি রেডি হয়ে একেবারে আসছি। (আমি)
_ আচ্ছা আয়।
_ ইফতি মা তুমি এখানে বসো।

_ বসছি আন্টি।
_ -মা আমাকে ডাকলে কেনো? আর ইফতি এখানে কি করছে?
_ -তোকে ডাকছি এজন্য যে তুই এখন থেকে ইফতিকে সঙ্গে করে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবি আর নিয়ে আসবি।
_ আমি এ কাজ পারবো না।
_ তোকে এই কাজ করতে হবে এই আমার আদেশ।
_ -ইফতি আমার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো। যেটা শুধু আমি দেখতে পেলাম। মেজাজটা খারপ হয়ে যাচ্ছে। মা’র জন্য কিছু বলতে পারছি না।
_ আম্মু কিছু বলতে যাবে তার আগে আম্মুকে থামিয়ে ইফতি বলল, “থাক আন্টি, আপনার ছেলে যেহেতু আমাকে নিবে তাহলে আমি একাই যাবো।”
_ একি বলছো মা, তুমি মেয়ে মানুষ। আমি তোমার কষ্ট বুঝি। তুমি একা বের হলে শয়তানগুলো আবার তোমাকে বিরক্ত করবে। আমি এটা হতে দিতে পারি না। তাই বলছি তুমি শিমুলের সাথে যাবে।
_ শিমুল আমার কথা বুঝতে পারছিস?
_ জ্বি আম্মু।

_ আর শেন ইফতিকে দেখে রাখবি।
_ আচ্ছা।
_ আর মা ইফতি শোনো।
_ জ্ব আন্টি বলেন।
_ শিমুল যদি তোমাকে কিছু বললে নির্ভয়ে আমাকে এসে বলে দিবে। তারপর আমি ওর ব্যবস্থা করবো।
_ -আচ্ছা আন্টি। এখন তাহলে আসি।

নিজের আপনজন শত্রুর সাথে হাত মেলালে কেমন লাগে? ইফতিকে তো এখন আর কিছুই বলা যাবে না। আমার আম্মুকে নিজের দখলে নিয়ে নিছে। কিছু বললেই আম্মুকে বলে দেবে।
_ এইযে ওখানে দড়িয়ে আছো কেনো? (ইফতি)
_ এমনি। (আমি)
_ তারাতারি আসো।
_ আসছি ম্যাডাম।
_ এই একটা রিকশা ডাকোতো।
_ ওই আমি কি তোমার চাকর হয়েছি?
_ এখন আপাতত চাকর হিসাবে আছো।

মেয়েটা বলে কি? আম্মু আমাকে ওকে কিছু বলতে বারণ করেছে। তাই বেচে গেলো।
_ রেগে লাভ নেই। তারাতারি রিকশা আনো।
_ আমাকে না বলে নিজেই তো রিকসা ডাকতে পারো?
_ তুমি থাকতে আমি কেনো রিকশা ডাকবো?
_ আম্মুর জন্য বেচে গেলে।
_ তোমাকে যা বলেছি তাই করো।
_ এই রিকশা এদিকে আসো।
_ মামা কই যাবেন? (রিকশাওয়ালা)

_ ভার্সিটিতে যাব। যাবে কি? (আমি)
_ হ যামু। উঠেন। (রিকশাওয়ালা)
_ এইযে ম্যাডাম আসুন, রিকশা পেয়েছি।
ইফতি রিকশায় উঠলো, তারপর আমি উঠলাম। রিকশা চলতে শুরু করলো ভার্সিটির উদ্দশ্যে।

_ এইযে ম্যাডাম আসুন, রিকশা পেয়েছি।
ইফতি রিকশায় উঠলো, তারপর আমি উঠলাম। রিকশা চলতে শুরু করলো ভার্সিটির উদ্দশ্যে।
আমি চুপচাপ হয়ে বসে আছি।
_ নিরাবতা ভেঙ্গে ইফতি বলল, “আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবে?”
_ কি সাহায্য?
_ তোমাকে বললে তুমি কেমন ভাবে নেবে?

_ -আমি আবার কেমন ভাবে নেবো?
_ আমি তো তোমাকে সবসময় ব্ল্যাকমেইল করি। তাই তুমি যদি না করো?
_ তোমার কথায় কখন না করলাম? তাছাড়া তুমিতো আমার মায়ের কাছ থেকে স্পেশাল অর্ডার নিয়েছো। যার কারনে আমি তোমার সব কথা শুনতে বাধ্য। (অভিমানি কন্ঠে)
_ অর্ডার তো নিছি। কিন্তু তোমার উপর সবসময় তোমার উপর চাপ দেওয়া কি ঠিক?
_ অন্যসময় আমার উপর যেকোনো কাজ জোর করে চাপিয়ে দাও আর এখন কি দরদ দেখেচ্ছো কারণটা কি জানতে পারি?
_ তোমাকে দেখলে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে।
_ কিহ! আমি বাচ্চা!

_ তুমি তো মেয়ে মানুষ দেখে ভয় পাও। এজন্য তোমাকে বাচ্চা না বলে গাধা বলা উচিৎ।
_ ওই আমি গাধা না।
_ আমি যা বলি তুমি তা গাধার মতোই করে দাও। এজন্য তুমি একটা গাধা।
_ আমাকে কিন্তু চরম অপমান করা হচ্ছে।
_ হুম করছি, তুমিও পারলে করো।
_ আমি বললাম, “আজকেই আন্টিকে গিয়ে সব বলে দেবো।”

_ আমার আম্মুকে কি বলবে? (ইফতি)
_ যা বলার আন্টিকে বলবো। এখন তুমি বসে থাকো।
_ তুমি শুয়ে থেকো।
_ তোমার সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করছে না।
_ হুম ভালো।
ভার্সিটিতে পৌচ্ছানোর পর গতদিনের মতো আজকেও আমার রিকশা ভাড়া দেওয়া লাগলো। এরপর ক্লাসের উদ্দশ্যে চলতে শুরু করলাম। পেছন থেকে ইফতি আমাকে ডাক দিলো।
_ কিছু বলবে?
_ হুম।
_ কি?

_ রিকশাতে বললাম না একটু সাহায্যর করার কথা।
_ হুম বলেছিলে। তা আমাকে কি করতে হবে?
_ আজ ক্লাস শেষ করে আমি শপিং করবো। তুমি যদি আমার সাথে যেতে তাহলে আমার উপকার হতো।
_ শুনেছি মেয়েদের শপিং করতে অনেক সময় লাগে। আজ তাহলে কখন শপিং শেষ হবে আল্লাহ ভালো জানে। (মনে মনে)
_ কিছু বললে না যে?
_ এই কথা বলতে গিয়ে রিকশাতে আমার সাথে কতক্ষণ ঝগড়া করলে।
_ তুমি তো ঝগড়া বাধিয়েছো।
_ এখন যতো দোষ সব আমাকে দিচ্ছো।

_ ওসব কথা বাদ দাও। আমার সাথে যাবে কি না?
_ না গেলে আম্মুকে আবার কি সব উল্টাপাল্টা বলবে। এরচেয়ে সাথে যাওয়া ভাো। এজন্য বললাম, “আচ্ছা যাবো।”
_ ওকে তাহলে আমি ক্লাসে গেলাম।
আমিও চললাম ক্লাসের দিকে। ক্লাসে গিয়ে দেখি ইমন মন খারাপ করে বসে আছে।
_ এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস ক্যান?
_ তোকে কি আবার সব কথা বলতে হবে?

_ হায় আল্লাহ! দেখছি আমার বন্ধুর রাগও আছে। তবে আমার উপর রাগ না দেখিয়ে তোর ভিলেন হবু শ্বশুরের উপর রাগ দেখালে ভালো হতো।
_ আমার হবু শ্বশুর হলো কোথায়? ওর মেয়েকে তো অন্য যায়গায় বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
_ বললেই কি বিয়ে দেওয়া হয়ে গেলো? এতো টেনশন করিস না। আমি তো আছি।
_ তুই আমাকে শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কি করতে পারবি?
_ তুই আমার জানের দোস্ত। তোর জন্য সব করতে পারি।

তুই কি পারবি রুহিকে আমার কাছে এনে দিতে?
_ না পারলেও তোর জন্য আমাকে পারতে হবে। তুই মন খারাপ করিস না।
_ ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি। এমন সময় ইফতি ফোন করলো।
_ হ্যালো কোথায় তুমি?
_ এইতো ক্যান্টিনে বসে আছি।
_ তুমি তারাতারি ভার্সিটি গেইটে চলে আসো।
_ আচ্ছা আসছি।
_ এই মেয়ের জন্য কোনো কিছুতে শান্তি নেই। দোস্ত তোরা থাক আমাকে এখন যেতে হবে।
_ বন্ধুরা বলল, “আচ্ছা যা।”

মাথায় ইমনর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি যে করি! তার উপর আছে ওরা দুই বোন। সব মিলিয়ে পাগল হওয়ার অবস্থা।
_ আমাকে একটু দেরী করে আসতে দেখে ইফতি বলল, “এইটুকু পথ আসতে তোমার এতো সময় লাগে?”
_ আমার তো ডানা নেই যে তুমি ডাকা মাত্র সেখানে উড়ে হাজির হবো।
_ ফালতু কথা বাদ দিয়ে রিকসায় উঠো। শপিং করতে যাবো।
আমি আর কোনো কথা না বলে রিকশায় উঠে বসলাম।
ইফতি অনেক্ষণ ঘুরে ঘুরে শপিং করলো। শপিং শেষে বসায় আসলাম।
_ আজ এতো দেরি করলি যে।
_ আম্মু একটা কাজে আটকে গেছিলাম।
_ কি কাজ?

_ ওটা তোমার না জানলেও হবে।
_ হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
_ আচ্ছা আম্মু।
খাওয়া শেষ করে শুয়ে পরি। এখন রুহিকে নিয়ে পালানোর একটা প্ল্যান করতে হবে। অনেক ভেবে একটা প্ল্যান করলাম। কিন্তু কাজটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাস্তবায়ন কাল রাতে করা যাবে। এখন কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নেই। সন্ধ্যার সময় আবার শম্পাকে পড়াতে হবে।
ঘুম থেকে উঠলাম সন্ধ্যার আগে। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে এলাম যাতে মনটা ভালো থাকে। সন্ধ্যার পর গেলাম প্রাইভেট পড়াতে।
_ আমাকে দেখে শম্পা বলল, “স্যার আপনি দেখছি একদম ঠিক সময়ে চলে আসছেন।”
_ আসলাম আরকি। আজেবাজে কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
_ স্যার আমি তো পড়ার জন্য আপনাকে স্যার বানাইনি।

_ তো কেনো আমার কাছে পড়তে জেদ করলে?
_ আমার কেনো জানি সবসময় আপনার কথা মনে পরে। ইচ্ছা হয় সবসময় আপনার সাথে কথা বলি।
_ ওই তোমার ফিল্মি কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
_ স্যার আমি কিন্তু সত্যি বলছি।
_ কি সত্যি হ্যা? (রেগে)

_ আমি আপনাকে ভালোবাসি।
_ ওই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে তো।
_ আগে ঠিকই ছিলো কিন্তু যেদিন আমাকে থাপ্পর মারলেন সেদিন থেকে আমার মনে যায়গা করে নিলেন।
_ হায় আল্লাহ! থাপ্পর খেয়ে কি কেউ প্রেমে পরে?
শম্পা আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,
তবু তোমার প্রেমে আমি পরেছি,
বেচে থেকেও যেনো মরেছি।
থাপ্পর খেয়ে তোমার প্রেমে পরেছি…….
_ ওই তোমার এই ফালতু গান বলা বন্ধ করো।
_ কেনো স্যার? ভালো লাগছে না বুঝি?
_ থাপ্পর খেয়ে কি কেউ প্রেমে পরে?

_ আমি পরেছি।
_ থাপ্পর দিয়ে তোমার ভালোবাসার ভূত ছাড়াতে হবে।
_ ভালোবাসা কি অপরাধ?
_ না, তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা অপরাধ।
_ আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন?
_ হ্যা ভালোবাসি। (মিতুর হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা বললাম।
_ আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।

_ -তোমার এই সব ন্যাকামি বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
_ আমি আজকে পড়বো না। আপনি এখন যেতে পারেন।
আমার ভালই হলো। আমি চলে আসলাম।
রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখি শম্পা সুইসাইড করেছে। এটা দেখার পর আমার ঘুম হারিয়ে যায়।
পড়ানোর সময় ওকে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি। একটু বুঝিয়ে বললেই হতো। এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসে! তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
সারা রাত উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঘুম হলো না।

সকালে নাস্তা করে চললাম ভার্সিটিতে। ইফতির আম্মু অসুস্থ। এজন্য ইফতি আসেনি। এতে আমার ভালোই হয়েছে। শান্তিমতো যেতে পারছি। হঠাৎ শম্পার কথা মনে পরে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ভার্সিটিতে এসে পরছি। কথামতো রাকিব আর ইমন গেইটে দাড়িয়ে আছে।
_ রিকসা থেকে ওদের কাছে গেলাম।
_ রাকিবকে বললাম, “দোস্ত তোর বাইকটা আজ আমাকে দিবি।”
রাকিব_ আচ্ছা নিস।
_ রাকিব আর ইমন তোরা দুই জন আজকে রাত এগারটার সময় বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবি।
_ কোনো? (ইমন)
_ ইমনর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
_ তাহলে আমাকে কেনো আসতে হবে?

_ ওকে যে সারপ্রাইজটা দেবো তুই তার সাক্ষী হবি।
আচ্ছা আসবো।
_ আমার কিছু কাজ আছে। এখনই যেতে হবে। তোর বাইকটা নিয়ে গেলাম।
_ ফেরত দিবি কখন?
_ রাত্রেই পাবি।
_ আচ্ছা এই নে চাবি।
_ বাইক নিয়ে চললাম মার্কেটে। কিছু ড্রেস কিনতে হবে। কেনাকাটা শেষ করে বাইরে আসলাম।
_ ফোনটা বের করে রুহিকে ফোন দিলাম।
_ হ্যালো রুহি কেমন আছো?
_ ভাইয়া ভালো নেই।
_ কেনো?

_ আব্বু আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি ইমনকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। আপনি কিছু একটা করেন।
_ তুমি কোনো চিন্তা করো না। আজ রাত দশটায় তুমি কি তোমার বাসার বাইরে আসতে পারবে?
_ হুম পারবো।
_ আমি ফোন দিলে তুমি চুপিচাপি বের হয়ে চলে আসবে। কেউ দেখলে বিপদ আছে।
_ আচ্ছা আমি সাবধানে আসবো।

_ আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।
_ রাত ৯টা ৫০ মিনিট, রুহিের বাসার সামনে বাইক নিয়ে থামলাম।
ফোনটা বের করে রুহিকে ফোন দিলাম।
ও ফোনটা কেটে দিলো।
আমি নিচে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর মিতা কালো বোরকা পরে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসলো।

_ তুমি তো দেখছি একদম পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছো।
_ দুপুরে আপনার কথায় বুঝেছি পালাতে হবে।
_ এখানে বেশি কথা বলা যাবে না। তারাতারি বাইকে উঠে বসো।
_ রুহি বাইকে বসলো। বাইক চালাতে লাগলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে।
কিছুক্ষণ পর বাস স্ট্যান্ড পৌচ্ছে গেলাম।
আমার বলা মতো যায়গায় ওরা দুজন দাড়িয়ে আছে।

বাইক থামালাম।
আমাকে ইমন জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম, “এই ছাড় আমাকে। আগে নামতে দে।”
_ দোস্ত তোর এই উপকারের কথা কোনো দিনই ভুলবো না।
_ তুই ও তো দেখছি পালানোর সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিস। তোর মাথায় এতো বুদ্ধি এলো কোথা থেকে?
_ রুহি আমাকে সব বলেছে।

_ তাই তো বলি। এখন এসব কথা বাদ দে। আগে তোদের বিয়ে পড়াতে হবে। এখন কাজী অফিসে চল।
দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। ওদের হাতে দুপুরের কেনা জিনিসগুলো তুলে দিলাম।
_ এখানে কি আছে? (ইমন)

_ খুলে দেখ। (আমি)
_ এসব কখন কিনলি?
_ দুপুরে কিনছি। এখন বাস স্ট্যান্ডে চল। রাত ১ টায় তোদের বাস।
_ আমাদের বাস মানে?
_ তোরা হানিমুনে কক্সবাজার যাচ্ছিস। এই নে বাসের টিকিট। আর এটা তোদের হোটেলের টিকিট।
বাস স্ট্যান্ডে চলে আসছি। ইমনর পকেটে পাঁচ হাজার গুজে দিলাম। এরপর ওদের বাসে তুলে দিলাম। একটু পর বাস চলতে শুরু করলো। দুজনকে একসাথে করতে পেরেছি ভেবেই মনের ভেতর অনেক ভালো লাগতে লাগলো।

_ আমি রাকিবকে বললাম, “রাত অনেক হয়েছে এখন বাসায় যাওয়া দরকার।”
_ রাকিব বলল, “আমি তোকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে চলে যাবো।”
_ আচ্ছা।
রাকিব আমাকে বাসার সামনে বাইক থেকে নামিয়ে দিলো। বাসাতে ঢুকতেই বড় রকমের শক খেলাম।


পর্ব ০৫

রাকিব আমাকে বাসার সামনে বাইক থেকে নামিয়ে দিলো। বাসাতে ঢুকতেই বড় রকমের শক খেলাম।
দেখি আব্বু আম্মু দুজনেই জেগে আছে।

আব্বু আমার দিকে রাগি চেহারা নিয়ে বলল, “শয়তান এতো রাতে বাইরে কি করেছিস বল?”
আব্বুর ধমক শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। এই আব্বুর ধমক শুনলে আমার মাথা কাজ করে না।
আমি কিছু বলছি না দেখে আবার আব্বু বলল, “ওই কথা বলছিস না ক্যান?”
_ আসলে আব্বু….

আমার কথার মাঝখানে আম্মু আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ছেলেকে কেউ এভাবে ধমকায়?”
_ তোমার ছেলে রাত দুটায় বাসায় ফিরবে আর আমি শাসন করতে পারবো না এটা তো হবে না।
_ তুমি আমার ছেলেকে কিছুই বলতে পারবে না।

_ এহ বলছে। ছেলে খালি ওর একার।
আব্বু আম্মুর এমন চলতে থাকলে একটু পর ঝগড়া লেগে যাবে। তাই আমি বললাম,
“তোমরা দুজন ঝগড়া থামাবে নাকি আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো?” এই বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
তারাতাড়ি দরজা আটকে শুয়ে পড়লাম। যাক আজকের মতো বেঁচে গেছি।
আসলেও এতো রাত করে বাসায় আসা ঠিক হয়নি। কিন্তু ইমনর জন্য এসব করতে দেরী হয়ে গেল। কিন্তু এসব তো আর আব্বু আম্মুকে বলা যায় না।
আর কোনো কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংলো।
মা বলল, “বাজার করে আনতে।”

মায়ের বাধ্য ছেলের মতো বাজার করে আনলাম।
রুমে এসে দেখি ইফতি দুবার কল করছে। এতো সকাল সকাল কেন কল করছে ভেবে পেলাম না। ভাবতে লাগলাম কল দিবো কিনা? একটু পর আবার ইফতি কল করলো।
_ হ্যালো। (আমি)
_ ওই ফোন ধরো না ক্যান? দেখো তো কতবার কল করছি। (ইফতি রাগী গলায়)
_ মাত্র দুবার কল দিয়ে এতো ঝাড়ি দিচ্ছো ক্যান?
_ জরুরি কথা আছে। এজন্য কল দিছি।
_ তা কি তোমার জরুরি কথা শুনি?

_ ফোনে বলা যাবে না। তুমি ছাদে আসো বলে কল কেটে দিলো।
কি আজব রে। কি এমন কথা যা শোনার জন্য আবার ছাঁদে যেতে হবে?
এতো ভেবে কি হবে? আগে গিয়ে শুনি কি বলে।
একটু পর ছাঁদে গিয়ে দেখি ইফতি দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলল, “এতোক্ষণ লাগে আসতে?”
_ মাত্র ৫ মিনিট দেরি হইছে। এজন্য এতো রিএক্ট করার কি আছে বুঝি না।
_ অপেক্ষা করা কতটা কষ্ট তা তুমি কি বুঝবে?
_ তোমার এসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে বলো কিজন্য ডাকলে?
_ আসলে আমার কথাটা কিভাবে নিবে সেটা নিয়েই টেনশনে আছি।
_ আমার সাথে এতোকিছু করার পর ও আমাকে নিয়ে তোমার টেনশন হয়।
_ দেখো শিমুল ফাজলামি করবে না।

_ আমি হাসতে হাসতে বললাম, “আচ্ছা ফাজলামি করবো না। এখন বলো আমাকে কি করতে হবে।”
_ ইফতি বলল, “আমাকে প্রমিজ করো কাজটা করবে?”
_ আচ্ছা আমি কি তোমার কোনো কাজ না করছি?
_ আমি অতকিছু জানি না। প্রমিজ করো নাহলে আন্টিকে গিয়ে বলবো তুমি আমাকে প্রপোজ করছো।
_ কিহ! এমন কাজ তুমি করতে পারো না। এসব আমি মানি না।

_ প্রমিজ করো কাজটা করবে। তাহলে আন্টিকে এসব বলবো না।
_ কি মেয়েরে বাবা। খালি ব্ল্যাকমেইল করে। কোন দুঃখে যে প্রপোজ করছিলাম। কোনো উপায় না পেয়ে বললাম, “আচ্ছা প্রমিজ করলাম কাজটা করবো।” এখন বলো কাজটা কি?
_ ইফতি বলল, “আজকে আমার বান্ধবীর বার্থডে। ওখানে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।”
_ এই সিম্পল কাজের জন্য আবার প্রমিজ করানো লাগে নাকি!
_ -আরে আসল কাজটার কথাটা তো ভুলেই গেছি।

_ দেরী করছো ক্যান? ওটাও বলো।
_ আমার বান্ধবী রা সবাই জানে তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ডের অভিনয় করতে হবে।
_ ইফতির কথা শুনে মনে হলো আমি রাকিব থেকে পড়লাম। মাইয়া বলে এসব বলে কি। আমি ইফতি কে বললাম, “তোমার মাথা ঠিক আছ তো?”
_ ইফতি বলল, “আমার মাথা ঠিকই আছে।”
_ তাহলে আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হলাম কখন?

_ যেদিন কলেজে প্রপোজ করছো সেদিন থেকে।
_ কতবার বলবো সেদিন ফান করে প্রপোজ করছি।
_ আমি এতোকিছু বুঝি না। তুমি আমার কথা না শুনলে আমি সত্যি সত্যি আন্টিকে বলে দিবো। বলে ইফতি ছাদ থেকে নামতে লাগলো।
_ আমি বললাম, “কই যাও?”

_ আন্টির কাছে। তার ছেলের কুকর্মগুলো গুলো বর্ণনা করতে।
ইফতি আর থামলো না। সরাসরি নিচে গিয়ে আম্মু কে ডাকতে লাগলো।
ইফতির ডাক শুনে আম্মু বেরিয়ে এসে বলল, “মা ইফতি কি হয়েছে? এভাবে ডাকছো কেন?”
_ আপনার গুনধর ছেলে কি করছে শুনবেন?

এই মনে হয় বাশ খেয়ে গেলাম। এখন তো মনে হয় সত্যি সত্যি প্রপোজ করার কথা বলে দিবে। যদি বলে তাহলে আম্মু আব্বু দুজনে আমাকে পিটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করবে। আশু বিপদের কথা মাথায় রেখে বললাম, “ওই আমি কিছুই করিনি?”

আম্মু আমাকে চুপ করতে বলে ইফতিকে বলল, “শিমুল কি করছে বলো?”
_ আসলে আন্টি আজকে আমার বান্ধবীর বার্থডে। এজন্য আমাকে ইনভাইট করছে। কিন্তু আম্মু আমাকে একা একা যেতে দিবে না। এজন্য আপনার ছেলেকপ কত করে বলছি আমার সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ও আমার কথা শুনছেই না। এখন যদি বান্ধবীর বাড়িতে না যাই তাহলে ও মন খারাপ করবে। এখন বলেন আমি কি করবো?
ইফতির কথা শুনে আম্মু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। এরপর বলল, “শিমুল ইফতিকে ওর বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যাবি আসবি। মনে থাকে যেনো।”
_ কিন্তু আম্মু….

_ তোর কোনো বাহানা শুনতে চাচ্ছি না। তুই ইফতির সাথে যাবি এটাই ফাইনাল।
আম্মু তো আসল কাহিনি না জেনেই ইফতির সাথে যেতে বলল। এখন আম্মু যখন বলেছে যেতেই হবে। ওখানে যে কি আবার হবে আল্লাহ ভালো জানে।
ইফতি আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “কি মি. শিমুল যাবে না বললে, এখন তো ঠিকই রাজি হলে। এরপর যদি আমার কথার অবাধ্য হয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে।”
_ -দেখো ইফতি কাজটা ঠিক করলে না।

_ কি ঠিক আর কি ভুল সেটা আমি ভালো করে জানি। সো এটা আমাকে বুঝাতে আসবে না কেমন। আর হ্যাঁ সন্ধ্যায় রেডি থাকবে।
_ -তাহলে রাতে তো শম্পাকে পড়ানো হবে না।
শম্পার পড়ানো নিয়ে তুমি এতো টেনশন করছো কেন?
_ ওর তো সামনে পরিক্ষা। এটা তো তোমাকে মাথায় রাখতে হবে।

_ একদিন না পড়ালে কিছুই হবে না বুঝলে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।
একটু পর ভার্সিটিতে যেতে হবে। নাস্তা করে রেডি হয়ে ইফতির সাথে ভার্সিটিতে চলে আসলাম। আসার সময় একটা কথাও বলিনি।
ক্লাস শেষে ইফতিকে ফোন দিলাম। ইফতি বলল, “ওর যেতে দেরী হবে।”
আর আর ওর জন্য অপেক্ষা না করে বাসায় চলে আসলাম।
দুপুরে ঘুমিয়ে আছি। মনে হচ্ছে কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে। চোখ খুলে দেখি শম্পা দাঁড়িয়ে আছে।
_ আমি শম্পাকে বললাম, “আমার রুমে কি করছো?”
_ আপনার রুমে আসা মানা নাকি?
_ হুম মানা।

_ তাও আমি আসবোই।
_ এই সময় আম্মু যদি ওকে আমার রুমে দেখে তাহলে খারাপ কিছু ভাবতে পারে। এজন্য শম্পাকে বললাম, “দেখো আম্মু দেখলে আবার মাইন্ড করবে। তুমি এখন যাও।”
_ শ্বাশুড়ি আম্মা ই আমাকে আসার অনুমতি দিয়েছে। সো উনি আমাকে কিছুই বলবে না।
_ ওই পিচ্চি মাইয়া তুমি আমার আম্মু কে শ্বাশুড়ি বলছো ক্যান?

_ তো শ্বাশুড়ি কে কি বলবো?
_ হুর, তোমার মাথাট তাঁর ছিড়ে গেছে। মাথার ডাক্তার দেখাও।
_ আমার ডাক্তার তো আপনি। আপনি আমার হলে আমি এমনি ভালো হয়ে যাবো।
_ শম্পা তোমাকে গতকাল এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে মানা করছি। তারপরও শুনছো না ক্যান?
_ -এইযে মিষ্টার আমাকে আপনি বাঁধা দিতে পারবেন না। আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে ছাড়বো।
_ তোমাকে আমি আগেই বলছি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।
_ আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নাই। তোমার বিষয়ে সব খোঁজ নেওয়া শেষ। আর এটাও জানি তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নাই।
_ হায়! হায়! ! এই মাইয়া এসব জানলো কিভাবে? (মনে মনে)
_ ওই বিরবির করে কি বলেন?

_ সেটা শুনে তুমি কি করবে?
_ এখন থেকে আপনার সব কিছু জানার অধিকার আমার আছে বুঝলেন।
_ দেখো শম্পা তুমি একটা পিচ্চি মেয়ে। তোমার সাথে আমাকে মানায় না।
_ ওই আমি পিচ্চি! দাড়ান দেখাচ্ছি আমি পিচ্চি না। এই বলে শম্পা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আমার ঠোঁটে কিস করে বসলো।
টানা দুই মিনিট কিস করার পর আমাকে ছেড়ে দিলো। আরেকটু হলে আমার দম বন্ধ হয়ে যেত।
_ শম্পা বলল, “এবার তো মনে হয়েছে আমি পিচ্চি না।”

_ লুচ্চা মেয়ে আমার ঠোঁট টা কামড় দিয়ে দাগ বসিয়ে দিছে। তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে।
_ কি শাস্তি দিবেন শুনি?
_ ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিতে।
_ থাপ্পড় দিতে হবে না। চাইলে আপনি আমাকে কিস করতে পারেন। বলে ওর ঠোঁট আমার দিকে এগিয়ে দিতে লাগল।
এই মাইয়ার সাথে আর কিছুক্ষন থাকলে আমার কিছু করা লাগবে না। ও সব কিছু করে ফেলবে। এর ভেতর মা যদি দেখে তাহলে এই পাগলি মেয়েকে আমসর গলায় ঝুলিয়ে দিবে। এর চেয়ে রুম থেকে কেটে পড়া ভালো।

আমি শম্পাকে বললাম, “দেখো আমার আম্মু দরজায় দাড়িয়ে সব দেখে ফেলছে।”
আমার কথা শুনে শম্পা ঘুরে তাকালো। এই সুযোগে আমি লাফ দিয়ে খাট থেকে কেটে পড়লাম।
যাক বাবা এখনকার মতো বাঁচলাম।

আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার নিচের ঠোঁট টা হাল্কা কেটে গেছে। শয়তান রাক্ষস মাইয়া আমার ঠোঁট টা শেষ করে দিলো।
একটা পিচ্চি মেয়ে জোর করে আমাকে কিস করছে এটা কেউ জানলে আমার মান সম্মান সব চলে যাবে।

আয়নার সামনে গিয়ে দেখি আমার নিচের ঠোঁট টা হাল্কা কেটে গেছে। শয়তান রাক্ষস মাইয়া আমার ঠোঁট টা শেষ করে দিলো।
একটা পিচ্চি মেয়ে জোর করে আমাকে কিস করছে এটা কেউ জানলে আমার মান সম্মান সব চলে যাবে।
এসব ভাবছি এমন সময় আম্মু পেছন থেকে বলল, “শম্পাকে পড়ানো বাদ দিয়ে এখানে কি করিস?”
_ আআআআসলে আম্মু….
_ ওই তুই তোললাচ্ছিস ক্যান?

_ আমার দিকে ঘুরে দাড়া দেখি তোর কি হয়েছে।
আমি ঘুরে দাড়ালাম। আম্মু আমার ঠোঁট কাটা দেখে বলল, “অমন করে তোর ঠোঁটে কি কামড় দিছে?
আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় শম্পা এসে বলল, ” আন্টি শিমুল ভাইয়াকে বড় পিঁপড়া কামড় দিছে। আমি নিজে দেখেছি।”
কি মিথ্যাবাদী মেয়েরে বাবা! নিজে ঠোঁট কামড়ে এখন বেচারা নির্দোষ পিঁপড়া কে দোষারোপ করছে। কিন্তু আম্মু কে যদি সত্যি টা বলে দেই তাহলে আমার কথা বিশ্বাস করবে না। আপাতত শম্পার কথায় সায় দেওয়াই উচিত মনে করলাম। এজন্য আমিও বললাম, “হ্যাঁ আম্মু একটু আগে একটা বড় পিঁপড়া সেই জোরে কামড় দিছে। পিঁপড়াটার একটুও দয়ামায়া নাই। দেখো কামড় দিয়ে আমার ঠোঁটটা করছে কি?”
_ -তোদের দুজনের মাথা পাগল হয়ে গেছে। পিপড়া কখনও কামড় দিয়ে রক্ত বের করতে পারে? (আম্মু)
_ -আম্মু কালো মোটা বড় পিঁপড়া।

_ পিঁপড়া কাটুক আর যেই কাটুক রক্ত বের হচ্ছে। আমার সাথে আয়। ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
আমি আর কোনো কথা না বলে আম্মুর সাথে রুমে আসলাম। শম্পা ওর মতো দোতলায় চলে গেল।
ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে আম্মু বলল, “ওই হারামজাদা পিচ্চি মাইয়া তোর ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দিছে আর তুই কিছুই করতে পারিস নাই।
_ আম্মু তুমি কি সব বলতেছো আমি কিছুই বুঝছি না।
_ আমার কাছে নাটক করবি না। আমি তোর ঠোঁট দেখেই বুঝেছি এসব ওই বদমাইশ মাইয়ার কাম।
আম্মুর কথা শুনে মনে হলো আমি লজ্জায় মরে গেলাম। কি বলবো ভেবে না পেয়ে উঠে চলে এলাম।

ধুর মা ও টের পেয়ে গেল। এখন আম্মু যদি আব্বু কে বলে তাহলে আমার কপালে কি হবে আল্লাহ ভলো জানে।
উল্টাপাল্টা চিন্তা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুমে বসে ফোন টিপছি এমন সময় ইফতি এসে বলল রেডি হতে।
আমি ভাবলাম কি ড্রেস পড়ে যাওয়া যায়? কিন্তু কোনো ড্রেস সিলেক্ট করতে পারছি না।
আম্মু এসে বলল, “ইফতির সাথে কখন যাবি?”
_ এইতো একটু পর। কিন্তু কোন ড্রেস পড়বো বুঝছি না।
_ বোকা ছেলে পাঞ্জাবি পড়ে যা।
আম্মু আমার নীল পাঞ্জাবি টা দিয়ে বলল, “এটাতে তোকে সুন্দর মানাবে।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নিচে অপেক্ষা করতে লাগলাম।

একটু পর ইফতি আসলো। ইফতি নীল শাড়ি পড়েছে। নীল শাড়িতে ইফতিকে নীল পরীর মতে মনে হচ্ছে। আমিতো কখনও পরী দেখিনি। হয়তো পরীরা এমন ই দেখতে।
আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফতি বলল, “ওই এভাবে না দেখে একটা রিকশা ভাড়া করো।
আমি একটা রিকশা ঠিক করলাম। এরপর দুজনে রিকশায় উঠে বসলাম।
ইফতি আমার হাতে একটা উপহার বাক্স ধরিয়ে দিলো।
আমি বললাম, “এটা আমি ধরবো কেন?”
_ চুপচাপ ধরে রাখো। আর বেশি কথা বলবে না।

_ কি মেয়েরে বাবা। আমাকে শাসন করছে।
কিছুক্ষণ পর ইফতির বান্ধবীর বাসার সামনে চলে আসলাম। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া টা আমি দিয়ে দিলাম।
এরপর ইফতি আমাকে সঙ্গে করে ওর বান্ধবীর বাসায় নিয়ে গেল।

ভেতরে অনেক মানুষ। তবে সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা একটু বেশি।
ইফতি আমাকে বলল, “ওই শোনো, কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম। যদি দেখি তাহলে গিয়ে আন্টিকে বলে দিবো।”
_ ইফতি এটা কিন্তু ঠিক না।
_ কি ঠিক, কি ভুল সেটা আমি দেখবো। আপাতত এখন আমার সাথে চলো।
আমি আর কথা না বলে ইফতির সাথে যেতে লাগলাম।

দেখি সামনে একটা মেয়ে অনেক সেজেগুজে সবার সাথে কথা বলছে। আন্দাজ করলাম হয়তো ওটাই ইফতির বান্ধবী।
আমার আন্দাজ সঠিক হলো। ইফতি গিয়ে ওই মেয়েকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে উইশ করে গিফট বাক্স টা দিলো।
দেখলাম ইফতির সব বান্ধবীরা এসেছে। এতো মেয়ের মাঝে নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে।
আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। হাটতে হাটতে ইফতির থেকে কিছুটা দূরে এসেছি। এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলল, “আপানাকে তো চিনতে পারলাম না?”
_ আমি শিমুল। আর আপনি?
_ আমি রাইসা। নিপার ছোট বোন।

_ এই নিপাটা আবার কে? (মনে মনে ভাবতে লাগলাম)
হয়তো নিপাটা ইফতির বান্ধবীর নাম হতে পারে। যার আজকে বার্থডে। তাই আমি আন্দাজে বললাম, “নিপার বার্থডে এ্যারেজমেন্ট টা সুন্দর হয়েছে।
_ রাইসা বলল, “হুমমম।
এরপর রাইসার সাথে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলাম। একটু পর দেখি ইফতি এসে হাজির।
আমাকে রাইসার সাথে কথা বলতে দেখে ও মনে হচ্ছে রাগে কটমট করছে। কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে আমার হাত ধরে বলল, “চলো তোমাকে আমার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
এই বলে আমাকে নিয়ে ওর একঝাঁক বান্ধবীর সামনে নিয়ে গেল।

এরপর ইফতি আমাকে দেখিয়ে ওর বান্ধবিদের কে বলল, “এটা আমার বনফ্রেন্ড। নাম শিমুল। তোদের কে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা?”
ইফতির সব বান্ধবী আমাকে আর ইফতিকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।
আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি। কারণ ইফতি বলেছিল ওর বান্ধবীরা সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ওরা কেউ আমাকে চেনে না। উল্টো ইফতি ওদেরকে বলেছে আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।
যখন ওর বান্ধবী রা কেউ জানে না তখন এমন টা আমার সাথে না করলেও পারতো। ইচ্ছে হচ্ছে কষে থাপ্পড় দিতে। কিন্তু এতো লোকের সামনে বলে কিছু বললাম না।
রাস্তায় গিয়ে এর শোধ নিবো।

আর কিছুক্ষণ পর কেক কাটা হলো। এরপর খেয়ে ওখান থেকে ইফতির সাথে বেরিয়ে আসলাম।
_ ইফতি এমন মিথ্যা বলার কি দরকার ছিল?
_ আমি কি মিথ্যা বললাম?
_ এইযে তোমার বান্ধবীরা কেউ জানতো না তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। কিন্তু শুধু শুধু আমাকে ওদের সামনে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানালে কেন?
_ ইফতি চুপ করে আছে।
আমি আবার বললাম চুপ করে না থেকে আমার কথার জবাব দাও।

_ ইফতি আমার দিকে ঘুড়ে দাড়ালো। এরপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “শিমুল তোমাকে অনেককিছু বলতে চাই। এখন তুমি আমার সামনে আছো। কিন্তু কিভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি। কিন্তু তোমাকে সবার থেকে আলাদা মনে হয়েছে। যেদিন তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে সেদিন থেকেই তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকি। এরপর তোমার সাথে ভার্সিটি যাওয়া আসা, তোমার সাথে দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করতে করতে কখন যে তোমাকে ভালেবেসে ফেলেছি নিজেও জানি না। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। I Love You Onick.
বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ইফতির প্রপোজ করা দেখে আমি তো পুরা শকড হয়ে গেলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।
গতকাল শম্পা, আর আজকে ইফতি। এরা দুই বোন মনে হয় পাগল হয়ে গেছে।
_ ওই কথা বলছো না না কেন? (ইফতি)
_ কি বলবো?
_ আমি যা বলছি তার উওর দাও।
_ আমার ভাবতে হবে।

_ এতো ভাবাভাবির কি আছে?
_ তুমি এসব বুঝবে না।
_ -ওই মাঝ রাস্তায় কি এভাবে দাড়িয়ে থাকবো নাকি বাসায় যাবে?
আমি আর কথা না বাড়িয়ে একটা রিকশা ভাড়া করে আনলাম।
রিকশা করে বাসার সামনে নেমে রিকশা ভাড়া দিয়ে দিলাম।
দেখলাম ইফতি এখনও যায়নি।
_ আমি বললাম, “এখনো রুমে যাওনি ক্যান?”

_ তোমাকে একটা কিছু দেওয়ার আছে।
_ (প্যারা ছাড়া আমাকে আবার কি দিবে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু ভেবে পেলাম না। )
_ ইফতি বলল, “তুমি আমার এক সিঁড়ি নিচে দাড়াও।”
আমি ওর কথা মত এক সিঁড়ি নিচে দাড়ালাম। ও আমার দিকে ঘুরে চোখের পলকে আমার ঠোঁটে কিস করে বসলো। প্রায় দুই মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালালো।
এমন রোমান্টিক অত্যাচারে আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আমি রুমে ঢুকলাম।
আমাকে দেখেই আম্মু বলল, “তোর ঠোঁট তো একদিনেই বারোটা বাজিয়ে দিলো। বাকি দিন লুচ্চা মাইয়াদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবি?”


পর্ব ০৬

এমন রোমান্টিক অত্যাচারে আমি তো পুরা অবাক হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি। কিছুক্ষণ পর আমি রুমে ঢুকলাম।
আমাকে দেখেই আম্মু বলল, “তোর ঠোঁট তো একদিনেই বারোটা বাজিয়ে দিলো। বাকি দিন লুচ্চা মাইয়াদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবি?”
আম্মু কে কি বলবো ভেবে পেলাম না। তাই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।
আম্মু বলল, “থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন তোর রুমে যা।

আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
পরদিন দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠে দেখি রাকিবের ৩ টা মিসড কল।
_ কল ব্যাক করতেই রাকিব বলল, “তুই যে রুহিকে ওর বাসা থেকে নিয়ে আসছিস এটা ওর পরিবার জেনে গেছে। কিন্তু ওরা তোর নাম জানে না। গতরাতে রুহিের ভাই তোর ফটো দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করছে তোরে চিনি কি না? আমি না বলে দিছি।
_ আচ্ছা তুই ওসব চিন্তা নিস না। আমি সামলে নিবো। বলে কল কেটে দিলাম।

সকাল সকাল একটা বিরাট বাশ খেয়ে গেলাম। এখন কি যে করি মাথায় ঢুকছে না।
হ্যাঁ একটা বুদ্ধি পেয়েছি। ইমনকে কল করে সব প্ল্যান বলে দিলাম।
দেখলাম ফোন টা আবার কাঁপা-কাঁপি শুরু করছে।
দেখি ইফতি কল করছে।
এমনিতেই টেনশন হচ্ছে। তারউপর আপদটা ফোন দিচ্ছে।
প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেল। ইফতি আবার কল দিলো। বুঝলাম না ধরা পর্যন্ত থামবে না। এজন্য কল রিসিভ করলাম।
_ তোমার এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে? (ইফতি)

_ আমি কি তেমার জন্য সবসময় ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবো?
_ এভাবে বলছো ক্যান?
_ -তো কিভাবে বলবো শুনি?
_ একটু ভালোবেসে বলতে পারো না?
_ আমাকে দিয়ে ভালোবাসা হবে না।

_ ওই শোনো, তোমার কিছুই করা লাগবে না। যা করার আমি করবো।
_ আমি তোর সামনে গেলে তো কিছু করবি? (মনে মনে)
_ ওই চুপ ক্যান?
_ এমনি। কোনো কাজের কথা হলে বলো। আমি বিজি আছি।
_ শোনো আধা ঘন্টা পর ভার্সিটি তে যাবো। তুমি রেডি হয়ে নাও।
_ আমি আজকে ভার্সিটি যাবো না। (ইফতির সাথে না যাওয়ার জন্য মিথ্যা)
_ কেন যাবে না?

_ আমার জ্বর আসছে। তুমি একাই যাও। বলে কল কেটে দিলাম।
যাক বাবা আপাতত একটার হাত থেকে বাঁচলাম।
ইফতি ভার্সিটি যাওয়ার পর আমি রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।
একটা রিকশায় উঠে বসতেই কোন মেয়ে যেন বলল, “এই চেপে বসো।”
তাকিয়ে দেখি শম্পা দাড়িয়ে। আমি বললাম, “তুমি এখানে ক্যান?”
_ আমি কলেজে যাবো। প্লিজ একটু আমাকে কলেজ পর্যন্ত নিয়ে যান।

_ তুমি আরেকটা রিকশা করে যাও। লোকে দেখলে বাজে কথা বলবে।
_ লোকজন কি বলল সেটায় আমি ধার ধরি না। আপনি আমাকে নিবেন নাকি সেটা বলেন।
_ সাথে না নিলে আবার কি করে বসে। এরচেয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো। তাই বললাম নিতে পারি একশর্তে। রিকশায় বসে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।
_ শম্পা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
আমি রিকশার ডান ডিকে চেপে বসলাম।
শম্পা রিকশায় বসলো।
কিছুদূর রিকশা যাওয়ার পর কয়েকজন লোক এসে আমাদের রিকশা ঘিরে ধরে।
আমি বললাম, “ভাই আপানরা কারা? এভাবে রিকশা থামালেন কেন?
ওদের ভেতর থেকে একজন বলল, “এই ছেলে রিকশা থেকে নামো। তোমার সাথে কথা আছে।”
_ আমি তো আপনাদের চিনি না। আপনাদের সাথে কোনো কথা নেই।

_ বেশি কথা বললে বাসায় জ্যান্ত ফিরতে পারবি না। ভালোই ভালোই রিকশা থেকে নাম। (লোকটি)
_ আমি রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালা কে বললাম, “মামা ওকে কলেজে নামিয়ে দাও।”
_ এই মেয়ে তুমি কোথাও যাবে না। এখানেই নামো বলছি। (লোকটি)
_ রিকশাওয়ালা কে আমি ভাড়া দিয়ে বিদায় করে বললাম, “এখন বলুন কি কথা বলবেন?”
_ লোকটি আমাকে আমার ফটো দেখিয়ে বলল, “এটা তুমি না?”

আসলে ফটো টা যেদিন রুহিকে ওর বাসা থেকে নিয়ে আসি সেদিনের। ফটোটায় দেখা যাচ্ছে আমি বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু এই ফটো পেলো কিভাবে? মনে হয় ওদের বাসার সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ওটার মাধ্যমে ফটো টা নিয়েছে।
আমার চুপ থাকতে দেখে লোকটা ধমক দিয়ে বলল, ” ওই চুপ করে আছিস ক্যান?”
_ দেখুন ফটো টা তো আমার মতোই ই মনে হচ্ছে। তবে ওটা আমি না।
আমাদের বোকা পেয়েছিস নাকি যে ভুলভাল গল্প বললেই মেনে নিবো।
_ মানবেন না কি মানবেন না সেটা আপনার ইচ্ছে। কিন্তু ওটা আমি না এটা আমি প্রমাণ করে দিবো।
_ কিভাবে?
দেখুন ছেলেটা আমার মতোই এটা আমি মানছি। কিন্তু ছেলেটার বাইক আছে। কিন্তু আমার কোনো বাইক নাই আর চালাতেও পারি না। বিশ্বাস না হলে আমার আব্বু র নাম্বারে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

লোকটা আমার থেকে আব্বু র নাম্বার নিয়ে আব্বুর সাথে কথা বলল।
একটু পর লোকটার চেহারায় হতাশা দেখলাম। আমি বললাম, “দেখুন আপনারা কি জন্য আমাকে থামিয়েছেন সেটা আমি জানি না। যদি বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলেন তাহলে হয়তো আপনাদের কোনো সহায্য করতে পারবো।”

লোকটা বলল, “কি আর বলবো। একটা বোন ছিল। কয়েকদিন পর ওর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুদিন হলো ও বাড়ি থেকে পালিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে ওদিন রাতে বাসার সামনে তোমার মতো কেউ ১০ মিনিটের মতো দাড়িয়ে ছিল। এরপর চলে যায়। হয়তো ভাবছিলাম যে দাঁড়িয়ে ছিল ওর সাথে পালিয়েছে।”
দেখুন আমি আপনার বোন কে নিয়ে পালালে এখানে থাকতাম না। আর আমি পালাবোই বা কেন? শম্পাকে দেখিয়ে বললাম ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আমার মুখে এমন কথা শুনে শম্পা চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি ইশারায় চুপ থাকতে বললাম।
এরপর রুহিের ভাই বলল, “আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিছু মনে করো না।”

আমি বললাম, “ভাইয়া ছোট হিসাবে একটা উপদেশ দিতে পারি কি?”
_ কি বলো শুনি।
_ আপনার বোন যার সাথেই পালিয়েছে তাকে অনেক ভালোবাসে। ওদের ভালোবাসার দিকে দেখে ওদেরকে ক্ষমা করে দেন। আর ওদেরকে বিয়ে দিয়ে দেন।
_ আমার বোনের ফোনে কল ই যাচ্ছে না। হয়তো সিমটা ফেলে দিছে। যাতে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না পারি।
_ আপনি আবার চেষ্টা করুন।
রুহিের ভাই রুহিের নাম্বারে কল করলো। আমাকে বলল রিং হচ্ছে।
রুহি কল রিসিভ করলো।
_ আমি রুহিের ভাইকে বললাম, “ভাইয়া লাউড স্পিকারে কথা বলুন। যাতে আমরাও শুনতে পারি।”
_ হ্যালো(রুহি)

_ কোথায় তুই? তোকে দুদিন ধরে কত যায়গায় খুজেছি। (রুহিের ভাই)
_ ভাইয়া আমি তোমাদের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে পারবো না। আর হ্যা আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই বিয়ে করেছি। আর কিছু বলার থাকলে বলো।
দেখলাম রুহিের ভাই রুহিের এমন কথা শুনে কষ্ট পেয়েছে। আমি উনাকে বললাম, “আমিনকি আপনার বোনের সাথে একটু কথা বলতে পারি?”
উনি আমাকে ফোন টা এগিয়ে দিলো।

আমি রুহিকে বললাম, “দেখুন আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা মোটেও ভালো করেন নাই। পালিয়ে যাওয়ার আগে অন্তত আপনার পরিবারের কতা টা ভাবতেন।”
_ ওরা আমাার হুট করে বিয়ে ঠিক করে দিবে আমার মত ছাড়াই। আমার তো পছন্দ থাকতে পারে। এটা তো উনারা জিজ্ঞাসা করেনি। তাহলে আমি কি করবো বলেন?
_ মানলাম আপনার ফ্যামিলির মানুষ ভুল করছে। আপনি তো উনাদের বিষয়টা বলতে পারতেন।
_ জানতাম ভাইয়া আব্বু কেউ মানবে না। তাই বাধ্য হয়ে পালিয়ে এসেছি। বলে রুহি কল কেটে দিলো।
আমি রুহিের ভাইকে বললাম, “ভাইয়া একটা উপায় আছে আপনার বোনকে ফিরিয়ে আনার।”
_ কি সে উপায়?
_ আপনি তো বলেছেন কয়েকদিন পর আপনার বোনের বিয়ে হওয়ার কথা।
_ হ্যাঁ ছিল। কিন্তু পাত্র পক্ষ এটা শোনার পর বিয়ে ভেঙ্গে দিছে।

_ শুনুন আপনার বোন যার সাথে পালিয়েছে তার সাথে ওই দিনে আবার বিয়ে দিন। এতে আমার মনে হয় এটাই ভালে হবে। কারণ বিয়ের তারিখ ঠিকই থাকবে। শুধু পাত্র পরিবর্তন হবে। আর বিয়ে না হলে আপনাদের মান সম্মান ও মনে না থাকবে। এখন আমার যা ভালো মনে হয় তা বললাম এখন এটা করবেন কি না বিষয় টা আপনাদের।
রুহিের ভাই বলল, “তেমার কথায় যুক্তি আছে। আমি বাসায় গিয়ে আব্বুর সাথে মিলে ডিসিশন নিবো। তারপর যা করার করবো।
_ ভাইয়া বিয়ে হলে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না।

_ আচ্ছা তোমার নাম্বার দাও। যদি আব্বু মানে তাহলে তেমাকে দাওয়াত দিবো।
রুহিের ভাইকে নাম্বার দিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
এতোক্ষণ রুহিের ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে শম্পার কথা ভুলেই গেছিলাম। দেখি শম্পা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আবার রিকশা ঠিক করে চলতে লাগলাম।
শম্পা বলল, “আমি ভাবছিলাম ওরা আপনাকে মারবে।”

_ ওদের এমন ব্রেন ওয়াশ করে দিছি মারার কথা মনেই করবে না। আর হ্যা তোমাকে তো বলাই হয়নি আমি ওর বোনকে ওদের বাসা থেকে নিয়ে পালাইছি।”
_ আমার কথা শুনে শম্পার হাসিমাথা মুখটা মুহুর্তেই চুপসে গেল। ও বলল, “তারমানে উনার বোনকে আপনি ভালোবাসেন?”
_ আরে ধুর ওর বোনকে আমার বন্ধু ভালোবাসে। তাই আমি ওদেরকে এক করতে এই কাজ করেছি।
_ শম্পা বলল, “তাহলে ভালোই হলো। আমার রাস্তায় কেউ নাই।”
_ কি সব আবোল তাবোল বলছো?
_ ওসব আপনি বুঝবেন না।
শম্পার কলেজের সামনে চলে আসছি। রিকশা থামলে শম্পা নামার সময় আমার গালে একটা পাপ্পি দিয়ে চলে গেল।
এই মাইয়া কখন কি করে ঠিক নাই। কবে যে আমার ইজ্জত টা শেষ করে আল্লাহ জানে।

ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। ক্লাস করে বের হয়ে আসলাম। আজকে রাকিব আসে নাই। হারামিটা ভয়ে গা ঢাকা দিছে।
ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছি। দেখি ইফতি ওর বান্ধবীদের সাথে সামনের টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে। আমার দিকে চেখ পড়তেই বড় বড় করে তাকালো।
দেখালাম এখানে থাকলে আবার কেন ঝামেলায় পড়তে হবে এজন্য কেটে পড়াই ভালো।
এজন্য উঠে চলতে লাগলাম। এদিকে ইফতি আমাকে দেখে আমার পিছু নিলো। ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে দাড়ালাম।
ইফতি আমার সামনে এসে দাড়ালো।

_ ওই তুমি বললা আজকে নাকি অসুস্থ? তাহলে ভার্সিটি তে আসছো কেন? এই বলে ইফতি আমার কপালে গালে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পরিক্ষা করতে লাগলো জ্বর আসছে কি না?
_ এই এতো লোকের মাঝে এসব কি করছো?
_ লোক কি বলবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যত্ন নেওয়া আমার অধিকার।
_ কিন্তু আমি তোমাকে ভালেবাসি না।
_ ওই চুপ..

_ এই এতো লোকের মাঝে এসব কি করছো?

_ লোক কি বলবে? আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যত্ন নেওয়া আমার অধিকার।
_ কিন্তু আমি তোমাকে ভালেবাসি না।
_ ওই চুপ! এখন কোনো কথা বলবে না।
_ ইফতি পাগলামি করো না।
_ এখন আমার সাথে বাসায় চলো। বলে ইফতি আমাকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসলো।
গোসল করে শুয়ে ভাবতে লাগলাম এখন আমার কি করা উচিৎ? শম্পাকে হ্যাঁ বলবো নাকি ইফতিকে?
নাহ! কোনো কিছু ভাবতে পারছি না। কিন্তু এর সমাধান করতেই হবে। নাহলে বড় অঘটন ঘটে যাবে।
রাকিবকে ফোন দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। কিন্তু ও কোনো সাজেশন দিতে পারলো না।
এতো চাপ নেওয়ার চেয়ে কিছুক্ষণ ঘুমানো ভালো।

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় আসলাম।
একটু পর শম্পাকে পড়াতে যেতে হবে। কিন্তু ও যে জেদি আর পাগলি, ওরে পড়ানো আমার পক্ষে কঠিন। বাড়িওয়ালির মেয়ে বলে না করে দিতে পারছি না।
কিছুক্ষণ পর শম্পাকে পড়াতে গেলাম।
শম্পা কে একটা হিসাববিজ্ঞানের অংক করতে দিলাম। কিছুক্ষণ পর শম্পা বলল, স্যার আর পারছি না। একটু বুঝিয়ে দেন।
আমি অংক টা করে দিলাম।
শম্পা বলল, “স্যার একটা কথা বলি?”
_ পড়া বাদে অন্য কোনো কথা বলতে পারবে না।
_ স্যার কথাটা পড়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
_ তা তোমার কি কথা শুনি?

_ আসলে স্যার আপনি সকালে বললেন আমার আপনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো জানলাম না।
_ ওটা তো ওদের এমনি বলছি।
_ ওদের যাই বলবেন কিন্তু আমাকে ব্যাবহার করলেন কেন?
_ তোমাকে কখন ব্যাবহার করলাম?
_ ওইযে আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে।
_ আপু ওটা বলা আমার ভুল হয়েছে। প্লিজ মাফ করে দেন। এমন ভুল জীবনেও করবো না।
_ ভুলটা সত্যি করলে কেমন হবে স্যার? (শয়তানি হাসি দিয়ে শম্পা)
_ কি সত্যি হবে রে শম্পা? (ইফতি ট্রে তে করে চা আর বিস্কুট নিয়ে এসে)

এই যা ইফতি সব শুনে ফেলল না তো। শুনলে তো দুই বোন মারামারি শুরু করতে পারে।
_ কি হলো শম্পা কিছু বলছিস না কেন? (ইফতি)
_ তাকিয়ে দেখি ইফতির ধমক খেয়ে শম্পার মুখটা শুকিয়ে গেছে। যাক ইফতি সঠিক সময়ে এসেছে। নাহলে শম্পা আমার মাথা খেয়ে ফেলতো।
আপাতত পড়িয়ে এখান থেকে কেটে পড়লে বাঁচি।
এজন্য আমি বললাম, “এভাবে শম্পাকে ধমকাচ্ছো কেন? ও একটা বাচ্চা মেয়ে।
_ আমার মুখে বাচ্চা শুনে শম্পা রেগে গিয়ে বলল, “স্যার আমি মোটেও বাচ্চা না।”
_ আমি শম্পাকে আরও রাগানোর জন্য বললাম, ” ও তুমি বাচ্চা না। তুমি তো কচি খুকি।”

আমার কথা শুনে ইফতি হাসতে লাগল। আর শম্পা রাগ করে উঠে গেল।
ইফতি বলল, “চা আর বিস্কুট গুলো খেয়ে নেন।”
আমি চা আর কয়েকটা টা বিস্কুট খেয়ে নিলাম। একটু পর শম্পা এসে বলল, “স্যার আপুর সামনে আমাকে বাচ্চা বললেন কেন?”
_ তোমাকে বাচ্চার মতো লাগে। তাই বাচ্চা বলছি।
_ শম্পা অভিমানী কন্ঠে বলল, “স্যার আমি কি সত্যি পিচ্চি?”
_ আরে তুমি এতো সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছে কেন? আমি তো মজা করে বলছি।

_ স্যার আপনার মুখে আমাকে বাচ্চা শুনতে একদমই ভালো লাগে না।
_ শম্পাকে ধমক দিয়ে বললাম, “ওই এসব কথা বাদ দিয়ে পড়তে বসো।
আরও কিছুক্ষণ পড়ানোর পর বাসায় চলে আসলাম।
রাতে খেয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুক চালিয়ে ঘুমিয়ে পরি।
সকালে উঠলাম মায়ের বকুনি খেয়ে। কিজন্য বকলো তাও বুঝলাম না। ধুর ভাল্লাগে না।
ব্রাশ করে ছাদে গেলাম। দেখি ইফতি বীথী দাড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে দুজনই কেমন লাজুক স্বভাবের হয়ে গেল।
শম্পাঃ আপনি এখানে?
আমিঃ কেন আসা বারন নাকি?
শম্পাঃ বারণ না। আপানকে ছাদে আসা দেখি না তাই।

একবার সকালে ছাদে আসছিলাম। এজন্য কান ধরে উঠবস করিয়েছিলে। সেটা কি করে ভুলি? (মনে মনে)
শম্পাঃআচ্ছা যাইহোক গতকালের মতো আজ কিন্তু আপনার সাথে কলেজে যাবো। আমাকে নিয়ে যাইয়েন।
বীথী র কথা শুনে ইফতি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি ওর তাকানো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে ইফতি বলল, “ওই তুই একা কলেজে যেতে পারিস না?

শম্পাঃআপু আমি দেখেছি তুমি শিমুল ভাইয়ার সাথে ভার্সিটি তে যাও। আমি তো তোমাকে কিছু বলিনি। তাহলে তুমি আমাকে বারণ করছো কেন?
ইফতিঃওসব তুই বুঝবি না। শিমুল আমার সাথে যাবে।
শম্পাঃআমি আগে বলেছি আমার সাথে সাথে যাবে।
দুই বোনের কান্ড দেখে আমি অবাক। এরা আমাকে নিয়ে কি শুরু করলো? এদেরকে না থামালে কারে কখন কি বলে ফেলবে ঠিক নাই। এজন্য আমি বললাম, “ওই দুজন চুপ করো।”
আমার ধমক শুনে দুজন চুপ হয়ে গেল।

আমিঃ এভাবে দুবোন ঝগড়া করার চেয়ে আমাকে কেটে দুভাগ করে নাও। তাহলে তোমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর,
ইফতিঃ নিথী, শিমুল আজকে তোর সাথে যাবে। কিন্তু কাল আমার সাথে যাবে। শর্তে রাজী?
শম্পাঃআমি রাজি।
আমি আর কোনো কথা না বলে নিচে চলে আসলাম।
এরপর রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য নাস্তা করে রেডি হলাম। বাহিরে বের হয়ে দেখি শম্পা দাঁড়িয়ে আছে।
শম্পাঃআপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

আমিঃএতো অপেক্ষা করে হবে না। এখন চলো।
রিকশা ভাড়া করে যেতে লাগালাম।
কিছুক্ষণ পর শম্পা বলল, “ইফতি আপুর ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। আপনি আপুর থেকে দূরে দূরে থাকবেন কেমন।
আমি কিছু বললাম না বলে ভাবতে লাগলাম এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে? আমার এখন কি করা উচিৎ?
শম্পা কথা বলেই যাচ্ছে। এই মাইয়া এতো কথা কিভাবে বলে বুঝি না। একটু পর ওর কলেজ পেয়ে গেলাম।
শম্পা নেমে গেল। আমি আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

ক্লাস করছি এমন সময় ইফতি কল করলো।
ক্লাসে স্যার আছে রিসিভ করলে বকা দিতে পারে এজন্য রিসিভ করলাম না।
ক্লাসের বাহিরে বের হয়ে দেখি ইফতি দাঁড়িয়ে আছে।
ইফতি আমাকে বলল, “তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। ক্যান্টিনে চলো।

আমিঃ কিন্তু আমার আরও দুটা ক্লাস হবে এখন। ক্লাস শেষ করে কথা বলবো।
ইফতি একটু ভেবে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
ক্লাস শেষ করে ইফতিকে কল দিলাম।
_ হ্যালো। (আমি)

_ কোথায় তুমি? (ইফতি)
_ তিন তলায় ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সামনে আছি। ক্যান্টিনে আসো। বলে কল কেটে দিলাম।
ক্যান্টিনে বসে আছি। একটু পর ইফতি আসলো।
আমিঃবলো কি বলবে?
ইফতিঃকথাটা কিভাবে বলবো ভেবে পাচ্ছি না।

_ প্রপোজ তো ভালোই করতে পারে। আর এখন কি বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছে না। শুনেই হাসি পাচ্ছে।
_ ওই হাসবে না। বিষয়টা আমার কাছে সিরিয়াস মনে হয়েছে তাই তোমাকে বলার জন্য ডেকেছি।
_ কি কথা বলো।
_ শম্পার ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।


পর্ব ০৭

_ ওই হাসবে না। বিষয়টা আমার কাছে সিরিয়াস মনে হয়েছে তাই তোমাকে বলার জন্য ডেকেছি।
_ কি কথা বলো।
_ শম্পার ব্যাবহার আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না। ওর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

_ দুই বোন ই একে অপরকে সন্দেহ করছে। যদি জানতে পারে দুজন ই আমাকে প্রপোজ করছে তাহলে কি হবে?
এমন চলতে থাকলে আরও সমস্যা বেশি হবে। এরচেয়ে দুজনকেই বলে দেওয়া ঠিক হবে। তাই সিন্ধান্ত নিলাম ইফতি শম্পাকে একসাথে করে এসবের সমাধান করতে হবে।
এজন্য ইফতিকে বললাম, “ইফতি বিকেলে ছাদে আসবে। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আর হ্যাঁ শম্পাকে সাথে করে আনবে।”
_ গুরুত্বপূর্ণ কথা আমার সাথে, শম্পাকে আনার মানে বুঝলাম না।

_ এখন এসব বলা যাবে না। বিকেলেই বুঝতে পারবে।
_ আচ্ছা। এখন কি বাসায় যাবে?
_ হুম, চলো একসাথে যাই।
এরপর দুজনে রিকশা করে বাসায় চলে আসি।

গোসল করে খেয়ে ফোনে পাবজি গেম খেলছি। এমন সময় শম্পা এসে ফোনটা কেড়ে নিলো।
_ ওই ফোন নিছো ক্যান? আমার গেম খেলা প্রায় শেষের দিকে। দাও তারাতাড়ি।
_ আপনাকে আপুর সাথে মিশতে মানা করছি। তারপরও কেন ওই ডাইনির সাথে রিকশায় করে বাসায় আসলেন?
_ তোমার মাথা ঠিক আছে তো?

_ আমার মাথা ঠিক ই আছে। আপনার সাথে অন্য কোনো মেয়ে সহ্য করতে পারি না।
_ ইফতি তোমার আপন বড় বোন।
_ আমি ভালোবাসায় কোনো ভাগ দিতে পারবো না।

_ এসব কথা বাদ দাও। আর শোনো তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তোমার আপুর সাথে বিকেলে ছাদে যাইবা কেমন।
_ আমার সাথে কি কথা যার জন্য আপুকেও থাকতে হবে?

_ সেটা বলার সময়ই বুঝবে। আর এখন আমার ফোন দিয়ে যাও।
_ শম্পা ফোনটা দিয়ে দিলো।
শম্পা যেতে যেতে ভাবতে লাগলো কি এমন কথা বলবে? হতে পারে আপুর সামনে আমাকে প্রপোজ করবে। কি়ংবা আপুকে যদি প্রপোজ করে তাহলে আমার কি হবে। আমি শিমুলকে ছাড়া কাউকে কল্পনা করতে পারি না।
শম্পা রুমে ঢুকে দেখে ইফতি ওর বিছানার শুয়ে ফোন টিপছে।

ইফতিঃ এতোক্ষণ কই ছিলি?
শম্পা মনে মনে ভাবলো বলা যাবে না শিমুলের কাছে গেছিলাম। এজন্য বলল, “ছাদে গেছিলাম।”
ইফতিঃ দুপুর বেলা ছাদে কেন?
শম্পাঃ এমনিতেই। কিছু কি বলবে আপু?

ইফতিঃ হুমমম, বিকেলে আমার সাথে ছাদে যাবি। শিমুল কি যেন বলবে আমাকে।
ইফতির কথা শুনে শম্পা চমকে ওঠে। শিমুল আমাকে একটু আগে বলল বিকেলে ছাঁদে যেতে। এরমানে আমাকে বলার আগেই আপুকে বলছে।
শিমুল আমাকে বাদ দিয়ে আপুকে ভালোবাসে না তো? না শিমুল আমার ছাড়া আর কারো হবে না।
ইফতিঃ ওই কি ভাবছিস?

শম্পাঃ কিছু না আপু। আচ্ছা তোমার সাথে বিকেলে ছাদে যাবো কেমন। এখন যাও আমি ঘুমাবো।
ইফতি উঠে চলে যায়।

বিকেলে আমি ছাঁদে যাই। দেখি ইফতি শম্পা দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে শম্পা বলল, ” বলেন কি জন্য আমাদের দু বোন কে একসাথে ডাকা?”
আমিঃ আসলে কিভাবে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না।
ইফতিঃ এতো ভাবাভাবির কি আছে! যা বলবে সোজা বলে ফেলো।

আমিঃ জানিনা আমার কথাগুলো তোমারা দুবোন কিভাবে নিবে? কিন্তু তারপরও কথা গুলো আমাকে বলতেই হবে।
ইফতি ভাবতে লাগলো, “শিমুল মনে হয় আমাকে ভালোবাসে। এজন্য শম্পার সামনে প্রপোজ করবে।”
শম্পা ভাবছে শিমুল আমার না হলে আমি বাঁচবো না।

আমিঃ দেখো তোমাদের দুজনকে একসাথে ডাকার কারণ হলো তোমরা দুই বোনই আমাকে ভালোবাসো। এমনকি আমাকে প্রপোজ ও করছো। এখন বলো আমি কাকে একসেপ্ট করবো?
আমার কথা শুনে ওরা দুবোন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো মনে মনে একে অপরকে গালি দিচ্ছে।

ইফতিঃ ওই শম্পা তুই ছোটবেলা থেকে আমার সব পছন্দের জিনিসে ভাগ বসিয়েছিস। এখন আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই পেলি ভালোবাসতে। দেশে আর কোনো ছেলে ছিল না মনে হয়।
শম্পাঃ আমি কি জানি তুমি উনাকে ভালোবাসো। জানলে কি আর এই ভুল করতাম! (কান্না ভেজা কন্ঠে)
ইফতিঃ যা করেছিস ভালো করিস নি। এখন আমি তোর বড় হয়ে বলছি শিমুল রে ভুলে যা।

শম্পাঃ আমাকে ভুলে যেতে বলছো কেন? তুমি নিজে পারলে ভুলে দেখো। আর আমি আমার ভালোবাসা না পেলে সুইসাইড করবো বলে দিলাম। বলে শম্পা কান্না করতে করতে চলে গেল।
ইফতিঃ শম্পা নাহয় বাচ্চা মেয়ে ভুল করছে। তুমি ওকে বোঝাতে পারতে তো।

আমিঃ আমার চেয়ে তুমি শম্পাকে বেশি চিনো। ও যেমন জেদি তেমন একরোখা। আর তুমি ওকে বাচ্চা বলছো। ও মোটেও বাচ্চা মেয়ে না। যথেষ্ট বড় হয়েছে। আমি ওকে অনেকবার না করেছি কিন্তু আমার কথা না শুনলে কি করবো তুমি বলো?

ইফতি কিছু বলল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ দুটো ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ফেলবে। এমনিতে আমার ইফতিকে ভালো লাগে। ভাবছিলাম ইফতিকে হ্যাঁ বলবো। কিন্তু শম্পার জন্য কিছুই হলো না।
ইফতি বলল, ” আমাকে ভাবতে দাও কি করতে হবে। এখন আমি গেলাম।”
শম্পা চলে গেল।

আমি ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি দুই বোন কত হাসি খুশি ছিল। আমার জন্য ওদের মাঝে ঝগড়া হলো। এসবের জন্য হয়তো আমি দায়ী।
হঠাৎ পকেটের ফোনটা কাঁপা-কাঁপি শুরু করলো। দেখি রুহিের ভাই কল করছে।
আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেসা করলাম, “কেমন আছেন?”
_ আলহামদুলিল্লাহ, তোমার কি অবস্থা? (রুহিের ভাই)

_ এইতো আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালোই। (কষ্ট টা চাপা রেখে)
_ আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিছি।

_ কি কথা ভাইয়া?
_ রুহি যে ছেলের সাথে পালিয়েছে ওর সাথেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী শুক্রবার বিয়ে। তোমার দাওয়াত রইলো।
_ ভাইয়া এসব কখন হলো?

_ রুহিের থেকে ছেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে ছেলের ফ্যামিলির সাথে কথা বলছি। পরে দুই পরিবারের সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
_ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি বিয়েতে অবশ্যই আসবো।
_ আচ্ছা তাহলে রাখি। বলে রুহিের ভাই কল কেটে দিলো।

ইমনর জন্য কতকিছু করলাম আর শালা আমাকে কিছুই বলে নাই। ওর উপর হেব্বি রাগ হচ্ছে।
রাকিবরে ফোন করলাম।
আমিঃইমনর বিয়ের দাওয়াত পাইছিস?
রাকিবঃ ইমন তো হানিমুনে কক্সবাজার, ওর বিয়ের দাওয়াত পামু ক্যান?
আমি রাকিবকে সব কিছু খুলে বললাম।

রাকিবঃ আরে কিছু মনে করিস না। ও হয়তো কাজের চাপে ভুলে গেছে। দেখ ঠিকই জানাবে।
_ আচ্ছা আমার ভালো লাগছে না। রাখলাম বলে কেটে দিলাম।
দড়িয়ে থাকতে থাকতে রাত হয়ে গেছে। ছাদ থেকে নেমে আসলাম।
মাঃ এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?

আমিঃ ছাদে। আচ্ছা মা আমি রুমে গেলাম।
রুমে এসেও ভালো লাগছে না। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
পড়ার টেবিলেও মন বসছে না। মা এসে বলল, “তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে । কোনো কিছ নিয়ে চিন্তা করছিস নাকি?”
_ না মা। এমনিতেই ভালো লাগছে না।

_ আচ্ছা এক কাজ কর। তুই শুয়ে পড়। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
মা কিভাবে বুঝলো আমি চিন্তা করছি? আসলে মা অতুলনীয়। মায়ের ভালোবাসা অনেক সন্তান ই বুঝতে পারে না। হয়তো ওরা মনে করে এতো শাসন না করতেই পারে। কিন্তু ওরা বোঝে না। শাসনের ভেতর ই ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। এটা সবাই বুঝতে পারে না।

মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে কিছুক্ষন পর ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে গেলাম। আজকে ইফতি ফোন ও দিলো না আবার ভার্সিটিতে দেখলাম না।
দুজনের আবার কি হলো উপরওয়ালা ভালো জানে।

সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে গেলাম। আজকে ইফতি ফোন ও দিলো না আবার ভার্সিটিতে দেখলাম না।
দুজনের আবার কি হলো উপরওয়ালা ভালো জানে।

এভাবে আরও দুদিন কেটে গেল।
আজ ইমনর বিয়ে। অবশ্য গতকাল ও এসে দাওয়াত দিয়ে গেছে।
বিয়ে তে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় ইফতি কল করলো।

_ হ্যালো। (আমি)
_ শিমুল তোমার সাথে আমার আমার কথা আছে। (ইফতি)
_ কি কথা বলো?
_ ফোনে বলা যাবে না।
_ তাহলে কিভাবে বলবে?
_ -আজকে আমার সাথে দেখা করতে পারবে?

_ এখন তো আমি বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। এসে কথা বলবো।
ইফতি আর কিছু না বলে কল কেটে দিলো।
কি কথা বলতে পারে ভাবতে লাগলাম? মনে হয় ডিসিশন নিয়ে নিছে। হয়তো তাই জানাতে কথা বলবে। কিন্তু আমি তো ইফতিকে পছন্দ করি। যদি শম্পার কথা বলে!
নাহ! নিজের ভালোবাসা কেন আরেকজনকে দিবে। ইফতি আমার ই হবে।

এখন আর এসব না ভেবে ইমনর বিয়েতে গেলাম।
রাকিব আমার আগেই চলে এসেছে। আমাকে দেখে বলল, “এতো দেরী করলি ক্যান?”
_ আর বলিস না। খুব টেনশনে আছি।
_ তোর আবার কিসের টেনশন?
_ শালা গাছে তুলে দিয়ে মই টান দিয়ে বলছিস কিসের টেনশন?

_ আরে শান্ত হ এবার।
_ -কি করে শান্ত হবো? ইচ্ছে হচ্ছে তোদের দুজন কে গাছের সাথে উল্টো করে আচ্ছা মতো ধোলাই করি।
_ রাগিস না বন্ধু। ইমনর বিয়েটা হলে দুজন মিলে একটা ব্যাবস্থা নিবো।
_ একবার তোদের বুদ্ধি শুনে যে বাঁশ খাইছি দ্বিতীয় বার আর সে ভুল করছি না।
_ এসব নিয়ে পরে কথা বলিস। আজকে তো আনন্দ কর।
_ শালা হওয়া বিয়ের আবার কিসের আনন্দ?

_ আরে পাগলা চারিদিকে দেখ কত সুন্দরী মেয়ে। এদের সাথে একটু মজা করবো কি না আর তুই ওসব চিন্তা নিয়ে পরে আছিস।
_ লুইচ্চা। খাড়া তোর গার্লফ্রেন্ড কে বলতেছি।
_ ভাই তোর পায়ে ধরি এসব ওরে বলিস না।
_ বলবো না এক শর্তে।
_ কি শর্ত?
_ আমার জন্য দুটা বেনসন সিগারেট নিয়ে আসবি।
_ এতো ভালো হলি কবে থেকে?

_ আজকে ইমনর বিয়ে। এজন্য বিশেষ ছাড় দিছি। আর বেশি কথা না বলে সিগারেট আন।
রাকিব সিগারেট আনতে গেল। আমি একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
একটু পর রাকিব সিগারেট নিয়ে আসলো। কিন্তু বলদ দিয়াশলাই আনে নি।

এখন আগুন কই পাবো? এতো বাড়ি ভর্তি লোক। ধুর এতো টেনশন করছি কেন? এখানে কেউ তো আমাকে চিনে না। তাহলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
ইমনর রুমে গিয়ে দেখি বেচারা পাঞ্জাবি পড়ছে। ইচ্ছে হচ্ছে ওরে কিছুক্ষণ কাতুকুতু দেই। কিন্তু আরও মানুষ আছে। তাই কাতুকুতু দিতে পারলাম না।
ইমনরে ইশারায় বললাম, “আগুন পাওয়া যাবে?”
ও বলল, “কিচেনে আছে। তবে সাবধান। আম্মু আছে মনে হয়।”

আমি কিচেনে গিয়ে দেখি কেউ নাই। ম্যাচ টা পকেটে পুরে ছাদে আসলাম। যাক এখানে কেউ নাই। শান্তি মতো সিগারেট খাওয়া যাবে।
সিগারেটে আগুন ধরিয়ে দুটা টান দিতেই মনে হলো কেউ আসছে। পেছন ঘুরে দেখি কয়েকটা মেয়ে। দেখতে মাশাআল্লাহ। কিন্তু একটাকেও চিনি না।
ধুর এদের কে ভয় পেয়ে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করবো এটা হতে পারে না। তাই ওদের সামনেই সিগারেট টান দিতে লাগলাম।
আহ! কি মজা।

এমন সময় একটা মেয়ে বলে উঠলো, “এই যে মিস্টার এতোগুলা মেয়ের সামনে সিগারেট খেতে লজ্জা করে না আপনার?”
আমিঃ আমার টাকায় সিগারেট খাচ্ছি এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে!

মেয়েটিঃ আপনি আমার সামনে সিগারেট খেতে পারবেন না।
_ আপনার সহ্য না হলে চলে যান। এতো ভাব নেওয়ার কি আছে!
_ ওই আমি ভাব নিতে লাগলে আমার পিছে তোর মতো ছেলের লাইন লেগে যাবে।

_ হ জানি তো। কম দামী পন্যের কাস্টমার বেশি।
_ মেয়েটার এক বান্ধবী বলল, “আরে সিমা তুই এই ছোটলেকের বাচ্চার সাথে এতো কথা বলছিস ক্যান? চল এখান থেকে।
আমাকে যা ইচ্ছে বলুক। কিন্তু কেউ আমার মা বাবা কে নিয়ে বাজে কথা বললে আমার সহ্য হয় না। আর এই মেয়েকে ছাড় দেওয়া কোনো মতে সম্ভব না।

মেয়েটার সামনে গিয়ে ঠাসস করে দুগালে দুটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম, “নেক্সট টাইমে কাউকে কিছু বলার আগে ভেবে কথা বলবি। আর এমন কিছু করার আগে আমার থাপ্পড়ের কথাটা অবশ্যই মনে থাকবে। আর হ্যাঁ আমার আশেপাশে যেন তোকে না দেখি।”
আমার থাপ্পড় দেওয়া দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে।
আর মেয়েটা দু গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসি।

_ রাকিব বলল, “এতোক্ষণ কই ছিলি?”
রাকিব কে সব কিছু খুলে বললাম। ও সব শুনে বলল, “ঠিক করেছিস।”
একটু পর মাইক্রোবাসে তে করে চললাম রুহিদের বাড়ির দিকে। আধা ঘন্টা র মধ্যে পেয়ে গেলাম।
আমাকে বরের মাইক্রোবাসে থেকে নামা দেখে রুহিের ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে এ বরের মাইক্রোবাসে আমি কেন?
রাকিবকে সাথে করে নিয়ে ঘুরতে লাগলাম। একটু পর খেতে দিলো।

খাওয়ার কিছু ক্ষন পর ইমন আর রুহিের বিয়ে পড়ানো হলো।
এরপর বর বউ নিয়ে চলে আসা হলো।
আমি ইমনর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। রাত হয়ে গেছে।
ইফতির কথা মনে পড়লো। ও কি যেন বলতে চেয়েছে।
ইফতিকে কল করলাম।
_ হ্যালো শম্পা, কোথায় তুমি? (আমি)

_ বাসায়, কেন?
_ সকালে কি যেন বলতে চাইছো?
হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তো অনেক বিজি।
_ বললাম তো ইমনর বিয়ে। আচ্ছা এক কাজ করো, তোমার বাসায় ছাদে আসো। আমিও ছাদে আসছি।
_ ইফতি বলল, “আচ্ছা।”
ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগলে দেরী হবে। এরচেয়ে এই অবস্থায় যাই।

ছাদে গিয়ে ফোন টিপতে লাগলাম। একটু পর ইফতি আসলো।
আশেপাশের বাসা থেকে লাইটের আলো আসছিল। সেই আলোতে ইফতিকে দেখলাম। বড্ড মায়াবী লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে জড়িয়ে ধরে বলি ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি।
আমি বললাম, “ইফতি তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”

_ ইফতি বলল, “আগে আমার কথা শোনো। তারপর তোমার কথা বলো।”
_ আচ্ছা বলো।
_ আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি আমার বোনকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। ওর কষ্ট আমি দেখতে পারবো না। আমার বোনটা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। বলো কখনও ওকে কষ্ট দিবে না।

আমি ইফতির কথা শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। ইফতি আমাকে এতোটা শক দিবে ভাবতেও পারি নি। ওর চোখ ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এখনি বাধ ভেঙে অঝোর ধারায় পানি নামবে।
ইফতি আমাকে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল, “কি হলো কথা দাও আমার বোন কে সারাজীবন ভালোবেসে যাবে।”
_ ইফতি তোমার মাথা ঠিক আছে তো? নিজের ভালোবাসা কখনও এভাবে বিলিয়ে দেয়?

_ আমার বোনের জন্য সব করতে পারি।
কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি শম্পাকে ভালোবাসতে পারবো না।
_ আমার জন্য তোমাকে পারতে হবে।
_ পাগলামি বাদ দাও।

_ আমি পাগলামি করছি না। সবকিছু ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমনকি আব্বু আম্মুকে ও বলছি তোমার আর শম্পার কথা। উনারা রাজি হয়েছে।
_ তুমি এতোবড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে জানাতে পারতে।
_ শম্পা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। এরচেয়ে তোমার কি চাই?

_ শুধু ওর ভালোবাসা হলে তো চলবে না। আমারও তো ওকে পছন্দ হতে হবে।
_ শিমুল প্লিজ আমার রিকুয়েষ্ট টা রাখো। তাহলে বুঝবো তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো।
ইফতি কান্না করতে লাগলো।

আমি বললাম, “ইফতি তুমি আমাকে এমন রিকুয়েষ্ট করতে পারো না যে যেটা করতে লাগলে নিজের ভালোবাসা হারাতে হবে। আমি এমন রিকুয়েষ্ট রাখতে পারবো না।
ইফতির কান্না বেড়েই চলেছে। আচমকা ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরলো…..


পর্ব ০৮

আমি বললাম, “ইফতি তুমি আমাকে এমন রিকুয়েষ্ট করতে পারো না যে যেটা করতে লাগলে নিজের ভালোবাসা হারাতে হবে। আমি এমন রিকুয়েষ্ট রাখতে পারবো না।
ইফতির কান্না বেড়েই চলেছে। আচমকা ইফতি আমাকে জড়িয়ে ধরে আরও কান্না করতে লাগলো।
আমি বললাম, “এই পাগলি এভাবে কান্না করো না। আমি তো আছি।

_ কান্না করবো না তো কি করবো বলো? নিজের ভালোবাসার মানুষ ছোটবোনের বর হবে। এর চেয়ে কষ্ট কি হয় বলো?
_ তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে এই ভুল করলে কেন?
_ শম্পা বলছে তোমাকে না পেলে সুইসাইড করবে। বাধ্য হয়ে আমি আব্বু আম্মুকে রাজি করিয়েছি।

_ আমি আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে উনাদের সব বিষয় বুঝিয়ে বলবো।
_ প্লিজ, তুমি এমন করো না। আমার হয়তো কিছুদিন কষ্ট লাগবে। পরে নিজেকে মানিয়ে নিবো। কিন্তু তুমি শম্পার না হলে আমার শম্পাকে হারাতে হবে। আমি জীবনেও নিজেকে মাফ করতে পারবো না।
_ তুমি শুধু নিজের দিকটাই ভাবছো। আমার কথাটা একবার ভাবতে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে সারাজীবন থাকতে হবে।
_ শিমুল তুমি যদি আমার কথা না রাখো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে বলে দিলাম বলে চলে গেল।

_ কি বিপদে পড়লাম। একদিকে নিজের ভালোবাসা। অপর দিকে ভালোবাসায় মানুষের কথা রক্ষা করা। ইফতির কথা না রাখলে ওর মরা মুখ দেখতে হবে। আমার জন্য ইফতিকে মরতে দিবো না। আমার জন্য ইফতির কিছু হলে কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। দরকার হলে আমি শম্পাকে বিয়ে করবো। হ্যাঁ আমি শম্পাকে বিয়ে করবো। অন্তত এজন্য ইফতি রক্ষা পাবে না।
আস্তে আস্তে ছাদ থেকে নেমে আসলাম।

রাতে আর খেলাম না। উল্টাপাল্টা চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারলাম না।
সকালে কে যেন বলল, “এই ওঠো, তোমার জন্য কফি আনছি।”

_ ধুর এতো সকাল সকাল কেডা ঘুম ভাঙ্গালো। চোখ খুলে দেখি শম্পা দাঁড়িয়ে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম, “ওই তুমি আমার রুমে কেন? আম্মু দেখলে কি মনে করবে? যাও বলছি।”
_ আরে পাগল শ্বাশুড়ি আম্মু আমাকেই এখানে পাঠিয়েছে আপনাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।

_ ওই ফাজিল মেয়ে তুমি আমার আম্মু কে শ্বাশুড়ি বলছো ক্যান? লজ্জা করে না এসব বলতে?
_ উনি তো কয়েকদিন পর আমার শ্বাশুড়ি হবে। তাই আগে থেকে বলার অভ্যাস করছি। আপনি এতো রাগ করছেন কেন?
_ কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?

_ আমার মাথা ঠিকই আছে। শোনেন বিকেলে আপনার সাথে ঘুরতে যাবো। রেডি হয়ে থাকবেন কেমন। আর হ্যাঁ আপনার মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন জাগছে। আমি এসবের উওর দিতে পারবো না। সব কিছু আমার শ্বাশুড়ি আম্মু বলবে। আমি এখন যাই।

গতকাল ইফতি বলল শম্পাকে বিয়ে করার কথা। কিন্তু এ কথা আমার আম্মু এতো তারাতাড়ি জেনে রাজি হয়ে গেল কিভাবে?
_ আম্মু ও আম্মু।

_ হারামজাদা ষাঁড়ের মতো ডাকছিস ক্যান?
_ বাসায় এসব কি চলছে আমি তো কিছুই বুঝছি না।
_ তোর কিছু বোঝা লাগবে না। খালি এটাই মনে রাখ আর সাতদিন পর তোর আর শম্পার বিয়ে।
_ আম্মু আমি এ বিয়ে মানি না।

_ থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিবো। মায়ের কথায় অবাধ্য হচ্ছিস। জানিস আমার কথা না মানলে তোর কি অবস্থা করবো একবার ভাবছিস?
_ এমনিতেই আম্মু কে ভয় পাই। আবার ভয় দেখাচ্ছে। কি যে করি। কিছু না বলে ড্রইং রুমে গিয়ে টিভি দেখতে লাগলাম।

একটু পর নাস্তা করে ভার্সিটি গেলাম। হারামি রাকিব আজকে আসে নি। ক্লাস শেষ করে বাসায় আসতে লাগলাম। এমন সময় রিকশার সামনে একটা কার এসে থামলো।
কার থেকে শম্পার আব্বু বের হয়ে আসলো। উনি আমাকে বলল, “শিমুল রিকশা থেকে নেমে কারে এসে বসো।”
যদি না বসি তাহলে অভদ্র মনে করবে। তাই রিকশা ভাড়া দিয়ে কারে বসলাম।

_ বাবা শিমুল তোমাকে না জানিয়ে তোমার আব্বু আম্মুর সাথে মিলে তোমার আর শম্পার বিয়ে ঠিক করেছি। আসলে আমার মেয়েটা অনেক জেদি। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। দুদিন ধরে বায়না করছে ওর সাথে তোমাকে বিয়ে না দিলে সত্যি সত্যি সুইসাইড করবে। এজন্য আমি অপারগ হয়ে এই কাজ করেছি। আমি কোনো ভুল করলে মাফ করে দাও।
আমার লাইফের বারোটা বাজিয়ে এখন মাফ চাইতে আসছে। মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে আবার ওসব বলে ইফতির কথা মনে করিয়ে দিলো। ধুর ভাল্লাগে না।
_ কি হলো বাবা কথা বলছো না কেন?

_ আসলে আঙ্কেল একটা কথা ছিল। বড় মেয়েকে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দিলে লোকে কি বলবে বলেন তো?
_ বাবা ওই ছোট মেয়ের টেনশনে সব ভুলে গেছিলাম। তুমি আমাকে ভালো কথা মনে করিয়ে দিছো। আমি আমার বন্ধু র ছেলের সাথে ইফতি র বিয়ে অনেক আগে থেকে ঠিক করে রেখেছি। শুধু দিন ঠিক করা হয়নি। আমি এখনি কথা বলে ইফতি আর আবরারের বিয়ের দিন ঠিক করছি।

এই যা কি রেখে কি বলে ফেললাম। এখন আমার আগে ইফতিকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তারমানে কি আমি ইফতিকে পাবো না?
আঙ্কেল উনার বন্ধুর সাথে কথা বলে ইফতি আর আবরারের বিয়ের দিন ধার্য করলো। আঙ্কেল বলল, “আমার দুই মেয়ে কে একই দিনে বিয়ে দিবো। বাবা তুমি আমাকে একটা বড় ভুল করা থেকে বাঁচালে।”
একটু পর বাসার সামনে চলে আসলাম। আমাকে নামিয়ে দিয়ে আঙ্কেল বলল, “আমার একটু অফিসে যেতে হবে। তুমি বাসায় যাও।”

ধুর কি থেকে কি করে ফেললাম! আম্মু এসে বলল, “কি বাবা বিয়ের আগেই তোর শ্বশুর তো দেখছি ভালোই জামাই খাতির করছে।”
_ মা মজা করো না তো। আমার ভাল্লাগছে না। একটু আমাকে একা থাকতে দাও।

আম্মু চলে গেল। আমি শুয়ে পড়লাম। বিকেলে রেডি হয়ে শম্পার সাথে ঘুরতে বের হলাম।
তাকিয়ে দেখি ইফতি দোতলায় থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে। আর সাতদিন পর ইফতি অন্য কারো হয়ে যাবে। ভাবতেই বুকের বা পাশে কেমন করে উঠলো।
এদিকে শম্পা আমার হাত ধরে বলল, “এইযে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলেন।”
আমি শম্পার সাথে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালাম।

এরপর একটা রিকশা ভাড়া করলাম।
শম্পাকে বললাম, “কোথায় যাবে?”
_ নদীর পাড়ে চলো।

রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম, “মামা নদীর পাড়ে চলো।
শম্পা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ” এই দেখেন তো আমাকে কেমন লাগছে?”

_ এতোক্ষণ ভালো করে শম্পাকে দেখি নি। এবার পূর্ণ দৃষ্টি তে তাকালাম। কালো শাড়ি পড়েছে। ওর কানের পাাশের চুলগুলো বাতাসে অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। আর শম্পা ওগুলো বার বার কানের পাশে গুঁজে দিচ্ছে। এমনিতেই শম্পা অনেক সুন্দরী। তারপর মুখে হল্কা মেকাপ করছে। আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। যেকোনো ছেলে এমন রূপে প্রেমে পড়তে বাধ্য। কিন্তু আমার মনে কোনো ফিলিংস আসছে না। বারবার ইফতির কথা মনে পড়ছে।
_ কি হলো বললেন না যে?

_ ও হ্যাঁ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
_ সত্যি! (খুশি হয়ে)
_ হ্যাঁ সত্যি।
শম্পা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। আমি কিছু বললাম না। কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে।
_ একটু পর নদীর পাড়ে চলে আসলাম।

এসেই শম্পা বায়না ধরলো ফুচকা খাবে। তো শম্পাকে বললাম, “চলো।”
_ না। আপনি নিয়ে আসেন। আর হ্যাঁ অনেক ঝাল দিয়ে বানিয়ে আনবেন।

শম্পার কথামতো অনেক ঝাল দিয়ে ফুচকা নিয়ে আসলাম।
_ এখন এগুলো কোথায় বসে খাবে শুনি? (আমি)
_ সামনে একটা বটগাছ আছে। ওখানে বসার যায়গা আছে। ওখানে বসে খাবো। এখন চলেন।”

বুঝলাম না ওখানে না খেয়ে এখানে খাওয়ার মানে কও? মেয়ে মানুষের মনে কখন কি হয় আল্লাহ ভালো জানে।
শম্পা বসে ফুচকা খাচ্ছে আর আমি দেখছি। এই মাইয়া এতো ফুচকা কিভাবে খায়! শম্পা আমাকে বলল, “এই হা করেন।”
_ আমি খাবো না। তুমি খাও।
_ নেন বলছি।

আমি হা করলাম। আমনি শম্পা আমাকে একটা ফুচকা খাইয়ে দিলো। ও মাগো একি ঝাল! ঝালে আমার ঠোঁট পুড়ে গেল মনে হয়। আর এই মসইয়া এতো ঝাল কিভাবে খাচ্ছে।
আমি ঝাল ঝাল বলে চিল্লাতে লাগলাম। আর শম্পাকে বললাম, “ওই পানি খাওয়াও।”
_ আমি এখানে পানি পাবো কোথায়?
_ জানি না। আমার ঠোঁট পুড়ে গেল। কিছু একটা করো।

_ কিছু করলে আবার বকবেন না তো।
_ না। উফফফ মরে গেলাম ঝালে। এতো ঝাল কিভাবে খেলে?

শম্পা কোনো কথা না বলে আমার ঠোঁটে কিস করা শুরু করলো। দুই মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “এখন ঝাল কমেছে আপনার?”
_ এই তাই তো আমার ঝাল নেই। আজব বেপার ঝাল গেল কোথায়? (আর কিস করায় এতো মজা লাগে হিহি। কিন্তু শম্পাকে বুঝতে দিলাম না। )
_ মিষ্টির কাছে ঝাল পারে না। তাই আপনাকে মিষ্টি খাওয়াইছি। এজন্য ঝাল চলে গেছে।

_ শয়তান লুচু মাইয়া আমাকে কিস করার জন্য প্ল্যান করে ফুচকায় বেশি ঝাল দিয়ে বানিয়ে আনতে বলছো।
_ হিহিহি, এতোক্ষণে আপনি বুঝছেন।
_ এসব কিন্তু ঠিক করছো না।

_ আমার কি দোষ! আপনার অতো সুন্দর ঠোঁটে কিস করার লোভ সামলাতে পারি নি।
_ বিয়ের আগে এসব আর করবে না।
_ কেন? অন্য কারো থেকে নিবেন নাকি?
_ সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে। এখন চলো এখান থেকে।

_ দুজন হাঁটতে লাগলাম। শম্পা আমার হাত ধরে আছে। একেবারে খারাপ লাগছে না। তারপরও মনে হচ্ছে শম্পার যায়গায় ইফতি হলে আরও ভালো লাগতো।
শম্পা আবার আবদার করলো আইসক্রিম খাবে। তো আইসক্রিম ওয়ালাকে বললাম দুটা আইসক্রিম দিতে।
শম্পা বলল, ” দুটা না। একটা নিলে হবে।”
এই মাইয়া এখন নিজে নিজে আইসক্রিম খাবে। আর আমাকে দিবে না।

এটা মানতে পারছি না। কিন্তু ওর সামনে কিছু বললাম না।
একটা আইসক্রিম নিয়ে ওকে দিলাম। শম্পা আইসক্রিম এর এক কোনায় এক কামড় দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে বলল, “খান একটু।”
_ তোমার টা কেন খাবো?
_ একসাথে খেলে ভালোবাসা বাড়ে। নেন কথা না বাড়িয়ে আইসক্রিম খান।”

জানি না খাওয়া পর্যন্ত আমাকে ছাড়বে না। তাই বাধ্য হয়ে ওর সাথে আইসক্রিম ভাগাভাগি করে খেলাম। এতোদিন যত আইসক্রিম খেয়েছি তারচেয়ে আজকে খেয়ে বেশি মজা পেলাম।
হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এসেছি। তাই শম্পাকে বললাম, “চলো অনেক ঘুড়ছি। এখন বাসায় চলো।”
_ শম্পা বলল, “সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ওখানে চলেন না প্লিজ।”

শম্পার আবদার ফেলতে পারলাম না। যেতে লাগলাম ওর সাথে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আচমকা শম্পা……

_ শম্পা বলল, “সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ওখানে চলেন না প্লিজ।”
শম্পার আবদার ফেলতে পারলাম না। যেতে লাগলাম ওর সাথে। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আচমকা শম্পা উফফ মাগো বলে বসে পড়লো।

_ ওই এখানে বসলে কেন?
_ দেখতে পাচ্ছেন না আমি পায়ে ব্যাথা পাইছি। উফফ কি ব্যাথা! আমি এখন কিভাবে যাবো? উহুহুহু।
_ সামান্য ব্যাথা পেলে এভাবে কেউ কান্না করে নাকি?

_ ব্যাথা আমার লেগেছে, আমি বুঝতেছি। আপনি তো আর আমার ব্যাথা বুঝবেন না।
শম্পা ওঠে দাড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। কি বিপদে পড়লাম। একে এখন নেই কিভাবে? রিকশাও পাওয়া যাবে না। রাস্তা থেকে ১০ মিনিটের মতো হেঁটে আসছি।
_ এখন আমি এখান থেকে যাবো কিভাবে? (শম্পা)
_ চোখ কোথায় রেখে হাঁটতেছিলে হু? (আমি)

_ চোখ চোখের যায়গায় ছিল। কিন্তু রাস্তা দেখা বাদ দিয়ে অন্য কিছু দেখছিলাম। (তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু তুমি তো আমাকে বুঝতেই চাও না)
_ বিরবির করে কি বলছো?
_ কই কিছু না তো।

আমি শম্পার হাত ধরে বললাম, “এবার উঠার চেষ্টা করো।”
শম্পা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “উফফফ অনেক ব্যাথা করছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। কিছু একটা করুন।”
_ আজব আমি কি করবো?
_ কি করবেন মানে আমাকে কোলে করে নিয়ে চলেন।
_ আমি কেন কোলে নিবো?

_ আমি আপনার সাথে এসেছি। সো আমার কিছু হলে আপনি দেখবেন তাই না।
ধুর যাকে ভালোবাসি তাকে কোলে নিতে পারলাম না। আর একে কোলে নিতে হবে। ভাবা যায় এসব?
_ ওই কোলে নিবেন নাকি আমি চেচামেচি করে লোকজন জড়ো করবো?

মাইয়া বলে কি? বলা যায় না। সত্যি সত্যি লোকজন জড়ো করতে পারে। এরচেয়ে কোলে করে নেওয়াই ভালো। তাই আর কিছু না ভেবে শম্পাকে কোলে নিলাম।
শম্পা আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
_ ওই আমার দিকে এভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছো ক্যান? লজ্জা করে না তোমার?

_ বরের দিকে তাকাবো না তো কার দিকে তাকাবো?
_ -ওই আমি তোমার এখনও বর হইনি।
_ হননি তো কি হইছে। কয়েকদিন পর তো হবেন।
_ চুপচাপ থাকো। নাহলে এখানে ফেলে চলে যাবো।

শম্পা চুপ করে রইলো। এভাবে ইফতিকে কোলে না নিয়ে ওর শয়তান ছোট বোন কে কোলে নিতে হচ্ছে। আমার কপালে ইফতি কি আছে? নাকি এই আপদটা ই গলায় এভাবে ঝুলে থাকবে?
একটু পর রাস্তায় চলে আসলাম। এরপরে একটা রিকশা ঠিক করে বাসার দিকে আসতে লাগলাম। সারা রাস্তা শম্পার প্যাচালে কান ঝালা পোড়া হয়ে গেছে। যদি এর সাথে বিয়ে হয় তাহলে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে দিবে।

যাক বাঁচা গেল। অবশেষে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসতেই আম্মু আব্বু বলল, “কালকে তোর বিয়ের শপিং করতে হবে।”

_ কি আজব, বিয়ের দিন ঠিক হবার পরই শপিং। আমি এসব শপিং করতে পারবো না।
_ কি বললি! আরেকবার বল তো। (ধমক দিয়ে আব্বু)

ছোটবেলায় আব্বুর কথা একবার শুনছিলাম না বলে লাঠি নিয়ে সে কি দৌড়ানি দিছিলো। এখন যদি আবার অমন করে মান সম্মানের ছিটেফোঁটা থাকবে না। কি কাজ আছে শপিং করাই ভালো। এজন্য আব্বু কে বললাম, “কিছু না আব্বু, কালই শপিং করে আনবো।”
_ এইতো গুড বয়।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
ওদিকে ইফতির আব্বু ইফতিকে ডাকলো।

ইফতিঃ আব্বু কিছু বলবে?
ইফতির আব্বুঃ আমি ঠিক করেছি শম্পার বিয়ের দিন তোর ও বিয়ে দিবো।
ইফতি মনে মনে ভাবলো আমার আবার কার সাথে বিয়ে দিবে? এমনিতেই শিমুলকে হারাচ্ছি আবার আরেকজনের সাথে বিয়ে দিবে।
_ -আমার বন্ধু রফিক কে তো চিনিস। ওর ছেলে রাফাতের সাথে তোর বিয়ে।
ইফতিঃ আব্বু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।

_ কেন? ছেলের নিজের বিজনেস আছে। দেখতে সুন্দর। তোকে সুখেই রাখবে। এর চেয়ে কি চাই বল?
ইফতিঃ আব্বু আমি এখন বিয়ে করতে প্রস্তুত না।

_ বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। আর আমি কথা দিয়েছি আমার কথার একটা মূল্য আছে।
_ তাই বলে সেটার বলি আমাকে কেন হতে হবে?
_ তুই ছাড়া আর কোনো মেয়ে আছে বল?

_ আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। আর যদি জোর করো তাহলে আমাকে আর পাবে না বলে দিলাম।
ইফতির আব্বু চিন্তায় পরে গেল। এখন কি করে বন্ধু কে বলবে এই কথা? আবার বড় মেয়ের বিয়ে আগে না হয়ে ছোট টার আগে হলে লোকজন নানান কথা বলবে। হুট করে এভাবে বিয়ে ঠিক করা টা ভুল হইছে। তবে এখনও সবাইকে দাওয়াত করা হয়নি। আপাতত বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে দিলেই ভালো হবে। কিন্তু শিমুলের আব্বু আম্মু কি মেনে নিবে? বুঝিয়ে বললে অবশ্যই মানবে। দেরি করলে আবার দাওয়াত করে ফেলবে। এখনি কথা বলা উচিত।

আম্মুঃ রাতে আবার কে কলিং বেল বাজায়? বলে দড়জা খুললো। দেখে শম্পার আব্বু দাঁড়িয়ে। আরে বেয়াই সাহেব দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে আসুন।
ইফতির আব্বু ভেতরে এসে সোফায় বসলো।

ইফতির আব্বুঃ শিমুলের আব্বু কি বাসায় আছে? আসলে কিছু কথা আছে।
আম্মুঃ আছে। একটু দেরী করেন। আমি ডেকে আনছি।
আম্মু একটু পর আব্বু কে সঙ্গে করে আনলো।
ইফতির আব্বুঃ আসলে কথাটা কি করে বলি?

আব্বুঃ এতো ভাবাভাবির কি আছে? বলে ফেলুন।
ইফতির আব্বু সবকিছু খুলে বলল। এরপর বলল, “এখন আপাতত শিমুল আর শম্পার বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে দিতে চাচ্ছি যদি আপনাদের কোনো সমস্যা না থাকে।
আব্বু একটু ভাবলো। ভেবে বলল, “এখন এসে ভালোই করছেন। নাহলে কালকেই আমার সব আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিতাম।”
ইফতির আব্বুঃ তাহলে বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে।
আব্বুঃ আচ্ছা তাই হবে।

ইফতির আব্বুঃ ধন্যবাদ ভাইজান আমাকে অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করলেন।
আব্বুঃ আপনার সমস্যা টা আমি বুঝছি। এজন্য আমার যা করা দরকার তাই করলাম। এজন্য এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না।
ইফতির আব্বুঃ আচ্ছা ভাইজান তাহলে আমি আসি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় শম্পা কল করলো।
_ হ্যালো..(আমি)
_ এই মিস্টার আপনার ঘুম ভাঙছে? (শম্পা)
_ হ্যাঁ, কিছু বলবা?

_ হুমমম, বলার জন্য তো কল করছি।
_ বলো কি বলবা?
_ আজকে তো বিয়ের শপিং এ যেতে হবে।

_ এটা তো আমিও জানি। এটা ফোন করে বলার কি দরকার?
_ এভাবে কথা বলছেন কেন?
_ তো কিভাবে বলবো? ধুর সকাল সকাল মুড খারাপ করে দিলো বলে কল কেটে দিলাম।

শম্পা মনে মনে বলল, “মিস্টার শিমুল এখন যতোই রাগ দেখাও বিয়ের পর আমার কথাই শুনতে হবে।”
ইফতিঃওই বিরবির করে কি বলিস?
শম্পাঃ আপু ওসব তুমি বুঝবে না।
ইফতিঃ কি যে বুঝিস সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।

শম্পাঃ আপু ওসব কথা বাদ দাও। আজকে আমার বিয়ের শপিং করতে হবে। তুমি কিন্তু আমার সাথে অবশ্যই যাবে।
ইফতিঃশিমুলের সামনে গেলে নিজের মনকে আটকাতে পারি না। এজন্য ওর থেকে দূরে থাকতে চাই। ওকে ভুলতে চাই। শুধু তোর জন্য। কিন্তু এগুলো কখনও তুই জানতে পারবি না। (মনে মনে)
শম্পাঃকি হলো আপু বলো যাবে?

ইফতিঃ না রে। আমার একটা কাজ আছে। এজন্য যেতে পারবো না। তুই তোর কোনো বান্ধবী কে সাথে করে নিয়ে যা।
শম্পাঃ তুমি আমার সাথে না গেলে আমিও শপিং এ যাবো না বললাম।
ইফতিঃ লক্ষী বোন আমার রাগ করে না। বোঝার চেষ্টা কর। আমার কাজ না থাকলে অবশ্যই যেতাম।

শম্পাঃ আমার চেয়ে তোমার কাজ বেশী জরুরি হয়ে গেল? থাকো তোমার কাজ নিয়ে। আমি ও যাবো না শপিং এ। বলে চলে গেল।
ইফতি ভাবতে লাগল এখন কি করি। আমি না গেলে ও সত্যি সত্যি শপিং এ যাবে না। অনেকক্ষণ ভেবে কোনো উপায় পেল না। শেষমেশ ভাবলো নাহয় যাবে শপিং এ। কিন্তু শিমুলের থেকে দূরে থাকবে।
সকাল দশটা। আম্মু আমাকে বলল, “রেডি হতে এতো সময় লাগে নাকি?”

_ আম্মু আর দশ মিনিট ওয়েট করো। আসছি।
তারাতাড়ি রেডি হয়ে বাহিরে রুমের বাহিরে আসলাম।

রাকিবকে কল করছিলাম আমার সাথে যাওয়ায় জন্য। কিন্তু শালা এখনও আসে নি।
একটু পর রাকিব চলে আসলো।
শপিং এ যাবো আমি শম্পা রাকিব আর ইফতি।

শপিং এ যসওয়ার জন্য শম্পার আব্বু কার রেখে গেছে। আমি আর রাকিব সামনে বসলাম। রাকিব ড্রাইভিং সিটে আমি পাশের টায়। আর ইফতি শম্পা পেছনে। ইফতি সাথে আসাতে আনইজি ফিল করতে লাগলাম।

কারের মাঝখানের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ইফতিকে দেখলাম। ওর চোখ জোড়া ফোলা ফোলা লাগছে। মনে হয় রাতে অনেক কান্না করছে। আমার বিয়ের দিনই ওর ও বিয়ে হবে। বিয়ের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ইফতিকে দূরে হারিয়ে ফেলছি। এদিকে শম্পাও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার তো মন তো ইফতিকে চায়। ইফতিকে ছাড়া কিছু বোঝে না।
কার এসে থামলো সিটি শপিংমলের সামনে। এক এক করে সবাই কার থেকে নেমে শপিংমলের ভিতরে গেলাম।
রাকিবঃ আগে কনের শপিং করি। পরে বরের শপিং করা যাবে।

এক দোকানে ঢুকে কনের শাড়ি দেখতে লাগল। শম্পা একের পর একটা শাড়ি দেখে যাচ্ছে। অনেক শাড়ি দেখে একটা লাল বেনারসি পছন্দ করলো। শাড়িটা ইফতিকে দেখিয়ে বলল, “আপু দেখ শাড়িটায় আমাকে সুন্দর মানাবে না?

ইফতি মাথা নাড়ালো।
আমি ইফতির দিকে তাকালাম। ওর চোখ ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এখনি কান্না শুরু করবে।
ইফতির এমন অবস্থা দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি তো ওকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু আমার ভাগ্যে মনে হয় ইফতি নাই।
শম্পার শপিং শেষ হলে আমার জন্য শপিং করি।

শপিং শেষ করতে করতে ২ টা বেজে গেল। আমি বললাম, “চলো সবাই, দুপুরে কিছু খাওয়া যাক।”

চারজনে একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম। ইফতি আমার সামনের চেয়ারে বসেছে আর শম্পা পাশের চেয়ারে। ইফতি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওর চাহনিতে মনে হচ্ছে আমাকে অনেককিছু বলতে চায়। কিন্তু এখানে কোনো কথা বলা সম্ভব না। কারণ শম্পা জানে ইফতি আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা জানে না আমি কাকে ভালোবাসি। আমি আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো।


পর্ব ০৯

বিয়ের শপিং শেষে চারজনে একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম। ইফতি আমার সামনের চেয়ারে বসেছে আর শম্পা পাশের চেয়ারে। ইফতি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওর চাহনিতে মনে হচ্ছে আমাকে অনেককিছু বলতে চায়। কিন্তু এখানে কোনো কথা বলা সম্ভব না। কারণ শম্পা জানে ইফতি আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা জানে না আমি কাকে ভালোবাসি। আমি আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো। আমি ওদেরকে বললাম, “তোমরা খাবারের অর্ডার করো। আমি ওয়াশরুম থেকে আসি।”

ওয়াশরুমে এসে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলাম। এখন ভালো লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। এরপর খেয়ে বাসায় চলে আসি।
বিকেলে ফোনে গেম খেলছি। এমন সময় ইফতি কল করলো। আজকে শপিংমলে ওরে দেখেই বুঝেছি আমাকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু শম্পা সাথে থাকায় কিছু বলেনি।
ভাবতে ভাবতে প্রথমবার কল কেটে গেল। ইফতি আবার কল করলো।

এবার কল রিসিভ করলাম।
ইফতিঃ হ্যালো।

আমিঃ হুম, কেমন আছো?
_ দেখতেই পাচ্ছো কেমন আছি। আবার জিজ্ঞাসা করা লাগে নাকি?
_ না বললে জানবো কিভাবে?

_ ওসব কথা বাদ দাও যেজন্য তোমাকে ফোন করছিলাম?
_ কিজন্য বলো?

_ এখন আমার সাথে কি একটু দেখা করতে পারবা?
_ কোথায়
_ বাসার ছাদে
_ আচ্ছা 10 মিনিট পর আসতেছি

আর কিছুক্ষণ পর আমি ছাদে যাই। দেখি ইফতি দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক টেনশনে আছে।
_ ম্যাডাম এতো জরুরী তলব কেন?
_ ফাজলামি করবে না। অনেক টেনশনে আছি।

_ টেনশনে তো আমার থাকার কথা। তুমি টেনশনে থাকবে ক্যান?
_ আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে। শুক্রবারে একসাথে দু বোনের বিয়ে হবে।
_ বিয়ে ঠিক করছে। বিয়ে করবা। এতে সমস্যা কোথায়?
_ ভাবছিলাম তোমাকে ভুলে যেতে পারবো। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়েই যাচ্ছে। এখন তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে কল্পনা করতে পারবো না।
_ বললেই হয়ে গেল নাকি।

_ দেখো শিমুল মানছি আমি ভুল করছি। কিন্তু আমাকে ক্ষমা করে কি ফিরিয়ে নেওয়া যায় না?
_ তিন দিন পর তোমার ছোট বোনের সাথে আমার বিয়ে। আর এখন এসে আমাকে এসব বলছো। তোমার মাথা ঠিক আছে?
ইফতি কান্না শুরু করলো। ধমক দিয়ে কান্না থামাতে বললাম। কিন্তু আরও জোরে কান্না শুরু করে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
_ এই কি করছো? কেউ দেখে ফেললে মান সম্মান সব যাবে।

_ কেউ দেখলে দেখুক। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসার অধিকারে জড়িয়ে ধরেছি।
_ এই কথাটা দুদিন আগে বলোনি কেন বলো?
ইফতি কোনো উওর দিলো না। শুধু আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর,

ইফতিঃ এই শিমুল চলো আমরা দুজনে পালিয়ে যাই। তাহলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেল।
_ দেখো ইফতি পালিয়ে গিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না। তুমি আমি পালালে আমাদের পরিবারের কি হবে ভেবে দেখেছো? উনাদের মান সম্মানের কথাটা একবার ভাবো। এতোদিন ধরে বড় করার প্রতিদান এভাবে দিবে?

_ আমি এতো কিছু বুঝি না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
_ তুমি আমাকে ভালোবাসো। তোমার বোন শম্পা ও তোমার মতোই আমাকে ভালোবাসে। বলো এখন আমি কোনদিকে যাবো?
_ তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। তাহলে শম্পার কথা বলছো কেন?

_ শম্পার সাথে দুদিন পর বিয়ে। এখন ওকে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করলে ওর কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখছো?
_ শম্পার প্রতি ভালোবাসা দেখছি উতলে পড়ছে। আমিও বলে দিলাম, আমাকে ছাড়া ওই ডাইনীকে বিয়ে করলে এই জীবন রাখবো রাখবো না। এই বলে শম্পা চলে গেল।
এই আমার কি করা উচিত? অনেক ভেবে কোনো কূলকিনারা পেলাম না।
ছাদ থেকে নামার সময় শম্পার সাথে দেখা। অমনি শম্পা আমার হাত চেপে ধরলো।

_ এই করছো কি? তোমার আব্বু আম্মু দেখলে কি মনে করবে?
_ -আমি আমার হবু বরের হাত ধরেছি। কে কি বলবে শুনি?
দেখি ইফতি দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে আর রাগে ফুঁসছে।

_ এখন ছাড়ো। যা করার বিয়ের পর করো।
_ এসব বলে মাফ পাবেন না। আজকে কিন্তু আবার ঘুরতে যাবো। যান গিয়ে রেডি হন।
_ হাত না ছাড়লে রেডি হবো কিভাবে?

হাত ছাড়ছি, তবে একটু মাথাটা নিচু করুন।
_ হাত ছাড়ার সাথে মাথা নিচু করার কি সম্পর্ক শুনও?

_ আপনাকে একটা সিক্রেট কথা বলবো। জোরেই বলতাম। কিন্তু আশেপাশে মানুষ আছে। শুনে ফেলবে। এজন্য তারাতাড়ি মাথাটা নিচু করুন।

শম্পার কথা শুনে ইফতি রেগে লাল হয়ে গেছে। আর মনে মনে বলছে শয়তান আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রোমান্স করার মজা বুঝাবো। শিমুল শুধু আমার। আর আমার না হলে কাউকেও হতে দিবো না।
আমি শম্পার কথা মতো মাথাটা নিচু করতেই শম্পা গালে একটা চুমা দিয়ে দিলো দৌড়।
ইফতি দাঁড়িয়ে এসব দেখে রাগে সহ্য করতে না পেরে চলে গেল।

মনে হচ্ছে আমি এখন দুই নৌকায় দু পা দিয়ে দড়িয়ে আছি। একটু পর আমার কি হবে ভাবতেই পারছি না।
আপাতত রুমে যাওয়া যাক।

রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। মাথা কাজ করছে না। এতো প্যারার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
আম্মু এসে বলল, “তোরে এমন মন মরা লাগছে ক্যান?”

_ আসলে আম্মু শপিং করেছি তো। তাই হয়তো এমন লাগছে।
_ আচ্ছা তাহলে রেষ্ট নে। পরে তোর সাথে কথা বলবো।

_ আচ্ছা আম্মু।
বিকেলে শম্পার সাথে পার্কে ঘুরতে গেলাম।
কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর শম্পা বলল, “আপনার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে?”
_ তাহলে চলো কোথাও বসে কথা বলি।

_ সামনে একটা সুন্দর জায়গা আছে। ওখানে বসে কথা বলি।

আসলে জায়গা টা সুন্দর। আশেপাশে ফুলের গাছ। আর ওখানে বসার জন্য উঁচু করে ইট দিয়ে গেঁথে তোলা হইছে। দুজনে বসলাম।
_ কি জরুরি কথা বলবা বলো?
_ আপুর সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?

_ শম্পা হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো কেন?
_ যা বলছি তার উওর দেন।

_ কই, কিছুর না তো।
_ আপনার চোখ বলছে আপনি মিথ্যা বলছেন।
_ চোখ কথা বলে নাকি আজব।

_ দেখুন আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। ছাঁদে আপনার আর আপুর সব কথা আমি শুনেছি।
_ শুনছো যখন তাহলে জিজ্ঞাসা করছো কেন?

_ এই কয়েকদিনে আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু ভয় হয় যদি আপুর সাথে পালিয়ে যান।
শম্পার কথার কি উওর দিবো ভেবে পেলাম না। মেয়েটা সত্যি আমাকে ভালোবাসে। ওরে ধোঁকা দিলে সইতে পারবে না। অপরদিকে ইফতিও আমাকে ভালোবাসে। আমিও ইফতিকে ভালোবাসি। ইফতিও বলেছে আমাকে না পেলে বাঁচবে না।

_ কি হলো কথা বলেছেন না কেন? নাকি আপুকে নিয়ে পালানোর প্ল্যান করছেন?
_ শম্পা চুপ থাকো।

_ হবু বরের গার্লফ্রেন্ড আমার আপন বড় বোন। এখন তারা পালানোর জন্য প্ল্যান করছে। এমন অবস্থায় আমি চুপ থাকবো কিভাবে বলেন।
_ তুমি বলো আমি এখন কি করবো? তোমাকে বিয়ে করবো নাকি তোমার বোনকে? বলো? একবার আমার অবস্থানে এসে ভেবে দেখো আমি কতটা টেনশনে আছি। আচ্ছা দেশে আর কোনো ছেলে ছিলো না বলো?

_ আমি জানতাম আপু আপনাকে ভালোবাসে। জানলে তো আর এই ভুল করতাম না। যতদিনে জানছি ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এই মনটা এখন আপনার কথাই ভাবে। আপনাকে ছাড়া কোনোকিছু ভাবতে পারি না। মনে হয় আপনি আমার সব।

_ তোমরা দুই বোন আমাকে কেটে দু ভাগ করে নাও। তাহলে ঝামেলা মিটে গেল।

_ আমি এতোকিছু বুঝি না। আপনি শুধু আমার। আর আপুকে নিয়ে পালানোর কথা ভাবলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে। এখন ডিসিশন আপনার। যেটা ইচ্ছে করেন। আমি বাসায় গেলাম।
শম্পা চলে গেল। আমি বসে ভাবতে লাগলাম। কিন্তু কাকে রেখে কাকে বিয়ে করবো কোনো ঠিক করতে পারলাম না।

এমনিতেই টেনশনে দুদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না। বাজার থেকে এক দু পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে বাসায় আসলাম।
রাত প্রায় দুটা, আমার চোখে কোনো ঘুম নেই। ঘুম আসবেই বা কিভাবে? দু বোনের হুমকিতে ঘুম পালিয়েছে। কিন্তু না ঘুমালে তো শরীর থারাপ হয়ে যাবে। এজন্য অনেকগুলো ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লাম। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অতলে হারিয়ে যাচ্ছি। এরপরে আর কিছু মনে নাই।

সকালে আম্মু আমাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু আজকে কোনো নড়াচড়া না দেখে আমার কপালে হাত দিলো। দেখে কপাল ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ধাক্কা দিয়েও আমাকে তুলতে পারলো না।
হঠাৎ আম্মুর চোখ পড়লো টেবিলের উপর। দেখে প্রায় দু পাতার ১৫ টা ঘুমের ট্যাবলেট নেই। শিমুল তো কখনও ঘুমের ওষুধ খায় না। নাকি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে সুইসাইড করলো? এটা ভেবেই আম্মু একটা চিৎকার দিলো…..

সকালে আম্মু আমাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু আজকে কোনো নড়াচড়া না দেখে আমার কপালে হাত দিলো। দেখে কপাল ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ধাক্কা দিয়েও আমাকে তুলতে পারলো না।
হঠাৎ আম্মুর চোখ পড়লো টেবিলের উপর। দেখে প্রায় দু পাতার ১৫ টা ঘুমের ট্যাবলেট নেই। শিমুল তো কখনও ঘুমের ওষুধ খায় না। নাকি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে সুইসাইড করলো? এটা ভেবেই আম্মু একটা চিৎকার দিলো।

আম্মুর চিৎকার শুনে আব্বু ছুটে এল।

আব্বুঃ শিমুলের আম্মু কান্না করছো কেন?
আম্মুঃদেখো আমার ছেলেটার কি হয়েছে। ও উঠছে না কেন? ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।

আব্বুঃ তোমার ছেলে এতো ঘুমের ওষুধ খাইছে কেন?
আম্মুঃআমি কি করে বলবো? বেশি কথা না বলে এম্বুলেন্স ডাকো। ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হবে।

কিছুক্ষণ পর এম্বুলেন্স এলো। এম্বুলেন্সের শব্দ শুনে শম্পা ইফতি ওর আব্বু আম্মু সবাই নিচে নেমে আসলো।
শম্পাঃআন্টি আমার শিমুলের কি হয়েছে? এমনভাবে আছে কেন?

আম্মুঃজানিনা মা, ওর রুমে খালি ঘুমের ওষুধের প্যাকেট পেয়েছি। মনে রাতে ওগুলো খেয়েছে।
_ এখানে না কথা বলে তারাতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন। (এম্বুলেন্স চালক)

শম্পা মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি শিমুলকে অনেক প্রেশার দিছি। যার জন্য ওর আজ এ অবস্থা। শিমুলের কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
ইফতি ভাবতে লাগল কি হয়ে গেল। শিমুলকে এতো চাপ দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন ও যদি মারা যায়। তাহলে পুলিশ এসে আমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে। যদি কোনোভাবে জানতে পারে আমি বিয়ের জন্য চাপ দিছি তাহলে আমাকে জেলে যেতে হবে।

এদিকে আমাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। ডাক্তার এসে বলল, “কি হয়েছে এনার।”
আব্বুঃ অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। প্লিজ ডাক্তার সাহেব আমার ছেলেকে বাঁচান।”

ডাক্তারঃদেখুন বাঁচা মরা সব আল্লাহর হাতে। আমরা তো শুধু মাধ্যম। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। নার্স দ্রুত এনাকে ওটি তে নিয়ে যান।
নার্স এসে আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল।
ডাক্তার বলল, “আপনারা চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।”
অপারেশন থিয়েটারের সামনে বসে আম্মু কেঁদে ই চলেছে। শম্পা এসে আম্মু কে সান্ত্বনা দিতে লাগল।

শম্পাঃ আন্টি এভাবে কাঁদবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আবার শিমুলকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিবে।

আম্মুঃ মা রে আমার একটাই ছেলে ওর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। আমার শিমুলকে ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারি না।
_ -আন্টি নিজেকে শক্ত করুন। এখনও তো আশা শেষ হয়ে যায় নি।

প্রায় এক ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তার কে দেখে আম্মু আব্বু শম্পা দৌড়ে গেল।
আম্মুঃ আমার ছেলের কি অবস্থা? ওর জ্ঞান ফিরছে কি?

ডাক্তারঃ দেখুন আমাদের যা করার দরকার করেছি। কিন্তু…
আব্বুঃ কিন্তু কি ডাক্তার!

ডাক্তারঃ দেখুন অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার জন্য আপনার ছেলে প্রায় মারা যাচ্ছিল। একটু দেরী হলে ওকে বাঁচাতে পারতাম না। । কিন্তু এখন সমস্যা হলো আপনারা রোগী কে আনতে অনেকটা দেরী করে ফেলেছেন। এজন্য ওর জ্ঞান কখন ফিরবে সেটা বলতে পারছি না। এখন আপনাদের ছেলে কমায় আছে।
শম্পাঃ কমা থেকে বের হবে কবে?

ডাক্তারঃ সেটা দুদিনের ভেতর ও হতে পারে। আবার দুমাস বা বছর ও লাগতে পারে। আবার জ্ঞান নাও ফিরতে পারে। এখন আল্লাহর কাছে ডাকুন। আমাদের আর কিছু করার নাই।
আম্মুঃ আমার ছেলেকে কি দেখতে পারি?

ডাক্তারঃ একটু পর রোগী কে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন দেখতে পাবেন। আপাততঃ অপেক্ষা করুন।
ডাক্তার চলে গেল। আম্মু শম্পাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। শম্পার আম্মু আব্বু হসপিটালের আসলো।
এসে বলল, “এখন কেমন আছে?”

আব্বু ওনাদের সব খুলে বলল। শম্পার আব্বু বলল, “চিন্তা করবেন না। আমার বিশ্বাস শীঘ্রই শিমুল আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।”
একটু পর আমাকে কেবিনে সিফট করা হলো।
আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। নার্স বলল এভাবে রোগীর সামনে কান্না করবেন না।

আন্টি আম্মুকে ধরে পাশের চেয়ারে বসালো।
ইফতি এসে দড়জায় সামনে দাড়ালো। ইফতির আম্মু ইফতিকে সবকিছু খুলে বলল।

ইফতি ভেবেছিল শিমুল হয়তো মারা গেছে। কিন্তু যখন দেখলো বেঁচে আছে তাহলে আর চিন্তার কারণ নাই।
এক মাস চলে গেল তাও আমার জ্ঞান ফিরলো না। আম্মু প্রতিদিন ই আমার জন্য কাঁদে। আব্বু তো শুকিয়ে গেছে। শম্পা প্রতিদিন ই আসে আমাকে দেখতে। অনেক্ক্ষণ থেকে চলে যায়।
এভাবে আরও তিন মাস কেটে গেল। ইফতি আর তেমন আসে না। কিন্তু শম্পা প্রতিদিন ই আসে। হঠাৎ একদিন আমার জ্ঞান ফিরে যায়। চোখ খুলে দেখি আম্মু বসে আছে। আম্মু রেগা হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।

আমার চোখ খোলা দেখে আম্মু খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
_ আম্মু এভাবে কান্না করছো কেন? আর আমি এখানে কেন?

_ তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে লাগছিলি কেন? যানিস না তোকে ছাড়া আমি বাচবো না রে বাবা।

ডাক্তার এসে বলল, “এভাবে রোগীর সামনে কান্না করবেন না। আর আপাততঃ এখন রেগীকে রেষ্ট নিতে দিন।”
আমিঃআম্মুকে আমার কাছে থাকতে দিন।
_ আচ্ছা থাকতে পারবে। তবে বেশি কথা বলবে না।
_ আচ্ছা।

এদিকে আম্মু ফোন করে আব্বু কে খবরটা দিলো। কিছুক্ষণ পর আব্বু এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
_ আব্বু ছাড়ো, আমার লাগছে তো।
_ লাগুক। আমাদের ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলি কেন বল?

_ আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। কারণটা বলা যাবে যাবে না।
_ ওই চুপ কেন বল?
_ আসলে আব্বু ঘুম আসছিল না তাই খেয়েছিলাম।

_ তাই বলে ওতোগুলো একসাথে খাবি।
_ ভুল হয়েছে। আর এমন হবে না।
মনটা ইফতিকে দেখার জন্য আনচান করছে। কখন যে আসবে।


পর্ব ১০ (অন্তিম পর্ব)

_ আসলে আব্বু ঘুম আসছিল না তাই খেয়েছিলাম।

_ তাই বলে ওতোগুলো একসাথে খাবি।
_ ভুল হয়েছে। আর এমন হবে না।

মনটা ইফতিকে দেখার জন্য আনচান করছে। কখন যে আসবে। যেনো আর নিজেকে আটকাতে পারছি না।
আম্মুর সাথে অনেক কথা বললাম। এর ভেতর জানতে পেরেছি আমি চার মাস কমায় ছিলাম। তবে শম্পা ইফতির কথা বলেনি।
কিছুক্ষণ পর শম্পা আসলো। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
_ ছাড়ো আমায়, লাগছে তো।

_ লগুক। এভাবে পাগলামি করছিলেন কেন বলেন?
ধ্যাত ভাল্লাগে না। শম্পাকে দুই চোখে সহ্য হচ্ছে না। আম্মু আছে জন্য কিছুই বলতে পারছি না। তাও বললাম, “এখন বসো। পরে এ নিয়ে কথা হবে।”
শম্পা আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে বসলো। এরপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আম্মু শম্পার কান্ড দেখে হাসতে লাগল। শম্পা আম্মু কে বলল, “আন্টি আপনি এখন যান। আমি তো আছি।”

শম্পার কথা শুনে আম্মু হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
আমি শম্পাকে বললাম, “ইফতি কেমন আছে? ও আসে নি?”

ইফতির নাম শুনে শম্পার মুখটা শুকিয়ে গেল। ও কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইলো।
_ ওই কথা বলছো না ক্যান?
_ ওহ হ্যা, আপু ভালো আছে। আসবে একটু পর।
যাক ইফতি তাহলে আসবে। শুনে মনটা শীতল হলো।

শম্পা মনে মনে ভাবলো যাকে ভালোবাসি সে আরেকজনকে চায়, আর সে আরেকজনকে। আসলে অধিকাংশ মানুষই সত্যিকারের ভালোবাসার মর্ম বোঝে না। তবে পরে ঠিকই বোঝে। কিন্তু ততদিনে ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় থাকে না।

আচ্ছা ইফতির বিয়ে কি হয়েছে? নাকি এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে? ইফতি আমার ছাড়া কারো হতে পারে না। নাহ এতোকিছু ভাবতে পারছি না।
হাসপাতালে আরও দুদিন কেটে গেল। কিন্তু ইফতির দেখা পেলাম না। মনটা আর মানতে চাইছে না। ইচ্ছে করছে ছুটে যাই ইফতির কাছে। কিন্তু শরীর দূর্বল। হাটতে পারি না।
ডাক্তার এসে জানালো আর সাতদিন পর আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে।

এই সাত দিনে শম্পা অনেক বার এসেছে। কিন্তু ইফতি এলো না। তাহলে কি সত্যি সত্যি ইফতির বিয়ে হয়ে গেছে। যেজন্য আসে নি। মাথার ভেতর উল্টাপাল্টা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল।
অবশেষে আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। এখন মোটামুটি সুস্থ। বিকেলে রুমে সুয়ে আছি এমন সময় ইমন রুহি আর রাকিব আসলো।
ওদেরকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।

রাকিবঃপাগলামি করছিলি কেন বল?
আমিঃ অনেক ডিপ্রেশনে ছিলাম রে। তথন মাঠা ঠিক ছিল না কি করবো। আচ্ছা ওসব কথা বাদ দে। এখন বল কেমন আছিস?
ওরা তিনজন একসাথে বলল ভালো আছি।
_ তো ইমন শ্বশুর বাড়িতে কেমন খাচ্ছিস?

ইমনঃ আর বলিস না। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার সময় ই পাই না।
রাকিবঃশালা মিথ্যা বলিস ক্যান? গত সপ্তাহে ও তিনদিন শ্বশুর বাড়ি ছিলি।
ইমনঃ মনে ছিল না রে বলে হাসতে লাগল।

সবাই মিলে আরও আড্ডা দিলাম। ওরা রাতের খাবার খাইয়ে তবেই যেতে দিলাম।
অনেকদিন ভার্সিটিতে যাওয়া হয়না। রাকিব বলে গেল আর একমাস পর ফাইনাল পরিক্ষা। এতো পড়া কিভাবে শেষ করবো ভাবতেই মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। ধুর আজ আর পড়বো না। কাল থেকে পড়া শুরু করবো।

সকালে ভার্সিটি গেলাম। দেখি রাকিব ইমন আগেই চলে এসেছে। ওদের সাথে ক্লাসে গেলাম। এতোদিন পর আমাকে ক্লাসে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে।
একজন বলল, “কিরে শিমুল শুনলাম তুই নাকি কোন মাইয়াকে নিয়ে পালিয়ে গেছিলি?

আরেকজন বলল, “আরে মাইয়া নিয়ে পালাতে লাগছিল। পরে নাকি ধরে আচ্ছা মতো মাইর দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করছিল।”
ওদের আজগুবি কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল। ইচ্ছে হচ্ছে আবাল দুটোরে আচ্ছা মতো ক্যালানি দেই। রাকিব আর ইমন মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বলল, “আরে চুপ কর আমরা ওদের বোঝাচ্ছি।”

_ চুপ করবো মানে, শালারা আগামাথা না জেনে পুরো ক্লাসে আমাকে ক্যারেক্টারলেস বানিয়ে দিল।
ইমনঃ আরে কুত্তা কামড় দিলে তাকেও কি কামড়াবি?

_ আমি তো কুত্তা না যে কামড়াবো।
_ তাহলে চুপচাপ থাক।
_ তোদের জন্য ওরা বেঁচে গেল। নাহলে দুটাকে আজ দেখে নিতাম।

ক্লাসে স্যার এসেই আমাকে একবস্তা ঝাড়ি দিলো। এভাবে প্রতিক্লাসে আলাদা আলাদা স্যার এসে ঝাড়ি দিয়ে গেল। আমার ভার্সিটি লাইফে আজ কে সবচেয়ে বাজে দিন। এতো কথা জীবনেও শুনি নি।
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে এলাম। রাকিব বলল, “তোরা কি খাবি বল?”
_ তিনজনের জন্য তিনকাপ কফি আন।

রাকিব কফি আনতে গেল। একটু পর কফি আনলো। কফির মগে চুমুক দিয়ে বললাম, “অনেকদিন পর কফি খেলাম।”
ইমনঃ তুই ছিলি না বলে আড্ডাও জমে নি।

রাকিবঃশালা মিথ্যা বলিস কেন? ক্লাস শেষ হতে না হতেই চলে যাইতি। আড্ডা দিলি কখন?
_ আরে তুই তো জানিস। শিমুল তো জানে না।

রাকিবঃ এসব কথা বাদ দে। এখন বল শিমুল তোর বিয়ে কবে?
আরে আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। মনেই নাই দেখছি।
ইমনঃ কিরে কথা বল?

_ আরে আমি কি করে বলবো? এতোদিন কি হয়েছে আমি জানি নাকি?
রাকিবঃতবে যাই বলিস শম্পা মেয়েটা মনে হয় তোকে সত্যি ভালোবাসে।

_ ধুর ভালোবাসা না ছাই। ও এমনি অমন করে। আমি ইফতিকে ছাড়া কেউকে বিয়ে করবো না।
রাকিবঃ আমার যা ভালো মনে হয় তোকে বললাম। বাকিটা তোর ইচ্ছে।
_ আচ্ছা তোরা কেউ ইফতিকে দেখছিস?
ইমনঃ ওরে তো প্রায় দিন ই ভার্সিটিতে দেখি।

_ আচ্ছা চল তো দেখে আসি।
ইমন আর রাকিবকে নিয়ে ইফতিদের ডিপার্টমেন্টে গেলাম। দেখি ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু জানালা দিয়ে ইফতিকে দেখতে পেলাম না। এজন্য চলে আসলাম।
রাকিব বলল, “আরেকটু আড্ডা দিয়ে তারপর যাই। কি বলিস?”

এরপর বসে তিনজন আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় দেখি ইফতি একটা ছেলের বাইকের পিছনে বসে আছে। ছেলেটা আমাদের সামনে দিয়ে বাইক নিয়ে গেল। অথচ ইফতি আমার দিকে তাকালো না। আমার খুব রাগ হলো।

রাকিবরে বললাম, “ওই ছেলেটার সাথে ইফতির কি সম্পর্ক?
রাকিবঃ তিনমাস ধরে ওই ছেলের সাথে ইফতির রিলেশন।
_ আরে এটা হতেই পারে না। ইফতি এমন মেয়েই না।

_ প্রথমে আমাদেরও বিশ্বাস হয় নি। পরে ঠিকই বিশ্বাস হয়েছে। এখন তোর বিশ্বাস না হলে নিজে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর।
আমি ওখান থেকে উঠে গিয়ে ওই ছেলের কাছে গিয়ে বললাম, “এই ছেলে ইফতির সাথে তেমার কি সম্পর্ক?”
ছেলেটিঃ আপনি শুনে কি করবেন?

_ মাথা গরম করাবে না। যা বলছি তার উপর দাও।
_ ইফতি আমার গার্লফ্রেন্ড।
ছেলেটার কথা শুনে রাগ উঠে গেল। মেরে দিলাম ওর নাক বারাবর এক ঘুসি। ছেলেটা নাক ধরে বসে পড়লো। আমি ছেলেটাকে এলোপাতাড়ি লাথি দিয়েই যাচ্ছি। এমন সময় ঠাসসস ঠাসসস করে আমার গালে কে যেন থাপ্পড় দিলো। চোখ তুলে দেখি ইফতি দাঁড়িয়ে….

ছেলেটার কথা শুনে রাগ উঠে গেল। মেরে দিলাম ওর নাক বারাবর এক ঘুসি। ছেলেটা নাক ধরে বসে পড়লো। আমি ছেলেটাকে এলোপাতাড়ি লাথি দিয়েই যাচ্ছি। এমন সময় ঠাসসস ঠাসসস করে আমার গালে কে যেন থাপ্পড় দিলো। চোখ তুলে দেখি আমার সামনে ইফতি দাঁড়িয়ে আছে।

ইফতিঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার বয়ফ্রেন্ড কে মারার? ছোটলোকের বাচ্চা কোথাকার । আর কখনও আমাদের আশেপাশে না দেখি।

একে তো আর ভালোবাসে না। তার উপর আব্বু আম্মুকে ছোটলোক বলে আমার রাগ আরও বাড়িয়ে দিলো। ঠাসস ঠাসস করে থিথীকেও দুটা থাপ্পড় মেরে দিলাম।
_ তোকে ভালোবাসাই আমার ভুল হয়েছে। তোর মতো মেয়েদের জন্য ছেলেরা কষ্ট পায়। আর যে সত্যিকারে ভালোবাসে তাকেই বুঝতে পারি না। কিন্তু আমি আর সে ভুল করবো না। আজই গিয়ে তোর বোনের সাথে বিয়ের কথা বলবো। থাক তোর বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে বলে ওখানে থেকে চলে আসি।
ইমনঃ কি দরকার ছিল ইফতিকে মারার?

_ মারবো না তো কি করবো? কিছুদিন আগেই ওর জন্য শম্পাকে ভুল বুঝি। কিন্তু দেখ ও আমাকে সত্যিকারে ভালোবাসে। ওর মতো মেয়েকে এমনি এমনি ছেড়ে দিলে ভুল হবে।
রাকিবঃআচ্ছা বাদ দে ওসব। এখন বাসায় চল। তোর মাথা ঠিক নাই। কিখন কি করে ফেলবি ঠিক নাই। তারচেয়ে আমি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
ইমনঃ তা ঠিক বলছিস। ওরে নামিয়ে দিয়ে আয়। আমি গেলাম।

ইমন চলে গেল। আমি রাকিবের বাইকের পেছনে বসলাম। ও চালাতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর বাসায় সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।
বাসায় এসে দেখি আম্মু আর শম্পা বসে গল্প করছে। কি মিলরে বাবা। শম্পা আমাকে দেখেই চোখ মারলো। কিন্তু আম্মু কিছুই বুঝতে পারলো না। এখন কিছু বললে আবার ঝগড়া লাগিয়ে দিবে। তারচেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে থাকা ভালো।

রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পরি। আম্মু এসে বলল, “খেতে আয়।”
খেতে লাগলাম। দেখি আজকে তরকারির স্বাদ ভিন্ন। তবে খারাপ লাগছে না।
আম্মুকে বললাম, “মা আজকে অন্যরকম রান্নার স্বাদ লাগছে। ব্যাপার কি?”

আম্মুঃ হুমম আজকে নতুন স্টাইলে রান্না হয়েছে। বল কেমন লাগছে খেতে?
_ -হুমম সুন্দর হয়েছে।
আম্মুঃদেখতে হবে তো কে রান্না করছে।
_ -হিহি আমার আম্মু রান্না করছে।
আম্মুঃ ওই না শম্পা রান্না করছে।

_ কিহ! শম্পা কবে থেকে রান্না করা শিখলো?
_ তুই যখন কমায় ছিলি তখন ওকে রান্না শেখাইছি। আসলে মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে তাইনা।
_ কেমন করে বুঝলে আমাকে ভালোবাসে?

_ তুই যখন কমায় ছিলি তোর পাশে বেশির ভাগ সময় শম্পা থাকতো। আমাকেও অতো থাকতে দিতো না। তাছাড়া ওর চোখ দেখেই বোঝা যায় ও তোকে অনেক ভালোবাসে। ওকে আমার বউমা করে আনবো যে কবে?
_ তাহলে দেরী করছো কেন?
_ হারামি তোর জন্য তো সবকিছু তে গন্ডগোল পেকে গেছে। তা না হলে কবে এই বাড়ির বউ হতো!
_ হুমমম তা ঠিক।

_ আচ্ছা আমি শম্পার আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে বিয়ের দিন ঠিক করছি।
আম্মু চলে গেল। খাওয়া শেষে রুমে আসলাম।

রাতে আম্মু বলল, “সাতদিন পর তোর আর শম্পার বিয়ে। তোর সব বন্ধু দের দাওয়াত দিস।”
আমি ফোন করে রাকিব আর ইমনকে সুসংবাদ টা দিলাম।

রাতে শুয়ে আছি। এমন সময় শম্পা কল করলো।
হ্যালো….(আমি)

_ এইযে মিস্টার হবু বর কি করছেন শুনি? (শম্পা)
_ একজনের কথা ভাবছি।
_ কে সে?

_ তোমাকে বলবো কেন?
_ না বললেন। তবে শোনেন আমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবা যাবে না বলে দিলাম।
_ ভাবলে কি করবে শুনি?

_ গুলি করে মেরে ফেলবো। তারপর আমিও মরে যাবো।
_ এহ শখ কত আমাকে মারবে!
_ হিহি বাসর রাতে মজা দেখাবো।
_ তা কি মজা শুনি?

_ বললে তো সব কিছু আগেই জেনে ফেলবেন।
_ কি বুদ্ধি রে বাবা।
_ দেখতে হবে না আমি কে?

_ হিহি, আমার বউ।
_ এই শোনেন না?
_ কি গো বলো।
_ একটু ছাদে আসেন প্লিজ।
_ এখন ছাদে গিয়ে কি করবো?

_ আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ আসেন।
_ রাত ১১ টা বাজে।
_ না আসলে কিন্তু আমি কান্না করবো।

_ -থাক আর কান্না করতে হবে না। আমি আসছি।
ছাদে গিয়ে দেখি শম্পা দাঁড়িয়ে আছে। এতো রাতে পাগলামি করো কেন?
_ আপনার সাথে পাগলামি না করলে কার সাথে পাগলামি করবো শুনি?
_ তা ঠিক বলছো।

_ হুমমম, আমি ঠিক ই বলি। আচ্ছা শোনেন আপনার জন্য নুডলস রান্না করে আনছি। খেয়ে নেন।
এমনিতেই আমার নুডলস ফেভারিট। তাই দেরী না করে চামচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। আমি খাচ্ছি আর শম্পা দাঁড়িয়ে দেখছে। হয়তো রান্না করে সবটুকুই আমার জন্য আনছে। পাগলিটা মনে হয় নিজেও খায়নি। তাই ভাবলাম ওকেও খাইয়ে দেই। এজন্য শম্পাকে বললাম,

_ এই হা করো।
শম্পা হা করলো আমি খাইয়ে দিলাম। এখাবে একবার আমি খাচ্ছি আরেকবার শম্পাকে দিচ্ছি। খেতে খেতে বললাম, “দুপুরের রান্নাটা অনেক সুন্দর হয়েছিল। এতো সুন্দর রান্না করতে পারো জানা ছিল না।”
_ আপনার আম্মু শিখিয়েছে।

একটু পর মনে হলো ছাদে কেউ আসছে। শম্পা মনে এখনও টের পায়নি। পাশের বাসা গুলো থেকে আশা আলোতে দেখলাম ইফতি আসছে। শয়তান মহিলাকে দেখে রাগ হচ্ছিল। কিন্তু রাগ সংবরণ করে শম্পাকে বললাম, “উফফ ঝাল লাগছে। পানি দাও।”

_ এখানে পানি তো আনি নি।
_ তাহলে আমি কি ঝালে মারা যাবো?

আরকিছু না ভেবে শম্পার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। প্রায় দুই মিনিট পর ছেড়ে দিলাম। শম্পা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “রাক্ষস একটা। এভাবে কেউ কিস করে নাকি?
_ আমি কি করবো? ঝাল লেগেছিল তো। তোমার থিউরি মতো ঝাল কমালাম হিহি।
_ কই ঝাল ছিল? নাকি এটা কিস করার বাহানা ছিল?

_ হিহি, যেটা মনে করো।
আমি আগে থেকেই খেয়াল করছি ইফতি এসবকিছু দেখেছে। ওরে দেখানোর জন্য ই শম্পাকে কিস করছি। ও হয়তো ভাবছিল ও আমি প্রেমে ব্যার্থ হয়ে দেবদাস হয়ে যাবো। কিন্তু আমি সেই টাইপের ছেলে না। একটা ফালতু মেয়ের জন্য নিজের লাইফ নষ্ট করার মতো বেকামি করবো না।
আমি শম্পাকে আস্তে করে বললাম, “তোমার বোন মনে হয় সব দেখে ফেলছে।”

_ দেখলে দেখুক তাতে আমার কি।
_ এই না হলে আমার আমার বউ। আচ্ছা শোনো এখন এখান থেকে চলো।

আমি শম্পার হাত ধরে নিচে চলে আসলাম। ইফতি এসব দাঁড়িয়ে দেখলো।
আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে আসলো। আজকে বিয়ে। অল্পকিছু আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি তে আমার আর শম্পার বিয়ে সম্পন্ন হলো।
রাত অনেক হয়ে গেছে। প্রায় ১২ টা বাজবে। রাকিব আর ইমন বলল, “এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। বাসরঘরে যা।”
_ ওই শালা আমি ক্যান ভয় পাবো?
_ তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বাসরঘরে।

এরপর দুজন মিলে আমকে আমার রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “বিড়াল মারতে ভুলিস না কিন্তু। নাহলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে।”
ধুর, এখন বাসর রাতে বিড়াল কই পাবো?

রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলাম। এটা কি আমার রুম নাকি ভুলে অন্য কোথাও ঢুকে ফেলছি?
_ ওই মিস্টার এভাবে কি দেখছেন?
_ আমার রুম এতো সুন্দর হলো কিভাবে?

_ হিহি ওটা আমার কারণে।
শম্পা বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। এরপর ওর ঘোমটা তুলে অবাক হয়ে গেলাম। এতো সুন্দর লাগছে শম্পাকে। আমি কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। শম্পা লজ্জা পেয়ে বলল, “এভাবে কি দেখছেন?

_ একটা পরীকে। জানো আমি কখনও পরী দেখিনি। দেখলে অবশ্যই বলবো তোমাদের চেয়ে আমার বউ বেশি সুন্দরী।
শম্পা প্রশংসা শুনে আরও লজ্জা পেয়ে গেল। এরপর বলল, “ধ্যাত, আমি অতো সুন্দর নাকি?”
_ তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী।
_ হয়েছে আর পাম দিতে হবে না।
_ এই নেমে আসো। দুজনে মিলে নামাজ পড়বো।

এরপর বাথরুমে গিয়ে আজু করে এসে শম্পাকে সাথে নিয়ে দু রাকা’ত নামাজ আদায় করলাম।
এরপর শম্পার হাতে দেনমোহরের টাকা দিয়ে বললাম, “এই নাও তোমার দেনমোহরের টাকা।”

_ শম্পা টাকাগুলো আমার হাতে ফেরত দিয়ে বলল, “এ টাকা আমার চাই না। আপনি আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে গেলেই আমি খুশি।”
আমি শম্পার কপালে একটা ভালোবাসা এঁকে দিলাম। শম্পা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল।
_ এই পাগলি কান্না করছো কেন?

_ এটা কষ্টের কান্না না এটা সুখের কান্না। ভেবেছিলাম আপনাকে কখনও ফিরে পাবো না। কিন্তু আল্লাহ ঠিকই আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
_ এই এখন কান্না থামাও। আমি বাসর করবো।

_ অ্যাঁ আজকে রাতে ওসব হবে না। আমি এখনও প্রস্তুত না।

_ আজকেই সবকিছু হবে। আর আমি তো আছি।

শম্পাকে আর কোনো কথা বলতে দিলাম না। ওর ঠোঁটের উপর আমার ঠোঁট রেখে আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে লাগলাম সুখের সাগরে।

লেখাঃ শিমুল হাসান

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ুন – নেতার মেয়ে – ভালোবাসার সাহসী গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *