আপনার চেয়ে আপন যে জন – কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প: আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি নুসরাত। বিশ্বাস করো। তোমাকে কষ্ট দিয়ে যে আমিও ভাল নেই। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি কি করবো বলো। তোমাকে হারালে যে আমি মরে যাবো। গত পর্বে পড়েছেন কি রোমান্টিক ছিল রাহুল আর নুসরাত। এই পর্বে দেখুন কি হয়?
পর্ব ১০
বেশ কিছুক্ষন হয়ে গেছে নুসরাত রাহুলের গলা জড়িয়ে আছে। রাহুল নিজেও একটা ঘোরের মধ্যে আছে এখন। ভালবাসার মানূষটা যদি এত কাছে থাকে তাহলে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যায়। আর তাই কন্ট্রোল হারিয়ে কখন যে রাহুল নুসরাতর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে আছে সেটা সে বুঝতেই পারেনি। কোমড়ে রাহুলের স্পর্শ পেয়ে নুসরাতর শরীর টা একবার কেঁপে উঠেই কেমন জানি শীতল হয়ে গেছে। রাহুলের গলা ছেড়ে দিয়ে নুসরাত কাঁপা গলায় বললো,
_ মিঃরাহুল, মেইনডোর খোলা আছে। কেউ দেখে ফেলবে। ছাড়ুন আমাকে।
_ আমি কোথায় ধরে আছি! তুমি নিজেই তো আমার গলা ধরে ঝুলে আছো।
_ তাই বুঝি? তো জনাব, এই দুটো কি দেখুন তো?
_ কি আবার, তোমার হাত।
এখন রাহুলের খেয়াল হলো নুসরাতর হাত নিচে। আর তার নিজের হাত নুসরাতর কোমড়ে!
রাহুল নুসরাতর কোমড় হুট করে ছেড়ে দিতেই নুসরাত তাল সামলাতে না পেরে সোফার হাতল ধরলো।
_ আর একটু হলেই তো পরে যাচ্ছিলাম আমি। এভাবে হুট করে কেউ কাউকে ছেড়ে দেয় নাকি? আজব!
রাহুল কোন উত্তর না দিয়ে দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। এদিকে নুসরাত নিজেও কিছুক্ষণ পর রাহুলের রুমে চলে গেল। নুসরাত রাহুলের বিছানায় বসে আছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বসে থাকা দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
_ আমি তোমার সাথে রুম শেয়ার করতে পারবো না নুসরাত।
তুমি পাশের রুমে থাকবে।
_ আমি আপনার স্ত্রী। আপনার সাথে একরুমে থাকার অধিকার আমার আছে।
_ অধিকার অধিকার অধিকার….তুমি শুধু তোমার অধিকার ফলাতেই এখানে এসেছো তাইনা? আর কোন অধিকারের কথা বলছো তুমি? যেটা আমি তোমাকে দেই ই নি! এই এক কথা শুনতে শুনতে কানদুটো পঁচে গেল আমার বিশ্বাস করো।
প্রচণ্ড রাগের সাথে চিৎকার করে কথাগুলো বললো রাহুল।
নুসরাত চুপ হয়ে গেল। একটা কথাও বলছে না সে। হুট করে এত রেগে যাবে সেটা নুসরাত ভাবতে পারেনি। রাহুলের এই রুপ সে আগে দেখেনি। রাহুল আবারো বলে উঠলো
_ তুমি এই মুহুর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাও।
নুসরাতর লাগেজ ধাক্কা মেরে বাইরে বের করে দিল রাহুল।
_ আর শোন, তোমার মোবাইল টা আমার কাছে দাও।
এবার নুসরাত কথা বললো। সে আনমনেই জিজ্ঞেস করে ফেললো
_ কেন? আমার মোবাইল দিয়ে আপনি কি করবেন?
_ বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না। যেটা বলেছি সেটা করো।
নুসরাত নিজের ফোন রাহুলের দিকে বারিয়ে দিলো। রাহুল ফোন টা নিয়ে মেঝেতে আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।
নুসরাত এইবার প্রচণ্ড ভয়ে কাঁপছে। এরকম একটা কাজ রাহুল করবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি।
_ আমাকে মিস করছিলে, থাকতে পারছিলে না আমাকে ছেড়ে তাই তো? থাকো তুমি আমার ফ্ল্যাটে। শুধু আমি ছাড়া বাইরের দুনিয়ার আর কারো সাথে তুমি যোগাযোগ রাখতে পারবে না।
আসার সময় নিশ্চয় দেখেছো আমার এই বাসাটার লোকেশন। আশেপাশে আর কোন বাসা বা কোন দোকানপাট কিচ্ছু নেই। ইভেন উপরে, নিচে, পাশের সব ফ্ল্যাট ফাঁকা। আর এটা মেইন শহরের বাইরে।
_ আপনি কি ভেবেছেন মিঃরাহুল! আমি এত সহজেই যাবো আপনাকে ছেড়ে! আপনাকে না নিয়ে আমি কিছুতেই যাবো না।
চোখ মুছে মনে মনে বললো নুসরাত। লাগেজ নিয়ে পাশের রুমে ঢুকতেই রাহুলের রুমের দরজা লাগানোর শব্দ হলো। বেশ জোরেই লাগিয়েছে রাহুল। রাহুলের আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে।
নুসরাত লাগেজ রেখে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। রাহুলের এরকম ব্যবহারে সে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছে। এই কি সেই রাহুল, যে আমার অপমানের কথা ভেবে আমার পাড়া প্রতিবেশী, গ্রামের লোক এমনকি আমার আত্মীয়স্বজন দের কথা শোনাতে দুইবার ভেবে দেখেনি! কি এমন হয়েছে উনার যে এরকম আলাদা থাকছেন? কেঁদে কেঁদে বিছানায় এলোমেলো অবস্থাতেই ঘুমিয়ে গেল নুসরাত।
রাহুল নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে কাঁদছে।
আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি নুসরাত। বিশ্বাস করো। তোমাকে কষ্ট দিয়ে যে আমিও ভাল নেই। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি কি করবো বলো। তোমাকে হারালে যে আমি মরে যাবো। আমি তোমাকে হারাতে চাই না নুসরাত। তাইতো তোমাকে কষ্ট দিতে চাই যেন নিজে থেকেই আমাকে ছেড়ে তুমি চলে যাও।
প্রায় ২ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পর রাহুল নিজের রুমের দরজা খুললো।
_ নুসরাতর রুমে কি যাবো? মেয়েটা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে আমার আচরণে। যাওয়াটা ঠিক হবে না। থাক
নুসরাতর রুম থেকে মুখ ঘুরিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো রাহুল। কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে গেল।
_ নাহ্, একবার গিয়ে দেখে আসি মেয়েটা কি করছে।
ভাবামাত্র রাহুল নুসরাতর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আস্তে করে নুসরাতর দরজা খুলে ভিতরে উকি দিলো সে।
কিছুক্ষণ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিতরের দিকে তাকিয়ে আছে রাহুল। নুসরাত নড়ছে না দেখে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো সে।
_ মেয়েটা ঘুমাচ্ছে? এ কেমন মেয়ে! এত কথা শুনলো, কষ্ট পেল। তারপরেও চোখে ঘুম কেমনে আসে এর!
নুসরাতর দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে রাহুল। নুসরাতর চোখের কোনের পানি সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে এখন।
_ তারমানে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছে।
রাহুল নুসরাতর দিকে ঝুকে আলতো হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
_ আই এ্যাম স্যরি নুসরাত। আমি তোমাকে অনেক হার্ট করে ফেলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছি।
হঠাৎ নুসরাত রাহুলের কলার ধরে তার দিকে রাহুলকে টান দিলো। রাহুল নিজেকে সামলাতে না পেরে নুসরাতর উপর পরে গেল। নুসরাত রাহুলের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বললো
_ এতই যখন কষ্ট পাচ্ছেন তাহলে আদর করে দিন আমাকে। দুজনার কষ্টই কমে যাবে।
_ রাহুল নুসরাতর মাথার দুইপাশে হাত রেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
_ তারমানে তুমি এতক্ষণ ঘুমাওনি? ঘুমের ভান ধরে পরে ছিলে?
_ ঘুমিয়েই ছিলাম। আপনি ছুঁয়ে দিতেই ঘুম ভেঙে গেছে আমার।
_ মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথা বলে কেন, আমাকে অপ্রস্তুত করতে নাকি?
ছাড়ো আমাকে। এভাবে ধরে আছো কেন? (ধমক দিয়ে)
নুসরাত এবার রাহুলকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো।
প্রায় ২-৩মিনিট পার হওয়ার পর নুসরাত রাহুলকে বললো,
_ মিঃরাহুল, একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
_ কি প্রশ্ন? ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো রাহুল
_ পুরুষ এবং মহিলা, এদের মধ্যে কার শক্তি বেশি?
_ কার আবার, নিঃসন্দেহে পুরুষের।
_ তাহলে একজন পুরুষ হয়ে আমাকে ছেড়ে দিতে বলছেন যে? আপনি নিজেই তো আমাকে ছাড়িয়ে উঠতে পারেন।
কিন্তু আপনি উঠছেন না, কেন জানেন?
_ কেন?
কারণ আপনার এভাবে থাকতে ভাললাগছে। আর এই ভাল লাগা আপনি উপভোগ করছেন তাই আমি এত কিছু বলার পরেও আপনি আমার উপরেই আছেন।
এখন রাহুল নিজের হুঁশে ফিরে এলো।
_ সত্যিই তো! আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম এতক্ষন! আমার কোন কিছুর খেয়ালই ছিলো না! শেম অন ইউ রাহুল। শেম শেম
_ আপনার ভাবনা শেষ হলে আপনি এখন উঠতে পারেন। যথেষ্ট ভারি আপনি।
আনূ্শ তড়িঘড়ি করে নুসরাতর উপর থেকে নেমে পরে বললো,
_ আমার বয়েই গেছে তোমার উপরে থাকতে। বাই দা ওয়ে, তুমি মেয়ে হয়ে একজন ছেলেকে এভাবে টেনে নিজের উপর ফেলো কিভাবে! তোমার কি লজ্জা শরম নেই নাকি?
_ ইসসসস, আসছে আমার লজ্জাবতী। হুহ্!
শুনুন মিঃ, বর টা তো আমারই তাইনা। তাহলে লজ্জা কেন পাবো আমি।
এই মেয়েকে কিছু বলাই বৃথা। শুধু শুধু নিজের কথা খরচ।
কথাগুলো বলে রাহুল বেরিয়ে গেল নুসরাতর রুম থেকে।
এদিকে নুসরাতর প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে।
_ সকালে ব্রেকফাস্ট করে বের হয়নি। উনার সাথে একসাথে খাবো বলে। কিন্তু এসেই তো বেশ কিছু কথা হজম করতে হলো। যাই, দেখি কিচেনে কিছু আছে নাকি খাবার মত। তার আগে গোসল টা সেরে নেই।
নুসরাত চট করে গোসল করে বেরিয়েই কিচেনে চলে গেল। কিন্তু গিয়ে দেখে খাবার মত কিছুই নেই। কিচেন থেকেই নুসরাত চিৎকার করে রাহুল কে ডাকলো
_ মিঃ রাহুল
রাহুল তড়িঘড়ি করে কিচেনে চলে এলো।
_ কি ব্যাপার কি। এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?
_ একটা মেয়ে সেই সকালে এসেছে। আসার পর তাকে কোন খাবার অফার না করে আপনি কথা গিলিয়েছেন। এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। তো এখনো কি না খাইয়ে বসিয়ে রাখবেন? আপনার মিনিমাম কমন সেন্স বলে কি কিছু নেই নাকি আজব! কিচেনেও কিছু নেই খাবার মত। কি খাবো আমি এখন?
_ সেটা ডিরেক্ট বললেই হয় যে তোমার ক্ষুধা লেগেছে। আমি অনলাইনে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। এলো বলে…
_ আপনি আমার জন্য খাবার অর্ডার করেছেন ভাল কথা। কিন্তু একবারও শুনে নেবার প্রয়োজন মনে করলেন না আমি কি পছন্দ করি। কাজ টা কি ঠিক হলো?
_ চিকেন বিরিয়ানি + কোকাকোলা। চলবে?
_ হ্যাঁ হ্যাঁ চলবে চলবে। (পছন্দের খাবার তো চলতেই হবে। মনে মনে)
প্রায় আধাঘণ্টা পর খাবার এলো। নুসরাত আর রাহুল দুজনেই টেবিলে বসে পরলো। নুসরাত কে রাহুল খেতে বলে নিজেও খাওয়া শুরু করলো। রাহুল চামচ দিয়ে খেতে যাবে এমন সময় নুসরাত বললো
_ আল্লাহ্ দুটো হাত কেন দিয়েছে? হাত দিয়ে খেতে পারছেন না? না পারলে বলুন আমি খাইয়ে দেই।
_ নো নিড। আমি নিজেই পারবো।
খট করে টেবিলে চামচ রেখে হাত দিয়ে পুনরায় খাওয়া শুরু করলো রাহুল। দুই তিন বার খাওয়ার পর নুসরাতর দিকে তাকিয়ে বললো
_ কি হলো, খাচ্ছো না যে? একটু আগেই তো কি খাবে কি খাবে বলে আমার মাথা খাচ্ছিলে। এখন খাবার সামনে নিয়ে হাত তুলে বসে আছো কেন?
_ আমি লেগ পিস পছন্দ করি। কিন্তু সেটা আপনার প্লেটে পরেছে।
_ এই তুমি কি বাচ্চা!
_ পছন্দের জিনিস দিয়ে তৃপ্তিমত খেতে হলে যদি শুনতে হয় আমি বাচ্চা, তবে আমি তাই। আপনি আপনার প্লেট আমাকে দিন। আমারটা আমি টাচও করিনি। নির্ভেজাল ভাবে খেতে পারেন এটা।
রাহুল আর কথা না বারিয়ে প্লেট চেঞ্জ করে নিলো। কারন সকাল থেকে সে না খাওয়া। প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে তার। লেগ পিস পেল নাকি কারো মাথা পেল সেটা নিয়ে ভাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার।
আর নুসরাত পরম তৃপ্তি তে রাহুলের প্লেট থেকে খাবার মুখে তুলছে। লেগ পিস এর জন্য না। ভালবাসার মানুষের প্লেট থেকে খাবার খাওয়ার শান্তিই আলাদা। নিজে থেকেতো খাইয়ে দিবেন না। তাই এভাবেই নিতে হলো।
পর্ব ১১
দুপুরের শেষভাগে দুজন খেতে বসেছিলো। খাওয়া শেষে যার যার রুমে চলে গেছিলো ওরা রেস্ট নিতে। পেটে দানাপানি পরায় নুসরাতর চোখ ভেঙে আবারো ঘুম এলো। রাহুল নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আর নুসরাত পাশের রুমে ঢুকে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেল।
পুরো সন্ধ্যা কাটিয়ে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নুসরাতর প্রায় ৮টা বেজে গেল। বিছানা থেকে নেমে সোজা রাহুলের রুমের দিকে রওনা দিলো সে। দরজা খোলা দেখে ভাবছে ভিতরে ঢুকবে কি না।
_ ঢুকেই যাই, কি আর হবে। নাহয় আবারো দু চারটে কথা শোনাবে। আমিও শুনবো।
ভাবতে ভাবতেই ভিতরে ঢুকে গেল নুসরাত। কিন্তু ভিতরে কাউকে সে দেখতে পেল না। আর খোঁজার প্রয়োজন ও মনে করলো না সে।
দেখতে দেখতে রাত প্রায় ১২ টা বাজতে চললো। রাহুল বাড়ি ফেরেনি। এদিকে বর্ণিলা রাহুলের চিন্তায় পুরোবাড়ি পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। না বসে স্বস্তি পাচ্ছে না দাঁড়িয়ে। নুসরাতর এখন বেশ ভয় ভয় লাগছে। চারিদিকে কেমন শুনশান নিরবতা। একটু যে টিভি দেখবে সে উপায়ও নেই। কেবল কানেকশন টাও কাটা।
_ উফফফফ, কি যে মনে করেন মিঃরাহুল নিজেকে! আমি একা একটা মেয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না জেনেও উনি এত দেরি করছেন!
হঠাৎ বাসার কলিংবেল টা বেজে উঠলো। নুসরাত দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
_ আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি জানেন আমি কতটা ভয় পাচ্ছিলাম একা একা। এরকম ভুতুড়ে পরিবেশে কোন মানু্ষ থাকে মিঃরাহুল?
_ তো থেকো না। আমি কি তোমাকে জোড় করেছি থাকার জন্য?
_ তার মানে?
_ মানে এটাই, তুমি থাকতে না পারলে ক্লিয়ারলি বলে দাও আমাকে। আমি নিজে গিয়ে তোমাকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসবো।
সোফায় আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নুসরাতর সাথে কথা বলছে সে।
নুসরাত প্রচণ্ড রাগে টেবিল থেকে একজগ পানি এনে রাহুলের মুখে ছুড়ে মারলো।
_ হোয়াট দা হেল নুসরাত! কি করলে এটা তুমি?
লাফিয়ে উঠে বললো রাহুল।
_ দেখতে পাচ্ছেন না কি করেছি? নাকি আবার করে দেখাতে হবে?
_ হোয়াটস রং উইথ ইউ?
_ এরকম একটা নির্জন বাড়িতে আমাকে একা রেখে কিভাবে বাড়ি ফিরতে রাত ১২ টা বাজালেন আপনি?
রাহুলের কলার চেপে ধরে কথাটা বললো নুসরাত।
_ ডোন্ট ব্লেম মি নুসরাত। আমি কি একবারো তোমাকে বলেছি আমার কাছে এসে থাকার কথা? বলিনি তো? তাহলে আমি কখন বাড়ি থাকবো আর কখন থাকবো না সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার।
তুমি নিজ দায়িত্বে এসেছো। সো তোমারটা তোমারই বুঝে নিতে হবে।
নুসরাতর হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল রাহুল। আর নুসরাত সোফায় বসে রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।
_ উনি কি ভেবেছেন টা কি? আমাকে এইভাবে বের করার পাঁয়তারা করছেন, তাইনা। ওকে, ফাইন। আমিও দেখবো কিভাবে বের করে আমাকে এই ফ্ল্যাট থেকে।
অনেক্ষন পর নুসরাত উঠে গেল রাহুলের রুমের দিকে। দরজা লাগানো দেখে দরজায় বেশ সজোরে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে সে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিল রাহুল।
_ আশ্চর্য মেয়ে তো তুমি! অসভ্যের মত দরজা ধাক্কাচ্ছ কেন। ম্যানার্স জানো না নাকি?
_ আমি অসভ্য, ম্যানার্স জানি না, তাইনা?
নুসরাত কথা বলছে আর রাহুলের দিকে আগাচ্ছে। আর রাহুল পিছিয়ে যাচ্ছে এক পা এক পা করে।
হঠাৎ নুসরাত রাহুলের গলা জড়িয়ে ধরে রাহুলের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিল। ২ – ৩ মিনিট এভাবে কাটানোর পর নুসরাত রাহুলকে ছেড়ে দিল।
_ এই অসভ্য মেয়ে! এটা কি করলে তুমি!
রাহুল ভাবতে পারেনি নুসরাত এমন করতে পারে।
_ বারে, , আপনিই তো বলেছেন। নিজের টা নিজের বুঝে নিতে।
_ তার সাথে এই বিহ্যাভ এর কি সম্পর্ক!
_ আপনি তো আমারই। তাই আমার যেটা প্রাপ্য আমি সেটা যেভাবেই হোক বুঝে নিবো।
আচ্ছা শুনুন না..
_ যা বলবে তারাতারি বলে বিদায় হও এইরুম থেকে।
_ কেমন লাগলো বলুন? (মুচকি হেসে)
_ কি কেমন লাগলো? (চোখ বড় বড় করে)
_ আহা, যেন ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানেন না।
রাহুল বড়সড় একটা বিষম খেল। অঘটন ঘটিয়ে আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। আজব মেয়ে! অপ্রস্তুত হয়ে বললো
_ তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না নুসরাত?
_ বোঝা তো ভালই বোঝেন। স্বীকার করতে সমস্যা কোথায় সেটাই ভেবে পাই না।
রাহুল নুসরাতর মুখ চেপে ধরে রুম থেকে নুসরাত কে বের করে দিল। দরজা লাগিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে।
ওদিকে রুমের বাইরে গিয়ে নুসরাত হাসছে। হাসতে হাসতে তার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল দুজনের একই ফ্ল্যাটে। একজন চেষ্টা করছে কিভাবে এই মেয়ে কে বাসা থেকে বের করা যায়। অন্যজন ভাবছে কিভাবে বাবা মায়ের সাথে ছেলেকে এক বাসায় রাখা যায়।
হঠাৎ একদিন দুপুরে রাহুল বাসায় তার এক ফ্রেন্ড কে নিয়ে হাজির হলো।
নুসরাত রাহুলের ফ্রেন্ডের সাথে খুব হাসি খুশি ভাবে কথা বলছে। বলবেই না কেন? এই বাসায় আসার পর থেকে এই প্রথম অন্য একজন মানুষ কে দেখলো সে। তাকে রান্না করে খাওয়ালো নুসরাত। সারাদিন রাহুলের ফ্রেন্ড এর সাথে হাসি ঠাট্টা করতে গিয়ে নুসরাত খেয়ালই করলো না ম্যাক্সিমাম টাইম রাহুল ওদের সাথে ছিলো না। সন্ধ্যায় রাহুলের ফ্রেন্ড কে বিদায় দেবার সময় নুসরাত খেয়াল করলো রাহুল অনুপস্থিত। নুসরাত রাহুলের রুমে গিয়ে দেখলো রাহুল বিছানায় হেলান দিয়ে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
_ মিঃরাহুল, আপনি রুমে কি করছেন?
_ এমনি শুয়ে আছি। একটু টায়ার্ড আছি তো তাই
_ আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? জ্বর টর হলো নাকি দেখি।
বলেই রাহুলের কপালে হাত দিতে গেল নুসরাত
_ ডোন্ট টাচ মি নুসরাত। আমার কিছু হয়নি। তুমি কেন এসেছো বলো।
_ ওহ, বলতে আসছিলাম যে আপনার ফ্রেন্ড তো চলে যাচ্ছে। তাকে তো বিদায় দিতে হবে। চলুন চলুন।
হাসতে হাসতে বললো নুসরাত।
_ ওওওও চলে যাচ্ছে! ঠিক আছে ঠিক আছে চলো।
_ এভাবে কথা বলছেন কেন?
_ এমনি, চলো যাই।
আজ নুসরাতর রাহুলের সাথে ঝগড়া করার মুড নেই। কারণ এতদিন পরে অন্তত একজন বাইরের মানুষ কে সে দেখতে পেরেছে। আর সেটা শুধুমাত্র রাহুলের জন্য হয়েছে।
নুসরাত রাহুলের ফ্রেন্ড কে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। রাহুল নুসরাত কে বলল…
_ আমি মনির (রাহুলের ফ্রেন্ড)কে নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসছি। তুমি চাইলে আসতে পারো।
_ না যাবো না। এখানেই ঠিক আছি আমি।
নুসরাতর খুব ইচ্ছে ছিল নিচ পর্যন্ত মনিরকে এগিয়ে দিতে। এক ফ্ল্যাটে বন্দী থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার। কিন্তু রাহুলকে সে বুঝতে দিতে চায় না। তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও সে যেতে পারলো না। কারন রাহুলের কথা বলার ধরন টা তার ভাল লাগে নি।
নিচে মনিরের গাড়ির কাছে গিয়ে রাহুল মনিরকে জিজ্ঞেস করলো…..
_ কেমন দেখলি রে মনির? ভাল লেগেছে?
আমি জানি তোর ভাল লেগেছে।
_ তুই আরেকটু ভেবে দেখ রাহুল। প্লিজ। নুসরাত খুব ভাল মেয়ে। তুই এত সিম্পল একটা বিষয়ের জন্য ওকে কষ্ট দিস না।
_ আমার ভাবা হয়ে গেছে মনির।
_ কিন্তু নুসরাত! ও কি রাজি হবে?
পর্ব ১২
নুসরাত সোফায় বসে আছে। আজ ও খুব খুশি। অন্তত একজন বাইরের মানুষ কে আজ সে দেখেছে। একা একাই হাসছে নুসরাত। রাহুল মনিরকে বিদায় দিয়ে উপরে চলে এলো। দরজা খোলাই ছিলো। ভিতরে ঢুকে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,
_ দরজা না লাগিয়েই বসে আছো যে?
_ আপনি তো বাইরে ছিলেন। তাই আর লাগাই নি।
_ নাকি খেয়াল ছিলো না!
_ হুম্, সেটাও বলতে পারেন। (মুচকি হেসে)
_ আজ অনেক খুশি খুশি লাগছে তোমাকে?
_ সত্যিই আমি আজ অনেক খুশি। অনেএএএএক। জিজ্ঞেস করবেন না কেন?
প্রচুর এক্সাইটমেন্ট নিয়ে বললো নুসরাত
_ জিজ্ঞেস করার কি আছে, আমি উত্তর টা দিয়ে দিচ্ছি। মনির কে দেখে তুমি এত খুশি, তাইনা?
_ আপনি ধরে ফেললেন আমার খুশির কারণ! আপনার ব্রেন আছে বলতে হবে।
_ তোমার মনির কে কেমন লাগে নুসরাত?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে নুসরাতর দিকে তাকালো রাহুল
_ এই প্রশ্ন করার মানে কি? কি বুঝাতে চাইছেন উনি? আমি যদি বলি ভাল লেগেছে তাহলে কি উনি আবারো মনির ভাই কে এই ফ্ল্যাটে দাওয়াত করবেন? করলে তো ভালই হবে। অন্তত মাঝে মাঝে আড্ডা দেবার মত কেউ থাকবে। এমনিতে তো পৃথিবীর মাঝে থেকেও মনে হয় আমি মঙ্গল গ্রহে থাকি। সবার থেকে বিচ্ছিন্ন। (মনে মনে)
_ কি হলো, কি ভাবছো?
_ মনির ভাই বেশ মজার মানুষ। আমার কাছে তো ভালই লাগলো। যদিও একদিন দেখে মানুষ বিচার করা যায় না। আর আপনি যখন এখানে এনেছেন তাহলে তো ভালই হবে।
_ তোমার ভাল লেগে থাকলে মনির কে মাঝে মাঝে দাওয়াত করবো। কি বলো?
_ বাহ্, তাহলে তো ভালই হয়। সবাই মাঝে মাঝে একসাথে আড্ডা দিতে পারবো।
আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না।
_ কি?
_ এখানে আসার পরেই বললেন আপনার সাথে থাকতে হলে আমাকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হবে। আর সেই আপনি কিনা আপনার ফ্রেন্ড কে বাসায় নিয়ে এলেন।
ব্যাপারটা ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।
রাহুল কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো,
_ তুমি চাইলে মাঝে মাঝে মনিরের সাথে বাইরে বেড়াতে যেতে পারো নুসরাত।
_ মনিরের সাথে মানে?
_ না মানে আমার সাথে। আর চেনা হিসেবে মনিরও থাকলো। সেটাই বললাম আর কি?
_ ওওও তাই বলুন। আমি যাবো। আমার কোন প্রবলেম নেই।
নুসরাত আর দ্বিতীয় বার রাহুলকে জিজ্ঞেস করলো না কেন মনির কে সে বাসায় এনেছিল। যদি রাগ করে আবারো ঘর বন্দী করে রাখে। তাহলে তো সেই আগের মতই করুন দশা হবে।
_ তোমার মনিরকে ভাল লাগবে সেটা আমি ভাবিনি নুসরাত। তুমি আমার সামনে আগানোর পথ টা আরো ক্লিয়ার করে দিলে। (মনে মনে)
_ আমি রুমে যাচ্ছি। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে আমার উঠে চলে যাচ্ছে নুসরাত।
_ এখন ৯টা বাজে নি। এর মধ্যে তোমার ঘুম পেয়ে গেল?
_ সারাদিন অনেক টায়ার্ড ছিলাম তো, তাই।
ওকে বাই। গুড নাইট।
নুসরাতর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রাহুল। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবছে।
_ নুসরাত হয়তো আপত্তি করবে না। আর মনির কে তো ওর ভালই লাগে। আর মনির নিজেও খুব ভাল ছেলে। ওরা ভালই থাকবে।
এরপর বেশ কয়েকদিন খুব ভাল কাটলো নুসরাতর। ১৫ দিনের মধ্যে ১০ দিন ই মনির লাঞ্চ করেছে রাহুল দের সাথে। মাঝে মাঝে ওরা তিনজন বেড়াতেও গেছে। প্রথম প্রথম নুসরাতর খুব ভাল লাগলো। বন্দী খাঁচা ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার আনন্দে সে ভুলেই যেত বেড়ানোর বেশিরভাগ সময় রাহুল অনুপস্থিত থাকতো। সে আর মনির ই বেশি সময় কাটাতো। শুধু বাসায় ফেরার আগ মুহুর্তে রাহুল এর দেখা পেত নুসরাত।
একদিন রাতে নুসরাতর রুমে নক করলো রাহুল। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি। নুসরাত বসে বসে বই পরছিল।
_ তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে নুসরাত।
_ হ্যাঁ বলুন। হঠাৎ বউ এর রুমে আপনার পদধুলি দিলেন। কি ব্যাপার!
_ তোমার সাথে আমার ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। সো বি সিরিয়াস।
_ আচ্ছা আচ্ছা বলুন।
হাতের বই রেখে মনযোগী হল সে।
_ মনির কে কেমন বুঝলে?
_ ভালই তো। কিন্তু কেন?
_ কারণ ৬মাস পর মনিরের সাথে তোমার বিয়ে।
নুসরাত যেন আকাশ থেকে পরলো। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে হাতের বইটা টেবিলে রেখে রাহুলের দিকে ঘুরে তাকালো।
_ আপনি এই টাইপ ফান করার জন্য এসেছেন এই রুমে?
_ আমি সিরিয়াসলি বলেছি কথাটা। ৬ মাস পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে মনিরের সাথে বিয়ে দিবো। এটাই ফাইনাল।
_ আপনি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেই আমি দিয়ে দিবো ভেবেছেন? এতই সহজ সবকিছু! কোন সাহসে বলেন এই কথা?
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
রাহুলের কলার ঝাকিয়ে কথাটা বলতেই রাহুল কলার ছাড়িয়ে নুসরাতর গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
_ আমি যখন বলেছি তোমার মনির কে বিয়ে করতে হবে, তাহলে সেটাই ফাইনাল। কথাটা মনে রেখো।
থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে নুসরাত। ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে। রাহুল তার গায়ে পর্যন্ত হাত তুললো আজ ডিভোর্সের কথা বলে।
_ আমি আপনাকে ভালবাসি রাহুল। খুব বেশি ভালবাসি। আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। আপনি প্লিজ এরকম করবেন না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
নুসরাত রাহুলের পা জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বললো। কিন্তু রাহুল শুনলো না। পা ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
নুসরাত রাহুলের পিছে পিছে গেল। অনেক্ষন দরজা ধাক্কানোর পরেও রাহুল দরজা খুলল না।
দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই রাহুল হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
_ কয়েকটা দিনই তো কষ্ট হবে নুসরাত। একটু সহ্য করো। সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে মনে বললো রাহুল। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে।
পর্ব ১৩
সারারাত নির্ঘুম কেটেছে রাহুলের। নুসরাতর জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছে সে। খুব করে ইচ্ছে করছে একবার নুসরাতর রুমে গিয়ে দেখতে ও কেমন আছে। কতবার যে নিজের দরজার কাছে গিয়ে ফিরে এসেছে তার ইয়ত্তা নেই। নিজের দরজা খোলার সাহস পাচ্ছে না রাহুল। নুসরাতর সামনে গিয়ে কোন মুখে দাঁড়াবে সে। মেয়েটা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েই গেছে।
সারারাত আকাশ তার অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে। আর আকাশের সাথে পাল্লা দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে রাহুল আর নুসরাতও।
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পাখির কিচিরমিচির ধ্বনিতে মুখর হয়ে আছে চারপাশ। রাহুলের মনে পরে গেল নুসরাতর সাথে একই রুমে কাটানোর স্মৃতি।
_ বিয়ের রাতেও তো এমন বৃষ্টি ছিলো। নুসরাত ছিলো আমার সামনে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো সে। আমি যে ওকে সারারাত দুচোখ ভরে দেখছিলাম সেটা মেয়েটা বুঝতেই পারেনি। আমাকে ঘুমাতে বলেছিল। পাগলী একটা, আমি ঘুমিয়ে গেলে ওকে দেখতাম কিভাবে? দুটো রাত ই তো পেয়েছিলাম ওকে মন ভরে দেখার। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সেই সুযোগ টা মিস করার মত পাগল নাকি আমি! তাইতো বলেছিলাম আমার ঘুম আসবে না। আর আমার ঘুম পাগলী বউটা সেটাই বিশ্বাস করেছিলো।
আমার বউ কথাটা মনে হতেই ধ্যান ভঙ্গ হলো রাহুলের।
সে রকিং চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলো।
_ না না না, এ আমি কি করছি! নুসরাত কে আমি আমার বউ ভাবছি কেন! ওকে তো আমি ডিভোর্স দিবো। তারপর মনিরের সাথে বিয়ে দিয়ে ওকে বাঁচিয়ে রাখবো। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আমি ওকে চোখের দেখা দেখতে পারি দূর থেকে। আমার স্ত্রী হয়ে থাকলে তো আমি ওকে হারিয়ে ফেলবো নিতুর মত। (নিতু বিদেশে পরতে গিয়ে যে মেয়েটা কে রাহুলের ভাল লাগে এবং দেশে ফিরে বিয়ে করবে ভেবে রেখেছিল)
নিতুকে বিয়ে করতে চেয়েছি তাই ওকে আল্লাহ্ আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। আর নুসরাত তো আমার স্ত্রী হয়ে গেছে!
নুসরাত রাহুলের স্ত্রী, এই কথা মনে পরতেই রাহুলের আবারো মনে পরে গেল সে নুসরাত কে থাপ্পড় মেরেছে। রাহুলের ভয় আরো বেড়ে গেল।
_ নুসরাত নিজের কোন ক্ষতি করে বসলো নাতো? হারিয়ে গেল নাতো ও আমার থেকে?
রাহুল ছুটে চলে গেল নুসরাতর রুমের দিকে। নুসরাতর রুমে গিয়ে দেখলো নুসরাত বিছানায় নেই। পাগলের মত ওয়াশরুম, বারান্দা সব জায়গায় খুঁজেও সে নুসরাত কে পাচ্ছে না। রুম থেকে বাইরে এসে পুরো ফ্ল্যাটের আনাচে কানাচে খুঁজতে খুঁজতে বাসার দরজার দিকে চোখ পরলো রাহুলের।
_ দরজা খোলা কেন? নুসরাত কি বাসা থেকে চলে গেছে বাবা মায়ের কাছে? কিন্তু ও তো শহরের কিছুই চেনে না। আর টাকা পয়সাও তো নেই। যাবে কিভাবে? আর যদি চলে যেতে গিয়ে হারিয়ে যায় আমি ওকে কিভাবে খুঁজবো! ওর কাছে তো ফোনও নেই।
ভাবতে ভাবতেই রাহুল তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। কলাপ্সিবল গেটে ডাবল তালা দেখে রাহুল নিশ্চিন্ত হলো যে নুসরাত বাসার বাইরে যায়নি। রাহুল হাফ ছেড়ে বাঁচলো নুসরাত বাসার বাইরে যায়নি সেটা ভেবে। সিঁড়ির উপর বসে লম্বা একটা শ্বাস নিতে গিয়েই দম আটকে গেল রাহুলের।
_ নুসরাত বাসার বাইরে যায়নি! তারমানে ও ছাদে গেছে। ও মাই গড! কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। ও কি রাতভর বৃষ্টিতে ভিজেছে আমার উপর রাগ করে?
ভাবতে না ভাবতেই রাহুল আবারো সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলো। ছাদের গেট খোলা দেখে রাহুল নিশ্চিন্ত হলো নুসরাত এখানেই আছে। ছাদের একপাশ খুঁজে ওকে না পেয়ে অন্যপাশে গেল রাহুল। গিয়ে দেখলো নুসরাত অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। আর পরনের সব ভেজা। মেয়েটার বৃষ্টির পানিতে এলার্জি হয়। আর সারারাত ধরে ভিজে ভিজে হয়তো জ্বর এসে গেছে। দৌড়ে নুসরাতর কাছে গিয়ে ডাকলো রাহুল।
_ নুসরাত, এই নুসরাত উঠো। প্লিজ উঠোনা। আর কখনো তোমাকে মারবো না। আমি প্রমিস করছি নুসরাত। প্লিজ একবার উঠো। আজ আমার জন্যই তোমার এই অবস্থা। আমি এই জন্যই তোমাকে আমার সাথে রাখতে পারছি না। তোমাকে ভালবেসেও স্ত্রী এর মর্যাদা দিয়ে একসাথে পথ চলতে পারছি না। আমার বাবা মা কে সারাটাজীবন ভালো রাখতেই তাদের থেকে দূরে থাকি আমি। তারপরেও কেন সবাই কষ্ট পায় আমার কারনে।
নুসরাত কে বুকে জড়িয়ে কাঁদছে রাহুল। চিৎকার করে কাঁদছে সে। নুসরাত কে বুকে জড়িয়েই কোলে করে নিয়ে বাসায় আসলো রাহুল। নিজের রুমে নিয়ে নুসরাতর ড্রেস চেঞ্জ করে দিলো সে। ওদের ফ্যামিলি ডক্টরকে কল করে বাসায় ডাকলো রাহুল আর্জেন্ট ভাবে। আর ডক্টর আসার আগ পর্যন্ত রাহুল নুসরাতর হাতে পায়ে তেল মালিশ করে ওর শরীর উষ্ণ করার চেষ্টা করছে। আর শরীর কম্বলে মুড়িয়ে রেখেছে।
কিছুক্ষণ পরে ডক্টর এলো। রাহুল তাকে রুমে নিয়ে গেল। বেডরুমে নুসরাত কে দেখে ডক্টর ভড়কে গেলেন। মনে মনে ভাবছেন,
_ রাহুল একটা মেয়েকে নিয়ে এরকম নির্জন ফ্ল্যাটে থাকে? রাহুলের চরিত্র খারাপ সেটা যদি খোদ ওর বাবা মা এসেও বলে তবুও তো বিশ্বাস যোগ্য হবে না। তাহলে এই মেয়ে কে?
ফ্যামিলি ডক্টর হলেও সে জানে না রাহুল বিয়ে করেছে। আর যখন রাহুল ফোনে তাকে এই ফ্ল্যাটের লোকেশন জানায় তখন তার কাছে আজব লেগেছিল।
এরকম অবস্থা কিভাবে হলো সেটা রাহুলের থেকে শুনে নিল ডক্টর। নুসরাত কে চেক আপ করে জানায় জ্ঞান কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসবে। বৃষ্টিতে অনেক্ষন ভেজার ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। আর কোল্ড এলার্জি হওয়ায় শরীরে এলার্জি বের হয়েছে।
_ এখানে ঠান্ডা জ্বর আর এলার্জির ঔষধ আছে। টাইমলি খাইয়ে দিও। তরল খাবার টা প্রথম দিকে দিও। আস্তে আস্তে ভারি খাবার দিও আর মেয়েটার শরীরের যত্ন নিও। শরীর অনেক দুর্বল। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না বোধহয়।
_ ঠিক আছে আংকেল। আপনি যেভাবে বললেন সেভাবেই হবে। শুধু বলুন ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
_ ডোন্ট ওরি মাই সান। এভরিথিং উইল বি ফাইন।
এখন আমার যেতে হবে। হসপিটালে রোগীর অনেক চাপ। শুধু তুমি ফোন করলে বলে চলে এলাম।
_ থ্যাংকস আংকেল। চলুন আপনাকে গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেই।
_ হ্যাঁ চলো। বাই দা ওয়ে। মেয়েটা কে রাহুল? আর তোমার সাথে কি করছে?
দরজার কাছে গিয়ে কথা টা জিজ্ঞেস করলো ডক্টর
_ মেয়েটা আমার স্ত্রী আংকেল।
_ ওহ্ তাই নাকি! কনগ্র্যাচুলেশন। বাট তুমি বিয়ে করলে কবে? আর আমাকে দাওয়াতের লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দিলে? এটা কি ঠিক হলো!
মজা করে কথাটা বললেন
_ হুট করে হয়ে গেছে আংকেল। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
_ ইটস ওকে ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। তোমরা সুখে থেকো।
ডক্টর বিদায় নিয়ে চলে গেল। রাহুল তাকে বিদায় দিয়ে কিচেনে ঢুকলো নুসরাতর জন্য স্যুপ বানাতে। স্যুপ বানিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো নুসরাত চোখ মেলে তাকিয়েছে। আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করছে সে।
_ এই নুসরাত এভাবে উঠতে পারবে না একা একা। ওয়েট আমি আসছি।
_ লাগবে না আপনার আসা। আমি একাই উঠতে পারবো।
থাপ্পড় মেরে আবার দরদ দেখানো হচ্ছে। নিকুচি করেছে তোর দরদের।
বিড়বিড় করতে করতে উঠে বসার চেষ্টা চালাচ্ছে নুসরাত। কিন্তু পারছে না।
রাহুল স্যুপের বাটিটা বেড সাইড টেবিলে রেখে নুসরাত কে ধরে বসাতে বসাতে বলে,
_ উঠতে পারবে না জেনেও চেষ্টা কেন করছো। আমি তো আসছিলাম ই।
_ আমি বলেছি আপনি এসে আমাকে ধরে বসান? আমি একাই উঠতাম।
_ আমি না থাকলে ছাদ থেকে কে নামাতো শুনি?
_ নামাতে কে বলেছে আপনাকে? মরে পরে থাকতাম ওখানেই
_ একটা থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশ টা দাঁত ফেলে দিবো তোমার। কথা বলতে বলতে হুঁশ থাকে না তাইনা?
চেঁচিয়ে বললো রাহুল।
হা করো। স্যুপটা খেয়ে নাও।
_ খাবো না আমি।
মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিতেই নুসরাতর চোখ ফ্লোরের এক জায়গায় আটকে গেল। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে রাহুলের দিকে বড়বড় চোখে তাকালো সে।
কারণ মেঝেতে পরে আছে নুসরাতর ভেজাজামাকাপড়। যেটা সে গতকাল পরেছিলো।
রাহুল অসহায় ভঙ্গিতে অপরাধীর মত তাকিয়ে থাকলো নুসরাতর দিকে।
পর্ব ১৪
নুসরাত রাহুলের দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। রাহুল নুসরাতর চোখে চোখ রাখতে পারছে না। রাহুল যে নিরুপায় হয়েই নুসরাতর ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছে সেকথা বুঝিয়ে বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে সে।
_ আমার দিকে তাকান মিঃরাহুল। লুক এ্যাট মি।
বেশ ঝাঁঝের সাথে বললো নুসরাত
কিন্তু রাহুল তাকাচ্ছে না। অপরাধীর মত মাথা নিচু করে বসে আছে সে। নুসরাত আবারো বললো
_ কি হলো, কথা কানে যায় না? তাকান আমার দিকে।
এবার রাহুল নুসরাতর দিকে তাকালো
_ এগুলো কি ধরনের কাজ? আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিয়েছেন! আপনার সাহস হয় কি করে!
_ আ_ আ_ আমি চোখে কাপড় বেঁধে নিয়েছিলাম নুসরাত। বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু দেখিনি।
তোতলিয়ে বললো রাহুল।
_ চোরের মন পুলিশ পুলিশ
_ হোয়াট ডু ইউ মিন!
_ আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছি আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করেছেন কেন। আমি কি একবারো বলেছি আপনি কিছু দেখেছেন কিনা? বলেছি বলুন?
_ না সেটা বলোনি। ভেজা কাপড়ে থাকলে তোমার শরীর আরো খারাপ হতো। জ্বর বেশি হতো। তাই চেঞ্জ করে দিয়েছি।
প্লিজ কিছু মনে করো না।
নুসরাতর রাহুলের কলার ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে কাছে নিয়ে এসে বললো,
_ নিজের বউ এর ড্রেস চেঞ্জ করেছেন। এটা এত তোতলিয়ে বলার কি আছে! আর আপনি যদি আমার শরীর দেখেও নেন তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে না। কারণ আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে জনাব।
_ এই মেয়ে দুর্বল! যেভাবে কলার ধরে টান দিলো তাতে তো মনে হয় ১০০মানুষের শক্তি এর শরীরে! ডক্টর আংকেল এর অবসরে যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
ভাবছে রাহুল।
_ খুব ভালো লাগছে তাইনা আমার উপর থাকতে? নিজে ইচ্ছে করে কাছে টেনে নিবে না, অথচ আমি কাছে টানলে ছেড়ে দেবার নামও নিবে না। আজব লোক! উঠুন আমার উপর থেকে।
নুসরাতর কথায় রাহুলের আবারো ধ্যান ভঙ্গ হলো এবং বরাবরের মত সে এটা ভেবেই আফসোস করলো যে নুসরাত বলার আগেই কেন সে তাকে ছাড়তে পারে না।
_ অনেক কথা হয়েছে। এবার খেয়ে নাও।
নুসরাত লক্ষী মেয়ের মত এবার খেতে রাজি হয়ে গেলো।
রাহুল ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়ানো শেষে জ্বর আর এলার্জির ঔষধ খাইয়ে দিলো রাহুল। তারপর নুসরাত কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। নুসরাত ও কিছু না বলে শুয়ে পরলো। মাথাটা প্রচণ্ড ভারি হয়ে আছে ওর। রাহুল রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে নুসরাত বললো
_ আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে। কেউ কি শুনছেন?
_ এগুলো রেখে আসছি। শুয়ে থাকো তুমি
নুসরাত চুপ করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নুসরাত কপালে রাহুলের হাতের ছোঁয়া পেল। তারপর আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলানো অনুভব করতে লাগলো। আজ নুসরাতর মনে হচ্ছে……
_ থাকুক না এই অসুখ চিরকাল। তাহলে এভাবেই রাহুলকে সে কাছে পাবে। রাহুলের ছোঁয়া পাবে।
ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল নুসরাত। নুসরাত ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পেরে রাহুল উঠে বারান্দায় চলে গেল। ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করলো সে। রিং হতেই অপরপাশ থেকে রিসিভ হলো কল।
_ হ্যালো বাবা
বাবা ডাক শুনে রাহুলের বাবা যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। সে সাথে সাথে নিজের স্ত্রী কে ডাকলো রাহুল কে লাইনে রেখেই।
_ রাহুলের মা, যলদি এসো। দেখো কে ফোন করেছে।
রাহুলের মা কিচেন থেকে তারাতারি এসে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
_ রাহুলের বাবা, আমার রাহুল ফোন করেছে তাইনা? দাওনা আমি একটু কথা বলি।
এদিকে স্বামী স্ত্রী কাঁদছেন ছেলের ফোন পেয়ে। আর ওদিকে ছেলে কাঁদছে বাবা মায়ের ভয়েস শুনে।
_ বাবা তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে। সেটা আগে শেষ করে নেই।
_ হ্যাঁ বাবা বল। কেমন আছিস তুই? আর বউমা এখন কেমন আছে?
_ নুসরাত এখন একটু বেটার। তাই ফোন করলাম। আমি কয়েকদিন অফিসে যেতে পারবো না। অফিসটা তুমি সামলে নিলে একটু ভালো হয়।
তুমি কেমন আছো বাবা? (খুব কষ্টে কান্না আটকে রেখে বললো রাহুল)
_ তুই যেমন রেখেছিস তেমনি আছি। তোর মায়ের সাথে কথা বল।
ফোনটা রাহুলের মায়ের হাতে দিয়ে দিলো রাহুলের বাবা। সে আর ছেলের সাথে কথা বলতে পারছেন না। ছেলেকে বুঝাতে চান না তার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
রাহুলের মা ফোন কানে নিয়ে রাহুলের ভয়েস শোনা মাত্র কান্নায় ভেঙে পরলো।
_ কান্না করো না মা। প্লিজ। নুসরাত অসুস্থ তোমরা কিভাবে জানলে।
মাইন্ড ডাইভার্ট করার জন্য এই প্রসঙ্গ তুললো রাহুল। নাহলে ওর মায়ের কান্না আজ আর থামানো যাবে না
_ তোর ডক্টর আংকেল ফোন করেছিলো। সেই বললো। তুই নাকি তাকে ফোন দিয়ে যেতে বলেছিলি।
_ ও আচ্ছা। হ্যাঁ আমি বলেছিলাম আসতে। আমি এখন রাখছি মা। তুমি ভালো থেকো। আর বাবার খেয়াল রেখো।
_ আর একটু কথা বলনা বাবা। আমরা আসি তোর বাসায়?
_ তোমরা এসো না মা। প্লিজ। আমি আর কথা বলতে পারবো না। রাখছি। বাই
কলটা কেটে দিল রাহুল। নাহলে আজ সারাদিনেও কথা শেষ হবে না। আর ও দুর্বল হয়ে যাবে আবারো।
_ আমার দুর্বলতা মানেই কাছের মানুষের ক্ষতি।
বিড়বিড় করে বলছে রাহুল।
রুমে চলে গেল রাহুল। সোফায় বসে বসে ম্যাগাজিন পরছে সে। পরতে পরতে কখন যে চোখ লেগে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে সেটা সে বুঝতেই পারেনি। দুপুর পেরিয়ে যাবার পর নুসরাতর ডাকে ঘুম ভাঙে রাহুলের। ধড়ফড় করে উঠে যায় সে নুসরাতর কাছে।
_ কি হয়েছে নুসরাত। কিছু লাগবে তোমার?
_ আমি ওয়াশরুমে যাবো।
_ ও সেই কথা। তো চলো।
বলেই নুসরাত কে কোলে তুলে নিলো রাহুল। আর নুসরাতরাহুলের গলা জড়িয়ে মনে মনে ভাবছে।
_ বাহ্, এত মেঘ না চাইতেই জল! আমি তো ভেবেছিলাম ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে সাপোর্ট দিবে শুধু। কিন্তু ইনি তো আরো এককাঠি উপরে!
নুসরাত বেশ আনন্দে আছে। লাস্ট দুই দিন তার রাহুলের কেয়ারিং খুব ভাল লেগেছে। একদম হাসবেন্ডের মত বিহ্যাভ করেছে রাহুল। সেদিনরাতের কথাটা ভুলে গেলেই হয় এখন।
_ সেরাতে কেন এরকম করেছিল রাহুল, আর কিসের ভুত চেপেছিল তার মাথায় যে হুট করে নিজের বউকে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেবার কথা বললেন?
অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের উত্তর পায় না নুসরাত। রাহুলকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করে না সে। যদি রেগে গিয়ে কেয়ারিং টা কমে যায়! তার চেয়ে বরং যেটা ঘটার ছিলো ঘটে গেছে। এখন সেটা ভুলে যাওয়াই শ্রেয়।
নুসরাত এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে তার গোসল দেওয়া মানা। গোসল দিতে না পেরে নুসরাতর দম আটকে যাচ্ছে। আর নুসরাত একটু সুস্থ জন্য রাহুল সন্ধ্যায় একটু বাইরে গেছে। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করতে। আর এই ফাঁকে নুসরাত ইচ্ছেমত শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজেছে।
আর এতেই ঘটলো বিপত্তি। নুসরাতর শরীর আবারো গরম হতে শুরু করলো। এবার তার জ্বরের তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেশি।
রাহুল দুই ঘন্টা পর ফিরে এল। রুমে এসে নুসরাত কে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
_ তুমি এই ড্রেস পরে আছো যে? আর মাথায় ঘোমটা দিয়ে আছো কেন?
_ এমনি, কিছু না। আপনি বাইরে থেকে এসেছেন। ফ্রেশ হয়ে নিন।
কাঁপা গলায় বললো নুসরাত।
রাহুল হুট করে এসে নুসরাতর ঘোমটা টেনে খুলে দিলো। মাথায় হাত দিতেই চুল ভেজা বুঝতে পারলো
_ ঠিক যেটা ভেবেছিলাম তাই। তুমি গোসল দিয়েছো। তুমি জানতে গোসল দিলে জ্বর বেশি হবে। তবুও কেন নুসরাত? হোয়াই?
_ গোসল না দিয়ে কি থাকা যায় বলুন।
অসহায় ভাবে বললো নুসরাত।
_ তাই বলে রাতে গোসল দিতে হবে তোমার? দেখি তোমার জ্বর কেমন।
নুসরাতর কপালে হাত রাখতেই নুসরাত রাহুলের বুকে ঢলে পরে গেল। নুসরাত প্রচুর কাঁপছে। ডাবল কম্বলেও নুসরাতর কাঁপুনি থামাতে পারছে না রাহুল। তখন নিতান্ত বাধ্য হয়েই নুসরাতর পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো সে। আজ রাহুল আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেছে। নুসরাতকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। নুসরাত রাহুলের উষ্ণতায় নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে নিজের অজান্তেই। আর রাহুল নুসরাত কে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
পর্ব ১৫
পরেরদিন সকাল ৮টার দিকে মুখের উপর গরম নিশ্বাস পরায় ঘুম ভেঙে গেল নুসরাতর। মাথার নিচেও শক্ত কিছু অনুভূত হলো তার। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চোখ বন্ধ করে আলসেমি কাটানোর জন্য হাত তুলতে গিয়েই বাঁধা পেল সে। চোখ মেলে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ব্যাপারটা। দেখলো রাহুল নিজে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
নুসরাত কিছুক্ষণ রাহুলের ঘুমন্ত মুখের পানে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকলো।
_ আপনি জানেন না মিঃরাহুল, আপনাকে আমি ঠিক কতটা ভালবাসি। আপনাকে ছাড়া আমি এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারি না। আপনি ছাড়া যে আমি অসম্পূর্ণ।
রাহুলের গলায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে রাহুলের বুকের সাথে মিশে গেল নুসরাত।
নুসরাত আজ অনেক খুশি। রাহুল ওকে নিজে থেকে এতটা কাছে টেনে নিয়েছে সেটাই অনেক বড় পাওয়া।
কিছুক্ষণ পর রাহুলেরও ঘুম ভেঙে গেল। নিজের শরীরের উপর নুসরাতর হাত দেখতে পেল সে।
_ ওহ্ গড! ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ ওকে জড়িয়ে রাখবো। ওর শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে উঠে যাবো।
আমি ঘুমিয়ে গেলাম কিভাবে। নিজেকে এতটুকু কন্ট্রোল আমি করতে পারলাম না!
রাহুল আস্তে আস্তে নুসরাতর হাত নিজের উপর থেকে সরিয়ে নিচ্ছে আর মনে মনে বলছে
_ মেয়েটার ঘুম ভাঙানো যাবে না। ঘুম ভেঙে যদি দেখে আমি ওকে এইভাবে জড়িয়ে রেখেছিলাম তাহলে আমার মাথায় চড়ে বসবে। এমনিতেই প্রতি পদে পদে থাকে।
রাহুল উঠে চলে যেতে নিলেই নুসরাত রাহুলের হাত টেনে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়
_ চোরের মত কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
_ হোয়াট! আমাকে চোর বলছো কেন? আমি কি চুরি করেছি তোমার?
_ রেগে যাচ্ছেন কেন। রাগ তো করা উচিৎ আমার। সারারাত আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। একটু যে আরাম করে ঘুমাবো সেই উপায়ও রাখেননি
_ ঘুম হয়নি তোমার?
নুসরাত উঠে হাঁটু গেড়ে বসে রাহুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
_ আপনার বুকে মিশে গিয়ে ঘুমানোর অভ্যেস তো এখনো হয়নি আমার। ফার্স্ট টাইম তো। এক্সাইটমেন্ট খুব বেশি ছিলো। তাই ঘুম হয়নি।
কথাটা বলেই রাহুলের কানের লতিতে কুট করে একটা কামড় দিয়ে বসলো সে।
রাহুল উফফফ বলে কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো
_ এটা কোন ধরনের অসভ্যতা! এভাবে কেউ কাউকে কামড়ায় নাকি?
_ ইসসস্ ব্যাথা করছে বুঝি! আমার কাছে আসুন। ফুঁ দিয়ে দেই।
মুখ চেপে হাসছে নুসরাত
_ অসভ্য মেয়ে একটা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
_ আমি একা একা ওয়াশরুমে যেতে পারবো না।
_ দেখি জ্বর কেমন
কাছে এসে নুসরাতর কপালে হাত রাখলো রাহুল।
জ্বর তো আছেই এখনো। তবে অনেকটা কম এখন।
চলো তোমাকে ওয়াশরুমে দিয়েই নাস্তা বানাতে যাই।
নুসরাত কে ওয়াশরুমে দিয়ে নাস্তা রেডি করে একবারে রুমে এল রাহুল। এর মধ্যে নুসরাত অনেকবার রাহুল কে ডেকেছে ওয়াশরুম থেকে। রাহুল শুনেও না শোনার ভান করে গেছে। রাহুল চাচ্ছিলো নুসরাত একাই বের হয়ে আসুক। কিন্তু রুমে এসে রাহুল দেখলো নুসরাত ভিতরেই রয়েছে।
_ আচ্ছা ঘাড় ত্যাড়া মেয়েতো! ওর শরীরের কন্ডিশন এখন এতটাও খারাপ না যে বেড পর্যন্ত একা একা আসতে পারবে না। সেই আমার জন্যই ওখানে বসে আছে।
_ আপনি কই গেলেন? আর কতক্ষন এভাবে ওয়াশরুমে বসে থাকবো? প্লিজ তারাতারি আসুন না
নুসরাতর চিল্লানিতে রাহুল ওকে আনতে গেল। কোলে তুলে নিয়ে ধমক দিয়ে বললো
_ এভাবে চিল্লানোর কোন মানে হয়! আমি আসছি না? যদি আমার আসা পর্যন্ত দেরি সহ্য নাই হয় তাহলে একা একা আসতে পারলে না। তোমার চিল্লানিতে আশে পাশে আর একটা কাক ও মনে হয় নেই
_ বাসার বাইরের সব কাক পালিয়ে গেল। আর আপনি বাসার ভিতরে থেকেও এলেন না কেন? নাকি আপনি কানে শুনতে পান না। বয়ড়া
নুসরাত হাসছে। আর রাহুল রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে নুসরাতর দিকে। কোন কথা না বলে নুসরাত কে খাওয়াতে শুরু করলো রাহুল। নুসরাতও খাচ্ছে চুপ করে।
এর মধ্যে হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। রাহুল গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মনিরের হাসি মুখটা দেখে ক্ষনিকের জন্য হলেও রাহুলের মুখটা কালো হয়ে গেল।
_ কিরে, আমি আসাতে তুই খুশি না মনে হচ্ছে?
_ আরে না না, কি যে বলিস। আমি খুব খুশি হয়েছি। আয় ভিতরে আয়।
মুখে হাসি টেনে বললো রাহুল
মনির ভিতরে আসার পর রাহুল দরজা লাগিয়ে মনির কে সোজা নুসরাতর কাছে নিয়ে গেল
_ নুসরাত দেখো কে এসেছে।
_ কে এসেছে?
মুখ উঁচু করে মনিরের মুখ দেখে থমকে গেল নুসরাত। ওর হাসি মিলিয়ে গেল মুখ থেকে।
_ মনির ভাই আপনি! এত সকালে এখানে কেন!
_ কেন নুসরাত, আমি কি আসতে পারি না? আসলে আন্টি কে কাল রাতে কল দিয়েছিলাম। আর তখনি জানতে পারলাম তুমি অসুস্থ।
_ আর তুই অমনি ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই চলে এলি নুসরাত কে দেখতে!
রাহুল খোঁচা মেরে কথাটা বললো মনিরকে।
_ এভাবে কথা বলছিস কেন? ও অসুস্থ তাই দেখতে এসেছি।
_ মনির ভাই, আপনি এই মুহুর্তে এই বাসা থেকে বেড়িয়ে যান। আমি আপনাকে যেন আর কখনো আমাদের আশে পাশে না দেখি। প্লিজ, গেট আউট ফ্রম হেয়ার এজ আর্লি এজ পসিবল।
ভয়েস যথেষ্ট শান্ত রেখে দৃঢ় গলায় বললো নুসরাত।
মনিরের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছে রাহুল। মনিরকে দেখে সেটা হুট করেই মনে পরে গেল নুসরাতর।
_ কি বলছো এসব? তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো নুসরাত?
_ মনির আমার কতদিনের বন্ধু তোমার জানা আছে নুসরাত? যাকে আজ পর্যন্ত আমি কষ্ট পাওয়ার মত এমন কোন কথা বলিনি, তাকে তুমি ডিরেক্টলি অপমান করছো। তোমার এত সাহস হয় কি করে?
_ আমি আপনার স্ত্রী। আর আপনার থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার জন্যই উনি আমাদের সাথে এত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। আর সেই জন্যই সেদিন রাতে আপনি আমার গায়ে হাত তুলেছেন। বুঝতে পারছেন না আপনি মিঃরাহুল!
_ আর মনির ভাই আপনাকেও বলি। মিনিমাম লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই আপনার তাইনা? বন্ধুর বউ কে কিভাবে বিয়ে করতে চান? এতটা ক্যারেকটার লেস আপনি! এটা আগে জানা থাকলে আমি আপনাকে এই বাসায় কিছুতেই এলাও করতাম না। না আপনার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতাম। ছিহ্
_ মুখ সামলে কথা বলো নুসরাত। মনির কে আর একটা বাজে কথা শোনালে তোমার কি অবস্থা করবো আমি নিজেও জানি না। আমার বন্ধু, আমার ভাই আমার সব কিছু এই মনির। আর কি এত তখন থেকে বউ বউ করছো? আমি তো তোমাকে বলেই দিয়েছি, তোমাকে আমি স্ত্রী হিসেবে মানি না। আর মানবোও না।
_ আমি বুঝতে পারিনি রাহুল, আমার আসাতে নুসরাতর এভাবে রিয়াক্ট করবে। ও না চাইলে আমি আর তোর সাথে কখনো দেখা করবো না।
কাঁদতে কাঁদতে বললো মনির।
_ দেখা করবি না মানে? আমার বাবা মা এর পর তুই আমার একমাত্র আপন। বাকি সব আমার কাছে থার্ড পার্সন।
নুসরাতর দিকে তাকিয়ে বললো রাহুল।
মনির চলে গেল। আর যাবার আগে রাহুলের চোখ এড়িয়ে নুসরাতর দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। নুসরাত প্রতিউত্তরে মনিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
মনির কে বিদায় দিয়ে রাহুল নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। নুসরাত রাহুলের কাছে এগিয়ে আসতেই রাহুল থামিয়ে দিল নুসরাত কে।
_ এতক্ষণ অনেক চেঁচামেচি হয়েছে বাসায়। আমি চাইনা আর সেরকম কিছু হোক।
কয়েকদিন আগে তোমাকে বলেছিলাম মনির কে তোমার বিয়ে করতে হবে। আগামী ১৫দিনের মধ্যে আমি মনিরের সাথে তোমার বিয়ে দিবো। আমাদের বিয়ের কথা হাতেগোনা দুই একজন ছাড়া কেউ জানে না। তাই এটা গোপন রাখবো। তারপর যতদ্রুত সম্ভব তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।
_ আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না। আমাকে কি হাতের পুতুল পেয়েছেন? যেভাবে খুশি সেভাবে ইউজ করতে চান!
কেমন স্বামী আপনি! নিজের স্ত্রী কে অন্যজনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন!
_ তুমি এই বিয়ে না করলে আমি সুইসাইড করবো নুসরাত। তুমি কি সেটাই চাও। আমার জেদ সম্পর্কে তুমি অবগত না থাকলে আমার মা এর থেকে জেনে নিতে পারো। আমি তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
শান্ত গলায় কথাটা বললো রাহুল।
নুসরাত অনেক্ষন থম ধরে বসে থাকলো। হুট করেই নুসরাত রাহুলকে বললো
_ আমি মনির ভাই কে বিয়ে করতে রাজি। তবে কিছু শর্ত আছে আমার।
পর্ব ১৬
নুসরাত রাজি শুনে রাহুল বড় একটা ধাক্কা খেল। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। পরক্ষণেই মনে হলো
_ আমার কষ্ট কেন হচ্ছে? আমিই তো চেয়েছি ওর সাথে মনিরের বিয়ে হোক। নুসরাত বেঁচে থাকুক।
রাহুল হাসি মুখে নুসরাত কে বললো
_ কি শর্ত তোমার বলো?
_ আমার আপনার থেকে কিছু কথা জানার আছে। আমি চাই আপনি আমাকে বিস্তারিত বলবেন। যা যা জানতে চাইবো সব। আপনি রাজি?
_ আমি রাজি।
_ আপনার কি এমন হয়েছে বা কি এমন ঘটেছে আপনার সাথে যার কারণে আপনি আপনার ফ্যামিলির সাথে থাকেন না। সব থেকে কাছের মানুষদেরও আপনি দূরে ঠেলে দিতে ২বার ভেবে দেখেন নি? এমনকি নিজের স্ত্রী কে পর্যন্ত অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চান। কি হয়েছে বলুন। কিচ্ছু লুকাবেন না প্লিজ।
_ আমি আগে থেকেই মেয়েদের থেকে মিনিমাম দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। আমার কোন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো না বললেই চলে। কিন্তু লন্ডনে আমার গ্রাজুয়েশন এর ফাইনাল এক্সাম দেওয়ার কয়েক মাস আগে একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। মেয়েটির নাম ছিলো নিতু। আমরা ব্যাচমেট ছিলাম। মেয়েটা খুবই হাসি খুশি এবং দুরন্ত ছিলো। হিংসা, অহংকার কোন কিছুই ছিলো না।
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
সব ধরনের মানুষের সাথে মিলেমিশে চলা, সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলা, মানুষকে সম্মান দেওয়া, অসহায়দের সহায়তা করা, ওর চরিত্রের এইদিক গুলার প্রতি আকৃষ্ট হই আমি। আর আমার বাবা মা ও ঠিক এরকম মেয়েই চাইছিলো তার ছেলের বউ হিসেবে। আমি একদিন ওকে ডিরেক্ট বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে বসলাম। ও নিজেও রাজি হয়েছিলো। পরে একদিন কথায় কথায় আমাকে বলেছিলো ও নাকি আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতো। একদিন নিতু আমাকে ফোন দিয়ে একটা জায়গায় যেতে বললো।
“আমি পৌঁছে দেখলাম একজন জ্যোতিষীর সামনে বসে আছে নিতু। ওর খুব ইচ্ছে আমার হাত দেখাবে তাকে। আমাদের ভাগ্য গণনা করবে সে। আমিও খুশি মনে রাজি হয়েছিলাম। এর আগে তো কখনো কোন জ্যোতিষীর কাছে যাই নি আমি। এক্সাইটমেন্ট প্রচুর ছিলো। কিন্তু আমার দুই হাত দেখে যখন উনার চেহারা টা থমথমে হয়ে গেল তখন আমাদের দুজনের চেহারা থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। উনি আমার হাত গণনা করে বললেন, আমার সাথে যার বিয়ে হবে তার অকাল মৃত্যু হবে। এমনকি আমার কারণে আমার খুব কাছের মানুষদেরও ক্ষতি হবে। যদি তারা আমার আশেপাশে থাকে। এমনকি তাদেরও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।”
এই কথা শোনার পর আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। নিতু আমাকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিল এগুলো সব মিথ্যা। কিন্তু ফলাফল কি হলো, শুরুতেই আমার বাবার হার্ট এটাক হলো। তারপর নিতু আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি দেশে ফেরার পর আমার বাবার দ্বিতীয় বারের মত এটাক হলো।
সব খারাপের মূলে রয়েছি আমি। ওই জ্যোতিষী ঠিকই বলেছিল। আমার কারণে সবার খারাপ হয়। নিতু চলে গেছে, বাবা নিজেও অসুস্থ। অথচ দেখো, বাবার দ্বিতীয়বার এটাক হওয়ার পরে আমি ফ্যামিলি থেকে দূরে চলে আসি। ওদের সাথে যোগাযোগ ও রাখিনা ঠিকমত। আর এই জন্যেই আমার মায়ের কিছুই হয়নি আজ পর্যন্ত। আমার মা সুস্থ আছে। তাইতো আমি চাই মনিরের সাথে তোমার বিয়ে দিয়ে তোমাকে আমার থেকে দূরে রাখতে। যেন তুমি বেঁচে থাকতে পারো সুস্থ ভাবে।
নুসরাত রাহুলের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল।
রাহুলের মত ছেলে কিনা জ্যোতিষবিদ্যা বিশ্বাস করে! ভিত্তিহীন মনগড়া কথাগুলো এই লোক এতদিন বিশ্বাস করে নিজে নিজে এত কষ্ট পেয়েছে আর উনার বাবা মাকেও কষ্ট দিয়েছে!
নুসরাত উঠে গিয়ে রাহুলের পাশে বসে হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
_ আমাদের যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই একমাত্র আমাদের ভবিষ্যৎ জানেন মিঃরাহুল। অন্য কেউ নয়। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা আর তিনিই আমাদের মৃত্যুদানকারী। তাই আমাদের সাথে কখন কি হবে সব তিনিই ঠিক করে রাখেন। আমাদের তার উপরেই একমাত্র বিশ্বাস রাখা উচিৎ। আর আল্লাহ্ যার হায়াত যতদিন দিয়ে রেখেছেন সে ততদিনই বাঁচবে।
এরকম জ্যোতিষীদের কাছে গিয়ে হাত দেখানো ইসলাম ধর্মে শিরকের পর্যায় পরে। আর শিরক কারী ব্যক্তি কাফিরের সমান হয়। যাদের জন্য মৃত্যুর পর জাহান্নামে জায়গা রাখা আছে। জান্নাতে নয়।
আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন,
“তোমরা কোন গণক বা জ্যোতিষীর কাছে হাত দেখিও না, কারণ ভাগ্য তো তাদেরও হয় যাদের দুটো হাত নেই।”
রাহুল এতক্ষন ধরে নুসরাতর কথাগুলো মনযোগী হয়ে শুনছিল। হঠাৎ নুসরাত রাহুলের থেকে তার ফোন চেয়ে নিলো। রাহুল ফোন বের করে দিয়ে দিল। নুসরাত গুগল এ সার্চ দিয়ে বাংলাদেশের সব থেকে নামকরা মনরোগ বিশেষজ্ঞের ঠিকানা খুঁজে বের করলো। তারপর সেই ঠিকানা মনিরের নাম্বারে সেন্ড করে পরের দিন সকালের এপয়েনমেন্ট নিয়ে রাখতে বললো। তারপর মনিরকে দেওয়া মেসেজ সহ গুগল হিস্টরি সব ডিলেট করে দিয়ে রাহুল কে ফোন ফেরত দিয়ে বললো,
_ কয়েকদিন পর তো আমি আর থাকবো না। তাই আমি এই কয়দিন যদি আপনাকে আমার কথা শুনে চলতে বলি তাহলে রাখবেন সেকথা?
_ হুম রাখবো।
_ আপনি এই কয়দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরবেন জামায়াতের সাথে। আর নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম যে খুতবা দেয় সেটা শুনেই বাসায় আসবেন। আর কাল সকালে আমি আপনাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো।
_ নামাজ নাহয় পরলাম। কিন্তু ডক্টর এর কাছে কেন?
জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে নুসরাতর দিকে তাকালো রাহুল
_ আমার ইচ্ছা তাই। আপনি আমার কথায় রাজি থাকলে আমিও রাজি মনির ভাই কে বিয়ে করতে।
আর আজ আমি যে যে কথাগুলো বললাম সেগুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন প্লিজ। আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। ওখানেই থাকবো এই কয়দিন।
নুসরাত পাশের রুমে চলে গেলো। আর নুসরাত রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর রাহুল রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে দিলো। নুসরাত রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। আজ ওর ভিতর টা হালকা লাগছে। এই কয়দিন ধরে সে ভেবেই এসেছিলো রাহুল বড় ধরনের কোন অসুখ বাধিয়ে বসেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে গুটিয়ে নেবার কারণ যে এটা হবে সেকথা নুসরাত কল্পনাও করতে পারেনি। এত সামান্য আর ভিত্তিহীন কথাই আজ রাহুলকে এতটা ডিপ্রেসড করেছে।
পরদিন সকালে নুসরাত রাহুলের রুমে গিয়ে নক করে। একটু পরে রাহুল দরজা খুলে দেয়
_ এত জলদি উঠে গেছেন? মসজিদে গিয়েছিলেন তো ফজরে?
_ হ্যাঁ, নামাজ পরে এসে শুয়েছিলাম।
_ সারারাত ঘুমাননি?
_ নাহ্, ঘুম আসেনি আমার।
_ ঘুমায়নি, তার মানে উনি আমার বলা কথাগুলো ভেবে দেখেছেন!
মনে মনে বেশ খুশি হয় নুসরাত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন। একসাথে নাস্তা করে বের হবো। আর আপনার ফোনটা একটু দিন।
নুসরাতর হাতে নিজের ফোন ধরিয়ে দিয়ে রাহুল ফ্রেশ হতে গেল। আর মনির কে কল দিয়ে নুসরাত সব জেনে নিলো।
দুজন ডক্টর এর চেম্বারে বসে আছে। রাহুলের মুখ থেকে সারসংক্ষেপে সব শুনলো ডক্টর। শুধু নুসরাত কে মনিরের সাথে বিয়ে দিবে এইটা লুকিয়ে গেল রাহুল। সব কিছু শোনার পর ডক্টর বললেন,
_ উনি পর পর ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টের জন্য নিজেকে দায়ী করে একপ্রকার ডিপ্রেশনে চলে গেছেন। একধরনের ট্রমার মধ্যে আছেন। উনি এতটা সিরিয়াস হতে পারতেন না যদি ফ্যামিলির সাথে থাকতেন। সবার সাথে মন খুলে মিশে চললে এরকম হতো না।
কথাগুলো বলে কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। প্রেসক্রিপশন নুসরাতর হাতে দিয়ে নিয়ম করে খাওয়াতে বললেন ডক্টর।
আজ ১০ দিন হয়ে গেছে ডক্টর দেখানোর। নুসরাতর কথামত রাহুল এখন জামায়াতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরে, ঔষধ খায় নিয়ম করে। নুসরাতর সব কথে মেনে চলে রাহুল। নুসরাত কে ছাড়া রাহুল আর কিছু কল্পনা করতে পারে না। প্রচণ্ড দূর্বল হয়ে গেছে সে নুসরাতর প্রতি। রাহুলের মাঝে একধরনের পরিবর্তন এখন স্পষ্ট লক্ষ করা যায়। রাহুল বুঝতে পেরে গেছে এতদিন সবার থেকে নিজেকে আলাদা রেখে সে কতবড় ভুল করেছে। আর সব থেকে
বড় ভুল নুসরাত কে অন্যের হাতে তুলে দিতে চাওয়া।
কিন্তু মনিরকে কি বলবে সে? নিজেই তো মনিরের সাথে নুসরাতর বিয়ে ঠিক করেছে। আর নুসরাত নিজেও তো মনিরকে বিয়ে করতে রাজি!
পর্ব ১৭ (শেষপর্ব)
আর মাত্র দুইদিন পর রাহুলের কথা অনুযায়ী মনিরের সাথে নুসরাতর বিয়ে। রাহুল এই কয়দিনে স্পষ্ট উপলব্ধি করেছে ডিপ্রেশনে পরে সে কতবড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাহুল নিজের রুমে পায়চারী করে বেরাচ্ছে। কিভাবে মনির কে কষ্ট না পেতে দিয়ে এই বিয়ে টা ভাঙা যায়। মনিরের চোখে সে নুসরাতর জন্য ভালবাসা দেখতে পেয়েছে। তাই এতটা টেনশন হচ্ছে তার
_ নুসরাত কে আমি অন্যকারো হাতে তুলে দিতে পারবো না। এর চেয়ে ভাল আমি নুসরাতর সাথে কথা বলি কিভাবে বিয়েটা ভাঙা যায়। নুসরাতর এতদিনের ব্যবহারে তো আমার প্রতি ভালবাসা স্পষ্ট ছিলো। তাহলে হয়তো আমার সুইসাইড করার কথা শুনে ও মনির কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। এটাই হবে। তাছাড়া আর কি!
এইসব ভেবে রাহুল নুসরাতর রুমের দিকে গেল। কিন্তু রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই নুসরাতর অট্টহাসি শুনে থমকে গেল। নুসরাত কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। আর ফোনটা রাহুল গত পরশুই কিনে এনেছে নুসরাতর জন্য।
_ আমি আজ খুব খুশি মনির ভাই। এই কয়দিনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। আর সব হয়েছে আপনার জন্য। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ। এভাবেই সারাজীবন পাশে থাকবেন।
_ আমি না নুসরাত। তুমি নিজেও কিন্তু অনেক চালাক। প্রথমে তো আমি ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম যখন তুমি রাজি হবে শুনেছিলাম। পরে যখন বুঝিয়ে বললে যে বিয়ে করতে রাজি হয়ে রাহুল কে ব্ল্যাকমেইল করলে ও কেন এমন করছে সেটা জানা যাবে। তখন আমিও বুঝলাম এটাই একমাত্র উপায়।
_ তো মনির ভাই, দুদিন পর যা হবে তার জন্য রেডি তো আপন!
নুসরাত মজা করে কথাটা বলেই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরছে।
রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে নুসরাতর বলা কথা শুনে বুকের ভিতর শুন্যতা অনুভূতু হলো রাহুলের। নুসরাত কে ভুল বুঝে চলে গেল সে নুসরাতর রুমের সামনে থেকে। নুসরাত রাহুলের চলে যাওয়াটা দেখতে পেল। ফোন রেখে রাহুলের রুমের গেল সে
_ মিঃরাহুল, আপনি আমার রুমের সামনে গিয়েছিলেন। কিছু বলবেন আমাকে?
হাসি হাসি মুখ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো নুসরাত।
_ কিছু না। এমনি গিয়েছিলাম।
নুসরাতর আড়ালে চোখের পানি মুছে ঘুরে তাকালো রাহুল।
বলছিলাম যে আর দুদিন পরেই তো তোমাদের বিয়ে। কাল তাহলে চলো শপিং করতে যাই? ধুমধাম করে বিয়ে না হলেও তো একটু সাজগোজ তো করতেই হবে তোমাকে।
নুসরাত যেন আকাশ থেকে পরলো। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল তার।
_ কি বললেন উনি? সব কিছু কাটিয়ে উঠে তো উনি আমাকে আপন করেই নিচ্ছিলেন। তাহলে আবারো সেই বিয়ের কথা কেন তুলছেন? তাহলে আমার এই প্রচেষ্টা কি ব্যর্থ হয়ে গেল। উনি সত্যিই মনির ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চান।
নুসরাত আর ভাবতে পারছে না।
_ আপনার ইচ্ছা। আমি কোন শপিং টপিং এ যেতে পারবো না।
নুসরাত চলে গেল রাহুলের রুম থেকে।
বিয়ের আগের দিন বিকেলে। নুসরাতর জন্য নিজের পছন্দে কেনাকাটা করে নিয়ে এসেছিল রাহুল। সেটা দিতেই নুসরাতর রুমে গেল সে। এই মাঝের দুইদিন প্রয়োজন ছাড়া কেউ কোন কথা বলেনি। নুসরাত বেডে শুয়ে ছিল। রাহুল দরজায় নক করায় উঠে বসলো সে
_ আসবো নুসরাত?
_ হ্যাঁ আসুন।
উদাস গলায় বলা নুসরাতর কথায় রাহুলের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে মনে ভাবলো সে
_ আমি কোন ভুল করছি নাতো? নুসরাত কে কি আমি জোর করে এই বিয়ে করতে বাধ্য করছি?
_ কি হলো, দাঁড়িয়ে আছেন যে! ভিতরে আসুন
রাহুল ভিতরে ঢুকে নুসরাতর পাশে বসলো। নুসরাতর হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে ধরা গলায় বললো
_ এইগুলো তোমার বিয়ের জন্য কিনেছি আমি। নিজে পছন্দ করে। কাল পড়ো প্লিজ
রাহুল আর সেখানে থাকতে পারলো না। উঠে চলে গেল। নাহলে যে নুসরাত তার চোখের জল দেখতে পাবে!
নুসরাত শপিং ব্যাগ ছুঁয়েও দেখলো না। রাহুল চলে যাবার বেশ কিছুক্ষণ পর উঠে বারান্দায় গেল। আজ তার খুব ইচ্ছে করছে গান গাইতে। খুব কষ্ট লাগছে তার। এত কিছুর পরেও ভালবাসার মানুষ টা বুঝতে পারলো না। অনুভূতিহীন ভাবে সে বারান্দার গ্রিল ধরে গান গাইছে সে
আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমারে পিয়াসী বাসনায়।
আমারে মনেরো তৃষিত আকাশে
কাঁদে সে চাতক আকুলো তিয়াসে
কভু সে চাতক শুধা চোর আসে
নিশীথে স্বপনে জোছনায়।
আমারে মনেরো পিয়ালো তমালে
হেরে তারে স্নেহ মেঘ শ্যাম
অশনি আলোকে হেরি তারে ফির
বিজলি উজল অভিরাম।
আমারে রচিত কাননে বসিয়া
পরানো পিয়ারে মালিকা রচিয়া
সে মালা সহসা দেখিনু জাগিয়া
আপনারে গলে দোলে হায়।
রাহুল এতক্ষণ পাশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নুসরাতর গান শুনছিল। গান শেষে নুসরাত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। রাহুল নুসরাতর কান্না সহ্য করতে না পেরে ছুটে পাশের রুমে চলে গেল। বারান্দায় গিয়ে নুসরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো।
_ আমি তোমাকে খুব ভালবাসি নুসরাত বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে ছেড়ে আর একমুহুর্তও থাকতে পারবো না। আমি পারবোনা তোমাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে। তুমি প্লিজ এই বিয়েটা করো না। আমাকে ছেড়ে যেও না নুসরাত। আমি বাঁচতে পারবো না।
নুসরাত কে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো রাহুল।
_ আমি বলেছিলাম একবারো মনির ভাই কে বিয়ে করতে চাই? বলেছিলাম আমি? আপনি নিজেই বলেছিলেন। আর মেনে নিলাম আপনি ডিপ্রেসড হয়েই বলেছিলেন প্রথম দিকে। কিন্তু ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠেও আপনি কিভাবে নিজের স্ত্রী কে অন্যের সাথে বিয়ে দিতে চান? তারউপর আবার নিজের পছন্দে শপিং করে এনে? বলুন আমাকে!
রাহুল কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাহুলের কলার ধরে কথাগুলো বললো নুসরাত।
_ তুমি যে সেদিন রাতে মনিরের সাথে হেসে হেসে বলছিলে বিয়ের জন্য রেডি কিনা!
তাই আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ওকে বিয়ে করতে চাও। আর তুমি তো রাজিও হয়েছিলে বিয়ে করতে।
নুসরাত এবার মুচকি হেসে রাহুলকে জানালো মনিরের সাথে প্ল্যানিং করেই সে এগুলো করেছে।
_ আপনি তো নিজে থেকে কিছু বলতেন না। তাই মনির ভাইকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম কিছু শর্তের বিনিময়ে। সেই শর্ত অনুযায়ী ই আপনি সব বলেছিলেন আমাকে।
_ তোমরা আমাকে এইভাবে বোকা বানিয়েছো? আর মনির! ও আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমার সাথে এতবড় গেম খেললো।
চলুন রেডি হয়ে নিন। বাবা মা এর কাছে যাবো। ওই বাসায়। আর এখন থেকে ওখানেই থাকবো। আমার সব গোছানোই আছে।
_ সব গুছিয়ে রাখলে কখন! আর তোমার মন খারাপ, কান্না এগুলো কই গেল?
_ আপনার কি মনে হয়, আমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চাইলেই বিয়ে করে নিবো আমি? এতই সহজ আমাকে ঘাড় থেকে নামানো? আপনি কিভাবে আমাকে অন্যের সাথে বিয়ে দিতে চান সেইটা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছিলো। আপনি আমাকে ভালবাসেন তবুও স্বীকার করতে পারছেন না।
_ আমিতো কখনো বলিনি আমি তোমাকে ভালবাসি!
_ ভালবাসার কথা মুখে বলতে হয়না জনাব। অনুভব করতে হয়।
রাহুলের কানে ফিসফিস করে বললো নুসরাত। দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে আছে।
রাত ৮টা বাজে রাহুল আর নুসরাত রাহুলদের বাসায় এল। বাইরে থেকে বাসাটা সাজানো দেখে দুজনেই অবাক হয়ে গেল। আর বাসার ভিতরে প্রবেশ করতেই দুজন বড়সড় একটা সারপ্রাইজ পেল। নুসরাতর বাবা মা সহ বেশ কিছু গেস্ট উপস্থিত বাড়িতে। কারণ তাদের রিসেপশনের আয়োজন করেছে রাহুলের বাবা মা। রাহুল তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলো এইসব মনিরের প্ল্যানে হয়েছে। একটু পর মনির এসে জানালো সে নিজেই রাহুলের বাবা মাকে লাস্ট কিছুদিনের ঘটে যাওয়া সব কিছু জানিয়েই এই রিসিপশন এর আয়োজন করেছে। আজ সবাই অনেক খুশি। কারণ সবার ভালবাসার মানুষ তাদের পাশেই আছে।
সমাপ্ত
আপনার চেয়ে আপন যে জন
লেখিকাঃ বর্ণিলা বহ্নি
আরো পড়ুনঃ আপনার চেয়ে আপন যে জন – সিজন 2 । কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প