ইচ্ছেটা তোমারই – একটি নতুন প্রেমের গল্প: হয়তো সে ফিরবেনা, সে যদি আমাকে চাইতো তাহলে চলে যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত একবার হলেও আমাকে বলতে পারতো। তাকে ছেরে দিয়ে ছিলাম তার অর্থ এই নয় তাকে চলে যেতে বলেছি।
পর্ব ৫
স্বামিকে রেখে প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে পার্টিতে যাওয়া বিষয়টা এতো বিবেচনা করলোনা আখি। হাজার হলেও স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়াটা জরুরি। কিন্তু বিষয়টাকেও এতো জরুরি মনে করছেনা আখি। কারণ, আকাশকেতো সে স্বামী হিসেবে মানেই না, আবার অনুমতি?
পরদিন দুপুরে আসিফ চৌধুরির কাছে বললো,
- সন্ধায় একটু বাইরে যাবে, তার কলেজ বান্ধবিদের সাথে দেখা করতে।
- আসিফ চৌধুরিও বলে উঠে, সমস্যা নেই কিন্তু আকাশ দেলে ভালো হয়না?
- না বাবা, ওখানে শুধু আমরা মেয়ে ফ্রেন্ডই। আকাশ যাওয়ার দরকার নেই। তাকে বললে তো সে অনুমতিই দিবেনা।
- সে অনুমতি দিতে হবেনা আমিই দিচ্ছি অনুমতি, কিন্তু সাবধানে যাবে ওকে?
- হ্যা বাবা,
সন্ধায় আকাশ বাড়ি ফিরার আগেই আখি বের হয়ে যায় পার্টিতে জাওয়ার উদ্দেশ্যে। ওদিকে রাফিন অপেক্ষা করছে আখির জন্য।
রাফিনের কাছে এগিয়ে যায় আখি।
- হায় বেবি তুমি এডে গেছো? আকাশ আসেনিতো?
- না রাফিন, আকাশ এই বিষয়ে জানেওনা।
- ও গুড বেবি, কিন্তু এসব কি পরে এসেছো পার্টিতো। পার্টিতে কেও এসব ড্রেস পরে?
- তো কি পরবো? ওইসব ছোট ড্রেস?
- হ্যা,
- ইমপসিবল আমার ওইসব পরার কোনো অভ্যেস নেই।
- পরতে পরতেই তো অভ্যেস হবে, নাকি?
- আমি ওইসব পরতে পারবোনা।
- আচ্ছা কি আর করার, আসো।
আখি ভেতরে গিয়ে দেখে আজকের পার্টিটা আরো ঝাকঝমক পূর্ন। কিন্তু আগের তুলনায় লোকজন একেবারেই কম। যাক ভালোই হলো, বেশি লোকজনও আবার আখির ভালোলাগেনা। এতে আরো ঝামেলা বাড়ে।
লেখাঃ মেহেদী হাসান রিয়াত
পার্টি শুরু হলো অনেক আগেই। নতুন নতুন ক্যাপল দেখা যাচ্ছে আজ। একে অপরের সাথে নাচানাচিতে মগ্ন সকল ক্যাপলই।
রাফিন একটা ড্রিংস এর গ্লাস হাতে নিয়ে নাচতে নাচতে আখির হাতটা ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
- সবাইতো পার্টি ইনজয় করছে আমরা কেনো বসে আছি বেবি?
রাফিনের সাথে তাল মিলাচ্ছে আখিও। পার্টি চললো অনেক্ষন ধরে। অনেকেই চলে গেছে।
আখি বলে, - আচ্ছা বেবি আমার এখন যেতে হবে, আজতো একটু বেশিই করলাম।
- কি বেশি করলাম এখনো কিছুইতো করিনি।
- আচ্ছা বেবি টয়লেটটা কোন দিকে?
- এই সোজাগিয়ে ডান দিকে। (হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো রাফিন)
আখি বেড়িয়ে এসে দেখে, একটা মেয়ে তার কাছ থেকে বেদেয় নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো ব্যাপার না। অবাক করার বিষয় হলো মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে লিফ কিস দিচ্ছে রাফিন। - রাফিন….. (হুঙ্কার জনিত একটা আওয়াজ দিয়ে বলে উঠে রাফিন)
রাফিন একটা মুচকি হাসিতে মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে আখির কাছে এলো। - মেয়েটা কে রাফিন?
- ফ্রেন্ড?
- ফ্রেন্ড মানে, এটা আবার কেমন ফ্রেন্ড বিদায় দেওয়ার সময় লিফ কিস দিতে হয়?
- বাদ দাও বেবি।
- অনেক রাত হয়েছে আমি আসি। তোমার সাথে কাল কথা বলবো আমি।
পেছন থেকে রাফিন হাতটা চেপে ধরে টান দেয় আখিকে। - ওপ বেবি কোথায় যাচ্ছো?
- ওপ রাফিন ছারোতো বাসায় যাচ্ছি।
- ও আচ্ছা আচ্ছা, কিন্তু তুমি এভাবে চলে গেলে আমি কি শুধু শুধু এতগুলো টাকা লস দিলাম। এর বিনিময়ে আমারও তো কিছু পাওনা থাকতে পারে তাইনা।
- মানে, কি বলছো তুমি?
- সেটা আমার বলতে হবেনা, আই হোপ তুমি বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চাইছি।
- দেখো রাফিন সবসময় ফাজলামি ভালো লাগেনা। ক্লিয়ার করে বলো তুমি কি চাচ্ছো?
- ওকে একবারে ক্লিয়ার করে বলছি, তোমাকে আজকে রাতের জন্য আমার রক্ষিতা হতে হবে।
- হোয়াট, রাফিন যথেষ্ট হয়েছে।
- এখনো তো কিছুই হয়নি বেবি, , , , ,
- কি করছো রাফিন? রাফিন ছারো বলছি, , , , , , , ঠাস, , , তুমি এতো নোংরা জানলে আমি কখনোই তোমার সাথে রিলেশন করতামনা। বিয়ের জন্য তো রাজি হতামই না।
- তুই আমায় থাপ্পর মারলি? রাফিনকে থাপ্পর মারলি তুই? এর মাশুল তোকে আজ এই মুহুর্তেই দিতে হবে ভালো ভালো বলছিলাম কাজ হয়নি তাইনা? আর তোকে কে বিয়ে করছে? অন্য একটা ছেলের সাথে রাতের পর রাত থেকেছিস। আরে বাসি খাবারতো আমি ছুয়েও দেখিনা। কিন্তু তোর মতো বাসি খাবারটা একটু টেস্ট করতে ইচ্ছে করছিলো তাই দুই দুইবার পার্টি দিয়েছি। প্রথম বারতো আকাশ এসে ঝামেলা করে দিলো। এখন? ডাক তোর হিরুকে। এই খানের আসে পাসেও এখন কোনো লোক নেই তোকে বাচানোর মতো। শকুনের মতো চিড়ে চিরে খাবো তোকে আমি, কেও বাচাতেও আসবেনা। ভালো ভাবে বলেছিলাম শুনিসনি। এখন দেখ রাফিনকে থাপ্পর দেওয়ার পরিনাম কতো ভয়ানক। হা হা হা।
লেখাঃ মেহেদী হাসান রিয়াত
রাফিন একটা হাসি দিয়ে গায়ের জামাটা খুলতে খুলতে এগিয়ে যাচ্ছে আখির দিকে।
একহাত সামনে দিয়ে রাফিনকে থামানোর চেষ্টা করে এক পা একপা করে পিছুচ্ছে আখি।
- ছি ছি ছোট, দাদর সামনে এসব করতে বুঝি লজ্জা করেনা তোর। এই জন্যই কি তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করলাম? এই দিনটি দেখার জন্যই কি তোকে বড় করলাম? ছি ছি ছোট।
পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ শুনে একটু চমকে উঠে রাফিন। ছোট, দাদা, আমারতো কোনো ভাই নেই তাহলে? আবার বলছে কোলে পিঠে করে মানুষ করলো।
পেছনে তাকিয়ে দেখে কেও একজন। মিঠি মিঠি রঙিন আলোতে মুখটা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা তার। একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রাফিন,
— কেরে তুই?
- তোর দাদা। চিনতে পারছিসনা?
- দেখ যা বলবি সোজাসুজি বল, আমার সময় নষ্ট করলে আমি তোর জীবন নষ্ট করে দেবো।
- হা হা হা। আমায় মারবি তুই? তোর দাদকে মারবি? খুব বড় হয়ে গেছিস নারে?
- আকাশ? দেখ ভালোয় ভালোয় চলে যা বলছি এটা আমার আর আখির পার্সনাল বিষয়।
— ওপ রাফিন, তোকে আমি কি বলেছিলাম সেইদিন? কাওকে জোর করবিনা। আর ও এখনো তোর হয়নি, ও এই মুহুর্তেও আমার স্ত্রী।
- দেখ আকাশ আমি চাইনা তোর সাথে নতুন করে কোনো শত্রুতা হোক। আর তুইতো চার মাস পরে ওকে এমনিতেই ছেরে দিবে তাহলে?
- যখন আমি যানতে পারলাম আখির বয়ফ্রেন্ড তুই। তখনি আমার বুঝা হয়ে গিয়েছিলো আখি কতো একজন ভালো মানুষ বেছে নিয়েছে। তোর পেছনে সারাক্ষনই আমার লোক চলাফেরা করে।
তোর পাস্ট টু লাস্ট সকল ডিটেইল আমার কাছে আসে। আমি আখিকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। বেচারি বুঝতে চায়নি কেনো চায়নি জানিস? তোকে ভালোবাসে বলে, বিশ্বাস করে বলে। আর তুই সেই বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি?
- এতো কাহিনি করিস না আকাশ। পারলে এবার এখান থেকে জেন্ত বের হয়ে দেখা।
রাফিনের ইশারায় কয়েকজন লোক এসে আকাশের চারপাসটা ধিরে ধরলো।
আকাশ একটা মুচকি হাসি দিয়ে জামার হাতা পোল্ড করতে করতে বলে,
- মনে আছে, সেই কলেজ লাইফে একবার করেছিলাম, তাও তোর সাথে। যার কারণে প্রেন্সিপাল আমাদের কলেজ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলো। তার পর আর কখনো করা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে আবার করতে হবে।
আকাশ সকলের মাঝখান থেকে হেটে এসে আখির হাতটা ধরে সোজা বের হয়ে যাচ্ছে।
পেছন থেকে রাফিন লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে। - ওই শালা হিরু গিরি দেখাচ্ছে আর তোরা চেয়ে চেয়ে দেখছিস?
আকাশ একটু থেমে লোক গুলোকে উদ্দেশ্যা করে বলে উঠে, - ও এখনো বিষয়টা বুঝতে পারছেনা, বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আসো।
চোখে একটা সানগ্লাস লাগিয়ে আখির হাতটা ধরে সেখান থেকে বের হয়ে আসে আকাশ। গাড়িতে উঠে আখিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে সে। আখি আজ কোনো উত্তর করছে না। চুপচাপ বসে আছে গাড়িতে।
নিরবতা ভেঙে আকাশ বলে উঠে,
- তোময়য় স্বাধিনতা দেওয়ার অর্থ এই নয় কাওকে বলা ছারা নিজের ইচ্ছে মতো কোনো ফাদে গিয়ে পা দিবে। রাফিনের সাথে থাকা লোকক গুলো আমারই লোক।
কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে আখি।
হটাৎ গাড়ি ব্রেক চাপায় চমকে উঠে আখি। সামনে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন লোক দাড়িয়ে রাস্তা আটকে রেখেছে তাদের? কিন্তু এরা কারা?
পর্ব ৬
গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে ঘরে চলে আসে আকাশ। আখি ধিরে ধিরে ঘরের দিকে আসছে। আকাশের অবাধ্য হলেও ঘরে আসতে কেমন একটা নার্ভাস ফিল করছে সে।
আকাশকে একা ঘরে আসতে দেখে আসিফ চৌধুরি বলে উঠে,
- আকাশ তুই এসেছিস? আখিকে একটা ফোন দিয়ে দেখতো কোথায় আছে? বললো বান্ধবিদের সাথে দেখা করতে গেছে, কিন্তু এখনো আসেনি। কোনো সমস্যা হলোনা তো আবার?
আকাশ টেবিলে হাত বারিয়ে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,
- ফোন করতে হবেনা বাবা, ও এসে গেছে।
- কোথায়?
- ওইতো মহারানি। (আখি ঘরে প্রবেশ করতেই তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠে আকাশ)
- কিরে মা এতো দেরি হলো যে?
- পাস থেকে আকাশ বলে উঠে, ও এতোক্ষন আমার সাথেই ছিলো বাবা, আসার পথে একটা সমস্যা হয়েছিলো তাই।
- সমস্যা? কি সমস্যা?
- না বাবা, মাঝ পথে কিছু ছিনতাই কারির কবলে পরেছিলাম।
- ছিনতাই কারি? তোদের কিছু হয়নিতো? তোরা ঠিক আছিসতো?
- হ্যা বাবা, ফোনটা আর কিছু টাকা নিয়ে গেছে এই আরকি। পাতি বেসি বড় ছিনতাইকারি নয়।
- তোদের কিছু হয়নি এটাই অনেক। যা তোরা ফ্রেস হয়ে আয় সবাই মিলে একসাথে খেতে বসি।
রাতের খাবার শেষে ঘুমুনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আখি। দুই পা ফ্লোড়ে ছারিয়ে সোফায় বসে আছে আকাশ। আখি একটু একটু আড় চোখে তাকাচ্ছে আকাশের দিকে।
আকাশ আখিকে ডেকে নিজের পাসে এসে বসায়। আখিও আজ কোনো জেদ না করেই আকাশের পাসে এসে বসে।
- আখি একটা কথা বলোতো, আমাকে কি তোমার বিশ্বাস হয়? মানপ হলো, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো?
- মাথাটা নারিয়ে হ্যা সুচক জবাব দিলো আখি।
- আমি তোমাকে কথা দিয়েছি সব কিছু তোমার ইচ্ছেতেই হবে। হ্যা তোমার ইচ্ছাই হচ্ছে সবকিছু। আজ যা হয়েছে সব কিছুই হয়েছে তোমার ইচ্ছার কারণেই। তোমাকে আমি কতো বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে রাফিন ভালো ছেলে না। কিন্তু তুমি?
- আফসোস, মুখ দেখে ভালোমন্দ বিচার করা যায়না। যদি যানতাম রাফিনের চরিত্র এতোটা নোংড়া তাহলে কখনোই, , , , , ( এটা বলেই কেদে উঠে আখি) রাফিন আমায় ঠকিয়েছে। ও একটা খারাপ লোক, পতারক, সুজুগবাজ।
- এই একধম কাদবেনা বলে দিচ্ছি আমার দিকে তাকাও।
আখি মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে।
- চোখের পানি মুছে নাও।
আকাশ এমন ভাবে বলছে যেনো সে কোনো বাচ্চার কান্না থামাচ্ছে। - আমাকে তুমি স্বামী ভাবোনা এটা কোনো ব্যাপারনা। আমিও তোমাকে স্ত্রী ভাবিনা। কিন্তু আমরা চাইলে বন্ধু হতে পারি। খুব ভালো বন্ধু, নিজের বন্ধু ভাবতে পারো আমাকে। নিস্বার্থ বন্ধু। যে কোনো স্বার্থ ছারাই তোমার পাসে থাকবে। বিপদে নিজের জান দিয়প হলেও তোমায় বাচিয়ে নিবে। হবে আমার বন্ধু?
আখি এবার চোখের পানি মুছে মা নারিয়ে হ্যা সুচক জবাব দেয়।
আকাশ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে, - যাও ঘুমিয়ে পর বন্ধু।
সকালে কিচেনে নাস্তা তৈরি করছে আখি। তাকে সব শিখিয়ে দিচ্ছে আকাশ। আকাশের কাছে রান্না শিখতে ভালোই লাগছে আখির।
দুপুরের সময়ও রান্না করছে আখি আর তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে আকাশ।
হটাৎই আও করে একটা শব্দ করে উঠে আখি। হাত কেটে ফেলেছে সে। আকাশ আঙুলটা মুখে নিয়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
- দেখে শুনে কাজ করবেনা একটু। প্রথম দিনই এই অবস্থা? চলো রুমে চলো আর রান্না করতে হবেনা তোমাকে।
অনেক দিন কেটে গেলো আকাশের বাড়িতে। রুমে বসে আছে আখি। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে তার।
হাতে নিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো মায়ের নামটা।
মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বললো আখি। অনেকদিন হলো মাকে দেখেনি সে। মা বললো দু, দিনের জন্য ঘুরে আসতে সেখান থেকে।
রাখের বেলায় খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে সকলে।
আকাশ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
- বাবা, একটা কথা বলবো?
- বল।
- আখিতো অনেকদিন ধরে অভিমান করে মায়ের বাসায় যায়নি। মাকেও অনেকদিন দেখেনি সে। এখন মা নিজেই বলছে দু, দিন ঘুরে আসতে তার বাড়ি থেকে।
- ভালোই তো, কাল যা তাহলে।
- আমি যাবোনা বাবা শুধু আখিই যাবে।
- তুই যাবিনা কেনো?
- আমি গিয়ে তাকে দিয়ে আসবো।
পরদিন বিকেলে আখি রওনা দিলো আকাশের সাথে। গাড়ি ব্রেক কষলো আখির বাড়ির সামনে এসেই। গাড়িতেকে নেমে আখি পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। পেছন ফিরে হাত নারিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো আকাশের দিকে চেয়ে। গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো আকাশ। ব্যাপারটা উপর থেকে লক্ষ করছে আখির মা।
ভেতরে গিয়ে মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আখি। অনিচ্ছার শর্তেও অনেক দিন মাকে ছেরে থাকতে হয়েছে তাকে।
মায়ের কাছে দুদিন খুব হাসিখুশি ভাবেই থাকে সে। সোফায় বসে কফির মগ হাতে নিয়ে গল্প করছে মা মেয়ে দুজন।
- আখি সত্যি করে একটা কথা বলবি?
- হ্যা মা বলো।
- তুই কি আকাশের কোনো দুর্বলতা অনুভব করছিস?
- না মা, এই ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবোনা।
- যাই হোক, যেই ছেলে আমাকে বন্ধি করে তোকে জোর করে বিয়ে করতে পারে। তাকে আমি কিছুতেই আমার মেয়ের স্বামী বলে স্বীকৃতি দিতে পারবোনা। তোদের ডিবোর্সটা হয়ে গেলে, আমি আমার পছন্দ মতো ছেলপর সাথে তোর বিয়ে দিবো। এটা মনে রাখিস আকাশের প্রতি যেনো তোর কোনো দুর্বলতা না আসে।
মাথা নিচু করে হ্যা সূচক জবাব দিলো আখি।
মায়ের বাসায় কয়েকদিন থেকে সেখান আবার ফিরে যাচ্ছে আখি। আকাশ গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে গেটের বাইরে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে, আখি ভাবনার সগরে ডুবে আছে। মা বলেছে আকাশকে সে মেনে নিতে পারবেনা। আর মাত্র অল্পকিছুদন হয়তো আকাশের বাড়িতে আমার ঠাই। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো দুজন। ভাবতে ভাবতে কখন বাড়ি পৌছে গেছে বুঝতেও পারেনি আখি।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই আসিফ সাহেবের মুখে স্পস্ট হাসি দেখতে পায় আখি। এটাও যেনো একটা মায়া লাগানোর মতো হাসি। কিন্তু এই মায়াতে নিজেকে না আটকানোটাই ভালো। পরে ছেরে যেতে আবার কষ্ট হবে।
পর্ব ৭
হয়তো আখির সাথে আকাশের ডিবোর্সের সময় ঘনিয়ে গেছে। অবশন ঘটতে যাচ্ছে তাদের দুজনার সেই কন্টাক্ট ম্যারিজের। আসিফ চৌধুরির শরিরের অবস্থাও দিন দিন অবনতি ঘটছে।
মাঝে মাঝে আসিফ চৌধুরি গলা দিয়ে ছুটছে অঝরে রক্তের শোত।
দিন যত যাচ্ছে ততো বেশি কাহিল হয়ে পরছে আসিফ চৌধুরি।
হটাৎ আসিফ আচৌধুরির অসুস্থতা তীব্র হয়ে উঠতেই, তাকে হসপিটালে ভর্তি করে আকাশ।
কিন্তু ডাক্তারও আসিফ চৌধুরির কোনো নিশ্চয়তা দিতে অক্ষম।
আকাশে ডাক্তার শুধু এটাই বলে, উপরওয়ালাকে ডাকতে। তাদের আর কিছুই করার নেই। সময় যে ধিরে ধিরে ফুরিয়ে এসেছে আসিফ চৌধুরির।
ভেতরে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে আসিফ চৌধুরিকে।
চোখ দিয়ে টপটটপ করে আকাশের গড়িয়ে পরছে পানি। কিন্তু, পুরু দেহটাই আজ নিরবতায় ঘেরা।
ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর, জীবনে চলার পথে তাকে সাপের্ট করে গেছে তার বাবা। তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় সাপোর্টের নামই হলো বাবা। তার সেই সাপোর্ট টাও হারিয়ে ফেললে খুবই যে একা হয়ে যাবে সে। বাবা আর থাকবেনা এটা ভাবতেই বুকটা আতকে উঠছে আকাশের। বাবা বিদেয় নেওয়া মাত্রই আখি চলে যাবে তার নিজের পথে। একলা জীবনে পাসে দাড়িয়ে সাপোর্ট দেওয়ার মতো এমন কোনো মানুষ থাকবেনা তার।
আকাশের দৃষ্টির অগোচরে হাত দিয়ে বারবার চোখের পানি লুকাচ্ছে আখি। কোনো দিন বাবার স্নেহ না পাওয়া সেই আখি খুজে পেয়েছিলো এক সত্যিকারের বাবাকে। মাত্র তিন-চার মাসের মাঝেই হারিয়ে ফেলছে তার সেই বাবার মতো মানুষটা কে।
হাতের ইশারায় তাদের দুজনকে ডাকছে আসিফ চৌধুরি। জোর পূর্বক চোখের পানি লুকিয়ে তার কাছে গিয়ে বসে দুজন।
মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেললো আসিফ চৌধুরি। আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
- আকাশ, বাবা আমার। আমি আর কিছুক্ষন পরই বিদায় নিবো তোদের কাছ থেকে…….
- না বাবা এমনটা বলোনা।
- আমার সময় আর বেশিক্ষন নেই, দুই একটা কথা বলি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
- আমি শুনছি বাবা,
- আখি কিন্তু খুব ভালো মেয়ে, আমি চলে যাওয়ার পর কনোদিন কখনো কষ্ট দিসনা তাকে। সংসার একদিক দিয়ে খুব সহজ অপর দিক দিয়ে খুবই কঠিন। এই দুই প্রান্তের মাঝে বিশ্বাসটাই সব। সন্দেহটা সম্পর্ক বিচ্ছেদের মুল কারণ। কখনো একে অপরকে সন্দেহ করবিনা। কোনো বিষয় ঝাপসা থাকলে তা দুজনে একত্রে কথা বলে জেনে নিবি এর সত্যতা কতটুকু? সম্পর্কটা এমনই রাখবি যেনো চোখ বন্ধ করে একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারিস। আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিস তো?
- চোখ মুছে আকাশ বলে উঠে, হ্যা বাবা শুনছি।
- আর হ্যা, আখি মা আমার। আমায় কথা দে আমার এই পাগল ছেলেটাকে তুই কখনো ছেরে যাবিনা?
আখি বাবার হাতটা ধরে আকাশের দিকে জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যেনো এটা সে আকাশের মুখ থেকেই শুনতে চায়। আকাশের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার বাবার দিকে তাকায় আখি। - সব সময় একে অপরের ছায়া হয়ে থাকবি। আমার যে এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছেরে। তোদের মা ডাকছে আমাকে। চলে যাচ্ছি আমি তোর মায়ের কাছেদুজ সংসার জীবনে সুখি হ এটাই প্রত্যাশা করি আমি।
কাদতে কাদতে আকাশ হটাৎ খেয়াল করল বাবা আর কথা বলছেনা। নিথর হয়ে গেছে সে। স্তব্দতায় ঘিরে ফেলেছে তাকে। এক গাদা ঘুম এসে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে যা আর জাগ্রিত হওয়ার মতো না।
বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কেদে উঠে আকাশ। একজন ডাক্তার চোখ দুটু বন্ধ করে পুরুটা দেহ ঢেকে দিলো তার। সে এখন এক গন্তব্যের পথ যাত্রি। সেই পথে সকলকেই যাত্রি হতে হবে এই কথাটা চিরন্তর সত্য।
বেলকনিতে ফ্লোরে বসে হেলান দিয়ে বসে আনমনায় এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। মনে মনে এখনো কেদে যাচ্ছে সে। আর তা চোখ দিয়ে প্রকাশ হচ্ছেনা। কারণ সেই চোখের পানিও মনে হয় শুকিয়ে গেছে। তিন দিন হয়ে গেলো বাবা তাদের সাথে নেই। এই অবস্থায় তাকে ছেরে যেতে চাইছেনা আখিও।
এই সময় আকাশের পাসে কেও থাকাটা একান্ত প্রয়োজন।
আখির মা বারবার ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। কিন্তু আখি বার বার বুঝানোর চেষ্টা করছে তার মাকে। যে সে আকাশের সাথে আর কিছুদিন থাকাটা প্রয়োজন।
আখির মা ও এই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছেনা। তার কথা যেই ছেলে তাদের সাথে এতো বড় অন্যায় করেছে তাকে এতো দিন হেল্প করেছে এটাই অনেক।
মায়ের কাছ থেকে দশ দিনের সময় চেয়ে নেয় আখি। এই পাঁচ দিনে যতটুকু পারে আকাশকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে সে আগের অবস্থায়।
রাত শেষ হলে দিনের আলো, সূর্য ডুবলে আধার। আকাশের কাছে সবই এখন সমান্তরাল। বাবা হারা শুন্যতা অনুভবে মগ্ন হয়ে আছে সে।
হাতে খাবার বিয়ে আকাশের কাছে গেলো আখি। হাতটা আকাশের দিকে বাড়িতে দেয় আখি খাবার সহ। আকাশ তার হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে সরিয়ে উঠে সেখান থেকে উঠে যায়।
আখি বুঝতে পারে সে এখন চলে গেলে হয়তো বেখেয়ালিপনায়ই মারা যাবে আকাশ। নিজের প্রতি কোনো যত্ন নিবেনা আকাশ।
নয় দিন চলে গেলো,
আকাশ এখন মোটামুটি ঠিক আগের মতোই। তবুও প্রতি নিয়তো মিস করে যাচ্ছে বাবাকে।
রাতের আধারে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আকাশ। হাতে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট হয়ে উঠলেই। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মামার ফোন। এর আগেও কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো মামা। তার মামা পরিবার নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া থাকে।
কিছুক্ষন কথা বলে মামার সাথে আকাশ।
- মেয়েটা কি চলে গেছে আকাশ?
- কোন মেয়েটা মামা?
- ওই যে বললি, তোর বাবাকে খুশি করতে বিয়ে করেছিস তাকে।
— কাল চলে যাবে। ডিবোর্স পেপারও রেডি। - তাহলে তো তুই খুব একা হয়ে যাবি।
- কিছু না বলে একটা দির্ঘশ্বাস নিলো আকাশ।
— তুই এক কাজ কর। সব কিছু রেডি কর। ইউ কেন কাম টু মি ইজ অষ্ট্রেলিয়া।
- ইয়াস মামা। আই ফিল ভেরি আনবারএবল হেয়ার মামা, আই ওইল কাম টু ইউ অষ্ট্রেলিয়া।
- ওকে। তারাতারি চলে আয় তাহলে দেখবি মনটা ফ্রেস হয়ে যাবে।
পরদিন আখির মা নিজে আসে আকাশের বাড়িতে, আখিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আকাশ আখির হাতে ডিবোর্স পেপারটা দিয়ে বলে,
- এই নাও পেপার। আমি সাইন করে দিয়েছি। এখন তুমি সাইন করে দিলেই আমাদের মাঝে আর কিচ্ছু থাকবেনা। দুজনার মাঝে তৈরি হয়ে যাবে একটা বিশাল দেয়াল যা চাইলেও। আর টপকে যাওয়া সম্ভব হবেনা।
আখির হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছ তার মা। আখি একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আরেকবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। দেখতে দেখতে আকাশের চোখের আড়াল হয়ে গেলো আখি। গাড়িতে উঠা অব্দি বাড়ির দিকে চেয়ে আছে আখি এই ভেবে আকাশ বাজ পাখির মতো এসে তাকে নিয়ে যাবে তার মায়ের কাছ থেকে। কিন্তু আকাশ আর এলেনা। সোফায় বসে মুখে হাত দিয়ে চুপি চুপি কেদে যাচ্ছে সে। সে চাইলেও আর যেতে পারবেনা। ইচ্ছেটা যে আখিরই।
আখি গাড়িতে বসে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। গাড়ি যতই এগুচ্ছে ততোই আকাশের থেকে দুরুত্বটা বেরে যাচ্ছে আখির। চাইলে কি এই দুরুত্বের অবসন ঘটানো যায় না?
পর্ব ৮ওশেষ
আখি চলে গেছে আজ দু, দিন পার হয়ে গেলো। বাবা হারিয়ে আকাশের মন জুরে যেই একটা শুন্তা গরে উঠেছিলো, সেটা আখি কিছুটা পূর্ন করে তুলেছিলো। সেই আখিও শুন্যতাটা আরো গভির করে দিয়ে চলে গেলো তাকে ছেরে।
রাত তখন ১টা বেজে ৫০ মিনিট। ঘড়ির কাটা টা ঘুরছে আপন গতিতে। একটা নিস্তব্দ কবর মনে হচ্ছে এই বাড়িটাকে। ফিন ফিনে নিরবতা বিরাজ করছে সমস্ত ঘর জুরে।
আগামি কাল আকাশের প্লাইট। মামার কাছে চলে যাচ্ছে সে। হয়তো মন কিছুটা ফ্রেস হবে। তবে কি সব কিছু ভুলে যেতে পারবে সে?
গত চার মাসে ধটে গেছে অনেক কিছুই। তার অন্যতম চরিত্র হচ্ছে আখি।
আচ্ছা যদি আখিকে ফিরিয়ে আনতে যাই তাহলে কি সে আসবে? নাকি ফিরিয়ে দিবে? নাকি আমার সাথে কথাই বলবেনা?
হয়তো সে ফিরবেনা, সে যদি আমাকে চাইতো তাহলে চলে যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত একবার হলেও আমাকে বলতে পারতো। তাকে ছেরে দিয়ে ছিলাম তার তার অর্থ এই নয় তাকে চলে যেতে বলেছি। সে চাইলেতো আমার হাতটা ধরতে পারতো। সে চলে গেছে করণ, ইচ্ছেটা যে তারই।
ভুলতে পারবো কি তাকে আমি? নাকি তার সৃতি গুলো বার বার মনে জাগরিত হয়ল এলোমেলো করে দিবে মনটাকে?
বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসে আছে আকাশ। মাথা জুরে চক্কর কাটছে নানান চিন্তা। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আখিকে। নিজের অজান্তেই মনে হয় প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেলেছি তাকে।
ঘুম আসছেনা কিছুতেই, কিচেনে গিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে বেলকনিতে দাড়ায় আকাশ। কাপে চুমুক দিয়েই তাকিয়ল থাকে বাইরে জোৎস্নায় ঘেরা সুন্দর প্রকৃতিটার দিকে।
সকালে নিজের প্রয়োজনিয় সকল কিছু পেক করছে আকাশ। এর মাঝে মামার সাথে কথা হয়েছে দুইবার।
ফোনটা হাতে নিয়ে এক দৃস্টিতে চেয়ে আছে আখির ছবিটার দিকে। ভাবছে যাওয়ার আগে একবার ফোন করে জানাবে আখিকে। কি মনে করে আবার ফোনটা রেখে দিলো।
এয়ার পোর্টে অনেক্ষন যাবৎ বসে আছে আকাশ। হয়তো একটু পরেই চলে যাবে সে এই মাতৃভুমিকে ছেরে। বোরখা পরে একটা মেয়ে এসে বসে আকাশের পাসটায়। একটু আড় চোখে ওর দিকে তাকায় আকাশ। মুখে হিজাব পরা একটা মেয়ে।
পাস থেকে মেয়েটা হাত নাড়িয়ে বলে উঠলো,
- হাই, আমি মেঘ।
একটা হাসি টেনে আকাশ বলে উঠে,
— আমি আকাশ।
- বাহ্ আপনার নামের সাথেতো আমার নামের দারুন মিল। আকাশ আর মেঘ।
- আকাশ আর মেঘের মাঝে মিলনটা এতো গভির নয়। কারণ মেঘ যে আকাশের বুকে স্থির থাকেনা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যায় অন্য প্রান্তে।
- অন্য প্রান্তটার নামও তো আকাশ তাইনা?
এবার আর কোনো রেস্পন্স দিলোনা আকাশ। পাস থেকে মেয়েটা বলে উঠে, - কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
কিছুক্ষন স্থির থেকে আকাশ বলে উঠে, অস্ট্রেলিয়া। - তাই? আমিও তো অস্ট্রেলিয়াই যাচ্ছি।
আকাশ মেয়েটার দিকে এবার ভালো করে তাকায়। অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে এই অবস্থায়। - আপনি কি ম্যারিড?
- আপনার জানাটা কি খুব জরুরি?
- আপনার সমস্যা হলে বলার দরকার নেই থাক।
- ছিলাম,
- ছিলাম মানে কি?
- চলে গেছে। ডিবোর্স
- ও যদি সে আবার ফিরে আসতে চায়?
- আসবেনা?
- যদি আসেও।
এবার চুপ করে আছে আকাশ।
- আপনাকে দেখে মনে হয়, আপনি এখনো তাকে ভুলতে পারেন নি।
- পারবো কিনা তাও যানিনা।
- আচ্ছা আপনাদের ডিবোর্সের কারণ টা যানতে পারি?
- আজব তো, আপনি মনে হয় বিয়ের জন্য আমার ইন্টারবিউ নিতে আসছেন? আর আপনার সাথে আমি এতো কিছু শেয়ার করছি কেনো?
- ওহ্ সরি, আপনি মাইন্ড করবেন বুঝতে পারিনি। লাস্ট একটা প্রশ্ন করি?
আকাশ আড় চোখে তাকিয়ে বললো, - কি প্রশ্ন?
- আপনি যে চলে যাচ্ছেন সে কি যানে?
- হয়তো না, তারপর থেকে তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।
- ওহ্ আচ্ছা। মন থেকে ভালোবেসেছিলেন কি তাকে?
একটা দির্ঘশ্বাস নিয়ে আকাশ বলে উঠে, - চলুন সময় হয়ে গেছে।
আকাশ চলে যেতেই পেছন থেকে হাতটা চেপে ধরে মেয়েটা। হটাৎ দাড়িয়েই আকাশ একবার মেয়েটার দিকে তাকায় আরেকবার হাতের দিকে।
আকাশ একটু অদ্ভুদ ভাবে বলে উঠে,
- আপনার সাহসের প্রশংসা করতে হবে। প্রথমে দেখে ভেবেছিলাম, নিশ্চই কোনো ভালো ঘরের মেয়ে হবেন। এখনতো মনে হয় পুরুটাই ঝামেলা। বুঝছি আমি আপনার মতলবটা কি? এই নিন এই টাকাটা নিয়ে বিদায় হন।
- টাকাতে কি সব কিছু পরিমাপ করা যায়?
- আপনার সাথে আমার কিসের এতো সম্পর্ক যা টাকাতে পরিমাপ করা যাবেনা?
মেয়েটা এবার গম্ভির গলায় বলে উঠে, - আপনি কি সত্যিই চলে যাবেন?
- না, এখানে সিনেমা চলছে। শুটিং করতে এসেছি। এখন টাকাটা নিয়ে তারাতারি বিদেয় হনতো।
- তো শুটিংয়ে এসে হিরুইনকে এভাবে অপমান করার মানে কি?
- কেনো আপনি যদি হিরু হন, আমিতো হিরুইন ই তাইনা?
- আখি তুমি?
- কেনো অবাক হচ্ছেন?
- কিন্তু তোমার কথা বলার ধরনটা এতো চেন্জ হয়ে গেলো?
- হা হা হা, আমি পারি।
- ভালো কেনো এসেছো এখানে। সবতো শেষ হয়েই গেলো।
- এই শেষটা কি আবার শুরু হতে পারেনা?
- মানে?
- আমরা কি রিয়েল লাইফে হিরু-হিরুইন হতে পারিনা? এই দেখো ডিবোর্স পেপারটা, আমি এখনো সাইন করিনি। শুধু আপনার একটা উত্তরের আশায়।
- কি উত্তর?
- ভালোবাসেন আমায়?
- সন্দেহ আছে?
- আপনি যেভাবে ছেরে চলে যাচ্ছেন তাতে সন্দেহ করাটাই সাভাবিক।
- তুমি মেঘ?
- আমি নিজেই রেখেছি নামটা। আকাশের মেঘ যে চাইলেও আকাশের বুক থেকে কোথাও পালাতে পারবেনা।
( বেলকনিতে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আখি। হটাৎ করে ফোনে কেও একজন বলে উঠলো, আকাশ নাকি চলে যাচ্ছে আজ। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে আখির। একটা সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকেও হারিয়ে ফেলছে সে। তার মা দটা কপির কাপ হাতি নিয়প বেলকনিতে আসতেই দেখে প্লোড়ে বসে হেলান দিয়ে নিরবে চখের জল ফেলছে আখি।
- কিরে মা কি হয়েছে তোর?
- মা, কাওকে ভালোবেসে ফেলাটা কি অন্যায়?
- অন্যায় না, যদি সে ভালোবাসার যোগ্য হয়।
- তাহলে আকাশ। সে না আমি নিজেই তার অজোগ্য। তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা হয়তো আমার নাই। এই চার মাসে, এক মুহুর্তের জন্যও আমায় ছুয়ে দেখেনি আকাশ। সবসময় আমার ইচ্ছেটাকেই প্রাধান্ন দিয়েছে আমি কি চাই। যার চোখে নেই কোনো রাফিনের মতো বিশ্বাস ঘাতকতার ছাপ।
বলো তো মা, কয়জন নারিই একজন সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে? আবার কয়জন ছেলেই বা একটা মেয়েকে প্রকৃত ভাবে ভালোবাসতে জানে? এমন একটা ছেলে কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না মা তুমিই বলো? তোমার চোখে ও যাইহোক আমার চোখে ও একজন প্রকৃত পুরুষ। আর আমি এমন একটা প্রকৃত পুরুষকেই আমার জীবনে চেয়েছিলাম। আর তা পেয়েও আমি ধরে রাখতে পারছিনা।
- তুই যদি আকাশের সাথে সুখি হস এতে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমিতো চাই তুই সব সময়ই সুখে থাক।
- আকাশ অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে মা।
- তুই তাকে ফিরিয়ে আন।
- সত্যি মা যাবো?
- তোকেইতো ফিরিয়ে আনতে হবে তাইনা?)
আখি লুকিয়ে আছে আকাশের বাহুডোরে। এয়ারপোর্টে কতই না লোকজন তবুও যেনো আজ সকল লজ্জাই হার মেনে গেছে তার ভালোবাসার কাছে।
- এখন থেকে আপনাকে আমার সকল ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।
- ইচ্ছেটা তোমারই। আগলে রাখবে নাকি আবার ছেকা দিবে।
- না কক্ষনো ছেরে যাবোনা এই প্রমিস। আজ থেকে শুধু আমার ইচ্ছেটা উদ্ধে থাকবেনা, তোমার ইচ্ছেটাকেও প্রাধান্য দেওয়া হবে।
- আর আমার ইচ্ছে হলো তুই এখন যেভাবে তুমি করে বললে, সারা জীবন এমনই ডেকো। গভির একটা তৃপ্তি খুজে পাওয়া যায় এর মাঝে।
লেখা – মেহেদী হাসান রিয়াদ
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ইচ্ছেটা তোমারই – নতুন প্রেমের গল্প”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – ইচ্ছেটা তোমারই – একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প (১ম খণ্ড)