অবৈধ প্রেম – পর্ব ২ | নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প: বাউন্ডুলে যে ছেলে আমি নিজের খেয়াল রাখতাম না, আজ কিনা একজনের সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়েছি। ভালোবাসার মোহে হারিয়ে গিয়ে কেমন করে যেন কি হয়ে গেল! এখন ভয় হয় তাকে হারানোর, আমি কি পারব সবকিছু ঠিক করতে? দায়িত্ব নিতে?
বেদনার জীবন
হঠাৎ লিজার ফোনটা বেজে উঠায় লিজার ভাবনায় ছেদ পরে।
ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন এর দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে ওঠে লিজার। কারণ ফোনটা রিয়াত করেছে।
লিজা তাড়াহুড়ো করে ফোনটা তুললো।
লিজাঃ হ্য হ্যা হ্য হ্যালো রিয়াত?
রিয়াতঃ হ্যা বলো লিজা।
লিজাঃ তুমি কোথায় রিয়াত? বাড়ির সবাই তোমাকে নিয়ে কতটা টেনশনে আছে। প্লিজ রিয়াত চলে আসো।
রিয়াতঃ তুমি কি কিছু বুঝো না নাকি? আমি তোমার জন্য বাড়ি আসছি না! আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আর তাকে নিয়েই থাকতে চাই।
লিজাঃ রিয়াত একদম মিথ্যা বলবা না?
রিয়াতঃ আজব! তোমার সাথে আমি মিথ্যা কেন বলবো? আজব!
লিজাঃ কারণ আমি আমার রিয়াতকে চিনি!
রিয়াতঃ তাহলে তুমি ভুল চিনেছো! আমি বাবা মাকে বলে দিয়েছি যে তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর আমি শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। কবে ফিরবো তা জানিনা। রাখছি!
লিজাঃ রিয়াত শোনো?
রিয়াতঃ শোন লিজা! নিজের খেয়াল রেখো। ভালো থেকো!
এই বলে রিয়াত ফোনটা কেটে দিলো।
এক দৃষ্টিতে লিজা ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইলো। আর ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছে ভালো থেকো। নিজের কষ্টটা আটকাতে না পেরে জোড়ে একটা চিৎকার দিলো। লিজার চিৎকার শুনে ওর বাবা মা তাড়াতাড়ি ওর কাছে এলো। ওর মা লিজাকে ধরে বলল,
লিজার মাঃ কি হয়েছে মা? কাঁদছিস কেন? বল মা?
লিজাঃ মা আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ও আমায় ভালো থাকতে বলেছে। কিভাবে ভালো থাকবো আমি মা? কিভাবে?
আর কোন কথা বলছে না লিজা। শুধু মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। ওর বাবা মাও কান্না করছে। কোন বাবা মাই নিজের মেয়ের এমন অবস্থা দেখতে পারবে না। সারাটা দিন সারা রাত লিজা নিজের রুমে বসে কান্না করলো। শত চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে পারছে না। মনের মাঝে কষ্টটা এমন ভাবে আটকে গেছে যে কিছু ভাবার মত ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।
ভালোবাসার বিশ্বাস
পরের দিন সকালবেলা রিয়াতের বাবা-মা এলো।
লিজার মা তাদের অনেক কথা শুনালেন। লিজার বাবা লিজার মাকে চুপ করতে বললেন। আর বললেন,
লিজার বাবাঃ এতে তাদের কোন দোষ নাই। তারা তো রিয়াতকে এসব করতে বলেনি!
লিজার মা কিছুটা হতাশ হয়ে বললেন,
লিজার মাঃ সেটা আমি বুঝি? কিন্তু আমাদের মেয়ের জীবনটা তো নষ্ট হয়ে গেলো। লিজার এখন কি হবে?
রিয়াতের বাবা তাকে ভরসা দিয়ে বলল,
রিয়াতের বাবাঃ দেখুন, সে বিষয়েই আমরা কথা বলতে এসেছি! রিপা তুই লিজাকে ডেকে আনতো।
রিপা লিজার রুমে গিয়ে দেখে লিজা নিচে বসে বসে কান্না করছে। সারা ঘরময় শুধু রিয়াতের ছবি ছড়ানো। রিপা লিজার সামনে হাত জোড় করে বলল,
রিপাঃ আমাকে মাফ করে দে লিজা!
লিজাঃ কেন? তুই কী করেছিস?
রিপাঃ আমি যদি ভাইয়াকে কলেজে নিয়ে না যেতাম, তবে তোদের কাহীনি এতদূর পর্যন্ত গড়াতো। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে, রিয়াত ভাইয়া আমার রিয়াত ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে এমন করেছে। যে, ভাইয়া সবসময় মেয়েদের সম্মান করতো সে এমটা করবে তা যেনো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে!
লিজাঃ নারে তোরা ভুল বুঝছিস রিয়াতকে ? আমার মন এখনো এটা মানতে নারাজ যে রিয়াত আমাকে ধোকা দিয়েছে!
রিপাঃ লিজা বিশ্বাস ভালো কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস ভালো না লিজা।
লিজাঃ এ বিশ্বাসেই তো সংসার চলে।
রিপাঃ ভাইয়াকে বাবা বলেছে ও যেনো বাড়ির চারপাশেও না আসে। ওর মত ছেলে তার লাগবে না!
লিজাঃ আমি জানি রিয়াত আসবে!
রিপাঃ পাগলামী করিসনা লিজা? একটু স্বাভাবিক হবার চেষ্টা কর?
লিজাঃ পাগলামী না রিপা, বিশ্বাস আর ভরশা। জানিস, তোর ভাইয়া কাল আমাকে শেষ কী কথা বলেছে?
রিপাঃ কী?
লিজাঃ নিজের খেয়াল রেখো। ভালো থেকো।
রিপাঃ সেটা হয়তো এমনিতেই বলেছে।
লিজাঃ জানিস, আমাদের বিয়ের বয়স ছয় মাস কিন্তু রিলেশনের বয়স আট মাস। এই আট মাসে যখনই আমরা কথা বলতাম, দেখা করতাম তখনই রিয়াত আমাকে বলতো নিজের খেয়াল রেখো। আই লাভ ইউ। কিন্তু ভালো থেকো কথাটি কখনো বলেনি।
রিপাঃ তাতে কী বুঝায় ?
লিজাঃ জানিস তোর ভাইয়াকে আমি একবার বলেছিলাম ভালো থেকো। তখন ও আমার ওপর রাগ করেছিলো। যখন আমি রাগের কারণ জানতে চাইলাম তখন বললো যখন কেউ কারো থেকে অনেক দূরে যায় কিন্তু সে সবসময় তার মনের মধ্যে গেঁথে থাকে তখন বলে ভালো থেকো।
আর আমি তোমার কাছ থেকে কখনো দূরে যাবো না। আর যদি কোন কারণে যাওয়া লাগে তখন তোমায় বলবো ভালো থেকো। কারণ তখন তুমি আমার থেকে দূরে থাকবে, কিন্তু মন থেকে দূরে নয়।
অভিভাবকদের সহানুভূতি
আমার মনে হয় রিয়াতের কোন বিপদ নয়তো কোন বিশেষ কারণে ও আমাদের কাছে আসতে পারেছে না।
রিপাঃ সবটা তোর মনের ভুল ধারনা। ভাইয়ার জন্য তুই পাগল হয়ে গেছিস।
লিজাঃ সে তো কবে থেকেই…..
রিপাঃ বাদ দে ওসব কথা। বাইরে সবাই তোকে ডাকছে। চল।
লিজাঃ হুম।
লিজা ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারছে না। দাঁড়াতে গিয়ে আবার দপ করে বসে পড়লো। কী করে দাড়াবে কাল থেকে ওকে যে কেউ কিছু খাওয়াতে পারেনি। লিজার এ অবস্থা দেখে রিপা কান্না করে দিলো। রিপা তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে লিজার জন্য কিছু খাবার আর জুস নিয়ে আসলো।
রিপাঃ এগুলো আগে খেয়ে নে তারপর উঠবি।
লিজাঃ নারে ইচ্ছা করছে না।
রিপাঃ চুপ একদম চুপ। লিজা তুই ভুলে যাচ্ছি যে তুই একা না। নিজের খেয়াল না রাখলেও তোর ভিতরে ছোট্ট প্রাণটা বেড়ে ওঠছে তার খেয়াল রাখতে তোকে হবে।
তুই না বললি রিয়াত ভাইয়া ফিরে আসবে? সে যদি এসে তোর এ অবস্থা দেখে তাহলে তাকে তুই কী বলবি?
রিপার কথা শুনে লিজা সামান্য কিছু খাবার খেলো। তারপর রিপার সাথে সামনের রুমে গেলো।
সেখানে ওর আর রিয়াতের বাবা মা গম্ভির হয়ে বসে আছে। লিজাকে দেখে রিয়াতের মা তার নিজের পাশে বসালো। তারপর বলল,
রিয়াতের মাঃ দেখ মা, তোর সাথে যে অন্যায় হয়েছে কিন্তু চাইলেও আমরা তার সমাধান খুজে বের করতে পারবো না।। এখন তুমি কী চাও বলো?
রিয়াতের বাবা বলল,
রিয়াতের বাবাঃ হ্যাঁ মা। রিয়াত যাই বলুক তুমিই আমাদের ঘরের লক্ষি। আমাদের পুত্রবধূ। তুমি চাইলে এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকতে পারো?
লিজার মা কিছুটা রেগে গিয়ে বললেন,
লিজার মাঃ তার দরকার নাই। লিজার প্রেগনেন্সির মাত্র ছয় সপ্তাহ চলছে। আমি ওর এবোরশন করাবো।
এবোরশন কথাটা শুনেই লিজা চমকে উঠলো। মনে হলো ওর কলিজা কেউ টান দিয়েছে। সাথে সাথে বলল,
লিজাঃ নাহ! আমি আমার বাচ্চাকে মারতে পারবো না।
লিজার মাঃ কিন্তু লিজা এ বাচ্চার কোন ভবিষ্যৎ নাই। কিন্তু তোর আছে। যে এখনো পৃথিবীতে আসে নাই। তার জন্য নিজের উজ্জল ভবিষ্যৎ টাকে এভাবে জলাঞ্জালী দিবি?
লিজাঃ মা এটা সত্যি যে ও পৃথিবীতে এখনো আসে নাই। কিন্তু ওর প্রান আছে! ওর অস্তিত্ব আমি রিপাভব করতে পারি। ও তো পাপ নয় মা।
লিজার মাঃ কিন্তু লোকে তোর বাচ্চাকে অবৈধ বলবে? জারজ বলবে? তখন তুই তাদের কী বলবি?
লিজাঃ থাক মা। সমাজের লোকে কথা এখন না হয় থাক। সমাজ যাই বলুক। আমার বাচ্চাটা যে অবৈধ নয় তা আমি জানি। আর তোমাদের এখানে থাকলে তোমাদের যদি সমস্যা হয় তাহলে বলো আমি রিয়াতের বাবার সাথে চলে যাবো। তিনিও যদি না নেন তাহলে আমি নিজের আর আমার নিজের বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারবো। আমার কারো দরকার নেই।
লিজার বাবা বললেন,
লিজার বাবাঃ কী বলছিস এসব? তোর কোথাও যেতে হবে না। আমি জানি, আমার মেয়ে কোন অন্যায় করেনি। তোর সিদ্ধান্তে আমি কখনো বাঁধা দিবো না।
রিয়াতের বাবাঃ এখানে থাকলে সবাই আরো বেশি বাজে কথা বলবে। তার থেকে বরং আমি ওকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাই। সবাইকে বলবো যে রিয়াতের স্ত্রী। আর রিয়াত কয়েক বছরের জন্য বিদেশ গেছে।
লিজার বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
লিজার বাবাঃ লিজার যা ইচ্ছা । আমি সবসময় আমার মেয়ের ইচ্ছাকে সম্মান করি।
মনের মানুষের কাছে আগমন
আজ লিজার বিদায় । এমন মেয়ে বিদায় কেউ হয়তো জীবনে দেখেনি। মেয়ে বিদায়ে বর নেই। কনে বধূ সাজে নেই। সবার চোখে শুধু কান্না হতাশা আর সামনের দিনে কী হবে তা নিয়ে ভয়।
লিজা রিয়াতদের বাড়ি চলে আসলো। রিয়াতের রুমে গিয়ে চারদিকটায় তাকিয়ে শুধু একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ছাড়লো।
কী সুন্দর করে সাজিয়েছে রিয়াত রুমটাকে। বাচ্চাদের খেলনা ভর্তি রুমটায়। খেলনা গুলোতে হাত বুলিয়ে দেখছে লিজা। রিয়াতের রুমের টেবিলের উপর রাখা রিয়াত আর লিজার ছবি। লিজা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখলো।
ছবিটা ওদের বিয়ের। মনে পরে যাচ্ছে লিজার নিজের বিয়ের কথা গুলো। কোন সাজগোজ নাই। লিজার পড়নে বেগুনী রং এর একটা থ্রীপিচ আর রিয়াত ছিলো অফিসের ড্রেসে। একটা ঘোরের মধ্যে হয়েছিলো বিয়েটা। কত সুন্দর ছিলো দিনগুলো। স্মৃতিগুলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে।
ওদের সম্পর্ক তখন দু মাসের মত। কলেজের কিছু বাজে ছেলে লিজাকে খুব বিরক্ত করতো। রিয়াতকে বলা মাত্র রিয়াত লিজার সাথে কলেজে গিয়ে ছেলেগুলোকে বললো,
রিয়াতঃ কী ছোট ভাই। ওকে বিরক্ত কেন করছেন?
একটা বাজে ছেলে বলল,
বাজে ছেলেঃ তাতে তোর কিরে? তোর কী বোন লাগে?
রিয়াতঃ না, বৌ লাগে। কিছুদিন পর বৌ হবে।
বাজে ছেলেঃ তাহলে কিছুদিন পরই এখানে আসিস। যখন তোর বৌ হবে তখনই অধিকার খাটাতে আসিস? তার আগে মালটা আমাদের।
কথাটা শুনে রিয়াতের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
রিয়াতঃ আধাঘন্টা পর আসছি!
তারপর রিয়াত লিজার হাত ধরে বলল,
রিয়াতঃ চলো!
লিজাঃ কোথায় যাচ্ছি আমরা?
রিয়াতঃ চলো তো, তারপর বলছি?
বউয়ের আদুরে শাসন
পথে রিপা আর রিয়াতের বন্ধুকে ফোন করে কাজী অফিসে আসতে বললো। কিছুক্ষণের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেলো। লিজা যেনো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। মনে হচ্ছে কোন স্বপ্ন দেখছে। তারপর রিয়াত লিজাকে নিয়ে আবার কলেজে গেলো। সেখানে গিয়ে বলল,
রিয়াতঃ ছোট ভাই কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে সোজা এখানে এলাম। এখন বলেন কেউ যদি আপনার বৌকে বাজে কথা বলে তখন তাকে কি করবেন? আমিও ঠিক তাই করবো!
রিয়াত সাথে নিজের কয়েকটা বন্ধু নিয়ে এসেছিলো। সব গুলোকে আচ্ছামত ধোলাই দিয়ে সোজা পুলিশে দিলো। ছেলে গুলো অনেক বাজে ছিলো। আর বলল,
বাজে ছেলেঃ বস, দেখতে চকলেট বয় হলেও এ্যাকশনের রিএ্যাকশন কি করে দিতে হয় তা খুব ভালো করে জানে।
লিজার ঘোর যেনো এখনো কাটেনি।
রিয়াত লিজার হাত ধরে বলল,
রিয়াতঃ চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিই।
গাড়িতে যাবার সময় লিজা বলল,
লিজাঃ সামান্য বিষয়টার জন্য আমাকে বিয়ে করার কী দরকার ছিলো?
রিয়াতঃ এটা সামান্য বিষয়? আজকের পর থেকে কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আর দোষটা ওদের না তোমার?
লিজাঃ মানে?
রিয়াতঃ তুমি দেখতে এত সুন্দর, যে কেউই তোমার জন্য পাগল হবে। যেমন আমি হয়েছি। আর এখন থেকে তোমাকে হারানোর ভয়টা আমার আর থাকবে না।
লিজাঃ পাজি ছেলে।
অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ নীরবতায় কেটে গেলো।
লিজা বলল,
লিজাঃ আচ্ছা রিয়াত?
রিয়াতঃ হ্যাঁ।
লিজাঃ একটা কথা বলবো?
রিয়াতঃ হ্যাঁ বলো?
লিজাঃ আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে! তারমানে আমরা এখন হ্যাজবেন্ড ওয়াইফ।
রিয়াতঃ হ্যাঁ তো?
লিজাঃ তুমি আবার আমার সাথে সেরকম কিছু করবে নাতো?
রিয়াত দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
রিয়াতঃ সে রকম কিছু মানে?
লিজাঃ না মানে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যা হয় আরকি!
রিয়াত বেশ দুষ্টুমি করে বলল,
রিয়াতঃ কেন ইচ্ছা আছে নাকি?
লিজা রাগ করে রিয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
লিজাঃ ঠ্যাং ভেগে দিবো।
রিয়াত জোরে হেসে বলল,
রিয়াতঃ ম্যাডাম আপনাকে আমি সার জীবন নিজের করে রাখতে চাই। তাই যতদিননা পর্যন্ত পারিবারিক ভাবে আমাদের বিয়ে হয় ততদিন পর্যন্ত এরকম ওরকম সেরকম কিছু করার ইচ্ছা তো নেই। ভরশা রাখতে পারেন।
সমাজের কথা
দু’মাস পর লিজার পরীক্ষা শেষ হলো। কিন্তু হঠাৎ করে রিয়াতের দাদি মারা যায়। যার কারণে বিয়েটাকে আরো কয়েকমাস পিছিয়ে দেয়া হয়। আর…
লিজা লিজা
কেউ লিজাকে ধাক্কা দিলো। ঘোর কাটলো লিজার।
লিজাঃ কে কে?
রিপা লিজার দিকে তাকিয়ে বলল,
রিপাঃ কতক্ষণ ধরে ডাকছি কী ভাবছিস?
রিপার চোখ যায় লিজার হাতের ছবিটা দিকে। রিপা বুঝে গেলো লিজা ঠিক কি ভাবতে ছিলো।
লিজা সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাইরে চল তাড়াতাড়ি।
লিজা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল,
লিজাঃ কী সর্বনাশ হয়েছে রিপা?
রিপা তাড়াহুড়ো করেই বলল,
রিপাঃ বাইরে পাড়া প্রতিবেশিরা সবাই এসে নানা রকম কথা বলছে? বুঝতে পারছি না তারা এ খবর কোথা থেকে পেলো?
লিজা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
লিজাঃ এই তোর সর্বনাশ হয়েছে। এখন কয়েকদিন এসব শুনতে হবে। এমন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। হতে পারে পরিস্থিতি এর থেকেও বাজে হতে পারে। তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নে রিপা। জানিস রিপা, ভালো কথা, ভালো কাজ লোকসমাজে ছড়াতে সময় লাগে খুব। কিন্তু কারো দোষ ত্রুটি বা এ ধরনের নেগেটিভ কথা বাতাসের আগে ছড়ায়। চল দেখি, এরা আবার কী বলে?
রিপা আর লিজা সামনের রুমে গিয়ে দেখে কয়েকজন মহিলা সেখানে আসছে। আর তাদের মুখ থেকে কথা নামক বিষ বাক্য শোনা যাচ্ছে।
কথাগুলো কিছুটা এমন,
মহিলারাঃ ছিঃ ছিঃ ভাবি, আপনাদের কাছে থেকে এমনটা আশা করেনি।
আরেকজনঃ ঠিক বলছেন ভাবি। বিয়ে হয়নি অথচ মা হচ্ছে। আর এমন মেয়েকে আবার ছেলের বৌ হিসাবে ঘরে তোলা তো দূরের কথা, এমন মেয়ের মুখ দর্শণ করাও উচিত নয়।
রিয়াতের মা কিছুটা কড়া করে বললেন,
রিয়াতের মাঃ প্রথমত ভুলটা লিজার না, আমার ছেলের। আর দ্বিতীয়ত ওদের বিয়ে অনেক আগেই হয়েছে তার প্রমাণও আছে। আর প্রমাণ না থাকলেও আমরা লিজাকে মেনে নিতাম। আমরা লিজাকে বিশ্বাস করি। আর অন্যায়টা যেহেতু আমাদের ছেলে করেছে তো সে অন্যায়ের সমাধান করা বাবা মা হিসাবে আমাদের প্রধান কর্তব্য। আর ভাবি আপনি কোন মুখে বলছেন এমন, মেয়ের মুখ দেখাও পাপ? আরে আপনার ছেলেতো গত বছর এর থেকেও খারাপ কান্ড করলো। আর আপনারা মেয়েটাকে মেনে পর্যন্ত নেননি।
মহিলাঃ ও তো ছেলে মানুষ। একটু আকটু দোষ করতেই পারে।
রিয়াতের মা কিছুটা বিকৃত ভঙ্গিতে বললেন,
রিয়াতের মাঃ আপনারে ছেলে দোষ করলে সেটা দোষ না। কিন্তু মেয়েটা কিছু না করেই সব দোষ তার ঘাড়ে। এসব নিচু মানসিকতা বদলান। আর আপনারা সবাই শুনুন এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। আপনাদের নাক না গলালেও চলবে?
মহিলাঃ তাহলে পরিবার সমাজের বাইরে গিয়ে বসান। এই মেয়েটি কোন পরিচয়ে আপনাদের বাড়ি থাকবে?
এবার রিয়াতের বাবা বললেন,
রিয়াতের বাবাঃ লিজা রিয়াতের স্ত্রী হিসাবে এখানে থাকবে। আর তাতে যদি আপনাদের সমস্যা হয় তাহলে লিজা আমাদের মেয়ের পরিচয়ে থাকবে। আজ থেকে আমার দুই মেয়ে লিজা আর রিপা। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?
মহিলাঃ কিন্তু?
রিয়াতের বাবা কিছুটা শান্ত গলায় বললেন,
রিয়াতের বাবাঃ দেখুন, লিজার সাথে যেটা হয়েছে সেটা যদি আপনাদের কারো মেয়ের সাথে হতো তাহলে কী আপনারা এমনটা বলতেন? হ্যাঁ লিজা আর রিয়াত ভুল করেছে কিন্তু পাপ না। আমি রিয়াতের বাবা। আর আমি যদি লিজাকে মেনে নিতে পারি তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?
তারপর আর কেউ কিছু বললো না। সবাই চুপচাপ চলে গেলো।
সুখের কান্না
প্রায় একমাস হয়ে গেছে কিন্তু রিয়াতের কোন খবর নাই। ফোনও দেয় নাই। রিয়াতের বাবা মা, রিপা সবাই লিজার খুব খেয়াল রাখছে। রিয়াতের বাবা লিজাকে কড়া করে বলে দিয়েছে লেখা পড়া যেনো ঠিক ভাবে করে।
লিজা ভাবে এরকম একটা পরিবার পেলে যে কেউই খুব ভাগ্যবতী হবে। কিন্তু রিয়াত….?
মনের ভেতর হাজারো প্রশ্ন এসে ভীড় করছে? আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের পেটে হাত দেয় লিজা। ছোট্ট একটা ভ্রুন কিভাবে দিনে দিনে বড় হচ্ছে ওর মাঝে। পেটে হাত দিয়ে নিজের অজান্তেই লিজার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো
লিজাঃ মিস ইউ রিয়াত।
আজ বাইরে খুব ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। লিজা জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে। বাতাসে ঝাপটায় বৃষ্টির কনাগুলো ওর গাল ছুয়ে যাচ্ছে।
লিজা ভাবছে এরকমই এক রাতে রিয়াত আমার কাছে এসেছিলো। অনেকটা কাছে। এতটা কাছে যে ওর শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলাম। মিশে গিয়েছিলো আমার নিঃশ্বাসে।
ওদের বিয়ের বয়স তখন চার মাস বোধ হয়। সেদিন লিজার বাবা মা ওর নানুকে দেখতে শহরের বাইরে গিয়েছিলো। কথা ছিলো সন্ধ্যার মধ্যে আবার বাড়ি ফিরে আসবে। তাই লিজা সালেহা (ওদের বাসায় কাজ করে) তাকেও বাসায় থাকতে বলল না।
সালেহা সন্ধ্যার আগে চলে যায়। লিজা ভাবছে ওর বাবা মা সন্ধ্যার পরই হয়তো চলে আসবে। রাত আটটার দিকে লিজার বাবা ফোন করে বললো ঝড়ের কারনে শহরে ঢোকার রাস্তা বন্ধ কালকের আগে বাড়ি যেতে পারবে না। লিজা যেনো পাশের বাসার আন্টিকে ঘরে এনে রাখে।
কিন্তু লিজা জানে তাদের বাসার সবাই বিকালে কোথায় যেনো গেছে। কিন্তু ওর বাবার যাতে চিন্তা না করে তাই বললো ঠিক আছে টেনশন করো না।
এদিকে ঝড়ের মাত্রা বাড়ছে। লিজা ঝড় প্রচন্ড ভয় পায়। কিছু না বুঝে রিপাকে ফোন দিলো।
লিজাঃ হ্যালো রিপা তুই কোথায়?
রিপাঃ আর বলিস না কাজিনের বাসায় আসছিলাম। কিন্তু যে ঝড় তাতে কালকের আগে যেতে পারবো বলে মনে হয়না। কেন কিছু বলবি ?
লিজাঃ না এমনিতেই। রাখি।
এদিকে ভয়ে লিজার দম বন্ধ হয়ে আসতেছিলো। তাই কিছু বুঝতে না পেরে রিয়াতকে ফোন দিলো।
লিজাঃ হ্যালো রিয়াত! তুমি কোথায়?
রিয়াতঃ অফিস থেকে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু লিজা তুমি ঠিক আছো তো। এভাবে কথা বলছো কেন?
লিজাঃ রিয়াত আমি ঘরে একা। বাইরে খুব ঝড় হচ্ছে। আমার ভীষণ ভয় করছে।
রিয়াতঃ কেন আঙ্কেল আন্টি আসে নি এখনো?
লিজাঃ বন্যার কারণে রাস্তা বন্ধ। কালকের আগে রাস্তা ক্লিয়ার হবে না। রিয়াত প্লিজ, তুমি একটু আসবে?
রিয়াতঃ তুমি ভয় পেয়ো না, আমি আসছি।
লিজা ফোনটা রেখে চুপচাপ বসে রইলো। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎও নেই। পুরো ঘর অন্ধকার শুধু একটা চার্জার জ্বালিয়ে নিজের রুমে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর দরজায় কেউ নক করলো। ভয়ে লিজার বুক ধুকপুক করছে। ভয়ে ভয়ে দরজার সামনে গিয়ে বলল,
লিজাঃ কে?
রিয়াতঃ লিজা আমি?
রিয়াতের কথা শুনে লিজার জেনো দেহে প্রাণ এলো। তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে রিয়াতকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কান্না করতে লাগলো।
রিয়াত লিজার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
রিয়াতঃ এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? দেখো আমি এসে গেছি। এখন আর কোন ভয় নাই। চুপ করো। আর এখন ভেতরে চলো।
লিজাঃ হুমম চলো।
লিজা ভেতরে গিয়ে দেখে রিয়াত পুরো কাক ভেজা হয়ে গেছে। তা দেখে লিজা বলল,
লিজাঃ একি অবস্থা তোমার! দাড়াও আমি টাওয়াল নিয়ে আসছি।
লিজা রিয়াতকে টাওয়ালটা দিয়ে বলল,
লিজাঃ নাও তাড়াতাড়ি গা মুছে কাপড় পাল্টে নাও। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
রোমান্টিক মুহূর্ত
রিয়াত লিজার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভেংচানো করে বলল,
রিয়াতঃ ম্যাডাম আমিতো জানতাম না যে আজকে আপনাদের বাসায় আসবো। তাই এক্সট্রা কাপড় নিয়ে আসিনি।
লিজাঃ দাঁড়াও ব্যবস্থা করছি।
লিজা ওর বাবার একটা ড্রেস আয়াকে দিয়ে বলল,
লিজাঃ আপাতত এটা দিয়ে ম্যানেজ করে নাও।
রিয়াত ড্রেসটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তা দেখে লিজা বলল,
লিজাঃ কী হলো দাড়িয়ে আছো যে, চেঞ্জ করে নাও।
রিয়াতঃ তুমি তাকিয়ে থাকলে কিভাবে করি? নাকি দেখার ইচ্ছা আছে?
লিজা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে রান্না ঘরে দিকে চলো গেল।
রিয়াত ড্রেসটা পরে বলল,
রিয়াতঃ লিজা শ্বশুর আব্বাকে ডায়েটিং করতে বলবা?
লিজাঃ কেন?
রিয়াতঃ পান্জাবিটার মধ্যে দুটো রিয়াত ফিট হতে পারবে।
লিজা রাগি চোখে রিয়াতের দিকে তাকালো।
রিয়াতঃ ওকে সরি। কিন্তু ম্যাডাম খুব খিদে পেয়েছে!
লিজাঃ এইতো খাবার রেডি। চলো খাবে।
তারপর দুজন মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে গল্প করতে লাগলো। এদিকে বাইরে ঝড়ের মাত্রা আরো বেড়েছে। খুব জোড়ে জোড়ে বজ্রপাত হচ্ছে।
লিজা এরকম শব্দ ভীষণ ভয় পায়। রিয়াতকে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না। কিন্তু চোখে মুখে সে ভয় স্পষ্ট ফুটে উঠছে। লিজা বলল,
লিজাঃ ঠিক আছে। কি আর করা। নিজের বিয়ে করা বৌ কাছে থাকতেও বৃষ্টির দিনের রোমান্টিক মুহূর্তে কাছে পাবো না। কপাল খারাপ থাকলে কী আর করা?
লিজা কপোট রাগ দেখিয়ে বলল,
লিজাঃ বেশি কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরো।
রিয়াত রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো । কিছুক্ষণ পর মনে পড়লো যে ওর ফোনটা খাবার টেবিলে রেখে এসেছে। তাই উঠে খাবার রুমে যাওয়ার সময় লিজার রুমে চোখ যায়। দেখে এখনো চার্জার জ্বলছে।
লিজার রুমে উকি দিয়ে দেখলো, লিজা বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে রেখেছে। বজ্রপাতের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে। লিজার এমন অবস্থা দেখে রিয়াত নিজের হাসি চেপে রাখতে পারলো না।
লিজা চোখ খুলে বলল,
লিজাঃ তুমি এখানে কেন? আর হাসছো কেন?
রিয়াতঃ একটা কিউট বিউটিফুলকে দেখছি। যে কথায় কথায় মানুষকে বলে ঠ্যাং ভেঙে দিবো, নাক ফাটিয়ে দিবো, পিটাবো বলে। কিন্তু দেখো সে কেমন সামান্য ঝড়কে ভয় পায়!
লিজাঃ মজা নিচ্ছ?
রিয়াত লিজার পাশে বসে বলল,
রিয়াতঃ তো কি করবো?
এর মধ্যে খুব জোরে একটা বাজ পড়লো। লিজা ভয়ে চিৎকার দিয়ে রিয়াতকে জড়িয়ে ধরলো।
রিয়াতও যেনো আজ তনায়াকে… চলবে…
পরের পর্ব- অবৈধ প্রেম – শেষ পর্ব