অবৈধ প্রেম – পর্ব ১ – নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প: প্রেম ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত ভাবে আসে। কারো জীবনে সুখের বার্তা বয়ে আনে আবার কারো জীবনে নিয়ে আসে কষ্টের পাহাড়। সবাই তো সুখী হওয়ার জন্য ভালোবাসে কিন্তু সবাই কি আর পায়। তো এরকম কষ্ট সুখের খেলার কাহিনী নিয়ে আমাদের আজকের গল্পের আসর। চলুন তবে শুরু করা যাক।
অবৈধ সম্পর্ক
আজ লিজা জানলো যে সে মা হতে চলেছে। কথাটা একটা মেয়ের কাছে পৃথিবীর সব চেয়ে খুশির সংবাদ। লিজার কাছেও তেমন। কিন্তু লিজার কাছে এই খবরটা খুশির খবরের সাথে সাথে সব থেকে লজ্জ্বা জনক খবরও বটে।
লিজা অবিবাহিতা। আর একটা অবিহিতা মেয়ের মা হওয়া আমাদের সমাজে লজ্জার সর্বসীমা পেড়িয়ে যায়।
লিজা বরাবরই ওর মায়ের কাছে কিছু লুকায় না। মায়ের কাছে কথাটা বলা মাত্র মা সজোরে লিজার গালে একটা চড় মেরে বলল,
লিজার মাঃ তুই এরকম কাজ করবি তা আমি কল্পনা করিনি! তোর সাথে তো রিয়াতের বিয়ে ঠিক হয়েই আছে, তাহলে কেন এরকম করলি, বল? নিজের উপর একটু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলি না!
লিজাঃ মা, আমার সাথে রিয়াতের বিয়ে আরো ছয় মাস আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা কেউ তা জানো না।
লিজার মাঃ কী?
লিজাঃ হ্যাঁ, মা। ছয় মাস আগে কাজি অফিসে গিয়ে আমাদের বিয়ে হয়। আর সাক্ষী হিসাবে আমার বান্ধবী রিপা আর রিয়াতের বন্ধু পলাশ ছিলো।
মা আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমার বাচ্চাটা অবৈধ নয়। আমরা ইসলামের পূর্ণরীতি রিপাসারেই বিয়ে করেছি। হ্যাঁ এটা ঠিক যে, তোমাদের না জানিয়ে চূড়ান্ত অন্যায় করেছি। অন্যায় নয় বরং পাপ করেছি। কিন্তু মা ভুল তো করে ফেলেছি এখন সেটা তো শুধরাতে পারবো না। তবে মা আমার সন্তান পাপ নয়।
লিজার মাঃ তোর সন্তান পাপ নয়, সেটা কেবল তুই জানিস। আমি নাহয় তোর কথা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু সমাজের মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করাবি? আর রিয়াত! ও যদি বাচ্চাটাকে অস্বীকার করে! তখন কী করবি? তুই কি রিয়াতকে এ বিষয়ে বলেছিস?
লিজাঃ না, মা। আমার খুব ভয় লাগছিলো। তাই তোমার কাছে আগে বললাম।
লিজার মাঃ এসব কথা মেয়েরা সবার আগে তার স্বামীকে জানায় আর তুই তা না করে…। এখনি রিয়াতকে ফোন করে সব খুলে বল। আর আমি তোর বাবাকে বলে রিয়াতের পরিবারের সবার সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব পাকাপাকি করছি।
এই বলে লিজার মা তার রুম থেকে চলে গেলেন।
লিজা ফোনটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে রিয়াতকে ফোন করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু কলটা রিসিভ করলো না। আবার দিলো পর পর কয়েকবার দিলো কিন্তু রিং হয়েই যাচ্ছে রিয়াত ফোনটা ধরছে না। এদিকে ভয়ে লিজার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে, কলিজাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। ঢক ঢক করে এক জগ পানি খেয়ে ফেললো। রিয়াত নাতো ফোন রিসিভ করছে আর নাতো ব্যাক করছে। প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে টেনশন তত পরিমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার কিছুক্ষণ পর থেকে রিয়াতের ফোনটা বন্ধ।
লিজার মাথাটা ঘুরছে। চোখেদুটো যেনো ঝাপসা হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাটা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের ছন্দ
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন লিজার চোখটা সোজা দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে গেলো। প্রায় চার ঘন্টা হয়ে গেছে। হাত দিয়ে বিছানার পাশে ফোনটা খুঁজছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ লিজার মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
মাথার পাশে তাকাতেই দেখলো রিয়াত লিজার দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রিয়াতকে দেখে যেনো লিজা নিজের প্রাণ ফিরে পেলো। কিন্তু কিছু বলতে পারছিলো না। শুধু রিয়াতের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছিলো।
রিয়াত লিজার হাত ধরে উঠতে সাহায্য করতে করতে বলল,
রিয়াতঃ উঠে বসো।
রিয়াত তনায়াকে বিছানায় বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে লিজার খুব কাছে গেলো। তারপর লিজার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
রিয়াতঃ এ বুকে কী কোন ছলনার শব্দ শুনতে পাও?
লিজা রিয়াতের বুকে মাথা রেখে তখনো কাঁদছে। রিয়াত লিজার চোখের জল মুছে দিয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
রিয়াতঃ হেই বিউটিফুল! তুমি কী ভাবছো, খবরটা শোনার পর আমিও অন্য ছেলেদের মতো তোমায় একা অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে যাবো!
লিজা খুব ধীরে করে উত্তর দিলো,
লিজাঃ হু।
রিয়াত লিজার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
রিয়াতঃ বোকা মেয়ে! এও কী সম্ভব!
লিজাঃ তাহলে ফোন রিসিভ করছিলে না কেন?
রিয়াতঃ তার জন্য সরি। আসলে তখন জরুরি মিটিং চলছিলো। আর ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো । তাছাড়া ফোনে চার্জও ছিলো না। তাই হয়তো রিং হতে হতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মিটিং শেষে ফোন চার্জ করে যখন অন করলাম তখন তোমার অনেকগুলো মিসকল দেখে কল করলাম। তোমার মা ই ফোনটা রিসিভ করে। তিনি বলেন তুমি অসুস্থ। দেরি না করে সোজা তোমাদের বাসায় আসলাম। আন্টির কাছ থেকে সব শুনলাম। গত দের ঘন্টা ধরে তোমার পাশে বসে আছি। দেখেন, অফিস ড্রেসই আছি।
লিজা খানিকটা দুষ্টুমি করে বলল,
লিজাঃ এ জন্যই তোমার গা থেকে ঘামের গন্ধ আসছে। ছিহ।
রিয়াত লিজাকে আরো জোরে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল,
রিয়াতঃ এখন গন্ধ আসছে?
লিজাঃ ছাড়ো। মা এসে পড়বে।
রিয়াতঃ তো! আমি না আপনার বিয়ে করা স্বামী আর আপনি আমার বৌ। কয়েক দিন পর আবার বিয়ে করবো। দু দু বার যাকে বিয়ে করবো তাকে জড়িয়ে ধরলে কার বাপের কী?
লিজাঃ হয়েছে আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না। সব দোষ তোমার ?
রিয়াতঃ আমি আবার কী করলাম?
লিজাঃ বিয়ের আগে তুমিই বলেছিলে যে, যতদিন পারিবারিক ভাবে বিয়ে হবে না ততদিন আমরা একে অপরের কাছে আসবো না। কিন্তু…
রিয়াতঃ হ্যাঁ, কিন্তু সেদিন কী যে হয়েছিলো আমার বুঝতেই পারছিলাম না। দেখো, আমরা ভুল করেছি কিন্তু পাপ না। কারণ আমরা শরীয়াত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী। হ্যাঁ, আমাদের বিয়ের কথা কয়েকজন লোক ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু তবুও তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।
সংসার পরিকল্পনা
লিজা একটু লজ্জা পেয়ে বলল- হুমম সবতো বুঝলাম। কিন্তু এখন কী করবা?
রিয়াতঃ তুমি একদম চিন্তা করো না। এ মাসের মধ্যেই আমারা বিয়ে করে নিবো। বাবা মাকে আমি বুঝিয়ে বলবো।
লিজাঃ তুমি কী জানো না ইসলামে গর্ভবতী মেয়েদের বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
রিয়াতঃ হ্যাঁ জানি। তবে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানিয়ে তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। এতে কারো কোন বাজে কথা বলার সাহস হবে না।
লিজাঃ কিন্তু তোমার বাবা-মা, পরিবারকে কী করে রাজি করাবে?
রিয়াতঃ সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর এসময় টেনশন নেয়া মা ও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। আর আমি আমার দুই রাজকুমারীর কারোর ক্ষতি সহ্য করবো না।
লিজাঃ দুই রাজকুমারী? মানে?
রিয়াতঃ হ্যা, যে আসছে সে আমার লিটেল প্রিন্সেস। আর তুমি আমার বিগ প্রিন্সেস।
লিজাঃ প্রিন্সেস না হয়ে প্রিন্সও তো হতে পারে?
রিয়াতঃ তা দেখা যাবে?
লিজাঃ জানো, তুমি যখন আমার ফোনটা রিসিভ করছিলে না। তখন মনে হচ্ছিল প্রাণ বুঝি বেরিয়ে…
রিয়াত লিজার মুখে হাত দিয়ে বলল,
রিয়াতঃ খবরদার এমন কথা কখনো বলবে না। হেই বিউটিফুল তোমার কিছু হলে তোমার রিয়াতটাকে কে সামলাবে? (রিয়াত কিছুটা কান্না করে দিলো)
লিজাঃ জানো রিয়াত, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তোমার মত ছিছকাঁদুনে ছেলেকে আমি কিভাবে ভালোবাসলাম? পাগল তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো? তোমাকে আগামী সাত জন্মের জন্য আমি বুকিং করে রেখেছি।
রিয়াতঃ তার মানে সাত জন্ম পর্যন্ত আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে চান্স মারতে পারবো না!
লিজাঃ খুন করে ফেলবো তোমাকে!
রিয়াতঃ তোমার ভালোবাসায় তো এমনিতেই খুন হয়ে আছি। আবার খুন করার কী দরকার?
লিজাঃ মাঝে মাঝে তোমার উপর আমার খুব সন্দেহ হয়!
রিয়াতঃ কেন?
লিজাঃ তুমি কি সত্যিই আমাকে এতটা ভালোবাসো নাকি অন্যকিছু।
রিয়াতঃ বিশ্বাস করো না আমায়?
লিজাঃ নিজের থেকে বেশি।
রিয়াতঃ লিজা আমাকে একটা কথা বলো?
লিজাঃ হ্যাঁ বলো।
রিয়াতঃ মেয়েদের প্রেগনেন্সির খবর সবার আগে তার বরকে জানায়। তুমি আমাকে না জানিয়ে তোমার মাকে কেন জানালে? কী ভেবেছিলে আমি তোমায় ধোকা দিবো নাকি তোমার কথা বিশ্বাস করবো না?
লিজাঃ আসলে রিয়াত তখন রেজাল্ট পজিটিভ দেখে এতটা ভয় পেয়েছিলাম যে মা ছাড়া কারো কথা মাথায় আসে নাই।
রিয়াতঃ বোকা মেয়ে। তুমি না এই রিয়াতের হৃদয়। আর কেউ কি হৃদয় ছাড়া বাঁচতে পারে?
লিজাঃ সরি। আসলে তখন মাথাটা কাজ করতে ছিলো না।
রিয়াতঃ আমি জানি। আমিও সরি।
লিজাঃ কেন?
রিয়াতঃ সেদিন আমি ভুল না করলে আজ তোমাকে এতটা নাজেহাল হতে হতো না। আমি সেদিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, আজ হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না। মা তোমাকে একটা চড় মারছে?
লিজাঃ এ কথা তোমাকে মা বলেছে নাকি?
রিয়াতঃ নাহ। তোমার গালে চড়ের দাগগুলো বলে দিচ্ছে। খুব ব্যাথা করছে, তাই না?
সুন্দর কিছু মুহূর্ত
রিয়াত লিজার গালে গভীর ভালোবাসায় চুম্বন এঁকে বলল,
রিয়াতঃ এখন ব্যথা চলে যাবে।
লিজাঃ এটাই কী ব্যথার ঔষধ!
রিয়াতঃ হ্যাঁ।
লিজাঃ পাগল।
রিয়াতঃ পাগলের বৌ।
দুজনেই হাসিতে যোগ দিলো সুন্দর কিছু মুহূর্ত।
রিয়াত লিজার হাত ধরে বলল,
রিয়াতঃ এখন আমাকে বাড়ি যেতে হবে। বাবা মাকে বলে বিয়ের ডেট এ মাসের মধ্যে ঠিক করতে হবে। সব কাজ জলদি গোছাতে হবে। অনেককাজ আছে।
লিজাঃ রিয়াত, শোনো।
রিয়াতঃ হ্যাঁ বলো।
লিজাঃ পাঁচ মিনিট বসো, আমি আসতেছি।
রিয়াতঃ তোমার উঠার কী দরকার? আমাকে বলো কী লাগবে?
লিজাঃ চুপ করে বসো তো।
কিছুক্ষণ পর লিজা খাবার নিয়ে আসলো। তা দেখে রিয়াত বলল,
রিয়াতঃ এগুলো দিয়ে কি হবে?
লিজাঃ অফিস থেকে সোজা এখানে আসছো তারমানে এখনো কিছুই খাওনি। আগে এগুলো খাবে, তারপর উঠবে।
রিয়াতঃ ঠিক আছে তবে খাইয়ে দিতে হবে।
লিজা আর রিয়াত একে অপরকে খাইয়ে দিলো। তারপর রিয়াত চলে গেলো যাবার আগে লিজাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা ভালোবাসার চিহ্ন একে দিয়ে গেলো। আর বলল,
রিয়াতঃ কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
পরের দিন সকাল গড়িয়ে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল কিন্তু রিয়াতের কোনো ফোন আসলো না। সন্ধ্যা বেলা শুধু একটা মেসেস আসলো।
মেসেসটা ছিলো,
“লিজা তোমার কাছ থেকে যা পাবার তা আমি পেয়ে গেছি। এখন নাতো তোমাকে চাই, না তোমার বাচ্চাকে।”
গুড বাই।
নতুন সম্পর্ক
তারপর থেকে রিয়াতের ফোন বন্ধ।
মেসেসটা পড়ে লিজা যেনো পাথর হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
লিজাঃ তবে কী সব মিথ্যা। এতদিন থেকে কাল পর্যন্ত যা বলেছিলো প্রত্যেকটা কথা প্রত্যেকটা রিপাভূতি সব মিথ্যা ছিলো?
লিজা ভাবছে, একটা মানুষ কী করে এতটা নিখুদ অভিনয় করতে পারে! এও কী সম্ভব! নাহ আমার রিয়াত এমন করতে পারে না? আমি ওর নিজের মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত বিশ্বাস করবো না। লিজা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
লিজাঃ মা, আমি একটু বের হচ্ছি?
লিজার মাঃ এই অসুস্থ অবস্থায় সন্ধ্যার সময় কোথায় যাচ্ছিস?
লিজাঃ সত্যিটা জানতে?
লিজার মাঃ কিসের সত্যি?
লিজা ওর মাকে রিয়াতের মেসেজটা দেখালো। ওর মাও যেনো হঠাৎ করে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। লিজার মা লিজার হাত ধরে বললেন,
লিজার মাঃ এই সন্ধ্যা বেলা একা যেতে হবে না। আমিও তোর সাথে যাবো।
লিজাঃ মা তুমি?
লিজার মাঃ চুপ একদম চুপ। আমার মেয়ে বিপদে পড়ছে আর আমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবো। চল…
লিজা আর ওর মা মিলে রিয়াতদের বাসায় গেলো। রিয়াতের মা তাদের দেখে খুব খুশি হলো সাথে সাথে অবাকও হলো। লিজা রিয়াতের মা কে উদ্দেশ্য করে বলল,
লিজাঃ আন্টি, রিয়াত কোথায়?
রিয়াতের মা লিজার গালে হাত দিয়ে বললেন,
রিয়াতের মাঃ আন্টি কিরে? মা বলতে পারিস না! আগে তো ভাবতাম তোদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। গত কাল রাতে রিয়াত বললো তোরা নাকি অনেকদিন আগেই বিয়ে করে নিয়েছিস। প্রথমে খুব রাগ হচ্ছিল তোদের দুজনার উপর। কিন্তু যখন শুনলাম আমাদের ঘরে নতুন অতিথি আসছে তখন আর রাগ করে থাকতে পারলাম আমি আর রিয়াতের বাবা।
রিয়াতের মায়ের কথা শুনে লিজা আরো বেশি দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলো। তারপর রিয়াতের মাকে ওর ফোনের মেসেজটা দেখিয়ে বলল,
লিজাঃ রিয়াত কোথায়?
রিয়াতের মাও মেসেসটা দেখে অনেক অবাক হলো। তারপর কিছু একটা ভেবে হেসে দিয়ে বলল,
রিয়াতের মাঃ বোকা মেয়ে দেখ ভয় পেয়ে নিজের কি হাল করেছে? আয় আমার সাথে এদিকে আয়!
লিজাকে রিয়াতের মা রিয়াতের রুমে নিয়ে গেলো।
লিজা রুমের দরজা খুলে তো অবাক! পুরো রুমটায় বাচ্চাদের খেলনা দিয়ে ভর্তি করা। সুন্দর করে সাজানো রুমটা। মনে হয়, কোন বাচ্চার জন্য খুব যত্ন করে সাজানো হয়েছে।
রিয়াতের মা লিজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
রিয়াতের মাঃ গতকাল রাতে আর আজ সকালে এই সব জিনিস কিনেছে রিয়াত। আমাকে বলেছে মা আমার জীবনে সব চেয়ে প্রিয় মানুষটা কিছুদিন পর আমার ঘরে আসবে আর তার সাথে আসবে ছোট্ট সোনা। তাদের জন্য ঘরটাকে তো সুন্দর করে গোছাতে হবে।
আর দু সপ্তাহ পর তোমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করেছি আমরা। রিয়াত সেটা জানানোর জন্যই তো তোমার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল।
লিজা কেমন যেনো সব ঘোলাটে লাগছে।
বিপদের আনাগোনা
লিজা একটু ভেবে বলল- তাহলে মা রিয়াত এমন মেসেজ কেন দিলো?
রিয়াতের মাঃ মনে হয়, তোর সাথে মজা করছে।
লিজাঃ কিন্তু ফোনটা অফ কেন?
রিয়াতের মাঃ আচ্ছা চিন্তা করিস না, আমি দেখছি।
রিয়াতের মা রিপাকে (রিপা রিয়াতের ছোট বোন, সাথে লিজার খুব ভালো বান্ধবী) বললো রিয়াতকে ফোন দে তো।
রিপা ফোনের পর পর ফোন দিতেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ। পরিচিত বন্ধু বান্ধব অফিসে ফোন করলো কিন্তু কোথাও রিয়াত নাই। এবার ঘরের সবার খুব টেনশন হচ্ছে। লিজা রাতে আয়াদের বাড়িই থাকলো কিন্তু ওর মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
সারারাত লিজা রিয়াতের রুমে ওর আর রিয়াতের লাগানো ছবির দিকে তাকিয়ে কান্না করলো। মনে হাজারো প্রশ্ন? কিন্তু শত প্রশ্নের একটাই উত্তর আসতেছে যে রিয়াত আমাকে ধোকা দিতে পারে না! কিন্তু মেসেজে লেখা প্রত্যেকটা কথা মাথার মধ্যে পোকার মত কিলবিল করছে।
নাহ লিজা আর নিতে পারছে না। মনে হয় মাথাটা ছিড়ে যাবে। এদিকে পেটের ভেতর ছোট্ট একটা ভ্রুন যা হয়তো এখনো আকৃতি ধারণ করেনি কিন্তু তার জীবন আছে। তার চলাচল তার অস্তিত্ব লিজা প্রতি মূহুর্তে নিজের ভেতর রিপাভব করছে। তার সাথে রিপাভব করছে রিয়াতের অস্তিত্বকেও। কারণ ভেতরে যে আছে সে যে রিয়াতেরই অংশ।
সেদিন রাতে বাড়ির কেউই ঘুমায় নাই। খুব সকালে উঠে সোজা পুলিশ স্টেশনে গেলো।
অফিসার বললেন,
অফিসারঃ ২৪ ঘন্টা আগে আমরা রিপোর্ট নেই না।
তারপর কিছু প্রশ্ন করলো। তারপর লিজাকে দেয়া মেসেজটার কথা জানার পর বলল,
অফিসারঃ তাহলে আর কি? আপনার ছেলে পালিয়েছে? তাই ফোন অফ রেখেছে। ছোট বাচ্চাতো না। দেখুন আবার কার সাথে প্রেমলীলা শুরু করছে।
রিয়াতের বাবা অনেকটা রাগ করে বলল,
রিয়াতের বাবাঃ জাস্ট শাট আপ অফিসার। রিপোর্ট নিতে বলেছি রিপোর্ট নিন। বাজে কথা বলবেন না।
অফিসার চোখ রাঙিয়ে বলল,
অফিসারঃ রিপোর্ট নিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না গেলে কোন তদন্ত শুরু করবো না।
থানায় রিপোর্ট করিয়ে লিজাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে তারা বাড়ি গেলেন।
ফিরে দেখা
লিজা বাড়ি গিয়ে খুব ভেঙে পড়লো। মনে হচ্ছে কোন গোলক ধাঁধায় পরে গেছে। কোনটা মিথ্যা কোনটা সত্যি তার মধ্যে কেন যেনো পার্থক্য করতে পারছে না। যদি রিয়াতের মেসেজটা সত্যি হয় তাহলে বাড়িতে কেন বললো? আর বাড়িতে বললে মেসেজটা কেন পাঠালো?
খুব কান্না করছে লিজা। চোখের সামনে যেনো রিয়াতের সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো ভাসছে।
রিয়াতের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো কলেজের একটা অনুষ্ঠানে। রিপার সাথে রিয়াত কলেজে এসেছিলো। রিপাই রিয়াতের সাথে লিজার পরিচয় করিয়ে দেয়।
রিপাঃ লিজা, এই হচ্ছে আমার ভাই রিয়াত।
রিয়াতঃ হাই!
লিজাঃ হ্যালো!
রিয়াতঃ বিউটিফুল!
লিজাঃ হোয়াট?
রিয়াতঃ আই মিন নাইস টু মিট ইউ।
লিজাঃ ধন্যবাদ।
রিপাঃ লিজা তুই একটু ভাইয়ার সাথে থাক। আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি।
লিজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিপা চলে গেলো।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। নীরবতা ভেঙে রিয়াত বললো,
রিয়াতঃ তো কোন ইয়ারে পড়েন? কোন বিষয়ে?
লিজাঃ র্থাড ইয়ার ফাইনাল। হিসাববিজ্ঞান বিভাগ। আর আপনি?
রিয়াতঃ গুড। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন হলো বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছি।
লিজাঃ গুড।
রিয়াতঃ আইসক্রিম খাবেন?
লিজাঃ না না ঠিক আছে?
রিয়াতঃ দেখুন, মিথ্যা বলবেন না। মেয়েরা আইসক্রিম কখনো না বলে না।
লিজাঃ মুচকি হেসে। ওকে।
নতুন প্রেম
দুজন আইসক্রিম খাচ্ছে এর মধ্যে রিপা এসে দুজনার সাথে গল্প জুড়ে দিলো। রিপাষ্ঠানে থাকা কালীন পুরোটা সময় রিয়াত বারবার শুধু লিজার দিকে তাকিয়ে ছিলো। লিজার চোখে চোখ পড়লেই আবার চোখ নামিয়ে নিতো।
রাতে রিয়াত রিপার রুমে গিয়ে বললো,
রিয়াতঃ বোন আইসক্রিম খাবি?
রিপা ভ্রু কুচকে বলল,
রিপাঃ মাখন লাগানো লাগবে না। কী চাই বল?
রিয়াতঃ লিজার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?
রিপাঃ না। প্রচন্ড ভালো মেয়ে লিজা। দেখতে যেমন সুন্দর মনটা তার থেকে বেশি সুন্দর। প্রেম নামক ঝামেলায় জড়ানোর ইচ্ছা ওর নেই। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। ওর বাবা মা যেখানে বলবে সেখানেই বিয়ে করবে। আর যদি ফোন নাম্বার বা ফেইসবুক আইডি চাস তাহলে কালকে শপিং এ নিয়ে যেতে হবে।
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে দম ফেললো রিপা।
রিয়াতঃ তুই কিভাবে বুঝলি?
রিপাঃ আমি তোর মত গাধা না। কলেজে থাকাকালীন সারাটা সময় তুই শুধু লিজার দিকেই উল্লুকের মত তাকিয়ে ছিলি। তোর লজ্জা লাগে না।
রিয়াতঃ কিসের জন্য?
রিপাঃ তোর ছোট বোনের বান্ধবী। সেও তো ছোট বোনের মতই। তার দিকে নজর দেয়া পাপ!
রিয়াত রিপাকে ধমক দিয়ে বলল,
রিয়াতঃ চুপ কর। ও আমার কোন জন্মের বোন রে? আর খবরদার লিজাকে নিষেধ করে দিবি ও যেনো আমাকে কখনো ভাইয়া বলে না ডাকে। আজ যখন ভাইয়া বলে ডাকছে মনে হয়েছে যেনো কলিজায় গিয়ে তীর মারছে। এখন নাম্বারটা দে বোন বা ফেইসবুক আইডি!
রিপাঃ আর আমার শপিং…
রিয়াতঃ ওকে ডান।
তারপর রিপার কাছ থেকে ফোন নাম্বারতো নেয় কিন্তু কল দেবার সাহস রিয়াতের হয় না।
প্রায় লিজাদের কলেজের সামনে যেতো। একদিন সময় সুযোগ বুঝে লিজাকে প্রপোজ করলো। কিন্তু লিজা বললেছিলো, আপনি যে আমাকে সত্যি ভালোবাসেন তার কী প্রমাণ আছে?
ভালোবাসার কান্না
পরের দিন বিকালে রিয়াত তার পুরো পরিবারকে নিয়ে লিজাদের বাসায় যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। লিজার বাবা বলে কয়েকমাস পর লিজারে ফাইনাল পরীক্ষা। বিয়েটা যদি পরীক্ষার পর হতো তাহলে ভালো হতো।
তারাও রাজি হয়ে যায়। ওদের বিয়ে তো ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু লিজা রিয়াতের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলে না। সবসময় এভোয়েট করে। রিয়াতের এগুলোতে খুব কষ্ট লাগে কিন্তু কিছু বলেনা। কিন্তু এভাবে থাকতেও পারে না। তাই রিপাকে দিয়ে তনায়াকে নিজের বাসায় আনলো। সেদিন রিয়াতের বাবা মা বাড়ি ছিলো না। আর রিপাও দুজনের কথা ভেবে বাইরে চলে যায়।
রিয়াত এসে লিজার পাশে বসে। আর লিজা আরেকটু দূরে সরে যায়।
রিয়াতঃ লিজা, তুমি কি এ বিয়েতে খুশি না?
লিজাঃ আমি কি সেটা বলেছি?
লিজাঃ তাহলে তুমি আমাকে এভাবে এভোয়েট কেন করো?
লিজা নিশ্চুপ।
রিয়াতঃ কি হলো চুপ করে আছো যে, প্লিজ কিছু বলো?
লিজাঃ আমি বাড়ি যাবো!
রিয়াতঃ ঠিক আছে, তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও?
লিজা উঠে চলে যেতে চাইলে রিয়াত লিজার হাতটা ধরে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসতেই লিজা বলল,
লিজাঃ কী হচ্ছে ছাড়ুন।
রিয়াতঃ এই মেয়ে আমি কী তোমার সাথে কোন খারাপ কিছু করেছি? নাকি তোমাকে খারাপ কোন প্রস্তাব দিয়েছি? তোমাকে সারা জীবন ভালোবাসতে চেয়েছি এটুকু কী আমার অন্যায়?
লিজাঃ রিয়াত ছাড়ুন, আমার হাতে লাগছে!
রিয়াত তনায়াকে ছেড়ে দিয়ে সরি বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
লিজাও বাড়ি যাবার জন্য বাইরে নামতেই দেখলো ওর মোবাইলটা ভেতরে ফেলে এসেছে।
তাই আবার ভেতরে গেলো। হঠাৎ রিয়াতের রুম থেকে কাচ ভাঙার শব্দ এলো। লিজা ধিমী পায়ে রিয়াতের রুমের সামনে যায়। এরপর সে আস্তে করে রেজারটা খুলে দেখে রিয়াত এর হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। আর নিচে কিছু কাচের গ্লাসের ভাঙা টুকরো।
আর রিয়াত ওর টেবিলে রাখা লিজার ছবির দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত কাঁদছে। লিজা জানে, খুব বেশি কষ্ট না পেলে ছেলেরা কাঁদে না।
লিজা রিয়াতের রুমে ঢুকে রিয়াতের হাতটা ধরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। রিয়াত শুধু লিজার দিকে তাকিয়ে আছে।
লাজুক প্রেম
লিজা কিছুটা শক্ত গলায় বলল,
লিজাঃ রাগটা কার ওপর দেখালেন?
রিয়াতঃ নিজের ওপর।
লিজাঃ কেন?
রিয়াতঃ এ হাতটা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই।
লিজাঃ আপনি জানেন, আমি একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসি।
কথাটা শুনে রিয়াতের খুব কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও জিজ্ঞেস করলো,
রিয়াতঃ কাকে?
লিজাঃ জানেন, এত দিন জানতাম সে আমাকে খু্ব ভালোবাসে। তাই তার ভালোবাসার সত্যতা যাচাই করতে এতদিন তাকে খুব এভোয়েট করেছি। খুব কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আজ জানলাম, সে আমাকে একটুও ভালোবাসে না।
রিয়াতঃ মানে?
লিজাঃ যদি সে আমাকে ভালোবাসতো তাহলে নিজের হাত কেটে এভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারতো না!
রিয়াত কিছু বলছে না শুধু লিজার দিকে তাকিয়ে আছে।
লিজা রিয়াতের কাটা হাতটায় আলতো করে একটা চুমো দেয়। তারপর বলল,
লিজাঃ পাগল। আমার চোখ দেখে বোঝো না তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
রিয়াত নিজের বাহুডোরে লিজাকে নিয়ে বলল,
রিয়াতঃ খুব ভালোবাসি তোমায়।
হঠাৎ লিজার ফোনটা বেজে উঠায় লিজার ভাবনায় ছেদ পরে।
ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন এর দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে ওঠে লিজার। কারণ ফোনটা রিয়াত করেছে।
লিজা তাড়াহুড়ো করে ফোনটা তুললো।
লিজাঃ হ্য হ্যা হ্য হ্যালো রিয়াত?
পরের পর্ব- অবৈধ প্রেম – পর্ব ২