এলিয়েন – ভিনগ্রহের প্রাণীর গল্প: কথার এক পর্যায়ে এলিয়েন টা আমাকে ডেকে বলে, আরফা চলো তোমার রুমে যাই। আমি কিভাবে এখন সবার সামনে তাকে না করি। রাগ হচ্ছে এলিয়েন টার উপর। তবুও নিয়ে গেলাম আমার রুমে।
পর্ব ১
আমার যখন ৫ বছর, তখনই আম্মু আব্বু হৃদের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রাখেন। কথা থাকে আমরা দুজন যখন বড় হবো তখনই আমাদের বিয়ে হবে। হৃদ আম্মুর খালাতো বোনের ছেলে। আম্মুর কোন আপন বোন নেই। কিন্তু হৃদের মা আপন বোনের চেয়েও বেশি।
হৃদের মা আর আমার আম্মুর খুব ভালো সম্পর্ক দেখেই হৃদের মা বাবা আর আমার আম্মু আব্বু আমার আর হৃদের বিয়ে ঠিক করেন।
যাতে সম্পর্কটা আরো মজবুত হয়।
হৃদ আমার ৪ বছরের বড়।
হৃদ আর আমি এদিকে বড় হতে থাকি।
আন্টি আংকেল প্রায়ই আমাদের বাড়ীতে আসেন। আর আমরাও তাদের বাড়ীতে যাই।
এক সাথে ঘুরতে বেড় হই।
অনেক আনন্দ করি।
আমাদের পরিবারের সবাই আমার আর হৃদের বিয়ের কথা জানলেও আমরা দুজনের একজনও জানিনা আমাদের বাবা মা যে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।
হয়তো তারা চান নি এই খবর টা আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাক। বা আমরা পড়াশোনায় থেকে অন্য কোন চিন্তা ভাবনায় মগ্ন হই।
আমি যখন এস.এস.সি পাশ করি,
আন্টি সেদিন ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন।
আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান।
ভাবলাম, খালা তাই হয়তো অনেক খুশি হয়েছেন।
তাইতো এত মিষ্টি নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছেন।
আম্মু সেদিন পোলাও মাংস রান্না করেন আংকেলও আসেন।
আর সাথে হৃদও।
আমরা সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করি।
খাওয়া দাওয়া শেষে আন্টি আমাকে হঠাৎ করেই তার পার্স থেকে একটা আংটি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দেন।
আমি অবাক হয়ে বলি,
এটা কেন আন্টি?
~ আরে এটা তোর গিফ্ট।
ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই।
আমি সেদিনও কিছু মনে করিনি। ভেবেছি আন্টি আমাকে ভাগ্নি হিসেবেই আংটি টা পরিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু অবাক তো হয়েছি আমি সেদিন,
যেদিন আমার এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়।
আর আন্টি এসে আমাকে বলেন,
এবার বউ সাজার জন্য রেডি হ।
বাকি পড়া তুই আমার বাড়ীতে গিয়েই পড়বি।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানে?
~ আরে হৃদের বউ করে তোকে আমি আমার বাসায় নিয়ে যাবো।
তারপর যত পারিস পড়িস।
আমি সরাসরি তখন আর কোন কথা বলিনা আন্টির সাথে।
তবে সেদিন আন্টি চলে যাবার পর আম্মুকে জিজ্ঞেস করি,
~ আফসানা আন্টি কি বলে গেলেন এসব?
~ কি বল্লো তুই তো শুনেছিস ই।
~ শুনেছি তবে বুঝিনি কিছুই।
~ আমরা সবাই তোর আর হৃদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি ছোট বেলায়।
আর কথা ছিলো তোরা বড় হলেই তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো।
তো এখন তো বড় হয়েছিস।
তাই আফসানা চাচ্ছে তোকে হৃদকে দিয়ে বিয়ে করিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে।
আর পড়াশোনা নাকি ও ওখান থেকেই করাবে।
~ তোমরা কি বলছো ভেবে বলছো তো?
~ এখানে ভাবাভাবির কি আছে?
হৃদ ভালো ছেলে,
ভালো স্টুডেন্ট।
ছেলে হিসেবে ওর তুলনা হয়না।
সোজা শান্ত ছেলে।
~ তবে আমার তাকে একদম পছন্দ না।
আর আমি তাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
~ আরফা, আমরা বড়রা মিলে এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছি।
~ কিন্তু তোমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি।
কেননা, এটা তোমাদের ভাবা উচিৎ ছিলো বড় হয়ে আমাদের তোমাদের মতামত পছন্দ নাও হতে পারে।
~ তুই এত বড়ও হস নি যে ভালো মন্দ বুঝিস।
আমরা যা ঠিক করেছি তাই হবে।
আর আমি সবার সাথে কথা বলে তোদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।
আর তারপর ওখানে গিয়েই তুই অনার্সে ভর্তি হবি।
~ একটু আগেই না বললে আমি অত বড় হইনি।
তবে ছোট বেলায় বিয়ে দিতে চাচ্ছো কেন?
আর আমি তো কোনদিনও ওই হৃদ কে বিয়ে করবোনা।
~ কেন করবিনা? কারণ টা বল আমাকে।
~ কারণ ও একটা হাবলা মার্কা ছেলে।
এই যুগেও সে মাঝ খানে সীঁথি কাটে চুলে।
চশমা পরে,
চেক শার্ট ছাড়া কোন দিন একটা টিশার্টও পরতে দেখিনি আমি তাকে।
মাথা নিচু করে চলা ফেরা করে।
যেখানে ছেলেরা চলবে বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে।
সেখানে এই ছেলে চলে মাথা নিচু করে।
আজ পর্যন্ত দেখলাম না কোন মেয়ের সাথে সে কথা বলেছে।
এই যুগে এমন ছেলেকে ছেলে বলা যায়না।
এলিয়েন বলা যায়। ভিন্ন গ্রহের এলিয়েন।
আমার পক্ষে এই এলিয়েনকে বিয়ে করা সম্ভব না।
~ তুই আমার পেটে জন্মেছিস, আমি তোর পেটে না।
তাই আমি যা বলবো তোর তাই শুনতে হবে।
আমি তোকে ওই এলিয়েনের কাছেই বিয়ে দিবো।
আর তখনই হৃদ এসে হাজির,
~ বাবা তুই? কখন এলি? মায়ের সাথে এলি না কেন? তোর মা তো এই একটু আগেই চলে গেছে।
~ কাজ ছিলো একটা তাই আসতে পারিনি তখন।
আম্মু নাকি ভুল করে মোবাইল রেখে চলে গেছে, তাই মোবাইল টা নিতে আসলাম।
(এতই লাজুক যে এই এলিয়েন মার্কা ছেলে, মাথা উঁচু করেও কথা বলেনা।
কথা গুলো মাথা নিচু করেই বলছে)
~ ওহ হ্যাঁ, ওই তো তোর মায়ের মোবাইল।
তুই একটু বস আমি তোর জন্য চা করে নিয়ে আসছি।
~ আরফা, কথা বল তুই হৃদের সাথে।
আমি চা নিয়ে আসছি।
এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর এই এলিয়েন টা এসে হাজির।
~ এই যে, এমন হাবলার মত দাঁড়িয়ে না থেকে বসুন।
~ না না ঠিক আছে।
~ আপনি কি মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারেন না?
~ হুম পারিতো।
~ এমন হাবলার মত চুলের স্টাইল ক্যান আপনার?
এই যুগে এমন চুলের স্টাইল কেউ করে?
~ না মানে আসলে।
~ কাউকে ভালবাসেন?
~ না না, এসব আমি করিনা।
~ তা করবেন কেন? এসব পারলে তো করবেন।
এলিয়েন কোথাকার।
~ কি বললে?
~ বললাম আপনার মাথা,
~ তোমার কি মন খারাপ রেজাল্ট নিয়ে?
ভালো রেজাল্ট করেছো তো।
সামনে আরো ভালো করে পড়বে, আরো ভালো রেজাল্ট করবে।
~ তুমি চাইলে আমি তোমাকে পড়াতে পারি।
~ আপনার পড়া আপনি পড়ুন।
আমাকে পড়াতে হবেনা।
আর বেশি পাকনামো করতে আসলে মাথার চুল একটাও থাকবেনা।
একদম ন্যাড়া করে দিবো।
~ আরফা,
~ কি?
~ তুমি কি অবসরে নাপিতের কাজ শিখেছো?
~ হুয়াট?
রাগে শরীর ছমছম করছে,
আর আম্মু চা নিয়ে হাজির।
আম্মু আসতেই আমি ওখান থেকে চলে আসি।
হৃদ চলে যাবার পর আম্মু আমার রুমে এসে বলে,
~ আমি সবার সাথে কালই কথা বলবো,
তোর আর হৃদের বিয়ের ব্যাপারে।
তুই মেন্টালি প্রিপারেশন নে।
~ তবে তুমিও শুনে রাখো আম্মু,
তুমি যেমন আমার মা,
তেমনি আমিও তোমার মেয়ে,
আমি চিরকুমারী থাকবো,
তবুও ওই এলিয়েনকে বিয়ে করবোনা।
আর তখনই আমার মোবাইল ফোন টা বেজে উঠে,
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।
একা একাই বলছি,
~ এই নাম্বার আবার কার?
আম্মুর উত্তর~
রিসিভ কর রিসিভ কর, ওটা আমার এক মাত্র মেয়ের জামাই এলিয়েনের নাম্বার।
~ তুমি আমার ফোন নাম্বার ওই এলিয়েন টাকে দিয়ে দিয়েছো?
উফফ ইচ্ছে করছে মোবাইলটা এবার আছাড় মেরে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেই।
পর্ব ২
উফফ ইচ্ছে করছে মোবাইলটা এবার আছাড় মেরে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেই।
এলিয়েন টা বার বার আমাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে।
আম্মু এবার হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
ফোন টা রিসিভ করলাম আমি,
বার বার লাইন কেটে দেয়ার পরও ফোন দিচ্ছে বিধায় ফোনটা রিসিভই করা লাগলো।
~ হ্যালো জরিনা স্কিপিং।
~ স্কিপিং?
~ হয় স্কিপিং। ইংলিশও বুজেন না?
~ স্কিপিং না, স্পিকিং।
কিন্তু জরিনা? জরিনা কে?
~ জরিনা আবার কে, আমি জরিনা কইতাছি। আপনে কেডায়?
কারে চান কোথায় ফোন দিছেন?
~ না মানে আমি তো আরফাকে ফোন দিয়েছি।
এটা আরফার নাম্বার না?
~ জ্বে না, এইখানে কোনো আরফা টারফা থাকেনা।
এইডা আমার নাম্বার।
~ আচ্ছা সরি। রং নাম্বার।
~ জ্বে রাখেন তয়।
উফফ বাঁচলাম। এবার অন্তত বাঁচা যাবে এলিয়েন টার কাছ থেকে।
রাতে আম্মু আব্বুকে বলে দিলাম, ওই এলিয়েনকে আমার পক্ষে বিয়ে করা কোন ভাবেই সম্ভব না।
তোমরা আমাকে অনার্সে ভর্তি করবে কিনা বলো? নইলে আমার দু চোখ যেখানে যায় আমি চলে যাবো।
তখন আমাকে কোন দোষ দিতে পারবেনা।
আম্মু আব্বু দুজন তখন কিছুই বললেন না।
সকালে নাস্তার টেবিলে দুজনই বললেন,
আমাকে অনার্সে ভর্তি করে দিবে।
বিয়ের ব্যাপারে আর কোন কথা বলবেন না আপাতত তারা।
আমি তো মনে মনে খুব খুশি।
বাহ্ এক রাতেই সব চেঞ্জ।
সব আমার ইচ্ছে অনুযায়ীই হচ্ছে।
কিন্তু রাতেতো তারা কিছু প্ল্যান করেছে এটাতো কনফার্ম।
করুক যা খুশি তাই। আমার কি।
কিছু দিন পর আম্মু আব্বু আমাকে অনার্সে ভর্তি করে দিলেন।
এরপর হঠাৎ একদিন আফসানা আন্টি এসে হাজির,
সে পারে তো আমাকে কোলে নিয়ে বসে।
~ মারে, খুব ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা করবি।
তুইতো আমাদের গর্ব।
তুই ভালো রেজাল্ট করলে আমরা সবাই খুশি।
ভালো ভাবে অনার্স শেষ কর।
আমাদের দোয়া সব সময় তোর সাথে আছে।
কিছু ক্ষণ পর আমি সরে যেতেই আম্মু আর আন্টি কি যেন ফুসুরফাসুর করছে।
করুক যা খুশি তা।
আমি শুধু কলেজে গিয়ে নেই, ওখান থেকেই কাউকে পছন্দ করে দিবো গলায় মালা পরিয়ে।
কাহিনী খতম।
এর মাঝে প্রায়ই হৃদ আমাকে ফোন দেয়, আর আমি ওর সাথে জরিনা সেজেই কথা বলি। আর তারপর সে রেখে দেয়।
বেচারা আবার ফোন দিয়েছে,
আমি রিসিভ করে আবার জরিনা সেজে কথা বললাম,
এবার ওপাশ থেকে হৃদ আমাকে বল্লো,
~ জরিনা, তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
আমি তো এবার শকড।
কি বলে এই ছেলে।
চুপ করে আছো কেন জরিনা?
মানলাম রং নাম্বারেই আমাদের পরিচয়।
কিন্তু পরিচয় তো হলো, যেভাবেই হোক।
আর তুমি ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে আজ পর্যন্ত আমি ফোনে কথা বলিনি।
তুমিই প্রথম।
তাই বলছিলাম, তুমি যদি আমার বন্ধু হতে।
আমার কোন মেয়ে বন্ধুও নেই।
তুমি হলে তুমিই হবে আমার প্রথম মেয়ে বন্ধু।
~ আমার লগে আপনে বন্ধুত্ব করবেন?
আমার সম্পর্কে আপনে জানেন কিছু?
~ না জানি তাতে কি,
তুমি না হয় বলবে সব।
উফফ কি যন্ত্রণায় পড়লাম রে বাবা।
তবুও তো জরিনা সাজার কারণে আরফা বেঁচে গেলো।
মনে মনে বুদ্ধি আটলাম।
করেই ফেলি বন্ধুত্ব।
পরে এলিয়েন টাকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে।
আর আম্মু আব্বুকে বলে বিয়ের ভূত টাও তাড়ানো যাবে।
~ আইচ্ছা, আইজ থাইকা আমরা বন্ধু।
তয় আমারে আপনে যেকুনো টাইমে ফোন দিতে পারবেন না।
আমি যেহেতু মাইনষের বাড়ী কাম করি, আমার কাম যহন শেষ হইবো আমি আপনারে মিসকল মারুম আর আপনে ফোন দিবেন।
মাগার এস এম এস করা পারবেন যেকোনো টাইমেই।
কিন্তু আমি বুঝলাম না, আপনার মত একজন শিক্ষিত মানুষ আমার মত একটা কামের ছেমড়ির সাথে কেন বন্ধুত্ব করলেন।
~ তুমি একজন মানুষ এটাই তোমার বড় পরিচয়।
আর সেই জন্যই আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করলাম।
~ আইচ্ছা অহন রাখি।
আপায় ডাকে মোরে।
~ আচ্ছা ভালো থেকো।
আজ খুব হাসি পাচ্ছে, এলিয়েনটা এত বোকা ভাবা ই যায়না।
আজ কলেজে আমার প্রথম ক্লাস, আম্মু আব্বুর কাছ থেকে দোয়া নিয়ে গিয়ে পা রাখলাম কলেজে।
খুশি মনে গেলাম কলেজের ভেতর।
কিন্তু কলেজে ঢুকতেই হঠাৎ আমার হাসি ভরা মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।
পর্ব ৩
কলেজে ঢুকতেই হঠাৎ আমার হাসি ভরা মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।
কারণ সামনেই দেখি হৃদ দাঁড়িয়ে। হৃদকে দেখেতো আমি পুরো অবাক।
হৃদ কি করে এখানে?
আমনে যেতেই হৃদ আমাকে দেখে, আর ডেকে বলে,
~ আরফা, তুমি এখানে?
~ হ্যাঁ, আমি এই কলেজে ভর্তি হয়েছি।
আপনি এখানে কেন?
~ আমিতো এখানেই পড়ি।
আর কয়েক মাস পরই আমার মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে।
মনে মনে তো খুব বকা দিচ্ছি আম্মুকে।
উফফ, যেই কলেজে এই এলিয়েন পড়ে সেই কলেজেই আমাকে ভর্তি করতে হলো।
আগে জানলে কোন দিনও ভর্তি হতাম না এখানে।
~ আরফা,
~ জ্বী,
~ ভালোই হলো বলো, এখন মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হবে।
~ জ্বী।
~ এসো আমি তোমার ক্লাস দেখিয়ে দেই।
~ চলুন।
হৃদ আমাকে ঘুরে ঘুরে পুরো কলেজ দেখালো।
ক্লাস টাইম হলেই আমি হৃদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাসে চলে যাই।
ক্লাসে গিয়েই অনেক গুলো ফ্রেন্ড হয় আমার।
আর পুরাতন কিছু ফ্রেন্ডদের সাথেও দেখা হয়।
ক্লাসের প্রথম দিন খুব ভালো ভাবেই কাটে।
ক্লাস শেষ করে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই পেছন থেকে আমাকে হৃদ ডাকে।
~ আরফা,
~ জ্বী, বাসায় চলে যাচ্ছো?
~ না ঘুরতে যাচ্ছি।
~ আচ্ছা বেশি দেরি করোনা, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যেও নইলে আন্টি চিন্তা করবেন।
উফফ ছেলেটা ফানও বুঝেনা।
ঘুরতে যাচ্ছি বলেছি আর তাই বিশ্বাস করে নিয়েছে।
~ শুনুন, আমি বাসায়ই যাচ্ছি। ঘুরতে যাবো ওটা এমনিতেই বলেছি।
~ ওহ আচ্ছা, যাও তাহলে।
সাবধানে যেও।
সবাইকে আমার সালাম জানিও।
~ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার আসি?
~ হুম এসো।
বাসায় আসলাম, এসে গোসল করে বসেছি আর হৃদের মেসেজ।
~ জরিনা, সারাদিন কি কি করলে আজ?
আমি সারাদিন আজ কলেজে ছিলাম।
তুমি তো সারাদিনে একবার মেসেজ বা কলও দিলেনা।
খুব বিজি বুঝি তুমি?
~ মেসেজ টা পড়ে উত্তর দিলাম,
জ্বে আমি আইজ খুব বিজি। মেলা কাম করছি। তাই মেসেজ দিতে পারিনি ফেরেন্ড।
~ কোন ব্যাপারা না। খেয়েছো তুমি?
~ জ্বে না, মাত্র কাজ শেষ হইলো।
আর গোসল কইরা বসলাম।
~ আচ্ছা খেয়ে নাও তুমি। তারপর কথা বলছি।
~ আচ্ছা ঠিক আছে। আপনেও খাইয়া নেন।
হৃদ কে যেভাবেই হোক আরফা থেকে দূরে সরিয়ে জরিনাতে মগ্ন করতে হবে।
তারপরই তো হবে আসল খেলা।
খাওয়া দাওয়া করলাম,
আম্মু জিজ্ঞেস করলো, কেমন ছিলো আজকের দিন।
কিভাবে কাটালাম।
~ তোমাকে তোমাদের হৃদ সালাম জানিয়েছে।
~ ওহ, হৃদের সাথে দেখা হয়েছিলো?
~ হ্যাঁ।
~ কি কি বল্লো রে?
~ কি বলবে, কিছু বলেনি।
~ ও আচ্ছা।
~ হুম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দিলাম হৃদকে একটা মেসেজ।
~ হিলু ফেরেন্ড কি করেন?
~ এইতো লাঞ্চ করলাম। তুমি লাঞ্চ করেছো?
~ হয়।
~ আজ তোমাকে আমি ভাষা শেখাবো,
~ কি শিখাইবেন?
~ ভাষা শেখাবো, শুদ্ধ ভাষা।
~ আপনে কি আমার চিটার নাকি?
~ কিহ?
কি বললে তুমি আমাকে?
~ ওই যে ইংলিশে সার রে য কয়।
~ আরে ওটা চিটার না, ওটা হচ্ছে টিচার। অর্থাৎ শিক্ষক।
~ ওহ আইচ্ছা।
~ আইচ্ছা না বলো আচ্ছা।
~ ওহ আচ্ছা।
~ হুম ঠিক তাই।
আমি তোমাকে এইভাবে ছোট ছোট কথা গুলো শেখাবো। তারপর তোমাকে পড়ানোও শেখাবো।
~ হি হি হি আইচ্ছা, না না থুক্কু থুক্কু আচ্ছা।
~ গুড গার্ল। এইতো হয়েছে।
~ আইচ্ছা আপনার কুনো গালফেরেন্ড নাই?
~ না নেই।
~ কি বলেন? এই যুগে কারো গাল ফেরেন্ড না থাকে?
~ আসলে আমার বাবা মা আমার জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করে রেখেছেন।
~ তাইলে তো ভালাই। হেরেই বিয়া করবেন বুঝি?
~ হুম যদি ও রাজী হয়।
জানো, ওর নাম্বারে ফোন করতে গিয়েই আমি রং নাম্বারে তোমাকে পাই।
~ ওহ।
আচ্ছা হেই কি আপনারে পছন্দ করে?
মানে কবে বিয়া আপনাগো?
আসলে কবে বিয়ে সেটাতো বলতে পারবোনা। আর ও হয়তো আমাকে তেমন পছন্দ করেনা।
~ তাইলে এখন কি হইবো?
~ যা হবার তাই হবে। ও রাজি না হলে ওকে আমি জোর করে বিয়ে করবোনা।
জোরের বিয়ে তে সুখী হওয়া যায়না।
~ হুম।
আচ্ছা এখন বিদায়।
পরে কথা হবে আবার।
~ আচ্ছা ঠিক আছে.
এদিকে জরিনা সেজে আমি হৃদের সাথে বন্ধুত্ব চালিয়ে যাচ্ছি।
কথা বলছি, মেসেজ দিচ্ছি।
আর ওদিকে হৃদের সাথে আমার কলেজেও দেখা হচ্ছে।
আমার বান্ধবী কয়েক জন তো হৃদের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।
আমি ওদের বলেছি হৃদ আমার খালাতো ভাই।
~ তোরা কি দেখে আমার ওই এলিয়েন ভাইয়ের উপর ক্রাশ খাস তা আমার মাথায় আসেনা।
~ মনের চোখ দিয়ে দেখতে হয় বুঝলি?
ছেলেটা যে খুব সোজা শান্ত দেখলেই বোঝা যায়।
ওর বিয়ের পর ওর বউ এর সব কথা শুনবে।
ওকে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চালানো যাবে।
আচ্ছা দোস্ত, তোর এত কিছু জানার দরকার নাই।
তুই শুধু আমার কথা টা একটু তোর ভাইকে বলে দে।
দেখবি আমি ওকে কতটা চেঞ্জ করে ফেলি।
আমি ওদের কথা উড়িয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসি।
এদিকে দেখি হৃদের মেসেজ।
আস্তে আস্তে হৃদ জরিনাকে কথা বলা শেখায়, ওকে পড়াশোনা শেখাচ্ছে টুকিটাকি।
সবই বন্ধুত্বের খাতিরে।
একদিন আমি হৃদকে জরিনা সেজে বললাম,
আমাকে কি আপনার দেখতে ইচ্ছে করেনা?
ও উত্তর দিলো, করে।
কিন্তু তুমি যদি দেখা না করো তাই বলিনা।
~ আচ্ছা আপনার হবু বউ যদি জানে আপনি অন্য এক মেয়ের সাথে কথা বলেন,
সে রাগ করবেনা?
~ যদি আমাকে বুঝে, আমাদের বন্ধুত্বকে বুঝে তাহলে রাগ করবেনা।
~ আচ্ছা আপনি কি সারাজীবন আমার বন্ধু হয়ে থাকবেন?
~ হুম ইচ্ছেতো আছে তাই।
ধীরেধীরে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর হচ্ছে।
আমরা আপনি থেকে তুমি করে বলি,
যদিও হৃদের কাছে এটা বন্ধুত্ব।
কিন্তু আমার কাছে এটা শুধু মাত্র একটা গেইম।
আজ কলেজে এসে কোথাও হৃদ কে দেখিনি।
দু চোখ আমার বার বার পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
ঠিক তখনই যুথী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে বল্লো…
পর্ব ৪
আজ কলেজে এসে কোথাও হৃদ কে দেখিনি।
দু চোখ আমার বার বার পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।
ঠিক তখনই যুথী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে বল্লো আরফা আরফা,
~ কিরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?
~ তোকে একটা কথা বলতে এলাম
~ তাতো বুঝতেই পারছি, কিন্তু এইভাবে দৌড়ে আসলি কেন? আমি কি চলে যাচ্ছি নাকি কোথাও?
~ অত কথা বলিস না,
আমার কথা টা শোন আগে।
~ হুম বল,
~ আই এম ইন লাভ।
~ বাহ্ এটা তো ভালো খবর।
~ হুম,
~ তো কে সেই মহা মানব যে কিনা আমার বান্ধবীর মন চুরি করেছে।
নাম টা শুনি।
~ সে আর কেউ নয় রে দোস্ত, তোরই ভাই হৃদ।
কথা টা বলেই যুথী লজ্জায় ওর দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেল্লো।
আর ওর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে টুপ করে মাটিতে পড়লাম।
কি বলছে এই মেয়ে।
~ ওই, কি বলছিস তুই?
~ হ্যাঁ রে আমি ঠিকই বলছি,
আমি জানি হৃদ একটু অন্য রকম। যাকে এ যুগের ছেলে মেয়েরা বলবে ক্ষ্যাত।
কিন্তু আমার কাছে ওমন ছেলেই পছন্দ।
আমি ওকে পরিবর্তন করে নেবো।
তুই শুধু আমার কথা টা ওকে বলে দে প্লিজ।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ দোস্ত। তুই আমাদের রিলেশন টা করে দে।
~ যুথীইই
~ হুম বল,
~ তুই পাগল হয়ে গেছিস। জাস্ট পাগল।
কথা টা বলেই আমি যুথীকে ফেলে একবারে বাসায়ই চলে আসলাম।
বাসায় এসে তাড়াতাড়ি করে হৃদকে ফোন দিলাম।
কিন্তু হৃদ ফোন তুলছেনা।
উফফ ও আজ কলেজেও আসেনি, আবার ফোন ও ধরছেনা।
আজ জরিনা সেজে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন যে জরিনা সাজতে গেলাম। এখন ফোন রিসিভ করলেও জিজ্ঞেস করতে পারবোনা যে কেন ও কলেজে আসেনি।
থাক, তবুও তো জানা যাবে ও কেমন আছে।
কিন্তু ফোন টাই তো রিসিভ করছেনা।
রিং বাজতে বাজতে অবশেষে এলিয়েন টা ফোন রিসিভ করেছে।
~ কই ছিলেন আপনে? ফোন কেন রিসিভ করেন নাই?
ওহ না সরি, কোথায় ছিলেন আপনি? ফোন কেন রিসিভ করছিলেন না?
~ আরে আমি আজ একটু ব্যস্ত।
তাই রিসিভ করতে পারিনি। তুমি কেমন আছো জরিনা?
~ ভালো আছি।
~ আজ কি কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে?
~ হ্যাঁ।
~ আচ্ছা শোনো, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
আমি একটু আরফাদের বাসায় যাচ্ছি।
~ আরফা?
~ ওই যে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে আমার বাবা মা।
~ ওহ।
~ ওই বাসায় কেন?
~ গিয়ে এসে তারপর সব বলি?
~ আচ্ছা।
~ তাহলে এখন রাখছি।
~ আচ্ছা ঠিক আছে।
এলিয়েনটা আমাদের বাসায় কেন আসছে কে জানে।
আসলে হৃদের জন্য আমার যত টুকু টান আছে সেটা হচ্ছে মায়া।
এ ছাড়া আর কিছু নয়।
ভালবাসা তো অন্য জিনিষ। তার প্রতি আমার ভালবাসা টা হবেনা হয়তো কোন দিনই।
কারণ সে আমার স্বপ্ন পুরুষ থেকে একদম আলাদা। পুরোপুরি বিপরীত মানুষ সে।
কোন ভাবেই তাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না।
কিছু ক্ষণ পর আন্টি আর হৃদ আমাদের বাসায় আসে।
আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আমাকে ডাকেন তারা। আমি গিয়ে হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলি।
কথার এক পর্যায়ে এলিয়েন টা আমাকে ডেকে বলে, আরফা চলো তোমার রুমে যাই।
আমি কিভাবে এখন সবার সামনে তাকে না করি।
রাগ হচ্ছে এলিয়েন টার উপর। তবুও নিয়ে গেলাম আমার রুমে।
~ হুম, বসুন।
~ বাহ্ তোমার রুম টা তো খুব সুন্দর।
~ এই প্রথম এলেন নাকি?
~ না আরেক বার মনে হয় এসেছিলাম কিন্তু এত সুন্দর ভাবে গোছানো ছিলোনা।
~ হুম গুছিয়েছি।
আমার গোছানো সব কিছু পছন্দ।
~ আর জীবন সঙ্গী কেমন পছন্দ?
~ এই ধরুন স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, কিউট এ সব কিছুই থাকতে হবে ওর মধ্যে।
যা আপনার মাঝে এর কিছুই নেই।
~ হ্যাঁ আমি জানি।
সব মেয়েদেরই একটা স্বপ্ন থাকে তার ভবিষ্যৎ বরকে নিয়ে। তোমারও থাকাটা স্বাভাবিক।
কিন্তু আন্টি আংকেল, মা বাবা যে আমাদের দুজনের..
~ হ্যাঁ আমি জানি।
কিন্তু দেখুন, আমার সাথে আপনি যান না।
আপনার সাথে আমাকে মানায় না।
আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
আমি আমার মা বাবাকে বলেছি।
আপনি আপনার মা বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলুন।
আমার কথা গুলো শুনে হৃদের মুখ টা কালো হয়ে গেলেও খুব মায়াবী একটা হাসি দিয়ে আমাকে ও বল্লো,
~ আমিও চাইনা জোর করে তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে।
বাবা মা তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন।
মা যখনই একটা নিজের জন্য নতুন শাড়ী কিনেছেন সাথে তোমার জন্যও একটা কিনেছেন।
তোমার জন্য কিছু গহনাও গড়ে রেখেছেন।
কিভাবে আমি না করবো তাদের বুঝতে পারছিনা।
~ আপনি বলবেন আমার আপনাকে পছন্দ না।
আমি চাইনা আপনাকে বিয়ে করতে।
~ সমস্যা নেই। তুমি চিন্তা করোনা, তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এ বিয়ে হবেনা।
ভালো থেকো।
মন দিয়ে পড়াশোনা করো। দোয়া করি তুমি যেন তোমার স্বপ্নের মত একজন জীবন সঙ্গী পাও।
~ আপনিও।
সেদিন হৃদ চলে যায়।
দু দিন পর আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে জানায়,
~ শেষ পর্যন্ত তোর ইচ্ছেই পূরণ হলো।
~ কি ইচ্ছে?
~ হৃদ নাকি তোকে বিয়ে করতে পারবেনা।
~ মানে?
~ ও সবাইকে বিয়ের জন্য না করেছে। ও নাকি তোকে বোনের মতই দেখে। তোকে নাকি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা।
~ ওহ। সবাই কি বল্লো?
~ কি আর বলবে, আফসানা তো কেঁদে কেঁদে অস্থির।
কথাই বলেনা দু দিন যাবত কেউ হৃদের সাথে।
খেতেও দেয় না কেউ।
রান্না করে রেখে দেয়। হৃদও হাত দিয়ে বেড়ে খায়না।
এই চলছে।
যা এবার তুই নিজে পছন্দ করে বিয়ে কর।
আমরা আর কোন ছেলে দেখবোনা তোর জন্য।
আম্মু চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো।
এলিয়েন টা আমার কথা বলেনি তাহলে। নিজের সবার চোখে খারাপ হয়ে গেলো।
যাইহোক, বিয়েটা তো ভেঙেছে। আজ তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমি কেন খুশি হতে পারছিনা।
এদিকে জরিনা সেজে আমি হৃদকে মেসেজ দেই।
হৃদ আমাকে মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ডিরেক্ট কল দেয়।
আর কল দিয়ে কাঁদতে থাকে।
শুনেছি ছেলে মানুষ সহজে কাঁদেনা।
ও আজ কাঁদছে কেন তাহলে?
~ কি হয়েছে কাঁদছেন কেন?
~ আমার বিয়েটা ভেঙে গেছেরে জরিনা।
~ তাতে কি? তাই বলে এই ভাবে কাঁদতে হবে?
~ আমি আমার জন্য কাঁদছিনা।
কাঁদছি দুই পরিবারের মানুষ গুলোর জন্য। কতই না কষ্ট পেয়েছেন তারা।
আমি হৃদকে বুঝালাম।
শান্তনা দিলাম।
বললাম, এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় যেন মন দেয়।
হৃদ প্রায় এক সপ্তাহ হয় কলেজে আসেনা।
আমি কলেজে এসে বসে আছি।
হঠাৎ আমার বান্ধবীরা আমাকে ডেকে বলে, আরফা দেখ দেখ।
~ কি দেখবো?
পেছনে তাকিয়ে আমি হা হয়ে যাই।
এ কি দেখছি আমি.
আমার এক বান্ধবী আমার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলে এভাবে কি দেখছিস?
~ ওই বল তো ছেলেটা কে?
আমি কি কিছু ভুল দেখছি?
~ না না তুই একদম ঠিক দেখছিস।
ওটা আর কেউ নয় তোর ভাই হৃদ ই।
হৃদকে তো চেনাই যাচ্ছেনা।
ও তো আর আগের হৃদ নেই।
পুরোপুরি চেঞ্জ।
উফফ কি স্মার্ট লাগছে আজ হৃদকে।
কি তার চুলের স্টাইল, কি ড্রেসাপ।
একটা ছেলে এত কিউট হয় কি করে?
আমার একেক বান্ধবী একেক টা কথা বলে যাচ্ছে।
আর হৃদ ধীরেধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,
~ দেখো তো ওকে চেনো কিনা,
পর্ব ৫
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,
~ দেখো তো ওকে চেনো কিনা,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
যুথী তুই?
~ সারপ্রাইজ।
~ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
~ দেখতো তোর ভাইকে কেমন লাগছে।
চেনা যায়?
পুরোই চেঞ্জড না?
~ হুম একদম।
~ দেখেছিস, বলেছিলাম না, হৃদ ওর ভালবাসার মানুষ টার জন্য নিজেকে পুরো বদলে ফেলবে?
~ তারমানে তুই…
~ হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস।
~ আমাকে কেমন লাগছে বলো তো আরফা?
~ হুম ভালো।
আচ্ছা আমি আসছি।
~ আরে শোন না, কোথায় যাচ্ছিস?
~ বাসায় যাবো।
~ একটা থ্যাংক্স তো দিতে দিবি অন্তত।
~ থ্যাংক্স? কিসের জন্য?
~ এই যে তুই আমার বান্ধবী না হলে আমি হৃদকে চিনতাম না।
আর হৃদকে না চিনলে ওকে পেতামও না।
থ্যাংক্স দোস্ত।
~ ওহ, আচ্ছা।
আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি।
আমি ওদের ওখানে রেখেই বাসায় চলে আসি।
~ কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?
~ ভালো লাগছিলোনা তাই।
~ ওহ। যা তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে।
~ হুম যাচ্ছি।
ফ্রেশ হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলাম।
কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে আজ।
চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম, সবই তো আছে।
তাহলে কি নেই?
কেন এই শূন্যতা অনুভব করছি?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম হৃদের নাম্বার।
হৃদ ফোন ধরছেনা।
মেসেজ দিলাম,
মেসেজেরও কোন রিপ্লাই নেই।
মানুষ অল্প কিছু সময়ের মাঝে এতটা পরিবর্তন হতে পারে?
আমার কলও ধরছেনা।
অনেক বার ট্রাই করার পর হৃদ আমাকে কল ব্যাক করলো।
~ এত বিজি আপনি? একটা বার ফোনও দিলেন না।
আর না কোন মেসেজ।
কিসের এত ব্যস্ততা আপনার?
~ জরিনা, তুমি আমার একজন ভালো ফ্রেন্ড। কিন্তু কথাটা ঠিক কিভাবে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছিনা।
~ কি এমন কথা যা বলার জন্য এত সংকোচ বোধ করছেন।
~ না আসলে, শোনো,
তুমি কিছু মনে করোনা আমি আর তোমার সাথে কথা বলা কন্টিনিউ করতে পারবোনা।
~ মানে কি?
~ মানে হচ্ছে, আমি আর তোমার সাথে কথা বলবোনা আজকের পর থেকে।
~ কেন বলবেন না?
কি করেছি আমি?
~ তুমি কিছু করোনি তবে আমার লাইলে কেউ একজন এসেছে যে কিনা চায়না আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কোন প্রকার কথা বলি।
~ বাহ্ পুরুষ মানুষ এরকমই, দু দিন যেতে না যেতেই একজন কে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিতে পারে।
~ ঠিক বুঝলাম না, কি বললে তুমি।
তুমি আমার ফ্রেন্ড, লাভার না।
আর তোমাকে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিলাম মানে?
~ আমি আমার কথা বলিনি,
আমি বলেছি আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার কথা।
তাকে ভুলতে আপনার দু দিনও সময় লাগলোনা, আবার জড়িয়ে গেছেন আরেক জনের সাথে।
~ ওহ আরফার কথা বলছো,
ও তো আমাকে লাইক করেনা। তাছাড়া যার কাছে আমার দাম নেই, তার মূল্য আমার কাছেও নেই।
ওকে মনে রেখেই বা কি লাভ।
আর আমি ওর থেকেও বেটার কাউকে জীবনে পেয়েছি।
যে আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।
~ ওহ তাই? আর এমনই ভালবাসে যে তার কথায় আজ আমাদের বন্ধুত্বও মাটি চাপা দিতে আপনি দ্বিধাবোধ করছেন না।
~ দেখো, তুমি আমার বন্ধু।
আর ও আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। ওকে তো আমি কষ্ট দিতে পারিনা।
~ আমরা কথা বললে ও তো আর জানছেনা।
আপনি ওকে না জানালেই পারেন।
~ সরি জরিনা, আমি ওকে ঠকাতে পারবোনা।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।
আমি তোমাকে ব্লক লিস্টে রাখলাম।
ভালো থেকো। তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।
~ শুনুন শুনুন,
হৃদ আমাকে কথা শেষ করতে দেয় নি।
তার আগেই লাইন কেটে দিয়ে আমার নাম্বার ব্লক করে দেয়।
এলিয়েন টা আসলেই এলিয়েন।
দয়া মায়া কিচ্ছু নাই। এত দিনের বন্ধুত্ব টাকে এভাবে শেষ করে দিলো।
ও না হয় স্বার্থপর বুঝলাম,
কিন্তু আমি?
আমি তো ওর থেকেও বেশি খারাপ। বাবা মায়ের এত দিনের দেয়া কথা আমি ভাঙতে পেরেছি।
আর ও এই অল্প ক দিনের সম্পর্ক ভাঙতে পারবেনা।
পরের দিন কলেজে গিয়ে দেখি যুথী আর এলিয়েন টা এক সাথে বসে আছে।
আর কি হাসাহাসিই না করছে।
খুব জমেছে বোধয় ওদের প্রেম।
আর যুথীও খুব খুশি,
দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর খুশি হবেই বা না কেন।
এত সুন্দর লাভার থাকলে কে না খুশি থাকবে।
এলিয়েন টাকে যে কখনো এত সুন্দর দেখাবে কল্পনাও করিনি কখনো।
এত সুন্দর করে হাসতেও পারে ছেলেটা, না দেখলে বুঝতামই না।
আমি চেয়ে আছি ওদের দিকে।
হঠাৎ হৃদের চোখ পড়ে যায় আমার চোখে।
আমি দেখেই না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম।
আর তখনই হৃদ আমাকে ডাকে,
আমি দাঁড়িয়ে যাই।
~ কেমন আছো?
~ জ্বী ভালো। আপনারা?
~ হ্যাঁ ভালো আছি।
~ আমরা খুব ভালো আছিরে,
~ আরো ভালো থাক দোয়া করি।
~ আন্টি কেমন আছে আরফা? আর আংকেল?
~ জ্বী ভালো আছে।
~ সবাইকে নিয়ে এসো আমাদের বাসায়।
~ হ্যাঁ আসবো।
~ আমাকে যেতে বলবেনা বুঝি?
~ উঁহু। তোমাকে বলবোনা,
একবারে তুলে নিয়ে যাবো।
~ ধুর দুষ্টু। লজ্জা লাগেনা বুঝি।
~ যুথী, তুই এত লজ্জাবতী কবে থেকে হলি?
আগে তো কখনো এমন লজ্জা পেতে দেখিনি।
~ ওসব তুই বুঝবিনা,
প্রেমে পড়লে মেয়েরা লজ্জাবতী হয়ে যায়। বিশেষ করে প্রেমিকের সামনে।
আগে প্রেমে পড়, তারপর বুঝবি।
~ প্রেম, ওমন ছেলে আর কই।
~ এখনো তোমার স্বপ্ন পুরুষ তুমি পাওনি আরফা?
চিন্তা করোনা খুব শীঘ্র পেয়ে যাবে দেখে নিও।
~ হুম দেখি।
আচ্ছা আমি আসি, থাকুন আপনারা।
~ আচ্ছা যাও।
কিছু দিন পরই হৃদের জন্মদিন।
আন্টি ফোন দিয়ে আম্মুকে বললেন হৃদ নাকি এবারের জন্মদিন টা ধুমধাম করে পালন করতে চায়।
তাই তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন।
আর আমরা যেন জন্মদিনের দিন সকাল সকালই ওই বাসায় গিয়ে পৌছাই।
আম্মু আমাকে আর আব্বুকে জানালো।
আব্বু বললেন,
যেই ছেলে এইভাবে আমাদের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য না করে দিলো তার জন্মদিনে আমাদের যাওয়া কি উচিৎ?
আমি উত্তর দিলাম,
কেন উচিৎ না বাবা?
~ তারাতো আমাদের আত্মীয়।
আর পরে যেই সম্পর্ক টা হবার কথা ছিলো সেই সম্পর্কের আগে থেকেই যেহেতু আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক আছে, সেহেতু আমাদের সেই সম্পর্কের খাতিরে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিৎ।
আম্মু হাফ ছেড়ে উত্তর দিলো,
আরফা ঠিকই বলেছে।
~ তাহলে আর আমি কি বলবো,
মা মেয়ে যখন যাবে, আমারতো তাহলে যেতেই হবে।
ঠিকাছে যাওয়া যাবে তাহলে।
কয়েক দিন পর.
আজ রাত ১২ টার পরই এলিয়েনটার জন্মদিন।
আমি যে ওকে উইশ টা করবো তারও কোন উপায় নেই।
নাম্বার টাও রেখেছে ব্লক করে।
রাত ১১.৪৫ এ আম্মুর মোবাইল টা আমার কাছে নিয়ে আসলাম।
আর আম্মুকে বললাম আমার একটু দরকার আছে তোমার মোবাইল টা। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই।
আর একটু পরেই এলিয়েন টার বার্থডে,
ঘড়ির কাটা যখন ১২ টা ১ ঠিক তখনই আমি আম্মুর মোবাইল থেকে হৃদকে ফোন দেই, আর ও রিসিভ করতেই সুরে সুরে বলি,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার হৃদ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
~ থ্যাংক ইউ সো মাচ।
তবে আমি কিছু টা শকড,
কে বলছো তুমি?
~ কেন?
~ নাম্বার আর ভয়েজের তো কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিনা।
নাম্বার বলে এটা আমার আন্টির নাম্বার।
আর ভয়েজ বলে, উইশ টা আমাকে জরিনা করছে।
কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।
জরিনা কিভাবে আন্টির নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিবে।
~ সরি।
~ সরি কেন?
~ আমি আরফা,
আর জরিনা নামে কেউ নেই।
আমিই এত দিন জরিনা সেজে আপনার সাথে কথা বলেছি।
আসলে আপনার ফোন টা রং নাম্বারে যায়নি সেদিন। রাইট নাম্বারেই গিয়েছিলো।
আমি আপনার সাথে ফান করেছি।
~ তাই বলে ভয়েজ ভাষা এত চেঞ্জ?
~ হ্যাঁ টেনে টেনে কথা বলেছি অশুদ্ধ ভাষায় আমিই।
আর এত কষ্ট করে ভাষা শুদ্ধ করেছেন আপনি, আমারি।
আর আপনার ব্লক লিস্টের নাম্বার টাও আমারি।
~ বাহ্ কি সুন্দর গেইম।
~ সরি। ক্ষমা করবেন আমাকে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি প্লিজ।
~ আজ একটা শুভ দিন বলে তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
অন্য কোন দিন হলে হয়তো করতাম না।
~ সরি বলেছিতো।
~ ইটস ওকে।
~ হুম।
আচ্ছা বলুন তো, প্রথম উইশ টা আমিই করেছি না?
~ না,
~ তাহলে?
~ যুথী করেছে।
~ কিভাবে? ফোনে তো আমিই কল দিলাম প্রথম।
~ কিন্তু ও আমাকে মেসেজ তোমার কলের আগে দিয়েছে।
আমি মেসেজ টা দেখেই তোমার ফোন রিসিভ করি।
~ ওহ ভালো।
আচ্ছা রাখছি।
~ আচ্ছা রাখো, সকাল সকাল চলে এসো।
~ আচ্ছা ঠিক আছে।
কোন কিছুতেই শান্তি লাগছেনা আজকাল কেন যেন।
কেন যেন মনে হয় আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলছি দিন কে দিন।
কিন্তু কি সেটা?
তবে কি সেই জিনিষ টা জীবন্ত সেই এলিয়েন?
তবে কি আমি ওর সৌন্দর্যের জন্য ওর মায়ায় আবদ্ধ হচ্ছি?
আমি কি তাহলে সুন্দরের পূজারি?
না না, আমি তো সেদিনই কেমন একটা অদ্ভুত আঘাত অনুভব করেছিলাম, যেদিন যুথী আমাকে এসে বল্লো ও হৃদকে পছন্দ করে।
কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করেছিলো সেদিন ওর কথায়।
তাইতো আমি সেদিন ওকে কিছু না বলেই বাসায় চলে এসেছিলাম।
আবার যেদিন আম্মুর মুখে শুনলাম হৃদ বাসায় ওর অমতের কথা বলে বিয়েটা ভেঙেছে সেদিনো তো ওর জন্য আমার খারাপ লেগেছিলো।
আবার যেদিন দেখলাম যুথী হৃদের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো, সেদিনই কেমন একটা ধাক্কা এসে লেগেছিলো বুকের ভেতর।
মাথাটা ঝিম ধরে গিয়েছিলো।
আসলে যখন থেকে আমি হৃদকে হারাতে শুরু করলাম তখন থেকে একটু একটু করে ওর মূল্যটা বুঝতে শুরু করলাম।
ও কি আমার কাছে সেটা বুঝতে শুরু করলাম।
আসলে আমি যেটাকে ওর প্রতি শুধু মায়া ভেবেছিলাম, সেটা ধীরেধীরে যে ভালবাসায় পরিণত হচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম না।
কিন্তু এখন আমি কি করবো?
আমি যে নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছি।
আমি কি হৃদকে সব খুলে বলবো?
মাফ চাইবো ওর কাছে?
ভিক্ষা চাইবো ওকে আমি ওরই কাছে?
আমি যে ওকে অন্যের হতে দেখতে পারছিনা।
আর তখনই যুথীর ফোন এলো আমার মোবাইলে।
~ হ্যাঁ বল, এত রাতে ফোন দিয়েছিস।
~ শোন না, আমি না খুব এক্সাইটেড আজ।
~ কেন কি হয়েছে?
~ হৃদ বলেছে আজ ওর জন্মদিনের পার্টিতে ও আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।
কি হতে পারে সেই সারপ্রাইজ টা, তা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি।
আর ও এই জন্যই বোধয় এত বড় আয়োজন করতেছে ওর বার্থডেতে।
~ কি সারপ্রাইজ?
~ আমার তো মনে হচ্ছে ও আজ আমাকে সবার সামনে আংটি পরাবে।
উফফ খুশিতে আমার আর ঘুমই আসবেনা আজ।
~ তোর পরিবারকে না জানিয়েই?
~ আমি আম্মুকে বলেছি হৃদের কথা।
আম্মু বলেছে কোন সমস্যা নেই।
আর সমস্যা থাকবেই বা কি করে বল, এত ভালো পরিবার। এত ভালো ছেলে। দেখতে এত হ্যান্ডসাম।
কেউ কি হাত ছাড়া করবে?
~ হুম তাইতো।
~ আচ্ছা বলতো আমি কোন শাড়ীটা পরবো?
~ শাড়ী? শাড়ী কেন পরবি?
~ আজব!আমার লাইফের এত বড় দিন আজ। আর আমি আমার ফেভারিট পোশাক শাড়ী পরবো না?
তুই বল না দোস্ত কোন শাড়ীটা পরবো আমি?
কোন শাড়ীটা পরলে আমাকে বেশি ভালো দেখাবে?
আর শোন, তুই এখন থেকে আমাকে আর নাম ধরে ডাকবিনা।
ভাবী বলে ডাকবি হি হি।
আমার আর সহ্য হচ্ছেনা এসব।
তাই সহ্যের সীমা টা ছাড়িয়ে যেতেই আমি আমার মোবাইল টা দেয়ালে ছুড়ে মারলাম।
আর মোবাইল টা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো
পর্ব ৬
আমার আর সহ্য হচ্ছেনা এসব।
তাই সহ্যের সীমা টা ছাড়িয়ে যেতেই আমি আমার মোবাইল টা দেয়ালে ছুড়ে মারলাম।
আর মোবাইল টা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
কিছুতেই আজ দু চোখ বুজতে পারছিনা আমি। ঘুমহীন চোখ।
সারা রাত ঘুমহীন কাটিয়ে দিলাম।
সকালে আম্মু ডেকে বললেন,
~ আরফা, উঠেছিস? কখন যাবি তোর আন্টির বাসায়?
~ যেতে ইচ্ছে করছেনা মা, তোমরাই বরং চলে যাও।
~ কি বলিস? রাতেই না বললি যাওয়া উচিৎ আমাদের। আর এখন বলছিস যেতে ইচ্ছে করছেনা।
তুই না গেলে আমরাও যাবোনা।
~ আচ্ছা আচ্ছা যাবো।
~ কখন যাবি? সকালে গেলেই তো ভালো হয়। সারাদিন একটু বোনের বাসায় থাকা যাবে। গল্প করা যাবে।
বিকেল থেকেই তো আবারর বাড়ী ভর্তি মানুষের সমাগম হবে।
গেলে সকালেই চল।
~ আচ্ছা,
~ তাহলে আমি নাস্তা বানিয়ে নেই। খেয়ে দেয়ে রেডী হ তাহলে।
~ ঠিক আছে।
আম্মুর নাস্তা বানানো হলে আমরা সবাই নাস্তা করে আন্টিদের বাসায় যাই।
আন্টিদের বাসায় পা রাখতেই কেমন যেন লাগছিলো।
আগে তো কখনো এমন হয়নি।
আন্টি আমাদের দেখে খুশিতে অনেক টা দৌড়ে আসেন, আর এসেই আমাকে আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরেন।
আমাদের নিয়ে বসতে দেন।
~ তোরা সকাল সকাল এসেছিস আমি কত খুশি হয়েছি।
বস আমি নাস্তা নিয়ে আসি তোদের জন্য।
~ আমরা খাওয়া দাওয়া করেই এসেছি। তুই এত তাড়াহুড়ো করিস না তো।
বস আমাদের সাথে।
~ কি ভাইজান, ভালো আছেন তো?
~ আলহামদুলিল্লাহ্ ভাই। আপনি কেমন আছেন?
~ জ্বী ভালো।
~ আসেন তো না এখন বাসায়,
~ আর ভাই ব্যস্ততায় সময় পাড় করছি।
আর যাবোই বা কোন মুখ নিয়ে ভাই,
ছেলেটা আমার যা করলো,
এরপর আর কিভাবে…
~ কি যে বলেন না ভাই।
এসব আমরা কবেই ভুলে গেছি।
এসব মনে করে সংকোচ বোধ করবেন না একদম।
আব্বু আর আংকেলের কথা শুনে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
কতই না কষ্ট পেয়েছেন তারা।
আবার হৃদকেও সবাই ভুল বুঝেছে।
অথচ দোষি তো আমি।
হৃদ নয়।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আমি,
কোথাও হৃদকে খুঁজে পাচ্ছিনা।
কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছিনা যে হৃদ কই।
আন্টি আমাদের সবাইকে নাস্তা খেতে দিলেন।
আমরা হালকা নাস্তা করলাম।
তারপর আন্টি আমাকে নিয়ে তার রুমে গেলেন।
~ আয় তোকে কিছু দেখাই আজ। না দেখালে হয়তো কোন দিন শান্তি পাবোনা আমি।
~ কি দেখাবেন আন্টি?
~ তুই বস এখানে।
আন্টি আমার ঘাড় ধরে আমাকে খাটে বসিয়ে দিলেন।
আমি বসলাম, আর আন্টি তার আলমারি খুললেন।
আমি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার আর হৃদের পরিবারের সবার এটাচ ছবি।
~ আন্টি, এই ছবি গুলোতো আগে দেখিনি।
যেদিন তোর ইন্টারের রেজাল্ট দেয়, সেদিন এসে লাগিয়েছিলাম।
তুইতো এর পর আর আসিস নি। তাই দেখিসনি।
~ ওহ।
আন্টি আলমারি খুলে অনেক গুলো শাড়ী বের করলেন,
আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে,
যেই শাড়ীই বের করছে, সব শাড়ীর ই ডাবল পার্ট আছে।
মানে এক রকমেরই দুইটা করে শাড়ী।
সেটা হোক পুরাতন ডিজাইনের কিংবা নতুন ডিজাইনের।
আন্টি শাড়ী গুলো বের করে বললেন, এগুলো সব আমি কিনেছি। নিজ হাতে কিনেছি,
জানিস এখানে একই রকমের দুটো করে শাড়ী কেন?
~ কেন আন্টি?
~ কারণ সব শাড়ী আমি আমার আর তোর জন্য মিল করে কিনেছি। একটা তোর আর একটা আমার।
ভেবেছি তোকে যেদিন হৃদের বউ করে ঘরে তুলবো সেদিন তোকে সব গুলো শাড়ী দিবো।
আর আমরা দুজন মিলে এল সাথে এক রকমের শাড়ী পরবো।
কিন্তু দেখ, কি ভাগ্য আমার।
ছেলেটা আমার সব স্বপ্ন মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো।
আমার এবার কলিজাটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে।
একজন মায়ের মনে এতটা কষ্ট দিলাম আমি?
~ আচ্ছা শোন, এই শাড়ী গুলো আমি না তোর বিয়েতে উপহার দিবো।
নিবি না?
বল না নিবি?
~ আন্টি এগুলোর উপর হৃদের বউ এর হক আছে শুধু।
আমার না।
আপনি তাকেই দিয়েন শাড়ী গুলো।
কথাটা কতটা কষ্টে যে বলেছি আমি তা শুধু আমিই জানি।
আন্টি এবার কিছু গহনা বের করে দেখালেন,
দেখ এই গুলোও আমি তোর জন্য গড়ে রেখেছিলাম।
আন্টি আমাকে সব দেখাতে দেখাতে এক সময় আমার হাতে দুইটা চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বললেন,
তুই তো কিছুই নিবিনা এসবের।
কিন্তু আমি চাই এই চুড়ি দুটো তুই নে।
~ প্লিজ আন্টি, এত দামী জিনিষ আমি নিতে পারবোনা।
~ একটা থাপ্পড় লাগাবো।
এই দুইটা আমি তোকে হৃদের মা হিসেবে না।
তোর মা হিসেবে দিলাম।
এই চুড়ি এখন খুললে তোর খবর আছে।
আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
আন্টিও কাঁদছে।
~ কাঁদিস না মা।
কাঁদিস না।
তুই খুব সুখী হবি, আমি দোয়া করি।
আমি মনে মনে বলি,
আমার সুখ যে তোমার বাড়ীতে আন্টি।
যা আমি এত দিনে বুঝেছি।
কিছু ক্ষণ পর আম্মু আসেন আন্টির রুমে,
কি রে কি করছিস তোরা?
আন্টি সব কিছু আলমারিতে রাখতে রাখতে বললেন,
~ এইতো, আরফাকে জিজ্ঞেস করছিলাম কোন শাড়ীটা পরবো।
আসলে আন্টি চাচ্ছিলেন না আম্মুকে এসব দেখাতে।
কারণ আম্মু খুব কষ্ট পাবে এগুলো দেখে।
সেই জন্য।
আমার হাতে স্বর্ণের চুড়ি দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করেন,
~ কিরে আন্টির চুড়ি পরেছিস?
তোর গুলো পরতে বললাম তখন দেখি পরলিনা।
~ আন্টির না,
ওরই এগুলো।
আমি ওকে দিয়েছি।
~ এত দামী জিনিষ ওকে দিলি তুই?
~ কেন আমার মেয়েটা কি কম দামী নাকি?
আম্মু আন্টিকে জড়িয়ে ধরলেন।
তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই আম্মু জিজ্ঞেস করলেন,
হৃদ কই রে?
হৃদকে যে দেখছিনা।
~ আর বলিস না, ও আজ কাল কি করে না করে কোন খবরই পাইনা।
ছেলে আমার বড় হয়ে গেছে এ কয় দিনে।
~ মানে?
~ এখন আর সাদাসিধে হৃদ নেই আমার।
এখন কেমন হয়েছে দেখলেই বুঝবি।
দুপুর হয়ে গেলো হৃদের কোন খবর নেই।
হয়তো যুথীকে নিয়ে ঘুরছে।
বসে আছি আমি হৃদের রুমে,
কি সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে রুমটা হৃদ। আন্টি একবার বলেছিলেন, হৃদের রুম হৃদ যে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে।
একদম গোছালো আমার ছেলেটা।
হঠাৎ চোখ গেলো ওর ডায়েরীর দিকে।
হাতে নিয়েও খুলার সাহস পাচ্ছিনা,
কারো অনুমতি ছাড়া তার ডায়রী পড়া নাকি উচিৎ না।
কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতে খুলেই ফেললাম ডায়রীটা।
ডায়রীর শুরু থেকে, সব ওর জীবনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী।
এক এক করে পড়তে লাগলাম আমি।
শেষমেস আমাকে নিয়ে লিখা ঘটনায় চোখ পড়লো আমার।
আরফা, আমার কাজিন হয়। মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। ওর মুখের দিকে তাকালে যে কেউ ওর মায়ায় আবদ্ধ হতে বাধ্য হবে।
ভাগ্যগুণে বাবা মা আমার এই মেয়েটার সাথেই নাকি বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।
যদিও মা বাবা বলার আগে আমি কখনো ওকে সেই নজরে দেখিনি।
কিন্তু যেদিন জানলাম, সেদিন থেকে ওর জন্য অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করতে শুরু করলো।
ওর জন্য হৃদয়ের অন্তস্থঃতল থেকে ভালবাসার ফুল ফুটতে লাগলো। আমি সাদাটে এক মানব। তেমন গুছিয়ে লিখতে পারিনা। কবি বা লেখক হলে হয়তো আরো সুন্দর করে লিখতে পারতো।
জীবনের প্রথম ভালো লাগা আমার আরফা।
এখন ভালবাসাও বলা যায়। ওকে আমি ধীরেধীরে ভালবেসে ফেলেছি। আমার খুব ইচ্ছে আমরা দুজন মিলে নদীর ধারে ঘুরতে যাবো।
এ কথা শুনলে হয়তো আরফা আমাকে পাগল বলবে,
মানুষ তার ভালবাসার মানুষ টাকে নিয়ে নামী দামি জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর আমি কিনা এই নদীর ধারে যাবার স্বপ্ন দেখি।
আরফা সেদিন ধবধবে সাদা একটা শাড়ী পরবে। আর সাথে থাকবে কালো রঙের ব্লাউজ।
যা আমি ওকে কিনে দিবো।
আর আমিও পরবো সাদা রঙের পাঞ্জাবী। কালো জিন্স প্যান্ট।
আরফা হয়তো বলবে, মানুষ লাল নীল হলুদ রঙ পরে ঘুরতে বের হয়।
আর আমরা কিনা সাদা কালো পরবো।
এ কেমন পছন্দ তোমার।
আর আমি তখন বলবো, আমি যে সবার থেকে আলাদা রে বউ।
এইটুকু পড়ার পর আমি লক্ষ্য করলাম আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে ডায়রীর পাতায় পড়লো।
দম নিতেও যেন আজ কষ্ট হচ্ছে আমার।
আমি জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলছি,
আমি এসব কিছুই বলতাম না রে হৃদ।
কারণ আমি জানি তুমি সবার থেকে আলাদা। আর তোমার পছন্দও সবার থেকে আলাদা।
তুমি যে আমার এলিয়েন।
আর তখনই হুট করে এসে কে যেন আমার হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে নিলো।
আমি তাকিয়ে দেখি হৃদ।
~ কি করছো তুমি এটা?
তুমি জানোনা, কারো অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়া উচিৎ না।
~ প্লিজ আমাকে শেষ করতে দিন।
আমি পড়বো ডায়েরী টা।
~ না,
আমি চাইনা যুথীকে নিয়ে লিখা ফিলিংস গুলো কেউ পড়ে নিক।
~ কথা দিলাম আমি শেষের দিকের কিছুই পড়বোনা।
শুধু আমার টপিক টুকু পড়েই আমি রেখে দিবো।
~ সরি। আমার ব্যক্তিগত ডায়েরী আমি ছাড়া শুধু মাত্র যুথীর পড়ার অধিকার আছে।
আর কারো নয়।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি পড়বোনা আপনার ডায়েরী। কিন্তু আজ আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই।
আজ না বলতে পারলে হয়তো আর কোন দিনও বলতে পারবোনা।
প্লিজ একটু শুনবেন?
~ কি বলবে বলো?
~ আমি ভণিতা করে কথা বলতে পারিনা, না পারি কাব্যিক ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে।
কিন্তু এসব না পারলেও আমি সোজাসুজি ভাবে কথা বলতে পারি,
তাই সোজাসুজি ভাবেই আপনাকে কথা টা বলছি,
হৃদ, আমি আপনাকে..
হৃদ এই হৃদ কোথায় তুমি?
উফফ এসেই নিজের রুমে ঢুকে গেছো? আমাকে বাইরে একা বসিয়ে রেখে।
কথা টা সম্পূর্ণ হবার আগেই যুথী চলে আসে।
আমি যুথীর দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর আচমকা একটা ঝড় বয়ে গেলো।
যুথীর পরনে ধবধবে সাদা রঙের একটা শাড়ী, আর কালো রঙের একটা ব্লাউজ।
আমি দেখে তাকিয়ে রইলাম।
আর যুথী আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বল্লো,
আমার ননদ টা তাহলে আমার আগেই এসে গেছে?
পর্ব ৭
আর যুথী আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বল্লো,
আমার ননদ টা তাহলে আমার আগেই এসে গেছে?
আমি কিছু বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
~ হৃদ তাড়াতাড়ি সাদা পাঞ্জাবী টা পরে নাও তো।
~ এক্ষুণি পরে আসছি, তুমি যাও গিয়ে বসো।
আরফা তুমিও যাও।
আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম।
কিছু ক্ষণ পর হৃদ একটা পাঞ্জাবী পরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
আমার নজর আটকে গেলো ওর দিকে চেয়ে।
~ কিরে কি দেখছিস?
~ না কিছুনা।
~ রাতে লাইন কেটে যাবার পর কত বার তোর নাম্বার ট্রাই করলাম।
আর গেলোই না।
~ ওহ।
~ শোন না, আজ না আমি খুব এক্সাইটেড।
এত্ত খুশি লাগছে আমার।
বিকেল হয়ে গেছে।
~ কিরে হৃদ, তোর গেস্ট রা এখনো আসছেনা যে?
~ এই তো আন্টি এসে গেছি আমরা।
হৃদের বন্ধুরা এসে গেছে।
এসে সবাই হৃদের সাথে আর যুথীর সাথে কথা বলছে।
আর কোন গেস্ট নেই আর বাসায়।
শুধু হৃদের বন্ধুরা, যুথী আমার পরিবার আর হৃদের পরিবার।
ওহ, তাহলে এ কয়জন নিয়েই ও অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং করেছে।
অযথা ও আমাদের ইনভাইট করতে বলেছে।
এখন যদি সবার সামনে এলিয়েন টা যুথীকে আংটি পরায়,
তখন আম্মু আব্বু কতই না আঘাত পাবে।
এই দুজন মানুষকে আসতে না বল্লেও পারতো।
হৃদের বন্ধুরা যুথীর সাথে আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে।
দিবেই তো, বন্ধুর বউ বলে কথা।
সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করলাম।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,
একটু পরই কেক কাটবে হৃদ।
আর সবার সামনে হয়তো বলবে ও যুথীকে ভালবাসে আর ওকে বিয়ে করতে চায়।
উফফ এসব ভাবতে পারছিনা আমি।
অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমি এগুলো ভাবতেই।
একা এসে দাঁড়িয়ে আছি হৃদের রুমের ব্যালকোনিতে।
হৃদ যেন কেন রুমে এসেছে,
~ আরফা, তুমি এখানে?
~ হ্যাঁ।
~ এখানে কি করো?
চলো যাই সবাই তো ওখানে অপেক্ষা করছে।
~ আপনি এখানে কেন তাহলে?
~ আংটি টা নিতে এসেছিলাম।
~ হৃদ আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
~ উঁহু এখন কোন কথা না, চলো আগে ওখানে যাই।
~ না হৃদ, আমাকে বলতে দিন প্লিজ।
আমি হাত জোর করে ওর সামনে হাত উঠাতেই ও আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,
~ এই চুড়ি তোমার হাতে?
~ হ্যাঁ আন্টি দিয়েছেন আমাকে.
~ কেন দিয়েছে?
এই চুড়ির উপর তো তোমার কোন অধিকার নেই।
এই চুড়ি তো আমার মা আমার হবু বউ এর জন্য রেখেছে।
~ চুড়ি খোলো,
~ কিহ?
~ আমি বলেছি চুড়ি খোলো।
এই চুড়ি তোমার নয়, এগুলো আমি যুথীকে দিবো।
~ না প্লিজ এই কথা বলবেন না, এই চুড়ি মা আমাকে দোয়া করে দিয়েছেন।
~ কি বললে তুমি?
মা? আন্টি বলো আন্টি।
চুড়ি খোলো, এই চুড়ির উপর যার অধিকার আমি তাকেই সেই চুড়ি দিতে চাই।
~ আমি দিবোনা এই চুড়ি।
~ কেন দিবেনা?
~ দিবোনা বলেছি দিবোনা।
আর আংটি কই দেখি,
এই যে এই আংটি টাইতো।
আর এই আংটাও আমার।
এবার পাঞ্জাবীর কর্লার ধরে এলিয়েন টাকে বললাম,
~ আর এই যে তুই, এই তুই টাও আমার। শুধুই আমার।
এই চুড়ির উপর, এই আংটির উপর যেমন শুধু মাত্র আমার অধিকার।
তেমনি তোর উপরও শুধু আমারই অধিকার থাকবে।
আর কারোনা। ক্লিয়ার?
কথা টা ঢুকেছে মাথায়?
সেই মুহূর্তে যুথী এসে বলে,
তাহলে আর কি,
~ হৃদ, সাদা শাড়ীটা কই রেখেছো? ওটাও দিয়ে দাও।
তাহলেই সব হয়ে যাবে।
আমি অবাক হলাম,
হৃদের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
মানে কি?
~ আগে পাঞ্জাবী তো ছাড়ো।
~ ওহ সরি।
~ এগুলো বলতে এত গুলো দিন লাগলো?
কতই না কষ্ট করতে হলো আমাদের।
আর ফাইনালি তুমি,
~ আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা।
~ আচ্ছা আমি বলছি,
আসলে হৃদের সাথে আমার কোন প্রেম এর সম্পর্ক নেই।
আমরা অনলি ফ্রেন্ড।
হৃদের বন্ধু তন্ময় আমাকে প্রপোজ করেছে, আর আমি সেটা এক্সেপ্ট ও করেছি।
আর তারপর তন্ময়ের কাছ থেকেই শুনি আমি হৃদ আর তোর বিষয়ে সব কিছু।
যে, তোর সাথে হৃদের বিয়ে হবার কথা।
আর আমি এ কথা শুনে খুব রেগে যাই,
যে তুই আমার এত ভালো বন্ধু হয়েও আমাকে এ কথা টা বল্লিনা।
গোপন করলি আমার কাছে।
তাই আমি সেদিন ফান করে তোকে গিয়ে বলি হৃদকে আমার পছন্দ।
যাতে তুই জ্বলিস আর সত্যি টা আমাকে বলিস।
কিন্তু আমি সেদিন তোর কোন রিয়েক্ট না দেখে খুবই অবাক হই।
আর তারপর কিছু দিন পর তন্ময়ের কাছে শুনতে পাই তোর আর ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে।
হৃদ পুরাই ভেঙে পড়ে তখন, শুধু কান্নাকাটি করে।
পরে ও তন্ময় আর আমার সাথে সব শেয়ার করে।
আর বলে, তোর নাকি স্মার্ট ছেলে পছন্দ।
তাই ও স্মার্ট হবে।
আর তাই ও নিজেকে তোর জন্য পরিবর্তন করে।
আবার এদিকে হঠাৎ একদিন হৃদের ফোনে কল আসে,
ও বের করতেই বলে জরিনার কল।
আমি আর তন্ময় জিজ্ঞস করি জরিনা কে?
তখন বলে, তোর মা নাকি তোর নাম্বার দিয়েছিলো ওকে।
আর ভুল করে কল নাকি রং নাম্বারে চলে যায়। আর তারপর থেকেই নাকি জরিনার সাথে ওর বন্ধুত্ব।
পরে আমি হৃদের ফোন নিয়ে নাম্বার টা দেখতে চাইলাম।
পরে দেখি, নাম্বারে কোন ভুল নেই।
ওটা তোরই নাম্বার।
আর আমি হৃদকে ১০০% শিউরিটি দিয়ে বলি, এটা তোরই নাম্বার।
তখন ও বুঝতে পারে জরিনা আসলে আর কেউ নয়।
তুই ই। তুই ই জরিনা সেজে ওর সাথে কথা বলিস।
আর তাই ও জরিনাকে মানে তোকে এভোয়েড করে, আর বলে আমাকে ও ঠকাতে চায়না।
যাতে এগুলো শুনে তোর মনের ঘুমন্ত ভালবাসাটা জাগ্রত হয়।
আর ফাইনালি আজ আমরা সাক্সেস।
আর হৃদ আজকের প্ল্যান কিন্তু তোর জন্যই করেছে।
আজ আমি হৃদ আর তন্ময় গিয়ে তোর জন্য সাদা শাড়ী কালো ব্লাউজ আর আংটি কিনি।
হৃদের বিশ্বাস ছিলো আজ তুই ওকে তোর মনের কথা বলবিই।
আর যদি আজ না বলিস তাহলে ও আর কোন দিন তোর দিকে তাকাবে না।
আর এই যে শাড়ী দেখছিস, এই শাড়ী আমাকে তন্ময় কিনে দিয়েছে। হৃদ না।
তন্ময় বল্লো দুই বান্ধবী পার্টিতে এক রকম শাড়ীই পরো।
উফফ ফাইনালি আমরা সাক্সেস।
এবার আমি ওখানে যাচ্ছি।
তোরা রেডি হয়ে আয়। কেমন?
যুথী চলে যাচ্ছিলো,
আমি যুথীকে পিছু ডেকে বলি,
~ যুথী,
~ হুম বল,
~ থ্যাংক ইউ রে।
~ হা হা হা, ওয়েলকাম মিসেস এলিয়েন।
তাড়াতাড়ি শাড়ীটা পরে আয়।
আমি হৃদের বুকে দুই তিন টা কিল ঘুষি দিয়ে বললাম,
~ আমার সাদাসিধে এলিয়েন টাই ভালো ছিলো।
স্মার্ট হৃদ টা খুব চালাক।
হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো,
হয়েছে এবার মান অভিমানের পর্ব শেষ করো।
আর এই নাও শাড়ী, এটা পরে ওখানে চলে আসো।
তারপর আমি শাড়ীটা পরে সবার সামনে যাই।
সবাই আমাকে শাড়ীতে দেখে খুশি হয়।
হৃদ কেক কাটার আগে সবাইকে বলে,
আমি আজ সবাইকে একটা গুড নিউজ দিতে যাচ্ছি,
আর এই গুড নিউজ টা দিতেই বিশেষ করে আমার বার্থডের আয়োজন করা।
সবাই জেনে খুশি হবেন যে, খুব তাড়াতাড়ি এই যে আমার কাজিন আরফা,
ওর সাথে আমার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাই আজ আমি সবার সামনে ওকে আংটি পরিয়ে দিতে চাই।
আর সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
সবাই খুব বেশি খুশি হয় এই কথা গুলো শুনে।
বিশেষ করে আমাদের দুই পরিবার।
তারপর আমার এলিয়েন টা আমাকে আংটি পরিয়ে দেয়।
আর আব্বু তখন তার হাত থেকে তার আংটিটা খুলে দিয়ে বলেন,
নে মা পরিয়ে দে হৃদের আঙুলে।
তারপর আমিও হৃদকে আংটি পরিয়ে দেই।
এরপর হৃদ আমার হাত ধরে কেকটা কাটে।
বাবা মা, বন্ধু বান্ধব সবাই হাসতে হাসতে হাত তালি দেয়।
এরপর একটা শুক্রবার দেখে হয়ে যায় ধুমধাম করে আমার আর আমার এলিয়েনের বিয়ে।
এখন আমাদের বিয়ের ৯ বছর চলে।
৭ বছরের আমাদের একটা ছেলে আছে।
ছেলেটা একদম বাবার মত হয়েছে।
মানে বাবা যেমন স্মার্ট হবার আগে ছিলো।
ছেলে আমার চুলের মাঝ খানে সীঁথি কাটে।
মাথায় এত্ত গুলা তেল দেয়।
এই বয়সেই সে চেক শার্ট ছাড়া কোন রকম টিশার্ট বা শার্ট পরেনা।
এক এলিয়েন নিয়েই পারিনা আমি।
আবার এলিয়েন টু এর জন্ম।
কেউ কি আমার ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাবেন নাকি হ্যাঁ?
বানাতে চাইলে আগে ভাগেই মেয়ের বায়োডাটা জমা দিন।
পরে কিন্তু সিরিয়াল পাবেন না হুম।
লেখা – তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এলিয়েন – ভিনগ্রহের প্রাণীর গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – যদি তুমি জানতে (১ম খণ্ড) – বাংলা প্রেমের গল্প কাহিনী