এক্স ফাইভ (১ম খণ্ড) – Bangla Super Human Story

এক্স ফাইভ – Bangla Super Human Story: হঠাৎই সাজিয়া উড়ে গিয়ে প্রাণীটির ঘাড়ে লাথি মারে। চোখ থেকে হাত সরায় প্রাণীটি। খপ করে ধরে ছুড়ে মারে সাজিয়াকে। কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত পাওয়ার আগেই সাজিয়া নিজেকে সামলিয়ে নেয়।


১ম পর্ব

ভোরের মিষ্টি আলো জানালা দিয়ে এসে পিউর মুখে পড়ে। কম্বল দিয়ে মুখ ঢাকতে ঢাকতে ওপাশ ফিরে টেডি বিয়ারকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে পিউ। শীতের সকাল। এতো সকাল কি আর ঘুম থেকে উঠা যায়?

বাবা মার এক মাত্র মেয়ে পিউ। নিজের মনের গোলাম। যা ইচ্ছে হয় তাই করে। পড়ালেখা শেষ করে ঘরে বসে আছে। ঘরে বসে আছে বললে ভুল হবে। বন্ধী করে রাখা হয়েছে ঘরে। বাসা থেকে বিয়ের চাপ। কিন্তু এরেন্জ ম্যারেজের তো মোটেও আগ্রহ নেই তার।

তার মতে লাভ ম্যারেজ ইজ বেস্ট। মন মতো কাউকে পেলে অনেক আগেই বিয়ে করে নিতো। কিন্তু বাবা মা মানতে নারাজ। উনাদের মতে এরেন্জ ম্যারেজ ভালো। যাই হোক। আজ তাকে দেখতে আসবে। গতকাল রাতে এ নিয়ে অনেক তর্ক হয়েছে মা বাবার সাথে। কিন্তু উনাদের নাকি ছেলে পছন্দ। ছেলে পক্ষেরও নাকি পিউকে দেখার প্রয়োজন নেই। তাও আসবেন।

সকাল ৯টা ৪০মিনিট
অনেক্ষন ধরে দরজায় নক করছেন মা। কিন্তু ঘুমের জন্য কিছুই বুঝতে পারেনি পিউ। আরও জোড়ে জোড়ে দরজায় ডাকতে থাকেন মা। এবার ঘুম ভাঙ্গে পিউর। খুবই বিরক্ত লাগে তার। সে জানে তাকে কেন ডাকা হচ্ছে। ছেলে পক্ষ আসবে তাই রেড়ি হতেই ডাকা হচ্ছে।

বিছানায় থেকেই দরজার দিকে তাকায় পিউ। দরজার লকের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকে। আসতে আসতে দরজার লক ঘুরতে শুরু করে। কয়েক সেকেন্ড পরই দরজার লক খুলে যায়। মুখ ফিরিয়ে টেডি বিয়ারকে জড়িয়ে আবারও শুয়ে থাকে পিউ। দরজা খুলতেই মা ভেতরে আসেন।

~ কি রে? এতক্ষন ধরে দরজায় ডাকছি খুলতে দেরি করলি কেন? আর খুললি যখন তখন এসে আবার শুয়ে পড়লি কেন?
~ আমি কখন খুললাম?

~ একদম মিথ্যা বলবি না। তুই যদি না খুলিস তাহলে আপনা আপনি দরজা খুলে কি করে?

~ দরজা আগেই খোলা ছিল। তুমি খেয়াল কর নি।
~ এবার উঠ। আজ যে তোকে দেখতে আসবে মনে আছে? উঠ তাড়াতাড়ি।

~ উফ মা। বললাম আমি বিয়ে করবো না। তারপরও তোমরা

~ চুপ। থাপ্পর দিব এখন। জলদি ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে আয়। আর আজ তুই মত দে বা না দে। এই ছেলের সাথে তোর বিয়ে হবেই। মনে রাখিস।

রাগ করে রুম থেকে বেরিয়ে যান পিউর মা। মা বেরিয়ে যেতেই আবারও পিউ তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। খোলা দরজাটা আসতে আসতে এসে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হতে যায় পিউ। এর ভেতর আমরা একটু পিউর অতীত থেকে ঘুরে আসি।

সাধারন মানুষের মতোই একটা জীবন ছিল পিউর। হাসি ঠাট্টা বন্ধু বান্ধব সবই ছিল তার জীবনে। কলেজের সবার মন ভালো রাখাই যেন তার কাজ ছিল।

একদিন কলেজের অনুষ্ঠানের পর বন্ধু বান্ধবীদের সাথে বেড়াতে যায় পিউ। অনেক জায়গায় বেড়ানোর পর হঠাৎই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে জঙ্গলের মধ্যে আবিষ্কার করে।

কি হয়েছিল সে জানে না। কি করে জঙ্গলে এলো সেটাও সে জানে না। বন্ধুদের অনেক ডাকা ডাকি করলো কোনো সাড়া পায়নি সে। তারপর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অনেক কষ্টে নিজের বাসায় ফিরে পিউ।

বাসায় ফিরে দেখে তুলকালাম কান্ড। আত্মীয় স্বজন পুলিশ সবাই বাসায় গেন্জাম করছে। সাথে তো কান্না আছেই।
~ কি হয়েছে? (পিউ)

পিউকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকেন মা। আবারও যখন কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলো তখনই কষিয়ে একটা চড় মারলেন মা।
~ কি হয়েছে? বুঝতে পারছিস না কি হয়েছে? এতও দিন কোথায় ছিলি তুই? কার সাথে ছিলি? (মা)

~ সমাজে আমার আর মুখ রইলো না। (বাবা)
~ তোমরা কি বলছো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এতোদিন মানে। আমিতো আজই সকালে বেড়িয়ে ছিলাম। (পিউ)
~ তুই আজ ৩দিন ধরে বাড়ি ছিলি না। হায় হায় হায়। যদি আগে আমি সবার কথা শুনতাম তাহলে আজ এ অঘটন ঘটতো না। (মা)

~ আমি তো আগেই বলেছিলাম। মেয়েকে এতো পড়িও না। দেখো কেমন নাম উজ্জল করলো তোমাদের। (ফুফু)
~ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। হচ্ছেটা কি এসব। (পিউ)
~ অনেক হয়েছে। আর কোনো কথা শুনতে চাই না তোর। (মা)

বলেই চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচড়ে রুমে নিয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখে পিউকে। অথচ তাদের কথার কোনো মানেই পিউ খুজে পায় না।

কিছুক্ষন পর বিছানায় গিয়ে টেডি বিয়ারটাকে জড়িয়ে ধরে বসে পিউ। আর ভাবতে থাকে কি হয়েছিল তার সাথে? কেনই বা সবাই বলছে সে ৩ দিন পর ফিরেছে? বাইরের গন্ডগোল এখনও শোনা যাচ্ছে। এদিকে খুব ক্লান্ত লাগছে পিউর। ঘুমে দু চোখ ভারী হয়ে আসছে। কিন্তু বিছানা থেকে উঠে লাইটটা অফ করতে ইচ্ছা করছে না। লাইটের সুইচের দিকে নিজের কল্পনায় সুইচটা অফ করার কথা ভাবে। সঙ্গে সঙ্গে লাইট অফ হয়ে যায়।

চমকে উঠে পিউ। এটা কিভাবে হলো? আবারও টেষ্ট করার জন্য লাইট অন করার কথা ভাবে সুইচের দিকে তাকিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে অন হয়ে যায় লাইট। এবার লাইটের আলোয় ফুল এন্ড ফাইনাল টেষ্ট করার জন্য টেবিলের উপর রাখা পানির জগটার দিয়ে তাকিয়ে জগটি উপরে তোলার কথা ভাবে। সঙ্গে গ্লাস ও। কোনো হাতের স্পর্শ ছাড়াই শুধু মাত্র চোখের ইশারার মাধ্যমে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে সেই গ্লাস নিজের কাছে নিয়ে আসে পিউ। আশ্চর্য! এটা কি করে হতে পারে!

এসব পাওয়ার তার ভেতর কোথা থেকে এলো? তবে কি সেদিন যখন অজ্ঞান হয়েছিল তখন এমন কিছু তার সাথে হয়েছে যার ফলে এই পাওয়ার তার শরীরে প্রবেশ করেছে। এসব ভেবে ভেবে খুব ঘাম আসছে। ফ্যানটা ফুল স্পীডে ছেড়ে বিছানায় চোখ বুঝে শুয়ে থাকে চুপ করে।

এমনিতেই চোখ খোলে ফ্যানের দিকে তাকাতেই আরও আশ্চর্য হলো। ফ্যানের প্রতিটা পাখা সে স্পষ্টভাবে দেখতে পারছে। এতো দ্রুত ঘুরার পরও পিউ সেটি দেখতে পারছে। প্রতিটি পাখা যেন খুবই স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।

পিউ ভাবে কি হচ্ছে তার সাথে? বাসার সবাই বলছিল সে তিন দিন পর বাসায় ফিরেছে। তাহলে কি এই তিন দিনে এমন কিছু তার সাথে ঘটেছে যার ফলে এই অলৌকিক শক্তি সে পেয়েছে? মনে মনে খুশি হয় পিউ। একবার ভাবে সবাইকে জানাবে তার শক্তির কথা।

কিন্তু পরোক্ষনেই মনে হয় এখন কেউ তার কথা বিশ্বাস করবে না। আর শুনেছে অলৌকিক শক্তির কথা সবাইকে বললে সেটা নাকি চলে যায়। তাই আর না বলাই ভালো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এই শক্তির কথা জানেনা।

এবার বর্তমানে ফেরা যাক
ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে যায় পিউ। টেবিলে বসে ব্রেডে জেলি লাগাচ্ছে মন খারাপ করে। এটা দেখে বাবা বলেন,
~ মন খারাপ কেন?

~ কই?
~ মন খারাপ করও আর যাই করো এই ছেলের সাথেই বিয়ে হবে।

~ তোমরা নিজেরা ছেলে পছন্দ করে নিলে। একবারও তো আমার মতামতটা জানতে চাইলে না।

~ তোর আবার মতামত কিরে? অনেক কষ্টে এই ছেলে তোকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে বুঝলি। (মা)
~ দয়া? (পিউ)
~ অবশ্যই। না হলে তোর মতো মেয়েকে কে বিয়ে করবে? সবাই জানে তুই তিন দিন বাড়ি ছিলি না। (মা)
~ মানুষ তো মাসের পর মাস বাড়ি ছাড়া থাকে। তাদের কি সবাই দয়া কর
~ তোমার কথা আলাদা। এ নিয়ে আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না। আর আজ যেন কোনো ঝামেলা না হয় বলে দিলাম।

একথা বলেই চেয়ার থেকে উঠে চলে যান বাবা। এরপর পিউও নাস্তা রেখে নিজের রুমে চলে যায়।

দুপুর ১টা ৩০মিনিট
পাত্র পক্ষের সামনে নীল শাড়ি পড়ে বসে আছে পিউ। আড় চোখে দেখে তাদের। হবু শাশুড়িকে দেখে মনে হচ্ছে আলিফ লায়লার রাক্ষুসি। যেমন তার ভয়ঙ্কর রাগি চেহারা তেমন তার মুখের কথা।

যেন জন্মের পর মুখে মধু দেওয়া হয়নি। হবু শ্বশুড়, উনার মুখ থেকে টাকা ছাড়া কোনো কথা বের হয়েছে বলে মনে পড়ে না। আর গুনধর হবু বর মশাই। তিনি তো কি সুন্দর সবার সামনে সিগারেট টানছেন। চেহারা দেখে মন হচ্ছে বয়স ৩৯ এর কম হবে না। তাদের কথা বার্তায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে তারা ছেলের জন্য বউ নয় বরং কাজের মেয়ে নিতে আসছেন। আর পিউর বাবা মায়ের কথায় ও বুঝা যাচ্ছে মেয়ের সুখের থেকে উনাদের সম্মান বড়।

এমন তো কিছুই ঘটে নি যার ফলে বাবা মায়ের সম্মান মাটি হবে! বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করাও হয়ে গিয়েছে। একবারও কেউ জানতে চাইলো না এ বিয়েতে পিউর মত আছে কি না। আগামী ৩১ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।

রাত ১১টা নিজের রুমে একা একা বসে আছে পিউ। এতটা পর কি ভাবে করে দিল সবাই? একবারও সত্যটা খুজার চেষ্টা করলো না কেউ? তিনদিন কি এতো বছরের বিশ্বাস উঠিয়ে নিতে পারে? খুব কান্না পাচ্ছে।

কিন্তু কাদতে ইচ্ছা করছে না। কাল থেকে সবাই বিয়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পরবে। কিন্তু এ বিয়ে হবে নিরবে। চুপি সাড়ে অন্যের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ধুমধাম করে সবাইকে জানিয়ে এ বিয়ে হবে না।

পরদিন থেকেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। শাড়ি গহনায় ভরে আছে পিউর বিছানা। তবে ছেলে পক্ষের কাছ থেকে একটা সুতোও আসে নি। তাদের দাবি মেয়েকে মেয়ের বাড়ি থেকেই সব দিয়ে দিতে হবে।

বিছানার উপর বসে শাড়ি আর গহনার দিকে তাকিয়ে আছে পিউ। কিছুক্ষন পর মা একটা সোনালী বক্স নিয়ে ঘরে ঢুকেন।

~ শাড়ি আর গহনা গুলো তোর পছন্দ হয়েছে?
~ আমার পছন্দ হওয়া না হওয়া সমান।
~ এই দেখ, এই বক্সের সব গহনা তোর দাদীর। সুন্দর না?
~ দাদীর গহনা? অনেক সুন্দর।
~ তোর জন্য রেখে গিয়েছিলেন উনি। উনার অনেক ইচ্ছা ছিল এসব গহনাতে তোকে বউ সাজে দেখবে
~ দাদী থাকলে হয়তো আমাকে বুঝতো।
~ চুপ কর।

বক্সটা বিছানায় রেখে রাগ করে বেরিয়ে যান মা। মা চলে যাওয়ার পর বক্সটা হাতে নিয়ে গহনা গুলো দেখতে থাকে পিউ।

৩১ ডিসেম্বর
আজ পিউর বিয়ে। গোলাপী বেনারসি আর দাদীর গহনায় অপরূপ রূপে সাজানো হয়েছে তাকে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নায় দেখছে নিজেকে। দাদীর গহনা গুলোতে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবছে দাদীর কথা। হঠাৎই চমকে উঠে পিউ। আয়নায় সে তার দাদীকে দেখছে।

এখনও সময় আছে। পালিয়ে যা। এ বিয়ে করিস না। আমার দোয়া সব সময় তোর সঙ্গে আছে।

আবারও মুছে গেল আয়নার সেই দাদীর মুখ। এটা পিউর কল্পনা। সঙ্গে সঙ্গে পিউর মাথায় আসে, পালিয়ে গেলে কেমন হয়? যে বিয়েতে শান্তি নেই শুধু মাত্র দায় নেভানো সে বিয়ে করার তো কোনো মানেই হয় না। আর যদি শ্বশুড় বাড়ির সবার ব্যবহার ভালো হতো তাহলেও এক কথা ছিল। এভাবেও মরা ওভাবেও মরা। এর থেকে পালিয়ে যাওয়াই ভালো।

আয়নার সামনা থেকে উঠে টেবিলের ড্রয়ার থেকে কাগজ বের করে একটা ছোট্ট চিঠি লেখে। তারপর তার উপর মায়ের দেওয়া গহনা গুলো রেখে দেয়। আলমারি খুলে ফটাফট নিজের কিছু কাপড় আর সার্টিফিকেট ছোট্ট একটি ব্যাগে ভরে নেয়।

সঙ্গে নেয় নিজের জমানো কিছু টাকা। এবার বেলকুনিতে গিয়ে বাসার পেছন দিকটা দেখে। কেউ নেই সেখানে। এটাই সুযোগ। একটা শাড়ি শক্ত করে জানালার সাথে বেধেঁ তা বেয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে আসে। তারপর দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পিউ।

রাত হয়ে গিয়েছে। এতক্ষনে বাসায় তুলকালাম কান্ড চলছে হয়তো। বিয়ের শাড়ি আর গহনা পড়ে রাস্তায় হাটছে পিউ। রাস্তার লোকজন বার বার তাকাচ্ছে তার দিকে। লোকজনের এমন তাকানো দেখে কেমন অস্বস্থি লাগছিল। তাই কিছুটা আড়ালে একটা গলির সামনে দাড়ালো পিউ।

হঠাৎই পিউর চোখ পড়ে একটা ছেলের দিকে। খুব দ্রুত দৌড়ের মধ্যে লোকজনের জিনিস পত্র ছিনতাই করে নিচ্ছে অথচ কেউ বুঝতেই পারছে না। সবাই দেখছে গরম বাতাস তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পিউ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ছেলেটিকে। এবার ছেলেটি আলোর গতিতে ছুটে আসে পিউর দিকে। এসেই পিউর ব্যাগ টান দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির হাত ধরে ফেলে পিউ। দাড়িয়ে যায় ছেলেটি। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পিউর চোখের দিকে।


২য় পর্ব

~ আপনি আমাকে দেখছেন?
~ হ্যাঁ স্পষ্ট ভাবেই দেখছি। আপনি এতক্ষন কি করছেন সবই দেখছি। আপনাকে দেখেতো মনে হয় না আপনি ছিনতাই কারী। ভালো মানুষের চেহারার নিচে এই রূপ?
~ সেসব পরে হবে আপনি প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন। পুলিশ ধরলে শেষ। আপনি দেখেছেন এখন পুলিশকে দেখাবেন। আপনার ব্যাগ আমি নিচ্ছি না। যাদেরটা নিয়েছি তাদেরটাও দিয়ে দিবো। প্লিজ ছাড়ুন।
~ আমার সাথে আসুন।

ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে গলির ভেতর ঢুকে যায় পিউ। ছেলেটিও চুপচাপ পিউর সঙ্গে যায়। তার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। কেউ যেন তার গলা চেপে ধরে আছে। গলি পেরিয়ে বের হয় তারা অপর একটি রাস্তায়। রাস্তায় এসে ছেলেটি বলে,

~ থ্যাঙ্কস। আমাকে পুলিশের হাত থেকে বাচানোর জন্য।
~ ওয়েলকাম।
~ একটা প্রশ্ন করবো?
~ জ্বী
~ আপনি এভাবে বউয়ের মতো সাজলেন কেন? আজ কি আপনার বিয়ে?
~ ছিল। পালিয়ে এসেছি।

~ কিইইইইই? পালিয়েছেন? তো আপনার বয়ফ্রেন্ড কোথায়?
~ বয়ফ্রেন্ড নেই।
~ বয়ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ কি এমনি এমনি স্বাধে পালায়। হাহাহাহা। তা কোথায় যাবেন বলুন। আমি পৌছে দিচ্ছি।
~ জানি না কোথায় যাবো। আপনি এবার আসতে পারেন। কেউ আপনাকে দেখেনি সেখানে ছিনতাইয়ের সময়। যান।
~ এতো রাতে আপনাকে আমি একা ছাড়তে পারি না। আপনি আমার সাথে চলুন। চিন্তা করবেন না আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না। আপনি আমাকে বিপদ থেকে বাচিয়েছেন।

অবশ্য বিপদটা আপনিই ডেকে আনছিলেন আর কি। আর তা ছাড়া রাতে একা ঘুরে বেড়ানো আপনার জন্য নিরাপদ নয়। তাও সঙ্গে এতো গহনা। সামনের রাস্তার মোরে আমার বাইক রাখা আছে। এতো হাটতেও হবে না। আসুন।

পিউ ভাবে এছাড়া আর কোনো উপায়ও তার কাছে নেই। এতো রাতে যাবেই বা কোথায়। কখন কোন বিপদ আসে বলা যায় না। তাছাড়া কথা বার্তায় মনে হচ্ছে না ছেলেটি খারাপ। তাই ছেলেটির কথায় রাজি হয়ে যায়।

নির্জন রাস্তা। গাড়িও তেমন একটা নেই। সকল দোকান বন্ধ। ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীত লাগছে খুব পিউর। সামনে একটা বাইক দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত এটাই ছেলেটির বাইক। বাইকের কাছে এসে কিছু একটা বলার জন্য পিউর দিকে তাকাতেই দেখে পিউ কাপছে।

~ আপনার কি ঠান্ডা লাগছে?
~ হ্যাঁ।
~ হয়তো আপনার ব্যাগে শীতের কাপড় আছে কিন্তু রাস্তায় তো আর ব্যাগ খুলা যাবে না। আচ্ছা এক কাজ করুন। আপনি আমার জ্যাকেটটা আপাতত পড়ে নিন।
~ না ঠিক আছে।
~ পড়ে নিন এখন বাইকের বাতাসে আরও ঠান্ডা লাগবে।

ছেলেটি জ্যাকেট এগিয়ে দেয় পিউর দিকে। পিউও আর কোনো তর্ক না করে জ্যাকেটটা পরে বাইকে উঠে।

কিছুক্ষন পর একটা বাসার সামনে এসে বাইকটা থামে। বাইক থেকে নেমে গেইটের ভেতর বাইক রেখে দরজা খুলে ছেলেটি।

অগুছালো একটা ঘর। সকল জিনিস ঘরে আছে ঠিকই কিন্তু অগুছালো। ঘরে আর কোনো মানুষও নেই। এটা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় পিউ। দরজা লাগাতে লাগাতে ছেলেটি বলে।

~ এটা হলো আমার বাসা। ছোট খাটো অগুছালো। ব্যাচেলররা যেমন থাকে আর কি।
~ আর আপনার পরিবার?

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ছেলেটি বলে,
~ সব কথা পরে হবে। আগে ফ্রেস হয়ে নিন। আমি কিছু খাবার গরম করছি।
~ ঠিক আছে।
~ আচ্ছা শুনোন আপনার নামটাই তো জানা হলো না।
~ আমি পিউ। আপনি?
~ আমি জিসান। যান ফ্রেস হয়ে নিন। ওয়াসরুমটা ওই দিকে।
~ থ্যাঙ্কস।

ব্যাগ থেকে কাপড় আর তোয়ালেটা বের করে ওয়াসরুমে যায় পিউ। এদিকে জিসান ফ্রীজ থেকে তরকারি বের করে চুলায় গরম বসায়। আর রাইচ কুকারে ভাত। তারপর তার রুমটা গুছাতে শুরু করে। বালিশের নিচে রাখা সিগারেটের প্যাকেট গুলো টেবিলের উপর রাখে। বিছানা ঝাড় দিয়ে সুন্দর করে চাদর বিছিয়ে নেয়। এরপর সামনের রুমে যায়। মেঝে থেকে তোশক তুলে ভেতরের রুমে রেখে এসে সম্পূর্ণ ঘর ঝাড় দেয়।

ঘর ঝাড় দেওয়া শেষ হতেই পিউ ওয়াসরুম থেকে বের হয়। ঘরের পরিবর্তন দেখে তো সে অবাক। এতো তাড়াতাড়ি ঘর গুছিয়ে ফেললো?

~ আপনি আসুন আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।

এই বলে জিসান রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। পিউও তার সব ব্যাগের ভেতর রেখে রান্না ঘরে যায়। গিয়ে দেখে রান্নাঘরে একটা টেবিলে ভাত বাড়ছে জিসান।

~ আমি সাহায্য করতে পারি? (পিউ)
~ না না। তার দরকার নেই। আপনি বরং বসুন। খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি। ঠান্ডা হলে ভালো লাগবে না (জিসান)
~ এসব কি আপনি রান্না করেছেন?
~ জ্বী। তেমন ভালো না হলেও খাওয়ার অযোগ্য নয়। বসুন। খেয়ে নিন।
~ আপনি খাবেন না?
~ জ্বী বসছি।

খেতে বসে তারা। কেউ কারো সঙ্গে কথা না বলে খাচ্ছে তারা। এদিকে পিউ মনে মনে ভাবে ছেলেটিকে বিশ্বাস করা ঠিক হচ্ছে তো? কিন্তু এছাড়া তো কোনো উপায়ও নেই। ওপর দিকে জিসান মনে মনে ভাবে এতো দিন হলো ছিনতাই করছি। আমি দৌড়ালে কেউ আমাকে দেখতে পায় না। কিন্তু এই মেয়ে কি করে দেখলো আমাকে?

খাওয়া শেষ করে রুমে আসে পিউ। কিছুক্ষন পর জিসানও রুমে এলো। এসেই টেবিলের উপর থেকে তোশকটা নিয়ে সামনের রুমে চলে যায়। দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে পিউকে। তারপর সামনের রুমে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়ে জিসান।

পরদিন সকালে
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রান্না ঘরে যায় পিউ। গিয়ে দেখে জিসান চা বানাচ্ছে। পিউকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলে,
~ Good morning (জিসান)
~ Good morning (পিউ)
~ ঘুম ভালো হয়েছে তো?
~ জ্বী।
~ বসুন। নাস্তা রেডি হয়ে গিয়েছে। আজকের নাস্তা নুডলুস আর চা। আমি আসলে সকাল বেলা এসবই খাই।
~ ভালোই তো।

নাস্তা খেতে শুরু করে দুজন। জিসান খাচ্ছে আর বার বার পিউর দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎই বলে উঠে জিসান।
~ একটা কথা জিজ্ঞাসা করি? কিছু মনে করবেন না তো?
~ জ্বী বলেন।
~ আমি বুঝতে পারছি না আপনি আমাকে কাল কি করে দেখলেন? এতো মানুষের হাত থেকে ফোন, ব্যাগ ছিনিয়ে নিলাম। অথচ কেউ আমাকে ধরা তো দূরের কথা দেখতেও পেলো না। একমাত্র আপনিই সেই মানুষ যে আমাকে প্রথম ছিনতাইয়ের সময় দেখলো সাথে ধরলোও।
~ আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই।
~ মানে!

তারপর পিউ খুলে বলে তার সাথে ঘটে যাওয়া সেই তিন মাস আগের ঘটনা। সব শুনে জিসান বলে,

~ আমি দুঃখিত আমি আপনাকে কষ্ট দিলাম।
~ না ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি এতো দ্রুত কি করে দৌড়ান? এতো দ্রুত তো রকেটও মনে হয় যায় না। কাল আপনাকে যা দেখলাম।
~ হাহাহাহা। এর উত্তরও আমার জানা নেই। হয়তো আমার মা বাবা জানতেন।

~ কোথায় আপনার বাবা মা?
~ জানি না।
~ জানিনা মানে!
~ তাহলে শুনুন।

জিসান চায়ের কাপ হাতে নিজে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। তার পিছু পিছু পিউও যায় বারান্দায়। তারপর জিসান বলতে শুরু করে।

~ আমার জীবনের ফেলে আসা দিন গুলো সাদা কাগজের মতো। যেন কেউ রাবার দিয়ে আমার জীবনের সেই দিন গুলি চির জীবনের জন্য মুছে দিয়েছে। আমি জানিনা কে আমি। কোথায় আমার বাবা মা। আমি অতীতেও কি এমন শক্তির অধীকারি ছিলাম?

যেদিন থেকে আমার নতুন জীবন শুরু হলো সেদিন আমি হাসপাতালে ছিলাম। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ছিল। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল ছুরির আঘাতের চিহ্ন। যখন চোখ খুললাম আমার আশে পাশে কয়েকজন ডক্টর আর নার্স ছিল। আর কেউ ছিল না। ডক্টরদের থেকে জানতে পারলাম উনারাই আমাকে রাস্তা থেকে হাসপাতালে এনেছেন। আমার নাম জিজ্ঞাসা করতেই বুঝা গেল আমার স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি কে। কি আমার পরিচয়। হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়া পেলাম তখন আমার যাওয়ার জায়গা ছিল না।

ডসোহান আমাকে উনার বাসায় নিয়ে যান। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। এই যে বাসাটা দেখছেন সেটা উনিই আমাকে দিয়েছিলেন থাকার জন্য। আমার নামটাও তিনিই দেন। এখানে আসার আগে আমাকে নিয়ে তিনি নিজের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

ডসোহানের কোনো সন্তান ছিল না। উনার স্ত্রীও উনাকে ভালোবাসতো না। শুধু মাত্র উনার সম্পত্তির লোভেই সংসার করছিল। উনার স্ত্রী আমাকে সহ্য করতে পারতো না। উনার ভয় ছিল ডসোহান যদি আমাকে সব লিখে দেন? কারন ডসোহান আমাকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতেন। উনার স্ত্রী আমার ক্ষতি করতে পারে বুঝতে পেরে তিনি এতো দূরে এই ছোট বাসাটা কিনেন আমার জন্য। এই বাসায় তিনি আমাকে নতুন করে জীবন শুরু করতে বলেন। দুটো বাইকও কিনে দেন।

আমাকে এখানে রেখে যাওয়ার পর অনেক দিন কোনো যোগাযোগ করেন নি। উনার খুজ নিতে আমি হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি দুদিন আগে তিনি ভীষন অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমার এখনো বিশ্বাস হয় না একটা জ্বল জ্যান্ত মানুষ হঠাৎ এতটা অসুস্থ হয়ে কি করে মারা যেতে পারেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস উনার স্ত্রী উনাকে খুন করেছে।

~ আপনি কি আর উনার বাসায় যান নি?
~ না। ডসোহান আমাকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছিলেন আমি যেন কখনো উনার বাসায় না যাই। যেদিন ডসোহানের মৃত্যুর খবর পেলাম সেদিন থেকে নিজেকে খুব একা মনে হয়।

~ আপনি কেন এই ছিনতাইয়ের পথ বেছে নিলেন? আপনি তো অনেক সুন্দর একটা জীবন পেতেন।
~ জীবিকার দাগিতে এ পথ বেছে নিয়েছি। আমার কাছে কোনো সার্টিফিকেট নেই। আমি জানতামও না আমি আগে কি করতাম। বাচতে হলে তো কিছু একটা করতে হবে। অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম কাজের জন্য। কি করতে পারি জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিতে পারলাম না।

কারন সে উত্তর আমি নিজেই জানতাম না। একদিন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ওয়ালেট বের করে দেখছিলাম শেষ সম্বল কত আছে। মাত্র সেদিন ২০০ টাকা ছিল। আর সেই সময় দুজন লোক বাইকে করে এসে ছু মেরে আমার হাত থেকে ওয়ালেট টা নিয়ে যায়।

আমি তাদের ধরবার জন্য দৌড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেললাম তাদের। একটা বাইকের স্পীডের সাথে আমি পায়ে দৌড়ে জয়ী হওয়ায় সেদিন জানতে পারলাম আমার শক্তির কথা। তারপরই বেছে নিলাম এই পথ।

এই প্রথম আপনিই আমাকে দেখতে পেলেন দৌড়ানো অবস্থায়। অথচ যাদের পকেট ২ সেকেন্ড আগে কেটেছি তারাই আমাকে বলে একটা দমকা হাওয়া এসে সব নিয়ে নিয়েছে। হাহাহা।

কথা গুলো বলার সময় জিসানের চোখে পানি টলমল করতে থাকে। কথা শেষে চোখের পাতা বুজতেই পানি তার গাল বেয়ে পড়ে।


৩য় পর্ব

শার্টের হাতা দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে পিউর দিকে ফিরে জিসান বলে,
~ আরে আপনার চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল। আপনি কাপ আনেন নি কেন?
~ সমস্যা নেই আমি ঠান্ডা চা এই খাই।
~ আচ্ছা আমি কাপটা নিয়ে আসছি আপনার।
~ আপনি দাড়ান। আমিই আনছি।

এই বলে বারান্দার দরজার কাছে দাড়িয়ে রান্নাঘরের টেবিলে রাখা চায়ের কাপের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকায়। আস্তে আস্তে চায়ের কাপ শূন্যে উঠে যায়।

তারপর এগিয়ে আসে পিউর দিকে। এদিকে জিসান এসব দৃশ্য নিজের চোখে দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জিসান পিউর দিকে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জিসানের দিকে ফিরে পিউ। জিসানের তাকিয়ে থাকা দেখে পিউও অবাক হয়।

~ কি হয়েছে?
~ আ-আ-আপনি এসবও পারেন?
~ কেন! কোনো সমস্যা হয় নাকি?

~ না মানে আমি ভেবেছিলাম আপনি শুধু সেই সব জিনিস দেখতে পান যা সাধারন মানুষ দেখতে পায় না। কিন্তু এখন তো দেখছি কিছু মনে করবেন না। আপনাকে কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে। আপনি আবার আমাকে না কিছু করে বসেন।
~ হিহিহিহি। আপনার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো। খায়ে নিন।
~ ওহ হ্যাঁ।
~ চা কিন্তু ভালো হয়েছে।

~ ধন্যবাদ। (মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে জিসান)

ওপর দিকে শহরের বড় বড় জুয়েলারি দোকানে চুরি হচ্ছে। চোরকে তা এখনও পুলিশ জানতে পারে নি। দোকানের বাইরে সিসি ক্যামেরাতে সকালে দেখা যায় অনেক গুলো মাকড়শার জাল। একই ভাবে দোকানের ভেতরের প্রতিটি ক্যামেরাতেই জাল থাকে। যার ফলে কোনো কিছু ভিডিও হয় না। পুলিশও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নি। দোকানের কোথাও কোনো ফিঙ্গার প্রিন্ট নেই কোনো ফ্রুট প্রিন্টও নেই।

তাহলে কাকে ধরবে? এসব ঘটনা দু বছর আগেই শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সন্দেহ বাচক কেউ ধরা পরে নি।

রাত ১২টা ৫০ মিনিট
ড্রয়ারের ঘাটাঘাটির শব্দ শুনে রুমের দরজা খুলে বের হয় পিউ। জিসানের রুমে যেতেই দেখে জিসান ড্রয়ারে কি যেন খুজছে। পরনে জ্যাকেট হাতে গ্লাপ্স পায়ে সো।

~ আপনি কি কোথাও বেরুচ্ছেন?

পিউর কথা শুনে পেছন ফিরে তাকায় জিসান।

~ হ্যাঁ আসলে ভালো লাগছিল না তো। তাই ভাবলাম বাইর থেকে একটু ঘুরে আসি। কিন্তু বাইকের চাবিটাই পাচ্ছি না।
~ ওহ আচ্ছা। আমার যতটুকু মনে পড়ে আপনি চাবিটা কিচেনে রেখেছিলেন।

~ দেখেছেন তো? একদম ভুলে গিয়েছি। আচ্ছা আপনি এখনো ঘুমোননি কেন?
~ ভালো লাগছে না। ঘুমও আসছে না।
~ একটা কাজ করলে কিন্তু মন ভালো হয়ে যায়। আর আমি সেটাই করতে যাচ্ছি।
~ কি কাজ?

~ বাইক চালিয়ে রাতের শহরটাকে উপভোগ করলে। যাবেন নাকি আমার সাথে?

~ হুমমম গেলে মন্দ হয় না।
~ বাইক চালাতে পারেন? আরও একটা বাইক আছে আমার। ওহ না না। মেয়েরা তো আবার বাইক চালাতে পারে না।
~ আপনি আপনার আরেকটা বাইকের চাবি বের করুন আমি চেন্জ করে আসছি।

~ এ্যা? আপনি বাইকও চালান?
~ জ্বী। এবার তাড়াতাড়ি করুন। আসছি আমি।

পিউ কাপড় পাল্টাতে রুমে চলে যায়। আর জিসান তার আরও একটি বাইকের চাবি আর হেলমেট খুজতে শুরু করে। কিছুক্ষন পর পিউ চলে আসে। জিসান পিউকে বাইকের চাবি আর হেলমেট দেয়। তারপর তারা বেরিয়ে পরে রাতের শহরটা উপভোগ করতে।

ফাকা রাস্তা। তাই খুব স্পীডেই বাইক চালাচ্ছে তারা। হঠাৎই পিউর বাইকের চাকায় কিছু আটকে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে বাইক ভারসাম্য হারিয়ে বাস্তায় পড়ে যায়। বাইকের সঙ্গে পিউও পড়ে যায় রাস্তায়। জিসান দ্রুত বাইক ধামিয়ে এসে রাস্তা থেকে পিউকে তুলে।

~ আপনি ঠিক আছেন? (জিসান)
~ জ্বী। হঠাৎ এমন হলো কেন? (পিউ)
~ আমি তো বুঝতে পারছি না।
~ বাইকের চাকার ভেতর কিছু আটকে গিয়ে ছিল।

হঠাৎই পিউর বাইকে সাদা জালের মতো কিছু এসে পড়ে। তারা দেখে দূরে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে আর তার হাত থেকে সেই জালের মতো বস্তু বেরিয়ে এসে পিউর বাইকে পড়েছে। ছেলেটি হাত নিজের দিকে টানতেই বাইকসহ জালটিও ছেলের কাছে চলে যায়। বাইক কাছে যেতেই ছেলেটি দ্রুত বাইকে উঠে সেখান দেখে চলে যায়। এ সব ঘটনা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হয়ে গেল।

আমাদেরও তার পেছন যেতে হবে। বাইক সে নিয়ে গিয়েছে।

জিসান একথা বলতেই পিউ জিসানের সঙ্গে তার বাইকে উঠে। জিসানও খুব স্পীডে বাইক চালায়। কিছুক্ষন যেতে না যেতেই ছেলেটিকে দেখতে পায় তারা। জিসান বার বার বলছে ছেলেটিকে থামার জন্য। কিন্তু ছেলেটি তাতে কান না দিয়ে আরও স্পীডে বাইক চালাতে লাগে। জিসান বাইক পাশাপাশি নিয়ে আসে।

সজোড়ে লাথি মারে ছেলেটির বাইকে। বাইক সহ রাস্তায় পড়ে যায় ছেলেটি। জিসানও সঙ্গে সঙ্গে বাইক থামিয়ে ফেলে। বাইক থেকে নেমে ছেলেটির কাছে এসে দাড়ায় তারা দুজন। রাস্তা থেকে উঠে আস্তে আস্তে পিছুতে থাকে ছেলেটি। তারপর হঠাৎই দু হাত উপরের দিকে তুলতেই তার হাত থেকে সেই আগের মতো সাদা জাল বেরিয়ে একটা উচু গাছে লেগে যায়। আর নিমিষেই ছেলেটি গাছের উপর উঠে যায়। জিসান গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটিকে।

কেননা ছেলেটিকে ধরা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু একি! ছেলেটি গাছ থেকে শূন্যে নেমে আসছে কিভাবে! কিছু একটা মনে করে পিউর দিকে তাকায় জিসান। যা ভেবে ছিল তাই। পিউই তার চোখের শক্তি দিয়ে ছেলেটিকে আটকিয়ে ফেলে নিচে নামিয়ে আনছে। ছেলেটি নিচে নামতেই জিসান ছেলেটিকে ধরে তার মুখের মাস্ক খুলে দেয়। অবাক হয়ে ছেলেটি তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।

~ কে-কে-কে তোমরা? (ভয়ের সুরে বলে ছেলেটি)
~ আগে তুমি বলো। কে তুমি? এভাবে আমাদের বাইক নিয়ে পালাচ্ছিলে কেন? (জিসান)
~ আমার নাম ফারাবী। আমি আসলে জুয়েলারি চুরি করি। এখন দোকান থেকে বের হয়ে কোনো রাস্তা না পেয়ে বাইক নিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করো।

জিসান আস্তে আস্তে পিউকে বলে,
~ এর তো দেখছি আমাদের মতোই পাওয়ার। হতে পারে ওর জীবনের গল্পও আমাদের মতোই।
~ বিশ্বাস করা কি ঠিক হবে?
~ করেই দেখা যাক। ফারাবী তুমি কোথায় থাকো?
~ আমি আসলে রাতে চুরি করি আর দিনে সুবিধা যেখানে পাই সেখানেই ঘুমাই।
~ তুমি আমাদের সাথে চল। (পিউ)
~ কোথায়?
~ আমার বাসায়। (জিসান)

তারপর পিউ গিয়ে একটি বাইকে উঠে আর জিসান ফারাবী ওপর একটি বাইকে উঠে। জিসান ফারাবীকে নিয়ে আগে যাচ্ছে আর পিউ আসছে পিছু পিছু। জিসান মনে মনে ভয় পাচ্ছে যদি ছেলেটি কোনো ক্ষতি করে এখন তার? তাছাড়া বাসায় নেওয়াও কি উচিত হচ্ছে? ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে এলো তারা। দরজা খুলতে পকেটে হাত দিয়েই মুখ চুপষে যায় জিসানের। চাবি তার সঙ্গে নেই। ভেতরে রেখেই তালা দিয়ে দিয়েছে।

~ কি হলো? দরজা খুলুন। (পিউ)
~ আসলে চাবিটা ভেতরেই রয়ে গিয়েছে। (মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে জিসান)
~ what? (পিউ)
~ বাসার ছাদের দরজা খুলা আছে।
~ এখন কি ছাদ দিয়ে ভেতরে যাবো?
~ এক মিনিট এক মিনিট। আমি এনে দিতে পারবো। আনবো? (ফারাবী)

~ তুমি কিভাবে আনবে? (জিসান)
~ কোথায় রেখেছো আমাকে বলো আমি এনে দিচ্ছি।
~ কিচেনের টেবিলে। (জিসান)
~ যেখান থেকে বাইকের চাবি নিয়েছে ওখানেই ঘরের চাবি রেখে এসেছে। (আস্তে আস্তে বলে পিউ)

দরজার কাছ থেকে সরে দাড়ায় ফারাবী। ছাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই তার হাত থেকে সাদা জালের মতো বেড়িয়ে ছাদের রেলিং এর সাথে আটকে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে ফারাবী অলিম্পিক প্লেয়ারের মতো লাফ দিয়ে ছাদে উঠে যায়। তারপর ঘরের ভেতর গিয়ে চাবি নিয়ে আবারও ছাদে আসে। ছাদের রেলিং এর উপর উঠে দাড়িয়ে নিচে গেইটের দিকে হাত বাড়িয়ে জাল ছেড়ে নিচে নেমে আসে। তারপর জিসান চাবি নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে।

~ দেখ ফারাবী। আমরা তোমাকে বিশ্বাস করে আমাদের সাথে নিয়ে এসেছি। আশা করি তুমি আমাদের বিশ্বাস ভাঙ্গবে না। (জিসান)
~ আমি চোর হতে পারি। তবে বিশ্বাস ঘাতক নই। আমি তোমাদের বিশ্বাস ভাঙ্গবো না। বরং তোমরা আমাকে আশ্রয় দেওয়ায় আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। (ফারাবী)
~ এখন রাত ৩টা বাজে। আমার কিন্তু ভীষন ঘুম পাচ্ছে। (পিউ)
~ হ্যাঁ আসলেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। পিউ আপনি গিয়ে শুয়ে পরুন। ফারাবী আর আমি এক সাথেই থাকবো। (জিসান)
~ okay good night
~ good night

পরদিন সকালে
নাস্তা করে একসাথে জিসানের রুমে বসে গল্প করছে তারা তিনজন। গতকাল রাতের কথা হচ্ছে। ফারাবীকে তারা কিভাবে ধরলে। একে একে জিসান আর পিউ তাদের অতীতের কথা বলে। সব শুনে চুপ করে থাকে ফারাবী।

~ আমাদের কথা তো জানলে। এবার তুমি বলো তো? তুমি এমন হলে কি করে? (পিউ)
~ বলছি। আমি খুবই সাধারণ একটা পরিবারের ছেলে ছিলাম। মা বাবা ছোট বেলাই ওপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চাচা চাচির কাছে বড় হয়েছি। উনাদের অবস্থা বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু কষ্টে দিন কাটতো আমার।

খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছিলাম। সবার অবহেলায় কাটতো দিন আমার। একদিন কলেজের ল্যাবে আমার একটা জরুরি ফাইল রেখে গিয়েছিলাম। অর্ধেক রাস্তায় যেতেই যখন মনে পড়লো ফাইলের কথা তখন আবারও ফিরে এলাম ল্যাবে।

ফাইল খুজতে এদিক সেদিক দেখে হাটছিলাম হঠাৎই টেবিলের ফাকে পা আটকে যায়। আর আমি হোচট খেয়ে পড়ে যাই একটা কাচের বক্সের উপর। সেই বক্সে ছিল বিভিন্ন ধরনের মাকড়শা।

সেগুলো রিসার্চের জন্য আনা হয়েছিল। আমার ধাক্কায় বক্স মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে যায় আর আমার হাত পড়ে মাকড়শা গুলোর উপর। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতে কামড় বসিয়ে দেয় একটি মাকড়শা। স্যারের বকুনি খাওয়ার ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।

রাতে খুব হাড় কাপানো জ্বর আসে। সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে যায়। এমন সময় চাচি এসে এক বালতি কাপড় দিয়ে বলে সব ধুয়ে দিতে এখনই। সকালে অনেক কাজ আছে। ঘরের সব কাজ আমিই করতাম। আমি পারবো না বলায় আমাকে মারতে মারতে বের করে দেয় বাসা থেকে।

জ্বরের মধ্যে কোথায় যাচ্ছি কি করছি কিচ্ছু মনে নেই। যখন হুস হলো তখন সকাল হয়ে গিয়েছিল। একটা নোংরা পাইবের ভেতর নিজেকে আবিষ্কার করলাম। হয়তো জ্বরের মধ্যে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিলাম।

সেখান থেকে বের হবার জন্য যখন হাত উল্টো করে সামনে ধরলাম সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত থেকে মাকড়শার জালের মতো কিছু বেরিয়ে সামনের গাছে আটকে গেল।

আমি প্রথমে ভয় পেলেও পরে লক্ষ করলাম আমার শরীরের অনেক কিছুই মাকড়শার শরীরের মতো হয়ে গিয়েছে। কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই আমি দেওয়াল বেয়ে উপরে উঠতে পারি। যে জিনিস অন্য কেউ শুনতে পেতো না সে জিনিস আমি শুনতে পাই। (ফারাবী)

৪র্থ পর্ব

~ তোমার মাথায় এই চুরির চিন্তা এলো কোথা থেকে? (জিসান)
~ ৩ দিন না খেয়ে থাকলে মানুষের কি অবস্থা হতে পারে ভাবতে পারো? আমারও তেমন হয়েছিল। অনেক বড় বড় লোকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সবাই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। একজন বলেছিল চুরি করে খা। তখন মাথায় এলো চুরি করবো। তবে আমি শুধু তাদের দোকানেই চুরি করি যারা প্রচুর সম্পদের মালিক। একপ্রকার প্রতিশোধই বলতে পারো। (ফারাবী)
~ তোমার কাহিনী তো আমাদের থেকেও কষ্টের। (পিউ)
~ না। আমাদের সবার জীবনই কষ্টের। কেউ নিজের শখে খারাপ কাজে আসে না। তাকে এই সমাজ বাধ্য করে খারাপ হতে। (ফারাবী)

~ ঠিকই বলেছো ভাই। (মন খারাপ করে বলে জিসান)
~ আচ্ছা একটা কথা তোমরা দুজন আপনি করে কেন কথা বলো? তুমি করেই তো বলা যায়। After all সবাই তো এক নৌকার মাঝি। (ফারাবী)
~ তাও ঠিক। (মাথা চুলকাতে চুলকাতে পিউর দিকে তাকায় জিসান)
~ এতো তাকাতে হবে না। এবার উঠো। দুপুরে তো খাওয়া দাওয়া লাগবে নাকি। (পিউ)
~ বাজার করতে হবে। আমি যাই তোমরা গল্প করো। (জিসান)

~ আমি করে আনি! এখন তো এটাই আমার পরিবার। তো আজকের বাজারটা আমি করি? (ফারাবী)
~ ঠিক আছে। তবে আবার চুরি করতে লেগে যেও না। (জিসান)
~ আরে না। বাইকটা কি পাওয়া যাবে? (ফারাবী)
~ টেবিলের উপর আছে। নিয়ে নাও। আর জিসান। এভাবে থাকলে হবে না। ঘরটা ঠিক করে গুছাতে হবে। উঠো। (পিউ)

টেবিলের উপর থেকে বাইকের চাবি নিয়ে বাজার করতে বেরিয়ে যায় ফারাবী। ফারাবী বেরিয়ে যেতেই পিউ আর জিসান লেগে পড়ে ঘর গুছাতে।

পিউর দেখা মতে দুটো রুম আছে মাত্র এই ঘরে। অথচ বাইরে থেকে দেখলে বিশাল লাগে ঘরটা। জিসানকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে এখানে আরও অনেক রুমই আছে যা সে ব্যবহার করে না। শুধু মাত্র এই দুটো রুম ছাড়া। কখনও খোলেও দেখার প্রয়োজন বোধ করে নি সে।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেগুলোই ব্যবহার করতে হবে। একটা একটা করে রুম গুলো খুলতে শুরু করে তারা।

১ম রুম
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে তারা। মাকড়শার জালে ভরে আছে সমস্ত রুম। সঙ্গে ধুলো তো আছেই। জিসান মাকড়শার জাল গুলি ছিড়েঁ ভেতরের দিকে গিয়ে জানালা খুলে। আলোকিত হয়ে উঠে রুমটি।

খুব সুন্দর করে গুছানো আছে রুমটি। ড্রেসিং টেবিল„ খাট„ আলমারি সবাই আছে। খুব ভালো ভাবে ঝাড় মুছ করে পরিষ্কার করা হয় রুমটি। একে একে এভাবে সব কটা রুম ঠিক করে তারা দুজন।

এদিকে আজ ভীষণ খুশি ফারাবী। আজ প্রথম কেউ তার বন্ধু হলো। তাকে বিশ্বাস করলো। মনের আনন্দে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে তার নতুন জীবনের নতুন পরিবারের সদস্য হয়ে। হঠাৎই ফারাবীর চোখে পড়ে মানুষের ভিড়, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি।

সামনেই একটা বিল্ডিং ধাউ ধাউ করে জ্বলছে। ভেতরে মানুষ চিৎকার করছে। বাইক থামিয়ে সেখানে ভিড়ের মাঝে দাঁড়ায় ফারাবী। মনে মনে প্রার্থনা করছে যেন সবাই সুস্থ ভাবে ফিরে আসে। কিন্তু যত সময় যাচ্ছে আগুন ততই বেরে চলেছে।

হঠাৎই ফারাবীর মাথায় আসে
যদি আমি আমার শক্তি চুরি করার কাজে লাগাতে পারি। তাহলে এখানে কেন পারবো না? সঙ্গে সঙ্গে ফারাবী ছুটে যায় বাইকের কাছে। জেকেটটা খুলে বাইকের উপর রেখে হেলমেটটা পড়ে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয়। তারপর দৌড়ে এসে হাতের জাল ছেড়ে দোতলায় প্রবেশ করে। প্রতিটি ফ্ল্যাট থেকে মানুষদের বের করে আনতে লাগে।

মাকড়শার মতো দেওয়াল বেয়ে বিল্ডিং এর এপাশ থেকে ওপাশে যেতে থাকে ফারাবী। চার তলায় পৌঁছতেই আগুন আরো বেড়ে গেল। ভেতর থেকে বাইরে বেরুবার কোনো রাস্তা নেই। যেদিকেই জাল ছাড়ে সঙ্গে সঙ্গে জাল পুড়ে যায় আগুনের জন্য।

ফারাবী নিজের কথা নয় বরং ভাবছে তাকে আকঁড়ে ধরা মানুষ গুলোর কথা। বাচাঁর আশায় আকড়ে ধরে আছে তারা ফারাবীকে। কিন্তু এখন নিরুপায় ফারাবী। তার পক্ষে কিচ্ছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

হঠাৎই রুমের দেওয়াল ভেঙ্গে যায়। ইটের ধুলো আর আগুনের ধোঁয়ায় ফারাবী দেখলো একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি ফারাবীর কাছ থেকে দুজন মানুষকে জড়িয়ে ধরে সেই ভাঙ্গা দেওয়ালে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

ফারাবীও মেয়েটির পেছন পেছন বাকিদের নিয়ে বেরিয়ে যায়। আবারো যখন বিল্ডিং এ তারা প্রবেশ করে তখন ফারাবী দেখে মেয়েটি কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই উড়ছে। এবং যে যে ফ্ল্যাটে দরজার মাধ্যমে ভেতরে যাওয়া যাচ্ছে না মেয়েটি সেই সব ফ্ল্যাটের দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলছে তাও এক লাথিতে!

সবাইকে উদ্ধার করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা দুজন। কোনো সাধারণ মানুষ হলে লোকজন তাদের পালাতে দিতো না। কিন্তু তারা তো সাধারণ মানুষের মতো না। একজন পালিয়ে গেল আকাশে উড়ে আর ওপর জন পালালো জাল দিয়ে।

কিছুক্ষণ পর জনমানব শূন্য একটা জায়গায় দুজন দাঁড়ালো। দুজনই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশটা ভালোভাবে দেখে মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফারাবী। এরপর মেয়েটিও নিজের মুখ থেকে কার্টুনের মুখোশটা খুলে। দুজনেই তাকিয়ে থাকে একে ওপরের দিকে।

~ এখানে শুধু আমি একা নই। আমার মতো তুমিও সুপার হিউম্যান। (হেসে বলে মেয়েটি)
~ শুধু আমি না। আরও দুজন আছে। আমি তাদের সাথেই থাকি। (ফারাবী)
~ আরও দুজন? কে তারা??

~ পিউ আর জিসান। একজন বাতাসের থেকেও দ্রুত দৌড়ায় আরেকজন চোখের শক্তিতে সব করতে পারে। খুব দ্রুত যাওয়া জিনিসও সহজেই দেখে নেয়।
~ আর তুমি স্পাইডার ম্যান। তাই তো?
~ হাহাহাহা। তাহলে তো তুমি সুপার গার্ল। তোমার নাম কি?
~ সাজিয়া। তোমার?
~ আমি ফারাবী। থ্যাঙ্কস আমাকে সাহায্য করার জন্য।
~ আমি তো জানতাম না যে তুমি ভেতরে আছো। আমি তো এসেছিলাম ভেতরের মানুষের জন্য। আচ্ছা তুমি বলছিলে যে আরও দুজন আছে। তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবে?

~ হ্যাঁ অবশ্যই। কিন্তু আমার বাইকটা তো সেখানেই রয়ে গিয়েছে।
~ চলো সেখানে গিয়ে বাইক নেওয়া যাক।
~ কেউ যদি চিনে ফেলে??
~ হেলমেটটা এখানেই রেখে দাও।
~ গুড আইডিয়া।

আবারও সেখানে ফিরে আসে ফারাবী আর সাজিয়া। তারপর বাইক নিয়ে রওনা হয় বাসার উদ্দেশে। অর্ধেক পথ যেতেই ফারাবীর মনে পড়ে বাজারের কথা। কিন্তু এখন তো আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা এসে পৌঁছায় বাসায়।

বাসার বাইরে বাইকের শব্দ শুনে জিসান দরজা খুলে। একি! ফারাবীর সাথে মেয়ে!! পিউকে ডাকতে থাকে জিসান। জিসানের ডাক শুনে পিউ ছুটে আসে। এসে দেখে দরজার বাইরে ফারাবী আর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর জিসান দরজার ভেতরে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

~ এসব কি? (পিউ)
~ এই মহাশয় গিয়েছিলেন বাজার করতে। আর বাজার থেকে হয়তো বউ কিনে নিয়ে এসেছেন। (দুষ্টুমি করে বলে জিসান)

~ জিসান তুমি চুপ করবে? ফারাবী এ কে?
~ সব বলছি। আগে তোমরা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দাও। (ফারাবী)

জিসান দরজা থেকে সরতেই তারা ভেতরে ঢুকে। ঘরে ঢুকে ফারাবী দেখে সম্পূর্ণ ঘর অন্য রকম লাগছে। বাজারে যাবার সময় যেমন দেখেছিল তেমন নয়। সামনের রুমটা বসার জন্য সোফা দিয়ে সাজানো হয়েছে। সোফায় বসে ফারাবী আর সাজিয়া। তাদের পিছু পিছু এসে সোফায় বসে পিউ আর জিসান।

~ এবার বলো তো ফারাবী তোমার ঘটনা। (জিসান)
~ জিসানের কি মানুষের সঙ্গে দুষ্টুমি করা ছাড়া কোনো কাজ নেই? (ফারাবী)

~ উফ তোমরা বন্ধ করতো এসব। (পিউ)
~ শুনো, বাজারে যাবার সময় রাস্তায় দেখলাম একটা বিল্ডিং এ আগুন লেগেছে। সেখানে অনেক লোক আগুনে আটকা পড়েছিল। তাদের উদ্ধার করার সময় আমিও এক প্রকার আগুনে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম। তখন সাজিয়া এসে আমাকে সাহায্য করেছিল।

সমস্ত ঘটনা খুলে বলে ফারাবী। সব শুনে তারা বুঝতে পারে যে সাজিয়াও তাদের মতোই সুপার পাওয়ারের অধিকারী।

~ তোমাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। এতদিন ভাবতাম আমি একাই এমন শক্তির অধিকারী। আজ তোমাদের তিনজনকে পেয়ে ভালো লাগলো। আচ্ছা তোমাদের মধ্যে কি কোনো রক্ত সম্পর্ক আছে? তোমরা এক সাথে হলো কি করে? (সাজিয়া)

তারপর পিউ, জিসান, ফারাবী তাদের জীবনের কথা বলে সাজিয়াকে। তারপর ফারাবী সাজিয়াকে প্রশ্ন করে,
~ তোমার শক্তির রহস্য কি?
~ আমি জন্মগত ভাবেই এরকম।
~ তাহলে তো তোমার বাবা মায়ের মধ্যে এই শক্তিও আছে। (পিউ)
~ মায়ের মধ্যে ছিল কি না জানি না। তবে বাবার মধ্যে নেই। আর আমার এ শক্তির কথা বাবাও জানেন না। জানবেনই বা কি করে। তিনি তো সৎ মায়ের কেনা গোলাম।

~ কি বলছো এসব? (জিসান)
~ হ্যাঁ। আমার জন্মের পর যখন মা মারা যান তখন বাবা আরও একটা বিয়ে করেন। ছোট বেলা থেকেই কাজের মহিলাই আমার দেখা শুনা করতেন। যখন পাঁচ বছর বয়স হলো তখন সৎ মা সেই কাজের মহিলাকে চোর অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। তারপর থেকে শুরু হয় আমার উপর অত্যাচার। বাবা তা দেখেও দেখতেন না। যত সময় যেতে থাকে ততই যেন আমি তাদের জন্য বোঝা হতে থাকি। আমার মনে পড়ে না বাবা কোনো দিন ভালোবেসে আমার আঙ্গুলটা ধরেছিল।

তখন আমার বয়স সাত বছর ছিল। আমি কাপড় নিয়ে ছাদে গিয়েছিলাম। কাপড় মেলে দিচ্ছিলাম তখন হঠাৎই সৎ মায়ের কাপড় বাতাসে উড়ে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। আমি ছুটে গিয়ে ছাদ থেকে ঝাপ দিই কাপড়টা ধরার জন্য। আমার মাথায় এটা ছিল না যে আমি এখান থেকে নিচে পড়লে আর বাচবো না।

আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ছিল। আর তা হলো সৎ মায়ের মার। ছাদ থেকে ঝাপ দিয়েই আমি কাপড়টা ধরে ফেলি। কাপড় ধরেই আমার খেয়াল হলো যে আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি। চোখ বন্ধ করে নিলাম সঙ্গে সঙ্গে। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখি আমি শূণ্যে ভাসছি। নিচে পরিনি। উপরে আসার চেষ্টা করতেই দেখি আমি উড়তে পারছি। তাও কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই।

সেই থেকে মাঝে মাঝে এসব করে নিজের ভেতর থাকা শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হই। আজ আমিও বেরিয়েছিলাম বাজার করতে আর তাদের জন্য কিছু জিনিস কিনে নিতে। রাস্তায় আগুন দেখে ছোট বোনের খেলনার মাস্ক পড়ে সেখানে যাই যাতে কেউ আমাকে চিনতে না পারে। সেখানেই ফারাবীর সাথে দেখা। হায় আল্লাহ! আমি তো বাজার আর তাদের জিনিস গুলো নিয়ে বাসায় যেতে ভুলেই গিয়েছি। আজ তো আমাকে মেরেই ফেলবে।

৫ম পর্ব

~ ফিরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না সাজিয়া। হতে পারে তোমার কাছে তাদের মূল্য অনেক কিন্তু তাদের কাছে তুমি একটা খেলার পুতুল। ফিরে গেলে তোমার সাথে কি হতে পারে তা তুমি ভালো করেই জানো।

সেসবের প্রতিবাদও তুমি করতে পারবে না। তার চেয়ে আজ থেকে তুমি আমাদের সাথেই থেকে যাও। এটাও তো এতটা পরিবার। হতে পারে আমাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।

কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই শক্তি আছে যা আর কোনো মানুষের মধ্যে নেই। আর এই শক্তি চাইলেও আমরা লুকিয়ে রাখতে পারবো না। আমার কথা মানো। থেকে যাও আমাদের সাথে। (জিসান)

~ তোমরা তো আমাকে চিনই না। তাহলে? (সাজিয়া)
~ বিশ্বাস করতে পারো। তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। আর আমার মনে হয় না তারা তোমার খুজ করবে। (ফারাবী)

~ আমারও তাই মনে হয়। থেকে যাও আমাদের সাথে। (পিউ)
~ থ্যাঙ্কস। তোমরা আমাকে তোমাদের পরিবারের সদস্য করেছো। আর যাবো না আমি সেখানে। (সাজিয়া)

সাজিয়া তাদের সঙ্গে থাকবে বলায় তারা ভীষণ খুশি। জিসান মনে মনে ভাবে আগে সে একদম একা ছিল। খুব অসহায় লাগতো তার। কিন্তু এখন তার একটা নতুন পরিবার হয়েছে। এমন একটা পরিবার যেখানে সবাই কোনো না কোনো শক্তির অধিকারী।

সাজিয়াকে নিয়ে পিউ নিজের রুমে যায়। আলমারি থেকে নিজের কিছু কাপড় বের করে সাজিয়াকে দেয়। নতুন সদস্যকে নিয়ে শুরু হয় সুপার ফ্যামিলি।

রাত ১০টা ৩০মিনিট
এক সঙ্গে বসে টিভিতে সংবাদ দেখছে সবাই। সকালের সেই আগুন লাগার ভিডিও দেখানো হচ্ছে। ফারাবী আর সাজিয়াকেও দেখা যাচ্ছে সংবাদে। কিন্তু তাদের মুখ ঢাকা। যার ফলে চেনার উপায় নেই।

হঠাৎই কেমন যেন চুপ হয়ে যায় ফারাবী। চোখ জোড়াকে এদিক সেদিক ঘুরাতে লাগে। তারপর রিমোটটা হাতে নিয়েই টিভি বন্ধ করে দিল ফারাবী। জিসান কিছু বলতে যাবে এমন সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে ফারাবী বলে,

ভালো করে শুনো। কারো কার খুব বেসামাল ভাবে চলছে। হয় ব্রেক ফেইল হয়েছে নয়তো কেউ কারো পিছু করছে।

ফারাবীর কথা শুনে বাকিরাও শুনার চেষ্টা করে। কিন্তু না। তারা কিছুই শুনতে পায় না। তবুও ফারাবীর কথায় বাইক নিয়ে বের হয় তারা।

কিছু দূর যেতেই তারাও শব্দ শুনতে পায়। বেশ জোরে জোরে শব্দ আসছে। যেন কেউ গাড়ি ব্রেক ছাড়াই মোড় ঘুরাচ্ছে।

দুনিয়ার সব থেকে জেদি মানুষের জেদি গাড়ি। এটাকেও আমাদের দেখতে হবে। পিউ তুমি বাইকটা চালাও।
এটা বলেই জিসান বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে যায় শব্দ অনুসরন করে।

কিছু দূর গিয়েই তারা দেখে জিসান একটি কারের সামনে ধাক্কা দিয়ে সেটিকে থামানোর চেষ্টা করছে। জিসান তার পাওয়ার দিয়ে গাড়িটিকে পেছনে নেওয়ার চেষ্টা করছে আর গাড়িটি আসছে সামনের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই বাইক থেকে নেমে গাড়ির কাছে যায়। ফারাবী গাড়ির পেছন দিকে গিয়ে জাল ছেড়ে গাড়িটি পেছন দিকে টানতে শুরু করে।

আর সাজিয়া এসে জিসানের সাথে গাড়িটিকে পেছনের দিকে নেবার চেষ্টা করে। গাড়িটা একটু সামনে এগোয় আবার একটু পিছিয়ে যায়। পিউ এসে তার চোখের শক্তি ব্যবহার করে গাড়ির দরজা খুলে ভেতর থেকে একটি ছেলেকে বের করে আনে। সঙ্গে সঙ্গে জিসান আর সাজিয়ে গাড়ির সামনে থেকে সরে যায় আর গাড়িটি ছুটে গিয়ে পড়ে ব্রিজের নিচে।

সবাই ফিরে আসে ছেলেটির কাছে। ছেলেটিকে দেখতেই বোঝা যাচ্ছে সে খুবই ব্রেইনি। তারা কিছু বলার আগেই ছেলেটি বলে,
~ থ্যাঙ্ক ইউ। তোমরা আজ না এলে আমিও গাড়ির সাথে নিচে পড়তাম। আর মারা যেতাম।

~ ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। কেউ বিপদে পড়লে তাদের সাহায্য করা তো আমাদের কর্তব্য। (ফারাবী)

একথা বলে ফারাবী মনে মনে বলে,
অনেক তো চুরি করলাম নিজের শক্তি দিয়ে। এবার একটু ভালো কাজ করি।

~ ফারাবী, তুমি আগে চুরি করতে সেটা ভেবে এখন তোমার খারাপ লাগছে? (ছেলেটি)
~ তুমি কি করে জানলে? (ফারাবী অবাক হয়ে বলে)
~ আমি মানুষের ব্রেইন পড়তে পারি।
~ ব্রেইন কিভাবে পড়ে! (জিসান)

~ শুধু এটাই নয় আমি এমন এক এক জিনিস আবিষ্কার করতে পারি যা কোনো বিজ্ঞানীও পারে না।
~ এটা কোনো বিশ্বাস যোগ্য কথা? (পিউ)
~ এমন যদি হতো তাহলে এতদিনে তুমি অনেক বড় বিজ্ঞানী হয়ে যেতে। (সাজিয়া)

~ হাহাহাহা। সব কথা তো আর রাস্তায় বলা যাবে না। জিসান তুমি কি আমাকে তোমার বাসায় তোমাদের পরিবারএর সদস্য হতে দিবে?

~ আশ্চর্য! তুমি এসব কিভাবে জানো? (জিসান)
~ বললাম না। আমি ব্রেইন পড়তে পারি। মানুষের মন পড়তে পারি।
~ আচ্ছা আচ্ছা। তা তুমি সবার ব্রেইন পড়তে পারলেও আমরা তো আর তা পারি না। তোমার নাম তো বল? (ফারাবী)

~ সাব্বির। তো বাকি কথা বাসায় গিয়েই বলি? অনেক শীত করছে।
~ ফারাবী তুমি সাব্বিরকে নিয়ে যাও। আর সাজিয়া তুমি পিউর সাথে যাও। (জিসান)
~ আর তুমি? (পিউ)
~ আমি আসছি তোমরা যাও। (জিসান)
~ ঠিক আছে।

জিসানের কথা মতো তারা বাইকে উঠে। ফুল স্পীডে বাইক চলছে। কিছু দূর যেতেই খুব জোরে গরম বাতাস তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। হ্যাঁ। সেটা জিসানই ছিল। আর কেউ তাকে দেখতে না পেলেও পিউ তাকে খুব সহজেই দেখেছে। যেমন তা প্রথম দেখেছিল।

প্রায় আধ ঘন্টা পর তারা বাসায় ফিরে। এসে দেখে জিসান দরজায় হেলান দিয়ে গান গাচ্ছে। তাদের দেখে জিসান গান বন্ধ করে ভেতরে চলে যায়। বাইক রেখে সবাই ভেতরে গিয়ে সোফায় বসে।

তারপর সাব্বির বলে,
~ তোমরা আমাকে নিয়ে এতো কি ভাবছো? আমি তোমাদের সাথে থাকলে কোনো সমস্যা হবে না তোমাদের। আমরা এক সাথে আমাদের পাওয়ার ব্যবহার করবো মানুষের ভালোর জন্য।

~ সে সব ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের কোন জিনিসের প্রতি এখন বেশি আকর্ষন তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো? (জিসান)
~ হ্যাঁ বুঝতে পারছি। তোমরা এটাই ভাবছো তো আমি এই শক্তি কিকরে পেলাম? তাহলে শুনো। আমি নিজেও জানিনা কিভাবে এটা পেয়েছি। আমার বাবা মা এমন ছিলেন কিনা তাও জানি না। কারণ আমি বড় হয়েছি অনাথ আশ্রমে।

আমার যখন ১০ বছর বয়স তখন আমি আশ্রমের বাচ্চাদের দিকে তাকালেই তাদের ভেতরের সব কথা বুঝতে পারতাম। আমার যখন ১৫ বছর তখন হঠাৎ একদিন অনাথ আশ্রমে আগুন লেগে যায়। সবাই সে আগুনে পুড়ে যায়। যে কয়েকজন বেচে ছিল তারাও সম্পূর্ন ঝলসে গিয়েছিল। আমিও তাদের মধ্যেই ছিলাম। এক বড়লোক দম্পতি আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিল। আমাকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য করলো তারা। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। আমাকে তারা তাদের সন্তানের মতো লালন পালন করতে লাগলো।

আমাকে কখনো বাবা মায়ের অভাব বুঝতে দিতো না। কিন্তু উনাদের পরিবারের কেউ আমাকে ভালোবাসতো না। দু সপ্তাহ হলো আমার পালক বাবা মা মারা গিয়েছেন। কেউ উনাদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। (সাব্বির)
~ বিষ? কিন্তু তুমি তো আগের সব বুঝতে পারার কথা। যেহেতু যে বিষ মিশিয়েছে সেই তোমার সামনে থাকবে। (সাজিয়া)

~ আমি তখন ভার্সিটিতে ছিলাম। ফিরে এসে এসব দেখি। সবই বুঝতে পারি আমি। কিন্তু কোনো প্রমান না থাকায় কিছুই করতে পারি নি। (সাব্বির)

~ এরপর থেকে সবাই আমাকে মারার প্ল্যান করতে লাগলো। অথচ আমি আগেই সব বুঝে যাওয়ায় প্রত্যেকবার বেচে যাই। আজকের গাড়ির ব্রেক হয়তো তারাই নষ্ট করেছে। আমি স্টাডি রুমে ছিলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখি সবাই সবার রুমে।

তাই আমি কারো সাথে দেখা না করেই বেরিয়ে ছিলাম। কিছুদূর যেতেই দেখি আমার গাড়ির ব্রেক লাগছে না। আর তখন আমাকে বাচাতে তোমরা এসেছো। (সাব্বির)

~ আমাদের সবার লাইফেই কষ্ট। কষ্ট ছাড়া আমাদের আর কিচ্ছু নেই। (জিসান)
~ কে বললো কিচ্ছু নেই? আমাদের এখন একটা পরিবার আছে। আমরা আমাদের শক্তি ব্যবহার করবো এই পৃথিবীর জন্য। (পিউ)
~ হ্যাঁ। কিন্তু আমরা চলবো কি করে? আমাদের তো টাকা পয়সার দরকার আছে নাকি। (ফারাবী)

~ আমরা সবাই গান নাচ জানি। আমরা প্রোগ্রাম করে টাকা ইনকাম করবো। (সাব্বির)

~ Good idea আমার কাছে সব আছে। কাল থেকেই নতুন জীবন শুরু করবো আমরা। (জিসান)

পরদিন থেকেই তারা তাদের নতুন জীবনের যোদ্ধে লেগে পড়ে। কিন্ত কথায় আছে না সৎ পথে ভাত নেই? অনেক জায়গায় ঘুরেও তারা কোনো প্রোগ্রামের সুযোগ পেল না। কেউ তাদের সুযোগ দিতে রাজি নয়।

এখন উপায়? কি করে চলবে তারা? ভালো চাকরি করার জন্য সার্টিফিকেট দরকার। আর তা শুধু পিউর কাছেই আছে। সবাইকে ছেড়ে একা কি করে চাকরি করবে পিউ? তাহলে? আবারও কি খারাপ কাজে ফিরতে হবে? সঙ্গে পিউ, সাব্বির আর সাজিয়াকেও?

৬ষ্ঠ পর্ব

একদিন দুদিন করে মাস কেটে গেল। কিন্তু তাদের দিকে কেউ মুখ তুলে দেখলো না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

~ আর কত ঘুরবো বলতো তোমরা? (সাজিয়া)
~ আচ্ছা তোমরা আমার কথা শুনো। আমাদের সাথে কোনো সার্টিফিকেট নেই তাই আমরা কোনো ভালো জায়গায় কাজ পাচ্ছি না। তাই তো? আর গান বাজনা করেও পেট চলবে না।

দূর্ঘটনা বসতো জিসানের কাছে কোনো সার্টিফিকেট নেই। কিন্তু বাকিদের তো আছে? সেটা দিয়েই কাজ চালাই। (পিউ)

~ কিন্তু আমাদের কারোই সার্টিফিকেট সাথে নেই। বাসায়। আমাদের যমের বাড়ি। (সাব্বির)
~ আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। (জিসান)
~ কি বুদ্ধি? (সাজিয়া)

~ ফারাবী তো অনেক চুরি করেছে। এবারও না হয় তোমাদের বাসায় চুরি করুক তোমাদের সার্টিফিকেট।

তাতে তোমরা যমের মুখেও ফিরলে না আবার সার্টিফিকেট দিয়ে ভালো চাকরিও পেয়ে যাবে। (জিসান)
~ হ্যাঁ এটা করা যেতে পারে। তোমরা শুধু আমাকে বলো কোথায় রেখেছ তোমাদের সার্টিফিকেট গুলো। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। (ফারাবী)

সবাই কোন রুমে কোথায় কিসের মধ্যে তাদের সার্টিফিকেট রেখেছে তা বলে দিল ফারাবীকে। আর ফারাবী সে মোতাবেক একটা ম্যাপ বানিয়ে নিল। এবার শুধু রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষা।

রাত ২টা ৪০ মিনিট।
সবাই যে যার রুমে ঘুমাচ্ছে। শুধু ঘুম নেই ফারাবীর চোখে। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে সে। আজ সে নিজের ঘরেই চুরি করবে। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে তার। নিজের ঘরে নিজের জিনিস নিবে তাও চুরি করে? এমনটা কি কেউ কখনো শুনেছে?

বিছানা থেকে উঠে ফারাবী। হাত দিয়ে চুল ঠিক করে। চেয়ারের উপর থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে পড়ে নেয়। মাস্ক পড়ে নিজের চেহারা ঢেকে নেয়। ছাদের দরজা খুলে ছাদে যায়। তারপর তার হাত থেকে জাল ছেড়ে সেখান থেকে চলে যায়।

কিছুদূর এসে একটা গাছের ডালের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ফারাবী। ভাবতে থাকে প্রথমে কার বাসায় যাবে? নিজের বাসায় নাকি সাব্বিরের বাসায় নাকি সাজিয়ার? ঘড়ির দিকে তাকায় ফারাবী। ৩টা বেজে গিয়েছে। এখন তো সবাই ঘুমেই থাকবে। তাই প্রথমে নিজের বাসায় যাওয়া যাক। গাছের ডালের উপর উঠে দাড়াঁয়। তারপর গাছের ডালে, বিল্ডিং এ জাল ছেড়ে ছেড়ে রওনা হয় নিজের বাসার দিকে।

কিছুক্ষন পর চলে আসে নিজের বাসার সামনে। আজ অনেকদিন পর নিজের ঘরে এসেছে। জাল ছুড়ে মারলো বারান্দার দিকে। তারপর জালের সাহায্যে বারান্দায় উঠে এলো। বারান্দার এক কোনে ছিল তার রুম। নিজের রুমের সামনে গিয়ে আসতে করে ধাক্কা দেয় দরজায়।

সাথে সাথে খুলে যায় দরজা। ইসসসস। কি অবস্থা হয়ে আছে রুমটার। মনে হচ্ছে এটা এখন ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফারাবী গিয়ে চৌকির নিচ থেকে তার ষ্টিলের বক্সটা বের করে। সেটার ভেতর থেকে তার সার্টিফিকেটের ফাইলটা নিয়েই রুম থেকে বের হয়েই শুনে পায়ের শব্দ।

কেউ এদিকেই আসছে। সঙ্গে সঙ্গে পাশের বিল্ডিং এর ছাদের দিকে জাল ছুড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় ফারাবী। রাস্তায় এসে ফাইলটা জ্যাকেটের ভেতরে নিজের কোমরে গুজে নেয়। তারপর রওনা হয় সাজিয়ার বাসার দিকে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছেঁ যায় সাজিয়ার বাসায়। সাজিয়ার কথা মতো সে থাকতো রান্নাঘরের পাশে একটা ছোট্ট ঘরে। আর রান্নাঘরটা নিচ তলায়। ফারাবী বিল্ডিং এর চারপাশে হাটে। কিন্তু ভেতরে যাবার কোনো রাস্তা পায় না।

এবার দেওয়াল বেয়ে ছাদে উঠে আসে। ছাদের দরজাও ভেতর দিকে বন্ধ। দরজা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দরজার দিকে প্রচুর জাল ছুড়ে। সম্পূর্ণ দরজা জালে সাদা হয়ে যায়। এবার সজোড়ে টান দিয়ে দরজা ভেঙ্গে এনে ফেলে ছাদের ওপর পাশে। দরজা ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় সাজিয়ার বাবা আর সৎ মায়ের। সাজিয়ার বাবা ছাদের দিকে পা বাড়ান।

সিড়ি দিয়ে কারো উপরে উঠা বুঝতে পেরে ফারাবী সিড়ি ঘরের ছাদে উঠে যায়। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসেন সাজিয়ার বাবা।

ছাদে এসে দরজা ভাঙ্গা দেখে ছাদের এপাশ ওপাশ দেখতে লাগলেন তিনি। এই সুযোগে মাকড়শার মতো দেওয়ালে হেটে ভেতরে চলে যায় ফারাবী। ভেতরে এসে সাজিয়ার রুমের সামনে উপর থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে ফারাবী। তারপর সাজিয়ার রুমে গিয়ে তার আলমারিটা খুলে।

আলমারি থেকে সার্টিফিকেট বের করবে এমন সময় তার কানে আসে কারো জুতার শব্দ। রুমের বাইরে লাঠি নিয়ে অপেক্ষা করছে তার পুরষ্কার দেওয়ার জন্য। ফারাবী মনে মনে হাসে। তারপর সার্টিফিকেট গুলি নিজের ফাইলের ভেতর ঢুকিয়ে কোমরে গুজে এক লাফে রুমের ছাদে মাকড়শার মতো আটকে যায়।

তারপর মাকড়শার মতো হাত পায়ে হেটে রুম থেকে বের হয়। দোতলার দেওয়ালে ঝুলে ঝুলে সে দেখে সাজিয়ার বাবা ও সৎ মা লম্বা লাঠি নিয়ে রুমের বাইরেই দাড়িয়ে আছে। এটা দেখে ফারাবী মনে মনে হেসে ছাদে এসে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এবার সাব্বিরের বাসায় যাওয়ার পালা। কিছুক্ষন এদিক সেদিক জাল ছেড়ে লাফালাফি করে সাব্বিরের বাসার সামনে এসে হাজির হয় ফারাবী। বাব্বাহ! এতো বড় বাড়ি! মনে হচ্ছে রাজবাড়ি। এই সম্পত্তির জন্য তো নিজের রক্তকেও খুন করতে হাত কাপবে না আর সাব্বির তো কিছুই না। মেইন গেইটে দুজন দারোয়ান।

খুব ভালোই দায়িত্ব পালন করছে তারা। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। গেইট অবশ্য লাগানো। গেইট থেকে দূরে সরে বাড়ির বাগানের দোলনার দিকে জাল ছুড়ে মেরে সেটার সাহায্যে এক লাফে ভেতরে চলে আসে।

চারিদিকে কত সুন্দর ফুলের বাগান। সাব্বির বলেছিল তার রুম তৃতীয় তলায়। আর তার রুমের সাথে ছোট্ট একটা বেলকুনি আছে। সেটাটে একটা রকিং চেয়ারও আছে। বাড়ির বাইরে থেকে তৃতীয় তলার বেলকুনি যুক্ত রুমটি খুজতে লাগলো ফারাবী। এইতো এটাই। বেলকুনিতে রকিং চেয়ারও আছে।

বেলকুনির দিকে জাল ছেড়ে উপরে উঠে আসে ফারাবী। বেলকুনি থেকে রুমে যাওয়ার দরজাটায় হাত দিয়ে দেখে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। অন্য উপায় বের করতে হবে। বেলকুনির দিকে একটি জানালা আছে। গ্লাসের জানালা। পর্দা দেওয়া তাই বাইর থেকে দেখা যাচ্ছে না। হালকা নীল আলো দেখা যাচ্ছে।

তার মানে কেউ দখল করে নিয়েছে সাব্বিরের রুমটা। জানালার গ্লাসে হাত দিয়ে টান দিতেই জানালা খুলে গেল। যাক একটা রাস্তা পাওয়া গেল তাহলে। জানালাটা খুলে হাত দিয়ে পর্দাটা সরিয়ে দেয় ফারাবী। রুমে ঢুকেই অবাক। সাব্বিরের বিছানায় এক দম্পত্তি! চোখ ফিরিয়ে নেয় ফারাবী। এদের দিকে তাকানো লজ্জার বিষয়। হাত দিয়ে নিজের মুখ তাদের দেখা থেকে বিরত রেখে সাব্বিরের আলমারির কাছে যায়। চাবি দেখা যাচ্ছে লাগানোই আছে আলমারিতে। আলমারিটা খুলে ফারাবী। একি! এখানে তো সব মেয়েদের কাপড়!

! সাব্বির তো বলেছিল এটা তার রুম। তাহলে কি ফারাবী কোনো ভুল রুমে ঢুকে পড়লো? না। রুম তো সাব্বিরের কথার সাথে একদম মিলে যাচ্ছে। তাহলে কি কেউ সাব্বিরের সব কিছু এখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে? হ্যাঁ এটাই হতে পারে। বাড়িটা খুজে দেখা যাক। দরজা খুলে রুমের বাইরে যায় ফারাবী।

বাব্বাহ। ভেতরে তো আরও বড় বাড়িটা। কিন্তু সাব্বিরের জিনিস কোথায় রাখতে পারে? ওহ হ্যাঁ। ষ্টোর রুমে। কিন্তু ষ্টোর রুমটা কোনদিকে? সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে ফারাবী। এদিক সেদিক দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়ে একটা রুমের দিকে। এসব রুম গুলো থেকে বেশ দূরেই এই রুমটা। লোক চক্ষুর আড়ালে।

মনে হচ্ছে এটাই ষ্টোর রুম। ফারাবী সেই রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার লক ঘুরাতেই খুলে যায় দরজা। অনেক জিনিস পড়ে আছে এখানে। রুমের এক পাশে নোংরা হয়ে পড়ে আছে কিছু শার্ট, প্যান্ট আর বইপত্র। মনে হয় এখানেই আছে সাব্বিরের সার্টিফিকেট। কাপড় গুলো সরিয়ে খুজতে লাগলো ফারাবী। এইতো একটা ফাইল। ভেতরে সার্টিফিকেটও আছে। যাক অবশেষে পাওয়া গেল সার্টিফিকেট গুলো।

সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে সাব্বিরের রুমে আসে ফারাবী। এসেই ধমকে দাড়ায়। রুমের ভেতরের ছেলে মেয়ে দুটি তো সাব্বিরের মৃত্যুর সেলিব্রেশন করছে তার রুমেই রাত কাটিয়ে।

তাদের কথায় এ বিষয় জানতে পারে ফারাবী। রুমের ভেতর ফারাবী যেতেই মেয়েটি ফারাবীকে দেখে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে এমন চিৎকার শুরু করে এতে ফারাবীর কান ফেটে যাওয়ার অবস্থা আর বুঝোন ছেলেটা তো কালাই হয়ে গিয়েছে। ফারাবী সঙ্গে সঙ্গে জানালা দিয়ে বেরিয়ে জাল ছেড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

দূরে মসজিদে আজান শোনা যাচ্ছে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আর ফারাবী সবে মাত্র এসে পৌছালো জিসানের বাসার ছাদে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদের সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে সোফার উপর সাব্বির আর সাজিয়ার সার্টিফিকেট গুলো রেখে নিজেরটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে কাপড় পাল্টে বিছানায় শরীর হেলিয়ে দেয়। চোখ দুটু ভরে নেমে আসে সারা রাজ্যের ঘুম।

সকাল ৮টা ২০মিনিট।
রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সাজিয়া। লিভিং রুমে এসে দেখে সোফার উপর কিছু কাগজ পত্র। সোফা থেকে তুলে নিয়ে দেখে কাগজ গুলো। আরে! এগুলো তো সার্টিফিকেট! সাজিয়া আর সাব্বির দুজনের একসাথে রাখা। সাজিয়া সার্টিফিকেট গুলো পেয়ে খুব খুশি হয়। সাব্বিরের গুলো সুন্দর করে সোফার উপর রেখে নিজের গুলো নিয়ে রুমে রাখে। তারপর রান্না ঘরে যায় নাস্তা রেডি করতে। এ কাজ তারা রুটিন মাফিক করে থাকে। সপ্তাহে পাচঁ দিন একজন একজন রান্না দেখাশুনা করে আর ৬ষ্ঠ দিন তারা পাচঁজন একসাথে রান্না করবে আর ৭ম দিন তারা সবাই বাইরে খাবে। আজ সাজিয়ার রান্নার দিন।

সকাল ৯টা ৩০মিনিট
ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করতে বসে পিউ, জিসান সাব্বির আর সাজিয়া। কিন্তু ফারাবী নেই টেবিলে।
~ ফারাবী কোথায়? (জিসান)
~ কাল রাতে সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পরেছে তাই এতক্ষন ঘুমাচ্ছে। (সাজিয়া)
— তাই হবে।

দুপুর ২টা ৪০মিনিট
এখনও ঘুম থেকে উঠেনি ফারাবী! সে কি আসলেই ঘুমে নাকি অন্যকিছু! এতক্ষন কি কেউ ঘুমায়!খুব চিন্তায় পড়ে যায় সবাই। কি হয়েছে ফারাবীর। কাল রাতে খাবার সময় দেখেছিল তাকে। এরপর আর দেখা হয়নি তাদের। সবাই দরজার ডাকতে থাকে। কিন্তু ফারাবী কোনো জবাব দিচ্ছে না। কিছু হয়ে গেল না তো ফারাবীর!

৭ম পর্ব

নাহ! আর দেরি করা ঠিক হবে না। ঘুষি মেরে দরজা ভেঙ্গে ফেলে সাজিয়া। সবাই ছুটে যায় রুমের ভেতর। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কম্বল দিয়ে ঢেকে কেউ শুয়ে আছে। শুয়ে আছে নাকি মারা গিয়েছে! জীবিত মানুষ তো তাদের ডাকে সাড়া দিত। ছুটে এসে টান দিয়ে সাব্বির কম্বল সরায়। কম্বল সরাতেই নড়ে উঠে ফারাবী। চোখ মেলে তাকায়। তারপর উঠে বসে বিছানায়। তাকে বসতে দেখে সবাই নিশ্চিন্ত হয়। কান থেকে তুলার বল বের করে বলে
~ কি হয়েছে? (ফারাবী)
~ কি হয়েছে মানে? এতক্ষন ধরে ডাকছি আমরা তোমাকে। তুমি কিছুই শুনতে পাওনি? (জিসান)
~ আসলে ভোর বেলা বাসায় এসেছিলাম। সামান্য শব্দও কানে চলে এসে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় আমার। তাই চুইঙ্গামকে তুলোর মাঝে পেছিয়ে কানে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই কিছুই শুনতে পাইনি।

~ উফ যা ভয় দেখালে তুমি আমাদের! (পিউ)
~ যাক কেউ তো আছে যারা আমার কথা ভাবে।
~ অনেক হয়েছে। এবার খেতে এসো। (জিসান)
~ ব্রেকফাষ্ট নাকি লাঞ্চ? কোনটা করবে? (সাজিয়া)
~ দুটোই একসাথে করবো। হাহাহাহা।

পাচঁ সুপার হিউম্যানের সংসার ভালোই চলতে লাগলো। হাসি ঠাট্টা দুষ্টুমি আর চাকরি খুজা। অনেক খুজাখুজির পর ফারাবী সিটি টিভিতে সংবাদ পাঠকের সুযোগ পায়। জিসান একটি রেস্টুরেন্টে, পিউ একটি পত্রিকা অফিসে, সাজিয়া লেডিস শপিং মলে আর সাব্বির একটি জুয়েলারি দোকানে চাকরি পায়। চাকরির ফাকে ফাকে মানুষদের সাহায্য করা সবই ভালোই চলছে তাদের।

একদিন ফারাবীর চাচা চাচী টিভি দেখছেন। হঠাৎই তারা দেখেন একটা ছেলে দেখতে অনেকটা ফারাবীর মতোই। তবে ফারাবীর থেকে সুন্দর। ছেলেটি সংবাদ বলছে। ছেলেটি কি ফারাবী? এমনটা তাদের সন্দেহ থাকলেও তা বাস্তব হয়ে যায় যখন লেখা উঠে ফারাবীর। তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ফারাবী টিভিতে কাজ করছে। না জানি সে কত টাকা ইনকাম করছে। একবার যদি তাকে পাওয়া যেত তাহলে আর কখনো তাড়িয়ে দিতো না।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪০মিনিট।
তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যাচ্ছে পিউ।
~ আজ মনে হয় তোমার দেরি হয়ে গিয়েছে। (জিসান)
~ হ্যাঁ ৯টা ৩০ মিনিটে একটা মিটিং আছে। আর আজ উঠতেই দেড়ি হয়ে গেল।
~ চল আমি পৌছে দিচ্ছি। আমিও এখনই বেরুবো।
~ হ্যাঁ চল।

জিসান পিউকে নিয়ে বাইকে উঠে। ফুল স্পীডে বাইক চালাচ্ছে জিসান। আর চালাবে না কেন। তাদের এলাকা তো আবাসিক। তেমন কোনো গাড়িও চলাচল করে না সেদিকে।

কিছুক্ষন পর বাইক এসে পৌছায় ভীড়ভাড় রাস্তায়। মানুষও বেশিই লাগছে আজ এখানে। তাই খুব আস্তে বাইক চালাচ্ছে জিসান।

~ উফ এভাবে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে পৌছাতে। (পিউ)
~ এক কাজ করো। তুমি হেটে যাও। আমি বাইক নিয়ে আসছি। (জিসান)

জিসানের কথায় বাইক থেকে নেমে হাটতে লাগলো পিউ। আর জিসান ভীড়ের মাঝে আস্তে আস্তে বাইক নিয়ে আসছে। কিছু দূর যেতেই পিউর গায়ের উপর ধুলো পড়তে লাগলো। নিজের কাধের দিকে তাকিয়ে উপরের দিকে তাকালো পিউ। একটা দেওয়াল ভেঙ্গে পরতে চলেছে তার উপর।

সঙ্গে সঙ্গে সরে
দাঁড়ায় পিউ। দেওয়ালটি গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়ে থাকে পিউর পায়ের কাছে। আশপাশের মানুষের চিৎকার শুনে সেদিকে তাকায় পিউ। উপর থেকে একের পর এক দেওয়াল রাস্তায় লোকজনের উপর পড়ছে। গাড়ির উপর দেওয়ালের টুকরো পড়ে গাড়ি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে। হঠাৎই পিউর পিঠে গরম বাতাস এসে লাগে।

পেছন ফিরে দেখে জিসান দাড়িয়ে আছে। দুজনই বিল্ডিং এর উপরের দিকে তাকায়। এক বিকৃতি চেহারার মানুষ নাকি জানোয়ার বোঝা যাচ্ছে না সেটা ১৪ তলা বিল্ডিং এর ১২ তলায় দু পায়ের সাহায্যে নিজেকে বিল্ডিং এ আটকিয়ে হাত দিয়ে বিল্ডিং এর উপরের তলার দেওয়াল ভেঙ্গে ভেঙ্গে নিচে ফেলছে আর ভয়ঙ্কর ভাবে হাসছে।

~ এটা কি? (পিউ)
~ এটা কি সেটা তো আমিও বোঝতে পারছি না। মানুষ নাকি জানোয়ার। (জিসান)
~ এটা যাই হোক খুব বিপদজনক। এটাকে থামাতে হবে।
~ হ্যাঁ ঠিক বলেছো।

এই বলে জিসান পিউকে নিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়। তারপর একটা বিল্ডিং এর আড়ালে গিয়ে দুজনই পকেট থেকে মাস্ক বের করে পড়ে নেয়। এরপর ছুটে আসে বিল্ডিং এর কাছে।

বিল্ডিং এর পাশে যাওয়ার সময় পিউ দেখে তিন জন মহিলাকে সেই প্রাণীটি বিল্ডিং এর দেওয়াল ভেঙ্গে বের করে ১২ তলা থেকে নিচে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পিউ চোখের শক্তি ব্যবহার করে শূণ্যেই আটকিয়ে দেয় তাদের। তারপর বিল্ডিং থেকে দূরে সরিয়ে নিচে নামিয়ে দেয়।

অন্যদিকে দেওয়াল ভেঙ্গে ভেঙ্গে নিচে লোকজনের উপর পরতে থাকে। কিন্তু জিসান তার দৌড়ানোর শক্তি ব্যবহার করে দেওয়াল নিচে পরার আগেই মানুষদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে তারা দুজন মানুষদের সেখান থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখতে থাকে।

হঠাৎই সেই অদ্ভুদ প্রাণীটার চোখ পড়ে পিউ আর জিসানের দিকে। তাদের দেখেই লাফ দিয়ে পাশের আরেকটি ২০ তলা বিল্ডিং এ চলে যায়।

এদিকে মূহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিনত হলো সম্পূর্ণ এলাকা। পুলিশের গাড়ির শব্দ, লোকজনের চিৎকার, ছোট বাচ্চাদের কান্না। সব কিছু এক ভয়াবহ অবস্থা।

২০ তলা বিল্ডিং এর ১৮ তলা একদম গুড়ো গুড়ো করে ফেলছে সেই প্রাণীটি। উপর থেকে ছুড়ে ছুড়ে নিচে ফেলছে মানুষদের। কিছু মানুষদের তো টান দিয়ে দুভাগ করে ফেলছে। এমন অবস্থায় পিউ আর জিসান সাধারন মানুষদের বাচাবে নাকি সেই প্রানীটির সঙ্গে লড়বে।

এরই ভেতর জিসান বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে তার শক্তি ব্যবহার করে যতটুকু সম্ভব লোকজনদের বের করে আনছে। আর পিউ বাইরের লোকজনদের দেওয়ালের নিচে পড়া থেকে বাচাচ্ছে।

হঠাৎই প্রচুর গুলি বর্ষন শুরু হয়। চারদিক থেকে গুলি করা হচ্ছে সেই ভয়ঙ্কর প্রাণীটিকে। তখনই ১৭ তলা থেকে এক লাফে পুলিশের গাড়ির উপর এসে দাড়ায় সেই প্রাণীটি। এতক্ষনে সামনা সামনি ও পরিষ্কার ভাবে বোঝা গেল সেই প্রানীটিকে। লম্বায় প্রায় ৭ ফুটের মতো। গায়ের রং কচু পাতার রং। চোখ গুলো নীল। দাতঁ গুলো সাধারন মানুষের থেকে সামান্য লম্বা আর মোটা। মাথায় চুল নেই। দেখতেই বোঝা যাচ্ছে প্রচুর শক্তিশালী।

প্রানীটি এক লাথিতে পুলিশের গাড়ি উড়িয়ে ফেলে দিল। আরও একটি গাড়ি দুহাত দিয়ে মাথার উপর তুলে দুমড়ে মুচড়ে গুড়ো গুড়ো করে ফেলে। অপর একটি গাড়ি তুলে ছুড়ে

মারে পুলিশদের দিকে। পুতুলের মতো হাতে তুলে ছুড়ে মারতে লাগে পুলিশদের। এদিকে সেই দুটো বিল্ডিং প্রায় ভেঙ্গে পরার অবস্থা। মানুষজন তাড়া হুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে পায়ের নিচে পিষ্ঠ হচ্ছে।

জিসান আর পিউ যতদূর সম্ভব বিল্ডিং থেকে লোকজনদের সুস্থ ভাবে বের করে আনছে। হঠাৎই একটা বিল্ডিং গুড়ো গুড়ো হয়ে ভেঙ্গে পরলো রাস্তায়। পিউকে মানুষদের সরিয়ে নিয়ে যেতে বলে জিসান বাতাসের মতো দ্রুত ছুটে গিয়ে সজোড়ে এক ঘুষি বসিয়ে দেয় সেই অদ্ভুদ প্রানীটির বুকে। ছিটকে গিয়ে পড়ে রাস্তার মাঝে সেই প্রানীটি।

জিসান তার পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে নিজের শরীরকে উপর নিচ করছে রেইসারদের মতো। নিজেকে আবারও দৌড়ানোর জন্য প্রস্তুত করছে। আবারও উঠে দাড়ায় সেই প্রানীটি। উঠতেই আবারো জিসান বাতাসের গতিতে ছুটে গিয়ে বসিয়ে দেয় বুক বরাবর এক ঘুষি।

এবার প্রানীটি ছিটকে গিয়ে পড়ে এক রেস্টুরেন্টের দরজায়। আবারো প্রাণীটির দিকে ছুটে যায় জিসান। কিন্তু নাহ। এবার সে ব্যর্থ হলো। উল্টো প্রাণীটিই তার নাক বরাবর বসিয়ে দিল এক ঘুষি। ছিটকে গিয়ে জিসান একটি গাড়ির উপর পড়ে। নাক ফেটে রক্ত চলে আসে তার। শার্টের হাতা দিয়ে মুছে নেয় নাকের রক্ত। এরই মধ্যে পিউ ছুটে আসে জিসানের কাছে।

~ তুমি ঠিক আছো? (পিউ)
~ হ্যাঁ ঠিক আছি। (জিসান)
~ এটাকে কি করে থামানো যায়। এদিকে মানুষদের বাচাবো নাকি এর সাথে লড়বো?
~ দুটোই একসাথে করবো।

তারা কথা বলছে তখনই হঠাৎ প্রাণীটি রাস্তা থেকে ল্যামপোষ্ট তুলে ছুড়ে মারে পিউ আর জিসানের দিকে। ল্যামপোষ্টটিকে তাদের দিকে আসতে দেখেই পিউ সেটিকে চোখের শক্তিতে আটকিয়ে ফেলে। সামনে তাকিয়ে দেখে প্রাণীটি ২০ তলা বিল্ডিং এর উপর উঠে ১৫ তলা পর্যন্ত গুড়ো গুড়ো করে ফেলেছে।

পিউ রাস্তা থেকে একটা ভাঙ্গা গাড়ির দরজা চোখের শক্তিতে তুলে ছুড়ে মারে বিল্ডিং এর উপরে থাকা সেই প্রাণীটির দিকে। দরজাটার আঘাতে প্রাণীটি বিল্ডিং এর উপর থেকে ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যেতে লাগে। তখনই জিসান তার শক্তি ব্যবহার করে বাতাসের গতিতে ছুটে গিয়ে লাফ দিয়ে প্রাণীটি নিচে পরার আগেই সেটির বুকে সজোড়ে ঘুষি মারে।

জিসানের ঘুষিতে প্রাণীটি বিল্ডিং এর দেওয়াল ভেঙ্গে ভেতরে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জিসান বিল্ডিং এর ভেতর ছুটে যায়। জিসান ভেতরে যেতেই সমস্ত বিল্ডিং থরথর করে কাপঁতে শুরু করে। টিভি চ্যানেলের রিপোটার, তাদের গাড়ি, পুলিশের গাড়ি সাধারন মানুষ সবাই অবাক দৃষ্টিতে দেখছে এই ঘটনা। সবাই প্রার্থনা করতে থাকে যেন জিসান সুস্থ থাকে।

হঠাৎই বিল্ডিং এর দেওয়াল এক পাশে ভেঙ্গে যায় আর সেদিকে দেখা যায় জিসানের রক্ত মাখা হাত। মুহুর্তের মধ্যেই সেই দেওয়ালের ভাঙ্গা জায়গাটা দিয়ে প্রাণীটি জিসানকে ছুড়ে মারে সামনের বিল্ডিং এর সুচালো রডের দিকে। যার সব কটিই জিসানের দিকে তাক করা। জিসান খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সেই সুচালো রড গুলোর দিকে। আর মাত্র দুই ইঞ্চি বাকি রড গুলো জিসানের পিঠ ফুরে বুক দিয়ে বের হতে।

৮ম পর্ব

আর মাত্র দুই ইঞ্চি বাকি রড গুলো জিসানের পিঠ ফুরে বুক দিয়ে বের হতে। ঠিক তখনি সাদা জাল এসে জড়িয়ে ফেলে জিসানকে। হ্যাঁ।

ফারাবী এসেছে। জাল দিয়ে জিসানকে রডের কাছ থেকে সরিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে এদিক সেদিক জাল ছেড়ে নিচে নেমে আসে ফারাবী। ফারাবীর মুখেও মাস্ক পড়া। জিসানের মাস্ক খুলে গিয়েছে। কিন্তু সমস্ত মুখ রক্তে লাল হয়ে যাওয়ায় কেউ তাকে চিনতে পারছে না।

পিউর কাছে জিসানকে রেখে এবার ফারাবী সেই বিল্ডিং এর ভেতর যায়। ভেতরে যেতেই সেই প্রাণীটি তার উপর আক্রমন শুরু করে।

ফারাবী যতই জাল ছুড়ে মারে না কেন প্রাণীটি তা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎই ফারাবীর গলা টিপে ধরে তাকে নিয়েই বিল্ডিং এর দেওয়াল ভেঙ্গে নিচের দিকে লাফ দেয়। ফারাবী নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে রাস্তা ভাঙ্গা দেওয়ালের উপর রড খাড়া হয়ে আছে। প্রাণীকি তাকে সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে ফারাবী ল্যামপোষ্টের দিকে এক হাতে জাল ছুড়ে মারে আর অপর হাত দিয়ে প্রাণীটির চোখে আঘাত করে সেখান থেকে নিজে ল্যামপোষ্টের উপর গিয়ে দাড়ায়। আর প্রাণীটি ভারসাম্য হারিয়ে পড়তে চলেছে সেই খাড়া রড গুলোর উপর। সবাই ভাবছে এখনই শেষ হবে এই জানোয়ার। কিন্তু একি! এ তো সেই রড গুলোর উপর দাড়িয়ে আছে।

ভীড় ঠেলে জিসানের কাধে হাত রাখে কেউ। তাকিয়ে দেখে সাব্বির এসেছে।

~ জিসান তুমি ঠিক আছ? (সাব্বির)
~ আমি ঠিক আছি। এটাকে আটকানোর কোনো উপায় আছে কিনা বল। (জিসান)
~ আমার যতটুকু মনে হচ্ছে এটা কোনো প্রাকৃতিক বস্তু নয়।
~ মানে? (পিউ)
~ প্রাকৃতিক নিয়মে এমন কিছুর জন্ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

~ এটাকে থামানোর উপায় জানলে বলো। (জিসান)
~ মেরে ফেলতে হবে এটাকে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

~ কিন্তু এতো গুলি করার পরও এর কিছুই হলো না। একে তাহলে মারবো কি করে? (জিসান)

তারা কথা বলছে এমন সময় প্রাণীটি একটা দেওয়াল ছুড়ে মারে তাদের দিকে। পিউ জিসান কিছু করার আগেই সেই দেওয়ালটি শূণ্যেই গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়। আর তাদের সামনে এসে দাড়ায় সাজিয়া।

সাজিয়া উড়ে গিয়ে সজোড়ে এক লাথি বসায় প্রাণীটির বুকে। ছিটকে গিয়ে প্রাণীটি এক দোকানের সামনে পড়ে। পিউ মনে মনে ভাবে তার চোখের চেয়ে শক্তিটা হাতে থাকলে বেশিই ভালো হতো। এই মুহুর্তে চোখের চেয়ে হাতের বেশি প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে পিউর হাত ঝিন ঝিন করতে লাগলো।

হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে পিউ দেখে তার হাতের তালু হালকা লাল ধরনের লাগছে। নিজের অজান্তেই প্রাণীটিকে আঘাত করার জন্য ডান হাত সেদিকে বাড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে হাতের তালু থেকে আগুনের গোলা বেরিয়ে গিয়ে আঘাত করে প্রাণীটির মুখে। অবাক হয়ে যায় পিউ। এই শক্তি কি করে এলো? যেদিকেই আঘাত করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াচ্ছে সেদিকেই আগুনের গোলা হাত থেকে বেরিয়ে পড়ছে।

এবার ফারাবী এসে জাল ছুড়ে মারে সেই প্রাণীটির দিকে। তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সেটিকে ছুড়ে মারে সামনের দিকে। তখনই জিসান তার শক্তি ব্যবহার
করে বাতাসের গতিতে এসে প্রাণীটি শূণ্যে থাকতেই বুক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয়।

জিসানের ঘুষিতে প্রাণীটি উপরের দিকে উঠে যেতে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সাজিয়া তার শক্তি ব্যবহার করে উড়ে এসে এক লাথি বসায় প্রাণীটির পিঠে। লাথি খেয়ে প্রাণীটি আবারও নিচের দিকে নামতে শুরু করে। তখনই পিউ তার নতুন পাওয়া দু হাতের শক্তি ব্যবহার করে ছুড়ে মারে কয়েকটি আগুনের গোলা।

সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীটি গিয়ে পড়ে সামনের বিল্ডিং এর সুচালো রডের উপর। রড গুলোতে গিয়ে গেথে যায় প্রাণীটির শরীর। বিকট ভাবে চিৎকার করতে থাকে প্রাণীটি। সাজিয়া উড়ে গিয়ে ঘাড়ে এক ঘুষি দেয়। তার ঘুষিতে শরীপ থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। উপরে রডে গেথে থাকা শরীর ছটফট করতে থাকে আর মাথা পড়ে থাকে রাস্তায়। কিছুক্ষন পর শান্ত হয়ে যায় রডে গেথে থাকা মাথা বিহীন দেহটি।

হঠাৎই সেই ২০ তলা বিল্ডিংটি মড় মড় করে ভেঙ্গে রাস্তায় পড়তে শুরু করে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই রাস্তায় এসে পড়লো বিল্ডিংটি। চারদিক ইট সিমেন্টের ধুলায় অন্ধকার হয়ে গেল। ধুলো কিছুটা পরিষ্কার হতেই পুলিশ আর দঙ্কল বাহিনী সামনে এগিয়ে আসে। কিন্তু একি! সেই চারজন কোথায়? না না পাচঁজন। আরও একটা ছেলে এসেছিল তাদের কাছে। তারা কোথায় গেল? এখানে তো শুধু সেই প্রাণীটির মৃত দেহ পড়ে আছে।

এদিকে বিল্ডিং ভেঙ্গে ধুলোয় চারিদিক অন্ধকার হওয়ায় সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালালো তারা পাচঁজন। তারা জানতো প্রাণীটি মারা যাওয়ার পর সবাই তাদের ঘিরে ধরবে তাদের পরিচয় জানার জন্য। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া না করে পালিয়ে গেল। জনমানব শূণ্য জায়গা দিয়ে তারা রওনা হলো তাদের বাসায়। এখন আর কাজে ফিরে যাওয়া যাবে না। জিসানের অবস্থাও খারাপ অনেক।

২ ঘন্টা পর
বাসার এসে পৌছায় তারা। সাব্বির তার পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে। সবাই ভেতরে যায়। জিসান ফারাবীর কাধে ভর দিয়ে হেটে হেটে এসে সোফায় বসে। সমস্ত শরীরে রক্ত তার। নিজের বাসায় ফিরে যেন সে দুর্বল হয়ে পরেছে। সাজিয়া এক গ্লাস গ্লুকোজ নিয়ে আসে জিসানের জন্য।

~ জিসান এটা খেয়ে নাও। (সাজিয়া)
~ লাগবে না এসব। পারলে আমাকে একটু রুমে নিয়ে যাও কেউ। (জিসান)
~ তোমার অনেক ব্লিডিং হয়েছে। এখনও হচ্ছে। দুর্বল হয়ে যাবে তুমি। এটা খাও প্লিজ। (সাব্বির)

এটা বলে সাজিয়ার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ফারাবী আর সাব্বির জোর করে খাওয়ায় জিসানকে।

এদিকে পিউ জিসানের রুমে গিয়ে তার বিছানা ঠিক করে দেয়। তারপর ফারাবী আর সাব্বির জিসানকে ধরে তার রুমে নিয়ে বিছানায় সুইয়ে দেয়।

তারপর তার শরীর থেকে রক্ত মাখা কাপড় খুলে রক্ত পরিষ্কার করে কাপড় পরিয়ে দেয়। এরপর পিউ এসে জিসানের কপালে, গালে, ঠোঁটের পাশে, হাতে কেটে যাওয়া জায়গা গুলোতে স্যাভলনে তুলো ভিজিয়ে লাগিয়ে দেয়। স্যাভলন লাগায় যন্ত্রনা হয় সেই কাটা জায়গা গুলোতে। জিসান সেই যন্ত্রনা দাতেঁ দাতঁ চেপে সহ্য করে।

বিকেলের দিকে খুব জ্বর আসে জিসানের। জ্বরে কাপতেঁ থাকে সে। শরীরের উপর এই প্রথম এতো ঝড় গেল তার। কিন্তু এতো খারাপ অবস্থায়ও ডাক্তার ডাকা সম্ভব নয়। যদি ডাক্তার ডাকা হয়

তাহলে সবাই জেনে যাবে তাদের সম্পর্কে। তাই জিসানই বারন করেছে ডাক্তার ডাকতে। কিন্তু এভাবে তো আর বসে থাকা যায় না। তাই সন্ধ্যার দিকে সাব্বির ফার্মেসিতে গিয়ে গা ব্যথার আর জ্বরের জন্য ঔষধ নিয়ে আসলো। কোনো রকমে অল্প একটু খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো জিসান।

পরদিন সকালে
ঘুম থেকে উঠে জিসানের রুমে আসে পিউ। বিছানার কাছে এসে দেখে কম্বল দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢেকে শুয়ে আছে জিসান। কাছে গিয়ে মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে দেয় পিউ। কম্বল সরাতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় জিসানের। পিউকে দেখে আস্তে আস্তে উঠে বসে জিসান।

~ কেমন আছো এখন?
~ আগের থেকে কিছুটা ভালো। জ্বর নেই তবে শরীরে ব্যথা এখনও আছে।
~ কমতে তো সময় লাগবে।

~ কাল কিন্তু খুব রাগ হয়েছিল আমার বাকিদের উপর। এতো তুলকালাম কান্ড হচ্ছিল। সারা দেশে এ খবর লাইভ দেখালো অথচ আমাদের বাকি তিনজন এ খবর পেলেন না।

~ ভাই এতো রাগ কেন করছ বলো। আমরা কি ইচ্ছে করে দেরি করেছি নাকি। আমি মিটিং এ থাকতেই খবর পেয়েছি। কিন্তু মিটিং ছেড়ে আসতে পারছিলাম না। মাঝ থেকে চলে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। (ফারাবী)

ফারাবীর গলা শুনে তাকিয়ে দেখে সে দরজায় দাড়িয়ে আছে। ফারাবীর সাথে সাজিয়া আর সাব্বিরও। ভেতরে এসে জিসানের পাশে বসে তারা।

~ তোমার না হয় মিটিং ছিল। আর বাকি দুজন? (জিসান)
~ আমার দোকানে টিভি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যখন পাশের দোকান থেকে খবর পেলাম তখন লাঞ্চ করবো বলে বেরিয়ে যাই। আর আসতে আসতে সময় লাগে। আমার তো আর তোমাদের মতো পাওয়ার নেই যে দৌড়ে উড়ে ঝুলে পৌছে যাবো। (সাব্বির)
~ আমি ছিলাম আরও বিপদে।

একে তো এতো কাস্টমার। তার উপর সবাই টিভি দেখার জন্য ভিড় করেছে। ম্যানেজারের চোখ এড়ানো অসম্ভব। এর উপর শাড়ি পড়া। শাড়ি পরেও তো আসা যায় না। কোনো মতে বেরিয়ে বাসায় এসে চেন্জ করে তারপর গেলাম। (সাজিয়া)
~ আর আমি এসেই বা কি করতে পারলাম। শুধু দাঁড়িয়েই ছিলাম।

(মন খারাপ করে বলে সাব্বির)
~ আরে এতে মন খারাপের কি আছে। তুমিও তো আমাদের একজন। এবার কি খেতে দেবে কিছু। আমার পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। (জিসান)
~ হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরা এসো আমি নাস্তা বানাচ্ছি। (পিউ)

কিছুক্ষন পর জিসানকে নিয়ে বাকিরা ডাইনিং রুমে আসে। নাস্তা খেতে খেতে গল্প করে তারা। তারা কথা বলছে গতকালের ঘটনা সম্পর্কে।

~ এরকম কোনো প্রাণী পৃথিবীতে আদৌ আছে কি? এরকম প্রাণী যদি থেকেই থাকে তাহলে তা ঘন জঙ্গলে থাকার কথা। শহরের মাঝে কোথা থেকে এলো? (ফারাবী)

~ এই প্রাণী কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। এমন আকৃতির দু পায়ে চলা প্রাণীর বাচ্চাও কখনো দেখেছো কোথাও? (সাব্বির)

~ তাহলে এটা কি? (পিউ)
~ সেটা তো লাশটা পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। (সাব্বির)

~ লাশটি এখন ফরেনসিকদের কাছে আছে। সেটির উপর রিসার্চ চলছে। সেখান থেকে খবর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। উনারা সাংবাদিকদেরও কিচ্ছু বলছেন না। (পিউ)
~ ইসসসস যদি লাশটির এক টুকরো মাংস পেতাম। (সাব্বির)

~ তাহলে কি করতে?? খেতে?? (জিসান)
~ আরে খেতাম না। এই লাশের রহস্য বের করতাম। (সাব্বির)

~ এক টুকরো মাংস থেকে? কি করে? (সাজিয়া)
~ আরে ল্যাবে যেভাবে বের করে সেভাবেই। (সাব্বির)
~ তার জন্য অনেক ক্যামিকেল দরকার। কোথায় পাবে? (জিসান)

~ আমার এক বন্ধু আছে। তার কাছে সব ক্যামিকেল আছে। তার কাছ থেকে আনতে পারবো। বাকিটাও রেডি করতে সমস্যা হবে না। (সাব্বির)
~ সবই তো বুঝলাম। কিন্তু মাংস পাবে কোথায়? (পিউ)

সবাই চিন্তায় পড়ে যায় মাংসের টুকরো কি করে আনা যায় তা ভেবে। ফারাবী চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। হঠাৎই সামনে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।

~ তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? (ফারাবী)
~ ফারাবী! ভাই রাত হতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি। (সাব্বির)

~ তো! মাত্র তো সকাল হলো। রাত তো হতে কয়েক ঘন্টা বাকি হবেই। এ জন্য আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন তোমরা? (ফারাবী)
~ কারন আজ রাতের শুভ কাজ তুমি করবে বন্ধু। (জিসান)

~ মানে? (ফারাবী)
~ মানে তোমাকে ল্যাব থেকে লাশের এক টুকরো মাংস কেটে আনতে হবে। চুরি করে। (সাব্বির)
~ আমি পারবো না। (ফারাবী)

~ কেন পারবে না। তুমি তো আগেও করেছ। (পিউ)
~ হ্যাঁ করেছি। কিন্তু বাঘের মুখে গিয়ে না। কত পুলিশ সেখানে। কত সিকিউরিটি। এসব এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। (ফারাবী)
~ তুমি চাইলেই সম্ভব। (জিসান)

রাগ করে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায় ফারাবী। আর বলে,
~ এসবের মানে কি? তোমরা কি এখন আমাকে বাঘের মুখে দেবে? এখন আমি বাঘের মুখে হাত দিয়ে হাড় বের করবো? আশ্চর্য!

৯ম পর্ব

একথা গুলো একটানা বলেই হনহন করে সেখান থেকে চলে যায় ফারাবী। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে সব কিছু। একে একে সবাই উঠে চলে যায় সেখান থেকে।

রাত ১টা ৩০ মিনিট
সবাই নিজেদের রুমে ঘুমিয়ে আছে। ফারাবীও তার রুমে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। এপাশ ওপাশ করছে শুধু। চোখ বন্ধ করলেই সেই প্রাণীটি তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। মানুষের মৃত দেহ, রক্ত সব তার চোখে ভেসে উঠছে।

উঠে বসে ফারাবী। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে তার। উঠে যায় আয়নার সামনে। নিজেকে দেখে আয়নাতে। নিজের মনের সঙ্গে নিজেই কথা বলা শুরু করে

~ কি ভাবছ ফারাবী?
~ আমার কি করা উচিত এখন।
~ সবার কথা মেনে কাজ করাই তোমার কর্তব্য।
~ কিন্তু সেখানে তো অনেক বিপদ।

~ তুমি তো চোর। চোর কি কখনো ভয় পায়?
~ আমি এখন আর চুরি করি না।
~ মানুষের উপকারে চুরি করলে পাপ হবে না। বরং তোমার পাপ কিছু কমবে।
~ কি করে যাবো আমি সেখানে?
~ ভেবে দেখ। উত্তর পেয়ে যাবে।

এতক্ষন ফারাবী নিজের সঙ্গেই কথা বলছিল। আয়নায় দেখে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। হাত দিয়ে ঘাম মুছে নেয় সে। দরজা খুলে বেলকুনিতে গিয়ে বসে। ঠান্ডা বাতাস লাগছে। বাইরের চারপাশ একদম চুপচাপ শান্ত। কিন্তু শান্ত নেই ফারাবীর মন।

বেলকুনি থেকে নিজের রুমে আসে। গেন্জি খুলে একটা শার্ট গায়ে দেয়। ড্রয়ার থেকে মাস্ক বের করে। মুখে পড়ে নেয় সেটি। গ্লাপ্স পড়ে নেয় হাতে। এবার আয়নায় নিজেকে দেখে। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে ছাদে যায়। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে ল্যাবের উদ্দেশে।

রাত ৩টা
একটা বিল্ডিং এর ছাদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে ফারাবী। ফরেনসিক ল্যাবের দিকে তাকিয়ে আছে সে। রাস্তার ওপাশেই ল্যাবটি। গেইটে সিকিউরিটি, সমস্ত ল্যাবের বাইরে ক্যামেরা। ল্যাবের ভেতরে কয়েকটি রুমে লাইট জ্বলছে।

এদিক সেদিক জাল ছেড়ে ফারাবী ল্যাবের ছাদে এসে দাড়ায়। তারপর মাকড়শার মতও হাতে পায়ে ভর দিয়ে হেটে দেওয়াল বেয়ে তৃতীয় তলার করিডোরের উপর মাকড়শার মতো আটকে রাখে নিজেকে। করিডোরের তিনটি ক্যামেরাতে জাল দিয়ে ঢেকে দেয়। এবার উপর থেকে করিডোরে নেমে আসে ফারাবী। আস্তে আস্তে একটা গ্লাসের জানালার কাছে যায়।

ভেতরে লাইট জ্বলছে। অনেক মানুষকে দেখা যাচ্ছে সাদা এপ্রোন পড়ে আসা যাওয়া করছে রুমের মধ্যে। কিন্তু লাশটা কোন কোথায়? বাইরে থেকে জানালার গ্লাসে দিয়ে ভেতরে দেখতে থাকে ফারাবী। খুঁজতে লাগে লাশটিকে। ঐ তো! ট্রেচারের উপর রাখা হয়েছে সেটা।

কিছু যন্ত্রপাতি লাগিয়ে রাখা হয়েছে লাশের শরীরে। কঠোর পরিশ্রম করছে সবাই এই প্রাণী সম্পর্কে জানতে। হঠাৎই ফারাবীর চোখ পড়ে একটি লোকের দিকে। একটা ট্রে তে কয়েকটি মগ নিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে নিচে বসে পড়ে ফারাবী। লোকটি জানালার গ্লাসের পাশে রাখা টেবিলের উপর ট্রেটি রেখে চলে যায়। আবার আস্তে আস্তে জানালার কাছে যায় ফারাবী।

দেখে ট্রেতে ৭টি কফি মগ রাখা। আর এই রুমে ৭জন লোকই আছে। ফারাবীর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। নিজের পকেট থেকে একটা ড্রপ বের করে মুচকি মুচকি হাসে সে। তারপর আস্তে করে গ্লাসটা খুলে।

সবাই কাজে ব্যস্ত। তাই জানালার দিকে কেউ খেয়াল করছে না। ফারাবী জানালার বাইরে থেকেই আস্তে করে হাত ভেতরে দিয়ে মগ গুলোতে ড্রপের কয়েক ফোটা ঔষধ দিয়ে দেয়। আবারও জানালার গ্লাস লাগিয়ে জানালার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।

কিছুক্ষন পর লোক গুলো এগিয়ে এসে ট্রে থেকে এক একটা মগ নিয়ে চেয়ারে বসে গল্প করতে করতে কফি খেতে লাগলো। ফারাবী বার বার ঘড়ি দেখছে। সাড়ে চারটে বাজতে চলল। কিন্তু এখনও কিছুই করতে পারলো না। আর সকাল হয়ে গেলে তো মহাবিপদ। তাহলে কি সে কোনো বিপদে পরতে চলেছে?

নিজেকে গালাগালি করতে লাগলো ফারাবী। হঠাৎই সে দেখে লোক গুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। আসলে সেই ড্রপে ঘুমের ঔষধ ছিল। যা ফারাবী বিপদে পড়লে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

লোকগুলো ঘুমিয়ে পড়তেই ফারাবী আবারও জানালার গ্লাস খুলে। তারপর নিজেকে আড়ালে রেখেই রুমের কৌশলে সকল ক্যামেরাতে জাল দিয়ে ঢেকে দেয়। এবার ফারাবী ভেতরে ঢুকে।

ঢুকেই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। তারপর সেই লাশের পাশে গিয়ে দাড়ায়। খুব কাছ থেকে দেখছে সে লাশটিকে। মাথাটা সেলাই করে লাগালো হয়েছে আবার। মৃত অবস্থায় দেখতেই ফারাবীর বুক কেপে উঠে ভয়ে। তার মনে হয় এখনই উঠে বসবে এটি। নিজেকে শান্ত করে ফারাবী।

পকেট থেকে একটা ছোট প্যাকেট আর একটা ছোট ছুড়ি বের করে। তারপর ছুরি দিয়ে কাটতে যায় লাশটির হাতের এক টুকরো মাংস। ছুরিটা হাতের কাছে নিতেই হাত কাপতে শুরু করে তার। কাপা কাপা হাতে লাশটির হাতের উপর থেকে এক টুকরো মাংস কেটে প্যাকেটটিতে ঢুকিয়ে নেয়। প্যাকেটটি নিজের পকেটে ঢুকাতে যাবে তখনই কেউ দরজার লক ঘুরাতে শুরু করে। কিন্তু দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ। তাহলে যদি এখন ভেঙ্গে ফেলে?

? ভোরও হয়ে আসছে। দ্রুত প্যাকেটটি পকেটে ঢুকিয়ে জানালার কাছে যেতেই মনে হলো ক্যামেরার জাল গুলোর কথা। নিজেকে আড়াল করে কৌশলে ক্যামেরার জাল পরিষ্কার করে জানালা দিয়ে করিডোরে আসে ফারাবী।

এদিকে যত সময় যাচ্ছেততই দরজার নাড়ার শব্দ আসছে। করিডোরে এসেই ফারাবী বাকি জাল পরিষ্কার করে সেখান থেকে।

ল্যাব থেকে বেরিয়ে এদিক সেদিক জাল ছেড়ে বাসার উদ্দেশে রওনা হয় ফারাবী। আর তার পকেটে প্যাকেট ভরতি মাংস। যার কথা মনে হলেই গা শিউরে উঠে তার। যত সময় যাচ্ছে পকেটটা অনেক ঠান্ডা লাগছে। আগের থেকেও দ্রুত যাওয়ার চেষ্টা করে ফারাবী।

এদিকে ফারাবী বেরিয়ে যেতেই ল্যাবের দরজা ভেঙ্গে সিরিউরিটি, ডক্টর সবাই রুমে ঢুকে। ঢুকেই তারা দেখে চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে বাকিরা। তাদের কোনো ভাবেই এখন জাগানো সম্ভব হচ্ছে না।

হঠাৎই একজনের চোখ পড়ে মেঝেতে। বিন্দু বিন্দু রক্ত পড়ে আছে মেঝেতে। আর স্ট্রেচারের নিচে অনেক গুলো রক্ত। রক্তের ফোটা পরছে লাশের হাত থেকে। ছুটে গিয়ে সবাই দেখে লাশের হাতের এক টুকরো মাংস নেই। কেউ এসে ওসব করেছে। আর তাকে নিশ্চই ক্যামেরায় ধরা হয়েছে। ক্যামেরার ফোটেজ অন করা হয় মনিটরে। সব কিছু দেখতে লাগে সবাই। ৩টা ১০মিনিটে হঠাৎই করিডোরের ক্যামেরার উপর কিছু এসে ক্যামেরার ল্যান্স ঢেকে দেয়। আর কিছুই দেখা যায় না সেখানে।

তখনও ল্যাবের সবাই কাজ করছিল। ৩টা ৪০মিনিটে একজন ট্রে এনে জানালার গ্লাসের পাশে টেবিলে রাখে। ৩টা ৪৫মিনিটে জানালার গ্লাস কিছুটা ফাক হয়। আর সেই ফাক দিয়ে কেউ হাত ভেতরে ঢুকায়। তার হাতে গ্লাপ্স পড়া ছিল। আর তার হাতে একটা ড্রপের শিশি। শিশি থেকে কয়েক ফোটা মগ গুলোতে মিশিয়ে দিয়ে আবারও জানালার গ্লাস বন্ধ করে দেয়। ৩টা ৫৫মিনিটে রুমের দায়িত্বে যারা ছিল তারা এসে মগ গুলো হাতে নেয় আর চেয়ারে গিয়ে বসে।

কয়েক চুমুক দিতেই তারা ঝিমুতে শুরু করে। তারপর টেবিলের উপর মগ গুলো রেখেই তারা ঘুমিয়ে পড়ে। তখনই আবারও জানালার গ্লাস খুলে। আর সঙ্গে সঙ্গে করিডোরের মতো রুমের সব ক্যামেরা কোনো কিছু দ্বারা ঢেকে যায়। আর কিছুই দেখা যায় না। ৫টা ২মিনিটে রুমের ক্যামেরা আবার পরিষ্কার হয়। সঙ্গে করিডোরের ও।

এদিকে ভোর ৫টা ৩০মিনিটে ফারাবী বাসার ছাদে এসে পৌছায়। হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে যায় ভেতরে। ভেতরে এসেই সাব্বিরের রুমে ধুমাধুম থাপ্পর মারতে থাকে। দরজায় এভাবে ডাকার শব্দে বাকিরাও বেরিয়ে আসে তাদের রুম থেকে।

এসে দেখে ফারাবীর সমস্ত শার্ট ঘামে ভেজা। সাব্বির দরজা খুলেই ফারাবীর এমন অবস্থ দেখেই বুঝে যায় কি হয়েছে। সাব্বির ফারাবীকে নিয়ে সোফায় বসায়। ফ্যান ছেড়ে ফারাবীর প্যান্টের পকেট থেকে প্যাকেটটা বের করে। সমস্ত প্যাকেট ভরতি রক্ত।

~ এটা কি? (জিসান)
~ এটা সেই প্রাণীর মাংস যা ফারাবী লাশ থেকে কেটে নিয়ে এসেছে। (সাব্বির)

~ কিন্তু এ তো রক্তে ভরতি? (সাজিয়া)
~ রক্ত এই টুকরো থেকে বেরিয়েছে। (সাব্বির)
~ লাশের টুকরো কি পঁচবে না? (পিউ)
~ সাজিয়া রুম থেকে আমার ফোনটা একটু দাও প্লিজ। (সাব্বির)

~ মরতে মরতে বেচে গিয়েছি। আর একটু হলে খবর ছিল আমার। উফ। (ফারাবী)
~ আমি তো জানতাম তুমি আনবেই। (সাব্বির)
~ হ্যাঁ তুমি তো সব জান্তা। (মুখ বেকিয়ে বলে ফারাবী)
~ এই নাও ফোন।

সাজিয়া ফোন এনে দিলে সাব্বির তার বন্ধু তূর্যকে ফোন করে। তারপর তাকে এক গাদা মিথ্যা বলে তার কাছ থেকে ক্যামিকেল আনার ব্যবস্থা করে। ফোন রাখতেই জিসান বলে,
~ তুমি এতো মিথ্যা বলতে পারো?

জিসানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে খালি বড় একটা রুমের দিকে যায় সাব্বির। আর ফারাবী নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়ে।

ফারাবী রুমে যেতেই সাব্বিরের কাছে যায় পিউ, জিসান আর সাজিয়া। গিয়ে দেখে সাব্বির কত গুলো টেবিল বসাচ্ছে আর বুক সেলফ গুলো খালি করছে।
~ কি করছ এসব? (জিসান)
~ ল্যাব বানাবো। (সাব্বির)

~ এখানে! তার মানে এই মাংসও! (পিউ)
~ হ্যাঁ। আমি ১০টার দিকে বেরুবো কিছু জিনিস আনতে। এটা হবে আমাদের ল্যাব। দেখো তোমরা। আজ রাতের মধ্যেই আমরা এই প্রাণী সম্পর্কে সব জানতে পারবো।
~ R u sure? তুমি পারবে তো? (জিসান)
~ ভরসা রাখো। ফারাবী কোথায়?

~ রুমে চলে গিয়েছে। হয়তো ঘুমাতে। (সাজিয়া)
~ সকালে যা রাগ দেখালো। কিন্তু আমি জানতাম সে এখন রাগ করলেও ঠিকই যাবে।
~ তোমার ল্যাবে কি কি লাগবে বলো আমি দেখি কিছু করতে পারি কিনা। (জিসান)
— না ভাই লাগবে না।
~ আচ্ছা এই টুকরোটা কি এভাবেই থাকবে? (পিউ)
~ Guys! প্যাকেটটা এই মাত্র নড়েছে! (সাজিয়া)
~ কই না তো। তুমি ভুল দেখেছো। (জিসান)
~ পিউ কিচেন থেকে একটা কাচের বোয়ম দাও তো।

পিউ সাব্বিরকে বোয়ম এনে দিল সঙ্গে একটা বাঁটিও। সাব্বির প্যাকেটটাকে বাটির উপর খুলে। প্যাকেট থেকে রক্তের সঙ্গে টুকরোটিও বেরিয়ে আসে। দুটি কাঠির সাহায্যে সাব্বির টুকরোটি কাচের বোয়মে মধ্যে রেখে বোয়মটা বন্ধ করে দেয়।

তারপর বোয়মটা টেবিলের উপর রাখে। হঠাৎই বোয়মটা কেমন যেন নড়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে তারা সেটির দিকে তাকায়। একি! সেই টুকরোটি নড়ছে! তাহলে সাজিয়া ঠিকই দেখেছিল। কিন্তু এটা তো অসম্ভব।

১০ম পর্ব

সেই টুকরোর চারপাশে ছোট ছোট আঠালো পদার্থের মতো বেরুতে লাগলো। আর তা সেই টুকরোটি আবারও শুষে নিতে লাগলো।

~ এটা কি করে সম্ভব সাব্বির?(জিসান)
~ জিসান আমার কিছু ঠিক লাগছে না। তোমরা এটার খেয়াল রাখো। আমি আসছি। (সাব্বির)
~ কোথায় যাচ্ছ?(পিউ)
~ এসে বলবো। বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সাবধানে থেকো আর ফারাবীকেও ঘুম থেকে তুলো।

কথা গুলো বলেই সাব্বির দৌড়ে বেরিয়ে যায় জিসানের বাইক নিয়ে। এদিকে টুকরোটির নড়াচড়া আরও বেড়ে গেল। আগের থেকে কিছুটা বড়ও লাগছিল দেখতে। যত সময় যায় সেই টুকরোটি ততই বড় হতে লাগে।

~ সবাই প্রস্তুত থাকো। যেকোনো কিছু হতে পারে এখন।

ফারাবীর কথা বুঝলেই এটা কি করতে পারে সেটা তারা বুঝতে পারছে না। আর এদিকে প্রায় আধ ঘন্টা হতে চলল সাব্বিরের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। সবার বুক ধক ধক করতে লাগে।

আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বোয়মে ফাটল ধরে। হঠাৎই ধুম করে ফেটে যায় বোয়ম। ছিটকে পড়ে কাচের টুকরো চারদিকে। মাংসের টুকরোটি এক বিরাট আকৃতি ধারন করে। মাঝখানে গর্ত বার বার সংকোচন প্রসারন হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক নতুন প্রাণীর জন্ম হয়েছে। মাংসটি ঝাপ দেয় তাদের উপর পড়ার জন্য।

বসে যাও সবাই

চিৎকার করে বলে সাব্বির। সাব্বিরের কথা শুনে সাত পাচঁ না ভেবেই মেঝেতে বসে পড়ে সবাই। সঙ্গে সঙ্গে সাব্বির একটা কাচের বোতল ছুড়ে মারে সেই মাংসের জীবন্ত টুকরোর উপর।

বোতলটি মাংসের শরীরে আঘাত করতেই বোতল ভেঙ্গে ভেতরের সব ক্যামিকেল সেই টুকরোর শরীরে পড়ে। ক্যামিকেল পড়তেই সেটি আবারও মৃত মাংসে পরিনত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। স্বস্তিক নিঃশ্বাস ফেলে মেঝে থেকে উঠে দাড়ায় ফারাবী, পিউ, জিসান আর সাজিয়ে।

~ থ্যাঙ্ক গড সময় মতো চলে এসেছিলাম। আর একটু দেড়ি হলে তোমরা তো শেষ। (সাব্বির)
~ এসব কি করে হলো? (ফারাবী)
~ আমি বলছি। (সাব্বিরের সাথে আসা একটি ছেলে)
~ তোমার পরিচয়? (জিসান)

~ জিসান ও আমার বন্ধু তূর্য। আমি ভোরে তাকেই ফোন দিয়েছিলাম। আর এই মাংসটারে জীবিত হতে দেখে তার কাছেই সাহায্যের জন্য যাই। (সাব্বির)
~ আচ্ছা এসব কি করে হলো তুমি আমাদের খুলে বলতো তূর্য। (ফারাবী)

~ এই প্রাণী সম্পর্কে ল্যাবে অনেক কথাই হয়েছে যা আমার বাবা আমাকে বলেছেন। এই প্রাণীটি কোনো প্রাকৃতিক প্রাণী না।

এটিকে বানানো হয়েছে সাইন্সের সাহায্যে। এই প্রাণীটি মৃত্যুর পরও আবার জীবিত হয়ে উঠে যদি সে তার নিজের রক্তে কম পক্ষে আধ ঘন্টা ডুবে থাকতে পারে। সম্পূর্ণ শরীর নয় শরীরের যে টুকরো রক্তে ডুবে থাকবে সেই অংশই নতুন রূপ ধারন করবে। যেমনটা তোমরা এখনই দেখলে।

তবে এটা তখনই অসম্ভব যখন এই ক্যামিকেলটা তাকে স্পর্শ করে। এখন এই ক্যামিকেলটি কি করেছে তাও তোমরা দেখলে। (তূর্য)
~ আমি তূর্যকে সব খুলে বললে সে আমার পাশে থাকবে বলে ক্যামিকেল নিয়ে ছুটে আসে আমার সাথে। (সাব্বির)
~ এখন কথা বলার সময় নয়। আরও দুটো কাচের বোয়ম আন। (তূর্য)

তূর্যের কথা মত সাব্বির বোয়ম নিয়ে আসে। এনে তূর্যের হাতে দেয়।

তূর্য একটি বোয়মে তার ব্যাগ থেকে একটা কাচের বোতল বের করে তার মধ্যে রাখা ক্যামিকেল গুলো ঢেলে দেয়। তারপর মেঝে থেকে সেই মাংসের টুকরোটি তুলে বোয়মের ক্যামিকেলের মধ্যে দিয়ে বোয়মের মুখ বন্ধ করে দেয়।

অপর একটি বোয়মেও একই ধরনের কিছু ক্যামিকেল ঢেলে তাতে বাটিতে রাখা রক্ত গুলো ঢেলে মুখ বন্ধ করে দেয়। ক্যামিকেলের মধ্যে রক্ত গুলো পরতেই বরফের মতো শক্ত ছোট ছোট টুকরোতে পরিনত হয়ে ভাসতে শুরু করলো।

~ নে। এবার আর এগুলো কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তুই যাই করবি এই মাংস আর রক্তের সাথে সব কিছু এই বোয়মেই রেখে করিস। হয়তো বিপদ হবে। (তূর্য)
~ থ্যাঙ্কস রে। অনেক সাহায্য করেছিস আমাদের। (সাব্বির)

~ আর এই ব্যাগে সব ধরনের ক্যামিকেল, মাইক্রোস্কোপ আরও কিছু জিনিস আছে। তোদের কাজে আসবে।
~ একটা কথা, আমি যে এখানে আছি প্লিজ আমার বাসায় কাউকে বলিস না। আর আমরাই যে ওখানে ফাইট করছি সেটাও প্লিজ বলিস না।

~ ধুর পাগল। আমি কেন বলতে যাব? কখনো যদি দরকার পড়ে খবর দিস। চলে আসবো। এখন সব ঠিক আছে কাছে কাজে লেগে পড়। আমি এখন আসি।

এই বলে তূর্য চলে যায়। তূর্য যেতেই সাব্বির ব্যাগ থেকে সব বের করে নেয়। তারপর সবাই মিলে সম্পূর্ণ রুমটাকে ল্যাবের মতো করে সাজায়। মেঝেতে ভেঙ্গে যাওয়া কাচের বোয়মের টুকরো গুলো ভালো করে লক্ষ করে তারা। সেগুতে আঠালো সাদা পদার্থ লেগে আছে। অতি সাবধানে মেঝে থেকে তুলে টেবিলের উপর ট্রেতে রাখে সব কাচের টুকরো।

একটা টুকরো সাব্বির মাইক্রোস্কোপে রেখে দেখে। আঠালো পদার্থ গুলো কেমন যেন নড়াচড়া করছে। যেমনটা কোষ তৈরির সময় হয়। সাব্বির কিছুটা ক্যামিকেলের মধ্যে সেই টুকরো গুলো রেখে দেয়। তারপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

সকাল ১০টা
ল্যাবের রুম থেকে কিছু শব্দ আসছে। শব্দ শুনে সেখানে যায় জিসান। রুমে ঢুকে দেখে সাব্বির অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে একটা টেবিলে কি যেন বানাচ্ছে।

~ সাব্বির কি করছ তুমি?

~ ওহ জিসান। এসো দেখ কি বানিয়েছি আমি।
~ এটা কি? এক জোড়া জুতা?
~ হ্যাঁ জুতা। কেমন হয়েছে?
~ ভালোই। তুমি মুচির কাজও ভালো পারো। (বলেই জিসান মুখ টিপে হাসে)

~ আমি মুচি না সাইন্টিস্ট। (রাগ করে বলে সাব্বির)
~ সাইন্টিস্ট কি জুতা বানায়?
~ আমার জুতা দেখলে চমকে উঠবে। এই দেখ।

বলেই জুতো জোড়া পায়ে পড়ে নেয় সাব্বির। কিছুক্ষনের মধ্যেই রকেটের মতো আগুন জুতার নিচ দিয়ে বেরুতে লাগলো। আর সাব্বির শূণ্যে উঠতে লাগলো। সে নিজের ইচ্ছা মতো এদিক সেদিক উপর নিচ করতে পারছে। শূণ্যে থেকেই সাব্বির বলে,

~ কেমন হলো বলো?
~ অসাধারন।
~ তোমাদের তো নিজেদের পাওয়ার আছে। কিন্তু আমার তো কোনো পাওয়ারই নেই। তাই এটা বানালাম।
~ ভালো করেছ।
~ আরও এক জোড়া আছে পিউর জন্য বানিয়েছি। তোমরা তো দৌড়ে ঝুলে উড়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু আমরা তো পারবো না।

~ একদম ঠিক করেছ। কিন্তু এসবের প্রস্তুতি কেন করছ তুমি?

~ জিসান যে সাইন্টিস্ট এই প্রাণীটিকে বানিয়েছিল তাকে আমাদের খুজে বের করতে হবে। এই প্রাণীটি তার প্রথম পরীক্ষার ফল। এর পর সে আরও ভয়ঙ্কর
কিছু করবে।

~ তোমাকে কে বললো এটা প্রথম পরীক্ষা ছিল?
~ আমি সেই মাংসটা আবারও পরীক্ষা করেছি। এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে বানানো হলেও কিছু ভুল রয়েছে। তার মানে এটা প্রথম বানানো। পরে যেগুলো বানানো হবে তা হবে এর থেকেও ভয়ঙ্কর।
~ সর্বনাশ।

দুপুর ২টা ২০মিনিট
দুপুরের খাবার খাচ্ছে সবাই। সাব্বির বার বার বলছে সংবাদ দেখবে কিন্তু সাজিয়া দুষ্টুমি করে কার্টুন দিয়ে রেখেছে। কোনোভাবেই সাব্বির রিমোট নিতে পারছে না। হঠাৎই রিমোটে জাল ছেড়ে টান দিয়ে রিমোট নিজের হাতে নিয়ে নেয় ফারাবী।

বিজয়ের হাসি দিয়ে খেলা দেখার জন্য চ্যানেল পাল্টাতেই দেখে কি সব চিৎকার চেচামেচি দেখাচ্ছে। চ্যানেল না পাল্টে মন দিয়ে দেখে ফারাবী। অনেক মানুষ ছুটাছুটি করছে। বিল্ডিং গুলো ভেঙ্গে পরছে। কিন্তু কেন? টিভিতে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না ধুলোয় ক্যামরা অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।

~ ঘটনা কি সেটা ওখানে গেলেই জানা যাবে। তারাতারি রেডি হও সবাই।

জিসানের কথায় সবাই খাওয়া ফেলে নিজেদের রুমে গিয়ে চটপট কাপড় পাল্টে নেয়। সাব্বির আর পিউ পড়ে নেয় সাব্বিরের আবিষ্কৃত জুতা। তারপর তারা রওনা হয় সেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে।

খুব দ্রুত এসে পৌছায় তারা সেখানে। এসেই দেখে এক চার হাত বিশিষ্ট সাড়ে সাত ফুট উচু ভয়ঙ্কর চেহারার এক মানুষ। শরীরের গঠন দেখে মনে হচ্ছে আগেরটার থেকেও এটা বেশি শক্তিশালী। প্রাণীটি বিল্ডিং এর বিল্ডিং ভেঙ্গে মানুষদের বের করে চিবিয়ে খাচ্ছে।

~ জিসান বলেছিলাম না বড় বিপদ আসছে? এই দেখ। (সাব্বির)

~ এখন উপায়? (জিসান)
~ পুলিশের গুলি তার কাছে পপকর্ন লাগছে। দেখ গুলি তুলেও খাচ্ছে। (ফারাবী)

~ পিউ, সাব্বির আর ফারাবী তোমরা সুস্থ ভাবে মানুষদের বের করে আনো। আমি আর সাজিয়া সেটাকে দেখছি।

বলেই জিসান আর সাজিয়া সেই প্রাণীটির দিকে যায়। প্রাণীটি তাদের দেখে বিল্ডিংএর কাছ থেকে সরে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। এই সুযোগে বাকিরা বিল্ডিং এ ঢুকে সবাইকে বের করতে থাকে।

প্রাণীটি মাটি কাপিয়ে এগিয়ে আসছে তাদের দুজনের দিকে। সাজিয়া আর জিসান একে ওপরকে ইশারা করে এক সাথে ছুটে যায় প্রাণীটির দিকে। সাজিয়া উড়ে গিয়ে সজোড়ে লাথি বসায় সেই প্রাণীটির বুকে। সঙ্গে সঙ্গে ফারাবীও ঘুষি বসায়। কিন্তু একি! একটুকও নিজের জায়গা থেকে নড়ল না সেই প্রাণীটি!

আবারও জিসান ছুটে যায় সেই প্রাণীর দিকে। দৌড়ে গিয়ে ঘুষি দেয় তল পেটে। না এবারও কিচ্ছু হলো না। সাজিয়া উড়ে গিয়ে ঘুষি দেয় মুখে। প্রাণীটির তো কিছুই হলো না উল্টো নিজের হাতেই ব্যথা পেল সাজিয়া। হঠাৎই পেছন থেকে প্রাণীটির দিকে আগুনের গোলা ছুড়ে মারতে লাগে পিউ। এবার যেন প্রাণীটির রাগ বেরে যায়।

খপ করে ধরে ফেলে চার হাতে পিউ, জিসান, সাব্বির আর সাজিয়াকে। নিজেদের ছাড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগে তারা। যতই চেষ্টা করে ততই শক্ত করে ধরে তাদের। তাদের মনে হচ্ছে যেন শরীরের সকল হাড় এক হয়ে যাচ্ছে। প্রাণীটি চার হাত উপরে তুলে রাস্তায় ঘুষি মারতে। ঠিক তখনই ফারাবী কত গুলো জাল ছুড়ে মারে সেই প্রাণীটির চোখে।

চোখে দেখতে না পেয়ে এদিক সেদিক ধাক্কা খায়
প্রাণীটি। বিল্ডিং, দোকান, গাড়ি সব কিছুতে হাতগুলো বারি খেতে লাগলো তার হাত। আর সেই চার হাতে বন্ধি পিউ, সাব্বির, জিসান আর সাজিয়া।

১১তম পর্ব

প্রাণীটির গর্জনে কেপে উঠছে চারিদিক। বিল্ডিং এর গায়ে বারি লাগছে হাতের। বিল্ডিং ভেঙ্গে গুড়ো হচ্ছে তাদের। এদিকে প্রাণীটির হাতে বন্ধি পিউ জিসান সাব্বির আর সাজিয়ার অবস্থা খারাপ। কোনো মতে দু হাত দিয়ে নিজের মাথাটা ঢেকে রাখছে তারা।

ফারাবী বুঝতে পারে চোখে জাল ছাড়াটা ঠিক হয়নি তার। চোখে না দেখতে পেয়েই এমন করছে এই প্রাণীটি। ফারাবী জাল ছেড়ে লাফ দিয়ে প্রাণীটির মাথায় বসে হাত গিয়ে চোখ থেকে জাল সরিয়ে দেয়। কিন্তু ভুল বসতো ফারাবীর হাতের একটা আঙ্গুল প্রাণীটির চোখে ঢুকে যায়।

যন্ত্রনায় ছটফট করতে শুরু করে প্রাণীটি। ছুড়ে ফেলে চার হাতে বন্ধি পিউ, জিসান, সাব্বির আর সাজিয়াকে। হঠাৎ করে মুক্ত হওয়ায় নিজেদের সামলাতে পারছিল না তারা। সঙ্গে সঙ্গে ফারাবী জাল ছেড়ে তাদের নিচে নামিয়ে দেয়।

~ তোমরা ঠিক আছ তো? (ফারাবী)

হাপাতে হাপাতে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয় তারা।

~ সবাই প্রস্তুত হও। এবার একে মারতেই হবে। (জিসান)

প্রাণীটি দু হাত দিয়ে নিজের চোখ কচলাচ্ছে আর ওপর দু হাত দিয়ে এদিক সেদিক ভাঙ্গচুর করছে।

এদিকে পিউ আর সাব্বিরের জুতার নিচে রকেটের মতো আগুন জ্বলছে আর তারা রাস্তা থেকে কিছুটা উপরে উঠেছে। পিউর দু হাতের তালু লাল হয়ে আছে।

হঠাৎই সাজিয়া উড়ে গিয়ে প্রাণীটির ঘাড়ে লাথি মারে। চোখ থেকে হাত সরায় প্রাণীটি। খপ করে ধরে ছুড়ে মারে সাজিয়াকে। কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত পাওয়ার আগেই সাজিয়া নিজেকে সামলিয়ে নেয়।

এবার পিউ হাতের শক্তি ব্যবহার করে আগুনের গোলা ছুড়ে মারতে মারতে প্রাণীটির কাছে যায়। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। উল্টো প্রাণীটি গাড়ি ছুড়ে মারে পিউর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখের শক্তি ব্যবহার করে গাড়িটিকে নিচে নামিয়ে নেয় পিউ। ফারাবী অসংখ্য জাল ছুড়ে মারে প্রাণীটির হাতে। কিন্ত সবই সুতোর মতো ছিড়ে ফেলে।

এবার জিসান তার শক্তি ব্যবহার করে বাতাসের গতিতে ছুটে গিয়ে ঘুষি মারে প্রাণীটির নাভিতে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায় প্রাণীটি। ছটফট করতে থাকে মাটিতে পড়ে। অবাক হয়ে যায় সবাই। এতো কিছুর পরও যার কিচ্ছু হলোনা সে কিনা এখন এক ঘুষিতেই কাবু!

জুতার সাহায্যে প্রাণীটির কাছে যায় সাব্বির। নাভির দিকে তাকিয়েই চিৎকার করে বলে,
এর নাভিতে আঘাত কর তার মানে এর দুর্বল জায়গা তার নাভি। এখানে বেশি আঘাত করলেই তাকে মারা সম্ভব। এবার সবাই নাভিতে আঘাত করতে লাগলো। পিউ একের পর এক আগুনএর গোলার আঘাত করছে প্রাণীটির নাভিতে।

জিসান দৌড়ে এসে সজোড়ে ঘুষি মারছে। সাব্বির তার জুতোর আগুন প্রাণীটির চোখে ধরে রেখেছে। এতে আরও বেশি যন্ত্রনা হচ্ছে প্রাণীটির। ফারাবী বিভিন্ন কৌশলে লাথি বসাচ্ছে। কিন্তু সাজিয়া নেই সেখানে। কোথায় গেল?

আরে ওই তো। কি করছে সে? ভাঙ্গা এক বিল্ডিং এর রড ভাঙ্গছে। রাস্তার সবাই অবাক হয়ে দেখছে মেয়েটির শক্তি। রড ভেঙ্গে উড়ে এসে সমস্ত শক্তি দিয়ে সেটি গেথে দেয় প্রাণীটির নাভিতে। ভয়ঙ্গর ভাবে হাত পা ছুড়ে চিৎকার করে উঠে প্রাণীটি।

তার চিৎকার যেন পুরো শহর কাপিয়ে তুলছে। প্রাণীটির কাছ থেকে সরে এসে দাড়ায় তারা। আর প্রাণীটি মাটিতে ছটফট করছে। কিছুক্ষন পর শান্ত হয়ে যায় প্রাণীটি। হ্যাঁ মারা গেছে প্রাণীটি। সাব্বির পিউ আর জিসান প্রাণীটির কাছে যায়।

কেউ ভয়ে এখনও প্রাণীটির কাছে আসছে না। কালো রক্ত বেরুচ্ছে। প্রাণীটির রক্তে চারপাশ কালো হয়ে যায়। সাব্বির এই সুযোগে প্রাণীটির একটি আঙ্গুল কেটে পকেটে ঢুকিয়ে দেয় সবার অগুচরে।

এদিকে রাস্তার হাজার মানুষের মাঝে একজন লোকের চোখ আটকে আছে সাজিয়ার দিকে। লোকটি ভীড় ঢেলে কিছুটা সামনে এগিয়ে আসে।

সাজিয়ার চোখ, কথা বলার কন্ঠ লোকটির খুব চেনা। লোকটি আরও কাছে এগিয়ে আসে। অস্পষ্ট ভাবে সাজিয়া! কথাটা শুনেই পাশে তাকায় সাজিয়া। তার বাবা তার পাশে দাড়িয়ে আছে। পেছনেই তার সৎ মা। ছুটে এসে সৎ মা জড়িয়ে ধরে সাজিয়াকে,

~ এতোদিন কোথায় ছিলি মা? মায়ের সাথে কি কেউ রাগ করে? চল। ফিরে চল বাসায়। (কাদতে কাদতে বলে সৎ মা)
~ তোকে কোথায় কোথায় খুজেছি জানিস? কেন চলে গিয়েছিলি? (বাবা)

তাদের কথা শুনে আশ পাশের মানুষ ঘিরে ধরে তাদের। সাংবাদিকদের ক্যামেরা গিজগিজ করতে লাগে। সাজিয়া মনে মনে ভাবে,

সত্যিই কি তারা আমার জন্য চিন্তিত ছিল?

এর মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করতে শুরু করে তাদের।
~ এই অসাধারন শক্তির অধিকারী মেয়েটির বাবা মা আপনারা?

~ হ্যাঁ হ্যাঁ সাজিয়া আমার মেয়ে। অনেক কষ্টে এই মেয়েকে জন্ম দিয়েছি আমি। আমি জানতাম একদিন আমার মেয়ে আমাদের আদর যত্নে শক্তিশালী হবে।
~ তাহলে উনার নাম সাজিয়া। আমরা সত্যিই ধন্য এমন মেয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পেরেছি।

এতক্ষনে সাজিয়া বুঝতে পারে এসব তারা তাকে ভালোবেসে নয় বরং নিজেদের নাম কামানোর জন্য করছে। খুব রাগ হয় সাজিয়ার।

ধমক দিয়ে বলে,
~ কে সাজিয়া! কে তোমাদের মেয়ে!আমার বাবা মা মারা গিয়েছেন। আমিই আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য। শুধু শুধু সাধারন মানুষকে হয়রানি করবে না। নিজেদের নাম কামানোর জন্য অন্যদের ধোকার মাঝে কেন ফেলছ?

কথা গুলো বলেই উড়ে সেখান থেকে চলে যায় সাজিয়া। সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও।

বাসায় আসার পর থেকেই সাজিয়া দরজা বন্ধ করে বসে আছে। হাজার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সাব্বিরের ল্যাবে সাজিয়া ছাড়া বাকিরা বসে আছে। সাব্বির সেই আঙ্গুলটা নিয়ে কিসব করছে।

~ আজ বাবা মায়ের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সাজিয়া রুমে বসে আছে। কি এতো ভাবছে? (ফারাবী)
~ কেউ যখন নিজের সন্মান বাড়াতে অন্যকে ব্যবহার করে তখন কতটা খারাপ লাগে একমাত্র সেই বুঝে। (সাব্বির)

~ হুম ঠিক বলেছ। সাজিয়ার জন্য আসলেই খারাপ লাগে। (জিসান)

~ আচ্ছা এসব বাদ দাও। আর এটা দেখ। (সাব্বির)
~ কি এটা? (পিউ)

~ সেই প্রাণীটির রক্ত। এগুলো সব এক একটা ক্যামিকেল। (সাব্বির)
~ রক্ত তো ক্যামিকেলই হয়। (ফারাবী)
~ হ্যাঁ তবে এটা সেই রক্ত নয়। এই রক্ত কয়েকটি ক্যামিকেল মিশিয়ে বানানো হয়েছে।

এগুলো কৃত্রিম রক্ত। আর এই যে আঙ্গুলটা দেখছ। এটা পরীক্ষা করে জানতে পেরেছি পূর্বের প্রাণীটির তুলনায় তিন গুন শক্তিশালী এই প্রাণীটি। পূর্বের প্রাণীটিতে যেসব দুর্বলতা ছিল এই প্রাণীটিতে সে সব ভালো করে তৈরি করা হয়েছে। তাই এবার সহজেই কাবু করা যায় নি এটিকে।
~ এর দুর্বলতা ছিল নাভিতে। (সাজিয়া)
~ তুমি কখন এলে? (ফারাবী)

~ এখনই এসেছি। সাব্বির কি যেন বলছিলে? (সাজিয়া)
~ এটার শুধুমাত্র একটা দুর্বল দিক ছিল। তার মানে এর পর যাকে শহরে নামানো হবে তার কোনো দুর্বলতা থাকবে না। সে একদম নিখুত থাকবে। (সাব্বির)
~ পরের বার আমরা কাউকে বাচাতে পারবো না। (জিসান)
~ আচ্ছা এই প্রাণী গুলো শহরে আসছে কোথা থেকে? শহরে এসব তো আর এমনি এমনি আসে না। কেউ তো আনে এগুলোকে। আর যে আনে সে রাখেটা কোথায়? (পিউ)

~ এর উত্তর পেতে আর আগামী বিপদ থেকে সবাইকে বাচাতে হলে আমাদের রাত জাগা পাখি হতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এসব কেউ দিনের বেলা শহরে আনে না। রাতেই হয় এসবের কাজ। (সাজিয়া)

~ পরের বিপদ আটকাতে হলে মূলে যে আছে তাকে আমাদের শেষ করতে হবে। কিন্তু
তাকে পাবো কোথায়? (সাব্বির)

~ যে এসব কাজ করে সে নিজে প্রাণীদের বাইরে বের করে না। বের করে তার সহায়করা। আর তারা হুট করে কোথাও প্রাণীদের বের করে না। যেসকল জায়গায় মানুষের ভীড় বেশি হয় দিনের বেলা সেখানেই দেখা যায় প্রাণীদের। তার মানে রাতে তারা জায়গা খুজতেও বের হয়। আমরা যদি শহরের আনাচে কানাচে নজড় রাখি অবশ্যই তাদের বের করতে পারবো। (জিসান)
~ কিন্তু একটা সমস্যা।

এভাবে শুধু সাধারন মাস্কে আমাদের পরিচিতরা আমাদের চিন্তে পারবে। আর তাতে অনেক সমস্যাও হবে। আমাদের আগে এমন পোষাক দরকার যা আমাদের পরিচিতদের চেনা থেকে বিরত রাখে। (সাজিয়া)
~ এটা আমার মাথায় আছে সাজিয়া। আমি এমন এক ব্যাচ আবিষ্কার করবো যা পরলেই আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সুট্যে থেকে যাবে। (সাব্বির)

লেখা – ফাটেমা আকন পিউ

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এক্স ফাইভ – Bangla Super Human Story” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – এক্স ফাইভ (শেষ খণ্ড) – Bangla Super Human Story

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *