কুকুর ভীতি

কুকুর ভীতি – ভালবাসা দিয়ে মানসিক রোগ জয় | Cynophobia

কুকুর ভীতি – ভালবাসা দিয়ে মানসিক রোগ জয়: মানুষ হিসেবে আমরা কোন না কোন মানসিক রোগে ভুগছি। আমরা হয়তো বুঝতে পারছি না, কিন্তু আমাদের নিত্য বাস এই মনের জগতকে ঘিরে। এমনি এক মনের জগতে স্থান করে নেয়া একটি ফোবিয়া হল সিনোফোবিয়া বা কুত্তা ভীতি। চলুন জেনে নেই কিভাবে এটি হয়? এর কারণ কি এবং কুকুর ভীতি দুর করার উপায়।

সিনোফোবিয়া বা কুত্তা ভীতি কেন হয়?

আপনি যখন রাস্তায় কোন কুকুর দেখতে পান যেটা আপনার পিছে আছে, তখন কি মনে হয় যে এটা আমার পিছু নিয়েছে? এই ভেবে একটু ভয় পেয়ে বারবার পিছে তাকনো। আবার রাস্তা ব্লক করে তারা যখন শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে থাকে তখনও আপনি সেই রাস্তা পার হতে ব্যাপক ভয় পান, অন্য কারো অপেক্ষা করেন যার সাথে হাঁটা যায়।

মোট কথা আপনি চান না যে আপনার আশে পাশে কুকুর ঘোরাঘুরি করুক বা তাদের দেখলেই আপনার ভয় লাগে, কাছে যাওয়া তো দূরের কথা। তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে আপনার একটা ফোবিয়া আছে আর তা হল Cynophobia বা কুকুর ভীতি। এই সিনোফবিয়া আপনার জীনেও থাকতে পারে আবার কুকুর নিয়ে কোন বাজে অভিজ্ঞতা বা ঘটনা এর জন্য দায়ী।

একটা বিষয় খেয়াল করেছেন যারা কুকুর ভয় পায় তাদের দেখেই কেন কুকুর চিল্লায়? অন্যরা তো দিব্যি চলছে কিন্তু আপনি তাকে ভয় পান আর আপনাকে দেখেই সে চিল্লায়। এর পিছনে সাকিব খানের একটা সায়েন্স আছে!

কেন কুকুর চিল্লায়?

আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমাদের চেয়ে কুকুরের ঘ্রাণ শক্তি দশ হাজার গুণ বেশি। আর এই শক্তিই তার অস্ত্র! কারণ চোর বা আমরা যখন ভয় পাই তখন আমাদের শরীর এড্রেনালীন হরমোন ক্ষরণ করে এতে হার্টবিট বেড়ে যায় এবং ফেরো হরমোন নিঃসরণ করে যেটা আমাদের ত্বকের ছিদ্র ভেদ করে বাইরে আসে, তখন এই হরমোনের ঘ্রাণ থাকায় তা বাতাসের মাধ্যমে কুকুরের নাকে অনায়াসে প্রবেশ করে। যেটা তারা ভয়ের ঘ্রাণ হিসেবে আগে থেকে জানে। ব্যাস, আপনি যে ভীত সে বুঝতে পেরে গেল আর তখনই আপনার উপর সন্দেহ শুরু হবে, ফলে আপনাকে দেখে চিল্লাবে।

এছাড়াও কুকুর খুব ভালো মানুষ পড়তে পারে! মানুষের মুখের ভঙ্গি, শরীরের কাঠামো ও চোখের পিউপিল ছোট হয়ে আসে ভয় পেলে। আর এটি খুব ভালভাবে বুঝতে পারে সে। এছাড়াও আপনার কষ্ট সুখের অনুভূতি বুঝতে পারে সে। আপনি যদি তার মনিব হোন তাহলে আপনার মুখ দেখে সে বুঝবে আপনি কষ্টে নাকি সুখে আছেন। কষ্টে থাকলে আপনার পিছেপিছে ঘুরঘুর করে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করবে। আবার আপনার যদি ক্যান্সার হয় সেটাও সে ঘ্রাণ পেয়ে যাবে এবং আপনাকে দেখে চিল্লাবে।

শুধু কি ঘ্রাণ শক্তি তা নয় এদের শ্রবণ শক্তিও আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ। তাই বজ্রপাতের শব্দ, ভূমিকম্প ইত্যাদি আমাদের আগেই টের পায়। প্রচণ্ড শব্দ, ব্লাস্ট বা মাইকে আযানের শব্দের সময় এরা চিল্লায়, কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কম্পাঙ্ক তার কাছে বিপদের মনে হয়। আর সে সবসময় মানুষকে এলার্ট করতে চায় বিপদ থেকে। এত কিছুর পরে একে “বিশ্বের সেরা প্রহরী” তো বলায় যায়।

কিভাবে কুকুর ভয় দূর করা যায়?

আর আপনি আমি কিনা অহেতুক এই বিশ্বাসী প্রাণীটিকে ভয় পাই! কি আর বলব আমিও আগে একে ভয় পেতাম। এটা বেশ লজ্জার! তাই আমি এই ভয়কে জয় করার জন্য একদিন একটি পাউরুটি নিয়ে দূর থেকে একটি কুকুরকে দিলাম, পরের দিন আরেকটু কাছে গিয়ে, এভাবে সে যখন আমার ভক্ত হয়ে গেল তখন আমার পিছু ঘুরঘুর করতে শুরু করল, প্রথমে বেশ ভয় পেলেও একটা সময় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।

নেটে কুকুরের উপকারিতা ও তার সম্পর্কে পড়া শুরু করলাম, আস্তে আস্তে একটা ভাল লাগা তৈরী হয়ে গেল, ভয়টাও কেটে যেতে শুরু করল। ঠিক যেমন বখাটে ভয় পাওয়া মেয়ে বখাটের সান্নিধ্যে এসে ও তার ভালো গুণের প্রতি আকর্ষিত হয়ে একটা সময় প্রেমে পড়ে যায়!

হুমায়ুন আহমেদের একটা কথা আছে- “আমি যতই মানুষ চিনেছি, ততই কুকুরকে ভালোবেসেছি।” তো যাই হোক ভয়কে জয় করতে হলে সেই ভয়ের বিপরীতে কাজ করা এবং ভালবাসাই একমাত্র প্রতিষেধক।

লেখা: Nerjhor

আরো পড়ুন- ভালবাসার মানসিক রোগ – Obsessive Love Disorder

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *