বিদ্রোহী দেশপ্রেমের কবিতা – মশকরা | Desh Prem Kobita

বিদ্রোহী দেশপ্রেমের কবিতা – মশকরা: আমাদের চারপাশে এত অন্যায় অত্যাচার, কেউ মুখ বুঝে সহ্য করে আবার কেউ প্রতিবাদ করে বিপদে পড়ে। তবু একটু আশা আমাদের সমাজের পরিবর্তন হোক, সবাই ন্যায্য অধিকারটুকু পাক। এমনি এক দেশকে ভালবাসা ও সিস্টেমের অবস্থার প্রতিবাদ নিয়ে কবিতা এটি।
মশকরা
– তনয় চক্কোত্তি
যেহেতু ঘরে কোন খাবার নেই, বাইরে কাজ নেই, ব্যাংকে জমানো টাকা নেই আমার
যেহেতু আমি জনগন, আমি রাষ্ট্রের মালিক, আমি নাকি সরকার!
ভাগের অংশ বুঝে পেতে তাই ত্রাণের লাইনে আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম।
গুণেগুণে দেখলাম আমার পিছনে অনেকে, আমিও একশ জনের পিছনে!
এদের মাঝে অনেকেই ধনি, দারিদ্র্যও আছে কিছু জনে,
বেলা তখন দুটো, সূর্যও গেলো হেলে,
তার কিছু পরে আমি পৌছে গেলাম ত্রাণের ট্রাকের সামনে।
কি যেন এক তালিকা খুঁজে বের করে হেসে বলল কমিশনার,
নাম নেই করিম মিয়া তোমার!
চিৎকার করে বললাম নামের কি দরকার?
আমিই তো রাষ্ট্রের মালিক, আমিই তো সরকার।
আমার কথা শুনে হেসে ওঠল সবাই, উন্মাদ পাগল যেনো আমি!
ধুম করে চেপে ধরলাম কমিশনারের কলার,
তুই তো শালা চাকর প্রজাতন্ত্রের
কে পাবে, কে পাবে না, তুই কে বলার?
দু’জন পুলিশ টেনে হেঁচরে নিয়ে গেলো আমার,
চুয়ান্ন ধারায় দেখানো হলো গ্রেফতার।
অবশেষে জেল হল তিন মাসের, একত্রে দুই সাজার,
দ্বিতীয়টি ছিল জর্জকে মাই লর্ড না বলার!
খাবার ও চিকিৎসার অভাবে মারা গেলো বউ ও বাচ্চা মেয়েটি!
পত্রিকা, গণমাধ্যম এ নিয়ে এক কলমও লেখেনি, করেনি কোন বাড়াবাড়ি,
অথচ আমাকে আখায়িত করেছিল, আমি নাকি ত্রাণ লুটকারী!
কয়েকটি পত্রিকা ছেপেছিল এমন এক ছবি
আমি যেন রাষ্ট্রের ধর্ষণকারী!
বউ ও মেয়ের হত্যার বিচার চাইতে ধর্ণা দিলাম থানায়,
মামলা নেওয়া দূরের কথা রুমেই ঢুকতে দিল না- ওসি, এসপি ও ডিসি মহোদয়।
বিচার পেতে হলে পুলিশ, উকিল ও বিচারকেও দিতে হয় সেলামি!
কী মশকরা! এই আমিই নাকি রাষ্ট্রের অধিকারী!
ত্রাণ পেতে গেলে ধরতে হয় চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রীর পা।
হাসপাতালের সিটও জোটে না গরিবের ভাগ্যে, এমনি কি বারান্দা,
মাথা গুজার ঠাঁই নেই, ফুটপাতে ঘুমায়, বস্তিতে এ সংখ্যা অগুণতি,
কী হাস্যকর! খাতাতে-কলমে এরাই নাকি দেশের অধিশ্বরী।।
আরো পড়ুন- ভালোবাসার বিদ্রোহী কবিতা – সবকিছু নষ্টের দখলে