আধুনিক কবিতা – হারিয়ে যেতে দিও না তারে: কালের বিবর্তনে প্রেম ভালবাসার যে বিবর্তন ও পরিবর্তন হয়েছে এটা স্বীকার করে নিতে কারো মানা নেই। দিনকে দিন প্রেম সস্তা হয়ে যাচ্ছে, ভালবাসা তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। এমনি এক নতুন প্রেম ভালবাসার অবস্থা নিয়ে কবিতা শোনাবেন আমাদের কবি মোহনা জাহ্নবী।
হারিয়ে যেতে দিও না তারে
– মোহনা জাহ্নবী
এ প্রজন্মের মানুষগুলো
ভালোবাসতে ভুলে যাচ্ছে,
ছোট্ট মান অভিমান থেকেই
সম্পর্কের সকল সুতো ছিঁড়ে ফেলছে,
যাকে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা
ব্রেকআপ বলে আখ্যা দেয়,
সম্পর্কের চেয়ে ইগোটা গুরুত্ব পাচ্ছে
অনেক বেশি,
তাই কাঁচের দেওয়ালের মতো ভেঙে যাচ্ছে ভালোবাসা বিশ্বাস কিংবা ভরসা।
অথচ আগের প্রজন্মে যখন
এসব মুঠোফোনের দৌরাত্ম্য ছিলো না,
চিঠি চালাচালি করে প্রেম লেনদেন হতো
সরকার বাড়ির পুকুরঘাটে কিংবা
কোনো এক ফসলী মাঠের সবুজ আলপথে,
যে প্রজন্মে প্রেয়সীর হাত ধরতে গেলেই প্রানপুরুষের আত্মা ধুকপুক করতো,
এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে হঠাৎ ধুপ করে
হাতটা ধরে ফেলতো কয়েক সেকেন্ডের জন্য,
যে প্রজন্মে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে
প্রিয়জনের সাথে দেখা করা
এতোটা সহজ ছিলো না,
প্রিয় মানুষের মুখ দেখার জন্য
অপেক্ষা করতে হতো প্রহরের পর প্রহর গুণে,
সেই প্রজন্মের মানুষগুলো
এই ব্রেকআপ শব্দটার সাথে পরিচিত ছিলো না,
তাদের প্রেম বড্ড খাঁটি ছিলো,
মান অভিমান ঝগড়া কিংবা খুঁনসুটি যাই হোক তারা প্রবল ঝড়েও কেও কারো হাত ছাড়তে চাইতো না!
এ প্রজন্মে দাঁড়িয়ে এমন প্রেমের দৃষ্টান্ত
খুব বিরল অর্চিস্মান,
এ প্রজন্ম খুব সহজেই ভুলে যায়
একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা,
এ প্রজন্মের হাতে অনেকগুলো অপশন থাকে,
একজন ছেড়ে গেলে সেখানে আরো
দশজনের প্রবেশপথ উন্মুক্ত হয়ে যায়,
ভালোবাসার দর কমতে কমতে
তলানিতে এসে ঠেকে গেছে!
এমন একটা প্রজন্মে দাঁড়িয়ে
তোমাকে কোনো মেয়ে যদি
নিঃশব্দে ভালোবেসে যায় বছরের পর বছর,
সবচেয়ে প্রিয় শাড়িটা
আলমারিতে যত্নে তুলে রাখার মতো
কেউ যদি হৃদয়ের উত্তাপে
তোমার জন্য ভালোবাসা গচ্ছিত রেখে দেয়
যুগ যুগ ধরে,
তবে তাকে হারিয়ে যেতে দিও না।
এ প্রজন্মের মানুষগুলো
এভাবে ভালোবাসতে ভুলে গেছে সত্যি,
যদি তাকে নিজের বেখেয়ালে হারিয়ে ফেলো,
কোনো এক গোধূলীতে তুমি টের পাবে-
এ বিশ্ব চরাচরে সবচেয়ে বেশি ঠকে গেছো তুমি,
এ বিশ্বলয়ে সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষটাও তুমি,
হারিয়ে যেতে দিও না ঐ মানুষটাকে,
তার হাত ধরে রেখো
জীবনের শেষ গোধূলী পর্যন্ত।।
আরো পড়ুন- বিরহের কবিতা – ভালো থেকো প্রিয়