ব্যর্থ প্রেমের চিঠি – প্রতারক স্ত্রীর হৃদয়বিদারক চিঠি: আমি অফিসে ছিলাম। এমন সময় আমার বন্ধু সিয়ামের ফোন। এক্ষুনি একটু আমার হোটেলে আয় একটা ছেলের সঙ্গে তোর স্ত্রীকে দেখলাম। ওরা আমার হোটেলে একটা রুম নিয়েছে। ওরা এখন রুমের ভেতরে আছে। আমি বললাম তুই কি করে জানলি? তোকে তো কখনো তিশার সঙ্গে মিট করাইনি। তুই ভুলে গেলি, তোর বিয়ের ফটোগুলো যে আমাকে দেখিয়ে ছিলি। আচ্ছা থাক, আমি এক্ষুনি আসছি।
অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। তারপর প্রায় আধা ঘন্টা পর ওর হোটেলে পৌঁছালাম। তারপর সিয়ামের থেকে মাষ্টার চাবি নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে যে আমার জন্য এমন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তা আমি জানতাম না। দেখি ছেলেটা আর তিশা বিছানাতে। আর তিশার শাড়ি, ব্লাউজ খোলা। শায়াটা কোমর অবধি তোলা। ছেলেটার মুখ তিশার শায়ার ভেতরে। দরজা খোলার শব্দে তিশা আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখে যেন ভূত দেখার মতো দেখলো। তারপর নিজের শাড়ি নিয়ে নিজেকে ঢাকার একটা বৃথা চেষ্টা করতে লাগল। আমি আর এক মূহুর্ত না অপেক্ষা করে সোজা হোটেলের বাইরে আসলাম! এরপর আমার মাথা কাজ করছিল না।
যে স্ত্রীকে আমি এত ভালোবাসলাম, যাকে খুশি রাখার জন্য আমি দিনরাত পরিশ্রম করি, যার জন্য আমি নিজের প্রাণটাও দিতে প্রস্তুত আর সে আমাকে এইরকম ভাবে প্রতারনা করবে। বিষয়টা মাথায় আনতেই মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠতেছে। একবার ভাবলাম আত্মহত্যা করব। ঠিক তখনই আমার ২ বছরের মেয়ে মাহির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। এই প্রতারকের কাছে কী করে রেখে যাই ওকে? তাহলে যে মরেও শান্তি পাবো না। আমাকে মাহির জন্য হলেও বাঁচতে হবে।
ব্যর্থ প্রেমের চিঠি
তারপর কেটে গেছে প্রায় ২০ টা বছর। সেদিনের পর থেকে তিশাকে আর দেখিনি। আমার বাড়িতেও আর আসেনি, ওর খোঁজও করিনি। কিন্তু গত পরশুদিন আমার কাছে একটা চিঠি আসে। চিঠি খুলে দেখলাম, তাতে লেখা-
প্রিয় রায়হান,
আমি জানিনা কোনোদিন আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি, আমি যেটা করেছি সেটা কোন ভুল নয়, সেটা অন্যায় ও পাপ। আর তার শাস্তি আমি এখনো পাচ্ছি। আর এই দেহে প্রাণ থাকা পর্যন্ত পেয়ে যেতে হবে। একটা মেয়েকে তুমি প্রথম দেখায় ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে। আর আমি সেই ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারিনি। আমি স্বাগত-কে ভালোবাসতাম বিয়ের আগে থেকেই। ও বিয়ের আগে আমার সাথে ব্রেকাপ করে চলে যায় দেশের বাইরে। আমি ভাবলাম ওর সাথে যখন ব্রেকাপ হয়ে গেছে আর তুমিও যখন আমাকে ভালোবাসো বললে তখন তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব। তারপর তোমার ভালোবাসা দেখলাম। আমিও তোমাকে ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। ঠিক সেই সময় কোথা থেকে স্বাগত আবার ফিরে আসে। ফোন করতে থাকে, বলতে থাকে ভুল করেছে সে, তোমাকে ছেড়ে দিতে বলে। আবার সে আমাকে বিয়ে করবে। প্রথম প্রথম না চাইলেও বার বার বলায়, আমি কেমন যেন দুর্বল হয়ে পড়ি তার প্রতি। তারপর কিছুদিন পরে আমাকে হোটেলে যেতে বলে। আমিও যেন কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। না চাইলেও না করতে পারিনি। আর সেইটা ছিল আমার বড় ভুল। সেদিন তুমি হোটেল থেকে ফেরার পরে আমি আর সাহস করতে পারিনি তোমার সামনে যাবার। তখনও সেই স্বাগত নামের আবরনটা যেন চেপে ছিল, ওর সাথে চলে যাই। প্রথম মাসখানেক ভালোই চলছিল। কিন্তু তারপর থেকে ধীরে ধীরে ওর আসল রুপটা সামনে আসতে থাকে। শুরু করে আমার উপর এক অমানবিক অত্যাচার। প্রত্যেকদিন বাইরে থেকে মদ খেয়ে আসত। তারপর আমার ওপর ধর্ষণ করত। তখনই বুঝতে পারি তোমার আর মাহির প্রতি করা আমার অন্যায়। তার কিছুদিন পর আমি ওখান থেকে পালিয়ে আসি। এই মুখ তোমাকে দেখাতে পারব না। তাই নদীতে ঝাঁপ দিয়েও আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু ভাগ্যে তোমার প্রতি অন্যায়ের ফল তখনও ভোগ করা হয়নি। তাই মরতেও পারলাম না। একজন জেলে আমাকে নদীর কিনারে পায়। তারপর সে আমাকে সুস্থ করে তোলে। একদিন রাতে সেও আমাকে ধর্ষণ করে। এরপরে এক পতিতালয়ে আমাকে বিক্রি করে দেয়। সেখানে আমার বাকি জীবন কাটে। এক সময়ে আমার শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে যাই। অনেক টেষ্ট করানো হয়, শেষ পর্যন্ত জানা যায় আমার নাকি HIV Positive. তারপর পতিতালয় থেকেও বের করে দেয়। এরপর আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকে না। তাই রাস্তাতেই পড়ে থাকতে হয়। সেখানেও কোন এক মদ্যপ ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করে। সেই সময়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। যখন জ্ঞান ফেরে আমি তখন নিজেকে একটা হাসপাতালে আবিষ্কার করি। শুনেছিলাম কোনো এক সহৃদয় ব্যক্তি রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আমাকে হাসপাতালে দিয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে আর বেশিদিন নাকি বাঁচবো না। তাই তোমাকে একবার ক্ষমা চেয়ে চিঠিটা লিখলাম। যখন চিঠিটা হাতে পাবে তখন হয়তো আমি এই জগতের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছি। তাই একবার শেষবারের মতো ক্ষমা চাইলাম। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর একটা অনুরোধ মেয়েটাকে কখনো জানতে দিও না তার এই দুর্ভাগা মায়ের কাহিনী। বিদায়…
-ইতি
তোমার হতভাগী প্রতারক রানী
চিঠিটা পড়ে অনেক দিনের জমে থাকা অভিমানে, কষ্টে নিজে থেকেই না কেঁদে পারলাম না। ও যেমনই হোক ওকে আমি খুবই ভালোবাসতাম। আর এখনও হয়তো বাসি। নাহলে ওর কষ্টটা শুনে নিজেকে কেন ধরে রাখতে পারছি না। চিঠিটা রেখে ওর পেছনে থাকা হাসপাতালের ঠিকানাতে গেলাম। গিয়ে শুনি ৩ দিন আগেই আমার তিশা মারা গেছে। বাড়িতে এসে ষ্টোর রুমটা খুলে ওর সেই পুরোনো জিনিসপত্র বুকে রেখে কান্না করলাম। অনেক বছর পর আজ মন খুলে কাঁদছিলাম।
আরও পড়ুন: অভিমানী প্রেমের গল্প – প্রকৃত ভালবাসা