এক রাত্রি – সন্দেহময় ভালোবাসার গল্প

এক রাত্রি – সন্দেহময় ভালোবাসার গল্প: মিতু ওর গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে বললো, হ্যা মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাথা খারাপ মানুষেরা অনেক কিছু করতে পারে। আমিও এখন অনেক কিছু করবো।


১ম পর্ব

বিয়ের রাতে নিজের স্বামী ইশতিয়াককে তার ভাবীর অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মিতু চমকে উঠে। তার গা ঘেমে একসার হয়। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে চেয়েও দরজাটা আঁকড়ে ধরে কোনমতে রক্ষা পায়! তারপর ক্লান্ত চোখ নিয়ে তাকায় তার স্বামীর দিকে। কিন্তু ইশতিয়াক তার কাছে আসে না। সে বারান্দায় ঝুলে থাকা দড়ি থেকে লুঙ্গি আর গামছা নেয়। তারপর ঢুকে যায় বাথরুমে। কী সর্বনাশের কথা! এই জন্য তার বাসর রাতটা মাটি হলো! ইশতিয়াক নিজের বাসর ঘরে বউ রেখে ভাবীর সাথে রাত্রী যাপন করে এসেছে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!

অথচ কত কী ভেবে রেখেছিলো মিতু। সে সারা জীবন নিজেকে সতী সাধ্বী রেখেছে। তার বড় ফুপু নাজনীন বেগম মাদ্রাসার শিক্ষিকা। তিনি মিতুদের বাড়িতে বেড়াতে এলেই ওকে সাবধান করতেন। বলতেন,কুরানে নাকি এমন আছে যে ,কেউ যদি সৎ থাকে তবে নাকি তার সঙ্গীও সৎ হবে। এই জন্য তার আঠারো বছরেও কোন প্রেম হলো না। একবার তার খালাতো ভাই তার হাত ধরে টান দিয়েছিলো।

অন্য রকম কিছু ইঙ্গিত করেছিলো তাকে। মিতুরও ইচ্ছে করেছিলো একবার শুধু এসব করে ফেলতে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার ফুপুর বলা কথাটা মনে হয়ে গিয়েছিল। আজ যদি সে তার খালাতো ভাই মামুনের সাথে এই কাজটা করে তবে তার স্বামীও তো অন্য একটা মেয়ের সাথে এমন করবে। আর সে কোনদিন এটা মেনে নিতে পারবে না যে তার স্বামী অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করেছে। অন্য একটা মেয়ের দেহের কাছাকাছি গিয়েছে।

কিন্তু আজ ফুপুর উপর খুব রাগ হচ্ছে। ফুপু কেন তাকে মিথ্যে বললো সেদিন!

ইশতিয়াক লম্বা সময় ধরে গোসল করছে। করবেই তো! অপবিত্র শরীরকে পবিত্র করতে সময় লাগবে না! তাও আবার ভাবীর সাথে ওসব! ভাবীটার আবার একটা মেয়ে আছে তিন বছরের। মেয়েকে জন্ম দিয়ে মেয়ের বাবা নিখোঁজ। আড়াই বছর ধরে স্বামীহারা তৃষ্ণা। তো দেহ একটু এসব করতে তো চাইবেই। তো চাইবে যখন ভাবীকে নিয়েই ঘর সংসার করতে পারতো।

মাঝে আমাকে বিয়ে করে এনে আমার জীবনটা নষ্ট করলো কেন হারামজাদা!
কথাগুলো ভাবলো মিতু। তারপর একটু কাঁদলোও। কাঁদতে গিয়ে চোখে জল এলো। আবার সেই জল একটু পর মুছে শক্তও হয়ে গেল সে। মনে মনে ভাবলো ইশতিয়াক বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিবে ও।

তারপর যাবে ওর ভাবীর কাছে। ওখানে গিয়ে ভাবীকে দুটা পঁচা কথা বলে ভাবীর মুখের উপর একদলা থুতু দিয়ে আসবে। এতেই তার জেদ মিটবে।
এরপর সকাল হলে সে নিজেই ইশতিয়াককে তালাক দিয়ে চলে যাবে ময়মনসিংহ শহরে। ওখানে তার বান্ধবী আছে।

আনন্দ মোহন কলেজে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে বাংলায় পড়ে। ওর কাছে থাকবে। বাড়িতে কিছুতেই যাওয়া যাবে না। মান সম্মান সব চুলোয় যাবে। তাছাড়া বাবাকেও এসব জানানো যাবে না। বাবা জানলে হার্ট অ্যাটাক করে কবরে চলে যাবে!

ইশতিয়াক বাথরুম থেকে বের হয়ে গামছা দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে ঘরের ভেতর এসে বললো, সরি মিতু, এমন একটা রাত আমি তোমার সাথে কাটাতে পারলাম না! কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছুই করার ছিল না!

মিতু সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে উঠে ইশতিয়াকের কাছে এলো। আর ইশতিয়াককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো ইশতিয়াকের গালে।
ইশতিয়াক গাল চেপে ধরে বোকার মতো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
মিতু তখন ঘর থেকে বেরিয়ে ইশতিয়াকের ভাবীর ঘরের দিকে পা ফেলে বললো, ভাবীর সাথেই বাসর করবি তো আমায় বিয়ে করেছিলে কেন? তোদের লাইভ দেখার জন্য?

বলে সে সোজা চলে গেল ইশতিয়াকের ভাবী তৃষ্ণার ঘরে। তৃষ্ণা তখন ঘুমের ভেতর তলিয়ে আছে। তার একটা বুক খোলা। সেই বুকের কাছে তার মেয়ে টুনির হাত। হয়তো একটু আগে টুনি মার দুধ খেয়েছে। নয়তো অন্য কিছুও হতে পারে। সেই অন্য কিছুটার আশঙ্কায় করছে মিতু। ইশতিয়াক এখান থেকে যাওয়ার পর হয়তো নিজেকে গুছিয়ে নেয়নি তৃষ্ণা। ক্লান্ত শরীরে ঘুমে তলিয়ে গেছে।

মিতু দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরে বললো, দাঁড়া প্রস্টিটিউট তোর আরামের ঘুম হারাম করছি!

বলেই সে তৃষ্ণার চুল শক্ত করে টেনে ধরলো। তৃষ্ণা ব্যথায় ককিয়ে উঠে চোখ খুলে চিৎকার করে বললো, কে?কে!

মিতু ওর মুখ চেপে ধরলো। আর চাপা স্বরে বললো, খবরদার! গলা বড় করলে এখানেই তোকে খুন করে ফেলবো কিন্তু!
তৃষ্ণা…


২য় পর্ব

তৃষ্ণা ভয়ে ঝিম মেরে গেলো একেবারে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, কী হচ্ছে এসব মিতু! তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
মিতু ওর গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে বললো, হ্যা মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মাথা খারাপ মানুষেরা অনেক কিছু করতে পারে। আমিও এখন অনেক কিছু করবো।
কী করবে?

তোকে ন্যাংটো করবো। তারপর একটা ক্ষুর দিয়ে টেনে টেনে তোর সুন্দর রুপ আমি নষ্ট করবো।
তৃষ্ণা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো।

ইশতিয়াক,এই ইশতিয়াক, এইদিকে আয়। দেখে যা মিতু কী সব বকছে?
ইশতিয়াক এলো না।

তৃষ্ণা ভয়ে কাঁপছে। ওর কপালটা ঘামছে। প্রচন্ড রকম ঘামছে।

মিতু বললো, ইশতিয়াক এখানে আসবে না। আমার চড় খেয়ে ওর আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে একেবারে!
তৃষ্ণা ভীষণ রকম চমকে উঠে বললো, মানে তুমি ইশতিয়াকের গায়েও হাত তুলেছো!

তো তুলবো না! বাসর রাতে নিজের বউকে ঘরে বসিয়ে রেখে ভাবীর সাথে—
তৃষ্ণা ধমক দিয়ে বললো, মুখ সামলিয়ে কথা বলো মিতু। তুমি এখন বেশি বেশি বলছো!

তৃষ্ণার ধমকে তার ঘুমন্ত মেয়ে ইন্দ্রাও জেগে উঠে। সে ভয়মাখা চোখে কেমন তাকিয়ে থেকে দেখছে মা আর কাকীমাকে। ওরা শেষ রাতে এসব কী শুরু করেছে! কিছুই বুঝতে পারছে না সে!

সন্ধির মাথা ধরেছে গতকাল থেকে। সে ইশতিয়াকের বড় ভাই কমল হাসানের মেয়ে। বারহাট্টা গার্লস স্কুলে সে ক্লাস টেনে পড়ে। ছ মাস পর তার ফাইনাল পরীক্ষা। ছোট কাকার বিয়ের ঝামেলার জন্য আর নীলয়ের পাগলামির জন্য গত তিনদিন তার পড়াশোনা মাটি হয়েছে। তাই আজ সে মাথা ধরা নিয়েই শেষ রাতে উঠে পড়তে বসেছিল। কিন্তু মেজো কাকিমার চিৎকার শুনে পড়াশোনা রেখে দৌড়ে গেল কাকিমার ঘরের দিকে।

গিয়ে দেখে অবাক কান্ড। মেজো কাকি আর ছোট কাকি দুজন চুল টানাটানি করছে। মেজো কাকিমার গায়ের শাড়ি অর্ধেক খুলে ফেলেছে ছোট কাকি। আগে থেকেই যে একটা বুক খোলা ছিল তৃষ্ণার সেই বুক এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সন্ধি ভয় পেয়ে গেল। তার পায়ের পাতা পর্যন্ত কাঁপছে।

এসব কী হচ্ছে বাড়িতে! তাও নতুন কাকিমার সাথে মেজো কাকিমার। মেজো কাকিমা তো চুপচাপ স্বভাবের মহিলা। তার মা রেগে গিয়ে কতবার মেজো কাকিমার গাল খসে চড় বসিয়েছে,বুম করে পিঠে কিল বসিয়েছে তবুও কাকিমা টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। মা যখন শান্ত হতো তখন মেজো কাকিমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলতো, তুই কী আমার উপর রাগ করছস তৃষু?

মেজো কাকিমা তখন হেসে ফেলতো মৃদু করে। তারপর বলতো, বড় বোন তো ভালোর জন্যই মারে। এই জন্য রাগ করার কী আছে?
সেই মেজো কাকিমার আজ কী হয়েছে হঠাৎ?আর ছোট কাকিমারই বা কী হলো?

সন্ধি পাগলের মতো ছোট চাচ্চুকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু ছোট চাচ্চুকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা মা এখনও ঘুমে। সে কী তবে নীলয় ভাইয়াকে ডাকবে?
নীলয়ের কথা মনে হতেই ওর পড়শুদিনের কথা মনে পড়ে গেল। ছোট চাচ্চুর বিয়েতে বরযাত্রী গিয়েছিল ওরা। সন্ধি গোলাপ রঙা সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছিল। কনের বাড়ির উঠোনে সে দাঁড়িয়েছিল একা। হঠাৎ একফালি বাতাস এসে তার শাড়িটা এলোমেলো করে দিয়েছিল। পেটের কাছ থেকে শাড়ি সরে গিয়েছিল একপাশে। তখন ভেসে উঠেছিল তার পদ্মফুলের মতো নাভী।

সন্ধি খেয়াল করেনি। তার দিকে একপাল ছুঁচো ছেলে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো। ওদের জিহ্বা দিয়ে লালা জড়ছিলো যেন!
আর এই সময় কোথা থেকে যেন ওর নীলয় ভাইয়া আসে পাগলের মতো ছুটে। তারপর ওর একটা হাত শক্ত করে ধরে ওকে নিয়ে যায় গাড়িগুলোর দিকে। তারপর একটা গাড়ির দরজা খুলে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় তাকে গাড়ির ভেতর। তারপর ওর গলা চেপে ধরে বলে, শরীর দেখানোর খুব শখ তাই না?তো আমাকে দেখা! খোল। সবগুলো কাপড় খোল। আমি দেখবো। আমি দেখতে চাই!

সন্ধি কেঁপে উঠেছিল ভয়ে। কেঁদে ফেলেছিলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো, ভাইয়া, আমার সাথে এমন করছো কেন?

নীলয় ওর গালে একটা চুমু এঁকে দিলো। তারপর অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো সন্ধিকে। সন্ধি ওর বুকের ভেতর থেকেই ভয়ে কাঁপছে।

এরপর নীলয় সন্ধির মাথার দু পাশে দু হাত দিয়ে আলতোভাবে চেপে ধরে বললো, সন্ধি,তুই শুধু আমার। তোর রুপ,সুন্দর্য শুধু আমার জন্য। অন্য কাউকে দেখাবি কেন তুই তোর শরীর?

সন্ধি জানতো না কোনদিন নীলয় তাকে পছন্দ করে। সে এমনিতেই নীলয়কে ভয় পেতো। কারণ ওর বারো বছর বয়সে একটা ঘটনা ঘটেছিল। কী একটা বিষয় নিয়ে যেন রেগে গিয়ে নীলয় তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। আঘাতটা পেয়েছিল সন্ধি প্রচন্ড। তারপর সে টের পেলো তার তল পেটের চিনচিন করা ব্যথাটা। তারপর যখন মাটি থেকে উঠতে যাবে তখন সাদা ট্রাউজার আর পায়ের গোড়ালিতে রক্ত দেখে চমকে উঠলো সন্ধি। এবং চিৎকার করে জ্ঞান হারালো সে।

অবশ্য এরপর সে বুঝতে পেরেছে বয়স হলে মেয়েদের এমন হয়। প্রতি মাসের কয়েকটা দিন তারা অসুস্থ থাকে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সেদিন প্রথমবারের মতো সে ভয় পেয়েছিলো। নীলয়ের প্রতি আজ অবধি তার সেই ভয় কাটেনি!

এছাড়াও ছোট বেলা থেকেই নীলয়ের শাসনে শাসনে সে বড় হয়েছে। নীলয় ঘাড়ত্যাড়া আর ভীষণ একরোখা ছেলে। ছেলেকে ঠিক রাখতে পারে না বলেই তার মা মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। নীলয় একমাত্র ভয় পায় কমল হাসানকে। কমল হাসান ধমক দিলে তার কাপড় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

কিন্তু ইশতিয়াককে সে ভয় পায় না। ইশতিয়াকের চেয়ে নীলয় পাঁচ বছরের ছোট হলেও ওরা বন্ধুর মতোই। সন্ধি ভয়ে ভয়ে নীলয়ের ঘরের কাছে গিয়ে দরজায় টোকা দিতে যাবে তখন দেখে সে দরজা বাইরে থেকে লক করা। সন্ধি এখন কী করবে?সে কী বাবা মাকে ডেকে তুলবে?


৩য় পর্ব

সন্ধি ডাকলো তার মাকে।
ওমা,মা শুনছো?

সন্ধির মা জাহানারা বেগম চমকে উঠলেন ঘুম থেকে। তারপর ভয়মাখা গলায় বললেন, কী হয়েছে সন্ধি?কী হয়েছে?
সন্ধি ফিসফিস করে বললো, আস্তে। তুমি একটু উঠে আসো।

জাহানারা চুপচাপ বিছানা থেকে উঠে এলেন বাইরে। সন্ধি এবার বললো, আমার সাথে মেজো কাকিমার ঘরে আসো।
জাহানারা কিছু বললেন না। তিনি সন্ধির সাথে তৃষ্ণার ঘরে গিয়ে চমকে উঠলেন। তৃষ্ণার চুল এলোমেলো। শাড়ি অর্ধেক খোলা। মিতুর চুলও এলোমেলো। তবে ওরা এখন আর একজন অপরজনের চুল টেনে ধরছে না। তবে মিতু এই সময় একটা ভয়ংকর কথা বলেছে।

এবং এই কথাটাই গিয়ে শুনতে পেয়েছে জাহানারা।

মিতু বলছে, তোর একটুও খারাপ লাগে না এমন ফুটফুটে একটা মেয়ে রেখে দেবরের সাথে বেড শেয়ার করতে!
ঠিক তখন জাহানারা বেগম আর সন্ধিকে আচমকা দেখে ওরা কেঁপে উঠলো।

তৃষ্ণা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বললো, ভাবী, বিশ্বাস করো মিতু সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে!

মিতু বললো, কিছুই বানিয়ে বলছি না। সব সত্যি। বড় ভাবী,তোমরা সব আগে থেকেই জানতে। জানতে যে তোমাদের মেজো বউ একটা প্রস্টিটিউট। নিজের দেবরের সাথে সে বেড শেয়ার করে। মেলামেশা করে!

জাহানারা বেগম রাগে কাঁপছেন। কাঁপতে কাঁপতে তিনি বললেন, মিতু,কী বলেছো তুমি?

মিতু হেসে বললো, বলেছি আপনারা সবাই জানতেন ইন্দ্রার মা একটা খারাপ মেয়ে। ইশতিয়াকের গার্লফ্রেন্ড ও। প্রতিরাতে ওরা একসাথে থাকে। আমার তো মনে হয় ইন্দ্রাও ইশতিয়াকের সন্তান।

জাহানারা বেগম নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। এক চড় বসিয়ে দিলেন মিতুর গালে। তারপর বললেন, তোমার এতো বড়ো সাহস!
মিতু একটুও ভয় পেলো না। দমেও যায়নি মোটেও। সে তার গালে হাত দিয়ে আলতোভাবে নাড়াচাড়া করতে করতে বললো, মেরেছো ভালো কথা। কিন্তু আমায় মেরে তো সত্যিটা লুকোতে পারবে না। আমার নিজের হাতে নাতে ধরা পড়েছে ওরা।

তৃষ্ণা কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না। বলতে দিচ্ছে না কিছু ওকে। ইন্দ্রা ছোট মানুষ। একবার সজাগ হয়েছিল ওর মার ধমকের আওয়াজ শুনে। তারপর আবার ঘুমে তলিয়ে গেছে। সন্ধি এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল এখানেই। জাহানারা বেগম ওর দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে বললেন, এখান থেকে যাও বলছি। গিয়ে পড়তে বসবে না আবার। সোজা ঘুম।

কিন্তু সন্ধি সরাসরি ঘুমোতে গেলো না। সে দরজা থেকে খানিকটা সরে গিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। সে এখান থেকে শুনতে চায় সবকিছু। এই বয়সটা এমনি। নিষিদ্ধ সবকিছু শুনতে এবং করতে ইচ্ছে করে শুধু!

সন্ধি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবছে,মিতু কাকিমার কথা তো একেবারে অসত্য হওয়ার কথা না। সে তো রাত জেগে পড়ে। অনেকবার সে লক্ষ্য করেছে রাত এগারো বারোটার দিকে ছোট চাচ্চু ইন্দ্রাদের ঘর থেকে ফিরে। একদিন তো ইন্দ্রাদের ঘরের দরজার সামনে অন্ধকারে দুজনকে ফিসফিস করতেও দেখা গেছে!

জাহানারা মিতুকে বললেন, তুমি না এ বাড়িতে নতুন এসেছো। তো এই একদিনেই সব জেনে ফেলেছো।
মিতু বললো, জেনে ফেলিনি। সবকিছু দেখে ফেলেছি।

কী দেখে ফেলেছো?
ইশতিয়াক বাসর রাত আমার সাথে যাপন করেনি। করেছে ওর সাথে।
তৃষ্ণাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো মিতু।

জাহানারা বললেন, তোমার সাথে বাসর করেনি এটা মানলাম। কিন্তু ও যে তৃষ্ণার ঘরে ছিল এটা কীভাবে তুমি জানো?
আমি দরজা খুলে বারান্দায় এসেছিলাম। এসে দেখি ইশতিয়াক এই অন্ধকারেই
ইন্দ্রাদের ঘর থেকে বের হচ্ছে।

তারপর ওখান থেকে এসেই ও লুঙ্গি গামছা নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেল। গোসল করলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে আমায় সরি বলেছে। বলেছে আমার সাথে বাসর করতে পারেনি বলে সে সরি!

জাহানারা বেগম চমকে উঠলেন। এটা কী আসলেই সত্যি? এতো দিন তবে তার চোখে কেন পড়েনি এসব?পড়লে আগেই তৃষ্ণাকে আউট করে দেয়া যেতো এখান থেকে!

জাহানারা বেগম এমনিতেও চাইতেন তৃষ্ণা মেয়ে নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়ুক। কিন্তু পারেন না তার স্বামী আর মেয়ের জন্য। সন্ধি ইন্দ্রাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। যেন ওরা আপন বোন। আর কমল হাসানও ভাইবৌকে এতো সোহাগ করেন যে যেন তারা আপন ভাই-বোন। এবার সুযোগ পাওয়া গিয়েছে। এবার আর কমল হাসানের মাথা ঠিক থাকবে না। তৃষ্ণার মতো দুশ্চরিত্র মেয়েকে তিনি সহ্য করবেন না কিছুতেই। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। তখন সম্পত্তি তিন ভাগ থেকে দু ভাগে নেমে আসবে।

তিনি মনে মনে আরেকটা দোয়া করেন। ইশতিয়াক হারামজাদাটাকে যদি কোনভাবে বুদ্ধি শুদ্ধি দিয়ে খুনি টুনি বানিয়ে ফেলানো যেতো! তবে তো সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যেতো সে!

জাহানারা বেগম তৃষ্ণাকে বললেন, মিতু যা বলেছে এসব কী সত্যি?
তৃষ্ণা কেঁদে উঠলো।

ভেজা গলায় বললো, ভাবী,তোমারও এমন মনে হয়?

জাহানারা বললেন, শুধু বাচ্চাদের মতো ভে ভে করে কাঁদিস না তো! কান্না আমার পছন্দ না। এখন যা জিজ্ঞেস করেছি তা বল?
তৃষ্ণা বললো, এইসব জিজ্ঞেস করার চেয়ে এক শিশি বিষ এনে দাও আমায়। খেয়ে তোমাদের উদ্ধার করি!

জাহানারা বেগম ভীষণ খেপে গেলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তৃষ্ণার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, আমাদের উদ্ধার করবি মানে?কথাটা আমার ভালো লাগলো না। এরপর থেকে এমন কথা বললে খুব খারাপ হবে!

তৃষ্ণা বললো, এরচে কী খারাপ হবে ভাবী? একজন প্রস্টিটিউট এর কাছ থেকে এরচেয়ে ভালো কী আশা করো তোমরা?
জাহানারা বেগম বললেন, খামুস। একদম খামুস। মুখে লাগাম লাগা।

তৃষ্ণা তার গলা আরো বড় করলো। সে বললো, তোমার কথায় আমি চুপ করবো কেন? তুমি কে? তুমি কী এ বাড়ির হর্তা কর্তা?
জাহানারা বেগমের মাথায় রক্ত উঠে গেল কথাটা শুনে। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলেন তৃষ্ণার সাথে ইশতিয়াকের কোন নোংরা সম্পর্ক না থাকলেও তিনি একটা নোংরা গল্প তৈরি করবেন। তারপর তৃষ্ণার উপর শোধটা সুন্দর করে তুলবেন তিনি। প্রতিশোধ নিবেন। প্রতিশোধ! ! !


৪র্থ পর্ব (অন্তিম)

এতো দিন ধরে সুন্দর সাবলীল নিয়মে চলতে থাকা বাড়িটা চট করে পরিবর্তন হয়ে গেল। আশ পাশের দু চার ঘরের মানুষ জেনে গেল তৃষ্ণার সাথে তার দেবর ইশতিয়াকের পরকিয়ার সম্পর্ক আছে। কিন্তু এই কথার আরো ডালপালা ছড়ালো। কেউ কেউ এটাকে বাড়িয়ে বললো,ইন্দ্রার বাবা নিখোঁজ হওয়ার একমাত্র কারণ স্ত্রীর সাথে আপন ভাইয়ের পরকিয়ার সম্পর্ক। কেউ আবার বলছে,ইন্দ্রার বাবা আর কেউ না। ইশতিয়াক।
কিন্তু ইশতিয়াক তা স্বীকার করে না।

গতকাল শেষ রাতে বউয়ের চড় খেয়ে সে মন খারাপ করে বাড়ির বাইরে রাস্তার ধারে চলে গিয়েছিল। ওখানে গিয়ে দেখে নীলয় বসে আছে। বসে থেকে গুনগুন করে গান করছে। সে নীলয়ের সাথেই বসে গল্প করছিলো।

ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর নীলয়ের মনেও সন্দেহ জেগেছে। ঘটনা যদি সত্যি না হবে তবে তার মামা বাসর রেখে অত রাতে রাস্তায় নেমেছিল কেন?

কমল হাসান রাজনীতি সচেতন ব্যাক্তি। সবকিছু শোনার পর লজ্জায় তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। রাতের বেলা গোপনে বাড়ি ছেড়ে গিয়ে উঠেছেন দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি। আপাতত ওখানেই থাকবেন। বাড়িতে থাকলে ঝামেলা পোহাতে হবে। নানান জনের নানান প্রশ্ন উদয় হবে। সেইসব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারবেন না কিছুতেই!

বিকেল বেলা নীলয়ের সাথে সন্ধির দেখা হলো। ওরা ছাদে উঠেছিল।

নীলয় বললো, সন্ধি,তোর কী এসব বিশ্বাস হয়?

সন্ধি বললো, একটু একটু। তোমার?

আমারও একটু একটু।

মোটকথা বাড়ির সবারই বিশ্বাস হয় ইশতিয়াক আর তৃষ্ণা রোজ রাতে নিষিদ্ধ কাজে মগ্ন হয়। বাড়ির সব কজনের চোখে ওরা দুজন পাপিষ্ঠ। মিতু সিদ্ধান্ত নিলো আজ সূর্য ঢুবার আগে আগেই সে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু এর আগে ইশতিয়াকের সাথে তার কিছু কথা আছে।

কিন্তু ইশতিয়াক মুখ খুলছে না। একেবারেই চুপচাপ। তার চোখ লাল এবং ফোলা ফোলা। দেখেই বোঝা যায় খুব কেঁদেছে। কিন্তু এসব দেখে বাড়ির মানুষের সন্দেহ আরো বেড়েছে। ওরা ভাবছে ঘটনা মিথ্যে প্রমাণ করবার জন্য ইশতিয়াক বাহানা করছে।

তৃষ্ণার বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। তৃষ্ণাকেও এ বাড়িতে রাখা যাবে না। এমন পাপিষ্ঠ মেয়েকে এ বাড়িতে রাখলে খুব পাপ হবে। অমঙ্গল হবে বাড়ির। ওর বাবা ইতিমধ্যে গাড়ি করে রওনা দিয়েছেন।

ইন্দ্রা এরমধ্যে কয়েকবার কেঁদেছে। বারবার বলছে,আমি ছোট চাচ্চুর কাছে যাবো। আমি ছোট চাচ্চুর কাছে যাবো।

তৃষ্ণার তখন যা রাগ উঠেছে। সে মেয়ের গালে তার হাতের সবটুকু জোর দিয়ে চড় বসিয়ে দিয়েছে। ছোট মেয়ে তো! চড় খেয়ে গলগল করে রক্ত বেরুনো শুরু করেছে মেয়ের নাকমুখ দিয়ে।

এরপর যা হলো তা বলার বাহিরে। জাহানারা বেগম দৌড়ে এলেন তৃষ্ণার ঘরে। এসে বললেন, এখন মেয়ের উপর শোধ নেয়া হচ্ছে!
বলে বসা থেকে ধাক্কা মেরে তৃষ্ণাকে মেঝেতে ফেলে দিলো। তারপর ওর নাকে মুখে থুথু ছিটিয়ে ইন্দ্রাকে কোলে নিয়ে তার ঘরের দিকে চলে গেলো। ইন্দ্রা কাঁদতে লাগলো গলা ছেড়ে।
মা মা মা বলে।

তখনও সন্ধ্যা নামেনি। নীলয় এবং সন্ধির ভেতর ভালোবাসা বাসি হয়ে গেছে এতোক্ষণে। ওরা দুজন দুজনকে চুমু খেয়েছে। জড়িয়ে ধরেছে একে অপরকে। তারপর হাত ধরাধরি করে খুব সঙ্গোপনে ওরা ছাদ থেকে নেমে এসেছে।

ওরা নামার পর পরই ছাদে উঠলো তৃষ্ণা। তারপর ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে সে গেল ছাদের একেবারে কিনারে। তারপর কেঁদে উঠলো হাউমাউ করে। কাঁদতে কাঁদতে মনে করলো বাবা মার মুখ। মনে করলো হারিয়ে যাওয়া মানুষটার মুখ। তারপর ইন্দ্রাকে নিয়ে ভাবলো। সে জানে ইন্দ্রা একটু পর থেকেই এতিম হয়ে যাবে। হয়তোবা তার সম্পর্কে একটা ভুল জেনে বড় হবে। জানুক। এই পৃথিবীতে আসল ঘটনার চেয়ে ভুলটা জেনেই মানুষ বেশি বড় হয়, অগ্রসর হয়। এসব ভাবতে ভাবতেই উঠোন থেকে একটা আওয়াজ এলো তার কানে। তার বাবা এসে গেছেন।

এই মুখ নিয়ে সে কিছুতেই বাবার সামনে যেতে পারবে না।
তৃষ্ণা লাফালো। এক লাফে পড়ে গেল সে তিনতলা থেকে নীচে জমা করে রাখা ইট সুড়কির উপর। ওখানে পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হলো!

একটু আগের বাড়িটাই এই মুহূর্তে কান্নাবাড়ি হয়ে গেল। ইশতিয়াক এতোক্ষণে মুখ খুলেছে। সে চিৎকার করে বলছে, তোমাদের জন্য। শুধু তোমাদের জন্য ভাবীর এমন হলো। তোমরা তো কোনদিন পিতৃহারা একটা মেয়ের দিন রাত কিভাবে কাটে তা জেনেও দেখোনি।

তোমরা জানতে না ইন্দ্রা তার বাবার হাত বুলানো ছাড়া ঘুমোতে পারে না। এই মেয়েটা এতো জেদি যে তাকে রোজদিন নতুন নতুন গল্প না বললে সে ঘুমোবেই না। খাটের উপর বসে থাকবে। গলা ছেড়ে কাঁদবে। রাতে হঠাৎ ইন্দ্রা কাঁদলে তোমরা কী উঁকি দেখেছো,মেয়েটা কাঁদছে কেন?

দেখোনি। প্রয়োজন অনুভব করো নি দেখার। আর যে দেখতে গেলো। মেয়েকে গল্প বলে,হাত বুলিয়ে, রোজ দিন ঘুম পাড়ালো। কোনদিন ঘুমোতে না চাইলে আবছা আলোয় ভাবীর সাথে ভূত সেজে ওকে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ালো। এসব দেখেই তোমরা ঠাহর করে ফেললে আমরা পাপী?

মিতু খানিক কেঁপে উঠলো। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, তাহলে ইন্দ্রাদের ঘর থেকে এসেই তুমি গোসল করেছিলে কেন?

ইশতিয়াক তখন সরাসরি বললো, কারণ ইন্দ্রা‌ সেদিন কিছুতেই ঘুমাচ্ছিলো না। কেন জানি কাঁদছিলো। বারবার ওর বাবাকে ডাকছিলো। এর একটু পরেই ইন্দ্রা বললো তার পেটে ব্যথা। ভীষণ ব্যথা। এতো রাতে ডাক্তার এখানে আসবে না। তাই তাকে নিয়ে যেতে হলো হাসপাতালে। ওখানে যাওয়ার সময় বমি করে সে আমার কাপড় চোপড় নষ্ট করে ফেলেছিলো। এই জন্য গোসল করতে হয়েছিলো। এসব কী বলার সুযোগ দিয়েছিলে তোমরা?

কেউ কোন উত্তর দিতে পারেনি। আসলে ওদের আর কিছু বলার ছিল না তখন!

মিতু এ বাড়িতে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু ইশতিয়াক নিজেই তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। তারপর ইশতিয়াক বাড়ি ছেড়ে মেজো ভাইয়ের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। কদিন পর নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে কমল হাসানও। এর আরো পরে হুট করে একরাতে সন্ধি নীলয়ের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। সাথে নিয়ে গেছে ইন্দ্রাকে। এ বাড়িতে তাদের নাকি ভয় করে। মনে হয় তারা জাহান্নামে আছে।

হ্যা জাহানারা বেগমের মনের আশা এখন পূর্ণ হয়েছে। সে এ বাড়ির সবকিছুর হর্তাকর্তা এখন। সব সম্পত্তির মালিক সে একাই। কিন্তু এই মুহূর্তে এসে সবকিছু লাভ করেও সে বুঝতে পারছে আসলে অগাধ ধন- সম্পত্তির মালিক হয়ে গেলেই সুখি মানুষ হওয়া যায় না। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেও সুখি হয়। (আত্মহত্যা করা মহাপাপ। তবে জাহানারা যে পাপ করেছে তার চেয়ে বেশি নয় কিছুতেই!)

লেখা – অনন্য শফিক

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এক রাত্রি – সন্দেহময় ভালোবাসার গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন চোখের জলের ঋণ – শিক্ষনীয় ছোট গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *