হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আজ যে ভাবেই হোক মনিকে প্রপোজ করতেই হবে। পাশেই আমার মেয়ে মৌ দাঁড়িয়ে আছে।
অফিস থেকে ফেরার পথে গোলাপ ফুল কিনেছিলাম।
আমি আবার গোলাপের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারি না।
তাই গোলাপ ফুলের উপরে লেডিস্ পারফিউম এবং বয় পারফিউম দিয়ে দিলাম। আহ! কি ঘ্রাণ।
মনি তো আজ খুব খুশি হবে।
এখন শুধু মনি বাতরুম থেকে বের হবার অপেক্ষায় আছি।
মৌ মেয়েটা খুব পাকনা, বয়স মাত্র ২, আমাদের বিয়ের বয়স সারে তিন।
আমি যা করবো, আমার মেয়েও তাই করবে। যদিও এখন কথা বলতে পারে না ভালোভাবে।
বিয়েটা আমাদের ফ্যামিলির পছন্দেই হয়েছে।
মনিকে বিয়ের দিন দেখেই ভালোবেসে ফেলি। তখন পাশ থেকে ভাবি বলেছিলো। আমি লুচু।
বাসর রাতে মনির চেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিলাম আমি।
কারণ একটাই। এর আগে কখনো কোনো মেয়ের
বাসর রাতেই মনি আমায় বলে, ওরে নাকি প্রপোজ করতে হবে।
কিন্তু আমি তো কখনো এর আগে কাউকে প্রপোজ করিনি। তাই শুধু আই লাভ ইউ বলি৷ উত্তরে মনির হাতে একটা অনেক বড়
থাপ্পড় খেয়েছিলাম। ভাবছেন কেমন বউ আমার?
যে কি-না বাসর রাতেই আমায় থাপ্পড় দেয়।
কারণও ছিলো বটে। আমি ওর প্রথম স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি।
বিয়ের ঠিক ২১ দিন পর প্রথম আমি মনির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করি। তাও চিটিং করে।
মনির একটা কথাই ওরে ভালোভাবে প্রপোজ করবো। তারপর ওরে কিস, লিপ কিস, আরো ভ্লা ভ্লা সব করতে পারবো।
কিন্তু আমি তো প্রপোজ করতে পারিনা। তাই একটা বুদ্ধি খাটালাম। আমি আবার বুদ্ধিতে ১০০তে ০.
আমি জানতাম আমায় দিয়ে কখনো প্রপোজ করা হবে না। কারণ আমি ইতিহাস নিয়ে পড়েছি।
তাই ভাবলাম একটা চুক্তি করি, যদি হয়ে যায়, তাহলে মনিকে সব করতে পারবো।
২০টা রাত প্রপোজ করেছি। আই লাভ ইউ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারিনি৷ শুধু থাপ্পড় পেয়েছি। আহ বউয়ের হাতের ২০টা থাপ্পড়, নিশ্চয় মধুর নয়। বউয়ের সব কিছু মধুর হতে পারে। শুধু থাপ্পড় ছাড়া।
অফিসে বসে চুক্তিতে সব লিখলাম।
রাতে যখন মনি আমায় বললো। এই-যে মিস্টার, আমায় প্রপোজ করেন। নিজের অজান্তেই গাল হাত চলে যায় আমার। মনি লেডি ডাইনির মতো হাসলো। যদিও পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ডাইনি বিলুপ্ত হয় নি।
আমি পকেট থেকে কাগজ বের করি। মনি বললো।
কাগজ দেখে প্রপোজ গ্রহণ যোগ্য না।
ওকে ডার্লিং। মুচকি হেসে বলছিলাম।
তারপর আবার বললাম।
মনি আমি তোমায় আজ প্রপোজ করেই ছাড়বো।
কিন্তু তার আগে তুমি এই কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে।
মনি আমার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি প্রয়োগ করলো।
আমি রোমান্টিক হাসি দিয়ে বললাম।
এটাতে যা লিখা আছে, সব তুমি পড়বে। তার আগে স্বাক্ষর দাও।
মনিও খুশিতে আত্মহারা হয়ে কাগজে স্বাক্ষর দেয়। আমিও ইংলিশ ভিলেনের ন্যায় মুচকি হাসি দিলাম।
মনি কাগজটা খুলে পড়ে, আর আমার দিকে রাগী চোখে তাকায়।
কাগজে লিখা ছিলো।
আমায় শুধু বাবা হওয়ার একটা সুযোগ দাও। একটা সন্তান হওয়ার পর, ঠিক তোমায় প্রপোজ করে ফেলবো৷ আর আমিও এই কয়দিনে প্রপোজ কিভাবে করে সেটাও শিখে যাবো।
মনি কিছুক্ষণ আমায় বালিশ দিয়ে আদর দেয়। কিন্তু স্বাক্ষর যে করেছে। তাই আমায় আর আটকাতে পারেনি। কাজটা শুরু করার আগে ওর কানেকানে বলছিলাম।
আমি ইতিহাসের ছাত্র ছিলাম। চুক্তিতে পাকা লিচু। মনি বলছিলো। ওটা লিছু না, পাকা লুচু।
যাজ্ঞে প্রপোজ না করেই এক মাইয়ার বাবা হলাম।
তারপরেও ওরে প্রপোজ করিনি।
ওর বান্ধবীরা ওরে বলতো। আমার বর প্রতি রাতে প্রপোজ করে। আরো ভ্লা ভ্লা কচু নাশক গ্যাস ওর কানে ভরে দিতো।
তারপর রাতে আমার উপর অত্যাচার হতো।
মনি বাতরুম থেকে বের হয়। পড়নে কালো শাড়ি। আহ! কি সুন্দর।
মনির দিকে মুগ্ধ হতে তাকিয়ে আছি।
মনি রেগে চিৎকার করে বললো।
আরেক বাচ্চার বাবা হতে হলে, আজকেই লাস্ট চান্স। আজ প্রপোজ করতে না পারলে, আর কখনো আমায় ছুঁবেও না।
আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম।
আজকে তোমায় প্রপোজ করবোই। মৌ মা’টার জন্য খেলার সাথী আনবোই।
ডায়লগ না দিয়ে প্রপোজ করে ফেলো। দেখি কি শিখলা এই ৬ মাসে। যদি আমার মন জয় না করতে পারো। তাহলে তুমি যে প্রপোজকোচিং সেন্টারে পড়েছো। সেই কোচিং সেন্টার এর নামে মামলা করবো।
মনি খুব রেগেই কথাটা বললো।
আমি মাথার চুল গুলো সুন্দর করে ঠিক করে নিলাম।
মৌ এর দিকে তাকালাম। পিচ্চি মেয়েটা মায়ের মতো কমরে হাত দিয়ে আছে।
আমি মনির সামনে গোলাপ হাতে বসে পরলাম ইংলিশ নায়ক এর ন্যায়।
বলতে শুরু করলাম।
— কন্যা তোমার কাজল কালো চোখ,
প্রতিটা দিবস পাই ভীষণ সুখ।
— কন্যা তোমার রেশমি কালো চুল,
আমার প্রপোজের ছন্দে হতেও পারে ভুল।
— কন্যা তোমার লাল চিকন ঠোঁট,
আমার ঠোঁট হেসে খেলে করছে তা ভোগ।
— কন্যা তোমার মিষ্টি হাসি,
আমি যে খুব ভালোবাসি।
— কন্যা তোমার নাকের ডগার তিল,
আমায় আকৃষ্ট করে যেন আকাশ ছোঁয়া নীল।
— কন্যা তোমার রূপের মায়ায়,
জ্ঞান হারাবো তোমার ঠোঁটের ছোঁয়ায়।
— কন্যা তোমার মিষ্টি কণ্ঠে,
আমায় ভালোবেসে ওগো ডেকো অতি যত্নে।
— কন্যা তোমার লাল আলতা পা’য়ে,
আমার মন কেড়েছে অনায়াসে।
— কন্যা তোমার পায়ের নূপুরের ধ্বনি,
বাঁশির সুরের চেয়েও মাধুরি।
–কন্যা তোমায় নিয়ে বলবো না আমি,
তুমি যে আমার জন্যেই সৃষ্টি।
— কন্যা বলবো একটি কথা,
তোমায় ভালোবাসতে মানিনা কোনো প্রথা।
— কন্যা হবে কি আমার একশত বাচ্চার মা,
বুড়ো হয়েও বলবে, ওগো! আমার পেটে লাতি দিচ্ছে তোমার বাচ্চা।
— কন্যা তোমায় অনেক ভালোবাসি,
তুমিই আমার মনের রাণী।
— আই লাভ ইউ মনি,
একটু ভালোবাসা দিয়ে আমায় নিয়ে সমুদ্র দিয়ো পাড়ি।
অনেক অনেক ভালোবাসি মনি, আমার মৌ এর মিষ্টি আম্মুকে অনেক ভালোবাসি।
কথা গুলো বলে থামলাম।
চোখ বন্ধ করে নিলাম। এতক্ষণ মনির মায়াবী রূপেত দিকে তাকিয়েই কথার বর্ষণ করিয়েছিলাম। মনির চুপ থাকা দেখে ভয় পেলাম। মনে হয় আজো থাপ্পড় গালে পড়বে।
কিন্তু গালে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পরলো।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম।
মনি চুমু দিয়েছে।
মৌ হাত তালি দিচ্ছে। তার মানে মনির মন জয় করে ফেলছি।
মনির মন জয় করা মানে। আরেকটা সন্তানের বাবা হওয়া।
ফুল কি হাতেই রেখে দিবে?
মনির প্রশ্ন শুনে, উৎফুল্ল কণ্ঠে বললাম।
মনি তুমি আমার প্রপোজে রাজি হয়েছো?
এতো সুন্দর করে কেউ প্রপোজ করলে, রাজি না হয়ে পারা যায়।
আমি মনির কথা শুনে, মনির হাতে ফুল দিলাম। আর মনির বাম হাতে পৃষ্ঠে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।
মনি আমার ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
আমি মিষ্টি হেসে বললাম।
আবারো বাবা হবো আমি।
মনি আমার বুকে মাথা লোকাল লজ্জায়। মৌ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, এলিয়েন দেখার ন্যায়, আমি আর মনি যদিও ভাবছি এলিয়েন। মৌ’র কাছে হয়তো সেটা টম এন্ড জেরি।
মনি ফুলটার ঘ্রাণ নিয়ে বললো। ওই গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ এমন কেন?
আমি হেসে বললাম,
ফুলে লেডিস এবং বয় পারফিউম দিয়েছি। জানোই তো আমি গোলাপের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারিনা।
মনি আমার কথা শুনে হেসে দিলো।
ফুলটার ঘ্রাণ কিন্তু জাস্ট অসাধারণ।
আমি মৌ’কে ওর দাদির কাছে দিয়ে আসলাম।
আজ থেকে যে প্রতিরাতে আমাদের বাসর হবে।
সমাপ্ত
প্রপোজ পাগলী বউ
লেখক: হানিফ আহমেদ
(ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
আরো পড়ুন – তোমাতে আমি পূর্ণ