বউয়ের ভালোবাসা ৬

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – শেষ পর্ব | Bouer Valobasha

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – শেষ পর্ব: আজ আমার স্বামীর বাসর ঘর, নিজের হাতে তাকে সাজিয়ে দিয়েছি নতুন বউয়ের কাছে এনে দিয়েছি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, আমার কাব্যকে এভাবে কাউকে শেয়ার করতে হবে তা কখনো কল্পনা করিনি। কি হবে এখন আমার? কাব্য কি তবে আমাকে ভুলে যাবে?

নতুন বউয়ের ভালবাসা

পাশ থেকে জিনিয়া বলে উঠলো,

জিনিয়াঃ তোমাকে কোথাও যেতে দেব না, আপু।

নীলিমাঃ তা বললে হয় না, জিনিয়া। আমাকে যেতে হবে, তোমাদের মধ্যে দেওয়াল হতে চাই না। কাব্যকে সুখে রেখ।

জিনিয়াঃ তোমাদের মধ্যে দেওয়াল তো আমি আপু। আর তোমাকে ছাড়া উনি কোনদিন সুখী হতে পারবে, তুমি বলো।

নীলিমাঃ তুমি খুব ভালো মেয়ে। কয়েকদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

জিনিয়াঃ না, তুমি কোথাও যেতে পারবে না।

নীলিমাঃ ছেলেমানুষী করো না।

জিনিয়াঃ প্লিজ আপু, যেও না। অন্তত আমার বেবিটা হওয়া অবধি।

যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও এদের ছেড়ে যেতেই মন চাইছে না।

ওদের একসাথে মেলে নিতেও পারবো না। খুব কষ্ট হবে এখানে থাকলে।

জিনিয়া নীলিমার ব্যাগ নিয়ে রুমে রেখে আসলো।

কাব্য জিনিয়ার এমন ব্যবহারে আশ্চর্য হলো। নীলিমা যেতে চাইলো যেতে দিল না। অন্য মেয়ে হলে খুশি হতো। জিনিয়া খুব ভালো মেয়ে কিন্ত আমি নীলিমার জায়গা কাউকে দিতে পারবো না।

বউয়ের অধিকার

রাতের খাবার সবাই একসাথে খেয়ে নিজ নিজ রুমে গেলো।

কাব্য নীলিমার রুমে এসে দেখলো ডেসিনের সামনে চুল আচরাচ্ছে। এসেই পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো নীলিমাকে।

নীলিমা বললো, কি করছো কি কাব্য ছারো জিনিয়া দেখলে কষ্ট পাবে?

কাব্যঃ তোমাদের জোরাজোরিতে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবো না, নীলিমা।

আর জিনিয়াকে কোনোদিন তোমার জায়গায় দিতে পারবো না।

নীলিমাঃ দেখ কাব্য, জিনিয়া খুব ভালো মেয়ে। ওর অধিকার থেকে তুমি তাকে বঞ্চিত করতে পারো না। ও তো কোনো দোষ করে নি।

কাব্যঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই ভালোবাসবো।

এই বলে রুম থেকে চলে গেল কাব্য।

কাব্য রুমে এসে দেখলো জিনিয়া বসে আছে। জিনিয়ার উদ্দেশ্য বললো,

কাব্যঃ দেখুন, আমি আপনাকে কোনোদিন নীলিমার জায়গা দিতে পারবো না। তাই আমার উপর কোনো অধিকার ফলাতে আসবেন না।

জিনিয়াঃ আমি জানি, আমি আপুর জায়গা কোনোদিন নিতে পারবো না। আমাকে ঘরের এক কোনে জায়গা দিয়েন, তাহলেই হবে।

কাব্য কিছু না বলে শুয়ে পরলো।

কষ্টের ভালবাসা

অনেকদিন থেকে আনোয়ারা বেগম লক্ষ করলো তার দুই বউ নিজের বোনের মতো থাকে। এতদিন হলো তবুও কোনো ঝগড়া কিচ্ছু নেই।

রাতের খাওয়ার সময় আনোয়ারা বেগম বললো,

নীলিমার শাশুড়ীঃ অনেকদিন তো হলো কাব্য নাতি নাতনীর মুখ কি দেখতে পারবো না।

কাব্য খাবার ছুরে দিয়ে নিজের রুমে গেল।

এরপর একে একে সবাই খেয়ে রুমে গেল।

নীলিমা জিনিয়াকে বললো, চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার ভালোবাসা দিয়ে কাব্যের মন জয় করে নেও।

জিনিয়াঃ হুম, তা কি সম্ভব? উনি তোমাকে ভালোবাসে আপু, আমাকে না।

কাব্য ভাবছে, সে আসলেই অন্যায় করছে। জিনিয়ার উপর তার তো কোনো দোষ নেই। শুধু শুধু মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছি।

এই ভেবে সেই রাতে অনেক ড্রিংকস করে।

নীলিমা আর জিনিয়া সব কাজ গুছায় যে যার রুমে গেল।

জিনিয়া এসে দেখলো কাব্য ড্রিংকস করছে।

জিনিয়া বাধা দিতে গেলে কাব্য বলে,

কাব্যঃ জিনিয়াকে জরিয়ে ধরে কেন আমাকে দুই নৌকায় পা দেওয়ালে নীলিমা। তিন জনেই এখন কষ্ট পাচ্ছি। জিনিয়ার তো কোনো দোষ ছিল না।

জিনিয়াঃ (জিনিয়া বুঝতে পারে নেশার ঘোরে সে আমাকে নীলিমা ভাবছে) আপনি সুয়ে পরুন। আপনার শরীর ঠিক নেই।

কাব্যকে শুয়ে দিয়ে ওইপাশ হয়ে জিনিয়া সুয়ে পরলো।

একটানে জিনিয়াকে কাব্য জরিয়ে ধরলো। আর বলছে তোমাকে খুব ভালোবাসি নীলিমা।

এই প্রথম কাব্য তাকে কাছে টেনে নিয়েছে, তাও আপুকে ভেবে। আর সেই রাতেই নীলামা ভেবে কাব্য অনেক গভীরে চলে যায়।

বাবা হওয়ার সুখবর

পরেরদিন সকালে জিনিয়া গোসল দিয়ে রান্নাঘরে যায়।

নীলিমা দেখলো জিনিয়ার চুল ভেজা তার মানে….

এত কষ্ট হচ্ছে কেন? আমি তো এটাই মন থেকেই চেয়েছিলাম।

কাব্য ঘুম থেকে উঠলো। কাল রাতে কি হয়েছে ভাবতে লাগলো। কিন্তু কিছুই যেন মনে পরছে না।

জিনিয়া রুমে এলো এসে দেখলো কাব্য উঠে পরেছে।

জিনিয়াঃ গোসল সেরে নাস্তা খেতে আসুন।

কাব্যঃ তার মানে….

জিনিয়াঃ আপনি আসুন। আমি নাস্তা রেডি করি।

কাব্যঃ কাল যা হয়েছে তার জন্য দুঃখিত। আমি নেশার ঘোরে ছিলাম বুঝতে পারিনি।

জিনিয়াঃ আপনার অধিকার আছে।

এরপর কথা না বাড়িয়ে কাব্য ওয়াসরুমে চলে গেল।

কিছুদিন পর জিনিয়া মাথা ঘুরে পরে যায়। কাব্য বাসায় ছিল না। তাই নীলিমা আর তার শশুর মিলে হাসপাতালে নিয়ে য…

ড.নিশি বললো, সে প্রেগন্যান্ট।

সবাই খুশি কাব্য ভাবছে, এটা কিভাবে সম্ভব?

জিনিয়াকে রুমে রেস্ট করতে বলে নীলিমা রান্নাঘরে গেল।

সুখের সংসার

কাব্য বললো, এটা কিভাবে সম্ভব?

জিনিয়াঃ আপনি সেদিন রাতে নীলিমা আপু ভেবে!

কাব্য বুঝতে পারলো বিষয়টা।

নীলিমার কাছে এসে বললো,

কাব্যঃ কেমনে কি হয়েছে, আমি জানি না নীলিমা।

নীলিমাঃ মানে কি আবুল তাবোল বলছো?

এরপর কাব্য সবটা খুলে বললো নীলিমাকে।

নীলিমা বললো, যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।

৯ মাস পর….

খুব ভালোই কাটছে দিনগুলো। সবাই মিলেমিশে আছি।

কাব্যও এখন জিনিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে।

সবাই খুব যত্ন নেয় জিনিয়ার। উপর থেকে নিচে নামতেই দেয় না জিনিয়াকে।

কষ্টের মেঘেদের ভিড়

হঠাৎ একদিন কি মনে করে জিনিয়া সিঁড়ি বয়ে নিচে নামছে। এমন সময় পা স্লিপ করে নিচে পরে যায়। জিনিয়ার চিৎকার শুনে ছুটে গেলেন সবাই। জিনিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো খুব ব্লিডিং হয়েছে।

জিনিয়াকে Operation Theater নিয়ে গেল।

সবাই খুব চিন্তিত। নীলিমার বাবা-মা এলো। তারপরেই জিনিয়ার মামা মামিরাও চলে এলো।

কিছুক্ষণ পর একটা নার্স বাচ্চা নিয়ে এলো। সবাই যেন সস্তি পেল। মেয়ে হয়েছে, এই বলে নীলিমার কোলে দিয়ে গেল।

একটু পর ড.নিশি বেড়িয়ে এলো।

কাব্য বললো, জিনিয়া কেমন আছে ড.নিশি?

ড.নিশিঃ সরি ড.কাব্য, আমরা ওনাকে বাচাতে পারিনি। অতিরিক্ত ব্লিডিং এর জন্য ওনাকে বানানো সম্ভব হয়নি।

সবাই ভেঙ্গে পরেছেন। সব থেকে বেশি নীলিমা।

খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল ওদের। কি থেকে কি হয়ে গেলো এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি একটু সচেতন থাকলে হয়তো এমনটা হতো না। (আনমনে বলে চলেছে নীলিমা)

হাসপাতালের সব ফর্মালিটি শেষ করে বাড়ি ফিরে এলো লাশ নিয়ে।

সবাই অনেক শোকাহত।

বাচ্চাটাকে কিভাবে সামলাবে সে?

একটা দুধের শিশুকে কিভাবে সামলাবে? এই সময় তার মায়ের খুব প্রয়োজন।

সবাই এখন জানাজার জন্য লাশ নিয়ে যাবে।

শেষবারের মত নীলিমা দেখতে গেল জিনিয়াকে। কি নিষ্পাপ মেয়েটি এতো জলদি কেন নিলে তাকে খোদা।

এই নিষ্পাপ শিশুটির এখন কি হবে?

আমাদের আবার সুখী পরিবার

আজ থেকে তোমার বাচ্চার সব দায়িত্ব আমি নিলাম। তুমি শুধু দোয়া করিও দূরে থেকে।

লাশ নিয়ে গেল।

বাচ্চাটা কাঁদছে সাথে নীলিমাও।

দুধ গরম করে খাওয়াচ্ছে বাচ্চাটিকে। তবুও কাঁদছেই। কোলে নিতেই চুপ হয়ে গেল বাচ্চাটি। যেন মায়ের কোলে এসেছে।

কাব্য আনমনে ভাবছে,

যে সময় একটু জিনিয়াকে ভালোবাসতে শুরু করলাম, তখনি জিনিয়া পরপারে চলে গেল।

রেখে গেল একটা ফুটফুটে মেয়ে।

ভালো থেক জিনিয়া। আল্লাহ তোমায় জান্নাত নসিব করুক।

১ বছর পর….

হাসপাতাল থেকে ফিরেই,

কাব্যঃ নীলিমা কই তুমি?

নীলিমাঃ এসেই চিল্লাইতে শুরু করে দিয়েছো। জিনিয়া ঘুমিয়েছে আস্তে কথা বলো। তোমার মেয়ে যে দুষ্ট। অনেক কষ্টে ঘুম পারিয়েছি।

কাব্যঃ হুম। এখন তো আমার দিকে তোমার খেয়াল নেই। সারাদিন মেয়েকে নিয়েই ব্যস্ত থাকো।

নীলিমাঃ জেলাস হচ্ছে।

(আপনাদের তো বলাই হয়নি জিনিয়া মারা যাওয়ার পর নীলিমা আমাদের বাচ্চাটির নাম রাখে জিনিয়া নিঝুম। আমি নিষেধ করি জিনিয়া বলে ডাকতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা)

কাব্যঃ হুম জেলাস হচ্ছে। ওই বুড়িটা আমার ভাগ কমিয়ে দিয়েছে।

নীলিমাঃ হাহাহা! ছেলেমানুষী গেল না তোমার। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

নীলিমাকে জরিয়ে ধরে,

কাব্যঃ যেতে ইচ্ছে করছে না। পিচ্চি ঘুমিয়েছেতো। একটু আদর করো না।

নীলিমাঃ এই তুমি যাবে নাকি মা কে ডাকব?

কাব্যঃ আচ্ছা যাচ্ছি, এত রাগো কেন?

নীলিমাঃ (চোখ রাঙ্গিয়ে) যাও।

এরপর কাব্য ওয়াশরুমে চলে গেল।

নাটকীয় জীবন

জিনিয়া চলে গেছে পরকালে। কিন্তু রেখে গেছে আমাদের বাঁচার একমাত্র সম্বল।

আল্লাহ তোমায় জান্নাত নসিব করুক। আনমনে ভেবে চলছে নীলিমা। খুব কষ্ট হয় জিনিয়ার জন্যে।

নিঝুম কান্না করছে দেখে কোলে নিলো নীলিমা।

নীলিমাঃ আমার মামুনিটা কান্না করে কেন? তোমার বাবা এসেছে তাকে খাবার দিতে হবে না, বলো।

শাশুড়ী মায়ের কাছে নিঝুম কে দিয়ে, কাব্যকে খাবার বেরে দিলাম।

কাব্য খাচ্ছে। এমন সময় নীলিমা বলে উঠলো,

কাব্যঃ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তাই না কাব্য। আমার এখানে থাকার কথাই ছিল না। এখনও সেই বাড়িতেই আমি। আমি কোনোদিন মা হবো ভাবতেই পারিনি! কিন্তু দেখ, জিনিয়া আমাকে মা বানিয়ে চলে গেছে। যেই অপূর্ণতায় আমি ভুগছিলাম তা পরিপূর্ণ করে দিয়ে গেছে জিনিয়া। ফিরে পেয়েছি স্বামী সন্তান, সবকিছু। শুধু হারিয়ে ফেলেছি জিনিয়াকে। কতজন এমন ভাগ্য পায় বলো। এ এক অদ্ভুত পূর্ণতা। শুধু অপূর্ণতা থেকে গেল জিনিয়ার স্বপ্নগুলো। (এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললো নীলিমা)

কাব্যঃ সত্যি কোনোদিনও ভাবিনি, জিনিয়া এভাবে চলে যাবে আমাদেরকে ছেড়ে। রেখে গেল তার একমাত্র স্মৃতি নিঝুমকে।

খুব সুখেই আছি আমরা সবাই। নিঝুম সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে। বাবা-মায়ের চোখের মনি নিঝুম। আর নীলিমার জীবন। ভালো আছি আমরা। জিনিয়া আমাদের পরিপূর্ণ করে দিয়ে চলে গেছে। যা জিনিয়ার পাওয়ার কথা ছিল, এ যেন এক অদ্ভুত অপূর্ণতা থেকে গেল যা পূর্ণতা পেতে পারতো।

~সমাপ্ত~

আরো পড়ুন- বাবা মেয়ের ভালবাসা – প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *