বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৫: আজ আমার বাসর রাত, বিয়েটা এত তাড়াতাড়ি হল যে বুঝতেই পারলাম না কিছুই, না করলাম প্রেম, না হল পাগলামি, হটাৎ বিয়েটাই হল শেষমেশ। তো যাই হোক স্বামীর সাথে না হয় প্রেম করব, পাগলামী গুলো তার সাথেই করব।
বাসর ঘরে দুষ্টামি
কাচুমাচু করে নীলিমা বললো,
নীলিমাঃ হাসছেন কেন?
কাব্যঃ তোমাকে পেত্নীর মত লাগছে। এত মেকাপ কেউ করে।
নীলিমাঃ চুপচাপ।
কাব্যঃ মজা করলাম গো। তোমাকে সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে। আরও একবার তোমার প্রেমে পরে গেলাম।
নীলিমাঃ হইছে আর পাম দিতে হবে না।
কাব্যঃ আচ্ছা তুমি আমাকে এত ভয় পাচ্ছো কেন?
নীলিমাঃ মোটেও আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি না।
কাব্যঃ তোমার মুখ থেকে তুমি ডাকটা কবে শুনবো?
নীলিমাঃ কিছুদিন সময় লাগবে।
কাব্যঃ হুম।
নীলিমাঃ হুম।
কিছুক্ষণ নিরবতা।
স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প
নিরাবতা কাটিয়ে কাব্য বললো,
কাব্যঃ ছাঁদে যাবে?
নীলিমাঃ এখন?
কাব্যঃ হুম এখন তারা ভরা রাত দেখবো।
এই বলে কাব্য নীলিমাকে কোলে নিয়ে ছাদের দিকে এগোলো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো নীলিমাকে দোলনায় বসিয়ে দিলো।
হাটু গেরে বসে নীলিমাকে বললো,
কাব্যঃ চোখটা একটু বন্ধ করবে, প্লিজ?
নীলিমা চোখ বন্ধ করতেই কাব্য নীলিমার পায়ে নূপুর পরিয়ে দিল।
কাব্যঃ খুব ভালোবেসে ফেলেছি নীলিমা। তোমাকে আমার সবটা দিয়ে আগলে রাখতে চেষ্টা করবো।
নীলিমাঃ আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি কাব্য।
কাব্যের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।
কাব্যঃ তুমি সত্যি বলছো নীলিমা?
নীলিমাঃ হুম।
কিছু না ভেবেই জরিয়ে ধরলো নীলিমাকে। নীলিমাও কাব্যের বুকে মাথা রেখেছে। খুব শান্তি পাচ্ছে নীলিমা এই বুকে।
দোলনায় নীলিমার কোলে মাথা দিয়ে আছে কাব্য। নীলিমা কাব্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
ভোর হয়ে গেছে নীলিমা চোখ খুলে দেখলো কাব্য গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে নীলিমার কোলে। ঘুমন্ত অবস্থায় খুম মায়াবী লাগছে তাকে।
ডাকার ইচ্ছে না থাকলেও ডাকলো,
নীলিমাঃ কাব্য উঠো, ভোর হয়ে গেছে।
কাব্যঃ আহ মা, আরেকটু ঘুমাতে দেও?
নীলিমাঃ (কান টেনে) ওই আমি তোর মা?
কাব্যঃ সরি সরি, আমি তো ভুলে গেছিলাম আমি কাল বিয়ে করে বউ নিয়া আসছি।
নীলিমাঃ হায় আল্লাহ, না জানি আমায় কখন ভুলে যাও!
কাব্যঃ ভুলবো না গো। চলো রুমে যাই।
খুব ভালোই কাটছিল দিনগুলো। দিন পেরিয়ে বছর ঘুরে এল। আমাদের ভালবাসার কোন কমতি ছিল না। আমি এরকম স্বামী পেয়ে অনেক খুশি যেকিনা আমার এত কেয়ার করে, আমার কথা শুনে।
বাবা হওয়ার আনন্দ
সকাল থেকে মাথা ঘুরছে বমিও হয়েছে কিন্তু নীলিমা কাউকে বলে নি।
কাব্য হাসপাতালে গেছে।
আনোয়ারা বেগম রুমে বসে ছিলেন। কারো পরে যাওয়ার আওয়াজ শুনে ছুটে গেলেন।
দেখলেন নীলিমা জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে। সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসলো।
নীলিমাকে ভেতরে নিয়ে গেছে নীলিমার বাড়ির সবাই এসেছে। কাব্যকে ছটফট করতে দেখে নীল বললো,
নীলঃ চিন্তা করো না। নীলিমার কিছু হবে না।
কাব্যঃ হুম।
ড.নিশি সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
ড.নিশিঃ চিন্তার কোনো কারণ নেই। আর কাব্য সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান আপনি বাবা হতে চলেছেন।
কিছু না বলে ছুটে গেল কাব্য নীলিমার কাছে সবাই অনেক খুশি।
কাব্যঃ নীলিমা আমি বাবা হতে চলেছি। আমাদের স্বপ্ন পূর্ণ হবে।
নীলিমাঃ (খানিকটা লজ্জা পেয়ে) হুম, কাব্য।
নীলিমাকে বাড়িতে নিয়ে আসলো।
আনোয়ারা বেগম বললো,
নীলিমার শাশুড়ীঃ কাল থেকে তুমি একটা কাজও করবে না। সব আমি করবো।
নীলিমাঃ এটা বললে কি হয় মা! আমাকে কাজ করতে দিয়েন, প্লিজ।
নীলিমার শাশুড়ীঃ আমার কথাই শেষ কথা।
নীলিমাঃ হুম।
কষ্টের কালো মেঘের আনাগোনা
নীলিমা আর কিছু বললো না। জানে যে তার শাশুড়ী কতটা ছেলেমানুষ।
পাশ থেকে কাব্য বললো,
কাব্যঃ কাউকে কিছু করতে হবে না। কাজের বুয়া ঠিক করে দিয়েছি উনি সব করে দেবেন।
নীলিমার শাশুড়ীঃ আমি তো আছি বউমাকে এই অবস্থায় কিচ্ছু করতে দেব না।
কাব্যঃ আচ্ছা, উনি কাল থেকে সব করবেন। তুমি হেল্প করিও শুধু।
নীলিমাঃ হুম।
দেখতে দেখতে আজ ৪ মাস ১৫ দিন হলো।
কিন্তু হঠাৎ করেই নীলিমার ব্লিডিং শুরু হয়। তাড়াতাড়ি কাব্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিছু টেস্ট করে ড.নিশি বললেন,
ড. নিশিঃ সরি, কাব্য বাচ্চাটা মিসকারেজ হয়ে গেছে। আর একটা বিষয় আপনারা আর মাত্র একবারই বেবি নিতে পারবেন। এটা শুনে উনি ভেঙ্গে পরবেন। তাই আপনাকে পারসোনাল ভাবে বললাম। এখন আসছি।
কাব্যঃ জী।
গাড়িতে উঠার পর থেকেই নীলিমা বলে চলেছে, কি হয়েছে? কিন্তু কাব্য নিশ্চুপ।
বাড়িতে ঢুকেই রুমে এলো।
নীলিমা বললো,
নীলিমাঃ বলোনা কাব্য কি হয়েছে আমার?
কাব্যঃ কষ্ট পেও না। শক্ত হও। আমাদের বেবিটা মিসকারেজ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা শুধুমাত্র একবারে বাচ্চা নিতে পারবো।
ধপাস করে বসে পরলো নীলিমা। পাশ থেকে কাব্যের মা সব শুনতে পেয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন নিজের রুমে।
মেঝে থেকে নীলিমাকে তুলে বললো,
কাব্যঃ এত ভেবো না। আমরা আবার চেষ্টা করবো।
কান্না যেন থামছেই না নীলিমার।
পারিবারিক দুশ্চিন্তা
১ বছর পর আবার নীলিমা মা হতে চলেছে। সুখ যেন ধরা দিলো নীলিমাদের। কিন্তু সুখটা স্থায়ী হতে পারলো না।
এটাও মিসকারেজ হয়ে গেলো।
নীলিমা প্রায় পাগলের মত হয়ে গেছিলো। কিন্তু কাব্য সবসময় তার পাশে ছিল।
নীলিমা সবার সামনে নিজেকে খুশি রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু কাব্য বুঝতো সে কতটা কষ্টে আছে। সেও কী কম কষ্ট পাচ্ছে।
কয়েকমাস পর কাব্যের মা কাব্যকে নিজের রুমে ডাকছে।
কাব্যের মাঃ কাব্য তোকে কিছু কথা বলি। আমি যানি বউমা খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু আমাদেরও তো ইচ্ছে আছে নাতি নাতনীর মুখ দেখার। তাই বলছিলাম কি, তুই একটা বিয়ে করে নে।
কাব্যঃ মা, এসব কি বলছো তুমি? আমার জীবনে নীলিমাই প্রথম নীলিমাই শেষ।
কাব্যের মাঃ তোর বাবা আর আমি চাই, তুই আরেকটা বিয়ে কর।
কাব্যঃ আর নীলিমা কই যাবে? তুমি জানো, নীলিমা আমাকে কতটা ভালোবাসে?
(আরাল থেকে নীলিমা সবটা শুনে নিজের রুমে চলে গেল)
কাব্যঃ সে এই বাড়িতেই থাকবে।
কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে গেলো। তার মায়ের উপর খুব রাগ হচ্ছে।
কাব্য চিন্তা করছে, মা কিভাবে এই কথা বলতে পারলো।
স্বামীকে বিয়ের প্রস্তাব
কিছুক্ষণ পর রুমে আসলো কাব্য।
কাব্য কিছু বলার আগেই নীলিমা বললো,
নীলিমাঃ বিয়েটা করে নেও কাব্য। আমি তোমাকে সন্তানের সুখ দিতে পারবো না। আমার কোনো আপত্তি নেই।
কাব্যঃ কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে তোমার?
নীলিমাঃ হুম, আমি ভেবেই বলছি।
কাব্যঃ আমি কোনো বিয়ে করতে পারবো না। তোমাকে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
কাব্যের হাতটা মাথায় রেখে বললো,
নীলিমাঃ তুমি যদি বিয়ে না করো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।
এই বলে চলে আসলো তার শাশুড়ীর রুমে,
নীলিমাঃ মা আপনি একটা ভালো মেয়ে দেখুন। কাব্যকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
নীলিমার শাশুড়ীঃ ভেবে বলছো তো, যা বলছো?
নীলিমাঃ হুম মা ভেবেই বলছি। আপনি বাবাকে বলুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা দিতে হবে।
নীলিমার শাশুড়ীঃ আচ্ছা।
আজ স্বামীর বিয়ে
চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে আসলো নীলিমা।
আজ তার স্বামীর বাসর ঘর। না, আর কিছু ভাবতে পারছে না নীলিমা।
কালকেই সে চলে যাবে এই বাড়ি ছেড়ে।
সকালে সবাই নতুন বউকে দেখতে আসছে। অনেকে সমালোচনাও করছে। আমাকে নানানটা কথাও শুনাচ্ছে।
সন্ধায় ব্যাগ গুছিয়ে কাব্যের রুমে গেলাম,
নীলিমাঃ কাব্য, আমি চলে যাচ্ছি।
কাব্যঃ কোথায় যাবে তুমি?
নীলিমাঃ কই আর যাবো, বাবার বাসায় যাচ্ছি।
পাশ থেকে জিনিয়া বলে উঠলো…চলবে…
পরের পর্ব- বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – শেষ পর্ব