বউয়ের ভালোবাসা ৪

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৪ | Bouer Valobasha

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৪: ডাক্তার বাবু আমাকে পাওয়ার জন্য কত কিছুই না করছে, এই অল্প সময়ে এতটা ভালবেসেছে আমাকে যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমার বাসায় এসেছে। তো চলুন আমার বিয়ের মজার গল্পটাই বলি আপনাদের।

বিয়ের কথা

নাস্তা শেষে মি.আমজাদ চৌধুরী বললেন,

কাব্যের বাবাঃ আজ আমরা আসি। আপনারা খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের জানাবেন। এই নিন আমার ভিজিটিং কার্ড, এই নাম্বারে ফোন দিয়ে প্লিজ জানাবেন।

নীলিমার বাবাঃ জি জানাবো নিশ্চয়, আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন।

কাব্যের বাবাঃ আচ্ছা, আজ আমরা আসি। আসসালামু-আলাইকুম।

নীলিমার বাবাঃ ওয়ালাইকুম-আসসালাম! আবার আসবেন।

কাব্যের বাবাঃ আত্নীয়তা হলে প্রতিদিন আসবো।

নীলিমার বাবাঃ (মুচকি হেসে) তা ঠিক।

কাব্যের বাবাঃ আচ্ছা, ভালো থাকবেন।

এই বলে ওরা চলে গেলেন।

সাইফুল ইসলাম ভেতরে আসতেই নীল বললো,

নীলঃ আমি তো কাব্য চৌধুরীকে চিনি খুব ভালো ছেলে। আর ওনার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে এটাও বুঝলাম ওরা খুব ভালো মানুষ।

নীলের বাবাঃ তা তো বুঝলাম তাও। একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে একটাই মেয়ে আমার।
তার আগে তুই একবার তোর বোনের সাথে কথা বলে নে, তার কোনো পছন্দ আছে কি না?

নীলঃ আচ্ছা, আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি।

নীলের বাবাঃ আচ্ছা, যা।

নীলিমার রুমে নক দিলাম।

নীলঃ নীলিমা আসবো?

বিয়েতে ভাইয়ার মত

দরজা খুলে দিয়ে নীলিমা বললো,

নীলিমাঃ এতদিন তো আমার রুমে আসার জন্য পারমিশন নাও নি, হঠাৎ আজ কেন নিচ্ছো?

নীলঃ আমার বোনটা যে এখন বড় হয়ে গেছে। কখন যে এত বড় হয়ে গেলি রে বোন বুঝতেও পারলাম না।

নীলিমাঃ তুমি এভাবে কেন কথা বলছো ভাইয়া?

নীলঃ আরে পাগলি কিছু না। এখন বল দেখি তুই কি কোন ছেলেকে পছন্দ করিস, কেউ কি আছে তোর লাইফে?

নীলিমাঃ না, কেউ নেই। কিন্তু তুমি হঠাৎ এসব বলছো কেন ভাইয়া?

নীলঃ আজ যারা এসেছিলেন ওনারা তোর জন্য ওনাদের ছেলের সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। ওনাদের ছেলের তোকে খুব পছন্দ আর ওনাদেরও পছন্দ। তাই বাবা তোর মতামত জানতে চাচ্ছেন।

নীলিমাঃ ওনাদের ছেলে আমায় কই দেখলো?

নীলঃ হাসপাতালে যে ডাক্তার তোর ট্রিটমেন্ট করেছেন তিনিই মি.কাব্য চৌধুরী।

নীলিমাঃ ওহ। ওনার বাবা-মা আসছিল তাহলে!

নীলঃ হুম। এখন তোর মতামত কী? তুই মত দিলে আমরা বিয়ের কথা আগাবো।

নীলিমাঃ আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, ভাইয়া।

নীলঃ আমি তো বিদেশে চলে যাবো। আমাদের ছাড়া বিয়ে করবি তুই?

নীলিমাঃ তোমরা আগে বিদেশ থেকে আসো তার পর।

নীলঃ আমরা আসতে তো অনেক দেরি। বিয়েটা করে নে আমি না থাকলেও তুই আর তোর স্বামী তোরাই বাবা-মা কে দেখে রাখতে পারবি।

নীলিমাঃ তোমরা যা ভালো মনে করো কিন্তু আমি পড়তে চাই।

নীলঃ আচ্ছা কথা বার্তা আগে হোক বাবা আরো খোঁজ খবর নিয়ে তারপর তাদের জানাবেন।

নীলিমাঃ তোমরা যা ভালো বুঝো।

এরপর আমি চলে আসলাম নীলিমার রুম থেকে।

হবু জামাইয়ের সাথে আলাপন

বাবাকে সবটা বললাম।

বাবা বললেন, আচ্ছা আমি খোঁজ নিয়ে দেখি।

কয়েকদিন পর নীলিমার বাবা নীলকে ডেকে বললেন,

নীলিমার বাবাঃ মি.আমজাদ চৌধুরীদের সম্পর্কে খোঁজ নিলাম ভালো পরিবার সবাই তাই বললো। ভাবতেছি, আমজাদ চৌধুরীকে ফোন দিয়ে বলি আমরা এই বিয়েতে রাজি। তুই কি বলিস?

নীলঃ আমি তো আগেই তোমাকে বলেছি ওদের পরিবার ভালো। দেও ফোন ওনাকে।

সাইফুর ইসলাম আমজাদ চৌধুরীকে ফোন দিলেন ২ বার রিং হতেই ফোন ধরলেন।

নীলিমার বাবাঃ আসসালামু-আলাইকুম আমজাদ চৌধুরী।

কাব্যের বাবাঃ ওয়ালাইকুম-আসসালাম। কে?

নীলিমার বাবাঃ আমি সাইফুল ইসলাম, নীলিমার বাবা।

কাব্যের বাবাঃ ওহ জি বলেন ভালো আছেন? বাড়িতে সবাই ভালো?

নীলিমার বাবাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা?

কাব্যের বাবাঃ জী ভালো। তো কি খবর বলেন, কি ভাবলেন?

নীলিমার বাবাঃ আমরা রাজি বিয়েতে। আমাদের কোনো দাবি থাকলে বলতে পারেন ভাই?

কাব্যের বাবাঃ আমরা কিছু চাই না। নীলিমা মা কে পুত্রবধূ করে আনতে পারবো এটাই অনেক।

নীলিমার বাবাঃ হুম। তো শুভ কাজে দেরি করে কি লাভ, বিয়ের ব্যবস্থা করি। কি বলেন বিয়াই সাহেব?

কাব্যের বাবাঃ ঠিকই বলেছেন। আমরা পরশুদিন যাবো আপনাদের বাসায় আংটিবদল করে বিয়ের তারিখ ঠিক করা যাবে।

নীলিমার বাবাঃ হুম, আচ্ছা আমিও আয়োজন করি।

হবু বরের সাথে আলাপন

আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভর্তি। সবাই বসে আছি কাব্য আমার পাশে এখন আমাদের আংটিবদল হবে।
আংটিবদল শেষ করে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাব্যরা চলে গেলো।

আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে। তাই খুব তোরজোর চলছে বিয়ে নিয়ে।

বই পরছিলাম এমন সময় কাব্যের ফোন,

কাব্যঃ কেমন আছো নীলিমা?

নীলিমাঃ জী ভালো, আপনি?

কাব্যঃ আলহামদুলিল্লাহ। এখনও আপনি আপনি করবে?

নীলিমাঃ নিশ্চুপ।

কাব্যঃ বুঝেছি সময় লাগবে আপনি থেকে তুমিতে আসতে। সময় নেও কোনো সমস্যা নেই।

নীলিমাঃ জী।

কাব্যঃ আচ্ছা, তোমার বুকের ব্যথা কমে গেছে তো?

নীলিমাঃ কমেছে। এখন অনেকটাই সুস্থ।

কাব্যঃ তোমাকে একবার চেক-আপ করার কথা ছিল কিন্তু বিয়ের ইস্যুতে হয়নি।

নীলিমাঃ হুম।

কাব্যঃ সমস্যা নেই বাসর রাতে চেক-আপ করে নেব কি বলো!

নীলিমাঃ জানি না।

এই বলে নীলিমা ফোনটা কেটে দিল।ভালোই ক্ষেপাইছি পাগলিটারে। আমার সাথে কথা বলতে এত লজ্জা কিসের?

আজ আমার বিয়ে

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। আজ গায়ে হলুদ হলো সবাই খুব আনন্দ করছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে রুমে এসে শুইলাম খুব ধকল গেছে আজ।

ফোনটা হাতে নিলাম তখনি কাব্যের ফোন,

কাব্যঃ কি ম্যাডাম কি অবস্থা?

নীলিমাঃ আপনার যা অবস্থা আমারও তাই।

কাব্যঃ তাড়াতাড়ি ঘুমাও, কাল অনেক কাজ আছে।

নীলিমাঃ হুম, আপনিও ঘুমিয়ে পরুন।

কাব্যঃ কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু!

নীলিমাঃ কিন্তু কী?

কাব্যঃ কিছু না।

নীলিমাঃ কথা বলার অনেক সময় পাবেন। কোথাও পালাচ্ছি না আমি।

কাব্যঃ পালাতে দিলে তো পালাবে। আগলে রাখবো সারাজীবন।

নীলিমাঃ আচ্ছা, ঘুমিয়ে পরুন আল্লাহ হাফেজ।

কাব্যঃ আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।

সকাল থেকে হইচই লেগে গেছে জমজমাট পুরো বাড়ি। বউ সেজে বসে আছি। ভাবছি, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারবো তো।

বর এসেছে, চল সবাই। বরযাত্রি এসে গেছে। সবাই কত মজা করছে আর আমি পুতুলের মত বসে আছি। সবাই এসে আমাকে নিয়ে গেল স্টেজে। সবাই সেলফি নিচ্ছে পাশে কাব্য। অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

বিদায়ের কার্যক্রম শেষ করে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাব্যের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আমি খুব কান্না করেছি এখনও কাঁদছি।

বাসর রাতের গল্প

কাব্য হাতটা শক্ত করে ধরলো, আস্তে করে মাথাটা ওর কাধে রাখলো।

আস্তে করে কানের কাছে মুখটা এনে বললো, নিজের বাড়িতেই যাচ্ছো কিছুদিন পর বাপের বাড়ি এ যেতে চাইবা না।

গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করলাম।

সব নিয়মকানুন শেষ করে সবাই মিলে কাব্যের রুমে নিয়ে আসলো।

খুব সুন্দর করে সাজানো সব আমার পছন্দের ফুল দিয়ে সাজানো।

সব বন্ধু-বান্ধবের বিদায় দিয়ে রুমে আসলাম। আমাকে দেখে সবাই চলে গেল। মাইসা বললো,

মাইসাঃ ভাইয়া ভাবির উপর আজ অনেক ধকল গেছে, ভাবিকে বেশি টর্চার করো না।

কাব্যঃ তুই যাবি। (মাইসা আমার মামাতো বোন)

মাইসা চলে গেলো।

নীলিমা ঘাপটি মেরে বসে আছে।

ওকে দেখে হাসি পাচ্ছে খুব।

হেসেই দিলাম।

কাচুমাচু করে নীলিমা বললো, হাসছেন কেন? চলবে…

পরের পর্ব- বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৫

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *